প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন (Response and Chemical Co-ordination in Animals-Hormones): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়|| - SM Textbook

Fresh Topics

Tuesday, October 17, 2023

প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন (Response and Chemical Co-ordination in Animals-Hormones): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়||

 প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন (Response and Chemical Co-ordination in Animals-Hormones): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়||




রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর: 

প্রশ্ন 1. প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। * [ME'07]

 উত্তর:  প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যসমূহ : 

1. উৎস : প্রাণী হরমোন নালিবিহীন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। এ ছাড়া অন্তঃক্ষরা কোশযুক্ত কিছু অঙ্গ (যেমন— শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়, খাদ্যনালির প্রাচীর গাত্র প্রভৃতি) থেকেও হরমোন ক্ষরিত হয়। 

2.  রাসায়নিক প্রকৃতি : প্রাণী হরমোন রাসায়নিক প্রকৃতিতে প্রোটিনধর্মী (ইনসুলিন), পলিপেপটাইডধর্মী (ভেসোপ্রেসিন), গ্লাইকোপ্রোটিনধর্মী (TSH), অ্যামাইনধর্মী (থাইরক্সিন), লিপিডধর্মী (প্রোস্টাগ্ল্যানডিন), ক্যাটেকোলামাইনধর্মী (অ্যাড্রিনালিন) বা স্টেরয়েডধর্মী (ইস্ট্রোজেন) হয়।

 3.  পরিবহণ পদ্ধতি : উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে লক্ষ্যকোশে পৌঁছায় (ব্যতিক্রম – স্থানীয় হরমোন— গ্যাসট্রিন)। 

4. কাজের প্রকৃতি : হরমোন খুব স্বল্পমাত্রায় ক্রিয়াশীল হয়। প্রয়োজনের থেকে বেশি বা কম পরিমাণে হরমোন ক্ষরিত হলে দেহে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। অধিকাংশ হরমোন তাদের ক্ষরণস্থান থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে ক্রিয়া করে। 

5. রাসায়নিক দূত : হরমোন লক্ষ্যকোশে নির্দিষ্ট রাসায়নিক বার্তা পৌঁছে দেয়, যার প্রভাবে লক্ষ্যকোশে নির্দিষ্ট বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন হয়। এজন্য হরমোনকে রাসায়নিক দূত বা কেমিক্যাল মেসেঞ্জার (Chemical messenger) বলে। 

6. রাসায়নিক সমন্বায়ক : হরমোন দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে, এজন্য একে রাসায়নিক সমন্বায়ক বলে। 

7• ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ ও কাজ অপর একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ (Feedback control) বলে। 

 8. পরিণতি : নির্দিষ্ট লক্ষ্যকোশে কার্যকারিতার পর হরমোন সাধারণত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বা অন্য কোনো যৌগে পরিণত হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত উপাদান মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়।

জেনে রাখো : বিজ্ঞানী হাক্সলে (Huxley) হরমোনকে দূত' বা 'Chemical messenger' রূপে উল্লেখ করেন। Advanced Studies রাসায়নিক প্রকৃতি অনুযারী হরমোনকে কারেকটি শ্রেণিতে ভ করা যায়। যথা- রাসায়নিক প্রকৃতি উদাহরণ • থাইরক্সিন, অ্যাড্রিনালিন • প্রোটিনধর্মী ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন (STH), গ্লুকাগন ফেনলজাত • স্টেরয়েডধর্মী টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেন o লিপিডধর্মী প্রোস্টাপ্ল্যানডিন ও গ্লাইকোপ্রোটিন থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH), LH FSH o পলিপেপটাইড ADH বা ভেসোপ্রেসিন, অক্সিটোসিন, ACTH © ক্যাটেকোলামাইন © অ্যামাইনধর্মী অ্যাড্রিনালিন, নর-অ্যাড্রিনালিন | মেলাটোনিন, সেরোটোনিন, অ্যাড্রিনালিন, নর- অ্যাড্রিনালিন, থাইরক্সিন । 

প্রশ্ন 2 .মানবদেহে হরমোন সাধারণভাবে কী কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে  সংক্ষেপে আলোচনা করো। । 

উত্তর :  মানবদেহে হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ কাজ : 

1. কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধি : প্রাণীদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল কোশ বিভাজন এবং বৃদ্ধি। পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত প্রোটিনধর্মী গ্রোথ হরমোন (GH) বা সোমাটোট্রপিন হরমোন (STH) প্রাণীদেহে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়াকে পরোক্ষভাবে উদ্দীপিত করে দেহের সার্বি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

2 . শর্করা বিপাক : মানুষের রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) স্বাভাবি মাত্রা হল 80-120 mg/100 ml। এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অগ্ন্যাশ গ্রন্থি নিঃসৃত ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

3.• BMR নিয়ন্ত্রণ : থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত থাইরক্সিন (T4) ও ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (T3) হরমোন কলাকোশে অক্সিজেন গ্রহণ ও ব্যবহার বাড়িয়ে তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৌল বিপাকীয় হার বা BMR বৃদ্ধি করে।

4 • শক্তির মুক্তি : থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত T ও To হরমোন দেহের কলাকোশে গ্লুকোজ জারণ ত্বরান্বিত করে দ্রুত শক্তির মুক্তি ঘটায় ।

5 • জল সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ : পিটুইটারি নিঃসৃত অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন বা ADH বৃক্কীয় নালিকায় জলের পুনঃশোষণ ঘটিয়ে দেহে জলসাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। ৩ জনন অঙ্গের বৃদ্ধি ও

6. গ্যামেট উৎপাদন : মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া হল গ্যামেট উৎপাদন। পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত গোনাডোট্রফিক হরমোন বা GTH গোনাডকে (যথা- শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) উদ্দীপিত করে গ্যামেট উৎপাদনে সাহায্য করে।

 7. জরুরিকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ : ভয়, রাগ, উত্তেজনা প্রভৃতি জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অ্যাড্রিনালিন হরমোন দেহকে সংকটের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। 

প্রশ্ন 3. হাইপোথ্যালামাস কী? হাইপোথ্যালামাস কীভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে? 

উত্তর:  হাইপোথ্যালামাস মানব অগ্র মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন অঞ্চলে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস ইনফ্যান্ডিবুলাম দ্বারা পিটুইটারি গ্রন্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। পानमाम ধারা পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ 

(i) অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ : হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত বিভিন্ন রিলিজিং হরমোন অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। - হাইপোথ্যালামাস হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত রিলিজিং হরমোন পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে ক্ষরিত হরমোন GH-RH (গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন) গ্রোথ হরমোন (GH) ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। GnRH (গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) গোনাডোট্রফিক হরমোন (GTH) ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। |PRH (প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন) প্রোল্যাকটিন বা লিউটোট্রফিক হরমোন। (LTH) ক্ষরণে সাহায্য করে। -পিটুইটারি স্টক (ইনফ্যান্ডিবুলাম) পশ্চাদ পিটুইটারি O PIH (প্রোল্যাকটিন ইনহিবিটিং হরমোন) প্রোল্যাকটিন ক্ষরণে বাধা দেয়। |TRH (থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।। হাইপোথ্যালানো- হাইপোফাইসিয়াল O CRH (কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন পোর্টাল তন্ত্র (ACTH) ক্ষরণে সাহায্য করে। -অগ্র পিটুইটারি • GHIH (গ্রাথ হরমোন ইনহিবিটিং হরমোন) GH বা STH ক্ষরণে বাধা দেয়। হাইপোথ্যালামাস দ্বারা পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ

 (ii) পশ্চাৎ পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ হাইপোথ্যালামাসের সুপ্রাঅপটিক নিউক্লিয়াস ও প্যারাভেন্টিকুলার নিউক্লিয়াসে সৃষ্ট হরমোনগুলি হাইপোথ্যালামো-হাইপোফাইসিয়াল ট্রাকটের অ্যাক্সনের মাধ্যমে পশ্চাদ পিটুইটারিতে এসে সম্ভিত হয়। হাইপোথ্যালামাসের নিউরোসিক্রেটরি কোশ থেকে সৃষ্ট হরমোন হল © ADH বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন বা ভেসোপ্রেসিন ও ও অক্সিটোসিন। দেহে এই হরমোনগুলির প্রয়োজন হলে স্নায়বিক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং হরমোনগুলি পশ্চাদ পিটুইটারির কোশ থেকে সরাসরি ক্ষরিত হয়ে লক্ষ্যকোশে বাহিত হয়। GTH 4 FSH- (Follic 0LH (Leut ICSH)।

প্রশ্ন 4. পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থান এবং এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন, তাদের লক্ষ্যকোশ বা অঙ্গের নাম এবং কাজ সারণি আকারে উল্লেখ করো। **

 উত্তর : পিটুইটারি গ্রন্থির অবস্থান : মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠের অঙ্কীয়তলে স্ফেনয়েড অস্থি দ্বারা গঠিত সেলাটারসিকা নামক প্রকোষ্ঠে পিটুইটারি গ্রন্থি অবস্থিত। ২. পিটুইটারি গ্রন্থির প্রধান দুটি অংশ বা খণ্ড— (1) অগ্র পিটুইটারি বা অ্যাডেনোহাইপোফাইসিস্, (2) পশ্চাদ পিটুইটারি বা নিউরোহাইপোফাইসিস্। হরমোন A পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে ক্ষরিত হরমোন  অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ক্ষরণ ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। লক্ষ্যকোশ বা অঙ্গ @ অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন (ACTH) অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চল ৪ বাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন(TSH) থাইরয়েড এম্পির ক্ষরণ ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। 

• সোমাটোট্রফিক হরমোন (STH) বা আমি, দেহকোশ, পেশি, মে দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। (GH) o গোনাডোট্রফিক হরমোন (GTH)) শুক্রাশয় (পুরুষদেহে) () বিষয়ে শুক্রাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন এবং ডিম্বাশয় থেকে OLTH স্তনগ্রন্থি (সন্তান ভূমিষ্ঠ ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টোন ক্ষরণকে নিয়ন্ত্র করে। B. পিটুইটারির পশ্চাৎ খণ্ড থেকে ক্ষরিত হরমোন মুখ্য উৎপাদনে সাহায্য করে।

 • হরমোন (ADH) বা কী নালির স নালিকা জলের পুনঃশোষণে সাহায্য করে। স্তনগ্রন্থি (সন্তান প্রসবের পর, জরায়ুর সংকোচনে এবং দুগ্ধক্ষরণে সাহায্য করে। ভেসোপ্রেসিন অক্সিটোসিন  (OCT) 

অনুৰূপ প্ৰশ্ন:  অগ্র পিচুইটারি থেকে নিসৃত দুটি হরমোনের সম্পূর্ণ নাম ও একটি করে কাজ লেখো। (M 121 

জেনে রাখো? তিনি এ হল দেহের ক্ষুদ্র গ্রন্থি। বিজ্ঞানী সোনিয়া (Vesallus, 1543) সর্বপ্রথম এই প্রশিটির বর্ণনা

প্রশ্ন  5. GTH কাকে বলে। GTH-এর কাজগুলি লেখ ।

 উত্তর : অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত মাইকোপ্রোটিনধর্মী যে হরমোন জনন গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে গোনাডোট্রফিক হরমোন (GTH) বা গোনাডোট্রপিন বলে। ক্ষমান অগ্র পিটুইটারির গোনাডোট্রক কোশ। GTH: GTH o FSH স্টিমুলেটিং হরমোন (Follicle Stimulating Hormone) LH হরমোন (Leutinising Hormone) কা (0) FSH ডিম্বাশয়ের উপর ক্রিয়া করে আদি মিলিকে পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকলে পরিণত করে। (0) FSH আফিমান ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। পুরুষদের শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপাদক নালিকার পরিস্ফুরণ ও শুক্রানু উৎপাদনে হা করে। 2000 LH. FSH-এর সাহায্যে গ্রাফ্যিান ফলিকল বা পরিণত ডিম্বথলিকে বিদীর্ণ করে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। 

(i) বিদীর্ণ পরিণত চিলিকে পীতগ্রন্থি (Corpus luteum)-তে পরিণত করে। 

(ii) গীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে অংশ নেয়। ICSH- ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন বর্তমানে পুরুষের ক্ষেত্রে LH'কে ICSH নামে অভিহিত করা হয়েছে। (Interstitial Cell Stimulating Hormone) (i) শুক্লাশয়স্থিত লেডিঙের আস্তরকোশের বৃদ্ধি ও ক্ষ (টেস্টোস্টেরন হরমোন) নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য একে ইন্টারস্টিশিয়াল সেন স্টিমুলেটিং হরমোন বা ICSH বলে। (ii) গৌণ যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও গৌ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে। জেনে রাখো যে জনন এ পরিণত অবস্থায় প্রাণীদেহে জননকোশ বা প্যান্টে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে, তাদের গোনাড (Gonad) বলে পুরুষদের শুক্রাশয় (Testis) এবং স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয় (Ovary))

প্রশ্ন 6.থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান ও এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের কাজগুলি (ME 14,10,031 আলোচনা করো। 

উত্তর : থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান মানুষের গ্রীবাদেশে স্বরযন্ত্রের নীচে শ্বাসনালির দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তরুণাস্থি বলয়ের দু থাইরয়েড গ্রন্থির দুটি পার্শ্বলোর উপস্থিত থাকে। দুটি লোককে যুক্ত রাখে একটি ননম্যান্ডুলার ইসমাস। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নির্গত প্রধান হরমোনের নাম থাইরক্সিন বা T, এবং ট্রাই আয়োডোথাইরোনিন বা T, উল্লেখ্য যে, থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রায় 93% T এবং 7% T, ক্ষরিত হয়ে থাকে।

● থাইরয়েড হরমোনের  কাজ : • মৌল বিপাকীয় হারের ওপর প্রভাব : থাইরক্সিন দেহের কলাকোশে অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়িয়ে গ্লুকোজ জারণ দ্রুত করে। ফলে, দেহে অধিক শক্তি উৎপাদন হয় ও দেহের মৌল বিপাকীয় হার (BMR) বৃদ্ধি পায়। এজন্য একে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়। ও 

বিপাক নিয়ন্ত্রণ: থাইরক্সিন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিডের বিপাকে ও সংশ্লেষে সাহায্য করে। থাইরক্সিন অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণ, যকৃতে গ্লাইকোজেন ভাঙন প্রভৃতির মাধ্যমে রক্তশর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়াও আয়োডিনের বিপাকে থাইরক্সিন সাহায্য করে। 

সংবহনতন্ত্রের ওপর ক্রিয়া : থাইরক্সিনের প্রভাবে দেহে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়।

• রক্তকণিকার ওপর প্রভাব : থাইরক্সিন লোহিত রক্তকণিকার ক্রমপরিণতিতে সাহায্য করে ও রক্তাল্পতা দূর করে। ও

 দেহের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণের ওপর প্রভাব : থাইরক্সিন দেহের বৃদ্ধি, পরিস্ফুরণ; অস্থির বৃদ্ধি ও পরিণতি লাভ; আচরণগত, মানসিক এবং জননগত বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরক্সিন মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে সাহায্য করে। ফলে, শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। এই হরমোনের অভাবে শিশুরা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়। 

 শ্বাসক্রিয়ার ওপর প্রভাব : থাইরয়েড হরমোন অক্সিজেনের ব্যবহার ও কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়ার হার ও গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। 

অনুরূপ প্রশ্ন : মানবদেহে রক্ত সংবহনতন্ত্র ও মৌল বিপাকীয় হার-এর ওপর থাইরক্সিন হরমোন কী প্রভাব ফেলে ? পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন |

 জেনে রাখো : পুকুরের জলে থাইরক্সিন অথবা আয়োডিন যোগ | করলে ব্যাঙাচির রূপান্তর হার দ্রুত হয়। বিজ্ঞানী Gudernatsch (1912) | প্রথম ব্যাঙাচির রূপান্তরে থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

প্রশ্ন 7. অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলে কেন? এই গ্রন্থির অন্তঃক্ষরা অংশ থেকে ক্ষরিত হরমোনের নাম ও কাজ লেখো। * Taki House Govt Spons Girls' High School Te থাইরক্সিনের প্রভাবে দেহে করেন।

 উত্তর : অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি উৎসেচক ক্ষরণকারী বহিঃক্ষরা অংশ বা অ্যাসিনি এবং হরমোন ক্ষরণকারী অন্তঃক্ষরা অংশ বা আইলেটস্ অব ল্যাঙ্গারহ্যানস্-এর সমন্বয়ে গঠিত বলে, একে মিশ্র গ্রন্থি (Mixed gland) বলা হয়। অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি (আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্) থেকে ক্ষরিত হরমোন ও তাদের কাজ : রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। ও সংবহনতন্ত্রের ওপর ক্রিয়া : হরমোনের কাজ (i) গ্লাইকোজেনোলাইসিসের মাধ্যমে গ্লাইকোজেনকে বিশ্লিষ্ট করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। (ii) গ্লুকোনিওজেনেসিসের মাধ্যমে প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় পদার্থ থেকে গ্লুকোজ সংশ্লেষ ত্বরান্বিত করে। ক্ষরিত হরমোন গ্লুকাগন ইনসুলিন আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্ এর অংশ আলফা (c) কোশ (20%) ও বিটা (B) কোশ ( 75%) (i) গ্লাইকোজেনেসিসের মাধ্যমে গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষে সাহায্য করে। (ii) গ্লাইকোজেনোলাইসিস ও গ্লুকোনিওজেনেসিসে বাধা দেয়। (iii) রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় (অ্যান্টি ডায়াবেটোজেনিক হরমোন) এবং কিটোন বডির উৎপাদনে বাধা দেয় (অ্যান্টি কিটোজেনিক হরমোন)। সোমাটোস্ট্যাটিন ইনসুলিন ও গ্লুকাগন ক্ষরণে বাধা দেয়। 

জেনে রাখো : আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্-এর আবিষ্কারক হলেন জার্মান বিজ্ঞানী পল ল্যাঙ্গারহ্যানস্ (Paul Langerhans, 1869)। নাম অনুসারেই এই গ্রন্থির নামকরণ করা হয়।

প্রশ্ন 8. রক্তরা নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোনের ভূমিকা আলোচনা করো। Paralia Zilla School "16 

উত্তর : রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ ইনসুলিন হরমোনের ভূমিকা : o রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা হল 80 120 mg / 100 ml।

1. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পেলে আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানসের B কোশ উদ্দীপিত হয় এবং অধিক পরিমাণ ইনসুলিন ক্ষরণ করে। 

2. ইনসুলিন কলাকোশের ভেদ্যতা বাড়িয়ে রক্ত থেকে গ্লুকোজের অপসারণ ঘটায় এবং হেক্সোকাইনেজ উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে কলাকোশে গ্লুকোজের জারণ ত্বরান্বিত করে।

3.প্রধানত যকৃৎ ও পেশিকোশে ইনসুলিন গ্লাইকোজেন সিনথেটেজ উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে, ফলে গ্লাইকোজেনেসিস ত্বরান্বিত হয়। 

4.  ইনসুলিন যকৃতে ফসফোরাইলেজ উৎসেচকের সক্রিয়তা হ্রাস করে, ফলে গ্লাইকোজেনোলাইসিস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং গ্লুকোজ সংশ্লেষে বাধা ঘটে। সুতরাং, সামগ্রিকভাবে ইনসুলিন রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস করে স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখে।

 গ্লুকাগন হরমোনের ভূমিকা : 1. রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা কমে গেলে আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানসের a. কোশ উদ্দীপিত হয় ও অধিক পরিমাণে গ্লুকাগন ক্ষরিত হয়।

2.  গ্লুকাগন প্রধানত যকৃতে গ্লাইকোজেনকে বিশ্লিষ্ট করে গ্লুকোজে পরিণত করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

3• এ ছাড়া গ্লুকোনিওজেনেসিসের মাধ্যমে গ্লুকোজ সংশ্লেষ বৃদ্ধি করে। সামগ্রিকভাবে গ্লুকাগন হরমোন গ্লুকোজ সংশ্লেষ ত্বরান্বিত করে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় ও স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে।

 খাদ্যগ্রহণের পর বৃদ্ধি পায় | পজিটিভ ফিডব্যাক ইনসুলিন যকৃতে গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চয় রক্তের শর্করা (গ্লুকোজ) কায়িক পরিশ্রমকালে হ্রাস পায় নেগেটিভ ফিডব্যাক গ্লুকাগন যকৃৎ থেকে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ নির্গমণ রক্তে শর্করার স্বাভাবিকমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইনসুলিন ও গ্লুকাগন দ্বারা রক্ত শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ লেখো। | 

অনুরূপ প্রশ্ন : ইনসুলিনের কাজ লেখ ।

 জেনে রাখো : প্লাইকোজেনেসিস (Glycogenesis) : যে প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন উৎপন্ন হয়, তাকে গ্লাইকোজেনেসিস বলে। বিক্রিয়া স্থল : প্রধানত যকৃৎ ও পেশিতে প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয়। গ্লাইকোজেনোলাইসিস (Glycogenolysis): যে প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোজেন | বিশ্লেষিত হয়ে যকৃৎ কোশে গ্লুকোজে এবং পেশিকোশে পাইরুভিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়, তাকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস বলে। বিক্রিয়া স্থল : যকৃৎ কোশ ও পেশিকোশের সাইটোপ্লাজমে ঘটে। নিও গ্লুকোজেনেসিসবা গ্লুকোনিওজেনেসিস (Gluconeogenesis) : | যে প্রক্রিয়ায় অ-কার্বোহাইড্রেটজাতীয় পদার্থ(যেমন— গ্লিসেরল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, পাইরুভিক অ্যাসিড ইত্যাদি) থেকে যকৃতে | গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়, তাকে গ্লুকোনিওজেনেসিস বলে। | বিক্রিয়া স্থল : যকৃৎ ও বৃদ্ধ (বৃদ্ধের তুলনায় যকৃতে এই প্রক্রিয়াটি প্রায় 9-10 গুণ বেশি ঘটে)।

প্রশ্ন 9. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অবস্থান উল্লেখ করো। এই গ্রন্থির থেকে ক্ষরিত হরমোন-এর নাম ও কাজ লেখো। 

উত্তর:  অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অবস্থান : ঊর্ধ্ব উদরগহ্বরের পিছনের দিকে মেরুদণ্ডের দুপাশে দুটি বৃক্কের অগ্রাংশে একটি করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি টুপির ন্যায় অবস্থান করে।

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরাमান ও আদন কাজ : হরমোনের নাম হরমোনের কাজ A. কর্টেক্স অঞ্চল থেকে ক্ষরিত হরমোন 

• মুকোকটিকয়েড ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে গ্লুকোজ সংশ্লেষ (গ্লুকোনিওজেনেসিস) ত্বরান্বিত করে

 • ডিঅ্যামাইনেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন রেচনে সাহায্য করে।

 • মিনারেলোকটি কয়েড রক্ত ও কলাকোশে Na ও K -এর বা অ্যান্ডোস্টেরন পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

 • সেক্সকটিকয়েড বা প্রাথমিক জননাঙ্গ (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) গোনাডোকটিভয়েড এর পরিস্ফুরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। B মেডালা অঞ্চল থেকে ক্ষরিত হরমোন। 

• অ্যাড্রিনালিন বা 1) ৎপিণ্ডের উপর প্রভাব হৃৎস্পন্দনের হার ও হার্দ উৎপাদ (Cardiac output) বৃদ্ধি করে। এপিনেফ্রিন। 2) রক্তবাহের উপর প্রভাব রক্তবাহের প্রাচীরের মসৃণ পেশির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। 3) শ্বাসক্রিয়ার উপর প্রভাব অ্যাড্রিনালিন ক্লোমশাখা ও উপক্লোমশাখার মসৃণ পেশিকে শিথিল করে এবং এর ব্যাস বৃদ্ধি পায়। ফলে দেহে শ্বাসক্রিয়ার হার ও গভীরতা বৃদ্ধি পায়। 4) জরুরিকালীন প্রভা জরুরিকালীন অবস্থায় এই হরমোন অধিকমাত্রায় নিঃসৃত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য একে 'জরুরিকালীন' বা আপৎকালীন হরমোন' বলে। (5) BMR বৃদ্ধি ও তাপনিয়ন্ত্রণ: মৌল বিপাকীয় হার (BMR) বৃদ্ধি করে এবং দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

 • নর অ্যাড্রিনালিন 16) চোখের উপর প্রভাব : অ্যাড্রিনালিন হরমোন চোখের তারারন্দ্রের প্রসারণ ঘটায়। 1) শর্করা ও লিপিড বিপাক বৃদ্ধি করে। বা নর-এপিনেফ্রিন 2) হৃৎস্পন্দনের হার কমায় বা সামান্য বাড়ায়। 3) রক্তচাপ বৃদ্ধি করে ও শ্বাসকার্যকে উদ্দীপিত করে। 

জেনে রাখো: গ্লুকোকটিকয়েড হরমোনের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটার (anti-inflemmatar) এবং অ্যান্টি অ্যালার্জিক (anti-allergic) ধর্মের জন্য এদের রিউম্যাটয়েড আথ্রারাইটিস-এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। 

প্রশ্ন 10 . শুক্রাশয়ের অবস্থান এবং এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের কাজগুলি লেখো। * 

উত্তর : শুক্রাশয়ের অবস্থান : পুরুষদেহে দেহগহ্বরের বাইরে স্ক্রোটাম নামক থলির মধ্যে একজোড়া শুক্রাশয় অবস্থান করে।

A শুক্রাশয়ের লেডিগের আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন ক্ষরিত হয়, যা পুরুষদেহে যৌন হরমোন হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 

• টেস্টোস্টেরনের কাজ © প্রাথমিক ও গৌণ জননাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ : টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদেহে মুখ্য (যেমন- শুক্রাশয়) ও গৌণ (যেমন— শুক্রাশয় থলি, শিশু) যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি, পরিস্ফুরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।

 • গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ : বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষদেহে গোঁফ, দাড়ি, পেশিবহুল দেহ, গম্ভীর কণ্ঠস্বর প্রভৃতি গৌণ যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। 

• প্রোটিন ও রক্তকণিকা সংশ্লেষ : টেস্টোস্টেরন বয়ঃসন্ধিকাল ও তার পরবর্তী সময়ে দেহে প্রোটিন ও লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে। 

o শুক্রাণু উৎপাদন : বয়ঃসন্ধিকাল ও পরবর্তী সমগ্র যৌন জীবনকালে টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপাদক নালিকা থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয়। ও 

পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি : প্রোটিন সংশ্লেষের বৃদ্ধি ঘটিয়ে পেশি ও অস্থির সার্বিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অস্থিতে Ca2+ লবণের সঞ্জয় বৃদ্ধি করে ফলে অস্থি দৃঢ় হয়। 

ও মৌল বিপাকীয় হার বৃদ্ধি টেস্টোস্টেরন মৌল বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে। শুক্রাশয় শুক্রাশয়ের অবস্থা 

জেনে রাখো: 8-9 মাসের ভ্রূণের আবরণ থেকে CHC-এর প্রভাবে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ শুরু হয়। টেস্টোস্টেরন ভ্রূণের দেহে মূত্রজনন তন্ত্র, আনুষঙ্গিক জনন অঙ্গ-এর বিভেদন ও পরিস্ফুরণে সাহায্য করে।

প্রশ্ন 11 . ডিম্বাশয়ের অবস্থান ও এই গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনের কাজ উল্লেখ করো ।

উত্তর : ডিম্বাশয়ের অবস্থান : স্ত্রীদেহে শ্রোণিগহ্বরে জরায়ুর দুপাশে একটি করে ডিম্বাশয় অবস্থান করে। ডিম্বাশয় থেকে ক্ষরিত প্রধান দুটি হরমোন হল ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন। ইস্ট্রোজেন হল স্ত্রীদেহের প্রধান যৌন হরমোন।

ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজ : : ইস্ট্রোজেল হরমোনের কাজ :

1.  মুখ্য ও গৌণ জননাঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ জরায়ু, স্তনগ্রন্থি, যোনি, ডিম্বনালি এবং জননগ্রন্থির বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

2. রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ : ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্ত্রীদেহে স্বাভাবিক ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রিত হয়। ও

3. গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ : বয়ঃসন্ধিকালে ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে স্ত্রীদেহে ত্বকের নীচে ফ্যাট সঞ্চয়, কণ্ঠস্বর কোমল, পিউবিক ও অ্যাক্সিলারি কেশোদ্‌গম, ডিম্বাণু নিঃসরণ প্রভৃতি গৌণ যৌন লক্ষণ। প্রকাশ পায়। ও

 4.প্রোটিন সংশ্লেষ : ইস্ট্রোজেন বয়ঃসন্ধিকালে স্ত্রীদেহে প্রোটিন। সংশ্লেষে সাহায্য করে এবং পেশির বৃদ্ধি ঘটায়। ইস্ট্রোজেন অধিক। পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ফসফেট ধরে রাখতে পারে যা অস্থি গঠনে কাজে লাগে ৷

 . প্রোজেস্টেরন হরমোনের কাজ : 1. জরায়ুর পরিবর্তন : প্রোজেস্টেরন প্রাক রজঃস্রাবীয় দশায় জরায়ু গাত্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটায়, যেমন—এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের বৃদ্ধি ঘটায়। 

2. ডিম্বাণুর প্রতিস্থাপন : প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে পারে। 

3. অমরা বা প্লাসেন্টা গঠন : ভ্রূণের চারপাশে প্রোজেস্টেরনের প্রভাবে অমরা বা প্লাসেন্টা গঠিত হয়। ও 

4. গর্ভাবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা : গর্ভাবস্থার স্থিতাবস্থা ধরে রেখে ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে সাহায্য করে। ও 

5. প্রসবকালীন পরিবর্তন : প্রসবকালে এই হরমোন যোনিপথের বৃদ্ধি ও শ্রোণি বন্ধনীর শিথিলতা ঘটিয়ে, এবং প্রসব পথের আয়তন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন 1.প্রাণী হরমোন বা জু-হরমোন কাকে বলে? প্রাণীদেহে হরমোন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? 

উত্তর  :  প্রাণী হরমোন (Zoo- Hormon):যে সমস্ত জৈব-রাসায়নিক পদার্থ প্রাণীদেহের বিশেষ কোশগুচ্ছ বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে দেহতরলের (রক্ত, লসিকা) মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে লক্ষ্যকোশে পৌঁছায় এবং নির্দিষ্ট কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাকে প্রাণী হরমোন বা জু-হরমোন বলে।

প্রাণীদেহে অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয়। 

Advanced Studies হরমোনের পরিবহণ ও কার্যপদ্ধতি : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে হরমোন বহিঃকোশীয় তরলে নিঃসৃত হয় এবং সেখান থেকে রক্তে ব্যাপিত হয়। রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে লক্ষ্যকোশে পরিবাহিত হয় এবং নির্দিষ্ট গ্রাহক দ্বারা গৃহীত হয়। ও রক্তস্রোতে সমস্ত প্রকার হরমোন উপস্থিত থাকলেও কেবলমাত্র নির্দিষ্ট হরমোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যকোশে প্রবেশের অনুমতি পায়। ও লক্ষ্যকোশের কোশপর্দা বা সাইটোপ্লাজমে উপস্থিত গ্রাহক দ্বারা নির্দিষ্ট হরমোন গৃহীত হয়ে কোশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। ও লিপিডে দ্রাব্য হরমোনগুলি, যথা— ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি সহজেই লক্ষ্যস্থলে গিয়ে কাজ করে, কারণ এরা কোশপর্দা ভেদ করতে পারে এবং কোশে প্রবেশ করে সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হরমোন-গ্রাহক-প্রোটিন কমপ্লেক্স গঠন করে। এই কমপ্লেক্স নিউক্লিয় পর্দা ভেদ করে নিউক্লিয়াসে যায় এবং নির্দিষ্ট জিনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। © অপরদিকে, লিপিডে অদ্রাব্য হরমোনগুলি কোশপর্দা ভেদ করতে পারে না, তাই কোশপর্দার বাইরের দিকে গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হরমোন-গ্রাহক কমপ্লেক্স গঠন করে এবং লক্ষ্যকোশের কোশপর্দার ভেদ্যতা পরিবর্তনের মাধ্যমে অথবা কোশপর্দায় CAMP (সাইক্লিক AMP) গঠনের মাধ্যমে কোশে প্রবেশ করে ও কার্য সম্পন্ন করে। © অ্যাড্রিনালিন, নর-অ্যাড্রিনালিন, গ্লুকাগন, ভেসোপ্রেসিন, থাইরক্সিন প্রভৃতি হরমোন ক্ষরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্যকোশের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয় বলে এদের Quick acting hormones বলে।

প্রশ্ন 2.  ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী ?

উত্তর : যখন কোনো একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির (রেগুলেটর গ্রন্থি) ক্ষরণ পদার্থ অপর কোনো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিকে (টার্গেট গ্রন্থি) হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে এবং ক্ষরিত হরমোনের হ্রাস বা বৃদ্ধি দ্বারা রেগুলেটর গ্রন্থির ক্ষরণ কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ (Feedback control) বলে। একে Push and Pull পদ্ধতি বা Plus minus পদ্ধতিও বলা হয়। মূলত দুইপ্রকার ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়, যথা— 0 পজিটিভ বা ধনাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ। উদাহরণ—রক্তে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেলে LH-এর ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। ও নেগেটিভ বা ঋণাত্মক ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ। উদাহরণ— রক্তে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পেলে FSH-এর ক্ষরণ হ্রাস পায়। 

প্রশ্ন 3.  TSH ও থাইরক্সিন হরমোনের কার্যপদ্ধতির ক্ষেত্রে ঋণাত্মক ও ধনাত্মক ফিডব্যাক পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : TSH ও থাইরক্সিন হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ : 

ঋণাত্মক বা নেগেটিভ ফিডব্যাক : রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিত হয় এবং TRH (থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন) ক্ষরণ 

বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে TSH ক্ষরণ কমে যায় (এটি নেগেটিভ ফিডব্যাক পদ্ধতি) যা রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি নেগেটিভ ফিডব্যাক হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিতকরণ ও TRH এর ক্ষরণ হ্রাস নেগেটিভ ফিডব্যাক থাইরয়েড গ্রন্থি কম উদ্দীপিত হয় এবং থাইরক্সিনের ক্ষরণ কম হয় ও রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে TSH-এর ক্ষরণ হ্রাস © ধনাত্মক বা পজিটিভ ফিডব্যাক রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিত হয় ও TRH এর ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে TSH-এর ক্ষরণ বেড়ে যায় (পজিটিভ ফিডব্যাক), যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে থাইরক্সিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় ও রক্তে থাইরক্সিনের স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা হ্রাস পরিচিত হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপিতকরণ ও TRH এর ক্ষরণ বৃদ্ধি ফিডব্যাক পজিটিভ ফিডব্যাক থাইরয়েড গ্রন্থি বেশি উদ্দীপিত হয় এবং থাইরক্সিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি হয় ও রক্তে স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। পিটুইটারির অগ্রখণ্ড থেকে TSH-এর ক্ষরণ বৃদ্ধি -।

 প্রশ্ন 4.  হাইপোথ্যালামাস কাকে বলে? একে 'প্রভু গ্রন্থির প্রভু' বলা হয় কেন ? 

উত্তর : হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) :  মানব অগ্রমস্তিষ্কের ডায়েনসেফালন অঞ্চলে থ্যালামাসের নীচে অসংখ্য নিউরোসিক্রেটরি কোশ দ্বারা গঠিত স্নায়ুতন্ত্র ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী অংশকে হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) বলে। হাইপোথ্যালামাস ইনফ্যান্ডিবুলাম দ্বারা পিটুইটারি গ্রন্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে।

 হাইপোথ্যালামাসাক প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলা হয়, কারণ:  হাইপোথ্যালামাসের নিউরোসিক্রেটারি কোশ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলি পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপোথ্যালামো -হাইপোফাইসিয়াল পোর্টাল তন্ত্রের মাধ্যমে হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত হরমোনগুলি যেমন— TRH, GnRH প্রভৃতি অগ্রপিটুইটারিতে বাহিত হয় এবং পিটুইটারিকে হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে। TRH, GnRH-এর প্রভাবে অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলি যেমন— TSH, GTH প্রভৃতি আবার অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ, পিটুইটারি প্রভুগ্রন্থিরূপে কাজ করে এবং হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে বলে, একে ‘প্রভুগ্রন্থির প্রভু' বলা হয়।

প্রশ্ন  5 . ট্রফিক হরমোন কাকে বলে? মানবদেহে বিভিন্ন ট্রফিক হরমোনের উৎস ও লক্ষ্যকোশের নাম লেখো। Burdwan Harisana Hindu Girls High School 16 

উত্তর : ট্রফিক হরমোন (Trophic Hormone) : যে-সমস্ত হরমোন কোনো একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে অপর কোনো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৃদ্ধি ও ক্ষরণকে উদ্দীপিত ও নিয়ন্ত্রিত করে, তাদের ট্রফিক হরমোন বলে। যেমন— থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH), গোনাডোট্রফিক হরমোন (GTH), অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন (ACTH)। 

ট্রফিক হরমোনের উৎস ও লক্ষ্যাকাশ : রচনাধর্মী চনং প্রশ্নের ছকটির 2, 3, 4নং পয়েন্টগুলি দ্যাখো।

প্রশ্ন  6.  ACTH -এর ক্ষরণস্থল উল্লেখ করো। এর কাজ কী ? 

উত্তর:  পলিপেপটাইডধর্মী অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন বা ACTH-এর ক্ষরণস্থল হল অগ্র পিটুইটারির কর্টিকোট্রফ কোশ। কাজ : O ACTH অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। ও অ্যাড্রিনাল কর্টেক্স অঞ্চল থেকে গ্লুকোকটিকয়েড, মিনারেলোকটিকয়েড ও সেক্সকটিকয়েড হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপনা জোগায় এবং হরমোন ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ও গ্লুকোকটিকয়েড হরমোন ক্ষরণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট বিপাককে প্রভাবিত করে। 

প্রশ্ন 7.  সোমাটোট্রফিক হরমোনের উৎসস্থল উল্লেখ করে এর কাজগুলি লেখ ।

 উত্তর:  কাজগুলি লেখো। সোমাটোট্রফিক [ME '01] প্রোটিনধর্মী উৎসস্থল হল পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রখণ্ড। হরমোন বা STH-এর © STH-এর কাজ : 

1. বৃদ্ধি : (a) অস্থি বৃদ্ধি কনড্রোসাইট ও অস্টিওসাইট নামক অস্থি কোশদের উদ্দীপিত করে STH যথাক্রমে তরুণাস্থি ও অস্থির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। (b) দৈহিক বৃদ্ধি - (i) প্রোটিন সংশ্লেষ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। (ii) দেহের বিভিন্ন আন্তরযন্ত্র (যেমন— বৃক্ক, যকৃৎ, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয় প্রভৃতি)-এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

2. বিপাক নিয়ন্ত্রণ : (a) লাইপোলাইসিসে সাহায্য করে অর্থাৎ, মেদকলার সঞ্চিত ফ্যাটকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত করে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড দেহে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। (b) যকৃতে গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ সংশ্লেষে সাহায্য করে। অর্থাৎ, গ্লাইকোজেনোলাইসিস ও নিওগ্লুকোজেনেসিস ঘটায়। (c) ক্যালশিয়াম শোষণ ও বিপাক ত্বরান্বিত করে। 

জেনে রাখো : সোমাটোট্রফিক হরমোন গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপাদনে বাধা দেয়। ফলে, রক্তশর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপিত করে ও ইনসুলিন ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ ইনসুলিন মাত্রা যকৃতে গ্লাইকোজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। একে STH বা GH-এর 'ডায়াবেটোজেনিক প্রভাব' (Diabetogenic effect) বলে। 

প্রশ্ন 8 . STH হরমোন কম ক্ষরণের ফলে কী রোগ হয়? এই রোগের লক্ষণগুলি লেখো। **

 উত্তর : শৈশব অবস্থায় STH হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, তাকে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম (Dwarfism) বলে। मনার লক্ষণগুলি হল : এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি 3-4 ফুটের বেশি উচ্চতা সম্পন্ন হয় না। ও অস্থি, পেশি ও অন্যান্য অঙ্গের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ও দেহ ও মুখমণ্ডল মেদবহুল হয়। © গোঁফ, দাড়ির আবির্ভাব হয় না। ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ্যা হয়, কিন্তু মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক থাকে। WORLD HEGORD 201 বামনত্ব জেনে রাখো : প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে STH-এর কম ক্ষরণে অ্যাক্রোমিক্রিয়া (Acromicria) রোগ হয়। 

প্রশ্ন 9 .STH -এর অধিক ক্ষরণজনিত সমস্যাগুলি লেখো । 

 উত্তর :  সোমাটোট্রফিক হরমোনের অধিক ক্ষরণজনিত সমস্যাগুলি O অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম (Gigantism)— অবস্থায় বেশি STH ক্ষরণের ফলে হয়। শিশু 

• লক্ষণ : (i) দেহের উচ্চতা 7-8 ফুট হয়। (ii) অস্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। (ii) রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। 

ও অ্যাক্রোমেগালি (Acromegaly) – প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে STH বেশি ক্ষরণের ফলে হয়।

 • লক্ষণ : (i) চোয়াল অস্থির, হাত-পা, আঙুলের অস্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। (ii) মুখ ও দেহের বিভিন্ন স্থানের ত্বক পুরু ও খসখসে হয়ে যায়। (iii) মানুষকে অনেকটা গরিলার মতো দেখায়।

প্রশ্ন 10 .TSH হরমোন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? এর কাজ কী ? **

উত্তর: গ্লাইকোপ্রোটিনধর্মী থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা TSH ক্ষরিত হয় অগ্র পিটুইটারির থাইরোট্রফ কোশ থেকে। 

কাজ : O TSH থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। ও থাইরয়েড গ্রন্থিকে হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপনা প্রদান করে। ও থাইরয়েড গ্রন্থির সক্রিয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ও থাইরয়েড গ্রন্থির কোশ কর্তৃক আয়োডিন গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে। জেনে রাখো : পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা অধিক দেখা যায়।

প্রশ্ন 11 .LTH বা প্রোল্যাকটিন হরমোন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? এর কাজ কী ?

উত্তর : প্রোটিনধর্মী হরমোন LTH বা প্রোল্যাকটিন ক্ষরিত হয় অগ্র পিটুইটারির অ্যাসিডোফিল কোশ থেকে। কাজ : O গর্ভাবস্থায় স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটায় ও সন্তান প্রসবের পর দুগ্ধ ক্ষরণে সাহায্য করে। ও এটি গর্ভাবস্থায় পীতগ্রন্থিকে নষ্ট হতে দেয় না এবং প্রোজেস্টেরন ক্ষরণ অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। ও বেশি মাত্রায় উপস্থিত প্রোল্যাকটিন ইস্ট্রোজেন-এর পরিমাণ হ্রাস করে। 

প্রশ্ন 12. ADH বা ভেসোপ্রেসিনের ক্ষরণস্থান ও কাজ লেখো। * 

উত্তর : ক্ষরণস্থান : ADH হাইপোথ্যালামাসের নিউরো- সিক্রেটারি কোশ থেকে নিঃসৃত হয়ে পশ্চাদ্ পিটুইটারিতে জমা হয় ও রক্তের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে বাহিত হয়। 

কাজ : 1.দূরসংবর্ত বৃক্কীয় নালিকাতে গ্লোমেরুলার পরিস্রুত তরল থেকে জলের ফ্যাকালটেটিভ পুনঃশোষণ ত্বরান্বিত করে এবং অসমোরেগুলেশনে সাহায্য করে। 

2. রক্তবাহের অমসৃণ পেশির সংকোচন ঘটিয়ে (ভেসোপ্রেসিন) রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন 13. থাইরক্সিন হরমোনের অধিকক্ষরণ ও অধঃক্ষরণজনিত রোগগুলি লেখো। 

উত্তর: থাইরক্সিন হরমোনের অধিকক্ষরণে থাইরয়েড গ্রন্থির সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়ে গলগণ্ড বা গয়টার রোগ হয়। 

লক্ষণ : থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীতি (সরল গলগণ্ড)। • BMR বৃদ্ধি ও অধিক উত্তেজনাজনিত অবস্থা তৈরি হয়। ও অক্ষিগোলকের পিছনে অতিরিক্ত ফ্যাট, তন্তুময় কলা ও তরল সঞ্চয়ের ফলে অক্ষিকোটর ছেড়ে অক্ষিগোলক বাইরে বেরিয়ে আসে (স্ফীতনেত্র গলগণ্ড)। ও পেশি দূর্বলতা (থাইরোটক্সিক মায়োপ্যাথি), অবসাদ, অস্থিরতা ইত্যাদি। 

থাইরক্সিনের অধঃক্ষরণজনিত সমস্যা : • 

1. ক্রেটিনিজম (Cretinism) শিশুদের দেহে কম ক্ষরণের ফলে হয়। • লক্ষণ : (i) শিশুদের দেহের বৃদ্ধি কমে যায়, মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। (ii) দেহত্বক মোটা, শুষ্ক, খসখসে ও ভাঁজযুক্ত হয়। (iii) জনন অঙ্গ অপরিণত অবস্থায় থাকে। (iv) পেট মোটা হয় ও ফুলে যায়। (v) শিশুদের পেশি দুর্বল হয়। মুখমণ্ডল ফুলে যায়, জিভ প্রসারিত হয়ে বেরিয়ে আসে ও মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। 

ক্রেটিনিজম ও মিক্সিডিমা বা গালবর্ণিত রোগ (Myxoedema) : প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে কম ক্ষরণের ফলে হয়। 

● লক্ষণ : (i) দেহে দেহতরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, চোখের তলা ফোলা ফোলা লাগে। (ii) দেহের চামড়া মোটা, সামান্য হলুদ রঙের ও খসখসে হয়। (iii) মস্তক, ভূ, বগল প্রভৃতি স্থান থেকে মিক্সিডিমা চুল উঠে যায়। (iv) হৃৎস্পন্দন হার, দেহের তাপমাত্রা কমে যায়।

প্রশ্ন 14. আড্রিনালিন হরমোনকে জরুরিকালীন হরমোন বলা হয় কেন? (ME 36.12.10.08, 05 কালীন অবস্থা আড্রিনালিন দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর কীরূপ প্রভাব বিস্তার করে সারণি আকারে উল্লেখ করো। **

 উত্তর:  শারীরিক পরিশ্রম (যেমন- নাচ, দৌড়োনো প্রভৃতি) এবং ভয়, রাগ, উদবেগ প্রভৃতি মানসিক উত্তেজনায় আড্রিনালিন হরমোন। অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষরিত হয়ে দ্রুত ক্রিয়াশীল হয় এবং সেই মুহূর্তে দেহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জরুরি অবস্থার উপযোগী করে। ight or flight) তোলে। এজন্য আড্রিনালিনকে 'জরুরিকালীন বা সংকটকালীন' বা 'আপৎকালীন হরমোন' বলে।

জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর অ্যাড্রিনালিন হরমোনের প্রভাব : দেহ অঙ্গ সাড়াদান গ্লুকোজ হৃৎপিণ্ডে দুমদুম শব্দ হওয়া (Thumping heart) ব্যক্তি বিবর্ণ হয় (Person turns pale) শুষ্ক মুখবিবর (Dry mouth) পেশি দৃঢ় ও কাঁপুনিযুক্ত হয় (Shivering) জৈবিক সুবিধা হৃৎস্পন্দন এবং হার্দ উৎপাদ বৃদ্ধি পেশিকোশে বেশি পরিমাণে ও অক্সিজেন প্রেরণ ঘটে। ফুসফুসে দ্রুত 0, প্রেরণ কলাকোশ থেকে CO, অপসারণ ঘটে। এবং জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া বা হাঁপানো (Panting) ত্বকে কম রক্ত সরবরাহ ও পেশিতে বেশি রক্ত সরবরাহ হয়। পেশির পৌষ্টিকনালির চলন ও ক্ষরণ হ্রাস করে। সংকুচিত হয়, পেশিটান বৃদ্ধি পায়। পেশি দ্রুত ক্রিয়াশীল হয়। অ্যাড্রিনালিনের প্রভাব পায়। ক্লোমশাখার প্রসারণ ঘটিয়ে শ্বাস ক্রিয়ার হার দ্রুত ও গভীর করে। সংকোচন ঘটায়। সংকোচন ঘটায় এবং ক্রিয়া শিথিল করে। • হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ও ত্বকের রক্তবাহ ও পৌষ্টিকনালি |

প্রশ্ন 15 .ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলে কেন? 

উত্তর : ডিম্বাশয়কে শিশুগ্রন্থি বলার কারণ হল – ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং করপাস লুটিয়াম (পীতগ্রন্থি) থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়, এটি ডিম্বাশয়ের অন্তঃক্ষরা কাজ (Endocrine function) | আবার, এই গ্রন্থি থেকে ডিম্বাণু নির্গত হয়, এটি ডিম্বাশয়ের বহিঃক্ষরা কাজ (Exocrine function)। অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা—উভয় প্রকার ক্রিয়া থাকায় ডিম্বাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয়। मूकাশাक मিঘथি বলার কারণ হল - শুক্রাশয় অন্তঃক্ষরা এবং বহিঃক্ষরা উভয় অংশের সমন্বয়ে গঠিত। ও

 শুক্রাশয়ের শুক্রাণু উৎপাদক নালিকার (Seminiferous tubules) অন্তর্বর্তী স্থানে অবস্থিত লেডিগের আস্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয় অর্থাৎ এটি শুক্রাশয়ের অন্তঃক্ষরা (Endocrine) অংশ। ও আবার সেমিনিফেরাস নালিকা থেকে উৎপন্ন শুক্রাণু বীর্যসহ পুরুষের জনন নালির মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। তাই এটি শুক্রাশয়ের বহিঃক্ষরা (Exocrine) অংশ ।

 প্রশ্ন 16. MSH কী? এর কাজ লেখো। 

 উত্তর:  মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন বা MSH হল রাসায়নিক প্রকৃতিতে পেপটাইডধর্মী যা পিটুইটারি গ্রন্থির মধ্যখণ্ড বা পার্স ইন্টারমিডিয়া থেকে ক্ষরিত হয়।


কাজ : O ত্বকে ও চুলে অবস্থিত মেলানোসাইট কোশগুলিকে উদ্দীপ্ত করে, মেলানিন (Melanin) নামক রঞ্জক পদার্থ সংশ্লেষে অর্থাৎ, মেলানোজেনেসিসে সাহায্য করে যা ত্বক ও চুলের বর্ণ গঠন করে। ও এছাড়াও এই হরমোন হাইপোথ্যালামাসে কার্যকরী হয়ে ক্ষুধা অনুভূতিকে প্রশমিত করে। ও এই হরমোন মাছ ও উভচর প্রাণীদের ক্ষেত্রে মেলানোফোর নামক কোশে রঞ্জক পদার্থ সংশ্লেষ করে ত্বকের বর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

প্রশ্ন 17 . পিনিয়াল গ্রন্থির অবস্থান লেখো। একে 'বায়োলজিক্যাল ক্লক' বলে কেন?

 উত্তর:  অবস্থান : পিনিয়াল গ্রন্থি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অগ্র মস্তিষ্কের ডায়েনসেফালনে তৃতীয় প্রকোষ্ঠের নীচে অবস্থান করে। এটি এপিথ্যালামাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। 

পিনিয়াল গ্রন্থিকে বায়োলজিক্যাল ক্লক বলা হয়, কারণ— পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মেলাটোনিন হরমোনকে ‘ঘুম হরমোন’ বলে। রক্তে এর ঘনত্ব দিনেরবেলা অর্থাৎ বেশি আলোতে কমে ও রাত্রিবেলা অর্থাৎ কম আলোতে বাড়ে এবং এই হ্রাসবৃদ্ধি আমাদের দেহে সারকাডিয়ান ছন্দ (Circadian rhythm) নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ আলোর সূচক হিসেবে কাজ করে। এজন্য একে বায়োলজিক্যাল ঘড়ি (Biological Clock) বলে।

টীকা লোখা:

প্রশ্ন 1 .ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes insipidus) 

উত্তর: ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes incipidus) : পিটুইটারির পশ্চাৎ অংশ থেকে নির্গত হরমোন ADH (অ্যান্টি ডাই ইউরেটিক হরমোন)-এর কম ক্ষরণের ফলে বৃক্কীয় নালিকায় জলের পুনঃশোষণ হ্রাস পায় এবং মূত্র উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। একে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বলে।

 © উপসর্গ : 0 পলিডিপসিয়া : অধিক পরিমাণে জলপানের প্রবণতা দেখা যায়। ও

 পলিইউরিয়া : অধিক পরিমাণে শর্করাবিহীন মূত্র বারেবারে দেহ থেকে নির্গত হয়। 

ও নক্‌চুরিয়া : রাত্রে বারে বারে মূত্র ত্যাগের জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

 ● ডিহাইড্রেশন : অতিরিক্ত মূত্র ত্যাগের ফলে দেহে জলের অভাব তৈরি হয়। উল্লেখ্য, এই রোগে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। এবং মূত্রে শর্করা নির্গত হয় না। 

প্রশ্ন 2 :  ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes mellitus) 

উত্তর : ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes mellitus) : অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানসের বিটা (B) কোশ থেকে ইনসুলিন হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে রক্তশর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (হাইপারগ্লাইসিমিয়া) এবং মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমাণ শর্করা বা গ্লুকোজ নির্গত হয় (গ্লুকোসুরিয়া)। দেহের এই অস্বাভাবিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ বলে। 

© লক্ষণ : 0 রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (হাইপারগ্লাইসেমিয়া; 300 - 500mg / 100ml রক্ত) ও অধিক শর্করাযুক্ত মূত্রের নির্গমন ঘটে (গ্লাইকোসুরিয়া) এবং ওজন কমে যায়। ও অধিক তৃষ্বাবোধ (পলিডিপসিয়া), অধিক ক্ষুধাবোধ (পলিফ্যাজিয়া) এবং ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের (পলিইউরিয়া) প্রবণতা দেখা যায়। ও শরীর রোগা, দুর্বল ও অবসন্ন হয়ে থাকে। ও দেহের কাটা বা ক্ষত সারতে অনেক বেশি সময় লাগে। ও দৃষ্টিশক্তি ও হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় । 

সাধারণ চিকিৎসা : সঠিক ডায়েটিং এবং ইনসুলিন হরমোন। ইনজেকশনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। 

Advanced Studies ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীলতা অনুযায়ী দু-প্রকারের ডায়াবেটিস মেলিটাস হয়, যথা— O Type । ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস মেলিটাস (Insulin Dependent Diabetes Mellitus - IDDM) যেখানে অগ্ন্যাশয়ের আইলেট্স অফ ল্যাঙ্গারহ্যানসের কোশগুলি ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়। @ Type II ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস মেলিটাস (Non-Insulin dependent Diabetes Mellitus - NI DDM) যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির ইনসুলিন গ্রাহকের সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়।

 জেনে রাখো 14 নভেম্বর হল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস (World Diabetes Day) ।

প্রশ্ন 3 .গলগণ্ড বা গয়টার (Goitre) 

উত্তর : গলগণ্ড (Goitre) : পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত TSH-এর অধিক ক্ষরণের প্রভাবে অথবা দেহে আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ও গলা স্ফীত আকার ধারণ করে। এই অবস্থাকে গলগণ্ড বা গয়টার বলে। 

প্রকারভেদ : গলগণ্ড প্রধানত দুই প্রকার- 

1• সাধারণ গলগণ্ড (Simple Goitre ) : দেহে আয়োডিনের ঘাটতির ফলে Ta (থাইরক্সিন) ও T, তৈরি হয় না এবং TSH থাইরয়েড গ্রন্থিকে অতি সক্রিয় করে, যার ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির ফলিকিউলার কোশগুলি ফুলে উঠে গ্রন্থিটির স্ফীতি ঘটায় ।

2. স্ফীতনেত্র বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড (Exopthalmic Goitre ) : থাইরক্সিন হরমোনের দেহে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষরণের ফলে এই প্রকার গলগণ্ড দেখা যায়। এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির তুলনামূলকভাবে কম স্ফীতি ঘটে এবং চোখের অক্ষিগোলকের স্ফীতি ঘটায়, চোখ দুটি বাইরে বেরিয়ে আসে। 

জেনে রাখো উপরিউক্ত দুই প্রকার গয়টার ছাড়াও আরও কয়েকপ্রকার গয়টার দেখা যায়, যেমন— কোলয়েড গয়টার, নডুলার গয়টার, টক্সিক গয়টার, প্যারেনকাইমেটাস গয়টার ইত্যাদি। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর: 

প্রশ্ন 1. গ্রন্থি (Gland) কাকে বলে? 

উত্তর : গ্রন্থি (Gland) : বহুকোশী উন্নত প্রাণীদেহে যে বিশেষ কোশগুচ্ছ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও কার্যসম্পন্ন রস ক্ষরণ করে, তাদের একত্রে গ্রন্থি বলে। উদাহরণ- লালাগ্রন্থি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, পিটুইটারি গ্রন্থি প্রভৃতি। প্রাণীদেহে গ্রন্থি তিনপ্রকার। যথা- বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থি ও অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি এবং ও মিশ্র গ্রন্থি। 

প্রশ্ন 2 .বহিঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে? উদাহরণ দাও । [ME 10]

 উত্তর : বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine gland) : যে-সমস্ত গ্রন্থির ক্ষরণ পদার্থ (রস) গ্রন্থির নিজস্ব নালির মাধ্যমে গ্রন্থির বাইরে আসে, তাদের বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বা সনাল গ্রন্থি বলে। -গ্রন্থির ক্ষরণ নালির মাধ্যমে বাইরে আসে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি ১৮ উদাহরণ— ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি, মুখগহ্বরে লালাগ্রন্থি, যকৃৎ প্রভৃতি। 

প্রশ্ন 3 . অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে? উদাহরণ দাও। * [ME 10] 

উত্তর:  অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine gland) : যে-সমস্ত গ্রন্থির কোনো নালি থাকে না এবং গ্রন্থির ক্ষরণ পদার্থ (হরমোন) সরাসরি রক্ত বা লসিকায় ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যকোশে বা অঙ্গো বাহিত হয়, তাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অনাল গ্রন্থি বলে। A উদাহরণ— পিটুইটারি, থাইরয়েড, শুক্রাশয় প্রভৃতি গ্রন্থি।

প্রশ্ন  4 . অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর:  অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য এই গ্রন্থি নালিবিহীন এবং ক্ষরণ পদার্থ (হরমোন) সরাসরি রক্ত বা লসিকায় মেশে। ও এই গ্রন্থিগুলিতে তুলনামূলকভাবে বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়। 

জেনে রাখো: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি এবং গ্রন্থি নিঃসৃত পদার্থ সংক্রান্ত অধ্যয়ন ও আলোচনাকে বলে এন্ডোক্রিনোলজি (Endocrinology)।

 প্রশ্ন 5. এন্ডোক্রিনতন্ত্র বা অন্তঃক্ষরাতন্ত্র বলতে কী বোঝো? 

উত্তর:  অন্তঃক্ষরাতন্ত্র (Endocrine system) : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত যে বিশেষ তন্ত্র বিভিন্ন প্রকার হরমোন ক্ষরণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে এবং জীবদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী যেমন— বৃদ্ধি বিপাক, কোশ বিভাজন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে অন্তঃক্ষরাতন্ত্র বা এন্ডোক্রিনতন্ত্র বলে।

প্রশ্ন 6. মিশ্র গ্রন্থি (Mixed gland) কাকে বলে? উদাহরণ দাও ।* Tarasundari Balika Vidyabhawan 16

 উত্তর : যে-সমস্ত গ্রন্থিতে নালিযুক্ত অংশ বা বহিঃক্ষরাধর্মী অংশ এবং নালিবিহীন অংশ বা অন্তঃক্ষরাধর্মী অংশ উভয়ই উপস্থিত থাকে, তাদের মিশ্র গ্রন্থি (Mixed gland) বলা হয়। ২. উদাহরণ— অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয় প্রভৃতি।

প্রশ্ন  7 .অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয় কেন?

 উত্তর : অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি বহিঃক্ষরা অংশ বা অ্যাসিনি এবং অন্তঃক্ষরা অংশ বা আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্ দ্বারা গঠিত। এই গ্রন্থি থেকে একই সঙ্গে উৎসেচক (বহিঃক্ষরা অংশ) এবং হরমোন (অন্তঃক্ষরা অংশ) ক্ষরিত হয়। এজন্য অগ্ন্যাশয় গ্রন্থিকে মিশ্র গ্রন্থি (Mixed gland) বলা হয়। 

প্রশ্ন 8. পিটুইটারি গ্রন্থিকে ‘প্রভু গ্রন্থি' (Master gland) বলা হয় কেন ? 

উত্তর: পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রখণ্ড থেকে ক্ষরিত হরমোনগুলি (ট্রফিক হরমোন) দেহের অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৃদ্ধি ও ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে বলে পিটুইটারিকে ‘প্রভু গ্রন্থি' বা 'মাস্টার গ্ল্যান্ড' বলা হয়। যেমন- পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত TSH, ACTH, GTH হরমোনগুলি যথাক্রমে থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল কর্টেক্স, গোনাড প্রভৃতি গ্রন্থির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। 

প্রশ্ন 9 . হরমোন রাসায়নিক সমন্বয়সাধক (Chemical [ME '07,03] হরমোনকে co-ordinator) বলা হয় কেন ? *

উত্তর:  হরমোন একপ্রকার জৈব-রাসায়নিক পদার্থ যা জীবদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে উৎসস্থল থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অংশে পরিবাহিত হয়। লক্ষ্য অংশের কোশে হরমোন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে বিশেষ রাসায়নিক সংকেত প্রদান করে এবং বিভিন্ন কোশীয় বিপাক কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইভাবে হরমোন বিভিন্ন কলাকোশ, অঙ্গ অর্থাৎ, এক কথায় বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়ার মধ্যে রাসায়নিক সংযোগ তৈরির মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করে। তাই হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বয়সাধক বলে। 

প্রশ্ন 10. হরমোনকে রাসায়নিক দূত' (Chemical messen- ger) বলা হয় কেন ? * [ME'11,07] 

উত্তর : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোন একপ্রকার জৈব রাসায়নিক পদার্থ। হরমোন রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে উৎসস্থল থেকে দূরে প্রবাহিত হয়ে লক্ষ্যকোশে রাসায়নিক বার্তা পৌঁছে দেয়। হরমোন বাহিত বার্তা অনুযায়ী কোশে বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন হয়। এ কারণে হরমোনকে ‘রাসায়নিক দূত' (Chemical messenger) বলে।

প্রশ্ন  11 .হরমোন ক্রিয়ার দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝো? * Ashoknagar Boys' Secondary school '16 

উত্তর:  প্রাণীদেহে বিশেষ কিছু বিপাকীয় কাজ (যেমন— বৃদ্ধি, রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি) কোনো হরমোন দ্বারা উদ্দীপিত ও ত্বরান্বিত হয়। আবার ওই একই কাজ অন্য কোনো হরমোন দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিপরীতমুখী কার্য পরিচালনার এই ধর্মকে হরমোন ক্রিয়ার দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ (Dual Control) বলে। যেমন— ইনসুলিন গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়, অন্যদিকে গ্লুকাগন গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এই জন্য এই দুটি হরমোনকে পরস্পরের বিপরীতধর্মী হরমোন বলা হয়।

প্রশ্ন 12. স্থানীয় হরমোন (Local Hormone) কাকে বলে? যে-কোনো একটি হরমোনের কাজ লেখো।

 উত্তর : স্থানীয় হमान (Local Hormone) : যে-সমস্ত হরমোন উৎপত্তিস্থলেই কোনো বিপাকীয় কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের স্থানীয় হরমোন বলে। যেমন— গ্যাসট্রিন, সিক্সিটিন, কোলেসিস্টোকাইনিন প্রভৃতি। 

গ্যাসট্রিলের কাজ : পাকগ্রন্থি থেকে পাকরসের ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে।

প্রশ্ন  13. প্যারাক্রিন হরমোন বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।  

 উত্তর : প্যারাক্সিল হরामान (Paracrine hormone) : পাশাপাশি অবস্থিত দুটি অন্তঃক্ষরাধর্মী কোশের একটি থেকে ক্ষরিত হরমোন দ্বারা অপরটির হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে প্যারাক্রিন হরমোন বলে। 

উদাহরণ : অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্- স্থিত -কোশ থেকে ক্ষরিত গ্লুকাগন B-কোশ থেকে ক্ষরিত ইনসুলিন হরমোনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

প্রশ্ন 14 .হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে কেন? 

উত্তর : হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিগুলি নালিবিহীন হয়। এই সমস্ত গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোন সরাসরি রক্ত বা কলারসে মুক্ত হয়। এজন্য হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি (Ductless gland) বলে। যেমন— পিটুইটারি, থাইরয়েড ইত্যাদি।

প্রশ্ন  15. সুপ্রারেনাল গ্রন্থি কাকে বলে এবং কেন ? 

উত্তর: অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে সুপ্রারেনাল গ্রন্থি বলে। ‘সুপ্রা’ (Supra) কথার অর্থ ওপরে ( on the top) এবং ‘রেনাল’ কথার অর্থ হল বৃক্ক সম্পর্কিত (Kidney related)। উদর গহ্বরে পেরিটোনিয়াম পর্দার পিছনে বৃক্কের উপরের অংশে সংলগ্ন অবস্থায় টুপির মতো অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিটি থাকে। তাই এই গ্রন্থিকে সুপ্রারেনাল গ্রন্থি বলে।

প্রশ্ন 16 .ইনসুলিনকে অ্যান্টিডায়াবেটিক ও অ্যান্টিকিটোজেনিক' হরমোন বলা হয় কেন ?

 উত্তর : ইনসুলিনের প্রভাবে কোশপর্দার ভেদ্যতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, রক্তের গ্লুকোজ কোশে প্রবেশ করে। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে কমিয়ে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ নিরাময় করে বলে ইনসুলিনকে অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন (Antidiabetic hormone) বলা হয়। 

অপরপক্ষে, ইনসুলিন ফ্যাটের জারণে বাধা দেয়। ফলে, রক্তে কিটোনবডি অর্থাৎ, অ্যাসিটোন উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়। একারণে ইনসুলিনকে 'অ্যান্টিকিটোজেনিক হরমোন' (Antiketogenic) hormone) বলা হয়। 

প্রশ্ন 17. উপচিতিমূলক বা অ্যানাবলিক হরমোন বলে কেন? 

উত্তর:  ইনসুলিনের প্রভাবে যকৃতের কলাকোশে গ্লুকোজ (একক শর্করা) থেকে গ্লাইকোজেন (বহুশর্করা) সংশ্লেষিত হয়। এর ফলে কোশে প্রোটোপ্লাজমের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায়। এজন্য ইনসুলিনকে উপচিতিমূলক হরমোন (Anabolic hormone) বলে। ইনসুলিন গ্লুকোজ (মনোমার); মাইকোজেনেসিস গ্লাইকোজেন (পলিমার)

প্রশ্ন  18. অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো। Baghacar Maltipurpers Gart Girls High School '16  

উত্তর:  1. বিশেষ বিশেষ শারীরিক সংকটজনক অবস্থায় যথা কোনো বিষাক্ত পতঙ্গ কামড়ালে, বিষাক্ত খাবার বা ওষুধ খেলে বা কোনো প্রকার মারাত্মক অ্যালার্জি হলে অ্যাড্রিনালিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। ও 

2. চক্ষু পরীক্ষার সময় তারারন্ধ্রকে প্রসারিত করার জন্য অ্যাড্রিনালিন ব্যবহার করা হয়, যা চোখের ডায়ালেটর পিউপিলি (Dialator pupillae) পেশির সংকোচন ঘটায় এবং তারারষ্ট্রকে প্রসারিত করে।

3 • নিম্ন রক্তচাপ সংক্রান্ত চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন  19 .কোন হরমোনকে কী কারণে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়? 

উত্তর :  থাইরক্সিন হরমোনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলা হয়। : 

কারণ : থাইরক্সিন হরমোন দেহকোশ দ্বারা অক্সিজেনের ব্যবহার বাড়িয়ে কলাকোশে গ্লুকোজ জারণ ত্বরান্বিত করে। ফলে দেহে অধিক পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয় এবং মৌল বিপাকীয় হার (BMR) বৃদ্ধি পায়। এই কারণে থাইরক্সিনকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে। 

প্রশ্ন 20 .কোন হরমোনকে কী কারণে হরমোন বলা হয় ? হাইপারগ্লাইসেমিক Jenkins School'ts 

উত্তর: অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অব ল্যাঙ্গারহ্যানস্-এর a. কোশ থেকে নিঃসৃত গ্লুকাগন হরমোনকে 'হাইপারগ্লাইসেমিক হরমোন' বলা হয়। কারণ— 1. এই হরমোনটি ইনসুলিনের বিপরীত ক্রিয়া করে গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়ায় যকৃতে সম্বিত গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়।

2.• প্রোটিন ও ফ্যাটজাতীয় পদার্থ থেকে নিওগ্লুকোজেনেসিস বা গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ সংশ্লেষ করে, এর ফলেও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ও কলাকোশে গ্লুকোজের জারণের মাত্রা হ্রাস করে এবং গ্লাইকোজেনেসিসে অর্থাৎ গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন রূপান্তরে বাধা দেয়। 

প্রশ্ন 21. ACTH-কে ট্রফিক হরমোন কেন বলা হয় ?

 উত্তর: ACTH পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে ক্ষরিত হয়ে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলকে হরমোন ক্ষরণের জন্য উদ্দীপিত করে এবং অ্যাড্রিনাল কর্টেক্স থেকে গ্লুকোকটিকয়েড, মিনারেলোকটিকয়েড ও গোনাডোকটিকয়েড হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে। একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়ে অপর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে বলে, একে ট্রফিক হরমোন বলা হয়।

প্রশ্ন  22. ADH-এর অপর নাম ভেসোপ্রেসিন দেওয়ার যুক্তি কী? Midnapore Collegiate Schant 6. 

উত্তর: নিউরোহাইপোফাইসিস থেকে ক্ষরিত ADH (Anti Diuretic Hormone) এর এক প্রকার 'vasopressor action বর্তমান, অর্থাৎ চাপ প্রদানের মাধ্যমে শিরা, জালক ইত্যাদিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। এটি নেফ্রনের সংগ্রাহী নালিকায় জলের পুনঃশোষণ বৃদ্ধি করে মূত্রের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, অপরদিকে উপধমনি ও রক্তজালককে সংকুচিত করে দেহের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাই ADH কে ভেসোপ্রেসিন ( vaso নালিকা, pressin = press = চাপ) বলা হয়। 

জেনে রাখো: ADH কে অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন বলে। কারণ- দেহ থেকে অতিরিক্ত জল মুত্রের মাধ্যমে নির্গমণের ঘটনাকে অ্যান্টিডাইইউরেসিস বলে এবং ADH এই কাজে সাহায্য করে বলে, একে অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন বলে। 

প্রশ্ন 23. পাহাড়ি অঞ্চলের লোকেদের গয়টার বেশি হওয়ার কারণ কী? Govt Girls High School, Purulia 16

 উত্তর : পাহাড়ি অঞ্চলের লোকেদের গয়টার বেশি হয়। কারণ— পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিতে আয়োডিনের ঘাটতি থাকে, যা থাইরক্সিন হরমোনের গঠনগত উপাদান। এর ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেদের খাদ্য ও পানীয় জলে আয়োডিনের অভাব ঘটে এবং আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন সংশ্লেষ ব্যাহত হয় ও থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। এই অবস্থাকে গলগণ্ড বলে। একারণে পাহাড়ি অঞ্চলের লোকেদের গলগণ্ড বা গয়টার বেশি হয়। 

প্রশ্ন 24 .খাদ্যলবণ আয়োডিনযুক্ত হওয়া উচিত কেন? (ME13) 

উত্তর : দেহে থাইরক্সিন হরমোন সংশ্লেষের জন্য আয়োডিনের প্রয়োজন হয়। আয়োডিনের অভাবে থাইরক্সিন উৎপাদন ও ক্ষরণ ব্যাহত হয়। এর ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির অতিস্ফীতি ঘটে এবং সাধারণ গলগণ্ড রোগ দেখা দেয়। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য খাদ্যলবণ আয়োডিনযুক্ত হওয়া উচিত।

প্রশ্ন 25. হাইপোথাইরয়ডিজম ও হাইপারথাইরয়ডিজম কী ? 

উত্তর : হাইপোথাইরয়ডিজম (Hypothyroidism) : থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ কম হলে, রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে হাইপোথাইরয়ডিজম বলে। এর ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রেটিনিজম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মিক্সিডিমা রোগ হয়। হাইপারথাইরয়ডিজম (Hyperthyroidism) : থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে, রক্তে থাইরক্সিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে হাইপারথাইরয়ডিজম বলে। এর ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের নিদ্রাজনিত সমস্যা, এক্সোপথ্যালমিক গয়টার বা গ্রেস বর্ণিত রোগ হয়। এ 

প্রশ্ন 26. পিটুইটারি হরমোনের দুটি ব্যবহারিক প্রয়োগ লেখো।

 উত্তর:  (i) গোরুর পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন BST (Bovine Somatotropin) দুগ্ধ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে রিকম্বিন্যান্ট DNA টেকনোলজির মাধ্যমে সৃষ্ট BST দুগ্ধবতী গাভীর দেহে প্রয়োগ করে দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। 

(ii) কার্প বা পোনা মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস ইনজেকশনের সাহায্যে সুস্থ স্ত্রী ও পুরুষ কার্পে প্রয়োগ করে বদ্ধ জলাশয়ে প্রজনন করতে উদ্দীপিত করা হয়। এই পদ্ধতিকে হাইপোফাইজেশন বা প্রণোদিত প্রজনন বলে। পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাসে FSH হরমোনের প্রভাবে গোনাড এর পূর্ণতাপ্রাপ্তি হয় এবং LH হরমোনের প্রভাবে গ্যামেটগুলি গোনাড থেকে মুক্ত হয়ে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। |

 জেনে রাখো : পিটুইটারি হরমোনের চিকিৎসাজনিত প্রয়োগ © সন্তান প্রসবের সময় জরায়ু সংকোচন ঘটাতে ও প্রসবজনিত সমস্যা নিবারণের জন্য পিটুইটারি নিঃসৃত হরমোন অক্সিটোসিনের কৃত্রিম ব্যবহারিকরূপ পিটোসিন ( Pitocin) প্রয়োগ করা হয়। ও ডায়াবেটিস | ইনসিপিডাস রোগের ঔষধরূপে পিটুইটারি নিঃসৃত হরমোন ভেসোপ্রেসিনের | কৃত্রিম ব্যবহারিকরূপ পিটরেসিন (Pitressin) প্রয়োগ করা হয়।

প্রশ্ন 27. প্রাণী হরমোনের দুটি ব্যবহারিক প্রয়োগ লেখো। * Bishnupur High School '16 

উত্তর :1 .হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) হরমোন কৃত্রিমভাবে স্ত্রীদেহে প্রবেশ করালে তা ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে ও মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। অনেকক্ষেত্রে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণেও HCG ব্যবহার করা হয়। 

2• ডায়াবেটিস মেলিটাস অর্থাৎ মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাভাবিক ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্ত রোগীদের কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া হয় যা রক্তে বর্ণিত গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

[ বি:দ্র: পিটুইটারি হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগও প্রাণী হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগে লেখা যেতে পারে। 

প্রশ্ন 28.  পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত নয় এইরূপ তিনটি হরমোনের নাম লেখো। [ME'00]

 উত্তর:  পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত নয় এইরূপ তিনটি হরমোন হল— টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন।

প্রশ্ন 29. মানবদেহে জননগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণে GTH-এর দুটি ভূমিকা লেখো। [ME '17] 

উত্তর : 1• GTH-এর অন্তর্গত FSH বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবে স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ে পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত হয়। ও 

2.GTH-এর অন্তর্গত LH বা লিউটিনাইজিং হরমোনের প্রভাবে স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়স্থিত পীতগ্রন্থি বা করপাস লুটিয়াম থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয়। 

3• GTH-এর অন্তর্গত LH বা ICSH বা ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবে পুরুষদেহে শুক্রাশয়স্থিত লেডিগের আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয়। 

প্রশ্ন। 30.  জননকার্য নিয়ন্ত্রক দুটি হরমোনের নাম লেখো। 

উত্তর:  জননকার্য নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন হল— টেস্টোস্টেরন (পুরুষদেহে) ও ইস্ট্রোজেন (স্ত্রীদেহে)।

প্রশ্ন  31. টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণস্থান ও কাজ লেখো। **[ME '15,13,08] 

উত্তর:  টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণস্থান : শুক্রাশয়স্থিত লেডিগের আন্তরকোশ। কাজ : বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষদেহে পেশি ও অস্থির বৃদ্ধি, গোঁফ-দাড়ি সৃষ্টি, ভারী কণ্ঠস্বর প্রভৃতি গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ পায়। ও শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। 

প্রশ্ন 32. ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থান ও কাজ লেখো। **[ME '15,13,08] 

উত্তর: ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণস্থান : পরিণত ডিম্বথলি বা গ্রাফিয়ান ফলিকল।

 কাজ : O বয়ঃসন্ধিকালে স্ত্রীদের কোমল কণ্ঠস্বর, দেহে ফ্যাট সঞ্চয় প্রভৃতি গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে। ও উৎপাদনে সাহায্য করে এবং রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রশ্ন 33 .প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণস্থান ও কাজ লেখো। * [ME '16,14,13]

 উত্তর : প্রোজেস্টেরনের ক্ষরণস্থান : ডিম্বাশয়ের পীতগ্রন্থি বা করপাস লুটিয়াম থেকে ক্ষরিত হয়। 

কাজ : 1. জরায়ুগাত্রে ভ্রূণের রোপণ ও গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। ও

2. গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের চারপাশে অমরা বা প্লাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে।

প্রশ্ন 34 .শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের হরমোনের ক্ষরণ অপর কোন কোন্ হরমোনের উপর নির্ভরশীল ? *

 উত্তর :  হরমোনের নাম যে হরমোনের উপর নির্ভরশীল [ME'13] ইস্ট্রোজেন (ডিম্বাশয়) ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) প্রোজেস্টেরন (ডিম্বাশয়) লিউটিনাইজিং হরমোন (LH) টেস্টোস্টেরন (শুক্রাশয়) ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন (ICSH) 13

প্রশ্ন 35. বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রক দুটি হরমোনের নাম লেখো। 

উত্তর : বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন হল থাইরক্সিন ও ইনসুলিন। 

প্রশ্ন 36. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) কাকে বলে? উত্তর কোনো কারণে ইনসুলিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস (80 mg / 100ml এর কম) পেয়ে যে বিশেষ লক্ষণযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে।

প্রশ্ন  37. হাইপার গ্লাইসেমিয়া (Hyperglycemia) কাকে বলে ? 

উত্তর : কোনো কারণে ইনসুলিনের ক্ষরণ হ্রাস পেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি ( 120-140 mg / 100 ml-এর বেশি) পেয়ে যে বিশেষ লক্ষণযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। হাইপারগ্লাইসেমিয়া অবস্থায় দেহের অতিরিক্ত গ্লুকোজ মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়। 

প্রশ্ন 38. মধুমেহ রোগীকে দেওয়া হয় কেন ? ইনসুলিন ইনজেকশনের পরামর্শ Jodhpur Park Boys' School '16 

উত্তর:  মধুমেহ রোগীর দেহে ইনসুলিনের কম ক্ষরণ ঘটায় রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় ও মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ নির্গত হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক করার জন্য মধুমেহ রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন সরাসরি রক্তে পৌঁছায় বলে গ্লুকোজ দ্রুত গ্লাইকোজেনরূপে কোশে সজ্জিত হয়। ইনসুলিন প্রোটিনধর্মী হরমোন এজন্য মৌখিকভাবে বা ট্যাবলেটরূপে গ্রহণ করলে এটি পৌষ্টিকনালিতে উপস্থিত প্রোটিনভঙ্গক উৎসেচক দ্বারা পাচিত হয়ে যায় ও হরমোনের ক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। 

For High-Flyers: 

প্রশ্ন 1. নিউরোহরমোন (Neurohormone) কাকে বলে? 

উত্তর :হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত যে সমস্ত পলিপেপটাইড জাতীয় হরমোন নন-মেডলেটেড স্নায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে পশ্চাদ পিটুইটারিতে সঞ্চিত হয় ও দেহের প্রয়োজন অনুসারে পিটুইটারির পশ্চাৎখণ্ড থেকে ক্ষরিত হয়, তাদের নিউরোহরমোন বলে। যেমন— অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন।

 প্রশ্ন 2 .ভয় পেলে ত্বকের রোম খাড়া হয় কেন? 

উত্তর: ভয় পেলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রিনালিন বা এপিনেফ্রিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, যা ত্বকের অ্যারেক্টারস্ পিলি নামক পেশির সংকোচন ঘটায়, ফলে রোম খাড়া হয়ে যায়। 

প্রশ্ন  3. অ্যাড্রিনালিনকে 45 হরমোন বলে কেন? 

উত্তর:  অ্যাড্রিনালিন নিম্নলিখিত কাজগুলি করে বলে ইহাকে 4S হরমোন বলে - শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে (Source of energy)। @ দেহে লবণ আয়নের ধারক হিসেবে কাজ করে (Salt retaining)। যৌন হরমোনের ক্ষরণে সাহায্য করে (Sex hormone secretion)। ও শর্করা বিপাকে অংশগ্রহণ করে (Sugar metabolism)! 

প্রশ্ন 4 .হরমোন থেরাপি কাকে বলে?

 উত্তর: থেরাপি বলে। 

প্রশ্ন 5 .হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতিকে হরমোন টেস্টোস্টেরন হরমোনকে 'অ্যান্ড্রোজেন' বলা হয় কেন ? 

উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষদেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয়ে বিভিন্ন গৌণ যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, শুক্রাণু উৎপাদন (স্পার্মাটোজেনেসিস) ত্বরান্বিত করে এবং পুরুষদেহে স্বাভাবিক যৌন আচরণগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য একে 'অ্যান্ড্রোজেন' (গ্রিক শব্দ Andro = masculine বা পুরুষোচিত) বলা হয়।

প্রশ্ন  6. ফেরোমোন (Pheromone) কাকে বলে? 

উত্তর : যে-সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ কোনো বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে দেহের বাইরে ব্যাপিত হয় এবং একই প্রজাতিভুক্ত অন্য প্রাণীর আচরণগত, পরিস্ফুরণগত বা জননগত কাজে উদ্দীপনা সৃষ্টি। করে, তাদের ফেরোমোন বলে। যেমন—পিঁপড়ের দেহ থেকে নিঃসৃত ফরমিক অ্যাসিড (HCOOH) অন্য পিঁপড়েদের আকর্ষণ করে। এর জন্য পিঁপড়েরা লাইন করে একই দিকে চলে।

প্রশ্ন 7. অটোক্রিন হরমোন কী ? 

উত্তর : যে হরমোন উৎপাদক কোশের মধ্যেই নিজ কার্যকারিতা প্রদর্শন করে, তাকে অটোক্রিন হরমোন বলে। যেমন— PAF বা অনুচক্রিকা সক্রিয়ক উপাদান (রক্তবাহের প্রাচীরে উৎপন্ন হয়ে স্থানীয়ভাবে কাজ করে)। 

প্রশ্ন 8 .দেহের সর্বত্র পাওয়া যায় এমন একটি হরমোনের নাম লেখো। 

উত্তর : প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন।

প্রশ্ন  9 .সাইমন্ডস্ রোগ কী? এটির লক্ষণগুলি কী কী ? 

উত্তর : অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে বা সমগ্র পিটুইটারি সামগ্রিক অবক্ষয়ের জন্য বড়োদের যে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাকে সাইমন্ডস্ রোগ বলে। লক্ষণ : দেহের ওজন হ্রাস, রক্তাল্পতা, মুখের ত্বকের কুঞ্চন, দুর্বলতা ইত্যাদি। 

প্রশ্ন 10 .গর্ভনিরোধক বড়িতে কোন্ হরমোন থাকে?

 উত্তর. প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন। 

প্রশ্ন 11. প্যারাথরমোন কী ? 

উত্তর:  প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হরমোনকে প্যারাথরমোন বা প্যারাথাইরয়েড হরমোন (PTH) বলে। এটি রক্তে ও কলারসে Ca2+ ও PO 3 আয়নের ভারসাম্য রক্ষা করে। বিজ্ঞানী কলিপ এটি আবিষ্কার করেন বলে একে কলিপস্ হরমোনও বলা হয়।

প্রশ্ন 12.  ক্যালসিটোনিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয় ? এর কাজ কী ? 

উত্তর:  থাইরয়েড গ্রন্থির প্যারাফলিকুলার কোশগুলি থেকে ক্যালসিটোনিন বা থাইরোক্যালসিটোনিন ক্ষরিত হয়। কাজ : রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। 

প্রশ্ন  13 ভিরিলিজম কী? [ উত্তর অ্যাড্রিনাল কর্টেক্স নিঃসৃত হরমোন সেক্সকটিকয়েড বা অ্যান্ড্রোজেন মহিলাদের দেহে অধিক পরিমাণে ক্ষরিত হলে মহিলাদেহে কিছু পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য (যেমন— গোঁফ-দাড়ি তৈরি হওয়া, রজঃস্রাব বন্ধ থাকা ইত্যাদি) প্রকাশিত হয়ে থাকে। এই ঘটনাকে ভিরিলিজম বলা হয়, যা হল একপ্রকার অ্যাড্রিনোজেনিটাল সিন্ড্রোম।



No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();