ভারতের শিল্প: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৮ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography chapter 5.8 questions answer| 2024 geography suggetion WB board|
দু-এককথায় উত্তর দাও
১ .দুটি বিশুদ্ধ কাঁচামালের উদাহরণ দাও।
উত্তর : কার্পাস, পাট।
২. দুটি অবিশুদ্ধ কাঁচামালের উদাহরণ দাও।
উত্তর: লোহা, কয়লা।
৩.প্রাণীজ কাঁচামাল কোন্ শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর :পশম শিল্প, দোহ শিল্প, মাংস কৌটাজাতকরণ শিল্প ইত্যাদি।
8 .কোন্ শিল্পকে আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার মেরুদণ্ড বলা হয়?
উত্তর: লৌহ-ইস্পাত শিল্পকে।
৫. লৌহ-ইস্পাত শিল্পের যে-কোনো দুটি কাঁচামালের নাম
উত্তর : আকরিক লোহা, কয়লা।
৬. পূর্ব ভারতে অবস্থিত একটি লৌহ-ইস্পাত কারখানার নাম লেখো।
উত্তর : জামসেদপুরে অবস্থিত TISCO (Tata Iron and Steel Company)
৭. দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত একটি লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর :কর্ণাটকের ভদ্রাবতীতে অবস্থিত বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড।
৮.কোন্ শহরকে ‘ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার' বলা হয় ?
উত্তর: আমেদাবাদকে।
জেনে রাখো
ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার : ভারতের কার্পাস শিল্পের প্রধান শিল্পকেন্দ্র হল আমেদাবাদ। | ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার শহরের মতো ভারতের আমেদাবাদ | শহরেও একসঙ্গে অনেকগুলো কাপড়ের কল গড়ে উঠেছে। এই কারণে আমেদাবাদকে ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার বলে।
৯. কাপড় কলের সংখ্যার বিচারে কোন্ রাজ্য ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে?
উত্তরা : তামিলনাড নাড়ু।
১০.দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র কোনটি?
উত্তর কোয়েম্বাটোর।
১১ .পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানাটির নাম লেখো।
উত্তর : চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস্।
১২.পশ্চিমবঙ্গের কোন্ কোম্পানি বেসরকারিভাবে মালগাড়ি নির্মাণ করে?
উত্তর :টেক্সম্যাকো কোম্পানি।
১৩ .অশোক লেল্যান্ড কোম্পানি ভারতের কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে।
১৪ .ভলভো বাস নির্মাণ কারখানাটি ভারতের কোথায়
উত্তর :কর্ণাটকের হোসকোর্টে।
১৫ .ভারতের একটি রেল ওয়াগান নির্মাণ কারখানার লেখো।
উত্তর | বিহারের মজফ্ফরপুর।
১৬ .কোন্ শিল্পকে ‘উদীয়মান শিল্প' বলা হয়?
উত্তর : পেট্রোরসায়ন শিল্পকে।
১৭ .খনিজ তেল শোধনকালে প্রাপ্ত যে-কোনো ২টি উপজাত দ্রব্যের নাম লেখো।
উত্তর : ন্যাপথা ও প্রপিলিন ইত্যাদি।
১৮. কোন্ কোন্ শিল্পের সঙ্গে অনুসারী শিল্প গড়ে উঠতে দেখা যায়?
উত্তর: পেট্রোরসায়ন ও মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প।
১৯. IT Sector এর পুরো নাম কী?
উত্তর | Information Technology Sector.
২০ .B.P.O কথাটির পুরো অর্থ কী?
উত্তর: Business Process Outsourcing.
২১. কোন্ শহরকে ভারতের সর্বপ্রথম Microsoft উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: হায়দরাবাদ।
২২ কোন শহরকে 'Tech City' বলা হয়?
উত্তর : পুণেকে।
২৩. IT Sector-এর যে-কোনো দুটি কোম্পানির নাম লেখো।
উত্তর : টিসিএস (TCS) বং ইনফোসিস (Infosys)। |
২৪. তথ্যপ্রক্তি শিল্পের মূল উপকরণ কী?
উত্তর : মানুষের মেধা।
২৫ . TCS-এর পুরো অর্থ কী?
উত্তর : Tata Consultancy Services.
২৬ .তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দুটি ভাগ কী কী?
উত্তর: হার্ডওয়্যার সেক্টর ও সফ্টওয়্যার সেক্টার।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. শিল্প (Industry) কাকে বলে? অথবা, শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : প্রকৃতিতে প্রাপ্ত দ্রব্যকে নানাবিধ যন্ত্র ও প্রযুক্তির মাধ্যমে রূপান্তরীকরণ করে, ব্যবহারের উপযোগী সামগ্রীতে পরিণত করার প্রক্রিয়াকেই শিল্প বলা হয়। যেমন— —কৃষিজ কার্পাস থেকে বস্ত্রশিল্প, খনিজদ্রব্য আকরিক লোহা থেকে লৌহ-ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি।
প্রশ্ন | ২ . বিশুদ্ধ কাঁচামাল (Pure raw material) কাকে বলে?
উত্তর : যেসকল কাঁচামাল শিল্পজাত পণ্যে রূপান্তরিত হলেও তার ওজন কমে না, অর্থাৎ কাঁচামালের ওজন ও সেই থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের ওজন একই থাকে, সেই সকল কাঁচামালকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল (Pure raw material) বলে। যেমন—কার্পাস বস্ত্ৰ বয়নশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল তুলো এবং তুলো থেকে উৎপন্ন বস্ত্রের ওজন মোটামুটি একই থাকে, তাই তুলো হল বিশুদ্ধ কাঁচামাল।
প্রশ্ন। ৩ অবিশুদ্ধ কাঁচামাল (Impure raw material) কাকে বলে?
উত্তর : যে-সমস্ত কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে ওজন কমে যায়, অর্থাৎ কাঁচামালের ওজনের থেকে সেই কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের ওজন কম হয়, সেইসকল কাঁচামালকে অবিশুদ্ধ কাঁচামাল (Impure raw material) বলে। যেমন—লৌহ ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আকরিক লোহার ওজন বেশি হয়। এবং উৎপাদিত দ্রব্যের ওজন কম হয়। তাই আকরিক লোহা হল অবিশুদ্ধ কাঁচামাল।
প্রশ্ন ৪ . পণ্যসূচক (Material Index) বলতে কী বোয।
উত্তর : শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও উৎপাদিত দ্রব্যের অনুপাত হল পণ্যসূচক। এই সূচকের মান যদি ১ হয় তাহলে বুঝতে হবে বিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১-এর বেশি হাল অবিশুদ্ধ শ্রেণির কাচামাল ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রশ্ন ৫. লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলি কী কী
উত্তর : লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলি হল- আকরিক লোহা, স্ক্র্যাপ লোহা, পর লোহা, করলা, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন, নিকেল, প্রচুর বিদ্যুৎ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল।
প্রশ্ন ৬. স্বাধীনতার আগে ভারতে স্থাপিত লৌহ-ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর : স্বাধীনতার আগে ভারতে স্থাপিত লৌহ-ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র তিনটি হল—(১) পশ্চিমবঙ্গের বার্ণপুর কুলটি (IISCO)। (২) ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুর (TISCO) এবং (৩) কর্ণাটকের ভদ্রাবতী।
প্রশ্ন। ৭ .স্বাধীনতার পর স্থাপিত ভারতের লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর : স্বাধীনতার পর স্থাপিত ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রগুলি হল—(১) পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, (২) ঝাড়খণ্ডের বোকারো, (৩) ছত্তিশগড়ের ভিলাই, (৪) অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম, (৫) তামিলনাড়ুর সালেম এবং (৬) কর্ণাটকের বিজয়নগর।
প্রশ্ন ৮ .সংকর ইস্পাত বা অ্যালয় স্টিল (Alloy Steel) কাকে বলে ?*
উত্তর : লোহার সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ মিশিয়ে যে স্টিল প্রস্তুত করা হয়, তাকে অ্যালয় স্টিল বা সংকর ইস্পাত বলে। এই অ্যালয় স্টিল অত্যন্ত দৃঢ় ও কঠিন হয়। এতে মরচে ধরে না ও ক্ষয় কম হয়।
প্রশ্ন ৯ .ভারতের সংকর ইস্পাত কেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর : ভারতে তিনটি সংকর ইস্পাত কেন্দ্র আছে। যথা—(ক) তামিলনাড়ুর সালেম (বিশেষত স্টেনলেস স্টিল), (খ) পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর (স্টেনলেস স্টিল ও অন্যান্য বিশেষ ধরনের ইস্পাত) এবং (গ) কর্ণাটকের ভদ্রাবতী (নানান ধরনের সংকর ইস্পাত)।
প্রশ্ন ১০ ইস্পাত তৈরির বিভিন্ন পর্যায়গুলি কী কী?
উত্তর : লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আকরিক লোহা, কোক কয়লা, চুনাপাথর ও ডলোমাইট ব্লাস্টফার্নেসে গলিয়ে প্রথমে প্রস্তু করা হয় পিগ আয়রন। এরপর পিগ আয়রনের সঙ্গে প্রয়োজন মতো ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিসা, টিন ইত্যাদি মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় ইস্পাত।
জেনে রাখো
★ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান তামিলনাড়ু রাজ্যের । অন্তৰ্গত পোর্টোনোভোতে কাঠকয়লার সাহায্যে ভারতে প্রথম (ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয়।
প্রশ্ন ১১ .SAIL সম্পর্কে কী জান?
উত্তর : লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সুষ্ঠু উৎপাদন, বণ্টন ও পরিচালনার জন্য ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার SAIL বা Steel Authority of India Limited সংস্থাটি গঠন করেন। এর মুখ্য কার্যালয় নিউদিল্লিতে অবস্থিত। SAIL-এর অন্তর্গত ইস্পাত কারখানাগুলি হল ভিলাই, দুর্গাপুর, রাউরকেলা, বোকারো, বার্ণপুর, সালেম, বিশাখাপত্তনম, ভদ্রাবতী।
প্রশ্ন ১২. ভারতে বৃহত্তম ও প্রাচীনতম লৌহ-ইস্পাত কারখানাদুটির নাম ও অবস্থান লেখো। *
উত্তর : ০ ভারতের বৃহত্তম লৌহ-ইস্পাত কারখানা- ছত্তিশগড়ের ভিলাইতে অবস্থিত। • ভারতের প্রাচীনতম লৌহ-ইস্পাত কারখানা— পশ্চিমবঙ্গের বার্ণপুর-কুলটিতে অবস্থিত IISCO (১৮৭৪ সালে)।
প্রশ্ন | ১৩ কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের কাঁচামালগুলি কী কী?
উত্তর : কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল কার্পাস তুলো। এ ছাড়া কস্টিক সোডা, রং ও প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ১৪. ভারতে কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : ভারতে কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) মিল বা কল : মিল বা কলে বিশাল বিশাল যন্ত্রের মাধ্যমে। একসঙ্গে প্রচুর বস্ত্র ও সুতো তৈরি হয়। এটি ৩ ভাগে বিভক্ত। যথা— ১. বয়ন কল, ২. সুতো কল, ৩. বয়ন ও সুতো কল একসঙ্গে। মিল বা কল তাঁত
(২) তাঁত : এটি কুটিরশিল্পের আকারে গড়ে উঠেছে। এটি ২ ভাগে বিভক্ত — ১. হস্তচালিত তাঁত, ২. শক্তিচালিত তাঁত।
প্রশ্ন ১৫ .শিকড় আলগা শিল্প বা Foot-loose Industry কাকে বলে ?
উত্তর : যে শিল্পে কাঁচামাল ও শিল্পজাত দ্রব্যের ওজন একই থাকে। এবং শিল্প যে-কোনো জায়গাতে অর্থাৎ বাজার অথবা কাঁচামালেরউৎসকেন্দ্র ও এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানে গড়ে উঠতে ভা পারে, তাকে শিকড় আলগা শিল্প বা Foot-loose Industry বলে।
প্রশ্ন ১৬ .কার্পাস বয়ন শিল্পকে Foot-loose Industry বলা হয় কেন ?
উত্তর : কার্পাস বয়ন শিল্প হল একটি বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক। শিল্প। অর্থাৎ যে পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, সম পরিমাণ বস্ত্ৰ উৎপাদন করা যায়। তাই এইপ্রকার শিল্প যে-কোনো জায়গাতে অর্থাৎ বাজার, অথবা কাঁচামাল উৎসকেন্দ্র ও এদের মধ্যবর্তী যে-কোনো স্থানে গড়ে উঠতে পারে। তাই কার্পাস বয়ন শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বা Foot loose Industry বলা হয়।
প্রশ্ন ১৭ .ভারতের প্রথম যন্ত্রচালিত বস্ত্র বয়ন কেন্দ্র কোথায় ও কত সালে স্থাপিত হয়?
উত্তর : ১৮১৮ সালের হাওড়ার ঘুসুড়িতে (ফোর্ট প্লাস্টার) প্রথম যন্ত্রচালিত বস্ত্র বয়ন কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
প্রশ্ন। ১৮ পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় কার্পাস বস্ত্ৰ বয়ন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে?
