Geography Chapter -10 Part-2 Questions And Answers Class 7th || সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল দশম অধ্যায় "আফ্রিকা মহাদেশে নদ নদী" প্রশ্ন উত্তর || ক্লাস 7th ভূগোল সহায়িকা ||
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. নীলনদের ব-দ্বীপ অঞ্চল কোনটি?
উঃ। কায়রো থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত নীলনদের ব-দ্বীপ অঞ্চল।
2. নীলনদের উৎস অঞ্চল কোনটি ?
উঃ । তাঞ্জানিয়া দেশের বুরুন্ডি মালভূমি অঞ্চল।
3. নীলনদের মধ্য অববাহিকায় কী দেখা যায়?
উঃ । নীলনদের মধ্য অববাহিকায় সাভানা তৃণভূমি দেখা যায়।
4. পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ কোনটি?
উঃ। মিশরের উচ্চ আসোয়ান বাঁধ।
5. ব্লু নীলের উপর কোন্ বাঁধ তৈরি হয়েছে?
উঃ। ব্লু নীলের উপর জেবেল-আটালিয়া বাঁধ তৈরি হয়েছে।
6. নীলনদের নতুন পলি পড়া উর্বর মাটিতে কোন্ কোন্ ফসলের চাষ হয়?
উঃ। গম, বার্লি, ধান, আখ, মিলেট প্রভৃতি।
7. মিশরের আরও কয়েকটি বিখ্যাত বাঁধের নাম লেখো।
উঃ। লেক নাসের বাঁধ, নাগহামাদি, ইসনা, অ্যাসিউট প্রভৃতি।
৪. নীলনদের উচ্চ অববাহিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো হয়?
উঃ। কফি, কলা, তামাক ইত্যাদি ফসল ভালো হয়।
9. ব্লু-নীল কোন্ জলবায়ুর অন্তর্গত?
উঃ। ব্লু-নীল মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত।
10. আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত নীলনদ ক-টি ধাপে নেমে গেছে?
উঃ। আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত নীলনদ ছটি ধাপে নেমেছে।
11. হোয়াইট নীল কোন্ জলবায়ুর অন্তর্গত?
উঃ । হোয়াইট নীল নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত।
12. সুদানে রুনীলের ওপর কোন্ কোন্ বাঁধ দেওয়া হয়েছে?
উঃ। সেনার ও আটবারা বাঁধ।
13. ইজিপসিয়ান কটন কী ?
উঃ। নীলনদের ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রচুর লম্বা আঁশের তুলোর চাষ হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে এই তুলো ইজিপসিয়ান কটন নামে পরিচিত।
14. কোন সময় নীলনদের নিম্ন অংশে বন্যা দেখা যায় ?
উঃ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে নীলনদের নিম্ন অংশে বন্যা দেখা যায়।
15. সুদানের রাজধানীর নাম কী ?
উঃ। সুদানের রাজধানী খার্তুম।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :তিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. নীলনদ অববাহিকার অবস্থান ও আয়তন লেখো।
উঃ। নীলনদ ও তার উপনদী-শাখানদী আফ্রিকা মহাদেশের যেসব অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এদের মিলিত অঞ্চলগুলোকেই নীলনদ অববাহিকা বলে। আফ্রিকার টাঙ্গানিকা, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, সুদান ও মিশরের অংশ বিশেষ এই নীলনদ অববাহিকায় অবস্থিত। আয়তন প্রায় 3.50,000 কিলোমিটার। মিশর ও সুদানের সবচেয়ে বেশি অঞ্চল নীলনদ অববাহিকায় অবস্থিত।
2. নীলনদ অববাহিকা অঞ্চলের জলবায়ুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উঃ। নীলনদের অববাহিকা অঞ্চলটি নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের মধ্যবর্তী বলে এখানে জলবায়ুর তারতম্য দেখা যায়। নীলনদ অববাহিকার উৎস অঞ্চলে জলবায়ু উয় ও আর্দ্র, প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীত-গ্রীষ্মের উন্নতার পার্থক্য অনেক কম। মধ্যভাগে ক্রান্তীয় জলবায়ু দেখা যায়। উন্নতা তীক্ষ্ণ এবং বৃষ্টিপাত কম। পশ্চিমদিকে উয় মরু প্রকৃতির জলবায়ু। উত্তরে ব-দ্বীপ অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু দেখা যায়। শীত-গ্রীষ্ম উভয়ই মৃদু সমভাবাপন্ন।
. নীলনদ অববাহিকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উঃ। জলবায়ুর বিভেদে স্বাভাবিক উদ্ভিদেরও তারতম্য দেখা যায়। দক্ষিণ নিরক্ষীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য আবার সুদানের দক্ষিণ ভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সাভানা তৃণভূমি দেখা যায়। এখানে বড়ো বড়ো ঘাস জন্মায়। সুদানের পশ্চিম ভাগে কাঁটাজাতীয় ঝোপ, লতা, গুল্ম প্রভৃতি গাছ জন্মায়।
4. নীলনদ অববাহিকার উল্লেখযোগ্য শহরগুলির নাম লেখো।
উঃ। সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্র হল কায়রো, যা নীলনদ অববাহিকার ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। কায়রো মিশরের রাজধানী। এছাড়া অন্যান্য শহরগুলি হল আলেকজান্দ্রিয়া, খার্তুম, পোর্ট সুয়েজ, পোর্ট সৈয়দ প্রভৃতি। আলেকজান্দ্রিয়া মিশরের প্রাচীন রাজধানী। খাতুম সুদানের রাজধানী।
5. কায়রো কীজন্য বিখ্যাত?
উঃ। কায়রো মিশরের রাজধানী ও আফ্রিকার সবচেয়ে বড়ো শহর। এখানে লোকবসতি সবচেয়ে বেশি। এখানে মুসলিম ধর্মের বড়ো শিক্ষাকেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় জমে-আল-আজহায় অবস্থিত। কায়রো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখান থেকে কিছু দূরে পিরামিড ও স্ফিংস মূর্তিগুলো দেখা যায়। এখানে মোটরগাড়ি নির্মাণ, চিনি কল ও পশম বস্ত্রশিল্পের কারখানা আছে।
6. মিশরের অধিকাংশ মানুষ কোথায় বসবাস করেন ?
উঃ। নীলনদের অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের জনবসতি লক্ষ করা যায়। যেমন অববাহিকার উচ্চ অংশে নিরক্ষীয় অঞ্চলে জনবসতি প্রায় নেই। মধ্যভাগে সাভানা তৃণভূমিতে কিছু পশুপালক বাস করে। আর নিম্ন অংশে এক সময় মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এবং এখনও অধিকাংশ মানুষ নীলনদের ধারে কৃষিকাজ, পশুপালন ও বসবাস করেন। এখানকার কৃষি, শিল্প ও যাতায়াত ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে মিশরের ৪০ শতাংশ মানুষ এখানেই বসবাস করেন।
7. নীলনদে প্রতিবছর বন্যার কারণ কী?
উঃ। ব্লুনীল ও হোয়াইট নীলের মিলিত প্রবাহে নীলনদের সৃষ্টি হয়েছে। বুরুন্ডির উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হোয়াইট নীল ও ইথিওপিয়ার উচ্চভূমির টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন ব্লুনীল নিরক্ষীয় জলবায়ু ও মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের ওপর অবস্থিত। তাই সারাবছর ধরে এখানে পরিচলন বৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত আরও বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য নীলনদে প্রতিবছর বন্যা হয়।
৪. নীলনদের বন্যার ফলে কী কী হয়ে থাকে?
উঃ। নীলনদের বন্যা এক বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে। এর ফলে ঘরবাড়ি ধসে পড়ে, জমিতে ফসল নষ্ট হয় এবং গোর্ ছাগল মারা পড়ে, বহু সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যায়, অপরদিকে বন্যার জলের সঙ্গে নতুন পলি এসে মাটিতে মেশে। নতুন পলি পড়া উর্বর মাটিতে গম, বার্লি, ধান, আখ, মিলেট প্রভৃতি ফসলের চাষ হয়।
9. নীলনদ অববাহিকায় উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে লেখো।
উঃ। নদীবাহিত উর্বর পলিমাটি এবং উন্নত জলসেচ ব্যবহার কারনে নীলনদ অববাহিকা কৃষিতে বেশ উন্নত। নীলনদের উচ্চ অববাহিকায় কফি, কলা, তামাক প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। মধ্য অববাহিকায় হয় গম, খেজুর, জোয়ার ও চিনেবাদাম। জলপাই, যব ও ভুট্টা প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয় নীলনদের নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলে, আর ব-দ্বীপ অঞ্চলে ধান, গম, তুলো ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হয়। জলসেচের সাহায্যে নীলনদের ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রচুর লম্বা আঁশের উন্নত তুলোর চাষ হয়। এই তুলো ইজিপসিয়ান কটন নামে পরিচিত।
10. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে? এর উদ্দেশ্যগুলি কী কী ?
উঃ। বহু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যখন নদীতে বাঁধ তৈরি করা হয় তখন তাকে বলে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা। বহুমুখী নদী-পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি হল— পর্যটন, জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলপরিবহন ও মাছ চাষ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5/7
1. মিশর হল নীলনদের দান' – আলোচনা করো।
উঃ। নীলনদের তীরে গড়ে উঠেছিল মিশরীয় সভ্যতা। সভ্যতা গড়ে ওঠার জন্য জলের জোগান খুবই জরুরি। এই কারণেই দেখা যায় যে প্রাচীন মানব সভ্যতাগুলি নদীকেন্দ্রিক ছিল। নীলনদ অববাহিকা আফ্রিকা মহাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। নীলনদ যদি না থাকত তাহলে মিশর দেশটি সাহারা মরুভূমির অংশ হয়ে যেত। কৃষি, পশুপালন, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ, পরিবহণ, শিল্পোন্নতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিশর দেশে নীলনদের অবদান অপরিসীম। তাই মিশরের যা-কিছু সমৃদ্ধি তা নীলনদের জন্যই। এই কারণেই মিশরকে 'নীলনদের দান' বলা হয়।
2. নীলনদের অববাহিকা বলতে কী বোঝায় ? নীলনদের উৎপত্তি ও গতিপথ বর্ণনা করো।
উঃ। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ নীল আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে বরাবর উত্তর দিকে বয়ে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। এর দু-পাশে যে নিম্ন সমতলভূমি অবস্থান করছে তাকেই বলা হয় নীলনদের অববাহিকা। এই অববাহিকা অঞ্চল তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, সুদান ও মিশর—এই ছ'টি দেশের ওপর বিস্তৃত। নীলনদ আফ্রিকার দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য 6.650 কিমি। আফ্রিকার মোট জলপ্রবাহের প্রায় 10 ভাগ জলই নীলনদ দিয়ে বয়ে যায়। আফ্রিকার বিখ্যাত বুরুন্ডি মালভূমি থেকে উৎপন্ন হোয়াইট নীল এবং ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন ব্লু-নীল, এই দুই নদীর জলধারা থেকে নীলনদ তৈরি হয়েছে। উত্তর সুদানের রাজধানী খার্তুম শহর এই দুই ধারার মিলনস্থল। নীলনদ উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে সাহারা মরুভূমির পূর্বপ্রান্তকে সবুজ করে তুলেছে। নীলনদ ভূমধ্যসাগরে মোহানার কাছে বিশাল ব-দ্বীপ তৈরি করেছে। মিশরের অধিকাংশ মানুষই নীলনদের তীরে কৃষিকাজ, পশুপালন ও বসবাস করে। নীলনদের তীরে গড়ে ওঠা বিখ্যাত শহরগুলি হল খাতুম, আসোয়ান, লাস্কার ও কায়রো।
