পরিবেশ দূষণ (Environmental Pollution): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ৫| class 10 life science chapter 5 questions answer |
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.দূষণ (Pollution) কাকে বলে ? দূষণকে কতভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উত্তর: দূষণ (Pollution) : প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশে বহিরাগত কোনো জৈব, অজৈব বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের অনুপ্রবেশের ফলে মাটি, বায়ু ও জলের ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলির অনভিপ্রেত যে-সমস্ত পরিবর্তনের দ্বারা মানবজীবন ও অন্যান্য জীব প্রজাতির ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি হয়, তাকে দূষণ বলে।
দূষণের প্রকারভেদ : দূষণকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়—
1• স্থান অনুসারে : প্রাকৃতিক পরিবেশের যে অংশে দূষণ ঘটেছে সেই অনুযায়ী দূষণকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন—বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ।
2.ভৌত প্রকৃতি অনুসারে : দূষকের প্রকৃতি অনুযায়ী দূষণ কয়েক প্রকারের হয়। যেমন— গ্যাসীয় দূষণ, ধুলো দূষণ, শব্দদূষণ, তাপদূষণ, তেজস্ক্রিয় দূষণ ৷
3• উৎস অনুসারে : উৎস অনুযায়ী দূষণ আবার দুই প্রকার— (i) প্রাকৃতিক দূষণ : প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই ঘটে। যেমন— অগ্ন্যুৎপাত, ধুলোর ঝড়, অণুজীব সংক্রমণ ইত্যাদি।
(ii) কৃত্রিম দূষণ : মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে যেমন— কৃষিজাত পণ্যের দ্বারা, যানবাহনের দ্বারা, গৃহস্থালির বস্তু দ্বারা দূষণ ঘটে।
জেনে রাখো : বিজ্ঞানীরা পরিবেশের সমস্যাকে 3P প্রতীকের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন। 3P হল মূলত Population, Poverty and Pollution.
প্রশ্ন 2. বায়ুদূষণ কাকে বলে? বায়ুদূষণের কারণগুলি লেখো।
উত্তর: বায়ুদূষণ (Air pollution) : বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা মনুষ্যজনিত কারণে সৃষ্ট কঠিন বর্জ্যপদার্থ বা অপ্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম কণা ও গ্যাসীয় পদার্থের অনুপাত স্বাভাবিকের থেকে কম বা বেশি হলে, পরিবেশে বায়ুর যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা মানুষসহ অন্যান্য জীবকুলের ক্ষতিসাধন করে, সেই বায়ুকে দূষিত বায়ু এবং সেই অবস্থাকে বায়ুদূষণ বলে।
বায়ুদূষণের কারণসমূহ :
A. প্রাকৃতিক কারণ : 1. অগ্ন্যুৎপাত : অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি গ্যাস এবং ধুলো, ছাই, ধোঁয়া প্রভৃতি বায়ুকে দূষিত করে।
2. দাবানল : দাবানলের ফলে সৃষ্ট গাছপালার ছাই, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড প্রভৃতি বায়ুতে মিশে দূষণ ঘটায়।
3. উদ্ভিদ ও প্রাণী : উদ্ভিদের রেণু, পচনশীল উদ্ভিদ থেকে সৃষ্ট CH, H, S, প্রাণীদেহের লোম, পালক, দাবানলের মাধ্যমে উৎপন্ন CO, CO, প্রভৃতি বায়ুকে দূষিত করে।
4. মহাজাগতিক বস্তু : ধূমকেতু, উল্কাপাত, মহাজাগতিক রশ্মি দ্বারাও বায়ুদূষণ ঘটে।
B. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ :
1• অরণ্য ধ্বংস : নির্বিচারে গাছপালা কাটার ফলে বায়ুমণ্ডলে CO-এর পরিমাণ বাড়ছে এবং O, এর পরিমাণ কমছে। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলে O2-CO, ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ও
2. জীবাশ্ম জ্বালানি : জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন হওয়া বিভিন্ন প্রকার গ্যাস বায়ুদূষণ ঘটায় — (i) বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা দহনের ফলে নির্গত গ্যাস, যেমন— কার্বন মনোক্সাইড (CO), কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO) ইত্যাদি। (ii) পেট্রোলিয়াম শোধনাগার, পেট্রোলিয়ামজাত জ্বালানির দ্বারা চালিত মোটরযান থেকে নির্গত CO, SO2, NO, এবং সিসা ।
