উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয় হরমোন (Response and Chemical coordination in plants-Hormones): দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়| class 10 life science 1st chapter question answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. উদ্ভিদ হরমোন কাকে বলে? উদ্ভিদ হরমোনের উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উত্তর : উদ্ভিদ হরমোন (Phytohormone ) : যে-সমস্ত জৈব- রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদদেহের বিশেষ কলা থেকে উৎপন্ন হয়ে উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অংশে বাহিত হয়ে অতি অল্পমাত্রায় ক্রিয়াশীল হয় এবং উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াগুলিকে (যেমন— বৃদ্ধি, বিভেদন, পরিস্ফুরণ প্রভৃতি) নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন বলে। উদাহরণ— অক্সিন, জিব্বেরেলিন, সাইটোকাইনিন, অ্যাবসাইসিক বা অ্যাবসিসিক অ্যাসিড, ইথিলিন প্রভৃতি।
উদ্ভিদ হরমোনের বৈশিষ্ট্য :
1. প্রকৃতি : প্রোটিনধর্মী জৈবরাসায়নিক পদার্থ। ও
2. উৎস : উদ্ভিদদেহের নির্দিষ্ট কলাকোশ থেকে নিঃসৃত হয়েউৎপত্তিস্থল বা দূরবর্তী স্থানে কার্যকরী হতে পারে। ও
3.ক্রিয়াশীলতা : অতি অল্পমাত্রায় (ঘনত্ব প্রায় 10M) ক্রিয়াশীল।
4. পরিবহণের ধরন : জলে দ্রবণীয় এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোশে কোশে বাহিত হয়।
5. কাজ : উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন প্রধানত বৃদ্ধি, বিভেদন এবং পরিস্ফুরণঘটিত সাড়াদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে। উদ্ভিদ হরমোন বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন প্রকার কাজ করে। যেমন— অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে।
6 .পরিণতি : কাজের শেষে হরমোন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। |
জেনে রাখো: 1905 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্টারলিং ও বেলিস (Star- ling and Bayliss) সর্বপ্রথম 'হরমোন' (Hormone) শব্দটি ব্যবহার করেন। Hormone শব্দটির অর্থ হল "I arouse to activity"।
প্রশ্ন 2 . উদ্ভিদ হরমোনের (Plant hormone) শ্রেণিবিভাগ করো।
প্রাকৃতিক হরমোন
প্রশ্ন 3. উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা ও বৃদ্ধি সহায়ক উপাদানরূপে উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর : উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা ও বৃদ্ধি সহায়ক উপাদানরূপে উদ্ভিদ হরমোনের ভূমিকা :
1. উদ্ভিদদেহের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি : (i) অক্সিন ও সাইটোকাইনিন কোশ বিভাজন, ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে উদ্ভিদ অঙ্গের অগ্র ও পার্শ্বীয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। (ii) জিব্বেরেলিন চারাগাছের এবং পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটায়।
2. ফুল ফোটা : (i) অক্সিন কুমড়োগাছে স্ত্রী ফুল সৃষ্টিতে এবং আনারসজাতীয় গাছে ফুলকে দ্রুত ফুটতে সাহায্য করে। (ii) জিব্বেরেলিন প্রয়োগে কুমড়ো, লাউ প্রভৃতি গাছে পুরুষ ফুল সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া জিব্বেরেলিন, ভার্নালিন ও ফ্লোরিজেন সংশ্লেষের মাধ্যমে দীর্ঘদিবা উদ্ভিদদেহে হ্রস্বদিবা দৈর্ঘ্যেও অর্থাৎ, অকালে ফুলফুটতে সাহায্য করে।
3. মুকুলোদ্গম : (i) অক্সিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং পার্শ্বীয় ও কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। (ii) সাইটোকাইনিন পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
4. বীজের অঙ্কুরোদ্গম : (i) জিব্বেরেলিন বীজ, মুকুল ও ভূনিম্নস্থ অঙ্গের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করে। (ii) টম্যাটো ও লেটুস বীজের পজিটিভলি ফোটোব্লাস্টিক অঙ্কুরোদ্গমকে ত্বরান্বিত করে।
5. ট্রপিক চলন : আলোকের উপস্থিতিতে অক্সিনের অসম বণ্টনের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের ট্রপিক চলন ঘটে। যেমন- ফোটোট্রপিক, জিওট্রপিক চলন প্রভৃতি। এক্ষেত্রে, কাণ্ড পজিটিভলি ফোটোট্রপিক ও নেগেটিভলি জিওট্রপিক এবং মূল নেগেটিভলি ফোটোট্রপিক ও পজিটিভলি জিওট্রপিক অঙ্গরূপে বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন 5. অক্সিন হরমোনের উৎস ও কাজগুলি লেখো।
** ডাবের জল প্রভৃতি উৎসহাল উদ্ভিদের কাণ্ড, মূল প্রকৃতির অপ্রসস্থ ভাজক কলা, মৃণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল এবং বর্ধনশীল পাতার কোশে ও অপরিণত ফলে অক্সিন উৎপন্ন হয়। অক্সিন নাইট্রোজেনযুক্ত, ইন্ডোল বর্গভুক্ত জৈব অ্যাসিড।
1. কোশের বিভাজন ও বৃদ্ধি (Cell division and enlargement) : অক্সিন উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলের (বিশেষত ভ্যাসকুলার ক্যামবিয়াম অঞ্চল) কোশ বিভাজনে সাহায্য করে এবং সেলুলোজ নামক উৎসেচকের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে। ফলে, কোশ প্রসারিত হয় এবং কোশের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া অক্সিন হরমোন DNA-এর সংশ্লেষ ঘটিয়ে, কোশপ্রাচীরের মাইক্রোফাইব্রিলের শিথিলতা ও কোশপর্দার ভেদ্যতা প্রভৃতি বৃদ্ধির মাধ্যমে কোশকে আয়তনে প্রসারিত করে।
2 . অগ্রস্থ প্রকটতা (Apical dominance) অগ্রমুকুলের উপস্থিতিতে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অগ্রমুকুল কেটে বাদ দিলে কাক্ষিক মুকুল বৃদ্ধি লাভ করে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে। এই শারীরবৃত্তীয় ঘটনাকে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে। অক্সিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং অপরদিকে কাক্ষিক বা পার্শ্বমুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। Ð
3. ক্যামৰিয়ামের সক্ৰিয়তা বৃদ্ধি (Cambial activity) : অগ্নিনের ঘনত্ব বাড়লে ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় (Avery et. al; 1947)। এর ফলে উদ্ভিদের গৌণবৃদ্ধি ঘটে। জাইলেম কলার বিভেদনে অক্সিন সাহায্য করে।
4.ও উদ্ভিদের অকাল মোচন রোধ (Delay of Abscission) : অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের বিভিন্ন অপরিণত অঙ্গের (পাতা, মুকুল, ফুল, ফল) অকাল পতন রোধ করে।
5. কম ঘনত্বে মূলের বৃদ্ধি (Growth of root at very low concentration) : স্বল্পমাত্রার অক্সিন ক্যালাস গঠন, কলা-বিভেদন এবং ক্যালাস থেকে মূল সৃষ্টিতে ও মূলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। অত্যন্ত কম ঘনত্বে (প্রায় 0.0001ppm) অক্সিন মূলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। অক্সিনের উচ্চ ঘনত্বে প্রধান মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত হলেও শাখামূল ও অস্থানিক মূলের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। - অগ্র মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত -কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত কোশ বৃদ্ধি উদ্ভিদদেহে অক্সিনের কাজ
6.ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ (Control of tropic movement): অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের ট্রপিক চলন (ফোটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন) নিয়ন্ত্রণ করে। অক্সিন আলোর উৎসের বিপরীত অংশে বেশি সঞ্চিত হয়ে ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়। ফলে, উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়। উদ্ভিদের মূল স্বল্প অক্সিনে বেশি অনুভূতিশীল হওয়ায় আলোর উৎসের দিকের কোশগুলির বিভাজন দ্রুত হয়। ফলে, আলোর উৎসের বিপরীতে মূল বৃদ্ধি পায়।
7.ফলের পরিস্ফুটন (Development of fruit) : অক্সিনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই কোনো কোনো ফুলের ডিম্বাশয় ফলে পরিণত হয়। এই পদ্ধতিতে সৃষ্ট ফলে কোনো বীজ থাকে না। এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে।
8.ব্যবহারিক প্রয়োগ (Application) : কৃষিতে ও উদ্যান পালনে পার্থেনোকার্পি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এ ছাড়া, কলাপালনে ক্যালাসে কাণ্ড ও মূলে বিভেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদচারা সৃষ্টিতে অক্সিন ব্যবহৃত হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : (1) একটি উদ্ভিদ হরমোনের নাম ও উৎস উল্লেখ করে ওই হরমোনের দুটি কাজ আলোচনা করো। [ME '05,01] (2) অক্সিন হরমোনের একটি উৎস লেখো। [ME 12,08,03]
জেনে রাখো : উদ্ভিদদেহে প্রথম আবিষ্কৃত হরমোন হল অক্সিন। | বিজ্ঞানী ভেন্ট (Frits Went, 1928) প্রথম ওট (Oat; Avena sativa) | গাছের ভূণমুকুলাবরণীতে অক্সিনের উপস্থিতি প্রমাণ করেন এবং ‘অক্সিন’ (Auxin; Gk. Auxein = to grow) নামকরণ করেন।
জেনে রাখো ট্রিপটোফ্যান (Tryptophan) নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে অক্সিন যৌগ সংশ্লেষিত হয়। ট্রিপটোফ্যান CO2 মুক্ত করে ট্রিপট্যামাইন (Tryptamine) উৎপন্ন করে বা অ্যামোনিয়া (NH3) মুক্ত করে ইন্ডোল পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। শেষে ইন্ডোল অ্যাসিটালডিহাইডের মাধ্যমে ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (Auxin) সংশ্লেষিত হয়। ট্রিপটোফ্যান → ইন্ডোল পাইরুভিক অ্যাসিড → ইন্ডোল অ্যাসিট্যালডিহাইড ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (অক্সিন)।
প্রশ্ন 6. জিব্বেরেলিন হরমোনের উৎসগুলি উল্লেখ করো। [ME 15,14,07,03] এর কাজগুলি লেখ।
উত্তর : জিব্বেরেনিনের উৎসস্থল জিব্বেরেলিন সাধারণত উদ্ভিদের অঙ্কুরিত বীজ, পরিণত ও পরিপক্ব বীজে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ছাড়া অঙ্কুরিত চারাগাছ, মুকুল, বীজপত্রের কোশ, পাতার বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে এই হরমোন পাওয়া যায়। জিব্বেরেলিন টারপিনয়েড গোষ্ঠীভূক্ত নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অ্যাসিড। একে জিব্বেরেলিক অ্যাসিড বা GA, ও বলা হয়।
উদ্ভিদাদাহ জিব্বারলিনের কাজ : o
1. মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ডা করা (Breaks Seed and Bud dormancy) : জিব্বেরেলিন সসো সজ্জিত CC-অ্যামাইলেজ উৎসেচককে সক্রিয়করণের মাধ্যমে বীজ, কন্দ বা মুকুলের সুপ্তাবস্থা (Dormancy) ভঙ্গ করে এবং অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করে।
2. পর্নমদ্ধের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি (Elongation of Internades): টম্যাটো, বিন, মটর, শশা, লেটুস শাক, আখ প্রভৃতি উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটানো এবং বংশগত খরতা দূর করা হয়। বংশগতভাবে খর্বাকা⁹র উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন স্প্রে করলে পর্বমধ্যস্থ অঞ্চলের ভাজক কলার কোশের বিভাজনের হার বৃদ্ধি পায় এবং খর্বতা দূর হয়ে স্বাভাবিক বৃদ্ধি লাভ করে। পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা
3. ফলের বৃদ্ধি (Fruit growth) : আপেল, নাসপাতি, আঙুর প্রভৃতি ফলের বৃদ্ধি এবং বীজহীন ফল সৃষ্টিতে জিব্বেরেলিন অক্সিনের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4. ৰোস্টিং ৩ ফুল উৎপাদন (Bolting and Flowering): বাঁধাকপি, হেনবেন প্রভৃতি উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন খর্ব পর্বমধ্য ও প্রচুর পাতা সৃষ্টি করে। জিব্বেরেলিন প্রয়োগের ফলে এইসব উদ্ভিদের
পাতার প্রসারণ ঘটে। প্রজননের আগে পর্বমধ্যগুলি দীর্ঘ হয় (বোস্টিং) এবং ফুল সৃষ্টি করে (ফ্লাওয়ারিং)।
5 . লিঙ্গে প্রকাশ (Sex expression) : লাউ, কুমড়ো প্রভৃতি কিউকারবিটেসি (Cucurbetaceae) গোত্রভুক্ত উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন স্ত্রী ফুলের তুলনায় বেশি পুরুষ ফুল সৃষ্টি করে।
অনুৰূপ প্ৰশ্ন : উদ্ভিদের বীজ ও পর্বমধ্যের ওপর জিব্বেরেলিন হরমোন কী কী প্রভাব ফেলে তা ব্যাখ্যা করো। [ME 191
জেনে রাখো : এই হরমোনটি একটি ডাই টারপিন অ্যাসিড এবং রাসায়নিকভাবে জিব্বেরেলিক অ্যাসিড (GA) হল টেট্রাসাইক্লিক ডাই-টারপিনয়েড। বর্তমানে অন্তত 125টি GA আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে GA, ও GA, সবচেয়ে কার্যকরী।
Advanced Studies : জিব্বেরেলিনের উদ্ভাবন ধানগাছে Gibberella fuzikurol নামক এক ছত্রাকের আক্রমণে ধানগাছের পর্বমধ্যগুলি অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে গাছটিকে অত্যন্ত লম্বা করে দেয়। জাপানে এই রোগটিকে ব্যাকেনি রোগ (Bakanae disease) বলে। এই ছত্রাক আক্রান্ত উদ্ভিদ থেকে বিজ্ঞানী কুরোসোয়া ( Kurosawa ) বৃদ্ধিসহায়ক এক হরমোন আবিষ্কার করেন। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী ইয়াবৃতা ও সুমুকি (Yabuta and Sumuki) হরমোনটিকে পরিশোধিত করেন এবং উক্ত ছত্রাকটির নাম অনুসারে এই হরমোনটির নামকরণ করেন- জিব্বেরেলিন বা জিব্বেরেলিক অ্যাসিড, যার রাসায়নিক নাম 'GA'।
বীজের অঙ্কুরোদ্গমে জিব্বেরেলিন বা জিব্বেরেলিক অ্যাসিডের ভূমিকা : বীজের অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারাগাছ সৃষ্টি হয়। সুপ্তাবস্থার (dormancy) শেষে বিভিন্ন শর্তের উপস্থিতিতে বীজের মধ্যে থাকা সুপ্ত ভ্রুণ সক্রিয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অঙ্কুরিত হয়ে চারাগাছরূপে আত্মপ্রকাশ করে। বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও চারাগাছের বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিন। বা জিব্বেরেলিক অ্যাসিড নিম্নলিখিতভাবে ভূমিকা পালন করে- @ সুপ্তাবস্থায় বীজত্বক দ্বারা আবৃত বীজের সস্যে বা বীজপত্রে জটিল অদ্রবণীয় শ্বেতসার, প্রোটিন, ফ্যাট এবং নিউক্লিক অ্যাসিড সজ্জিত থাকে। ও সস্যকলাকে আবৃত করে থাকে প্রোটিননির্মিত অ্যালিউরোন স্তর।
• উপযুক্ত আর্দ্রতা, উন্নতা ও অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বীজের সুপ্ত ভুগ থেকে জিব্বেরেলিন নিঃসৃত হয় এবং অ্যালিউরোন স্তরে পরিবাহিত হয়ে -অ্যামাইলেজ, প্রোটিয়েজ প্রভৃতি উৎসেচকদের সংশ্লেষ ও সক্রিয়তাকে বৃদ্ধি করে। সক্রিয় উৎসেচকদের দ্বারা সস্যকলা বা বীজপত্রে সজ্জিত জটিল খাদ্য বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল দ্রবণীয় খাদ্যরসে পরিণত হয়। ও বীজের তৃণাক্ষ, সরল ও দ্রবণীয় খাদ্যের জারণ ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করে এবং অঙ্কুরিত হয়ে ভ্রূণমূল ও ভ্রূণমুকুল সৃষ্টি করে। ও উপযুক্ত খাদ্যের জোগানে শ্বসনহার বৃদ্ধি পায় এবং তৃণমূল ও সুগমুকুল কোশবিভাজনের মাধ্যমে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায় এবং চারাগাছরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
চারাগাছের বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিনের ভূমিকার শব্দচিত্র :
বীজের সুপ্ত ভ্রূণ উপযুক্ত আর্দ্রতা উর্দ্ধতা ও অক্সিজেন জিব্বেরেলিন নিঃসরণ সস্যকলায় উৎসেচক সংশ্লেষ ও সক্রিয়করণ ভ্ৰূণমূল ও ভ্রূণমুকুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি শ্বসনহার বৃদ্ধি বীজের ভ্রুণাক্ষে পরিবহণ ও অঙ্কুরোদ্গম অদ্রবণীয়, জটিল খাদ্যবস্তুর বিশ্লেষণ ও দ্রবণীয় সরল খাদ্যরস সৃষ্টি | চারাগাছের আত্মপ্রকাশ ।
প্রশ্ন 7 . সাইটোকাইনিনের উৎস [ME '03] ও কাজগুলি [ME '14,10] লেখো। *
উত্তর : সাইটোকাইলিনের উৎস : উদ্ভিদের সস্য ও ফলে কাইনিন। হরমোন পাওয়া যায়। নারকেলের দুধে, ডাবের জলে (তরল সস্যে), ভুট্টার সস্যে বেশি পরিমাণে সাইটোকাইনিন হরমোন থাকে। এ ছাড়া টম্যাটো, আম, আপেল, পীচ, নাসপাতি, কুল প্রভৃতি ফলে ও ফুলের নির্যাসে কাইনিন দেখা যায়। সাইটোকাইনিন পিউরিনজাতীয় নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় প্রকৃতির হরমোন। সাইটোকাইনিন হরমোনকে। কাইনিন বা কাইনেটিন বা ফাইটোকাইনিন হরমোনও বলা হয়।
সাইটোকাইলিনের কাজ :
1. কোশ বিভাজন (Cell division) : সাইটোকাইনিন সাইটোপ্লাজম বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এ ছাড়া DNA সংশ্লেষের মাধ্যমে মাইটোসিসের হার বৃদ্ধি করে।
2. পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি (Promotes lateral bud growth): সাইটোকাইনিন পার্শ্বীয় কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। সাইটোকাইনিনের উপস্থিতিতে জল ও খনিজ পদার্থের পর্যাপ্ত সরবরাহ ঘটলে অগ্রমুকুলের উপস্থিতিতেও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটে।
3. বার্ধক্য বিলম্বিত করা (Delay of senescence) : সাইটোকাইনিন পাতা ও অন্যান্য অঙ্গের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। একইসঙ্গে এই হরমোন উদ্ভিদের তাপ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয় না এবং ফুল ও ফল দীর্ঘদিন সতেজ থাকে। একে রিচমন্ড-ল্যাং প্রভাব (Richmond Lang effect) বলে।
4. অঙ্গবিকাশ (Morphogenesis) : ক্যালাসে অক্সিনের উপস্থিতিতে সাইটোকাইনিন অঙ্গ বিভেদনে সাহায্য করে। যেমন— কলাপালন মাধ্যমে (Culture medium) অক্সিনের তুলনায় সাইটোকাইনিন বেশি পরিমাণে থাকলে ক্যালাস থেকে বিটপ সৃষ্টি হয়।
5. বিভেদন (Differentiation) : সাইটোকাইনিন প্লাসটিড ও ইন্টারফ্যাসিকুলার ক্যামবিয়ামের বিভেদনে ও লিগনিন সঞয়ে সাহায্য করে।
জেনে রাখো : অধিকাংশ সাইটোকাইনিন হল অ্যাডিনিনজাত নাইট্রোজেনযুক্ত পিউরিন জাতীয় ক্ষারীয় পদার্থ। * উৎসেচকের ক্রিয়ায় আইসোপেনটিনাইল AMP নামক যৌগ উৎপন্ন হয়, যা থেকে সাইটোকাইনিন উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন 8. সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম হরমোন কাকে বলে? উদ্যানবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যায় সংশ্লেষিত হরমোনের ভূমিকা উল্লেখ করো। ** [ME '14,03]
উত্তর : সংশ্লেষিত বা কৃত্তিम एमान (Synthetic or Artificial hormone): গবেষণাগারে সংশ্লেষিত যে-সমস্ত যৌগ বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করলে প্রাকৃতিক হরমোনের মতোই উদ্ভিদদেহে ক্রিয়া করে, তাদের সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম হরমোন বলে। যেমন— ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA), ন্যাপথলিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA), 2,4-ডাইক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2, 4-D)—এগুলি হল কৃত্রিম অক্সিন হরমোন।
উদ্যানবিদ্যা ও কৃষিবিদ্যায় সংশ্লেষিত হরমোনের ভূমিকা :
1. শাখাকলম থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি (Rooting of cutting) : শাখাকলমের মাধ্যমে বংশবিস্তারের জন্য IBA, NAA বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ— গোলাপ, জবা, বেল ইত্যাদি ফুলগাছ ও আম, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের গাছ।
2. বীজহীন ফল উৎপাদন ( Parthenocarpy): IBA, IAA প্রভৃতি কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করে নিষেক ছাড়াই বীজহীন ফল উৎপাদন করা হয়। যেমন— আঙুর, কলা, পেয়ারা প্রভৃতি।
3. আগাছানাশক (Eradication of weeds) : 2,4-D, MCPA (2-মিথাইল 4-ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড) প্রভৃতি কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে ধান, গম প্রভৃতি চাষের খেত থেকে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ অর্থাৎ, আগাছা দূর করা হয়।
4. অপরিণত ফলের মোচন রোধ ( Prevention of preharvest fruit drop ) : 2, 4-D-এর জলীয় দ্রবণ প্রয়োগ করে আপেল, কমলালেবুর অপরিণত ফলের মোচন রোধ করা হয়। আম ও টম্যাটোর মোচন রোধ করার জন্য NAA প্রয়োগ করা হয়।
5. অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করা (to promote germination) : কৃত্রিম জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগের ফলে বীজের সুপ্ত দশা ভঙ্গ হয়ে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
6. পূষ্প পরিস্ফুটন নিয়ন্ত্রণ (Control of flowering) : কৃত্রিম হরমোন NAA প্রয়োগ করে উদ্ভিদের পুষ্পমুকুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আবার, কৃত্রিম জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদের পুষ্পমুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : আগাছা দমনে ও বীজহীন ফল উৎপাদনে সংশ্লেষিত কৃত্রিম হরমোনের ভূমিকা লেখো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. হরমোনের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। *
উত্তর [ME '16,01] হরমোনের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল— (i) উৎস : হরমোন নির্দিষ্ট অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা নির্দিষ্ট কলা-কোশ থেকে উৎপন্ন হয় এবং সাধারণত প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড বা স্টেরয়েডধর্মী হয়। (ii) কাজ : উৎসস্থলের দূরবর্তী স্থানে খুব অল্প মাত্রায় ক্রিয়াশীল হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে। (iii) পরিণতি : কার্যশেষে হরমোন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় অথবা দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় ।
প্রশ্ন 2. উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ভূমিকা উল্লেখ করো। পরিস্ফুরণে ফাইটোহরমোনের
উত্তর : উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে ফাইটোহরামানের ভূমিকা : হরমোনের নাম উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ অক্সিন (IAA) উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি, ক্যামবিয়ামের মূলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায়। বৃদ্ধি, কাণ্ড ও জিব্বেরেলিন পবমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, চারাগাছের বৃদ্ধি করে। ও সাইটোকাইনিন উদ্ভিদদেহের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। ও অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।হরমোনের নাম উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণ • ইথিলিন উদ্ভিদের অনুভূমিতলে বৃদ্ধি ঘটায় (লতানো উদ্ভিদ) এবং কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
প্রশ্ন 3 . রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী উদ্ভিদ হরমোনের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী উদ্ভিদ হরমোনকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় ও নাইট্রোজেনযুক্ত হরমোন ও নাইট্রোজেনবিহীন হরমোন। o নাইট্রোজেনযুক্ত হরমোন : এই ধরনের হরমোনে নাইট্রোজেন উপস্থিত থাকে। উদাহরণ— অক্সিন (IAA), কাইনেটিন (পিউরিনজাতীয় যৌগ)। ও নাইট্রোজেনবিহীন হরমোন এই ধরনের হরমোনে নাইট্রোজেন থাকে না। উদাহরণ – জিব্বেরেলিক অ্যাসিড, ইথিলিন, অ্যাসাইসিক অ্যাসিড।
প্রশ্ন 4 .কয়েকটি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম অক্সিনের উদাহরণ দাও।
উত্তর: অক্সিন হরমোনকে দুভাগে ভাগ করা যায় – প্রাকৃতিক অক্সিন, ও কৃত্রিম অক্সিন। o প্রাকৃতিক অক্সিনের উদাহরণ— (1) ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (IAA), রাসায়নিক সংকেত C, H,O, N, এটি হল প্রধান অক্সিন। (ii) অক্সিন a বা অক্সেনোট্রায়ালিক অ্যাসিড, (iii) অক্সিন b বা অক্সেনোলেনিক অ্যাসিড। • কৃত্রিম অক্সিনের উদাহরণ- (1) ইন্ডোল প্রোপিয়োনিক অ্যাসিড (IPA), (ii) ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA), (iii) ন্যাপথলিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA), (iv) 2, 4-ডাইক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2.4-D)। 5 উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের first ceret Maharani tadiruderi Girls High school te ভিতর ফোটোট্রপিক চলন নয় অজ্ঞান ভূমিকা :
1 .উদ্ভিদের কাণ্ডে ও মূলে অক্সিনের অসম বণ্টনের ফলে আলোকবর্তী (ফোটোট্রপিজম) দিগনির্ণীত প্রচলন পরিলক্ষিত হয়।
2. একপার্শ্বীয় আলোকের প্রভাবে অক্সিন ভাজক কলা থেকে নিঃসৃত হয়ে আলোকিত অংশ থেকে অন্ধকারময় অংশে সঞ্চারিত হয়। ফলে ওই অঞ্চলের কোশগুলির বেশি বিভাজন ঘটে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তার ফলে উদ্ভিদ অংশটি আলোর অভিমুখে বেঁকে যায়।
3.কান্ডের কম আলোকিত অংশে বেশি অক্সিনের প্রভাবে (প্রায় 65%) কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত হয় এবং কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। o
4. আলোকিত কাণ্ড অংশে কম অক্সিনের প্রভাবে প্রায় 35%) কোশ বিভাজন কম হয়। ফলে, আলোকিত কাণ্ডাংশের বৃদ্ধি কমে যায়।
5. সামগ্রিকভাবে অক্সিনের প্রভাবে কাজ আলোর গতিপথের দিকে বেঁকে যায় অর্থাৎ পজিটিভ ফোটোট্রপিক বা আলোক অনুকূলবর্তী চলন ঘটে।
6. উদ্ভিদের মূল কম ঘনত্বের অক্সিনে (প্রায় 0.0001ppm) বেশি সংবেদনশীল। আলোর দিকে কম অক্সিন সজ্জিত হওয়ায় এই অংশের কোশগুলির বেশি বৃদ্ধি ঘটে ও মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায়। অর্থাৎ, নেগেটিভ ফোটোট্রপিক বা আলোক প্রতিকূলবর্তী চলন ঘটায়। কাণ্ডের অগ্রভাগ বেশি অগ্নিন। বেশি অগ্নিন, ঘৃত বুদ্ধি আলোকের আলোক অনুকূলবর্তী বক্তৃতা -অন -বেশি অক্সিন বেশি অক্সিন কম বৃদ্ধি - দ্রুত বৃদ্ধি মুখের ভাগ কম অক্সিন কম বৃদ্ধি -কম অস্মিন আলোক প্রতিকূলবর্তী বক্তৃতা অসিনের প্রভাবে উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ।
অনুৰূপ প্রশ্ন : উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে এবং মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায় কেন?
প্রশ্ন 6. উদ্ভিদের অভিকর্ণবৃত্তি বা জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর : উদ্ভিদের অভিবৃত্তি বা চি ভূমিকা :
1. উদ্ভিদের কাণ্ড ও মূলে অক্সিনের অসম বণ্টনের ফলে অভিকর্ষবৃত্তি চলন বা জিওট্রপিক চলন ঘটে।
2. ও অভিকর্ষ বলের প্রভাবে কাণ্ডের যে দিকটা মাটির দিকে থাকে অর্থাৎ, কাণ্ডের গোড়ার দিকে কম আলোর উপস্থিতিতে বেশি অক্সিন (প্রায় 58%) সঞ্চিত হয় ও বেশি বৃদ্ধি ঘটে।
3. কাণ্ডের অগ্রভাগে বেশি আলোর উপস্থিতিতে কম অক্সিন (প্রায় 42%) সঞ্চিত হয় ও কম বৃদ্ধি ঘটে। ফলে, মাটির দিকে থাকা কাণ্ড অংশ উপরের দিকের কাণ্ডের অংশের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পায় ও মাটির ওপরের দিকে অভিকর্ষের বিপরীতে বেড়ে ওঠে। একে নেগেটিভ জিওট্রপিক বা অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলন বলে।
4. অন্যদিকে মূল, কম অক্সিনে বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় অভিকর্ষের দিকের অংশে অর্থাৎ, মূলের অগ্রভাগে বেশি অক্সিনের প্রভাবে কম বৃদ্ধি পায় এবং বিপরীত দিকে অর্থাৎ, মূলের গোড়ার দিকে কম অক্সিন ঘনত্বে বেশি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, অক্সিনের নিম্নমুখী পরিবহণের ফলে মূল অভিকর্ষের দিকে দ্রুত বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে পজিটিভ জিওট্রপিক বা অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী চলন বলে।
অনুরূপ প্রশ্ন : উদ্ভিদের কাণ্ড অভিকর্ষের বিপরীতে এবং মূল অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায় কেন ?
প্রশ্ন 7. উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অক্সিন হরমোনের তিনটি ভূমিকা উল্লেখ করো। [ME '15]
উত্তর : 1. কোশ বৃদ্ধি ও কোশ বিভাজন : অক্সিন কোশের কার্বোহাইড্রেটের দ্রবণীয়তা বৃদ্ধি, কোশপ্রাচীরের মাইক্রোফাইব্রিলের শিথিলতা বৃদ্ধি, কোশীয় উপাদানের সংশ্লেষ, কোশপর্দার ভেদ্যতা বৃদ্ধি ও কোশীয় শ্বসন হার বৃদ্ধির মাধ্যমে কোশের আকার ও আয়তনের বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়া, ক্যারিওকাইনেসিসের মাধ্যমে উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলের দ্রুত কোশ বিভাজনে সহায়তা করে। ও
2. ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি : অক্সিনের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে বিশেষত ভ্যাসকুলার ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অক্সিনের স্বল্প মাত্রায় ফ্লোয়েম এবং অধিক মাত্রায় জাইলেম উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়। ও
3. অগ্রস্থ প্রকটতা : অক্সিন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে, উদ্ভিদের অগ্রস্থ প্রকটতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
Advanced Studies অক্সিন হরমোনের আবিষ্কার সংক্রান্ত বিজ্ঞানী ওয়েন্ট (Went) -এর পরীক্ষা : বিজ্ঞানী ওয়েন্ট (Went, 1928) যই বা ওট (Oat)-এরমুকুলাবরণীর ওপর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে অক্সিন হরমোন আবিষ্কার করেন।
পরীক্ষা : বিজ্ঞানী ওয়েন্ট দেখেন— ওটের মুকুলাবরণীর অগ্রভাগ কেটে দিলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ও কাটা অংশটি যদি আবার পুনঃস্থাপিত করা যায় তবে বৃদ্ধি পুনরায় শুরু হয়। ও আবার, কাটা অগ্রভাগ ও ভ্রূণকাণ্ডের মধ্যভাগে একটি অভেদ্য পর্দা রাখলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়। কাটা অগ্রভাগ একটি আগার খণ্ডে (একপ্রকার জেলির ন্যায় পদার্থ যা রাসায়নিক বা তরলকে ধরে রাখতে পারে) কিছুক্ষণ রেখে আগার খণ্ডটিকে ভ্রূণকাণ্ডের ওপর স্থাপন করলে আবার বৃদ্ধি শুরু হয়। ও আগার খণ্ডটি কোনো একপাশে স্থাপন করলে বৃদ্ধিও কেবল সেইপাশেই ঘটে। কোলিওপটাইল (A) বৃদ্ধি বন্ধ বৃদ্ধি শুরু (2) (3) কোলিও পটাইল অভেদ্য পর্দা (B) বৃদ্ধি বন্ধ বৃদ্ধি বন্ধ (4) কোলিওপটাইল অগ্রখণ্ড আগার খন্ড (C) অসম আগার খণ্ড
সিদ্ধান্ত: এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে ওয়েন্ট সিদ্ধান্তে আসেন যে- উদ্ভিদ হরমোন উদ্ভিদ কাণ্ডের শীর্ষে সংশ্লেষিত হয়। ও হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে নীচে বাহিত হয়ে সেই অঞ্চলের কোশবিভাজন ঘটায়। ও হরমোনের পরিবহণ লম্বভাবে ঘটে। ও হরমোন একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ কারণ, তা আগার খণ্ডের মধ্যে সঞ্চিত হতে পারে। এইভাবে বিজ্ঞানী ওয়েন্ট ওটের মুকুলাবরণীতে অক্সিনের উপস্থিতি প্রমাণ করেন।
প্রশ্ন 8. অগ্রস্থ প্রকটতা কাকে বলে ? এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর : অগ্রন্থ প্রকটতা (Apical dominance) : উদ্ভিদদেহে অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিতে কাছাকাছি অবস্থিত পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার ঘটনাকে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে। উদ্ভিদের এই ধর্মের জন্য অক্সিন হরমোন দায়ী। প্রকৃত অর্থে, অক্সিন হরমোন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং পার্শ্বীয় কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
অগ্রন্থ প্রকটতার গুরুত্ব : 1. যে-সমস্ত উদ্ভিদে অগ্রস্থ প্রকটতা অধিক সক্রিয় তাদের ক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক শাখা থাকে বা শাখা অনুপস্থিত থাকে। যেমন— সূর্যমুখী উদ্ভিদ।
2.এবং রাসায়নিক সমন্বয়- হরমোন 35 ও দুর্বল অগ্রসর প্রকটতাযুক্ত গাছে প্রচুর শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি হয়। এবং গাছ সাধারণত ঝোপঝাড় সৃষ্টি করে। যেমন— টম্যাটো গাছ। ও
3. কোনো উদ্ভিদে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ঘটাতে চাইলে ওই উদ্ভিদের অগ্রমুকুল কেটে বাদ দেওয়া হয়। যেমন— তামাক গাছে এভাবে শাখা ও পাতার সংখ্যা বাড়ানো হয়।
প্রশ্ন 9 .অগ্রস্থ প্রকটতা কীভাবে অক্সিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ?
