শক্তির যথাযথ ব্যবহার (Rational Use of Energy) :- দশম শ্রেণীর ভোতবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 physical science 1st chapter question answer|
জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন 1. (i) জ্বালানি কাকে বলে? এর প্রকারভেদ লেখো। 2+2
(ii) জ্বালানির তাপন মূল্য বা ক্যালোরি মূল্য বলতে কী বোঝায় ? [ME 17] 2+1 তাপন মূল্যের একক কী ? ** [ME 19]
(iii) জ্বালানির জ্বলনাঙ্ক বা জ্বলন বিন্দু কাকে বলে ?
(iv) ভালো জ্বালানির কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত ? ** 2 2 Birbhum Zilla school '16
উত্তর : (i) জ্বালানি (Fuel) : বৈজ্ঞানিক ধারণা অনুসারে, চুল্লিতে বা তাপ ইঞ্জিনের ভিতর যে পদার্থের জারণ ঘটিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপন্ন করা হয়, সেই পদার্থকে জ্বালানি বলে। প্রচলিত অর্থে, জ্বালানি হল সে সকল পদার্থ যাদের বাণিজ্যিক ও গার্হস্থ্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় এবং যাদের দহন ঘটিয়ে তাপ ও আলো উৎপন্ন করা হয়।
প্রকারভেদ : জ্বালানি ভৌত অবস্থা অনুযায়ী কঠিন জ্বালানি কাঠ, কয়লা তরল জ্বালানি গ্যাসীয় জ্বালানি কেরোসিন, পেট্রোল প্রাকৃতিক গ্যাস, LPG উপাদানের উপস্থিতি অনুযায়ী কার্বনযুক্ত জ্বালানি কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস কার্বনবিহীন জ্বালানি H, গ্যাস, পরমাণু চুল্লিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম-এর সমস্থানিক উৎপত্তি অনুযায়ী প্রাকৃতিক জ্বালানি বা প্রাইমারি ফুয়েল কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস কৃত্রিম জ্বালানি বা সেকেন্ডারি ফুয়েল চারকোল, কোক, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, ওয়াটার গ্যাস
জেনে রাখো :
তাপশক্তি উৎপাদনের জন্য যেসব জ্বালানি সরাসরি ব্যবহার করা হয়, তাদের মুখ্য বা প্রাইমারি জ্বালানি বলা হয় এবং যেসব | জ্বালানি ভৌত বা রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা প্রাইমারি জ্বালানি থেকে তৈরি করা হয়, তাদের বলে গৌণ বা সেকেন্ডোরি জ্বালানি।
(ii) তাপন মূল্য (Calorific Value) : একক ভরবিশিষ্ট কোনো জ্বালানির সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে ওই জ্বালানির তাপন মূল্য বা ক্যালোরি মূল্য বলে ।
উদাহরণ : 1 গ্রাম ভরের চারকোলের সম্পূর্ণ দহনে 33,000 জুল বা 33 কিলোজুল তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, চারকোলের তাপন মূল্য 33 কিলোজুল / গ্রাম বা, 33,000 জুল/গ্রাম।
তাপন মূল্যের একক : তাপন মূল্যের প্রচলিত একক কিলোজুল/গ্রাম (kJ/g)।
*তাপন মূল্যের SI একক জুল/ কেজি (J/kg)।
*তাপন মূল্যের CGS একক ক্যালোরি/গ্রাম (cal/g)। এছাড়া, তাপন মূল্যের অন্যান্য একক হল কিলোজুল/কেজি (kalikg), কিলোক্যালোরি / ঘনমিটার (kcal/im) ইত্যাদি।
(iii) জননাঙ্ক বা জ্বলন বিন্দু (Ignition Point) : সর্বনিম্ন যে উচ্চতায় কোনো জ্বালানি জ্বলতে শুরু করে, সেই উয়তাকে ওই জ্বালানির জলনাঙ্ক বা জ্বলন বিন্দু বলে।
(iv) ভালো বা আদর্শ জ্বালানির বৈশিষ্টগুলি ए এর তাপন মূল্য উচ্চ মানের হতে হবে (যেমন— কেরোসিনের 48 kJ/g. H এর 150 killg)। এটি কম মূল্যের এবং সহজপ্রাপ্য হওয়া উচিত। ও জ্বলনাঙ্কের মান যথাযথ (অর্থাৎ, মাঝারি মানের, খুব কম বা বেশি নয়) হওয়া প্রয়োজন। ও দহনে উৎপন্ন ধোঁয়া বা পরিবেশদূষক গ্যাস যথাসম্ভব কম সৃষ্টি হয়। ও দহনের হার সুষম হয়, অর্থাৎ এটি সহজে জ্বলে। জ্বলনের শেষে ছাই বা অবশেষ খুব বেশি থাকে না। ও সহজে বহন ও স্থানান্তরযোগ্য। হয় এবং একে সহজে সংরক্ষণ করা যায়।
প্রশ্ন 2 .(i) জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বোঝায় ? উদাহরণ দাও। * X Baranagar Narendranath Vidyamandir (HS) '16 2
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপত্তি হয় কীভাবে?
(iii) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির ব্যবহার সংক্ষেপে বিবৃত করো।
(iv) জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কুপ্রভাবগুলি লেখো। অথবা, জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিবন্ধকগুলি কী কী ?
উত্তর : (1) জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel) : লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পাললিক শিলার বিভিন্ন স্তরে আবদ্ধ হয়ে থাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ ভূগর্ভের তাপ, চাপ ও ব্যাকটিরিয়ার প্রভাবে এবং বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যেসব জ্বালানির সৃষ্টি করে, তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।
উদাহরণ: কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে সাধারণভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়।
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপত্তি : কয়লা, পেট্রোলিয়াম বা প্রাকৃতিক গ্যাস – সব রকমের জীবাশ্ম জ্বালানিই তৈরি হয় উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে।
কয়লার উৎপত্তি : লক্ষ লক্ষ বছর আগে প্রচুর সংখ্যক গাছপালা সমৃদ্ধ বনাঞ্চলগুলি প্রাকৃতিক কারণে মাটির নীচে চাপা পড়ে এবং কালক্রমে ধীরে ধীরে প্রস্তরীভূত হয়। ভূগর্ভস্থ চাপ, তাপ এবং ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়া – এই তিনটির সম্মিলিত প্রভাবে প্রোথিত উদ্ভিদ দেহাবশেষে ক্রমশ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের শতাংশ কমতে থাকে এবং কার্বনের শতাংশ বাড়তে থাকে। এইভাবে লক্ষ লক্ষ বছর বাদে প্রস্তরীভূত উদ্ভিদ দেহাবশেষ কয়লায় রূপান্তরিত হয়।
জেনে রাখো :
কয়লার মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ছাড়াও নাইট্রোজেন, সালফার ইত্যাদি মৌলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কয়লা প্রকৃতপক্ষে একটি জটিল গঠনযুক্ত একাধিক পদার্থের মিশ্রণ, যার আনুমানিক সংকেত হল Cash ONSI।
O পেট্রোলিয়াম প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপত্তি সমুদ্রের তলদেশে লক্ষাধিক বছর ধরে সম্ভিত সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত দেহাবশেষের ব্যাকটেরিয়াঘটিত বিয়োজন ও রূপান্তরের ফলে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সৃষ্টি হয়। সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিয়োজনের পর বিয়োজিত অংশগুলি অবক্ষেপিত স্তরগুলির নীচে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করার ফলে ওই স্থানে ভূগর্ভের 30-40 5-10 কোটি বর্তমান পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিপুল চাপ ও উয়তার প্রভাবে এদের রাসায়নিক রূপান্তর ঘটে। এই রূপান্তরের একটি অংশ তরলে পরিণত হয়, যাকে বলা হয় পেট্রোলিয়াম। অন্য অংশটি গ্যাসে পরিবর্তিত হয়, যা প্রাকৃতিক গ্যাস রূপে পেট্রোলিয়ামের উপরিতলে সজ্জিত হয়।
(Iii) দৈনন্দিন জীবনে জ্বালানির ব্যবহারগুলি হল-
1• আধুনিক পণ্যনির্ভর জীবনযাত্রায় মূলত শক্তির চাহিদা মেটাতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে বা সরাসরি গার্হস্থ্য কাজে এই জ্বালানিই ব্যবহৃত হয়। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে শক্তি চাহিদার প্রায় 90% এই জ্বালানি মেটায়, যেখানে সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ 75%।
2.কয়লার অন্তর্ভূম পাতনে আলকাতরা, কোলগ্যাস, কোক, অ্যামোনিয়াক্যাল লিকার ইত্যাদি মূল্যবান পদার্থসমূহ পাওয়া যায়। এগুলি যথাক্রমে ধাতব কাঠামো রং করতে, শিল্পে, আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনে ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
3.অশোধিত পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতনে বিভিন্ন ধরনের অতি প্রয়োজনীয় পদার্থ বিভিন্ন উন্নতায় পৃথক হয়, যেমন— পেট্রোলিয়াম গ্যাস, পোট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল ইত্যাদি। এগুলি মূলত গার্হস্থ্য জ্বালানি বা রান্নার গ্যাস হিসেবে অথবা মোটরগাড়ি, ট্রেন, জেনারেটর, ট্রাক্টর ইত্যাদিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
4. প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে পলিভিনাইল ক্লোরাইড, ব্যাকেলাইট এবং পেট্রোলিয়াম থেকে পলিপ্রোপিলিন, নাইলন ব্যাকেলাইট, পলিএস্টার ইত্যাদি মূল্যবান পলিমারগুলি সংশ্লেষিত হয়।
(iv) ● জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের সময় বিপুল পরিমাণ মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড (CO,) ইত্যাদি গ্যাসের উদ্ভব হয়, যা পরিবেশকে দূষিত করে। এর ফলে বিশ্ব উয়ায়ণ ঘটে।
@ জলপথে পরিবহনের সময় অসতর্কতার দরুণ অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়ামজাত জীবাশ্ম জ্বালানি নদী বা সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যকে নষ্ট করে।
• জীবাশ্ম জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে উৎপন্ন হয় অত্যন্ত বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড (CO)। বাতাসে এই গ্যাসের উপস্থিতি আমাদের মাথাধরা, বমি ভাব, ক্লান্তি সৃষ্টি করে। এমনকি এই গ্যাসের বিষক্রিয়ায় প্রাণীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
* এই জ্বালানিগুলির দহনে উৎপন্ন কার্বন, নাইট্রোজেন এবং সালফারের অক্সাইডসমূহ বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি উৎপন্ন করে। এর ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি হয় এবং পরিবেশ দূষিত হয়।
প্রশ্ন 3. (i) জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি কী কী ? Ramakrishna Mission, Vidyapith, Purulia 163
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের উপায়গুলি কী কী ? 3
(iii) শক্তি সংকট কী ? এর সম্ভাব্য সমাধানগুলি লেখো। *2+3
উত্তর- : (।) জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ – 0 শিল্পের উন্নয়ন, নগর সভ্যতার উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন এবং শক্তির এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের মাত্রাও বর্তমানে অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ না নিলে, প্রকৃতিতে সঞ্চিত জীবাশ্ম জ্বালানির যে ভান্ডার এখনও অবশিষ্ট আছে তা অচিরেই নিঃশেষিত হয়ে যাবে। তাই, অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির সংরক্ষণ করা দরকার। ও জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির পুনর্নবীকরণ সম্ভব নয়। অর্থাৎ, এগুলি একবার ফুরিয়ে গেলে আর তৈরি করা যাবে না। তাই, এগুলি সংরক্ষিত করে রাখা দরকার, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এটি ব্যবহার করতে পারে।
(2) জ্বালানিগুলি সংরক্ষণ করার জন্য এদের ব্যবহার কমালে এদের দহনে উৎপন্ন CO2 ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসগুলিও কম পরিমাণে উৎপন্ন হবে। ফলে, বিশ্ব উন্নায়ন কম হবে।
(3)• সর্বোপরি, শক্তির উৎস ছাড়া মানবসভ্যতা অচল। তাই, শক্তির অভাবে মানবসভ্যতার অগ্রগতি অদূর ভবিষ্যতে যাতে থমকে না যায়, সেজন্য জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের উপায় : জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি গ্রহণ করা যেতে পারে _
1. অপচয় রোধ ও যথাযথ ব্যবহার : নির্বিচারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করে প্রয়োজনমতো উৎপাদন ও ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎস থেকে বেরিয়ে আসা গ্যাস নষ্ট হতে না দিয়ে তার সংরক্ষণ করলে এই ধরনের জ্বালানির অপচয় বন্ধ হবে।
2. অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি : জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে তার পরিবর্তে অপ্রচলিত শক্তি, যেমন সৌরশক্তি, - বায়ুশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে ।
3.উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা : কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য এবং সেগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সমুদ্রগর্ভে খনিজতেল অনুসন্ধানের জন্য রিমোট সেনসিং-এর মতো উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নিতে হবে।
4.জনসচেতনতা বৃদ্ধি : জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
(iii) শন্ত্রিসংকট (Energy Crisis) : শিল্পসভ্যতার ক্রমবর্ধমান উন্নতির জন্য একদিকে শক্তির আকাশছোঁয়া চাহিদা এবং অন্যদিকে তা মেটাতে আহরণযোগ্য প্রচলিত শক্তি উৎসগুলির সঞ্চয়ের ঘাটতি, পরিবেশে তৈরি করে এক ভয়াবহ সংকট। ভূগর্ভে সজ্জিত কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সঞ্চিত শক্তি উৎসের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার ফলে আগামী দিনে এদের সরবরাহ কমবে, ফলে দাম বাড়বে এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বাড়বে। অর্থাৎ, পৃথিবীর প্রকৃতিজাত জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃস্বতা ও অপ্রাপ্যতার কারণে সভ্যতা থমকে যাওয়ার উপক্রম হবে। একেই বলা হয় শক্তিসংকট।
সম্ভাব্য সমাধान : শক্তিসংকট একটি পৃথিবীব্যাপী সমস্যা। সমস্ত দেশের জনগোষ্ঠী, সরকার, বিজ্ঞানী, গবেষক সকলেই এই সমস্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে তার সমাধানে সচেষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন পথে চলছে এই সংকট সমাধানের চেষ্টা, যেমন ↑ ইতিমধ্যেই কম জ্বালানিতে চলে এমন যন্ত্র তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। সবক্ষেত্রেই শক্তি সাশ্রয়কারী উপকরণ, যেমন: CFL, LED বাল্ব, শক্তি বাঁচাতে সক্ষম রেফ্রিজারেটর, শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, গিজার ইত্যাদি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস ছাড়াও, সংশ্লেষিত জ্বালানি (বায়োডিজেল) ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। ইউরোপীয় দেশগুলিতে জলের তড়িদ্বিশ্লেষণজাত হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না, সে বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। ও সর্বোপরি জোর দেওয়া হয়েছে বিকল্প শক্তি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, জৈবশক্তি) অনুসন্ধানের ওপর। অনুমান করা যায় যে, এগুলি অচিরেই হয়ে উঠবে প্রচলিত শক্তি উৎসের উৎকৃষ্ট বিকল্প তথা, ভবিষ্যতের প্রচলিত শক্তি উৎস।
প্রশ্ন 4 .(i) স্থিতিশীল উন্নয়ন কাকে বলে? * 2 New Barrackpore Colony Boys' High School '16
(ii) স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণার ব্যাখ্যা দাও। [ME
(iii) স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল লক্ষ্যগুলি কী কী ? * 19]2 2 Bantra MSPC High School '16
উত্তর] (i) স্থিতিশীল উন্নয়ন (Sustainable Development) : প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ও যথাযথ ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বা কৌশলের সুদক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং আগামী দিনেও এই উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখা ও ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত করে তুলতে যে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলা হয়।
জেনে রাখো: 1987 সালে অনুষ্ঠিত World Commission on | Environment and Development-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী— 'Sustainable Development is the development that meets the needs of present without compromising the ability of future generations to meet their own needs.'
