জীবনের প্রবাহমানতা (Continuity of Life):
কোশ বিভাজন এবং কোশচক্র (Cell Division and Cell Cycle): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান অধ্যায় ১.৬ | class 10 life sciences questions answer chapter 1.6 questions answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. ক্রোমোজোম কাকে বলে? ক্রোমোজোম, DNA এবং জিনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করো। * [ME'17]
উত্তর: ক্রোমোজোম (Chromosome; Gr. Chrome Colour, soma=body) : নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত নিউক্লিয় জালক থেকে উৎপন্ন, রৈখিক সজ্জাক্রমে জিন বহনকারী যে স্বপ্রজননশীল, সূত্রাকার জৈববস্তু জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকরূপে কাজ করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তনে অংশগ্রহণ করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোম, DNA এবং জিনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক : ক্রোমোজোম, DNA এবং জিন একে অপরের পরিপূরক এবং একই কাজের সঙ্গে যুক্ত বস্তু যা সজীব কোশের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত থাকে। এদের সম্পর্ককে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
1. সজীব কোশের নিউক্লিয়াসে যে সরু সুতোর মতো বৃহৎ জৈব অণু একে অপরকে পেঁচিয়ে জালকাকার গঠন তৈরি করে, তাদের DNA বলে।
2. নিউক্লিয়াসের মধ্যে DNA কখনও কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় অথবা কখনও আংশিক উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় একে নিউক্লিয় জালিকা বা ক্রোমাটিন জালিকা বলে। ও
3. দীর্ঘ DNA তত্ত্ব, প্রোটিন (হিস্টোন ও নন হিস্টোন), RNA ও ধাতব আয়ন সমূহ একত্রে দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে থেকে ক্রোমোজোম নামক স্থূল প্যাচানো গঠন তৈরি করে। অর্থাৎ, প্রতিটি ক্রোমোজোমে একটি করে দ্বিতন্ত্রী DNA অণু বর্তমান থাকে। সুতরাং, ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোম হল DNA অণুর কুণ্ডলীকরণের পৃথক পৃথক অবস্থা।
4. DNA অণুর যে নির্দিষ্ট অংশ একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের সংকেত বহন করে এবং জীবের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে জিন বলে।
সুতরাং ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের আন্তঃসম্পর্ক হল—– জিন একাধিক হিস্টোন অক্টামার নিউক্লিওজোম বংশগতির একক DNA বংশগতির পদার্থ ঘনীভবন ও - কুণ্ডলীকরণ ক্রোমাটিন জালিকা | ঘনীভবন ও • কুণ্ডলীকরণ ক্রোমোজোম | বংশগতির ধারক ও বাহক হিতন্ত্ৰী DNA (20A) -হিস্টোন অক্টামার লিংকার DNA নিউক্লিওজোম 30nm ব্যাসযুক্ত সোলেনয়েড তত্ত্ব A 300nm ব্যাসযুক্ত সুপার সোলেনয়েড তন্তু 700nm ব্যাসযুক্ত ঘনীভূত ক্রোমাটিন জালিকা বা ক্রোমাটিন সূত্রের লুপ গঠন A 1400nm ব্যাসযুক্ত মেটাফেজ ক্রোমোজোম।
Advanced Studies
ক্রোমোজোম সৃষ্টির পদ্ধতি:
1.ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের গঠনগত পদ্ধতি : হল নিউক্লিওজোন।
2. প্রতিটি নিউক্লিওজোম একটি হিস্টোন অক্টামার (কোর প্রোটিন), একটি বাহ্যিক হিস্টোন প্রোটিন (H) এবং 200 জোড়া নাইট্রোজেন। বেসযুক্ত DNA নিয়ে গঠিত।
3. কোর হিস্টোনকে 146 জোড়া সেযুক্ত DNA 1% পাকে বেষ্টন করে থাকে এবং কোরের বাইরে H, প্রোটিন DNA-এর দুই প্রান্তকে আবদ্ধ রাখে। পাশাপাশি দুটি পুঁতির মতো নিউক্লিওজোন 8-110 বেস পেয়ার DNA দ্বারা যুক্ত থাকে।
4. বিজ্ঞানী Finch এবং Klug (1976)-এর মতে প্রতিটি নিউক্লিওজোম 10nm পরিধিবিশিষ্ট তত্ত্ব সৃষ্টি করে।
5. এই তত্ত্ব কুণ্ডলীকৃত হয়ে প্রথমে 30nm পরিধিযুক্ত সোলেনয়েড তত্ত্ব ও পরে 300 nm ব্যাসযুক্ত সুপার সোলেনয়েড তন্তু গঠন করে।
6. সুপার সোলেনয়েড তত্ত্ব পুনরায় কুণ্ডলীকৃত হয়ে 700nm ব্যাসযুক্ত ক্রোমাটিন তত্ত্ব এবং কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমাটিন তত্ত্ব আরও কুণ্ডলিত হয়ে 1400 nm ব্যাসযুক্ত ক্রোমোজোম গঠন করে।
ক্রোমোজোম সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত রূপ : নিউক্লিওজোন কোর পার্টিকল (হিস্টোন অক্টামার + 146bp. DNA) + H + লিংকার DNA নিউক্লিওজোন (10nm ব্যাস) সোলেনয়েড তত্ত্ব (30nm ব্যাস) সুপার সোলেনয়েড তত্ত্ব (300nm ব্যাস) ক্রোমাটিন তত্ত্ব (কোশে স্থির অবস্থায় 700nm ব্যাস), ক্রোমোজোন, (কোশ বিভাজনের সময় 1400nm ব্যাস)
প্রশ্ন 2. ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন বা সংস্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও। * IME 09081
উত্তর: ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন : কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমকে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। উচ্চ বিবর্ধন ক্ষমতাযুক্ত যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বা ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান বিশেষ রণ্যকে রঞ্জিত একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের গঠনগত অংশগুলি হল-
1. ক্রোমাটিড (Chromatids) : প্রতিটি ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর যে একজোড়া দণ্ডাকার গঠন দেখা যায়, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। অর্থাৎ, প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড দ্বারা গঠিত।
2 • ক্রোমোনিমা (Chromdinema) প্রতিটি ক্রোমাটিড যে সূক্ষ্ম তত্ত্ব দ্বারা গঠিত, তাদের ক্রোমোনিমা (বহুবচনে-কোমোনিমাটা) বলে।
3. ক্রোমোমিয়ার (Chromorere) ক্রোমোনিমার দৈর্ঘ্য বরাবর স্থানে স্থানে রাসায়নিক উপাদানের ঘনত্ব বেশি থাকে এবংপুঁতির মতো গঠন তৈরি করে, এগুলিকে ক্রোমোমিয়ার বলে। দুটি ক্রোমোমিয়ার মধ্যস্থ হালকা অঞ্চলকে আন্তঃক্রোমোমিয়ার অংশ বলে।
4• প্রাথমিক খাঁজ ও সেন্ট্রোমিয়ার (Primary constriction and Centromere) : প্রতিটি ক্রোমোজোমের নির্দিষ্ট খাঁজযুক্ত, অরঞ্জিত এবং হেটারোক্রোমাটিন দ্বারা গঠিত স্থানকে প্রাথমিক খাঁজ বা মুখ্য খাঁজ বলে। ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজ-এ অবস্থিত ঘন অংশটিকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটি সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে।
5.কাইনেটোকোর (Kinetochore ) : সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে প্রোটিন নির্মিত যে চাকতির মতো গঠন উপস্থিত থাকে, তাকে কাইনেটোকোর বলে।
6.গৌণ খাঁজ (Secondary Constriction) : কোনো কোনো ক্রোমোজোমে মুখ্য খাঁজ ছাড়াও আরও একটি খাঁজ অঞ্চল থাকে, তাকে গৌণ খাঁজ বলে। কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় এই অঞ্চলটি নিউক্লিওলাস পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করে বলে, একে নিউক্লিওলার অরগানাইজার রিজিয়ন (NOR) বলে। কোনো কোনো ক্রোমোজোমে দুটি গৌণ খাঁজ থাকে। এদের মধ্যে প্রথমটিকে গৌণ খাঁজ - । এবং দ্বিতীয়টিকে গৌণ খাঁজ - ॥ বলে।
7. স্যাটেলাইট (Satellite) : গৌণ খাঁজ - । যুক্ত ক্রোমোজোমের প্রান্তদেশ বালবের মতো স্ফীত হয়। একে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইটযুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম' বলে।
8• টেলোমিয়ার (Telomere ) : ক্রোমোজোমের উভয় প্রান্তকে টেলোমিয়ার বলে। গৌণ খাঁজ- সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোমিয়ার স্যাটেলাইট বাহু মুখ্য খাঁজ ক্রোমাটিড গৌণ খাঁজ-৷৷ আদর্শ মেটাফেজ ক্রোমোজোমের গঠন টেলোমিয়ার নিউক্লিওলার অরগানাইজার রিজিয়ন |
জেনে রাখো : সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে অবস্থিত ক্রোমোজোমীয় অংশকে ‘ক্রোমোজোমের বাহু' বলে। ছোটো বাহুকে 'p' রূপে ও বড়ো | বাহুকে 'q' রূপে চিহ্নিত করা হয়।
প্রশ্ন 3. সারণি আকারে ক্রোমোজোমের বিভিন্ন অংশের নাম ও তাদের কাজ লেখো।
উত্তর : ক্রোমোজোমের কাজ :
1. অংশ ক্রোমাটিড জিন বহন করে এবং কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমস্থিত দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে।
2. সেন্ট্রোমিয়ার দুটি সিস্টার ক্রোমাটিডকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রাখতে সাহায্য করে ও কোশ বিভাজনের সময় এই অংশের সঙ্গে বেমতন্তু যুক্ত হয়।
3. গৌণ খাঁজ NOR অংশ rRNA তৈরি করে নিউক্লিওলাস পুনর্গঠনে সাহায্য করে। ও
4. স্যাটেলাইটের বিশেষ কোনো স্থানে নিউক্লিওলাস গঠিত হয়। 6 ক্রোমোজোমের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখে, টেলোমিয়ার কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকে এবং DNA-এর রেপ্লিকেশনে সাহায্য করে।
জেনে রাখো : ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমার কোশে বা ম্যালিগন্যান্ট কোশে টেলোমিয়ার নিঃসৃত টেলোমারেজ উৎসেচক অত্যন্ত সক্রিয় থাকার জন্য কোশগুলির বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটে না।
প্রশ্ন 4. ক্রোমোজোমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান : ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান নিউক্লিক অ্যাসিড প্রোটিন: ধাতব আয়ন DNA RNA হিস্টোন প্রোটিন | (ক্ষারীয় প্রকৃতির) Ca2+, Fe2+, Mg2+ প্রভৃতি নন-হিস্টোন প্রোটিন (আম্লিক প্রকৃতির)।
নিউক্লিক অ্যাসিড : এটি দুই প্রকার— DNA
1. ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা (5C), ফসফোরিক অ্যাসিড (H3PO4) এবং নাইট্রোজেন বেস (অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন ও সাইটোসিন) নিয়ে গঠিত।
2. রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা RNA : রাইবোজ শর্করা (5C), ফসফোরিক অ্যাসিড (H3PO4) এবং নাইট্রোজেন বেস (অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল ও সাইটোসিন) নিয়ে গঠিত।
প্রোটিন :
1. হিস্টোন প্রোটিন : ইহা ক্ষারীয় প্রকৃতির। মোট প্রোটিনের প্রায় 60% এই প্রোটিন। এটি পাঁচ প্রকার – H,, H2A, H2B, H2 এবং Hal
2. নন হিস্টোন প্রোটিন : এটি আম্লিক প্রকৃতির।
ধাতব আয়ন : Ca2+, Fe2+, Mg2+ প্রভৃতি আয়ন উপস্থিত থাকে। এগুলি ক্রোমোজোমের কাঠামোকে দৃঢ়তা প্রদান করে।
ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের 90% হল DNA ও হিস্টোন প্রোটিন এবং 10% হল RNA ও ননহিস্টোন প্রাটিন।
প্রোক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান: একটিমাত্র চক্রাকার দ্বিতন্ত্রী DNA অণু দ্বারা প্রোক্যারিওটিক ক্রোমোজোম গঠিত হয়। প্রোটিনবিহীন এই ক্রোমোজোমকে আদি ক্রোমোজোম বা নিউক্লিওয়েড বা নগ্ন DNA বলে। প্রোক্যারিওটিক কোশে ক্রোমোজোম হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : তোমার ক্রোমোজোমগুলি যে যে উপাদান দ্বারা গঠিত সেগুলির নাম লেখো। উত্তর সংকেত : আমার দেহের কোশে অবস্থিত ক্রোমোজোমগুলি | ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির, তাই উপাদানগুলি ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের উপাদানই হবে।
জেনে রাখো : ক্রোমোজোমের ক্ষারীয় প্রোটিনে সাধারণত আর্জিনিন (Arginine), হিস্টিডিন (Histidine) ও লাইসিন (Lysine) - জাতীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। আম্লিক প্রোটিনে সাধারণত ট্রিপটোফ্যান (Tryptophan) এবং টাইরোসিন (Tyrosine) - জাতীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। হিস্টোন প্রোটিন, DNA-এর সঙ্গে যুক্ত হয় ও নিউক্লিওহিস্টোন গঠন করে।
প্রশ্ন 5. নিউক্লিক অ্যাসিডের রাসায়নিক উপাদানগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর: নিউক্লিক অ্যাসিড নাইট্রোজেন বেস, পেন্টোজ শর্করা বর্ণনা করো। ও ফসফোরিক অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত। এটি দু-প্রকার। যথা— • DNA এবং ও RNAT ।
1. DNA-এর রাসায়নিক উপাদানসমূহ : O DNA-এর একক হল নিউক্লিওটাইড। এটি তিনটি অংশ দ্বারা গঠিত— (i) ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা (5C যুক্ত পেন্টোজ শর্করা), (ii) ফসফোরিক অ্যাসিড (H3PO4) এবং (iii) নাইট্রোজেন বেস বা ক্ষার।
2. নাইট্রোজেন বেস মূলত দু-প্রকার, যথা— পিরিমিডিন ও পিউরিন। পিরিমিডিন দু-প্রকারের, যেমন—সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T)। পিউরিনও দু-প্রকারের, যেমন—অ্যাডেনিন (A) ও গুয়ানিন (G)।
3. ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করার সঙ্গে যে-কোনো একপ্রকার নাইট্রোজেন বেস (পিরিমিডিন অথবা পিউরিন) যুক্ত হয়ে নিউক্লিওসাইড গঠিত হয়।
4. নিউক্লিওসাইড ফসফোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে।
RNA-এর রাসায়নিক উপাদানসমূহ :
1. RNA তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত- (i) রাইবোজ শর্করা (5C যুক্ত পেন্টোজ শর্করা), (ii) ফসফোরিক অ্যাসিড (H3PO4), (iii) নাইট্রোজেন বেস ।
2. নাইট্রোজেন বেস DNA-এর মতই দু-প্রকার— পিউরিন ও পিরিমিডিন। তবে, এক্ষেত্রে পিরিমিডিন বেস থাইমিন (T)-এর পরিবর্তে ইউরাসিল (U) উপস্থিত।
3. রাইবোজ শর্করা ও নাইট্রোজেন বেস যুক্ত হয়ে নিউক্লিওসাইড গঠন করে এবং নিউক্লিওসাইড ফসফোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওটাইড গঠন করে।
জেনে রাখো: RNA-এর প্রকারভেদ : 0 জেনেটিক RNA : অধিকাংশ উদ্ভিদ ভাইরাস ও কয়েকটি প্রাণী ভাইরাসে এই প্রকার RNA জেনেটিক পদার্থরূপে কাজ করে। ও ননজেনেটিক RNA : সকল প্রকার উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে এই | প্রকার RNA থাকে। এরা কোনো জিন বহন করে না কিন্তু প্রোটিন সংশ্লেষে | সাহায্য করে। যেমন- mRNA, rRNA, tRNA প্রভৃতি। (i) ম্যাসেঞ্জার RNA (mRNA) : এই RNA ট্রান্সলেশন পদ্ধতির জন্য পলিজোম গঠনে সাহায্য করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষের বার্তা বহন করে।
(ii) রাইবোজোমাল RNA (RNA) : এই RNA রাইবোজোম গঠনে ও রাইবোজোমকে mRNA-এর সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে। (iii) ট্রান্সফার RNA (RNA) ট্রান্সলেশনের সময় প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডকে রাইবোজোমে পরিবহণ করে।
Advanced Studies
বিজ্ঞানী ওয়াটসন ও ক্রিকের (1953) DNA-এর ডবল হেলিক্স মডেলের গঠন হল নিম্নরূপ :
1. DNA দুটি পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলযুক্ত একটি বৃহৎ জৈব যৌগ।
2. নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল দুটি পরস্পর পাশাপাশি সমান্তরালভাবে অবস্থান করে এবং তত্ত্ব দুটি প্যাঁচানো সিঁড়ির আকারে একটি কাল্পনিক অক্ষ বরাবর ডানাবর্ত পাকে বিন্যস্ত থাকে।
3. দ্বিতন্ত্রী DNA-এর তত্ত্ব দুটি পরস্পর বিপরীতমুখী অর্থাৎ, একটি তত্তুর অভিমুখ 5'3' হলে অপরটির অভিমুখ ও'-5' হবে।
4. DNA শৃঙ্খলের কাঠামো মূলত গঠন করে ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা এবং ফসফেট গ্রুপ (উৎস ফসফোরিক অ্যাসিড), এর সঙ্গে নাইট্রোজেন বেসগুলি সমকোণে যুক্ত থাকে।
5. প্রতিটি তত্ত্বর নাইট্রোজেন বেস অপর তন্তুর নাইট্রোজেন বেসের সঙ্গে হাইড্রোজেন (H) বন্ধনী দ্বারা যুক্ত থাকে।
6. H-বন্ধনী একটি নির্দিষ্ট নীতি অনুযায়ী গঠিত হয়— সর্বদা অ্যাডেনিন (A)-এর সঙ্গে থাইমিন (T) এবং সাইটোসিনের (C) সঙ্গে গুয়ানিন (G) যুক্ত থাকে।
7. অ্যাডেনিন (A) ও থাইমিনের (T) মধ্যে দুটি এবং সাইটোসিন (C) ও গুয়ানিনের (G) মধ্যে তিনটি করে H-বন্ধনী গঠিত হয়।
8• DNA-এর তত্ত্ব দুটির মাঝের দূরত্ব হয় 20Å
9.প্যাচানো দ্বিতন্ত্রী DNA-এর একটি সম্পূর্ণ পাকের দৈর্ঘ্য 34Å।
10. এক একটি সম্পূর্ণ পাকে 10 জোড়া করে নিউক্লিওটাইড সমান দূরত্বে অবস্থান করে। সেইজন্য প্রতি জোড়া নিউক্লিওটাইডের মধ্যেকার দূরত্ব 3.4Å হয়।
11.বহু নিউক্লিওটাইড তত্ত্ব দুটি পরস্পরকে পাক খাওয়ার সময়। একটি সংকীর্ণ খাঁজ (Minor Groove) এবং একটি প্রশস্ত খাঁজ (Major Groove) গঠন করে।
প্রশ্ন 6. জিন কাকে বলে? এর অবস্থান লেখো। জিনের কাজগুলি লেখো।
উত্তর: জিন (Gene) : ক্রোমোজোম বা DNA বা RNA-এর নির্দিষ্ট স্থানে রৈখিক সজ্জাক্রমে অবস্থিত তথ্য সঞ্চয়কারী, প্রতিলিপি গঠনকারী, বহিঃপ্রকাশ ও মিউটেশনে সক্ষম বংশগতির কার্যগত একককে জিন বলে।
জিনের অবস্থান : জিন DNA বা RNA বা ক্রোমোজোমে রৈখিকভাবে অবস্থান করে (মরগ্যান, 1910)।
জিনের কাজ (Functions of Gene) :
1• জিনোটাইপগত কাজ : কোনো জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জিন দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং জনিতৃ জনু থেকে গ্যামেটের মাধ্যমে বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হয়।
2. ফিনোটাইপগত কাজ : জীবের সমস্ত বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ জিন দ্বারা সংগঠিত হয়।
3. বিবর্তনগত কাজ : বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রভাবে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জিনের গঠনগত বা সংখ্যাগত পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে জীবের বৈশিষ্ট্যেরও পরিবর্তন ঘটে এবং প্রকরণ বা ভেদ (Variation) সৃষ্টি হয়। প্রকরণ জীবের অভিযোজনে সাহায্য করে। ফলে, জীবের বিবর্তন ঘটে।
প্রশ্ন 7. কোশ বিভাজন কাকে বলে? [ME'00] জীবজগতে কোশ বিভাজনের প্রকারভেদগুলি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
উত্তর: কোশ বিভাজন (Cell Division) : জিন নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে বিভিন্ন কোশীয় উপাদান ও জেনেটিক বস্তু দ্বিগুণ হয় পৃথকীকরণের মাধ্যমে একটি মাতৃকোশ থেকে দুই বা ততোধি অপত্য কোশ উৎপন্ন হয়, তাকে কোশ বিভাজন বলে।
কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ :
কোশ বিভাজন অ্যামাইটোসিস নিউক্লিয়াস ও | সাইটোপ্লাজমের সরাসরি বিভাজন ঘটে উদাহরণ— ব্যাকটেরিয়া ও এককোশী প্রাণী মাইটোসিস বেমতন্ত্র গঠনের মাধ্যমে মাতৃ নিউক্লিয়াসের পর্যায়ক্রমিক বিভাজন ঘটে এবং এরপরে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে উদাহরণ— সমস্ত | উন্নত জীবের দেহকোশ মিয়োসিস মাতৃকোশের ক্রোমোজোম একবার কিন্তু নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম পরপর দুবার বিভাজিত হয় উদাহরণ- উদ্ভিদদেহে রেণু মাতৃকোশ এবং প্রাণীদেহে জনন মাতৃকোশ।
জেনে রাখো : একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোশের জন্ম ও প্রতিস্থাপিত হওয়ার হারকে সেল টার্নওভার (Cell Turnover) বলে।
প্রশ্ন 8. কোশ বিভাজনে বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণুর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও ।
উত্তর: কোশ বিভাজনে বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণুর ভূমিকা : কোশীয় অঙ্গাণু কোশ বিভাজনে ভূমিকা ও নিউক্লিয়াস ক্রোমোজোম বা DNA বা জিন ধারণ করে। কোশ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশার S-phase-এ নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম বা DNA দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং মাতৃকোশ থেকে অপত্য কোশে সঞ্চারিত হয়। ও সেন্ট্রোজোম প্রাণীকোশে ক্রোমোজোম বিভাজনের জন্য সেন্ট্রিওল দুটি অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বিচ্ছুরণের সাহায্যে বেমতন্তু গঠন করে। ও মাইক্রোটিউবিউলস উদ্ভিদকোশে ক্রোমোজোম বিভাজনের বা অণুনালিকা ও রাইবোজোম জন্য বেমতন্তু গঠন করে। কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষ করে। © মাইটোকনড্রিয়া কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। © গলগি বডি উদ্ভিদকোশে সাইটোপ্লাজম বিভাজনের জন্য সেলপ্লেট বা কোশপাত গঠনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 9. কোশচক্র কাকে বলে? [ME 15, 11, 08] কোশচক্রের বিভিন্ন দশাগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।
উত্তর: কোশচক্র (Cell Cycle) : কোশের জীবনকালে একটি কোশ বিভাজনের পরে পরবর্তী কোশ বিভাজন সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যে-সমস্ত বৃদ্ধি, পরিণতি ও বিভাজন প্রভৃতি ঘটনাবলি চক্রাকারে আবর্তিত হয়, তাদের একত্রে কোশচক্র বলে।
কোশচক্রের দশাসমূহ : কোশচক্র প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। যথা— ইন্টারফেজও মাইটোটিক ফেজ বা M-ফেজ। ইন্টারফেজ আবার G,, S, ও G2 দশায় এবং M-ফেজ ক্যারিওকাইনেসিস (প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ) ও সাইটোকাইনেসিসে বিভক্ত।
(A) ইন্টারফেজ (Interphase) : একটি কোশ বিভাজনের শেষ (সাইটোকাইনেসিস) এবং পরবর্তী কোশ বিভাজনের শুরুর (প্রোফেজ দশা) মধ্যবর্তী যে দীর্ঘস্থায়ী দশাতে কোশের বিপাকীয় কাজ দ্রুত হয় এবং সামগ্রিক আয়তন বৃদ্ধি ঘটে, তাকে ইন্টারফেজ বলে।
ইন্টারফেজের বিভিন্ন দশাসমূহ :
1. G বা Gap-1 বা প্রাক-সংশ্লেষ দশা : (i) পূর্ববর্তী কোশ বিভাজনের শেষে ও S উপদশার পূর্বে ঘটে। (ii) এই দশায় কোশের বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বড়ি, রাইবোজোম প্রভৃতি কোশীয় অঙ্গাণুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। (iii) DNA-সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক, RNA, নিউক্লিওটাইড, অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ATP-এর সংশ্লেষ ঘটে।
2. S বা Synthesis বা সংশ্লেষ দশা : (i) G, ও G2 উপদশার মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে। (ii) DNA-এর সংশ্লেষ বা প্রতিলিপিকরণ (Replication) ঘটে। ফলে, নিউক্লিয়াসে দ্বিগুণ সংখ্যায় DNA উপস্থিত থাকে। (iii) হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়, যা DNA-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিউক্লিওজোম গঠন করে। (iv) সেন্ট্রিওলের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়।
2. OG, বা Gap-2 বা সংশ্লেষ পরবর্তী দশা : (i) S উপদশা ও মাইটোটিক দশার মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে। (ii) সাইটোপ্লাজমে বিপাক ক্রিয়ার হার দ্রুত হয়। (iii) বিভিন্ন প্রকার RNA যেমন— mRNA, tRNA, rRNA সংশ্লেষিত হয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে। (iv) কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় ATP-এর সংশ্লেষ ঘটে ও কোশটি বিভাজনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। (v) ক্ষতিগ্রস্ত DNA অণুর মেরামতি হয় এবং DNA-এর মেটাফেজ G, দশা দশা G₂ G. দশা S দশা কনডেনসেশন ঘটে। মাইটোটিক
(B) মাইটোটিক ফেজ (Mitotic Phase) : ফেজ ইন্টারফেজ দশা কোশচক্র
1 • ক্যারিওকাইনেসিস (প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ) : এই পর্যায়ে মাতৃকোশের একটি ক্রোমোজোম দুটি সিস্টার ক্রোমাটিডে বিভক্ত হয়ে দুই মেরুতে এসে অবস্থান করে। ফলে মাতৃকোশের দুই মেরুতে সমসংখ্যক অপত্য ক্রোমোজোমবিশিষ্ট দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
2. সাইটোকাইনেসিস : এই পর্যায়ে অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হওয়ার পর কোশের বিষুব তলে কোশপাত (উদ্ভিদকোশে) বা খাঁজ (প্রাণীকোশে) সৃষ্টির মাধ্যমে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয় ও দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে।
অনুরূপ প্রশ্ন : কোশচক্রের ইন্টারফেজ দশায় কী কী রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয় ?
প্রশ্ন 10. অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন কাকে বলে [ME 15,04] এবং এর সংঘটনস্থল লেখো। [ME '13] এইপ্রকার কোশ বিভাজনের পদ্ধতিটি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: 1.অ্যামাইটোসিস (Amitosis) : যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় বেম গঠন ছাড়া এবং নিউক্লিয় পর্দার অবলুপ্তি না ঘটেই কোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি খাঁজ গঠনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন বলে।
2. সংঘটনস্থল : ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক (যেমন—ইস্ট), এককোশী প্রাণী (যেমন—অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম) প্রভৃতি জীবদেহে সংঘটিত হয়।
3. অ্যামাইটোসিস পদ্ধতি: প্রথমে মাতৃ নিউক্লিয়াসটি লম্বাটে ও ডাম্বেল আকৃতির হয়। ও নিউক্লিয়াসটি ক্লিভেজ বা ফারোয়িং -এর মাধ্যমে মাঝখানে সংকুচিত হয় এবং দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে।
4. নিউক্লিয়াস বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে কোশপর্দা ও সাইটোপ্লাজমীয় অংশ মাঝ বরাবর বিভাজিত হয় এবং অপত্য নিউক্লিয়াসকে ঘিরে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। o নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম কোনো ধারাবাহিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভাজিত হয় বলে অ্যামাইটোসিসকে প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন' (Direct cell division) বলে।
প্রশ্ন 11. মাইটোসিস কোশ বিভাজন কাকে বলে এবং এই প্রকার বিভাজন কোথায় হয়? মাইটোসিস বিভাজনের দশাগুলি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
উত্তর : মাইটোসিস (Mitosis) : যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট ধারাবাহিক পর্যায়ের মাধ্যমে মাতৃকোশ বিভাজিত হয়ে সম আকৃতিযুক্ত সমসংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট এবং সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে মাইটোসিস কোশ বিভাজন বলে।
মাইটোসিসের স্থান : সমস্ত ইউক্যারিওটিক জীবের দেহকোশে মাইটোসিস ঘটে। অর্থাৎ, 1. উদ্ভিদদেহে—বর্ধনশীল অংশের ভাজক কলা, মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমূল, ভ্রূণমুকুল, বিভিন্ন মুকুল ও পাতা। 2. প্রাণীদেহে—সজীব দেহকোশ ও ভ্রূণ।
মাইটোসিসের দশাসমূহ : মাইটোসিস সাইটোপ্লাজম বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস | নিউক্লিয়াস বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস প্রোফেজ মেটাফেজ অ্যানাফেজ টেলোফেজ।
জেনে রাখো : 1875 সালে বিজ্ঞানী ই স্ট্রাসবার্জার প্রথম উদ্ভিদকোশে মাইটোসিস পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রশ্ন 12. মাইটোসিসের তাৎপর্য লেখো। ** [ME'03] মাইটোসিসের তাৎপর্য :
উত্তর: 1.জীবের সামগ্রিক বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ : মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোশী জীবদেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে, সামগ্রিকভাবে জীবদেহের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ ঘটে।
2.কোশের প্রতিস্থাপন এবং ক্ষয়পূরণ : মাইটোসিস বিভাজন দ্বারা জীবদেহে নতুন কোশ সৃষ্টি হয়, যাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরাতন কোশের প্রতিস্থাপন ঘটে এবং জীবদেহে ক্ষতস্থান নিরাময় ঘটে।
3. পুনরুৎপাদন : মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় হাইড্রা, প্ল্যানেরিয়া, মোলাস্কা পর্বের প্রাণীদের পদ, তারামাছের বাহু, টিকটিকির লেজ প্রভৃতি অঙ্গের পুনরুৎপাদন ঘটে।
4.ভ্রূণের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন : মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজনের মাধ্যমে জাইগোটের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন ঘটে।
5 • নিউক্লিয়-সাইটোপ্লাজমীয় অনুপাত বজায় রাখা: মাইটোসিস বিভাজন কোশে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের আয়তনের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে।
6. প্রজনন ও বংশবিস্তার : নিম্নশ্রেণির জীবদেহে মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় এবং জীবের বংশবিস্তার ঘটে।
প্রশ্ন 13. প্রোফেজ কাকে বলে ? প্রোফেজের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: প্রোফেজ (Prophase; Pro = প্রথম, phase = দশা): ক্যারিওকাইনেসিসের যে দীর্ঘস্থায়ী দশায় ক্রোমাটিন জালিকা ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে স্থূল ক্রোমোজোম গঠন করে এবং নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটে, তাকে প্রোফেজ বলে।
প্রোফেজের বৈশিষ্ট্য : 1● ডিহাইড্রেশন : নিউক্লিয়াস থেকে জলের বিয়োজন ঘটে। ফলে, ক্রোমাটিন জালিকাগুলি সুস্পষ্ট ও ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
2. ক্রোমোজোম গঠন : ক্রোমাটিন জালিকার ঘনীভবন (Con- densation) এবং কুণ্ডলীকরণ (Spiralization) -এর মাধ্যমে স্থূল ক্রোমোজোম গঠিত হয়।
3. ক্রোমাটিড সৃষ্টি : প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে দুটি ক্রোমাটিডে বিভক্ত হয়। ক্রোমাটিড দুটি পরস্পরের সঙ্গে সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে যুক্ত থাকে।
4. নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় পর্দার অবলুপ্তি : প্রোফেজ দশার শেষের দিকে নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় পর্দার অবলুপ্তি ঘটে।
5• অ্যাস্ট্রাল রশ্মি গঠন : প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং প্রোফেজ দশার শেষে কোশের দুটি বিপরীত মেরুতে 180° দূরত্বে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রিওলের চারদিকে রশ্মির ন্যায় অ্যাস্ট্রাল রশ্মি গঠিত হয়।
প্রশ্ন 14 . মেটাফেজ (Metaphase) কাকে বলে ? মেটাফেজ দশার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: মেটাফেজ (Metaphase; meta = পরবর্তী, phase meta = পরবর্তী, phase দশা) : ক্যারিওকাইনেসিসের যে স্বল্পস্থায়ী দশায় ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব অঞ্চলে ক্রোমোজোমাল তত্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত থাকে, তাকে মেটাফেজ বলে।
মেটাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য :1 • কোশে নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয় পর্দার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
2.ক্রোমোজোমের সর্বাধিক কুণ্ডলীকরণ বা স্পাইরালাইজেশন ঘটে। ফলে, ক্রোমোজোমগুলি মেটাফেজ দশায় সবথেকে বেশি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় ।
3• উদ্ভিদকোশের ক্ষেত্রে সেন্ট্রোজোম না থাকায় সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতত্ত্ব গঠিত হয়।
4• প্রাণীকোশের ক্ষেত্রে উভয় মেরুতে অবস্থিত দুটি সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মিগুলি বিস্তৃত হয়ে বেমতত্ত্ব গঠন করে।
5. অবিচ্ছিন্ন বেমতন্তু এবং বিচ্ছিন্ন বা ক্রোমোজোমীয় বেমতত্ত্ব (যা ক্রোমোজোমের সঙ্গে যুক্ত হয়) কোশের এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। উদ্ভিদকোশে বেমতত্ত্বগুলি মেরুপ্রান্তে একত্রিত হয়ে মাকু আকৃতির বেম বা স্পিন্ডিল গঠন করে।
6• উভয় কোশে ক্রোমোজোমগুলি নিরক্ষীয় অঞ্চলে ক্রোমোজোমীয় তত্ত্বর সঙ্গে সেন্ট্রোমিয়ারের কাইনেটোকোর অংশ দ্বারা যুক্ত থাকে। ক্রোমোজোমগুলি কোশের নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্লেটের মতো যে অংশ সৃষ্টি করে, তাকে মেটাফেজ প্লেট বলে।
জেনে রাখো : ক্রোমোজোমগুলি বেমের বিষুব যে পদ্ধতিতে কোশের অঞ্চলে সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো মেটাকাইনেসিস বলে।
প্রশ্ন 15. অ্যানাফেজ কাকে বলে? অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো। * [ME'01]
উত্তর: অ্যানাফেজ (Anaphase; ana = পশ্চাৎ, phase = দশা): ক্যারিওকাইনেসিসের যে স্বল্পস্থায়ী দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে, তাকে অ্যানাফেজ বলে।
অ্যানাফোজর বৈশিষ্ট্য :1 • এটি ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াস বিভাজনের সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী দশা।
2. প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার অংশে সম্পূর্ণরূপে দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুটি পৃথক ক্রোমাটিড গঠন করে।
3. প্রতিটি ক্রোমাটিড নিজস্ব সেন্ট্রোমিয়ার লাভ করে। সেন্ট্রোমিয়ারসহ ক্রোমাটিড দুটিকে এই অবস্থায় অপত্য ক্রোমোজোম বলে। মেরু সেন্ট্রোমিয়ার- - অপত্য ইন্টারজোনাল তত্ত্ব ক্রোমোজোম -সংকুচিত বেমতত্ত্ব (A) উদ্ভিদকোশে অ্যানাফেজ (B) প্রাণীকোশে অ্যানাফেজ
4. অপত্য ক্রোমোজোম দুটির মধ্যে বিকর্ষণ বল কাজ করেও ক্রোমোজোমাল তত্তুর সংকোচনের ফলে অপত্য ক্রোমোজোম দুটি একে অপরের বিপরীতে অগ্রসর হয়ে দুটি বিপরীত মেরুতে পৌঁছায়।
5. অ্যানাফেজ দশায় বিপরীত মেরুর দিকে ক্রোমোজোমের এই চলনকে অ্যানাফেজীয় চলন বলে। অ্যানাফেজীয় চলনের শেষে অপত্য ক্রোমোজোমগুলি দুই মেরুতে পৌঁছায়।
6. অ্যানাফেজীয় চলনের সময় অপত্য ক্রোমোজোমগুলির সেন্ট্রোমিয়ার বেমের মেরুর দিকে এবং ক্রোমোজোমের বাহুগুলি বিষুব অঞ্চলের দিকে বিন্যস্ত থাকে। এই অবস্থায় এদের 'V', 'L', 'J' এবং '/' অক্ষরের মতো দেখায়।
জেনে রাখো : প্রাণীকোশে বিপরীত মেরুর দিকে গমণকারী অপত্য ক্রোমোজোমগুলির মধ্যবর্তী স্থানে ইন্টারজোনাল তত্ত্বগুলি মিলিতভাবে স্টেমবডি গঠন করে।
প্রশ্ন 16. টেলোফেজ কাকে বলে? টেলোফেজের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। ★ [ME '15,09,04,01]
উত্তর: টেলোফেজ (Telophase; telo = শেষ, phase = দশা) : ক্যারিওকাইনেসিসের সর্বশেষ যে দশায় কোশের দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়, তাকে টেলোফেজ বলে।
টেলোফেজের বৈশিষ্ট্য : 1.এই দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলি দুই মেরুতে পৌঁছায় এবং উভয় মেরুতে ক্রোমোজোমের সংখ্যা সমান হয় ।
2. প্রতি মেরুতে উপস্থিত ক্রোমোজোমগুলিকে ঘিরে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা সজ্জিত হয়ে নিউক্লিয় পর্দা গঠন করে।
3. বেমের বিলুপ্তি ঘটে।
4.নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে জলযোজন ঘটে। ফলে, নিউক্লিয়াসটি ও
5. ডি-স্পাইরালাইজেশন পদ্ধতিতে অপত্য ক্রোমোজোমগুলির পাক খুলে যায় ও ক্রোমাটিন জালিকা পুনর্গঠিত হয়।
6. ক্রোমোজোমের গৌণ খাজের NOR-এ নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে এবং দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। ক্যারিওকাইনেসিসের দশাগুলির তাৎপর্য বর্ণনা করো।
প্রশ্ন 17. ক্যারিওকাইনেসিসের দশাগুলির তাৎপর্য বর্ণনা করো।
উত্তর : ক্যারিওকাইনেসিসের দশাগুলির তাৎপর্য : দশার নাম দশার তাৎপর্য
1● প্রোফেজ (i) নিউক্লিয়াসের জল বিয়োজন ঘটায় ক্রোমাটিন জালিকা দৃশ্যমান হয় এবং কুণ্ডলীকরণের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম গঠন করে। (ii) নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় পর্দার বিলুপ্তি ঘটে, ফলে মেটাফেজ দশা শুরু হয়।
2. মেটাফেজ (i) ক্রোমোজোমগুলি স্পিন্ডিল ফাইবারের | সঙ্গে যুক্ত থেকে কোশের নিরক্ষীয় তল বরাবর মেটাফেজ প্লেট তৈরি করে।
3. অ্যানাফেজ (ii) এই দশায় ক্রোমোজোমগুলি সবচেয়ে স্থূল, খর্ব ও স্পষ্ট হওয়ায় এগুলি পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়ন করতে অত্যন্ত সুবিধা হয়। (i) অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে। (ii) অ্যানাফেজীয় চলনের ফলে অর্ধেক অপত্য ক্রোমোজোম স্পিন্ডিল ফাইবারের একপ্রান্তে এবং বাকি অর্ধেক অপত্য ক্রোমোজোম স্পিন্ডিলের অন্যপ্রান্তে চলে যায়। ফলে, অপত্য কোশে মাতৃকোশের সমসংখ্যক ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।
4. টেলোফেজ টেলোফেজ দশায় মাতৃকোশের মতো সমসংখ্যক অপত্য ক্রোমোজোমযুক্ত এবং সমআকৃতির ও | সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
প্রশ্ন 18. সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে? [ME 15,02] উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে [ME 12,07] সাইটোকাইনেসিস কীভাবে ঘটে সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর: সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis ) : যে প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে অপত্য কোশ গঠন করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
© উদ্ভিদাকাশে সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়া : উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিস কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠনের মাধ্যমে হয়। 1• টেলোফেজ দশার শেষ দিকে কোশের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর মাইক্রোফিলামেন্ট, মাইক্রোটিউবিউল জমা হয়ে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট (Phragmoplast) নামক দানা গঠন করে। 2. কোশে ফ্র্যাগমোজোম থাকলে তা কোশের মাঝ বরাবর সঞ্চিত হতে থাকে। সেখানে পরবর্তীকালে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট ও গলগি বডি জমা হয়। 3. এই জায়গায় গলগি বস্তুর ভেসিকলগুলি মিলিত হয়ে কোশপর্দা গঠন করে।
4. ফ্রাগমোপ্লাস্ট মধ্যস্থ ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট মিলিতভাবে কোশপাত বা সেলপ্লেট গঠন করে। সেলপ্লেট পরবর্তীকালে মধ্যচ্ছদা বা মিডল ল্যামেলা গঠন করে।
5. কোশপাতের উভয় পার্শ্বে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ জমা হয়ে প্রাথমিক কোশপ্রাচীর স্তর তৈরি হয়, যা মাতৃ কোশপ্রাচীরের দিকে ক্রমশ অগ্রসর হয় এবং কোশপ্রাচীর স্পর্শ করে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। মধ্যপর্দা, 康 কোশ প্রাচীর 食食 - প্রাথমিক কোশপ্রাচীর ফ্রাগমোপ্লাস্ট কোশপাত (A) টেলোফেজ দশা B কোশপাত গঠন উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিস
প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস : © অপত্য কোশ সৃষ্টি প্রাণীকোশে সাইটোকাইনেসিস ফারোয়িং বা পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়।
1 • অ্যানাফেজ দশার শেষের দিকে কোশে ক্লিভেজ অবস্থিত প্রোটিন নির্মিত বলয়ের সংকোচনের ফলে কোশপর্দার মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়।
2. এর ফলে বেমের বিষুব অঞ্চল বরাবর কোশের বহির্গাত্রে কোশপর্দা ভাঁজ হয়ে একটি খাঁজ গঠিত হয়।
3. খাঁজটি ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে কোশের ভিতরে প্রবেশ করে এবং কেন্দ্রে মিলিত হয়।
4. এর ফলে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজম দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন 19. মিয়োসিস কাকে বলে এবং মিয়োসিস কোথায় ঘটে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: মিয়োসিস (Meiosis; meion = হ্রাস, osis = : অবস্থা): যে কোশ বিভাজনে জনন মাতৃকোশের ক্রোমোজোম একবার এবং নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার বিভাজিত হওয়ার ফলে ডিপ্লয়েড (2n) মাতৃকোশের অর্ধেক সংখ্যক (n) ক্রোমোজোমযুক্ত চারটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস বলে।
मিয়োসিাসর সংঘটলथान : • উদ্ভিদদেহে— স্পোরানজিয়াম।
@ প্রাণীদেহে— শুক্রাশয়স্থিত প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট (পুরুষদেহে) এবং ডিম্বাশয়স্থিত প্রাথমিক উসাইট (স্ত্রীদেহে)।
● मয়াসসর বৈশিষ্ট:
1• জীবের জনন মাতৃকোশে এই বিভাজন ঘটে।
2. ডিপ্লয়েড (2n) জনন মাতৃকোশে মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়।
3• এই কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের ক্রোমোজোম একবার কিন্তু নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার করে বিভাজিত হয়। ও মিয়োসিস দুটি পর্যায়ে ঘটে। যথা - (i) মিয়োসিস-। অর্থাৎ, এখানে ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাস ঘটে বলে, একে হ্রাস বিভাজন বলে এবং (ii) মিয়োসিস ।। অর্থাৎ, ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকায় সমবিভাজন বলে।
4• মিয়োসিস-I-এর সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথকীকরণ ঘটে এবং মিয়োসিস-II-তে ক্রোমাটিডের পৃথকীকরণ ঘটে।
জেনে রাখো : মিয়োসিস বিভাজনের বিভিন্ন দশা : মিয়োসিস মিয়োসিস-। বা হ্রাস বিভাজন মিয়োসিস । বা সমবিভাজন ক্যারিওকাইনেসিস-। সাইটোকাইনেসিস-। প্রোফেজ। মেটাফেজ। অ্যানাফেজ। টেলোফেজ- লেপ্টোটিন জাইগোটিন প্যাকাইটিন ডিপ্লোটিন ডায়াকাইনেসিস ক্যারিওকাইনেসিস-II সাইটোকাইনেসিস-II প্রোফেজ- মেটাফেজ-II অ্যানাফেজ-|| টেলোফেজ-
প্রশ্ন 20. মিয়োসিস বিভাজনের তাৎপর্যগুলি লেখো। ** [ME 16, 15, 11, 09,03]
উত্তর: মিয়োসিস বিভাজনের তাৎপর্য :
1. প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখা : ডিপ্লয়েড (2n) রেণু মাতৃকোশ বা জনন মাতৃকোশে মিয়োসিস বিভাজনের ফলে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) রেণু বা জননকোশ (গ্যামেট) উৎপন্ন হয়। যৌন জননের সময় দুটি হ্যাপ্লয়েড (n) জননকোশের মিলনের ফলে পুনরায় ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট গঠিত হয়। এই জাইগোটটি বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ডিপ্লয়েড জীব সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, বংশপরম্পরায় প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
2. জীবের মধ্যে প্রকরণ বা ভেদ সৃষ্টি : মিয়োসিস বিভাজনের সময় সমসংস্থ ক্রোমোজোমের ননসিস্টার ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে ক্রসিংওভার ও রিকম্বিনেশনের ফলে জিনের আদানপ্রদান ঘটে। এর ফলে, উৎপন্ন গ্যামেটে পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে এবং এইরূপে গ্যামেটের মিলনে যে জীব সৃষ্টি হয় তার মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একে প্রকরণ বা ভেদ (Variation) বলে।
3• গ্যামেট উৎপাদন : মিয়োসিসের মাধ্যমে জনন মাতৃকোশ থেকে গ্যামেট উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে গ্যামেটোজেনেসিস বলে।
4• অভিব্যক্তিতে সহায়তা : নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রজাতির সৃষ্টি হয়, যা জীববৈচিত্র্যের প্রসার ঘটায় এবং জৈব অভিব্যক্তিকে সমৃদ্ধ করে।
5.জনুক্রম নিয়ন্ত্রণ : মিয়োসিসের মাধ্যমে জীবের ডিপ্লয়েড (2n) জনু থেকে হ্যাপ্লয়েড (n) জনুর সৃষ্টি হয়, যা জীবের জনুক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জেনে রাখো : মিয়োসিস ও মিয়োসিস-II-এর মাঝে সংক্ষিপ্ত | দশাকে ইন্টারকাইনেসিস বলে। এই দশায় DNA সংশ্লেষ ঘটে না।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. DNA কাকে বলে? জীবদেহে DNA-এর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি লেখো।
উত্তর : ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (Deoxyribo Nucleic Acid, DNA) : নাইট্রোজেন বেস, ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা এবং ফসফোরিক অ্যাসিড (H, PO) সহযোগে গঠিত যে দীর্ঘ দ্বিতন্ত্রী জৈব অণু স্বপ্রজননশীল, পরিব্যক্তিক্ষম এবং জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকরূপে কাজ করে, তাকে ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা DNA বলে।
DNA-এর কাজ : সজীব জীবকোশে DNA যে-সকল কার্যগুলি সম্পাদন করে সেগুলি হল— 1• জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিনের ধারক এবং বাহক হিসেবে কাজ করে।
2. DNA-এর প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে জিন বংশপরম্পরায় অপত্য কোশে সঞ্চারিত হয় এবং জীবের বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়।
3. DNA কোশীয় জৈবনিক কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ RNA-তে প্রেরণ করে, যা পরবর্তীকালে প্রোটিন স্থানান্তরিত হয়।
প্রশ্ন 2. RNA কাকে বলে? এর কাজগুলি লেখো।
উত্তর: রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (Ribonucleic Acid) : যে একতন্ত্রী পলিরাইবোনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল কোশে প্রোটিন সংশ্লেষে মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং কিছু কিছু ভাইরাসে বংশগত পদার্থরূপে কাজ করে, তাকে রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) বলে।
RNA-এর কাজ : 1.জেনেটিক RNA ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্চারণে সাহায্য করে। যেমন— ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিয়ো, টোব্যাকো মোজেইক ভাইরাসের জেনেটিক বস্তু হল RNAI
2 নন-জেনেটিক RNA কোশের প্রোটিন সংশ্লেষে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন 3. প্রকৃতি ও কাজের ভিত্তিতে ক্রোমোজোমকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? প্রতি প্রকারের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও। * Sakhawat Memorial Govt Girls High School 16
উত্তর: দু-প্রকার। যথা— ও অটোজোম ও ও সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বা হেটারোক্রোমোজোম।
1. আটাজোম (Autosome ) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোম জীবের বিভিন্ন দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রজাতিগত ভাবে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের দেহকোশেই সমান সংখ্যা ও প্রকৃতিতে অবস্থান করে, তাদের অটোজোম বলে। যেমন- মানুষের দেহকোশে 22 জোড়া - বা 44টি অটোজোম থাকে।
2.সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বা হেটারোক্রোমোজোম (Sex chromosome or Allosome or Heterochromo- some) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে সাহায্য করে এবং স্ত্রী ও পুরুষদেহে ভিন্ন সংখ্যায় ও ভিন্ন প্রকৃতিতে উপস্থিত থাকে, তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বলে। যেমন— মানুষের দেহকোশে 1 জোড়া বা 2টি আলোজোম থাকে। স্ত্রীদেহে দুটি 'X' ক্রোমোজোম (XX) এবং পুরুষদেহে একটি 'X' ও একটি 'Y' ক্রোমোজোম (XY) উপস্থিত থাকে।
জেনে রাখো : প্রাণীকোশে সেক্স ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী উইলসন ও স্টিভেনস এবং উদ্ভিদকোশে আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী কোরেন্স।
প্রশ্ন 4. সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুসারে ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ লেখ ।
উত্তর: সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোম চার প্রকার :
1• আসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Acentric Chromosome ) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না, তাদের আসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
2. মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Monocentric Chromo - some) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে একটিমাত্র সেন্ট্রোমিয়ার থাকে, তাদের মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
3. ডাইসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Dicentric Chromosome ) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে দুটি সেন্ট্রোমিয়ার বর্তমান, তাদের ডাইসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
4. পলিসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Polycentric Chromo থাকলে যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে দুই-এর বেশি সংখ্যক সেন্ট্রোমিয়ার পরবর্তীকাদের পলিসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
প্রশ্ন 5. সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তর: সেন্ট্রোমিয়ারের অনুযায়ী ক্রোমোজোমকে চারভাগে ভাগ করা হয়। যথা— ক্রোমোজোম মনোসেন্ট্রিক
1• মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Metacentric Chromo- some) : মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের একেবারে কেন্দ্রে সেন্ট্রোমিয়ার উপস্থিত থাকলে, তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এই প্রকার ক্রোমোজোমের দুটি বাহু (q ও p) সমান হয় এবং কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজীয় চলনের সময় এগুলিকে 'V' আকৃতির মতো দেখায়। ও
2. সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Subretacentric Chro- mosome): যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার কেন্দ্রের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করে, তাদের সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এই সমস্ত ক্রোমোজোমের দুটি বাহুর আকার অসমান হয় (q>p) এবং অ্যানাফেজীয় চলনের সময় এদের ‘L' আকৃতির মতো দেখায়।
3. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Acrocentric Chromo - some) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের যে-কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থান করে, তাদের অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এই ধরনের ক্রোমোজোমে একটি বাহু (q) অন্য বাহুর (p) তুলনায় অনেক বড়ো হয় ও অ্যানাফেজীয় চলনের সময় এদের ‘J' আকৃতির মতো দেখায়।
4. টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম (Telocentric Chromo - some) : যে-সমস্ত ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার যে-কোনো একটি প্রান্তে অবস্থান করে, তাদের টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এই ক্রোমোজোম একটি বাহু যুক্ত হয় এবং অ্যানাফেজীয় চলনের সময় এদের '।' অক্ষরের মতো দেখায়।
প্রশ্ন 6. ক্রোমোজোমের কাজগুলি লেখো।
উত্তর: ক্রোমোজোমের কাজ :
1.জেনেটিক বার্তার ধারক ও বাহক : ক্রোমোজোম জিনঘটিত বার্তাকে অর্থাৎ, জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে একটি জনু থেকে পরবর্তী জনুতে পৌঁছে দেয়।
2. জৈবিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ : ক্রোমোজোম জিনের সাহায্যে সং জীবের যাবতীয় জৈবিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রোমোজোমের পুন মাধ্যমে জীবের পরিব্যক্তি, প্রকরণ ও বিবর্তন নিয়ন্ত্রিত হয়।
3. নিউক্লিয় পদার্থ উৎপাদন : ক্রোমোজোমের হেটারোক্রোমাটিন নি অংশ নিউক্লিয় পদার্থ উৎপাদনে সাহায্য করে।
• প্রোটিন উৎপাদন : ক্রোমোজোমস্থিত জেনেটিক বার্তা { জী RNA দ্বারা সাইটোপ্লাজমে বাহিত হয় এবং জেনেটিক বার্তা বা নির্দেশ বং অনুযায়ী কোশে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
প্রশ্ন 7. ডিপ্লয়েড ও হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝো? *
উত্তর : ডিপ্লয়েডক্রোমোজোম : জীবের দেহকোশে প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি করে অর্থাৎ, কোশে দু-সেট ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকলে, তাকে ডিপ্লয়েড (2n) (diploid) ক্রোমোজোম বলে। যেমন— মানুষের দেহকোশে 23 জোড়া বা 46 সংখ্যক ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।
" হ্যাপ্লায়েড ক্রোমোজোম : জীবের জননকোশে বা গ্যামেটে প্রতিটি ক্রোমোজোম 1টি করে, অর্থাৎ, 1 সেট ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে, তাকে হ্যাপ্লয়েড (n) (haploid) ক্রোমোজোম বলে। যেমন— মানুষের শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে হ্যাপ্লয়েড (n) অর্থাৎ 23টি ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে।
প্রশ্ন 8 . ইউক্রোমাটিন ও হেটারোক্রোমাটিন কাকে বলে ? Patha Bhavan 16
উত্তর: ইউক্রোমাটিন (Euchromatin) : ক্রোমাটিন বা ক্রোমোজোমের যে অংশ কোশচক্রের ইন্টারফেজ দশায় অত্যন্ত সূক্ষ্ম, প্রসারিত এবং হালকাভাবে রঞ্জিত হয় ও বিভাজনের সময় ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়, তাকে ইউক্রোমাটিন বলে। X ইউক্রোমাটিন ক্রোমোজোমের 70% অংশ জুড়ে থাকে। এই অংশে DNA বেশি থাকে এবং এই অংশের সক্রিয় জিন থেকে RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষ হয়।
হেটারোক্রোমাটিন (Heterochromatin) : ক্রোমাটিন বা ক্রোমোজোমের যে অংশ কোশচক্রের সমস্ত দশাতে (ইন্টারফেজ ও বিভাজন দশা) ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে এবং গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়, তাকে হেটারোক্রোমাটিন বলে। * হেটারোক্রোমাটিন ক্রোমোজোমের 30% অংশ জুড়ে থাকে। ইন্টারফেজ দশায় এই অংশে কম DNA ও বেশি RNA থাকে এবং এই অংশের জিনগুলি নিষ্ক্রিয় থাকে।
প্রশ্ন 9. জিনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: জিনের বৈশিষ্ট্য : 1. জিন ক্রোমোজোমে অবস্থান করে। ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমে জিন রৈখিকভাবে অবস্থান করে।
2. এক বা একাধিক নিউক্লিওটাইডের সমন্বয়ে জিন গঠিত হয়। ও জিন নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে। ও এক বা একাধিক জিন। মিলিতভাবে একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
3. জিন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক এবং নিয়ন্ত্রকরূপে কাজ করে।
প্রশ্ন 10. কোশ বিভাজনের তাৎপর্যগুলি লেখো।
উত্তর: কোশ বিভাজনের তাৎপর্য : 1• বৃদ্ধি ও পূর্ণতাপ্রাপ্তি : কোশ বিভাজনের মাধ্যমে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। ফলে, সামগ্রিকভাবে জীবদেহে বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে।
2.প্রজনন ও বংশবিস্তার: নিম্নশ্রেণির জীব মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে এবং উন্নত শ্রেণির জীব মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে ।
3.বহুকোষী জীব সৃষ্টি : এককোশী জাইগোট কোশ বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোশী জীবে পরিণত হয়। -ইউক্রোমাটিন
4. ভ্রুণ ও লার্ভার পরিস্ফুরণ : কোশ বিভাজনের মাধ্যমে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি ক্রোমোজোমের অভ্যন্তরীণ ঘটে এবং ভ্রুণ ও লার্ভার পরিস্ফুরণ ঘটে। গঠন (ইন্টারফেজ দশায়)
5. প্রকরণ ও অভিব্যক্তি : মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব সৃষ্টি হয় (প্রকরণ), যা জৈব অভিব্যক্তিকে সমৃদ্ধ করে।
6. অণুবিস্তার বর্তমানে কোশ বিভাজন উদ্ভিদের কলাপালন ও অপুবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন 11. আমাদের দেহে কোশ বিভাজন না ঘটলে কী হত?
উত্তর: আমাদের দেহে কোশ বিভাজন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সম্পাদনে সাহায্য করে। যেমন—
1• মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে দেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, ফলে আমাদের দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে।
2. আমাদের দেহে ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধিও কোশ বিভাজনের মাধ্যমে ঘটে।
3• পরিণত স্ত্রী ও পুরুষদেহে মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট সৃষ্টি হয়, যা যৌন মিলন ও নিষেকের মাধ্যমে ডিপ্লয়েড এককোশী জাইগোট গঠন করে। এককোশী জাইগোট মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা পূর্ণাঙ্গ মানবশিশু তৈরি করে।
4. মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে প্রজাতিকে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে এবং মিয়োসিস কোশ বিভাজনে সংঘটিত ক্রসিংওভার বিবর্তনে সাহায্য করে। ভাই, কোশ বিভাজন না ঘটলে উপরিউক্ত কার্যাবলির কোনোটাই সম্পন্ন হত না, যা প্রকৃত অর্থে আমাদের অবলুপ্তিকে নির্দেশ করে।
প্রশ্ন 12. কোশচক্রের গুরুত্ব অলোচনা করো। * [ME'17]
উত্তর: কোশচাকুর গুরুত্ব: 1. কোনো কোশের কোশ বিভাজন হবে কি হবে না, তা নির্ভর করে কোশচক্রের ওপর। 2. কোশচক্রকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোশচক্রের G, ও S দশার মাঝে, G2 ও M দশার মাঝে এবং M দশায় কতগুলি চেকপয়েন্ট উপস্থিত থাকে। 3. কোশচক্রের এই নিয়ন্ত্রণ ত্রুটিপূর্ণ হলে কোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়, যা পরবর্তীকালে টিউমার সৃষ্টি করে। টিউমার বিনাইন অথবা ম্যালিগন্যান্ট প্রকৃতির হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার খুবই ক্ষতিকর, কারণ— এর থেকে ক্যানসার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। 4. নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কোশচক্র স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো কোশচক্র যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ চলে, তারপর বন্ধ হয়ে যায়। আবার, প্রয়োজন হলে চালু হতে পারে।
প্রশ্ন 13. কোশচক্রের চেকপয়েন্ট বলতে কী বোঝো? কোশচক্রে বিভিন্ন ধরনের চেকপয়েন্ট ও তাদের কাজগুলি লেখো। Bethune Collegiate School '16
উত্তর: চেকপয়েন্ট (Check point) : নির্দিষ্ট শর্তের অভাবে কোশচক্রের যে বিন্দুতে কোশ বিভাজনের অগ্রগতি থেমে যায়, তাকে কোশচক্রের চেকপয়েন্ট বলে।
কোশচক্রের বিভিন্ন প্রকার চেকপয়েন্ট ও তাদের কাজ : কোশচক্রের চেকপয়েন্ট G, / S চেকপয়েন্ট কাজ কোশচক্রের প্রথমে ক্রিয়াশীল থাকে। এবং RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষের মাধ্যমে কোশটিকে 'S' দশায় প্রবেশের উপযুক্ত করে তোলে।
@ G2 / M চেকপয়েন্ট DNA সংশ্লেষ ঘটে এবং কোশকে G2 দশায় প্রবেশের উপযুক্ত করে তোলে।
• মাইটোটিক বা স্পিন্ডিল চেকপয়েন্ট বিভাজন দশায় ক্রোমোজোমের ঘনীভবন, বেমের সজ্জা, মেটাফেজ প্লেট গঠন, অ্যানাফেজ চলন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন 14. কোশচক্রে চেকপয়েন্টের গুরুত্ব লেখো। Rajkumari Santanamoyee Girls High School '16.
উত্তর: কোশচক্রে চেক পায়ান্টর গুরুত্ব : চেক পয়েন্ট কোশচক্রে নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে-
1• বিভাজন দশায় প্রবেশকারী কোশের DNA, RNA ও প্রোটিন ত্রুটিপূর্ণ হলে কোশটি চেকপয়েন্টে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তী বিভাজন দশায় প্রবেশ করতে পারে না।
2. অনেক সময় DNA-এর রেপ্লিকেশন সম্পূর্ণ না হলে, বিভাজনের পূর্বে কোশটি চেকপয়েন্টে থেমে যায়। DNA-এর রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে কোশটি বিভাজন দশায় প্রবেশ করে।
3. M দশায় বেমতত্ত্ব ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সঙ্গে যুক্ত না হলে চেকপয়েন্ট কোশ বিভাজন বন্ধ করে দেয়।
4. চেকপয়েন্ট কোনো ক্ষতিগ্রস্থ বা মিউটেটেড DNAযুক্ত কোশকে বিভাজন দশায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ক্যানসার রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। চেকপয়েন্ট বিঘ্নিত হলে কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়, ফলে কোশ অতি দ্রুত বিভাজিত হতে শুরু করে এবং জীবদেহে টিউমার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 15. ম্যালিগন্যান্ট কোশ কাকে বলে? ম্যালিগন্যান্ট কোশের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর | ম্যালিগন্যান্ট কোশ (Malignant Cell) : যে-সমস্ত কোশ দ্রুত এবং অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অসংখ্য দুর্বল প্রকৃতির অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাদের ম্যালিগন্যান্ট কোশ বলে।
ম্যালিগন্যান্ট কোশের বৈশিষ্ট্য :
• টিউমার সৃষ্টি : অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজনের ফলে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং জীবের আমৃত্যু পর্যন্ত কোশগুলি বিভাজিত হতে থাকে।
2. অ্যানাপ্লাসিয়া দ্রুত হারে বিভাজনের ফলে কোশগুলির গঠন সম্পূর্ণ হয় না, কোশ অঙ্গাণুগুলি উপযুক্ত পরিমাণে থাকে না, এর ফলে কোশগুলি স্বাভাবিক কাজের অনুপযুক্ত হয় ।
3• মেটাস্ট্যাসিস : ম্যালিগন্যান্ট কোশগুলি একটি নির্দিষ্ট স্থানে আটকে থাকার ক্ষমতা হারায় এবং রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে অন্য স্থানে বাহিত হয়ে বিভিন্ন অঙ্গে নতুন টিউমার গঠন করে, একে মেটাস্ট্যাসিস বলে।
4• আক্রমণাত্মক ধর্ম : প্রোটিয়েজ উৎসেচক ক্ষরণের মাধ্যমে ম্যালিগন্যান্ট কোশগুলি দেহের অন্যান্য অঙ্গকে আক্রমণ করে।
অনুরূপ প্রশ্ন : ক্যানসার কোশের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
প্রশ্ন 16. ক্যানসার কী? ক্যানসারের প্রকারভেদগুলি সারণি আকারে লেখো।
উত্তর: ক্যানসার (Cancer) : ম্যালিগন্যান্ট কোশের দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজনের ফলে জীবদেহে যে মারাত্মক অসহনীয় ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে ক্যানসার বলে। ক্যানসারের প্রকারভেদ : ক্যানসারের নাম আক্রান্ত অঙ্গ বা কলা
1 • কারসিনোমা ত্বক, ফুসফুস, স্তন, পাকস্থলী, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, ডিম্বাশয় প্রভৃতি।
2. সারকোমা অস্থি, তরুণাস্থি, মেদকলা এবং পেশিকলা।
3. লিম্ফোমা লসিকাগ্রন্থি, প্লীহা, লসিকাবাহ ।
4• লিউকেমিয়া রক্ত (শ্বেতরক্তকণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক, প্রায় 200000 – 1000000 / mm3 হয়)।
5. অ্যাডেনোমা এপিথেলিয়াল গ্রন্থি।
প্রশ্ন 17. ইন্টারফেজের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর : ইন্টারফেজের বৈশিষ্ট্য :
1. কোশচক্রের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সক্রিয় দশা হল ইন্টারফেজ। এটি তিনটি উপদশা— G, S 3 G2 নিয়ে গঠিত।
2.কোশের নিউক্লিয় পদার্থ (DNA) ও সাইটোপ্লাজমের কোশ অঙ্গাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
3. কোশ বিভাজনের জন্য বিপাকীয় শক্তির সঞ্চয় ঘটে।
4. ক্রোমোজোমগুলি সূক্ষ্ম সুতোর মতো গঠনযুক্ত হয় এবং ক্রোমাটিন জালিকারূপে বিন্যস্ত থাকে।
5. কোশে DNA, RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
