অষ্টম শ্রেনীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর| Class 8 1St chapter history brought questions answer| ইতিহাসের ধারণা|
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ইতিহাস কেন “নিশীথকালের দুঃস্বপ্নকাহিনিমার' ছিল ?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজা, সম্রাট, যুদ্ধ, রাজনীতিসর্বস্ব কথা পড়ে একঘেঁয়ে লাগত তিনি বলেছেন, এগুলি পড়ে আমরা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিই। সেইজন্য তাঁর কাছে ভারতবর্ষের ইতিহাস ছিল "নিশীথকালের দুঃস্বপ্নকাহিনিমাত্র'।
2. কেন আমাদের ইতিহাস জানা দরকার ?
উত্তর:- অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন রচনা করে ইতিহাস। ইতিহাস শুধুমাত্র রাজা-সম্রাটদের কাহিনী, সাল তারিখ বা যুদ্ধের বিশ্লেষণ নয়। এর মধ্যে নানা যুক্তিতর্কে খতিয়ান মিশে আছে, যা সাক্ষ্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত হয়। এছাড়াও ইতিহাস পাঠের দ্বারা মানবসভ্যতার সমাজ, অর্থনীতি সংস্কৃতি, ধর্মীয় জীবনযাত্রার কথা জানা যায়। সেইজন্য ইতিহা জানা দরকার।
3. ভারতের ইতিহাসকে ক-টি যুগে ভাগ করা হয়এবং কী কী ?
উত্তর:- ভারতের ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয় সেগুলি হল— প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ
4. বর্তমান যুগকে কেন 'বিজ্ঞানের যুগ' বলা হয় ?
উত্তর:- বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপনের প্রা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োজন। এমনকি আমাদের কথাবার্তা মধ্যেও নানাধরনের বিজ্ঞানের ছোঁয়া থাকে। বর্তমানে আমাদে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত সেইজন্য বর্তমান যুগকে 'বিজ্ঞানের যুগ' বলা হয়।
5. ভারতের আধুনিক যুগের যে-কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করো
উত্তর:- ভারতের আধুনিক যুগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল— ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশির যুদ্ধ ও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভাজন।
6. রাজাবলি নামক ইতিহাস বইতে কোন সময়ের কথা রয়েছে ?
উত্তর:- ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রচিত রাজাবলি নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। রাজাবলিতে মহাভারতের রাজা করে যুধিষ্ঠিরের কাল থেকে ‘কলিযুগ' পর্যন্ত সময়ের কথা রয়েছে।
7. কে, কবে History of British India নামে গ্রন্থটি লিখেছেন ?
উত্তর:- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল History of British India নামে গ্রন্থটি লিখেছেন।
8. জেমস মিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে ক-টি ভাগে ভাগ করেন এবং কী কী ?
উত্তর:- জেমস মিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন; সেগুলি হল— 1) হিন্দু যুগ 2)মুসলিম যুগ 3) ব্রিটিশ যুগ।
9. ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের দুটি উপাদানের নাম লেখো ।
উত্তর :-ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের দুটি উপাদান
হল— প্রশাসনিক কাগজপত্র ও সংবাদপত্র ।
10. কে, কবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর:- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
11. ব্রিটিশ সরকার অভিহিত যে-কোনো দুটি হাঙ্গামার নাম লেখো।
উত্তর :- ব্রিটিশ সরকার অভিহিত দুটি হাঙ্গামা হল— ১) তিতুমিরের বারাসাত বিদ্রোহ ২) সিধু-কানহুর সাঁওতাল বিদ্রোহ।
12. কোন দুটি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হন ?