(ii) স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণার ব্যাখ্যা : স্থিতিশীল উন্নয়ন হল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মানবজাতির সার্বিক উন্নয়নকে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত এমন একটি পদ্ধতি, যা মানব সভ্যতার উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের সংরক্ষণকেও সুনিশ্চিত করে। তাই, এক্ষেত্রেগৃহীত কর্মসূচিগুলির মূল ভিত্তিই হল পরিবেশের কোনো ক্ষতি না ঘটিয়ে বা ন্যূনতম ক্ষতির বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি বা শিল্পের আনুকূল্য বৃহত্তর সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পরিবেশ সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত রেখে উন্নয়নের এই ভাবনা প্রকৃতপক্ষে মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতারই এক স্বীকৃতিমাত্র। অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ উপলব্ধি করেছে যে আমাদের বাস্তুতন্ত্রের সামর্থ্য সীমিত, সেই সীমা অতিক্রম করা হলেই তথাকথিত উন্নয়নমূলক কাজ বা পদক্ষেপগুলিও ব্যক্তিসমাজ, তার পরিবেশ ও ব্যাপক অর্থে সমগ্র পৃথিবীর পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে থাকে এবং বৃহত্তর অবনমনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সূত্রেই স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণা আসে, যার মাধ্যমে আগামী পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য করে রাখা সম্ভব বলে মনে করা হয়।
(iii) স্থিতিশীল উন্নয়ণের মূল লক্ষ্যগুলি হল – 0 পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতি না করে প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা। যথা – (a) রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ‘শস্যাবর্তন' (crop rotation) পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ফসলের গুণমান বজায় রাখার চেষ্টা করা। এর ফলে বর্তমানে ও ভবিষ্যত উভয় প্রজন্মের জন্য সম্পদের যোগান সমানভাবে অব্যাহত থাকবে। (b) অফিস, স্কুল ইত্যাদিতে ঘরের কাঠামো নির্মাণ বা অন্যান্য প্রয়োজনে পুনর্নবীকরণযোগ্য অদূষক পদার্থ কাজে লাগানো। ও চিরাচরিত শক্তি উৎসগুলির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ভূতাপীয় শক্তি, বায়োমাস শক্তি ইত্যাদি অচিরাচরিত শক্তি উৎসগুলির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া। ও বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার করা যায় বলে শক্তি উৎসগুলি অফুরন্ত এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্প কলকারখানা ও যানবাহনের ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা। ও প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিপার্শ্বিক ভৌগোলিক উন্নয়নের ওপরে গুরুত্ব দেওয়া, অর্থাৎ মানুষের সার্বিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।
অনুরূপ প্রশ্ন : বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থিতিশীল উন্নয়নকে একান্ত জরুরি বলা হচ্ছে কেন ?
জেনে রাখো : ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরোতে 1992 সালে পৃথিবীর 130টি দেশ রাষ্ট্রসংঘের বসুন্ধরা সম্মেলন-এ অংশগ্রহণ করে। এই সন্মেলনে পরিবেশ বিষয়ক 21টি কর্মসূচী রূপায়নের সিদ্ধান্ত হয়। যা 'এজেন্ডা 21' নামে পরিচিত।
প্রশ্ন 5. (i) 0 প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি উৎস বলতে কী বোঝায়? ও অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি উৎস বলতে কী বোঝায় ? ** 2+2 Haldia Govt Spons Vivekananda Vidyabhawan '16
(ii) অপ্রচলিত শক্তির উৎসগুলির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
(iii) 'প্রচলিত বা অপ্রচলিত সমস্ত শক্তির মূল উৎস সূর্য।' ব্যাখ্যা করো। **
উত্তর] (i) প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি উৎস (Conventional energy source) : আধুনিক সভ্যতায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বা শিল্পগত চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় শক্তির অধিকাংশই কয়লা, পেট্রোলিয়াম,প্রাকৃতিক গ্যাস, প্রবাহিত জলের শক্তি ইত্যাদি উৎস থেকে আহরণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এজাতীয় উৎসগুলি থেকে শক্তি সংগৃহীত হয়ে আসছে বলে এদের চিরাচরিত বা প্রচলিত শক্তি উৎস বলে অভিহিত করা হয়। ও অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি উৎস (Non- Conventional energy source) : প্রচলিত শক্তি উৎপাদনকারী উৎসগুলির যোগ্য বিকল্প হিসেবে শক্তি সংকটের সমাধানের প্রশ্নে যে-সকল শক্তি উৎসগুলি আগামী দিনে অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হয়, তাদের অচিরাচরিত বা অপ্রচলিত শক্তি উৎস বলা হয়। একে অনেকসময় পুনর্নবীকরণযোগ্য (Renewable) শক্তি উৎস বলা হয়। এই শক্তি উৎস থেকেই স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন— বায়ুপ্রবাহের শক্তি, সৌরশক্তি, জোয়ারভাটার শক্তি, জৈবশক্তি ইত্যাদি।
(ii) অপ্রচলিত শক্তি উৎসের বৈশিষ্ট্যগুলি ल- ০ এই শক্তি সহজলভ্য, ও এটি নবীকরণযোগ্য অর্থাৎ, পরিবর্তিত অবস্থা থেকে সহজেই প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে বারংবার ব্যবহার করা যায়, ও শক্তি উৎস বা কাঁচামালগুলি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় সহজে নিঃশেষিত হওয়ার সম্ভাবনা কম, ও পারমাণবিক শক্তির মতো দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশই অদূষক, এদের ব্যবহারে পরিবেশদূষণ ঘটে না।
(iii) খনিজ তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি পরিচিত জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে আবদ্ধ রাসায়নিক শক্তি মূলত সৌরশক্তিরই পরিবর্তিত রূপ। কারণ—গাছপালা, প্রাণী ও সমগ্র জীবজগৎ তাদের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সূর্যের ওপরই নির্ভরশীল। জলচক্র সৃষ্টির মূলে আছে সূর্যের উত্তাপ। তাই, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তির পরোক্ষ ভূমিকা আছে। পৃথিবীর সব জায়গা সমানভাবে উত্তপ্ত না হওয়ার কারণেই বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ুশক্তির মাধ্যমে বায়ুকল (Windmill) চালানো হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সৌরশক্তি সরাসরি ব্যবহার করে সৌরকোশ ও সৌরচুল্লিতে তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রত্যক্ষ প্রভাবে সৃষ্টি হয় জোয়ারভাটা, যা নির্দেশ করে যে জোয়ারভাটার শক্তিও পরোক্ষভাবে সূর্যনির্ভর। তাই বলা হয় যে, প্রচলিত বা অপ্রচলিত সকল প্রকার শক্তির মূল উৎস হল সূর্য।
অনুরূপ প্রশ্ন : সৌরশক্তি কি চিরাচরিত শক্তির বিকল্পরূপে ব্যবহার করা যেতে পারে – যুক্তি দাও। -
জোন রাখা : সূর্য প্রতি সেকেন্ডে 4.5 × 1023 KJ শক্তি বিকিরণ করে। পৃথিবীতে এই সৌরশক্তির 5 x 10-8% শক্তি পৌঁছোয়। পৃথিবীতে এই সৌরশক্তি পৌঁছোয় মূলত অবলোহিত রশ্মি ও দৃশ্যমান আলো হিসেবে। পৃথিবীতে যে শক্তি পৌঁছোয় তার 0.1% শক্তি আমাদের সমস্ত শক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারে।
প্রশ্ন 6 . (i) সৌরশক্তি বলতে কী বোঝায় ?
(ii) সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে তৈরি সোলার কুকার, সোলার ওয়াটার হিটার এবং সৌরকোশের গঠন ও কার্যনীতি চিত্রসহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর] (i) সৌরশক্তি (Solar Energy) : সূর্য হল সকল শক্তির উৎস। সূর্য থেকে আসা শক্তিকেই বলা হয় সৌরশক্তি। এটি হল মূলত তাপশক্তি ও আলোকশক্তির মিশ্রণ। সূর্যের অভ্যন্তরে অবিরাম গতিতে ঘটে চলা নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তিই সূর্যের সব শক্তির উৎস। সূর্য থেকে যে পরিমাণ সৌরশক্তি বিকিরিত তার খুব সামান্য অংশই পৃথিবীতে এসে পৌঁছোয়। আবার, পৃথিবীতে আসা সৌরশক্তির মাত্র 47% ভূপৃষ্ঠ অবধি পৌঁছোয়। বাকি সৌরশক্তি মেঘ থেকে প্রতিফলিত হয়ে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়। ভূপৃষ্ঠে আপতিত সৌরশক্তি পৃথিবীর স্থলভাগ ও জলভাগ কর্তৃক শোষিত হয় এবং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ঘটনা যেমন ঝড়, বৃষ্টি, সামুদ্রিক ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি সৃষ্টি করে। ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদজগৎ সৌরশক্তির সাহায্যেই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপন্ন করে।
আমাদের দেশ ভারত সারা বছরই যথেষ্ট পরিমাণে সৌরশক্তি পায়। সাধারণত মেঘমুক্ত অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে 4–7 kW·h·m-2 পরিমাণ সৌরশক্তি ভারতের মাটিতে এসে পড়ে।
সৌরশক্তি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি। সৌরশক্তি ব্যবহার করে যেসব যন্ত্র চালানো যায় সেগুলি হল— সোলার কুকার, সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার সেল ইত্যাদি।
জোন রাখো : নিউক্লিয় সংযোজনের সময় সূর্যের মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন, হিলিয়ামে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের সময় কিছু পরিমাণ ভর বিনষ্ট হয় এবং আইনস্টাইনের E = mc2 সূত্রানুযায়ী, বিনষ্ট ভর পরিবর্তিত হয়ে বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি ও আলোকশক্তি উৎপন্ন করে।
(ii) সোলার কুকার (Solar cooker) : যে যন্ত্রের সাহায্যে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে খাদ্যবস্তু রান্না করা হয়, তাকে সোলার কুকার বলে।
১ গঠন : সোলার কুকার মূলত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা – • একটি অন্তরক ধাতব বা কাঠের বাক্স, যার ভিতরের পৃষ্ঠতলগুলির সর্বত্রই কালো রং করা থাকে। এর কারণ, কালো রং তাপের উত্তম শোষক। ও বাক্সটির উপর একটি বেশ মোটা কাচের প্লেটের ঢাকনা থাকে, কারণ কাচ গ্রিন হাউস প্রভাব দ্বারা বাক্সটিকে গরম রাখে। ও বাক্সটির সঙ্গে যুক্ত থাকে একটি সমতল আয়না, যা একটি প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে এবং বেশি পরিমাণ সূর্যরশ্মিকে বাক্সে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
কার্যনীতি : দিনেরবেলায় প্রখর সূর্যালোকে সোলার কুকার রেখে প্রতিফলক অর্থাৎ, আয়নাটিকে এমনভাবে রাখা হয়, যাতে সূর্যরশ্মি সরাসরি এসে আয়নাটিতে পড়ে এসে এবং প্রতিফলিত হয়ে সোলার কুকারের বাক্সটিতে প্রবেশ করে। প্রবিষ্ট সূর্যরশ্মি বাক্সের কালো রং দ্বারা শোষিত হয়। সোলার কুকার এ ছাড়া বাক্সটির কাচের ঢাকনা ভিতরে প্রবিষ্ট তাপকে ফিরে যেতে দেয় না। ফলে, বাক্সটির অভ্যন্তর প্রায় 100°C থেকে 140°C পর্যন্ত গরম হয়ে যায়। এর জন্য মোটামুটিভাবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এখন কতকগুলি রান্না করার পাত্রকে বাইরে থেকে কালো রং করে তার ভিতরে খাবার যেমন চাল, ডাল,শাকসবজি ইত্যাদি দিয়ে ঢাকনাসহ সোলার কুকারের বাক্সের মধ্যে রেখে কাচের ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাধারণত তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই রান্না সম্পূর্ণ হয়। সোলার কুকারে রান্না করলে খরচাও কম হয়, আবার শক্তির সংরক্ষণও করা যায়।
জান রাখা : সমতল দর্পণের পরিবর্তে অবতল দর্পণ ব্যবহার করে এবং তার ফোকাসে রশ্মিগুচ্ছকে কেন্দ্র করে সোলার কুকারে আরো বেশি উয়তা সৃষ্টি করা যায়।
সোলার ওয়াটার হিটার (Solar water heater) : সোলার ওয়াটার হিটার হল এমন একটি যন্ত্র, যাতে সূর্য থেকে বিকিরিত সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জল গরম করা হয়। গঠন : সোলার কুকারের মতো এটির ভিতরেও কালো রং করা বাক্স থাকে, যার মধ্যে একটি বাইরের থেকে কালো রং করা তামার কুণ্ডলী থাকে। বাক্সটির উপর একটি মোটা কাচের পাতের ঢাকনা থাকে এবং তার উপর থাকে প্রতিফলক বা আয়না। কার্যনীতি : আয়নার সাহায্যে সূর্যরশ্মির প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মিকে কাচের মধ্যে দিয়ে বাক্সের মধ্যে প্রবেশ করালে বাক্সটি উত্তপ্ত হয়। ফলে, তামার কুণ্ডলীটিও উত্তপ্ত হয়। এজন্য তামার কুণ্ডলীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত জলও উত্তপ্ত হয়। সাধারণত বড়ো বড়ো বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতিতে গরম জল সরবরাহ করার জন্য সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করা হয়।
সৌরাকাশ (Solar cell) : সৌরকোশ হল এমন একটি উপকরণ বা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সৌরশক্তিকে (সূর্যের তাপ ও আলোক শক্তি) সরাসরি বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়।
গঠন : সিলিকন, গ্যালিয়াম ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী উপাদানের সাহায্যে সৌরকোশ নির্মাণ করা হয়। একটি সরল সৌরকোশের মধ্যে একটি সিলিকন-বোরন এবং একটি সিলিকন-আর্সেনিক স্তর পরপর উপর-নীচ করে জুড়ে রাখা থাকে। সিলিকনের তুলনায় উভয় স্তরেই বোরন বা আর্সেনিকের পরিমাণ নগণ্য হয়। উপরের ও নীচের স্তরে দুটি ছোটো তারের টুকরো একপ্রান্তে ঝালাই করে আটকে দেওয়াথাকে। এই দুটি অংশ সৌরকোশের দুটি টার্মিনাল হিসেবে কাজ করে। সমগ্র ব্যবস্থাটি একটি কাচ বা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণে ঢাকা থাকে।
© কার্যনীতি : সূর্যরশ্মি সৌরকোশের উপর আপতিত হলে ওই রশ্মিতে থাকা ফোটন কণার প্রভাবে সিলিকন পরমাণুর বহিস্থ কক্ষে অবস্থিত এবং দুর্বলভাবে সংযুক্ত ইলেকট্রনগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্দিষ্ট অভিমুখে গতিশীল হয়। ইলেকট্রনের এই গতির ফলে কোশের উপরের ও নীচের স্তরে সংযুক্ত তার দুটির মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ঘটে। সৌরকোশের দক্ষতা এবং আপতিত সূর্যালোকের তীব্রতা--এই দুটি বিষয়ের ওপর উৎপন্ন প্রবাহমাত্রার মান নির্ভর করে। সক্রিয় অবস্থায় কোশের উপরের ও নীচের পৃষ্ঠের মধ্যে প্রায় 0.5V বিভব পার্থক্য বজায় থাকে। বর্তমানে সব থেকে উন্নত যে সৌরকোশ নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে, তার সাহায্যে রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে প্রায় 240 W/m2 হারে শক্তি উৎপাদন করা যায়। এ জাতীয় ব্যবস্থার দক্ষতা সর্বোচ্চ 25% হয়ে থাকে।
প্রশ্ন 7 (I) সোলার প্যানেল কী? ব্যাবহারিক প্রয়োজনে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তা সংক্ষেপে লেখো। 143
(II) দৈনন্দিন জীবনে সৌরকোশ ও সৌরপ্যানেলের ব্যবহারগুলি লেখো।
(iii) সৌরকোশ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। 2+2
উত্তর] (i) সোলার প্যানেল (Solar panel) : অনেকগুলি সৌরকোশকে নির্দিষ্ট সজ্ঞানীতি অবলম্বনে বৈদ্যুতিকভাবে যুক্ত করে যে বৃহদায়তন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গঠন করা হয়, তাকে সোলার প্যানেল বলে।
সোলার প্যানো স্যাय বিদ্যুৎ উৎপাদন : একটি সৌরকোশ থেকে প্রাপ্ত তড়িৎ-এর পরিমাণ অনেক কম হওয়ায় তা ব্যাবহারিক দিক থেকে খুব উপযোগী নয়। গার্হস্থ্য বা দৈনন্দিন প্রয়োজনে সৌরবিদ্যুৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করতে অনেকগুলি এ জাতীয় সৌরকোশ শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করে গঠন করা হয় সৌর মডিউল, যা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইউনিট হিসেবে কাজ করে। রুপোর তারের সাহায্যে সৌরকোশগুলিকে সংযুক্ত করে সৌরপ্যানেল তৈরি করা হয়। রূপোর ব্যবহারে প্যানেলের দাম বাড়লেও ব্যবস্থাটির দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। একাধিক এই জাতীয় মডিউলের বৈদ্যুতিক সমন্বয়ে তৈরি হয় সোলার প্যানেল, যা একটি বিশেষভাবে নির্মিত আনত ছাদ বা সমতল-এর উপর দৃঢ়ভাবে বসানো থাকে।
প্যানেলগুলি সূর্যের দিকে মুখ করে রাখলে সর্বোচ্চ তড়িৎশক্তি পাওয়া যায়। কয়েকশো সৌরকোশ সমন্বিত এমন একটি সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা একটি ব্যাটারি বা তড়িৎকোশকে আহিত করে তার মধ্যে সজ্জিত রাখা হয়।
(ii) সৌরाকাশ ও সৌরপ্যানেলের ব্যবহারগুলি ए o সৌরকোশ ও সৌরপ্যানেলের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশযান ও স্পেস স্টেশনগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ও সৌরকোশের সাহায্যে রাস্তার বাতিস্তম্ভে আলো জ্বালানো হয়। সরাসরি প্রথাগত উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ নেই এমন স্থানে অবস্থিত প্রেক্ষাগৃহে বা সভাকক্ষে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালাতে বা রেডিয়ো, টেলিভিশন ইত্যাদি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ এদের সাহায্যে হয়ে থাকে। ও সমুদ্র উপকূলে নৌকা, জাহাজ প্রভৃতি জলযানকে আলোক সংকেত দেখানোর জন্য যে লাইট হাউস থাকে, তাতে বিদ্যুৎশক্তির উৎস হিসেবে সৌরকোশে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ও ট্রাফিক সিগন্যাল, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, বাচ্চাদের খেলনা প্রভৃতিতেও সৌরকোশ ব্যবহার করা হয়।
জেনে রাখো : সৌরকোশে উৎপন্ন তড়িৎচালক বল বা বিভব প্রভেদকে সাধারণত ফটোভোস্টেইক EMF বা ফটোভোস্টেইক ভোল্টেজ বলা হয়। মডিউল তথা সৌর প্যানেলগুলি বৃহদাকার ফটোভোন্টেইক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করে। এধরনের ব্যবস্থায় সাধারণত নির্দিষ্ট গঠনরীতি অবলম্বনে সজ্জিত বেশ কিছু সোলার মডিউল, একটি ইনভার্টার, ব্যাটারি ও সৌরসন্ধানী (Solar tracker) তড়িৎসংযোগে যুক্ত থাকে। সৌরপ্যানেলের একটি মডিউল প্রায় 100-320 ওয়াট ক্ষমতা সরবরাহ করতে পারে।
(iii) সৌরাকাশ ব্যবহারের সুবিধা ও প্রথাগত উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অসম্ভব বা অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ এমন জায়গাগুলিতে সৌরপ্যানেলের সাহায্যে সহজে ও সুলভে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। ও সৌরকোশ বা প্যানেলের মধ্যে কোনো সচল যন্ত্রাংশ না থাকায় এর স্থাপন বা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অতি সামান্য হয়। ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে CO, CO ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি উৎপন্ন না হওয়ায় পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থাকে না। ও কোনো আলোক অভিসারী ব্যবস্থা (Light focussing device) ছাড়াই এটি সফলভাবে কাজ করতে পারে। ও স্বল্প জনবসতিযুক্ত অঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল এবং যেসব অঞ্চলে সারাবছর পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যালোক পাওয়া যায়, সেখানে সৌরকোশ ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খুবই কার্যকরী হয়।
সৌরাকাশ ব্যবহারের অসুবিধা : সৌরকোশ ও সৌরপ্যানেল তৈরি করার সময় রুপোর তার, সিলিকন প্রভৃতি মূল্যবান জিনিস ব্যবহার করতে হয়। তাই, সৌরকোশের দাম অনেক বেড়ে যায়। ও সৌরকোশের দক্ষতা অনেক কম। সৌরকোশে আপতিত আলোর মাত্র 25% বিদ্যুৎশক্তিতে পরিণত হয়। ও সৌরকোশে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি অতি ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়। বাণিজ্যিক প্রয়োজনে অধিক পরিমাণে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কার্যকরী হারে সৌরশক্তি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এর জন্য যথেষ্ট বড়ো এলাকা বা পৃষ্ঠতলের প্রয়োজন, যা সর্বত্র পাওয়া অসম্ভব।
৪ (i) বায়ুপ্রবাহের শক্তি বলতে কী বোঝায় ? এই শক্তির ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি কী কী ? 1+2
(ii) বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশলটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
(iii) বায়ুশক্তির সুবিধা Ramakrishna Mistian Vidyalaya Purulia 16 ও অসুবিধাগুলি লেখো। ** 2+2
উত্তর (1) বায়ুপ্রবাহের শক্তি (Wind Energy) : প্রবহমান বায়ুর মধ্যে সঞ্চিত গতিশক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করে আহরণযোগ্য শক্তিকেই বলা হয় বায়ুপ্রবাহের শক্তি বা বায়ুশক্তি।
বায়ুপ্রবাহের শক্তির ব্যাবহারিক প্রয়োগ : বায়ুশক্তির ব্যবহার কোনো নতুন উদ্ভাবন নয়। বহুশতাব্দী ধরে জাহাজ চালানোর কাজে বা প্রথাগত পদ্ধতিতে শস্যভাঙা, জলতোলা ইত্যাদির প্রয়োজনে এই শক্তি সফলভাবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এই শক্তি ব্যবহারের পরিমার্জিত তথা আধুনিকতম রূপটি হল বায়ুকল বা উইন্ডমিলের (Windmill) সাহায্যে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন। বর্তমানে এটি অন্যতম সফল ও সম্ভাবনাময় বিকল্প শক্তি উৎপাদক ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত ।
(ii) বায়ুশক্সিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল পদ্ধতি : প্রবহমান বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করে উইন্ডমিল চালিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন পদ্ধতি বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় বিকল্প শক্তি উৎপাদক ব্যবস্থা। যেসব অঞ্চলে বায়ুর গতিবেগ 15 km/h বা তার বেশি এবং বছরের বেশিরভাগ সময় বায়ু প্রবাহিত হয়, সেইসব অঞ্চলে বায়ুর গতিশক্তি অনেক বেশি হয়। এই শক্তিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। সূর্যের তাপে পৃথিবীর স্থলভাগ জলভাগ অসমভাবে উত্তপ্ত হয় বলেই বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, বায়ুশক্তি পরোক্ষভাবে সূর্য থেকেই আসে। বায়ুপ্রবাহের শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করার জন্য বায়ুকল বা বায়ুচালিত টারবাইন (Windmill) স্থাপন করা হয়। বায়ুকলে একটি বায়ুচক্র থাকে, যাতে বড়ো বৈদ্যুতিক পাখার মতো তিনটি বা তার বেশি ধাতব ব্লেড থাকে। এই বৈদ্যুতিক পাখার মতো অংশটি একটি দৃঢ় ও শক্ত কাঠামোর শীর্ষবিন্দুতে উল্লম্বভাবে স্থাপন করা হয়। এই বায়ুচক্রটি মুক্তভাবে ঘুরতে পারে এবং এর কেন্দ্রীয় অক্ষদণ্ডের সঙ্গে বৈদ্যুতিক জেনারেটরের টারবাইনকে যুক্ত করা হয়। বায়ুপ্রবাহ বায়ুচক্রের ব্লেডে ধাক্কা দিলে বায়ুচক্রটি ঘুরতে থাকে এবং এর ফলে টারবাইনে প্রবল ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। টারবাইনের এই ঘূর্ণন গতিকে কাজে লাগিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই পদ্ধতিতে গুজরাট, তামিলনাড়ু, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপে বিদ্যুৎ বায়ুচালিত টারবাইন বা বায়ুকল উৎপাদন করা হয়।ব্যাপক হারে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ুতে অনেকগুলি WEG (Wind Energy Generator)-এর সমন্বয়ে বায়ুশক্তি ফার্ম (Wind energy farm) গঠন করা হয়।
জোন রাখো : ভারতের বৃহত্তম উইন্ড এনার্জি ফার্মটি (Wind energy farm) তামিলনাড়ুর কাছে কন্যাকুমারীতে অবস্থিত, যা প্রায় 380 MW বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতের স্থান সারা পৃথিবীর মধ্যে পঞম, প্রথম স্থান জার্মানির। এ ছাড়া ডেনমার্ক-কে ‘বায়ুপ্রবাহের দেশ' (Country of wind) বলা হয়, কারণ ডেনমার্কের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির 25%, বায়ুশক্তি থেকে উৎপন্ন হয়। ভারতে বায়ুশক্তি থেকে মোটামুটি 1025 MW বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন হয়, | যদিও প্রায় 45,000 MW বিদ্যুৎশক্তি উৎপন্ন করা যেতে পারে। এবিষয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, কারণ বায়ুশক্তি হল পুনর্নবীকরণযোগ্য ও দূষণমুক্ত শক্তির উৎস।
(iii) বায়ুশম্ভর সুবিধা : এটি কোনো দূষণ সৃষ্টি করে না। ও সূর্য যতদিন থাকবে, ততদিন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য বায়ু প্রবাহিত হবে। অর্থাৎ, বায়ুশক্তি একটি প্রবহমান এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস। ও বায়ুশক্তিকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করলে জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিকে সংরক্ষণ করা আরো বেশি পরিমাণে সম্ভব হবে। ও মুখ্য উপাদান বায়ু বিনা খরচে আহরণযোগ্য হওয়ায়, বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদন পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল নয় এবং এটি অধিক দক্ষতাসম্পন্ন। *
বায়ুপন্ত্রির অসুবিধা : o কার্যকরী পরিমাণে বায়ুবিদ্যুৎ পেতে হলে প্রায় 20টি টারবাইন সমন্বয়ে গঠিত উইন্ড এনার্জি ফার্ম গঠন করতে হয়, যার জন্য বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত জমির প্রয়োজন। গু পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সারাবছর প্রবল বেগে (15 km/h) বায়ু প্রবাহিত হয় কেবলমাত্র সেইসব অঞ্চলেই বায়ুকল স্থাপন করা সম্ভব, অন্যত্র নয়। ও বায়ুপ্রবাহের বেগের ওপর বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা একান্তভাবে নির্ভরশীল। তাই, আপদকালীন চাহিদার মুহূর্তে এটি খুব নির্ভরযোগ্য নয়। শুধুমাত্র যে-সকল স্থানে ধারাবাহিকভাবে যথেষ্ট বেগে বায়ুপ্রবাহ হয়, সেখানেই এই পদ্ধতির সাফল্যের সুযোগ বেশি থাকে। বায়ুকলগুলি ঘোরার ফলে যে উচ্চকম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তা শব্দদূষণ ঘটায়। ও বায়ুশক্তি ফার্ম-এর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ দুই-ই যথেষ্ট জটিল, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
অনুরূপ প্রশ্ন : বায়ুশক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো।
প্রশ্ন 9 . (i) জোয়ার-ভাটার শক্তি বলতে কী বোঝায়?
(ii) জোয়ার-ভাটার শক্তির ব্যাবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতির নীতিটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
(iii) এই শক্তির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। 2+2
উত্তর . (i) জোয়ার-ভাটার শক্তি (Tidal Energy) : সূর্য ও চন্দ্রের মিলিত আকর্ষণে সমুদ্রে যখন জলস্ফীতি দেখা দেয়, তখন তাকে বলে জোয়ার। আবার, সমুদ্রের জলতল যখন নেমে যায়, তখন তাকে বলা হয় ভাটা। সমুদ্রের এই জোয়ার-ভাটা থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে জোয়ারভাটার শক্তি বলে।
(ii) জোয়ার-ভাটার শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি : জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করা হয়।
জোয়ারের সময় যখন সমুদ্রের জলতল অনেক উঁচুতে থাকে, তখন সমুদ্রের জল জলাধারে প্রবেশ করে এবং প্রবেশপথে অবস্থিত টারবাইনকে ঘোরায়। আবার ভাটার সময় যখন জলাধারের জলসমুদ্রে গিয়ে মেশে তখন নির্গমন পথে অবস্থিত টারবাইনকে ঘোরায়। কারণ এই সময় সমুদ্রের জলতল, জলাধারের জলতলের তুলনায় নীচে থাকে। এভাবে জোয়ার ও ভাটা উভয় ক্ষেত্রেই টারবাইনকে ঘোরানো যায় এবং জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। যেহেতু প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দুইবার ভাটা হয়, তাই জোয়ারভাটার শক্তি থেকে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। ভারতে গুজরাটের কচ্ছ উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এবিষয়ে গবেষণা চলছে।
Advanced Studies: জোয়ারভাটার শক্তি ছাড়াও আরো দুই রকমের শক্তি সমুদ্র থেকে পাওয়া সম্ভব : (i) সমুদ্রতরঙ্গের শক্তি ও (ii) সমুদ্র তাপশক্তি।
(i) সমুদ্রতরঙ্গের শক্তি : বায়ুপ্রবাহের ফলে সমুদ্রের পৃষ্ঠতল বরাবর যথেষ্ট দ্রুত বেগে গতিশীল সমুদ্রতরঙ্গ সৃষ্টি হয়। উচ্চাবেগের কারণে এই তরঙ্গের গতিশক্তি যথেষ্ট উচ্চমানের হয়, যাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। সমুদ্রতরঙ্গের শক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘোরানো এবং তার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক জেনারেটর চালানোর উপযোগী একাধিক মডেল বা প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে উদ্ভাবন করা গেছে।
(ii) সমুদ্র তাপশক্তি : সমুদ্রের পৃষ্ঠে ও গভীরস্তরে উদ্ধতা সমান হয়। না। সূর্যকিরণ দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয় বলে পৃষ্ঠতলের উন্নতা গভীরে থাকা স্তরগুলির তুলনায় বেশি। এই দুই স্তরের উচ্চতার পার্থক্যের কারণে যে শক্তির বাহ্যিক প্রকাশ দেখা যায়, তাকে সমুদ্র তাপশক্তি বলে। এই শক্তি আহরণের জন্য বিশেষ ধরনের শক্তি রূপাস্তর ব্যবস্থা (Ocean Thermal Energy Conversion power plants or OTEC power plants) ব্যবহার করা হয়। দুইস্তরের উন্নতার পার্থক্য 20°C বা তার বেশি হলে ব্যবস্থাটি কাজ করতে পারে।
(iii) জোয়ারভাটা শক্তির সুবিধা :জোয়ারভাটা একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক ঘটনা। আবহাওয়াজনিত প্রতিকূলতা দ্বারা ব্যাহত না হওয়ার ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা এক্ষেত্রে বেশি। ও উৎপাদনজাত এই শক্তি পরিবেশবান্ধব। ও এটি কম ব্যয়সাপেক্ষ। ও এটি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস। তাই, বারবার ব্যবহার করলেও নিঃশেষিত হয় না। ও জোয়ার-ভাটা শক্তির কর্মদক্ষতা 80%, যা অন্যান্য শক্তির কর্মদক্ষতা অপেক্ষা অনেক বেশি।
জোয়ারভাটা শক্তির অসুবিধা : বৃহৎ পরিমাণে শক্তি উৎপাদনের উপযোগী সমুদ্র শক্তি উৎপাদক ব্যবস্থার নকশা এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ও নদীর মোহানা অঞ্চলে সমুদ্র-বাঁধ নির্মিত হলে তার প্রভাবে জলের প্রবাহ তথা নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, বিজ্ঞানীরা এজাতীয় প্রকল্পের বিরোধী। ৩ দিনে মাত্র দুবার জোয়ার হওয়ায় খুব অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা যায়। তাই, উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলির মোট উৎপাদনের মাত্র 40%-এর দ্বারা তৈরি করা সম্ভব। ও সুনামি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করায় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া সমুদ্রের লবণাক্ত ও ঘোলা জলে টারবাইনগুলির কার্যকারিতা অপেক্ষাকৃত দ্রুত নষ্ট হয়।জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় অত্যন্ত বেশি।
অনুরূপ প্রশ্ন : জোয়ার-ভাটার শক্তিকে শক্তির উৎস হিসেবে। যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করা যায় না কেন? 12
প্রশ্ন 10. (1) তৃতাপীয় শক্তি কাকে বলে? এটি কীভাবে তৈরি হয়? এই জাতীয় শক্তি উৎসগুলির অবস্থান কোথায়?
(ii) এই শক্তির ব্যাবহারিক প্রয়োগের সম্ভাবনা কতখানি? এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। * 2
(iii) এই শক্তি ব্যবহারের সুবিধা Babar Multipurpose giate School (Govt Spans) 16 ও অসুবিধাগুলি কী কী ? ** The Park Institution. 116 2+2
উত্তর (i) ভূতাপীয় শক্তি (Geothermal Energy) : পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলে ভূগর্ভে সঞ্চিত ভৌমজল উত্তপ্ত শিলার সংস্পর্শে এসে তাপ পেয়ে উত্তপ্ত হয় এবং শিলাপৃষ্ঠের ফাটলের মধ্য দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গরম জল ও বাষ্পের ঝরণা (Geothermal geyser) হিসেবে নির্গত হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে উপস্থিত এই তাপশক্তিকেই ভূতাপীয় শক্তি বলা হয়।
উৎপত্তি : পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে যতই পৃথিবীর গভীরে যাওয়া যায় ততই উয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে, কারণ। পৃথিবীর অভ্যন্তরে উচ্চ উষ্মতাযুক্ত গলিত শিলা বা ম্যাগমার স্তর বর্তমান। এই গলিত শিলা বা ম্যাগমা চাপের ক্রিয়ায় উপরে ওঠে এবং ভূপৃষ্ঠের ঠিক নীচে কতকগুলি বিশেষ অবস্থানে সম্ভিত হয়। ইট স্পট (Hotspot) নামে পরিচিত এই স্থানগুলি মূলত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলেই বেশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। ভূ-গর্ভস্থ জল এই হটস্পটগুলির সংস্পর্শে এসে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়। যত বেশি পরিমাণে বাষ্প জমা হয়, চাপ তত বাড়তে থাকে। ফলস্বরূপ, উচ্চচাপসহ ওই বাষ্প শিলাস্তরে থাকা ফাটল বা সরু ফাঁকগুলির মধ্য দিয়ে তীব্র বেগে নির্গত হয়। নির্গত বাষ্পের গতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।
অবস্থান: ভূতাপীয় শক্তি সাধারণত ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করে আগ্নেয়গিরি, ‘ফিউমারোল' (আগ্নেয়গিরিজাত গ্যাস নির্গমনের ছিদ্র), উন্নপ্রস্রবণ, 'গিজার ইত্যাদির মাধ্যমে। পৃথিবীর অধিকাংশ ভূতাপীয় ক্রিয়াকলাপ বা শক্তি উৎসগুলি প্রশান্ত মহাসাগরের সীমানা নির্দেশক ‘আগ্নেয় মেখলা' অঞ্চলে অবস্থান করতে দেখা যায়।
জোন রাখা : ভারতবর্ষ স্বল্প পরিমাণে ভূতাপীয় শক্তি উৎপাদন করে থাকে। উল্লেখযোগ্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলির অন্যতম হিমাচল প্রদেশের পার্বতী নদী উপত্যকার মণিকরণ, ছত্তিশগড়ের তাতাপানি, গুজরাটের কাম্বে, লাদাখের পুগা উপত্যকা ইত্যাদি। লাদাখের পুগা উপত্যকায় 4.5 MW বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
(ii) সম্ভাবনা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, আইসল্যান্ড ইত্যাদি দেশগুলিতে এই শক্তিকে অত্যন্ত সফল ও কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা হয়। ভারতবর্ষে কারিগরি প্রয়োগের দিকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও গ্রামীণ পদ্ধতি অবলম্বনে যমুনোত্রী, বলেশ্বর ইত্যাদি স্থানের উৎপ্রপ্রবণগুলিকে রান্নার কাজে, শীতের সময় স্নানের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশের কিছু স্থানে এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।
জেনে রাখো : পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বরে ভূতাপশক্তি ব্যবহার করে যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তার উৎপাদন ক্ষমতা 1050 MWI
ভূতাপীয় শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন : এই ব্যবস্থায় ভূগর্ভের যে অংশে উত্তপ্ত শিলার অবস্থান, সেই অঞ্চলগুলিতে মাটি খুঁড়ে ওই স্তর পর্যন্ত পাইপ বসানো হয়। উত্তপ্ত শিলা সংলগ্ন বাষ্প উচ্চচাপে পাইপের মাধ্যমে উপরে ওঠে। এই উচ্চচাপযুক্ত বাষ্পকে সরাসরি জেনারেটরের টারবাইন ঘোরানোর কাজে লাগানো হয় এবং তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। অনেকসময় ড্রিল করে সংশ্লিষ্ট স্থানে দুটি পাইপ বসানো হয়ে থাকে। এর একটির মাধ্যমে ঠান্ডা জল পাম্প করে পাঠানো হয়, যা উত্তপ্ত শিলার সংস্পর্শে এসে বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পকে অন্য পাইপটির মাধ্যমে বাইরে এনে বিদ্যুৎ তৈরির কাজে লাগানো হয় । ভূ-তাপীয় শক্তিকেন্দ্র
(iii) ভূতাপীয় শক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল _ পরিবেশের ওপর এর কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব নেই। ও ভূতাপীয় শক্তি উৎপাদক কেন্দ্রগুলি কোনো জ্বালানির দহন ঘটায় না। সুতরাং, এদের গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ মাত্রা নগণ্য হয়। ও এগুলি দ্বারা পরিবেশে পরিত্যক্ত CO2-এর পরিমাণ শতকরা 1 ভাগেরও কম হয়। ও দিনে কিংবা রাতে সর্বদাই এই শক্তির জোগান নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া সম্ভব বলে প্রয়োজনমতো যে-কোনো সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
ভূতাপীয় শক্তি ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল _
• ভূতাপীয় ‘হটস্পট’গুলি ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ও
বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক উপায়ে শক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা, ছড়ানো । এদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অবস্থানগত কারণেই অনেক কম। ও মাটির গভীরে খনন করে উত্তপ্ত বাষ্প নির্গমনের পথ তৈরি করাযথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োজন। এই কারণে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এই শক্তির উৎপাদন খুবই কম হয়। ভূতাপীয় শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে ধস নামার সম্ভাবনা এবং ভৌম জলস্তরে দূষণের সম্ভাবনা উভয়ই বৃদ্ধি পায়। ব
প্রশ্ন .11 (i) জীবভর ও জীবভর শক্তি কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
(ii) মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া কী? পরিবেশে এর Hindu School '16 2+1 ভূমিকা লেখো। **
(iii) বায়োগ্যাস কী? বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে এর উৎপাদন 1+2 পদ্ধতিটি চিত্রসহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। বায়োগ্যাস ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। 2+3+2+2
(iv) বর্জ্যপদার্থ থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়? Baranagar Narendranath Vidyamandir '16 3
উত্তর] (i) জীবভর (Biomass) : মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীরদেহাবশেষ এবং প্রাণীদেহের বর্জ্যকে সাধারণভাবে জীবভর বা বায়োমাস বলে।
উদাহরণ : প্রাণীদের মলমূত্র, আখের ছিবড়া, শহরের কঠিন আবর্জনা, রান্নাঘরে অব্যবহৃত বা ব্যবহৃত জৈব অবশেষ, কাঠ, কৃষিজাত বর্জ্য, গোবর ইত্যাদি। আবার কাঠ, কৃষিজাত বর্জ্য, গোবর ইত্যাদির জ্বালানি হিসেবে বহুল ব্যবহার থাকায়, এদের অনেকসময় জৈব জ্বালানি (Biofuel) বলা হয়।
জীনভর শক্তি (Biomass Energy) : জীবভর বা জৈব জ্বালানি থেকে সংগৃহীত শক্তিকেই সাধারণভাবে জীবভর শক্তি বা বায়োমাস শক্তি বলে। বায়োমাস বা জীবভরের মূল উপাদান হল কার্বনঘটিত যৌগ, যার মধ্যে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে। তাই, প্রকৃতপক্ষে এটি সৌরশক্তিরই একটি পরিবর্তিত রূপমাত্র, কারণ উদ্ভিদ ও প্রাণী সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপায়ে সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি দ্বারাই পুষ্টিলাভ করে।
জান রাখো : শুল্ক জীবভর, যেমন— কাঠ, ঘুঁটে (cowdung cake) তাপশক্তির এক প্রাচীনতম উৎস, যা এখনও বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
(ii) দেখানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া (Methanogenic Bacteria) : যে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে বিপাকীয় ক্রিয়ায় উপজাত পদার্থ হিসেবে মিথেন উৎপন্ন করে, তাদের মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বলে। উদাহরণ – মিথানোকক্কাস, মিথানো ব্যাকটেরিয়াম ইত্যাদি।
1 পরিবেশে মোনোজেনিক ব্যাকটিরিয়ার ভূমিকা : এদের মূল কাজ হল মিথেন তৈরি করে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেওয়া। ধানখেত, জলাভূমি, বর্ষা অরণ্যের মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া মিথেন তৈরি করে। গবাদিপশুদের পাকস্থলীর রুমেন প্রকোষ্ঠ ও উইপোকাদের অস্ত্রেও এদের অবস্থান দেখা যায়, যারা মিথেন মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে বাতাসে ছেড়ে দেয়। এইভাবে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুরূপ প্রশ্ন : বায়ুমণ্ডলে মিথেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে মেথারোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা লেখো।
(iii) বায়োগ্যাস (Biogas) : বায়োগ্যাস হল একটি নির্মল ও কার্যকরী জ্বালানি। বায়োমাসকে জলের উপস্থিতিতে কিন্তু বায়ুর অনুপস্থিতিতে অবায়ুজীবী বা মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে বিয়োজিত করলে যে গ্যাসীয় মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, তাকে জৈব গ্যাস বা বায়োগ্যাস বলে। গোবর এবং তরল বর্জ্য পদার্থের অবাত জারণ বা সন্ধান প্রক্রিয়ায় একটি গ্যাসীয় মিশ্রণ সৃষ্টি হয়। এর প্রধান উপাদান মিথেন। বায়োমাস থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর নিষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ পড়ে থাকে, যা থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), হাইড্রোজেন (H2), নাইট্রোজেন (N2), ফসফরাস (P) ও হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) গ্যাস উৎপন্ন হয়। এছাড়াও এটি উত্তম সার হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বা গোবর গ্যাস প্ল্যান্ট : বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে একটি বড়ো ইটের তৈরি ভূগর্ভস্থ আধার বা ট্যাংক (T)থাকে, যার ঢাকনাটি ইটের তৈরি এবং গম্বুজাকৃতি (D) হয়। আধারটি বায়ুনিরুদ্ধ হয় যার মধ্যে কোনো অক্সিজেন থাকে না। উৎপন্ন বায়োগ্যাস গম্বুজাকৃতি ঢাকনার মধ্যে সজ্জিত হয় এবং V ভালভের সাহায্যে S নির্গমনল দিয়ে একে বাইরে বের করে আনা যায়। এ ছাড়া মূল আধার T-এর বামদিকে একটি আগম আধার থাকে, যার মধ্যে তাজা গোবর জমা হয় এবং T-এর ডানদিকে একটি নির্গম: আধার O থাকে যার মধ্যে অবশিষ্ট জৈব আবর্জনা জমা হয়। এ ছাড়াও আগম আধার । মিশ্রণ আধার M-এর সঙ্গে এবং নির্গম আধার O অতিরিক্ত আবর্জনার আধার F-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। সবকটি আধারই ইটের তৈরি হয়।
কার্যনীতি: বায়োগ্যাস উৎপন্ন করার সময় প্রথমে গোবর ও জল সমপরিমাণে মিশিয়ে মিশ্রণ আধার M-এ ফেলা হয়, যা ।-এর মাধ্যমে মূল আধার T-তে প্রবেশ করে। ঢাকনার অংশ বাদ দিয়ে বাকি আধার ভরতি হয়ে গেলে 50 থেকে 60 দিনের মধ্যে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয় ও D তে জমতে থাকে। যত বেশি পরিমাণে বায়োগ্যাস জমা হতে থাকে, তত অবশিষ্ট জৈব আবর্জনা O- এর মাধ্যমে আবর্জনা বা নিষ্ক্রিয় বর্জ্য আধার F-এ প্রবেশ করে। এখান থেকে একে ক্রমাগত বার করে নেওয়া হয়। এটি উত্তম সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্রমাগত গোবর সরবরাহ করতে থাকলে নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয় এবং পাইপের মাধ্যমে একে ঘরে ঘরে পাঠালে রান্নার গ্যাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শুধুমাত্র গোবরই নয়, অন্যান্য বায়োমাসও (যেমন: কৃষিজাত বর্জ্য, গৃহস্থালির বর্জ্য, মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর মলমূত্র, প্রাণীর ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ প্রভৃতি) বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত S HV নিষ্ক্রিয় বর্জ্য আধার M ভূগর্ভস্থ আবার D গোবর ও জলের মিশ্রণ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট হয়। একে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণেও এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
* সুবিধা :বর্জ্যপদার্থ থেকে শক্তি আহরণ নীতিগত দিক থেকে একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি, কারণ সারাবিশ্ব জুড়েই এই প্রক্রিয়ার কাচামাল অর্থাৎ, বর্জ্যপদার্থের সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ও বায়োগ্যাসে মিথেনের শতকরা উপস্থিতি প্রায় 50%-70%। এর তাপন মূল্যও তাই পরিচিত জীবাশ্ম জ্বালানি (কাঠ, কয়লা ইত্যাদি) অপেক্ষা যথেষ্টই বেশি। রান্নাবান্নার প্রয়োজনে, আলো উৎপাদনের কাজে এটি স্বাভাবিকভাবেই একটি নিরাপদ জ্বালানি। বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন উপজাত পদার্থ (গোবর ও জলের তরল মিশ্রণ বা slurry) উচ্চমানের সার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ও বায়োগ্যাস ধোঁয়াবিহীনভাবে জ্বলে, সুতরাং, এটি পরিবেশদূষক নয়। সম্পূর্ণ দাহ্য বলে এটি নির্মল বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।ও বায়োগ্যাস ব্যবহার করলে অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় খরচ খুবই কম হয়। ০ এটি সরাসরি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় বলে, সময়ের কোনো ঝামেলা নেই। বা আরয়োগ্যাসের এতগুলি সুবিধা থাকায় এবং তাপন মূল্য 35-40 Kilig হওয়ায়, একে উত্তম জ্বালানি বলা হয়।
অসুবিধা : ও ব্যাপক অর্থে বিচার করলে বায়োগ্যাসকে জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অধিকতর পরিবেশবান্ধব বলা যুক্তিযুক্ত নয়, কারণ- দহনের মাধ্যমে এটি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ফিরিয়ে দেয়। এর দহনে উৎপন্ন CO, অন্যতম প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস হওয়ায় চূড়ান্ত বিবেচনায় এটি আর পরিবেশবান্ধব নির্মল জ্বালানি নয়। ও বায়োগ্যাস দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় উৎপাদন কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ। ছড়িয়ে পড়ে। ও বায়োগ্যাসের সাহায্যে বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
(iv) বর্জ্য পদার্থ (থাক वদ্যুৎ উৎপাদন : রান্নার কাজে সরাসরি গ্যাসীয় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ছাড়া বায়োগ্যাসকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করা যায়। যেহেতু বর্জ্যপদার্থই বায়োগ্যাসের উৎস, তাই এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশলকে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ (Electricity from waste) উৎপাদন বলে।
এই পদ্ধতিতে সংগৃহীত গৃহস্থালির বর্জ্য, পৌরবর্ষা ও কৃষিজ আবর্জনা ইত্যাদিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বায়োগ্যাস উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্ন বায়োগ্যাসকে উচ্চ উষ্মতায় (প্রায় 850°C) উত্তপ্ত করে সেই তাপের সাহায্যে বয়লারে রাখা জলকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। সেই বাষ্পের সাহায্যে টারবাইন এবং তার মাধ্যমে জেনারেটরের আর্মেচার ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সংশ্লিষ্ট জেনারেটরটিকে WEG (Waste Energy Generator) বলে। Waste Energy Generator Transformer বর্জ্য পদার্থ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিশেষ দ্রষ্টব্য :
জেনে রাখা : ( ) ইউরোপ মহাদেশ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সুইডেনে। এই উৎপাদন কৌশলের ব্যাবহারিক প্রয়োগ সব থেকে বেশি। ভারতবর্ষেও এই বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি ক্রমেই ব্যাপক হারে বাড়ছে। যেমন মহারাষ্ট্রের শোলাপুরে অবস্থিত একটি বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গত 2 বছর ধরে প্রতিদিন 3MW পরিবেশবাদের শক্তি উৎপাদন করে আসছে। (i) ভারতে প্রায় 2,00,000টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে। রান্নার জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ধানের খড় থেকে তৈরি 10 MW ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হয়েছে পাঞ্জাবে।
প্রশ্ন 12 .(i) জৈব জ্বালানি বা বায়োফুয়েল কাকে বলে? Burdwar Municipal girls' High School 161 এর প্রধান প্রকারভেদগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এর ব্যবহারগুলি আলোচনা করো। *
(ii) বায়োফুয়েল ব্যবহারের সুবিধাগুলি লেখো। 2 1+2+2 (iii) বায়োইথানল ও বায়োডিজেল সম্বন্ধে আলোচনা করো। 2+2
উত্তর] (i) বায়োফুয়েল (Biofuel) : উদ্ভিদ বা অণুজীবের মধ্যে আত্তীভূত (Assimilated) কার্বনঘটিত যৌগ থেকে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা জ্বালানিকে বায়োফুয়েল বা জৈব জ্বালানি বলে। যেমন • ‘বায়োইথানল' (ইথাইল অ্যালকোহল)। আগামী ভবিষ্যতে শক্তিসংকট সমস্যার সমাধানের প্রশ্নে প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির উৎকৃষ্টতর বিকল্প হিসেবে এ জাতীয় জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস। এ কারণেই এই জ্বালানিকে বিকল্প জ্বালানি বলা হয় ।
প্রকারভেদ : বায়োফুয়েল তিনপ্রকার। যথা 0 কঠিন বায়োফুয়েল : কাঠ, বাঁশ, খড়, গৃহস্থালির আবর্জনা ।
ও তরল বায়োফুয়েল : ভুট্টা ও আখের ছিবড়া থেকে উৎপন্ন বায়োইথানল ও উদ্ভিজ্জ তেল, প্রাণীজ চর্বি থেকে উৎপন্ন বায়োডিজেল। ও গ্যাসীয় বায়োফুয়েল : গোবর গ্যাস, বায়োগ্যাস।
ব্যায়ায়েলের ব্যবহার : 0 রান্না করার সময় জ্বালানি হিসেবে, ও আলো জ্বালাতে, ও জল ফুটিয়ে স্টিম উৎপন্ন করতে এবং সেই স্টিমের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে, ও কৃষিক্ষেত্রে জল দেওয়ার জন্য পাম্পে জ্বালানি হিসেবে, ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেট্রোলের সঙ্গে বায়োফুয়েল (বায়োইথানল) মিশিয়ে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে, © শীতপ্রধান দেশে ঘর গরম রাখার জন্য বায়োফুয়েল ব্যবহৃত হয়।
(ii) বায়োফুয়েল ব্যবহারের সুবিধা : কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সঞ্জয় যথেষ্ট থাকলেও পেট্রোলিয়ামের ভাণ্ডার যথেষ্ট কম এমন দেশে পেট্রোলিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য সংশ্লেষিত পেট্রোল ব্যবহৃত হয়। ও জ্যাট্রোফা তেল পরিশোধন ছাড়াই ইঞ্জিনে বা ডিজেল জেনারেটরে ব্যবহার করা সম্ভব। ও জ্যাট্রোফা চাষের জন্য শুকনো চাষের অযোগ্য জমিই যথেষ্ট। তাই, অন্যান্য জৈব জ্বালানির যেমন — ভুট্টা বা আখ থেকে পাওয়া তেল, পাম অয়েল ইত্যাদির তুলনায় এর ব্যবহার অর্থনৈতিক দিক থেকেও যথেষ্টই লাভজনক । একইসঙ্গে গাছের চাষ, তেল প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থানও সম্ভব হতে পারে। o বায়োফুয়েল জ্বালানিরূপে ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ হয়। (জান রাখা : যে-সমস্ত জ্বালানি (i) ধোঁয়াহীন শিখায় জ্বলে, (ii) ছাই উৎপন্ন করে না এবং কম বায়ুদূষণ ঘটায়, তাদের সাধারণত নির্মল জ্বালানি (Clean Fuel) বলে। যেমন- বায়োগ্যাস, সংনমিত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (LPG), সংনমিত প্রাকৃতিক গ্যাস (CNG)।
(iii) বায়োইথানল (Bioethanol) : উৎস: বায়োইথানল এক প্রকার তরল বায়োফুয়েলের উদাহরণ, যা মূলত আখ, ভুট্টা, গম ইত্যাদির ছিবড়া বা গুড়ের সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। •
ব্যবহার : এটি গাড়ির জ্বালানিরূপে সরাসরি বা পেট্রোলের সঙ্গে মিশিয়ে (25% পর্যন্ত) বা গাড়ির ইঞ্জিনের পাওয়ার তৈরির কাজে পাওয়ার অ্যালকোহল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বায়োডিজেল (Biodiesel) : উৎস: উদ্ভিদের দেহজাত অবশেষ, উদ্ভিজ্জ তেল অথবা প্রাণীজ চর্বির বিয়োজন ঘটিয়ে উৎপন্ন ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে পেট্রোল মিশিয়ে (Transesterification) বায়োডিজেল প্রস্তুত করা হয়। ও শ্যাওলা বা বিশেষ কিছু অণুজীবও প্রোটিন থেকে এধরনের জৈব জ্বালানি উৎপাদন প্রজাতির গাছ করে। ও বিশেষ কিছু জ্যাট্রোফা, মহুয়া ইত্যাদি ও তার বীজ থেকে তৈরি উদ্ভিজ্জ তেল (Vegetable Oil) ও প্রাণীজ চর্বির সংমিশ্রণ দ্বারাই বায়োডিজেল তৈরি হয়। E85 বায়োইথানল ও বায়োডিজেল
© ব্যবহার : বায়োডিজেল o জেনারেটর চালাতে, ও ডিজেল ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জেনে রাখো : ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও জঙ্গলে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই জ্যাট্রোফার তেলকে গার্হস্থ্য প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।
প্রশ্ন 13. (i) পাওয়ার অ্যালকোহল কী? এর উপাদান কী কী ? * Ballygunge Govt High School '16 1+1 ও ডিজেল ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জনগোষ্ঠীর মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই জ্যাট্রোফার তেলকে গার্হস্থ্য প্রয়োজনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।
(ii) পেট্রোপ্ল্যান্ট কাদের বলা হয়? উদাহরণ দাও। 2+1
উত্তর: (i) পাওয়ার অ্যালকোহল (Power Alcohol) :
পাওয়ার অ্যালকোহল হল আসলে ইথাইল অ্যালকোহল (C2H5OH), পেট্রোল ও খুব সামান্য পরিমাণে বেঞ্জিন-এর মিশ্রণ। পেট্রোলের ভাণ্ডার সীমিত এমন দেশগুলিতে গাড়ির ইঞ্জিনের পাওয়ার বা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই মিশ্রণটি ব্যবহার করা হয়। এই কারণে একে পাওয়ার অ্যালকোহল বলা হয়।
উপাদান : পাওয়ার অ্যালকোহলে উপাদানরূপে পেট্রোল (75 - 80% ), ইথানল (20 - 25%) ও সামান্য পরিমাণে বেঞ্জিন (দ্রাবক রূপে) থাকে।
(ii) পেট্রোপ্লাস্ট (Petro Plant) : প্রকৃতিতে এমন কিছু বিশেষ ধরনের উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের দেহ নিঃসৃত রসের মধ্যে কিছু তরল হাইড্রোকার্বন উপস্থিত থাকায় সেটিকে পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের উদ্ভিদগুলিকে পেট্রোপ্ল্যান্ট বলা হয়। "
উদাহরণ : অ্যাপোসায়নেসি, ইউফোরবিয়েসি এবং অ্যাসকেপিয়াডেসি গোত্রভুক্ত উদ্ভিদগুলি হল পেট্রোপ্ল্যান্টের উদাহরণ। জেনে রাখো: 1979 খ্রিস্টাব্দে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Dr M Calvin সর্বপ্রথম পেটোপ্ল্যান্ট উদ্ভিদের কথা উল্লেখ করেন।
প্রশ্ন 14. (1) কয়লাখনির মিথেন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। কয়লাখনি থেকে মিথেন সংগ্রহের নীতিটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। 2+2
(ii) কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত মিথেন গ্যাসকে কোন্ কোন্ কাজে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর (i) কয়লাখনি मन (Coalbed Methane) : কয়লাখনির মিথেন বা কোলবেড মিথেন হল প্রাকৃতিক গ্যাসেরই অন্য আর-এক রূপ। মিথেন গ্যাস যদি কয়লাগাত্রের সূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্যে অধিশোষিত অবস্থায় থাকে, তখন তাকে বলে কয়লাখনির মিথেন। কয়লার বিভিন্ন স্তরের মধ্যে যে ফাঁক থাকে, তার মধ্যেও অনেকসময় মিথেন গ্যাস মুক্ত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় সজ্জিত থাকে। জলের চাপ কমিয়ে দিলে মিথেন গ্যাস বিশোষিত হয় এবং একে পাইপের সাহায্যে বের করে আনা যায়। কয়লাখনির মিথেনে খুব সামান্য পরিমাণে প্রোপেন ও বিউটেন থাকে। বর্তমানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ যেমন আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে কয়লাখনির মিথেন জ্বালানির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কয়লাখনি থেকে মিথিল সংঘাएव নীভিটি নিম্নরূপ-
কয়লা উত্তোলনের আগে ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়লা স্তর পর্যন্ত কৃপ খনন করা হয় এবং ওই কূপের মধ্য দিয়ে স্টিলের পাইপ কয়লার স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করানো থাকে।
মিথেন পাম্পের সাহায্যে ল উত্তোলন কালা স্তরে অধিশোষিত মিথেন ভূগর্ভস্থ জলের দ্বারা সম্পৃক্ত ও কয়লাস্তর অবস্থায় থাকায় ওই জলের চাপে অধিশোষিত হয়। মিথেন গ্যাস কয়লাস্তরে তাই, মিথেন উত্তোলনের আগে প্রথমে লম্ব এবং পরে অনুভূমিক- ভাবে পাথরের কয়লাখনি থেকে নিখেন সংগ্রহ স্তরের মধ্য দিয়ে কয়লার স্তর পর্যন্ত কূপ খনন করা হয়।
পাম্পের সাহায্যে কয়লাস্তর থেকে জল তুলে নিতে থাকলে ভূগর্ভস্থ জলের চাপ কমতে থাকায় কালোর মধ্যে অধিশোষিত মিথেন মুক্ত হয়।
• মুক্ত মিথেন হালকা হওয়ায় কূপের ওপরে উঠে আসে এবং এই মিথেনকে পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাস আধারে সংগ্রহ করা হয়।
(ii) কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত মিথেন গ্যাসকে নিম্নলিখিত কাজে ব্যবহার করা হয় - • চাপ প্রয়োগ করে মিথেন গ্যাসকে তরলে পরিণত করে তা গাড়ির জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হয়। ও পাইপলাইনের মাধ্যমে এই গ্যাসকে গৃহস্থালির রান্নার কাজে ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সরবরাহ করা হয়। ও বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে টারবাইন ও গ্যাস ইঞ্জিন চালানোর জন্য অনেক সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত মিথেনকে ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন 15. (i) মিথেন হাইড্রেট কী? [ME 18] Rahara RK Mission Boys' Home High School 16 কী ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশে মিথেন হাইড্রেট পাওয়া যায়? * 2+2 2
(ii) কীভাবে এটি শক্তি আহরণে সাহায্য করে ?
(iii) মিথেন হাইড্রেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি লেখো। 2
উত্তর (i) মিথেন হাইড্রেট (Methane hydrate) : মিথেন হাইড্রেট বা মিথেন ক্ল্যাথরেট হল কেলাসাকার একটি কঠিন ক্ল্যাথরেট যৌগ, যাতে জলের কেলাসাকৃতি অণুর মধ্যে মিথেন আটকে থাকে। এর সংকেত হল (4CH, 23H2O) বা (CH, 5.75H2O)। এটি দেখতে অনেকটা বরফের মতো। সমুদ্রের নীচ থেকে নির্গত মিথেন সমুদ্রের ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে এলে মিথেন হাইড্রেটের কেলাস উৎপন্ন করে। মিথেন হাইড্রেটকে উত্তপ্ত করলে মিথেন পাওয়া যায়। উপযুক্ত পদ্ধতির সাহায্যে মিথেন হাইড্রেট থেকে মিথেন উৎপন্ন করলে তা ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারবে এবং এটি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে। তবে মিথেন একটি অন্যতম গ্রিন হাউস গ্যাস হওয়ায় এটি সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
মিথেন হাইড্রেট * মিথেন হাইড্রেট পাওয়ার সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি एल ↑ অতি নিম্ন উয়তাযুক্ত মেরু অঞ্চলগুলিতে হিমায়িত মৃত্তিকাস্তরের নীচে পাললিক শিলাস্তর। ও উপমহাদেশীয় প্রান্ত অঞ্চলে বৃহৎ হ্রদ ও সমুদ্রের নীচে সঞ্চিত পলিস্তর। ও কুমেরু অঞ্চলে সঞ্চিত বরফের তলদেশ এবং ও সমুদ্রতল থেকে কমপক্ষে 500 m বা তার বেশি গভীরতায় ও বৃহৎ হ্রদের তলদেশে সঞ্চিত অধঃক্ষেপের মধ্যে মিথেন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অনুরূপ প্রশ্ন : মিথেন হাইড্রেট কোথায় পাওয়া যায় ? Jalpaiguri Zilla School '16
(ii) শক্তির উৎস হিসেবে मিথেন হাইড্রেট : মিথেন হাইড্রেট থেকে সহজেই প্রাকৃতিক গ্যাস হিসেবে মিথেন সংগ্রহ করা যায়, যাকে প্রথাগত উপায়ে জ্বালানি হিসেবে বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
•1.তাপীয় উত্তেজনা পদ্ধতি (Thermal stimulation method),
2.চাপ অবনমন পদ্ধতি (Depressurasion method), ও
3.রাসায়নিক উপায়ে বাধক অন্তর্ভুক্তি (Chemical injection of inhibitors),
4. O CO, বা CO2 ও N2 -এর মিশ্রণের বিনিময়। প্রথম তিনটি পদ্ধতিতে যথাক্রমে উয়তা বাড়িয়ে, চাপ কমিয়ে বা রাসায়নিক উপায়ে হাইড্রেটের স্থিতাবস্থা বিনষ্ট করে, তা থেকে মিথেন মুক্ত করা হয়। চতুর্থ পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট গ্যাস বা গ্যাসমিশ্রণ আবদ্ধ গঠন থেকে মিথেনকে মুক্ত করে। এই পদ্ধতিতে মিথেন হাইড্রেটকে না গলিয়েও মিথেন উৎপাদন করা সম্ভব। 2012 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যৌথভাবে এই প্রযুক্তির প্রথম প্রয়োগ ঘটায়।
5. তাছাড়াও 1 ঘনমিটার মিথেন হাইড্রেট থেকে প্রায় 160 ঘনমিটার মিথেন গ্যাস পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত মিথেনের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। যেহেতু, প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে সেগুলির ভাণ্ডার দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে, তাই, ভবিষ্যতের শক্তি সংকটের মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পরূপে মিথেন হাইড্রেট বিশেষ সহায়ক হবে। অনুরূপ প্রশ্ন : ‘মিথেন হাইড্রেট হল ভবিষ্যতের অন্যতম বিকল্প শক্তি' – ব্যাখ্যা করো। Dum Dum Motijeel Girls' High School (HS) 16
(iii) বিকল্প শদি উৎস হিসেবে মিথেন হাইড্রেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল _
1.প্রচলিত খনিজ পদার্থগুলির মতো মিথেন হাইড্রেট স্থায়ী নয়। উয়তা বৃদ্ধিতে বা চাপ হ্রাসে এটি দ্রুত বিয়োজিত হয়ে জলে পরিণত হয় ও মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এর ফলে মিথেন হাইড্রেট উত্তোলনের সময় ভূপৃষ্ঠের নীচে হঠাৎ ধস নেমে মিথেন গ্যাস উত্তোলনকারী যন্ত্রপাতি ও সরবরাহকারী পাইপলাইনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া, এভাবে মুক্ত মিথেন গ্যাস বায়ুর অক্সিজেনের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে।
2. মিথেন একটি গ্রিন হাউস গ্যাস। তাই, সঞ্চিত মিথেন হাইড্রেটকে ভেঙে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করার সময় বায়ুতে মিথেন মিশে গেলে তা পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়। ও ভূগর্ভস্থ ও সমুদ্রের তলায় অবস্থিত মিথেন হাইড্রেট থেকে মিথেন গ্যাস উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ও পাইপলাইন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সাপেক্ষ।
বোধমূলক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন 1 . তাপন মূল্য পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা কী ? ** 2
উত্তর ভাপন মূল্য পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা : কোনো জ্বালানি থেকে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ তাপশক্তির পরিমাপই ওই জ্বালানির তাপন মূল্যের মান নির্দেশ করে। তাই, শক্তিদায়ী উপাদানরূপে জ্বালানির ব্যাবহারিক উপযোগিতা বা কার্যকারিতা সরাসরি ওইজ্বালানির তাপন মূল্যের মানের ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, তাপন মূল্য পরিমাপ করেই সঠিক জ্বালানি নির্বাচন করতে পারা যায়। তাপন মূল্য উচ্চ মানের হলে সমপরিমাণ ভরের অন্য জ্বালানির তুলনায় কোনো নির্দিষ্ট জ্বালানির (যেমন • হাইড্রোজেন) তাপ উৎপাদন ক্ষমতাও অপেক্ষাকৃত বেশি হয়, এর ফলে সেটি উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে প্রমাণিত হয়। তাই তাপন মূল্যের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য ।
প্রশ্ন .2 (i) কেরোসিনের তাপন মূল্য 48 kJ/g বলতে কী বোঝায় ? 2
(ii) কয়লার তুলনায় LPG-এর তাপন মূল্য বেশি কেন ? 2
(iii) কয়লা ও কোকের মধ্যে কোনটি ভালো জ্বালানি এবং 2 কেন? ** Habra High School (HS) 16
(iv) জল থেকে হাইড্রোজেন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতে পারে, তবুও একে গৃহস্থালির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় না কেন?
উত্তর] (i) LPG-এর মতো হাইড্রোকার্বন জাতীয় জ্বালানির ক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের শতকরা পরিমাণ বেশি থাকায়, তাপন মূল্যও বেশি হয়। ফলে, কয়লার তুলনায় LPG-এর তাপন মূল্য বেশি হয়। ‘কেরোসিনের তাপন মূল্য 48 kJ/g' – কথাটির অর্থ হল – 1 g কেরোসিনকে সম্পূর্ণরূপে দহন করলে 48 kJ বা 48000 J তাপ উৎপন্ন হবে।
(ii) হাইড্রোজেনের তাপন মূল্য হল 150 kJ/g! তাই,
(iii) কয়লা ও কোকের মধ্যে কোক ভালো জ্বালানি। কারণ • কোকের তাপন মূল্য ( 33 kJ/kg), কয়লার তাপন মূল্য (25 – 30 kJ/kg) অপেক্ষা বেশি। ফলে, কোকের দহণে সমভরের কয়লার দহন অপেক্ষা বেশি পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। ও কয়লার দহণের সময় প্রচুর ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, কিন্তু কোকের দহন চলাকালীন কোনোরূপ ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না। ফলে, জ্বালানি হিসেবে কোক, কয়লা অপেক্ষা কম বায়ুদূষণ ঘটায়।
(iv) জল থেকে হাইড্রোজেন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও একে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় না,
কারণ – 1. হাইড্রোজেন অতি দাহ্য গ্যাস, আগুনের সামান্যতম স্পর্শে বিস্ফোরণসহ জ্বলে ওঠে। তাই, গৃহস্থালির কাজে এই জ্বালানির ব্যবহার নিরাপদ নয়।
2. জল থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ হওয়ায় গৃহস্থালির জ্বালানি হিসেবে এর ব্যবহার আর্থিক দিক থেকে একেবারেই লাভজনক নয়।
3.এটি প্রকৃতিতে এককভাবে সহজলভ্যনয় এবং অত্যন্ত মহার্ঘ একটি জ্বালানি। জেনে রাখো: তরল H, এর তাপন মূল্য অন্যান্য সব জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় রকেটে জ্বালানি হিসেবে তরল H, ব্যবহৃত হয়. এর ফলে রকেটে বিপুল পরিমাণ শক্তি সরবরাহ হয় এবং প্রচন্ড গতির সৃষ্টি হয়। 13 দুটি জ্বালানি A ও B-এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ। A-এর দহনের ফলে CO, SO, ও SO, গ্যাস উপজাত পদার্থ হিসেবে উৎপাদন করে, অন্যদিকে B-এর দহনে উৎপন্ন হয় শুধু CO2 ও H, O। এদের মধ্যে কোনটি অপেক্ষাকৃত ভালো জ্বালানি? ব্যাখ্যা দাও। 1+2 জ্বালানি A ानान B তাপন মূল্য: 55 kJ/g 50 kJ/g 80°C জ্বলনাঙ্ক : 20°C উত্তর জ্বালানি হিসেবে B আপেক্ষাকৃত বেশি উৎকৃষ্ট। কারণ- 0 B-এর জ্বলনাঙ্ক 80°C যা মাঝারি মানের, কিন্তু A-এর বলনাঙ্ক 20°C যা খুবই কম। তাই এর ব্যবহার বিপজ্জনক। อ B-এর দহনে CO2 ছাড়া কোনো পরিবেশদূষক গ্যাস উৎপন্ন হয় না। অন্যদিকে, A-এর দহনের ফলে উৎপন্ন গ্যাসগুলি দূষণ ঘটায়। তাই, তাপন মূল্য সামান্য কম হলেও B অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট জ্বালানি। 3
প্রশ্ন .4 (i) নবীকরণযোগ্য উৎস হওয়া সত্ত্বেও শক্তি উৎস বা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার যথাযথ নয়। ব্যাখ্যা করো। 2
(ii) গাছ থেকে পাওয়া কাঠের দীর্ঘমেয়াদি রাসায়নিক পরিবর্তনে নানা সৃষ্টি হয়। তবুও কয়লাকে অনবীকরণযোগ্য এবং কাঠকে নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎস বলা হয় কেন ? 2
উত্তর (1) প্রশ্নে উল্লিখিত বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তিগুলি হল- - ও সদ্য বসানো একটি চারাগাছ পরিণত হয়ে বৃক্ষের চেহারা লাভ করতে প্রায় 15 বছর সময় লাগে। তাই, বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে তার প্রতিকার হতে দীর্ঘ সময় লাগে। ও কাঠ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ব্যাপকহারে বনভূমি ধ্বংস করা হলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য (Ecological balance) বিঘ্নিত হয়। তাই, শক্তি উৎস হিসেবে কাঠের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আদৌ কামা ও নিরাপদ নয়।
(ii) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়মূলক ঘটনার ফলে বনভূমির বিশাল অংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে ভূগর্ভের অভ্যন্তরে বিপুল চাপ ও তাপের প্রভাবে অতি ধীরগতিতে রাসায়নিকভাবে রূপান্তরিত হয়ে কয়লা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাগুলি প্রকৃতিতে আকস্মিক ঘটে, নিরবচ্ছিন্নভাবে নয় এবং কয়লা ভূগর্ভ থেকে তুলে নেওয়ার পর কোনো প্রাকৃতিক উপায়ে সেই ক্ষয়পূরণ হয় না। ফলে, সম্ভিত কয়লার ভাণ্ডারে টান পড়ে। তাই, কয়লা অনবীকরণযোগ্য শক্তি উৎস। অন্যদিকে, গাছ কেটে ফেলা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক উপায়েই পরিবেশের অন্যত্র নতুন গাছ জন্মায় অর্থাৎ, প্রাকৃতিকভাবেই গাছের সংখ্যা পুরুষ হয়। তাই, কাঠকে নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎস বলা হয়।
প্রশ্ন 5 .একটি পরিবেশদূষক ও অনবীকরণযোগ্য এবং একটি নবীকরণযোগ্য পরিবেশবান্ধব শক্তির উদাহরণ দাও, যারা সূর্য থেকে আসে না।
উত্তর : সূর্য থেকে আসে না এরূপ পরিবেশদূষক ও অনবীকরণযোগ্য উিত্তৰ। শক্তির উদাহরণ হল পারমাণবিক শক্তি। সূর্য থেকে আসে না এরূপ নবীকরণযোগ্য পরিবেশবান্ধব শক্তি হল – তাপীয় শক্তি বা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপশক্তি।
প্রশ্ন 6. (i) সৌরপ্যানেল থেকে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হতে পারে কি? *
(ii) সৌরকোশ রাত্রে ব্যবহার করা যাবে কি? *
(iii) সোলার কুকারে কি মাছভাজা সম্ভব?
(iv) এক ব্যক্তি একটি সোলার কুকার তৈরি করে তাতে একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পাতকে ঢাকনা হিসেবে লাগিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সোলার কুকারটি ঠিক মতো কাজ করছে না ব্যাখ্যা করো। 2
উত্তর: (i) সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহকারী ব্যবস্থা সৌরকোশ ও সৌরপ্যানেল সাধারণভাবে পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎস বলে পরিচিত হলেও এ বিষয়ে কিছু ভিন্ন মতও আছে। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একাংশের দাবি এই যে, সৌরকোশ নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে, যেমন- সিলিকনের পাতলা স্তর প্রস্তুতি, বিশুদ্ধিকরণ, কেলাসিভবন, ওয়েফারিং ইত্যাদি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের বায়ুদূষক পদার্থ, গ্রিন- হাউস গ্যাস সৃষ্টি এবং ভারী ধাতু নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশ দূষণ ঘটায়। তবে মনে রাখা দরকার, এই দূষণ এককালীন ঘটনা এবং একটি সৌরপ্যানেল সাধারণভাবে দশ থেকে পনেরো বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে। তাই, সামগ্রিক বিচারে দূষণের সম্ভাবনা থাকলেও তা জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় যথেষ্টই নগণ্য।
(ii) সৌরকোশ রাত্রে ব্যবহার করা যায় না, কারণ- রাত্রে সূর্যালোক থাকে না। তবে, দিনেরবেলায় সৌরকোশে উৎপন্ন বিদ্যুৎশক্তিকে ব্যাটারিতে সময় করে রাখলে সেই ব্যাটারিকে রাত্রিতে তড়িৎ উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
(iii) সোলার কুকারে প্রতিফলক হিসেবে সমতল দর্পণ ব্যবহৃত হয়। তাই, সোলার কুকারের তাপমাত্রা হয় 100°C - 140°C। এই তাপমাত্রায় মাছভাজা সম্ভব নয়। মাছ ভাজতে গেলে আরো বেশি তাপমাত্রা দরকার। তবে প্রতিফলক হিসেবে অবতল দর্পণ ব্যবহার করলে বেশি তাপমাত্রা সৃষ্টি করা যায় এবং তখন মাছ ভাজা সম্ভব হবে।
(iv) ঢাকনা হিসেবে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পাত লাগানোয় সোলার কারটি ঠিকমতো কাজ করে না। কারণ প্লাস্টিকের পাত গ্রিন হাউস প্রভাব ঘটিয়ে সূর্যের তাপকে আবদ্ধ করতে পারে না। প্লাস্টিকের পাতের পরিবর্তে কাচের পাত ব্যবহার করলে সোলার কুকারটি ঠিকমতো কাজ করবে। কারণ— কাচের পাত গ্রিন হাউস প্রভাব ঘটিয়ে সূর্যের তাপকে আবদ্ধ করতে পারে যাতে সোলার কুকারের আবদ্ধ অংশের উন্নতা বাড়ে ও রান্না করা যায়।
প্রশ্ন 7 .অপ্রচলিত শক্তিকে বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়েছে কেন ? * 3 Chandannagare Municipal Carperation, 16
উত্তর : অপ্রচলিত শন্ত্রিকে বিকল্প শক্তির উৎস হিসোর ব্যবহার
করা প্রয়োজন ছায়াছ, কারণ _
1. বর্তমান শক্তি চাহিদার নিরিখে বিজ্ঞানীদের ধারণা আগামী 40 - 50 বছরের মধ্যে প্রচলিত শক্তির উৎস যেমন – কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির সঞ্চিত ভান্ডার প্রায় নিঃশেষিত হয়ে যাবে।
2. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, মানুষের জীবনধারনের মানোন্নয়ন এবং শিল্পের প্রসারের জন্য অদূর ভবিষ্যতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে, তা আর শুধুমাত্র ক্রমহ্রাসমান প্রচলিত শক্তি উৎসগুলি দ্বারা মেটানো সম্ভবপর হবে না। ও
3. বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণ, অ্যাসিড বৃষ্টি, বিশ্ব উন্নায়ন ইত্যাদি পরিবেশগত সমস্যাগুলি দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শক্তি সংকট ও দূষণ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য প্রচলিত শক্তি উৎসগুলির যোগ্য বিকল্প হিসেবে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বর্তমানে তাই একান্তই জরুরি। অপ্রচলিত শক্তিগুলি সহজলভ্য, বারবার ব্যবহার করা যায়, অফুরন্ত এবং পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে না।
প্রশ্ন 8 .(i) বায়ুশক্তিকে কোন্ শক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয় ও কেন? ★ 1+2
(ii) বায়ুশক্তি অপেক্ষা জোয়ার-ভাটা শক্তি বেশি কার্যকর কেন?
উত্তর] (i) বায়ুশক্তিকে অপ্রচলিত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ – প্রবহমান বায়ুর গতিশক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। পৃথিবীর নানা স্থানে বিশেষত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সারা বছর ধরে প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হওয়ায়, বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা কাজ করতে পারছে। এছাড়া বায়ুশক্তি হল প্রকৃতির এক অফুরন্ত সম্পদ। ক্রমাগত ব্যবহারের দরুণ জীবাশ্ম জ্বালানির মতো এই শক্তির নিঃশেষিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এটি হল একটি দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব শক্তি।
(ii) বায়ুশক্তি ও জোয়ার-ভাটা শক্তি উভয় ক্ষেত্রেই যথাক্রমে বায়ুর স্রোত ও জলের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যেহেতু, সমআয়তন বায়ু অপেক্ষা জল বেশি ভারী হয়, তাই জলস্রোত দিয়ে টারবাইনের চাকা অনেক জোরে ঘোরানো যায়। ফলে, বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া বায়ুপ্রবাহ নিয়মিত হয় না, কিন্তু প্রতিদিন অবশ্যই দুবার জোয়ার-ভাটা হয়। এই কারণে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বায়ুশক্তি অপেক্ষা জোয়ার-ভাটা শক্তি অনেক বেশি কার্যকর।
প্রশ্ন 9 .(i) গোবরকে ঘুঁটে হিসেবে ব্যবহারের পরিবর্তে তাকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় কেন ? 2
(ii) পচনযোগ্য জৈব বর্জ্য, কচুরিপানা জাতীয় আগাছাকে কীভাবে ব্যবহারিক কাজে লাগানো যায় ? 2
উত্তর: (i) গ্রামাঞ্চলে সুলভ জ্বালানি হিসেবে বহুল ব্যবহার থাকলেও ঘুঁটে জ্বালানি হিসেবে আদৌ উৎকৃষ্ট নয়। কারণ - O এর তাপন মূল্য কম, ও এটি প্রচুর ধোঁয়া উৎপন্ন করে ও বায়ুদূষণ ঘটায়, ও এর অসম্পূর্ণ দহনে প্রচুর ছাই ও অবশেষ পড়ে থাকে, • দহনের ফলে গোবরে উপস্থিত নাইট্রোজেন, ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি অক্সাইড তৈরির মাধ্যমে অপসারিত হয়ে যায়।
ঘুঁটের থেকে বায়োগ্যাসের তাপন মূল্য উচ্চ এবং এর দহনে ধোঁয়া বা ছাই উৎপন্ন হয় না, তাই দূষণ কম হয়। একইসঙ্গে অবাত জারণের ফলে গোবরের জৈব অংশটুকুরই বিয়োজন ঘটে। ফলে, মূল্যবান পুষ্টিদায়ী মৌলগুলি অবিকৃত থাকে এবং উপজাত পদার্থ 'স্লারিকে সার হিসেবে ব্যবহার করে তাদের আবার মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। তাই, বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে গোবরের ব্যবহার অধিক ফলপ্রসূ হয়।
(ii) কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (Solid waste management) নীতিকে কাজে লাগিয়ে পচনযোগ্য জৈব বর্জ্যকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই ব্যবস্থায় জৈব বিশ্লেষ্য ও জৈব অবিশ্লেষ্য (Non-biodegradable) পদার্থগুলিকে প্রথমে আলাদা করা হয়। এরপর জৈব বিশ্লেষ্য বর্জ্যগুলিকে ছোটো ছোটো টুকরো বা খণ্ডে বিভক্ত করে সংশ্লিষ্ট বর্জ্য ও জলের তরল মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়। ছোটো টুকরোয় খণ্ডিত হওয়ার ফলে বর্জ্যসমূহের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। ফলে, ব্যাকটেরিয়া ও উৎসেচকের সক্রিয়তা বাড়ে এবং সন্ধান বিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার ফলে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয়।
10 2 (i) মিথেনকে ‘Sweet gas' বলে কেন ? **
(ii) মিথেন হাইড্রেটকে 'ফায়ার আইস' বলে কেন ? ** 2 New Alipore Multipupose school '16
(iii) কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের আগে মিথেন গ্যাস উত্তোলন করা হয় কেন ?
উত্তর: (i) কয়লাখনির মিথেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গ্যাসগুলির মতো এর মধ্যে শরীর বা পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক গ্যাস (যেমন H2S) বা অন্য কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান না থাকায় এর উৎপাদনে বিশেষ সমস্যা বা বিপদের আশঙ্কা প্রায় থাকে না। এছাড়া, উপাদান হিসেবে এর মধ্যে সামান্য পরিমাণে প্রোপেন, বিউটেন ও CO2 মিশ্রিত থাকায়, গুণগত দিক থেকে এটি যথেষ্ট উৎকৃষ্ট হয়। ফলে, এই গ্যাস থেকে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা প্রায় নগণ্য হয়। প্রকৃতিতে ক্ষয়কারী না হওয়ায়,কোনো অবাঞ্ছিত প্রভাবও এই গ্যাস থেকে তৈরি হয় না। তাই, মিথেনকে ‘Sweet gas' বলা হয়।
(ii) উপযুক্ত উষ্ণতা ও চাপে জলের অণু দ্বারা গঠিত বরফ সদৃশ কেলাসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মিথেন আবদ্ধ হয়ে মিথেন হাইড্রেট-এর সৃষ্টি করে। মিথেন গ্যাস প্রকৃতিতে দাহ্য হওয়ায় বরফের মতো দেখতে মিথেন হাইড্রেট কেলাস আগুনের সংস্পর্শে আসামাত্র জ্বলতে থাকে। তাই, একে 'ফায়ার আইস' বলে।
(iii) খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পূর্বে কয়লাস্তরের মধ্যে অধিশোষিত হয়ে থাকা মিথেন গ্যাস উত্তোলন করা হয়ে থাকে, কারণ – 0 মিথেন একটি দাহ্য গ্যাস হওয়ায় খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় মুক্ত মিথেন আগুনের সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভবনা তৈরি হয়। ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়লা উত্তোলন সম্ভব না হলেও সংগৃহীত মিথেনকে সরাসরি জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়, কারণ মিথেন গ্যাস হল উত্তম জ্বালানি। ও মিথেন গ্যাস অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস হওয়ায়, খননের সময় এটি যাতে বায়ুতে মিশে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করতে না পারে, তাই মিথেন গ্যাসকে যথাসম্ভব আগে খনি থেকে উত্তোলন করা হয়।
প্রশ্ন 11. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের শক্তি সংরক্ষণ করা উচিত - ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের শক্তি সংরক্ষণ করা উচিত, কারণ _1. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও তাদের জীবনযাত্রা অতিবাহিত করার জন্য শক্তির ব্যবহার করতে হবে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যতটা শক্তি খরচ করি, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো তার চেয়েও বেশি শক্তি খরচ করবে। সভ্যতা ক্রমশই যন্ত্রনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য আমরা শক্তি সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শক্তিসংকট ভয়াবহ হবে। ও
2. আমাদের মতোই ভবিষ্যৎ প্রজন্মও গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন শক্তির উৎস খুঁজে নেবে। আমাদেরকে তাই শক্তি সংরক্ষিত করে রাখতেই হবে, যাতে তারা সেই নতুন উৎসটুকু খুঁজে বার করার সময় পায়।
3.ও আমরা যদি শক্তি সংরক্ষিত করে রাখি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও শক্তি সংরক্ষণ করতে শিখবে। তাতে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবে এবং মানবজাতি নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে।
For High Flyers:
P
প্রশ্ন 1 .সৌরধ্রুবক কী ? Habra High School (HS) 16 এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। 10m 2 স্থান প্রতি ঘণ্টায় কী পরিমাণ সৌরশক্তি গ্রহণ করবে?
উত্তর সূর্যরশ্মির আপতন অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠের কোনো উন্মুক্ত স্থানে একক সময়ে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে যে পরিমাণ সৌরশক্তি আপতিত হয়, তাকে সৌরধ্রুবক (Solar constant) বলে। এর মান হয় প্রায় 1.4kW/m21 *
তাৎপর্য : নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল জুড়ে কী পরিমাণ সৌরশক্তি ভূপৃষ্ঠ লাভ করে থাকে, তার পরিমাপ সৌরধ্রুবকের মান ব্যবহার করে হিসাব করা হয়। গৃহীত সৌরশক্তি = সৌরধ্রুবক x ক্ষেত্রফল x সময় = (1.4kw/m2) x (10m 2 ) x (1x60 x 60) sec = 50400 kJ I
প্রশ্ন 2 .'হটস্পট' কীভাবে তৈরি হয় ?
উত্তর : ভূগর্ভে নির্দিষ্ট গভীরতায় অবস্থিত কিছু কিছু জায়গায় শিলা (rock) অতি মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে থাকে। শিলাতে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলির বিভাজনের কারণেই এই বিপুলপরিমাণ তাপশক্তি সৃষ্টি হয়। ভূত্বকের নীচে যে-সকল স্থানে এই উত্তপ্ত শিলা অবস্থান করে, সেই অঞ্চলগুলিতেই হটস্পট (Hot spot) তৈরি হয়ে থাকে।
প্রশ্ন 3.ভারতবর্ষে সৌরশক্তি সরবরাহের আনুমানিক পরিমাণ কত?
উত্তর: ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে ভারতবর্ষে বছরের বেশিরভাগ সময় ধরেই সৌরশক্তির আপতন ঘটে। গাণিতিক পরিমাপে পাওয়া যায়, ভারতবর্ষে বছরে যে পরিমাণ সৌরশক্তি এসে পৌঁছোয় তা প্রায় 5,000 ট্রিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা (5000 × 1018 kWh) শক্তির সমতুল্য। মেঘমুক্ত পরিবেশে আপতিত সৌরশক্তির মান দৈনিক 4 – 7 kW·hm-2 পাল্লার মধ্যে পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন 4 .Energy Plantation কি ?
উত্তর : পতিত জমিতে দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ; যেমন - আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে তা থেকে পশুখাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, একে বলে Energy Plantation |
No comments:
Post a Comment