. নীলনদের অববাহিকা অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি কয়ভাগে বিভক্ত ও তাদের বিবরণ দাও।
উঃ। ভূ-প্রকৃতি অনুসারে নীলনদের অববাহিকাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল :
(i) উৎসের নিকটবর্তী বন্ধুর মালভূমি অঞ্চল : এখানকার ভূপ্রকৃতি বন্ধুর অঞ্চলটি বুরুন্ডির (তাঞ্জানিয়া) পার্বত্য অঞ্চল থেকে ভিক্টোরিয়া হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত।
(ii) অববাহিকার উচ্চ অংশের জলাভূমি ঃ ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে সুদানের মালাকল পর্যন্ত এর অন্তর্গত। এখানকার ভূমির উচ্চতা মধ্যম রকমের। সারাবছর ধরে বৃষ্টিপাত হয় বলে এখানে কোনো কোনো স্থানে জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাভূমির স্থানীয় নাম সুদ বা সাড্ড। আরবি শব্দ 'সুদ' এর বাংলা অর্থ প্রতিবন্ধক। কচুরিপানা, প্যাপিরাস, নলখাগড়া ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ জলাভূমি জলপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে বলে এর এরূপ নামকরণ হয়েছে।
(iii) অববাহিকার মধ্য অংশের তৃণভূমি : এই অঞ্চল মালাকল থেকে খাতুম পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানকার ভূপ্রকৃতি অসমান। এখানে সাভানা জাতীয় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
(iv) অববাহিকার নিম্ন অংশের সমতলভূমি : আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত অংশ অববাহিকার নিম্ন অংশের সমতলভূমির অন্তর্গত। এই অংশের ভূমি উত্তরদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে। এখানকার খাতুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত অংশে নীলনদের গতিপথে 6টি খরস্রোত দেখা যায়।
(v) ব দ্বীপ অঞ্চল : মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে উত্তরে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত অংশ নীলনদের ব-দ্বীপ অঞ্চল। এই উর্বর পলিগঠিত অঞ্চল বেশ চওড়া ও কৃষিসমৃদ্ধ।
4. নীলনদ অববাহিকার খনিজ ও শিল্প সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। নীলনদ অববাহিকা খনিজ সম্পদে সেভাবে সমৃদ্ধ নয়। তবে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফেটস্, আকরিক লোহা, খনিজ লবণ প্রভৃতি কিছু পরিমাণে খনিজ সম্পদ মিশর এবং সুদান থেকে পাওয়া যায়। নীলনদ অববাহিকায় তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। মূলত সুদান ও মিশরে নানাবিধ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। উপযুক্ত পরিমাণে জলের জোগান, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, প্রচুর শ্রমিক, সুলভ জলবিদ্যুৎ প্রভৃতির কারণে মিশর ও সুদানে বস্ত্রবান, পশম, সিমেন্ট, মোটরগাড়ি, কাগজ, চর্ম, রাসায়নিক প্রভৃতি বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে। বস্ত্রবয়ন এখানকার প্রধান শিল্প। স্ফিংস ও পিরামিডকে ভিত্তি করে এখানে পর্যটন শিল্প উল্লেখযোগ্য।
5. বন্যার অতিরিক্ত জল আটকানোর জন্য মিশরীয়রা কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছে?
উঃ। নদীতে বাঁধ দিয়ে অতিরিক্ত জল আটকে রাখা যেতে পারে। নীলনদের উপরেও মিশরীয়রা বাঁধ তৈরি করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিজমিতে জলসেচের উদ্দেশ্যে নীলনদের উপর আসোয়ান বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। বহু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যখন নদীতে বাঁধ তৈরি করা হয় তখন তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলা হয়। নীলনদের উপর এরকম অনেক নদী পরিকল্পনা করা হয়েছে। এভাবেই ব্লু নীলের উপর তৈরি হয়েছে জেবেল-আটালিয়া বাঁধ। ব্লু-নীলের উপর . দেওয়া আছে সেনার ও আটাবারা বাঁধ।
6. নীলনদ অববাহিকায় কোন্ কোন্ শিল্প গড়ে উঠেছে?
উঃ। নীলনদ অববাহিকার উর্বর পলল মৃত্তিকার জন্য এখানে কৃষিজ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। মিশরের সুদানে বস্ত্রবয়ন, চিনি কারখানা, বনস্পতি, সিগারেট, পশম বস্ত্রশিল্প প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, আসোয়ান, হেলওয়ান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিল্পকেন্দ্র। সিমেন্ট কারখানা, লৌহ আকরিক শিল্পও এখানে লক্ষ করা যায়। তবে প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ এখানে তেমন ঘটেনি।
7. মিশরের কৃষিকাজে নীলনদের প্রভাব আলোচনা করো।
উঃ। খাতুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত নীলনদের জলবায়ু মরুপ্রকৃতির, আবার আসোয়ান থেকে কায়রো পর্যন্ত অঞ্চল। বৃষ্টিহীন মরুভূমি। ফলে মিশরের জলবায়ু মরুপ্রকৃতির। তাই কৃষিকাজের জন্য মিশরকে জলসেচের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই এক্ষেত্রে নীলনদই একমাত্র জলের উৎস। নীলনদের উপরিস্থিত বাঁধগুলি মিশরের কৃষিকাজে সাহায্য করে এবং কৃষির উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে। মিশরের মরুভূমিকে শস্যশ্যামলা করেছে এই নীলনদের জল। এ ছাড়া এই জল জমিকে চাষযোগ্য করেছে ও তার আয়তন বাড়িয়ে চলেছে। প্রয়োজন মতো জলসেচ হওয়ার জন্য মরুভূমির দেশ মিশর আজ বিদেশের মাটিতে ধান রপ্তানি করতে পারছে। দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন নীলনদের জলেই মিশরে প্রচুর পরিমাণে গম ও যবের চাষ করা হয়ে থাকে।
8. মিশরে নীলনদে কৃষিতে অতীতে বন্যা ও বর্তমানে জলসেচের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় কেন?
উঃ। মিশরের কৃষকগণ সম্পূর্ণরূপে জলসেচের ওপর নির্ভর করে কৃষিকার্য করে থাকে। গত 5000 বছর যাবৎ মিশরের কৃষকগণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নীলনদের বন্যার জলকে কৃষিকার্যে ব্যবহার করছে। বন্যার জলকে খালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করিয়ে বাঁধ দিয়ে ঘেরাও করা বৃহৎ কৃষিক্ষেত্রের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখা হয়। বন্যার সময় এর একদিকের বাঁধের কিছু অংশ কেটে দিয়ে ওই বিশাল ক্ষেত্রে খালের জল ঢোকাবার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বন্যার জল ওই সব কৃষিক্ষেত্রগুলিতে এক থেকে দু-মাস সঞ্চিত রাখা হয়। এর ফলে জলে ডুবে থাকা কৃষিক্ষেত্র প্রচুর পরিমাণে জল শোষণ করে নিতে পারে এবং কৃষিকার্যের সময় ওই কৃষিক্ষেত্রগুলিতে আর জলসেচ করতে হয় না। এই প্রথায় জলসেচে আরও সুবিধা হয়, বন্যার জলের সঙ্গে যে পলিমাটি থাকে তা কৃষিক্ষেত্রগুলিতে থিতিয়ে পড়ে ও তার উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তারপর কৃষকগণ ইচ্ছামতো বাঁধের একাংশ কেটে জল খালের মাধ্যমে প্রবাহিত করে পার্শ্ববর্তী বাঁধ ঘেরাও করা অন্য কৃষিক্ষেত্রে নিয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, এই জলসেচ প্রথায় বছরে মাত্র একটি ফসল চাষ করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতি ছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই মিশরে ডোঙ্গা, পারসিয়ান হুইল ও আর্কিমিডিয়ান স্ক্রুর সাহায্যে সেচ প্রথা চালু আছে। বর্তমানকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রথায় আসোয়ান, ইনসা, অ্যাসিউট, নাগহামাদি প্রভৃতি স্থানে নীলনদের উপর বাঁধ দিয়ে বাঁধের পিছনে জলাধারে জল সঞ্চয় করে রেখে খালের মাধ্যমে সারাবছর জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে কৃষকরা বছরে একই জমিতে একাধিক শস্য উৎপন্ন করতে পারে। এই বাঁধগুলির মধ্যে উচ্চ আসোয়ান হল বৃহত্তম বাঁধ।
No comments:
Post a Comment