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের বেলঘরিয়া, পানিহাটি, শ্যামনগর, সালকিয়া, শ্রীরামপুর, উলুবেড়িয়া, ফুলেশ্বর, ঘুসুড়ি ইত্যাদি স্থানে কার্পাস বস্ত্ৰ বয়ন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন। ১৯. ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বা পূর্ত শিল্প কাকে বলে?*
উত্তর : ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পে ব্যবহৃত ছোটো-বড়ো এবং হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে পরিবহণের যানবাহনসহ সমস্ত শিল্পকেই বোঝায়।
উদাহরণ বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম ও ভারী যন্ত্রপাতি, রেলইঞ্জিন রেল ওয়াগন, জাহাজ, মোটরগাড়ি, মোটর সাইকেল, টার, সাইকেল, ঘড়ি, পাখা প্রভৃতি শিল্প হল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উদাহরণ।
প্রশ্ন ২০ .লঘু বা হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : যেসব ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি, সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ, ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়, তাদের হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। যেমন—ঘড়ি, সাইকেল, ফোন তৈরি ইত্যাদি।
প্রশ্ন। ২১. ভারতের কয়েকটি হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের কয়েকটি হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের নাম হল- (১) National Instruments Ltd (পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর) (2) Hindusthan Machine Tools বা H.M.T বেঙ্গালুরু, শ্রীনগর, হায়দরাবাদ) (৩) Indian Telephone Industries (ITI) এবং (8) Bharat Electronics Ltd (BEL)।
প্রশ্ন ২২ .ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : যে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের সাহায্যে বৃহদায়তন শিল্পের উপযোগী বড়ো ও ভারী যন্ত্রপাতি, বড়ো বড়ো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন, কৃষি যন্ত্রপাতি, খনির যন্ত্রপাতি প্রভৃতি তৈরি করা হয়, তাকে বলে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। যেমন—রেলইঞ্জিন ও বগি নির্মাণ, মোটরগাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি।
প্রশ্ন। ২৩. ভারতের কোথায় কোথায় রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্র আছে?
উত্তর : ভারতের রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্রগুলি হল— (১) চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান) (২) ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (উত্তরপ্রদেশের বারাণসী), (৩) টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (TELCO) ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুরে, (৪) ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস্ লিমিটেড (BHEL) (মধ্যপ্রদেশের ভূপালে)।
প্রশ্ন ২৪ .ভারতের একটি ইলেকট্রিক রেলইঞ্জিন ও একটি ডিজেল রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর : • ভারতের ইলেকট্রিক রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্র : পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জনে (চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস)। • ভারতের একটি ডিজেল রেলইঞ্জিন নির্মাণ কেন্দ্র : উত্তরপ্রদেশের বারাণসী (ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস)।
প্রশ্ন ২৫ .যানবাহন নির্মাণ শিল্পকে ক-ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তর : যানবাহন নির্মাণ শিল্পকে চার ভাগে ভাগ যথা— (১) রেলইঞ্জিন ও রেলবগি নির্মাণ শিল্প- (২) মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প, (৩) বিমানপোত নির্মাণ (এরোপ্লেন) শিল্প এবং (৪) জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
প্রশ্ন | ২৬. ভারতের রেল বগি নির্মাণ কেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের রেল বগি নির্মাণ কেন্দ্রগুলি হল— (১) তামিলনাড়ুর পেরাম্বুরে অবস্থিত ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি'। (এই সরকারি সংস্থায় অধিকাংশ যাত্রীবাহী রেল বগি নির্মাণ করা হয়)। (২) কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু 'ভারত আর্থ মুভার্স' এবং (৩) পশ্চিমবঙ্গের 'জেসপ অ্যান্ড কোং' (এই দুই সরকারি সংস্থায় মালগাড়ি ও যাত্রীগাড়ি তৈরি হয়)।
প্রশ্ন ২৭ .ভারতের কোথায় রেল ওয়াগন নির্মাণ কেন্দ্র অবস্থিত ?
উত্তর : (১) বিহারের মজফ্ফরপুর ও (২) পশ্চিমবঙ্গের দমদম (Bharat Wagan & Engineering)-এ রেল ওয়াগন নির্মাণ কেন্দ্র অবস্থিত।
প্রশ্ন ২৮. ভারতের কোথায় জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র রয়েছে ?
উত্তর : ভারতের জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্রগুলি হল- (১) অস্ত্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম (হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড লিমিটেড) (২) কেরলের কোচি (কোটিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড say (৩) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা (গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড গার্ডেনরিচ শিপবিশ্বাস আত তানিয়া লিখি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড)।
প্রশ্ন। ২৯ .ভারতের বিমানপোত নির্মাণ শিল্পকেন্দ্রগুলির নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের বিমানপোত নির্মাণ শিল্পকেন্দ্রগুলি হল— (১) কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু (Hindusthan, Aronautics Lad.) | (২) মহারাষ্ট্রের নাসিক (HAL) এবং (৩) ওড়িশার কোরাপুট (HAL)।
প্রশ্ন ৩০ .অটোমোবাইল শিল্প কাকে বলে (Automobile Industry) ?*
উত্তর : ছোটো-বড়ো যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ (যথা—টায়ার, টিউব, প্লাস্টিক, ফোম, রঙ ইত্যাদি)-এর সাহায্যে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নির্মাণকেই অটোমোবাইল শিল্প বলা হয়। যেমন- বাস, লরি, মোটরগাড়ি, মপেড, স্কুটার, মোটরসাইকেল, অটো ইত্যাদি অটোমোবাইল শিল্পের অন্তর্গত। তবে বৃহদায়তন রেলইঞ্জিন, জাহাজ, এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার নির্মাণ এই শিল্পের অন্তর্গত নয়।
প্রশ্ন ৩১ .মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকে সংযোজনভিত্তিক শিল্প বলা হয় কেন ?
উত্তর : অসংখ্য দ্রব্য সংযোজনের মাধ্যমে যে শিল্প গড়ে ওঠে তাকে সংযোজনভিত্তিক শিল্প বলা হয়। মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পে নানা প্রকার যন্ত্রাংশ ও অসংখ্য উপকরণ টায়ার, টিউব, ব্যাটারি, কাচ, প্লাস্টিক, ফোম, কাপড়, রঙ) ব্যবহৃত হয়। এইসকল দ্রব্যগুলিকে যুক্ত করে মোটরগাড়ি নির্মাণ করা হয় বলে, মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকে সংযোজনভিত্তিক শিল্প বলে।
প্রশ্ন ৩২ .অনুসারী শিল্প (Downstream Industry) কাকে বলে ?* [ পর্ষদ নমুনা ১৭/
উত্তর : বৃহদায়তন মূল শিল্পের প্রয়োজনে মূল শিল্পের পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য ছোটো ছোটো শিল্পকে অনুসারী শিল্প বলা হয়। যেমন—মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের পাশে গড়ে ওঠা ব্যাটারি, কাচ, প্লাস্টিক, ফোম প্রভৃতি শিল্পকে অনুসারী শিল্প বলা হয়।
প্রশ্ন ৩৩ .ভারতের কোথায় প্রতিরক্ষা যান নির্মাণ করা হয়?
উত্তর : ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীন ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জব্বলপুর কারখানায় 'ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (BEML), টাটা (TATRA) ও পন্টুন (PONTOON) ট্রাক নির্মা করা হয়।
প্রশ্ন ৩৪. ভারতের দুটি প্রধান মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্রের ( নাম লেখো। *
উত্তর : ভারতের দুটি প্রধান মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্র হলো—(১) হরিয়ানার গুরগাঁও (মারুতি উদ্যোগ লিমিটেড) এর (২) ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুর (টেলকো)। প্রশ্ন ৩৫ ভারতের ৪টি মোটর সাইকেল নির্মাণ কেন্দ্রের নাম লেখো। উত্তর : ভারতের প্রধান মোটর সাইকেল নির্মাণ কেন্দ্রগুলি হল—(১) হরিয়ানার গুরগাঁও (হিরো হন্ডা) (২) মহারাষ্ট্রের পুরে (বাজাজ কাওয়াসাকি) (৩) তামিলনাড়ুর চেন্নাই (টিভিএস সুজুকি), এবং (৪) হরিয়ানার ফরিদাবাদ (ইয়ামাহা এস্কট)।
প্রশ্ন ৩৬ .পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প কাকে বলে (Petrochem- ical Industry)?★
উত্তর : যে শিল্পে অশোধিত খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়ামের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য থেকে প্লাস্টিক, পলিথিন, কৃত্রিম সুতো, কৃত্রিম রবার, রং প্রভৃতি নানান ধরনের জিনিস উৎপাদন করা হয়, তাকে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প বলে।
প্রশ্ন ৩৭. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে ‘উদীয়মান শিল্প' বা 'Sunrise Industry' বলে কেন? *
উত্তর : গুরুত্ব ও চাহিদার বিচারে পেট্রোরসায়ন শিল্পের স্থান একেবারে উঁচু সারিতে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানেই অসংখ্য পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র বা পেট্রোকেমিক্যাল হাব গড়ে উঠছে। বৈচিত্র্য, গুরুত্ব ও চাহিদার বিচারে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং এই শিল্প দ্রুত হারে বেড়ে চলছে বলে একে উদীয়মান শিল্প' বা 'Sunrise Industry' বলা হয়।
প্রশ্ন ৩৮. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে “আধুনিক শিল্প দানব” বলা হয় কেন ?★
উত্তর : পেট্রোরসায়ন শিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত খনিজ তেলের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে তা থেকে অসংখ্য অনুসারী শিল্প ও বহুমুখী নানান ধরনের ভোগ্যপণ্য ও শিল্পসামগ্রী তৈরি করা হয়। পেট্রোরসায়ন শিল্পের এই বহুমুখী প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, অনুসারী শিল্পের বৈচিত্র্য, উৎপাদনের পরিমাণ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্প দানব বলে।
প্রশ্ন | ৩৯. পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের কাঁচামালগুলি কী কী?
উত্তর : পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। এ ছাড়াও, খনিজ তেল শোধনকালে যে-সমস্ত উপজাত দ্রব্যগুলি পাওয়া যায়, যথা—ন্যাপথা, প্রপিলিন, ইথিলিন ইত্যাদিও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের কাঁচামাল রূপে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ৪০ .প্ট্রোকেমিক্যাল শিল্পে কোন্ কোন্ দ্রব্য উৎপাদিত হয়?
উত্তর : পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল- (১) কৃত্রিম তন্তু (নাইলন, পলিয়েস্টার), (২) প্লাস্টিক, (৩) ডিটারজেন্ট, (৪) সার ও কীটনাশক, (৫) কৃত্রিম রবার, আঠা, (৭) রং, (৮) সুগন্ধি দ্রব্য, (৯) বিস্ফোরক দ্রব্য ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৪১ .ভারতের প্রথম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রটি কোথায় ও কত সালে স্থাপিত হয় ? ★
উত্তর : ১৯৬৬ সালে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে পশ্চিম ভারতের ট্রম্বেতে (ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড) প্রথম পেট্রোরসায়ন কারখানাটি গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন । ৪২ ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলতে কোন্ দুই ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়?★
উত্তর : ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলতে মূলত (১) আই.টি. সেক্টর ( Information Technology) এবং (২) বি পি ও (Business Process Outsourcing) এই দুই ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়।
প্রশ্ন । ৪৩ .তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কাকে বলে (IT Industry ) ?
উত্তর : মানবসম্পদ অর্থাৎ মানুষের মেধার ওপর ভিত্তি করে যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে তার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প হল অন্যতম। কম্পিউটার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সাহায্যে বিভিন্ন প্রকার তথ্য সংগ্রহ, সঞ্চয়, বিশ্লেষণ, পরিমার্জন প্রভৃতি কাজ যখন শিক্ষা, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, জলবায়ু বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প
প্রশ্ন ৪৪ .ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সংস্থার নাম লেখো। |
উত্তর : ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কয়েকটি সংস্থা হল—উইপ্রো, TCS, সিমেন্স, ইনফোসিস, NIIT টেকনোলজি, HCL টেকনোলজি, কগনিজ্যান্ট, টেক মহীন্দ্রা, CMC লিমিটেড ইত্যাদি।
প্রশ্ন । ৪৫ .আউটসোর্সিং কাকে বলে (Out Sourcing) ? ★
উত্তর : কোনো দেশের একটি সংস্থা, যখন সেই দেশের অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো কাজ করিয়ে নেয়, তখন তাকে আউটসোর্সিং বলে। কাজের উন্নত মান, দক্ষতা বৃদ্ধি, কম খরচে কাজ করা, দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা ইত্যাদি কারণে এই আডটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করানো হয়।
প্রশ্ন ৪৬ .অফসোরিং (Off-Shoring) কাকে বলে ?
* উত্তর : কোনো দেশের একটি সংস্থা, কোনো কাজ যখন অন্য কোনো দেশ থেকে করিয়ে নেয়, তখন তাকে অফসোরিং (Off- Shoring) বলে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:
A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো :
প্রশ্ন ১ .পূর্ব-ভারতে অবস্থিত যে-কোনো একটি লৌহ- ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর : দুর্গাপুর হিন্দুস্থান স্টিল লিমিটেড (HSL) ও দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল (পশ্চিমরা) : বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৪.৫৭ লক্ষ মেট্রিক টন।
গড়ে ওঠার কারণ : (১) কাঁচামাল ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ ও ঝাড়খণ্ডের সিংভূমের আকরিক লোহা, (খ) ঝরিয়া ও রানিগঞ্জের কয়লা, (গ) ওড়িশার সুন্দরগড়ের ডলোমাইট ও বীরমিত্রপুরের চুনাপাথর। (২) দামোদর নদ ও দুর্গাপুর জলাধারের জল; (৩) DVC থেকে জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ শক্তি; (৪) স্থানীয় শিল্পাঞ্চল, আসানসোল শিল্পাঞ্চল, রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের চাহিদা; (৫) কলকাতা বন্দরের নৈকট্য;(৬) নিকটবর্তী অঞ্চলের সুলভ শ্রমিক; (৭) পূর্ব রেলপথ, গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড, দুর্গাপুর রোড, দামোদর খালের মাধ্যমে পরিবহণের সুবিধা এই ইস্পাত কারখানাটি স্থাপনে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন ২ .বর্তমানে ভারতের কোথায় বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা আছে?
উত্তর : বর্তমান ভারতে ৭টি বৃহদায়তন (লৌহ-ইস্পাত কারখানা) এবং ৩টি অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট (সংকর ইস্পাত কারখানা) রয়েছে। ভারতের ৭টি বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা নিম্নলিখিত = স্থানগুলিতে অবস্থিত, যেমন : (১) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের = (ক) দুর্গাপুর এবং (খ) কুলটি ও (গ) বার্ণপুর, (২) ঝাড়খণ্ড = রাজ্যের (ক) বোকারো এবং (খ) জামসেদপুর, (৩) ছত্তিশগড় রাজ্যের ভিলাই, (৪) ওড়িশা রাজ্যের রাউরকেলা এবং (৫) অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনম।
প্রশ্ন। ৩ .ভদ্রাবতীতে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ কী কী ?
উত্তর : : ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন মহীশূর সরকারের তত্ত্বাবধানে কর্ণাটকের ভদ্রাবতীতে 'Mysore Iron and Steel Ltd.' নামে একটি লৌহ-ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এর নাম হল বিশ্বেশ্বরায়া লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র (Visvesvaraya Iron & Steel Ltd.)।
ভদ্রাবতী লৌহ-ইস্পাত কারখানাটির অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান : (১) বাবাবুদান পাহাড়ের খনির লৌহ-আকরিক, (২) নিকটস্থ বনভূমির কাঠকয়লা, (৩) ভান্ডিগুন্ডার চুনাপাথর, (৪) ভদ্রাবতী নদীর জল, (৫) তুঙ্গভদ্রা অববাহিকার প্রচুর সুলভ শ্রমিক ও (৬) কোচি, চেন্নাই ও মুম্বাই বন্দরের নৈকট্য এই কারখানাটি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। বর্তমানে কয়লার পরিবর্ত হিসেবে সরাবতী, মেত্তুর ও যোগ জলপ্রপাত কেন্দ্রের সুলভ জলবিদ্যুৎ এই কারখানাটির ইস্পাত উৎপাদনে নতুন পথনির্দেশ করেছে।
প্রশ্ন ৪ .ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের এবং দক্ষিণাঞ্চলের কার্পাস বস্ত্র বয়ন কেন্দ্রগুলির নাম লেখো। *
উত্তর : • পশ্চিমাঞ্চল (West Zone) : পশ্চিম ভারতের আরব সাগরের তীরবর্তী মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য দুটি এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
(১) মহারাষ্ট্র : বর্তমানে মহারাষ্ট্রে প্রায় ১১০টি কাপড়ের কল আছে। এই রাজ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রগুলি হল : পুণে, নাগপুর, শোলাপুর, আকোলা এবং জলগাঁও।
(২) গুজরাট : গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে বস্ত্র বয়ন শিল্প এতই উন্নত যে এরসঙ্গে ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার শহরের বস্ত্রশিল্পের তুলনা করা যায় তাই আমেদাবাদকে ভারতের ম্যাশেস্টার' বলে। গুজরাটের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রগুলি হল : সুরাট, ব্রোচ, বরোদা, ভবনগর এবং রাজকোট।
দক্ষিনাঅঞ্চল(South Zone) : তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক, গোয়া এবং পুদুচেরি রাজ্য এই অঞ্চলের অন্তর্গত। কাপড় কলের সংখ্যার বিচারে তামিলনাড়ু রাজ্য ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে। বর্তমানে এই রাজ্যে কমবেশি ২২৫টি কাপড় কল আছে। এই রাজ্যের কোয়েম্বাটুর হল দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান বস্তু শিল্পকেন্দ্র। তাছাড়া, মাদুরাই, তিরুনেলভেলি ও সালেম এই রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র।
দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র : কেরলের ত্রিবান্দ্রম, ত্রিচুর ও কুইলন; অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া, গুন্টুর ও হায়দরাবাদ; কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু ও হুবলি; গোয়া ও পুদুচেরি দক্ষিণাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র ।
প্রশ্ন ৫ .হলদিয়ায় পেট্রোরাসায়নিক প্রকল্প গড়ে ওঠার অবস্থানগত সুবিধাগুলি কী? অথবা, পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোরসায়ন শিল্প কোথায় গড়ে উঠেছে? এই শিল্প কোথা থেকে কাঁচামাল পায় ? *
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্প গড়ে উঠেছে। কারণ :
(১) হলদিয়া তৈলশোধনাগার থেকে কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত খনিজ তেল নিকটবর্তী হলদিয় তৈলশোধনাগারে শোধন করার পর খনিজ তেলের বিভিন্ন উপজা দ্রব্য থেকে পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামাল পাওয়া যায় (যেমন ন্যাপথা, বেঞ্জিন, বুটাডিন, ইথেন, প্রপেন প্রভৃতি কাঁচামাল) হলদিয়া তৈলশোধনাগারকে কেন্দ্র করে কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা হয় হলদিয়ায় বৃহদায়তন পেট্রোরসায়ন প্রকল্প স্থাপনের প্রধান কারণ।
(২) ব্যাপক চাহিদা : পূর্ব ভারতের বারাউনি ও বঙ্গাইগাঁও ছাড় অন্য কোনো পেট্রোরসায়ন কারখানা না থাকায় এখানে পেট্রোরসাল শিল্পজাত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
(৩) নিকটবর্তী হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে আমদানি- রপ্তানি সুবিধা : নিকটবর্তী হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে সহজেই পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ আমদানি এবং এখানকার শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করা যায়।
(৪) অন্যান্য কারণ : উপরোক্ত তিনটি প্রধান কারণ ছাড়াও সরকারি সাহায্যে প্রাপ্ত সহজলভ্য ও সুলভ জমি, মূলধন, বি (কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে) হলদিয়া পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ রচনা করেছে। এ ছাড়া, জনবহু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পেতেই এই শিল্পের কোনও অসুবিধা হয় না।
প্রশ্ন ৬ .চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানাটির অবস্থানগত সুবিধাগুলি কী কী? অথবা, পশ্চিমবঙ্গের একটি রেলইঞ্জিন শিল্পকেন্দ্রের নাম করো। এই শিল্পের কাঁচামালের উৎ কোথায়?
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানাটির অবস্থানগত সুবিধা ও কাঁচামালের উৎস হল : (১) বৃহদায়তন ইস্পাত কারখানাগুলির নৈকট্য : (i) দুর্গাপুর, (ii) কুলটি-বার্ণপুর ও (iii) জামসেদপুর লৌহ-ইস্পাত কারখানার নৈকট্য হল চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন নির্মাণ কারখানাটির অন্যতম অবস্থানগত সুবিধা। এই-সমস্ত বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা থেকে রেলইঞ্জিন-শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ইস্পাত সুলভে পাওয়া যায়। (২) নিকটবর্তী কয়লাখনির উচ্চমানের সুলভ কয়লা : রানিগঞ্জ, আসানসোল, ধানবাদ ও ঝরিয়া খনির উচ্চমানের কয়লা। (৩) সুলভে প্রাপ্ত যন্ত্রাংশ : নিকটবর্তী হাওড়া ও ছোটোনাগপুর শিল্পাঞ্চল থেকে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা। (৪) সুলভ শ্রমিক : পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে প্রাপ্ত সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক। (৫) বন্দরের নৈকট্য : নিকটবর্তী কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রেলইঞ্জিন রপ্তানি এবং বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা। (৬) জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির নৈকট্য : দামোদর নদী প্রকল্পের অন্তর্গত নিকটবর্তী মাইথন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলবিদ্যুৎ এবং নিকটবর্তী একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত তাপবিদ্যুৎ। (৭) সুলভ জলসম্পদ : নিকটবর্তী দামোদর, খরকাই প্রভৃতি নদীর জল।
প্রশ্ন ৭. TISCO সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। *
উত্তর : জামসেদপুর TISCO (Tata Iron & Steel Company) • ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত এটি ভারতের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা। বার্ষিক | ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৩৭ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন।।
• গড়ে ওঠার কারণ : (1) কাঁচামাল : (i) ওড়িশার গরুমহিষানি, ময়ূরভঞ্জ, বাদামপাহাড়, ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুণ্ডি-এর আকরিক লোহা, (ii) ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া ও পঃ বোকারো, রানিগঞ্জ-এর কয়লা, (ii) ওড়িশার গাংপুর, হাতাবাড়ির চুনাপাথর, ডলোমাইট, (iv) ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন খনির ম্যাঙ্গানিজ টাংস্টেন। (2) সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর জল, (3) নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বোকারো ও চন্দ্রপুরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান, (4) স্থানীয় শিল্পাঞ্চল, হুগলি শিল্পাঞ্চল, আসানসোল, রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের বাজারের চাহিদা, (5) কলকাতা বন্দরের নৈকট্য, (6) নিকটবর্তী অঞ্চলের সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক, ((7) পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ ও ৩৩নং জাতীয় সড়ক পথে পরিবহণের সুবিধা এবং (৪) টাটা গোষ্ঠীর অর্থ এই কারখানাটি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন ৮. IISCO সম্পর্কে কী জান লেখো।
* উত্তর : • বার্ণপুর কুলটি IISCO (Indian Iron & Steel Company) (পশ্চিমবঙ্গ) : এটি ভারতের প্রাচীনতম ইস্পাত কারখানা। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩.০৪ লক্ষ মেট্রিক টন।
• গড়ে ওঠার কারণ : (1) কাঁচামাল : (i) ঝাড়খণ্ডের সিংভূম ও ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের আকরিক লোহা, (ii) ঝাড়খণ্ডের করিয়া ও পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জের কয়লা, (iii) ওড়িশার গাংপুর ও বীরমিত্রপুরের ম্যাঙ্গানিজ ও চুনাপাথর, (iv) ওড়িশার সুন্দরগড়ের ডলোমাইট, (2) দামোদর নদের জল, (3) দুর্গাপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দামোদর প্রকল্পের সুলভ বিদ্যুৎ শক্তি IISCO (4) স্থানীয় শিল্পাঞ্চল, হুগলি শিল্পাঞ্চল, আসানসোল ও রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের বাজারের চাহিদা (5) কলকাতা বন্দরের নৈকট্য, 16) নিকটবর্তী অঞ্চলের সুলভ শ্রমিক, (7) পূর্ব রেলপথ ও গ্র্যান্ড ট্রাক রোডের মাধ্যমে পরিবহণের সুবিধা, এই কারখানা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন। ৯. পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে শিল্প প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়ামের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে (যেমন : জ্বালানি গ্যাস, ন্যাপথা, প্রোপেন, বুটেন, হেক্সেন, ইথেন, পেনটেজ, ইথানল,প্রোপানল, বেঞ্জিন, ফুটাডিন প্রভৃতি) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে তা থেকে বিটুমেন ও আসিফন্ট (রাস্তা তৈরিতে কাজে লাগে), প্যারাফিন (মোমজাতীয় পদার্থ), প্লাস্টিক, পলিয়েস্টার, নাইলন, পলিথিন, কৃত্রিম সুতো, কৃত্রিম রবার, রং, ওষুধ কীটনাশক এবং বহুমুখী নানান ধরনের ভোগ্যপণ্য ও শিল্পসামগ্রী তৈরি করা হয় তাকে 'পেট্রোরসায়ন শিল্পগুচ্ছ' বলে।
সাধারণ বৃহদায়তন তৈল শোধনাগারের আশপাশে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে (যেমন: ন্যাপথা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে মূল শিল্পের অসংখ্য অনুসারী শিল্প (Downstream Industries) গড়ে ওঠে, যাদের একসঙ্গে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পগুচ্ছ বলা হয়।
উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া তৈলশোধনাগারকে কেন্দ্র করে সন্নিহিত অঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পগুচ্ছ গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ১০. ভারতের লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রগুলি কাচামাল উৎপাদক অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর : লৌহ-ইস্পাত শিল্প মূলত কাঁচামাল নির্ভর শিল্প এবং এই শিল্পের ক্ষেত্রে প্রধানত অবিশুদ্ধ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ১ টন ইস্পাত প্রস্তুত করতে প্রায় ৪-৫ টন কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। কাঁচামাল উত্তোলক অঞ্চল থেকে দূরবর্তী স্থানে শিল্প স্থাপন করলে পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যায়। পরিবহণের এই ব্যয়কে কমানোর জন্যই ভারতের লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রগুলি কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।
উদাহরণ : কয়লাখনির নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ইস্পাত কেন্দ্রগুলি হল— দুর্গাপুর, বোকারো এবং আকরিক লোহা উত্তোলক অঞ্চলের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ইস্পাত কেন্দ্রগুলি হলো ভিলাই, রাউরকেলা, সালেম, ভদ্রাবতী, বিজয়নগর। জামসেদপুর ইস্পাত কেন্দ্রটি কয়লা ও আকরিক লোহা উত্তোলক কেন্দ্রের মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে।
জেনে রাখো
• দুর্গাপুরকে ভারতের রুঢ় বলা হয় ★ জার্মানির রূঢ় (Ruhr) শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে দুর্গাপুরকে "ভারতের রূঢ়' অ্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে, কারণ, জার্মানির রাইনের উপনদী রুঢ়-এর অববাহিকায় প্রাপ্ত কয়লা সম্পদকে কেন্দ্র করে রুঢ় শিল্পাঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত, ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অন্যদিকে, দামোদর উপত্যকার রানিগ, আসানসোল ও ঝরিয়া কয়লাখনির সাহায্যে দুর্গাপুরেও লৌহ-ইস্পাত ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এইজন্য জার্মানির রুঢ় শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরকে 'ভারতের রুঢ়' বলা হয়।
প্রশ্ন ১১ .ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রধান সমস্যা কী কী?
উত্তর : ০ ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রধান সমস্যাগুলি হল: (১) পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহারের অভাব; (২) কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, (৩) ইস্পাত উৎপাদনের পুরোনো ও বাতিল হয়ে যাওয়া প্রযুক্তি (৪) অত্যধিক সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ত্রুটিপূর্ণ সরকারি পরিকল্পনা; (৫) পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ আকরিক, কয়লা, চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি কাঁচামালের কেন্দ্রীভূত অবস্থান; (৬) দক্ষ শ্রমিকের অভাব; (৭) উৎকৃষ্ট মানের কোক- কয়লার অভাব; (৮) তাপসহনক্ষম ইটের অভাব; (৯) পরিবহণের অসুবিধা; (১০) মেরামতির সাজসরামের অভাব; (১১) অত্যধিক উৎপাদন খরচ; (১২) অভ্যন্তরীণ ইস্পাতের মন্দা বাজার প্রভৃতি সমস্যা ভারতীয় লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন ১২ .ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : কৃষি, খনি ও শিল্পে ব্যবহৃত বৃহদায়তন যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, রেলইঞ্জিন, রেল ওয়াগন নির্মাণ, জেনারেটর উৎপাদন ইত্যাদি। (২) হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প : ঘড়ি, সাইকেল, মেশিন, বলবিয়ারিং, সেলাই মেশিন ইত্যাদি। (৩) বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বাতানুকূল যন্ত্র, ফ্যান ইত্যাদি। ছোটো ছোটো : রেফ্রিজারেটর, টেলিফোন, বাতানুকুল যন্ত্র ,ফ্যান ইত্যাদি।
প্রশ্ন | ১৩ .ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কোথায় গড়ে উঠেছে?
উত্তর : (১) অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান : ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বেশি পরিমাণে ইস্পাত ও কয়লার প্রয়োজন হয় বলে এই শিল্পগুলি সাধারণত দেশের বিভিন্ন কয়লাখনি এবং লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রের কাছাকাছি অঞ্চলে গড়ে ওঠে। এ ছাড়া (২) বিদ্যুৎ শক্তির সহজলভ্যতা; (৩) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা; (৪) স্থানীয় চাহিদা এবং (৫) কারিগরি নৈপুণ্যের প্রভাবেও এই শিল্প স্থাপিত হয়। অন্যদিকে, (৬) অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ থাকলে বাজারের কাছেও এই ধরনের শিল্প গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন ১৪ . রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি কী কী ?
উত্তর : রেলইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল— (১) কাঁচামাল লোহা ও ইস্পাত এর জোগান, (২) উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, (৩) প্রচুর মূলধন, (৪) পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ ও সুলভশ্রমিক, (৫) বিদ্যুৎশক্তির সহজলভ্যতা, (৬) উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা (৭) উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বাজারজাত করার সুযোগসুবিধা ইত্যাদি ।
প্রশ্ন ১৫. ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পগুলি বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে কেন?
উত্তর : ভারতের বেশিরভাগ পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে, কারণ—(১) ভারতে যথেষ্ট পরিমঃ অপরিশোধিত খনিজ তেল পাওয়া যায় না। এই জন্য বিদেশ থেকে জাহাজ-এর মাধ্যমে আমদানি করা অপরিশোধিত খনিঃ তেলের ওপর ভারতের পেট্রোরসায়ন কেন্দ্রগুলি নির্ভরশীল। এ ছাড় (২) পেট্রোরসায়ন কেন্দ্রগুলিতে উৎপন্ন দ্রব্যগুলি জলপাং জাহাজযোগে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এককথায় বিদেশ থেরে অপরিশোধিত খনিজ তেল জাহাজযোগে আমদানি ও পেট্রোরসায়ন কেন্দ্রগুলিতে উৎপন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুবিধার জন্য ভারতের পেট্রোরসায়ন কেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ বন্দরের কাছে গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ১৬ . পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামাল কীভাবে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর : (১) ন্যাপথা ও (২) জ্বালানি গ্যাস হল অপরিশোধিত খনিজ তেলের প্রধান উপজাত দ্রব্য। খনিজ তৈল খনি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। এ ছাড়া খনিজ তৈলশোধনাগারগুলিতে ইথেন, মিথেন, প্রোপেন, পলিমার, ইলাস্টোমার প্রভৃতি নানান ধরনের হাইড্রোকার্বনযুক্ত জ্বালানি গ্যাসও উৎপন্ন হয়। পেট্রোলিয়াম খনিজ তৈলখনিতে প্রাপ্ত ন্যাপথা ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে নানান জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইথেন, মিথেন, প্রোপেন, বুটেন, পেনটেজ, হেক্সেন, ইথানল, প্রোপিলিন, বেনজল, বুটাডি } প্রভৃতি উপজাত রাসায়নিক পদার্থ (Chemicals) এবং যৌগিক পদার্থ (Compounds) উৎপন্ন হয়।
প্রকৃতপক্ষে, অশোধিত খনিজ তেল থেকে উপজাত { হিসাবে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও যৌগিক পদার্থগুলি হল পেট্রোরসায়ন শিল্পের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল। নানান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাদের থেকে কৃত্রিম সুতো (টেরিলিন, পলিয়েস্টার প্রভৃতি), পাি জটিল নাইলন,পলিয়েস্টার প্রভৃতি), প্লাস্টিক, পলিমার, পিভিসি, ফোম প্রভৃতি কৃত্রিম রবার জাতীয় পদার্থ এবং রং, কীটনাশক, ওষুধ, সুগন্ধি নর প্রভৃতি অসংখ্য ভোগ্যপণ্য তৈরি করা হয়।
প্রশ্ন ১৭] পেট্রোরসায়ন শিল্পের গুরুত্ব কী কী ? *
উত্তর : খনি থেকে প্রাপ্ত অশোধিত খনিজ তেল (কুই পেট্রোলিয়াম) পরিশোধনের নানান পর্যায়ে তার থেকে (১) বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি গ্যাস (যেমন: রান্নার গ্যাস প্রভৃতি), (২) নান রকমের জ্বালানি তেল (যেমন: পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন প্রভৃতি) এবং (৩) বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়, যেমন (i) ন্যাপথা (ন্যাপথা হল অশোধিত পেট্রোলিয়ামের একটি মূল উপজাত দ্রব্য), (2) ইথিলিন, 3) রাসায়নিক সার, @ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক, পিভিসি ও পলিমার জাতীয় দ্রব্য (এইসব কাঁচামাল থেকে বালতি, মগ, চঞ্চল থেকে শুরু করে পাইপ, নানান ধরনের যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ নিরোধক সামগ্রী প্রভৃতি অসংখ্য জিনিস তৈরিকরা হয়ে থাকে), (চ) টেরিলিন প্রভৃতি কৃত্রিম তন্তুজাত বস্তু, ৪) অ্যাসফল্ট (রাস্তা করার কাজে ব্যবহৃত হয়), রাসায়নিক আঠা, রং, বার্নিশ, প্যারাফিন (কৃত্রিম মোম জাতীয় বস্তু প্রভৃতি দ্রব্য), (৪) বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও কীটনাশক, (9) বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য (ভেসলিন, মলম, সুগন্ধি দ্রব্য, দাড়ি কামানোর সাবান, প্রভৃতি)।
প্রশ্ন ১৮ | ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের সমস্যাগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর : ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পের সমস্যাগুলি হল— (১) ভারত খনিজ তেল উত্তোলনে স্বয়ম্ভর না হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ খনিজ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ক্রমাগত তেলের ঊর্ধ্বমুখী দাম এই শিল্পের অন্যতম বাধা। (২) ভারত, পেট্রোরসায়ন শিল্পে নিযুক্ত উন্নত দেশগুলির মতো অত উন্নত নয়। (৩) উন্নত দেশগুলির সঙ্গে ভারতীয় সংস্থাগুলি তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। (৪) সারা ভারতজুড়ে খনিজ তেল শোধনাগার স্থাপিত হলেও পেট্রোরসায়ন শিল্প কেবলমাত্র পশ্চিম ভারতেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়াও (৫) পরিকাঠামোগত নানান সমস্যা, (৬) পরিবেশ দূষণের ভয়, (৭) উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার অভাব, (৮) মূলধনের অভাব ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৯ . হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভারী শিল্প গড়ে উঠতে পারে না কেন?*
উত্তর:- কোনো অঞ্চলে ভারী শিল্প স্থাপন করতে গেলে : (১) সেই অঞ্চলে সেই শিল্পের প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, (২) প্রচুর বিদ্যুৎ ও জলের সরবরাহ, (৩) সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক, (৪) উন্নত যোগাযোগ এবং (৫) সড়ক, রেল ও জল পরিবহণ ব্যবস্থা, (৬) নিকটবর্তী বন্দর এবং (৭) জীবনধারণের | সর্ব সুবিধাযুক্ত বড়ো শহর থাকতে হবে। এ ছাড়া, (৮) ভারী শিল্প স্থাপনের জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন। কিন্তু হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ভারী শিল্প স্থাপনের এইসব শর্তের কোনোটিই সহজলভ্য নয় বলে এই অঞ্চলে ভারী শিল্প গড়ে উঠতে পারেনি।
রচনাধর্মী প্রশ্ন:
প্রশ্ন ১ .মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি লেখো। অথবা, পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশের কারণগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। অথবা, পশ্চিম ভারতের কৃয় মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের একদেশীভবনের কারণ কী ? অথবা,ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ অথবা, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প বেশি গড়ে ওঠার কারণ কী কী ? অথবা, মুম্বাই-আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের একদেশীভবনের কারণ কী? *★*★ [ পর্ষদ নমুনা [১৭] অথবা, মুম্বই ও আমেদাবাদে কার্পাস বয়ন শিল্প প্রসার লাভ করেছে কেন ?
উত্তর : পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যে (মুম্বাই ও আমেদাবাদে) কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশ, উন্নতি তথা একদেশীভবন/কেন্দ্রীভবনের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল :
১. সুলভ কাঁচামাল : (১) নিকটবর্তী কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল (শোলাপুর, নাগপুর, নাসিক ও ওয়ার্থা) এবং (২) গুজরাট সমভূমিতে বিপুল পরিমাণে কার্পাস তুলো উৎপন্ন হয় বলে এখানে সুলভে প্রাপ্ত কাঁচামালের সুবিধা রয়েছে।
২. উপযুক্ত আর্দ্র জলবায়ু : আরব সাগরের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু সুতো তৈরি এবং কাপড় বোনার পক্ষে খুবই উপযোগী, কারণ আর্দ্র জলবায়ুতে সুতো সহজে ছিঁড়ে যায় না।
৩. বন্দরের সান্নিধ্য : নিকটবর্তী মুম্বাই, কাণ্ডালা, মামাগাওপ্রভৃতি বন্দর মারফত মিশর, সুদান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ থেকে উন্নত মানের লম্বা আঁশযুক্ত কাঁচা তুলো এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করার সুবিধা এবং তৈরি বস্ত্র ও পোশাক বিদেশে রপ্তানির সুবিধা রয়েছে। কার্পাস বস্তু বয়ন শিল্প
৪. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : জালের মতো বিছানো সড়ক, রেল ও বিমান পথের মাধ্যমে পশ্চিম ভারতের এই অঞ্চল (বিশেষত মুম্বাই ও আমেদাবাদ) অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে সুসংযুক্ত।
৫. মূলধন প্রাপ্তির সুবিধা : অভিজ্ঞ ও ধনী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের (গুজরাটি, পারসি, ভাটিয়া প্রভৃতি) প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ এই অঞ্চলে কার্পাস শিল্পের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করেছে।
৬. অন্যান্য কারণ : (১) মুম্বাই-আমেদাবাদ অঞ্চলের সুলভ ও কর্মদক্ষ শ্রমিক, (২) যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যের সহজলভ্যতা, (৩) জনবহুল ভারতের বিপুল চাহিদা, (৪) মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলের সুলভ বিদ্যুৎ, (৫) মহারাষ্ট্রও গুজরাট রাজ্যে শিল্প বিকাশের উপযুক্ত পরিকাঠামো, (৬) মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলের নদীগুলির কাপড় রং ও গ্রিড করার উপযোগী আদর্শ মৃদু ও স্বচ্ছ জল (1) মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের দূরদর্শী শিল্পোদ্যোগী এবং (৮) কর্মদক্ষ রাজ্য প্রশাসন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির বিশেষ সহায়ক হয়েছে।
প্রশ্ন ২. ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে কার্পাস বস্ত্রশিল্পের উন্নতির অনুকূল অবস্থাগুলি কি কি ?
উত্তর : তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক, গোয়া এবং পুদুচেরি রাজ্য দক্ষিণাঞ্চলের অন্তর্গত। কার্পাস বয়ন শিল্পে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান:
১. সুলভ কাঁচামাল : তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকে প্রচুর কাঁচা তুলোর উৎপাদন হয়।
২. আর্দ্র জলবায়ু আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের নৈকট্যের জন্য এই অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু সুতো তৈরি এবং বস্ত্র বয়নের পক্ষে আদর্শ।
৩. সুলভ বিদ্যুৎ এই অঞ্চলে সুলভে তাপবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
৪. বন্দরের নৈকট্য : নিকটবর্তী চেন্নাই, কোচি, নিউ ম্যাঙ্গালোর ও নিউ ভুতিকোরিন বন্দরের মাধ্যমে মালপত্র আমদানি-রপ্তানির সুবিধা হয়।
৫. সুলভ শ্রমিক : ঘনবসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে সুলভে শ্রমিক পাওয়া যায়।
৬. চাহিদা জনবহুল ভারতের বিপুল অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রভৃতি কারণগুলির জন্য ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে কার্পাস বন্ধু বয়ন শিল্পের প্রভূত উন্নতি সম্ভবপর হয়েছে।
৭. পরিবহণ : এই অঞ্চলের সড়ক পরিবহণ ও রেল পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত।
৮. মূলধন : এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ থাকায় বিভিন্ন শিল্পপতি তাদের মূলধন বিনিয়োগ করেছেন।
প্রশ্ন ৩. পূর্ব ভারতে লৌহ-আকরিক ও কয়লা সৌহ-ইস্পাত শিল্পের অবস্থানকে কীভাবে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ (দুর্গাপুর, কুলটি ও বার্ণপুর), ওড়িশা (রাউরকেলা) ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে (বোকারো ও জামসেদপুর) ৬টি বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পূর্ব ভারতে একইসঙ্গে বিভিন্ন লৌহ আকরিক খনি ও কয়লাখনির নৈকটাই হল এই অঞ্চলে সৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রধান কারণ, যেমন:
১. পূর্ব ভারতের লৌহ আকরিক খনিগুলির অবস্থান :
• ওড়িশা রাজ্যের লৌহ খনিগুলির অবস্থান : পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যের (১) ময়ূরভঞ্চ জেলার (1)বাদাম পাহাড়, 2 বোনাই, 3) গরুমহিষানি, 4 সুলাই পাত, (২) কেওনঝ জেলার @ ঠাকুরানি, ও বোলানি, ও বাঁশপানি, (৩) সম্বলপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চল, (৪) সুন্দরগড় জেলার কিরিবুরু এবং (৫) কোরাপুট জেলার নানান খনি থেকে প্রায় _লৌহ-আকরিকের ওপর ভিত্তি করে পূর্ব ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পগুলি গড়ে উঠেছে।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের লৌহ খনিগুলির অবস্থান : পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের (১) সিংভূম জেলার (1) বুদাবুরু, 2 পানশিরাবুর আকরিক লৌহখনি 3 মেঘাহাতুরু, ও রাজোরিবুরু, 5 নুটুবুরু, ও কোটামাটির, 7 নোয়ামুণ্ডি, ৪ চিরিয়া, @ গুয়া, বড় জামদা, সাসংশ, = বাগিয়াবুরু প্রভৃতি খনি থেকে হেমাটাইট জাতীয় উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক পাওয়া যায়।
এ ছাড়া (২) হাজারিবাগ জেলা, (৩) ধানবাদ জেলা এবং (৪) সাঁওতাল পরগনার বিভিন্ন স্থানে ম্যাগনেটাইট শ্রেণির অতি উৎকৃষ্ট আকরিক লোহা পাওয়া যায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চিরিয়া হ বিশ্বের একক বৃহত্তম লৌহখনি।
২. পূর্ব ভারতের কয়লাখনিগুলির অবস্থান :
(১) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসানসোল-রানিগঞ্জ, (২) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের @ ঝরিয়া, 2 ধানবাদ, 3 পূর্ব বোকারো, @ পশ্চিম বোকারো, 5 করণপুরা, 6 গিরিডি, 7 ডালটনগণ, ৪) রাজমহল, ও ৪) রামগড় অঞ্চলের কয়লাখনিগুলি থেকে পূর্ব ভারতের অধিকাংশ কয়লা পাওয়া যায়, যা এই অঞ্চলের লৌহ-ইস্পাত কারখানাগুলিকে সচল রাখে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ঝরিয়া হল ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ কয়লাখনি।
৩. পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যের (1) তালচের, 2 রামপুর, 3) লাজকুরিয়া, ও গামেরা প্রভৃতি হল ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি। উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, নিকটবর্তী অঞ্চলে বলয়ের আকারে গড়ে ওঠা কয়লা ও লৌহ খনিগুলির নৈকটা পূর্বভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অবস্থানকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছে।
প্রশ্ন ৪.দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার তিনটি কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। অথবা, পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী কী? অথবা, দুর্গাপুর ও কুলটি-বার্ণপুর লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণ কী কী ? *
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের বার্ণপুর, কুলটি এবং দুর্গাপুরে ৩টি বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর/কুলটি/বার্ণপুর অঞ্চলে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহখনির নৈকট্য : পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী (ক) ওড়িশা রাজ্যের (১) ময়ূরভঞ্জ জেলার বাদামপাহাড়, বোনাই, 0 গরুমহিষানি, O সুলাইপাত, (২) কেওনঝড় জেলার ঠাকুরানি, @ বোলানি এবং (৩) সুন্দরগড় জেলার ও কিরিবুরু ও (2) মেঘাহাতুরুরু হল ভারতবিখ্যাত লৌহখনি। (খ) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম জেলার চিরিয়া, গুয়া, @ নোয়ামুণ্ডি এবং @ পানশিরাবুরু প্রভৃতি স্থানে ভারতের বিখ্যাত লৌহ খনিগুলো অবস্থান করছে। নিকটবর্তী ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্যের ভারতবিখ্যাত লৌহ খনিগুলির নৈকট্য দুর্গাপুর তথা পশ্চিমবঙ্গে (কুলটি-বার্ণপুর ও দুর্গাপুরে) লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : পশ্চিমবঙ্গের অতি নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে দামোদর উপত্যকার ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি অঞ্চল (রানিগঞ্জ-আসানসোল ও ঝরিয়া-ধানবাদ অঞ্চল)। এই দুই অঞ্চল থেকে ভারতের বেশিরভাগ কয়লা | উত্তোলিত হয়। একইসঙ্গে লৌহ খনি ও কয়লাখনির নৈকট্য হল দুর্গাপুর তথা পশ্চিমবঙ্গে (কুলটি-বার্ণপুর ও দুর্গাপুরে) লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণ।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : দুর্গাপুর তথা পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ওড়িশার @ গাংপুর,
@ সুন্দরগড়, বীরমিত্রপুর প্রভৃতি অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপার ও ডলোমাইট পাওয়া যায়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন নিকেল খনির নৈকট্য : দুর্গাপুর তথা পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, @ হিন্দোয়ারা, @ জব্বলপুর এবং ওড়িশার @ বোনাই, @ গাংপুর, @ কোরাপুট, @ কালাহান্ডি প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল পাওয়া যায়।
৫. বিদ্যুৎ : পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, বক্রেশ্বর ও D.V.C.-র বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি থেকে এই অঞ্চলে বিদ্যুতের জোগান পাওয়া যায়।
৬. পরিবহণ : পূর্ব রেলপথ এবং ২ নং, ৫ নং, ৬ নং এবং ৩৪ নং জাতীয় সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক : পশ্চিমবঙ্গ এবং নিকটবর্তী বিহার ও ঝাড়খণ্ডে যথেষ্ট সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : হুগলি শিল্পাঞ্চলে লৌহ-ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
৯. অন্যান্য কারণ : @ নিকটবর্তী কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের অবস্থান এবং @ দামোদর, জামুনিয়া, বরাকর প্রভৃতি নদীর অফুরন্ত জলভাণ্ডার পশ্চিমবঙ্গে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অনুকুল ভৌগোলিক পরিবেশের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৫ .ভারতের যে-কোনো একটি লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্রের অবস্থানগত সুবিধাগুলি বিশ্লেষণ করো। অথবা, জামসেদপুরে টিসকো লৌহ ও ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের খনিজ সম্পদগুলি কোন্ কোন্ অঞ্চল থেকে আসে ? *
উত্তর : ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে জামসেদজি টাটার পরিকল্পনায় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামসেদপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানার প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এই কারখানাটিই হল ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বেসরকারি লৌহ-ইস্পাত কারখানা।
জামসেদপুরে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহখনির নৈকট্য : জামসেদপুরের নিকটে ওড়িশা রাজ্যের (১) ময়ূরভঞ্জ জেলার বাদামপাহাড়, @ বোনাই, @ গরুমহিষানি, O সুলাইপাত, (২) কেওনঝড় জেলার চিরিয়া, @ গুয়া, @ নোয়ামুণ্ডি অঞ্চলে ভারতের বিখ্যাত লৌহখনিগুলো অবস্থান করছে। জামসেদপুরের নিকটবর্তী ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ভারতবিখ্যাত লৌহ খনিগুলির নৈকট্য জামসেদপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : জামসেদপুরের অতি নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে- 1 পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ-আসানসোল কয়লাখনি, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ঝরিয়া ধানবাদ ও বোকারো কয়লাখনি এবং রানিগঞ্জ-আসানসোল এবং ও ছত্তিশগড় রাজ্যের কোরবা কয়লাখনি অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলি থেকে ভারতের বেশিরভাগ { কয়লা উত্তোলিত হয়।একইসঙ্গে লৌহ খনি ও কয়লাখনির নৈকট্য হল জামসেদপুর লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণ। পশ্চিমবলা ওড়িশা লন Free & "বিদ্যুৎ উৎপাদন কে ● তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : জামসেদপুরের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ওড়িশার গাংপুর ও বিরমিত্রপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপাথর এবং গাংপুর ও সুন্দরগড়ে ডলোমাইট পাওয়া যায়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল খনির নৈকট্য : ঝাড়খণ্ডের নিকটবর্তী মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, ছিন্দওয়ারা, জব্বলপুর এবং ওড়িশার বোনাই, গাংপুর, কোরাপুট, কালাহান্ডি প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল পাওয়া যায়।
৫. বিদ্যুৎ : টাটা স্টিল কোম্পানির নিজস্ব তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপন্ন বিদ্যুৎ এই কারখানাটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে।
৬. পরিবহণ : দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং ২,৫,৬,২৩,৩১ এবং ৩৩নং জাতীয় সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক : ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্যে আদিবাসী শ্রেণির যথেষ্ট সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : নিকটবর্তী ছোটনাগপুর শিল্পাঞ্চল, হলদিয়া শিল্পাঞ্চল ও হুগলি শিল্পাঞ্চলে এই কারখানায় উৎপন্ন লৌহ-ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
৯. অন্যান্য কারণ : O নিকটবর্তী কলকাতা, হলদিয়া ও পারাদ্বীপ বন্দরের অবস্থান এবং @ সুবর্ণরেখা, খরকাই প্রভৃতি নদীর অফুরন্ত জলভাণ্ডার জামসেদপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন | ৬ | ভিলাই লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী কী?
উত্তর : ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ জেলার ভিলাইতে ভারতের বৃহত্তম লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি গড়ে উঠেছে। ভিলাই লৌহ-ইস্পাত কারখানায় প্রধানত ভারতীয় রেলপথের জন্য রেললাইন তৈরি করা হয়।ভিলাই-এ লৌহ ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহ খনির নৈকট্য : ভিলাই লৌহ-ইস্পাত কারখানার অদূরেই ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ, @ ডালিরাজহারা, @ বাস্তার ও @ বাইলাডিলায় ভারতের বিখ্যাত লৌহ খনিগুলো অবস্থান করছে। ছত্তিশগড় রাজ্যের ভারতবিখ্যাত লৌহ খনিগুলির নৈকটাই হল ভিলাই-এ লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপনের অন্যতম কারণ। ভিলাই লৌহ-ইস্পাত কারখানার অবস্থান মধ্যপ্রদেশ মহারাষ্ট্র ছত্তিশগড় A ভিলাই ঝাড়খণ্ড পশ্চিমবঙ্গ বীরমিরপুর ওড়িশা ছত্তিশগড় আকরিক সৌহ খনি * তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন বেশ
২. কয়লাখনির নৈকট্য : ছত্তিশগড়ের কোরবা এবং ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া ও বোকারো খনি থেকে ভিলাই লৌহ-ইস্পাত কারখানায় কয়লা সরবরাহ করা হয়। কোরবা খনির কয়লা নিম্নমানের হওয়ায় ঝরিয়া কয়লাখনি থেকে উৎকৃষ্টমানের কয়লা এনে মিশিয়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে লৌহ খনি ও কয়লাখনির নৈকট্য হল ভিলাইতে ■ লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার প্রধান কারণ।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : | জব্বলপুর এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের নন্দিনী ও পূর্ণপাণি খনি থেকে = লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপাথর পাওয়া যায়। মধ্যপ্রদেশের এ ছাড়া ওড়িশা রাজ্যের সুন্দরগড় ও বীরমিত্রপর খনি থেকে টি ডলোমাইট পাওয়া যায়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল খনির নৈকট্য : মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা, মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, ছিন্দওয়ারা, জব্বলপুর এবং ওড়িশার বোনাই, গাংপুর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল পাওয়া যায়।
৫. বিদ্যুৎ : কোরবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ভিলাই ইস্পাত কারখানার নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই কারখানার বিদ্যুতের জোগান পাওয়া যায়।
৬. পরিবহণ : দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং ৬ নং জাতীয় সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক : এই অঞ্চলে যথেষ্ট সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : মধ্য ও পশ্চিম ভারতে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং { শিল্পের বিকাশ হওয়ায় ভিলাই কারখানায় উৎপাদিত লৌহ-ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
১. অন্যান্য কারণ : মাত্র ৫৬৫ কিমি দূরত্বে বিশাখাপত্তনম বন্দরের অবস্থান এবং @ মহানদী নদীর তেণ্ডুল জলাধারের অফুরন্ত জলভাণ্ডার ভিলাইয়ের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন | ৭ | রাউরকেলা লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী কী ?
উত্তর : ওড়িশার সম্বলপুর জেলার ব্রাক্ষ্মণী নদীর তীরে রাউরকেলা লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি অবস্থিত। বর্তমানে এই কারখানার আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। রাউরকেলায় প্রধানত বিশাখাপত্তনম জাহাজ নির্মাণ কারখানায় সরবরাহের জন্য ইস্পাতের পাত তৈরি করা হয়। রাউরকেলায় লৌহ ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহ খনির নৈকট্য : (ক) ওড়িশা রাজ্যের (১) ময়ূরভঞ্জ জেলার বাদামপাহাড়, বোনাই, গরুমহিষানি, @ সুলাইপাত, (২) কেওনঝড় জেলার @ ঠাকুরানি, @ বোলানি; (৩) সুন্দরগড় অঞ্চলের O কিরিবুরু, @ মেঘাহাতুবুরু; (খ) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম জেলার চিরিয়া, গুয়া এবং (গ) ছত্তিশগড় রাজ্যের ® দুর্গ, @ বাস্তার ও ও বাইলাডিলায় ভারতের বিখ্যাত লৌহখনিগুলি অবস্থান করছে। নিকটবর্তী ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্যের ভারতবিখ্যাত লৌহখনিগুলির নৈকট্য রাউরকেলায় লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : রাউরকেলার কিছুটা দূরে অবস্থান করছে ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি অঞ্চল (রানিগঞ্জ-আসানসোল ও ঝরিয়া-ধানবাদ-গিরিডি-বোকারো অঞ্চল)। এই অঞ্চলগুলি থেকে রাউরকেলা ইস্পাত কারখানার প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ করা হয়। কয়লাখনি ও বন্দরের দূরত্ব এই লৌহ-ইস্পাত কারখানাটির ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। তবে, যে রেলওয়াগনগুলি এই অঞ্চল থেকে কুলটি-বার্ণপুরও দুর্গাপুর লৌহ-ইস্পাত কারখানারজন্য লৌহ আকরিক বহন করে নিয়ে যায়, ফেরার পথে তারাই ■ ঝরিয়া খনি থেকে কয়লা বহন করে নিয়ে এসে পরিবহণ খরচ বেশ কিছুটা কমিয়ে ফেলে।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ওড়িশার গাংপুর, বীরমিত্রাপুর, হাতাবাড়ি এবং ছত্তিশগড়ের পূর্ণপাণি খনি থেকে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপাথর পাওয়া যায়। এ ছাড়া ওড়িশা রাজ্যের সম্বলপুর ও ছত্তিশগড় রাজ্যের বড়োদুয়ার অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ডলোমাইট প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল খনির নৈকট্য : নিকটবর্তী মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, ছিন্দওয়ারা, জব্বলপুর এবং ওড়িশার বোনাই, গাংপুর, কালাহাতি, কোরাপুট প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে হ্যাম্পানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল পাওয়া যায়।
৫. বিদ্যুৎ মহানদীর ওপর নির্মিত হিরাকুদ জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রাউরকেলা কারখানার প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়।
৬.পরিবহণ : দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় রেলপথ এবং ২.১৫, ২৩, ৩২, ৩৩, ৭৫ এবং ৭৮ নং জাতীয় সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক এই অঞ্চলে যথেষ্ট সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ এই কারখানার ব্যাপক উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
৯. অন্যান্য কারণ ( কলকাতা (দূরত্ব ৫৩৫ কিমি), পারাদ্বীপ (দূরত্ব ৩৮০ কিমি), বিশাখাপত্তনম (দূরত্ব ৭০৪ কিমি) বন্দরের অবস্থান এবং রাণী, শঙ্খ, দক্ষিণ কোয়েল প্রভৃতি নদী এবং মন্দিরা জলাধারের অফুরন্ত জলভাণ্ডার রাউরকেলায় লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন ৮. বোকারো লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী কী? অথবা, বোকারো লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণ নির্দেশ করো। অথবা, ভারতে যে-কোনো একটি সরকারি লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখো।
উত্তর : ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দামোদর ও বোকারো নদীর সংগমস্থলের উত্তরে বোকারো নামক স্থানে বোকারো লৌহ-ইস্পাত কারখানা অবস্থিত। বর্তমানে এই কারখানাটির সম্প্রসারণের কাজ চলছে। পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন শুরু হলে বোকারো কারখানাটি হবে ভারতের বৃহত্তম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লৌহ-ইস্পাত কারখানা। বোকারো লৌহ ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহ খনির নৈকট্য :বোকারোর নিকটবর্তী (ক) ওড়িশা ■ রাজ্যের (১) সুন্দরগড় জেলার কিরিবুরু, @ মেঘাহাবুর এবং (খ) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম জেলার(1) চিরিয়া,@ গুয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ভারতের বিখ্যাত লৌহ খনিগুলো অবস্থান করছে। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্যের ভারত-বিখ্যাত লৌহখনিগুলির নৈকট্য বোকারোয় লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে তোলার অন্যতম কারণ।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : বোকারোর অতি নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি বলয় (বোকারো, জিৎপুর, চাসনালা এবং ঝরিয়া-ধানবাদ কয়লাখনি অঞ্চল)। এইসব অঞ্চল থেকে বোকারো ইস্পাত কারখানায় কয়লা সরবরাহ করা হয়। একইসঙ্গে লৌহ খনি ও কয়লাখনির নৈকট্য হল বোকারোয় লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণ।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : বোকারোর নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ওড়িশার গাংপুর ও বীরমিত্রপুর এবং ঝাড়খণ্ডের ভবনাথপুর, পালামৌ ও ডালটনগঞ্জ অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপাথর পাওয়া যায়। এ ছাড়া নিকটবর্তী ছত্তিশগড় রাজ্যের বিলাসপুর অঞ্চল থেকে বোকারো ইস্পাত কারখানার ডলোমাইট সরবরাহ করা হয়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল খনির নৈকট্য : বোকারোর নিকটবর্তী মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, ছিন্দওয়ারা, জব্বলপুর এবং ওড়িশার বোনাই, গাংপুর প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল পাওয়া যায়।
৫. বিদ্যুৎ : বোকারো ও পাত্রাতু তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের সাহায্যে বোকারো কারখানার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হয়।
৬. পরিবহণ : পূর্ব রেলপথ এবং ২, ৬, ২৩, ৩২, ৩৩ এবং ১০০ জাতীয় সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক : এই অঞ্চলে যথেষ্ট সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : নিকটবর্তী ছোটোনাগপুর শিল্পাঞ্চলে (জামসেদপুর, রাঁচি প্রভৃতি অঞ্চল) লৌহ-ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
৯. অন্যান্য কারণ : নিকটবর্তী কলকাতা বন্দর ( = ৩২০ কিমি), ও হলদিয়া বন্দরের (দূরত্ব ৩৪২ কিমি) অবস্থান = এবং ৫ দামোদর নদের ওপর নির্মিত তেনুঘাট জলাধারের অসুস্থ জলভাণ্ডার বোকারোয় লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন ৯ . বিশাখাপত্তনম লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি কী কী?
উত্তর : ভারতের পূর্ব উপকূলে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে গড়ে ওঠা এই সরকারি লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি হল দাক্ষিণাত্যের প্রথম বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা। বিশাখাপত্তনম লৌহ ও ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠার ভৌগোলিক কারণগুলি হল :
১. লৌহ খনির নৈকট্য : নিকটবর্তী (ক) ছত্তিশগড় রাজ্যের ® দুর্গ, @ বাস্তার ও বাইলাডিলা এবং (খ) অন্ধ্রপ্রদেশের 0 কুডাপ্পা, @ কুর্ণল ও ও খাম্মাম লৌহ খনি থেকে এই কারখানায় লৌহ আকরিক সরবরাহ করা হয়। ছত্তিশগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের লৌহ খনিগুলির নৈকট্য বিশাখাপত্তনমে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : অন্ধ্রপ্রদেশের সিংগারেনি, ছত্তিশগড়ের কোরবা এবং ওড়িশার তালচের কয়লাখনি থেকে বিশাখাপত্তনম ইস্পাত কারখানায় কয়লা সরবরাহ করা হয়।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : অন্ধ্রপ্রদেশে ডাগিয়াপেটা অঞ্চলের খনিগুলি থেকে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একান্ত প্রয়োজনীয় চুনাপাথর এবং o মাধারাম (অন্ধ্রপ্রদেশ), ও বিলাসপুর (ছত্তিশগড়), ও ও বীরমিত্রপুর (ওড়িশা)-এর খনিগুলি থেকে বিশাখাপত্তনম লৌহ-ইস্পাত কারখানায় প্রয়োজনীয় ডলোমাইট সরবরাহ করা হয়।
৪. ম্যাঙ্গানিজ খনির নৈকট্য : বিশাখাপত্তনম লৌহ-ইস্পাত কারখানায় অন্ধ্রপ্রদেশের O চিপুরুপল্লি, @ শংকরপ্যালেম। কোটাভালসা খনির ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয়।
৫. বিদ্যুৎ : রামগুণ্ডাম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই কারখানায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হয়।
৬. পরিবহণ : পূর্ব উপকূলীয় রেলপথ এবং বিভিন্ন জাতীয়সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে। সংযুক্ত।
৭. শ্রমিক : এই অঞ্চলে যথেষ্ট সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া | যায়।
৮. ব্যাপক চাহিদা : অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও ওড়িশায় ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ এই কারখানাটির দ্রুত উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
৯. অন্যান্য কারণ : O নিকটবর্তী বিশাখাপত্তনম বন্দর (দূরত্ব মাত্র ৩০ কিমি) ও পারাদ্বীপ (৫৫৮ কিমি) বন্দরের অবস্থান এবং 1) তুঙ্গভদ্রা জলাধারের অফুরন্ত জলভাণ্ডার বিশাখাপত্তনম-এ লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন ১০. পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ কী কী ? [মা.প. [১৮]
উত্তর : পূর্ব ও মধ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ (দুর্গাপুর), ঝাড়খণ্ড (জামসেদপুর ও বোকারো), ওড়িশা(রাউরকেলা) এবং মধ্যভারতের ছত্তিশগড় (ভিলাই)-এ ৫টি বৃহদায়তন এবং একটি সংকর ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে। পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল :
১. লৌহ খনির নৈকট্য : পূর্ব ভারতের (ক) ওড়িশা রাজ্যের (i) ময়ূরভঞ্জ জেলার @ বাদামপাহাড়, @ বোনাই, @ গরুমহিষানি, ও সুলাইপাত ও (ii) কেওনঝড় জেলার ঠাকুরানি, @ বোলানি, @ বাঁশপানি, ও খুরবাঁধ; (খ) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম জেলার @ কিরিবুরু, @ বুদাবুরু, @ পানশিরাবুরু, ও মেঘাহাতুবুরু, ও রাজোরিবুরু, ও নুটুবুরু, কোটামাটিবুরু, ও নোয়াবুরু, ৩ চিরিয়া, গুয়া, বড় জামদা, 2 সাসংদা এবং (গ) মধ্যভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ, @ ডালিরাজহারা, ও বাস্তার ও © বাইলাডিলায় ভারতের বিখ্যাত লৌহ খনিগুলি অবস্থান করছে।
২. কয়লাখনির নৈকট্য : এই অঞ্চলের কাছেই অবস্থান করছে পূর্বভারতের (i) দামোদর-উপত্যকার ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আসানসোল-রানিগঞ্জ এবং ধানবাদ-ঝরিয়া), (ii) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের @ বোকারো, @ গিরিডি, @ করণপুরা, @ রা কমগড়, © রাজমহল © ডালটনগঞ্জ, ® হুতার প্রভৃতি কয়লাখনি, (iii) মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ↑ উমারিয়া, সিংগ্রাউলি, ও সোহাগপুর, O পেঞ, O কান্হা প্রভৃতি ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি, (iv) ওড়িশা রাজ্যের তালচের, © রামপুর, ও লাজকুরিয়া প্রভৃতি কয়লাখনি এবং (v) ছত্তিশগড় রাজ্যের O কোরবা, @ রামপুর, ও তাতাপানি, @ রামাকোলা, ® ঝিলিমিলি, ও বিশ্রামপুর প্রভৃতি ভারতবিখ্যাত কয়লাখনি। এই অঞ্চল থেকে ভারতের মোট কয়লা উত্তোলনের প্রায় ৭০% কয়লা উত্তোলিত হয়। 'একইসঙ্গে লৌহ ও কয়লাখনিগুলির নৈকট্যই হল পূর্ব ও মধ্যভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রধান কারণ'।
৩. চুনাপাথর ও ডলোমাইট খনির নৈকট্য : (i) ঝাড়খণ্ডের © ভবনাথপুর, ডালটনগঞ্জ; (ii) ওড়িশার ও গাংপুর,
@ বীরমিত্রপুর, © সুন্দরগড়, ও সম্বলপুর; (iii) ছত্তিশগড়ের 0 বিলাসপুর, হিরি, বড়োদুয়ার; (iv) পশ্চিমবঙ্গের জয়ন্তী এবং (v) মধ্যপ্রদেশের কাটনি অঞ্চলে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় চুনাপাথর ও ডলোমাইট পাওয়া যায়। রেওয়া হিন্দোয়ারা। বোলানি আকরিক লৌহ খনি বিশাখা পঞ্চনন বিশাখাপত্তনম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবন
৪. অন্যান্য কাঁচামালের সহজলভ্যতা : নিকটবর্তী অঞ্চলে ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন ও নিকেল (মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, ছিন্দওয়ারা, জব্বলপুর; মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা এবং ওড়িশার বোনাই, গাংপুর, কোরাপুট, কালাহান্তি, হাতিবাড়ি প্রভৃতি অঞ্চল) প্রচুর পরিমাণে মজুত থাকায় পূর্ব ও মধ্যভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।
৫. বন্দরের নৈকট্য : নিকটবর্তী কলকাতা, হলদিয়া এবং পারাদ্বীপ বন্দরের অবস্থান এই অঞ্চলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সহায়ক হয়েছে।
৩. সুলভ জলভাণ্ডার : বিভিন্ন নদীর ও জলাধারের অফুরন্ত জলভাণ্ডার এই অঞ্চলে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন ১১. ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সম্ভাবনা কী কী কারণে উজ্জ্বল ?
উত্তর : ভারতীয় লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সম্ভাবনা :
১. কাঁচা মালের সহজলভ্যতা : ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পে অতি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও শক্তি সম্পদের অভাব নেই, = যেমন : ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ঝরিয়া ও বোকারো, পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের কোরবা প্রভৃতি অঞ্চল । কয়লা সম্পদে সম্পদশালী। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ ও কেওনঝড়, = ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূম, ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ, বাস্তার এবং বাইলাডিলায় প্রচুর উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক পাওয়া যায়। এ ■ ছাড়া ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং ওড়িশায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর ও ডলোমাইট পাওয়া যায়।
২. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : ভারতের পরিবহণ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব রেলপথ এবং বিভিন্ন জাতীয় সড়কলৌহ-ইস্পাত শিল্পাঞ্চলকে দেশের বিভিন্ন বন্দর ও শিল্পকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
৩. যথেষ্ট চাহিদা : ভারতে লৌহ ও ইস্পাতের চাহিদার অভাব নেই। বিভিন্ন শিল্পের অগ্রগতির সঙ্গে তাল রেখে ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
৪. রপ্তানির সুযোগ : ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের রপ্তানি বাণিজ্যে প্রচুর সুযোগ আছে, কারণ উৎকৃষ্টমানের কয়লা পাওয়া যায় না বলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
৫. সরকারি উদারনীতি : পরিবর্তিত উদারনীতির সুবাদে সরকার দেশে লৌহ-ইস্পাতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বর্তমানে বেসরকারি মালিকানায় দেশে বহু ক্ষুদ্র ইস্পাত কারখানা স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে।
৬. ইস্পাত কারখানাগুলির আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে সরকারি নীতি : বর্তমানে ভারতের সরকারি উদ্যোগে চালিত লৌহ-ইস্পাত কারখানাগুলির সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য ভারত সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন ১২ ভারতের রেলইঞ্জিন মোটরগাড়ি নির্মাণকেন্দ্রগুলির বিবরণ দাও।
উত্তর : (ক) রেলইঞ্জিন ও রেল বগি নির্মাণ শিল্প : বর্তমানে তিনটি সরকারি সংস্থা ভারতের অধিকাংশ রেলইঞ্জিন তৈরি করে, যথা :
১. চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (চিত্তরঞ্জন, পশ্চিমবঙ্গ) : পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জনে প্রতিষ্ঠিত এই রেলইঞ্জিন কারখানায় আগে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি হত। ১৯৭১ সালের পর এখানে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করা হয় না। বর্তমানে এই কারখানায় বৈদ্যুতিক এবং ডিজেল | রেলইঞ্জিন তৈরি করা হয়।
২.ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস (বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ) : উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত এই রেলইঞ্জিন কারখানায় ■ ডিজেল রেলইঞ্জিন তৈরি হয়।
৩. ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (ভূপাল, মধ্যপ্রদেশ) : { মধ্যপ্রদেশের ভূপালে অবস্থিত এই সরকারি কারখানায় ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন নির্মাণ করা হয়।
৪. টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ | (TELCO : জামসেদপুর, ঝাড়খণ্ড) : ১৯৪৩ সালে তৎকালীন বিহারের (আজকের ঝাড়খণ্ড রাজ্য) জামসেদপুরে টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি ভারতের প্রথম রেলইঞ্জিন তৈরি { করে। এটি বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হয়। ১৯৭০ সালের পর থেকে এখানে রপ্তানির উদ্দেশ্যে মিটার গেজ রেলইঞ্জিন এবং ব্রডগেজ ডিজেল ও বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের নানা যন্ত্রাংশ তৈরি হয়।
(খ) মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প : ভারতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি = মোটরগাড়ি, বাস, মিনিবাস, ট্রাক, জিপ, স্কুটার, মোটর সাইকেল ■ প্রভৃতি তৈরি করা হয়, যথা : (১) কলকাতার কাছে হিন্দমোটরে ‘হিন্দুস্থান মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা মোটরস্ লিমিটেড”- এর কারখানায় অ্যামবাসাডার (পেট্রোল ও ডিজেল) ও কনটেসা গাড়ি এবং ট্রাক, বাস, মিনিবাস তৈরি হয়। (২) মুম্বাই শহরে ‘প্রিমিয়ার অটোমোবাইলস্ লিমিটেড' (ফিয়াট যাত্রীবাহী গাড়ি) এবং (৩) ‘মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা লিমিটেড' জিপগাড়ি ও } ছোটো ট্রাক তৈরি করে। (৪) তামিলনাড়ুর চেন্নাই-এ ‘অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড' বৃহদায়তন ট্রাক ও বাস তৈরি করে; {(৫) ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুরে অবস্থিত 'টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যার্ট লোকোমোটিভ কোং (টেলকো) ভারতের বিখ্যাত ট্রাক ও বাস { তৈরির প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি টেলকো ডিজেল চালিত মোটরগাড়ি জিপ গাড়িও তৈরি করছে। (৬) হরিয়ানার গুরগাঁও-এ { সরকার ও জাপানের সুজুকি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে মারুতি উদ্যোগ-এ না কেন্দ্রীয় স্থাপিতমারুতি উদ্যোগ-এ নানান মডেলের যাত্রাবাহী গাড়ি জিপসী নামে। দ্রুতগামী জিপ গাড়ি তৈরি হচ্ছে। (৭) এ ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে ইন্দো-জাপান সহযোগিতায় উত্তরপ্রদেশের সুরজপুরে (ডি. সি. এম.-টয়টো লিমিটেড) হালকা ধরনের মালবাহী ট্রাক তৈরি হচ্ছে। (৮) উত্তরপ্রদেশের লখনউ (স্কুটারস্ ইন্ডিয়া লিমিটেড), (৯) কানপুর (লোহিয়া লিমিটেড), (১০) হরিয়ানার ফরিদাবাদ, (১১) মহারাষ্ট্রের পুণে (বাজাজ লিমিটেড), (১২) কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু এবং (১৩) সরকারি উদ্যোগে অন্ধ্রপ্রদেশে (পি.এল. ১৭০) এবং (১৪) গুজরাটে (নর্মদা ১৫০) স্কুটার ও মোটর সাইকেল তৈরি হয়। ভারত সরকারের উদার আর্থিক নীতির সুবাদে ভারতে অত্যাধুনিক বিদেশি প্রযুক্তির সাহায্যে টয়োটা, হন্ডা, ওপেল, ফোর্ড, ল্যান্সার, হুন্ডাই, এমনকি মার্সেডিজ বেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন ১৩ | ভারতের মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকেন্দ্রগুলির নাম ।
উত্তর : ভারতের বিভিন্ন ধরনের সড়কযান নির্মাণ কেন্দ্র (বাণিজ্যিক, যাত্রী বহনকারী, দ্বিচক্র ও তিনচক্র যান)
প্রশ্ন ১৪| পশ্চিম ভারত পেট্রোরসায়ন শিল্পে উন্নত কেন? ★
উত্তর : পশ্চিম ভারতের গুজরাট (কয়ালি, বরোদা, দাহেজ, হাজিরা, জামনগর, গান্ধার প্রভৃতি অঞ্চল) এবং মহারাষ্ট্রে (ট্রাম্বে, নাগোধানে, চেম্বর, ধানে প্রভৃতি অঞ্চল) তৈলরসায়ন শিল্পকেন্দ্রীভূত হয়েছে, কারণ
১. পশ্চিম ভারতের তৈলখনিগুলির সহজলভ্য খনিজ তেল :
• মহারাষ্ট্র : পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বম্বে হাই (ভারতের বৃহত্তম খনিজ তেল উৎপাদক অঞ্চল) ও উত্তর বাসিনে তৈলখনিগুলির অবস্থান হল তৈলরসায়ন শিল্পে মহারাষ্ট্র রাজ্যের উন্নতির অন্যতম প্রধান কারণ। বর্তমানে মহারাষ্ট্র রাজ্যের অন্তত ৪টি স্থানে তৈলরসায়ন শিল্প কেন্দ্রীভূত হয়েছে, এগুলি হল (১) থানে, (২) ট্রাম্বে (৩) চেম্বর এবং (৪) নাগোধানে (ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশন)।
• গুজরাট স্বাধীনতার পর গুজরাট রাজ্যের (১) ক্যাম্বে উপসাগরীয় অঞ্চল (মেসানা, কালোল, বাকল, ঢোলকা, আলিয়াতে, লুনেজ, কাথানা), (২) আংরেশ্বর অঞ্চল (কোসাম্বা ও আংক্রেশ্বর) এবং (৩) আমেদাবাদ অঞ্চলে (আমেদাবাদ, নওগ্রাম, সানন্দ, কাডি ও ওয়াভেল) নিত্য নতুন তৈলখনি আবিষ্কার এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রচুর খনিজ তৈল উৎপাদন হল পেট্রোরসায়ন শিল্পে গুজরাট রাজ্যের উন্নতির প্রধান কারণ।
২. তৈলশোধনাগারগুলির নৈকট্য মহারাষ্ট্রের মুম্বাই-তে দুটি তৈলশোধনাগার এবং গুজরাটের হাজিরা, জামনগর ও ক্যালিতে ভারতের বৃহত্তম তৈলশোধনাগার স্থাপন পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এই সমস্ত তৈলশোধনাগারগুলিতে উৎপন্ন বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যগুলি পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল।
৩.বন্দরের নৈকট্য : মহারাষ্ট্রের মুম্বাই ও জওহরলাল নেহরু বন্দর, গুজরাটের কান্ডালা, গোয়ার মার্মাগাও, কর্ণাটকের নিউ ম্যাঙ্গালোর প্রভৃতি বন্দরগুলি পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এই-সমস্ত বন্দরগুলির মাধ্যমে তৈলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত খনিজ তেল এবং শিল্পসমৃদ্ধ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেট্রোরসায়ন শিল্পে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্য যেমন : পলিমার, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত বিভিন্ন দ্রব্য, কৃত্রিম রবার, ফোম ও কৃত্রিম চামড়াজাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য, টায়ার, পি.ভি.সি.-জাত দ্রব্য, পলিয়েস্টার তত্ত্ব, রং, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
৪. সুলভে প্রাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি : গুজরাট রাজ্যের উকাই, মহারাষ্ট্র রাজ্যের কয়না, টাটা, নাগার্জুন সাগর, তুঙ্গভদ্রা ড্যাম ও নিজাম সাগর এবং কর্ণাটক রাজ্যের বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত তাপবিদ্যুৎ এবং তারাপুর, কাকরাপাড়া প্রভৃতি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ পশ্চিম ভারতের পেট্রোরসায়ন কারখানাগুলিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
৫. পর্যাপ্ত মূলধন বিনিয়োগ : সরকারি প্রচেষ্টা ছাড়াও রিলায়েন্স, মফৎলাল, অসওয়াল, ইউনিয়ন কার্বাইড প্রভৃতি বেসরকারি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগ করা পর্যাপ্ত পুঁজি পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও দ্রব্যের বিশ্বব্যাপী চাহিদা এবং গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের উন্নত পরিকাঠামো এই অঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্পের দ্রুত উন্নতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ ।
প্রশ্ন । ১৫ ভারতের পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলির সংক্ষিপ্ত | পরিচয় দাও । উত্তর : ভারতের প্রধান প্রধান পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রগুলি
১. ট্রম্বে (ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড) : এটি হল- মহারাষ্ট্রে { অবস্থিত ভারতের প্রথম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র। এই কারখানায় উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল পলিথিলিন, বুটাইল স্পিরিট, অ্যাসেটিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
২. থানে-বেলাপুর (ন্যাশনাল অরগ্যানিক কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিস্ লিমিটেড) : ১৯৬৮ সালে বেসরকারি সংস্থা মফতলাল গোষ্ঠীর উদ্যোগে এই কেন্দ্রটি মহারাষ্ট্রে স্থাপিত হয়। এটি একটি সর্বাধুনিক পেট্রোরসায়ন কেন্দ্র। এখানে উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল ইথিলিন, প্রপিলিন, বেঞ্জিন, বুটাডিন ইত্যাদি।
৩. হাজিরা ও জামনগর (রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যালস্) : এটি রিলায়েন্স গোষ্ঠীর নিজস্ব শোধনাগারের ওপর ভিত্তি করে গুজরাটে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে কৃত্রিম তন্তু, রবার, প্লাস্টিক, পলিথিন ইত্যাদি উৎপন্ন হয়।
৪. ভদোদরা (ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশন লিমিটেড) : এই কারখানাটি ১৯৭৩ সালে গুজরাটে স্থাপিত হয়। এখানে বুটাডিন, ইথিলিন, প্রপিলিন ইত্যাদি উৎপন্ন হয়।
৫. কয়ালি : বেসরকারি উদ্যোগে গুজরাটের কয়ালিতে এই কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি ন্যাপথা উপজাত দ্রব্যের জন্য বিখ্যাত।
৬. চেন্নাই (হার্ডিলিয়া কেমিক্যালস্ লিমিটেড) ১৯৭০ সালে এই কারখানাটি চেন্নাইতে স্থাপিত হয়। এখানে উৎপন্ন দ্রব্যগুলি হল ফেনল, এসিটোন, কৃত্রিম তন্তু, ইত্যাদি।
৭. বঙ্গাইগাঁও (বঙ্গাইগাঁও পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড) ( এটি ১৯৭৪ সালে আসামে স্থাপন করা হয়। এখানে কৃত্রিম তত্ত্ব।
৮. হলদিয়া (হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস্ লিমিটেড) : ১৯৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, চ্যাটার্জি গ্রুপ, Tata Group এবং Indian Oil Corporation এর উদ্যোগে স্থাপিত হয়। এ উৎপাদন শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে। এখানে উৎপাদিত দ্রব্য হল ন্যাপথা, কৃত্রিম রবার, কৃত্রিম তত্ত্ব, পলিথিন ইত্যাদি। এ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য পেট্রোরসায়ন কেন্দ্রগুলি হল—
৯. ম্যাঙ্গালোর কেমিক্যালস্ অ্যান্ড ফার্টিলাইজারস লিমিটেড।
১০. মহিন্দ্রা পেট্রোকেমিক্যালস্ লিমিটেড।
১১. মানালি পেট্রোকেমিক্যালস্ লিমিটেড।
১২. নোভা পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড।
১৩. ন্যাশনাল ফার্টিলাইজারস্ লিমিটেড।
১৪. রাষ্ট্রীয় কেমিক্যালস্ অ্যান্ড ফার্টিলাইজারস্ লিমিটেড।
১৫. এশিয়ান ফার্টিলাইজারস্ লিমিটেড। ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৬ | ভারতের কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের অঞ্চলগুলির বর্ণনা দাও।*
উত্তর : কার্পাস বয়ন শিল্প ( Cotton textile Industry) : ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে ভারতীয় বয়ন শিল্পকে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যথা : (ক) পশ্চিমাঞল (খ) দক্ষিণাঞ্চল (গ) উত্তরাঞ্চল (ঘ) পূর্বাঞ্চল এবং (ঙ) মধ্যাঞ্চল।
[ক] পশ্চিমাঞ্চল (West Zone) : পশ্চিম ভারতের আরব সাগরের তীরবর্তী মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য দুটি এই অঞ্চলের অন্তর্গত। [1] মহারাষ্ট্র : বর্তমানে মহারাষ্ট্রে প্রায় ১১০টি কাপড়ের কল আছে। এই রাজ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বস্ত্রশিল্প কেন্দ্রগুলি হল : (১) পুণে (২) নাগপুর (৩) শোলাপুর (৪) আকোলা এবং (৫) জলগাঁও।
[2] গুজরাট : বর্তমানে গুজরাটে প্রায় ১২৫টি কাপড় কল আছে, এর মধ্যে একমাত্র আমেদাবাদ শহরেই ৭২টি কাপড় কল কেন্দ্রীভূত হয়েছে, এই আমেদাবাদকে ‘ভারতের ম্যাঞ্চেস্টার' বলে। গুজরাটের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্রগুলি হল : (১) সুরাট, (২) ব্রোচ, (৩) বরোদা, (৪) ভবনগর এবং (৫) রাজকোট। *
পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ : (i) কাঁচামাল : দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকায় উৎপন্ন তুলোর সহজলভ্যতা, (ii) আবহাওয়া : আর্দ্র আবহাওয়ায় সুতা ছিড়ে যাওয়ার কম সম্ভাবনা, (ii) বিদ্যুৎশক্তি : নিকটবর্তী ট্রম্বে, নাসিক এর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ভিরা, শিবপুরীর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ, (iv) বন্দর : নিকটবর্তী মুম্বাই, কাণ্ডালা, মার্মাগাঁও প্রভৃতি বন্দরের সান্নিধ্য, (v) মূলধন : স্থানীয় পার্শী, ভাটিয়া শিল্পপতিদের বিনিয়োগ,
(vi) শ্রমিক : মুম্বাই-এর নিকটবর্তী অঞ্চলের সুলভ শ্রমিক, (vii) বাজার : স্থানীয় অঞ্চলের বিশাল বাজারের চাহিদা, (viii) পরিবহন : পশ্চিম ও মধ্য রেলপথ ও জাতীয় সড়ক ৩, ৪, ৮, ১৭ এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এইসকল স্থানে শিল্পকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে।
• [খ] দক্ষিণাঞ্চল (South Zone) : তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক, গোয়া এবং পুদুচেরি রাজা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
• তামিলনাড়ু : কাপড় কলের সংখ্যা বিচারে তামিলনাড়ু রাজ্য ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে। বর্তমানে এই রাজ্যে কমবেশি ২২৫টি কাপড় কল আছে। এই রাজ্যের কোয়েম্বাটুর হল দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র। তা ছাড়া মাদুরাই, তিরুনেলভেলি ও সালেম এই রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্প কেন্দ্র।
• দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র : কেরলের (২৬টি কাপড় কল) তিরুবনন্তপুরম, ত্রিচুর ও কুইলন; অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া, গুন্টুর ও হায়দরাবাদ; কর্ণাটকের (২৬টি কাপড় কল) বেঙ্গালুরু ও হুবলি; গোয়া ও পুদুচেরি দক্ষিণাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র।
• দক্ষিণাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ : (i) অন্ধপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু রাজ্যের তুলো, (ii) উপকূলীয় আর্দ্র জলবায়ু, (iii) নিকটবর্তী শিবসমুদ্রম্, মেত্তুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎশক্তি, (iv) দক্ষিণ, দক্ষিণ-মধ্য রেলপথ, এবং ৮, ৪, ৭, ১৩, ১৭, ৪৭, ৪৯ নং জাতীয় সড়কের অবস্থান, (v) চেন্নাই, কোচি, বিশাখাপত্তনম বন্দরের নৈকট্য, (vi) স্থানীয় সুলভ শ্রমিক ও (vii) মূলধনের জোগান-এর জন্য এখানে শিল্পকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে।
[গ] উত্তরাঞ্চল (North Zone) : পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং রাজস্থানের পূর্বাংশ উত্তরাঞ্চলের অন্তর্গত। উত্তরপ্রদেশের কানপুর, আলিগড়, আরা ও মোরাদাবাদ; পাঞ্জাবের অমৃতসর ও লুধিয়ানা; হরিয়ানার হিসার ও ভিওয়ানি এবং দিল্লিতে বস্ত্র বয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে।
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে ৩২টি, পাঞ্জাবে ৯টি, হরিয়ানায় ৮টি, রাজস্থানে ১৮টি এবং দিল্লিতে ৪টি কাপড় কল আছে।
• শিল্প গড়ে ওঠার কারণ : (i) পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থানের কাঁচা তুলার জোগান, (ii) ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ থেকে জলবিদ্যুৎ শক্তি, (ii) মধ্য ও উত্তর রেলপথ ও ১, ২, ৮, ১০, ১৫ নং জাতীয় সড়কের অবস্থান, (iv) স্থানীয় সুলভ শ্রমিক ও (v) বাজারের চাহিদার জন্য এখানে বস্ত্র শিল্পকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে।
সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক। (iv) কলকাতা, হলদিয়া বন্দরের নৈকট্য (v) বাজারের বিপুল চাহিদা এখানে শিল্প স্থাপনের কারণ। (ঙ) মধ্যাঞ্চল (Middle Zone) : মধ্য-ভারতের মধ্যপ্রদেশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের : (১) গোয়ালিয়র (২) ভূপাল এবং (৩) ইন্দোর উল্লেখযোগ্য বস্ত্র শিল্পকেন্দ্র।
প্রশ্ন ১৭ | শিল্প স্থাপনের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : শিল্প স্থাপনের কারণসমূহ (Factors affecting the location of industries) : শিল্প স্থাপনের অনুকূল কারণগুলি হল : (i) কাঁচামানের গুরুত্ব : কাঁচামালের বণ্টন ও প্রকৃতির ওপর শিল্প স্থাপন অনেকাংশে নির্ভর করে। কাঁচামাল প্রধানত দুই ধরনের হয়। যথা : (ক) বিশুদ্ধ কাঁচামাল : এইসকল কাঁচামাল শিল্পজাত পণ্যে রূপান্তরিত হলেও তার ওজন কমে না। তাই এই ক্ষেত্রে শিল্প প্রধানত কাঁচামাল উৎস কেন্দ্রের নিকট বা বাজার বা অন্য যে-কোনো স্থানেই গড়ে তোলা হয়। উদাহরণ—কার্পাস বয়ন শিল্প।
(খ) অবিশুদ্ধ বা ওজন হ্রাসমান কাঁচামাল : এই-সমস্ত কাঁচামাল শিল্পজাত দ্রব্যে পরিণত করলে ওজন কমে যায়। তাই এই জাতীয় কাঁচামাল-নির্ভর শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে গড়ে ওঠে। উদাহরণ—চিনি শিল্প।
(ii) জল : শিল্প কার্যের বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। তাই যেখানে জলের প্রাচুর্য বেশি সেখানেই শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।
(iii) বিদ্যুৎ শক্তি : যে-কোনো ধরনের শিল্প স্থাপনে বিদ্যুৎ শক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ ইত্যাদি শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য যেখানে বেশি সেখানেই শিল্প স্থাপিত হয়।
(iv) পরিবহন ব্যবস্থা : কাঁচামাল ও উৎপন্ন দ্রব্য বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি ও বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানি করার জন্য উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা ও বন্দরের অবস্থান শিল্প স্থাপনের পক্ষে সহায়ক।
(v) শ্রমিক : যে-কোনো শিল্প স্থাপনের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন। সস্তায় দক্ষ ও শিক্ষিত শ্রমিকের জোগান যেখানে বেশি সেখানেই শিল্প গড়ে ওঠে।
(vi) রাজার : শিল্প দ্রব্যের বাজার বা চাহিদার ওপরও শিল্পের অগ্রগতি নির্ভরশীল। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে শিল্প দ্রব্যের চাহিদা শিল্পোন্নতির অন্যতম প্রধান কারণ।
(vii) মূলধন : শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, কারখানা নির্মাণ, কাঁচমাল ক্রয়, শ্রমিকের মজুরি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিদ্যুতের মূল্য, পরিবহণের ব্যয়, শ্রমিকদের থাকার জন্য গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি কাজের জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন।
প্রশ্ন ১৮. ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর : ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পক্ষেত্র বলতে মূলত দুটি ক্ষেত্রকে বোঝায় : (1) আই. টি. সেক্টর (Information Technology) ও (2) বি.পি.ও (Business Process Outsourcing)। এই ক্ষেত্র থেকে ২০১২ সালে ৭.৫% ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছানোর জন্য 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' (Digital India) প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। বেঙ্গালুরু { (Silicon Valley of India) হল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি ক্ষেত্র।
ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প চি পাকিস্তান নেপাল ভটান বাংলাদেশ মায়ানমার আরব সাগর Φ বঙ্গোপসাগর আফগানিস্তান নির্দেশিকা O তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারত Qat ভারত শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগর ভারতের উল্লেখযোগ্য তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পাঞ্চল সমূহ »
(১) বেঙ্গালুরু : এটি ভারতের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র। ইনফোসিস, উইপ্রো, ইনটেল, ইয়াহু, স্যাপ ল্যাব ইত্যাদি সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলো এখানে অবস্থিত। →
(২) চেন্নাই : চেন্নাই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র। এখানে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য Software কোম্পানিগুলি হল : অ্যাকসেঞ্চার, কগনিজ্যান্ট, টিসিএস, উইপ্রো, ইনফোসিস, ক্যাপজেমিনি ইত্যাদি।
» (৩) হায়দরাবাদ : এটি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র। এটি ভারতের সর্বপ্রথম Microsoft উন্নয়ন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ইনফোসিস, গুগল কগনিজ্যান্ট, ফেসবুক, এইচ.সি.এল, ডেল ইত্যাদি কোম্পানিগুলি এখানে অবস্থিত।
(৪) কলকাতা : শিল্প ১৯৯৪ সালে মুক্তদুয়ার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর থেকে এই শিল্পে জোয়ার এসেছে। ওয়েবেল, টাটা কন্সালটেন্সি সার্ভিস প্রভৃতি নানা প্রতিষ্ঠান বিধাননগরের সেক্টর V-এ ইতিমধ্যে কাজ চালু করেছে। উইপ্রো, ইনফোসিস প্রভৃতি { সংস্থাও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জ্ঞানভাণ্ডার সঞ্চালিত { জনকল্যাণমুখী সমাজ তৈরি এই শিল্পের মূল উদ্দেশ্য। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দুটি ভাগ রয়েছে, যেমন : (i) কম্পিউটার ইত্যাদি। যন্ত্রপাতি তৈরি ও সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ সম্মেলন বা হার্ডওয়্যার সেক্টর। { এবং (ii) জ্ঞান ও তথ্য মজুত করা এবং তার ভিত্তিতে বিভিন্ন { পরিষেবা প্রদান বা সফটওয়্যার সেক্টর, ব্যাংক, বিমা, কারিগরি নকশা ও মানচিত্র তৈরি, জীবন বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা, তথ্য বিনিময়, অ্যানিমেশন ও ঘরোয়া খেলাধুলায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। »
(৫) পুণে : পৃথিবীর বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্রগুলির মধ্যে পুণে অন্যতম ৷ এখানে ভারতের বৃহত্তম আই.টি. পার্ক (রাজীব গান্ধী আই.টি. পার্ক) গড়ে উঠেছে। পুণেকে ‘Tech City' বলা হয়। »
(৬) দিল্লি : দিল্লি, নয়ডা ও গুরগাঁও-এ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
(৭) তিরুবনন্তপুরম : এখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্রমশ উন্নতি ঘটছে। উচ্চমানের সফটওয়্যার কোম্পানি যথা : ইনফোসিস, ওরাকল কর্পোরেশন, আই.বি.এম. সফটওয়্যার সার্ভিস ইত্যাদি এখানে অবস্থিত। একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তির চাহিদা যে হারে বাড়ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এটি ভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে।
No comments:
Post a Comment