3. শিল্প-কারখানাজাত : (i) বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড কারখানা থেকে নির্গত হওয়া অ্যাসিড বাষ্প (যেমন – NO, SO,, HCI, CI,) এবং কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত আম্লিক গ্যাসীয় পদার্থসমূহ। (ii) সিমেন্ট, অ্যাসবেস্টস শিল্পে প্রস্তুত সূক্ষ্ম ও স্থূল কঠিন কণা। (iii) বিভিন্ন প্রকার ধাতু নিষ্কাশনের সময় তাপীয় জারণ ও ভস্মীকরণের বিভিন্ন স্তরে নির্গত গ্যাস (SO2, CO) ও সূক্ষ্ম ধূলিকণা। (iv) অ্যামোনিয়া গ্যাস (NH3) তৈরির কারখানা ও জ্বলন্ত সিগারেটের নির্গত ধোঁয়া।
4. যানবাহন সৃষ্ট : যানবাহনের (যেমন— মোটরগাড়ি, বাস, রেলগাড়ি, এরোপ্লেন প্রভৃতি) পরিত্যক্ত ধোঁয়া বায়ুদূষণের 75%-এর জন্য দায়ী থাকে। এই ধোঁয়াতে প্রচুর পরিমাণে CO, CO2, SO হাইড্রোকার্বন, সিসা, NO, প্রভৃতি থাকে যা বায়ুকে দূষিত করে।
5• গ্রিন হাউস গ্যাস : শ্বসন ও দহনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড; AC মেশিন, ফ্রিজ থেকে উৎপন্ন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ধানখেত, জলাভূমি থেকে উৎপন্ন মিথেন; মোটরগাড়ির ধোঁয়া থেকে উৎপন্ন নাইট্রাস অক্সাইড এই সকল গ্রিন হাউস গ্যাসগুলি বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ©
6. SPM ও এরোসল : বায়ুতে ভাসমান নানারকম রাসায়নিক বাষ্প, ধোঁয়া ও কুয়াশা অর্থাৎ SPM (Suspended Particulate Matter) একত্রিত হয়ে এরোসল গঠন করে। এগুলি কখনো-কখনো ভারী ও কালো হয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে, যা প্রচণ্ড ক্ষতিকারক একটি বায়ুদূষক।
প্রশ্ন 3. বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির (Green House gas) পরিচয় দাও।
উত্তর: বায়ুমণ্ডলের গ্রিন হাউস গ্যাসগুলি হল : কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH3), নাইট্রাস অক্সাইড (NO), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), ওজোন (Og) ও জলীয় বাষ্প।
1. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) : বায়ুমণ্ডলে প্রায় 0.03% কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। জীবদেহে শ্বসন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, পেট্রোল) দহনের ফলে পরিবেশে অতিরিক্ত CO, উৎপন্ন হয়। পরিবেশে এই অতিরিক্ত CO-এর কিছুটা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে ও কিছুটা জল দ্বারা শোষিত হয়। তাই, পরিবেশে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ও গাছ কাটার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সৃষ্টিতে দায়ী গ্যাসগুলির মধ্যে এর প্রভাব প্রায় 56% ।
2. মিথেন (CH.) : ধানখেত ও অন্যান্য জলাজমিতে জৈব সার প্রয়োগ করা হয়। এই সারে উপস্থিত জৈব যৌগের পচনের ফলে CH, তৈরি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন তৈলখনি থেকেও মিথেন তৈরি হয়। কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় এর তাপধারণ ক্ষমতা 21 গুণ বেশি। বিশ্ব উন্নায়ণে এর প্রভাব প্রায় 18%।
3. নাইট্রাস অক্সাইড (NO) : বিভিন্ন রাসায়নিক সার, কলকারখানা, মোটরগাড়ির থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশে NO উৎপন্ন হয়। এর তাপধারণ ক্ষমতা CO2-এর প্রায় 200 গুণ। বিশ্ব উষায়ণে এর প্রভাব প্রায় 6% ।
4. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) : রেফ্রিজারেটার বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রে (AC মেশিন), সুগন্ধি স্প্রে-তে, ফোম প্রস্তুতিতে, ইলেকট্রনিক সার্কিট ঝালাইয়ের সময় CFC উৎপন্ন হয় ও বাতাসে মেশে। তাপ ধারণের ক্ষেত্রে এই গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে 15,000 – 20,000 গুণ শক্তিশালী। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে গহ্বর সৃষ্টি করে। বিশ্ব উষায়ণে এর প্রভাব প্রায় 13%।
5. ওজোন (O) ও জলীয় বাষ্প : নাইট্রোজেনের অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ও O.-এর উপস্থিতিতে সূর্যালোকের দ্বারা ধোঁয়াশা সৃষ্টির সময় ট্রপোস্ফিয়ারে O, বা ওজোন সৃষ্টি হয়। ফ্লুওরিন সমন্বিত যৌগের বিয়োজনের ফলে ও উৎপন্ন হয়। নিম্নস্তরের ওজোন ভূপৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধির জন্য অনেকটা দায়ী। কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় এর তাপধারণ ক্ষমতা প্রায় 2,000 গুণ বেশি। এর প্রভাব প্রায় 7%। এ ছাড়া বিভিন্ন জলাশয় থেকে ও উদ্ভিদের বাষ্পমোচনের ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প সৃষ্টি হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : বায়ুদূষকরূপে গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহের একটি করে উৎসের নাম লেখো।
জেনে রাখো : প্রাণীজগৎ দ্বারা প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে 2 x 10° টন CO, পরিত্যক্ত হয় এবং তা বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত হয়ে ব্যাপক হারে বিশ্ব উয়ায়ণ ঘটায়।
প্রশ্ন 4. ভাসমান পদার্থ কণা বা SPM (Suspended Particulate Matter) কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার SPM-এর উৎসগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর: ভাসমান পদার্থ কণা বা SPM : 0.002 (মাইক্রন) থেকে 500 ব্যাসযুক্ত কঠিন বা তরল পদার্থের অতি সূক্ষ্মকণা বাতাসে ভাসমান অবস্থায় বিস্তার লাভ করলে যে এরোসল (aerosol) তৈরি করে, তাকে ভাসমান পদার্থ কণা বা SPM (Suspended Particu late Matter) বলে।
বিভিন্ন প্রকার SPM এর উৎস : 1. ধোঁয়া (Smoke) : জীবাশ্ম জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে সৃষ্টি হয়। এর কণাগুলির ব্যাস 0.1 পর্যন্ত হতে পারে, এরা বাতাসে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
2. ধূলো (Dust) : সিমেন্ট কারখানায়, হাসকিং মেশিন চলার সময়, পাথর ভাঙার সময়, ধূলিঝড়ের সময় 1-100 ব্যাসবিশিষ্ট কণা বাতাসে মেশে। এগুলিকে ধুলোকণা বলা হয়।
3. কুয়াশা (Mist) : কিছু গ্যাসীয় পদার্থ এবং কিছু পদার্থের বাষ্প বাতাসে ঘনীভূত হয়ে 10 ব্যাসবিশিষ্ট তরল কণা বা কুয়াশা তৈরি করে।
4. স্প্রে (Spray) : রং, তরল সুগন্ধি, কীটনাশক ও আগাছানাশকের সূক্ষ্ম কণা বাতাসে ছড়িয়ে ভাসমান কণা হিসেবে অবস্থান করে।
5. ধূম (Fume) : বাতাসের মধ্যে কোনো তরল ঘনীভূত হয়ে অথবা, পাতনের দ্বারা বা জৈব পদার্থ উত্তপ্ত করার ফলে ধূম সৃষ্টি হয়।
6. ফ্লাই অ্যাশ (Fly ash) : কয়লার দহনের সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়ার সঙ্গে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কঠিন ছাই-এর কণা থাকে, এদের ফ্লাই অ্যাশ বলে।
জেনে রাখো: SPM-এর আয়তন 1 um হলে, তাকে ধুলো (Dust), তরল হলে তাকে কুয়াশা (Mist) এবং এর আয়তন 1 um-এর নীচে হলে, একে এরোসল (Aerosol) বলে।
প্রশ্ন 5. বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি হলো—
1. পরিবেশের উপর প্রভাব: 1. বায়ুদূষণের ফলে ধোঁয়াশা (Smog)-এর সৃষ্টি হয় যা বাতাসকে অস্পষ্ট করে তোলে।
2• বায়ুদূষণের ফলে যে অম্লবৃষ্টি (Acid rain)-এর সৃষ্টি হয় তা জল, মাটিকে আম্লিক করে তোলে।
