জীবজগতে নিয়ন্ত্রণও সমন্বয়(Control and Coordination in Living Organisms) : দশম শ্রেণীর জীবনবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 life science 1st chapter question answer|
উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান (Sensitivity and response in plants):
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1 .সংবেদনশীলতা (Sensitivity) কাকে বলে? তোমার চারপাশের পরিবেশে তুমি কোন্ কোন্ সংবেদনশীলতার ঘটনা লক্ষ করো তার একটি তালিকা তৈরি করো। প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্দীপকগুলিকে চিহ্নিত করো।
উত্তর: সংবেদনশীলতা ( Sensitivity) : যে ক্ষমতা বা বৈশিষ্ট্য দ্বারা জীব বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ পরিবেশের যে-কোনো পরিবর্তনকে শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদানের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকে সংবেদনশীলতা ( Sensitivity) বা উত্তেজিতা (Irritability) বলে।
পরিবেশে সংঘটিত কায়কটি সংবেদনশীলতার ঘটনা : সংবেদনশীলতার ঘটনা উদ্দীপক জীবদেহে প্রতিক্রিয়া @ ও ঘটনা : 1 অনেকক্ষণ ধরে জ্বলা গরম বালবে হাত ঠেকে গেল। উচ্চ তাপ তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনা : 2 রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎই একটি কুকুর তেড়ে এল। ভয় ও আতঙ্ক দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়া। ও ঘটনা ও মাটিতে বীজ ফেলে অঙ্কুরোদ্গম ঘটালে দেখা যাবে, মূল মাটির নীচে ও কাণ্ড মাটির উপরে বেড়ে বল উঠছে। আলো, জল ও অভিকর্ষ উদ্ভিদের কাণ্ডের চলন আলো দ্বারা এবং মূলের চলন জল ও অভিকর্ষ বল নিয়ন্ত্রিত
সংবেদনশীলতার ঘটনা স্পর্শ জীবদেহে প্রতিক্রিয়া পাতা O ঘটনা : 4 লজ্জাবতী গাছের পাতায়। হাত ছোঁয়ানো হল। লজ্জাবতীর নীচের দিকে নুইয়ে পড়ে এবং যৌগিক পত্রকগুলি বুজে যায়।
প্রশ্ন 2 .আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত আবিষ্কারের ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
উত্তর: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণ করেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে, উদ্ভিদরাও প্রাণী এবং মানুষের মতো পরিবেশের নানা পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে এবং সেই প্রদান করে।
আবিষ্কারের ঘটনা : 1901 সালের 10 মে, লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির সেন্ট্রাল হলে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন বিজ্ঞানীর সামনে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এই পরীক্ষাটি করে দেখান।
একটি গাছকে পাত্রে রাখা বিষাক্ত ব্রোমাইড দ্রবণে স্থাপন করেন। ও গাছের কাণ্ডে ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি লাগান। পর্যবেক্ষণ : পর্দায় একটি আলোকিত স্থান দেখা যায়। আলোকিত অংশটি ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো (To and fro movement) সঞ্চালিত হয়, যা অনেকটা প্রাণীদের নাড়িস্পন্দনের (Pulse beats) মতো মনে হয়। হঠাৎই আলোকিত অংশটি দ্রুত আন্দোলিত হয় এবং অবশেষে স্থির হয়ে যায়।
সিদ্ধান্ত : বিষাক্ত ব্রোমাইড দ্রবণের (হাইড্রোব্রোমিক অ্যাসিডের লবণ) সংস্পর্শে গাছটি মারা যায়। যেমনভাবে বিষপানে কোনো প্রাণী মৃত্যুর আগে ছটফট করে, সেইরকম উদ্ভিদটিও বিষের সংস্পর্শে প্রতিক্রিয়া ঘটায় এবং একসময় মারা যায়। এই আবিষ্কারের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় গাছের প্রাণ আছে এবং প্রাণী ও মানুষের মতোই গাছেরা উদ্দীপনায় সাড়া দেয় । | জেনে রাখো : বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ‘রেজোন্যান্ট রেকর্ডার' নামক যন্ত্রের সাহায্যে প্রাণীদেহের মতো উদ্ভিদের দেহেও 'প্রতিবর্ত চাপ' | (Reflex Arc) -এর উপস্থিতি প্রমাণ করেন।
প্রশ্ন 3 .উদ্দীপক (Stimulant) কাকে বলে? উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদদেহে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: উদ্দীপক (Stimulant) : ভৌত, রাসায়নিক বা যান্ত্রিক যে-সমস্ত বাহ্যিক অথবা অভ্যন্তরীণ শক্তি বা অবস্থা জীবের দ্বারা শনাক্ত হয় এবং জীবদেহে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টির মাধ্যমে জীবকে প্রতিক্রিয়া বা সাড়া প্রদানে সক্ষম করে তোলে, তাদের উদ্দীপক বা স্টিমুল্যান্ট বলে। উদাহরণ : আলো, চাপ, তাপ, স্পর্শ প্রভৃতি।
উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদাদাহ সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া : উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। উদ্ভিদ তার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে বিভিন্ন উত্তেজনায় সাড়া দেয়, যেমন— 0 লজ্জাবতী উদ্ভিদ (Mimosa pudica)-এর পাতার পত্রকগুলিকে স্পর্শ করলে (হাত বা পেনসিল দিয়ে) পত্রকগুলি ভাঁজ হয়ে নুইয়ে পড়ে। এখানে স্পর্শ হল উদ্দীপক। ও সূর্যমুখী ফুল সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে ফোটে। এখানে সূর্যের আলো হল উদ্দীপক।
ও সূর্যশিশির উদ্ভিদের পাতায় উপস্থিত রোমগুলি কোনো পতঙ্গের (প্রোটিন) সংস্পর্শে এলেই পতঙ্গের দিকে বেঁকে গিয়ে পতঙ্গকে আবদ্ধ করে। এখানে প্রোটিন হল উদ্দীপক। সূর্যমুখী সূর্যশিশির এ
প্রশ্ন 4 .উদ্ভিদের উদ্দীপনায় সাড়াপ্রদানের পদ্ধতি কীভাবে ঘটে উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : উদ্দীপনার প্রভাবে উদ্ভিদের সাড়া দেওয়ার ঘটনাটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা—
• উদ্দীপনা গ্রহণ : উদ্ভিদের নির্দিষ্ট অঙ্গের কোশ বা কলার দ্বারা নির্দিষ্ট উদ্দীপনা গৃহীত হয় এবং উদ্দীপনার প্রকৃতি ও তীব্রতার মাত্রা শনাক্ত হয়।
উদ্দীপনা পরিবহণ : উদ্ভিদদেহে কোনো উদ্দীপনা গৃহীত হওয়ার পর প্লাজমোডেসমাটার দ্বারা কোশরসের মাধ্যমে এই উদ্দীপনা সাড়া প্রদানকারী উদ্ভিদ অঙ্গ বা কলায় পরিবাহিত হয়।
ও সাড়াপ্রদান ও সংবেদনশীলতা : উদ্দীপনার প্রভাবে নির্দিষ্ট হরমোন ক্ষরণ বা রসস্ফীতির তারতম্যজনিত কারণে উদ্ভিদ অঙ্গ সাড়াপ্রদান করে। একে সংবেদনশীলতাও বলা হয় । *
উদাহরণ : (i) লজ্জাবতী গাছের পাতাকে স্পর্শ করলে পাতাগুলি মুড়ে যায়। (ii) বনচাড়াল-এর ত্রিফলকের পার্শ্বীয় ফলক দুটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্যায়ক্রমে উপর নীচে আবর্তন করে। (iii) আমরুল, বাবলা প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা তীব্র আলো ও উয়তার প্রভাবে খুলে যায়। (iv) আলোর উৎসের দিকে জলজ এককোশী শৈবাল ক্ল্যামাইডোমোনাস, ভলভক্স প্রভৃতির সামগ্রিক সঞ্চালন ঘটে।
প্রশ্ন 5 . চলন ( Movement) কাকে বলে? উদ্ভিদ চলনের প্রকারভেদগুলি একটি ছকের মাধ্যমে লেখো।
উত্তর : চলন ( Movement) : যে প্রক্রিয়ায় কোনো জীব এক জায়গায় স্থির থেকে উদ্দীপকের প্রভাবে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেহের কোনো অংশ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের মাধ্যমে সাড়াপ্রদান করে, সেই প্রক্রিয়াকে চলন বা মুভমেন্ট বলে। উদ্ভিদের চলন উদ্ভিদ চলনের প্রকারভেদ : আবিষ্ট চলন ট্রপিক চলন জিওট্রপিক নিকটিন্যাস্টি সিসমোন্যাস্টি প্রোটোপ্লাজমীয় হাইড্রোট্রপিক কেমোন্যাস্টি ন্যাস্টিক চলন বক্ৰচলন (দেহাংশের চলন) স্বতঃস্ফূর্ত চলন প্রকরণ চলন বুদ্ধিজ চলন | ফোটোট্রপিক থার্মোন্যাস্টি আবিষ্ট চলন ট্যাকটিক চলন হাইড্রোট্যাকটিক ফোটোন্যাস্টি সামগ্রিক চলন (সম্পূর্ণ দেহের চলন) স্বতঃস্ফূর্ত চলন সিলিয়ারি চলন অ্যামিবয়েড চলন কেমোট্যাকটিক থার্মোট্যাকটিক ফোটোট্যাকটিক।
প্রশ্ন 6. ট্যাকটিক চলন কাকে বলে? উদাহরণসহ ট্যাকটিক চলনের প্রকারভেদগুলি ব্যাখ্যা করো। [ME '04]
উত্তর: ট্যাকটিক চলন (Tactic movement) : বাহ্যিক উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ ও তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদের সমগ্রদেহের বা দেহাংশের বা কোশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়াকে ট্যাকটিক চলন বলে। উদ্দীপকের প্রকৃতি অনুযায়ী ট্যাকটিক চলন প্রধানত চার প্রকার। যথা—
• ফোটোট্যাকটিক (Phototactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ— ভলভক্স এবং ক্ল্যামাইডোমোনাস নামক শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু প্রখর আলো থেকে দূরে সরে যায়। উপরিতল সূর্যালোক Wim² 100 জলের গভীরতা প্রতিকূল ফোটোট্যাকটিক আলোকের অনুকূল অবস্থান অনুকূল ফটোট্যাক্সিস ফাইটোপ্ল্যাংকটনের ফোটোট্যাকটিক চলন ও
থার্মোট্যাকটিক (Thermotactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন উয়তা উদ্দীপকের প্রভাবে স্থানান্তরিত হয়, তখন তাকে থার্মোট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ—ক্ল্যামাইডোমোনাস নামক শৈবাল বেশি উন্নতার দিকে সরে যায়।
কেমোট্যাকটিক (Chemotactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন কোনো রাসায়নিক পদার্থের আকর্ষণে স্থানান্তরিত হয়, তখন তাকে কেমোট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ— গ্লুকোজের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে মসের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হয় এবং ম্যালিক অ্যাসিড দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ফার্ন গাছের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হয়।
হাইড্রোট্যাকটিক (Hydrotactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন জল উদ্দীপকের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে হাইড্রোট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ—এককোশী শৈবাল শুষ্ক স্থান থেকে জলের দিকে যায়।
জেনে রাখো : এ ছাড়া আরও দুধরনের ট্যাকটিক চলন দেখা যায়— ও গ্যালভানোট্যাকটিক (Galvanotactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন তড়িৎ উদ্দীপকের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে গ্যালভানোট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ—কয়েকপ্রকার শৈবালে দেখা যায়। ও রিওট্যাকটিক (Rheotactic) চলন : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন জলস্রোতের তারতম্যের জন্য স্থানান্তরিত হয়, তখন তাকে রিওট্যাকটিক চলন বলে। উদাহরণ— সূত্রাকার শৈবালে এই প্রকার চলন দেখা যায়।
প্রশ্ন 7 . দিগ্নির্ণীত বক্ৰচলন বা ট্রপিক চলন বলতে কী বোঝো? ট্রপিক চলনের প্রকারভেদগুলি উদাহরণ ও উদ্দীপকের নামসহ সারণি আকারে লেখো।
উত্তর : ট্রপিক চলন (Tropic movement) : বাহ্যিক উদ্দীপকের
(যেমন- আলো, জল, তাপ, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি) উৎসের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদের অপরিণত বর্ধনশীল অঙ্গের যে বৃদ্ধিজনিত আবিষ্ট বক্রচলন ঘটে, তাকে ট্রপিক চলন বা দিগনির্ণীত বক্ৰচলন 11 বলে।
ট্রপিক চলালর প্রকারভেদ : ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ উদ্দীপকের প্রকৃতি • ফোটোট্রপিক চলন বা আলোকবৃত্তীয় চলন আলোর গতিপথ বা ফোটোট্রপিজম ও হাইড্রোট্রপিক চলন জলের উৎসের বা জলবৃত্তীয় চলন বা হাইড্রোট্রপিজম দিকে জিওট্রপিক চলন বা অভিকর্ষের অভিকর্ষ তৃতীয় চলন উৎস বা জিওট্রপিজম উদাহরণ উদ্ভিদের বিটপ অংশ আলোর উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের মূল জালের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায়।
Advanced Studies আরও দুপ্রকার ট্রপিক চলন লক্ষ করা যায়। যথা-
• থিগমোট্রপিক বা নিগমোট্রপিজম (Thigmatropism) : উদ্ভিদদেহে স্পর্শ উদ্দীপকের প্রভাবে এই প্রকার। চলন ঘটে। যেমন— উচ্ছে, লাউ, কুমড়ো ইত্যাদি উদ্ভিদের আকর্ষগুলি কোনো অবলম্বনের স্পর্শের দ্বারা উদ্দীপিত হয়। আকর্ষের যে অংশটি অবলম্বনকে স্পর্শ করে, সেই অংশের কোশগুলি ধীর গতিতে ও বিপরীত দিকের কোশগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এইভাবে, আকর্ষগুলি কোনো অবলম্বনকে পেঁচিয়ে আঁকড়ে ধরে উপরে ওঠে এবং থিগমোট্রপিক চলন সম্পন্ন করে। বিগ মোট্রপিক চলন
ও কেমোট্রপিক বা কেমেট্রপিজম (Chemotro pism) : উদ্ভিদদেহে রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে এই প্রকার চলন ঘটে। যেমন— ফুলের গর্ভকেশর চক্রের পরিপক্ব গর্ভমুণ্ড থেকে রাসায়নিক পদার্থ (শর্করা পদার্থ) উৎপন্ন হয়ে গর্ভদণ্ডের মধ্যে দিয়ে ডিম্বাশয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এই শর্করা পদার্থ গর্ভমুন্ডের ওপর পড়া পরাগরেণুর ক্ষেত্রে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এই উদ্দীপকের প্রভাবে পরাগরেণু উদ্দীপিত হয় এবং গর্ভদণ্ডের মধ্যে। দিয়ে গিয়ে ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণু পর্যন্ত পরাগনালি তৈরি করে ও ফুলের নিষেক ঘটায়। কেমোট্রপিক চলন
প্রশ্ন ৪: ফোটোট্রপিক চলন (Phototropic movement) কাকে বলে? একটি পরীক্ষার দ্বারা উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ফোটোট্রপিক চলন (Phototropic movement) বা আলোকনির্ণীত রচলন আলোর (উদ্দীপক) উৎসের গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত বক্রচলনকে ফোটোট্রপিক চলন বা আলোকনির্ণীত বজ্রচলন বা আলোকবৃত্তীয় চলন বা ফোটোট্রপিজম বলে।
২ উদাহরণ : উদ্ভিদের বিটপ অংশ (কাণ্ড, শাখাপ্রশাখা, পাতা প্রভৃতি অঙ্গ) আলোর দিকে বর্ধিত হয়।
উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা : X উপকরণ : (i) একটি কাচের বোতল, (ii) সতেজ মূলসহ চারাগাছ, (iii) বিশুদ্ধ জল, (iv) কর্কের ছিপি।
পরীক্ষা পদ্ধতি : একটি সুস্থ চারাগাছকে একটি কাচের বোতলে কর্কের ছিপির সাহায্যে সোজা করে বসানো হল। এরপর গাছসমেত বোতলটিকে একটি অন্ধকার ঘরে খোলা জানালার সামনে রাখা হল।
পর্যবেক্ষণ : এক সপ্তাহ পর দেখা গেল, গাছের বিটপ অংশটি খোলা জানালার দিকে বেঁকে গেছে এবং বোতলের ভিতরে মূল আলোর বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিদ্ধান্ত : এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে, উদ্ভিদের বিটপ বা কাণ্ডের চলন আলোর উৎসের গতিপথের দিকে হয়েছে অর্থাৎ, আলোকবর্তী চলন ঘটেছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পারি- সূর্যের আলো উদ্দীপকের কাজ করে এবং উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা সূর্যের আলোর অভিমুখে অগ্রসর হয়ে সাড়াপ্রদান করে। ও উদ্ভিদের কাণ্ডে আলোক অনুকূলবর্তী ও মূলে আলোক প্রতিকূলবর্তী চলন ঘটে। পাতা আলোর উৎসের সঙ্গে লম্বভাবে থাকে বলে পাতায় তির্যক আলোকবর্তী চলন ঘটে।
জেনে রাখো : উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন 'অক্সিন' হরমোনের প্রভাবে ঘটে। সূর্যের আলো প্রধান উদ্দীপক হওয়ায় ফোটোট্রপিজমকে 'হেলিওট্রপিজম'-ও বলা হয়।
প্রশ্ন 9. হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic movement) কাকে বলে? উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলন একটি পরীক্ষার দ্বারা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic movement) : জলের (উদ্দীপক) উৎস দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের বা জলবৃত্তীয় চলন বা হাইড্রোট্রপিজম বলে। বৃদ্ধিজনিত বক্রচলনকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলনির্ণীত বক্ৰচলন ২
উদাহরণ : উদ্ভিদের মূল অংশ জলের উৎসের দিকে বর্ধিত হয়।
হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা : উপকরণ : (i) একটি চালুনি, (ii) কিছু পরিপক্ব সুস্থ অঙ্কুরিত ছোলা বীজ, (iii) কাঠের গুঁড়ো, (iv) জল।
পরীক্ষা পদ্ধতি : একটি চালুনির মধ্যে কিছুটা ভিজে কা গুঁড়ো রেখে তার মধ্যে কয়েকটি সুস্থ অঙ্কুরিত ছোলা বীজ রে চালুনিটি ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হল । ভিজে কাঠের গুঁড়ো অঙ্কুরিত ছোলাবীজ ভ্রূণমুকুল চালুনি- ভ্রূণমূল- উদ্ভিদের হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা
পর্যবেক্ষণ : এই অবস্থায় থাকার কয়েকদিন পর দেখা যাবে। যে, বীজের ভ্রূণমূলগুলি চালুনির ছিদ্র দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আবার উপরের দিকে বেঁকে চালুনির মধ্যে প্রবেশ করেছে।
সিদ্ধান্ত : এর কারণ—প্রথমে ভ্রূণমূলগুলি অভিকর্ষজ চলনের দ্বারা নীচের দিকে নেমে এসেছিল, কিন্তু পরে জলের উৎসের দিকে অর্থাৎ, চালুনির মধ্যে প্রবেশ করেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, উদ্ভিদের মূল জলের উৎসের দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ, মূলে পজিটিভ হাইড্রোট্রপিক চলন ঘটে এবং কাণ্ড জলের উৎসের বিপরীত দিকে বর্ধিত হয়, এজন্য কাণ্ডে নেগেটিভ হাইড্রোট্রপিক চলন ঘটে।
প্রশ্ন 10. জিওট্রপিক চলন (Geotropic movement) কাকে বলে? উদ্ভিদের জিওট্রপিক চলন একটি পরীক্ষা দ্বারা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: জিওট্রপিক চলন (Geotropic [ME '06] movement): অভিকর্ষজ বল বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ। অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত বক্রচলনকে জিওট্রপিক চলন বা অভিকর্ষনির্ণীত চলন বা অভিকর্ষবৃত্তীয় চলন বা জিওট্রপিজম বা গ্র্যাভিট্রপিজম বলে।
উদাহরণ : উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায়।
© পরীক্ষা পদ্ধতি : একটি ভিজে ব্লটিং কাগজকে অনুভূমিকভাবে রেখে তার ওপর অঙ্কুরিত ছোলা বীজটি পিন দিয়ে লাগানো হল। এই অবস্থায় কাগজটি উল্লম্বভাবে কয়েকদিন আলোবাতাসপূর্ণ স্থানে রাখা হল।
পর্যবেক্ষণ : কয়েকদিন পর দেখা যাবে যে, বীজটির ভ্রূণমূল নীচের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে ও ভ্রূণমুকুল উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিদ্ধান্ত : এই পরীক্ষা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি— • উদ্ভিদের মূলের চলন অভিকর্ষের অনুকূলে হয়। অর্থাৎ, মূলে পজিটিভ জিওট্রপিজম দেখা যায়। ও উদ্ভিদের কাণ্ডের চলন অভিকর্ষের প্রতিকূলে বা বিপরীতে হয়। অর্থাৎ, কাণ্ডে নেগেটিভ জিওট্রপিজম দেখা যায়।
প্রশ্ন 11 . ন্যাস্টিক চলন (Nastic movement) কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সম্বন্ধে আলোচনা করো।
উত্তর : ন্যাস্টিক চলন (Nastic movement) : বাহ্যিক উদ্দীপকের তীব্রতার মাত্রা ও স্থায়িত্ব দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির তারতম্যজনিত বক্রচলনকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে।
ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ : উদ্দীপকের প্রকৃতি অনুযায়ী ন্যাস্টিক চলন পাঁচ প্রকারের হয়। যথা—
• ফোটোন্যাস্টি (Photonasty) বা আলোকব্যাপ্তি চলন : আলোর তীব্রতার মাত্রা ও স্থায়িত্ব দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির তারতম্যজনিত বক্রচলনকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বা আলোকব্যাপ্তি চলন বলে। ২
