পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ (Environment, its resources and their conservation): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ৫.১ |class 10 life science chapter 5.1 questions answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.নাইট্রোজেন চক্র (Nitrogen cycle) কাকে বলে? পরিবেশে নাইট্রোজেনের উৎসগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: নাইট্রোজেন চক্র (Nitrogen cycle): যে চক্রাকার পদ্ধতিতে বাস্তুতন্ত্রের সজীব ও জড় উপাদানগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন ও তার যৌগগুলি আবর্তিত হয় এবং পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষা করে, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।
নাইট্রোজেনের বিভিন্ন প্রকার উৎসগুলি হল- জীবদেহের বিভিন্ন প্রকার যৌগের, প্রধানত প্রোটিনের গঠনগত উপাদান হল— নাইট্রোজেন। পরিবেশের নাইট্রোজেনের উৎস হল মাটির নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগসমূহ এবং বাতাসের নাইট্রোজেন।
1.মাটির নাইট্রোজেনের উৎসগুলি হল-
(i) বিদ্যুৎক্ষরণের মাধ্যমে বায়ুর নাইট্রোজেনের বিভিন্ন প্রকার যৌগে রূপান্তর এবং ওই সকল যৌগের মাটিতে মিশ্রণ।
(ii) বিভিন্ন প্রকার নাইট্রোজেন স্থিতিকারী জীবাণু (যেমন— ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল) দ্বারা বাতাসের শৈবাল নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধকরণ। নাইট্রোজেন গ্রহণকারী
(iii) মাটিতে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত দেহাবশেষ ও প্রাণীর মলমূত্রের মিশ্রণ।
(v) কৃষিজমির মাটিতে নাইট্রোজেনঘটিত বিভিন্ন প্রকার সারের প্রয়োগ।
2. বাতাসের নাইট্রোজেনের উৎসগুলি হল— মাটিতে বসবাসকারী নাইট্রোজেন মোচনকারী বা ডিনাইট্রিফাইং ফাকটেরিয়া (Denitrifying bacteria) দ্বারা মাটির নাইট্রেট যৌগ বিশ্লেষিত হয়ে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনে রূপান্তরিত হয় এবং এই মুগ্ধ নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
প্রশ্ন 2. নাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপগুলি কী কী? নাইট্রোজেন চক্রটি একটি শব্দচিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর:লাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপগুলি হল— 1. নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধকরণ। 2. মাটির নাইট্রোজেনের জীবদেহে প্রবেশ। 3. জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের পুনরায় মাটিতে প্রবেশ। 4. নাইট্রোজেন মোচন বা মাটির নাইট্রোজেন
নাইট্রোজেন চক্রের শব্দচিত্র : বায়ুমণ্ডলের একটি প্রধান উপাদান হল নাইট্রোজেন। এই নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রোটিন, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি যৌগরূপে এবং মাটিতে বিভিন্ন নাইট্রোজেন লবণরূপে অবস্থান করে।
বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন বিভিন্ন নাইট্রোজেন স্থিতিকারী জীবাণু দ্বারা মাটিতে মেশে এবং নাইট্রেট যৌগ সৃষ্টি করে। উদ্ভিদেরা এই নাইট্রোজেন শোষণ করে ও নাইট্রোজেন জাতীয় যৌগ গঠন করে। উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রাণীরা তাদের দৈহিক নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। প্রাণীর রেচন পদার্থের দ্বারা অথবা মৃত প্রাণীদেহ বা উদ্ভিদদেহ থেকে নাইট্রোজেন পুনরায় মাটিতে ফিরে আসে। পরবর্তীকালে নাইট্রোজেন মোচন পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়।
প্রশ্ন 3. বিদ্যুৎস্ফুরণ এবং বৃষ্টিপাত দ্বারা কীভাবে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ ঘটে? অথবা, ভৌত রাসায়নিক পদ্ধতিতে কীভাবে নাইট্রোজেনের স্থিতিকরণ ঘটে ?
উত্তর: ভৌত রাসায়নিক পদ্ধতি (Physio-Chemical method) যেমন – বিদ্যুৎস্ফুরণ এবং বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বাতাসের নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন প্রকার যৌগ বা অক্সাইড তৈরি হয়।
1. আকাশে যখন বিদ্যুৎস্ফুরণ হয়, তখন বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড গঠন করে। N2 + O2 = 2NO (নাইট্রিক অক্সাইড) ও
2. এই নাইট্রিক অক্সাইড আবার অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জারিত হয় ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গঠন করে। 2NO + O2 = 2NO2 (নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড)
3. এই নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রাস ও নাইট্রিক অ্যাসিডে পরিণত হয়ে মাটিতে নেমে আসে। 2NO2 + H2O → HNO2 + HNO3 [নাইট্রাস অ্যাসিড ] [নাইট্রিক অ্যাসিড ]
4. বৃষ্টির জলের সঙ্গে এই দুই প্রকার অ্যাসিড (HNO2 এবং HNO3) মিশ্রিত হয়ে মাটিতে এসে পৌঁছোনোর পর বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ (যেমন— Ca, Na ইত্যাদি) বা খনিজ লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রেট যৌগ (ক্যালশিয়াম নাইট্রেট বা পটাশিয়াম নাইট্রেট) তৈরি করে। 2HNO3 + CaCO3 Ca(NO3)2 + CO2 + H2O [ক্যালশিয়াম নাইট্রেট]
প্রশ্ন 4. নাইট্রোজেন স্থিতিকরণে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা বর্ণনা করো। অথবা, জৈব পদ্ধতির মাধ্যমে কীভাবে নাইট্রোজেনের স্থিতিকরণ ঘটে তা বর্ণনা করো।
উত্তর: নাইট্রোজেন স্থিতিকারী জীবাণুর দ্বারা জৈব পদ্ধতিতে পরিবেশে নাইট্রোজেন আবদ্ধ হয়। এই প্রক্রিয়া দু-ভাবে সম্পন্ন হয়।
1. স্বাধীনজীবী জীবাণুর দ্বারা : মাটিতে বসবাসকারী কিছু নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া, যেমন— ক্লসট্রিডিয়াম (Clostridium), অ্যাজোটোব্যাকটর (Azotobacter) প্রভৃতি এবং নীলাভ-সবুজ শৈবাল, যেমন— নস্টক (Nostoc), অ্যানাবিনা (Anabaena) বাতাস থেকে সরাসরি মুক্ত নাইট্রোজেন গ্রহণ করে নিজেদের দেহে বিভিন্ন নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ তৈরি করে। এই সকল ব্যাকটেরিয়া ও শৈবালের মৃত্যুর পর তাদের দেহের নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগগুলি মাটিতে মেশে ৷
2. মিথোজীবী জীবাণুর দ্বারা : বিভিন্ন শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদ (Leguminosae plants) যেমন— ছোলা, মটর, মুশুর, শিম, ধে প্রভৃতির মূলে গুটি বা অর্বুদ (Nodules) তৈরি হয়। এই অর্বুদগুলিতে রাইজোবিয়াম (Rhizo- bium) নামক এক প্রকার মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা বাতাস থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে তার খানিকটা আশ্রয়দাতা উদ্ভিদকে দেয় এবং কিছুটা নিজের দেহে নাইট্রোজেনজাতীয় যৌগ গঠনের কাজে লাগায় ।
অনুরূপ প্রশ্ন : নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণে মুক্তজীবী ও মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকাগুলি কী কী ?
প্রশ্ন 5. নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে নাইট্রেট লবণরূপে আবদ্ধ হয় এবং মৃত্তিকার নাইট্রেট লবণ আবার বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রোজেনে রূপান্তরিত হয় ও বায়ুতে ফিরে আসে। এই চক্রাকার আবর্তনের ঘটনাটি বর্ণনা করা হল—
1• নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া :
(i) স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা : অ্যাজোটোব্যাকটর (Azotobacter), ক্লসট্রিডিয়াম (Clostridium) প্রভৃতি স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন দেহে আবদ্ধ করে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলি মারা গেলে এদের দেহের নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায় ও নাইট্রোজেনকে মাটিতে মুক্ত করে ।
(ii) মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা : শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের (ছোলা, মটর, শিম ইত্যাদি) মূলে গুটি বা অর্বুদ সৃষ্টিকারী রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া বাতাস থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন গ্রহণ করে আশ্রয়দাতা উদ্ভিদকে দান করে ও বাকিটা নিজের দেহগঠনে কাজে লাগায় এবং এদের মৃত্যুর পর দেহস্থিত নাইট্রোজেন মাটিতে মেশে। এই নাইট্রোজেনকে নাইট্রেট লবণরূপে উদ্ভিদ পুনরায় শোষণ করে।
(iii) অ্যামোনিফাইং ও নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা : বিভিন্ন জৈববস্তু অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অ্যামোনিয়াতে পরিণত হয়। একে অ্যামোনিফিকেশন বলে। ব্যাসিলাস, মাইক্রোকক্কাস নামক অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
এই অ্যামোনিয়া প্রথমে নাইট্রাইট এবং পরে নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। এই ঘটনাকে নাইট্রিফিকেশন (Nitrification) বলে। এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে নাইট্রোসোমোনাস, নাইট্রোকক্কাস নামক নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ।
2. মাটির নাইট্রোজেন যৌগের অপসারণ : মাটিতে অবস্থিত নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ বিভিন্ন ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে কয়েকটি অন্তবর্তী যৌগ গঠনের মাধ্যমে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনে পরিণত হয়। এই ঘটনাকে নাইট্রোজেন মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন বলে। সিউডোমোনাস, থিয়োব্যাসিলাস নামক ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। বিক্রিয়া : NO3 NO₂ NO (নাইট্রেট) (নাইট্রাইট) (নাইট্রিক অক্সাইড) 2NO + 2H+ + 2e N2O + H2O (নাইট্রাস অক্সাইড) N2O + 2H+ + 2e → N2 + H2O (গ্যাসীয় |
জেনে রাখো : কৃষিক্ষেত্রে দুটি ফসল চাষের মাঝে শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের চাষ করা হয়। এই সকল উদ্ভিদ মাটিতে নাইট্রেট লবণের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন 6. মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নাইট্রোজেন চক্রকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের প্রভাবে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হয়, যেমন-
1. কৃষিজমিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার (যেমন- ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াযুক্ত সার ইত্যাদি) প্রয়োগ করার ফলে জমির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া অব্যবহৃত অতিরিক্ত সার বা নাইট্রেট লবণ লিচিং পদ্ধতিতে চুঁইয়ে চুইয়ে মাটির অভ্যন্তরের ভৌম জলস্তরে পৌঁছে যায় এবং মুক্ত নাইট্রোজেন ও নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের ভারসাম্য বিনষ্ট করে।
2. সিক্ত মাটিতে অতিরিক্ত নাইট্রেট জাতীয় যৌগ থাকলে ডিনাইট্রিফাইং অণুজীবের দ্বারা ডিনাইট্রিফিকেশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), নাইট্রিক অক্সাইড (NO), গ্যাসীয় নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে মেশে। ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে নাইট্রোজেন চক্রের সাম্যতা বিঘ্নিত হয়।
3. বিভিন্ন কলকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে নানা প্রকার নাইট্রোজেনের অক্সাইড সৃষ্টি হয়, যেগুলি বাতাসের নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে অ্যাসিডে পরিণত হয় ও অ্যাসিড বৃষ্টিরূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমে আসে। এই অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে কৃষিজমির মাটিতে N2 এর পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটে, ফলে নাইট্রোজেন চক্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
4. অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন জীবনে যে-সকল জৈব পদার্থ ও বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয় তা জলাশয়ে পড়ে এবং সেই সকল জৈব ও বর্জ্য পদার্থ বিশ্লিষ্ট হয়ে জলে N2-এর স্বাভাবিক মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে জলজ শৈবাল মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পায় (ইউট্রোফিকেশন) যার প্রভাব পড়ে নাইট্রোজেন চক্রে।
অনুরূপ প্রশ্ন : 'মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্রা ব্যাহত হচ্ছে— যথার্থতা প্রমাণ করো।
প্রশ্ন 7. মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে পরিবেশের কী কী ক্ষতি হয় ?
উত্তর: মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্য মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে নাইট্রোজেন চক্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা পরিবেশের উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব ফেলে। এর ফলে পরিবেশের যে যে ক্ষতি হয় তা হল—
1• উদ্ভিদের সংখ্যা হ্রাস : সাধারণত নাইট্রোজেন জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার আগাছার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জমিতে চাষ করা উদ্ভিদের সংখ্যা হ্রাস পায় ৷
2. জমির প্রকৃতির পরিবর্তন : জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকলে তা জমিতে উপস্থিত বিভিন্ন মৌল, যেমন— ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতির পরিমাণ হ্রাস করে।
3. ইউট্রোফিকেশন (Eutrophication) : কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত অতিরিক্ত No ঘটিত সার, গৃহস্থলীর কাজে সৃষ্ট বিভিন্ন নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য জলাশয়ে মিশে জলে N2-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে এই অতিরিক্ত N2 ঘটিত যৌগকে ব্যবহারের জন্য UREA অসংখ্য শৈবাল জন্মায় একে অ্যালগাল রুম (Algal bloom) বলে। ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং জলজ জীব-এর মৃত্যু ঘটে। জলাশয়ের মধ্যে মৃত জীবের পচন রাসায়নিক সারের ব্যবহার ঘটে, ব্যাপক হারে দূষণ সৃষ্টি করে। এই ঘটনাকে ইউট্রোফিকেশন বলে। এইভাবে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। AIS MOSTURE BOL 50 ও
4. অম্লবৃষ্টি (Acid rain) : পরিবেশে অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড জলীয়বাষ্পের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টিরূপে জলাশয়ে পড়ে। ফলে জল আম্লিক হয়ে যায়, জলজ জীব মারা যায় এবং বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, অপরদিকে অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মার্বেল পাথরের তৈরি স্মৃতিসৌধের ক্ষয় ঘটে। এইভাবে N2 ঘটিত যৌগ পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মাটি আম্লিক হয়ে পড়ে এবং উদ্ভিদের ক্ষতি হয়।
5. বিশ্ব উন্নায়ন (Global warming) : অ্যাসিড তৈরির কারখানা থেকে নির্গত অ্যাসিড বাষ্পে; পেট্রোলিয়াম শোধনাগার থেকে জ্বালানি তেল ব্যবহৃত মোটর যান থেকে বিভিন্ন নাইট্রোজেনঘটিত অক্সাইড [যেমন— নাইট্রিক অক্সাইড (NO), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) ইত্যাদি] উৎপন্ন হয় যারা হল গ্রিন হাউস গ্যাস। এগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠের উত্তাপ বৃদ্ধি করে। তাছাড়া, NO, পারক্সি অ্যাসাইল নাইট্রেট (PAN) আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা (Photo Chemical Smog) সৃষ্টি করে পরিবেশকে দূষিত করে।
অনুরূপ প্রশ্ন : নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে যেসব ঘটনা ঘটছে তার যে-কোনো প্রধান তিনটি ঘটনা ব্যাখ্যা করো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রের বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: জৈন ভূ-রাসায়নিক চাকুর বৈশিষ্ট্য : 1.এটি একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া যার দ্বারা জড় পরিবেশ ও জীবজ পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন উপাদানের (C, N, O, H, Ca, P, S প্রভৃতি) আবর্তন ঘটে।
2. সাধারণত জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রের চারটি পর্যায় থাকে, যেমন— (i) জড় পরিবেশে আবর্তন যা মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়া ও ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘটে। (ii) জড় পরিবেশ থেকে জীবদেহে প্রবেশ যা মূলত পুষ্টি ও শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে ঘটে। (iii) জীবদেহে আবর্তন যা মূলত খাদ্য-খাদক সম্পর্কের মাধ্যমে ঘটে। (iv) জীবদেহ থেকে জড় পরিবেশে আবর্তন যা মূলত রেচন, শ্বসন, ক্ষরণ এবং মৃত্যুর মাধ্যমে ঘটে।
3. জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রের দুটি দশা, একটি হল—রিজার্ভার পুল (Reservoir pool) ও অপরটি হল সাইক্লিক্যাল পুল (Cyclical pool) I
প্রশ্ন 2. জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রকে পরিপোষক চক্র বলে কেন?
উত্তর: যে-সমস্ত মৌলিক উপাদানগুলি জীবের দেহ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তাদের পরিপোষক (Nutrients) বলে। যেমন- C, H, O, N, Mg, Ca, Na, Fe, S, P প্রভৃতি। জীব এই সমস্ত মৌলগুলি পরিবেশ থেকে গ্রহণ করে। পৃথিবীর ভূত্বকে, শিলাস্তরে, হাইড্রোস্ফিয়ারে, বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত এই সমস্ত পরিপোষক মৌলগুলি চক্রাকার আবর্তনের মাধ্যমে জীবদেহে প্রবেশ করে এবং পুনরায় জীবদেহ থেকে নির্গত হয়ে পরিবেশে ফিরে আসে ও পৃথিবীতে জড় ও জীবের পারস্পরিক অস্তিত্বকে অক্ষুন্ন রাখে। এজন্য জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রকে পরিপোষক চক্র (Nutrient cycle) বলে।
প্রশ্ন 3. মাটির নাইট্রোজেনের কীভাবে জীবদেহে আত্মীকরণ (Assimilation) ঘটে ?
উত্তর: উন্নত উদ্ভিদ বা প্রাণীর কোশে নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী উৎসেচক নাইট্রোজিনেজ (Nitrogenase) না থাকায় উন্নত উদ্ভিদ বা প্রাণীরা বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে সরাসরি কোশে আবদ্ধ করতে পারে না। এই কারণে- 1. উদ্ভিদেরা মাটির নাইট্রেট (NO3) লবণ শোষণ করে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। 2. পতঙ্গভুক উদ্ভিদেরা পতঙ্গের দেহাবশেষ থেকে নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ শোষণ। করে। 3. প্রাণীরা উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণ করে নিজ দেহে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।
প্রশ্ন 4. প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ ঘটে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: প্রাকৃতিক উপায় দুইপ্রকার পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ ঘটে—
1. ভৌত-রাসায়নিক উপায়ে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ : বিদ্যুৎস্ফুরণ ও বৃষ্টিপাতের ফলে বাতাসের নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2) গঠনের মাধ্যমে নাইট্রেট যৌগ গঠন করে।
2.জীবজ উপায়ে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ : মাটিতে উপস্থিত স্বাধীনজীবী জীবাণু যেমন—ক্লসট্রিডিয়াম (ব্যাকটেরিয়া), নস্টক (নীলাভ-সবুজ শৈবাল) এবং শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে উপস্থিত রাইজোবিয়াম নাম মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেনকে সরাসরি আবদ্ধ করে নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ গঠন করে মাটিতে মেশায়।
প্রশ্ন 5. নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্ব বা তাৎপর্যগুলি লেখো।
উত্তর: নাইট্রোজেন চক্রের তাৎপর্য :
1.নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
2. জীবদেহে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA),উৎসেচক প্রভৃতি জৈব উপাদানগুলি নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ করে এবং এই প্রকার জৈব যৌগের সংশ্লেষ ঘটায়।
3. জীবদেহে রেচনের মাধ্যমে উৎপন্ন ক্ষতিকারক পদার্থগুলিতে যেমন—ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, উপক্ষার ইত্যাদিতে নাইট্রোজেন বর্তমান থাকে। নাইট্রোজেনঘটিত এই সকল রেচন পদার্থ জীবদেহ থেকে অপসারিত হয় ও পরিবেশে নাইট্রোজেন পুনরায় ফিরে যায়।
প্রশ্ন 6. বিশ্ব উন্নায়নে (Global Warming) নাইট্রোজেনের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিশ্ব উষায়ান নাইট্রোজেনের প্রভাব :
1. নাইট্রাস অক্সাইড (NO) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিন হাউস গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের (CO2) থেকে N2O অনেক কম মাত্রায় থাকে। তবুও NO-এর বিশ্ব উন্নায়ন ক্ষমতা CO2-এর থেকে 300গুণ বেশি। ফলে, অল্প পরিমাণ N2O, CO2-এর থেকে অনেক বেশি মাত্রায় আবহাওয়ার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
2. বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত ওজোন (O3) স্তর বিনষ্ট করে N2O বিশ্ব উন্নায়নে প্রভাব বিস্তার করে।
3. শস্যক্ষেত্রে নাইট্রোজেনযুক্ত সার ব্যবহারের ফলে মিথেন (CH4) উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মিথেন গ্যাসও বিশ্ব উন্নায়ন বৃদ্ধি করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্ৰ (Bio-geochemical cycle) কাকে বলে?
উত্তর: যে চক্রাকার পথে জীবদেহ গঠনকারী বিভিন্ন মৌলগুলি (C, H, O, N, P, S, Ca প্রভৃতি) পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে আবর্তিত হয়, তাকে জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র বলে।
প্রশ্ন 2. জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: জৈন ভূ-রাসায়নিক চাকুর গুরুত্ব :
1. জীবকোশের প্রাথমিক সাংগঠনিক উপাদানগুলির (C, O, N, P, Ca, S ইত্যাদি) মাধ্যমে জীবদেহের প্রোটোপ্লাজম গঠিত হয় এবং কার্যকরী হয় এবং উপাদানগুলির ঘাটতি ঘটে না ।
2. প্রয়োজনীয় মৌলগুলি পরিবেশ থেকে জীব সংগ্রহ করে এবং বিয়োজকের মাধ্যমে মৌলগুলি জীবদেহ থেকে পরিবেশে ফিরে যায়।
3. জীবদেহ থেকে পরিবেশে এবং পরিবেশ থেকে জীবদেহে পর্যায়ক্রমিক আবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মৌলগুলির ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের গতিশীলতা বজায় থাকে।
প্রশ্ন 3. সাইক্লিক্যাল পুল (Cyclical Pool) কাকে বলে ?
উত্তর: যে-সকল রাসায়নিক বস্তু জীবের দেহগঠনে আবশ্যিক হওয়ায় পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে চক্রাকারে আবর্তিত হয়, তাদের সাইক্লিক্যাল পুল বা আবর্তন ভাঙার বলে।
প্রশ্ন 4. রিজার্ভার পুল (Reservoir Pool) কাকে বলে ?
উত্তর: যে-সকল রাসায়নিক পদার্থ জীবদেহ গঠনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারী ভূমিকা না নেওয়ায় তারা দীর্ঘদিন পরিবেশে সঞ্চিত থাকে, তাদের রিজার্ভার পুল বা সঞ্চিত ভাণ্ডার বলে।
প্রশ্ন 5. নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ(Nitrogen fixation) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন গ্যাসের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা জৈবিক প্রক্রিয়ার দ্বারা নাইট্রোজেনজাত যৌগে পরিণত হওয়া এবং মাটিতে সঞ্চিত হওয়ার পদ্ধতিকে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বলে।
প্রশ্ন 6. উদ্ভিদ কী কী রূপে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে?
উত্তর: উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি N, গ্রহণ করতে অক্ষম। তাই, মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি থেকে নাইট্রেট (NO3) এবং অ্যামোনিয়াম (NH +) আয়নরূপে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে।
প্রশ্ন 7. জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ (Biological Nitrogen Fixation) কাকে বলে ?
উত্তর: যে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া (ক্লসট্রিডিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটর), মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া (রাইজোবিয়াম) এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া (অ্যানাবিনা, নস্টক) নিজেদের দেহস্থিত নাইট্রোজিনেজ (Nitrogenase) উৎসেচকের সাহায্যে বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন (N2)-কে বিজারণের মাধ্যমে অ্যামোনিয়ায় পরিণত করে এবং কোশস্থ প্রোটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত করে, তাকে জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ বলে। বিক্রিয়া : N2 + 8e + নাইট্রোজিনেজ (নাইট্রোজেন) 8H+ 16 ATP 16 ADP 2NH3 + H2
প্রশ্ন 8. শিল্পজাত উপায়ে নাইট্রোজেনের স্থিতিকরণ বলতে কী বোঝায়? * Bidhannagar Govt High School '16
উত্তর: কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার নাইট্রোজেনঘটিত রাসায়নিক সার (ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম সালফেট ইত্যাদি) প্রয়োগ করে মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। এইভাবে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করাকে শিল্পজাত উপায়ে নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বলে।
প্রশ্ন 9. অ্যামোনিফিকেশন (Ammonification) কাকে বলে?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের রেচন পদার্থ এবং মৃতদেহের জটিল প্রোটিন যৌগগুলি অণুজীবের সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে। মৃত জীবদেহ ও রেচন পদার্থ ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস → অ্যামোনিয়া নামক অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া সাহায্যকারী অ্যামোনিফিকেশনে অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে।
প্রশ্ন 10. অ্যামোনিফাইং অণুজীব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ জৈব যৌগ থেকে অ্যামোনিয়া উৎপাদনে অর্থাৎ, অ্যামোনিফিকেশনে সাহায্যকারী অণুজীবদের অ্যামোনিফাইং অণুজীব বলে। ২. উদাহরণ-ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস (Bacillus mycoides), অ্যাকটিনোমাইসেটিস (Actinomycetes)।
প্রশ্ন 11. নাইট্রিফিকেশন (Nitrification) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে মৃত্তিকাস্থিত অ্যামোনিয়া অণুজীবের সাহায্যে বিশ্লিষ্ট হয়ে প্রথমে নাইট্রাইট (NO2) ও পরে নাইট্রেট (NO3) যৌগে পরিণত হয়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। বিক্রিয়া : 2NH4+ + 302 অ্যামোনিয়া নাইট্রোসোমোনাস 2NO2 + 2H2O + 4H+ (নাইট্রাইট) 2NO2 + O2 নাইট্রাইট নাইট্রোব্যাকটর 2NO3 (নাইট্রেট) নাইট্রাইট → নাইট্রেট অ্যামোনিয়া (NH,T) (NO2 ) (NO3) নাইট্রিফিকেশনে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াদের নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে।
প্রশ্ন 12. নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? উদাহরণ দাও ।
উত্তর: অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রেট যৌগে পরিণত করতে অর্থাৎ, ইট্রিফিকেশনে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াদের বলা হয় নাইট্রিফাইং নাকটেরিয়া। ২. উদাহরণ— নাইট্রোব্যাকটর (Nitrobacter sp.), াইট্রোসিসটিস (Nitrocystis sp.)।
প্রশ্ন 13. ডিনাইট্রিফিকেশন (Denitrification) কাকে বলে?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে নাইট্রেট যৌগ অণুজীবের ক্রিয়ায় বিশ্লিষ্ট হয়ে কিছু অন্তর্বর্তী যৌগ গঠনের মাধ্যমে নাইট্রোজেনে পরিণত হয় এবং পরিবেশে মুক্ত হয়, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে। সিউডোমোনাস →নাইট্রোজেন নাইট্রেট নামক ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ডিনাইট্রিফিকেশনে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াদের উনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে।
প্রশ্ন 14. ডিনাইটিই ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে। উদাহরন দাও।
উত্তর: নাইট্রেট যৌগ থেকে নাইট্রোজেন বিয়োজনে অর্থাৎ, ডিনাইট্রিফিকেশনে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াদের বলা হয় ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া। AP. উদাহরণ- সিউডোমোনাস ডিনাইট্রিফিক্যাল (Pseu domonas denitnificans), দিয়োব্যাসিলাস ডিনাইটিফিক্যান্স (Thiobacillus denitrificans) এবং মাইক্রোকক্কাস ডিনাই লিজি (Micrococcus denitrificans) |
প্রশ্ন 15. ডিনাইট্রিফিকেশনের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মাটিতে উপস্থিত নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগগুলি বিভিন্ন ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় বিজারণের মাধ্যমে নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। এর ফলে বায়ুতে নাইট্রোজেনের পরিমাণের ভারসাম্য রক্ষা হয় এবং জীবদেহে নাইট্রোজেন সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
প্রশ্ন 16. জীবদেহে নাইট্রোজেনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: জীবকোশ গঠনের প্রধান উপাদান হল প্রোটিন এবং এই প্রোটিনের প্রধান উপাদান হল নাইট্রোজেন। অর্থাৎ, জীবদেহের কোশ ও বিভিন্ন কোশীয় উপাদানগুলির গঠনের জন্য নাইট্রোজেন প্রয়োজন।
প্রশ্ন 17. ডায়াজোট্রফ (Diazotroph) কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে-সমস্ত জীব মূলত ব্যাকটেরিয়া বা আর্কিয়া জাতীয় প্রাণী পরিবেশের মুক্ত নাইট্রোজেনকে নিজ দেহে আবন্ধ করতে সক্ষম, তাদের ডায়াজোট্রফ বলে। AM উদাহরণ- রাইজোবিয়াম (Rhizobium leguminosa rum), anfim (Frankia sp.), terrefram (Azospi- nillum brasilense)।
প্রশ্ন 18. নাইট্রোজেন আত্তীকরণ (Nitrogen Assimilation ) কাকে বলে?
উত্তর: পরিবেশে উপস্থিত অজৈব নাইট্রোজেন বিভিন্ন অণুজীব (স্বাধীন মিথোজীবী এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া) দ্বারা মাটিতে (নাইট্রেট, অ্যামোনিয়াম আয়নরূপে) আবলা হয়। মুক্তিকাঙ্খিত এই নাইট্রোজেন উদ্ভিদ দ্বারা গৃহীত হয় এবং তা উদ্ভিদের প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে। উদ্ভিদস্থিত এই নাইট্রোজেন খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে পরভোজী জীবদেহে (যেমন— মানুষ) প্রবেশ করে এবং প্রাণীজ প্রোটিন গঠনে অংশগ্রহণ করে। এইভাবে বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনের জীবভরে প্রবেশ করে কোশীয় প্রোটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত হওয়াকে নাইট্রোজেন আত্তীকরণ বলে।
প্রশ্ন 19. পতাক উদ্ভিদের মৃত্যু হলে মাটিতে N, এর মাত্রা বাড়ার কারণ কী?
উত্তর: পতঙ্গভুক উদ্ভিদরা (সূর্যশিশির, কলশপত্রী) বাতাস থেকে মুক্ত No গ্রহণ করতে অক্ষম আবার, মৃত্তিকা থেকেও কোনোভাবে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে, এরা বিভিন্ন পোকামাকড়কে দেহে আবদ্ধ করে এবং তাদের থেকে বহিঃকোশীয় পরিপাকের মাধ্যমে N, সংগ্রহ করে। তাই এই প্রকার উদ্ভিদের মৃত্যুর পর মাটিতে Ng-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন 20. নাইট্রোজেন কীভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটাতে পারে ?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডের পরিমাণও বেড়ে যায়। যথা— N2O, NO2 ইত্যাদি গ্রিন হাউস প্রভাব দ্বারা পরিবেশে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটায়, এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের সময় উক্ত অক্সাইডগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়। ফলে, বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ও হ্রদের জলের এবং মাটির অম্লীকরণ (Acidification) ঘটে।
প্রশ্ন 21. গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) কীভাবে পরিবেশ প্রভাবিত করে ? N2O-এর দুটি উৎস লেখো।
উত্তর: অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের মতোই নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) সূর্য থেকে আসা তাপীয় বিকিরণ যা ভূত্বক দ্বারা প্রতিফলিত হয় তাকে আবদ্ধ করে, ফিরে যেতে দেয় না, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
নাইট্রাস অক্সাইডের উৎস : ও জীবাশ্ম জ্বালানিতে অবস্থিত নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের দহনে NO উৎপন্ন হয়। ও নাইট্রোজেনঘটিত বিভিন্ন সারের, যেমন – ইউরিয়া [CO (NH2)2], অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH NO3) প্রভৃতি বিয়োজনের ফলে N2O উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন 22. অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টিতে নাইট্রোজেনের ভূমিকা কী ?
উত্তর: নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডগুলি যেমন— নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2), নাইট্রোজেন পেন্টাঅক্সাইড (N2Og) বৃষ্টির জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রাস ও নাইট্রিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। বৃষ্টির জলের সঙ্গে এই অ্যাসিডগুলি মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়। 2NO2 + H2O HNO2 + HNO3 নাইট্রাস অ্যাসিড নাইট্রিক অ্যাসিড N₂O5+ H₂O 2HNO3 নাইট্রিক অ্যাসিড।
প্রশ্ন 23. নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে কীভাবে মাটির অম্লীকরণ ঘটে?
উত্তর: পরিবেশে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন যৌগের (মূলত নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, যেমন– N2O, NO2) উপস্থিতির জন্য অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে। এই অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাটিতে উপস্থিত অজৈব লবণগুলির দ্রবণীয়তার পরিবর্তন হয়। pH-এর পরিবর্তন মাটিতে আয়ন বিনিময়ে বাধা দেয়। ফলে, মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও সূক্ষ্ম জীবাণুরা মারা যায় এবং উদ্ভিদের খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পায়, জৈববস্তুর পচন কম হয়।
প্রশ্ন 24. নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে কীভাবে জলের অম্লীকরণ ঘটে? ★ Rajkumari Santanamoyee Girls High Sc 16
উত্তর: পরিবেশে নাইট্রোজেনঘটিত বিভিন্ন যৌগের (যেমন— N2O, NO2) উপস্থিতির জন্য অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে। এর ফলে জলাশয়ের জলের pH মাত্রা কমে গিয়ে জল অধিক আম্লিক হয়ে পড়ে এবং জলাশয়ের প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া জলাশয়ের নিকটবর্তী মাটিতে উপস্থিত বিষাক্ত লবণগুলি বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে জলাশয়ের জলে মেশে। এর ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে বিষক্রিয়া দেখা যায় ও তারা মারা যায়।
প্রশ্ন 25. ব্লু বেবি সিনড্রোম (Blue Baby Syndrome) কী ?
উত্তর: কৃষি জমিতে নাইট্রেটজাতীয় সারের অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে সারের কিছু অংশ চুঁইয়ে চুঁইয়ে মাটির তলায় ভৌমজলস্তরে প্রবেশ করে। এই বেশি নাইট্রেটযুক্ত জল পান করলে দেহে নাইট্রেট (NO3) প্রবেশ করে এবং নাইট্রাইট (NO2)-এ পরিণত হয়, যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মেথহিমোগ্লোবিন নামক যৌগ উৎপন্ন করে। ফলে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা কমে যায়। বিজারিত হিমোগ্লোবিন ত্বকের নীচে জমা হওয়ায় দেহ নীল হয়ে যায় বলে একে ব্লু বেবি সিনড্রোম বা সায়ানোসিস বা মেথ- হিমোগ্লোবিনেমিয়া বলে।
প্রশ্ন 26. লেগহিমোগ্লোবিন (Leghemoglobin) কী ?
উত্তর: শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলের অর্বুদে ব্যাকটেরিয়ার মিথোজীবীতার ফলে আয়রন (Fe) সমৃদ্ধ এক ধরনের রঞ্জক যৌগ গঠিত হয়, একে লেগহিমোগ্লোবিন বলা হয়। এই রঞ্জক উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সাহায্য করে। ফ্যাবেসি বা লেগিউমিনোসি গোত্রের মূলের অর্বুদে দেখা যায় এবং গোলাপি বর্ণের হয়। অর্বুদে O2-এর উপস্থিতির জন্য নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সাহায্যকারী নাইট্রোজিনেজ উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা হ্রাস পায়। কিন্তু, লেগহিমোগ্লোবিন O,-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে, নাইট্রোজিনেজ উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করে এবং নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সাহায্য করে।
জেনে রাখো : জলজ ফার্ন অ্যাজোলার পাতার গহ্বরে অ্যানাবিনা (সায়ানোব্যাকটেরিয়া) মিথোজীবীরূপে বাস করে অ্যাজোলা-অ্যানাবিনা কমপ্লেক্স গঠন করে। এর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে ধানক্ষেতে নাইট্রোজেন ঘটিত সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
No comments:
Post a Comment