3• গ্রিন হাউস গ্যাসগুলি বিশ্ব উন্নায়ন ঘটায়। এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন, মেরু প্রদেশের বরফ গলন, সমুদ্রের উষ্ণতা ও উচ্চতা বৃদ্ধি, মিষ্টিজলের সংকট, মরুভূমির বিস্তৃতি ঘটে।।
4. CFC গ্যাস ওজোন স্তর বিনষ্ট করে। এর ফলে ওজোন গহ্বর ( Ozone hole) সৃষ্টি হয়। ওজোন গহ্বরের মাধ্যমে UV রশ্মি প্রবেশ করে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়।
মানব স্বাস্থের উপর প্রভাব :
1. তাৎক্ষণিক প্রভাব ধূলিকণার সংস্পর্শে এলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানি (Asthma) ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া চোখে ঝাপসা দেখা, জ্বালা করা ইত্যাদি হয়ে থাকে।
2. দীর্ঘ স্থায়ী প্রভাব: (1) SO, NO, ও O, গ্যাসের প্রভাবে মানুষের ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসেমা ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। (i) বাতাসে উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার কণা দেহে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়ের ফলে কিছু অসুখ দেখা যায়। যেমন- সিলিকনের জন্য সিলিকোসিস, অ্যাসবেস্টসের জন্য অ্যাসবেস্টোসিস, কয়লার গুঁড়োর জন্য অ্যানথ্রাকোসিস, সুতোর আঁশের জন্য বিজিনোসিস, লৌহ কণার জন্য সিডারোসিস, সিগারেটের ধোঁয়ার জন্য ফুসফুসে ক্যানসার ইত্যাদি রোগ হয়। (ii) বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জন্য যক্ষ্মা হুপিং কাশি, হাম, বসন্ত ইত্যাদি রোগ হয়।
অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব :
1. বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন প্রাণী (যেমন— গোরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি) নানা রোগে আক্রান্ত হয় ও তাদের বৃদ্ধি এবং প্রজনন বাধাপ্রাপ্ত হয়।
2. বায়ুদূষণের (কীটনাশক স্প্রে করার জন্য) ফলে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও পাখিদের সংখ্যা যথেষ্ট কমে গেছে।
উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : 1. বিভিন্ন ধরনের বায়ুদূষক উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন, বাষ্পমোচন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
2. SO,-এর প্রভাবে উদ্ভিদ দেহে নেক্রোসিস ঘটে।
3. NO-এর প্রভাবে সবুজ উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোসিস দেখা যায়।
4• অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বহু অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে।
পরিবেশের ওপর প্রভাব :
1• SPM-এর প্রভাবে বাড়িঘর, মূল্যবান তৈলচিত্র বিবর্ণ হয়।
2. মার্বেল পাথর নির্মিত বিভিন্ন স্থাপত্য শিল্প, স্মৃতিসৌধ, অট্টালিকা ইত্যাদি অম্লবৃষ্টির প্রভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। যেমন— তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইত্যাদি।
3. SO2, NO.-এর বিক্রিয়ার ফলে চামড়া ও প্লাস্টিকের দ্রব্য সামগ্রীর ক্ষয় হয়।
4. ওজোন গ্যাসের প্রভাবে রবার নির্মিত সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের উপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব আলোচনা করো।
প্রশ্ন 6. জলদূষণ কাকে বলে? জলদূষণের বিভিন্ন কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: জলদূষণ (Water Pollution) : বিভিন্ন বর্জ্যপদার্থ ও জীবাণু জলে মিশে জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যাবলীর পরিবর্তনের ফলে জলের গুণমান নষ্ট হয় এবং জল যে অবস্থায় মানুষ ও অন্যান্য জীবদেহে গ্রহণের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তাকে দূষিত জল বলে এবং সেই অবস্থাকে জলদূষণ বলে।
জলদূষণের উৎস /কারণ :
