ভিটামিন:-
সূচনা (Introduction)
জীবদেহে প্রয়োজনীয় সব রকম খাদ্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও এক বিশেষ খাদ্য উপাদানের অভাবে জীবদেহের বৃদ্ধি ও পুষ্টি হয়না, বিজ্ঞানী হপকিনস ওই প্রকার খাদ্যপাদান কে অত্যাবশ্যক সহায়ক খাদ্য উপাদান রূপে অভিহিত করেন। পরবর্তীকালে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে J.C. Drumond প্রদত্ত ভিটামিনের এর E শব্দ বাদ দিয়ে ভিটামিন শব্দটি প্রবর্তন করেন।
ভিটামিন এর সংজ্ঞা (Definition of Vitamin)
যে বিশেষ খাদ্যোপাদান স্বাভাবিক খাদ্যে অল্প পরিমাণ থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যার অভাবে দেহের বিভিন্ন রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে ভিটামিন বলে।
ভিটামিন এর গুরুত্ব (Importance of vitamin)
ভিটামিন এ এর গুরুত্ব অপরিসীম ভিটামিন দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে অপরিহার্য ভিটামিন উৎসেচক এর সঙ্গে কোন গ্রুপে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন ভিটামিন প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় অংশ নেয় তাই ভিটামিনের অভাব হলে প্রাণীদের নানারকম উপসর্গ দেখা দেয় যেমন ভিটামিন A এর অভাবে রাতকানা ভিটামিন C এর অভাবে স্কার্ভি ভিটামিন D এর অভাবে রিকেট ভিটামিন E এর অভাবে বন্ধ্যাত্ব ভিটামিন B কমপ্লেক্স এর অভাবে রক্তাল্পতা রোগ ইত্যাদি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ভিটামিন এর বৈশিষ্ট্য:-
ভিটামিন এর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল ১) ভিটামিন এক প্রকারের জৈব অনুঘটক যা বিপাক ক্রিয়ায় ও এনজাইমের কাজ করে ! ২) ভিটামিন সাধারণ খাদ্যে খুব কম পরিমাণ থাকে । ৩) ভিটামিন অন্যান্য খাদ্য উপাদানের তুলনায় জীবদেহে খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয় ৪) ভিটামিন পরিপাক ক্রিয়ায় নষ্ট হয় না ৫)খাদ্য শুকিয়ে গেলে বা বেশি সেদ্ধ হলে ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় ৬) উচ্চ তাপমাত্রায় জারণ ক্রিয়ার সূর্যালোকে এবং ক্ষারীয় পরিবেশে কোন কোন ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় বা তাদের কার্যকারিতা হ্রাস পায় ৭) ভিটামিন প্রধানত উদ্ভিদ দেহে সংশ্লিষ্ট হয় তবে ভিটামিন-ডি সূর্যালোক থেকে আমাদের সংশ্লেষিত হয় ভিটামিন এ ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ সংশ্লেষিত হয়।
ভিটামিনের শ্রেণীবিভাগ:-
ভিটামিন কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ১) জলে দ্রবণীয় ভিটামিন ২) তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন।
ভিটামিন A:-
ভিটামিন A একটি তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন । A ভিটামিন এর রাসায়নিক নাম রেটিনোল ।এটি জেরোফথ্যালমিয়া প্রতিরোধ করাই একে anti-jerpthalmik ভিটামিন বলে। এই ভিটামিন যকৃত বিটা ক্যারোটিন থেকে সংশ্লেষিত হয়।
উৎসঃ
উদ্ভিজ্জ: কমলা রঙের সবজি ও ফল যেমন গাজর, টমেটো ,পাকা আম, পালংশাক, বাঁধাকপি উদ্ভিজ্জ তেল ইত্যাদি।
প্রাণিজ:-কড লিভার হাঙ্গর মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল প্রধান প্রাণিজ উৎস এছাড়া দুধ ডিমের কুসুম মাখন মাছ ইত্যাদি।
অভাবজনিত লক্ষণ:
১) দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।
২) দেহচর্ম পুরু শুষ্ক ও খসখসে হয়।
৩) বৃক্ষ ও মূত্রনালীর আবরণী কলা বিনষ্ট হওয়ায় এবং বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হয় ।
৪)স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়
Vitamin A এর প্রধান কাজ:-
১) দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
২) জিহ্বা গলবিল শ্বাসনালী ও লালা গ্রন্থির আবরণী কলা স্বাভাবিক সক্রিয়তা বজায় রাখে
৩) রোগসংক্রমণ এ বাধা দেয়
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স:-
ভিভিটামিন b-complex অনেকগুলি ভিটামিন ই এর সমষ্টি এগুলি হল ভিটামিন B1 ভিটামিন b2 ভিটামিন b3 ভিটামিন-বি 5 ভিটামিন-বি6 ভিটামিন বি12 ভিটামিন H ইত্যাদি ।ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জলে দ্রবণীয় ভিটামিন।
উদ্ভিজ্জ -ঢেঁকিছাটা চাল লাল আটা ভাতের ফ্যান বাদাম বাঁধাকপি পালং শাক টমেটো অঙ্কুরিত ছোলা ইত্যাদি।
প্রাণিজ- দুধ ,ডিম ,পাঁঠার যকৃত, মাছ মাংস ইত্যাদি।
এই ভিটামিন এর কাজ:-
১) মিউকাস পর্দা সুস্থ রাখা
২) রক্ত কোষ গঠনে সাহায্য করে
৩) স্নায়ু কোষ ও সুস্থতা বজায় রাখা
৪) ক্ষুধা বৃদ্ধি ও হজমে সাহায্য করা,
ভিটামিন- সি ( Vitamin-C)
ভিটামিন সি এর রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। ভিটামিন-সি স্কার্ভি প্রতিরোধ করে বলে একে অ্যান্টি স্কর বিউটিক ভিটামিন বলে। এটি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন ভিটামিন সি রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়।
ভিটামিন-সি সকল প্রকার টাটকা ফলে বিশেষ করে টকজাতীয় ফল পাওয়া যায় যেমন কমলা লেবু, পাতি লেবু ,আমলকী ,টমেটো ,আনারস ,আপেল ইত্যাদি এছাড়া কাঁচালঙ্কা ,পেপে, ছোলা, পালংশাক ,বাঁধাকপি ইত্যাদিতে ভিটামিন পাওয়া যায়।
এছাড়া মাতৃ স্তনদুগ্ধ এবং মাছ ও মাংস সামান্য পরিমাণে থাকে।
এই ভিটামিনের অভাবে দাঁত কদাকার হয়। মারি ছিদ্র যুক্ত হওয়ায় দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয় ,লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় রক্তাল্পতা রোগ হয় ।অস্থি ও দন্তক্ষয় লক্ষণ দেখা যায় রোগ প্রতিরোধক শক্তি কমে যায়!
এই ভিটামিনের প্রধান কাজ হল রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে ,অস্থি দাঁত ও ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে, কার্বোহাইড্রেট বিপাকে অংশ নেয়ায় লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
ভিটামিন- ডি ( vitamin-D)
ভিটামিন-ডি তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন উদ্ভিজ্জ তেলে এটা সামান্য পরিমাণে থাকে , মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেলে ভিটামিন এর প্রধান উৎস বিশেষ করে কর্ড ,হাঙ্গর যকৃৎ নিঃসৃত তেলে এই ভিটামিন থাকে। এছাড়া দুধ ডিম ও মাছের ভিটামিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি এর অভাবে মলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফেট নির্গত হয় রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস পায় ফলে শিশুদের রিকেট রোগ ও বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়। রিকেট সাধারণত 6 থেকে 18 মাস বয়সের শিশুদের এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীলোকদের দেখা যায়।
ভিটামিন ডি এর অভাবে দন্ত ক্ষয় রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় এই ভিটামিনের অভাবে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস পাওয়ায় রক্ত তঞ্চন বিঘ্নিত হয়।
ভিটামিন ডি এর কাজ হল অস্থি ও ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিশেষণে সাহায্য করা ,অস্থি ও দাঁতের গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে অস্তিত্বে ক্যালসিয়ামের সহায়তা করে।
ভিটামিন - ই ( vitamin-E)
ভিটামিন-ই তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি লেটুস শাক অঙ্কুরিত ছোলা মটর শুটি সয়াবীন ইত্যাদিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। এছাড়া এই ভিটামিন প্রাণিজ উৎস খুবই কম দুধ মাংস ও ডিমের কুসুম ইত্যাদিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
এই ভিটামিনের অভাবে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ফলে বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ প্রকাশ পায় মাতৃস্তান দুগ্ধ ক্ষরণ হাস পায়, ভ্রূণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়,।
ভিটামিন ই এর প্রধান কাজ গুলি হল ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করা স্তন দুগ্ধ ক্ষরণে অব্যাহত রাখা গর্ভপাত রোধ করা ইত্যাদি।
ভিটামিন- কে(vitamin-K)
ভিটামিন কে তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন এ ভিটামিন শাকসবজি আলফালফা শাক ,বাঁধাকপি ,পালংশাক সয়াবিন, টমেটো ইত্যাদি থাকে প্রাণী যে এই ভিটামিন খুবই কম গরু ও শুকুরের যকৃতে এবং দুধ, ডিমে অল্প পরিমাণে থাকে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর:-
১) ভিটামিন মানবদেহের কোন কাজে অপরিহার্য?
উত্তর- স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে
২. ভিটামিন A এর অভাবে কি রোগ হয়?
উত্তর- রাতকানা
৩. ভিটামিন C এর অভাবে কি রোগ হয়?
উত্তর- স্কার্ভি
৪. ভিটামিন D এর অভাবে কি রোগ হয়?
উত্তর- রিকেট
৫. ভিটামিন E এর অভাবে কি রোগ হয়?
উত্তর- বন্ধ্যাত্ব
৬. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবে কি রোগ হয়?
উত্তর- বেরিবেরি, মুখে ঘা, রক্তাল্পতা, স্নায়ুরোগ ইত্যাদি
৭. খাদ্য শুকিয়ে গেলে বা বেশি সেদ্ধ হলে ভিটামিন কি হয়ে যায়?
উত্তর- নষ্ট হয়ে যায়
৮. সূর্যালোক থেকে কোন ভিটামিন আমাদের দেহে সংশ্লেষিত হয়?
উত্তর- ভিটামিন D
৯. কোন ভিটামিন জলে দ্রাব্য?
উত্তর- ভিটামিন B ও C
১০. কোন ভিটামিন গুলি তেলে দ্রব্য?
উত্তর- ভিটামিন A,D,E,K
১১. দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিন কয় প্রকার?
উত্তর- দুই প্রকার,
১২. ভিটামিন A এর রাসায়নিক নাম কি?
উত্তর- রেটিনল
১৩. ভিটামিন A কোন উদ্ভিদে দেখা যায়?
উত্তর- গাজর, টমেটো ,পাকা আম ,পালংশাক, বাঁধাকপি
১৪. ভিটামিন A কোন প্রাণীর দেহে দেখা যায়?
উত্তর-কড, হাঙ্গর
১৫ . ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোন উদ্ভিদে দেখা যায়?
উত্তর- বাদাম, বাঁধাকপি ,পালংশাক
১৬. ভিটামিন B1 এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর- বেরিবেরি
১৭. ভিটামিন B2 এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর- ঠোটের কোনায় ঘা ও জিহ্বাতে ঘা
১৮. নিয়াসিন এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর- পেলেগ্রা
১৯. ভিটামিন B6 এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর- চুলপড়া স্নায়ুর ক্ষয় হয়
২০. ভিটামিন B12 এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর-অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা
২১. ফলিক এসিডের অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর- মেগালোব্লাস্ট অ্যানিমিয়া
২২. ক্ষুধা বৃদ্ধি ও হজম করতে কোন ভিটামিন সাহায্য করে?
উত্তর-vitamin -A
২৩. ভিটামিন C এর রাসায়নিক নাম কি?
উত্তর- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
২৪. কোন ভিটামিন রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়?
উত্তর- ভিটামিন C
২৫. কোন ভিটামিনের অভাবে রক্তাল্পতা রোগ দেখা যায়?
উত্তর- ভিটামিন A
২৬. ভিটামিন D এর রাসায়নিক নাম কি?
উত্তর- কোলক্যালসিফেরোল
২৭. ক্যালসিয়াম ফসফেট এর পরিমাণ কমে যায় কোন ভিটামিনের অভাবে?
ভিটামিন D
২৮. দন্ত ক্ষয় রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?
উত্তর- ভিটামিন D
২৯. ভিটামিন E এর রাসায়নিক নাম কি?
উত্তর- টোকোফেরল
৩০. ভ্রূণের বৃদ্ধি কোন ভিটামিনের অভাবে ব্যাহত হয়?
উত্তর- ভিটামিন- E
৩১. ভিটামিন কে এর রাসায়নিক নাম কি?
উত্তর- ফাইলোকুইনন
No comments:
Post a Comment