উত্তর:- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের হরিপুরা এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হন।
13. সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর :- সাম্রাজ্যবাদ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী দেশ তার তুলনায় দুর্বল আর-একটি দেশের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করে তাকে নিজের দখলে আনে। ওই দুর্বল দেশের জনগণ, ধনসম্পদ প্রভৃতি শক্তিমান দেশটি নিজের প্রয়োজনমতো পরিচালনা করে। এই প্রক্রিয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত।
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. ভারত ইতিহাসের যুগবিভাগ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর :- ভারত ইতিহাসের যুগবিভাগ: সভ্যতার সূচনাকাল থেকে ভারতবর্ষে নানা পরিবর্তনের ঘটনা দেখা যায়। এই পরিবর্তন খুবই ধীরগতিতে ঘটে থাকে। পূর্বের মানুষের কাজকর্ম, বেঁচে থাকার তাগিদ, সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক জীবন, শাসননীতি, যুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কম পরিবর্তন ও ক্রম উন্নতি ঘটে। এই এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার মধ্যে প্রাচীর না তুলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে ভারতের দীর্ঘ সময়কালকে ঐতিহাসিকগণ এক-একটি যুগে ভাগ করেছেন। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী ভারতের ইতিহাসের সময়কাল তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা-প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ।
2. আধুনিক যুগের ইতিহাসের উপাদানরূপে ফোটোগ্রাফের ভূমিকা লেখো।
উত্তর ফোটোগ্রাফের ভূমিকা: আধুনিক যুগের কোনো বিষয়ে প্রত্যক্ষ জানার অন্যতম প্রধান উপাদান হল ক্যামেরায় তোলা ছবি বা ফোটোগ্রাফ। এইরকম ছবির সংগ্রহ থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা কথা জানা যায়। কোনো ঘটনাকে প্রমাণিত করার ক্ষেত্রে ফোটোগ্রাফের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে ফোটোগ্রাফের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যেমন—
যিনি ছবি তুলেছেন; তাঁর দেখার ওপরেই ক্যামেরা বা ফোটোগ্রাফের দেখা নির্ভর করে।
2. উপনিবেশবাদের মূলকথা কী ?
উত্তর:-উপনিবেশবাদ হল সাম্রাজ্যবাদের পরিপূরক। উপনিবেশবাদের মূলকথা হল- একটি অঞ্চলের জনগণ ও সম্পদকে কোনো একটি শক্তিশালী দেশ নিজের দেশের স্বার্থে ব্যবহার করে।
3. জাতীয়তাবাদী ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?
উত্তর:- দেশের মানুষ যখন দেশের ইতিহাস লেখেন তখন বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে উপস্থাপিত হয়। একেই জাতীয়তাবাদী ইতিহাস বলা হয়।
প্রতিটি প্রশ্নের মাन 3
4. আত্মজীবনী ইতিহাসের উপাদানরূপে কতটা গ্রহণযোগ্য ?
উত্তর :- আত্মজীবনীর গ্রহণযোগ্যতা: ইতিহাসের উপাদানরূপে আত্মজীবনী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ইতিহাস রচনায় সরাসরি আত্মজীবনী ব্যবহার করলে ইতিহাস বিকৃত হতে পারে। কারণ যিনি আত্মজীবনী লিখেছেন, তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা অনুযায়ী ঘটনার ব্যাখ্যা করেছেন। © ঐতিহাসিকগণ রচয়িতার ব্যাখ্যা বিচার না করেই যদি তা ইতিহাসে তথ্য হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে বক্তব্য পক্ষপাতমূলক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সুতরাং, ইতিহাস রচনার অন্যান্য উপাদানকে ঐতিহাসিকগণ যেমন বিচার-বিশ্লেষণ করে থাকেন, তেমন আত্মজীবনীকেও বিভিন্ন দিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে ব্যাখ্যা করে থাকেন। যেমন— মধ্যযুগে মোগল সম্রাট বাবরের তুজুক-ই-বাবরী এবং জাহাঙ্গিরের তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরী ইতিহাসের উপাদানরূপে গ্রহণযোগ্য।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন উত্তর
1. ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনা ঠাকুর ও বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের মতের তুলনা- মূলক বিশ্লেষণ করো। এ সম্পর্কে তোমার মত কী ? ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ।
উত্তর:- ভারতবর্ষের ইতিহাস প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ইতিহাস পড়া ও মুখস্থ করা ভারতবর্ষের নিশীণকালের একটা দুঃস্বপ্নকাহিনিমার'। আমাদের দেশে কত বিদেশি এসেছে, সিংহাসন নিয়ে লড়াই হয়েছে। একদল চলে যাওয়ার পর আরও একদল এসেছে। এদের ইতিহাস আমরা জানতে না পারি বিদেশি ইতিহাসবিদদের রচনা থেকে। তাই তাঁর সেই ইতিহাস পছন্দ নয়, যে ইতিহাসে বিদেশিরা এসে শুধু মারামারি, কাটাকাটি করে এবং বাবা-ছেলে, ভাই-ভাই সিংহাসন নিয়ে টানাটানি করে। তিনি মনে করেন তাঁরাই ভাগ্যবান যারা স্বদেশকে ইতিহাসের মধ্যে খুঁজে পায়। ইতিহাস নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো সমস্যা নেই, তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসের বিষয়বস্তু নিয়ে। তাঁর মতে, ভারতের ইতিহাস ভারতীয়দের লিখতে হবে। তবেই সেটা হবে প্রকৃত ইতিহাস। অন্যদিকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক একই মত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, 'বাঙালির ইতিহাস চাই'। বাঙালি জাতির অতীতের কথা বাঙালিকেই জানতে হবে। না জানলে আর রক্ষা নেই। তাই এই ইতিহাস বাঙালিরাই রচনা করবে। বিদেশিদের লেখা বাঙালির ইতিহাস ভুলে ভরা। তিনি আরও বলেছেন আমি, তুমি, যে পারবে সবাই এই ইতিহাস লিখতে পারে।
উভয়ের বক্তব্যের মধ্যে একটা ইতিবাচক মিল রয়েছে। প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিকরা যদি ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখতে যান তা কখনোই সঠিক ইতিহাস হবে না। তাই ইতিহাস নিয়ে তর্কবিতর্ক হয় বেশি। এই বিতর্কের মধ্য থেকেই আসল ইতিহাস বেরিয়ে আসে। সুতরাং, এক্ষেত্রেও উভয় পণ্ডিতের মধ্যে মিল লক্ষ করা যায়।
আমার মতে, আমরা সবাই ইতিহাস লিখব এই কথাটা সবক্ষেত্রে প্রযুক্ত হবে না। যিনি বা যাঁরা ইতিহাস লিখছেন তিনি যেভাবে ঘটনাকে দেখেছেন সেভাবেই লিখবেন। এই একই ঘটনার বর্ণনা অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক হবে না। সুতরাং, একই ঘটনা এবং তার ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে এটা ঠিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমার বিচার অনুযায়ী ইতিহাস হবে 'আমাদের ইতিহাস।'
2. ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
উত্তর:- ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান: যে সমস্ত তথ্য ও সূত্রকে অবলম্বন করে ভারতের আধুনিককালের ইতিহাস রচনা করা হয় তা আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান নামে অভিহিত। সারা বিশ্বজুড়ে আধুনিক সময়ের ইতিহাস লেখার উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। ভারতের ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়।
ইতিহাসের উপাদান: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানের মধ্যে প্রশাসনিক কাগজপত্র, বই, ডায়ারি, চিঠি, জমি বিক্রির দলিল, রোজকার বাজারের ফর্দ, ফোটোগ্রাফ বা ছবি, পোস্টার, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে এইসব বিভিন্ন উপাদান বিভিন্নভাবে অতি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়।
(ii) আত্মজীবনী: ইতিহাসের উপাদানরূপে আত্মজীবনী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যিনি আত্মজীবনী লিখেছেন, তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা অনুযায়ী ঘটনার ব্যাখ্যা করেছেন। ঐতিহাসিকগণ রচয়িতার ব্যাখ্যা বিচার করে তবেই তা লিপিবদ্ধ করেন।
(ii) ফোটোগ্রাফ : ইতিহাসের আধুনিক যুগের কোনো বিষয়। জানার অন্যতম প্রধান উপাদান ফোটোগ্রাফ বা ক্যামেরায় তোলা ছবি। এইরকম ছবির সংগ্রহ থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা তথ্য জানা যায়।
প্রশাসনিক কাগজপত্র : আধুনিক ভারতের ইতিহাস য়ে রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রশাসনিক কাগজপত্র। বল প্রশাসনিক দলিল-দস্তাবেজ থেকে প্রশাসনের আইনকানুন, ভর দৈনন্দিন কাজকর্ম ও কর্মসূচি তথা সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে নানা কথা জানা যায়।
No comments:
Post a Comment