Geography Chapter -10 Questions And Answers Class 7th || সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল দশম অধ্যায় "আফ্রিকা মহাদেশে" প্রশ্ন উত্তর || ক্লাস 7th ভূগোল সহায়িকা ||
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : -প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. কোথায় পৃথিবীর প্রথম মানুষের উদ্ভব হয়েছিল?
উঃ। পূর্ব আফ্রিকাতেই পৃথিবীর প্রথম মানুষের উদ্ভব হয়েছিল।
2. মিশরের রাজধানী কী?
উঃ মিশরের রাজধানী কায়রো।
3. আটলাস পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গের নাম কী? এর দৈর্ঘ্য কত ?
উঃ। আটলাস পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট তৌবকল। এর দৈর্ঘ্য 4165 মিটার।
4. সাহারা মরুভূমি কোথায় অবস্থিত?
উঃ। আটলাস পর্বতমালার দক্ষিণ দিকে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সাহারা মরুভূমি অঞ্চল।
5. নীলনদের প্রধান দুটি ধারা কী ?
উঃ। নীলনদের প্রধান দুটি ধারা হল হোয়াইট নীল ও ব্লু নীল।
6. টকজাতীয় ফলের গাছ দেখা যায় কোন্ জলবায়ুতে?
উঃ। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে টকজাতীয় ফলের গাছ দেখা যায়।
7. আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশকে বিচ্ছিন্ন করেছে কোন্ প্রণালী ?
উঃ। আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশকে বিচ্ছিন্ন করেছে জিব্রাল্টার প্রণালী।
৪. আফ্রিকার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা কোথায় সৃষ্টি হয়েছে?
উঃ। আফ্রিকার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা সৃষ্টি হয়েছে কঙ্গো অববাহিকায়।
9. সাহারা মরুভূমির মধ্যভাগে কোন্ কোন্ মালভূমি অবস্থিত ?
উঃ। সাহারা মরুভূমির মধ্যভাগে আহান্নার ও টিরেস্টি মালভূমি অবস্থিত।
10. ভূমধ্যসাগর আফ্রিকার কোন্ দিকে অবস্থিত?
উঃ। ভূমধ্যসাগর আফ্রিকার উত্তর দিকে অবস্থিত।
11. কোন্ নদীপথে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে?
উঃ। জাম্বেসি নদীপথে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে।
12. আফ্রিকা মহাদেশে ক-টি গ্রস্ত উপত্যকা আছে?
উঃ। আফ্রিকা মহাদেশে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা আছে।
13. আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি? এর দৈর্ঘ্য কত?
উঃ। আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব্বেচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো। এর দৈর্ঘ্য 5895 মিটার।
14. আফ্রিকা মহাদেশের গ্রস্ত উপত্যকা অঞ্চলে কোন্ কোন্ হ্রদ দেখা যায়?
উঃ। টাঙ্গানিকা, মালাউই, রুডলফ্, অ্যালবার্ট প্রভৃতি হ্রদ দেখা যায়।
15. সাভানা তৃণভূমি অঞ্চলে কী জাতীয় গাছ দেখা যায়?
উঃ। অ্যাকাসিয়া ও বাওয়াব জাতীয় গাছ দেখা যায়।
16. কতদিন পর্যন্ত আফ্রিকার বহু দেশ কাদের উপনিবেশ ছিল ?
উঃ। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আফ্রিকার বহু দেশ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কিছু দেশের উপনিবেশ ছিল।
17. প্রণালী কাকে বলে?
উঃ। দুটি বড়ো জলভাগ যে সংকীর্ণ জলভাগ দ্বারা যুক্ত হয় তাকে প্রণালী বলা হয়।
18. ভেল্ড কী?
উঃ। আফ্রিকা মহাদেশে উঁচু মালভূমিতে যে তৃণাঞ্চল দেখা যায় তাকে ভেল্ড বলা হয়।
19. নীলনদের তীরে গড়ে ওঠা বিখ্যাত শহরগুলি কী কী?
উঃ। খাটুম, আসোয়ান, লাস্কার ও কায়রো।
20. কঙ্গো নদীর তীরে গড়ে ওঠা বড়ো শহরগুলির নাম লেখো।
উঃ। কিসাঙ্গানি, বানডাকা, কিনশাসা ও ব্রাজাভিল।
21. পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান নদীর নাম ও উৎসস্থল লেখো।
উঃ। পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান নদী নাইজার। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে 200 কিমি দূরে গিনি উচ্চভূমি এর উৎসস্থল।
22. অরো নদীতে কী উদ্দেশ্যে কটি জলাধার তৈরি করা হয়েছে?