1. শিল্পঘটিত দূষক : বিভিন্ন প্রকার শিল্পঘটিত বর্জ্যপদার্থ থেকে নানাপ্রকার জৈব ও অজৈব রাসায়নিক বস্তু, যেমন— অ্যামোনিয়া, ফেনল, ক্লোরিন, সায়ানাইড, অ্যালকালি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে বিভিন্ন ধাতব বর্জ্য, যেমন- পারদ, সিসা, ক্রোমিয়াম তৈরি হয়। এই সকল পদার্থ নালা বা নর্দমার দ্বারা বাহিত হয়ে জলাশয়ে মেশে এবং জলদূষণ ঘটায়।
2. গৃহস্থালির আবর্জনা : বাড়ির বিভিন্ন প্রকার আবর্জনা দীর্ঘদিন ধরে জমে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে, যেগুলি জলে মিশে জলকে দূষিত করে।
3.কৃষিজাত দূষক : বিভিন্ন প্রকার কৃষি-সহায়ক বস্তু, যেমন— আগাছানাশক, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক প্রভৃতি পদার্থ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক সার বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে মেশে ও জলকে দূষিত করে।
4. শহরের আবর্জনা : বর্ষার সময়ে শহরের বিভিন্ন নর্দমা, ডাস্টবিন, খাটাল, ভ্যাট প্রভৃতির দূষিত জল বিভিন্ন জলাশয়ের জলকে দূষিত করে।
5• তেজস্ক্রিয় দূষক : পারমাণবিক চুল্লি থেকে নির্গত নানারকম তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ইউরেনিয়াম, স্ট্রনশিয়াম, সিজিয়াম ইত্যাদি) সমন্বিত আবর্জনা সমুদ্রের জলে নিক্ষিপ্ত হয় ও জলকে দূষিত করে তোলে।
6.তেল বা পেট্রোল পঞ্চম অধ্যায় : পরিবেশ দূষণ : সমুদ্রের তলদেশে পেট্রোলিয়ামের লাইন লিক করে বা পেট্রোলিয়াম মিশে গিয়ে জলদূষণ ঘটায়। ফলে, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়। বোঝাই জাহাজ ডুবে গিয়ে সমুদ্রের জলে তেল ও
7. বিবিধ : বিভিন্ন জলাশয়ে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে জামাকাপড় কাচা, বিভিন্ন বাসনপত্র ধোয়া এবং গবাদি পশুদের স্নান করানোর ফলে জলদূষণ ঘটে। প্লাস্টিকের প্যাকেট ও প্রতিমা বিসর্জনেও জল দূষিত হয়।
8• উত্তপ্ত জল : বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত কলকারখানা থেকে অনেক সময় উত্তপ্ত জল সরাসরি নদীর জলে মেশে। এর ফলে নদীর জলের তাপমাত্রা আঞ্চলিকভাবে বৃদ্ধি পায় ও অনেক জলজ জীবের মৃত্যু হয়।
জেনে রাখো: রাজস্থানের ভরতপুরের পাখিরালয়ে হ্রদের জলে SO-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় যাযাবর পাখির সংখ্যা কমে গেছে। আমেরিকা ও সুইডেনের বহু হ্রদ অম্লবৃষ্টির জন্য মাছ শূন্য হয়ে গেছে।
প্রশ্ন 7. জলদূষণে জীবের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি লেখো।
উত্তর: জলদূষণের ফলে জীবের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি হল—
1• জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ও রোগসৃষ্টি :
(i) দূষিত জল বিভিন্ন প্রকার রোগজীবাণুর বাহক। যেমন— কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশা, আন্ত্রিক প্রভৃতি।
(ii) তামা, সালফার, পারদ, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি দ্বারা দূষিত জল ব্যবহারের ফলে ত্বকের নানা প্রকার অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(iii) জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে গেলে ওই জল থেকে আর্সেনিকোসিস রোগ হয়। জলে ফ্লুওরাইড দূষণ ঘটলে ফ্লুওরোসিস রোগ হয়।
2. জলজ প্রাণীদের ওপর প্রভাব : জাহাজ-এর ট্যাঙ্কার থেকে তেল সমুদ্রের জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে যে দূষণ সৃষ্টি করে, তা সামুদ্রিক পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বহু সামুদ্রিক জীব মারা যায় ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়। DDT, BHC প্রভৃতি কীটনাশক জলে মিশে জলকে দূষিত করে এবং জলে বসবাসকারী খাদ্য-খাদক শৃঙ্খলে আবদ্ধ জুপ্ল্যাংকটন, ছোটো মাছ, বড়ো মাছ, পাখি প্রভৃতি জীবকূলের শরীরে এই কীটনাশক ক্রমবর্ধমান হারে সঞ্চিত হয়ে জৈববিবর্ধন (Biomag- nification) ঘটায়। অবশেষে প্রাণীদের মৃত্যু ঘটে।
3. ইউট্রোফিকেশন : জলাশয়ে নাইট্রেট ফসফেট জাতীয় সার বা ডিটারজেন্ট এসে মিশলে তা ফাইটোপ্ল্যাংকটনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই প্রক্রিয়াকে ইউট্রোফিকেশন (Eutrophication) বলে। এর ফলে, অ্যালগাল ব্লুম (Algal bloom) সৃষ্টি হয়, যার থেকে নির্গত টক্সিন-এর প্রভাবে মাছ, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদির মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া, শৈবাল পচনের ফলে জলের BOD বেড়ে যায় ও মাছের মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পায়।
4. কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব : কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত দূষিত জল উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুদের ধ্বংস করে। ফলে, মৃত্তিকার উর্বরতা বিনষ্ট হয়, যা ফসলের উৎপাদনে ক্ষমতা হ্রাস করে।
5. পাখিদের ওপর প্রভাব : দূষিত জলের মাছ, পোকামাকড় খেলে পাখিদের ওড়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এবং পালক খসে যায়। অনেক সময় সমুদ্রের পড়ে থাকা তেলে স্নাত হয়ে যাওয়া পাখিদের শরীরে অপরিশোধিত তেল প্রবেশ করে। এর ফলে, তাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, চামড়া, চোখের ক্ষতি করে। সমুদ্রের জলে অপরিশোধিত তেল দূষণের প্রভাব
প্রশ্ন 8. মৃত্তিকা দূষণ কাকে বলে? এই দূষণের কারণগুলি কী কী আলোচনা করো।
উত্তর : মৃত্তিকা দূষণ (Soil Pollution) : মাটির সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব দূষক পদার্থ মিশে মাটির উর্বরতা ও চরিত্রের পরিবর্তন ঘটালে, তাকে মৃত্তিকা দূষণ বলে।
মৃত্তিকা দূষণের কারণগুলি হল— 1. সার (Fertilizer) : বিভিন্ন রাসায়নিক সার (যেমন— নাইট্রেট, ফসফেট, অ্যামোনিয়া জাতীয় সার) দ্রুত এবং অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, এই সকল রাসায়নিক সারের অধিক ব্যবহার ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। জমিতে এই সার অধিক ব্যবহার করলে সারগুলির অতিরিক্ত অংশ বৃষ্টির জলে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী জলাশয়ের জলকে দূষিত করে। এর প্রভাবে সেই জলাশয়ের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে এবং এরা জলজ অক্সিজেন প্রচুর পরিমাণে শোষণ করে। ফলে, অক্সিজেনের অভাবে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যায়। ও
2. আগাছানাশক (Herbicides) : চাষের জমিতে সৃষ্টি হওয়া অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদগুলিকে আগাছা বলে। নানাপ্রকার যৌগ, যেমন— MCPA (মিথাইল ক্লোরোপ্রোপিওনিক অ্যাসিড), মনিউরন (Monuron), 2.4-D (Dichlorophenoxy acetic acid) আগাছানাশক হিসেবে মাটিতে প্রয়োগ করা হয়। এই সকল উপাদান মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উপকারী অণুজীবগুলিকে ধ্বংস করে।
3. কীটনাশক (Pesticide) : যে সকল যৌগ জমির ফসলের পক্ষে ক্ষতিকারক কীটদের বিনাশ করে, তাদের কীটনাশক বলে। এরা প্রধানত দু-প্রকার- (i) অরগ্যানোক্লোরিন, উদাহরণ— DDT, BHC ইত্যাদি এবং (ii) অরগ্যানোফসফেট, উদাহরণ- ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি। এই সকল যৌগগুলি খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করার পর বায়োম্যাগনিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় অথবা মাটিতে জমা হয়ে মাটির বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক আরও ক্ষতিকারক যৌগে পরিবর্তিত হয়। এ ছাড়াও আরও দুটি কারণ হল –
4. অক্ষয়িষ্ণু পদার্থ (Non-degradable) : বিভিন্ন অভঙ্গুর পদার্থ যেমন— পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য সহজে নষ্ট হয় না বা ধ্বংস হয় না। এরা মাটিতে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায় ও মাটির প্রচন্ড ক্ষতি করে।
5. কলকারখানাজাত যৌগ : কলকারখানায় উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার ছাই, বর্জ্যপদার্থ, আবর্জনা প্রভৃতির মধ্যে সিসা, পারদ, অ্যাসিড, লবণ, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি থাকে যা মাটিতে মিশে যায়। ফলে, মাটি দূষিত হয় এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : সার, আগাছা, কীটনাশক কীভাবে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায় ?
Advanced Studies: বিভিন্ন মোটরগাড়িতে সিসাবিহীন পেট্রোল ব্যবহার করলে দূষণ কম হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, 15 বছরের বেশি পুরোনো গাড়িতে দূষণ বেশি হয়। ইউরোপে বিভিন্ন ইউরোবিধি (Euro stage) চালু করে দূষণ কমানো গেছে। আমাদের রাজ্যেও 1st January, 2001 থেকে ইউরোবিধি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভারতবর্ষে এপ্রিল, 2010 সাল থেকে ভারতবিধি (Bharat stage) চালু করে মোটরগাড়িকে দূষণমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন 9. প্রাণীদের ওপর মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব বা ফলাফলগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব / ফলাফল :
1. স্থলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব : (i) মৃত্তিকা দূষণের ফলে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় জননকার্যে বিঘ্ন ঘটে। ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়। (ii) খাদ্য সংকট দেখতে পাওয়া যায়। (iii) খাদ্যশৃঙ্খল প্রভাবিত হয় ও বায়োম্যাগনিফিকেশন ঘটে। (iv) পাখির ডিমের খোলক অনেক পাতলা হয়ে যায়। (v) ইংল্যান্ডের কৃষিজমিতে রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চ্যাফফিঞ্চ পাখিরা মারা যায়। এই একই কারণে আমেরিকাতে সারা বছরে প্রায় 720 লক্ষ পাখি মারা যায়। ব্যান্ড ঈগলও এই রকম একটি পাখির উদাহরণ।
2. জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব : (i) মাছেদের গঠনের পরিবর্তন হয় ও বহু মাছ মারা যায়। (ii) খাদ্য সংকট দেখা যায় ও বাসস্থানের পরিবেশ বিনষ্ট হয়। (ii) উভচর প্রাণীদের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ রূপান্তর ঘটে। ফলে, গঠনগত অসম্পূর্ণতা লক্ষ করা যায়। (iv) এন্ডোসালফান নামক যৌগের প্রভাবে বিভিন্ন মাছ ও উভচরের লার্ভা ধ্বংস হয়।
প্রশ্ন 10. শব্দদূষণ কাকে বলে? যানবাহন এবং শিল্প কীভাবে শব্দদূষণ ঘটায় তা বর্ণনা করো।
উত্তর: শব্দদূষণ (Noise or Sound Pollution) : মানুষের সহ্য ক্ষমতার অতিরিক্ত মাত্রার শব্দ যখন মানুষের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলির ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং তার মানসিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, তখন তাকে শব্দদূষণ বলে।
শব্দদূষণে যানবাহন ও শিল্পের প্রভাব :
1. যানবাহন দ্বারা শব্দদূষণ : শব্দদূষণের অন্যতম কারণ হল বিভিন্ন যানবাহন। (i) রেলগাড়ি চলার সময় খুবই যান্ত্রিক শব্দের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া স্টেশনে পৌঁছোনো ও স্টেশন ছাড়ার সময় ট্রেনের হুইসেলের শব্দ বহুদূর থেকেও শোনা যায়। তাই রেলগাড়িতে যাতায়াতকারী যাত্রীরা এবং রেললাইনের নিকটে যারা বসবাস করে, তারা শব্দদূষণের প্রকোপে পড়ে। (ii) এরোপ্লেন বা হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার সময়ে প্রচুর আওয়াজ হয়। এই বিকট আওয়াজ শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। (iii) এ ছাড়া বাস, লরি, ট্যাক্সি, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেল প্রভৃতি যানবাহনের বৈদ্যুতিক হর্নের বিকট শব্দের দ্বারা শব্দদূষণ ঘটে।
2. শিল্পের ফলে শব্দদূষণ : বিভিন্ন শিল্প-কারখানার যন্ত্রের দ্বারা ব্যাপক শব্দদূষণ ঘটে— (i) ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানায় বিভিন্ন মেশিনে বহুক্ষণ ধরে তীব্র আওয়াজ হয়। ফলে, এই কারখানার কর্মচারীরা তীব্র শব্দদূষণের শিকার হয়। (ii) বই বা খবরের কাগজ বা অন্যান্য কাগজ তৈরির প্রেসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকেও শব্দদূষণ ঘটে। (iii) গাড়ি তৈরি ও গাড়ি সারাইয়ের কারখানায় খুব শব্দদূষণ হয় । এইসকল শিল্প-কারখানার কর্মচারীরাই শুধু নয়, এইসকল শিল্প-কারখানার আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরাও এই শব্দদূষণের শিকার হয়।
প্রশ্ন 11. শব্দদূষণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: শব্দদূষণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব :
1. শ্রবণযন্ত্রের ওপর প্রভাব : দীর্ঘক্ষণ উচ্চ ডেসিবেল মাত্রার শব্দের মধ্যে থাকলে মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে। কারণ এই উচ্চ ডেসিবেলের শব্দে (100 ডেসিবেলের বেশি) অন্তঃকর্ণের শ্রবণযন্ত্র বা 'অরগ্যান অব কটি' নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি 160 ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দে কানের পর্দা ফেটে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে যায়।
2. মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব : উচ্চ ডেসিবেলযুক্ত শব্দ মানুষের মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় ও মানসিক অবসাদ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রাও ঘটে। উচ্চমাত্রার শব্দ স্বয়ংক্রিয় নার্ভতন্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
3. হূৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব : অধিক মাত্রার শব্দ হৃৎস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি করে। এর প্রভাবে রক্তে ক্যালশিয়াম (Ca)-এর মাত্রা হ্রাস পায়। গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধমনির মধ্যে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায় ।
4. শ্বাসকার্যের ওপর প্রভাব : উচ্চমাত্রার শব্দের প্রভাবে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তিত হয়। এর ফলে, শ্বাসক্রিয়ার গভীরতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ দ্রুততর হয়।
5. পরিবেশের ওপর প্রভাব : বিভিন্ন প্রকার প্রাণী শব্দদূষণের কারণে প্রজননে অংশ নিতে পারে না। ফলে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : (1) মানুষের উপর শব্দদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব উল্লেখ করো। পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন (2) শব্দদূষণ মানব শরীরে কান ও হৃৎপিণ্ডের উপর কী কী ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে ?
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. দূষণের উৎপত্তির প্রধান তিনটি কারণ লেখো।
উত্তর: দূষণের উৎপত্তির প্রধান তিনটি কারণ :
1. আমাদের দেশে শিল্পে উন্নতি করার জন্য যেখানে সেখানে নির্বিচারে গাছ কেটে কলকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে, যার থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া বায়ুকে দূষিত করছে।
2. নগর স্থাপনের জন্য অবৈজ্ঞানিকভাবে বনজ সম্পদের উচ্ছেদ করার ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
3• এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, মাইক, শব্দবাজি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে।
No comments:
Post a Comment