ইতিহাসের ধারণা অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর -
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: প্রশ্নের মান -১
1. প্রাচীন ভারতের কোন সম্রাট কলিঙ্গ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন ?
উত্তর:- প্রাচীন ভারতের মৌর্যসম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
2. কোন্ দেশের কাপড়ের কলের জন্য বাংলায় নীলচাষ করা হত ?
উত্তর:- ইংল্যান্ডের কাপড়ের কলের জন্য বাংলায় নীল চাষ করা হত।
3. কোন্ শব্দ থেকে আধুনিক শব্দটি এসেছে ?
উত্তর:- 'অধুনা' শব্দ থেকে আধুনিক শব্দটি এসেছে।
4. অধুনা শব্দটির অর্থ কি ?
উত্তর:- 'অধুনা' শব্দটির অর্থ সম্প্রতি বা নতুন।
5. কবে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল ?
উত্তর:- ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল।
6. পলাশির যুদ্ধকে কোন যুগের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ?
উত্তর:- পলাশির যুদ্ধকে আধুনিক যুগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
7. কবে ঔরঙ্গজেব মারা যান ?
উত্তর:- ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরসাজের মারা যান।
৪. ইলতুৎমিস কাকে দিল্লির শাসনভারের জন্য নির্বাচন করেন ?
উত্তর:- নিজ কন্যা রাজিয়াকে ইলতুৎমিস দিল্লির শাসন-ভারের জন্য নির্বাচন করেন।
9. ভারত বিভাজন করে ঘটেছিল ?
উত্তর:- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজন ঘটেছিল।
10. রাজাবলি নামে ইতিহাস বইটি কে লেখেন ?
উত্তর:- রাজাবলি নামে ইতিহাস বইটি লেখেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার।
11. কবে রাজাবলি ইতিহাস বইটি লেখা হয়েছিল ?
উত্তর:- ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে রাজাবলি ইতিহাস বইটি লেখা হয়েছিল।
12. History of British India গ্রন্থটি কে রচনা করেন ?
উত্তর:- ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল History of British India গ্রন্থটি রচনা করেন।
13. কবে History of British India বইটি লেখা হয়েছিল ?
উত্তর:- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে History of British India বইটি লেখা হয়েছিল।
14. জেমস মিল কোন্ যুগকে ‘অন্ধকারময় যুগ'বলেছেন ?
উত্তর:- জেমস মিল মধ্যযুগকে ‘অন্ধকারময় যুগ' বলেছেন।
15. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কোন্ ধর্মাবলম্বী ছিলেন ?
উত্তর:- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈন ধর্মাবলম্বী ছিলেন।
16. বিম্বিসার কোন্ ধর্মাবলম্বী ছিলেন ?
উত্তর:- বিম্বিসার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন।
17. জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা কে ?
উত্তর:- জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা হলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।
18. হিউমের জীবনী কে রচনা করেন ?
উত্তর:- উইলিয়ম ওয়েডারবার্ন হিউমের জীবনী রচনা করেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: প্রশ্নের মান -২
1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ইতিহাস কেন'নিশীথকালের দুঃস্বপ্নকাহিনিমাত্র' ছিল ?
উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজা, সম্রাট, যুদ্ধ, রাজনীতিসর্বস্ব কথা পড়ে একঘেঁয়ে লাগত তিনি বলেছেন, এগুলি পড়ে আমরা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিই। সেইজন্য তাঁর কাছে ভারতবর্ষের ইতিহাস ছিল “নিশীথকালের দুঃস্বপ্নকাহিনিমাত্র'।
2. কেন আমাদের ইতিহাস জানা দরকার ?
উত্তর :- অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন রচনা করে। ইতিহাস। ইতিহাস শুধুমাত্র রাজা-সম্রাটদের কাহিনী, সাল- তারিখ বা যুদ্ধের বিশ্লেষণ নয়। এর মধ্যে নানা যুক্তিতর্কের খতিয়ান মিশে আছে, যা সাক্ষ্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত হয়। । এছাড়াও ইতিহাস পাঠের দ্বারা মানবসভ্যতার সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় জীবনযাত্রার কথা জানা যায়। সেইজন্য ইতিহাস জানা দরকার।
3. ভারতের ইতিহাসকে ক-টি যুগে ভাগ করা হয় এবং কী কী ?
উত্তর :- ভারতের ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়; সেগুলি হল – i) প্রাচীন যুগ ii) মধ্যযুগ ও (iii) আধুনিক যুগ।
4. বর্তমান যুগকে কেন ‘বিজ্ঞানের যুগ বলা হয় ?
উত্তর:- বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োজন। এমনকি আমাদের কথাবার্তার মধ্যেও নানাধরনের বিজ্ঞানের ছোঁয়া থাকে। বর্তমানে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। সেইজন্য বর্তমান যুগকে 'বিজ্ঞানের যুগ' বলা হয়।
5. ভারতের আধুনিক যুগের যে-কোনো দুটি গুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করো?
উত্তর:- ভারতের আধুনিক যুগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল— 1) ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশির যুদ্ধ ও 2) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভাজন।
6. রাজাবলি নামক ইতিহাস বইতে কোন্ সময়ের কথা রয়েছে ?
উত্তর:- ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রচিত রাজাবলি নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। রাজাবলিতে মহাভারতের রাজা যুধিষ্ঠিরের কাল থেকে 'কলিযুগ' পর্যন্ত সময়ের কথা রয়েছে।
7.কে, কবে History of British India নামে গ্রন্থটি লিখেছেন ?
উত্তর:- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জেমস মিল History of British India নামে গ্রন্থটি লিখেছেন।
৪. জেমস মিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে ক-টি ভাগে ভাগ করেন এবং কী কী
উত্তর :-জেমস ছিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন; সেগুলি হল- হিন্দু যুগ ১) মুসলিম যুগ ২)ব্রিটিশ যুগ।
9.ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের দুটি উপাদানের নাম লেখো।
উত্তর:-ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের দুটি উপাদান হল- (i) প্রশাসনিক কাগজপত্র (ii) সংবাদপত্র ।
10.কে, কবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর:- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্ন (11) ব্রিটিশ সরকার অভিহিত যে-কোনো দুটি হাঙ্গামার নাম লেখো ।
উত্তর:- ব্রিটিশ সরকার অভিহিত দুটি হাঙ্গামা হল- (i) তিতুমিরের বারাসাত বিদ্রোহ (i) সিধু-কানহুর সাঁওতাল বিদ্রোহ।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন- উত্তর প্রশ্নের মান-৫
প্রশ্ন (1) ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতের তুলনা- মূলক বিশ্লেষণ করো। এ সম্পর্কে তোমার মত কী ?
উত্তর:- ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। ভারতবর্ষের ইতিহাস প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ইতিহাস পড়া ও মুখস্থ করা ভারতবর্ষের নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্নকাহিনিমাত্র। আমাদের দেশে কত বিদেশি এসেছে, সিংহাসন নিয়ে লড়াই হয়েছে। একদল চলে যাওয়ার পর আরও একদল এসেছে। এদের ইতিহাস আমরা জানতে চিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পারি বিদেশি ইতিহাসবিদদের রচনা থেকে। তাই তাঁর সেই ইতিহাস পছন্দ নয়, যে ইতিহাসে বিদেশিরা এসে শুধু মারামারি, কাটাকাটি করে এবং বাবা-ছেলে, ভাই-ভাই সিংহাসন নিয়ে টানাটানি করে। তিনি মনে করেন তাঁরাই ভাগ্যবান যারা স্বদেশকে ইতিহাসের মধ্যে খুঁজে পায়। ইতিহাস নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো সমস্যা নেই, তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসের বিষয়বস্তু নিয়ে। তাঁর মতে, ভারতের ইতিহাস ভারতীয়দের লিখতে হবে। তবেই সেটা হবে প্রকৃত ইতিহাস। অন্যদিকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক একই মত পোষণ করেছেন। তাঁর মতে, 'বাঙালির ইতিহাস চাই'। বাঙালি জাতির অতীতের কথা বাঙালিকেই জানতে হবে। না জানলে আর রক্ষা নেই। তাই এই ইতিহাস বাঙালিরাই রচনা করবে। বিদেশিদের লেখা বাঙালির ইতিহাস ভুলে ভরা। তিনি আরও বলেছেন আমি, তুমি, যে পারবে সবাই এই ইতিহাস। লিখতে পারে।
উভয়ের বক্তব্যের মধ্যে একটা ইতিবাচক মিল রয়েছে। প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিকরা যদি ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখতে যান তা কখনোই সঠিক ইতিহাস হবে না। তাই ইতিহাস নিয়ে তর্কবিতর্ক হয় বেশি। এই বিতর্কের মধ্য থেকেই আসল ইতিহাস বেরিয়ে আসে। সুতরাং এক্ষেত্রেও উভয় পন্ডিতের মধ্যে মিল লক্ষ করা যায়। আমার মতে, আমরা সবাই ইতিহাস লিখব এই কথাটা সবক্ষেত্রে প্রযুক্ত হবে না। যিনি বা যাঁরা ইতিহাস লিখছেন তিনি যেভাবে ঘটনাকে দেখেছেন সেভাবেই লিখবেন। ওই একই ঘটনার বর্ণনা অন্য কোনো বাজির ক্ষে এক হবে না। সুতরাং, একই ঘটল নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। তবে এটা ঠিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমার বিচার অনুযায়ী ইতিহাস হবে "আমাদের ইতিহাস।
2. ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
উত্তর:- ভারতের আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান: যে সমস্ত তথ্য ও সূত্রকে অবলম্বন করে ভারতের আধুনিককালের ইতিহাস রচনা করা হয় তা আধুনিককালের ইতিহাসের উপাদান নামে অভিহিত। সারা বিশ্বজুড়ে আধুনিক সময়ের ইতিহাস লেখার উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। ভারতের ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। ১) ইতিহাসের উপাদান: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানের মধ্যে প্রশাসনিক কাগজপত্র, বই, ডায়ারি, চিঠি, জমি বিক্রির দলিল, রোজকার বাজারের ফর্দ, ফোটোগ্রাফ বা ছবি, পোস্টার, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে এইসব বিভিন্ন উপাদান বিভিন্নভাবে অতি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়।
২) আত্মজীবনী:- ইতিহাসের উপাদানরূপে আত্মজীবনী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যিনি আত্মজীবনী লিখেছেন, তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা অনুযায়ী ঘটনার ব্যাখ্যা করেছেন। ঐতিহাসিকগণ রচয়িতার ব্যাখ্যা বিচার করে তবেই তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেন।
৩) ফোটোগ্রাফ: ইতিহাসের আধুনিক যুগের কোনো বিষয় জানার অন্যতম প্রধান উপাদান ফোটোগ্রাফ বা ক্যামেরায় তোলা ছবি। এইরকম ছবির সংগ্রহ থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা তথ্য জানা যায়।
৪) প্রশাসনিক কাগজপত্র: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রশাসনিক কাগজপত্র। প্রশাসনিক দলিল-দস্তাবেজ থেকে প্রশাসনের আইনকানুন, দৈনন্দিন কাজকর্ম ও কর্মসূচি তথা সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে নানা কথা জানা যায়।
৫) সংবাদপত্র: ইতিহাস রচনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সংবাদপত্র। বিভিন্ন সংবাদপত্রে পরিবেশিত দৈনন্দিন সংবাদ ইতিহাস রচনায় সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
মন্তব্য: আধুনিক ভারতের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রা কীরূপ ছিল তা ভবিষ্যতকে দিশা দেবে আধুনিক যুগের নানা উপাদান। ইতিহাস এইসব উপাদানের ওপর নির্ভর করে আপন গতিতে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment