উপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর| প্রশ্নেরমান-৫ | class 8 history brought question answer 3rd chapter|
1. রেগুলেটিং আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য কী ছিল ? এই আইনের বৈশিষ্ট্য ও ত্রুটিগুলি লেখো ।
উত্তর :- অষ্টাদশ শতকের সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে নানা কারণে কোম্পানির ব্যাপারে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। ইংল্যান্ডে ও ভারতে কোম্পানির শাসনের উন্নতি ঘটানো ছিল রেগুলেটিং অ্যাক্টের উদ্দেশ্য। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে আর্থিক নিষ্ক্রমণের ফলে বাংলা ও বিহারে অর্থনৈতিক দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছিল। কোম্পানির কর্মচারীরা অবৈধ উপায়ে বহু অর্থ উপার্জন করে ইংল্যান্ডের রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস চালিয়েছিল। অ্যাডাম স্মিথ ও অন্যান্যরা কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিরোধিতা করেছিল। স্বাধীন বণিকরা ভারতের বাণিজ্যে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিল। এইভাবে রেগুলেটিং অ্যাক্টের পটভূমি তৈরি হয়েছিল। • উদ্দেশ্যঃ তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস করা হয়েছিল। যথা—
ব্রিটিশ সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করা ছিল এই আইনের প্রথম উদ্দেশ্য।
কোম্পানির ডিরেক্টর সভার পুনর্গঠন করে ভারতের শাসনের ওপর এর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের ব্যবস্থা করা। ভারতে একটি কেন্দ্রীয় শাসনকাঠামো গড়ে তোলা যাতে সব ব্রিটিশ উপনিবেশগুলির ওপর এর কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়।
বৈশিষ্ট্য: ডিরেক্টর সভা: ডিরেক্টর সভার সংগঠনের পরিবর্তন ঘটানো হয়। ২৮ জন ডিরেক্টরের মধ্যে দুজন এক বছরের জন্য নির্বাচিত হন। স্থির হয় ডিরেক্টর সভার আয়ুষ্কাল বছর। অন্তত দু-বছর কাটানোর পর কোম্পানির কোনো কর্মচারী ডিরেক্টর পদের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন। গভর্নর জেনারেল। বাংলা শাসনের জন্য একজন গভর্নর জেনারেল ওর সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিল থাকবে। গভর্নর জেনারেল সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুযায়ী চলবেন। @ সুপ্রিম গর্ভনমেন্ট নিয়োগ: কলকাতায় সুপ্রিম গভর্নমেন্ট অন্যান্য প্রেসিডেন্সির যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। কলকাতার সুপ্রিম গভর্নমেন্ট বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর নির্দেশ মেনে চলবেন। সুপ্রিমকোর্ট স্থাপন। এই আইন অনুযায়ী কলকাতায় একটি সুপ্রিমকোর্ট স্থাপন করা হয়। স্থির হয় যে এই কোর্ট ব্রিটিশ নাগরিকদের বিচার করবে তবে গভর্নর জেনারেল ও তার কাউন্সিলের সদস্যদের বিচারের অধিকার কোটকে দেওয়া হয়নি। গভর্নর জেনারেল, কাউন্সিলের সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের উচ্চ বেতনদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য করার অধিকার বাতিল করা হয়েছিল।
ত্রুটি: রেগুলেটিং অ্যাক্টের কতকগুলি ত্রুটি থাকায় এই আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। গভর্নর জেনারেলের বিশেষ অধিকার ছিল না। কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি চলতে বাধ্য ছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে কাউন্সিলের তিনজন সদস্য ক্লেভারিং, মনসন ও ফিলিপ ফ্রান্সিস গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসকে পছন্দ করতেন না, একমাত্র বারওয়েল ছিলেন তাঁর বন্ধু। সুপ্রিম গভর্নমেন্ট কোনো প্রেসিডেন্সির কাজ অপছন্দ হলে তা বাতিল করতে পারতেন, ইতিবাচক প্রস্তাব দিতে পারতেন না। এই আইনে সুপ্রিমকোর্ট ও সুপ্রিম গভর্নমেন্টের এক্তিয়ার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি, ফলে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
মূল্যায়ন: ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে একটি সংশোধনী আইন পাস করে পার্লামেন্ট রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটিগুলি দূর করার প্রয়াস চালিয়েছিল। গভর্নর জেনারেলের কার্যাবলিকে সুপ্রিমকোর্টের এক্তিয়ারের বাইরে স্থাপন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী স্থির হয়েছিল, রাজস্ব স্থাপন ও সংগ্রহের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এ ছাড়া এই আইন অনুযায়ী সুপ্রিম গভর্নমেন্ট প্রাদেশিক কাউন্সিল ও কোর্টের জন্য আইন প্রণয়নের অধিকার পেয়েছিল।
2. ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসন সংস্কার সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর:- ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের 'রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুযায়ী ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলায় প্রথম গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোম্পানির আমলে তিনিই প্রথম একটি সুসংহত প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন।
∆ ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসন সংস্কার
প্রশাসনিক সংস্কার:- ১) প্রথমেই হেস্টিংস দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটান। নায়েব-দেওয়ান পদ বিলোপ করেন। ২) নবাবের ভাতা হ্রাস করেন। ৩) সরকারি কোশাগার কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন।
রাজস্ব সংস্কার: 1) রাজস্ব আদায়ের জন্য গঠিত একটি ভ্রাম্যমান কমিটি। সঠিক রাজস্ব আদায়ের জন্য গড়ে তোলেন রাজস্ব বোর্ড। 2) তিনি সুবা-বাংলাকে ৬ টি ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগে একটি করে প্রাদেশিক কাউন্সিল গঠন করেন। 3) তাঁরই আমলে পাঁচসালা ও একসালা ভূমি ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
বিচার সংস্কার: ১) তিনি বাংলাকে ১০টি জেলায় ভাগ করেন।২) প্রত্যেক জেলায় একটি করে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালত স্থাপন করেন। ৩) তিনিই এদেশে প্রথম আইনের শাসন চালু করেন। তাঁর আমলে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়।
পুলিশি সংস্কার: ১) তিনি বাংলা ও বিহারকে কতকগুলি ফৌজদারি জেলায় বিভক্ত করেন। ২) প্রত্যেক জেলায় ছিল। একটি করে থানা এবং সেখানে একজন করে ফৌজদার নিয়োগ করেন। ৩) শহরের শান্তি রক্ষা করতেন কোতোয়ালগণ ।
মূল্যায়ন: এইভাবে তাঁর আমলে সর্বপ্রথম একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তিনিই ভারতে প্রথম আধুনিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সেজন্য ঐতিহাসিক পার্সিভাল স্পিয়ার তাঁকে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন।
3. লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনসংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর:- ওয়ারেন হেস্টিংসের পর ভারতে কোম্পানি শাসনের মূল স্থপয়িতা ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। তিনি ইংল্যান্ডের ধাঁচে ভারতের শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে।
কর্নওয়ালিসের শাসন সংস্কার :- 1)প্রশাসনিক সংস্কার: কর্নওয়ালিস হেস্টিংসের শাসন কর্মচারীদের ব্যবস্থা যেমন অনুসরণ করেন; তেমনই এর ব্যাপক সংস্কারও করেন। যথা— প্রথমেই তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত নেওয়া বন্ধ করতে তাদের বেতন বৃদ্ধি করেন। 2) কঠোর হস্তে তাদের অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথ এবং ব্যক্তিগত ব্যাবসা বন্ধ করে দেন। 3) কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য বহু উচ্চপদ = বাতিল করেন। 4) শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বাংলাকে ৩৫টি জেলা থেকে কমিয়ে ২৮টি করেন।
সিভিল সার্ভিস: লর্ড কর্নওয়ালিস ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। ভারতের বিভি প্রশাসনিক পদে নিয়োগের জন্য তিনি তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করেন।
পুলিশি সংস্কার: i)জেলা শাসনের জন্য তিনি জয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর প্রভৃতি শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগ করেন। ii) জেলাগুলিকে কতকগুলি থানায় বিভক্ত করেন। থানার দায়িত্বে ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট iii) কলকাতায় আইনশৃঙ্খলা দেখার জন্য পুলিশ কমিশনার নিয়োগ করেন। iv)গ্রামের ও শহরের আইনশৃঙ্খলা দেখাশোনা করতেন চৌকিদার ও কোতোয়ালগণ ।
বিচার সংস্কার: i)সদর নিজামত আদালত মুরশিদাবাদ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। এর নীচে ছিল ৪টি প্রাদেশিক আদালত (কলকাতা, ঢাকা, মুরশিদাবাদ ও পাটনা)। ii) ফৌজদারি মামলার জন্য তিনি ৪টি ভ্রাম্যমান আদালত স্থাপন করেন। iii) বিচারব্যবস্থায় সর্বনিম্ন আদালত ছিল মুন্সেফের আদালত iv) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ৪৮টি রেগুলেশনসহ ‘কর্নওয়ালিস কোড' নামে একটি আইন-সংহিতা প্রকাশ করেন। এর দ্বারাই তিনি প্রথম আইন, শাসন ও বিচার বিভাগকে আলাদা করেন।
4. ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন ? তাঁর বিভিন্ন সংস্কারগুলি লেখো।অথবা, লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের সংস্কারগুলি আলোচনা করো ।
উত্তর:- ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ।
সংস্কার সমূহ:-
হিতবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত বেন্টিঙ্ক বিশ্বাস করতেন যে, সর্বোচ্চ সংখ্যক ভারতবাসীর সর্বোৎকৃষ্ট উন্নতি ও সুখের জন্য কোম্পানির প্রশাসন পরিচালনা করা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক সংস্কার:-
i) নিষ্কর জমি অনুসন্ধান করে তার ওপর কর ধার্য করা হয়।
ii) কোম্পানির বার্ষিক করের ঘাটতি মেটানোর জন্য কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করা হয়।
iii( মাদ্রাজে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু (১৮২০ খ্রিস্টাব্দ)করে তিনি ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করেন। iv) কম বেতনে কাজের জন্য ভারতীয় কর্মচারী নিয়োগ করেন।
প্রশাসনিক সংস্কার:-
১) তিনি জেলাগুলিকে পুনর্গঠন করেন। জেলাগুলির তদারকির ভার অর্পিত হয় বিভাগীয় ডিভিশনের ওপর।
২) যোগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগ করেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর প্রভৃতি পদে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হয়।
৩) আইনসচিব মেকলের নেতৃত্বে ভারতীয় আইনবিধি (Indian Penal Code) সংকলন করেন।
বিচারবিভাগীয় সংস্কার:-
a) লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত ভ্রাম্যমান
বিচারব্যবস্থা বাতিল করে দেন। তাঁর আমলে জেলার পূর্বতন বিচারব্যবস্থা ফিরে আসে।
b) কালেক্টরদের আবার ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
c) উচ্চ আদালতগুলিতে ফারসির বদলে ইংরেজি এবং নিম্ন আদালতগুলিতে স্থানীয় ভাষা প্রযুক্ত হয়।
সমাজ সংস্কার:-
I) সমাজসংস্কারক হিসেবে বেন্টিঙ্ক ইংরেজ শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ii) তিনি ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু নারীর অভিশাপ সতীদাহ প্রথা রদ করেন। iii) তিনি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কর্নেল স্লিম্যানের নেতৃত্বে উত্তর ও মধ্য ভারতের মারাত্মক 'ঠগি' দস্যুদের নিশ্চিহ্ন করেন।সেই সঙ্গে তিনি পিন্ডারি দস্যুদেরও দমন করেন। iv) তিনি কাথিয়াবাড় ও রাজস্থানে নবজাত কন্যাসন্তান হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
শিক্ষা সংস্কার:-
1) বেন্টিঙ্ক প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের নিরসন করে আইনসচিব মেকলের নেতৃত্বে ভারতে ইংরেজি (পাশ্চাত্য) শিক্ষার প্রচলন করেন।
2) তিনি ডাক্তারি শিক্ষার জন্য ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ ও বোম্বাইতে এলফিনস্টোন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
মূল্যায়ন: শাসনসংস্কারক হিসেবে লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক অবশ্যই ভারতের ইংরেজ প্রশাসনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সতীদাহ প্রথা রদ করে মধ্যযুগীয় বর্বরতা থেকে ভারতীয় নারী সমাজকে মুক্ত করেন। এই কারণে তাঁকে ভারতীয় নারীদের সতীদাহ প্রথা থেকে মুক্তির পথিকৃৎ বলা হয়।
5. কোম্পানির আমলে পুলিশি ব্যবস্থা/পুলিশ প্রশাসনের কী কী সংস্কারসাধন ঘটেছিল ?অথবা, ভারতে কোম্পানি আমলে 'পুলিশ ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান তা লেখো।
উত্তর:- পটভূমি: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা, দেশের শাস্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পুলিশ ইত্যাদির দায়িত্ব নবাবের হাতে থেকে যায়। অন্যদিকে কোম্পানির হস্তগত হয় অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ, ফলে বাংলায় শুরু হয় দ্বৈতশাসন। শেষে পর্যন্ত ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটিয়ে সমগ্র ক্ষমতা কোম্পানির হস্তগত করেন। উচ্চ আদালতগুলিতে ফারসির বদলে ইংরেজি এবং নিম্ন আদালতগুলিতে স্থানীয় ভাষা প্রযুক্ত হয়।
হেস্টিংসের সংস্কার: ভারতে ব্রিটিশ শাসনের তৃতীয় স্বপ্ন ছিল পুলিশ বিভাগ। ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম স্তর হিসেবে পুলিশি ব্যবস্থাকে ওয়ারেন হেস্টিংস ব্যাপকভাবে সংস্কার করেন। I) হেস্টিংস প্রত্যেকটি থানা সঙ্গে পুলিশ হাজত নির্মাণ করেন।
ii) থানার দায়িত্ব ফৌজদারের ওপর ন্যস্ত হয়।
iii) ফৌজদারকে সাহায্য করার জন্য অনেক কর্মচারী নিয়োগ করা হত। পরবর্তীকালে হেস্টিংস ফৌজদারি পদ তুলে দিয়ে এই ক্ষমতা অর্পণ করেন দেওয়ানি আদালতের বিচারপতিদের ওপর।
কর্নওয়ালিসের সংস্কার: আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার প্রবর্তক হিসেবে লর্ড কর্নওয়ালিস সমধিক পরিচিত। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশি ব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ-
1) তিনি প্রথমে কলকাতাকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের জন্য একজন করে পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়োগ" করেন। তাদের অধীনে পুলিশবাহিনী সংযুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা দায়িত্ব দেন।
2) প্রতিটি জেলাকে এলাকা অনুযায়ী কতকগুলি ভাগে করা হয় এবং এক-একটি এলাকার দায়িত্ব এক-একজন সুপারিন্টেডেন্টকে দেওয়া হয়।
3)সুপারিন্টেডেন্টদের অধীনে এলাকাভিত্তিক কয়েকটি থানা গঠন করা হয়।
4) প্রতিটি থানায় একজন করে দারোগা ও তাঁর অধীন কয়েকজন সিপাহি নিয়োগ করা হয়।
5) জেলার ম্যাজিস্ট্রেট সুপারিন্টেডেন্টদের সাহায্য নিয়ে। জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন।
6) জেলা কালেক্টর থানার দারোগাদের নিয়োগ করতেন।
7) প্রতিটি গ্রামের জন্য চৌকিদার থাকত। তাদের নিয়োগ করতেন থানার দারোগারা।
মূল্যায়ন: কিন্তু কর্নওয়ালিসের প্রচেষ্টা বিশেষভাবে সফল হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত ফলে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ভীতির সম্পর্ক
No comments:
Post a Comment