উঃ। জলসেচের উদ্দেশ্যে অরেঞ্জ নদীতে প্রায় 29টি জলাধার তৈরি করা হয়েছে।
23. হোয়াইট নীল নদের উৎস কোনটি?
উঃ । আফ্রিকার বিখ্যাত বুরুন্ডি মালভূমি হোয়াইট নীল নদের উৎস।
24. কঙ্গো নদীর উৎসস্থল কোনটি?
উঃ । জাম্বিয়ার উত্তর প্রান্ত হল কঙ্গো নদীর উৎসস্থল।
25. দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত দুটি মরুভূমির নাম লেখো।
উঃ। কালাহারি ও নামিব।
26. আফ্রিকার কোথায় গরমকালে বৃষ্টি হয়?
উঃ । আফ্রিকার একেবারে পূর্বদিকে ও মাদাগাস্কার দ্বীপে গরমকালে বৃষ্টি হয়।
▧ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হত কেন ?
উঃ। প্রাকৃতিক দুর্গমতা, অস্বস্তিকর উন্ন ও আর্দ্র জলবায়ু, গভীর জঙ্গল ও হিংস্র জন্তুর ভয় প্রভৃতি কারণের জন্য বহুদিন পর্যন্ত এই মহাদেশে আধুনিক সভ্যতার আলো এসে পৌঁছোতে পারেনি। এই কারণে আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হত।
2. আফ্রিকা মহাদেশের অবস্থান, আয়তন ও সীমা উল্লেখ করো।
উঃ। আফ্রিকা মহাদেশ এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত। এই মহাদেশের আয়তন 3 কোটি 2 লক্ষ 21 হাজার 532 বর্গকিলোমিটার। আয়তনে এই মহাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। আফ্রিকা মহাদেশটির প্রায় চারিদিকেই জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত। এই মহাদেশের পূর্বে লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগর।
3. আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত আটলাস পর্বতমালা সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ । আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকে আটলাস পর্বতমালা অবস্থিত। এটি একটি ভঙ্গিল পর্বতবেশ কয়েকটি সমান্তরাল পর্বত নিয়ে অ্যাটলাস পর্বতমালা গঠিত হয়েছে। এই পর্বতমালা হিমালয়ের মতো উঁচু বা বিশাল নয়। এই পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ হল মাউন্ট তৌবকল। এর উচ্চতা হল 4165 মিটার।
4. ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত। এখান থেকে একটি পর্বতশ্রেণি লোহিত সাগরের সমান্তরাল ভাবে মিশর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। এই উচ্চভূমির দক্ষিণে মাউন্ট কেনিয়া, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো এবং রুয়োরি পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, এর উচ্চতা 5895 মিটার। নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত হলেও এর উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে সারাবছর এর চূড়ায় বরফ জমে থাকে।
5. আফ্রিকায় কী ধরনের জলবায়ু ও বনভূমি দেখা যায় ?
উঃ। আফ্রিকা মহাদেশটির মধ্যভাগ উয়মণ্ডলের অন্তর্গত এবং উত্তর ও দক্ষিণ অংশ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু প্রকৃতির মাটি, জলবায়ু প্রভৃতির বৈচিত্র্যে এখানে চিরহরিৎ বৃষ্টি অরণ্য, উয় মরু বনভূমি, ক্রান্তীয় মৌসুমি বৃক্ষের বনভূমি, উয় নাতিশীতোয় ভূমি, মৌসুমি পর্ণমোচী অরণ্য, ভূমধ্যসাগরীয় অরণ্য গড়ে উঠেছে।
. পূর্ব আফ্রিকার গ্রস্ত উপত্যকা ও হ্রদগুলির বিবরণ দাও।
উঃ। পূর্ব আফ্রিকার ভূ-প্রকৃতি একটু অন্যরকম। ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে ফাটল তৈরি হয়ে দুটো ফাটলের মাঝের অংশ নীচের দিকে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকা তৈরি হয়েছে। এই গ্রস্ত উপত্যকা অঞ্চলে বহু হ্রদ দেখা যায়। এই হ্রদগুলির দৈর্ঘ্য ও গভীরতা অনেক বেশি। টাঙ্গানিকা, নিয়াশা, মালাউই, রুডল্ফ, অ্যালবার্ট প্রভৃতি এই রকম হ্রদ। এছাড়াও ভিক্টোরিয়া, মারু প্রভৃতি হ্রদ রয়েছে। এর মধ্যে ভিক্টোরিয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাদু জলের হ্রদ। এর দৈর্ঘ্য 680 কিমি টাঙ্গানিকা আফ্রিকার দীর্ঘতম হ্রদ। নিয়াশ আফ্রিকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম হ্রদ, এটি 550 কিমি দীর্ঘ।
7. সাহারা মরুভূমির বিবরণ দাও।
উঃ। আটলাস পর্বতমালার দক্ষিণে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা। এর মধ্যভাগে আহাপ্পার ও টিবেস্টি মালভূমি দেখা যায়। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়ায় এখানে জনবসতি প্রায় দেখাই যায় না। সাহারা মরুভূমির পূর্বপ্রান্তে রয়েছে নীলনদ অববাহিকা।
৪. কঙ্গো নদী অববাহিকার বিবরণ দাও।
উঃ। নিরক্ষরেখার আশেপাশে দেখা যায় কঙ্গো নদী অববাহিকা। এখানে পৃথিবীর বৃহত্তম নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে। আফ্রিকার সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা থেকে কঙ্গো নদীর সৃষ্টি। সারাবছর তীব্র উন্নতা ও বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এই জঙ্গল সারা বছর সবুজ থাকে। এ ছাড়া কঙ্গো অববাহিকায় জলভাগের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 250 সেমি। কঙ্গো নদীর তীরে গড়ে ওঠা বড়ো শহরগুলি হল কিসাঙ্গানি, বানডাকা, কিনশাসা ও ব্রাজাভিল।
10. সাহারা মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না কেন?
উঃ। ইউরেশিয়ার স্থলভাগ থেকে যে শুষ্ক জলীয় বাষ্পহীন উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু আসে তার প্রভাবে সাহারা মরুভূমিতে প্রায় বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া ভারত মহাসাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু মহাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যে বায়ু সাহারায় এসে পৌঁছায় তা জলীয় বাষ্পহীন। তাই এই বায়ুতে আর বৃষ্টি হয় না। এর ফলে সাহারা সারাবছরই বৃষ্টিহীন থাকে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5/7
1. আফ্রিকা মহাদেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ। আয়তনে এবং জনসংখ্যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকা। এই মহাদেশ একই সঙ্গে পৃথিবীর উত্তর- দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত। পূর্ব আফ্রিকাতেই পৃথিবীর প্রথম মানুষের উদ্ভব হয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে লিভিংস্টোন, স্ট্যানলি প্রমুখ আবিষ্কারকগণ আফ্রিকার অজ্ঞাত অংশ আবিষ্কার করেন। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আফ্রিকার বহু দেশ ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার কিছু দেশের উপনিবেশ ছিল। আফ্রিকার উত্তরে দুর্গম সাহারা মরুভূমি। আফ্রিকার মধ্যভাগে রয়েছে হিংস্র জীবজন্তুতে পূর্ণ নিবিড় ও দুর্ভেদ্য অরণ্য। এই মহাদেশের উপকূল অভগ্ন, উয় ও আর্দ্র জলবায়ুও অস্বস্তিকর। এই মহাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে জলপ্রপাত, খরস্রোতা নদী, এখানে প্রায় সর্বত্রই বন্ধুর মালভূমি। হিংস্র ও নরখাদক আদিম অধিবাসীদের বসবাস থাকার কারণে আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হত।
2. আফ্রিকার দক্ষিণ ও পূর্বের উচ্চভূমির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উঃ। আফ্রিকার দক্ষিণ ও পূর্বের অঞ্চলটি অত্যন্ত উঁচুনীচু পর্বতশ্রেণি, মালভূমি, গ্রস্ত উপত্যকা ও হ্রদবিশিষ্ট। উত্তরে অবস্থিত ইথিওপিয়ার মালভূমি এখানকার সর্বোচ্চ অংশ। মালভূমির পূর্বদিকের অংশে গ্রস্ত উপত্যকা অবস্থিত। এটি উত্তরে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে আবিসিনিয়ার ওপর দিয়ে রুডল্ফ হ্রদের পাশ দিয়ে দক্ষিণে নিয়াসা হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিয়াসা হ্রদের উত্তর প্রান্ত থেকে আর-একটি গ্রস্ত উপত্যকা টাঙ্গানিকা ও এডওয়ার্ড হ্রদের মধ্যে দিয়ে আলবার্ট হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত। একে পশ্চিমের গ্রস্ত উপত্যকা বলে। ইথিওপিয়ার মালভূমি আফ্রিকার পর্বতসমূহের কেন্দ্র। এখান থেকে একটি শাখা উত্তরে আর একটি শাখা দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণের পর্বতশ্রেণিই এই মালভূমির উচ্চতম অংশ। এখানে মাউন্ট কেনিয়া (5,190 মিটার), মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো (5,925 মিটার), রুয়েঞ্জারি (4,938 মিটার) প্রভৃতি উচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলি অবস্থিত। এই শৃঙ্গগুলি আসলে বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির চূড়া। কিলিমাঞ্জারোর চূড়া চিরতুষারে আবৃত। মালভূমির দক্ষিণাংশের ড্রাকেন্সবার্গ পর্বত উঁচু প্রাচীরের মতো সমুদ্র উপকূল থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর দক্ষিণ অংশ নিউভেল্ড নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া, মালভূমির নীচু অংশে জল জমে সৃষ্টি হয়েছে।
3. আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতির পরিচয় দাও ।
উঃ। ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে আফ্রিকা মহাদেশের ভূপ্রকৃতিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল :
(i) উত্তর- পশ্চিমের পার্বত্যভূমি। (ii) মধ্যের মরুময় মালভূমি। (iii) দক্ষিণ-পূর্বের উচ্চ মালভূমি। (iv) উপকূলীয় নিম্নভূমি ও (v) দ্বীপ অঞ্চল।
(i) উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্যভূমি : আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আটলাস পর্বতশ্রেণি। আটলাস পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের অন্তর্গত। আটলাস পর্বতকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা—টেল আটলাস, গ্রেট আটলাস ও সাহারীয় বা অ্যান্টি আটলাস। উত্তরে টেল আটলাস, দক্ষিণে সাহারীয় আটলাস এবং মধ্যভাগে গ্রেট আটলাস। এদের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় 4,500 মিটার।
(ii) মধ্যের মরুময় মালভূমি : লিবিয়া, চাদ, সাহারা ও কঙ্গো অববাহিকা নিয়ে গঠিত মধ্যের মরুময় মালভূমি। এদের গড় উচ্চতা প্রায় 760 মিটার। এই মরুভূমিতে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি পর্বতমালা লক্ষ করা যায়। তাদের মধ্যে টিবেস্টি, আহামার ও টানো উল্লেখযোগ্য। এই মালভূমি দক্ষিণদিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ক্রমশ ঢালু।
iii) দক্ষিণ-পূর্বের উচ্চ মালভূমি : এই মালভূমি উত্তরদিক থেকে দক্ষিণদিকে ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে এবং দক্ষিণ- পূর্ব উপকূলের ড্রান্সেবার্গ পর্বত মালভূমির প্রান্তভাগ। দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ভাগ দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নেমে গেছে। এই ধাপগুলিকে ‘কারু” বলা হয়। আফ্রিকার উত্তর-পূর্বে ইথিওপিয়ার পার্বত্যভূমিতে আগ্নেয়গিরির লাভা দিয়ে গঠিত মালভূমি রয়েছে। এখানকার আগ্নেয়গিরির মধ্যে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো (5.925 মিটার) আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, যার মাথায় তুষার জমে থাকে। টাঙ্গানিকা, নিয়াশা ও রুডলফ্ প্রভৃতি হ্রদ আফ্রিকার মধ্যে বিখ্যাত। এই হ্রদগুলি গ্রস্ত উপত্যকার অন্তর্গত। লোহিত সাগরের আংশিক, সুয়েজ খাল ও আকাবা উপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। আফ্রিকার দক্ষিণে রয়েছে কালাহারি মরুভূমি।
iv) উপকূলীয় নিম্নভূমি : আফ্রিকায় নদী অববাহিকা এবং উপকূল অঞ্চলের সংকীর্ণ সমভূমি দেখা যায়। যেসব স্থানে নদী মোহনা বিস্তৃত হয়েছে সেখানে উপকূলের বিস্তার বেশি। আফ্রিকার নীলনদ, কঙ্গো, নাইজার, জাম্বেসি, অরেঞ্জ এবং সেনেগাল ইত্যাদি নদী অববাহিকা অঞ্চল সমভূমির অন্তর্গত।
(v) দ্বীপ অঞ্চল ঃ আফ্রিকার সংলগ্ন সমুদ্রে কিছু কিছু দ্বীপ রয়েছে, যেমন আফ্রিকার দক্ষিণ পূর্বে মাদাগাস্কার ও জাঞ্জিবার, উত্তর পশ্চিমে ক্যানারি ও মাদিরা এবং পশ্চিম সেন্ট হেলেনা প্রভৃতি দ্বীপ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment