পরিবেশের জন্য ভাবনা (Concerns about our environment ) : দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 1st chapter physical science question answer| WB board physical science suggetion 2024|| - SM Textbook

Fresh Topics

Tuesday, October 10, 2023

পরিবেশের জন্য ভাবনা (Concerns about our environment ) : দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 1st chapter physical science question answer| WB board physical science suggetion 2024||

 পরিবেশের জন্য ভাবনা (Concerns about our environment ) : দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 1st chapter physical science question answer| WB board physical science suggetion 2024||




ভৌতবিজ্ঞান ও পরিবেশ 1.1 (Physical Science and Environment) 

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন 1. (i) বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বলতে কী বোঝায় ? [ME 01] 2 (ii) বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী? (iii) বায়ুমণ্ডলের উপযোগিতাগুলি লেখো। 

উত্তর:  (i) বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) : নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি প্রধান উপাদান দ্বারা গঠিত ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে প্রায় 1,600 কিলোমিটার পর্যন্ত বলয়াকারে বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ বা 'হাওয়ার চাদর সমগ্র পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে এবং যা সূর্য বা মহাশূন্য থেকে আসা ক্ষতিকারক বিকিরণ (UV রশ্মি, কসমিক রশ্মি) থেকে পৃথিবীর জীবজগৎকে রক্ষা করছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এই গ্যাসীয় আবরণ ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে থাকে। বায়ুমণ্ডলে গ্যাসীয় পদার্থের মোট ভর প্রায় 5.5x1015 ton | 

জেনে রাখো : 

পৃথিবী সৃষ্টির সময়ে গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণ করে প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন পৃথিবীপৃষ্ঠ তৈরি হয়। গ্যাসীয় অবস্থায় যেসব পদার্থ থেকে যায়, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে তারা পৃথিবীপৃষ্ঠ সংলগ্ন থাকে এবং পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবর্তিত হয় এবং বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করে।

 (ii) বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহ: বায়ুমণ্ডলের প্রধান তিনটি উপাদান হল – O গ্যাসীয় উপাদান, ও জলীয় বাষ্প, ও ধূলিকণা । গ্যাসীয় উপাদান : বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের পরিমাণই সর্বাধিক। দূষণমুক্ত শুষ্ক বাতাসে গ্যাসগুলির আয়তনের এবং ওজনের শতকরা ভাগ নীচের ছকে লেখা হয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় গ্যাস (He, Ne, Kr, Xe), হাইড্রোজেন (H2), নাইট্রোজেনের অক্সাইড (NO, বা N2O, NO, NO2), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3), ওজোন (O3), কার্বন মনোক্সাইড (CO) খুব অল্প পরিমাণে থাকে।

ও জলীয় বাষ্প : বিভিন্ন জলাশয় থেকে জল বাষ্পে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প গঠন করে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ প্রায় 0.5% থেকে 4% পর্যন্ত হয়। তবে উচ্চতা ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও পরিবর্তিত হয়। 

 ধূলিকণা : বায়ুমণ্ডলের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ধূলিকণা। সমুদ্র তীরবর্তী ও মরু অঞ্চলে সূক্ষ্ম বালিকণা, শিল্পাঞ্চলে কলকারখানার ছাই, আগ্নেয়গিরির উৎক্ষেপণের ছাইভস্ম, বিভিন্ন খনিজ লবণের সূক্ষ্ম কণা ও বিভিন্ন ধাতব আকরিকের অশুদ্ধি কণাবিশেষ ধূলিকণারূপে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অবস্থায় অবস্থান করে। বায়ুতে ভাসমান কোলয়েডীয় আকারের কণাগুলি এরোসল নামে পরিচিত। বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে ধূলিকণার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। 

(iii) বায়ুমণ্ডলের উপযোগিতা : সকল জীবকুলের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস হল বায়ুমণ্ডল। ও উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম কাঁচামাল হল কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), যার উৎস বায়ুমণ্ডল। ও বায়ুমণ্ডলের জন্যই ক্ষতিকারক মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছোতে পারে না। ও বায়ুমণ্ডলের জন্যই দিন ও রাতের তাপমাত্রার খুব একটা পার্থক্য হয় না। ও বায়ুমণ্ডলে বায়ুপ্রবাহের ফলে পৃথিবীতে ঝড়বৃষ্টি হয়। 

• জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোনোর আগেই বায়ুমণ্ডলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। @ মেরুপ্রদেশে যখন ছয় মাস ধরে রাত থাকে তখন বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তর যে মেরুজ্যোতির সৃষ্টি করে তা ওই অঞ্চলকে আলো দেয়। ও বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতির জন্য দেশ দেশান্তরের সঙ্গে রেডিয়ো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। © পৃথিবীতে শব্দ বিস্তারের প্রধান মাধ্যম হল বায়ু। তাই বায়ুমণ্ডল না থাকলে একে অন্যের কথা কেউ শুনতে পেত না। বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ু থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন 2 .রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়? প্রতিটি ভাগের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। 1+2 

উত্তর: রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়— O হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল ও ও হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল। 

• হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল : ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৪ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে স্তরের বায়ুর রাসায়নিক গঠন ও গ্যাসীয় উপাদানগুলির অনুপাত প্রায় একই থাকে, অর্থাৎ, সমসত্ত্ব হয়, তাকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলে। এই স্তরের উপাদানগুলি হল— বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, জলীয় বাষ্প এবং জৈব ও অজৈব কণা। A10,000 3500 -হিলিয়াম স্তর → পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর 1000 200 90 (কিমি) উচ্চতা হোমোস্ফিয়ার হেটেরোস্ফিয়ার আণবিক -নাইট্রোজেন স্তর ভূপৃষ্ঠ -হাইড্রোজেন স্তর বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন ও ছোটরোস্ফিয়ার বা বিষমণ্ডল : ভূপৃষ্ঠের উপরে ৪৪ কিলোমিটার থেকে 10,000 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে স্তরে বায়ুর উপাদানগুলির অনুপাত একইরকম থাকে না, তাকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল বলা হয়। হেটেরোস্ফিয়ারের এক-এক স্তরে এক-একটি গ্যাসের, যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, আর্গন, হিলিয়াম এবং হাইড্রোজেনের প্রাধান্য দেখা যায়।

 জেনে রাখো:

 বিষমমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানগুলি তাদের ঘনত্ব অনুসারে পরপর অবস্থান করে। নাইট্রোজেনের ঘনত্ব বেশি বলে এই গ্যাস বিষমমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরে অবস্থান করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস হালকা বলে সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করে। 

Advanced Studies <

 রাসায়নিক গঠন অনুসারে বিষমমণ্ডলকে চারটি উপস্তরে ভাগ করা যায় - নাইট্রোজেন স্তর (90-200 কিমি) : প্রধানত N-ঘটিত অণু (N2, NO) এবং অণু-আয়ন (NO+) দ্বারা গঠিত। ও পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (200-1,000 কিমি) : অক্সিজেন পরমাণু ও আয়ন (O, O2,O+) দ্বারা গঠিত। 

• হিলিয়াম স্তর (1,000- 3,500 কিমি) : মুখ্য উপাদান He পরমাণু ও আয়ন (He+)। ও হাইড্রোজেন স্তর (3,500-10,000 কিমি) : মুখ্য উপাদান H পরমাণু ও H+ আয়ন। এর উপরে H-পরমাণুর ঘনত্ব মহাশূন্যের বিভিন্ন পরমাণুর ঘনত্বের সমান হয়ে যায়।

প্রশ্ন 3 .উন্নতা প্রভৃতির তারতম্যের ভিত্তিতে (i) চাপ ও রেখাচিত্রের সাহায্যে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস দেখাও। 2 (ii) গঠন, বিস্তৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । 

 উত্তর:  (i) বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস : উন্নতা, চাপ, ঘনত্ব ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলকে মুখ্যত ছয়টি স্তরে ভাগ করেছেন। ক্রমবর্ধমান উচ্চতা অনুসারে স্তরগুলি হল—

 • ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল, ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল, ও মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল, থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডল, ও এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল, ও ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চুম্বকমণ্ডল। 

উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্তরের ক্ষেত্রে উয়তার পরিবর্তন বিভিন্ন রকমজেলে রাখা : বায়ুমণ্ডলের এই স্তরগুলির সীমারেখা ঋতু পরিবর্তন বা অন্যান্য ভৌগোলিক কারণে পরিবর্তিত হয়। তাই স্তরগুলির সীমারেখা বা বিস্তৃতির অঞ্চলগুলি সুনির্দিষ্ট নয়।

 (ii) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বর্ণনা :

 • ট্রাপাস্ফিয়ার (Troposphere): বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচে অবস্থিত বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত ও পরিবর্তনশীল সবচেয়ে ঘন ও ভারী যে স্তরটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে থাকে, তাকেই ট্রপোস্ফিয়ার বলে। (গ্রিক শব্দ Tropos = মেশানো বা অশান্ত, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Troposphere অঞ্চল)। মিশ্রিত বা অশান্ত *

 বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 10 কিলোমিটার, নিরক্ষীয় অঞ্চলে 16–18 কিলোমিটার ও মেরু অঞ্চলে 7-8 কিলোমিটার। 

গঠন : বায়ুমণ্ডল গঠনকারী বিভিন্ন উপাদান যেমন অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদির 75% এই স্তরে অবস্থান করে।

বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে আমরা বসবাস করি। (ii) বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রবিদ্যুৎ ইত্যাদি বায়বীয় গোলযোগ এই স্তরে ঘটে। তাই এই স্তরের অপর নাম ক্ষুব্ধমণ্ডল। (iii) উচ্চতার তারতম্যের কারণে এই স্তরে উয়তার পার্থক্য দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি 1 কিলোমিটার উচ্চতার পার্থক্যে উয়তা প্রায় 6.5°C-10°C হ্রাস পায়। তাই এই স্তরকে ‘ক্রমহ্রাসমান উয়তা স্তর' বলে। এই স্তরের সর্বনিম্ন উষ্ণতা প্রায় –56°C বা 217K হয়। (iv) বায়ুদূষণকারী প্রায় সকল উপাদানই এই স্তরে উপস্থিত থাকে। (v) বায়ুমণ্ডলের উপাদানের বেশিরভাগই এই স্তরে অবস্থান করায় বায়ুর চাপ এই স্তরে সর্বোচ্চ এবং প্রায় 76 সেন্টিমিটার উচ্চতাসম্পন্ন পারদস্তম্ভের চাপের সমান । (vi) এই স্তরে প্রপেলার বিমান চালানো হয়। (vii) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় প্রায় 3 কিলোমিটার অংশে উন্নতার হ্রাসবৃদ্ধি হয় না, এই অংশকে ট্রপোপজ বলে ।

অনুরূপ প্রশ্ন : (i) ট্রপোস্ফিয়ারের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। ★★ [ME 10] (ii) ট্রপোপজ কাকে বলে? *

 [ME 02] ও স্ট্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere ) : ট্রপোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটি হল স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। (গ্রিক শব্দ Stratos = শান্ত, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Stratosphere = শান্ত অঞ্চল বা শান্তমণ্ডল)। 

* বিস্তৃতি ট্রপোপজের ঊর্ধ্বে প্রায় 50 কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

 * গঠন : স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উপাদানগুলি ট্রপোস্ফিয়ারের উপাদানগুলি থেকে অভিন্ন হলেও পরিমাণগতভাবে অনেকটাই কম থাকে।

 বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুবই কম হওয়ায় বায়ুচাপও কম হয়। 

(ii) বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হওয়ায় এই স্তরে শ্বাসকার্য চালানো কষ্টকর।

 (iii) এই স্তরে জলীয় বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ বা ঝড়বৃষ্টি অনুপস্থিত। তাই একে শান্তমণ্ডল বলে।

 (iv) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছে তা প্রায় 0°C হয়। 

(v) বায়ুমণ্ডল শান্ত থাকায় এই স্তরে জেটপ্লেন চলাচল করে। 

(vi) স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে অতিবেগুনি রশ্মি শোষণের মাধ্যমে অক্সিজেন (O2) গ্যাস ওজোন গ্যাসে (O3) রূপান্তরিত হয়। শান্তমণ্ডলের 20-35 কিলোমিটার উচ্চতায় ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই অংশটিকে ওজোন স্তর ( Ozone layer) বলে। এই ওজোন গ্যাস সূর্য থেকে আসা তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে থাকে। ফলে, জীবজগৎ ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে। অতিবেগুনি রশ্মি শোষণের কারণেই এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির জন্য স্তরটিকে ওজোনোস্ফিয়ার বা ওজোনমণ্ডলও বলে।

 (vii) এই স্তরের শব্দ প্রতিফলিত করার ক্ষমতা আছে। 

(viii) স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় অবস্থিত যে অংশে উন্নতা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। 

অনুরূপ প্রশ্ন : বায়ুমণ্ডলে স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরের অবস্থান এবং এর গুরুত্ব উল্লেখ করো। **

জেনে রাখো : 

ট্রপোপজের অপর নাম স্তব্ধ স্তর। এটি ঘনমণ্ডল ও শান্তমণ্ডলের মধ্যে বায়ু চলাচল রোধ করে। 

® মোসাস্ফিয়ার (Mesosphere ) : স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় তথা মধ্যভাগে অবস্থিত স্তরটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে। (Meso = মধ্যভাগ, Sphere অঞ্চল অর্থাৎ, Mesosphere = মধ্যভাগের অঞ্চল)। = 

বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ থেকে 50-80 কিলোমিটার উচ্চতার পাল্লার মধ্যে স্তরটি অবস্থান করে। 

গঠন : এই স্তরে সামান্য পরিমাণে উপস্থিত N2, O2 অথবা তড়িদাহিত অণু যেমন— O2, NO+ মূল উপাদান হিসেবে থাকে। 

* বৈশিষ্ট্য : (i) এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরে উয়তা ও চাপ দুই-ই কমে। ৪০ কিলোমিটার উচ্চতায় উষ্ণতা কমে প্রায় – 93°C হয়। 

(ii) মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা উল্কাগুলি এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

 (iii) মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় যে অংশে উয়তার মান প্রায় স্থির হয়, সেই অংশকে মেসোপজ বলে। 

● থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere): মেসোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের অতি তপ্ত স্তরটি হল থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমণ্ডল। (Thermos = তাপ, Sphere = অঞ্চল অর্থাৎ, Thermosphere = তাপ অঞ্চল বা তাপমণ্ডল)। 

* বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠ সাপেক্ষে ৪০ কিলোমিটার থেকে 500 কিলোমিটার উচ্চতার পাল্লায় এই স্তরটি অবস্থান করে। 

গঠন : ছোটো ছোটো তড়িৎবাহী কণার সমন্বয়ে স্তরটি গঠিত। এর নীচের অংশে আণবিক নাইট্রোজেন ও উপরের অংশে পারমাণবিক অক্সিজেন থাকে। এই স্তরে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও ওজোন গ্যাসগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে। 

বৈশিষ্ট্য : (i) এই অংশে বাতাস প্রায় নেই।

 (ii) এই স্তরের উপাদান নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন অণু ও পরমাণুগুলি সূর্য ও মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) শোষণ করে। ফলে, উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং স্তরটির ঊর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা প্রায় 1200°C হয়ে থাকে।

 (iii) রশ্মিগুলির প্রভাবে এই স্তরের নিম্নাংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বা আয়নমণ্ডল বলে। অণু, পরমাণু ও আয়নগুলি সংমিশ্রিত হয়ে প্লাজমা অবস্থায় থাকে।

 (iv) তড়িদাহিত থাকায় আয়নমণ্ডল পৃথিবী থেকে পাঠানো বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে। একে কাজে লাগিয়ে বেতার ও দূরদর্শন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।

 (v) আয়নিত বায়বীয় কণাগুলি ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি আহিত কণার সংস্পর্শে এসে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করায় মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Aurora)-এর সৃষ্টি হয় ।

 জোন রাখো: 

আয়নমণ্ডলের নীচের অংশকে কেনেলি হেভিসাইড | স্তর বলে। এই অংশটিই মূলত বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন করে থাকে। আয়নমণ্ডলের উপরের অংশটি অ্যাপলটন স্তর' নামে পরিচিত। এটিও অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত করে। 

 এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) : থার্মোস্ফিয়ারের উপরে প্রায় মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত পাতলা বায়ুস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল বলে। (Exo = বহিঃ, Sphere = মণ্ডল, Exosphere বহিঃমণ্ডল)

বিস্তৃতি : ভূপৃষ্ঠের উপরে 500-1,500 কিলোমিটার পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত থাকে। 

গঠন : এই স্তরে মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায় ও গ্যাসগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে। 

বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরেও উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, তবে এই বৃদ্ধি থার্মোস্ফিয়ারের মতো দ্রুত নয় । (ii) এই স্তরের অন্তিম অংশে উয়তা প্রায় 1,600°C হয়। (iii) কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ কেন্দ্রগুলি এই স্তরে অবস্থান করে। 

6. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) দিয়ারের উপরে অবস্থিত মহাশূনা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্টিয়ার বলা হয় (Magnetosphere)।

 বিস্তৃতি :1,500 10,000 কিলোমিটার (বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা পর্যন্ত এই স্তর বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্য :( I)স্তরটি প্রায় বায়ুশুন্য। এটি বিস্তৃত হবে। সূর্যের আবহাওয়ামণ্ডলে গিয়ে মিশেছে। (II) এই স্তরে ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত একটি স্থায়ী তম্বিতীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকে।

প্রশ্ন 4 .(i) থার্মোস্ফিয়ার স্তরের এরূপ নামকরণের কারণ 2 লেখো। (ii) আয়নোস্ফিয়ার কাকে বলে? এর এরূপ নামকরণের 1+2 কারণ কী ? (iii) মেরুজ্যোতি কীভাবে সৃষ্টি হয়? 

 উত্তর : (i) মেসোস্ফিয়ারের উপরে, ভূপৃষ্ঠ সাপেক্ষে 80 কিলোমিটার থেকে 500 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলের স্তরটি হল থার্মোস্ফিয়ার। সূর্য ও মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, এক্সরশ্মি, গামারশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic ray) থার্মোস্ফিয়ার স্তরের গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা শোষিত হয়। ফলে, এই স্তরের উষ্ণতা, উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়। প্রায় 120 km উচ্চতায় তাপমাত্রা হয় প্রায় 500°C, 200 km -এ প্রায় 700°C এবং 500 km উচ্চতায় প্রায় 1200°C বা তার বেশি হয়। উয়তা খুব বেশি থাকে বলে এই স্তরের নাম ‘থার্মোস্ফিয়ার’।

 (ii) থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশে ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে 80 km থেকে 400 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত আধানযুক্ত কণা ও আয়নিত গ্যাস দ্বারা গঠিত স্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এবং উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি, X-রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মির (Cosmic ray) প্রভাবে এই অঞ্চলের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের অণুগুলি ভেঙে গিয়ে অসংখ্য ধনাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে (যেমন O2, O+, NO+ ইত্যাদি) সেই সঙ্গে অসংখ্য মুক্তইলেকট্রনও উৎপন্ন হয়। এইভাবে থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকায় এই স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার নামে অভিহিত করা হয়েছে।

 (iii) আয়নমণ্ডল অঞ্চলে সূর্য ও মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, X রশ্মি, Y রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদির প্রভাবে ওই অঞ্চলে থাকা N2 ও O2 গ্যাসের অণুগুলি বিয়োজিত হয়ে অসংখ্য তড়িদাহিত কণা (ধনাত্মক আয়ন) ও মুক্ত ইলেকট্রন সৃষ্টি করে। এই আয়নিত কণা ও মুক্ত ইলেকট্রনগুলি ভূচৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষেপিত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশযুক্ত স্থানের (আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক) আকাশে যে উজ্জ্বল আলোক প্রভা বা ছটা গঠন করে তাকে মেরুজ্যোতি বা পি শূন্য চাপ শূন্য অরোরা বা মেরুজ্যোতি মেরুপ্রভা বলে। ধনাত্মক আয়নগুলি মুক্ত ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে নিস্তড়িৎ হয় এবং আধান প্রতিমিতকরণের ফলশ্রুতিতে তড়িৎশক্তির বিনিময়ে যে আলোকশক্তি উৎপন্ন হয় সেটিই মেরুজ্যোতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উত্তর মেরুতে সৃষ্ট এই মেরুজ্যোতিকে ‘সুমেরু প্রভা (aurora borealis) এবং দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতিকে ‘কুমেরু প্রভা' (aurora australis) বলে।

(জান রাখো : মেরুজ্যোতির বর্ণ নির্ভর করে উত্তেজিত অবস্থাপ্রাপ্ত গ্যাস অণুর ওপর। ভূপৃষ্ঠ থেকে 60 মাইল উচ্চতায় অবস্থিত O2 অণুর জন্য হলদে-সবুজ বর্ণের মেরুজ্যোতি দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে 200 মাইল উচ্চতায় অবস্থিত O2 অণুর জন্য লাল বর্ণের মেরুজ্যোতি দেখা যায়। তাছাড়া N2 অণুর জন্য বেগুনি-লাল বর্ণের মেরুজ্যোতি দেখা যায়। 

প্রশ্ন 5 .(i) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উয়তার পরিবর্তন কীভাবে ঘটে? অথবা, কোনো স্থানের বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ হিসেবে উচ্চতার প্রভাব ব্যাখ্যা করো। ★★ [ME 15, 09 (old), 07, 04] 2 (ii) উচ্চতাভেদে বায়ুর চাপের তারতম্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। বিভিন্ন স্তরের উচ্চতাভেদে বায়ুর চাপের যে পরিবর্তন ঘটে, তা রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখাও। Jenkins school, cooch Behar 16 2+1

 উত্তর : (i) সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আসা তাপ বায়ু মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে সরাসরি পৃথিবীতে এসে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর অপেক্ষাকৃত ঘন হওয়ায় এবং তার মধ্যে তাপ শোষণকারী কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা বেশি থাকায় নীচের স্তর বেশি পরিমাণে তাপ ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুস্তর ক্রমশ হালকা হতে থাকে এবং ওই বায়ুতে ধূলিকণা, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প কম থাকায় বায়ুর তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে, ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় ততই বায়ুর উয়তা ক্রমশ কমতে থাকে। প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বায়ুর উয়তা প্রায় 6.5°C হারে কমতে থাকে। 3,048 মিটার উপরের বায়ুর উয়তা প্রায় 0°C হয়। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রভৃতি পর্বতশৃঙ্গে উয়তা 0°C-এর কম হয়, ফলে, পাহাড়ের চূড়ায় বরফ জমে থাকে। উয়তা কমতে কমতে তা ট্রপোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ অংশে এসে সর্বনিম্ন হয় (প্রায় – 56°C থেকে – 79°C)। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 1 উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উয়তা বৃদ্ধি পেয়ে 0°C-এ পৌঁছোয়। মেসোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে এবং অসমভাবে উয়তা হ্রাস পায়। এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল (মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা প্রায় – 93°C হয়)। কিন্তু আয়নোস্ফিয়ারের উয়তা ক্রমশ বেড়ে প্রায় 1200°C পর্যন্ত হয়। 

12নং পৃষ্ঠার 3 (i)-এর চিত্রটি দ্যাখো 

(ii) বায়ুর কোনো স্তরে চাপ ওই স্তরে উপস্থিত গ্যাস অণুর সংখ্যা এবং গ্যাস অণুর ভরবেগের ওপর নির্ভরশীল। বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচে আছে ভূপৃষ্ঠ। পৃথিবীর উপরিস্থ বায়ুমণ্ডলকে অসংখ্য অনুভূমিক স্তরের সমষ্টি হিসেবে ভাবলে দেখা যায়, ভূপৃষ্ঠের ওপর বায়ুমণ্ডলের চাপ প্রতি বর্গসেমিতে 76 cm উঁচু পারদস্তম্ভের ওজনের সমান। উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে গ্যাস অণুর ঘনত্ব সূচকীয় হারে কমতে থাকে। আবার, পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বেশিরভাগ ভারী গ্যাসের অণুগুলি (CO2, Ar, Kr) খুব কম উচ্চতার মধ্যে থাকে। কিন্তু, খুব হালকা গ্যাসগুলির অণু (H2, He) বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে পাওয়া যায়। উপরিউক্ত দুটি কারণে উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ কমে। দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ প্রায় 6.5 cm হারে কমে যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠলে বায়ুর চাপ কম থাকায় স্বাভাবিক কারণে বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এ ছাড়া উঁচু জায়গায় বায়ুচাপ কম থাকায় জলের স্ফুটনাঙ্কও কম হয়। ফলে, রান্না করতে বেশি সময় লাগে।

প্রশ্ন [6] (i) পরিচলন স্রোত (Convection Current) কী ? * 2 Chandannagore Municipal Corporation 16 (ii) বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টিতে পরিচলন স্রোতের ভূমিকা ব্যাখ্যা 2 করো। (iii) ঝড় (Storm) কী ? ঝড় কীভাবে সৃষ্টি হয় ? * 1+2 Jodhpur Park Boys' School '16

 উত্তর :(i) পরিচলন স্রো (Convection Current) : তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত হলে আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে, প্রবাহীর ঘনত্ব কমে ও সেটি হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় এবং একইসঙ্গে উপরের ঠান্ডা ও ভারী অংশ নীচে নামে। এইভাবে তাপ পরিচলনের ফলে কোনো প্রবাহীতে মাধ্যমের কণাগুলির যে চক্রাকার গতিপথ সৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন স্রোত বলে। 

(ii) ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত কোনো স্থানের বায়ু প্রাকৃতিক কারণে উত্তপ্ত হলে আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে, বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং ওই বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সংশ্লিষ্ট স্থানে যে সাময়িক শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা পূরণ করার জন্য ওই স্থান সংলগ্ন আশপাশ অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বাতাস ওই স্থানের অভিমুখে ছুটে আসে। তাপ পরিচলনের ফলে প্রবাহীতে বায়ু মাধ্যমের কণাগুলি চক্রাকার গতিপথে আবর্তিত হয়। এই পদ্ধতিতে বায়ুতে যে প্রাকৃতিক পরিচলন স্রোত সৃষ্টি হয়, তাকেই বায়ুপ্রবাহ (Air current) বলে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : 

বায়ুর পরিচলন স্রোতের একটি উদাহরণ হল ঘরের মধ্যে বায়ু চলাচল এবং প্রাকৃতিক দৃষ্টান্ত হল সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ু। 

ঘরের বায়ুচলন:  আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে যে বায়ু বেরিয়ে যায় তা ঘরের বায়ুর চেয়ে বেশি উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় হালকা হয়। ফলে, | এই বায়ু উপরে উঠে ঘরের দেয়ালের উঁচু স্থানে থাকা ঘুলঘুলির মাধ্যমে | বেরিয়ে যায়। এর ফলে তৈরি হওয়া আংশিক শূন্যতা পূরণ করার জন্য বাইরের ঠান্ডা ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ু দরজা ও জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ফলে, ঘরের বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে। এভাবেই পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত থাকে। 

সমুদ্রবায়ু (Sea breeze) দিনেরবেলায় সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ জলভাগ অপেক্ষা বেশি পরিমাণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। | ফলে, স্থলভাগ সংলগ্ন বায়ু গরম ও হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। তাই ওই অংশে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়। সমুদ্রের উপরিভাগ এই | সময়ের মধ্যে ততখানি উত্তপ্ত হতে পারে না। ফলে, ওই অংশে বায়ুচাপবেশি থাকে। এই প্রক্রিয়ায় দুই অংশের মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্য তৈরি হয়। চাপের সমতা রক্ষা করতে চেয়ে সমুদ্রের উপরিভাগের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে। একে সমুদ্রবায়ু বলে। এই বায়ু দিনেরবেলায় প্রবাহিত হয় এবং সন্ধ্যার দিকে এর তীব্রতা বাড়ে।

 স্থলবায়ু (Land breeze) : সূর্যাস্তের পর স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হলেও সমুদ্রের উপরিভাগ সেই হারে তাপ বিকিরণ করতে পারে না। তাই রাত্রের দিকে স্থলভাগ শীতল থাকলেও সমুদ্রের উপরিভাগের বায়ু তখনও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে এবং হালকা হয়ে উপরের দিকে ওঠে। ফলে, স্থলভাগে উচ্চ চাপ ও সমুদ্রের উপরিপৃষ্ঠে নিম্ন চাপযুক্ত অঞ্চল সৃষ্টি হয়। চাপসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে স্থলভাগের অর্থাৎ, উচ্চ চাপযুক্ত অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু সমুদ্রপৃষ্ঠ অর্থাৎ, নিম্ন চাপযুক্ত অঞ্চল অভিমুখে প্রবাহিত হতে থাকে। একে স্থলবায়ু বলে। এই বায়ু সন্ধ্যাবেলায় প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং সমগ্র রাত্রি ধরে প্রবাহিত হয়। ভোরবেলায় এটির তীব্রতা বাড়ে। 

(iii) ঝড় (Storm) : ভূপৃষ্ঠের উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলের অভিমুখে তীব্র গতিতে বায়ুপ্রবাহের ছুটে আসার ঘটনাকে ঝড় বলে। 

ঝড় সৃষ্টির কারণ : ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের এবং তার আশপাশের অঞ্চলের বায়ুচাপের তারতম্যের কারণেই বায়ুপ্রবাহ ঘটে। দুই অঞ্চলের বায়ুচাপের পার্থক্য যত বেশি হয় চাপের সমতা বজায় রাখার জন্য উচ্চ চাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্ন চাপযুক্ত অঞ্চলের দিকে বায়ু তত বেশি গতিবেগে ধাবিত হয়। এরূপ উচ্চ গতিশক্তির কারণে প্রবহমান বায়ু বিধ্বংসী চেহারায় আত্মপ্রকাশ করলে তাকেই ঝড় অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। গতিবেগের তারতম্য অনুসারে এই ঝড় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে – সাইক্লোন, টাইফুন, হ্যারিকেন, টর্নেডো - প্রভৃতি নামে পরিচিত।

প্রশ্ন  7 .(i) ওজোন স্তর (Ozone layer) কাকে বলে ? 1 (ii) ওজোন স্তরের ঘনত্ব পরিমাপের একক কী? এর সংজ্ঞা দাও । 2 (iii) বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাস কীভাবে সৃষ্টি হয় ? ** Midnapore Collegiate school '16 1+2 (iv) ওজোন স্তরের সাম্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : (i) 13 নং পৃষ্ঠার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার-এর বৈশিষ্ট্য অংশের vi নং পয়েন্টটি দ্যাখো। (ii) ওজোন স্তরের ঘনত্ব পরিমাপের একক হল ডবসন (DU)। ডবসন : 1 ডবসন একক বলতে 0°C উয়তায় 760mm পারদস্তম্ভের চাপে 0.01mm পুরু ওজোন গ্যাসের ঘনত্বকে বোঝায়। জেনে রাখো : ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব নিরক্ষীয় অঞ্চলে সবথেকে কম (250 DU), নাতিশীতোয় অঞ্চলে ( 350 DU) এবং উপমেরু অঞ্চলে ( 450 DU)। (iii) বায়ুমণ্ডলে ব্রাজান গ্যাস সৃষ্টি : প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি ও বিনাশ দুই-ই চক্রাকারে চলতে থাকে। দুটি অনুক্রমিক (Sequential) রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওজোন অণুর সৃষ্টি হয়। বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে সাধারণত 80-100 কিলোমিটার

উচ্চতায় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির (UV ফোটন কণার দ্বারা অক্সিজেন অণু - C এবং UV - B) অক্সিজেন অণু (O2) (O2) বিয়োজিত হয়ে দুটি অক্সিজেন পরমাণুতে ভেঙে যায়। অতিবেগুনি রশ্মি O2 <240 nm ওজোন সৃষ্টি ওজোন (Og) অতিবেগুনি রশ্মি 0+0 এই উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব কম হওয়ায় অক্সিজেন পরমাণু অক্সিজেন অণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। সাধারণত 30-60 কিলোমিটার উচ্চতায় অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন অণুর রাসায়নিক সংযোগে ওজোন (Og) গ্যাস সৃষ্টি হয়। এভাবে সৃষ্ট ওজোন অণু উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। 0+ অক্সিজেন পরমাণু (0) ওজোন অণুর সৃষ্টি 02 +0-03 [*- উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ওজোন অণু] নিরপেক্ষ সংঘর্ষকারী উপাদান হিসেবে উপস্থিত তৃতীয় অণুর (O2 বা N2) সঙ্গে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ওজোন অণুর সংঘর্ষে ওই অতিরিক্ত শক্তি অনুঘটকে স্থানান্তরিত হয় এবং নিষ্ক্রিয় বা অনুত্তেজিত O3 গ্যাস তৈরি হয়। O2 + O+ (M) → O3 + (M), M অনুঘটক। এই ওজোন গ্যাস 20-35 কিলোমিটার উচ্চতায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পরিবাহিত হয় এবং কেন্দ্রীভূত হয়ে ওজোন স্তর সৃষ্টি হয়।

 (iv) ওজোন স্তরের সাম্যাবস্থা : বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে সূর্য থেকে বিকিরিত অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে অক্সিজেন অণু ভেঙে অক্সিজেন পরমাণুতে পরিণত হয়। এই অবস্থায় একটি অক্সিজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অণু উৎপন্ন করে। অতিবেগুনি রশ্মি hv [0] + [0] → উচ্চশক্তিসম্পন্ন ওজোন অণু ] → O3 + (M) [M - অনুঘটক] O2 + [O] + (M) আবার, উৎপন্ন ওজোন অণুও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পুনরায় অক্সিজেন অণুতে ভেঙে যায়। hv 031 O₂+ [0] O3 + [O] - > 202

 স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে ওজোন অণুর উৎপাদন ও অন্যদিকে তার বিয়োজন এই দুটি বিপরীত প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকায় উৎপাদন ও বিনাশের হার সমান হয় এবং প্রক্রিয়া দুটির মধ্যে একটি গতিশীল সাম্য বজায় থাকে। 302203 এই সাম্যাবস্থার জন্যই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ স্থির থাকে এবং বায়ুমণ্ডলে ওজোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় নিরন্তন ঘটে চলা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দৈনিক প্রায় 350000 মেট্রিকটন ওজোন সৃষ্টি এবং ধ্বংস হয়ে থাকে। 

প্রশ্ন 8. (i) ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর কী? 

 (ii) বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ধ্বংসের পিছনে ফ্রেয়ন বা ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন জাতীয় যৌগগুলির ভূমিকা আলোচনা করো। ★★★ 2 New Barrackpur Colony Boys' High School '16 

(iii) হ্যালনসমূহ কীভাবে ওজোন স্তরের ক্ষতি করে? 2 

উত্তর: (i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাস তৈরি ও ওজোন গ্যাসের বিয়োজন এই দুই বিপরীত প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট কিছু ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ (যেমন CFC, NO ইত্যাদি) ব্যবহারের ফলে স্ট্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ওজোন গ্যাসের উৎপাদন হার অপেক্ষা বিয়োজনের হার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরটি ক্রমশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোন স্তরের পাতলা হওয়ার ঘটনাকে ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর (Ozone Hole) বলা হয়। 1982 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জো ফোরম্যান পর্যবেক্ষণ করেন, আন্টার্কটিকা অঞ্চলের উপরিভাগে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরটি ক্রমশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরের পাতলা হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে তিনি ওজোন ছিদ্র বা ওজোন গহ্বর নামে অভিহিত করেন। 

জেনে রাখো : ওজোন স্তরের কোনো স্থানে যখন ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 ডবসন ইউনিটের কম হয়, তখন সেখান দিয়ে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করতে পারে, ফলে, সেই স্থানে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়।

(ii) ফ্রেয়ন (ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন বা CFC) হল মিথেন ও ইথেনের বিভিন্ন ক্লোরিন এবং ফুওরিন প্রতিস্থাপিত জাতক। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ধ্বংসের পিছনে ফ্রেয়ন জাতীয় যৌগগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করে। রেফ্রিজারেটর, শীততাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, ফোম ও প্লাস্টিক তৈরি, রং শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে নির্গত CFC ট্রপোস্ফিয়ার অঞ্চলে নিষ্ক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিনের ব্যবধানে ধীরে ধীরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রবেশ করে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC বিভাজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন (Ci) পরমাণুতে পরিণত হয়। এই সক্রিয় Cl পরমাণু ওজোন স্তরের Oz-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন (O2) ও ক্লোরিন মনোক্সাইড (CIO) উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ক্লোরিন মনোক্সাইড পুনরায় ওজোনের (O3) সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন অণু (O2) এবং সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু (Cl) উৎপন্ন করে। অতিবেগুনি রশ্মি CFCl3 + hv . (CFC-11) CFC12 মুক্ত মুলক + CI (সক্রিয়) CF2Cl2 + hv (CFC - 12) অতিবেগুনি রশ্মি CF₂CI+ CI মুক্ত মূলক (সক্রিয়)

O3 + CI . ClO + O2 CIÓ +03 17 202+ CI এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকায় একটি সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু লক্ষাধিক O3 অণুকে বিভাজিত করতে পারে। ফলে, ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হয়ে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়। 

(iii) ওজোন স্তর ক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হল 'হ্যালন'-এর ব্যবহার। হ্যালনসমূহ বলতে মূলত হ্যালোকার্বনকেই বোঝায়। এদের মধ্যে হ্যালোজেনরূপে ব্রোমিনের ব্যবহার সর্বাধিক। এগুলি মূলত অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। হ্যালনসমূহ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অতিবেগুনি (UV) রশ্মির প্রভাবে ভেঙে গিয়ে সক্রিয় ব্রোমিন (Br) পরমাণু উৎপন্ন করে। এই সক্রিয় ব্রোমিন পরমাণু ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ব্রোমিন মনোক্সাইড (BrO) এবং অক্সিজেন (O2) উৎপন্ন করে। উৎপন্ন BrO পুনরায় ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন (O2) অণু উৎপন্ন করে এবং সক্রিয় ব্রোমিন পরমাণু (Br) মুক্ত করে। এই সক্রিয় ব্রোমিন পরমাণু আবার বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে এবং এইভাবে প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়, ফলে, ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অতিবেগুনি রশ্মি CF3Br (g) + hv (হ্যালন 1301) Br + O 3 CF3 + Br মুক্ত মূলক (সক্রিয়) hv BrO + O2 * 202 + Br (সক্রিয়) BrO + O3

প্রশ্ন 9 .(i) দ্রুতগামী জেটপ্লেন থেকে নির্গত গ্যাসগুলি কীভাবে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়? অথবা, ওজোন স্তর বিনাশের কারণ হিসেবে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডের (NO, NO2) ভূমিকা আলোচনা করো। 2 ** [ME 18] Krishnagar govt girls' school '16 

(ii) প্রাকৃতিকভাবে কীভাবে ওজোন স্তর বিনষ্ট হয় ? 2 Shibpur Bhabani Balika Vidyalaya 16

উত্তর: (i) বিভিন্ন প্রকার গবেষণায় দেখা গেছে যে, বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ বৃদ্ধি পেলে ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষয়সাধন ঘটে। এই অক্সাইডসমূহের অন্যতম উৎস হল অতি দ্রুতগামী জেটপ্লেন। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় জেটপ্লেন থেকে নির্গত ধোঁয়াতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গ্যাস থাকে। এই গ্যাসগুলি O ु অণুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় O2 গ্যাস উৎপন্ন করে, এবং নিজে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডে (NO2) জারিত হয়। NO + O NO 2 + O2 আবার বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অংশে থাকা দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অতিবেগুনি রশ্মি UV-A (315 - 400nm ) -এর প্রভাবে ওজোন অণু বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন অণু ও অক্সিজেন পরমাণুর সৃষ্টি করে। অতিবেগুনি রশ্মি O3 315-400nm O₂+ [0] এই NO2 আবার UV-রশ্মি দ্বারা Oz-এর বিয়োজনের ফলে উৎপন্ন পারমাণবিক অক্সিজেনের [O]-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে পুনরায় NO-তে পরিণত হয়।

NO + (O) NO + O2 উৎপন্ন NO অনুঘটকরূপে বিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। ফলে, NO-এর পরিমাণ হ্রাস না পেলেও ওজোন স্তরের অণুগুলির ক্রমাগত বিয়োজনের ফলে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিশেষ রাসায়নিক সারের ব্যবহার, যানবাহন, নাইলন শিল্প থেকে উৎপন্ন ওজোন স্তর 

বিনাশের অন্যান্য কারণসমূহ : নাইট্রাস অক্সাইড ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে। শিল্পক্ষেত্রে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে নির্গত সালফেট কণা ওজোন অণুকে ভেঙে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটায়। এ ছাড়া মিথেন, মিথাইল ক্লোরাইড, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতির মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটছে। 

(ii) ব্রাজান স্তর বিনাশের প্রাকৃতিক কারণ : বজ্রপাত, অগ্ন্যুৎপাত, আলোর রাসায়নিক বিক্রিয়া, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটে। o

 অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব : ওজোন গ্যাস 220-340nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে বিয়োজিত হয় এবং অক্সিজেন পরমাণুতে পরিণত হয় - hv অতিবেগুনি রশ্মি (220-340 nm) 03 +0. 202 O2 + O + তাপ ও 

বজ্রপাতের প্রভাব : বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাতের সময় ঊর্ধ্বাকাশের উচ্চতা প্রায় 3000°C হয়। তখন বজ্রপাতের দরুন বিদ্যুৎ ক্ষরণের ফলে বাতাসের অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাস রাসায়নিক বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) উৎপন্ন করে। এই NO গ্যাস ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এই স্তরকে ধ্বংস করে। বিদ্যুৎক্ষরণ 3000°C → 2NO → NO 2 + O2 NO+03 02 NO2 + O 0+0 NO + O2 

 আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব : আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় উৎপন্ন ছাই-এ উচ্চ মাত্রায় ক্লোরিন ও ব্রোমিন থাকে। এই গ্যাসগুলি ট্রপোস্ফিয়ার থেকে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে প্রবেশ করে ওজোন স্তরের ক্ষতিসাধন করে। Cl₂ CI+ CI Cl + O 3 - CIO+Og: Br+0, → BrO + O2 CIO+0,20,+ Cl; BrO +0,- Br+20, এ ছাড়া সমুদ্র এবং মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার ডিনাইট্রিফিকেশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন নাইট্রাস অক্সাইড (N, O) ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উপরের দিকে উঠে আলোর প্রভাবে অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) উৎপন্ন করে, যা ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আলো -2NO NO + Os NO,+O NO2 + O2 NO + O2

 অনুরূপ প্রশ্ন : ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণগুলি উল্লেখ করো।

প্রশ্ন 10 .ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। ** 2

 উত্তর: ব্রাজান স্তর বিনাশের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকারক প্রভাবসমূহ : ওজোন স্তরের বিনাশের ফলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেমন – 

• জলবায়ুর ওপর প্রভাব : (i) ওজোন স্তর বিনাশের ফলে একদিকে যেমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উয়তা কমে যাচ্ছে তেমনই পৃথিবীতে অতিবেগুনি রশ্মি আগমনের ফলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, পৃথিবীর তাপীয় ভারসাম্য (Heat budget) বিঘ্নিত হচ্ছে। (ii) ওজোন স্তরের বিনাশ বিশ্ব উর্ধ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে, যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। (iii) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে নিম্ন বায়ুস্তরে ধোঁয়াশা ও অ্যাসিড বৃষ্টির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মানুষের ওপর প্রভাব : (i) ভূপৃষ্ঠে অধিক মাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মির আগমন মানুষের ত্বকে ক্যানসার সৃষ্টি করছে। (ii) মানুষের অনাবৃত ত্বক পুড়ে গিয়ে তামাটে হয়ে যাচ্ছে। (iii) অতিবেগুনি রশ্মি চোখের কর্নিয়া দ্বারা শোষিত হওয়ার ফলে অল্প বয়সেই চোখে ছানি পড়ছে। (iv) মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। (v) প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে ও বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। (vi) মানুষ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। (vii) মানুষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। (viii) ধোঁয়াশা সৃষ্টির কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে।  

প্রাণীদের ওপর প্রভাব : (i) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে নিম্নশ্রেণির প্রাণীর বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। (ii) জুপ্ল্যাংকটনের মৃত্যুহার বাড়ছে। (iii) উভচর প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। (iv) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে খাদ্য হিসেবে প্ল্যাংকটন না পাওয়ায় মৎস্যসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। (v) পশুপাখি তার প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। যেমন- চিলিতে এক বিশাল সংখ্যক ভেড়ার প্রজাতি অন্ধত্বের শিকার হয়েছে। 

উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : (i) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। (ii) উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। (iii) ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। (iv) সমুদ্রের উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনের মৃত্যু ঘটছে। (v) বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। (vi) গাছের ফুল, ফল, পাতা শুকিয়ে গিয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ভবিষ্যতে খাদ্যসংকট দেখা দেবে।

ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব : (i) বৃষ্টিপাত চক্রে বা জলচক্রে বিঘ্ন ঘটছে। (ii) বনভূমি ধ্বংস ও বনজ বাস্তুতন্ত্রে বিঘ্ন ঘটছে। (iii) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে প্ল্যাংকটন যত ধ্বংস হবে সামুদ্রিক ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তত বিঘ্নিত হবে। (iv) উদ্ভিদের বৃদ্ধি-বিকাশ যত ব্যাহত হবে, স্থলজ বাস্তুতন্ত্রও ধ্বংসের পথে ততই অগ্রসর হবে। (v) বহু উদ্ভিদ ও প্রাণীর পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে খাদ্যজাল খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। ফলস্বরূপ, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য ভীষণভাবে বিপন্ন হবে।

 ৩. সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব : (i) সূর্য থেকে আগতUV রশ্মির প্রভাবে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ধীরে ধীরে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাংকটনের বিনাশ ঘটছে। (ii) যে-সমস্ত সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী ফাইটোপ্ল্যাংকটন খেয়ে জীবনধারণ করত তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। (iii) সমুদ্রের জলে UV-B রশ্মি প্রায় 25 মিটার গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। ফলে, এই রশ্মির প্রভাবে জলজ জীবেদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। (iv) ফাইটোপ্ল্যাংকটন ও জুপ্ল্যাংকটনের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটছে। (v) সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর প্রভাব পড়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। 

কৃষিক্ষেত্রের ওপর প্রভাব : (i) ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে সূর্য থেকে বিকিরিত ক্ষতিকর UV রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ফলে, ফসল উৎপাদনের হার কমে যাচ্ছে। (ii) গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। (ii) বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। (iv) এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠের উয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির আর্দ্রতা হ্রাস পাচ্ছে যা ফসল উৎপাদনের পক্ষে অনুপযোগী। 

অনুরূপ প্রশ্ন : সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও কৃষিক্ষেত্রের ওপর ওজোন স্তর ধ্বংসের কীরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হয় ? 

* পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন

 Advanced Studies 

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরকে সুরক্ষিত না করা গেলে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব পৃথিবীপৃষ্ঠের জীবকুলকে অচিরেই ধ্বংস করবে। এজন্য পৃথিবীব্যাপী আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে 16 সেপ্টেম্বর 1987 সালে কানাডার মন্ট্রিল নামক স্থানে পৃথিবীর 35টি উন্নত দেশ একত্রিত হয়ে ওজোন বিনাশকারী বস্তুর ওপর 'মন্ট্রিল দলিল' বা ‘মন্ট্রিল প্রোটোকল' (Montreal, Protocol) নামে একটি নিয়মাবলি তৈরি করে, যাতে 2050 - 2070 সালের মধ্যে ওজোন স্তরের পুরুত্বকে 1980 সালের ওজোন স্তরের পুরুত্বের মতো করে দেওয়ার কথা বলা হয় ৷ 1980 সালে লন্ডনে ও 1992 সালে কোপেনহেগেনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই স্তরের ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য নিম্নোক্ত প্রচেষ্টাগুলির প্রয়োগ করা চলছে—

o যানবাহনের পরিমাণ হ্রাস করা : ওজোন ক্ষয়কারী যৌগগুলির নির্গমন রোধ করার জন্য এমন যানবাহনকে পথে নামাতে হবে যারা ইলেকট্রিকে চলবে, কম দূরত্ব অতিক্রমের জন্য সাইকেলকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ও

 পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহার করা : দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করতে হবে। ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে হবে। ও 

কীটনাশকের ব্যবহার কম করা : জৈব প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করতে হবে ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। ও 

ওজোন ক্ষয়কারী যৌগগুলির পুনর্বিন্যাস : অব্যবহৃত ফ্রিজ, এয়ারকুলার থেকে নির্গত CFC যৌগ পুনরুদ্ধার করে সেগুলিকে নতুন করে পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। 

• বিকল্প যৌগের ব্যবহার বৃদ্ধি করা : ওজোন স্তর ক্ষয়কারী রাসায়নিক যৌগগুলির বিকল্প যৌগ আবিষ্কার করার চেষ্টা চলছে, যা ওজোন স্তরকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।এ ছাড়াও, রকেট উৎক্ষেপণ হলে তার থেকে নির্গত যৌগগুলি ও নাইট্রাস অক্সাইড ওজোনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এগুলির উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। তবেই জীবমণ্ডল বসবাসের জন্য সুরক্ষিত হবে।

প্রশ্ন  11. (i) গ্রিনহাউস (Green House) কী ? এর কার্যনীতি ব্যাখ্যা করো। 2 (ii) গ্রিনহাউস গ্যাস কাকে বলে? কয়েকটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো। Taki House Govt Spons Girls' High School '16 (iii) গ্রিনহাউস এফেক্ট (Green house effect) বলতে 2 কী বোঝায় ? ** 2 Ramakrishna Mission Vidyapith, Purulia '16 

উত্তর:  (i) গ্রিনহাউস (Green House) : গ্রিনহাউস হল কাচনির্মিত একটি বিশেষ ঘর বা কক্ষ। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের গাছপালা শীতপ্রধান দেশে সংরক্ষণের জন্য এই কাচনির্মিত ঘর ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পরিবেশের উষ্ণতা হিমাঙ্কের কাছাকাছি হলে এই কাচের ঘরে সবুজ শাকসবজি ও উদ্ভিদ প্রতিপালন করা হয়।

 কার্যনীতি : সূর্য থেকে আসা দৃশ্যমান আলোকরশ্মির অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মি (Infrared) সাপেক্ষে কাচ তাপস্বচ্ছ (Diatherminous) বস্তু হিসেবে আচরণ করায় সেগুলি সহজেই কাচের দেয়াল ও ছাদ ভেদ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ঘরের মধ্যেকার মাটি ও উদ্ভিদকে উত্তপ্ত করে। ঘরের ভিতরে থাকা মাটি ও উদ্ভিদ যে তাপীয় বিকিরণ নিঃসরণ করে সেগুলি বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন হয়। এই বিকিরণ সাপেক্ষে কাচ তাপ অস্বচ্ছ ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌর বিকিরণ বৃহত্ত তাপীয় বিকিরণ গ্রিনহাউস (Adiatherminous) হওয়ায় সেগুলি কাচ ভেদ করে বাইরে আসতে পারে না। কাচ এই রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে উত্তপ্ত হয় এবং বাকিটা ঘরের ভিতরকার মাটিতে প্রতিফলিত করে। ফলে, কাচের ঘরের ভিতরের উষ্ণতা বাইরের তুলনায় বেশি থাকে এবং তার একটি নির্দিষ্ট মান বজায় থাকে। এই কারণেই ঘরের মধ্যে গাছপালা, শাকসবজি অনুকূল পরিবেশে ভালোভাবেই প্রতিপালিত হয়।

অনুরূপ প্রশ্ন : গ্রিনহাউসের ভিতরের উষ্ণতা বাইরের তুলনায় বৃহৎ তরঙ্গের তাপীয় বিকিরণ গ্রিনহাউস বেশি থাকে কীভাবে ?

 (ii) গ্রিনহাউস গ্যাস : ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত যেসব গ্যাসীয় উপাদান সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে দিলেও উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মিকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয় ও কিছু অংশ নিজেরা শোষণ করে এবং অবশিষ্টাংশ পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে পৃথিবী ও তার পরিমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

(গ্রিনহাউস গ্যাসের উদাহরণ গ্যাস :

অজৈব গ্রিনহাউস করে : কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), ওজোন (O3), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), জলীয় বাষ্প (H2O)।  

জৈব গ্রিনহাউস গ্যাস : ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন (CFC), মিথেন (CHg) ইত্যাদি। ) 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখ্য যে, বায়ুমণ্ডলের দুই মুখ্য উপাদান নাইট্রোজেন (N2) ও অক্সিজেন (O2) কোনোভাবেই "গ্রিনহাউস এফেক্ট"-এর জন্য দায়ী নয়। O2 N2 গ্যাসের অণু-পরমাণুগুলির কম্পনজনিত গতির কম্পাঙ্ক (Vibrational frequency) অবলোহিত রশ্মি শোষণের উপযুক্ত নয়। তাই এদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলা যায় না।

 (iii) গ্রিনহাউস প্রভাব (Green house effect) : বর্তমানে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ (N2O, NO, NO2), ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য এই গ্যাসগুলি মিলিতভাবে নিম্ন বায়ুমণ্ডলে চাঁদোয়ার মতো একটি গ্যাসীয় স্তর সৃষ্টি করে যা সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে পৃথিবীতে আপতিত হতে দেয়, কিন্তু উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মিকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। ওই সমস্ত গ্যাসীয় উপাদানগুলি বিকিরিত আলোকরশ্মির কিছু অংশ নিজেরা শোষণ করে উত্তপ্ত হয় এবং বাকি অংশ পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত করে। ফলে, সমগ্র পৃথিবী ও তার পরিমণ্ডল “গ্রিনহাউসের তুলনীয় হয়ে পড়ে এবং বায়ুমণ্ডলের উয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ফলে, পৃথিবীকে ঘিরে তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল একটি উষ্ণ বাতাবরণ তৈরি করে। এই ঘটনাকেই ‘গ্রিনহাউস প্রভাব' বা ‘সবুজ ঘর ক্রিয়া' বা ‘সবুজ ঘর প্রভাব' বলে। এক্ষেত্রে 'Green house' শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। | 

অনুরূপ প্রশ্ন : গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি কীভাবে বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি করে? 

12 (1) গ্রিনহাউস প্রভাবের উপযোগিতা উল্লেখ করো। * 2 Vidyasagar Vidyapith '16 (ii) গ্রিনহাউস এফেক্টের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি লেখো। 

উত্তর :  (i) গ্রিনহাউস প্রভাবের উপযোগিতা : ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে উত্তপ্ত রেখে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রিনহাউস প্রভাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে একটি আবরণ সৃষ্টি করে যা সূর্য থেকে আগত অবলোহিত রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত করে মহাশূন্যে ফিরে যেতে দেয় না। ফলে, ভূপৃষ্ঠ এবং তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডল এমন একটি উয়তা সীমার মধ্যে (গড় উষ্ণতা 15°C) উত্তপ্ত থাকে যা পৃথিবীতে জীবজগতের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। বায়ুমণ্ডলে উক্ত গ্যাসীয় উপাদানগুলি অর্থাৎ, গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি না থাকলে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত অবলোহিত রশ্মি মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা – 30°C-এ গিয়ে দাঁড়াত। বলাবাহুল্য যে, এই শীতল পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া ও বিশেষ কিছু জীবাণু ছাড়া কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর জীবনধারণ সম্ভব হত না। ফলে, পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্বই লোপ পেত।


(ii) গ্রিনহাউস এফেক্টের ক্ষতিকর প্রভাব : গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর গড় উয়তা কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, মেরু অঞ্চলের (সুমেরু ও কুমেরু) বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এই কারণে উপকূলবর্তী দেশগুলি প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ও উপকূলবর্তী দেশগুলি প্লাবিত হলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। কারণ সমুদ্রের লবণাক্ত জল কৃষিজমিতে প্রবেশ করে জমির উর্বরতা নষ্ট করবে। ফলে, বাস্তুতন্ত্রের সাম্য বিঘ্নিত হবে। ও গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে বনভূমিতে দাবানল দেখা দিতে পারে। এর ফলে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে। ও খরা, ঝড় বা সাইক্লোন ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ফলে, সমগ্র জীবজগত ভয়ংকর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। 

প্রশ্ন 13 | (i) বিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী ? * 2 Bethune Collegiate School '16 

(ii) বিশ্ব উয়ায়নে নিম্নোক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ভূমিকার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও CO 2 CH4, CFC, N2O, NO, NO2, জলীয় বাষ্প, অন্যান্য গ্যাস। 

(iii) ভবিষ্যৎ পরিবেশের ওপর বিশ্ব উন্নায়নের সম্ভাব্য প্রভাবগুলি আলোচনা করো। *** 2 Bankura Christian Collegiate School '16 

(iv) বিশ্ব উন্নায়ন কমানোর সম্ভাব্য উপায়গুলি লেখো। Hare School 16 অথবা, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে নিয়ন্ত্রক বা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে এমন সমাধান বা উপায়গুলি কী কী হতে পারে ? – সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। *

উত্তর : (i) বিশ্ব উষায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্নিং (Global Warming) : পরিবেশ দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রিনহাউস এফেক্টের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে পৃথিবীর গড় উয়তা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে। সারা বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির এই সার্বিক প্রবণতাকেই বিশ্ব উন্নায়ন বা Global Warming বলে। কিছু শক্তি মহাকাশে বিকিরিত হয় ভূপৃষ্ঠ সূর্যরশ্মি দ্বারা উত্তপ্ত হয় এবং কিছু তাপ মহাকাশে বিকিরিত করে সৌর শক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউস গ্যাস কিছু তাপ শোষণ করে রাখে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত রশ্মি খুব সহজে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠ দ্বারা পার্থিব বিকিরণরূপে প্রতিফলিত দীর্ঘ তরঙ্গের এই সৌরকিরণ পুনরায় মহাশূন্যে ফিরে যেতে না পেরে গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষিত ও আবদ্ধ হয়ে পুনরায় বিকিরণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে ও নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, পৃথিবীর তাপীয় সাম্য বিঘ্নিত হয় এবং সমগ্র পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হতে থাকে, যাকে বিশ্ব উয়ায়ন বলে। অর্থাৎ, বিশ্ব উন্নায়ন হল গ্রিনহাউস প্রভাবের ফল। 4.0- 3.5- 3.0- 2.5- 2.0- 21.5- 1.0- 0.5- 0 1850 উন্নতা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার উষ্ণতা বৃদ্ধির গড় হার ঊষ্ণতা বৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার 1950 2000 2050 1900 বছর (সাল) পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হার 

(ii) বিশ্ব উন্নায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব : মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির বৃদ্ধির কারণই পরোক্ষভাবে বিশ্ব উন্নায়নের কারণ। 2014 সালে প্রকাশিত সমীক্ষায় IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change)-এর বক্তব্য অনুসারে বিশ্ব উন্নায়নের জন্য দায়ী হল বায়ুমণ্ডলের ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ এবং মানুষের কার্যকলাপ । 

কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) বৃদ্ধি ও বিশ্ব উন্নায়ন : বিশ্ব উয়ায়নের জন্য দায়ী প্রধান গ্যাস হল-কার্বন ডাইঅক্সাইড। এই CO2 ভূপৃষ্ঠে বিকিরিত তাপের বেশিরভাগটাই মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে CO2-এর ভূমিকা 50%। বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণ মাত্র 0.033%। কিন্তু নানা কারণে এর পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণগুলি হল_

জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, খনিজ তেল) দহন, (ii) অরণ্য ধ্বংস ও অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন, (iii) জনবিস্ফোরণ, (iv) অগ্ন্যুৎপাত ও দাবানল। CO2-এর বৃদ্ধি বছর CO2-এর পরিমাণ 1800 সালের পূর্বে 290 ppm 1900 সাল 300 ppm 334 ppm 550-600 ppm (সম্ভাব্য বৃদ্ধি ) 2000 সাল 2050 সাল 2100 সাল 21 750-800 ppm (সম্ভাব্য বৃদ্ধি) উৎস : জাতিসংঘ বার্তা, 1990 সুতরাং, এটা অনুমান করা যায় যে, পৃথিবীতে CO2 -এর পরিমাণ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বিশ্ব উন্নায়নের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা খুবই কঠিন। 

( ২) মিথেন গ্যাস সৃষ্টি ও বিশ্ব উন্নায়ন : পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী অপর একটি গ্যাস হল মিথেন (CH4)। বায়ুতে মিথেনের পরিমাণ CO2 অপেক্ষা কম হওয়ায় গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর ভূমিকা CO2 অপেক্ষা কম। মিথেন বৃদ্ধির কারণগুলি হল (i) গৃহপালিত পশু ও কীটের অস্ত্রের কোহল সন্ধান, (ii) পচা জৈব আবর্জনা বৃদ্ধি, (iii) ধানখেত, গ্যাস ও কয়লাখনি অঞ্চলে দহন, (iv) বায়োমাস প্রজ্জ্বলন, (v) আবদ্ধ বর্জ্যবস্তু সমৃদ্ধ জলাভূমি প্রভৃতি। প্রতি বছর মিথেনের বৃদ্ধির হার প্রায় 1.2%। মিথেন গ্যাস CO2-এর তুলনায় দ্বিগুণ বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে। বর্তমানে বায়ুতে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ 1.7 ppm। অনুমান করা হচ্ছে 2050 সালে এর পরিমাণ এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

3• ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন বৃদ্ধি ও বিশ্ব উষায়ন : বিশ্ব উন্নায়নে ক্লোরোফ্লুওরোকার্বনের (CFC) ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এক অণু CFC-এর উয়করণ ক্ষমতা 10,000 CO2 অণুর মোট উয়করণ ক্ষমতার সমান। এই গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান উৎসগুলি হল (i) রেফ্রিজারেটার, এয়ার কন্ডিশনার তৈরি, (ii) ফোম ও প্লাস্টিক তৈরি, (iii) স্প্রে-ক্যান, বিমানের প্রপেলার প্রস্তুতি, (iv) চিকিৎসায় ব্যবহৃত জীবাণুনাশক প্রভৃতি। তাপ শোষণ ছাড়াও এই গ্যাস ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছে দেয় এবং পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। 

4. নাইট্রাস অক্সাইড বৃদ্ধি ও বিশ্ব উন্নায়ন : বায়ুমণ্ডলে নাইট্রাস অক্সাইডের (NO) বৃদ্ধি বিশ্ব উন্নায়নের আর একটি প্রধান কারণ। এই গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী (i) কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, (ii) জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, (iii) সার শিল্প, (iv) ফসলের অবশেষ পচন ও কাঠ জ্বালানি, (v) মাটিতে অণুজীবক্রিয়া প্রভৃতি। 

5. অন্যান্য গ্যাস বৃদ্ধি ও বিশ্ব উন্নায়ন : এ ছাড়া নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2), কার্বন মনোঅক্সাইড (CO), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2), ইথেন (C2Hg) প্রভৃতি গ্যাস ও জলীয় বাষ্প পৃথিবীর বিকিরিত তাপ ধরে রেখে পৃথিবীর উন্নতা বৃদ্ধি করে চলেছে।

(III) ভবিষ্যৎ পরিবেশের ওপর বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাব : পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও প্রধান ফলাফল হল – ভূমণ্ডলব্যাপী উয়তা বৃদ্ধি বা বিশ্ব উয়ায়ন। এই উয়তা পরিবর্তনের জন্য পরিবেশের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব শৃঙ্খল আকারে দেখা যায়। যেমন-

1 ● গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন : শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ব্যাপক হারে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উয়তা প্রায় 1.5°C বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রিনহাউস গ্যাস বিশেষত CO-এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেলে আগামী শতকে এই বৃদ্ধি 3°C ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে শীতের চেয়ে গ্রীষ্মের প্রকোপ বাড়াবে। ঋতুগুলির আগমন অনিয়মিত হয়ে পড়বে, ঘূর্ণি ঝাড়, বন্ধু ঝড়, খরার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটতে দেখা যাবে। 

2. সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক পরিবর্তন : বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কুমেরু মহাদেশের গভীর পুরু বরফের স্তর, অন্যান্য মহাদেশীয় ও পার্বত্য হিমবাহ দ্রুত গলতে থাকবে এবং এই বরফগলা জল সমুদ্রে যুক্ত হয়ে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা আরো বৃদ্ধি করবে। এর ফলে উপকূলবর্তী এলাকার নীচু অংশ জলমগ্ন হওয়ার পাশাপাশি মাটির উর্বরতা হ্রাস, কৃষিজমি হ্রাসের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, ভূমিরূপের পরিবর্তন, সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন ইত্যাদি বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হবে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা যে, সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে 2030 সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় 17 শতাংশ এবং 2050 সালের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় 15 শতাংশ উপকূলবর্তী নিম্নভূমি জলমগ্ন হবে।। 

 3 জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হবে। অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাবে। গবেষক ডেনিস মাফি পর্যবেক্ষণজনিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা 3°C বৃদ্ধি পেলে 40% স্তন্যপায়ী, 23% প্রজাপতি ও কয়েক শতাংশ পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হবে। 

4• জলজ বাস্তুতন্ত্রে বিঘ্ন : সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে তাতে বায়ুমণ্ডলীয় CO2-এর দ্রাব্যতা কমে যাবে। দ্রবীভূত CO2-এর অভাবে উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনগুলি মারা যাবে, ফলে, জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়বে, অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবলুপ্তি ঘটবে। 

5• দাবানল :উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গাছে গাছে ঘষা লেগে দাবানল সৃষ্টি ও তার মাধ্যমে বিস্তীর্ণ বনভূমি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। 

6. ভৌমজলের ঘাটতি : বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাবে মৃত্তিকায় জলের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এর ফলে ভৌমজলের ভাণ্ডারে টান পড়বে এবং সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

7• স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব:  বেশি উয়তায় জীবাণু সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াঘটিত বিভিন্ন রোগের (ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, হাঁপানি, অ্যালার্জি) প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।

এককথায় বলা যায়, এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ, মানুষ এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। 

(iv) বিশ্ব উন্নায়ন কমানোর উপায়গুলি হল : 

1.• জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস : জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস) যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে CO2-এর পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব। জ্বালানিহীন যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সেই লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ (যেমন- অল্প দূরত্বে সাইকেলের ব্যবহার, সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা ফুটপাথ তৈরি), ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে ‘কারপুলিং’ ব্যবস্থা এক্ষেত্রে আবশ্যক। ইউরোপীয় দেশগুলিতে ও এশিয়ার চীনে এ বিষয়ে যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যায়। 

 2. অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি : অপ্রচলিত শক্তি যেমন – সৌরশক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, বায়ুশক্তি, ভূতাপীয় শক্তি ইত্যাদি অদূষক হওয়ায় তাদের ব্যবহার বৃদ্ধি করে বিশ্ব উন্নায়নের মোকাবিলা করা সম্ভব। 

3. ফ্রেয়ন উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা ফ্রেয়ন (CFC-11 ও CFC-12) ও হ্যালন গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। ও 

4. বনসৃজনে উৎসাহদান : অরণ্য ধ্বংস হ্রাস, বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজনের দিকে নজর দিতে হবে যাতে উদ্ভিদ বাতাসের অতিরিক্ত CO2 শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। ও

 5.প্রযুক্তির উন্নতি : শিল্পক্ষেত্র ও যানবাহনে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়ানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা আবশ্যক যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির অপচয় ও ব্যবহার কমিয়ে বাতাসে CO-এর পরিমাণ কমানো যায়।

 ৬ .আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ : মিথেন উৎপাদনকারী আবর্জনার সঠিক প্রক্রিয়াকরণ ঘটিয়ে বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের সঞ্চয় কমাতে হবে। 

7 .জনসচেতনতা বৃদ্ধি : বিশ্ব উন্নায়নের কুপ্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এই কর্মসূচিতে ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত করলে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস সাফল্যলাভ করার সম্ভাবনা বাড়ে। 

8• নাইট্রোজেনঘটিত সার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ : বায়ুতে নাইট্রাস অক্সাইড ও অন্যান্য নাইট্রোজেনঘটিত অক্সাইডের নির্গমন বন্ধ করতে কৃষিজমিতে নাইট্রোজেনঘটিত সারের পরিবর্তে জৈবসারের ব্যবহার বাড়ানো দরকার। 

9 গবেষণায় উৎসাহ দান : গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর উপায় উদ্ভাবনের জন্য গবেষণার কাজে প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। এ জাতীয় গবেষণাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, গবেষকদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি একান্তই প্রয়োজন।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন 1. বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কীরকম হবে?

  উত্তর: সূর্য থেকে আসা আপতিত আলোকরশ্মির বেশিরভাগ অংশ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা প্রতিফলিত বা বিচ্ছুরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। খুব সামান্য অংশ (আপতিত সূর্যরশ্মির 30%) বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোয় এবং পৃথিবীপৃষ্ঠও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। আবার ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপশক্তির সামান্য অংশ গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষিত হয় এবং বেশিরভাগ অংশ বায়ুমণ্ডল দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত থাকে এবং পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার মান (প্রায় 15°C) বজায় থাকে, যা জীবজগতের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। পৃথিবীর চারিদিকে এই বায়ুমণ্ডল না থাকলে বিকিরিত তাপশক্তির সম্পূর্ণ অংশই মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেত, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিনেরবেলা খুব বেশি এবং রাত্রিতে খুব কম হত। 

প্রশ্ন 2 .ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 16 কিমি পর্যন্ত বায়ুস্তরটিকে 'ক্ষুব্ধমণ্ডল' বলা হয় কেন ? 

উত্তর:  ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 16 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরটি ‘ট্রপোস্ফিয়ার' নামে পরিচিত। এই সর্বনিম্ন স্তরে বায়ুমণ্ডলের প্রায় 75% বায়ু উপস্থিত থাকে এবং বায়ুস্তরের গড় ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর যাবতীয় উপাদানগুলি (যেমন ধূলিকণা, মেঘ, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি) এই স্তরে অবস্থান করে। এখানে • প্রতি 1 কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা 6.4°C হারে কমে এবং বায়ুস্তরের গড় ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হওয়ায় বায়ুচাপের পার্থক্য হয়, বায়ুপ্রবাহ ও ঝড় সৃষ্টি হয়, ও ঘনীভবনের জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া (মেঘ, বজ্রপাত, বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, শিশির, তুষারপাত প্রভৃতি) এই ট্রপোস্ফিয়ারেই কার্যকর হয়। বায়ুমণ্ডলীয় এই উপাদানগুলির প্রভাবে ট্রপোস্ফিয়ার সবসময় অশান্ত হয়ে থাকে। দৈনিক আবহাওয়ার সবরকম গোলযোগ ও বিপর্যয় এই স্তরেই সংঘটিত হয় বলে, ট্রপোস্ফিয়ার ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল' নামে পরিচিত। 

প্রশ্ন 3.  ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্রমহ্রাসমান উয়তা স্তর' বলা হয় কেন? অথবা, ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে কীভাবে উচ্চতার সঙ্গে উয়তার পরিবর্তন ঘটে?

উত্তর: ট্রপোস্ফিয়ার স্তরটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচে অবস্থিত যা ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে থাকে। সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আসা তাপ বায়ুমাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে সরাসরি ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ট্রপোস্ফিয়ার পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ঘন স্তর এবং এর মধ্যে তাপ শোষণকারী কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা বেশি থাকায় নীচের অংশ বেশি পরিমাণে তাপ ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর উন্নতা সবচেয়ে বেশি। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুস্তর ক্রমশ হালকা হতে থাকে এবং বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড, ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকায় বায়ুর তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কমে যায়। তাই এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বায়ুর উয়তা প্রায় 6.5°C হারে কমতে থাকে। এই স্তরের সর্বনিম্ন উদ্বৃতা – 56°C। এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমায় প্রায় ও কিলোমিটার অংশে উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না। তাই ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্রমহ্রাসমান উয়তা স্তর বলে। 

প্রশ্ন 4. ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর গতিবেগ বাড়ে কেন ? 

উত্তর: ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ট্রপোস্ফিয়ারের নিম্নস্তরে পাহাড়-পর্বত,বনভূমি, অট্টালিকা প্রভৃতি অবস্থান করে বলে এই অংশে বায়ু ঘর্ষণজনিত কারণে বাধা পায়। কিন্তু, ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সকল বাধার পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে, যেখান দিয়ে বায়ু বিনা বাধায় প্রবাহিত হতে পারে। উচ্চতা যত বাড়ে বায়ুর গতিবেগও তত বাড়তে থাকে। 

প্রশ্ন  5. বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উয়তা ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা অপেক্ষা কম হয় কেন ? 

উত্তর : বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উন্নতা ভূপৃষ্ঠের উয়তা অপেক্ষা কম, কারণ o ভূপৃষ্ঠের উপরের বায়ুস্তর সবচেয়ে ভারী এবং স্ট্যাটোস্ফিয়ারের বায়ুস্তরের ঘনত্ব ভূপৃষ্ঠের বায়ুর ঘনত্বের চেয়ে অনেক কম। সূর্য থেকে আগত যে সামান্য পরিমাণ তাপ এই স্তর শোষণ করে তা সহজেই বিকিরিত হয়ে যায়। ও স্ট্যাটোস্ফিয়ারে জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা না থাকায় এই স্তরের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কম। ও সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ পৃথিবীর বুকে পড়ে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। তাই মাঝের স্তরগুলি সূর্যকিরণ দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয় না। 

প্রশ্ন 6. স্ট্যাটোস্ফিয়ার ‘শাস্ত্রমণ্ডল' নামে পরিচিত কেন ? 

 উত্তর : ভূপৃষ্ঠ থেকে ট্রপোস্ফিয়ারের উপর 18 - 50 কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আবহাওয়া ও জলবায়ুর গোলযোগ সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান না থাকায় আবহাওয়া পরিমণ্ডল শান্ত অবস্থায় থাকে, যা শাস্ত্রমণ্ডল নামে পরিচিত। স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। সর্বোচ্চ অংশে উয়তা 10° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয়। এই স্তরে অল্প পরিমাণে ধুলো থাকলেও জলীয় বাষ্প না থাকায় মেঘ সৃষ্টি হতে পারে না, যার ফলে এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি কিছুই সংঘটিত হয় না। ঘনীভবন প্রক্রিয়ার অভাবে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে সবসময় শান্তভাব বজায় থাকে। তাই স্ট্যাটোস্ফিয়ারকে শাস্ত্রমণ্ডল'ও বলা হয়। এই স্তরের মধ্য দিয়ে তাই জেট বিমানগুলি বিনা বাধায় উড়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন 7 .স্ট্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উয়তা বৃদ্ধি পায় কেন ? 

 উত্তর:  স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন গ্যাসের অণু (O2) সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি (UV ray) শোষণ করে বিয়োজিত হয় এবং পারমাণবিক অক্সিজেন উৎপন্ন করে। অতিবেগুনি রশ্মি hv → 0+0 এই পারমাণবিক অক্সিজেন আণবিক অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অণু (Og) সৃষ্টি করে। এই রাসায়নিক বিক্রিয়াটি তাপমোচী হওয়ায় প্রচুর তাপশক্তির উদ্ভব হয়। ফলে দেখা যায় যে, ট্রপোস্ফিয়ারের পর থেকে স্ট্যাটোস্ফিয়ার অংশে (18-50 কিমি) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়। স্ট্যাটোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ সীমায় (50km উচ্চতায়) বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা হয় প্রায় 0°C বা 32°F-এর কাছাকাছি।

প্রশ্ন ৪. ওজোন স্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা" বা "পৃথিবীর ছাদ' বলা হয় কেন? অথবা, ওজোন স্তরকে 'ওজোন ছ বলার তাৎপর্য কী? * 

উত্তর :  বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উপর 15 কিমি থেকে 35 কিমি পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের প্রায় 90% ওজোন গ্যাস পৃথিবীকে বেষ্টন করে ছাতার মতো অবস্থান করে। ওজোন স্তর সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির বেশিরভাগ অংশ শোষণ করে সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতকে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং ওজোন গ্যাসের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। ওজোন স্তর না থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আপতিত হত। ফলে, পৃথিবীর গড় উচ্চতা এত বৃদ্ধি পেত যে জীবকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হত। আবার এর প্রভাবে মানুষের ত্বকে ক্যানসার, চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার উদ্ভিদজগতের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়, ফলে, বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। অতিবেগুনি রশ্মি শোষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে ওজোন গ্যাস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর ফলে পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং বিশ্ব উয়ায়ন প্রকটরূপ লাভ করে না। এ কারণেই ওজোন স্তরকে “প্রাকৃতিক সৌরপর্দা' বা 'পৃথিবীর ছাদ' বলা হয়। 

অনুরূপ প্রশ্ন : বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের গুরুত্ব ? Hindu School 16 19

প্রশ্ন 9 .স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোনকে 'পৃথিবী রক্ষাকারী বলে কিন্তু ট্রপোস্ফিয়ারের ওজোনকে 'দুষ্টু ওজোন' বলে কেন ? * 

 উত্তর : ভূপৃষ্ঠের উপর 16 km থেকে 40 km উচ্চতা পর্যন্ত স্ট্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন গ্যাসের যে আস্তরণ আছে, তা ওজোনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। স্ট্যাটোস্ফিয়ারের এই ওজোন স্তর সৌরপর্দা হিসেবে কাজ করে এবং সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির বেশিরভাগ অংশ শোষণ করে পৃথিবীকে রক্ষা করে। এই ওজোন স্তর না থাকলে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছাত এবং পৃথিবীর গড় উদ্বৃতা এত বেড়ে যেত যে, জীবকূলের অস্তিত্ব বিপন্ন হত। সুতরাং, স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন। গ্যাস উপকারী এবং ‘পৃথিবী রক্ষাকারী'। 

অপরপক্ষে, ট্রপোস্ফিয়ারের ওজোন গ্যাসের প্রভাব নেতিবাচক। এটি গ্রিনহাউস গ্যাসরূপে কাজ করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে। পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিতে এই গ্যাসের ভূমিকা প্রায় 7-8%। ফলস্বরূপ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, অতিবৃষ্টি ও খরা, ফসল উৎপাদন ব্যাহত, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে যা জীবজগতের অস্তিত্বের পক্ষে অনুকূল নয়। ফলে, সমগ্র পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা জীবজগতের বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে। তাই ট্রপোস্ফিয়ারের ওজোন অপকারী এবং একে সুষ্টু ওজোন' বলে।

প্রশ্ন [10] আয়নোস্ফিয়ারের নিম্নস্তরে বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকার কারণ কী? 

উত্তর : আয়নমণ্ডলের নীচের অংশে আণবিক নাইট্রোজেন ওউপরের অংশে পারমাণবিক অক্সিজেন থাকে। এ ছাড়া হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং ওজোন গ্যাস অণু, পরমাণু এবং আয়ন হিসেবে থাকে। সূর্য থেকে আগত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি, অতিবেগুনি রশ্মি (বিশেষ করে X-রশ্মি) আয়নোস্ফিয়ারের নিম্নস্তরের বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় মাধ্যম দ্বারা শোষিত হয় ও বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় পরমাণুগুলিকে ভেঙে ইলেকট্রন মুক্ত করে ও ধনাত্মক আহিতকণা (যেমন O+, NO+ ইত্যাদি) সৃষ্টি করে এই স্তরকে আয়নিত করে। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম মহাজাগতিক রশ্মি দ্বারা আয়নে ভেঙে গিয়ে H+ ও He2+-এ পরিণত হয়। 

প্রশ্ন [11] .আয়নোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতাভেদে উয়তার তারতম্য হয় 2 কেন ?

 উত্তর: ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ৪০ কিলোমিটার থেকে 480 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত আয়নোস্ফিয়ার স্তরের গ্যাসীয় উপাদানগুলি সূর্য ও মহাবিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ও মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic ray) শোষণ করে। ফলে, উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরের উন্নতা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়। বায়ুস্তরের নাম ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা উষ্ণতা 80 km 120 km - 93°C 500°C আয়নোস্ফিয়ার 200km 700°C 350 km 480 km 900°C 1200°C  

প্রশ্ন 12 .আয়নোস্ফিয়ার স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হওয়ার কারণ কী ? 

 উত্তর: থার্মোস্ফিয়ারের নীচে অবস্থিত আয়নোস্ফিয়ারে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। তাই আমরা রেডিয়ো শুনতে পাই। আয়নোস্ফিয়ারে তড়িদাহিত অণুর অনবরত চৌম্বক বিক্ষেপ ঘটছে। ফলে, বেতার তরঙ্গ এই স্তর ভেদ করতে পারে না এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রেরিত তরঙ্গ প্রতিতরঙ্গ রূপে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যে বেতার তরঙ্গ প্রেরিত হয় তা আয়নোস্ফিয়ারে তড়িদাহিত অণুর সঙ্গে ধাক্কা খায়। তাই প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। এ ছাড়াও আয়নোস্ফিয়ারের নীচের অংশে (90-120 কিমি) রঞ্জনরশ্মি দ্বারা আণবিক নাইট্রোজেন আয়নিত হয়ে সৃষ্ট কেনলি হেভিসাইট স্তরটি দিনের বেলা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন করে। অপরদিকে উপরের অংশে (120-140 কিমি) অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা পারমাণবিক অক্সিজেন আয়নিত হয়ে সৃষ্ট অ্যাপলটন স্তরটি সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে রাতের বেলা বেতার তরঙ্গ প্রতিফলন করে। 

প্রশ্ন 13. উল্কাপিণ্ড ম্যাগনেটোস্ফিয়ার, এক্সোস্ফিয়ার আয়নোস্ফিয়ার পেরিয়ে শুধুমাত্র মেসোস্ফিয়ারে এসেই নিভে যায় কেন?

