বৃদ্ধি ও বিকাশ (Growth and Development): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ২.৪ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 life science chapter 2.4 questions answer| - SM Textbook

Fresh Topics

Tuesday, November 7, 2023

বৃদ্ধি ও বিকাশ (Growth and Development): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ২.৪ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 life science chapter 2.4 questions answer|

  বৃদ্ধি ও বিকাশ (Growth and Development): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ২.৪ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 life science chapter 2.4 questions answer| 




রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন 1. বৃদ্ধি কাকে বলে? [ME 01] বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।  

উত্তর: বৃদ্ধি (Growth) : নির্দিষ্ট শর্তসমূহের উপস্থিতিতে জীবকোশের প্রোটোপ্লাজমে উপচিতি বিপাক ক্রিয়ার ফলে কোশ কলা, অঙ্গ বা সমগ্র জীবদেহের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়াকে বৃদ্ধি বলে। 

বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যসমূহ:

1. বৃদ্ধি হল সমস্ত জীবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

2. জীবদেহে অপচিতি বিপাকের তুলনায় উপচিতি বিপাক বেশি হলে বৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং, উপচিতি বিপাক > অপচিতি বিপাক = বৃদ্ধি। 

3. বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে। 

4. বৃদ্ধি কোশ বিভাজনের ফলে ঘটে অর্থাৎ, জীবদেহের বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ। 

5.কোশ বিভাজনের সময় কোশে সাইটোপ্লাজমীয় কোশীয় অঙ্গাণুর সংখ্যা ও নিউক্লিয়াসে DNA-এর সংখ্যা দ্বিগুণ (double) হয় এবং সাইটোপ্লাজমে প্রোটিন, RNA, উৎসেচক প্রভৃতি উপাদান বৃদ্ধি পায়। 

জেনে রাখো : বিজ্ঞানী মিলার (Millar, 1954) বৃদ্ধিকে ওজন ও গঠনের স্থায়ী পরিবর্তন' রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। 

প্রশ্ন 2. প্রকৃতি অনুযায়ী বৃদ্ধির প্রকারভেদগুলি আলোচনা করো। বৃদ্ধির গুরুত্ব লেখো। 

উত্তর: বৃদ্ধির প্রকারভেদ : প্রকৃতি অনুযায়ী বৃদ্ধি তিনপ্রকার। যথা- অঙ্গজ বৃদ্ধি, ও পুনরুৎপাদনগত বৃদ্ধি এবং ও জননগত বৃদ্ধি। 

1. অঙ্গজ বৃদ্ধি : কোশ বিভাজন, কলাগঠন, অঙ্গ ও তন্ত্রের উৎপত্তি, কোশীয় সঞ্চয় প্রভৃতির মাধ্যমে জীবদেহের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের ঊর্ধ্বমুখী স্থায়ী পরিবর্তনকে অঙ্গজ বৃদ্ধি বলে। 

2. পুনরুৎপাদনগত বৃদ্ধি : কোশ বিভাজন ও কোশীয় সঞ্চয়ের মাধ্যমে জীবদেহে ক্ষতস্থান পূরণ হয়ে পুনরায় আগের আকৃতিতে ফিরে আসার ঘটনাকে পুনরুৎপাদনগত বৃদ্ধি বলে। 

3. জননগত বৃদ্ধি : উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েরই দৈহিক পূর্ণতা প্রাপ্তির পর জনন অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে ও পরিণতি পায়। যেমন—উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ফুল ও ফলের সৃষ্টি হয়, প্রাণীর ক্ষেত্রে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় বৃদ্ধি পায় ও পরিণত হয়। একে জননগত বৃদ্ধি বলে। 

বৃদ্ধির গুরুত্ব: 1. বৃদ্ধির ফলে জীবদের দৈহিক ও জৈবিক পরিপূর্ণতা ঘটে। 2. বৃদ্ধির মাধ্যমে জীব বংশবিস্তার করে। 3. পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে জীবদেহে ক্ষতস্থান পূরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ পুনর্গঠিত হয়। 

প্রশ্ন. বহুকোশী জীবদেহে বৃদ্ধির দশাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

উত্তর: বহুকোশী জীবাদাহ বৃদ্ধির দশাসমূহ : বহুকোশী জীবদেহে বৃদ্ধি তিনটি সুস্পষ্ট দশার মাধ্যমে ঘটে—1. কোশ বিভাজন দশা, 2. কোশের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি দশা এবং 3. কোশীয় বিভেদন দশা। 

1. কোশ বিভাজন দশা : (i) এই দশায় কোশগুলি মাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্রুত বিভাজিত হয় এবং বহু অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। (ii) এই দশায় উদ্ভিদের মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগের ভাজক কলাকোশ মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়, এর ফলে মূল ও কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। (iii) প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই দশার মাধ্যমে এককোশী জাইগোট বারবার মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা বিভাজিত হয়ে মরুলা গঠন করে। (iv) মরুলার কোশগুলি বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় ও একস্তরবিশিষ্ট ফাঁপা, গোলাকার ব্লাস্টুলা ও পরে তিনটি প্রজননিক কলাস্তরযুক্ত গ্যাস্টুলা দশাতে পরিণত হয়। (v) গ্যাস্টুলার কোশগুলির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও বৃদ্ধির ফলে ভূর্ণ গঠিত হয়। (vi) গ্যাস্টুলার তিনটি কলাস্তর (এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম । ও এন্ডোডার্ম) থেকে কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র গঠিত হয় এবং পূর্ণাঙ্গ প্রাণী। সৃষ্টি হয় ।

2. কোশের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি দশা : (i) এই অবস্থায় কোশের মধ্যে প্রোটোপ্লাজমীয় পদার্থের সংশ্লেষ ঘটে এবং ক্রমাগত জল গ্রহণের ফলে কোশের আকার ও আয়তনের স্থায়ী অপরিবর্তনীয় বৃদ্ধি ঘটে। (ii) কোশের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি কোশ বিভাজনের সূচনা ঘটায়। ফলে, সামগ্রিকভাবে জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে।

3. কোশীয় বিভেদন দশা : এই দশায় অপত্য কোশগুলি নির্দিষ্ট কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করে বিভেদিত হয়। যেমন— স্নায়ুকোশ স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহণের জন্য দীর্ঘ হয়। সরেখ পেশিকোশ চলন ও গমনে সাহায্য করার জন্য সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতাযুক্ত হয়। 

জেনে রাখো : বহুকোশী প্রাণীদেহে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কিছু অবিভেদিত (Undifferentiated) কোশ উপস্থিত থাকে, এদের টোটিপোটেন্ট (Totipotent) বা স্টেম সেল (Stem cell) বলে। এই কোশগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য কোশের প্রতিস্থাপক রূপে ব্যবহার করা যায়। 

প্রশ্ন 4. বৃদ্ধির শর্তগুলি উল্লেখ করো। * [ME'06] 2 

উত্তর: বৃদ্ধির শর্তগুলি হল - 

• বাহ্যিক শর্তাবলি : 

(i) জল : জীবদেহে বৃদ্ধির জন্য জল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জলের উপস্থিতিতে প্রোটোপ্লাজম সর্বাধিক ক্রিয়াশীল থাকে এবং উপচিতিমূলক বিপাক দ্রুত ঘটে। 

(ii) উম্বুতা বা তাপমাত্রা : জীবদেহে বৃদ্ধি সহায়ক তাপমাত্রা হল 25°-35°C। এই উয়তায় কোশগুলির কার্যক্ষমতা ভালো হয় ৷ 

(iii) আলো : উদ্ভিদের বৃদ্ধি আলোর তীব্রতা, আলোর স্থিতিকাল ও আলোর প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। 

(iv) অক্সিজেন : জীবের বৃদ্ধি অক্সিজেনের উপস্থিতি ও পরিমাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

2. অভ্যন্তরীণ শর্তাবলি : 

(i) খাদ্য : জীবদেহের বৃদ্ধির জন্য খাদ্য একান্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যোপাদান থেকে জীব পুষ্টিলাভ করে ও বৃদ্ধি ঘটে। 

(ii) হরমোন : জীবদেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদদেহে অক্সিন, সাইটোকাইনিন এবং প্রাণীদেহে গ্রোথ হরমোন, থাইরক্সিন প্রভৃতি প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন। রূপে ক্রিয়াশীল থাকে। 

প্রশ্ন 5. বিকাশ কাকে বলে? বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্কটি লেখো। 

উত্তর: বিকাশ (Development) : এককোশী জাইগোট থেকে বহুকোশী পূর্ণাঙ্গ দশা এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জীবদেহে বৃদ্ধি ও বিভেদনের মাধ্যমে যে-সমস্ত পরিবর্তনগুলি ঘটে, তাদের সামগ্রিকভাবে বিকাশ বলে। 

বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্ক : বৃদ্ধি হল জীবের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের স্থায়ী পরিবর্তন। জীবদেহের বৃদ্ধি কোশ বিভাজন ও কোশীয় পদার্থ সংশ্লেষের মাধ্যমে ঘটে। আবার, এককোশী জাইগোট থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগে অবধি একটি জীবের দেহে যে সামগ্রিক পরিবর্তন আসে তা হল বিকাশ। জীবের বিকাশ বৃদ্ধি ও বিভেদনের ওপর নির্ভর করেই ঘটে। সুতরাং, বিকাশ বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন 6. মানববিকাশের দশাগুলির নাম, সময়কাল, বৃদ্ধির প্রকৃতি সারণি আকারে উল্লেখ করো। 

উত্তর: পেশি ও দেহের বৃদ্ধির প্রকৃতি বৃদ্ধি ধনাত্মক, (ii) বৃদ্ধির হার অত্যন্ত দ্রুত, (iii) মস্তিষ্কের আয়তন দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় বড়ো থাকে, (iv) হাতের দৈর্ঘ্য আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় ৷ বছর (i) পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়, (ii) মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড দ্রুত বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করে, (iii) দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ধীরে ঘটে। (i) বৃদ্ধির হার মাঝারি, (ii) যৌন হরমোনের প্রভাবে জনন অঙ্গের বৃদ্ধি শুরু হয়, (ii) পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি ঘটে, (iv) গ্যামেট উৎপাদন শুরু হয়। (i) মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পূর্ণ হয়, (ii) বৃদ্ধির হার দ্রুত হয়, (ii) পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি ঘটে এবং শারীরিক ও জননগত পরিপূর্ণতা লাভ হয়। (iv) জনন অঙ্গ পরিপূর্ণ- রূপে বিকশিত হয়। (ii) শারীরিক সক্ষমতা কমতে থাকে, (iii) অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবক্ষয় ঘটে এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় । 60 বছরের পর (i) ঋণাত্মক বৃদ্ধি ঘটে, সময়কাল প্রথম মাস (i) মানববিকাশের দশা সদ্যোজাত (New born 2 মাস – 11 12 – 18 বছর 19 - 60 বছর শৈশব (Childhood) বয়ঃসন্ধি (Adoles cence or Puberty) পরিণত দশা (Adult ) অন্তিম পরিণতি দশা বা বার্ধক্য (Senescence)।

প্রশ্ন 7. জীবনবিজ্ঞান ও পরিবেশ সহায়িকা (দশম) শৈশবকাল কাকে বলে? এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 

উত্তর: শৈশবকাল (Childhood) : মানবশিশুর 2 মাস থেকে 11 বছর বয়স পর্যন্ত যে সময়কালে দৈহিক বৃদ্ধি ধীরে ঘটে এবং মানসিক, বুদ্ধিগত ও অনুভূতিসূচক বিকাশ ঘটে, তাকে শৈশবকাল বলে। ও থাইমাস গ্রন্থি নিঃসৃত থাইমোসিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ও শিশুর জন্মের পর থেকে 2 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে ইনফ্যান্সি 

মানুষের শৈশবকালের বৈশিষ্ট্যসমূহ: বৃদ্ধি ধীরগতিতে ঘটে। ও বৃদ্ধি প্রধানত পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন পিরিয়ড বলে। এই সময়ের মাঝামাঝি থেকে শিশুরা শব্দ করতে, হামাগুড়ি দিয়ে স্থান ত্যাগ করতে, বিভিন্ন বস্তু ও মানুষকে চিনতে, বসতে এবং অল্প দাঁড়াতে, টলেটলে হাঁটতে (টোডলার) পারে। 2 বছরের পর শিশু কথা বলতে শেখে, মনোভাব প্রকাশ করতে পারে এবং খেলাধূলার মাধ্যমে আনন্দ পেতে শেখে। ও এই সময় শিশুর বৃদ্ধি নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘটে। শিশুর মনের ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।

প্রশ্ন 8. বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে? বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের পরিবর্তনগুলি উল্লেখ করো। * | 

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty or Adolescence) : মানব বিকাশের যে সময়কালে (12–18 বছর পর্যন্ত) স্ত্রী ও পুরুষদেহে দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়, মুখ্য জনন অঙ্গের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়, জনন অঙ্গের অন্তঃক্ষরণধর্মী কাজ ও গ্যামেট উৎপাদন শুরু হয় এবং গৌণ যৌন লক্ষণের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটে, তাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।

বয়সে মানুষের পরিবর্তন: স্ত্রীদেহে পরিবর্তন দেহের উচ্চতা ও ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটে ও পরিপূর্ণতা লাভ করে। দেহের উচ্চতা ও ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। | প্রোটিন সংশ্লেষ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেহে কাঁধ, বুক, হাত, পা প্রভৃতি স্থানে পেশির বৃদ্ধি ঘটে ফলে দেহ পেশিবহুল হয়। গোঁফ দাড়ির আবির্ভাব ঘটে, পিউবিক লোম সৃষ্টি হয়। ত্বকের নীচে ফ্যাট সদরের ফলে ত্বক নমনীয় ও মসৃণ হয়। পুরুষদেহে পরিবর্তন অস্থিতে ক্যালশিয়াম সায় বৃদ্ধি পায়, ফলে অস্থি মজবুত হয়। সিবেসিয়াস গ্রন্থির অতি সক্রিয়তার ফলে অনেক সময় মুখে ব্রণ মুখ্য জনন অঙ্গের (গোনাড) পরিপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটে এবং টেস্টোস্টেরন দেখা দেয়। হরমোন ক্ষরণ ও শুক্রাণু উৎপাদন শুরু হয়। মুখ্য জনন অঙ্কোর (গোনাড) পরিণতি প্রাপ্তি ঘটে এবং ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণ, ডিম্বাণু উৎপাদন ও রজঃচক্র শুরু হয়, গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশিত হয়। কণ্ঠস্বর ভারী হয়। পিউবিক লোন সৃষ্টি হয়। অ্যাডামস অ্যাপেলসহ অন্যান্য গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশিত হয়। গলার স্বর সুরেলা ও তীক্ষ্ণ হয়। মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয়। স্বভাব কোমল ও নারীসুলভ হয়। পুরুষোচিত স্বভাব প্রকাশ পায়।

প্রশ্ন 9. বার্ধক্য দশা কাকে বলে? এই দশার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 

উত্তর: বার্ধক্যদশা (Senescence) : সম্পূর্ণ পরিণতি লাভের পর জীবনের যে সময়কালে (60 বছর বয়সের পর) দৈহিক গঠন ও শারীরবৃত্তীয় কাজের অবনতি ঘটে এবং দেহে বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত লক্ষণ প্রকাশিত হয়, তাকে সামগ্রিকভাবে বার্ধক্য বলে। 

মানুষের বার্ধক্য দশার বৈশিষ্ট্য : 060 বছর বয়সের পর থেকে মানুষের বার্ধক্য দশা শুরু হয়। ও এই সময় স্ত্রী ও পুরুষদেহে উত্তর বার্ধক্য ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধি ছাড়া আর অন্য কোনো বৃদ্ধি ঘটে না। ও অস্থি ও পেশির অবক্ষয় শুরু হয়, ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় ও ত্বক কুঁচকে যায়। মেলানিন উৎপাদন কমে যায়, ফলে চুল সাদা হয়ে যায়। ৩ দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ও হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও বৃক্কের কাজ হ্রাস পায়, পরিপাক ক্ষমতা কমে যায়। ও মহিলাদের 45-50 বছর বয়সে রজঃচক্রের সমাপ্তি ঘটে। একে রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ (Menopause) বলে। @ পুরুষদেহে শুক্রাণু উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যায়। © সামগ্রিকভাবে সমস্ত দেহে ও মনে অবক্ষয়জনিত পরিবর্তন ঘটে। 

অনুরূপ প্রশ্ন : মানব বিকাশের অন্তিম পরিণতি বা বার্ধক্য দশায় দৃষ্টিশক্তি এবং অস্থিসংক্রান্ত দুটি পরিবর্তন উল্লেখ করো। 

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর: 

প্রশ্ন 1.জীবদেহে বৃদ্ধি কীভাবে ঘটে ? 

উত্তর: বৃদ্ধি প্রত্যেক জীবের একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য। জীবদেহের কোশগুলি মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা বিভাজিত হয় এবং সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। এরপর ক্রমাগত জল গ্রহণ বা জীবিত বস্তু সংশ্লেষের ফলে কোশের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। এরপর কোশগুলি বিভিন্ন প্রকার কলায় বিভেদিত হয় এবং নির্দিষ্ট কোনো কাজ করার বিশেষত্ব অর্জন করে।

Advanced Studies:

 বৃদ্ধির পদ্ধতি : জীবদেহে বৃদ্ধি প্রধানত তিনভাবে ঘটে। যথা— অক্সেটিক বৃদ্ধি (Auxetic growth), ও মাল্টিপ্লিকেটিভ বৃদ্ধি (Multiplicative growth), ও অ্যাক্লেশনারি বৃদ্ধি (Accretionary growth)। 

অক্সেটিক বৃদ্ধি (Auxetic growth) : যে পদ্ধতিতে জীবদেহের কোশে প্রোটোপ্লাজমীয় পদার্থ সংশ্লেষের ফলে জীবদেহের আয়তন বৃদ্ধি ঘটে, তাকে অক্সেটিক বৃদ্ধি বলে। এই পদ্ধতিতে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে না। যেমন- - কিছু নিমাটোড (অ্যাসকারিস), রটিফার, টিউনিকেট (হার্ডমেনিয়া) প্রভৃতি প্রাণীতে ঘটে। 

মাল্টিপ্লিকেটিভ বৃদ্ধি (Multiplicative growth) : যে পদ্ধতিতে কোশের আয়তন বৃদ্ধি ও সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে, তাকে মাল্টিপ্লিকেটিভ বৃদ্ধি বলে। এই সময় কোশের দ্রুত মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। যেমন— সমস্ত বহুকোশী জীবদেহের দৈহিক বৃদ্ধি এই পদ্ধতিতে ঘটে। 

অ্যাক্সেশনারি বৃদ্ধি (Accretionary growth) : প্রাণীদেহে বিভিন্ন প্রকার জৈবিক পদার্থের সংশ্লেষের মাধ্যমে (যেমন— যোগকলার ধাত্র, তন্তু প্রভৃতি) যে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে অ্যাক্রেশনারি বৃদ্ধি বলে। যেমন— কঙ্কাল পেশির বৃদ্ধি, স্নায়ুকোশের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 2. জীবদেহে বৃদ্ধির কারণগুলি লেখো। উত্তর। 

উত্তর: জীবাদাহ বৃদ্ধির কারণ : মাইটোসিস কোশ বিভাজন। ও কলা, অঙ্গ প্রভৃতি গঠন। ও প্রোটোপ্লাজমীয় পদার্থ সংশ্লেষ। ও জীবদেহে এবং কোশে বিভিন্ন প্রকার পদার্থ সঞ্চয়। যেমন- (i) উদ্ভিদদেহে লিগনিন, সুবেরিন, কিউটিন প্রভৃতি এবং (ii) প্রাণীদেহে ধাত্র, তত্ত্ব, Ca, P প্রভৃতি সঞ্জয়।

প্রশ্ন 3. প্রাণীর বৃদ্ধির পর্যায়গুলি কী কী ? সংক্ষেপে লেখো। উিত্তর প্রাণীর বৃদ্ধির পর্যায়কে সাধারণভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়—

1. ভ্রূণের পরিস্ফুটন : এই পর্যায়ে জাইগোট বিভাজিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। 

2. ভ্রূণোত্তর পরিস্ফুটন : এই পর্যায়ে ভ্রূণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে শিশু প্রাণীতে পরিণত হয়। 

3. শিশু প্রাণীর পরিণতি : এই পর্যায়ে জন্মগ্রহণের পর শিশু প্রাণী বৃদ্ধি পেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয় ও পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়। 

প্রশ্ন 4. উন্নত উদ্ভিদের দেহে বৃদ্ধি কীভাবে ঘটে? 

উত্তর: উন্নত উদ্ভিদদেহে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বৃদ্ধি ঘটে_ 

কোশ বিভাজন দশা : এই দশায় উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলের (মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ) কোশগুলি ক্রমাগত মাইটোসিস কোশ বিভাজন দ্বারা বিভাজিত হয়ে অসংখ্য অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। 

কোশের আকার বৃদ্ধি বা দীর্ঘাকরণ দশা : এই দশায় অপত্য কোশগুলি আয়তনে বাড়তে থাকে এবং কৌশগুলির মধ্যে ভ্যাকুওলের সৃষ্টি হয়। ভ্যাকুওলের মধ্যে কোশরস রসস্ফীতিজনিত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে কোশগুলি দীর্ঘ ও প্রসারিত হয়। কোশগুলির মধ্যে ক্রমাগত জলগ্রহণ ও জীবিত বস্তু সংশ্লেষের ফলে কোশের আয়তন বৃদ্ধি পায়।

কাশীয় বিভেদন দশা : এই দশায় পরিণত কোশগুলি বিভিন্ন কলায় বিভেদিত হয়। কোশগুলির বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হলে নানারকম কাজের জন্য পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয় এবং বিভিন্ন প্রকার কলা ও কলাতন্ত্র গঠন করে।

প্রশ্ন 5. উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে আলোক ও তাপমাত্রার ভূমিকা লেখো। [ME 01] 

উত্তর: উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে আলাকের ভূমিকা : o কোশীয়, প্রোটোপ্লাজমীয় সজীবতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও সঠিক মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক প্রয়োজনীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। ও উদ্ভিদের খাদ্য সংশ্লেষের জন্য বা সালোকসংশ্লেষের জন্য আলোর প্রয়োজন। © সঠিক আলোর তীব্রতা ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য (লাল ও নীল সূর্যরশ্মি) উদ্ভিদের বৃদ্ধি সহায়ক। 

উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে তাপমাত্রার ভূমিকা: বিভিন্ন প্রকার জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার জন্য ও উৎসেচকের সক্রিয়তার জন্য উদ্ভিদের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। ও প্রোটোপ্লাজমের সজীবতা রক্ষা, পুষ্প পরিস্ফুটন ও বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমের জন্যও নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। © 25°C-35°C তাপমাত্রা হল উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য পরিমিত তাপমাত্রা (Optimum temparature) 16 

প্রশ্ন 6. মানবদেহে বৃদ্ধির প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো। 

উত্তর: মানবাদাহ বৃদ্ধির প্রকারভেদ : 1. কোশের সংখ্যাজনিত বৃদ্ধি (Cell proliferation) : কোশ বিভাজনের মাধ্যমে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটিয়ে কোনো অঙ্গের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। যেমন— চোখের লেন্সের বৃদ্ধি। 

2. কোশের আয়তনজনিত বৃদ্ধি (Cell enlargement) : কোশের প্রোটোপ্লাজমীয় পদার্থের সংশ্লেষের মাধ্যমে কোশের আয়তন বৃদ্ধির ফলে কোনো অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। যেমন— হৃৎপেশি, কঙ্কাল পেশি এবং নিউরোনের বৃদ্ধি।

3. কোশের সঞ্চয়জনিত বৃদ্ধি (Growth by accretion) : অতিরিক্ত পরিমাণ বহিঃকোশীয় পদার্থ নির্গত ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে বৃদ্ধি ঘটে। যেমন – অস্থি ও তরুণাস্থির বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 7. বৃদ্ধির হার বলতে কী বোঝো? বৃদ্ধির হারে কী কী পর্যায় দেখা যায়? 

উত্তর: বৃদ্ধির হার : কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে জীবদেহের বৃদ্ধির মাত্রাকে বৃদ্ধির হার (Rate of growth) বলে। জীবের জীবনকালে বৃদ্ধির হারকে লেখচিত্র দ্বারা নির্দেশ করলে যে ‘S’ আকৃতির কার্ভ পাওয়া যায়, তাকে বৃদ্ধির ‘সিগময়েড কার্ভ' বলে। 

বৃদ্ধির হারের পর্যায় : বৃদ্ধির হারকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়-

1. বিলম্বকাল বা ল্যাগ দশা : প্রাথমিক অবস্থায় বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম থাকে। 

2. মুখ্য বৃদ্ধিকাল বা লগ দশা : এই অবস্থায় দ্রুত হারে বৃদ্ধি ঘটে। এই সময় প্রাণীদেহে কলা ও অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। 

3. হ্রাস দশা বা ডিসেলেরেটিং - হ্রাস দশা দশা : লগ দশার পরে বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমতে থাকে । → বৃদ্ধির হার ← লগ দশা। 

4• স্থির দশা বা স্টেশনারি ← ল্যাগ দশা দশা : বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত শর্ত নির্দিষ্ট থাকায় জীবের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন 1. উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে বৃদ্ধির স্থান কী ? 

উত্তর: উদ্ভিদাদাহ : কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগ, পত্রবৃন্ত, পত্রফলক, অগ্রমুকুল ও কাক্ষিক মুকুল। প্রাণীদেহে : সমস্ত জীবকোশ। 

প্রশ্ন 2. বিভেদন বা Differentiation বলতে কী বোঝো? 

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় কোশের স্থায়ী ও গুণগত পরিবর্তন ঘটে ও বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির কোশ সৃষ্টি হয়, তাকে বিভেদন বলে।

প্রশ্ন 3. বৃদ্ধির দশা হিসেবে বিভেদন দশার তাৎপর্য কী ?

উত্তর: বিভেদন হল কোশের স্থায়ী ও গুণগত মানের পরিবর্তন, যার ফলে উদ্ভিদে বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির কোশ, কলা বা অঙ্গের সৃষ্টি হয়। এর ফলে উদ্ভিদদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়া বিভেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহে যে ক্রমবিভাজন ঘটে তার দ্বারা পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়। যেমন— বিভেদনের ফলে সৃষ্ট প্যারেনকাইমা খাদ্য উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে, ফলে প্রোটোপ্লাজমের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায় ও উদ্ভিদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে।

প্রশ্ন 4. ধনাত্মক বৃদ্ধি ও ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝো? 

উত্তর: জীবদেহে অপচিতি বিপাক অপেক্ষা উপচিতি বিপাক বেশি হলে যে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে ধনাত্মক বৃদ্ধি বলে। যেমন— জীবের মুখ্য বৃদ্ধিকালের দ্রুত হারে বৃদ্ধি। " জীবদেহে উপচিতি বিপাক অপেক্ষা অপচিতি বিপাক বেশি হলে ঋণাত্মক বৃদ্ধি ঘটে। যেমন— বার্ধক্যের সময় ঋণাত্মক বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। 

প্রশ্ন 5. নির্ধারিত বৃদ্ধি ও অনির্ধারিত বৃদ্ধি বলতে কী বোঝো? 

উত্তর: জীবদেহের যে বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়, তাকে নির্ধারিত বৃদ্ধি বলে। যেমন— একবর্ষজীবী উদ্ভিদরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ফুল, ফল ধারণ করে ও মারা যায়। জীবদেহের যে বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর না থেমে, মৃত্যুর আগে পর্যন্তও চলতে থাকে, তাকে অনির্ধারিত বৃদ্ধি বলে। যেমন—বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের শীর্ষ ভাজক কলার বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 6. সমানুপাতিক ও অসমানুপাতিক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায় ? 

উত্তর: যে ধরনের বৃদ্ধিতে জীবদেহের সব অঙ্গ সমান অনুপাতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাকে সমানুপাতিক বৃদ্ধি বা আইসোমেট্রিক বৃদ্ধি (Isometric growth) বলে। যেমন— মাছের বৃদ্ধি। 

যে ধরনের বৃদ্ধিতে জীবদেহের সব অঙ্গ সমান অনুপাতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না, কোনো কোনো অঙ্গ ধীরে ধীরে বাড়ে, আবার কোনো কোনো অঙ্গ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাকে অসমানুপাতিক বৃদ্ধি বা অ্যালোমেট্রিক বৃদ্ধি (Allometric growth) বলে। যেমন— মানব ভূণের বৃদ্ধি।

প্রশ্ন 7. বিচ্ছিন্ন ও অবিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়? 

উত্তর: জীবের বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট গতিতে সম্পন্ন হয়। কিন্তু কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে দেহের বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে এসে নেমে যায় এবং পরে পুনরায় বৃদ্ধির নতুন পর্যায় শুরু হয়। একে বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি বলে। উদাহরণ— সন্ধিপদী প্রাণীদের ক্ষেত্রে একটি ইনস্টার দশা থেকে অন্য ইনস্টার দশায় প্রবেশের মধ্যবর্তী সময়ে বৃদ্ধি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। 

বেশির ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। বৃদ্ধির দশাগুলি নিরন্তরভাবে চলতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত দেহের সর্বাধিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। একে অবিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি বলে। উদাহরণ— উচ্চতর প্রাণীদের যথা— হাতি, বানর ইত্যাদির বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 8. নিয়ত ও অনিয়ত বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়? 

উত্তর: জীবদেহের বৃদ্ধি নির্দিষ্ট জীবনকাল পর্যন্ত হলে, তাকে নিয়ত বৃদ্ধি বলে। যেমন— মানুষের বৃদ্ধি। জীবদেহে আমৃত্যু বৃদ্ধি ঘটলে, তাকে অনিয়ত বৃদ্ধি বলে। যেমন— উদ্ভিদের বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 9. ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধি কাকে বলে ? 

উত্তর: কিছু কিছু প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহের কোনো কলাকোশ বা অঙ্গ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, কোশ বিভাজন ও কোশ বিভেদীকরণের মাধ্যমে সেই ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের পুনরায় তৈরি হওয়ার ঘটনাকে ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধি বলে। যেমন— কেঁচোর মস্তকের প্রথম চারটি খণ্ডক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুনরায় গঠিত হয় ৷  

প্রশ্ন 10. মুখ্য বৃদ্ধিকাল বলতে কী বোঝো? 

উত্তর: মুখ্য বৃদ্ধিকাল (Grand period of growth) : বৃদ্ধির যে সময়কালে জীবদেহে কোশ বিভাজনের হার, আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, তাকে মুখ্য বৃদ্ধিকাল বলে। যেমন— @ উদ্ভিদদেহে বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম ও চারাগাছের বৃদ্ধি এবং ও মানুষের বয়ঃসন্ধিকালের বৃদ্ধি হল মুখ্য বৃদ্ধিকাল। জেনে রাখো : মুখ্য বৃদ্ধিকালে কোশ বিভাজনের মাধ্যমে কোশের সংখ্যা | জ্যামিতিক হারে বাড়ে, এইজন্য একে এক্সপোনেনশিয়াল বৃদ্ধি বলে। 

প্রশ্ন 11. কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক কী ? * [ME'06, 02] 

উত্তর: জীবদেহে বৃদ্ধির প্রথম ও প্রধান শর্ত হল কোশ বিভাজন, মাইটোসিস বিভাজনের ফলে জীবদেহে কোশের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। ফলে, জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কোশ বিভাজন ছাড়া জীবদেহের বৃদ্ধি সম্ভব নয় । 

প্রশ্ন 12. বৃদ্ধি ও জননের মধ্যে সম্পর্ক কী ?

উত্তর: দেহকোশ, দেহাংশ বা দুটি সম/বিষম জাতীয় গ্যামেটের মিলনের ফলে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি হল জনন। জননের পর সৃষ্ট অপত্য জীবের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। আবার, বৃদ্ধি হল কোশ বিভাজন ও কোশের আয়তন বৃদ্ধি। জনন সম্পন্ন হলে অপত্যের সৃষ্টি হয় এবং কোশ বিভাজন ও কোশের আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে তা পূর্ণাঙ্গ জীবে পরিণত হয়ে জনন সম্পন্ন করে। অর্থাৎ, বৃদ্ধি ও জনন হল পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। দেহের নির্দিষ্ট বৃদ্ধির পর জনন হবে এবং জননের পর অপত্যর বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজনীয়। 

প্রশ্ন 13. প্রত্যক্ষ পরিস্ফুরণ (Direct development) কাকে বলে ? 

উত্তর: প্রাণীদেহে যে পরিস্ফুরণ বা বিকাশে ভ্রূণ থেকে কোনো অন্তর্বর্তী দশা ছাড়া সরাসরি শিশু প্রাণী গঠিত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ পরিস্ফুরণ বলে। যেমন— সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে ঘটে।

প্রশ্ন 14. পরোক্ষ পরিস্ফুরণ (Indirect development) বলতে কী বোঝো? 

উত্তর: প্রাণীদেহে যে পরিস্ফুরণ বা বিকাশে স্বাধীনজীবী অন্তর্বর্তী কয়েকটি দশার রূপান্তরের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রাণী গঠিত হয়, তাকে পরোক্ষ পরিস্ফুরণ বলে। যেমন— মাছির পরিস্ফুরণ (নিষিক্ত ডিম → ম্যাগট → পূর্ণাঙ্গ মাছি), ব্যাঙের পরিস্ফুরণ (নিষিক্ত ডিম → ব্যাঙাচি → পূর্ণাঙ্গ ব্যাং)। 

প্রশ্ন 15. মানব শিশুর জন্মের পর বৃদ্ধি ও বিকাশ কীভাবে ঘটে? 

উত্তর:  মানব শিশুর জন্মের পর বৃদ্ধি ও বিকাশ : জন্মের পর শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এই সময় হাত ও পায়ের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ও প্রায় 22 বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটে এবং তারপর বৃদ্ধি থেমে যায়। এরপর কেবলমাত্র ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধি ঘটে। ও জন্মের পর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি কম হয় এবং পেশির বৃদ্ধি অত্যন্ত বেশি হয়।

প্রশ্ন 16. সদ্যোজাত দশা ও পরিণতিকাল বলতে কী বোঝায়? 

উত্তর: মানবশিশুর জন্মের পর থেকে 21 মাস পর্যন্ত যে সময়কালে শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করে এবং শিশুর আকার, আয়তন ও ওজনের ধীর গতিতে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে সদ্যোজাত দশা বলে । মানব জীবনের 19-60 বছর বয়স পর্যন্ত যে সময়কালে মানুষের দৈহিক, মানসিক, বুদ্ধিগত প্রভৃতি ক্ষেত্রে পূর্ণ বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে, তাকে পরিণতিকাল বলে। 

প্রশ্ন 17. থাইমাস গ্রন্থিকে বার্ধক্যের জৈবঘড়ি বলে কেন? 

উত্তর: বিজ্ঞানী বার্নেট (Bernet)-এর মতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহে থাইমাস গ্রন্থির অবক্ষয় ঘটতে থাকে। ফলে থাইমোসিন হরমোন ক্ষরণ কমে যায় এবং দেহে বার্ধক্যের লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, থাইমাস গ্রন্থির অবক্ষয়ের ফলেই দেহে বার্ধক্য আসে। এজন্য থাইমাস গ্রন্থিকে বার্ধক্যের জৈবঘড়ি (Late Biological Clock) বলে। 

প্রশ্ন 18. উদ্ভিদের বৃদ্ধি বলয় (Growth ring) কী ? 

উত্তর: দ্বিবীজপত্রী, বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল উদ্ভিদের কাণ্ডে কতকগুলি এককেন্দ্রীয় স্তর দেখা যায়, যা ওই উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধির ফলে প্রত্যেক বছর বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে জমা হয়, যা দেখে উদ্ভিদের বয়স গণনা করা যায়, একে উদ্ভিদের বৃদ্ধি বলয় বা বর্ষবলয় বা বার্ষিক  উদ্ভিদের বলয় বলে।

For High-Flyers:

প্রশ্ন 1.উদ্ভিদের বৃদ্ধি কীভাবে প্রমাণ করা যায়? 

উত্তর: একটি সহজ পরীক্ষার দ্বারা উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রমাণ করা যায় । একটি সদ্য অঙ্কুরিত ছোলা/মটর বীজের ভ্রূণমূলে স্থায়ী কালির দ্বারা সমান দূরত্বে কয়েকটি দাগ কেটে দুদিন অপেক্ষা করা হল। দুদিন পর দেখা যাবে যে, কালির দাগগুলি পরস্পর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এই দূরত্ব ভ্রূণমূলের অগ্রপ্রান্তে বেশি এবং গোড়ায় কম (কারণ— ভ্রূণমূলের অগ্রভাগ গোড়ার থেকে বেশি বাড়ে)। কালির দাগগুলি উদ্ভিদের ভ্রূণমূল বৃদ্ধির কারণে পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

প্রশ্ন 2. প্রাণীর বৃদ্ধি কীভাবে প্রমাণ করা যায়? 

উত্তর : একটি সহজ পরীক্ষার দ্বারা প্রাণীর বৃদ্ধি প্রমাণ করা যায়। চার/পাঁচ বছর বয়সের একটি শিশুর হাতের আঙুলের এক্স-রে চিত্র নিলে, আঙুলের হাড়গুলির মধ্যে বেশি ফাঁকা স্থান দেখা যাবে (তরুণাস্থির উপস্থিতির জন্য)। ওই একই শিশুর যদি আবার কিছু বছর পর হাতের আঙুলের এক্স-রে চিত্র নেওয়া হয় তবে আগের মতো অত ফাঁক দেখা যাবে না। এর কারণ হাতের আঙুলের হাড়গুলির বৃদ্ধি। 

প্রশ্ন 3.অঙ্গ সৃষ্টি বা Morphogenesis কাকে বলে? 

উত্তর : কোশীয় বিভেদন প্রক্রিয়াতে সমআকৃতির কোশগুলি নতুন প্রকারের কোশ ও কলায় বিভেদিত হয়। যে প্রক্রিয়াতে এই বিভেদন বা পৃথকীকরণের মাধ্যমে নতুন নতুন অঙ্গ সৃষ্টি হয়, তাকে অঙ্গ সৃষ্টি বা মরফোজেনেসিস (Morphogenesis) বলে। 

প্রশ্ন 4. আপেক্ষিক বৃদ্ধি হার কাকে বলে ? 

উত্তর: সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোনো জীবের পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধিজনিত পরিবর্তনের হারকে আপেক্ষিক বৃদ্ধি হার বলে।




No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();