প্রশ্ন 18. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: মাইটোসিস কোশ বিভাজনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
1. জীবদের দেহকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে।
2. এই বিভাজনের মাধ্যমে মাতৃকোশ বিভাজিত হয়ে সমআকৃতির, সমগুণসম্পন্ন এবং সমান সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট দুটি অপত্য কোশ উৎপন্ন হয়। তাই এই বিভাজনকে সদৃশ বিভাজনও বলা হয়। বিভাজন বা ও
3.মাইটোসিস বিভাজন প্রথমে নিউক্লিয়াসের ক্যারিওকাইনেসিস এবং পরে সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস-এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়।
4.এই বিভাজন দ্বারা জীবের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, পুনরুৎপাদন প্রভৃতি ঘটে থাকে।
5.• উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন এবং অযৌন জননে রেণু উৎপাদনে সাহায্য করে।
6. এই বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হলে টিউমার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 19. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তর: গ্রোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য :
1. নিউক্লিয়াসের জল বিয়োজনের ফলে ক্রোমাটিন জালিকা দৃশ্যমান হয়।
2. ক্রোমাটিন জালিকা ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে স্থূল ও ছোটো আকৃতির ক্রোমোজোম গঠন করে।
3. প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত হয়।
4. নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় পর্দা অবলুপ্ত হয়।
5. সেন্ট্রোজোম দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং বিপরীত মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে।
13 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের ছবি দ্যাখো।
প্রশ্ন 20. উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বিতীয় দশার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বিতীয় দশাটি হল মেটাফেজ দশা।
মেটাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য :
1.মাকু আকৃতির বেম গঠিত হয়।
2. বেমের বিষুব অঞ্চলে দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত অবস্থায় ক্রোমোজোমগুলি সেন্ট্রোমিয়ারের সাহায্যে ক্রোমোজোমাল তন্তুর সঙ্গে যুক্ত থাকে।
3. বেমের বিষুব অঞ্চলে ক্রোমোজোমগুলির এইরূপ নির্দিষ্ট রীতিতে সজ্জিত হওয়ায় মেটাফেজ প্লেট গঠিত হয়। 14 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের ছবি দ্যাখো।
প্রশ্ন. 21 মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তর: অ্যানাফেজ দশার বৈশিষ্ট্য :
1. সেন্ট্রোমিয়ার দুটি ভাগে বিভক্ত হয়।
2. প্রতিটি ক্রোমাটিড পৃথক সেন্ট্রোমিয়ারযুক্ত হয়ে একটি করে মোট দুটি অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে।
3. ক্রোমোজোমাল তন্তুর সংকোচনের ফলে অপত্য ক্রোমোজোম পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং বিপরীত মেরুর দিকে চলতে শুরু করে। একে অ্যানাফেজীয় চলন বলে।
টেলোফেজ দশার বৈশিষ্ট্য :1. দুটি মেরুতে পৌঁছানোর পর ক্রোমোজোমগুলির প্যাঁচ খুলে যায় ও পুনরায় ক্রোমাটিন জালিকায় পরিণত হয়।
2. ক্রোমাটিন জালিকাকে ঘিরে নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
3. দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
প্রশ্ন.22 মাইটোসিস কোশ বিভাজনে প্রোফেজ এবং টেলোফেজ দশায় ঘটা তিনটি বিপরীতমুখী ঘটনা উল্লেখ করো। ** [ME 18, 14]
উত্তর:1. ঘটনা 1 : কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশায় নিউক্লিয়াস থেকে জল বিয়োজন ঘটে, কিন্তু টেলোফেজ দশায় নিউক্লিয়াসে জল সংযোজন ঘটে।
ঘটনা 2 : প্রোফেজ দশায় নিউক্লিয় জালিকা ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম সৃষ্টি করে, কিন্তু টেলোফেজ দশায় ক্রোমোজোমের প্যাঁচ খুলে নিউক্লিয় জালিকা সৃষ্টি হয়।
3. ঘটনাও : প্রোফেজ দশার শেষে নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাস অবলুপ্ত হয়, কিন্তু টেলোফেজ দশায় নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
প্রশ্ন.23 ক্রসিংওভার কাকে বলে? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ক্রসিংএভার (Crossing Over) : যে পদ্ধতিতে মিয়োসিস-1-এর প্রথম প্রোফেজের প্যাকাইটিন উপদশায় দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের দুটি ননসিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে জেনেটিক খণ্ডের বিনিময় ও পুনঃসংযোজন ঘটে, তাকে ক্রসিংওভার বলে।
ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব:
1. -ক্রসিংওভার • ক্রসিংওভারের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য ক্রোমোজোমে জিনের সজ্জাবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে। ফলে, প্রকরণ বা ভেদ সৃষ্টি হয়।
2. ক্রসিংওভারের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রজাতি সৃষ্টি হয়। • ক্রসিংওভারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জিনগুলি ক্রোমোজোমে রৈখিকভাবে সজ্জিত থাকে।
অনুরূপ প্রশ্ন : মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময় ঘটে --- ঘটনাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। [ME '19]
প্রশ্ন 24. ক্রসিংওভার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্রসিংএভার পদ্ধতি:
1. প্রথমে দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোম
2. প্রতিটি ক্রোমোজোমে 2টি করে ক্রোমাটিড থাকায় মোট 4টি ক্রোমাটিড নিয়ে টেট্রাড গঠিত হয়।
3.টেট্রাডের যে-কোনো দুটি ননসিস্টার ক্রোমাটিড পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 'X' আকৃতির কায়াজমা গঠন করে। এই অঞ্চলে ননসিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের খণ্ডাংশের বিনিময় ঘটে।
4. দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের ভিতরের DNA স্ট্র্যান্ড এন্ডোনিউক্লিয়েজ উৎসেচকের প্রভাবে ভেঙে যায়।
5. হেলিকেজ উৎসেচকের প্রভাবে ভগ্ন DNA স্ট্র্যান্ডগুলি মাতৃ স্ট্র্যান্ড থেকে পৃথক হয়ে যায়।
6. দুটি ভগ্ন ক্রোমাটিডে DNA-এর খণ্ডাংশ বিনিময় ঘটে অর্থাৎ ক্রসিংওভার হয়।
7.শেষে কেটে যাওয়া DNA স্ট্যান্ড দুটি DNA-লাইগেজ উৎসেচকের দ্বারা জুড়ে যায়।
প্রশ্ন.25 "মিয়োসিস বিবর্তনের পথকে প্রসারিত করে”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মিয়োসিস বিভাজনের প্রথম প্রোফেজ দশার প্যাকাইটিন উপদশায় ক্রসিংওভার ঘটে, ফলে ক্রোমোজোমের জিনগুলির পুনঃসংযুক্তি ও পুর্নবিন্যাস ঘটে। এর ফলে, অপত্য কোশে জনিত্ব কোশ ভিন্ন নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে যা প্রকরণ বা মিউটেশনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এইভাবে কয়েকটি জনু ধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের ক্রমাগত পরিবর্তন পরিবেশের অনুকূল হলে জীবদেহে সেই বৈশিষ্ট্যটি বিবর্তনের সূচনা ঘটায় এবং নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। তাই বলা হয় যে, “মিয়োসিস বিবর্তনের পথকে প্রসারিত করে”।
অনুরূপ প্রশ্ন : ক্রসিংওভার ও বিবর্তনের সম্পর্ক লেখো। RK Miction, Vidyalaya, Narendrapur 16
প্রশ্ন 26. জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকলে কী কী সুবিধা দেখা যায় ও ধ্রুবক না থাকলে কী কী সুবিধা বা অসুবিধা দেখা যাবে বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তর: প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা বংশপরম্পরায় ধ্রুবক থাকায় প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ, প্রজাতি পৃথিবীতে স্থায়িত্ব লাভ করে। যেমন— প্রায় 10 হাজার বছর আগে পৃথিবীতে আধুনিক মানবের (Homo sapiens) উৎপত্তি ঘটে। ক্রোমোজোমসংখ্যা ধ্রুবক থাকায় এখনও মানুষ নামক জীবগোষ্ঠী একইরকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে আছে।
অন্যদিকে, জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক না থাকলে বংশপরম্পরায় ক্রোমোজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকবে অর্থাৎ, 2n → 4n → 8n 16n 32n প্রভৃতি। এর ফলে নতুন নতুন জীবগোষ্ঠীর উৎপত্তি ঘটতে পারে, কিন্তু জৈব অভিব্যক্তিতে এই সমস্ত জীবগোষ্ঠী কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কারণ— প্রতিটি জীবগোষ্ঠীর স্থায়িত্ব কেবলমাত্র তার জীবনকাল। ফলে ওই জীবগোষ্ঠীর মৃত্যুর পর তার আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না, এ ছাড়া নতুন ক্রোমোজোম সংখ্যা সমন্বিত জীব প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকূল্য লাভ করবে কি না সে সম্পর্কেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক না থাকলে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি হবে এবং জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
তবে জীবের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যার পরিবর্তন হতে পারে। একে পলিপ্লয়েডি বলে। যদি কখনও একটি বা দুটি ক্রোমোজোমের সংখ্যার পরিবর্তন ঘটে তাহলে মানুষের ক্ষেত্রে সিনড্রোম দেখা যায়, (ডাউন, ক্লাইনফেল্টার ও টার্নার প্রভৃতি সিনড্রোম) তবে সমগ্র সেটের পরিবর্তন (3n, 4n, 5n.... ইত্যাদি) হলে প্রাণীরা সাধারণত বাঁচে না। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সমগ্র সেটের পরিবর্তনে সংকর উদ্ভিদ (উদাহরণ— র্যাফানোব্রাসিকা) বা হাইব্রিড ভিগর উদ্ভিদ সৃষ্টি করা সম্ভব।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.ক্রোমোজোম (Chromosome) কাকে বলে ?
উত্তর: নিউক্লিয় জালিকা থেকে উৎপন্ন যে স্বপ্রজননক্ষম সূত্রাকার জৈববস্তু নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত এবং জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকরূপে কাজ করে, তাকে ক্রোমোজোম (Chromosome; Chroma = রং এবং soma = দেহ) বলে।
প্রশ্ন 2. ক্রোমাটিডের (Chromatid) সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : প্রতিটি ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর অতিশয় কুণ্ডলিত যে একজোড়া দণ্ডাকার গঠন পরস্পরের সঙ্গে সেন্ট্রোমিয়ার অংশে যুক্ত থাকে, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে।
প্রশ্ন 3. ক্রোমোনিমাটা (Chromonemata) কী ?
উত্তর: ইন্টারফেজ দশায় কোশের নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোমস্থিত 300nm ব্যাসযুক্ত সূক্ষ্ম প্রসারিত তত্ত্বগুলিকে ক্রোমোনিমাটা (একবচনে—ক্রোমোনিমা) বলে। কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশাতে ক্রোমোনিমাগুলি ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমাটিড গঠন করে।
প্রশ্ন 4. ক্রোমাটিন জালিকা কাকে বলে ?
উত্তর: ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ নিউক্লিয় প্রোটিন দ্বারা গঠিত ক্ষারীয় রজ্জুকে রঞ্জিত প্যাচানো সূত্রাকার অংশকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে। ক্রোমাটিন জালিকা ক্রমশ ঘনীভূত ও কুণ্ডলীকৃত হয়ে পর্যায়ক্রমে ক্রোমোজোম গঠন করে।
প্রশ্ন 5. NOR অঞ্চলটি কোথায় দেখা যায় ? এর কাজ কী ?
উত্তর: NOR ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজ-1 অংশে দেখা যায়। Region) NOR অংশে কোশ বিভাজনের টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস পুনর্গঠিত হয়।
প্রশ্ন 6. কাইনেটোকোর কাকে বলে? এর কাজ লেখো।
উত্তর: কাইলোটাকোর (Kinetochore ) : ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজে সেন্ট্রোমিয়ারের উভয় পাশে প্রোটিননির্মিত যে চাকতির মতো অংশ থাকে, তাকে কাইনেটোকোর বলে। কাজ : কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোম কাইনেটোকোরের সাহায্যে বেমতত্ত্বর সঙ্গে যুক্ত হয়।
প্রশ্ন 7. সমসংস্থ ক্রোমোজোম কাকে বলে ?
উত্তর: ডিপ্লয়েড (2n) কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত, সমআকৃতি সম্পন্ন ও সমগুণযুক্ত প্রতিজোড়া ক্রোমোজোমকে সমসংস্থ ক্রোমোজোম (Homologous Chromosome) বলে। এ
প্রশ্ন 8. সিস্টার ক্রোমাটিড ও ননসিস্টার ক্রোমাটিড বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সিস্টার ক্রোমাটিড (Sister Chromatid) : দুটি সমসংখ ক্রোমোজোমের অন্তর্গত একটি ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিডকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলা হয় ।
ননসিস্টার ক্রোমাটিড (Non-sister Chromatid) : পাশাপাশি অবস্থিত সমসংস্থ ক্রোমোজোমদ্বয়ের দুটি ক্রোমাটিডকে পরস্পরের ননসিস্টার ক্রোমাটিড বলে।
প্রশ্ন 9.স্যাট-ক্রোমোজোম কাকে বলে ?
উত্তর: স্যাট-ক্রোমোজোম (SAT-Chromosome) : স্যাটেলাইট- যুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট-ক্রোমোজোম বলে। SAT শব্দটির অর্থ হল—Sine Acid Thymonuclenico অর্থাৎ, DNA বিহীন অংশ । মানুষের 13, 14, 15, 21 এবং 22 তম ক্রোমোজোম হল স্যাট ক্রোমোজোম।
প্রশ্ন 10. সেন্ট্রোমেরিক ক্রোমোমিয়ার কী? Uttarpara Govt High School 16
উত্তর: ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার মধ্যস্থ অঞ্চলে যে চারটি ক্রোমোমিয়ার অবস্থান করে, তাকে সেন্ট্রোমেরিক ক্রোমোমিয়ার বলে। দুটি ক্রোমোমিয়ার পরস্পরের সঙ্গে ইন্টারক্রোমোমেরিক তন্তু (Interchromomeric thread) দ্বারা যুক্ত থাকে।
প্রশ্ন 11. নিউক্লিওজোম কাকে বলে ?
উত্তর: নিউক্লিওাজাম (Nucleosome) : হিস্টোন অক্টামার কোর প্রোটিন, একটি বাহ্যিক H, প্রোটিন এবং 200 জোড়া নাইট্রোজেন বেসযুক্ত DNA দ্বারা গঠিত ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের গঠনগত একককে নিউক্লিওজোম বলে। নিউক্লিওজোম নামকরণ করেন বিজ্ঞানী Oudet ও তাঁর সহকর্মীবৃন্দ (1975)।
প্রশ্ন 12. নিউক্লিওসাইড কী? Chinsurah Deshbandhu Memorial School '16 [
উত্তর: নিউক্লিওসাইড (Nucleoside) : একটি পিউরিন বা পিরিমিডিন বেস এবং একটি পেন্টোজ শর্করা দ্বারা গঠিত নিউক্লিক অ্যাসিডের সাংগঠনিক উপাদানকে নিউক্লিওসাইড বলে। পিউরিন বা পিরিমিডিন বেস + পেন্টোজ শর্করা (DNAতে ডি অক্সিরাইবোজ এবং RNAতে রাইবোজ) = নিউক্লিওসাইড
প্রশ্ন 13. নিউক্লিওটাইড কী ? * Habra High School '16
উত্তর: নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) : একটি পিউরিন বা পিরিমিডিন বেস, একটি পেন্টোজ শর্করা ও একটি ফসফেট গ্রুপ যুক্ত হয়ে নিউক্লিক অ্যাসিডের যে সম্পূর্ণ গঠনগত একক তৈরি করে, তাকে নিউক্লিওটাইড বলে। একটি পিউরিন বা পিরিমিডিন বেস (A বা T বা G বা C বা U) পেন্টোজ + শর্করা + (5C) ফসফেট গ্রুপ (-PO 3-) নিউক্লিওটাইড।
প্রশ্ন 14. DNA কোথায় পাওয়া যায় ?
উত্তর: পাওয়া যায়- DNA-যুক্ত ভাইরাসে। DNA ও প্রোক্যারিওটিক কোশের (ব্যাকটেরিয়া) সাইটোপ্লাজমে। ও সমস্ত ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে এবং ও মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাসটিড নামক কোশীয় অঙ্গাণুতে।
প্রশ্ন 15. RNA-এর দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: RNA-এর বৈশিষ্ট্য : RNA-তে রাইবোজ শর্করা (5C) এবং ইউরাসিল নামক পিরিমিডিন বেস থাকে। ও সাধারণত RNA একতন্ত্রী হয় এবং এটি প্রোটিন সংশ্লেষ করে।
প্রশ্ন 16. RNA-এর শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: RNA জেনেটিক RNA TMV, পোলিয়ো ভাইরাসের প্রজননিক বস্তু ননজেনেটিক RNA মেসেঞ্জার RNA বা mRNA রাইবোজোমাল RNA বা rRNA - ট্রান্সফার RNA বা tRNA
প্রশ্ন 17. DNA ও RNA-কে অ্যাসিড বলা হয় কেন ?
উত্তর: DNA ও RNA-তে উপস্থিত নিউক্লিওটাইডের ফসফেট অংশ কোশীয় দ্রবণে H+ আয়ন বা প্রোটন ত্যাগ করে, ফলে H,O+ আয়ন সৃষ্টি হয়, যা দ্রবণকে অ্যাসিডিক বা আম্লিক করে তোলে। এজন্যই DNA বা RNA-কে অ্যাসিডরূপে গণ্য করা হয়।
প্রশ্ন 18. জনিতৃ কোশ ও অপত্য কোশ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: জনিতৃ কোশ (Mother Cell) : যে সমস্ত কোশ বিভাজিত হয়ে নতুন কোশের জন্ম দেয়, তাকে জনিতৃ কোশ।
অপত্য কোশ (Daughter Cell): জনিতৃ কোশের বিভাজনের ফলে যে সমস্ত কোশ উৎপন্ন হয়, তাদের অপত্য কোশ বলে।
প্রশ্ন 19. হ্যাপ্লয়েড কোশ কাকে বলে?
উত্তর: হ্যাপ্লয়েড কোশ (Haploid Cell) : কোনো প্রজাতির জীবদেহের যে কোশে প্রতিটি ক্রোমোজোমের একটি মাত্র সেট (n) উপস্থিত থাকে, তাকে হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে। যেমন— মানুষের দেহে উৎপন্ন গ্যামেট (পুরুষদেহে শুক্রাণু ও স্ত্রীদেহে ডিম্বাণু)।
প্রশ্ন 20. ডিপ্লয়েড কোশ কাকে বলে?
উত্তর: ডিপ্লয়েড কোশ (Diploid Cell) : জীবদেহের যে কোশে প্রজাতি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের প্রতিটি জোড়ায় জোড়ায় (দুটি করে) থাকে অর্থাৎ দুটি সেট (21) ক্রোমোজোম উপস্থিত থাকে, তাকে ডিপ্লয়েড কোশ বলে। যেমন—মানুষের দেহকোশ, জনন মাতৃকোশ প্রভৃতি।
প্রশ্ন 21. জিন কী ? জিন কোথায় উপস্থিত থাকে?
উত্তর: জিন (Gene) : ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থিত
নিউক্লিওটাইড সমন্বিত DNA-এর যে নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে, জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমে সঞ্চারণ এবং পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রজাতি সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তাকে জিন বলে। জিন ক্রোমোজোম বা DNA বা RNA-এর দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থান করে।
প্রশ্ন 22. কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা কী ?
উত্তর: কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা :
1. নিউক্লিয়াস ক্রোমোজোম তথা DNA তথা জিন ধারণ করে, যার দ্বারা জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়।
2. কোশ বিভাজনের সময় নিউক্লিয়াস বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় এবং মাতৃ নিউক্লিয়াসের বৈশিষ্ট্য অপত্য নিউক্লিয়াস তথা কোশ তথা জীবদেহে সঞ্চারিত হয়।
প্রশ্ন 23. কোশ বিভাজনে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের ভূমিকা কী ?
উত্তর: কোশ বিভাজনে ER-এর ভূমিকা : কোশ বিভাজনে প্রয়োজনীয় প্রোটিন রাইবোজোম ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের সাহায্যে তৈরি হয়। ও নিউক্লিয় পর্দা ও নিউক্লিয় জালিকা পুনরায় গঠনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 24. কোশ বিভাজনে মুখ্য খাঁজের গুরুত্ব কী ?
উত্তর: কোশ বিভাজনে মুখ্য খাঁজের ভূমিকা :
1• কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমের একমাত্র মুখ্য খাঁজ বা সেন্ট্রোমিয়ারই কার্যক্ষম থাকে। এই অংশের সঙ্গেই ক্রোমোজোমাল বেমতত্ত্ব যুক্ত হয় এবং ক্রোমোজোমের বিভাজনে সাহায্য করে।
2. এ ছাড়া মুখ্য খাঁজের অবস্থানের ওপর নির্ভর করেই অ্যানাফেজীয় চলনের সময় বিভিন্ন আকৃতিযুক্ত ক্রোমোজোম সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 25. কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোমিয়ারের কাজগুলি লেখো।
উত্তর: সোল্ট্রামিয়ারের কাজ :
1. ক্রোমোজোমকে দুটি বাহুতে বিভক্ত করে ও ক্রোমোজোমকে নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।
2. সিস্টার ক্রোমাটিডকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রাখে।
3. কোশ বিভাজনের সময় সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমকে বেমতন্তুর সঙ্গে যুক্ত রাখে।
4 • সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলটি নিউক্লিয়েশন কেন্দ্ররূপে কাজ করে।
প্রশ্ন 26. কোশ বিভাজনে টেলোমিয়ারের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: টেলোমিয়ারের গুরুত্ব :1. টেলোমিয়ার ক্রোমোজোমকে স্থায়িত্ব প্রদান করে।
2.টেলোমিয়ার ক্রোমোজোমের স্বকীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
3. টেলোমিয়ার কোনো ক্রোমোজোমকে তার সমসংস্থ ক্রোমোজোম বা অন্য কোনো ক্রোমোজোমের সঙ্গে জুড়ে যেতে বাধা দেয়।
4. টেলোমিয়ার কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু ঘটায়।
প্রশ্ন 27. অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো যা মাইটোসিস-এ অনুপস্থিত।
উত্তর: অ্যামাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য : 1. এই প্রকার কোশ বিভাজনে ক্রোমোজোম, ক্রোমাটিড গঠন, বেমতত্ত্ব গঠন, নিউক্লিয় পর্দা ওনিউক্লিওলাসের অবলুপ্তি ঘটে না। ও মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটি সরাসরি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন 28. অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজনের তাৎপর্য লেখো।
উত্তর : অ্যামাইটোসিস পদ্ধতির তাৎপর্য : 0 এই পদ্ধতিতে প্রোক্যারিওটিক ও মেসোক্যারিওটিক জীব কোশ বিভাজন করে এবং এর মাধ্যমে এদের বংশবিস্তার ঘটে। ও এই কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস বিভাজনের কোনো দশা না থাকায় কোশ বিভাজন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে হয় এবং অপত্য কোশের সংখ্যা অনেক বেশি হয়। যেমন— ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে 20-30 মিনিটের মধ্যে এই বিভাজন সম্পূর্ণ হয়।
প্রশ্ন. 29 অ্যামাইটোসিসকে ‘প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন' বলে কেন ?
উত্তর : অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস বিভাজন কোনো দশার মাধ্যমে ঘটে না। বেম গঠন ছাড়াই মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভাজিত হয়ে অপত্য কোশ সৃষ্টি করে বলে, অ্যামাইটোসিসকে ‘প্রত্যক্ষ কোশ বিভাজন' বলা হয় ৷ এ
প্রশ্ন 30. মাইটোসিস কোথায় ঘটে?
উত্তর: মাইটোসিসের সংঘটনস্থান : এবং পত্রমূল । ও প্রাণীদেহে : ভ্রূণ, দেহকোশ, ক্ষতস্থানের কোশ ।
প্রশ্ন 31. মাইটোসিসকে 'সমবিভাজন' বলে কেন?
উত্তর: মাইটোসিস বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ক্রোমোজোম একবারমাত্র বিভাজিত হয়ে মাতৃকোশের সমগুণবিশিষ্ট, সমআকৃতির ও সমসংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে বলে, মাইটোসিসকে ‘সমবিভাজন' বলা হয় ।
প্রশ্ন 32 মাইটোসিসকে 'পরোক্ষ কোশ বিভাজন' বলে কেন?
উত্তর : মাইটোসিস বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াস বিভাজন কয়েকটি পর্যায়ে (যেমন- প্রোফেজ মেটাফেজ→ অ্যানাফেজ টেলোফেজ) সংঘটিত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে বলে মাইটোসিসকে পরোক্ষ বিভাজন বলা হয়। মাতৃ নিউক্লিয়াস- → প্রোফেজ → মেটাফেজ অপত্য নিউক্লিয়াস অপত্য নিউক্লিয়াস টেলোফেজ - অ্যানাফেজ।
প্রশ্ন 33. মাইটোটিক অ্যাপারেটাস কী ?
উত্তর: মাইটোটিক অ্যাপারেটাস (Mitotic apparatus) : প্রাণীকোশে কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিস পর্যায়ে প্রোফেজ দশার শেষের দিকে সাইটোপ্লাজমে দুটি সেন্ট্রিওল, তাদের বেষ্টন করে অবস্থানরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অ্যাস্ট্রাল রশ্মি ও বেমতন্তু বা স্পিন্ডিল একত্রে যে সংগঠন তৈরি করে, তাকে বেমযন্ত্র বা স্পিন্ডিল অ্যাপারেটাস বা মাইটোটিক অ্যাপারেটাস বলে।
মাইটোটিক অ্যাপারেটাসের প্রতিটি তন্তু 4–12টি অনুনালিকা বা মাইক্রোটিউবিউল দ্বারা গঠিত হয়। উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রিওল না থাকায় কেবলমাত্র অনুনালিকাগুলি মিলিতভাবে বেমযন্ত্র বা মাইটোটিক অ্যাপারেটাস গঠন করে।
প্রশ্ন 34. অ্যাস্টার কী ?
উত্তর: অ্যাস্টার (Aster) : প্রাণীকোশে সেন্ট্রিওলের চারপাশে অণুনালিকা টিউবিউলিন (প্রোটিন নির্মিত) দ্বারা গঠিত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছুরিত হয়ে রশ্মির মতো অবস্থান করে। এদের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি বলে। সেন্ট্রিওল জোড়া ও অ্যাস্ট্রাল রশ্মিগুলিকে একত্রে অ্যাস্টার বলে।
প্রশ্ন 35. অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস কী ?
উত্তর: অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস : যে-প্রকার মাইটোসিস বিভাজনে বেমতত্ত্ব দুই মেরুতে বিন্যস্ত সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে। প্রাণীকোশে এই প্রকার মাইটোসিস ঘটে। এ
প্রশ্ন 36. অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস কাকে বলে?
উত্তর: অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস : যে-প্রকার মাইটোসিস বিভাজনে বেমতন্তু অ্যাস্ট্রাল রশ্মির পরিবর্তে অন্য কোনো কোশীয় পদার্থ যেমন— সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু (মাইক্রোটিউবিউল) থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে। উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকার জন্য অ্যাস্ট্রাল রশ্মি গঠিত হয় না। তাই এই প্রকার মাইটোসিস দেখা যায়।
প্রশ্ন 37. মিয়োসিস কোথায় ঘটে? ** [ME'12,09,03]
উত্তর: মিয়োসিসের সংঘটনস্থান :
1• উদ্ভিদদেহে : সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানীতে পুং রেণুমাতৃকোশে এবং ডিম্বকে স্ত্রী রেণুমাতৃকোশে এবং নিম্নশ্রেণির লিঙ্গধর উদ্ভিদের জাইগোট।
2. প্রাণীদেহে : জনন মাতৃকোশ (শুক্রাশয়স্থিত প্রাইমারি স্পার্মাটোসাইটে এবং স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়স্থিত প্রাইমারি উসাইটে)।
প্রশ্ন 38. মিয়োসিসকে হ্রাস বিভাজন' বলা হয় কেন ?
উত্তর: মিয়োসিস বিভাজনে ডিপ্লয়েড (2n) মাতৃকোশের ক্রোমোজোম একবারমাত্র কিন্তু নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম দুবার বিভাজিত হওয়ায় মাতৃকোশের (2n) অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত
চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। এজন্য মিয়োসিসকে 'হ্রাস বিভাজন' বলা হয়। (2n মাতৃকোশ n n মিয়োসিস। মিয়োসিস-II সমবিভাজন হ্রাস বিভাজন n | চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্যকোশ n n
প্রশ্ন 39. বেমতন্তু কাকে বলে? বেমতত্ত্ব কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তর: বেमতন্তু (Spindle Fibre) : কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের সময় প্রোটিন নির্মিত যে-সমস্ত সূক্ষ্ম তন্তুর মতো গঠন তৈরি হয়, তাদের বেমতন্তু বা স্পিন্তিল ফাইবার বলে।
অবিচ্ছিন্ন বেমতত্ত্ব— বেমতত্ত্ব তিন প্রকার। যথা— কোশের একমেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। ও ক্রোমোজোমাল বেমতন্তু—কোশের একমেরু থেকে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ও ইন্টারজোনাল বেমতন্তু— বিপরীতমুখী দুটি অপত্য ক্রোমোজোমের মাঝে বিস্তৃত।
প্রশ্ন 40. ইন্টারফেজকে বৃদ্ধি দশা' বা 'প্রস্তুতি দশা” বলে কেন ?
উত্তর:1. ইন্টারফেজ দশায় কোশের সাইটোপ্লাজমে বিভিন্ন পদার্থের সংশ্লেষ ঘটে। যেমন- প্রোটিন, উৎসেচক, RNA, ATP, কোশীয় অঙ্গাণু প্রভৃতি
2. প্রতি কোশের নিউক্লিয়াসে DNA-এর পরিমাণ দ্বিগুণ (2C4C অবস্থা) হয়।
3.যেহেতু ইন্টারফেজ দশায় পরবর্তী কোশবিভাজনের জন্য কোশ সার্বিকভাবে তৈরি হয়, তাই ইন্টারফেজকে বৃদ্ধি দশা বা প্রস্তুতি দশা বলা হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : (1) কোশ বিভাজনের পূর্বে ইন্টারফেজ কেন প্রয়োজন ? (2) ইন্টারফেজ দশার গুরুত্ব লেখো।
প্রশ্ন 41. কোশচক্রে S দশার গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: S দশার গুরুত্ব : কোশচক্রে S দশায় DNA সংশ্লেষিত হওয়ায় একে সংশ্লেষ দশাও বলা হয় ।
1• এই দশায় প্রতিটি কোশের DNA তন্ত্রী রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে দ্বিগুণ সংখ্যায় গঠিত হয়। ফলে, মাইটোসিস বিভাজনের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশ মাতৃকোশের সমসংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত হয়।
2. হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষিত হয় যা DNA-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রোমোজোমের গঠনগত একক নিউক্লিওজোম গঠন করে।
প্রশ্ন 42. কোশচক্রের কোন্ কোন্ পর্যায়ে ক্রোমোজোম যথাক্রমে একতন্ত্রী ও দ্বিন্ত্রী হয় ?
উত্তর: প্রোফেজ দশার শেষ থেকে মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোম দ্বিতন্ত্ৰী হয় অর্থাৎ এই দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে দুটি ক্রোমাটিড থাকে।
অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোম একতন্ত্রী হয় অর্থাৎ এই দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোম একটি ক্রোমাটিড থাকে, কারণ দ্বিতন্ত্রী ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজনের ফলে সিস্টার ক্রোমাটিড দ্বয় পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।
প্রশ্ন 43. কোশচক্রে G, ও G, দশার প্রয়োজনীয়তা লেখো।
উত্তর: G, দশার প্রয়োজনীয়তা : ও বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু, যেমন— রাইবোজোম, গলগি বড়ি, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, লাইসোজোম প্রভৃতি অঙ্গাণু সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। গু 'S' দশায় DNA-এর প্রতিলিপিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক ও প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। কি দশার প্রয়োজনীয়তা ও বিভিন্ন প্রকার RNA (mRNA, rRNA, tRNA) সংশ্লেষিত হয়। ও ক্ষতিগ্রস্ত DNA অণুর মেরামত ঘটে।
প্রশ্ন 44. Go দশা কাকে বলে ?
উত্তর: Go দশা : কোশচক্রের ইন্টারফেজ দশার G, উপদশায় একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশচক্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এই বিন্দুকে Go দশা বলে। এই সময় কোশটি বিভাজনের প্রয়োজনীয় বিপাকীয় কার্য সম্পন্ন করে, কিন্তু কোশটির আকার বা আয়তনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। উদ্ভিদের স্থায়ী কলা (ট্রাকিড, ট্রাকিয়া), মানুষের স্নায়ুকোশ, যকৃৎ কোশ সর্বদাই Go দশায় থাকে। ক্যানসার কোশে কোনো Gg দশা থাকে না।
প্রশ্ন 45. দেহকোশ ও জননকোশ কাকে বলে?
উত্তর: দেহাকাশ (Somatic cell) : জীবদেহের গঠনে অংশ- গ্রহণকারী কোশসমূহকে দেহকোশ বলে। এই কোশগুলিতে মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। যেমন— আবরণী কলার কোশ, পেশিকোশ, স্নায়ুকোশ প্রভৃতি। জননাকাশ (Gamate) : জীবদেহের যে-সমস্ত কোশ যৌন জননে অংশগ্রহণ করে জাইগোট উৎপাদনে সাহায্য করে, তাদের জননকোশ বা গ্যামেট বলে। এদের ক্ষেত্রে মিয়োসিস কোশ বিভাজন দেখা যায়। যেমন— শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।
প্রশ্ন 46. টিউমার (Tumour) কী ?
উত্তর: টিউমার (Tumour) : কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে কোশচক্রের চেকপয়েন্টগুলি বিঘ্নিত হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয় এবং অস্বাভাবিক সংখ্যায় কোশ সৃষ্টির মাধ্যমে যে কোশপুঞ্জ গঠিত হয়, তাকে টিউমার বলে।
জেনে রাখো : মানুষের পৌষ্টিকনালির আবরণী কলাকোশ এবং ত্বকের আবরণী কলাকোশ প্রায় সবসময় বিভাজিত হয় এবং সারাজীবন ধরে এদের বিভাজন চলতে থাকে।
প্রশ্ন 47. বিনাইন টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কী ?
উত্তর: বিনাইন টিউমার (Benign Tumour) : দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ফলে উৎপন্ন অপত্য কোশগুলি উৎপত্তি স্থলেই যে বেদনাহীন টিউমার সৃষ্টি করে, তাকে বিনাইন টিউমার বলে। যেমন— ত্বকে সৃষ্ট আঁচিল । দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত কোশবিভাজনের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশগুলি থেকে উৎপন্ন যে টিউমার থেকে নিওপ্লাস্টিক কোশ বিচ্ছিন্ন হয়ে দেহের অন্যত্র টিউমার গঠন করে, তাকে ম্যালিগন্যান্ট
প্রশ্ন 48. মেটাস্ট্যাসিস (Metastasis) কাকে বলে?
উত্তর: মেটাস্ট্যাসিস : ক্যানসার কোশগুলি তাদের উৎসস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্ত অথবা লসিকার মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যানসার কোশের এই ধর্মকে মেটাস্ট্যাসিস বলে।
প্রশ্ন 49. ক্যারিওকাইনেসিস কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী ?
উত্তর: ক্যারিওকাইনেসিস (Karyokinesis ) : কোশচক্রের বিভাজন দশায় নিউক্লিয়াস বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে। মাইটোসিসের ক্যারিওকাইনেসিস বেম গঠনের মাধ্যমে ঘটে এবং চারটি দশায় বিভক্ত থাকে। যথা— প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ। গুরুত্ব : ক্যারিওকাইনেসিসের মাধ্যমে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
প্রশ্ন 50. সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে ? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর : সাইটোকাইনেসিস (Cytokinesis) : কোশচক্রের বিভাজন দশায় সাইটোপ্লাজমের বিভাজনকে সাইটোকাইনেসিস বলে। © গুরুত্ব : সাইটোকাইনেসিসের ফলে দুটি অপত্য কোশ গঠিত হয়।
প্রশ্ন 51. সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স কী ?
উত্তর: সাইন্যাপাটানিमাল কমপ্লেক্স ( Synaptonimal Com plex) : মিয়োসিস-1-এর প্রথম প্রোফেজের জাইগোটিন উপদশায়। মই-এর মতো (Ladder like) আকারযুক্ত বিশেষ প্রোটিন গঠন দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমের মাঝে উপস্থিত থেকে তাদের জোড় বাঁধতে সাহায্য করে, তাকে সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স বলে।
প্রশ্ন 52 অ্যানাফেজীয় চলন কী ?
উত্তর: অ্যানাফেজীয় চলন (Anaphasic movement) : মাইটোসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় উৎপন্ন অপত্য প্রসারণ ক্রোমোজোমগুলির মধ্যে ইন্টারজোনাল বেমতন্তুর বেমতন্তুর সংকোচনের ফলে অপত্য ক্রোমোজোমাল ক্রোমোজোমগুলির ধীরে ধীরে বেমের উভয় মেরুর দিকে গমন করাকে অ্যানাফেজীয় চলন বলে।
প্রশ্ন 53. কায়াজমা (Chiasma) কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী ?
উত্তর: কায়াজামা (Chiasma) : মিয়োসিস--এর প্রথম প্রোফেজের ডিপ্লোটিন উপদশায় হোমোলোগাস ক্রোমোজোমদ্বয়ের দুটি ননসিস্টার ক্রোমাটিড পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে 'X' আকৃতির গঠন তৈরি করে, তাকে কায়াজমা বলে।
গুরুত্ব : কায়াজমা স্থানে ক্রসিংওভার ঘটে এবং এর দুটি ননসিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে খন্ডাংশের আদানপ্রদান ঘটে।
প্রশ্ন 54. মাইটোটিক মিয়োসিস কী ?
উত্তর: মাইটোটিক মিয়োসিস : মিয়োসিস। প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কোশগুলি মিয়োসিস-II তে সমভাবে বিভাজিত হয়ে চারটি হ্যাপ্লয়েড (n) অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। এই কারণে মিয়োসিস-II কে মাইটোটিক মিয়োসিস বলে।
প্রশ্ন 55. ফ্র্যাগমোপ্লাস্টের উপাদান কী?
উত্তর: কোশপাতের প্রধান উপাদান ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গলগি বস্তু থেকে উৎপন্ন ক্যালশিয়াম পেকটেট ও ম্যাগনেশিয়াম পেকটেট সমৃদ্ধ ফ্র্যাগমোজোম এবং ইন্টারজোনাল তন্তু দ্বারা গঠিত।
Khub bhalo lekha
ReplyDelete