 উত্তর:  ম্যাগনেটোস্ফিয়ার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে উল্কাপিণ্ডগুলি প্রচণ্ড গতিতে ঘর্ষণজনিত বলের প্রভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়েই প্রবেশ করে।তারপর এক্সোস্ফিয়ারের প্রায় 1650°C তাপমাত্রা অঞ্চলে উল্কাপিণ্ডের প্রবেশের পর সেটি আরো তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে। কিন্তু, যখনই ওই উল্কাপিণ্ড পরবর্তী স্তরে অর্থাৎ, মেসোস্ফিয়ার স্তরে এসে পৌঁছোয়, তখন সেগুলি সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায়। অর্থাৎ, কেবলমাত্র মেসোস্ফিয়ারে এসেই উল্কাগুলি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কারণ মেসোস্ফিয়ার হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর। ঊর্ধ্ব মেসোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা –100°C হয়। তাই প্রচণ্ড গতিতে অতি দ্রুতবেগে ছুটে আসা উল্কাপিণ্ড যখনই 1650°C তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ - 100°C তাপমাত্রাযুক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করে তখন ওই উল্কাপিণ্ডের মধ্যেকার পদার্থগুলির বিভিন্ন খনিজের মধ্যে সংকোচন-প্রসারণ বিভিন্ন মাত্রায় হয়। তাই উল্কাগুলি ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যার গুঁড়ো অংশগুলি ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। - 

14 .এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা ইত্যাদি পর্বতের শৃঙ্গগুলি চিরতুষারাবৃত থাকে কেন ?

  উত্তর: এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা ইত্যাদি পর্বতশৃঙ্গগুলি বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে অবস্থান করে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে ট্রপোস্ফিয়ারে বায়ুর উদ্বৃতা প্রতি কিলোমিটারে প্রায় 6.5°C হারে হ্রাস পায়। ফলে, ভূপৃষ্ঠের প্রায় 3.5 কিমি উচ্চতায় বায়ুস্তরের উন্নতা 0°C বা 273 K বা তা অপেক্ষা আরো কম হয়। এই কারণেই এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রভৃতি উচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলি সারাবছরই বরফে আবৃত থাকে। 

প্রশ্ন 15. পর্বতশৃঙ্গে ওঠার সময় আরোহীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন কেন ? 

উত্তর:  ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায়, ততই বায়ুস্তর হালকা হতে থাকে, অর্থাৎ, বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায়। এই হালকা বায়ুস্তরে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ অনেক কম হয়। ফলে, পর্বতারোহীদের শ্বাসকার্য চালাতে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই জন্য শ্বাসকার্য স্বাভাবিক রাখতেই পর্বতারোহীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। 

প্রশ্ন 16 .কলকাতা অপেক্ষা দার্জিলিং-এর বায়ুর চাপ ও উয়তা কম হয় কেন ? 

 উত্তর: গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কলকাতা অপেক্ষা দার্জিলিং-এর উচ্চতা বেশি। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বায়ুস্তর হালকা হতে থাকে অর্থাৎ, বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায়। তাই কলকাতা অপেক্ষা দার্জিলিং-এ বায়ুর ঘনত্ব কম হওয়ায় বায়ুর চাপও কম হয়।

আবার দার্জিলিং-এ বায়ুর ঘনত্ব কম থাকায়, বায়ুতে উপস্থিত গ্যাসীয় উপাদান (যেমন: ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি)-এর পরিমাণও অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ফলে, বায়ুর তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং শোষিত তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়। তাই কলকাতা অপেক্ষা দার্জিলিং-এর উয়তাও কম হয়। 

প্রশ্ন 17. ঝড় আসার আগে পরিবেশ শান্ত ও থমথমে থাকে কেন? 

 উত্তর:  প্রাকৃতিক কারণে কোনো স্থানের বাতাস উত্তপ্ত হলে আয়তনে প্রসারিত হয় ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ওই স্থানে একটি সাময়িক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ফলে, গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই সময় বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ না থাকায় পরিবেশশাস্ত বলে মনে হয়। ওই শূন্যতাকে পূরণ করার জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ঠান্ডা বায়ু প্রবল গতিতে এগিয়ে এসে ওই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করে ও সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয় এবং তখন তা ঝড়ের সৃষ্টি করে। তাই ঝড় আসার আগে পরিবেশ শান্ত থাকে।

প্রশ্ন  18. স্প্রে বোতল থেকে যে সুগন্ধি স্প্রে করা হয় সেটি ক্ষতিকারক কেন? 

 উত্তর:  সুগন্ধি স্প্রে করার বোতলের মধ্যে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থটি থাকে সেটি হল ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন (CFC) বা গোন। এই ক্লোরোফ্লুওরোকার্বন অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে বিয়োজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে যা স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তরের Og-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে, ওজোনকে বিয়োজিত করে। ফলস্বরূপ, ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হয়ে ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি করে। সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে আপতিত হয়, যা জীবকূলের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। CF CI → CF3 + CI (সক্রিয় ক্লোরিন) hv O3 + clo • O2 + Clo ওজোন বিয়োজন 

প্রশ্ন 19 .অক্সিজেনের তুলনায় ওজোনের বাষ্পঘনত্ব বেশি হওয়া সত্ত্বেও বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে ওজোন থাকে কেন? 

 উত্তর: বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে অক্সিজেন অণু বিয়োজিত হয়ে ওজোন অনু উৎপন্ন হয়। এই স্তরে উচ্চশক্তির UV রশ্মি শোষিত হওয়ায় উয়তা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ট্রপোস্ফিয়ারের তুলনায় এই অঞ্চলে বায়ুর চাপও কম থাকে। তুলনামূলকভাবে উচ্চ উচ্চতা ও নিম্নচাপে O, অনুরা গতিবেগ বেশি এবং ঘনত্ব কম হয়। তাই বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তবে O থাকে। 

প্রশ্ন 20 .ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্যাটোস্ফিয়ারে ক্লোরোফ্লুওরোকার্বনের ভূমিকা কী ? 

উত্তর :ট্রপোস্ফিয়ারের CFC-গুলি কোনোরূপ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না, নিষ্ক্রিয় থাকে। কিন্তু এগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপশক্তিকে মহাশূন্যে যেতে বাধা দেয় এবং পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরিয়ে দেয়। তাই ট্রপোস্ফিয়ারে CFC-গুলি গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

 CFC-গুলি ট্রপোস্ফিয়ারে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। কিন্তু যখন, স্ট্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছোয়, তখন সূর্যের UV রশ্মির প্রভাবে বিয়োজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু (CI) উৎপন্ন করে। এই Cl পরমাণু ওজোন স্তরের O, অণুর বিয়োজক রূপে কাজ করে। প্রতিটি ৫। পরমাণু লক্ষাধিক 03 অণুর বিয়োজন ঘটায়। সুতরাং, স্ট্যাটোস্ফিয়ারের CFC-গুলি ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমায় এবং ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি করে। ফলে, সূর্য থেকে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছোয়। 

প্রশ্ন 21 .ওজোন গহ্বর বা ওজোন হোল কীভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটায় ? ★★ 

উত্তর: পরিবেশ দূষণ ও যথেচ্ছ পরিমাণ CFC ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি হয়। এই ওজোন হোল বা গহ্বরের মধ্যে দিয়ে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে এসে পৌঁছোয়। এই অতিবেগুনি রশ্মি (UV-Ray) দু-ভাবে বিশ্ব উন্নায়ন ঘটাচ্ছে - O ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট উচ্চ শক্তিসম্পন্ন UV রশ্মি ভূপৃষ্ঠে আপতিত হয়ে সরাসরি পৃথিবী ও তার বায়ুমণ্ডলকে বেশি মাত্রায় উত্তপ্ত করছে এবং ও UV রশ্মি ট্রপোস্ফিয়ারের O2 অণু থেকে ওজোন অণু (O3) উৎপন্ন করছে, যা একটি তাপ-উৎপাদক প্রক্রিয়া। সুতরাং, ওজোন গহ্বর বা ওজোন হোল থেকে আগত UV রশ্মি গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ত্বরান্বিত করছে।

প্রশ্ন 22 .বায়ুতে বেশি পরিমাণে উপস্থিত N2 ও 2-এর গ্রিনহাউস প্রভাব নেই, কিন্তু খুব কম পরিমাণে থাকা CO2 হল গ্রিনহাউস গ্যাস – কেন তা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : যেসব গ্যাস পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত (IR) রশ্মি (240p) শোষণ করতে পারে, তাদের গ্রিনহাউস প্রভাব থাকে। এই ক্ষমতা গ্যাসের প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, পরিমাণের ওপর নয়। N2 ও O2 উক্ত IR রশ্মি শোষণ করতে পারে না, কিন্তু CO2-এর C = O বন্ধন এই অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে। তাই, CO2 হল গ্রিনহাউস গ্যাস। 

প্রশ্ন  23. একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত বায়ুতে CO2-এর উপস্থিতি উপকারী, কিন্তু অধিক মাত্রায় CO2-এর উপস্থিতি ক্ষতিকারক কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : বায়ুমণ্ডলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত CO2-এর উপস্থিতি উপকারী। কারণ এটি গ্রিনহাউস গ্যাসের ন্যায় আচরণ করায় ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপশক্তিকে প্রতিফলিত করে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে ফিরিয়ে দেয়, ফলে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার মান বজায় থাকে এবং জীবকুলের বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল হয়। আবার, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য CO2-এর প্রয়োজন হয়। সমগ্র প্রাণীকুল আবার খাদ্যের ব্যাপারে উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে থাকে। তাই বায়ুতে CO2-এর উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে গ্রিনহাউস এফেক্ট খুব বৃদ্ধি পায়। ফলে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে খুব বেশি হয় অর্থাৎ, বিশ্ব উন্নায়ন ঘটে। এই বিশ্ব উন্নায়নের ফলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জীবজগতের বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়। তাই বায়ুতে অধিক মাত্রায় এর উপস্থিতি ক্ষতিকারক। 

প্রশ্ন 24. 'গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি বিশ্ব উন্নায়ন এবং বিশ্ব উন্নায়ন গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে’ ব্যাখ্যা করো। 

 উত্তর: বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপের প্রায় সমস্ত অংশই ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসবে, অর্থাৎ, বিশ্ব উয়ায়ন বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব উন্নায়নের কারণে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়লে @ বেশি পরিমাণ জল বাষ্পীভূত হবে, ও মানুষের বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার বাড়বে। ফলে, বেশি CO2 উৎপন্ন হবে এবং রেফ্রিজারেটার, AC-এর ব্যবহার বাড়লে CFC-এর উৎপাদন বাড়বে, ও দাবানল বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলে CO2, NO2 বেশি পরিমাণে মুক্ত হবে, • বেশি উয়তায় জলাভূমিতে বেশি মিথেন উৎপন্ন হবে। অর্থাৎ, পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাবে যা পুনরায় বিশ্ব উন্নায়ন ঘটাবে। অর্থাৎ, বিশ্ব উয়ায়ন অনেকাংশেই স্বয়ংবর্ধক।




No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();