বেঁচে থাকার কৌশল : অভিযোজন (Survival strategies: Adaptation): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ৪ | class 10 life science chapter 4 question answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.আচরণ কাকে বলে? আচরণ কীভাবে জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করে তা উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: আচরণ (Behaviour) : পরিবেশের কোনো উদ্দীপনার প্রভাবে বা অন্য কোনো জীবের ক্রিয়ার ফলে কোনো একটি জীব নতুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীনে যে-সমস্ত ক্রিয়া করে, তাদের আচরণ বলে।
জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় বিভিন্ন আচরণের ভূমিকা :
1• খাদ্য সংগ্রহ : পিঁপড়েরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন রকম আচরণ করে। যেমন-
(i) বড়ো বড়ো গাছে থাকা নালসো (লাল পিঁপড়ে) পিঁপড়েরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য অন্যান্য পিঁপড়েদের সঙ্গে লড়াই শুরু করে দেয়।
(ii) চাষি পিঁপড়েরা মাটির নীচে গর্তে পাতা কেটে এনে সঞ্জয় করে। এই পাতা পচে তাতে ছত্রাক জন্মায় এবং পিঁপড়েরা ওই ছত্রাকগুলিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
2. সন্তান পালন : প্রাণীদের মধ্যে বাচ্চাকে লালনপালনের জন্য অনেকরকম আচরণ লক্ষ করা যায়। যেমন-
(i) স্ত্রী কোকিল কাকের বাসায় গিয়ে ডিম পেড়ে আসে। আর কাকও নিজের ডিম ভেবে তাতে 'তা' দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে দেয়।
(ii) বাচ্চা পাখিরা খিদে পেলে মুখ হাঁ ঘুরে চেঁচাতে থাকে আর মা পাখি খাবার এনে খাইয়ে দিলে তারা পুনরায় শান্ত হয়ে যায়।
(iii) মা বাঘিনি বাচ্চাদের অতি সতর্কতার সঙ্গে বড়ো করে তোলে, সাঁতার শেখায় আর শিকার ধরা শেখায়।
3. শিম্পাঞ্জিদের মানুষের মতো আচরণ : শিম্পাঞ্জিদের আচার আচরণ নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, এদের মানুষের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিল আছে।
4• প্রজনন ক্রিয়া ও বংশবিস্তার : মৌমাছিদের সমাজে রানি মৌমাছি ও পুরুষ মৌমাছিরা প্রজননে লিপ্ত হওয়ার আগে বৈবাহিক উড্ডয়ন করে এবং রানি মৌমাছির সঙ্গে পুরুষ মৌমাছিটি মিলিত হওয়ার পরেই পুরুষ মৌমাছি মারা যায়।
প্রশ্ন 2. অভিযোজন বলতে কী বোঝো? অভিযোজনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো। ★★★ [ME 12, 11, 09,06,04,021
উত্তর: অভিযোজন (Adaptation) : কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা, অস্তিত্ব রক্ষা এবং বংশবিস্তারের জন্য পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ ও আচরণের (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ) স্থায়ী পরিবর্তনকে অভিযোজন বা অ্যাডাপটেশন বলে।
অভিযোজনের উদ্দেশ্য বা তাৎপর্য :
1. পরিবর্তনশীল পরিবেশে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা : পরিবর্তনশীল পরিবেশ ও প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এর দ্বারা জীব পরিবেশের প্রতিকূলতা কাটিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকে ও বংশবৃদ্ধি করে।
2. আত্মরক্ষা : বর্ণগ্রহ (Coloration), অনুকৃতি (Mimicry) এই সকল অভিযোজন জীবকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
3. অনুকূল প্রকরণ সৃষ্টি : অভিযোজনের মাধ্যমে জীবদেহে অনুকূল প্রকরণ সৃষ্টি হয় যা জীবের জীবনসংগ্রাম ও অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করে।
4. নতুন প্রজাতি সৃষ্টি ও জীববৈচিত্র্য : অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীব পরিবেশে সফলভাবে অভিযোজিত হয় এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। নতুন প্রজাতি সৃষ্টির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
অভিব্যক্তি : অভিযোজনের দ্বারা জীবের অভিব্যক্তির পথ সুগম হয়।
প্রশ্ন 3. অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন বলতে কী বোঝো? উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন (Morphological adaptation) : প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য জীবদেহে যে গঠনগত স্থায়ী পরিবর্তন দেখা যায়, তাকে অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ – ও
1.ক্যাকটাসের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন : ক্যাকটাস একপ্রকার জাঙ্গল উদ্ভিদ। শুষ্ক পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ক্যাকটাসের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনগুলি হল – (i) ক্যাকটাসের মূলতন্ত্র অত্যন্ত সুগঠিত এবং মাটির নীচে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। (ii) বেশি জল সঞ্চয়ের জন্য কাণ্ড স্থূল ও রসালো প্রকৃতির হয়, একে পর্ণকাণ্ড বা ফাইলোক্যাড বলে। (iii) বাষ্পমোচন রোধের জন্য পাতার সংখ্যা হ্রাস পায় এবং পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। এদের পত্রকণ্টক বলে।
2. রুইমাছের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন : জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য রুইমাছের দেহে কিছু অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় - (i) মাছের প্রধান গমন অঙ্গ হল পাখনা, যা জলের মধ্যে সাঁতার কাটতে ও দিক নির্ণয়ে সাহায্য করে। (ii) রুইমাছের দেহে উপস্থিত পটকা জলে সাঁতার কাটার সময় দেহকে জলে ডুবতে ও ভাসতে সাহায্য করে।
3. পায়রার অভিযোজন : পায়রার খেচর অভিযোজনের জন্য পায়রার দেহস্থিত নয়টি বায়ুথলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পায়রার বায়ুথলি ওড়ার সময় অতিরিক্ত অক্সিজেনের জোগান দেয় ও দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে।
প্রশ্ন 4. শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলতে কী বোঝো? উদাহরণের সাহায্যে শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন আলোচনা করো।
উত্তর: শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন (Physiological adaptation) : পরিবর্তনশীল পরিবেশে সফলভাবে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তারের জন্য জীবের শারীরবৃত্তীয় কাজের পরিবর্তনকে শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন বলে। উদাহরণ •
1. সুন্দরী গাছের লবণ সহনের জন্য অভিযোজন : সমুদ্র উপকূলবর্তী শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটিতে জলের পরিমাণ ও জলে থাকা লবণের (NaCl, MgCl2, MgSO4 প্রভৃতি) পরিমাণও অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই এই উদ্ভিদদেহে কিছু শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন দেখা যায় । সুন্দরী গাছে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর দেখা যায়, যা শ্বাসকার্যে সহায়তা করে। এ ছাড়া, পাতার ত্বকে লবণ নিঃসরণের জন্য রেচনগ্রন্থি উপস্থিত থাকে।
2. উটের দেহে শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন : শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উটের দেহেও কিছু শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন ঘটে (i) উটেরা একটানা 10 দিন পর্যন্ত জল পান না করেও থাকতে পারে এবং ঘন মূত্র ত্যাগ করে (ii) এ ছাড়া উটের দেহে RBC-এর আকৃতি ডিম্বাকার হয়, যাতে জলের অভাব থাকলেও ঘন রক্তের মধ্যে দিয়ে RBC গুলি সহজে প্রবাহিত হতে পারে এবং অতিরিক্ত জলপানের ফলেও RBC গুলি ফেটে না যায়।
প্রশ্ন 5. আচরণগত অভিযোজন কাকে বলে? উদাহরণের সাহায্যে বর্ণনা করো।
উত্তর: আচরণগত অভিযোজন (Behavioural adaptation) : যে-কোনো পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থেকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জীবদেহের আচরণগত কিছু বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্ঝারিত হয়, একে আচরণগত অভিযোজন বলে। উদাহরণ—
1• শিম্পাঞ্জিদের আচরণগত অভিযোজন :
(i) শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতোই বুদ্ধিমান। তারা গাছের ডাল ব্যবহার করে উইয়ের ঢিপিতে ঢুকিয়ে উইপোকা বের করে খায়, পাথর দিয়ে বাদামের খোলা ভেঙে বাদাম খায়। এমনকি পরজীবী প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে গাছের পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতেও দেখা যায়।
(ii) তারা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং তারা একসঙ্গে বিপদের মোকাবিলা করে।
2. মৌমাছিদের বার্তা আদান প্রদান : খাদ্য অনুসন্ধানের ব্যাপারে মৌমাছিদের মধ্যে এক বিশেষ আচরণগত অভিযোজন লক্ষ করা যায়।
(i) শ্রমিক মৌমাছিরা মৌচাকের 100 মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো খাবারের সন্ধান পেলে মৌচাকে ফিরে এসে তা অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিদের জানানোর জন্য ‘চক্রাকার নৃত্য' (Round dance) করে।
(ii) আবার, খাদ্যের উৎস ও মৌচাক থেকে খাদ্যের দূরত্ব 100 মিটারের বেশি হলে তা জানানোর জন্য মৌমাছিদের এক বিশেষ নৃত্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। একে ‘ওয়াগেল নৃত্য' বা 'ওয়াগটেল নৃত্য (Waggle বা Wagtail dance) বলে।
প্রশ্ন 6. শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে কী ধরনের আচরণগত কৌশল দেখা যায় সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: শিম্পাঞ্জিদের বিভিন্ন আচরণগত অভিযোজন বা (কৗশল : শিম্পাঞ্জিদের আদি বাসস্থান আফ্রিকার জঙ্গল। এরা মানুষের সবথেকে কাছের প্রতিবেশী। এদের আচরণের সঙ্গে মানুষের আচরণের অনেক মিল পাওয়া যায়। যেমন- •
1. হাতুড়ি বা নেহাই-এর ব্যবহার : Tai শিম্পাঞ্জিরা কাঠ দিয়ে হাতুড়ির মতো বাদামের খোলা ভাঙে। Fongoli 3 Assirik শিম্পাঞ্জিরা আবার পাথর দিয়ে বাওবাব ফলের খোলা ভেঙে ফল খায়।
2. ঔষধের ব্যবহার : শিম্পাঞ্জিরা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে ওষধি গাছের পাতা খায়। এমনকি Fongoli স্ত্রী শিম্পাঞ্জিরা হিক্কা ওঠার সময়ও গাছের পাতা খায়।
3. উইপোকা ধরে খাওয়া : শিম্পাঞ্জিরা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে সেই ডাল থেকে পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে। তারপর সেই ডালটাকে উইয়ের ঢিপির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে উইপোকাদের টেনে বের করে এনে খায়। শিম্পাঞ্জিদের উইপোকা খাওয়া
4. শিকার করা : শিম্পাঞ্জিরা ছুঁচোলো লম্বা ডাল দিয়ে গাছের গর্তে থাকা ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিকার করে। সাধারণত খাদ্যের অভাব ঘটলে স্ত্রী ও বাচ্চা শিল্পাক্তিরা এইভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে।
5.ভাবনা-চিন্তা করা : শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতো গালে হাত দিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে। Jill Pruetz-এর মতে শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতোই দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, খুশি প্রভৃতি অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
6. মাতৃস্নেহ : শিম্পান্তি সবসময়ই শিশু শিম্পান্তিকে আগলে রাখে। ঠিক যেভাবে মা তার সন্তানকে আঁকড়ে থাকে।
7. পা দিয়ে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা : অরণ্যে প্রায় ক্যানোপির কাছাকাছি 30 ফুট ওপরে গাছের ডালকে পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে এরা অত্যন্ত দ্রুত চলাচল করতে পারে। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে - দ্বিপদ গমনের অভিযোজন মাটিতে নয় গাছের ডালে শুরু হয়েছিল।
8. আরাম করার প্রবণতা : অনেক সময় শিম্পাথিরা উইপোকা বা অন্যান্য খাবারের সন্ধানে না গিয়ে শুধুমাত্র ফল খেয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়ে যায়।
অনুরূপ প্রশ্ন: (1) খাদ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জিরা যেভাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে তার উদাহরণ TIME 18 (2) সমস্যা সমাধানে শিম্পাতিদের আচরণগত অভিযোজন উল্লেখ করে বুঝিয়ে লেখো। *** পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন (3) শিম্পান্তিরা খাবারের জন্য কীভাবে উইপোকা শিকার কে তা ব্যাখ্যা করো। [ME 19]
জেনে রাখো : শিম্পাঞ্জিরা সাধারণত গন্ধ শুঁকে উইপোকাদের খোঁজ পায়। গর্তে গাছের সরু ডাল বা লতা ঢুকিয়ে টেনে বার করে আনে এবং এর ডগাতে নাক ঠেকিয়ে গন্ধ শোঁকে। এই গন্ধের উৎস হল সৈনিক উইপোকার দেহ নিঃসৃত ফেরোমোন।
প্রশ্ন 7. উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনক্ষমতা বলতে কী বোঝো? দেহে জল সংরক্ষণের জন্য এরা কী কী অভিযোজন দেখায়?
উত্তর: দেহে জল সংরক্ষণের জন্য উট যে-সমস্ত শারীরস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করে, তাকে উটের অতিরিক্ত জলক্ষয় সহনক্ষমতা বলে ।
উটের জল সংরক্ষণের জন্য অভিযোজন :
1• উট একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ জল খায় (প্রায় 25-32 গ্যালন)। উটের জল খাওয়ার পর এদের পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে খুব ধীর গতিতে জলের শোষণ ঘটে। ফলে জল দ্রুত রক্তে মেশে না। এরা অতিরিক্ত জল বিয়োজিত অবস্থায় বহুক্ষণ কাটাতে পারে। বন্য ব্যাক্লিয়ান উট মিষ্টি জলের অভাবে নোনা জলও পান করে।
2.উটের কুঁজে যে চর্বি জমা থাকে তা জারণের ফলে কিছু পরিমাণ বিপাকীয় জল উৎপন্ন হয় এবং কিছুটা শারীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরণ করে। দেখা গেছে, 100 gm ফ্যাট বা চর্বি জারিত হয়ে প্রায় 110 gm জল উৎপন্ন হয় যার দ্বারা উটের প্রায় 7 দিন পর্যন্ত জলের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
3. উট তার দেহের তাপমাত্রা 34°C - 41.7°C এর মধ্যে পরিবর্তন করে ঘর্মক্ষরণ রোধ করতে পারে। তাছাড়া, উটের পুরু ত্বকে ঘর্মগ্রন্থির সংখ্যা কম থাকায় ঘাম নিঃসৃত হয় না ও দেহে জল সংরক্ষিত থাকে।
4. নিঃশ্বাস বায়ুর মাধ্যমে নির্গত জলীয় বাষ্প উট পুনরায় বহিঃনাসারন্ধ্র দিয়ে বাইরে থেকে টেনে নেয়। এতে জলের অভাব পূরণ হয়।
5• উটের পাকস্থলীতে জলথলি (Water sacs) থাকে এবং এখানে এরা অতিরিক্ত জল সঞ্চয় করে রাখে, যা প্রয়োজনে জলের চাহিদা পূরণ করে। উট জলথলি
6• উটের বৃক্কে হেনলির লুপ অংশটি বেশি লম্বা হওয়ায় জলের পুনঃশোষণ বেশি হয় ফলে, দেহে জল সংরক্ষণ ঘটে এবং খুব কম পরিমাণ মূত্র উৎপাদন ঘটে। উট প্রায় জলশূন্য শক্ত মল ত্যাগ করে দেহে জল সংরক্ষণ ঘটায়। উটের পাকস্থলীর ওয়াটারস্যাক |
জেনে রাখো: উটেরা শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হলে, ভয়ে এবং উত্তেজনায় তাদের পাকস্থলী নিঃসৃত সবুজ রঙের তরল পদার্থ মুখ দিয়ে শত্রুদের দিকে ছিটিয়ে দেয়। এ ছাড়া শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করার জন্য তারা। | একসঙ্গে চারটি পা-ই ব্যবহার করতে পারে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. অভিব্যক্তি ও অভিযোজনের সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: অভিব্যক্তি ও অভিযোজন পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি। অভিব্যক্তি ও অভিযোজনের সম্পর্ককে নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়— 1. পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবও বিভিন্ন অঙ্গসংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে থাকে। একে অভিযোজন বলে।
2. জীব সঠিকভাবে অভিযোজিত হলে তবেই তাঁরা যোগ্যতম রূপে বিবেচিত হয় ও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার পায়।
3.অভিযোজনে অক্ষম জীব পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
4• জীবের অভিযোজনে সাহায্যকারী অনুকূল প্রকরণ বংশপরম্পরায় সঞ্ঝারিত হতে থাকে এবং কালক্রমে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রজাতি সৃষ্টি করে, ফলে জৈব অভিব্যক্তি ঘটে।
5.সুতরাং, দেখা যায় অভিব্যক্তি ফলাফল হলে অভিযোজন তার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। অর্থাৎ, অভিব্যক্তি হল অভিযোজন নির্ভর প্রক্রিয়া।
6. এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী জীবদেহে অভিযোজন ঘটে, কিন্তু অভিব্যক্তি অত্যন্ত ধীর একটি প্রক্রিয়া যা পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে ক্রমান্বয়ে ঘটে চলেছে, ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
জেনে রাখো : কখনো-কখনো অভিযোজনের মাধ্যমে জীবের আকার এবং আচরণ এমনভাবে পরিবর্তিত হয়, যে তাদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া কষ্টকর হয়। যেমন তিমি ।
প্রশ্ন 2. অভিযোজন হল বেঁচে থাকার কৌশল— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: 1.বিভিন্ন জীব বিভিন্ন পরিবেশে বসবাস করে এবং সেই পরিবেশের বিভিন্ন শর্তকে মেনে চলে। নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসের জন্য জীবের এই মানিয়ে নেওয়াকে অভিযোজন বলে।
2. অভিযোজনের মাধ্যমে পরিবেশের চাহিদা অনুযায়ী জীবের বিভিন্ন রকম অঙ্গসংস্থানিক, শারীরবৃত্তীয়, আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এই সমস্ত পরিবর্তন দ্বারা জীব জীবনসংগ্রামে জয়ী হয় এবং পরিবেশে সফলভাবে বেঁচে থাকে ।
3. যে-সমস্ত জীব পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না, তারা অভিযোজনে ব্যর্থ হয় ও পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
4. অর্থাৎ, সফল অভিযোজন জীবের বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটি প্রধান কৌশল ।
প্রশ্ন 3. অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে আচরণের গুরুত্ব উদাহরণ- সহ আলোচনা করো।
উত্তর: অভিযোজন ও অভিব্যক্তি প্রক্রিয়ায় আচরণের গুরুত্ব : পরিবর্তনশীল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবের বিভিন্ন ধরনের আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এর দ্বারা জীবদেহে নতুন নতুন স্থায়ী বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে, যা পরবর্তীকালে নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। যেমন—
1. শিম্পাঞ্জিদের সন্তান লালনপালন, গাছের ডাল দিয়ে উইপোকা ধরে খাওয়া, পাথর দিয়ে বাদামের খোলা ভাঙা, শিকার করা প্রভৃতি আচরণই বিবর্তনের ধারায় মানুষের আবির্ভাবের পথ প্রশস্ত করে। 2. সরীসৃপ প্রাণীদের মধ্যে উড্ডয়নের জন্য বিভিন্ন আচরণগত অভিযোজন থেকে পক্ষী শ্রেণির সৃষ্টি হয়।
3. সাপের পূর্বপুরুষের পা গুটিয়ে চলাচলের আচরণ, জিরাফের গলা উঁচু করে গাছের পাতা খাওয়ার আচরণ প্রভৃতি জীবের অভিব্যক্তিকে অনেক সমৃদ্ধ করে।
4• স্ত্রী রেশম মথের ফেরোমোন ক্ষরণ দ্বারা পুরুষ মথকে আকর্ষণ করা এবং যৌন মিলনের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা এক প্রকার আচরণগত অভিযোজন।
5• কাঠি পোকার শুকনো গাছের ডালের মতো পড়ে থাকা, কালিমা মথের শুকনো পাতার রং ও আকার অনুকরণ করা, গিরগিটির বর্ণগ্রহ প্রভৃতি আচরণগত অভিযোজনের দ্বারা এই সমস্ত জীবেরা পৃথিবীতে সফলভাবে অভিযোজিত হয়।
প্রশ্ন 4. অভিযোজনের গুরুত্ব (Importance) আলোচনা করো।
উত্তর: অভিযোজনের গুরুত্বগুলি হল : 1.পৃথিবীতে কোনো জীবের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অভিযোজন দ্বারা বৃদ্ধি পায়। অভিযোজনের দ্বারা কোনো জীবের প্রজননের সম্ভাবনা ও অপত্য জীবদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
2. বর্ণগ্রহ (Colouration) ও অনুকৃতি (Mimicry) নামক বিশেষ প্রকার অভিযোজন জীবদের আত্মরক্ষা ও শিকার করতে সাহায্য করে।
3• অভিযোজনের ফলে জীবেদের মধ্যে অভিব্যক্তি ঘটে, যার ফলে জীবদের জিনগুলি তাদের বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং অপত্য জীবগুলি পরিবেশে সফলভাবে বেঁচে থাকে।
4. পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টিতে জীবের অভিযোজন ক্ষমতা একটি প্রধান শর্ত। প্রায় 37 বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে এককোশী জীবের আবির্ভাব হয়। এর পর কোটি কোটি বছর ধরে অভিযোজিত হতে হতে এককোশী জীব থেকে বহুকোশী জীবের উৎপত্তি হয়েছে।
প্রশ্ন 5. ক্যাকটাস উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজনগুলি লেখো।
উত্তর: ক্যাকটাস উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন : শুষ্ক মরু পরিবেশে ক্যাকটাস উদ্ভিদ (Opuntia sp.)পাওয়া যায়। এর অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজনগুলি হল—
মূল : (i) মূলতন্ত্র সুঠিত, বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত। (ii) প্রধান মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে এবং শাখাপ্রশাখা মূলগুলি জালের মতো মাটির নীচে বিছিয়ে থাকে। (iii) মূল মূলরোম ও মূলত্রযুক্ত হয়।
2. কাণ্ড : (i) কাণ্ড ছোটো, প্রসারিত, স্থূল এবং রসালো প্রকৃতির। (ii) কাণ্ড সবুজ ক্লোরোফিল যুক্ত হওয়ায় একে পর্ণকাণ্ড বা ফাইলোক্যাড (Phylloclade) বলে। (iii) কাণ্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত এবং কাণ্ড মিউসিলেজ সমৃদ্ধ হয়। ও
3. পাতা : (i) পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। একে পত্রকণ্টক বলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাতা থাকলেও তা ক্ষুদ্রাকার ও সংখ্যায় কম থাকে। (ii) পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম ও নিবেশিত প্রকৃতির এবং রোম দ্বারা আচ্ছাদিত। (iii) পাতার ত্বকে মোমের আবরণ দেখা যায়।
4• ফুল ও বীজ : ফুল রঙিন, পতঙ্গপরাগী এবং বীজ শক্ত আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে।
প্রশ্ন 6. ক্যাকটাসের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তর: ক্যাকটাসের শারীরবৃত্তীয় অভিযোজন :
1. বাষ্পমোচন হ্রাস : বাষ্পমোচন হ্রাসের জন্য পাতার সংখ্যা কম হয় এবং পাতা কাঁটায় রূপান্তরিত হয়ে পত্রকণ্টক গঠন করে। এ ছাড়া পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম থাকে ও নিমজ্জিত প্রকৃতির হয় এবং দিনের বেলা বন্ধ ও রাত্রিবেলা খোলা থাকে বলে বাষ্পমোচন হার অত্যন্ত কম।
2. জলশোষণ ক্ষমতা : জাঙ্গল উদ্ভিদের মূল অত্যন্ত সুগঠিত হয় এবং মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে। জাঙ্গল উদ্ভিদের মূলের কোশে বড়ো বড়ো কোশগহ্বর বর্তমান, ফলে মূলের জলশোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়।
3. জলধারণ ক্ষমতা ক্যাকটাসের কাণ্ডের কোশে প্রচুর পরিমাণে মিউসিলেজ জাতীয় পদার্থ থাকায় এর জলধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
বিপাক : কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে কোশপ্রাচীর নির্মাণে ব্যবহৃত হওয়ায় বৃদ্ধির হার কম ।
প্রশ্ন 7. জলজ পরিবেশে রুইমাছের অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজনের বর্ণনা দাও।
উত্তর: জলজ পরিবেশে রুইমাছের ভাঙ্গসংস্থানিক অভিযোজন :
1. দেহাকৃতি : দেহ মাকুর মতো আকৃতিযুক্ত অর্থাৎ, দেহের মাঝখান চওড়া এবং দুপ্রান্ত ক্রমশ সরু। এর ফলে মাছ সহজেই জলের বাধা অতিক্রম করতে পারে।
2. আঁশ : মাছের দেহত্বক পিচ্ছিল আঁশ দ্বারা ঢাকা থাকে। এর দ্বারা মাছ আত্মরক্ষা করে ও ঘর্ষণজনিত বাধা অতিক্রম করে।
3. পাখনা : মাছের প্রধান গমন অঙ্গ হল রশ্মিযুক্ত পাখনা। জোড় ও বিজোড় পাখনাগুলি মাছকে জলের মধ্যে চলাচলে, জলের যে কোনো তলে ভেসে থাকতে ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
4. পটকা : পটকা রুইমাছের উদ্স্থৈতিক অঙ্গ। এটি মাছকে জলের বিভিন্ন তলে ডুবতে ও ভাসতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন 18. রুইমাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা কী?
উত্তর: রুইমাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা :
1. রুইমাছের পটকা (Air bladder or Swim bladder) দুটি প্রকোষ্ঠ যুক্ত হয় যথা- অগ্র প্রকোষ্ঠ ও পশ্চাদ প্রকোষ্ঠ। দুটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানে ভালভ বা কপাটিকা থাকে।
2• অগ্র প্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেডগ্রন্থি বা লালগ্রন্থি গ্যাস উৎপন্ন করলে পটকা ফুলে যায় ফলে মাছের আপেক্ষিক ভর কমে যায় ও মাছ জলের ওপর ভেসে ওঠে।
3. পশ্চাদ্ প্রকোষ্ঠে অবস্থিত রেটিয়া মিরাবিলিয়া নামক পশ্চাদ প্রকোষ্ঠ অগ্র প্রকোষ্ঠ। রক্তজালক দ্বারা গ্যাস শোষিত হলে পটকা চুপসে যায় এবং মাছের আপেক্ষিক ভর বৃদ্ধি পায় ও মাছ জলে ডুবে যায়।
4. এই কারণে, পটকাকে রুইমাছের উদস্থৈতিক অঙ্গ (Hydrostatic organ) বলে। অনুৰূপ প্ৰশ্ন : পটকাকে উদ্স্থৈতিক অঙ্গ বলার কারণ কী? 5
প্রশ্ন 9. বায়বীয় পরিবেশে পায়রার অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজনগুলির বর্ণনা দাও। ** [ME 15,10,09,08
উত্তর: বায়বীয় পরিবেশে পায়রার অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজন :
1• দেহাকৃতি ওড়ার জন্য এদের দেহ মাকু আকৃতির হয়।
2• ডানা : অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে। ডানার ঊর্ধ্বতল উত্তল ও নিম্নতল অবতল হওয়ায় ডানার সাহায্যে এরা সহজেই বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
3• পালক : সারাদেহ পালক দ্বারা আবৃত। ডানার পালক রেমিজেস লেজের পালক রেকট্রিসেস যথাক্রমে উড়তে ও দিক পরিবর্তনে সাহায্য করে।
4. বায়ুথলি পায়রার দেহে ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত নয়টি বায়ুপূর্ণ বায়ুথলি ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে এবং ওড়ার সময়ে অতিরিক্ত অক্সিজেন জোগানে সাহায্য করে।
5. অন্তঃকঙ্কাল : সহজে বাতাসের বাধা কাটিয়ে উড়ে যাওয়া এবং আকাশে ভেসে থাকার জন্য এদের অন্তঃকঙ্কাল অত্যন্ত হালকা ও বায়ুপূর্ণ এবং স্পঞ্জের মতো অস্থি দ্বারা গঠিত। এ ছাড়া এদের দেহে উড্ডয়ন পেশি খুবই উন্নত।
প্রশ্ন 10. সুন্দরী গাছের লবণ সহনের জন্য কী কী অভিযোজন ঘটেছে?
উত্তর: সুন্দরী গাছের লবণ সহনের জন্য অভিযোজন :
1.মূল : (i) মাটি অত্যধিক লবণাক্ত ও মাটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে প্রধানমূলের শাখা মূলগুলি অভিকর্ষের বিপরীতে মাটির উপরে উঠে আসে। এদের শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর (Pneumatophore) বলে। এই মূলগুলির মাথায় শ্বাসছিদ্র বা নিউম্যাথোড (Pneumathode) থাকে, যা শ্বাসকার্যে অংশগ্রহণ করে। (ii) এ ছাড়া সুন্দরী গাছের গুঁড়ির নীচের দিক থেকে কতগুলি চ্যাপটা, তক্তার মতো মূল বের হয়ে মাটিতে প্রবেশ করে গাছকে খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। এদের অধিমূল (Root Buttress) বলে।
2. কাণ্ড : কাণ্ডের ত্বক পুরু কিউটিকলযুক্ত। রোম ও মোমজাতীয় পদার্থের আস্তরণযুক্ত হওয়ায় লবণ জলে কোনো ক্ষতি হয় না। কাণ্ডের সংবহণ কলা খুবই উন্নত, ফলে জলজ পরিবহণ সহজেই ঘটে।
3. পাতা : পাতাগুলি পুরু, খসখসে, রসালো ও কিউটিকল যুক্ত। পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা অত্যন্ত কম, পাতার নিম্নত্বকে অবস্থিত। পাতার ফলকে মোমের প্রলেপ থাকে।
প্রশ্ন 11. উটের জলক্ষয় সহনে RBC কীভাবে সাহায্য করে? অথবা, উটের লোহিত রক্তকণিকার (RBC-র) মরু অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: উটের লোহিত রকণিকার (RBC) অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য :
1. উটের RBC-র আকৃতি মূলত উটকে জলক্ষয় সহনে সাহায্য করে। উটের RBC খুব ছোটো, ডিম্বাকার ও লম্বাটে হওয়ায় জলের অভাবকালেও অতি সূক্ষ্ম রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে লম্বালম্বিভাবে অনায়াসে চলাচল করতে পারে এবং সহজে রক্তনালির মধ্যে ভেসে থাকতে পারে।
2. জলের অভাবে যখন রক্ত ঘন হয়ে যায়, তখনও এরা অতি সূক্ষ্ম রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে বাহিত হতে পারে।
© মরু অভিযোজনের জন্য উট প্রায় 200 লিটার অবধি জল একসঙ্গে পান করতে পারে। ০ উটের RBC স্বাভাবিক আয়তনের 240% পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে, ফলে RBC তে অতিরিক্ত পরিমাণ জল প্রবেশ করলেও RBC-র হিমোলাইসিস ঘটে না অর্থাৎ ফেটে যায় না। উটের দেহে জলাভাবের সময় এই জল পুনরায় RBC থেকে বেরিয়ে আসে ও জলের চাহিদা পূরণ করে। ও উটের RBC অনেক বেশি অভিস্রবণীয় চাপ সহনে সক্ষম।
প্রশ্ন 12. মানুষের আচরণের সঙ্গে মিলযুক্ত শিম্পাঞ্জির তিনটি আচরণ উল্লেখ করো।
উত্তর:1. মানুষ যেমন হাতুড়ির সাহায্যে শক্ত কিছু ভাঙতে পারে শিম্পাঞ্জিরাও তেমনি ছোটো, মোটা কাঠের খণ্ড বা পাথরের সাহায্যে শক্ত বাদাম ভেঙে খায়।
2. মানুষ যেমন ছিপ ফেলে মাছ ধরে সেইভাবে শিম্পাঞ্জীরাও উইপোকার টিবির ভেতরে কাঠি ঢুকিয়ে উইপোকা বার করে এনে সেগুলিকে খায়।
3. অসুখ করলে মানুষ যেমন ওষুধ খায়, সেইরকম শিম্পাঞ্জীরাও অসুস্থ হলে ঔষধি গাছের পাতা ছিঁড়ে খায়।
4• মানুষ যেমন বাসা বানিয়ে তাতে ঘুমায়, শিম্পাঞ্জীরাও ডালের ওপর পাতার বাসা বানিয়ে তাতে ঘুমায়।
প্রশ্ন 13. একটি মৌচাকে কোনো শ্রমিক মৌমাছি অন্য শ্রমিক মৌমাছিদের কীভাবে খাদ্য উৎসের অবস্থান ও সন্ধান জানায় ?
উত্তর: খাদ্যের অনুসন্ধানকারী ও খাদ্য সংগ্রহের কাজে দুই ধরনের কর্মী মৌমাছি যুক্ত থাকে। যথা—
1• স্কাউট কর্মী মৌমাছি— যারা খাদ্যের সন্ধান আনে এবং
2. ফোরেজার কর্মী মৌমাছি— যারা খাদ্য সংগ্রহ করে আনে।
স্কাউট মৌমাছিরা খাদ্যের সন্ধান সংক্রান্ত বার্তা মৌচাকের সামনে দু-প্রকার নাচের মাধ্যমে প্রকাশ করে। শ্রমিক মৌমাছিদের আন্দোলিত উদর, নৃত্যের সময়কাল এবং কীভাবে নাচছে তার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিরা মৌচাক ছেড়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে বেরিয়ে যায় এবং দ্রুত ওই খাদ্যের উৎসস্থানে পৌঁছে যায়।
স্কাউট মৌমাছি প্রদর্শিত নাচ— 1. চক্রাকার বা বৃত্তাকার নৃত্য (Round dance) : খাদ্যের উৎস মৌচাকের 100 মিটারের মধ্যে অবস্থিত হলে এরা চক্রাকারে নৃত্য পরিবেশন করে।
2. ওয়াগেল বা ওয়াগটেল নৃত্য (Waggle dance) : (i) মৌচাক থেকে খাদ্যের দূরত্ব ও মৌচাকের সাপেক্ষে খাদ্যের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মৌমাছিরা এই প্রকার নৃত্য পরিবেশন করে। (ii) খাদ্যের উৎস মৌচাক থেকে 100 মিটারের বেশি দূরে হলে এরা ইংরেজি ৪-এর ন্যায় নৃত্য করে। একে ওয়াগেল বা ওয়াগটেল নৃত্য বলে। (iii) এই নৃত্যের অভিমুখ ঊর্ধ্বমুখী হলে খাদ্যের উৎস সূর্যের দিকে এবং নৃত্যের অভিমুখ নিম্নমুখী হলে খাদ্যের উৎস সূর্যের বিপরীত দিকে নির্দেশ করে। (iv) নৃত্য যদি বামদিকে 60° কোণ করে হয় তাহলে খাদ্যের উৎস হবে মৌচাকের বামদিকে 60° কোণে এবং নৃত্য যদি ডানদিকে 120° কোণে হয় তাহলে খাদ্যের উৎস মৌচাকের ডানদিকে 120° কোণ করে বর্তমান হবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. আচরণ বিজ্ঞান কাকে বলে ?
উত্তর: আচরণ বিজ্ঞান (Behavioural science) জীববিজ্ঞানের যে শাখায় পোকামাকড়, পশুপাখি প্রভৃতি প্রাণীদের আচার-আচরণ নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের জীবনের অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়, তাকে আচরণ বিজ্ঞান বলে।
প্রশ্ন 2. আচরণবিদ্যা বা ইথোলজি (Ethology) কাকে বলে ?
উত্তর: জীববিদ্যার যে শাখায় বিভিন্ন প্রকার প্রাণীদের আচার- আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে আচরণবিদ্যা বা ইথোলজি বলে।
প্রশ্ন 3. আচরণের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর: আচরণের উদ্দেশ্য : আচার-আচরণের দ্বারা প্রাণীরা অস্তিত্ব রক্ষা করে এবং সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করে।ও আচরণের দ্বারা প্রাণীরা ভাব বিনিময়, আত্মরক্ষা, জনন, বংশবিস্তার প্রভৃতি ক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করে। আচরণ জীবের অভিব্যক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন 4. অপসারী অভিযোজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও ।
উত্তর: ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে একই গোষ্ঠীভুক্ত জীবদের ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের অভিযোজনকে অপসারী অভিযোজন (Divergent adaption) বলে। ২ উদাহরণ : বাদুড়ের খেচর অভিযোজন, তিমির জলজ অভিযোজন, ইঁদুরের ফোসোরিয়াল অভিযোজন, বানরের স্ক্যানসোরিয়াল অভিযোজন প্রভৃতি।
প্রশ্ন 5. অভিসারী অভিযোজন বলতে কী বোঝো ?
উত্তর: একই পরিবেশে বসবাসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত জীবের একই প্রকারের অভিযোজনকে অভিসারী অভিযোজন (Convergent adaptation) বলে। যেমন— পাখি ও বাদুড়ের খেচর অভিযোজন, মাছ ও তিমির জলজ অভিযোজন ।
প্রশ্ন 6. সমান্তরাল অভিযোজন কাকে বলে?
উত্তর: পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত একই রকম পরিবেশে বাস করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির যে প্রকার অভিযোজন দেখা যায়, তাকে সমান্তরাল অভিযোজন (Parallel adaptation) বলে। যেমন— ভারতীয় উপমহাদেশের থর মরুভূমির গিরগিটি ও দক্ষিণ আমেরিকার মরুভূমির গিরগিটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী হলেও উভয়েরই একই রকম মরুজ অভিযোজন ঘটেছে।
প্রশ্ন 7. মুখ্য অভিযোজন (Primary adaptation) কাকে বলে ?
উত্তর: কোনো জীবের পূর্বপুরুষ যে পরিবেশে উৎপত্তি লাভ করে সেই একই পরিবেশে বর্তমান জীবের অভিযোজনকে মুখ্য অভিযোজন ( Primary adaptation) বলে। যেমন— মাছের জলজ অভিযোজন।
প্রশ্ন 8. গৌণ অভিযোজন কাকে বলে ?
উত্তর: কোনো জীবের পূর্বপুরুষ যে পরিবেশে উৎপত্তি লাভ করে সেই পরিবেশ থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য পরিবেশে বসবাসের জন্য অভিযোজিত হলে, তাকে গৌণ অভিযোজন (Secondary adaptation) বলে। যেমন— স্তন্যপায়ী প্রাণী তিমির জলজ অভিযোজন।
প্রশ্ন 9. অভিযোজনগত বিকিরণ (Adaptive radiation) কাকে বলে ?
উত্তর: বিজ্ঞানী অসবোর্ন-এর মতে কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি লাভ করে বিভিন্ন জীবগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অভিযোজিত হলে, তাকে অভিযোজনগত বিকিরণ (Adaptive radiation) বলে। যেমন— একই পূর্বপুরুষ বা উদ্বংশীয় স্তন্যপায়ী জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করে তিমি জলে, বাদুড় আকাশে, ইঁদুর গর্তে, শ্লথ গাছে থাকার জন্য অভিযোজিত হয়।
প্রশ্ন 10. বি-অভিযোজন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: কোনো জীবদেহে দুটি ভিন্ন পরিবেশে বসবাসের জন্য দুই প্রকার উপযোগী অভিযোজন দেখা গেলে, তাকে দ্বি-অভিযোজন বলে। যেমন— ব্যাঙের স্থলজ অভিযোজন হল ফুসফুস (শ্বাসঅা)। এবং জলজ অভিযোজন হল লিপ্তপদ (সাঁতার কাটা) সৃষ্টি।
প্রশ্ন 11. জালাল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট কাকে বলে ?
উত্তর: যে-সমস্ত উদ্ভিদ শুरु পরিবেশে জন্মায় ও জলের তীব্র অভাব সহা করে বেঁচে থাকে, তাদের জাঙ্গল উদ্ভিদ বা জেরোফাইট (Xerophyte) বলে। At যেমন—ফণীমনসা, ক্যাকটাস, বাবলা প্রভৃতি। বাবলা
প্রশ্ন 12. পর্ণকাণ্ডের অভিযোজনগত গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: পর্ণকাণ্ডের অভিযোজনগত গুৰুত্ব : ও খাদ্য তৈরি পর্ণকাণ্ড ক্লোরোফিলযুক্ত হওয়ায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। ও জল সঞ্জয় : কাণ্ডে মিউসিলেজ নামক পিচ্ছিল পদার্থের উপস্থিতির জন্য জল সজ্জিত থাকে।
প্রশ্ন 13. প্রাক্টাসের পাতার দুটি অভিযোজনগত গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: পত্রকণ্টকের অভিযোজনগত গুরুত্ব :
1. ৰাষ্পমোচন হার রোধ : ক্যাকটাসের পাতাগুলি পত্রকণ্টকে রূপান্তরিত হয়। এই পত্রকণ্টকগুলি পত্ররন্থবিহীন ও ক্ষুদ্র আকৃতির হওয়ার জন্য ক্যাকটাসের বাষ্পমোচনের হার অনেকাংশে হ্রাস করে। ও
2. আত্মরক্ষা: কাঁটার উপস্থিতির জন্য তৃণভোজী প্রাণীরা ক্যাকটাসকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না।
প্রশ্ন 14. ক্যাকটাসে জল সঞ্চয়ের জন্য কীরূপ অভিযোজন দেখা যায় ?
উত্তর: ক্যাকটাসের জেন সায়র জন্য অভিযোজন : 1. পর্ণকাণ্ডের কোশে মিউসিলেজ থাকায় এদের জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 2. কাণ্ডে বিশেষ জলসায়ী কোশ বর্তমান।
প্রশ্ন 15. বাষ্পমোচন রোধে ক্যাকটাসের দুটি অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: বাম্পাাচন বোধে ক্যাকটাসের অভিযোজন: 1. পাতার সংখ্যা খুব কম বা পাতা কাটায় রূপান্তরিত হয়। 2. পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা কম এবং এগুলি নিবেশিত প্রকৃতির ও রোম দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। 3. পত্ররন্দ্র দিনেরবেলা বন্ধ থাকে এবং রাত্রিবেলা খোলা থাকে।
প্রশ্ন 16. রেডিয়া মিরাবিলিয়া কী?
উত্তর: মাছের পটকার পশ্চাদ প্রকোষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত রক্তজালিকা যা অগ্রপ্রকোষ্ঠের গ্যাস সৃষ্টিকারী গ্রন্থি বা রেডগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন গ্যাস শোষণ করে মাছকে জলের নীচে নামতে সাহায্য করে, তাকে রেটিয়া মিরাবিলিয়া বলে।
প্রশ্ন 17. পায়রার খেচর অভিযোজনে বায়ুথলির ভূমিকা লেখো। *** [ME 18,13,01) ppl 201
উত্তর: পায়রার খেচর অভিযাজান বায়ুথनর ভূমিকা:
1. ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত 9 টি বায়ুথলি বায়ুপূর্ণ অবস্থায় পায়রার দেহের ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। বায়ুথলিগুলি পাতলা পর্দাবৃত হয়। এবং পেশি ও রক্তজালকবিহীন হয়। ও ওড়ার সময় বায়ুথলিগুলি। প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অক্সিজেনের উৎস রূপে কাজ করে।
2• বায়ুথলিগুলি (Air sacs) পায়রার দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
জেনে রাখো: পায়রার বিভিন্ন বায়ুথলিগুলি হল সারভাইক্যাল, ইন্টারক্যাভিউিলার, অস্ত্র থোরাসিক, পশ্চাদ থোরাসিক এবং অ্যাবডোমিনাল এয়ার সাকি।
প্রশ্ন 18. দেহের ওজন কমানোর জন্য পায়রার কোন কোন অ্যের অবলুপ্তি ঘটেছে?
উত্তর: দেহের ওজন কমানোর জন্য পায়রার দাঁত, পাকস্থলী, পিত্তাশয়, মলাশয়, মুত্রাশয়, ডান ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালী (স্ত্রী পায়রার), শিশ্ন (পুরুষ পায়রার) অবলুপ্ত হয়েছে। 2
প্রশ্ন 19. লবণাম্বু উদ্ভিদ বা হ্যালোফাইট কাকে বলে ?
উত্তর: সমুদ্র উপকূলবর্তী শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটিতে (অত্যন্ত বেশি লবণ ঘনত্বযুক্ত মাটি) যে-সমস্ত উদ্ভিদ জন্মায় এবং বিশেষ অঙ্গ- সংস্থানিক ও শারীরবৃত্তীয় অভিযোজনের মাধ্যমে বেঁচে থাকে, তাদের লবণাম্বু উদ্ভিদ বা হ্যালোফাইট (Halophyte) বলে, এদের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদও বলা হয়। যেমন— সুন্দরী, গরাণ, গেওয়া প্রভৃতি উদ্ভিদ।
প্রশ্ন 20. শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি কাকে বলে?
উত্তর: সমুদ্র উপকূলবর্তী মাটিতে জলের প্রাচুর্যতা থাকা সত্ত্বেও অত্যধিক পরিমাণে ধাতব লবণ (যেমন- NaCl, MgCl2, Caco, MgSO4 প্রভৃতি) দ্রবীভূত থাকায় ওই জলের অভিস্রবণ চাপ বেশি। থাকে ফলে উদ্ভিদ এই জল শোষণ করতে পারে না। শারীরবৃত্তীয় কাজের অসুবিধাজনিত এই লবণাক্ত মাটিকে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটি (Physiologically Dry Soil) বলে।
প্রশ্ন 21. শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর কাকে বলে? *** [ME'06]
উত্তর: শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর (Pneumatophore) : লবণাম্বু বা ম্যানগ্রোভ বা হ্যালোফাইট উদ্ভিদের (যেমন— সুন্দরী, গরান, বোড়া প্রভৃতি) শাখামূলগুলি অভিকর্ষের বিপরীতে মাটি ভেদ করে গোঁজের আকারে ওপরে উঠে আসে এবং মূলে উপস্থিত শ্বাসছিদ্র বা নিউম্যাথোডের সাহায্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন (O2) গ্রহণ করে ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) বর্জন করে। শ্বাসকার্যে অংশ- গ্রহনকারী এই বিশেষ অভিযোজিত বায়ব শাখামূলগুলিকে শ্বাসমূল বা নিউম্যাটোফোর বলা হয়।
প্রশ্ন 22. শ্বাসমূলের অভিযোজনগত গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: শ্বাসমূলের অভিযোজনগত গুরুত্ব : 1• সমুদ্র উপকূলবর্তী বা নদীর মোহানা অঞ্চলের মাটি কর্দমাক্ত ও রঞ্জবিহীন হয় এবং জোয়ারের লবণ জলে অধিকাংশ সময় ডুবে থাকায় মাটিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। এর ফলে মূলের কোশের শ্বাসকার্য ব্যাহত হয়।
2. এই অসুবিধা দূর করার জন্য উদ্ভিদের শাখামূলগুলি মাটির ওপরে উঠে আসে এবং মূলের অগ্রভাগের অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শ্বাসছিদ্রের সাহায্যে বাতাস থেকে O2 গ্রহণ করে।
প্রশ্ন 23. ঠেসমূল কোথায় দেখা যায়? এর কাজ কী ?
উত্তর : সমুদ্র উপকূলবর্তী জোয়ারে প্লাবিত নরম কাদামাটিতে জন্মানো লবণাম্বু উদ্ভিদে (যেমন - গরান, গেঁওয়া, বোড়া প্রভৃতি) ঠেসমূল বা স্টিল্ট রুট (Stilt root) দেখা যায়।
কাজ : জলের চাপে যাতে গাছটি উপড়ে পড়ে না যায় তার জন্য উদ্ভিদকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করা ।
প্রশ্ন 24. অধিমূল (Root buttress) কাকে বলে ?
উত্তর: লবণাম্বু উদ্ভিদগুলি সমুদ্রের উপকুলবর্তী নরম মাটিতে জন্মায় বলে, এদের কাণ্ডকে দৃঢ়তা প্রদান করার জন্য কাণ্ডের গোড়ার চারপাশ থেকে চ্যাপটা তক্তার মতো কতগুলি অংশ বেরিয়ে গাছকে মাটির উপরে খাড়াভাবে থাকতে সাহায্য করে। এই অংশগুলিকে অধিমূল বা রুট বাটট্রেস বলে।
প্রশ্ন 25. জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম কাকে বলে ?
উত্তর: যে বিশেষ অঙ্কুরোদ্গম পদ্ধতিতে লবণাম্বু উদ্ভিদের ফল গাছে থাকাকালীন অবস্থায় ফলমধ্যস্থ বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং ফলত্বক ফাটিয়ে ভূণমূল ও বীজপত্রাবকাণ্ডটি বাইরে বেরিয়ে আসে, তাকে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম (Vivipa- rous germination) বলে। উদাহরণ— বোড়া জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম বা রাইজোফোরা (Rhizophora nucronata)।
প্রশ্ন 26. সুন্দরীগাছ কীভাবে তার দেহের অতিরিক্ত লবণ রেচিত করে ?
উত্তর: 1.জলের মাধ্যমে শোষিত লবণ পাতার লবণগ্রন্থি ও মূলের সাহায্যে দেহ থেকে বের করে দেয় এবং লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে উদ্ভিদদেহকে রক্ষা করে।
2. সাধারণত কচি পাতার তুলনায় পরিণত পাতায় অধিক লবণ সঞ্জয় করে রাখে। পাতা ঝড়ে পড়ার আগে সঞ্চিত লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং পত্রমোচনের দ্বারা লবণ দেহ থেকে ত্যাগ করে।
3. মূল মাটি থেকে অধিক লবণ শোষণে বাধাদান করে।
4• সুন্দরী গাছের কোশগুলির ভ্যাকুওল কোশের প্রায় 90% অংশ দখল করে থাকে। ভ্যাকুওলের কোশরসে এরা লবণ জমা রাখে এবং লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে কোশকে রক্ষা করে।
প্রশ্ন 27. সুন্দরীগাছের পাতার অভিযোজনগত গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: 1. বাম্পাमাচন হ্রাস : সুন্দরী গাছের পাতা অত্যন্ত পুরু ও চামড়ার মতো এবং কম পত্ররন্ধ্রযুক্ত হওয়ায় দেহ থেকে জল বাষ্পাকারে বেরিয়ে যেতে পারে না। এ ছাড়া পাতাগুলি মোমের প্রলেপযুক্ত হয়।
2. অতিরিক্ত লবণ রেচন : পাতায় অবস্থিত লবণ গ্রন্থি ও পত্রমোচনের মাধ্যমে সুন্দরী গাছ দেহ থেকে অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করে।
প্রশ্ন 28. লবণাম্বু উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ঘটে কেন?
উত্তর: লবণাণু উদ্ভিদে জরাযুদ্ধ অঙ্কুরোদগানর কারণ :
1. সমুদ্র উপকূলবর্তী অতিরিক্ত লবণাক্ত মাটিতে অঙ্কুরোদ্গম বাধা পায়।
2. এই অসুবিধা দূর করার জন্য গাছে থাকাকালীন ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটে (জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম)।
3. বীজপত্রাবকাও বৃদ্ধি পেয়ে গদার আকৃতি ধারণ করে এবং দীর্ঘ বীজপত্রাবকান্ডসহ অঙ্কুরিত বীজ মাটিতে পড়ে ও ভ্রুণমূলটি খাড়াভাবে নরম মাটিতে গেঁথে যায়।
4. এর ফলে জোয়ারের জলে বীজটির ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা। থাকে না এবং সুণের বেশিরভাগ অংশ নোনাজলের ওপরে থাকায় শিশু উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না।
প্রশ্ন 29. কোন লবণাম্বু উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম দেখা যায় না ? এদের বীজের অঙ্কুরোদগম কীভাবে ঘটে?
উত্তর: সুন্দরী গাছে জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গম ঘটে না। সুন্দরী গাছের বীজের অঙ্কুরোদ্গম : বর্ষাকালে অতিবর্ষণের সময় সমুদ্র উপকূলবর্তী মাটিতে লবণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায় এবং বীজের অঙ্কুরোদ্গমের সহায়ক হয়। এই সময় সুন্দরী গাছের পুষ্ট বীজ মাটিতে পড়ে ও অঙ্কুরোদ্গম ঘটে।
প্রশ্ন 30. উটের কুঁজে (Hump) কী থাকে? কুঁজ এদের কীভাবে সাহায্য করে।
উত্তর: উটের কুঁজে স্নেহপদার্থ বা চর্বি জমা থাকে। উটের যখন খাদ্য বা জলের অভাব হয় তখন উটের কুঁজে সজ্জিত ফ্যাট জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। এই জারণ ক্রিয়ায় জলও উৎপন্ন হয় (প্রতি 100 gm স্নেহ পদার্থ থেকে 110 gm জল তৈরি হয়)।।
প্রশ্ন 31. মৌমাছিরা নাচের মাধ্যমে কীসের সংকেত পৌঁছে দেয় ?
উত্তর: মৌমাছিরা নাচের মাধ্যমে খাদ্যের সন্ধান ও খাদ্যের অবস্থান এবং খাদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে সংকেত পৌঁছে দেয়।
প্রশ্ন 32. খাদ্যের সন্ধান ও অবস্থান জানানোর জন্য মৌমাছিরা কী কী নাচ প্রদর্শন করে ?
উত্তর: খাদ্যের সন্ধান ও অবস্থান জানানোর জন্য মৌমাছিরা দু ধরনের নাচ প্রদর্শন করে। যথা- ও ওয়াগটেল নৃত্য ও ও চক্রাকার নৃত্য।
প্রশ্ন 33. ওয়াগটেল নৃত্য (Wagtail Dance) কাকে বলে?
উত্তর: মৌচাক থেকে খাদ্যের অবস্থানের দূরত্ব 100 মিটারের বেশি হলে তার সংকেত প্রদানের জন্য কর্মী স্কাউট মৌমাছিরা চাকের সামনে উল্লম্বতলে ইংরেজি '৪' অক্ষরের ন্যায় যে নৃত্য প্রদর্শন করে, তাকে ওয়াগটেল নৃত্য বলে।
প্রশ্ন 34. চক্রাকার নৃত্য (Round Dance) কাকে বলে ?
উত্তর: মৌচাক থেকে খাদ্যের অবস্থানের দূরত্ব 100 মিটার বা তার কম হলে তার সন্ধান দেওয়ার জন্য কর্মী স্কাউট মৌমাছিরা যে নৃত্য প্রদর্শন করে, তাকে চক্রাকার নৃত্য বলে।
No comments:
Post a Comment