উদাহরণ— সূর্যমুখী, পদ্ম, শালুক প্রভৃতি ফুল দিনের তীব্র আলোয় ফোটে। আবার সন্ধ্যামালতী, জুই প্রভৃতি ফুল রাতে আলোর অনুপস্থিতিতে ফোটে।
থার্মোন্যাস্টি (Thermonasty) বা তাপব্যাপ্তি চলন : তাপমাত্রা বা উয়তার তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির তারতম্যজনিত বক্রচলনকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বা তাপব্যাপ্তি চলন বলে।
উদাহরণ - টিউলিপ ফুলের পাপড়িগুলো অধিক উন্নতায় ফোটে এবং কম উন্নতায় মুড়ে যায়। আবার, শিমগাছের পাতার পত্রকগুলি অধিক তাপমাত্রায় মুড়ে যায় এবং কম তাপমাত্রায় খুলে যায়।
নিকটিন্যাস্টি (Nyctinasty) বা তাপ-আলোকব্যাপ্তি চলন : আলোক ও তাপমাত্রা উভয় উদ্দীপকের তীব্রতার মাত্দ প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গোর রসস্ফীতির তারতম্যজনিত বরুচলনকে নিকটিন্যাস্টিক চলন বা তাপ- আলোকব্যাপ্তি চলন বলে।
উদাহরণ— তামাক, ক্যাকটাস প্রভৃতির ফুল প্রখর রোদ ও উন্নতায় ফোটে এবং রাতে কম আলো ও উন্নতায় বন্ধ হয়ে যায়। আবার বাবলা, আমরুল, কৃষ্ণচূড়া, তেঁতুল প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতার পত্রকগুলি দিনেরবেলা তীব্র আলো ও উন্নতায় খুলে যায় এবং রাতেরবেলা কম আলো ও উন্নতায় বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রকার চলনকে নিদ্রাচলন-ও (Sleeping movement) বলে। মটর, বিন প্রভৃতি শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদে এই প্রকার চলন দেখা যায়। বাবলা গাছের পাতা দিনেরবেলা খুলে যায় ও রাতেরবেলা মুড়ে যায়।
o কেমোন্যাস্টি (Chemonasty) বা রসায়নব্যাপ্তি চলন রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির তারতম্যজনিত বক্ৰচলনকে কেমোন্যাস্টিক চলন বা রসায়নব্যাপ্তি চলন বলে।
উদাহরণ- সূর্যশিশির পাতার কিনারা বরাবর রোম বা কর্ষিকা এবং কলশপত্রী উদ্ভিদের পত্রফাদের ঢাকনা পতঙ্গদের দেহের প্রোটিনের সংস্পর্শে আসা মাত্র পতঙ্গদের দিকে বেঁকে যায় ও পতঙ্গ আবদ্ধকরণের জন্য সঞ্চালিত হয়। পতঙ্গভুক উদ্ভিদ (কলশৰী) ও
সিসমোন্যাস্টি (Seismonasty) বা স্পর্শৰ্যাপ্তি চলন স্পর্শ, আঘাত বা বায়ুপ্রবাহের তীব্রতার মাত্রা দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির ভারতম্যজনিত বক্রচলনকে সিসমোন্যাস্টিক চলন বা স্পর্শব্যাপ্তি চলন বলে।
/ উদাহরণ— লজ্জাবতী (Mimosa pudica) পাতার পত্রকগুলিকে স্পর্শ করলে নুইয়ে পড়ে এবং অধিক আঘাতে পুরো পাতাটিই পত্রবৃত্ত থেকে নুইয়ে পড়ে। এই প্রকার চলন স্পর্শ উদ্দীপকের প্রভাবে ঘটলে, তাকে সিসমোন্যাস্টিক চলন এবং আঘাত উদ্দীপকের প্রভাবে ঘটলে, তাকে হ্যাপ্টোন্যাস্টিক চলন বলে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের জন্য কোন্ কোন্ উদ্ভিদ ব্যবহার করেছিলেন? তার পরীক্ষার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি উল্লেখ করো।
উত্তর : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা প্রমাণের জন্য । লজ্জাবতী উদ্ভিদ (Mimosa pudica) এবং ও বনচাড়াল উদ্ভিদ (Desmodium gyrans)-এর ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত গবেষণায় তাঁর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল – (i) প্রাণীদেহের মতো উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন প্রকার ছন্দবদ্ধ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, যা উদ্ভিদের সংবেদনশীলতায় সাহায্য করে। (ii) বিভিন্ন বাহ্যিক উদ্দীপক, যথা— তাপ, রাসায়নিক পদার্থ, স্পর্শ প্রভৃতি উদ্ভিদ কোশের প্রোটোপ্লাজমে পরিবর্তন ঘটায় যা উদ্ভিদের সাড়া প্রদানে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 2 . উদ্ভিদ চলনের তিনটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর : উদ্ভিদ চলনের উদ্দেশ্য :
1. খাদ্যের উপাদান সংগ্রহ : উদ্ভিদের মূল মাটির নীচে বর্ধিত হয় এবং জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে। শোষিত উপাদান খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সূর্যশিশির, কলশপত্রী প্রভৃতি পতঙ্গভুক উদ্ভিদের দেহে বিশেষ প্রকার চলন ঘটে, যার সাহায্যে এরা পতঙ্গ শিকার করতে পারে। ও
2. বাঁচার অনুকূল পরিবেশ সন্ধান : বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় আলো, বাতাস, জল পাওয়ার উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, পাতা প্রভৃতি অংশের সঞ্চালন ঘটে। ও
3. জৈবিক প্রয়োজন : দুর্বল কাণ্ডযুক্ত উদ্ভিদদের উপরে ওঠার জন্য আকর্ষ সৃষ্টি; শিম, অপরাজিতা কাণ্ডের বৃদ্ধিজ চলন; শ্বাসমূলের অভিকর্ষের বিপরীতে চলন প্রভৃতি উদ্ভিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 3 .কীভাবে কোনো উদ্ভিদ পরিবেশের পরিবর্তন অনুভব করে ?
উত্তর: পরিবেশের পরিবর্তন অনুভবের জন্য উদ্ভিদাদাহ গৃহীত পদ্ধতি :
1 .উদ্ভিদের পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয় সাধনের জন্য কোনো স্নায়ুতন্ত্র, পেশি ও জ্ঞানেন্দ্রিয় নেই। এই কারণে, পরিবেশের উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া উদ্ভিদের দেহে অত্যন্ত ধীরে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে।
2 . পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপকের (যেমন— তাপ, রাসায়নিক পদার্থ, স্পর্শ, আলো প্রভৃতি) প্রভাবে উদ্ভিদ কোশের প্রোটোপ্লাজমে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল অসিলেশন জাতীয় স্পন্দন সৃষ্টি হয় যা কোশরসের মাধ্যমে উদ্ভিদ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই অনুযায়ী সাড় প্রদানের মাধ্যমে উদ্ভিদ পরিবেশে অভিযোজিত হয়। ও উদ্ভিদদেহে এই সাড়াপ্রদানের ঘটনাগুলি চলন বা মুভমেন্টের মাধ্যমে ঘটে। চলন প্রধানত দুভাবে ঘটে, যথা— (i) বৃদ্ধি নিরপেক্ষ চলন (Growth independent movements) যেমন—কোনো কিছুর স্পর্শে লজ্জাবতী গাছের যৌগিক পত্রকগুলি নীচের দিকে নুইয়ে পড়ে এবং (ii) বৃদ্ধি সাপেক্ষ চলন (Growth dependent move. ments) যেমন- উদ্ভিদমূল মাটির নীচের দিকে বর্ধিত হয় বা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, মূলে হাইড্রোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন ঘটে।
প্রশ্ন 4. কোন্ জাতীয় উদ্ভিদে ট্যাকটিক চলন দেখা যায়? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। উন্নত উদ্ভিদে ট্যাকটিক চলন দেখা যায় না কেন ?
উত্তর : প্রধানত এককোশী, ফ্ল্যাজেলাযুক্ত জলজ শৈবালে ট্যাকটিক চলন দেখা যায়।
এককোশী, ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শৈবাল জলে বাস করে। আলোর প্রভাবে এবং জলের পরিবেশে এরা সহজেই ফ্ল্যাজেলার আন্দোলন ঘটিয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে। অর্থাৎ, ট্যাকটিক চলন সম্পন্ন করে।
উন্নত উদ্ভিদে ট্যাকটিক চলন দেখা যায় না। কারণ, উন্নত উদ্ভিদ যে স্থানে জন্মায় সেই স্থানেই বড়ো হয় ও জীবন অতিবাহিত করে। এদের মূল মাটির গভীরে প্রোথিত থাকে। ফলে, উন্নত উদ্ভিদ কখনোই উদ্দীপকের প্রভাবে স্থানান্তরিত হয় না।
প্রশ্ন 5 . বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উদাহরণসহ উল্লেখ করো।
উত্তর : উদ্ভিদ অঙ্গের বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের অসমান বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদের যে বক্রচলন ঘটে, তাকে বৃদ্ধিজ চলন বলে। এই চলন রোহিণী (Climbers) ও বল্লী (Twiners) জাতীয় উদ্ভিদে দেখা যায়। উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন প্রকার বৃদ্ধিজ চলন দেখা যায়। যেমন—
ও বলন বা ন্যুটেশন : শিম, অপরাজিতা প্রভৃতি উদ্ভিদের কাণ্ডে এরূপ চলন দেখা যায়। ও পরিবলন বা সারকামন্যুটেশন : কুমড়ো, লাউ প্রভৃতি গাছের আকর্ষে এই ধরনের চলন দেখা যায়।
• হাইপোন্যাস্টি : কচি কলাপাতা, কচুপাতা, ফার্নের কচি পাতা প্রভৃতিতে এই ধরনের চলন দেখা যায়।
• এপিন্যাস্টি : কলাপাতা, কচুপাতা, ফুলের পাপড়ি গোটানো অবস্থা থেকে খুলে যাওয়া এই ধরনের চলনের উদাহরণ।
Advanced Studies বিভিন্ন প্রকার বৃদ্ধিজ চলন : © বলন (Nutation) : উদ্ভিদ অঙ্গের অসম বৃদ্ধির ফলে কাণ্ডের অগ্রভাগ বা কাণ্ড থেকে উৎপন্ন আকর্ষ সর্বদা আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে যায়, তাকে বলন বা ন্যুটেশন বলে। ও পরিবলন (Circumnutation) কোনো অঙ্গ ক্রমাগত একই দিকে বৃদ্ধি পেলে বর্ধনশীল অঙ্গটি পেঁচিয়ে যেতে থাকে, একে পরিবলন বা সারকামন্যুটেশন বলে।
• হাইপোন্যাস্টি (Hyponasty) : কিছু উদ্ভিদের কচি পাতার নিম্নপৃষ্ঠের কোশগুলি উপরের পৃষ্ঠের কোশগুলি অপেক্ষা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় পাতাগুলি উপরের দিকে গুটিয়ে থাকে, একে হাইপোন্যাস্টি বলে। হাইপোন্যাস্টি এপিন্যাস্টি ৩ এপিন্যাস্টি (Epinasty) : উদ্ভিদ অঙ্গের ঊর্ধ্বতলের কোশগুলি নিম্নতলের কোশগুলি অপেক্ষা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে সংশ্লিষ্ট অঙ্গটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়। এই ধরনের বৃদ্ধিকে এপিন্যাস্টি বলে।
প্রশ্ন 6. পজিটিভ ও নেগেটিভ ফোটোট্রপিজম (Positive and Negative Phototropism) বলতে কী বোঝায় একটি চিত্রের মাধ্যমে তা বর্ণনা করো।
উত্তর : ফোটোট্রপিজম একপ্রকার ট্রপিক চলন, যার মাধ্যমে কোনো উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন আলোর গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি দুপ্রকার হয়, যথা—
আলোকরশ্মির গতিপথ কাণ্ড (পজিটিভ ফোটোট্রপিক চলন) পাতা (ট্রান্সভার্স ফোটোট্রপিক চলন)- মূল (নেগেটিভ ফোটোট্রপিক)- চলন ফোটোট্রপিক চলন
• পজিটিভ ফোটোট্রপিজম : এই প্রকার ফোটোট্রপিক চলনে উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা আলোর উৎসের দিকে এগিয়ে যায় ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তাই এক্ষেত্রে কাণ্ড বা শাখাপ্রশাখার চলনকে আলোক অনুকূলবর্তী চলন বা পজিটিভ ফোটোট্রপিজম বলে। ও
নেগেটিভ ফোটোট্রপিজম : উদ্ভিদের মূল আলোর উৎসের বিপরীতে অগ্রসর হয় ও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তাই এই ক্ষেত্রে মূলের চলনকে আলোক প্রতিকূলবর্তী বা নেগেটিভ ফোটোট্রপিজম বলে।
এছাড়া, উদ্ভিদের পাতাগুলি আলোর গতিপথের সঙ্গে সমকোণে বৃদ্ধি পায়, একে ট্রান্সভার্স ফোটোট্রপিজম বা তির্যক আলোকবর্তী চলন বলে।
প্রশ্ন 7 .পজিটিভ ও নেগেটিভ জিওট্রপিজম (Positive and Negative Geotropism) কাকে বলে?একটি চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করো ।
উত্তর: জিওট্রপিজম একপ্রকার ট্রপিক চলন, যার মাধ্যমে কোনো উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন অভিকর্ষের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি দুপ্রকার হয়, যথা— o
পজিটিভ জিওট্রপিজম : এই প্রকার জিওট্রপিজমের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে সঞ্চালিত হয় ও
বৃদ্ধি পায়। তাই একে পজিটিভ জিওট্রপিজম বা অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী চলন বলে। ও
(নামটিড জিওট্রপিজম : উদ্ভিদের কাণ্ড অভিকর্ষের বিপরীতে এগিয়ে চলে ও বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের চলনকে নেগেটিভ জিওট্রপিজম বা অভিকর্ষ প্রতিকূলবর্তী চলন বলে। এছাড়া, উদ্ভিদের শাখাপ্রশাখা ও পার্শ্বমূল অভিকর্ষের কেন্দ্রপথের সঙ্গে সমকোণে বাড়ে, একে ট্রান্সভার্স জিওট্রপিজম বা তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন বলে। কাও (নেগেটিভ জিওট্রপিক চলন)। পার্শ্বদুল (ট্রান্সভার্স জিওট্রপিক চলন -মূল (পজিটিভ জিওট্রপিক চলন জিওট্রপিক চলন
অনুরূপ প্রশ্ন : অভিকর্ষ বল দ্বারা কীভাবে উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যাখ্যা করো।
জেনে রাখো: গরান, গেওয়া, কেওড়া প্রভৃতি লবণাম্বু উদ্ভিদের শ্বাসমূল অভিকর্ষের বিপরীতে বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিকূল বা নেগেটিভ জিওট্রপিজম দেখায়। অভিকর্ষ চলনকে Geotropism না বলে প্রকৃত অর্থে | Gravitropism ा উচিত। কারণ- Geotropism-এর অর্থ হল পৃথিবীর দিকে চলন।
প্রশ্ন 8. আলো দ্বারা উদ্ভিদের চলন কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আলো হল উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রণকারী একটি প্রধান উদ্দীপক।
আলো দ্বারা 1 উদ্ভিদের চলন নিয়ন্ত্রণ : 1.অনেক উদ্ভিদে আলোর উৎসের অভিমুখ অনুসারে উদ্ভিদ দেহাকোর সঞ্চালন ঘটে, একে আলোকবর্তী চলন বা ফোটোট্রপিজম বলে। যেমন— উদ্ভিদের কাণ্ড ও শাখা প্রশাখার আলোক অনুকূলবর্তী, মূলে আলোক প্রতিকূলবর্তী ও পাতায় তির্যক আলোকবর্তী চলন দেখা যায়।
2. কিছু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ যেমন- ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি আলোর উৎসের গতিপথ ও তীব্রতা অনুসারে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে। এই প্রকার চলনকে ফোটোট্যাকটিক চলন বলে।
3. আবার আলোর তীব্রতার দ্বারাও উদ্ভিদ চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। এই প্রকার চলনকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন— সূর্যমুখী ও পদ্মের তীব্র আলোতে প্রস্ফুটিত হওয়া ও মৃদু আলোতে বুজে যাওয়া।
প্রশ্ন 9.উল্লিখিত ঘটনাগুলি উদ্ভিদের কী ধরনের চলনকে নির্দেশ করে তা লেখো- (i) মূল মাটির দিকে বৃদ্ধি পায়। (ii) অঙ্কুরিত বীজের মূল জলের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়। (ii) পদ্মফুল সূর্যোদয়ের সময় ফোটে এবং সূর্যাস্তের সময় বন্ধ হয়ে যায়।[ME '11] 16 9
উত্তর: (i) পজিটিভ জিওট্রপিক বা অনুকূল অভিকর্ষবর্তী চলনকে নির্দেশ করে।
(ii) পজিটিভ হাইড্রোট্রপিক বা অনুকূল জলবর্তী চলনকে নির্দেশ করে।
(iii) ফোটোন্যাস্টিক বা আলোকব্যাপ্তি চলনকে নির্দেশ করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র কে আবিষ্কার করেন? এই গুরুত্ব কী ?
উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।
গুরুত্ব : এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণিত হয় যে, গাছেরও প্রাণ আছে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের মতোই উদ্ভিদও পরিবেশের বিভিন্ন উদ্দীপনা (যেমন— আলো, তাপ, জল, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি) শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। |
জেনে রাখো : ক্রেসকোগ্রাফ একটি অত্যন্ত সুবেদী যন্ত্র যার সাহায্যে উদ্ভিদের সামান্য সাড়া প্রদানও (1 সেকেন্ডে প্রায় 1 nm) পরিমাপ করা যায়।
প্রশ্ন 2 .বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে কোন্ বিষয়গুলি আবিষ্কার করেন?
উত্তর : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে যে বিষয়গুলি আবিষ্কার করেন, সেগুলি হল— ও কন্ট্রাকটিবিলিটি (Contractibility) অর্থাৎ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন। গু রিদিমিসিটি (Rhythmicity) অর্থাৎ ছন্দবদ্ধভাবে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন এবং ও কনডাকটিভিটি (Conductivity) অর্থাৎ উদ্ভিদদেহে কোশে কোশে তড়িৎ উদ্দীপনার পরিবহণ।
জেনে রাখো : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা দুটি গ্রন্য : Growth and Tropic Movement in Plant. The NervousMechanism of Plants।
প্রশ্ন 3. উদ্দীপনা (Stimulus) কাকে বলে ?
উত্তর : ভৌত, রাসায়নিক বা যান্ত্রিক যে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে উদ্দীপনা বা স্টিমুলাস বলে। উদাহরণ – 1. বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সৃষ্ট উদ্দীপনা— স্পর্শের প্রভাবে লজ্জাবতী গাছের পাতা মুদে যাওয়া।
2. অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে সৃষ্ট উদ্দীপনা— অক্সিন হরমোনের প্রভাবে উদ্ভিদের ট্রপিক চলন ।
প্রশ্ন 4. বাহ্যিক উদ্দীপক (External Stimulant) কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বাহ্যিক পরিবেশের যে-সমস্ত উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় এবং জীব সাড়াপ্রদানে সক্ষম হয়, তাদের বাহ্যিক উদ্দীপক বলে।
উদাহরণ : আলো, তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, জল, স্পর্শ প্রভৃতি হল বাহ্যিক উদ্দীপক। আলোর প্রভাবে সূর্যমুখী, পদ্ম প্রভৃতি ফুল ফোটে। লজ্জাবতীর যৌগপত্রকে স্পর্শ করলে পত্রকগুলি মুড়ে যায়।
জেনে রাখো : বাহ্যিক উদ্দীপক দ্বারা উদ্ভিদ চলনকে প্যারাটনিক চলন (Paratonic Movement) বলে।
প্রশ্ন 5.অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক (Internal Stimulant) কাকে বলে? উদাহরণ দাও ।
উত্তর : জীবদেহের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সৃষ্ট যে-সমস্ত উদ্দীপক জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং জীব সাড়াপ্রদানে সক্ষম হয়, তাকে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক বলে।
উদাহরণ : হরমোন নিঃসরণ, রসস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি প্রভৃতি হল অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক। উদ্ভিদদেহের অভ্যন্তরে উৎপন্ন অক্সিন হরমোন, উদ্ভিদ বৃদ্ধির উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। রসস্ফীতি হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে বনচাঁড়াল উদ্ভিদের ত্রিফলক পাতার পার্শ্বীয় পত্রক দুটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্যায়ক্রমে ওঠা-নামা করে।
জেনে রাখো : অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক দ্বারা উদ্ভিদ চলনকে অটোনমিক চলন (Autonomic Movement) বলে।
প্রশ্ন 6. সাড়া (Response) বলতে কী বোঝো?
উত্তর : বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের উপস্থিতিতে জীবদেহে উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে যে-সমস্ত পরিবর্তনগুলি ঘটে, তাদের বহিঃপ্রকাশকে সাড়া বা রেসপন্স বলে। যেমন— আলোর উৎসের গতিপথের দিকে উদ্ভিদের বর্ধনশীল কাণ্ডের বৃদ্ধিজনিত বক্রচলন।
প্রশ্ন 7 .উদ্দীপক ও উদ্দীপনার সম্পর্ক কী ?
উত্তর : পরিবেশের যেসব প্রভাবকের কারণে জীব বিভিন্ন উত্তেজনায় সাড়া দেয়, তাদের বলে উদ্দীপক (Stimulant)। জীবদেহের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তনের প্রভাবে জীবদেহে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তাকেই বলে উদ্দীপনা (Stimulus)।
উদ্দীপকের উপস্থিতিতেই সমস্ত জীবদেহে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং উদ্দীপনার মাধ্যমেই জীব পরিবেশে সাড়াপ্রদানের দ্বারা সংবেদনশীলতা বা উত্তেজিতা (Irritability) প্রকাশ করে। অর্থাৎ,উদ্দীপক হল কারণ এবং উদ্দীপনা হল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও সংবেদনশীলতা হল তার ফলাফল।
জেনে রাখো: যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও পরিবেশগত উদ্দীপকের উদাহরণ : যান্ত্রিক উদ্দীপক : ধর্ষণ, স্পর্শ, চাপ। রাসায়নিক উদ্দীপক: হরমোন, Ca2+। পরিবেশগত উদ্দীপক : আলো, উষ্ণতা, শৈত্য প্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত।
প্রশ্ন 8 .উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বা গমন বলতে কী বোঝো?
উত্তর : স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ দেহ বা উদ্ভিদ দেহাংশ বা কোশ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার ঘটনাকে সামগ্রিক চলন বা গমন বলে। যেমন— আলোর উৎসের গতিপথ ও তীব্রতা অনুসারে জলজ শৈবাল ক্ল্যামাইডোমোনাসের স্থানান্তরিত হওয়া, ফার্নের শুক্রাণুর ম্যালিক অ্যাসিড দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হওয়া প্রভৃতি। সামগ্রিক চলন বা গমন দু প্রকার। যথা— স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন ও আবিষ্ট সামগ্রিক চলন।
প্রশ্ন 9 .স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন (Spontaneous Movement of Locomotion) কাকে বলে?
উত্তর : উদ্ভিদের যে প্রকার সামগ্রিক চলনে এককোশী উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ কোশের প্রোটোপ্লাজম স্বেচ্ছায় বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সামগ্রিক চলন বলে।
Advanced Studies স্বতঃস্ফূর্ত সামষ্টিক চলনের প্রকারডেন : o প্রোটোপ্লাজমীয় চলন বা সাইক্লোসিস (Cyclosis) : এক বা একাধিক কোশগহ্বরকে বেষ্টন করে প্রোটোপ্লাজমের ঘূর্ণনকে প্রোটোপ্লাজমীয় চলন বা সাইক্লোসিস বলে। এটি দুইভাবে সম্পন্ন হয়—
(i) রোটেশন বা প্রবাহগতি (Rotation) : এক্ষেত্রে একটিমাত্র কোশগহ্বরকে বেষ্টন করে একই দিকে প্রোটোপ্লাজম ঘুরতে থাকে। যেমন— পাতাশ্যাওলার কোশ। কোশারে নিউক্লিয়াস প্রোটোপ্লাজমের রোটেশন
(ii) সার্কুলেশন (Circulation) : এক্ষেত্রে একাধিক কোশগহ্বরের প্রতিটিকে বেষ্টন করে প্রোটোপ্লাজম ভিন্ন ভিন্ন দিকে ঘুরতে থাকে। যেমন- কুমড়ো গাছের কান্ডের রোম। কোশগর নিউক্লিয়াস প্রোটোপ্লাজমের সার্কুলেশন ও
ফ্ল্যালোরি চলন (Flagellary movement) : নিম্নশ্রেণির এককোশী শৈবাল যেমন- ক্ল্যামাইডোমোনাস ফ্ল্যাজেলার আন্দোল দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্থানান্তরিত হয়।
3.সিলিয়ার চলন (Ciliary movernent) : নিম্নশ্রেণির কয়েকটি শৈবাল বিশেষত নীলাভ সবুজ শৈবাল সিলিয়ার আন্দোলন দ্বারা স্থানান্তরিত হয়। o
4. অ্যামিনোড চলন (Amoeboid movement) মিক্সোমাইসিটিস নামক ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ অ্যামিবার ন্যায় ক্ষণপদ গঠন করে সামগ্রিক চলন সম্পন্ন করে। 10 আবিষ্ট সামগ্রিক চলন (Induced Movement of locomotion) কাকে বলে? উত্তর কোনো উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ অঙ্গের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন যখন বহিস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে হয়, তখন তাকে আবিষ্ট সামগ্রিক চলন বলে। যেমন- ট্যাকটিক চলন।
প্রশ্ন 11 .বক্ৰচলন ( Movement of curvature) কাকে বলে?
উত্তর : বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের উপস্থিতিতে অথবা কাণ্ড বা শাখার অগ্রভাগ এবং মূলের অগ্রভাগ বৃদ্ধির ফলে উন্নত উদ্ভিদ অঙ্গে যে সঞ্চালন ঘটে, তাকে বক্রচলন বলে। এই প্রকার চলনের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গ নানাভাবে বেঁকে যায়, তাই একে বক্রচলন বলে। এই চলন দু-প্রকার। যথা— স্বতঃস্ফূর্ত বক্রচলন ও আবিষ্ট বচলন।
প্রশ্ন 12. স্বতঃস্ফূর্ত রক্ৰচলন (Spontaneous movement of curvature) কাকে বলে?
উত্তর: উদ্ভিদের যে বচলন স্বেচ্ছায় বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে ঘটে, তাকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্ৰচলন বলে। এই চলন দু-প্রকার। যথা— বৃদ্ধিজ চলন ও প্রকরণ চলন।
প্রশ্ন 13 . আবিষ্ট ক্ৰচলন (Induced movement of curva- ture) কাকে বলে ?
উত্তর: উদ্ভিদ অঙ্গের যে বক্রচলন বহিস্থ উদ্দীপকের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে হয়, তাকে আবিষ্ট বজ্রচলন বলে। যেমন— ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলন।
প্রশ্ন 14. ট্যাকটিক চলনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: ট্যাকটিক চলনের বৈশিষ্ট্য : এই প্রকার চলনে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন ঘটে। ও ক্ল্যাজেলা, সিলিয়া ইত্যাদি এই প্রকার চলনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। ও উদ্দীপকের তীব্রতা ও গতিপথ উভয়ের প্রভাবেই ট্যাকটিক চলন ঘটে। O ট্যাকটিক চলনে উদ্ভিদ হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই। ও এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গোর কোনো বৃদ্ধি ঘটে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এককোশী উদ্ভিদ (যেমন—ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস) এবং উদ্ভিদের জননকোশে এই চলন পরিলক্ষিত হয়।
15 | ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর : ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্য : এই প্রকার চলনে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না। ও উদ্দীপক (আলো, অভিকর্ষ, জল)-এর উৎসের গতিপথের অনুকূল বা প্রতিকূলে এই চলন সংঘটিত হয়। ও ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত বক্রতা ঘটে। ও অক্সিন হরমোন ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। ও এই ধরনের চলন উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের অপরিণত বর্ধনশীল অংশে যেমন— মূল, কাণ্ড, পাতা ও শাখা প্রশাখার ক্ষেত্রে দেখা যায়।
প্রশ্ন 16 . ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য : এই প্রকার চলনে উদ্ভিদের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না। ও এই প্রকার চলন বহিস্থ উদ্দীপকের বজ্রচলন ঘটে। ও সাধারণত পরিণত উদ্ভিদ অঙ্গে এই প্রকার চলন দেখা যায়। তীব্রতা অনুসারে ঘটে। ও ন্যাস্টিক চলনে অক্সিন হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই। সাধারণত উদ্ভিদ অঙ্গে রসস্ফীতি তারতম্যজনিত
প্রশ্ন 17 . ট্রপিক চলনের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর : ট্রপিক চললের দুটি গুরুত্ব হল-
1.জল ও খনিজ লবণ শোষণ : পজিটিভ হাইড্রোট্রপিক চলনের ফলে মূল মাটির নীচের জলের উৎসের দিকে বর্ধিত হয় এবং জল ও খনিজ লবণ শোষণ করে।
2. আলো ও বাতাসের সন্ধান : উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান আলো ও বাতাস পাতা ও বিটপের অন্যান্য অংশ দ্বারা সংগৃহীত হয়। মাটির ওপরে উদ্ভিদের কাণ্ড, শাখাপ্রশাখা, পাতা প্রভৃতি অঙ্গের বিস্তার লাভে সাহায্য করে পজিটিভ ফোটোট্রপিজম।
প্রশ্ন 18 .প্রকরণ চলন বা রসস্ফীতিজনিত চলন ( Movement of variation) কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রকরণ চলন ( Movement of variation) : কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের পরিণত অঞ্চলে যে চলন হয়, তাকে প্রকরণ চলন বলে।
উদাহরণ : বনচাঁড়াল উদ্ভিদে (ভারতীয় টেলিগ্রাফ উদ্ভিদ, Desmodium gyrans) তিনটি পত্রকযুক্ত যৌগিকপত্র দেখা যায়। এই পাতার মাঝখানের পত্রকটি খুবই বড়ো এবং সোজা থাকে। কিন্তু পার্শ্বীয় পত্রকদুটি খুব ছোটো হয়। দিনের বেলা পার্শ্বীয় পত্রকদুটি ক্রমাগত ওঠানামা করতে থাকে। শীর্ষ পত্রকের কোনো স্থান পরিবর্তন ঘটে না। পত্রকবৃত্তের কোশগুলির রসস্ফীতির (Turgidity) জন্য পত্রকগুলি উপরে ওঠে এবং রসশৈথিল্যের (Flaccidity) জন্য নীচে নামে। এই জন্য একে রসস্ফীতিজনিত চলন- ও বলা হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : বনচাড়ালের দুটি পার্শ্বপাতার চলনের কারণ কী?
প্রশ্ন 19. লজ্জাবতীর পাতার স্পর্শব্যপ্তি বা সিসমোন্যাস্টিক চলনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লজ্জাবতীর যৌগিক পাতার পত্রকগুলি স্পর্শে বা বায়ুপ্রবাহের দ্বারা মুড়ে যায় এবং নুইয়ে পড়ে। এর কারণ হল প্রতিটি পত্রকের গোড়ায় অবস্থিত পালভিনাস (Pulvinus) কোশে রসস্ফীতির তারতম্য।
ব্যাখ্যা : 1.লজ্জাবতীর পাতায় স্পর্শ অনুভূতি একটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করে যা দ্রুত (প্রায় 0.075 সেকেন্ড) পালভিনাস কোশে সঞ্চালিত হয়। ও
2 . উদ্দীপনা পৌঁছানো মাত্র পালভিনাস কোশ থেকে K+ আয়ন ও জল বেরিয়ে আসে। ফলে কোশে রসস্ফীতিজনিত চাপ কমে যায় ও পত্রকগুলি মুড়ে গিয়ে নুইয়ে পড়ে।
প্রশ্ন 20. কেন লজ্জাবতী পাতার চলন লজ্জাবতীর কাণ্ডের চলন থেকে আলাদা?
উত্তর : লজ্জাবতীর পাতায় স্পর্শ বা আঘাতের প্রভাবে রসস্ফীতি চাপের পার্থক্য ঘটে, ফলে পাতা বৃত্তসহ নীচের দিকে নুইয়ে যায়। একে হ্যাপ্টোন্যাস্টিক চলন বলে। অন্যদিকে, লজ্জাবতীর কাণ্ড আলোর গতিপথের দিকে বৃদ্ধিজ বক্রচলন ঘটায়। একে ফোটোট্রপিক চলন বলে।
অনুরূপ প্রশ্ন : স্পর্শকাতর উদ্ভিদের পাতা এবং কাণ্ডের চলনের কী পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ?
প্রশ্ন 21. নিদ্ৰাচলন (Sleeping movement) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: কিছু কিছু উদ্ভিদের যৌগিক পাতার পত্রকগুলি তাপ ও আলোর অধিক তীব্রতার প্রভাবে দিনেরবেলায় খুলে যায় এবং সূর্যাস্তের পর তাপমাত্রা ও আলোর তীব্রতা হ্রাস পেলে মুড়ে যায়। এই প্রকার নিকটিন্যাস্টিক চলনকে নিদ্রাচলন বলে। ২
উদাহরণ : আমরুল, শুশনি, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতায় নিদ্ৰাচলন দেখা যায়। |
জেনে রাখো : পত্রমূলের ভিতর স্ক্লেরেনকাইমা ও কোলেনকাইমা কোশস্তরে উদ্ভিদের রসস্ফীতি চাপের তারতম্যের জন্য পাতা বন্ধ হয় এবং খোলে। এক্ষেত্রে উদ্ভিদের জৈব ঘড়ি (Biological Clock) এবং জৈবিক ছন্দ (Circadian Rhythm)-এর বিশেষ ভূমিকা বর্তমান।
প্রশ্ন 22 .উদ্ভিদ মূলের মাটির নীচে যাওয়া ও উদ্ভিদ কাণ্ডের মাটির উপরে বেড়ে ওঠা কি একই প্রকার চলনকে নির্দেশ করে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: উদ্ভিদ মূলের মাটির নীচে যাওয়া ও উদ্ভিদ কাণ্ডের মাটির উপরে বেড়ে ওঠা দুটি ভিন্ন চলনকে নির্দেশ করে।
1. মাটির নীচে বর্ধিত মূলে পজিটিভ জিওট্রপিজম ও পজিটিভ হাইড্রোট্রপিজম এবং
2. মাটির ওপরে বর্ধিত কাণ্ডে পজিটিভ ফোটোট্রপিজম দেখা যায়।
প্রশ্ন 23 . টবসহ একটি চারাগাছকে শুইয়ে দিলে কোন্ অংশ আলোর দিকে ও কোন্ অংশ অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পাবে ?
উত্তর: টবসহ একটি চারাগাছকে অনুভূমিকভাবে শুইয়ে দিলে @ গাছের কাণ্ড অংশ আলোর দিকে অর্থাৎ, ধনাত্মক ফোটোট্রপিক
চলনের ফলে সোজা হয়ে উপরের দিকে উঠতে চেষ্টা করবে। ও গাছের মূল অংশ অভিকর্ষের টানে ধনাত্মক জিওট্রপিক চলনের ফলে নীচের দিকে বৃদ্ধি পাবে। "ফোটোট্রনিক ও ট্রিপিক চলনের পরীক্ষা
প্রশ্ন 24 .আলোর প্রভাবে এককোশী শৈবাল ও উন্নত উদ্ভিদ অঙ্গে কি একই ধরনের চলন ঘটে? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর : আলোর প্রভাবে এককোশী শৈবাল ও উন্নত উদ্ভিদ অঙ্গে একই ধরনের চলন ঘটে না। এককোশী শৈবাল আলোর প্রভাবে উদ্দীপকের (আলো) উৎস মুখে গমন করে অর্থাৎ, শৈবালের ফোটোট্যাকটিক চলন ঘটে।
অন্যদিকে, উন্নত উদ্ভিদে উদ্দীপকের (আলো) গতিপথ অনুসারে অঙ্গের সঞ্চালন ঘটে। অর্থাৎ, কাণ্ডে ফোটোট্রপিক চলন বা দিগনির্ণীত বজ্রচলন ঘটে।
প্রশ্ন 25 . প্রাণী ও উদ্ভিদ সংবেদনশীলতার মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও দুটি বৈসাদৃশ্য নির্দেশ করো।
উত্তর : প্রাণী ও উদ্ভিদ সংবেদনশীলতার মাধ্য সাদৃশ্য- উভয়েই উদ্দীপনা অনুযায়ী সাড়া দিয়ে পরিবেশের সলো জীবদেহের সুষ্ঠু সম্পর্ক গড়ে তোলে।
বৈসাদৃশ্য - 1. প্রাণীদেহে সংবেদনশীলতা দ্রুত ঘটে কিন্তু উদ্ভিদদেহে সংবেদনশীলতা ধীরে ঘটে। 2.প্রাণী সংবেদনশীলতায় প্রাণীদেহের পেশি, গ্রন্থি প্রভৃতি অংশগ্রহণ করে। কিন্তু উদ্ভিদ সংবেদনশীলতায় কাণ্ড, মূল, ফুল, পাতা প্রভৃতি অা অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন 26. উদ্ভিদদেহে একটি ধীর চলন ও একটি দ্রুত চলনের উদাহরণ দাও।
উত্তর ও ধীর চলন : কাণ্ডের আলোর দিকে বৃদ্ধিজ চলন। ও দ্রুত চরন : লজ্জাবতী পাতার স্পর্শ বা আঘাতের ফলে রসস্ফীতি চাপের তারতম্যজনিত স্পর্শব্যাপ্তি বা সিসমোন্যাস্টিক (স্পর্শের ফলে) বা হ্যাপ্টোন্যাস্টিক (আঘাতের ফলে) চলন।
প্রশ্ন 27 .পুকুরের জল সূর্যোদয়ে সবুজ ও সূর্যাস্তের পর স্বচ্ছ হয় কেন ?
উত্তর : কারণ— পুকুরে উপস্থিত শৈবালগুলি সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় আলোর চাহিদা মেটাতে উপরের দিকে অর্থাৎ আলোর দিকে সাঁতার কেটে উঠে আসে, ফলে জলের রং সবুজ হয়ে। যায়। আবার সূর্যাস্তের পর আলোর তীব্রতা কমে যাওয়ায় শৈবালগুলি নীচের দিকে নেমে গেলে জল পুনরায় স্বচ্ছ হয়ে যায়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে শৈবালের ফোটোট্যাকটিক চলনের জন্য এরূপ হয়।
প্রশ্ন 28 .ক্ল্যামাইডোমোনাস-এর চলনকে গমন বলা যায়, কিন্তু জলের উৎসের দিকে মূলের চলনকে গমন বলা হয় না কেন ?
উত্তর : জলজ শৈবাল ক্ল্যামাইডোমোনাস তার গমনাঙ্গ ফ্ল্যাজেলার সঞ্চালনের মাধ্যমে জলে সাঁতার কেটে স্থান পরিবর্তন করে, অর্থাৎ গমন ঘটে, কিন্তু জলের উৎসের দিকে উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধিকে গমন বলা যায় না, কারণ এক্ষেত্রে উদ্ভিদ সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন করে না। বলা যাবে কি? না, কারণ এক্ষেত্রে কচুরিপানার স্থান পরিবর্তন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা
প্রশ্ন 29 .জলস্রোতের টানে কচুরিপানার ভেসে যাওয়াকে গমন
উত্তর : স্রোতের টানে কচুরিপানার ভেসে যাওয়াকে গমন বলা যায় না ,কারণ এক্ষেত্রে কচুরিপানার স্থান পরিবর্তন সতস্ফুর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে ঘটে না।
প্রশ্ন 30 .চলন প্রক্রিয়াটি গমনের ওপর নির্ভর করে না'- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রভাবে কোনো জীবের দেহের কোনো অংশ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করাকে বলে চলন। আবার, জীবের স্বেচ্ছায় বা উদ্দীপকের প্রভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করাকে বলে গমন।
সুতরাং, চলনের জন্য জীবদেহের বা জীব দেহাংশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না অর্থাৎ গমনের প্রয়োজন ঘটে না। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, 'চলন প্রক্রিয়াটি গমনের ওপর নির্ভর করে না'।
প্রশ্ন 31. পালভিনি (Pulvini) কী ?
উত্তর : বিভিন্ন সংবেদনশীল উদ্ভিদের পত্রবৃত্তের গোড়ায় প্যাড-এর মতো স্ফীত অংশ দেখা যায়। যেগুলি প্রচুর পরিমাণে জল ধারণ করে, তাদের পালভিনি (একবচনে–পালভাইনাস) বলে। পালভিনির অভ্যন্তরে রসস্ফীতিজনিত চাপের কারণে পালভিনিগুলি অত্যন্ত দৃঢ় হয় ও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন— লজ্জাবতী উদ্ভিদের পাতার পত্রকমূলের পালভিনিতে রসস্ফীতি চাপের জন্য পাতা খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু স্পর্শ করলে স্পর্শ উদ্দীপকের প্রভাবে পালভিনিতে রসশৈথিল্য ঘটে এবং পাতা নুইয়ে পড়ে।
প্রশ্ন 32 .পালভিনি উদ্ভিদেহে সাড়াপ্রদানের ঘটনা ধীরে ঘটে, প্রাণীদেহে তা দ্রুত ঘটে কীভাবে?
উত্তর : উদ্ভিদদেহে কোনো স্নায়ুতন্ত্র নেই, তাই উদ্ভিদ উদ্দীপনায় ধীরে সাড়া দেয়। প্রাণীদেহে স্নায়ুতন্ত্র ও দ্রুত সংকোচন-প্রসারণক্ষম পেশি বর্তমান, তাই উদ্দীপনায় দ্রুত সাড়া দেয়।
No comments:
Post a Comment