উত্তর: অন एवमান দ্বারা অস্য প্রকটতা নিয়ন্ত্রণ : অক্সিন হরমোন অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং অন্যদিকে পার্শ্বমুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে অগ্রস্থ প্রকটতা ঘটায়। দেখা গেছে যে, অগ্রমুকুল উপস্থিত থাকলে ওই অঞ্চলে যে অক্সিন উৎপন্ন হয় তা নীচের দিকে পরিবাহিত হয়ে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে। কারণ, অক্সিনের প্রবাহ সর্বদা নিম্নমুখী। অগ্রমুকুল ছেঁটে দিলে অক্সিনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং এই সময়ে কাক্ষিক মুকুল বৃদ্ধি পায় ও শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি করে। অগ্রমুকুল কেটে দিয়ে অক্সিনমিশ্রিত একটি আগার ব্লককে কর্তিত স্থানে স্থাপন করলে এই অক্সিন নীচে প্রবাহিত হয় এবং কাক্ষিক মুকুলগুলির বৃদ্ধি রোধ করে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, অক্সিনই অগ্রস্থ প্রকটতার জন্য দায়ী।
অগ্রমুকুলের বুদ্ধি অগ্রমুকুল কেটে দেওয়া হয়েছে পার্শ্বমুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত - পার্শ্বমুকুলের বৃদ্ধি ঘটেছে অগ্নিনের প্রভাবে অগ্রস্থ প্রকটতা।
প্রশ্ন 10. কোশের বৃদ্ধিতে অক্সিজেের ভূমিকা শব্দচিত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
উত্তর : শর্করা শ্বসনহার শ্বেতসার শর্করা সংশ্লেষমূলক | বিপাক বৃদ্ধি বুদ্ধি অ্যামাইলেজ অক্সিন (IAA) কোশপর্দার ভেদাতা বুদ্ধি অভিস্রবণ চাপ বৃদ্ধি কোশপ্রাচীরের মাইক্রোফাইব্রিলের শিথিলতা বেশি কোশপ্রাচীরের উপাদান অভিস্রবণ কোশের আয়তন বৃদ্ধি।
প্রশ্ন 11 . প্রাকৃতিক জিব্বেরেলিনের প্রকারভেদগুলির উদাহরণ দাও।
উত্তর: জিব্বেরেলিন-এর উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক প্রকারভেদগুলি নিম্নরূপ:
প্রাকৃতিক জিব্বেরেলিনের উদাহরণ- (i) জিব্বেরেলিক অ্যাসিড-3 বা GA, । রাসায়নিক সংকেত – C1gH22O6। এটাই প্রধান জিব্বেরেলিন। (ii) জিব্বেরেলিক অ্যাসিড-1, (iii) জিব্বেরেলিক অ্যাসিড-2, (iv) জিব্বেরেলিক অ্যাসিড-7। এ ছাড়াও ৪০টিরও বেশি জিব্বেরেলিন বিভিন্ন ছত্রাক ও বীজযুক্ত উদ্ভিদে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন .12 সাইটোকাইনিনের প্রকারভেদগুলির উদাহরণ দাও।
উত্তর: সাইটোকাইনিন দু-প্রকার। যথা— O প্রাকৃতিক সাইটোকাইলিনের উদাহরণ— (i) জিয়াটিন (প্রধান) (ii) কাইনেটিন (প্রধান), (ii) আইসোপেন্টাইল জিয়াটিন। ও কৃতিम সাইটোকাইলিনের উদাহরণ— (i) বেঞ্জাইল অ্যামাইনো পিউরিন (BAP) (ii) অ্যাজাকাইনেটিন, (iii) ডাইফিনাইল ইউরিয়া।
প্রশ্ন 13. ইথিলিন (Ethylene) হরমোনের উৎসগুলি লেখো। ইথিলিনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ লেখো।
উত্তর: ইথিলিনের উৎস : ইথিলিন উদ্ভিদের প্রায় সমস্ত অংশে যেমন— মূল, পাতা, ফুল, ফল এবং বীজের মিথিওনিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়। মিথিওনিন নামক সালফারঘটিত অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে ইয়াং চক্রের' মাধ্যমে এই হরমোনটি সংশ্লেষিত হয়। কাজ : কলা, আপেল, কমলালেবু ইথিলিন দ্বারা পাকানো হয়। ও বার্লিজাতীয় দানাশস্যে এবং স্ট্রবেরি, আপেল প্রভৃতি ফলের বীজে ইথিলিনের প্রভাবে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
প্রশ্ন 14 . অ্যাবসাইসিক বা অ্যাবসিসিক অ্যাসিডের (Abscisic acid) উৎসগুলি লেখো। ইহার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ লেখো।
উত্তর : অ্যাবসাইসিক_অ্যাসিডের উৎস : প্রাকৃতিকভাবে অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে লক্ষ করা যায়। বিশেষভাবে উদ্ভিদের পাতার সবুজ ক্লোরোপ্লাস্টে এই হরমোন উপস্থিত। এ ছাড়াও জ্যান্থোফিল নামক রঞ্জকেও এই হরমোনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কাজ : পাতা, ফুল বা ফলের বৃত্তে মোচনস্তর গঠনে এই হরমোন অংশগ্রহণ করে। ও এই হরমোন পাতায় প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে বার্ধক্যের লক্ষণগুলি প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
জেনে রাখো: * অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (ABA)-এর প্রভাবে | রক্ষীকোশে পটাশিয়াম ম্যালেটের পরিমাণ কমে যায়। ফলে, রক্ষীকোশের মধ্যে রসস্ফীতিজনিত চাপও কমে যায় ও পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। | ফলে, বাষ্পমোচনের হার কমে যায়। এই কারণে (ABA)-কে বাষ্পমোচন | প্রতিরোধী (Anti transpirant) বলে।
* অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (ABA) জিব্বেরেলিন, অক্সিন ও সাইটোকাইনিন হরমোনের ক্রিয়াকলাপকে প্রতিহত করে। যথা— বীজের অঙ্কুরোদ্গমে বাধা ঘটিয়ে, লবণাক্ত পরিবেশে মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং উদ্ভিদের | কোশ বিভাজনে বাধা প্রদান করে। ABA যথাক্রমে জিব্বেরেলিন, অক্সিন ও সাইটোকাইনিনের কাজে বাধা দেয়।
প্রশ্ন 15 .কয়েকটি প্রকল্পিত হরমোনের নাম ও কাজ লেখো।
উত্তর :1. ফ্লোরিজেন : ফুল ফোটাতে সাহায্য করে। ও
2. ভারনালিন : ভার্নালাইজেশনে (ঠান্ডার উপস্থিতিতে সময়ের পূর্বেই উদ্ভিদের ফুল ফোটা) সাহায্য করে। ও
3. রাইজোক্যালিন : মূলের উৎপত্তিতে সাহায্য করে। ও
4.ফাইলোক্যালিন : পাতা উৎপাদনে সাহায্য করে।
5. কওলোক্যালিন : কাণ্ড উৎপাদনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 16 . নীচের ঘটনাগুলি কোন্ হরমোনের প্রভাবে ঘটে বলো । (a) জিওট্রপিক চলন, (b) বাসন্তীকরণ, (c) রূপান্তর, (d) মোচন ত্বরান্বিত করা, (e) হুক গঠন, (f) অগ্রস্থ প্রকটতা।
উত্তর : নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি যে যে হরমোনের সেগুলি হল— প্রভাবে ঘটে
(a) জিওট্রপিক চলন → অক্সিন হরমোন
(b) বাসন্তীকরণ → জিব্বেরেলিন
(c) রূপান্তর → সাইটোকাইনিন
(d) মোচন ত্বরান্বিত করা → অ্যাবসিসিক অ্যাসিড
(e) হুক গঠন → ইথিলিন
(f) অগ্রস্থ প্রকটতা → অক্সিন হরমোন।
প্রশ্ন 17. পার্থেনোকার্পি কাকে বলে? এর দুটি ব্যবহারিক গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: পার্থেনোকার্পি (Parthenocarpy) : প্রাকৃতিকভাবে বা কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে অনিষিক্ত গর্ভপত্র থেকে বীজহীন ফল উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে। পার্থোনাকার্পির গুরুত্ব : © কৃত্রিম অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করে বীজহীন আঙুর, আপেল, পেয়ারা, কলা প্রভৃতি ফল উৎপন্ন করা হয়।। ও এই সমস্ত পার্থেনোকাপিক ফলে বীজ থাকে না বলে এদের গুণাগুণ, মান ও অর্থনৈতিক মূল্য বেশি হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1 . হরমোন (Hormone) কাকে বলে? * [ME '05]
উত্তর : যে জৈবরাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদদেহের নির্দিষ্ট অংশ ও প্রাণীদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর লক্ষ্যকোশে (target cell) বাহিত হয়ে ওই কোশের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্যশেষে ধ্বংস হয়ে যায়, তাকে হরমোন বলে। যেমন- O উদ্ভিদ হরমোন : অক্সিন, জিব্বেরেলিন প্রভৃতি। ও প্রাণী হরমোন : সোমাটোট্রফিক হরমোন, থাইরক্সিন প্রভৃতি।
প্রশ্ন 2. হরমোনকে জীবদেহে রাসায়নিক সমন্বয়কারী বলা হয় কেন ? * [ME '16,07,03]
উত্তর: হরমোন জীবদেহে উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর নির্দিষ্ট লক্ষ্যকোশে বাহিত হয় এবং কোশপর্দাস্থিত নির্দিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লক্ষ্যকোশে প্রবেশ করে ও লক্ষ্যকোশের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইভাবে, কোশে কোশে রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ ও বিভিন্ন বিপাকীয় কাজের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে বলে হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বয়কারী (Chemical coordinator) বলা হয়।
প্রশ্ন 3 . উদ্ভিদের বৃদ্ধিসহায়ক উপাদান বলতে কী বোঝো?
উত্তর: উদ্ভিদদেহে উৎপাদিত বা গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষিত যে-সমস্ত উপাদান উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকাপালন করে, তাদের বৃদ্ধিসহায়ক উপাদান (Growth regulatories) বলে। যেমন—অক্সিন, সাইটোকাইনিন (প্রাকৃতিক হরমোন), IBA, IPA, NAA (সংশ্লেষিত হরমোন)।
প্রশ্ন 4 .হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবহ বলে কেন ? * [ME '11]
উত্তর : হরমোন জীবদেহে নির্দিষ্ট কলাকোশ বা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে অন্যত্র লক্ষ্যকোশে পৌঁছায় এবং লক্ষ্যকোশের কোশপর্দার নির্দিষ্ট গ্রাহক দ্বারা গৃহীত হয়ে কোশে রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে ও লক্ষ্যকোশের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবহ (Chemical messenger) বলা হয়।
প্রশ্ন 5. উদ্ভিদ হরমোন কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তর: উদ্ভিদ হরমোন চার প্রকার। যথা – প্রাকৃতিক হরমোন (অক্সিন, জিব্বেরেলিন), ও কৃত্রিম হরমোন (IBA, NAA), ও প্রকল্পিত হরমোন (ফ্লোরিজেন, ডরমিন), গ্যাসীয় হরমোন (ইথিলিন),
প্রশ্ন 6. প্রাকৃতিক হরমোন (Natural hormone) কাকে বলে ?
উত্তর : যে-সমস্ত হরমোন উদ্ভিদদেহে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিপাক, জনন প্রভৃতি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাদের প্রাকৃতিক হরমোন বলে। যেমন— অক্সিন (ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা IAA)।
প্রশ্ন 7 .কৃত্রিম বা সংশ্লেষিত হরমোন (Synthetic hormone) কাকে বলে ?
উত্তর: যে-সমস্ত যৌগ গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় এবং বাইরে থেকে প্রয়োগ করে উদ্ভিদদেহের বৃদ্ধি, বিপাক ও প্রজনন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাদের কৃত্রিম বা সংশ্লেষিত হরমোন বলে। যেমন—ইন্ডোল প্রোপিয়োনিক অ্যাসিড বা IPA (কৃত্রিম অক্সিন)।
প্রশ্ন 8. প্রকল্পিত হরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর : প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন যে-সমস্ত উদ্ভিদ হরমোনের উপস্থিতি ও কাজ সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া গেলেও, তাদের রাসায়নিক গঠন ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায়নি, তাদের প্রকল্পিত হরমোন বলে। ২.
উদাহরণ— ফ্লোরিজেন, ডরমিন প্রভৃতি।
প্রশ্ন 9 .বৃদ্ধিরোধক উদ্ভিদ হরমোন কাকে বলে? পরিস্ফুরণ ব্যাহত হয়, তাদের বৃদ্ধিরোধক উদ্ভিদ হরমোন বলে।
উত্তর : যে-সমস্ত হরমোনের উপস্থিতিতে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি ও
উদাহরণ— অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (ABA) বীজের সুপ্তাবস্থাকে (Seed dormancy) দীর্ঘায়িত করে এবং কাক্ষিক মুকুল ও কাক্ষিক শাখার বৃদ্ধিকে রোধ করে। এ ছাড়া, গ্যাসীয় হরমোন ইথিলিন কাণ্ড ও মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
প্রশ্ন 10. বৃদ্ধি বিলম্বকারী উদ্ভিদ হরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে সকল উদ্ভিদ হরমোন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটন সম্পূর্ণ বন্ধ না করে তার হারকে কমিয়ে দেয়, তাদের বৃদ্ধি বিলম্বকারী উদ্ভিদ হরমোন বলে।
উদাহরণ— ক্লোরোকোলাইন ক্লোরাইড, জিব্বেরেলিনের জৈব সংশ্লেষে বাধা দিয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। জ্যাসমোনিক অ্যাসিড ফুলের পরিস্ফুটন, ফলের পরিপক্বতা, বীজের অঙ্কুরোদ্গম ইত্যাদি বিলম্বিত করে।
প্রশ্ন 11 অক্সিনের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: অক্সিনের বৈশিষ্ট্য : O রাসায়নিক প্রকৃতি : ইন্ডোলবর্গ ও নাইট্রোজেনযুক্ত একপ্রকার দুর্বল, জৈব অ্যাসিড (CoH,O, N)। এটি জলে দ্রবণীয়। ও
কার্যক্ষমতা : অতি অল্পমাত্রায় উপস্থিত থেকে উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং আলোর বিপরীতে বেশি সক্রিয় থাকে। ও
পরিবহণ : সক্রিয় পরিবহণ পদ্ধতিতে অক্সিনের মেরুবর্তী পরিবহণ ঘটে। অক্সিন ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নিম্নমুখে পরিবাহিত হয়।
প্রশ্ন 12. জাইলেম কলার মাধ্যমে অক্সিনের পরিবহণ সম্ভব নয় কেন ?
উত্তর : জাইলেম কলার মাধ্যমে অক্সিনের পরিবহণ সম্ভব নয়, কারণ—
1. জাইলেমে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহণ ঘটে। কিন্তু, অক্সিন হরমোন অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে নিঃসৃত হয়ে নিম্নমুখে পরিবাহিত হয়।
2. অক্সিনের পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় পরিবহণকারী কলাকোশ। জাইলেমের পরিবহণকারী উপাদানগুলি মৃত হওয়ায় প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে না।
প্রশ্ন 13. দুটি প্রাকৃতিক অক্সিনের রাসায়নিক নাম লেখো।
উত্তর : দুটি প্রাকৃতিক অক্সিন হল — (1) ইন্ডোল-ও-অ্যাসিটিক অ্যাসিড (IAA) এবং (ii) ফিনাইল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (PAA)।
প্রশ্ন 14. দুটি সংশ্লেষিত অক্সিনের নাম লেখো।
উত্তর দুটি সংশ্লেষিত অক্সিন হল - (i) ন্যাপথলিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA) এবং (ii) ইন্ডোল প্রোপিয়োনিক অ্যাসিড (IPA)।
প্রশ্ন 15. একবীজপত্রী উদ্ভিদের তুলনায় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে কৃত্রিম। অক্সিন আগাছানাশকরূপে বেশি কার্যকর কেন?
উত্তর : দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে কৃত্রিম অক্সিন তুলনামূলকভাবে বেশি বিষক্রিয়া ঘটায় কারণ 0 দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের পাতা চওড়া এবং অনুভূমিকভাবে অবস্থান করে। ফলে, স্প্রে করা অক্সিন বেশি পরিমাণে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, একবীজপত্রী পাতা সবু ও খাড়া বা উল্লম্বভাবে অবস্থান করে। ফলে, স্প্রে করা অক্সিন গড়িয়ে পড়ে যায়। ও এ ছাড়া, একবীজপত্রী উদ্ভিদের তুলনায় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বেশি পরিমাণে কৃত্রিম অক্সিন শোষণ ও পরিবহণ করতে সক্ষম।
প্রশ্ন 16. অক্সিন হরমোনের এমন দুটি কাজ উল্লেখ করো যার ব্যবহারিক প্রয়োগ মূল্য আছে। (ME '08)
উত্তর : o বীজহীন ফল উৎপাদন : IBA, IPA প্রভৃতি কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করে বীজহীন ফল বা পার্থেনোকাপিক ফল যেমন- আঙুর, কলা, পেয়ারা প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়। ও
আগাছানাশক: ধান, গম প্রভৃতি চাষের খেতে 2,4-D, MCAA প্রভৃতি কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করে আগাছা বা অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ দূর করা হয়। জেনে রাখো: কলম তৈরিতে অক্সিনের গুরুত্ব অপরিসীম * শাখাকলম সৃষ্টি গোলাপ, জবা, বেল প্রভৃতি উদ্ভিদে বীজ উৎপন্ন হয় না, সেই জন্য উদ্ভিদের শাখা কেটে নিয়ে (শাখাকলম) ওই কাটা অংশ অক্সিন দ্রবণে ডুবিয়ে রাখলে অস্থানিক মূল সৃষ্টি হয় ও নতুন চারাগাছ তৈরি করে।
* জোড়কলম তৈরি : জোড়কলমের সময় অক্সিন প্রয়োগ করে স্টক ও সিয়নের জোড়া লাগা অংশে ক্যামবিয়ামের সক্রিয়তা বাড়ানো হয়। ফলে লাগে এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত গাছ সৃষ্টি করে। স্টক ও সিয়ন জোড়া
প্রশ্ন 17 . জিব্বেরেলিন হরমোনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: জিব্বেরেলিন হরমোনের বৈশিষ্ট্য ও এটি নাইট্রোজেন- বিধীন টারপিনয়েড গোষ্ঠীভুক্ত দুর্বল প্রকৃতির জৈব অ্যাসিডধর্মী হরমোন। ও এটি জলে দ্রবণীয় এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদদেহে ঊর্ধ্ব ও নিম্নমুখে প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন 18. কৃষিকার্যে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা আলোচনা করো। **
উত্তর: কৃষিকার্য জিব্বেরেলিনের ভূমিকা : o মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা : জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে লেটুস বীজের দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম, আলুর মুকুল বা কান্দের দ্রুত সুপ্তাবস্থা ভা করা যায়।
• পরমধ্যের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি আখ, ভুট্টা, মটর প্রভৃতি গাছে জিব্বেরেলিন প্রয়োগে পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হয় এবং বংশগত খর্বতা দুরীভূত করা হয়।
প্রশ্ন 19. দুটি সংশ্লেষিত জিব্বেরেলিনের নাম লেখো।
উত্তর : দুটি সংশ্লেষিত (i) ক্লোরোপথ্যালিমিডো সাইক্লোহেক্সান কার্বক্সিমাইড এবং (ii) সাইকোসেল।
প্রশ্ন 20 . উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে জিব্বেরেলিনের দুটি ভূমিকা উল্লেখ করো। Lake Town, Govt spone girls' High School 16
উত্তর : জিব্বেরেলিন কান্ডের ভাজক কলার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায়। উদ্ভিদের বংশগত খর্বতা দূর করে উদ্ভিদকে লম্বা হতে সাহায্য করে। ও জিব্বেরেলিন ফল ও পাতার আয়তন বৃদ্ধি ঘটায়।
প্রশ্ন 21. সাইটোকাইনিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: সহিটোকাইলিনের বৈশিষ্ট্য : ও এটি নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারীয় প্রকৃতির উদ্ভিদ হরমোন। ও এটি জলে দ্রবণীয় এবং এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদ্ভিদদেহের সর্বত্র পরিবাহিত হয়।
প্রশ্ন 22. সাইটোকাইনিনের দুটি ব্যবহারিক প্রয়োগ লেখো।
উত্তর: সাইটোকাইলিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ :
1. কলাপলিন (Tissue culture): কলাপালনে অক্সিনের তুলনায় অধিক মাত্রায় সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করলে ক্যালাসে বিটপ অংশ সৃষ্টি হয় এবং কম মাত্রায় প্রয়োগ করলে ক্যালাস থেকে মূল উৎপাদন হয়। ও
2.বার্ধক্য রোধ (Delay of senescence) : প্রোটিন সংশ্লেষ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাইটোকাইনিন উদ্ভিদদেহে ফল, পাতা, ফুল প্রভৃতির অকাল বার্ধক্য রোধ করে। সাইটোকাইনিন প্রয়োগ করে শাকসবজি, ফল, ফুল প্রভৃতি দীর্ঘদিন নিজস্ব বর্ণযুক্ত, সতেজ অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়।
প্রশ্ন 23. উদ্ভিদ অঙ্কোর বিকাশে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা উল্লেখ করো। অক্সিনের উপস্থিতিতে সাইটোকাইনিন
উত্তর : ক্যালাসে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে— 1 ক্যালাসে হরমোন প্রয়োগ উদ্ভিদ অঙ্গের বিকাশ উচ্চমাত্রার অক্সিন + নিম্নমাত্রার সাইটোকাইনিন।
প্রশ্ন 24 .উদ্ভিদের বার্ধক্য উল্লেখ করো। রোধে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা
উত্তর: সাইটোকাইনিন কোশে প্রোটিন সংশ্লেষ, DNA ও RNA অনুপাত অব্যাহত রাখা, কোশপর্দার ভেদ্যতা বৃদ্ধি এবং ক্লোরোফিল ভাঙন রোধের মাধ্যমে উদ্ভিদের বার্ধক্য বা জরাদশা বিলম্বিত করে। |
জেনে রাখো : সাইটোকাইনিনের প্রভাবে লিউকোপ্লাসটিড নামক রঞ্জকবিহীন প্লাসটিড ক্লোরোফিল রত্নক উৎপাদনে সক্ষম হয় ও ক্লোরোপ্লাসটিডে রূপান্তরিত হয়।
প্রশ্ন 25. উদ্ভিদকোশ বিভাজনে কোন্ দুটি হরমোন অংশগ্রহণ করে ?
উত্তর: উদ্ভিদকোশ বিভাজনে অক্সিন ও সাইটোকাইনিন হরমোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। O অক্সিন : নিউক্লিয়াসের বিভাজনে অর্থাৎ ক্যারিওকাইনেসিসে সাহায্য করে। ও সাইটোকাইনিন : সাইটোপ্লাজম বিভাজন বা সাইটো- কাইনেসিসে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন 26 .জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিনের একটি করে কাজ লেখো। * [ME '14,10]
উত্তর: জিব্বেরেলিনের কাজ : মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদ্গমে সাহায্য করে। সাইটোকাইনিনের কাজ : কোশের সাইটোপ্লাজম বিভাজনে সাহায্য করে এবং কোশ বিভাজন ত্বরান্বিত করে।
প্রশ্ন 27. অক্সিন ও সাইটোকাইনিনের একটি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করো।
উত্তর: অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রমুকুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। অর্থাৎ, অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ প্রকটতা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। অর্থাৎ, অগ্রস্থ প্রকটতাকে প্রতিহত করে।
প্রশ্ন 28. কোনো উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে গাছটিতে অধিক সংখ্যক শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর: উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগের ভাজক কলা কোশ থেকে অক্সিন ক্ষরিত হয় এবং এর প্রভাবে অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় ও কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। কাণ্ডের অগ্রভাগ কেটে দিলে অক্সিনের ক্ষরণ কমে যায় এবং সাইটোকাইনিন হরমোনের প্রভাবে কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। ফলে, অধিক সংখ্যক শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 29 .দুটি সংশ্লেষিত সাইটোকাইনিনের নাম লেখো।
উত্তর : দুটি সংশ্লেষিত সাইটোকাইনিন হল— (i) অ্যামাইনো পিউরিন (BAP) ও (ii) বেঞ্জি মিডাজোল।
প্রশ্ন 30 .বাষ্পমোচন রোধকারী হরমোন বলতে কী বোঝো?
উত্তর : অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (ABA) কে বাষ্পমোচন রোধকারী হরমোন (Anti Transpirant Hormone) বলে। শুষ্ক পরিবেশে উদ্ভিদের জলপীড়ন (Water stress) অবস্থায় পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোশ থেকে ABA নিঃসৃত হয়। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ষীকোশের প্লাজমা পর্দার ভেদ্যতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, K+ আয়ন রক্ষীকোশের বাইরে বেরিয়ে যায় ও বিনিময়ে H+ আয়ন রক্ষীকোশে প্রবেশ করে। এর ফলে রক্ষীকোশের রসস্ফীতি চাপ কমে যায় ও পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ বাষ্পমোচন বন্ধ হয়। |
জেনে রাখো : ট্রাই আয়োডো বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড (TIBA) অক্সিনের কার্যকারিতা বিনষ্ট করে। তাই একে অ্যান্টি-অক্সিন বলা হয় ।
প্রশ্ন 31 .কোন হরমোন উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে? ইহা কীভাবে কার্যকরী হয় ?
উত্তর: উদ্ভিদে দ্রুত ফুল ফোটাতে সাহায্য করে ফ্লোরিজেন নামক হরমোন। * এই হরমোনটি আলোর প্রভাবে পাতায় তৈরি হলেও অগ্রমুকুলে পরিবাহিত হয়ে সেখানে কার্যকরী হয়।
প্রশ্ন 32 .বাসন্তীকরণ বা ভার্নালাইজেশন (Vernalization) কাকে বলে?
উত্তর : নিম্ন উয়তার দ্বারা পুষ্প প্রস্ফুটন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাসন্তীকরণ বা ভার্নালাইজেশন বলে। উদ্ভিদের অসংখ্য প্রজাতিতে, বিশেষ করে দ্বিবর্ষজীবী ও বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদে ভার্নালাইজেশন দেখা যায়। বাসন্তীকরণ প্রধানত ভারনালিন বা ফ্লোরিজেন নামক প্রকল্পিত হরমোনের প্রভাবেই ঘটে থাকে। জিব্বেরেলিন প্রয়োগে উদ্ভিদের ফুল ফোটানো (ক) হরমোন প্রয়োগের আগে, (খ) হরমোন প্রয়োগের পর |
জেনে রাখো : ভার্নালাইজেশনে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা : কিছু কিছু উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে এক বছরের মধ্যেই ফুল ফোটানো সম্ভব হয়। বাসন্তীকরণ পদ্ধতিতে নিম্ন উষ্ণতা প্রয়োগের ফলে ভারনালিন উৎপন্ন হয় পুষ্প প্রস্ফুটনে সাহায্য করে। আবার, উদ্ভিদ মধ্যস্থিত জিব্বেরেলিন বাসন্তীকরণ পদ্ধতিকে প্রবল করে এবং নিম্ন উষ্মতার অনুপস্থিতিতে, ভারনালিন সৃষ্টিতে ও তার কার্যকারিতাকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। ফলে, গ্রীষ্মকালেও শীতকালীন ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে।
Advanced Studies বিজ্ঞানী লাইসেনকো (Lysinko, 1928) প্রথম "ভার্নালাইজেশন' (Vernalization) শব্দটির প্রবর্তন করেন। বিজ্ঞানী ক্লিপার্ট (Klippart, 1857 ) সবচেয়ে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করেন যে, শীতকালীন গম গাছের বীজ শীতকালে বপন করলে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে। যদিও এই বীজকে সিক্ত অবস্থায় নিম্ন তাপমাত্রায় (0-5°C) কিছুদিন রাখার পর বসন্তকালে বপন করলেও গ্রীষ্মকালেই ফুল ফোটে। শৈত্যপ্রদানের মাধ্যমে এইভাবে শীতকালীন 'গম'-কে 'বসন্তকালীন গম গাছে রূপান্তরিত করা যায়।।
প্রশ্ন 33. রিচমন্ড-ল্যাং প্রতিক্রিয়া কাকে বলে?
উত্তর: উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সজীব পাতায় সাইটোকাইনিন হরমোন প্রয়োগ করলে বা সাইটোকাইনিন মিশ্রিত জলে পাতাটিকে ডুবিয়ে রাখলে তা অনেকদিন পর্যন্ত সতেজ থাকে এবং ওই পাতার ক্লোরোফিল অনেক পরে বিনষ্ট হয়। একেই রিচমন্ড-ল্যাং প্রতিক্রিয়া (Richmond Lang effect) বলে। বিজ্ঞানী রিচমন্ড ও ল্যাং Xanthium গাছের পাতা নিয়ে এই পরীক্ষাটি সর্বপ্রথম করেছিলেন। সাইটোকাইনিন বিহীন জ্বলে রাখা পাতা সাইটোকাইনিন মিশ্রিত জলে ভেজানো পাতা কিছুদিন পর পাতার ক্লোরোফিল নষ্ট হয়ে যায় নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর পাতা সতেজ থাকে।
For High-Flyers:
1প্রশ্ন. কোশপ্রাচীরের অ্যাসিডিফিকেশন বলতে কী বোঝো?
উত্তর : অক্সিন হরমোনের প্রভাবে, কোশপর্দায় অবস্থিত ATP-ase পাম্পের সক্রিয়তার ফলে কোশ থেকে H+ নির্গত হয়ে কোশপর্দা ও কোশপ্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে সঞ্চিত হয়। এর ফলে কোশপ্রাচীরে থাকা এক্সপ্যানসিন উৎসেচক সক্রিয় হয়ে কোশপ্রাচীর নমনীয় করে এবং এর প্রসারণ ঘটে। এই অবস্থাকে কোশপ্রাচীরের অ্যাসিডিফিকেশন (Acidification of cell wall) বলা হয় এবং কোশের আকার বৃদ্ধির এই তত্ত্বকে অ্যাসিড গ্রোথ হাইপোথেসিস (Acid Growth Hypothesis) বলে।
প্রশ্ন 2. বীজের অঙ্কুরোদ্গমে বাধা সৃষ্টিকারী দুটি পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর: উপক্ষার ও ফেনল।
প্রশ্ন 3. উদ্ভিদের ‘স্ট্রেস সহ্যকারী' হরমোন কাকে বলে ?
উত্তর : অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (ABA)।
প্রশ্ন 4. অক্সিনের আলোক অবলুপ্তি কাকে বলে?
উত্তর: উদ্ভিদের যে অংশে আলো পড়ে সেই আলোকিত অংশে অক্সিন হরমোনের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং প্রায় 65% অক্সিন আলোর বিপরীত দিকে সজ্জিত হয়। এই ঘটনাকে অক্সিনের আলোক অবলুপ্তি বলে।
প্রশ্ন 5 .উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ বা পরিবর্তনে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর: জিব্বেরেলিন শশা, কুমড়ো প্রভৃতি উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই সকল উদ্ভিদে GA,-এর ঘনত্ব অধিক হলে পুরুষ ফুল উৎপন্ন এবং GA, -এর ঘনত্ব কম থাকলে স্ত্রী ফুল উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন 6. ক্যালোন কী?
উত্তর: যে-সকল রাসায়নিক পদার্থ হরমোনের ক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করে বা হরমোনকে ধ্বংস করে, সেই সকল পদার্থকে ক্যালোন বলে। যেমন—অ্যাজাইড যৌগ, পটাশিয়াম সায়ানাইড ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment