জনন (Reproduction): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান অধ্যায় ২.২ | class 10 life science chapters 2.2 questions answer |
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. জনন (Reproduction) কাকে বলে ? জননের তাৎপর্যগুলি আলোচনা করো। *
উত্তর : জনন (Reproduction) : যে জৈবিক পদ্ধতিতে পরিণত জীব নিজ সত্তা ও আকৃতিবিশিষ্ট অপত্য জীব সৃষ্টি করে এবং সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রজাতির অস্তিত্ব ও বংশধারাকে অক্ষুণ্ণভাবে বজায় রাখে, তাকে জনন বা রিপ্রোডাকশন বলে।
জননের তাৎপর্য :
1• প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখা : প্রত্যেকটি জীব জননের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টির দ্বারা বংশপরম্পরায় প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
2. সংখ্যা বৃদ্ধি : জননের মাধ্যমে প্রতিটি জীব নিজ প্রজাতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং বংশানুক্রমিক ধারা অব্যাহত রাখে।
3. বংশগতি ও বংশবিস্তার : জননের মাধ্যমে প্রত্যেকটি জীব নিজ সত্তা ও আকৃতিবিশিষ্ট অপত্য জীব সৃষ্টি করে। এর ফলে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বংশপরম্পরায় সঞ্চারণ ঘটে ও বংশবিস্তার ঘটে।
4• বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা : জীবের মৃত্যুর কারণে এই জগতে জীবের সংখ্যা হ্রাস পায়। এই শূন্যতা পূরণের জন্য জননের মাধ্যমে জীবেরা সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ফলে, জীবজগতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।
5. পরিব্যক্তি ও প্রকরণ সৃষ্টি : যৌন জননের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ ঘটার ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। ফলে, প্রকরণের (Variation) উদ্ভব ঘটে এবং বংশগত পদার্থের মধ্যে পরিব্যক্তি (Mutation) ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
6. অভিব্যক্তি ও অভিযোজন : যৌন জননের মাধ্যমে জীব- জগতে সৃষ্ট অনুকূল পরিব্যক্তি ও প্রকরণগুলি সহজেই পরিবেশে অভিযোজিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে জীবের অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 2.অযৌন জনন কাকে বলে? অযৌন জননের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি উদাহরণসহ সারণি আকারে উল্লেখ করো?
উত্তর: আমীন জনন (Asexual reproduction) : যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটি জননকোশের মিলন ছাড়াই একটিমাত্র জনিতৃ জীব থেকে দেহকোশ বিভাজনের মাধ্যমে বা রেণু উৎপাদনের দ্বারা অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে।
জেনে রাখো : অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় জনিতৃ দেহকোশ (Somatic cell) বিভাজিত হয়ে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় বলে, একে সোমাটোজেনিক বা ব্লাস্টোজেনিক জনন -ও বলা হয়।
প্রশ্ন 3. উদ্ভিদের অযৌন জনন পদ্ধতিগুলি উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর: উদ্ভিদদেহে অযৌন জনন সাধারণত খুবই প্রচলিত দুটি পদ্ধতি—খণ্ডীভবন এবং রেণু উৎপাদনের দ্বারা ঘটে থাকে। সাধারণত স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালের দেহে খণ্ডীভবনের দ্বারা এবং ছত্রাক,মস, ফার্ন প্রভৃতি উদ্ভিদ রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে অযৌন জনন পদ্ধতি সম্পন্ন করে।
1. খন্ডীভবন পদ্ধতি বা ফাগামান্টশন (Fragmentation) : (i) স্পাইরোগাইরা খণ্ডীভবন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন করে।
(ii) এদের দেহটি সূত্রাকার প্রকৃতির, তাই দেহটি জলের ধাক্কায় বা জলজ প্রাণীর সাহায্যে বা অন্য কোনো উপায়ে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়।
(iii) পরবর্তীকালে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে প্রতিটি খণ্ড আকারে বৃদ্ধি পায় এবং নতুন সূত্র গঠন করে। মাতৃদেহ -বিভাজন অপত্য স্পাইরোগাইরা স্পাইরোগাইরার খণ্ডীভবন
2. রেণু উৎপাদন বা স্পোরুলেশন (Sporulation) : এই পদ্ধতিতে উদ্ভিদের নির্দিষ্ট দেহাঙ্গে উৎপন্ন রেণুর মাধ্যমে অল্প সময়ে জীবের দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে। উদ্ভিদদেহের যে থলির মতো অঙ্গে রেণু গঠিত হয়, তাকে রেণুস্থলী বা স্পোরাঞ্জিয়াম (Sporangium) বলে। রেণুর গঠন পরিণত হলে, রেণুগুলি রেণুস্থলীর কোশপ্রাচীর বিদীর্ণ করে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনুকূল পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে নতুন উদ্ভিদদেহ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— মস, ফার্ন, ছত্রাক এবং অপুষ্পক উদ্ভিদ।
বেণুর প্রকারভেদ :
1. চলরেণু বা জুস্পোর গঠনের মাধ্যমে : ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি এককোশী শৈবালের কোশে উৎপন্ন হয় । এই রেণুগুলি ফ্ল্যাজেলাযুক্ত, হ্যাপ্লয়েড এবং নগ্ন বা প্রাচীরবিহীন হয়।
2. অচলরেণু বা অ্যাপ্লানোস্পোর গঠনের মাধ্যমে : মিউকর, পেনিসিলিয়াম, অ্যাগারিকাস প্রভৃতি ছত্রাকে, ক্ল্যামাইডোমোনাস নামক শৈবালে ফ্ল্যাজেলাবিহীন, প্রাচীরযুক্ত, হ্যাপ্লয়েড অচলরেণু উৎপন্ন হয়।
3. ওইডিয়া গঠন : অ্যাগারিকাস ছত্রাকের অনুসূত্র বারবার খণ্ডিত হয়ে ওইডিয়া গঠন করে।
4. কনিডিয়া উৎপাদন : পেনিসিলিয়াম নামক ছত্রাকের বায়বীয় অনুসূত্রের বহির্ভাগে কনিডিয়া উৎপন্ন হয়।
5. সমরেণু গঠন : সমস্ত মস ও লাইকোপোডিয়াম, টেরিস প্রভৃতি ফার্নের রেণুস্থলীতে উৎপন্ন সমস্ত রেণু একই আকৃতি ও প্রকৃতিযুক্ত হয় ।
6. অসমরেণু উৎপাদন : সেলাজিনেলা, শুশনি প্রভৃতি ফার্নের রেণুস্থলীতে উৎপন্ন রেণুগুলি বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতিযুক্ত হয়।
জেনে রাখো সমরেণু (Homospore) : উদ্ভিদের রেণুস্থলীর মধ্যে একই আকার ও আয়তনের রেণু গঠিত হলে, তাকে সমরেণু বলে। উদাহরণ— মিউকর, লাইকোপোডিয়াম।
অসমরেণু (Heterospore ) : উদ্ভিদের রেণুস্থলীর মধ্যে বিষম | প্রকৃতির রেণু গঠিত হলে, তাদের অসমরেণু বলে। অসমরেণুর ছোটো | আকৃতির রেণুটিকে মাইক্রোস্পোর এবং বড়োটিকে ম্যাক্রোস্পোর বলে। উদাহরণ— ফার্ন, ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদ।
প্রশ্ন 4. প্রাণীজগতের বিভিন্ন অযৌন জননের পদ্ধতি উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রাণীজগতের বিভিন্ন প্রকার আযৗন জনন পদ্ধতি : - নিউক্লিয়াস
1• দ্বি-বিভাজন (Binary fission) : যে বিভাজন পদ্ধতিতে জনিতৃ কোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য প্রাণী সৃষ্টি করে, তাকে দ্বি-বিভাজন বলে। উদাহরণ— অ্যামিবা (এককোশী ব্যাকটেরিয়ার প্রাণীদেহে), দেহে এই দ্বি-বিভাজন পদ্ধতি দেখা যায়।
2.বহু বিভাজন (Mult- iple fission): যে বিভাজন পদ্ধতিতে বহুবার মাতৃকোশের বিভাজিত হয়ে একসঙ্গে বহুসংখ্যক অপত্য জীব সৃষ্টি করে, তাকে বহু বিভাজন বলে। উদাহরণ— প্লাসমোডিয়াম, অ্যামিবা প্রভৃতি আদ্যপ্রাণীতে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম অ্যামিবার দ্বি-বিভাজন অপত্য অ্যামিবা দেখা যায়। অপত্য প্লাসমোডিয়াম প্লাসমোডিয়ামের বহু বিভাজন - সাইজন্ট দশা
3. কোরকোদ্গম (Budding) : যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে মাতৃদেহের বাইরে বা ভিতরে এককোশী বা বহুকোশী কোরক গঠিত হয় এবং পরিণত কোরক মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন অপত্য প্রাণী সৃষ্টি করে, তাকে কোরকোদ্গম বা বাডিং বলে। উদাহরণ— সাইকন, হাইড্রা (বহিঃকোরক দ্বারা), স্পঞ্জ (অন্তঃকোরক বা গেমিউল দ্বারা) প্রভৃতি প্রাণীতে এবং ইস্ট নামক ছত্রাকে ঘটে।
4. পুনরুৎপাদন (Regeneration) : বহুকোশী প্রাণীদেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে পরিণত হলে, প্রতিটি খণ্ড থেকে কোশ বিভাজন ও পরিস্ফুরণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জীব সৃষ্টি হয় বা খণ্ডিত অঙ্গের পুনর্গঠন ঘটে। এই অযৌন জনন পদ্ধতিকে পুনরুৎপাদন বলে। উদাহরণ— মোলাস্কা পর্বের প্রাণীর পদ, তারামাছের বাহু, প্ল্যানেরিয়ার পূর্ণাঙ্গ দেহ গঠন।
জেনে রাখো: ওপালিনা-এ এক বিশেষ প্রকার অযৌন জনন পদ্ধতি | দেখা যায়, যেখানে বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত প্রাণীকোশে নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে। না কেবলমাত্র সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে। একে প্লাজমোটোমি বলে।
অযৌন জননকে অ্যাপোমিক্সিস বলা হয়।
স্পঞ্জ, সাগরকুসুম, তারামাছ প্রভৃতি প্রাণীরা খণ্ডীভবন প্রক্রিয়ার দ্বারা | অযৌন জনন সম্পন্ন করে। এই পদ্ধতিতে জনিতৃ মাতৃদেহ দুই বা ততোধিক | খণ্ডে বিভক্ত হয় এবং প্রতিটি খণ্ড কোশ বিভাজন ও পরিস্ফুরণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিণত হয়।
প্রশ্ন 5.অঙ্গজ জনন কাকে বলে? [ME [15] অঙ্গজ জননের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) : যে জনন প্রক্রিয়ায় জনিতৃ উদ্ভিদের কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাংশ জনিতৃ উদ্ভিদথেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির দ্বারা সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ জনন বলে।
অঙ্গজ জননের বৈশিষ্ট্য :
1.এটি একপ্রকার সরল ও অনুন্নত বংশবিস্তার পদ্ধতি যেখানে একটিমাত্র জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়।
2. অপত্য উদ্ভিদ সম্পূর্ণরূপে মাতৃ উদ্ভিদের মতো হয়।
3. অপত্য উদ্ভিদে নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হয় না।
4.অল্প সময়ে অসংখ্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।
5. জনুক্রম অনুপস্থিত এবং নতুন প্রজাতি সৃষ্টি বা অভিব্যক্তিতে কোনো ভূমিকা পালন করে না।
প্রশ্ন 6. উদ্ভিদজগতে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও। ** [ME 15,01] | উদ্ভিদের প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের প্রকারভেদ :
উত্তর :উদ্ভিদের প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের প্রকারভেদ :
1.রসালো মূলের সাহায্যে: কিছু কিছু উদ্ভিদের রসালো মূলে সৃষ্ট অস্থানিক মুকুলগুলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— রাঙাআলু, পটল, ডালিয়া প্রভৃতির অঙ্গজ জনন।
2.খর্বধারক-এর সাহায্যে : কাণ্ড থেকে নির্গত শাখার পর্বমধ্যগুলি ছোটো ও স্থূল। পর্ব থেকে অস্থানিক মূল উৎপন্ন হওয়ার পরবর্তী সময়ে মাতৃদেহ থেকে শাখা বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— কচুরিপানা, টোপাপানা প্রভৃতি।
3.পাতার সাহায্যে : কিছু কিছু উদ্ভিদের পাতার কিনারায় বা পত্রশিরায় অস্থানিক মুকুল জন্মায় এবং এগুলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— পাথরকুচি, হিমসাগর পাতার কিনারা ও বিগোনিয়া পাতার শিরা। |
জেনে রাখো : উদ্ভিদের দেহে আরও কয়েক প্রকার অযৌন জনন দেখা যায় - 1. পরিবর্তিত ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের সাহায্যে : (a) রাইজোম বা গ্রন্থিকন্দ বা গ্রন্থিকাণ্ড দ্বারা : উদ্ভিদের ভূনিম্নস্থ কাণ্ড মাটির নীচে সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি পায় এবং অস্থানিক মুকুল সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য উদ্ভিদ গঠন করে। উদাহরণ—আদা, হলুদ প্রভৃতির অঙ্গজ জনন। (b) টিউবার বা স্ফীতকন্দদ্বারা : উদ্ভিদের ভূনিম্নস্থ স্ফীত রসালো কাণ্ডের কাক্ষিক মুকুল ('চোখ') অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ – গোল আলুর অঙ্গজ জনন। হলুদের গ্রন্ধিকাণ্ড আলুর স্ফীতকন্দ 2. বায়বীয় কাণ্ডের সাহায্যে : ফণীমনসার রসালো ও স্থূল পর্ণকাণ্ডের | প্রতিটি খণ্ড মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। আবার, আখ গাছ-এর পর্ব থেকে সৃষ্ট অস্থানিক মূলসহ কাণ্ডের অংশ থেকেও নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। 3. অর্ধবায়বীয় কাণ্ডের সাহায্যে : (a) ধাবক বা রানার : লতানো বীরুৎ শ্রেণির উদ্ভিদের কাণ্ডের শাখাগুলি নরম, দীর্ঘ পর্বমধ্যযুক্ত এবং পর্ব থেকে নীচের দিকে অস্থানিক মূল ও উপরের দিকে বায়ব অংশ সৃষ্টি হয় যা পরবর্তী সময়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— আমরুল, দূর্বাঘাস প্রভৃতি। (b) খর্বধারক বা অফসেট : আগের উত্তরের 2 নং পয়েন্টটি দ্যাখো। 4. বুলবিলের সাহায্যে : কিছু কিছু উদ্ভিদের কাক্ষিক মুকুল খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত ও গোলাকার হয়, একে বুলবিল বলে। পরবর্তী সময়ে বুলবিল মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ— চুপড়ি আলু, খাম | আলু প্রভৃতি।
প্রশ্ন 7.কৃত্রিম অঙ্গজ জনন বলতে কী বোঝো? উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম অঙ্গজ জনন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর : কৃত্তিম অাজ জनन (Artificial vegetative reproduction) : মানুষের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যে কৃত্রিম পদ্ধতিতে জনিতৃ উদ্ভিদের কোনো অঙ্গকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করে ও মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়, তাকে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন বলে।
উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার কৃত্তিম অঙ্গজ জনন : 1. শাখাকলম বা কাটিং (Cutting): যে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদের পরিণত মূল, কাণ্ড বা পাতার অংশকে জনিতৃদেহ থেকে কেটে নিয়ে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়, তাকে শাখাকলম বা কাটিং বলে। উদাহরণ— গোলাপ, আম, কফি, চা, জবা, গন্ধরাজ, গাঁদা, লেবু প্রভৃতি উদ্ভিদে শাখাকলম করা হয়।
2. জোড়কলম বা গ্রাফটিং (Grafting) : দুটি একই প্রজাতির বা সমগোত্রীয় একটি উদ্ভিদের কাণ্ড বা শাখা (সিয়ন) অন্য একটি উদ্ভিদের মূলসহ কাণ্ডের (স্টক) সঙ্গে ক্যামবিয়াম কলাস্তর পর্যন্ত জুড়ে দিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টির বিশেষ কৃত্রিম অঙ্গজ জননকে জোড়কলম বা গ্রাফটিং বলে। উদাহরণ— আম, পেয়ারা, লেবু, আপেল প্রভৃতি গাছে জোড়কলম করা হয়।
3.অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন (Micropropaga tion) : কলাকর্ষণের মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে দ্রুত বহুসংখ্যক উদ্ভিদ উৎপাদনকে অণুবিস্তারণ বলে। উদাহরণ—প্রধানত অর্কিড জাতীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অণুবিস্তারণ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
Advanced Studies:
দ্রবণ উদ্ভিদের কৃত্রিম অঙ্গজ বিস্তারের ক্ষেত্রে আরও দুইরকম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। জনিতৃ উদ্ভিদের মাটির
1.দাবাকলম বা লেয়ারিং : এই কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে কাছাকাছি থাকা পর্বসহ শাখাকে বেঁকিয়ে মাটির নীচে চাপা দেওয়া হয়। মাটির নীচে শাখার পর্ব থেকে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হলে শাখাকে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়। উদাহরণ— লেবু, আপেল, নাসপাতি উদ্ভিদে দাবাকলম করা হয়।
2. গুটিকলম বা গুটি : গোলাপ, আম, লেবু, লিচু প্রভৃতি গাছের শাখার চারপাশ থেকে 3-5 cm ছাল তুলে গোবর সার, মাটি প্রভৃতি মিশিয়ে গুটির আকারে বেঁধে দেওয়া হয়। গুটির ওপর প্রতিদিন অল্প অল্প করে জল দেওয়া হয়। অস্থানিক মূল নির্গত হওয়ার পর গুটিকলমকে মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় ও অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 8. কলাকর্ষণ (Tissue culture) কাকে বলে? উদ্ভিদদেহে কলাকর্ষণের গুরুত্বগুলি লেখো।
উত্তর: কলাকর্ষণ (Tissue culture ) : পরীক্ষাগারে পরিশোধিত কাচের পাত্রে বিশেষ কর্ষণ দ্রবণে (Culture medium) পুষ্টি উপাদানের বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদ্ভিদের অন্তরিত (Isolated) প্রোটোপ্লাস্ট, কোশ, ভ্রূণ, বীজ বা অঙ্গের বৃদ্ধি ও পোষণ ঘটানোকে কলাকর্ষণ বা কলাপালন বা টিস্যু কালচার বলে। কলাকর্ষণের পুষ্টিমাধ্যমে কৃত্রিম অক্সিন কৃত্রিম সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করা হয়।
উদ্ভিদাদাহ কলাকর্ষণের গুরুত্ব :
1• উদ্ভিদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি : কলাকর্ষণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের দ্রুত বহুসংখ্যক চারা তৈরি করা যায়।
2. মাইক্রোপ্রোপাগেশন : বর্তমানে অরণ্য সৃষ্টিতে এবং উদ্যানবিদ্যায় মাইক্রোপ্রোপাগেশন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
3. বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ : বিরল প্রজাতি বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণে কলাকর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4• রোগমুক্ত উদ্ভিদ তৈরি : উদ্ভিদের শীর্ষমুকুলের কোশপালনের দ্বারা রোগমুক্ত উদ্ভিদচারা তৈরি করা হয়।
5• ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সৃষ্টি : বহিরাগত জিন প্লাসমিডের সাহায্যে বা সরাসরি প্রোটোপ্লাস্টের সংযোগ ঘটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরি করা যায়।
6. প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন : কলাকর্ষণের মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদার্থ যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, উপক্ষার, ভিটামিন, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়।
প্রশ্ন 9. যৌন জনন কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: যৌন জনন (Sexual Reproduction) : যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটি অসম আকৃতির বিপরীতধর্মী যৌন জননকোশের (পুংজননকোশ বা শুক্রাণু ও স্ত্রীজননকোশ বা ডিম্বাণু) মিলনে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে যৌন জনন বলে। উদাহরণ উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে যৌন জনন ঘটে। কিছু অনুন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে সকল উন্নত (যেমন— মিউকর, প্যারামেসিয়াম, হাইড্রা ইত্যাদির দেহেও) যৌন জনন ঘটে।
যৌন জননের বৈশিষ্ট্য :
1.নিম্নশ্রেণির জীবে যৌন জনন একই জীবদেহে ঘটলেও উন্নত জীবদেহে যৌন জননের জন্য দুটি বিপরীত লিঙ্গের জীবের প্রয়োজন হয়।
2. পুংজননকোশ ও স্ত্রীজনন কোশের মিলনে জাইগোট গঠিত হয়।
3. যৌন জননে অংশগ্রহণকারী জননকোশ হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতির হয় এবং মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়।
4.যৌন জননের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্যগুলির মধ্যে প্রকরণ বা ভেদ সৃষ্টি হয়।
5. যৌন জনন পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে জটিল ও সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি হওয়ায় সাধারণ অপত্য জীব উৎপাদনের হার কম থাকে।
6. এই পদ্ধতিতে অপত্য জীবে নতুন বৈশিষ্ট্যের সংযোজন হওয়ায় তা জৈব বিবর্তনকে সমৃদ্ধ করে।
প্রশ্ন 10. উদ্ভিদদেহে যৌন জননের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: যৌন জনন হল উন্নত ধরনের জনন প্রক্রিয়া যা গ্যামেট বা জননকোশ তৈরির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। উদ্ভিদদেহে জননকোশ বা গ্যামেট দু-প্রকার হয়। যথা— স্ত্রীগ্যামেট ও পুংগ্যামেট। উদ্ভিদদেহের যৌন জননকে মূলত দুভাগে ভাগ করা যায়— সংযুক্তি (Conjuga tion) ও সিনগ্যামি (Syngamy)।
1• সংযুক্ত (Conjugation) : সংযুক্তি হল সরলতম যৌন জনন পদ্ধতি যেখানে একই প্রজাতিভুক্ত, কিন্তু শারীরবৃত্তীয়ভাবে আলাদা দুটি জনিতৃ জীব (কনজুগ্যান্ট) অস্থায়ীভাবে সংশ্লেষণ নালি গঠনের মাধ্যমে দেহকোশের নিউক্লিয় পদার্থের মিলন ঘটিয়ে অপত্য তৈরি করে। এক্ষেত্রে, উৎপন্ন জাইগোটকে জাইগোস্পোর বলে। মিলনের পরে সংশ্লেষণ নালি বিলুপ্ত হয় এবং জনিতৃ জীব পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। তখন এদের এক্সকনজুগ্যান্ট (Ex-conjugant) বলে। উদাহরণ— এই প্রকার যৌন জনন স্পাইরোগাইরা (শৈবাল), মিউকর (ছত্রাক) প্রভৃতিতে দেখা যায় ৷
2. সিনগ্যামি (Syngamy) : এই প্রকার উন্নত যৌন জনন পদ্ধতিতে পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের স্থায়ী মিলন ঘটে জাইগোট উৎপন্ন হয়। সিনগ্যামি দু-প্রকার হয় – (i) আইসোগ্যামি (Isogamy) ও (ii) হেটারোগ্যামি (Heterogamy)।
(i) অইিসোগ্যামি (Isogamy) : এক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুংগ্যামেট সমআকৃতি সম্পন্ন হয়, সচল ও অচল উভয় প্রকার হতে পারে, উৎপন্ন জাইগোটকে জাইগোস্পোর বলে। উদাহরণ— ক্ল্যামাইডোমোনাস (শৈবাল), মিউকর (ছত্রাক) ইত্যাদি। (
ii) হেটারোগ্যামি (Heterogamy) : এক্ষেত্রে বিষম আকৃতির স্ত্রী ও পুংগ্যামেটের স্থায়ী মিলনে উস্পোর গঠিত হয়। এটি দু-প্রকার হয়— (a) অ্যানাইসোগ্যামি (Anisogamy) : মিলিত গ্যামেট দুটি আকার ও আয়তনে ভিন্ন হয়। এই ধরনের জননে পুংগ্যামেট আকারে ছোটো, সচল এবং স্ত্রীগ্যামেটটি আকারে বড়ো ও অচল প্রকৃতির হয় এবং গ্যামেট দুটির মিলন জনন অঙ্গের বাইরে ঘটে। উদাহরণ— ক্ল্যামাইডোমোনাস, স্পাইরোগাইরা প্রভৃতি শৈবাল।
(b) উগ্যামি (Oogamy) : এই প্রকার জননে অ্যানাইসোগ্যামি পদ্ধতির মতো পুংগ্যামেটটি আকারে ছোটো ও সচল হয় এবং স্ত্রীগ্যামেটটি আকারে বড়ো ও নিশ্চল হয়। স্ত্রীগ্যামেটটি স্ত্রীজনন অঙ্গের মধ্যে অবস্থান করে এবং পুংগ্যামেটটি স্ত্রীজনন অঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে নিষেক ঘটায়। উদাহরণ— উভোগোনিয়াম, ক্ল্যামাইডোমোনাস, ভলভক্স প্রভৃতি শৈবাল।
প্রশ্ন 11.প্রাণীদেহে যৌন জননের উদাহরণসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: প্রাণীদেহে যৌন জনন পদ্ধতিতে দুরকম যৌন জননকোশ অর্থাৎ, পুংগ্যামেট (শুক্রাণু) ও স্ত্রীগ্যামেটের (ডিম্বাণু) মিলনের ফলে নতুন অপত্যের সৃষ্টি হয়। প্রাণীদেহেও যৌন জনন দুভাবে সম্পন্ন হয়— সংযুক্তি (Conjugation) এবং ও নিষেক (Fertilization)।
1. সংযুক্তি (Conjugation) : এই যৌন জনন প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদদেহের ‘সংযুক্তি' জনন প্রক্রিয়ার মতোই সরল ও সংশ্লেষের মাধ্যমে ঘটে। প্যারামেসিয়াম হল সিলিয়াযুক্ত আদ্যপ্রাণী। প্রধানত অযৌন দ্বি-বিভাজন পদ্ধতিতে এরা বংশবিস্তার করে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই পদ্ধতিতে জননের ফলে এরা শারীরবৃত্তীয়ভাবে ও বিপাকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে, যৌন জনন পদ্ধতি অবলম্বন করে। এই পদ্ধতিতে একই প্রজাতিভুক্ত দুটি প্যারামেসিয়াম (জনিতৃ জীব যারা শারীরবৃত্তীয়ভাবে আলাদা) সংশ্লেষণ নালি (Conjugation tube) গঠনের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে যুক্ত হয় এবং নিউক্লিয় বস্তুর আদানপ্রদান ঘটায়। কনজুগ্যান্ট দুটির নিউক্লিয় বস্তু বিনিময়ের পর সংশ্লেষণ নালি অবলুপ্ত হয়ে যায়। এভাবে দুইবার বিভাজিত হয়ে মোট 4টি অপত্যের সৃষ্টি হয়।
2. নিষেক (Fertilization) : পুংগ্যামেট বা শুক্রাণু এবং স্ত্রীগ্যামেট বা ডিম্বাণু কোশের মিলন পদ্ধতিকে নিষেক বলে। কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী, যেমন— হাইড্রা, কেঁচো এবং সকলপ্রকার মেরুদণ্ডী প্রাণীতে নিষেকের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। নিষেকের জন্য শুক্রাশয় (পুংজনন অঙ্গ) থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাশয় (স্ত্রীজনন অঙ্গ) থেকে ডিম্বাণু তৈরি হয়। নিষেক নিম্নলিখিত প্রকারের হয়। যথা— (i) বহিঃনিষেক— এক্ষেত্রে নিষেক জীবদেহের বাইরে ঘটে। উদাহরণ— মাছ, ব্যাং। (ii) অন্তঃনিষেক— এক্ষেত্রে জীবদেহের অভ্যন্তরে নিষেক ঘটে। উদাহরণ – সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। (iii) স্ব-নিষেক — একই জীবদেহে উৎপন্ন শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটে। উদাহরণ— কেঁচো। (iv) পরনিষেক- একই প্রজাতির অন্তর্গত দুটি পৃথক জীবদেহে নিষেক ঘটে। উদাহরণ – পাখি, স্তন্যপায়ী।
Advanced Studies:
প্যারামেসিয়ামের দেহে দুইপ্রকার নিউক্লিয়াস দেখা যায়— ম্যাক্রোনিউক্লিয়াস ও মাইক্রোনিউক্লিয়াস। প্যারামেসিয়ামের সংশ্লেষের সময় ম্যাক্রোনিউক্লিয়াসটি অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে এবং মাইক্রোনিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়।
প্রশ্ন 12.যৌন জননের তাৎপর্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: যৌন জননের তাৎপর্য:
1.যৌন জননের সুবিধা : (i) দুটি ভিন্নধর্মী জীবের গ্যামেটদ্বয়ের মিলনের ফলে উৎপন্ন অপত্য জীবে জনিতৃ জীবের মিলিত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। (ii) গ্যামেট সৃষ্টির সময় ক্রসিংওভার ঘটে। ফলে, গ্যামেটদ্বয়ের মিলনে উৎপন্ন অপত্য জীবে প্রকরণ বা ভেদ সৃষ্টি হয়। (iii) নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীবের অভিযোজন ক্ষমতা বেশি থাকে যা জীবের অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে।
2. যৌন জননের অসুবিধা : (i) যৌন জননের জন্য সবসময়ই দুটি বিপরীত লিঙ্গধর্মী জীবের প্রয়োজন হয়। (ii) জীবের জননগত পূর্ণতা ঘটলে তবেই গ্যামেট উৎপাদন শুরু হয়। অর্থাৎ, যৌন জনন সময়সাপেক্ষ পদ্ধতিরূপে বিবেচিত হয়। (iii) মিলন পদ্ধতি জটিল হওয়ায় গ্যামেটের অপচয় ঘটে ও অপত্য জীব সৃষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
জেনে রাখো : জীবের যৌন জননে সক্ষম হওয়ার পূর্ববর্তী জীবনকালকে বলা হয় তরুণ দশা (প্রাণী) বা অঙ্গজ দশা (উদ্ভিদ)।
প্রশ্ন 13. জনুক্রম কাকে বলে? এর গুরুত্ব লেখো। একটি উদাহরণের সাহায্যে জনুক্রম পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জনুক্রম (Alternation of Generation) : জীবের জীবনচক্রে অযৌন দশা বা রেণুধর দশা বা ডিপ্লয়েড (2n) দশা এবং যৌন দশা বা লিঙ্গধর দশা বা হ্যাপ্লয়েড (n) দশার পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলে।
জনুক্রমের গুরুত্ব : 1. জীবের জীবনচক্রে অযৌন দশা ও যৌন দশার চক্রাকার আবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। 2. জীবের জীবনকালে মাইটোসিস ও মিয়োসিস বিভাজনের সংঘটনস্থল ও পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যায়। 3. জনুক্রম -এর মাধ্যমে জানা যায় কিছু কিছু জীবের ক্ষেত্রে অযৌন দশা বা রেণুধর জনু বা ডিপ্লয়েড (2n) দশা বেশি দীর্ঘায়িত হয় এবং যৌন বা হ্যাপ্লয়েড (n) দশা সংক্ষিপ্ত হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.জননের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: জননের মুখ্য বৈশিষ্ট্য : জনন জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য প্রক্রিয়া নয়। কিন্তু প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জনন অপরিহার্য। ও জনন প্রক্রিয়া পরিণত জীবে ঘটে। ও জনন প্রক্রিয়ার জন্য কোশে RNA, প্রোটিন, DNA প্রভৃতি পদার্থের সংশ্লেষ ঘটে এবং উন্নত জীবে জননকোশ গঠিত হয়।
প্রশ্ন 2. জীবজগতে কত প্রকার জনন দেখা যায় ও কী কী ?
উত্তর: জীবজগতে চারপ্রকার জনন ঘটে। যথা— 1. অঙ্গজজনন, 2. অযৌন জনন, 3. যৌন জনন এবং অপুংজনি।
প্রশ্ন 3. অযৌন জননের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: আযৗন জননের সুবিধা : 1. বংশবিস্তারের জন্য একটিমাত্র জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়। 2.অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অপত্য সৃষ্টি হয়। 3. জনন পদ্ধতি অত্যন্ত সরল ও সহজে ঘটে। যে-সমস্ত জীব যৌন জননে অক্ষম তারা অযৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।
আমীন জননের অসুবিধা : 1.অযৌন জনন মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে ঘটার জন্য প্রকরণ বা ভেদ তৈরি হয় না। 2. জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে না বলে পরিবর্তিত পরিবেশেজীবের অভিযোজন ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে। 3. একসঙ্গে অনেক অপত্য তৈরি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব ঘটে। 4• অযৌন জননের অভিব্যক্তিতে কোনো ভূমিকা নেই ।
অনুরূপ প্রশ্ন : অযৌন জনন-এর তাৎপর্য লেখো। * Chinsurah Deshbandhu Memorial High School '16
প্রশ্ন 4. প্লাসমোডিয়ামের বহু বিভাজন (Multiple fission) কীভাবে ঘটে?
উত্তর: গ্লাসামাডিয়ামের বহু বিভাজন পদ্ধতি : 1.মানুষের দেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টিকারী প্লাসমোডিয়াম-এর কোশে বহু বিভাজন ঘটে। 2. মানবদেহে যকৃতে থাকাকালীন প্লাসমোডিয়ামের স্পোরোজয়েট দশাটি বহু বিভাজন-এর দ্বারা সাইজন্ট গঠনের মাধ্যমে অসংখ্য ক্রিপটোমেরোজয়েট সৃষ্টি করে। 3. মানুষের রক্তে RBC-তে থাকাকালীন প্লাসমোডিয়ামের ট্রোফোজয়েট দশা বহু বিভাজন-এর দ্বারা সাইজন্ট গঠনের মাধ্যমে অসংখ্য মেরোজয়েট সৃষ্টি করে। |
জেনে রাখো : অ্যামিবার বহু বিভাজন পদ্ধতি : প্রতিকূল পরিবেশে অ্যামিবার বহু বিভাজন ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় অ্যামিবা গোলাকার | আকৃতি ধারণ করে এবং কোশের বাইরে ত্রিস্তর আবরণ গঠিত হয়। একে সিস্ট বলে। সিস্টের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াস বারংবার বিভাজিত হয়ে অসংখ্য অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে। অপত্য নিউক্লিয়াসগুলির চারপাশে | সাইটোপ্লাজম পরিবৃত হয়ে সিউডোপোডিও রেণু সৃষ্টি করে। অ্যামিবার দেহে বহু বিভাজন পদ্ধতিতে অসংখ্য রেণু সৃষ্টির এই পদ্ধতিকে স্পোরুলেশন (Sporulation) বলে। অনুকূল পরিবেশে সিস্ট বিদীর্ণ হলে | রেণুগুলি পরিবেশে মুক্ত হয় এবং ক্ষুদ্রাকার অ্যামিবিউলি উৎপন্ন করে।
অ্যামিবার বহু বিভাজনের তাৎপর্য : বহু বিভাজনের মাধ্যমে অ্যামিবা প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করে এবং প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে পারে। অ্যামিবার রেণুগুলি বায়ু মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, বংশবিস্তার দ্রুত হারে ঘটে।
প্রশ্ন 5. দ্বি-বিভাজন কাকে বলে? অ্যামিবা কীভাবে দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে ?
উত্তর: দ্বি-বিভাজন (Binary fission) : যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে এককোশী জীব ক্রমান্বয়ে ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিসের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য জীব সৃষ্টি করে বা বহুকোশী জীব খাঁজ বা ক্লিভেজ গঠনের মাধ্যমে দুটি অপত্য জীব সৃষ্টি করে, সেই জনন পদ্ধতিকে দ্বি-বিভাজন বলে।
অ্যামিবার দ্বি-বিভাজন পদ্ধতি : অ্যামিবা দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ায় অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।
1• প্রথমে ক্ষণপদগুলি অবলুপ্ত হয় এবং প্রাণীটির আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ, গোলাকার আকৃতি লাভ করে।
2. নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেল আকৃতি ধারণ করে এবং প্রাণীটিও ডাম্বেল আকার ধারণ করে।
3. নিউক্লিয়াসের মধ্যস্থল ক্রমশ সংকুচিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে অ্যামিবার দেহের মধ্যস্থলও সংকুচিত হয়ে দুটি অপত্য অ্যামিবার সৃষ্টি হয়।
5 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের ছবি দ্যাখো।
প্রশ্ন 6.কোরক বা বাড় কাকে বলে? ইস্টের দেহে কীভাবে কোরক গঠিত হয়? * Santipur Municipal High School (HS) "16
উত্তর: কোরক (Bud) : প্রধানত অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদদেহের অংশ থেকে গঠিত এক বা একাধিক ক্ষুদ্রাকৃতি উপবৃদ্ধিকে কোরক বা বাড বলে।
ইস্টের কোরাকাদ্গম পদ্ধতি :1. অনুকূল পরিবেশে ইস্টের কোশ থেকে একটি স্ফীত উপবৃদ্ধি সৃষ্টি হয়। একে কোরক বলে।
2. মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে কোরকে প্রবেশ করে এবং কোরক সম্পূর্ণ কোশের বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
3. পরিণত কোরক ইস্টকোশ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে ও পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ইস্ট গঠন করে।
প্রশ্ন 7. হাইড্ৰায় অযৌন বংশবিস্তারের পদ্ধতিটি চিত্রসহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : হাইড্রার আযৗন বংশবিস্তার : 1.অনুকূল পরিবেশে হাইড্রা বাডিং বা কোরকোদ্গম নামক অযৌন জনন পদ্ধতির মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। পদ্ধতিটি নিম্নলিখিত পর্যায় ঘটে অনুকূল পরিবেশে মাতৃ হাইড্রার দেহের পরিধি বরাবর মূল অংশ থেকে বহির্জনিয়ভাবে স্ফীত উপবৃদ্ধির সৃষ্টি হয়, একে কোরক বা বাড় (Bud) বলে।
2. কোরকটি মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমসহ মাইটোসিস কোশবিভাজনের দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ।
3. বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হলে কোরকটির পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে এবং মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য হাইড্রা সৃষ্টি হয়। 5 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের ছবি দ্যাখো।
প্রশ্ন 8. প্ল্যানেরিয়ার দেহে পুনরুৎপাদন কীভাবে ঘটে?
উত্তর: প্ল্যানেরিয়ার পুনরুৎপাদন : প্ল্যাটিহেলমিনথিস • পর্বের প্রাণী প্ল্যানেরিয়া পুনরুৎপাদন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। ও প্ল্যানেরিয়ার দেহের নিম্নাংশ জলের নীচে কোনো কিছুর সঙ্গে আবদ্ধ থাকে এবং জলের স্রোতের টানে দেহের অগ্রভাগ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ও এর ফলে যে টান তৈরি হয় তার প্রভাবে দেহ একাধিক অসমান খণ্ডে বিভক্ত হয়। ও প্রতিটি খণ্ডিত অংশে ব্লাস্টেমা তৈরি হয় যা কোশ বিভাজন ও পরিস্ফুরণের মাধ্যমে একটি করে পূর্ণাঙ্গ প্ল্যানেরিয়ার সৃষ্টি করে অর্থাৎ পুনরুৎপাদন ঘটে। পরিণত প্ল্যানেরিয়া দেহের খণ্ডীভবন — ব্লাস্টেমা গঠন প্ল্যানেরিয়ার পুনরুৎপাদন 5 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের ছবি দ্যাখো। পূর্ণাঙ্গ দেহ গঠন। স্টেমকোশ সমৃদ্ধ ব্লাস্টেমার বুদ্ধি
জেনে রাখো : ব্লাস্টেমা হল একপ্রকার কোশগুচ্ছ যার মধ্যে স্টেমকোশ বর্তমান, এর বৃদ্ধি ও পুনরুৎপাদন দ্বারা নতুন অঙ্গ বা দেহের অংশ তৈরি হয়।
প্রশ্ন 9. উদ্ভিদের অঙ্গজ জননের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: উদ্ভিদের অঙ্গজ জননের বৈশিষ্ট্য : 1. অপত্য উদ্ভিদগুলি হুবহু মাতৃ উদ্ভিদের গুণসম্পন্ন হয়। 2. এই প্রকার জননে সাধারণত বংশপরম্পরায় প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে। 3.পরিবর্তিত পরিবেশে উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায়। 4. যৌন জননে অক্ষম উদ্ভিদ এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে। 5. উদ্ভিদের অঙ্গ বা অঙ্গাংশ সরাসরি অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন 10. অঙ্গজ জননের গুরুত্ব বা সুবিধাগুলি লখো।
উত্তর: অঙ্গজ জননের সুবিধা : মাতৃ উদ্ভিদের অংশ থেকে অপত্য উদ্ভিদ তৈরি হওয়ায় বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে। ও অল্প সময়ে একটিমাত্র উদ্ভিদ থেকে বহুসংখ্যক অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। ও বছরের যে-কোনো সময়ে কাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি অনেক সহজ, সরল ও কম ব্যয়সাপেক্ষ।
প্রশ্ন 11. অঙ্গজ জননের অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: অঙ্গজ জননের অসুবিধা :1. মাতৃ উদ্ভিদের দেহাঙ্গ থেকে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় বলে কোনো নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। 2.সাধারণত অপত্য উদ্ভিদের অভিযোজন ক্ষমতা। কমে যায়। 3.এই প্রকার জননের অভিব্যক্তিতে কোনো ভূমিকা নেই ।
প্রশ্ন 12. খবধাবক (Offset) কাকে বলে? উদ্ভিদের অঙ্গজ জননে খর্বধারকের ভূমিকা কী ?
উত্তর: খর্বধারক : সাধারণত জলজ উদ্ভিদে কাণ্ডের পর্ব থেকে উৎপন্ন হ্রস্ব বা খর্ব ও স্থূল পর্বমধ্যযুক্ত শাখাকে খবধাবক বা অফসেট বলে। খবধাবক দেখা যায় এমন উদ্ভিদের নাম হল—কচুরিপানা, টোপাপানা।
অঙ্গজ জনান ভূমিকা : 1 খবধাবকের পর্ব থেকে নীচের দিকে অস্থানিক মূল এবং উপরের দিকে পাতা তৈরি হয়। 2. এদের পর্বমধ্য বিচ্ছিন্ন হলে অস্থানিক মূল, কাণ্ড ও পাতাসহ নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় এবং উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটে।
প্রশ্ন 13. অর্ধবায়র কাণ্ড (Sub-aerial Stem) কাকে বলে? কোন্ কোন্ উদ্ভিদে কী কী ধরনের অর্ধবায়ব কাণ্ড দ্বারা অাজ জনন সম্পন্ন হয় ?
উত্তর: অর্ধবায়ৰ কাণ্ড : যে-সব কাণ্ড মাটির ঠিক উপরে বা মাটির কিছুটা নীচে, ভূমিসংলগ্ন হয়ে বৃদ্ধি পায় এবং কান্ডের কক্ষে অবস্থিত কাক্ষিক মুকুল থেকে উৎপন্ন শাখাগুলি একই প্রকারে বৃদ্ধি পায়, তাদের অর্ধবায়ৰ কাণ্ড বলে। অর্ধবায়ন কাণ্ডের প্রকার : অর্ধবায়ব কাণ্ড সাধারণত চার প্রকার হয়— @ ধাবক বা রানার (যেমন – আমরুল, থানকুনি প্রভৃতির কাণ্ড), ও বক্রধাবক বা স্টোলন (যেমন— মেথা, স্ট্রবেরি প্রভৃতির কাণ্ড), @ খবধাবক বা অফসেট (যেমন— কচুরিপানা), ও ঊর্ধ্বধাবক বা সাকার (যেমন— চন্দ্রমল্লিকা)।
প্রশ্ন 14. কৃষিকাজে এবং উদ্যানবিদ্যায় অঙ্গজ জনন বেশি সুবিধাজনক কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কৃষিকাজে ও উদ্যানবিদ্যায় অঙ্গজ জনন বেশি সুবিধাজনক। কারণ— 1. অঙ্গজ জননের মাধ্যমে জনিতৃ উদ্ভিদের দেহাঙ্গ থেকে অতি অল্প সময়ে, দ্রুত বহুসংখ্যক অপত্য উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যা কৃষিকাজ ও উদ্যানপালনে লাভজনক হয়। 2. অঙ্গজ জননের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া সম্ভব হয়। ফলে ফুল, ফল প্রভৃতির গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। 3. কৃত্রিম অঙ্গজ জননের মাধ্যমে উন্নতমানের ফল ও ফুলের গাছ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। 4• বহু অর্থকরী উদ্ভিদের (যেমন— আলু, আদা, কচু, কলা প্রভৃতি) বংশগত বিশুদ্ধতা বজায় রেখে চাষ করা হয়।
প্রশ্ন 15. কী কী পদ্ধতিতে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন করা হয়? এগুলির মধ্যে কোনটি সর্বাপেক্ষা উন্নত ও কেন?
উত্তর: কৃত্রিম অঙ্গজ জনন প্রধানত চারটি পদ্ধতিতে করা হয়। যথা— @ শাখাকলম, ও দাবাকলম, ও গুটিকলম ও ৩ জোড়কলম।
এই চারটি পদ্ধতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উন্নত কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতি হল জোড়কলম বা গ্রাফটিং। জোড়কলমের মাধ্যমে উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। জোড়কলমে ‘সিয়ন’ অংশটি উন্নত গুণমানের হয় এবং অপত্য উদ্ভিদে সিয়নের বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন 16. কৃত্রিম অঙ্গজ জননের গুরুত্বগুলি লেখো।
উত্তর : কৃত্রিম অঙ্গজ জনালর গুরুত্ব : 1.বীজহীন উদ্ভিদ থেকে (যেমন—কলা, আনারস, আঙুর প্রভৃতি) সহজে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। 2. কৃত্রিম অঙ্গজ জননের মাধ্যমে আদা, হলুদ, আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের চাষ করা হয়। 3. আম, পেয়ারা, লিচু প্রভৃতি উদ্ভিদ সহজে এবং দ্রুত কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। 4. নির্দিষ্ট গুণমানের ফুল ও ফলের গাছ বংশপরম্পরায় পাওয়া সম্ভব হয়।
প্রশ্ন 17. অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন-এর পর্যায়গুলি শব্দ চিত্রের মাধ্যমে দেখাও।
উত্তর: মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতি : o উপযুক্ত উদ্ভিদ অংশ (এক্সপ্ল্যান্ট) নির্বাচন→ও এক্সপ্ল্যান্টের জীবাণুমুক্তকরণ (Sterilization) -ও ক্যালাসের বৃদ্ধি ঘটিয়ে এমব্রয়েড (Embryoid) গঠন ও - ও এমব্ৰয়েড থেকে ছোটো ছোটো প্ল্যান্টলেট (Plantlet) উৎপাদন → Beltala girls' High School '16 >ও পুষ্টি দ্রবণে এক্সপ্ল্যান্ট স্থাপন অবিভেদিত কোশপুঞ্জ বা ক্যালাস গঠন প্ল্যান্টলেটগুলিকে গ্রিনহাউসে রেখে অভিযোজন ঘটানো চারাগাছ সৃষ্টি ও বাইরের পরিবেশে মাটিতে রোপণ।
প্রশ্ন 18. যৌন জননের প্রয়োজনীয়তাগুলি লেখো।
উত্তর: যৌন জননের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল- দুই বা তার বেশি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি অপত্য জীবে সঞ্চারিত করার জন্য যৌন জনন প্রয়োজন। ও যৌন জননের মাধ্যমে অপত্য জীবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আগমন হয়। ফলে, প্রজাতির মধ্যে ভেদ বা প্রকরণ (Variation) সৃষ্টি হয়। এই প্রকরণ অভিব্যক্তির পথ সুগম করে। এই প্রকরণের ফলে প্রতিকূল ও নতুন পরিবেশে উৎপন্ন অপত্য জীবগুলির অভিযোজন ক্ষমতা (Adaptive power) বৃদ্ধি পায়। ও যৌন জননের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারণ ঘটে এবং পরিব্যক্তি বা মিউটেশন ঘটার সুযোগ তৈরি হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : যৌন জননের গুরুত্ব লেখো। ** [ME'11]
প্রশ্ন 19. নিষেকের প্রকারভেদ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর: নিষেক সাধারণত চার প্রকারের হয়। যথা -
1• স্বনিষেক : একই জীবদেহে উৎপন্ন পুংগ্যামেট ও স্ত্রী- গ্যামেটের মিলন ঘটে এবং নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে জাইগোট গঠিত হয়। উদাহরণ— ফিতাকৃমিতে দেখা যায়।
2. পরনিষেক বা ইতর নিষেক : একই প্রজাতিভুক্ত ভিন্নধর্মী দুটি জীবদেহ থেকে উৎপন্ন পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলন ঘটে। উদাহরণ – পেঁপে, তাল প্রভৃতি একলিঙ্গ উদ্ভিদ এবং মাছ, সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি প্রাণীতে দেখা যায়। ও
3. বহিঃনিষেক : পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলন জীবদেহের বাইরে ঘটে। উদাহরণ • মাছ, ব্যাং প্রভৃতি প্রাণীতে দেখা যায়।
4. অন্তঃনিষেক: শুক্রাণু বা পুংগ্যামেট এবং ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামেটের মিলন জীবদেহে জননাঙ্গের অভ্যন্তরে ঘটে। উদাহরণ— মস, ফার্ন, ব্যক্তবীজী, গুপ্তবীজী প্রভৃতি উদ্ভিদ, সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি প্রাণীতে দেখা যায়।
প্রশ্ন 20. অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: অপুংজলি (Parthenogenesis) : যে বিশেষ জনন পদ্ধতিতে নিষেক ছাড়াই অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সরাসরি হ্যাপ্লয়েড (n) বা ডিপ্লয়েড (2n) অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস বলে।
অপুংজলির প্রকারভেদ : প্রধানত দুই প্রকার অপুংজনি দেখা যায়— 1. প্রাকৃতিক অপুংজনি— স্বাভাবিক পরিবেশে অনিষিক্ত হ্যাপ্লয়েড ডিম্বাণু (n) থেকে অথবা অনিষিক্ত ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু (2n) থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি। যেমন— ডাফনিয়া। 2. কৃত্রিম অপুংজনি— বিভিন্ন বাহ্যিক শর্তের উপস্থিতিতে বা কৃত্রিম উপায়ে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটিয়ে রশ্মি, বিদ্যুৎপ্রবাহ ইত্যাদি প্রয়োগের দ্বারা অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। যেমন— মোলাস্কা, পাখি ইত্যাদি। |
জেনে রাখো : অপুংজনিকে আরও দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা— * হ্যাপ্লয়েড অপুংজনি - পুরুষ মৌমাছি, বোলতা, এঁটেলপোকা, পিঁপড়ে প্রভৃতি প্রাণী। ও স্পাইরোগাইরা (শৈবাল), মিউকর (ছত্রাক), কাকমাছি, | তামাক প্রভৃতি উদ্ভিদ। ডিপ্লয়েড অপুংজনি – ডাফনিয়া (জুপ্ল্যাংকটন), ঘাসফড়িং প্রভৃতি প্রাণী। ও ট্যারাক্সাকাম (Taraxacum) উদ্ভিদ।
প্রশ্ন 21. উদাহরণসহ জীবজগতে জনুক্রমের প্রকারভেদগুলি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো । জীবজগতে জনুক্রমের প্রকারভেদ :
উত্তর: জনুক্রম হ্যাপ্লোবায়োন্টিক ডিপ্লোবায়োন্টিক | ট্রাইফেজিক হ্যাপ্লান্টিক | ডিপ্লান্টিক উদাহরণ— উদাহরণ— পলিসাইফোনিয়া নামক শৈবাল উদাহরণ- স্পাইরোগাইরা নামক শৈবাল ফিউকাস নামক শৈবাল আইসোমরফিক বা সমরূপ হেটারোমরফিক বা অসমরূপ উদাহরণ— এক্টোকারপাস নামক শৈবাল উদাহরণ- ড্রায়োপটেরিস নামক ফার্ন | জেনে রাখো : যে জনুক্রমে লিঙ্গধর জনু ও রেণুধর জনু সমান থাকে, তাকে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রম বলে।
প্রশ্ন 22. জনুক্রমে মিয়োসিসের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: জনুক্রমে মিয়োসিসের গুরুত্ব : জীবের জীবনচক্রে রেণুধর জনু (2n) ও লিঙ্গধর জনুর (n)যে পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে, তাকে জনুক্রম বলে। রেণুধর দেহের (2n) রেণুস্থলীর (2n) রেণুমাতৃকোশ (2n) থেকে মিয়োসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে রেণু (n) উৎপন্ন হয় যা লিঙ্গধর দেহের (n) সৃষ্টি করে। লিঙ্গধর দেহে পুংধানী (n) ও স্ত্রীধানী (n) উভয়ই থাকে এবং পুংধানীতে শুক্রাণু (n) ও স্ত্রীধানীতে ডিম্বাণুর (n) সৃষ্টি হয়। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে ডিপ্লয়েড (2n সংখ্যক) ক্রোমোজোম বিশিষ্ট জাইগোট উৎপন্ন হয়, যা পুনরায় রেণুধর দেহ (2n) সৃষ্টি করে। মিয়োসিস রেণুধর দেহ (2n) থেকে লিঙ্গধর দেহ (n) সৃষ্টিতে সাহায্য করে। তাই মিয়োসিস না ঘটলে জীবের জনুক্রম সম্ভব নয়।
টীকা লেখো:
প্রশ্ন 1.অণুবিস্তারণ (Micropropagation)
উত্তর: অণুবিস্তারণ না মাইক্রোপ্রোপাগেশন : যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদের কোশ, কলা বা অঙ্গ পালনের দ্বারা অল্প সময়ে অসংখ্য অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয় ও দ্রুত উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটানো হয়, তাকে অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন বলে। 'মাইক্রো' (Micro) বলতে ক্ষুদ্র থাকারযুক্ত কোশকে বোঝায়। এক্ষেত্রে উদ্ভিদ অঙ্গস্থিত বা কলাস্থিত প্রতিটি কোশ বিশেষ কর্ষণ দ্রবণে টোটিপোটেন্সির মাধ্যমে এক একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদে পরিণত হয়।
অণুবিস্তারণ পদ্ধতি : • উপযুক্ত এবং রোগমুক্ত উদ্ভিদের অঙ্গ (মূল বা কাণ্ডের অংশ, মুকুল বা কোশ) নির্বাচন করা হয়। একে এক্সপ্ল্যান্ট বলে। এক্সপ্ল্যান্টকে কৃত্রিম পুষ্টিমাধ্যমে (Culture medium) রেখে কর্ষণ (Culture) করা হয়। ও পুষ্টিমাধ্যমে কোশগুলি বিভাজিত হয়ে ক্যালাস (Callus) গঠন করে।
অণুবিস্তারণ পদ্ধতি • তারপর, এই মাধ্যমে কৃত্রিম অক্সিন ও সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করে এমব্রয়েড গঠিত হয়। ও এমব্রয়েডগুলি থেকে পরে কাণ্ড ও মূল উৎপন্ন হয়ে প্ল্যান্টলেট (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারাগাছ) তৈরি করে টবে স্থানান্তরিত করা হয়। এক্সপ্ল্যান্ট → ক্যালাস এমব্রয়েড → প্ল্যান্টলেট কি অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রাপাগেশনের উদ্দেশ্য : ও উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করা। ও নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রজাতি সৃষ্টি করা। ও রোগমুক্ত ও অধিক অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদ তৈরি করা। কৃত্রিম বীজ উৎপাদন ও জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করা। ও একই গুণমানের বহুসংখ্যক উদ্ভিদ পাওয়া যায়। ৫ বছরের যে কোনো সময়ে চারা তৈরি করা যায়। IME '17) য়া রূপ নাকে,
অনুৰূপ প্ৰশ্ন : মাইক্রোপ্রোপাগেশন কীভাবে সম্পন্ন করা হয়?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. জননের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর: জননের দুটি উদ্দেশ্য হল : 1. প্ৰজাতিৰ অস্তিত্ব বজায় রাখা প্রত্যেকটি জীব জননের মাধ্যমে অপতা জীব সৃষ্টির দ্বারা বংশপরম্পরায় প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। 2. জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার : জননের মাধ্যমে প্রত্যেকটি জীব নিজ প্রজাতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ও বংশবিস্তার ঘটায়।
প্রশ্ন 2. যৌন জনন (Sexual reproduction) কাকে বলে?
উত্তর: যৗন জনন (Sexual reproduction) যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটি হ্যাপ্লয়েড (n) গ্যামেট বা জননকোশের (পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেট) মিলনের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড (2n) অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে যৌন জনন বলে। যেমন— মানুষের জনন পদ্ধতি।
প্রশ্ন 3. অযৌন জনন (Asexual reproduction) কাকে বলে ? Ananda Achram Sarada Vidyapith '116.
উত্তর: জায়াল জনন (Asexual reproduction) : যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামেট উৎপাদন ছাড়াই দেহকোশের মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বা রেণু সৃষ্টির সাহায্যে অপত্য জীব তৈরি হয়, তাকে অযৌন জনন বা অ্যাপোমিক্সিস বলে। যেমন— বাডিং প্রক্রিয়ায় হাইড্রার বংশবিস্তার।
প্রশ্ন 4. সোমাটোজেনিক জনন কাকে বলে?
উত্তর: অযৌন জননকে সোমাটোজেনিক জনন বলে। “সোমা” (Soma) কথার অর্থ দেহ। অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের দেহাংশ বা খণ্ডিত দেহকোশ (Somatic cell) মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীবের সৃষ্টি করে। এই কারণে অযৌন জননকে সোমাটোজেনিক জনন (Somatogenic Reproduction) বলে।
প্রশ্ন 5. সিউডোপোডিও রেণু (Pseudopodiospore) কাকে বলে?
উত্তর: কিছু কিছু নিম্নশ্রেণির জীবদেহের অভ্যন্তরে প্রতিকূল পরিবেশে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম বার বার বিভাজিত হয়ে যে-সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেণুসদৃশ গঠন সৃষ্টি করে, তাদের সিউডোপোডিও রেণু বলে।
© অনুকূল পরিবেশে জনিতৃ জীবদেহের প্রাচীর (সিস্ট) বিদীর্ণ করে রেগুগুলি বাইরে আসে ও অপত্য জীব সৃষ্টি করে। যেমন— অ্যামিবার অযৌন জননে সিউডোপোডিও রেণু উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন 6. এক্সোজেনাস বাডিং (Exogenous budding) কাকে বলে?
উত্তর: অনুকূল পরিবেশে যে প্রকার অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের দেহের বাইরে পরিধি বরাবর কোরক বা বাড গঠিত হয়। যা নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য জীব রূপে বসবাস করে, তাকে এক্সোজেনাস বাডিং বলে। যেমন- হাইড্রার বাডিং।
প্রশ্ন 7. 'দ্বি-বিভাজন সম্পন্নকারী প্রাণীরা প্রকৃত অর্থে অমর'- বক্তব্যটির যথার্থতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দ্বি-বিভাজন পদ্ধতিতে অযৌন জননের সময় মাতৃকোশ তথা মাতৃদেহটি একটি জনন একক রূপে কাজ করে। বিভাজনের দ্বারা দুটি নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মাতৃকোশটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। আপাতদৃষ্টিতে, মাতৃকোশটির মৃত্যু ঘটেছে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে মৃত মাতৃকোশের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। অর্থাৎ, মাতৃকোশটি দ্বি-বিভাজনের পরে দুটি অপত্য কোশের মধ্যেই বিরাজ করে। এজন্য বলা হয় যে, দ্বি-বিভাজন সম্পন্নকারী প্রাণীরা প্রকৃত অর্থে অমর (Immortal)।
প্রশ্ন 8. চলরেণু (Zoospore) কাকে বলে?
উত্তর: চলরেণু (Zoospore) উদ্ভিদের অযৌন জননকালে উৎপন্ন যে সমস্ত রেণু ফ্ল্যাজেলা বা সিলিয়াযুক্ত হয় এবং জলজ পরিবেশে চলনে সক্ষম হয়, তাদের চলরেণু বা জুস্পোর বলে। চলরেণুগুলি জনিতৃদেহে রেণুস্থলীর (zoosporangium) মধ্যে গঠিত হয় এবং অনুকূল পরিবেশে রেণুস্থলী বিদারিত হয়ে রেণুগুলি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ— ক্ল্যামাইডোমোনাস, ইউলোথ্রিক্স নামক শৈবালে চলরেণু দেখা যায়।
প্রশ্ন 9. অচলরেণু (Aplanospore) কাকে বলে ?
উত্তর: অচলারণু (Aplanospore) : অপুষ্পক উদ্ভিদের রেণুস্থলীতে উৎপন্ন সিলিয়া বা ফ্ল্যাজেলাবিহীন চলনে অক্ষম রেণুগুলিকে অচলরেণু বা অ্যাপ্লানোস্পোর বলে। উদাহরণ— মিউকর, পেনিসিলিয়াম নামক ছত্রাকে অচলরেণু দেখা যায়।
প্রশ্ন 10. পুনরুৎপাদন কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তর: পুনরুৎপাদন দু-প্রকার। যথা— 1. মরফোল্যাক্সিস (খণ্ডিত দেহাংশ থেকে পূর্ণাঙ্গ জীব সৃষ্টি) যেমন— প্ল্যানেরিয়ার পুনরুৎপাদন ও 2. এপিমরফোসিস (হারানো অংশের পুনঃস্থাপন) যেমন- টিকটিকির লেজ গজানো।
প্রশ্ন 11. গেমিউল (Gemmule) কী ? কোন্ প্রাণীতে দেখা যায়?
উত্তর: গেমিউল (Gemmule) : কিছু নিম্নশ্রেণির প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে কতকগুলি কোশ মিলিতভাবে আরকিওসাইটস্ গঠন করে। এই কোশগুলি স্পিকিউল নামক আবরণ দ্বারা বেষ্টিত হয়ে যে বিশেষ অযৌন জননের একক সৃষ্টি করে, তাকে গেমিউল বলে। এটি এক প্রকার অন্তঃকোরক। গেমিউল স্পঞ্জের গেমিউল উদাহরণ : মিষ্টিজলের স্পঞ্জ—স্পঞ্জিলা-তে (Spongilla sp.) গেমিউল গঠিত হয়।
প্রশ্ন 12. অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) বলে ? ★ [ME'15]
উত্তর: অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) : যে জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদদেহের কোনো অংশ বা অঙ্গ মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ জনন বলে। যেমন- পাথরকুচি পাতার কিনারায় পত্রজ মুকুল সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবিস্তার।
প্রশ্ন 13. গেমা (Gemma) কী ? কোন্ জাতীয় জীবে দেখা যায় ?
উত্তর: গেমা (Gemma) নিম্নশ্রেণির অপুষ্পক থ্যালাসদেহে উৎপন্ন বিশেষ ধরনের অঙ্গজ জননকারী অঙ্গকে গেমা বলে। অনুকূল পরিবেশে গেমা মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন 14. মারক্যানসিয়া নামক ফার্নের বেশিরভাগ প্রজাতিতে গেমা দেখা যায়। উদ্ভিদদেহে প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর : প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের গুরুত্ব : O অনেক কম সময়ে বেশি সংখ্যক অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। ও অপত্য উদ্ভিদ মাতৃ উদ্ভিদের মতোই বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায়, উদ্ভিদের গুণমান সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকে না।
প্রশ্ন 15. অস্থানিক মুকুল কীভাবে উদ্ভিদের অঙ্গজ জননে সাহায্য করে ? [ME '14]
উত্তর: কিছু কিছু উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড ও পাতাতে সৃষ্ট অস্থায়ী মুকুলকে অস্থানিক মুকুল বলে। মুকুলগুলি অস্থানিক মূলযুক্ত হয় এবং মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। যেমন- 10 মূলজ মুকুল - পটল, রাঙাআলু বা মিষ্টিআলু, ও পত্রজ মুকুল - পাথরকুচি, বিগোনিয়া ও কাণ্ডজ মুকুল – গোলাপ, ডালিয়া।
প্রশ্ন 16. - বুলবিল (Bulbil) কী ? কোন্ উদ্ভিদে দেখা যায়?
উত্তর: বুলবিল (Bulbil) : কিছু কিছু উদ্ভিদে কাক্ষিক মুকুলটি অতিরিক্ত খাদ্যসঞ্চয়ের ফলে স্ফীত ও গোলাকার হয়ে অঙ্গজ জননে সাহায্যকারী যে বিশেষ অঙ্গ গঠন করে, তাকে বুলবিল বলে। বুলবিল মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন অপত্য উদ্ভিদ গঠন করে। ( উদাহরণ— চুপড়ি আলু, খাম আলু প্রভৃতি উদ্ভিদে বুলবিল গঠিত হয়।
প্রশ্ন 17. বক্রধারক (Stolon) কাকে বলে ?
উত্তর: বন্ধুধাবক (Stolon) : মাটির উপরিস্থলে অবস্থিত যে পরিবর্তিত অর্ধবায়বীয় কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর নির্দিষ্ট পর্ব থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয় এবং যা পরবর্তী সময়ে নতুন অপত্য উদ্ভিদের সৃষ্টি করে, তাকে বক্রধাবক বা স্টোলন বলে। উদাহরণ— স্ট্রবেরি, মেথা ইত্যাদি উদ্ভিদে বক্রধাবক দেখা যায়।
প্রশ্ন 18. কিছু উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন আবশ্যিক কেন ?
উত্তর: কিছু উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন আবশ্যিক কারণ— o এরা নির্ভরযোগ্য বীজ উৎপাদনে অক্ষম। ও বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশবিস্তারের তুলনায় অঙ্গজ জননের মাধ্যমে অতি সহজে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গের জন্য যে পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে হয় সেই পরিমাণ শক্তি সঞ্চয়ে অক্ষম।
প্রশ্ন 19. উদ্ভিদের কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদের নাম সারণি আকারে লেখো।
উত্তর: কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ 1 শাখাকলম বা কাটিং জবা, গোলাপ, গাঁদা, আখ প্রভৃতি উদ্ভিদ। 2 দাবাকলম বা লেয়ারিং লেবু, স্ট্রবেরি, আঙুর, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি উদ্ভিদ। 3 4 গুটিকলম বা গুটি লেবু, আম, লিচু প্রভৃতি। জোড়কলম বা গ্রাফটিং আম, লিচু, পেয়ারা, কুল প্রভৃতি। | জেনে রাখো : তেঁতুল, সিট্রন প্রভৃতি গাছের মূলের খণ্ডাংশ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়, একে Root Cutting বলে।
প্রশ্ন 20. শাখাকলম তৈরির জন্য চারটি প্রয়োজনীয় শর্তের উল্লেখ করো।
উত্তর: শাখাকলম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলি হল • উদ্ভিদের বয়স, ও উদ্ভিদ অংশটির পরিণতি, ও উদ্ভিদ অংশের দৈর্ঘ্য ও ব্যাস, অনুকূল ঋতু।
প্রশ্ন 21. স্টক (Stock) ও সিয়ন (Scion) কী ?
উত্তর: কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে জোড়কলমের জন্য অনুন্নত প্রকৃতির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাযুক্ত, সাধারণত 10-30 cm লম্বা কাণ্ড এবং মূলসহ যে চারাগাছ নির্বাচন করা হয়, তাকে স্টক (Stock) এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত যে উদ্ভিদের শাখা বা মুকুল নির্বাচন করা হয়, তাকে সিয়ন (Scion) বলে। স্টক -সিয়ন জোড়কলম
প্রশ্ন 22. কৃষিবিদ্যায় ও উদ্যানবিদ্যায় জোড়কলমের গুরুত্ব কী ?
উত্তর: জোড়কলম পদ্ধতিতে উন্নত গুণমানসম্পন্ন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। ও এই প্রক্রিয়ায় প্রজাতির গুণমানও বজায় থাকে। যেমন – একটি আম্রপালি আমগাছের শাখা (সিয়ন) একটি সাধারণ দেশিআমগাছের মূলসহ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করলে কিছুদিন পরে আম্রপালি আমগাছের শাখা বিকশিত হয় অর্থাৎ, অপত্য উদ্ভিদে আম্রপালির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় ।
প্রশ্ন 23. একবীজপত্রী উদ্ভিদে জোড়কলম করা যায় না কেন ?
উত্তর: জোড়কলমে ব্যবহৃত সিয়ন ও স্টককে তির্যক ভাবে কেটে ক্যামবিয়াম কলাস্তর পর্যন্ত জোড়া লাগানো হয়। একবীজপত্রী উদ্ভিদের (যেমন— ধান, গম প্রভৃতি) নালিকা বান্ডিল ক্যামবিয়ামবিহীন হওয়ায় জোড়কলম করা যায় না।
প্রশ্ন 24. জোড়কলমে উন্নত গুণমানের উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়, সুতরাং, জোড়কলমকে যৌন জননরূপে গণ্য করা যায় কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও ।
উত্তর: জোড়কলমে উন্নত গুণমানের উদ্ভিদ সৃষ্টি হলেও একে যৌন জননরূপে গণ্য করা যায় না। কারণ – যৌন জনন দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেটের মিলনে ঘটে। ফলে, অপত্য জীবে উন্নত ও নতুন বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। জোড়কলম একই প্রজাতিভুক্ত দুটি উদ্ভিদ অংশের মিলনের মাধ্যমে ঘটে। এক্ষেত্রে, অপত্য উদ্ভিদে প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য হল প্রকৃত অর্থে মাতৃ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় না।
প্রশ্ন 25. ক্যালাস (Callus) কী ?
উত্তর : ক্যালাস (Callus) : মাইক্রোপ্রোপাগেশনের জন্য উদ্ভিদের যে-কোনো অংশ থেকে কোশ সংগ্রহ করে কৃত্রিম পুষ্টিমাধ্যমে পালনের দ্বারা যে কোশসমষ্টি গঠন করা হয়, তাকে ক্যালাস বলে। উদ্ভিদ অঙ্গ বা কলা বা কোশ- পুষ্টিমাধ্যম → কোশপুঞ্জ → ক্যালাস 'কোশ বিভাজন
প্রশ্ন 26. টোটিপোটেন্সি (Totipotency) কাকে বলে ?
উত্তর: টোটিপোটেন্সি (Totipotency) : প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অনুকূল পরিবেশে সম্পূর্ণ প্রজননিক উপাদানযুক্ত যে-কোনো সজীব কোশের পূর্ণাঙ্গ জীব সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে টোটিপোটেন্সি বা পূর্ণজননক্ষমতা বলে।
বিজ্ঞানী হ্যাবারল্যান্ড প্রথম ‘টোটিপোটেন্সি' শব্দটি ব্যবহার করেন।
প্রশ্ন 27. এক্সপ্ল্যান্ট (Explant) কাকে বলে?
উত্তর: এক্সপ্ল্যান্ট (Explant) : অণুবিস্তারণ পদ্ধতিতে কলাপোষণে ব্যবহৃত উদ্ভিদের টোটিপোটেন্ট ক্ষমতাযুক্ত কোশ, কলা বা অঙ্গকে এক্সপ্ল্যান্ট বলে। যেমন— উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলা, মুকুল, পাতা, প্রোটোপ্লাস্ট প্রভৃতি।
জেনে রাখো : কলোজেনেসিস : অণুবিস্তারণের জন্য কলাপোষণের সময় অবিভেদিত কোশপুঞ্জ বা ক্যালাসে অক্সিন, সাইটোকাইনিন হরমোন প্রয়োগ করে প্রতিটি টোটিপোটেন্ট কোশে বিটপ অংশ সৃষ্টির পদ্ধতিকে কলোজেনেসিস বলে। **
* রাইজোজেনেসিস : অণুবিস্তারণের জন্য কলাপোষণের সময় টোটিপোটেন্ট ক্ষমতাযুক্ত অবিভেদিত কোশপুঞ্জ বা ক্যালাসে অক্সিন, সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করে প্রতিটি টোটিপোটেন্ট কোশ থেকে মূল সৃষ্টির পদ্ধতিকে রাইজোজেনেসিস বলে।
* হিস্টোজেনেসিস : অণুবিস্তারণের জন্য কলাপোষণের সময় ক্যালাস | কোশপুঞ্জ থেকে ভাজককলা সৃষ্টির পদ্ধতিকে হিস্টোজেনেসিস বলে।
প্রশ্ন 28. মাইক্রোপ্রোপাগেশনের দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর: জিনগত ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টিতে অক্ষম হওয়ায় অভিযোজন ক্ষমতা কম। ও নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রজাতি সৃষ্টিতে অক্ষম হওয়ায় অভিব্যক্তিতে কোনো ভূমিকা থাকে না ।
প্রশ্ন 29. গ্রাফটিং কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর : গ্রাফটিং প্রধানত দুই প্রকার – 1. সিয়ন গ্রাফটিং : এই প্রকার গ্রাফটিং বা জোড়কলমে মূল সমেত গাছের শাখাটির (স্টক) সঙ্গে অন্য একটি গাছের শাখাপ্রশাখাযুক্ত ডাল (সিয়ন) যুক্ত করা হয়।
2. বাড গ্রাফটিং : এই প্রকার গ্রাফটিং বা জোড়কলমে সিয়ন অংশটি কেবলমাত্র একটি মুকুলযুক্ত (Bud) হয় যা স্টকের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়।
জেনে রাখো : গ্রাফটিং সিয়ন গ্রাফটিং ওয়েজ গ্রাফটিং টাং গ্রাফটিং বাড গ্রাফটিং অ্যাপ্রোচ গ্রাফটিং (Approach grafting) (Wedge grafting) (Tongue grafting) ক্রাউন গ্রাফটিং (Crown grafting) সাইড গ্রাফটিং (Side grafting)
প্রশ্ন 30. জাইগোস্পোর (Zygospore) কাকে বলে?
উত্তর: জামগাস্পোর (Zygospore) : নিম্নশ্রেণির একই প্রজাতিভুক্ত জীবের দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেটের নিউক্লিয়াসের মিলনের ফলে অর্থাৎ সংযুক্তির মাধ্যমে উৎপন্ন ডিপ্লয়েড (2n) গঠনকে জাইগোস্পোর বলে। উদাহরণ স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালের দেহে সংযুক্তির ফলে জাইগোস্পোর উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন 31. হ্যাপ্লোরায়োন্টিক (Haplobiontic) জনুক্রম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: যে জনুক্রমে হ্যাপ্লয়েড (n) অথবা, ডিপ্লয়েড (2n) যে-কোনো একটি দশাই প্রধানত উপস্থিত থাকে, তাকে হ্যাপ্পোবারোন্টিক জনুক্রম বলে। এ উদাহরণ— এ স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালে হ্যাপ্পয়েড দশাটিই প্রধান হয়, ডিপ্লয়েড দশা কেবল জাইগোটে দেখা যায়। ও মানুষ, সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রভৃতি উন্নত জীবে ডিপ্লয়েড জনুটিই প্রধান।
প্রশ্ন 32. ডিপ্লোবায়োন্টিক (Diplobiontic) জনুক্রম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: যে জনুক্রমে হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর ও ডিপ্লয়েড রেণুধর জনু দুটিই প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ, তাকে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রম বলে। উদাহরণ—এক্টোকারপাস, ড্রায়োপটেরিস প্রভৃতি উদ্ভিদে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রম দেখা যায়।
No comments:
Post a Comment