অভিব্যক্তি ও অভিযোজন (Evolution and Adaptation): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ৪.১ | class 10 life science chapter 4.1 question answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন. অভিব্যক্তি কাকে বলে? রাসায়নিক অভিব্যক্তি ও জৈব অভিব্যক্তি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: অভিব্যক্তি (Evolution) : যে মন্থর এবং গতিশীল প্রক্রিয়ায় বংশানুক্রমে উদ্ংশীয় সরলতম সত্তা থেকে নানাপ্রকার পরিবর্তন ও রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে নতুন এবং অপেক্ষাকৃত জটিলতম সত্তার উৎপত্তি ঘটে, তাকে বিবর্তন বা অভিব্যক্তি বলে।
রাসায়নিক অভিব্যক্তি (Chemical Evolution) : যে পদ্ধতিতে অজৈব রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত জৈব যৌগের পরিবর্তনে জীবদেহের ক্রমবিকাশ ঘটে, তাকে রাসায়নিক অভিব্যক্তি বা রাসায়নিক বিবর্তন বলে। জীব সৃষ্টির প্রাক মুহূর্তে রাসায়নিক অভিব্যক্তির ফলেই প্রথম জীবকোশ গঠিত হয়। অর্থাৎ, রাসায়নিক অভিব্যক্তি জৈব অভিব্যক্তিকে সাহায্য করে।
জৈব অভিব্যক্তি (Organic Evolution) : যে প্রাকৃতিক নিরবিচ্ছিন্ন মন্থর অথচ গতিশীল পদ্ধতিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরল উদ্ংশীয় জীব থেকে জটিলতর উন্নত জীবের সৃষ্টি হয় বা জীবের দেহাংশের পরিবর্তন ঘটে, তাকে জৈব অভিব্যক্তি বলে।
Advanced Studies
অভিব্যক্তির প্রকারভেদ : জীবগোষ্ঠী থেকে ধারাবাহিক ও বংশানুক্রমিকভাবে সূক্ষ্ম পরিবর্তনের
1. ক্ষুদ্র অভিব্যক্তি (Microevolution) : পৃথিবীতে কোনো মাধ্যমে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হলে, তাকে ক্ষুদ্র অভিব্যক্তি বা মাইক্রোইভোলিউশন বলে। যেমন- ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সময় সাদা পেপার্ড মথ থেকে কালো রঙের পেপার্ড মথের সৃষ্টি হয়।
2. বৃহৎ অভিব্যক্তি (Macroevolution) : পৃথিবীতে কোনো জীবগোষ্ঠী থেকে অভিযোজনের ফলে ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হলে, তাকে বৃহৎ অভিব্যক্তি বা ম্যাক্রোইভোলিউশন বলে। যেমন—সপুষ্পক উদ্ভিদের উৎপত্তি।
3. উন্নতিসূচক অভিব্যক্তি (Progressive evolution) : যে পরিবর্তনের ফলে সরল জীব থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নত, জটিল গঠনযুক্ত জীবের উৎপত্তি ঘটে, তাকে উন্নতিসূচক অভিব্যক্তি বলে। যেমন— অস্টিকথিস মৎস্য শ্রেণি থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে অ্যাম্ফিবিয়া শ্রেণির উৎপত্তি ঘটে।
4.অবনতিসূচক অভিব্যক্তি (Retrogressive evolution) : যে পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবের জটিল গঠন সরল গঠনে পরিণত হয়, তাকে অবনতিসূচক অভিব্যক্তি বলে। যেমন— প্রাইমেট গোষ্ঠীর সক্রিয় কক্সিসসহ লেজ মানুষের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
5. সহঅভিব্যক্তি (Co-evolution) : বাস্তুতান্ত্রিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। একাধিক প্রজাতির একইসঙ্গে পরিবর্তন ঘটলে, তাকে সহঅভিব্যক্তি বলে। যেমন— পোষকের সঙ্গে সঙ্গে রোগজীবাণুর বিবর্তন।
6. কোয়ান্টাম বিবর্তন (Quantum evolution): যে বিবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত একাধিক প্রজাতি গঠিত হয়, তাকে কোয়ান্টাম অভিব্যক্তি বলে। যেমন- ডানাযুক্ত পতঙ্গ থেকে ডানাবিহীন পতঙ্গের উৎপত্তি লাভ।
7• সমান্তরাল অভিব্যক্তি (Parallel evolution) : একই উদ্ংশীয় জীব থেকে উৎপন্ন দুটি জীবগোষ্ঠী একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে জীবের যে সাদৃশ্যমূলক বিবর্তন ঘটে, তাকে সমান্তরাল অভিব্যক্তি বলে। যেমন— অ্যান্টিলোপ ও হরিণদের শক্ত জমির ওপর দিয়ে দ্রুত দৌড়ানোর জন্য দ্বিবিভক্ত ঘুরের উৎপত্তি।
প্রশ্ন 2. পৃথিবীতে জীবের উৎপত্তি কীভাবে ঘটে তা ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
উত্তর: জীবের উদ্ভাবন কুমনিবর্তনের হুক- মুক্ত অণু C (কার্বন), H (হাইড্রোজেন), N (নাইট্রোজেন) প্রথম দশা অজৈব যৌগ সৃষ্টি CH – মিথেন HO - জলীয় বাষ্প NH, অ্যামোনিয়াম আয়ন HCN- হাইড্রোজেন সায়ানাইড দ্বিতীয় দশা সরল জৈব যৌগ সৃষ্টি অ্যামাইনো অ্যাসিড, শর্করা (মনোস্যাকারাইড), ফ্যাটি অ্যাসিড, পিউরিন, পিরিমিডিন প্রভৃতি তৃতীয় দশা জটিল জৈব যৌগ সৃষ্টি | নিউক্লিওটাইড (পেন্টোজ শর্করা + N. বেস + ফসফেট) নিউক্লিক অ্যাসিড (নিউক্লিওটাইড + নিউক্লিওটাইড) প্রোটিন-উৎসেচক (অ্যামাইনো অ্যাসিড + অ্যামাইনো অ্যাসিড) লিপিড ও ফ্যাট (গ্লিসারল + ফ্যাটি অ্যাসিড) পলিস্যাকারাইড (শর্করা + শর্করা) চতুর্থ দশা কোয়াসারডেট গঠন নিউক্লিয় প্রোটিন কোয়াসারভেট – পরিব্যক্তি জনন (স্বপ্নজননক্ষমতা প্রাপ্তি) পুষ্টি একত্রিতকরণ ক্ষমতা পণপ্তম দশা বায়োজেনি ।। রাসায়নিক বিবর্তন (Chemical evolution) প্রাথমিক কোশ (প্রোটোৰায়োন্ট) সংশ্লেষ ও বৃদ্ধি পরিস্ফুরণ ও বিভাজন সন্ধান ষষ্ঠ দশা কখনোজেনি প্রাথমিক কোশ, পরজীবী, মৃতজীবী, রাসায়নিক সংশ্লেষকারী, সালোকসংশ্লেষকারী সপ্তম দশা অক্সিজেনের আবির্ভ পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেন এবং সবাত শ্বসনকারী জীবের উৎপত্তি।
প্রশ্ন 3. পৃথিবীতে আবির্ভূত প্রথম জীবতন্ত্র কোনটি? প্রথম জীবতন্ত্রের বিবর্তন কীভাবে ঘটেছিল ?
উত্তর: পৃথিবীতে আবির্ভূত প্রথম জীবতন্ত্র (Living system) হল প্রোটোসেল (Protocell) বা ইয়োবায়োন্ট (Eobiont) বা প্রোটোবায়োন্ট (Protobiont)। পরিবর্তিত পরিবেশে প্রোটোসেল বা প্রোটোবায়োন্ট পর্দাবৃত হয় এবং প্রথম কোশীয় অস্তিত্ব সৃষ্টি করে।
প্রোটোসেলের বিবর্তন নিম্নলিখিতভাবে ঘাট -
1• মোনেরা গোষ্ঠীর উৎপত্তি : সুগঠিত নিউক্লিয়াসবিহীন প্রোক্যারিওটিক কোশ উৎপত্তি লাভ করে। যেমন— ব্যাকটেরিয়া।
2.প্রোটিস্টা গোষ্ঠীর উৎপত্তি : সুগঠিত আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত ইউক্যারিওটিক কোশবিশিষ্ট জীবের উৎপত্তি ঘটে। যেমন— অ্যামিবা, ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস, ডায়াটমস প্রভৃতি।
3. আলোক স্বভোজী গোষ্ঠীর উৎপত্তি : পরিবর্তিত পরিবেশে কিছু রাসায়নিক সংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়াতে ক্লোরোফিলের আবির্ভাব ঘটে। এই ক্লোরোফিলযুক্ত জীবগুলি জল ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়াটি সালোকসংশ্লেষ (Photosynthes sis) এবং জীবেরা সালোকসংশ্লেষকারী জীব বা আলোক স্বভোজী (Photoautotrophs) নামে পরিচিত হয়।
4. সায়ানোব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি : প্রায় 3000_3500 মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম অক্সিজেন উৎপাদনকারী এবং সবাত শ্বসনকারী জীবের আবির্ভাব ঘটে। এরা হল সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ-সবুজ শৈবাল।
প্রশ্ন 4. আদি পৃথিবীতে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগের উৎপত্তি ঘটে - এর সমর্থনে মিলার ও উরের পরীক্ষাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আদি পৃথিবীতে আজব যৌগ থেকে জৈব যৌগের উৎপত্তি ঘাট-এর সমর্থনে মিলার ও উরের পরীক্ষা : বিজ্ঞানী স্ট্যানলে মিলার ও হ্যারল্ড উরে (1953 খ্রিস্টাব্দে) সর্বপ্রথম গবেষণাগারে বিশেষ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেন যে, আদি পৃথিবীতে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগের উৎপত্তি ঘটে। এই প্রমাণ ওপারিন ও হ্যালডেনের জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদকে সমর্থন করে।
মিলার ও উরের পরীক্ষা যন্ত্র : মিলার ও উরে সিমুলেশন পরীক্ষার জন্য যে বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেছিলেন তার অংশগুলি হল- 1. স্ফুলিঙ্গ প্রকোষ্ঠ 2. স্ফুটন প্রকোষ্ঠ (উচ্চ তাপমাত্রায় এখানে জল ফোটানো হয়) 3.কাচের নল 4. কনডেনসর বা ঘনীভবন যন্ত্র।
পরীক্ষা পদ্ধতি : 1. পরীক্ষা যন্ত্রের মধ্যে তাঁরা আদি পৃথিবীর বিজারক পরিবেশ তৈরি করেন। 2.যন্ত্রের মধ্যে তাঁরা জলীয় বাষ্প (H2O), মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3) হাইড্রোজেন (H2) গ্যাসের প্রবাহিত মিশ্রণে টাংস্টেন ইলেকট্রোডের সাহায্যে ক্রমাগত তড়িৎ স্ফুলিঙ্গ তৈরি করেন। ও এরপর গ্যাস মিশ্রণকে কনডেনসারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে ঘনীভবনের মাধ্যমে তরলে পরিণত করেন। ও তরল পদার্থ 'U' আকৃতির নলে সজ্জিত হয়।
পর্যবেক্ষণ : প্রাপ্ত ঘনীভূত তরল অংশ পৃথকীকরণ ও ক্রোমাটোগ্রাফির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে মিলার ও উরে তরলের মধ্যে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড (অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রভৃতি), রাইবোজ শর্করা, অ্যাডেনিন এবং প্রায় 15টি অ্যামাইনো অ্যাসিড } পর্যবেক্ষণ করেন।
সিদ্ধান্ত : উপরিউক্ত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, আদি পৃথিবীর বিজারক পরিবেশে বজ্রপাত ও UV রশ্মির প্রভাবে জলীয় বাষ্প, মিথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেনের গ্যাসীয় মিশ্রণ থেকেই প্রথমে বিভিন্ন সরল এবং পরে জটিল জৈবযৌগের সংশ্লেষ ঘটে। এর ফলেই আদি পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি ঘটে।
প্রশ্ন 5. জৈব বিবর্তনের ইতিহাসে উদ্ভিদজগতের ও প্রাণীজগতের বিবর্তন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর: জৈব বিবর্তন অত্যন্ত ধীর ও গতিশীল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সরল জীব থেকে জটিল জীবের উৎপত্তি ঘটে।
● উদ্ভিদজগতে রিবর্তন : 1• প্রাথমিক পর্যায়ে আদি পৃথিবীর পরিবেশে সরল, এককোশী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে।
2. পরে ক্রমপর্যায়ে পরিবর্তন ও রূপান্তরের মাধ্যমে বহুকোশী সমাঙ্গদেহী (থ্যালোফাইটা) উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়।
3. পরবর্তী পর্যায়ে অপুষ্পক মসবর্গীয় ও ফার্নবর্গীয় এবং সপুষ্পক ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে।
4. গুপ্তবীজী উদ্ভিদ থেকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে আসে একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। আধুনিক কালে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকেই সবচেয়ে উন্নত উদ্ভিদরূপে গণ্য করা হয়।
প্রাণীজগতে নিবর্তন :
1• প্রাণী বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে আসে এককোশী প্রাণী। যেমন— অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম প্রভৃতি প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী ।
2. এরপর ক্রমান্বয়ে পৃথিবীতে আসে বহুকোশী কিন্তু কলাতন্ত্রবিহীন (স্পঞ্জ) ছিদ্রাল প্রাণী, কলাতন্ত্রযুক্ত দ্বিস্তরীয় একনালি প্রাণী (হাইড্রা), ত্রিস্তরীয় সিলোমবিহীন কৃমিজাতীয় প্রাণী (গোলকৃমি), সিলোমযুক্ত অঙ্গুরীমাল প্রাণী (কেঁচো), সন্ধিপদী, কণ্টকত্বকী প্রাণী এবং উন্নত কর্ডাটা পর্বভুক্ত প্রাণী।
3• এরপর ধীরে ধীরে পৃথিবীতে মেরুদণ্ডী প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।
4. প্রাণী বিবর্তনের একেবারে শেষ ধাপে সৃষ্টি হয়েছে মানুষ।
জেনে রাখো : পৃথিবীতে আনুমানিক 1 কোটি বছর আগে আদিম মানুষ এবং প্রায় 10 লক্ষ বছর আগে আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটে।
প্রশ্ন 6. জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে ল্যামার্কের মতবাদের মূল বক্তব্যগুলি আলোচনা করো। অথবা, অভিব্যক্তি বা বিবর্তন সম্পর্কে ল্যামার্কের মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: জৈব অভিব্যষ্ট্রির সপক্ষে ল্যামার্কের মতবাদের মূল বক্তব্য সমূহ:
1.পরিবেশের প্রভাব (Influence of environment) : সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশের প্রভাবে জীবের বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তন ঘটে এবং এদের সাহায্যে জীব পরিবেশে যথাযথভাবে অভিযোজিত হতে চেষ্টা করে।
উদাহরণ— উটপাখির (Ostrich) পূর্বপুরুষের সক্রিয় ডানা বংশপরম্পরায় ব্যবহার না হওয়ায় নিষ্ক্রিয় লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
2. ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র (Law of use and disuse) : পরিবর্তিত পরিবেশে জীবের যে সমস্ত অঙ্গের ব্যবহার বেশি হয়। সেগুলি ক্রমশ সবল ও উন্নত হয় এবং যে সমস্ত অঙ্গের ব্যবহার কমে যায় সেগুলি ক্রমশ দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় অবস্থাপ্রাপ্ত হয়ে লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়।
উদাহরণ - * (i) ব্যবহার বৃদ্ধি : (a) ল্যামার্কের মতে বহু পূর্বে জিরাফের পূর্বপুরুষের গলা ছোটো ছিল। কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার প্রচেষ্টা থেকে জিরাফের গলা ক্রমশ লম্বা হয়ে গিয়েছে। (b) জলে সাঁতার কাটার জন্য হাঁসের পায়ের আঙুলগুলির মাঝে পাতলা চামড়ার আবরণ তৈরি হয়েছে যাকে লিপ্তপদ বলে।
(ii) ব্যবহার হ্রাস : সাপের পূর্বপুরুষদের পা থাকলেও গর্তে বসবাস করার জন্য সাপ পা গুলিকে ব্যবহার করত না। ফলে দীর্ঘ অব্যবহারে সাপের চারটি পা-ই অবলুপ্ত হয়েছে।
3.অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ (Inheritance of acquired characters) : কোনো জীব জীবনকালে যে-সমস্ত বৈশিষ্ট্য অর্জন করে সেগুলি বংশানুক্রমে সন্তান-সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয় অর্থাৎ, অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে।
উদাহরণ— ল্যামার্কের মতে, জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার কারণ অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ।
4. নতুন প্রজাতির উদ্ভব (Origin of new species) : জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমে সঞ্চারণের ফলে প্রজাতির মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। ল্যামার্কের মতে, এটিই বিবর্তনের প্রধান কারণ।
প্রশ্ন 7. জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ডারউইনের তত্ত্বাবলি উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর: 1859 খ্রিস্টাব্দে চার্লস রবার্ট ডারউইন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস্ অফ ন্যাচারাল সিলেকশন' (On the Origin of Species by Means of Natural Selection)-এ বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তি সম্পর্কিত মতবাদ প্রকাশ করেন। ডারউইনের মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল-
1. অত্যধিক জন্মহার (Prodigality of reproduction) : সমস্ত প্রজাতিভুক্ত জীবের মধ্যে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে বংশবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়।
উদাহরণ— একটি ঝিনুক একটি প্রজনন ঋতুতে একসঙ্গে প্রায় 16 কোটি ডিম পাড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ ডিমই নষ্ট হয়ে যায়। আবার হাতি 30 বছরে প্রজননক্ষম হয় এবং 12 বছর অন্তর একটি সন্তান প্রসব করে, তাদের প্রত্যেকে বেঁচে থাকলে 750 বছরে হাতির সংখ্যা হত 19 মিলিয়ন। অর্থাৎ, জীবের এই হারে জন্ম হলেও সকল অপত্য জীব বাঁচে না।
2. সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান (Constancy of Food and Space) : পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্দিষ্ট। অধিক হারে জীবের বংশবৃদ্ধির ফলে বাসস্থান এবং জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, কারণ এই দুটোই সীমিত।
3.অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম (Struggle for existence) : জীবের অত্যধিক জন্মহার এবং পৃথিবীতে সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিটি জীবকে প্রতিনিয়ত জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয়। ডারউইনের মতে, জীবনসংগ্রাম তিন প্রকার।
যথা--
(i) অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম (Intraspecific struggle) : একই প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে সংগ্রামে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা কালক্রমে মারা যায়। যেমন—একদল কুকুরের মধ্যে খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য লড়াই। সংগ্রাম (Interspecific struggle) : বিভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলতে থাকে।
(ii) আন্তঃপ্রজাতি যেমন—ব্যাং কীটপতঙ্গদের খায়, আবার সাপ ব্যাং-কে খায়। (Environmental struggle) : প্রতিকূল পরিবেশ (যেমন— ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, খরা, প্রচণ্ড গরম, প্রচণ্ড
(iii) পরিবেশগত সংগ্রাম ঠান্ডা) জীবের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। এই প্রতিকূলতার সঙ্গে জীবের সংগ্রাম চলে।
4. প্রকরণ বা ভেদ (Variation) : পৃথিবীতে কোনো প্রজাতির অন্তর্গত সব জীব কখনোই একরকম হয় না। তাদের মধ্যে আকৃতি, প্রকৃতি ও আচরণগত বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়, একে প্রকরণ বা ভেদ বলে। যে প্রকার প্রকরণ জীবকে জীবন সংগ্রামে সাহায্য করে, তাকে অনুকূল প্রকরণ এবং যে প্রকার প্রকরণ জীবের জীবন সংগ্রামে বাধা সৃষ্টি করে, তাকে প্রতিকূল প্রকরণ বলে। ডারউইনের মতে, এই প্রকরণগুলিই ধারাবাহিকভাবে একত্রিত হয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। জীবদেহের কোনো বৈশিষ্ট্যের হঠাৎ পরিবর্তনকে তিনি ‘প্রকৃতির খেলা' বলে উপেক্ষা করেছিলেন।
5. যোগ্যতমের উদ্বর্তন (Survival of the fittest) : অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা জীবন সংগ্রামে জয়ী হয় এবং যোগ্যতম রূপে বিবেচিত হয়। একে যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলে। প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয় এবং ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যায়।
6. প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ (Natural selection) : অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা পরিবেশে সফলভাবে অভিযোজিত হয়। ফলে, এরা বেশি সংখ্যায় অপত্য সৃষ্টি করে এবং অত্যধিক হারে বংশবিস্তার করে। প্রকৃতি অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবকে নির্বাচন করে, একে প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলে।
7• নতুন প্রজাতির উদ্ভব (Origin of new Species) : অনুকূল প্রকরণগুলি বংশপরম্পরায় অপত্যদের দেহে পুঞ্জীভূত হওয়ার ফলে উদ্বংশীয় (পূর্বপুরুষ) ও উত্তরসূরীদের (বংশধর) মধ্যে পার্থক্য তৈরি
উদাহরণ— হয়, যা নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে। ডারউইনের মতে, জিরাফের পূর্বপুরুষদের গলা বিভিন্ন দৈর্ঘ্যযুক্ত ছিল। উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে লম্বা গলাযুক্ত জিরাফরা প্রাকৃতিক নির্বাচনে জয়ী হয় এবং যোগ্যতমরূপে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, স্বল্প দৈর্ঘ্যের গলাযুক্ত জিরাফরা প্রাকৃতিক নির্বাচনে পরাজিত হয় এবং ক্রমশ পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়। ধীরে ধীরে লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের অনুকূল প্রকরণগুলির বংশানুক্রমিক সঞ্চারণ ঘটে ও বর্তমান দীর্ঘ গলাযুক্ত জিরাফের আবির্ভাব ঘটে।
প্রশ্ন 8. জীবাশ্ম কাকে বলে ? অভিব্যক্তির [ME '05,01] পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন সপক্ষে জীবাশ্মের ভূমিকা উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর: জীবাশ্ম বা ফসিল (Fossil) : বহুদিন ধরে ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভের বিভিন্ন প্রাচীন পাললিক শিলাস্তরে সংরক্ষিত জীবদেহের সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা বা ছাপকে জীবাশ্ম বা ফসিল বলে।
জৈব অভিব্যক্সিতে জীবাশ্মের ভূমিকা :
1.জীবের উৎপত্তির সময় নির্ধারণ : সমুদ্রতল বা পাললিক রেডিও কার্বন ডেটিং • শিলাস্তর থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্মের পদ্ধতিতে বয়স নির্ণয় করা যায়। যেমন— আফ্রিকার শিলাস্তরে প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় আনুমানিক 300 কোটি বছর আগে ও জীবের ইয়োবায়োন্ট-এর আবির্ভাব ঘটে।
2. জীবের ভৌগোলিক বিস্তার সম্পর্কে ধারণা লাভ : একই ধরনের জীবাশ্ম বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত হলে জীবের ভৌগোলিক বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
3. বিলুপ্ত জীবের গঠন, আকার সম্পর্কিত ধারণা লাভ : জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিলুপ্ত জীবের গঠন, আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন— ইওহিপ্পাসের জীবাশ্ম থেকে প্রত্নজীববিদরা অনুমান করেন যে এটি শিয়ালের মতো গঠনযুক্ত ছিল।
4• হারানো যোগসূত্র উদ্ধার : জীবাশ্ম থেকেই ধারণা পাওয়া যায় যে, পৃথিবীতে যে-কোনো জীবগোষ্ঠী তাদের পূর্ববর্তী জীবগোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি লাভ করে। যেমন— - সরীসৃপ শ্রেণি থেকে পক্ষী শ্রেণির উৎপত্তি ঘটে তা আর্কিওপটেরিক্সের জীবাশ্ম পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়।
5• জীবের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে ধারণা : জীবাশ্ম থেকেই আজকের পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবদের পূর্বপুরুষদের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়েছে। যেমন— 2013 সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাইজিং স্টার গুহায় খুঁজে পাওয়া জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন Homo naledi হল বনমানুষ থেকে মানুষের বিবর্তনের জ্বলন্ত প্রমাণ ।
প্রশ্ন 9. ঘোড়ার বিবর্তনঘটিত প্রমাণের ক্ষেত্রে জীবাশ্মের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ঘোড়ার বিবর্তনঘটিত প্রমাণের ক্ষেত্রে জীবাশ্মের ভূমিকা :
প্রায় 5 কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে আবির্ভূত ঘোড়ার পূর্বপুরুষ ইওহিপ্পাসের জীবাশ্ম উত্তর-পশ্চিম আমেরিকায় পাওয়া গেছে। জীবাশ্মের মাধ্যমেই ঘোড়ার বিবর্তনের ইতিহাস সুশৃঙ্খল ও সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। ঘোড়ার পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায় যে – 0 সরলতম গঠন থেকে জটিল ও উন্নত গঠনযুক্ত আধুনিক ঘোড়ার উৎপত্তি ঘটেছে এবং ও পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস ও ক্ষুরের উৎপত্তিদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে আঙুলের প্রয়োজনীয়তাও কমে গিয়েছে। নীচে ইওহিপ্পাস থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে আধুনিক ঘোড়া ইকুয়াস সৃষ্টি হয়েছে তা সারণি আকারে দেখানো হল _
অনুরূপ প্রশ্ন : ইওহিপ্পাস থেকে বর্তমান ঘোড়ার বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে?
জেনে রাখো : রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে কার্বনের বিভিন্ন আইসোটোপ (C12, C14) ব্যবহার করে জীবাশ্মের বয়স নির্ণয় করা হয়।
প্রশ্ন 10. জৈব অভিব্যক্তির অঙ্গসংস্থানগত প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীর হূৎপিণ্ডের মৌলিক গঠন আলোচনা করো।
উত্তর: জৈব অভিব্যক্তির সমর্থাল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হূৎপিণ্ডের মৌলিক গঠনের তুলনামূলক আলোচনা : মাছ, ব্যাং, সাপ, টিকটিকি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হূৎপিণ্ড ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, হৃৎপিণ্ডে সামান্য পার্থক্য লিপিটি পাখি, বানর, বাদুড়, মানুষ প্রভৃতি থাকলেও এদের মৌলিক গঠন একই প্রকারের হয়। যেমন- হূৎপিণ্ডের মাধ্যমে দুষিত রক্তের সংবহন ঘটলেও এটি জলে
1. মৎস শ্রেণির হূৎপিণ্ড : একটি অলিন্দ ও একটি নিলয়ের সমন্বয়ে গঠিত মাছের হৃৎপিণ্ড অত্যন্ত সরল প্রকৃতির হয়। এই ধরনের বাম অলিন্দ দক্ষিণ অলিন্দ বাম অলি দক্ষিণ অলিন্দ বাম অলিন্স দক্ষিণ অি বসবাসের পক্ষে উপযুক্ত। একে ডেনাস হৃৎপিণ্ড বলে।
2• উভচর শ্রেণির হূৎপিণ্ড : দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়ের সময়ে গঠিত মাহের ফুৎপিণ্ডের হূৎপিণ্ড বাম নিলয় - নিয় তেনোসাস (ME 19,16,13,12,11,09.04) তুলনায় উন্নত। অক্সিজেনযুক্ত ও কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত অলিন্দে মেরুদণ্ডী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের অন্তর্গঠনের ক্রমবিকাশ রক্তের মিশ্রণ ঘটে এবং দেহে মিশ্রিত রক্তের পরিবহণ ঘটে। ব্যাঙের দেহে এইরূপ হূৎপিণ্ড দেখা যায়। তাই এদের ক্ষেত্রেও বিশুদ্ধ ও দূষিত পৃথক হলেও নিলয়ে মিশ্রিত হয়।
3. সরীসৃপ শ্রেণির হূৎপিণ্ড : দুটি অলিন্দ ও একটি আংশিকভাবে বিভক্ত নিলয় দ্বারা গঠিত হূৎপিণ্ড তুলনামূলকভাবে জটিল। এই ধরনের হূৎপিণ্ড পর্যবেক্ষণ করলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্তকে পৃথক রাখার বিবর্তন শুরু হয়েছে। সাপ, টিকটিকি, গিরগিটি প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এইরূপ হৃৎপিণ্ড দেখা যায় (ব্যতিক্রম – কুমিরের হূৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়ে বিভক্ত থাকে)।
4. পক্ষী ও স্তন্যপায়ীর হূৎপিণ্ড : পক্ষী ও স্তন্যপায়ী শ্রেণিভূক্ত সমস্ত প্রাণীর হূৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় দ্বারা গঠিত। এদের ক্ষেত্রে কখনোই বিশুদ্ধ (O) সমৃদ্ধ রক্ত) ও দূষিত রক্তের (CO, সমৃদ্ধ রপ্ত) মিশ্রণ ঘটে না। সুতরাং, উপরিউক্ত পর্যালোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে মাছ, ব্যাং, টিকটিকি, পাখি, মানুষ প্রভৃতি মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠী একই পূর্বপুরুষ বা উদবংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বিবর্তনের পর্যায়ক্রমিক ধারা অনুযায়ী এদের অঙ্গগুলিও সরল থেকে ক্রমশ জটিল ও উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়েছে।
সিদ্ধান্ত : মাছ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে উন্নত প্রাণীদেহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পালন করার জন্য ক্রমশ বিপাক হার বৃদ্ধি পায়, যার জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের। হৎপিন্ডের উন্নত গঠনের মাধ্যমে সারা দেহে বিশুদ্ধ বা বেশি O, যুক্ত রক্ত কলাকোশে প্রেরণ করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন 11. জৈব অভিব্যক্তির সপক্ষে তুলনামূলক ভূণতত্ত্বের আলোচনা কীভাবে প্রমাণ হিসেবে ভূমিকা পালন করে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভূণতত্ত্ব (Embryology) : জীববিদ্যার যে শাখায় নিষিক্ত ডিম্বাণুর বহুকোশ অবস্থাপ্রাপ্তি, ভূণগঠন এবং বিকাশ ও বৃদ্ধির মাধ্যমে জন্য পরিণত জীব সৃষ্টি প্রভৃতি সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয়, তাকে ভ্রুণতত্ত্ব বলে। যে-কোনো বহুকোশী মেরুদণ্ডী প্রাণীর (যেমন—মাছ, ব্যাং, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী) ক্ষেত্রেই ভ্রূণের উৎপত্তি ঘটে নিষিক্ত ডিম্বাণু বা জাইগোট থেকে। জাইগোটের ক্লিভেজ ঘটে গঠিত হয় যথাক্রমে মরুলা, ব্লাস্টুলা, গ্যাস্টুলা প্রভৃতি দশার। বিজ্ঞানীদের মতে, 9999 সকলেই প্রাথমিকভাবে একই আকারযুক্ত হয়। যেমন- এইসকল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রূণের তুলনামূলক গঠন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এরা o
1.মাছ, স্যালাম্যান্ডার, কচ্ছপ, পাখি ও মানুষের ভ্রূণের প্রাথমিক দশাগুলির গঠন এত বেশি সাদৃশ্যযুক্ত যে তাদের পৃথক রূপে চেনা কঠিন হয়।
2. সমস্ত মেরুদণ্ডী আছ ব্যাং প্রাণীর ভ্রূণেই নোটোকর্ড ও গলবিল অঞ্চলে বহিস্থ ফুলকা খাঁজ সৃষ্টি হয়।
3• সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণবিকাশের কোনো না কোনো দশাতে একসারি অন্তঃস্থ যুগ্মফুলকা বর্তমান।
সিদ্ধান্ত: উপরিউক্ত তথ্য পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে, প্রাথমিক অবস্থায় সমস্ত ভ্রুণ একইরকম দেখতে হয়। পরে বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রূণগুলি পরিস্ফুরণের মাধ্যমে মেরুদণ্ডী প্রাণীর তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। সুতরাং, ভ্রুণতত্ত্বঘটিত প্রমাণ থেকে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা একই পূর্বপুরুষ বা উদ্ংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বিবর্তনের ক্রমবিকাশ অনুযায়ী মাছ থেকে উভচর (ব্যাং), উভচর থেকে সরীসৃপ (সাপ), সরীসৃপ থেকে পাখি (মুরগি) এবং পাখি থেকে স্তন্যপায়ী (মানুষ) প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য : জার্মান বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল (Ernst Haeckel, 1866)-এর মতে, প্রতিটি জীব বৃদ্ধির সময় ভ্রূণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে তার পূর্বপুরুষদের জীবনবৃত্তান্তের বিভিন্ন দশাকে পুনরাবৃত্তি করে পূর্ণাঙ্গ অবস্থা প্রাপ্ত হয়। একে জৈববিবর্তনের বায়োজেনেটিক সূত্র বা পুনরাবৃত্তি তত্ত্ব বলে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1.রাসায়নিক বিবর্তন কাকে বলে? রাসায়নিক বিবর্তনের ধাপগুলি ক্রমপর্যায়ে উল্লেখ করো।
উত্তর: রাসায়নিক বিবর্তন বা জনি (Chemnogeny) : আদি পৃথিবীতে বিজারণধর্মী পরিবেশে বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর বিকিরণ, বজ্রপাত প্রভৃতির উপস্থিতিতে সরল অজৈব যৌগ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমপর্যায়ে জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তিকে রাসায়নিক বিবর্তন বা কেমোজেনি বলে।
রাসায়নিক বিবর্তনের (কাमাজেনি) রুমায় :
1. পৃথিবীর উৎপত্তি : আনুমানিক 450-500 কোটি বছর আগে পৃথিবীর উৎপত্তি ঘটে।
2• মুক্ত পরমাণুর পৃথকীকরণ ক্রমশ তাপ বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা হ্রাস, শীতলীকরণ এবং ঘনীভবনের মাধ্যমে ভর অনুযায়ী মুক্ত পরমাণুগুলির পৃথকীকরণ ঘটে।
3• সরল অজৈব যৌগ সৃষ্টি H2O CH, C H NH, প্রভৃতি সরল অজৈব যৌগের উৎপত্তি ঘটে।
4. সরল জৈব যৌগ গঠন : রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরল অজৈব যৌগ থেকে সরল শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লিসারল প্রভৃতি সরল জৈব যৌগ গঠিত হয়।
5• জটিল জৈব যৌগ সৃষ্টি পলিমারাইজেশনের মাধ্যমে সরল জৈব যৌগ থেকে ক্রমপর্যায়ে বিভিন্ন জটিল জৈব যৌগ (যেমন- পলিস্যাকারাইড, ফ্যাট, প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, ATP প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়। 1
প্রশ্ন 2. জৈব বিবর্তন বা বায়োজেনি বলতে কী বোঝো? বায়োজেনির ধাপগুলি ক্রমপর্যায়ে উল্লেখ করো।
উত্তর: জৈব বিবর্তন বা বাঞ্জেলি (Biogeny) : আদি পৃথিবীতে উপযুক্ত শর্তের উপস্থিতিতে কনডেনসেশন ও পলিমারাইজেশনের মাধ্যমে ক্রমপর্যায়ে জটিল জৈব যৌগ থেকে সমুদ্রের জলে জীবনের আদি অবস্থা কোলয়েডীয় পদার্থরূপে গঠিত হওয়ার ঘটনাকে জৈব বিবর্তন বা বায়োজেনি বলে।
ব্যায়াজেনির ধাপগুলির ক্রমপর্যায় :
1. কোয়াসাৰভেট (Coacervate) গঠন সমুদ্রের জলে প্রোটিন, শর্করা প্রভৃতি জটিল জৈব যৌগের আন্তঃআণবিক বিক্রিয়ায় বৃহৎ কোলয়েড দানা গঠিত হয়। এদের কোয়াসারভেট বলে।
2. প্রোটোৰায়োন্ট (Protobiont) সৃষ্টি বৃহৎ, বিভাজন- ক্ষমতাযুক্ত কোয়াসারভেট প্রোটিন ও লিপিড পর্দা দ্বারা আবৃত হয়ে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের সমন্বয়ে প্রোটোবায়োন্ট সৃষ্টি করে।
3.প্রথম কোশের উৎপত্তি : প্রায় 350-360 কোটি বছর আগে (প্রিক্যামবিয়ান যুগে) সমুদ্রের জলে নিউক্লিয় প্রোটিন সমন্বিত, উৎসেচক সংশ্লেষ ও স্ববিভাজন ক্ষমতাযুক্ত প্রথম আদি কোশের উৎপত্তি ঘটে। |
জেনে রাখো : প্রথম আবির্ভূত প্রোক্যারিওটিক জীব পরভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী কেমোহেটারোট্রফ প্রকৃতির ছিল। এরা পরিবেশ থেকে জৈব যৌগ শোষণ করে নিজেদের শক্তির চাহিদা পূরণ করত।
প্রশ্ন 3. পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কিত ওপারিন ও হ্যালডেনের মতবাদের পর্যায়গুলি রেখাচিত্রের সাহায্যে স্থাপন করো।
উত্তর: দুজন বিজ্ঞানী রাশিয়ার আলেকজান্ডার আই ওপারিন (1924) ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে বি এস হ্যালডেন জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রায় একই রকমের মত প্রকাশ করেছিলেন। এদের মতবাদকেই ‘আধুনিক রাসায়নিক মতবাদ' বলা হয়। এটি নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হল -
আদি পৃথিবী : গ্যাসীয়, উত্তপ্ত ও বিজারকধর্মী উত্তপ্ত গ্যাসীয় পরিবেশে C, H, N-এর মুক্ত পরমাণুর উপস্থিতি বজ্রপাত, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব, তাপ বিকিরণ মিথেন (CH4), জলীয়বাষ্প (H2O), অ্যামোনিয়া (NH3), কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) প্রভৃতি অজৈব যৌগের উৎপত্তি শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, পিউরিন, পিরিমিডিন প্রভৃতি সরল জৈব যৌগের উৎপত্তি
হট ডাইলুট সুপ : সমুদ্রের ফুটন্ত জলের মধ্যে সরল জৈব যৌগগুলির উপস্থিতি ও তাদের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া পলিস্যাকারাইড, প্রোটিন, ফ্যাট, নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তি সকল জটিল জৈব যৌগের মধ্যে আন্তঃআণবিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় । ওপারিনের মতে, বৃহৎ কোলয়েডীয় পদার্থ হিসেবে কোয়াসারভেট সৃষ্টি হয়। ফক্স এই কোলয়েড কণার নাম দেন মাইক্রোস্ফিয়ার।
কোয়াসারভেট বা মাইক্রোস্ফিয়ার + নিউক্লিয় প্রোটিন। প্রোটোবায়োন্ট ইয়োবায়োন্ট 1
প্রশ্ন 4. মিলার ও উরের পরীক্ষায় কোন্ কোন্ জৈব যৌগ উৎপন্ন হয় ?
উত্তর: মিলার ও উরের পরীক্ষায় উৎপাদিত জৈব যৌগ : 1. গ্লাইসিন, 2. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, 3. অ্যালানিন, 4. ল্যাকটিক অ্যাসিড, 5. আলফা অ্যামাইনো বিউটারিক অ্যাসিড, 6. সাকসিনিক অ্যাসিড, 7.অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, 8.গ্লুটামিক অ্যাসিড, 9. ফরমিক অ্যাসিড, 10. অ্যাসিটিক অ্যাসিড, 11.প্রোপিয়ানিক অ্যাসিড, 12. ইউরিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন 5. রেখাচিত্রের সাহায্যে অভিব্যক্তি বা বিবর্তনের পর্যায়ক্রমিক মুখ্য ঘটনাগুলি উল্লেখ করো। * [ME '17]
উত্তর: অভিব্যক্তির পর্যায়ক্রমিক মুখ্য ঘটনাসমূহ : 1.পৃথিবী সৃষ্টি (450 কোটি বছর আগে)
2. জীবনের উৎপত্তি (360 কোটি বছর আগে)
3. এককোশী প্রোক্যারিওটিক জীবের উৎপত্তি (আর্কিওজোয়িক যুগ
4. সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিবেশে অক্সিজেন ত্যাগের সূচনা (প্রোটেরোজোয়িক যুগ)
5. বহুকোশী জীবের উৎপত্তি (প্যালিওজোয়িক যুগে ক্যামব্রিয়ান পর্যায়।
6• প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণীর (মাছ) উৎপত্তি (অরডোভিসিয়ান পর্যায়)
7• স্থলজ উদ্ভিদ সৃষ্টি, ব্রায়োফাইটার উদ্ভব (সিলুরিয়ান পর্যায়)
8. উভচর প্রাণীদের (প্রথম চার পাযুক্ত স্থলজ প্রাণী) উৎপত্তি ও প্রাধান্য বিস্তার (ডেভোনিয়ান পর্যায়)
9. প্রাচীন সরীসৃপ ও পতঙ্গের উদ্ভব এবং বৃহদাকার হাঙরের প্রাধান্য (মিসিসিপিয়ান পর্যায়)
10.ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের প্রাচুর্য এবং সরীসৃপের প্রাধান্য ও বিস্তার (পেনসিলভানিয়ান পর্যায়)
11. সাইকাস ও কনিফার জাতীয় উদ্ভিদের উৎপত্তি ও উভচর প্রাণী হ্রাস (পারমিয়ান পর্যায়)
12. ডাইনোসর ও প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীর উৎপত্তি (মেসোজোয়িক যুগের ট্রায়াসিক পর্যায়)
13. ডাইনোসরের আধিপতা ও পক্ষী শ্রেণির উৎপত্তি। (জুরাসিক পর্যায়)
14. গুপ্তবীজী উদ্ভিদের বিকাশ (ক্রিটেশিয়াস পর্যায়)
15. বানর ও আদিম মানুষের আবির্ভাব (সিনোজোয়িক যুগ)
প্রশ্ন 6. ল্যামার্কবাদ বা ল্যামার্কিজম বলতে কী বোঝো? ল্যামার্কবাদের প্রধান বক্তব্যগুলি কী কী ?
উত্তর: ন্যামার্কবাদ বা ন্যাमার্কিজম (Lamarckism) : ফরাসি প্রকৃতিবিদ ল্যামার্ক তাঁর 'ফিলোজফিক জুলজিক' গ্রন্থে জীবের অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার এবং ক্রমাগত প্রচেষ্টার দ্বারা জীবদেহে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের সাহায্যে নতুন প্রজাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত যে তত্ত্ব প্রদান করেন, তাকে ল্যামার্কিজম বা ল্যামার্কবাদ বলে।
ল্যামার্কবাদের প্রধান বক্তব্য: 1. জীবের আকার বৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টা। 2. পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং জীবের চাহিদা পূরণের জন্য নতুন অঙ্গ সৃষ্টি। 3. ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র। 4. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ এবং 5. নতুন প্রজাতি সৃষ্টি।
প্রশ্ন 7. অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার সূত্র বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ল্যামার্কের মতে, জীবদেহের কোনো অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হলে অঙ্গটি আরও বেশি সুগঠিত, সবল উন্নত হয়। অন্যদিকে পরিবর্তিত পরিবেশে জীবের অঙ্গটি যদি দীর্ঘকাল অব্যবহৃত থাকে তাহলে অঙ্কটি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত ও কার্যহীন হয়ে পড়ে। এই অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলা হয়। ল্যামার্ক প্রদত্ত এই তথ্যকে ব্যবহার অব্যবহারের সূত্র রূপে গণ্য করা হয়।
অঙ্গের ব্যবহারের ফলে অঙ্গ সুগঠিত হওয়ার উদাহরণ :
1• জিরাফের পূর্বপুরুষের গলা ছোটো ছিল। কালক্রমে উঁচু গাছের পাতা খাওয়ার প্রচেষ্টায় জিরাফের গলা লম্বা হয়ে গিয়েছে।
2. জলে সাঁতার কাটার জন্য জলজ প্রাণীদের (যেমন- হাঁস) পায়ের আঙুলগুলি পাতলা চামড়া দ্বারা যুক্ত হয়ে লিপ্তপদ সৃষ্টি হয়েছে।
অঙ্গের অব্যবহারের ফলে অল্প ক্ষয়প্রাপ্ত ও নিষ্ক্রিয় হওয়ার উদাহরণ: 1. সাপের পা থাকে না কারণ গর্তবাসী হওয়ায় পায়ের দীর্ঘ অব্যবহারের ফলে পা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
2. উটপাখি, এমু, কিউই প্রভৃতি পাখির ডানা অব্যবহারের ফলে তা ক্রমশ ছোটো নিষ্ক্রিয় ডানায় পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন 8. আধুনিক লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের বিবর্তনকে ল্যামার্ক কীভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন?
উত্তর: ল্যামার্কবাদের সাহায্য আধুনিক লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের বিবর্তনের ব্যাখ্যা :
1. ল্যামার্কের মতে, আধুনিক জিরাফের পূর্বপুরুষদের গলা ছোটো ছিল। পরিবেশের পরিবর্তনে লম্বা কাওযুক্ত গাছের উদ্ভব ঘটেএবং জিরাফের পূর্বপুরুষরা গলা উঁচু করে গাছের পাতা খাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়।
2• ক্রমশ গলা উঁচু করে পাতা খাওয়ার প্রচেষ্টা বংশধরদের মধ্যে সত্ত্বারিত হয় এবং বংশপরম্পরায় গলা লম্বা হতে শুরু করে।
3• দীর্ঘদিন ধরে এই অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হওয়ার ফলে বর্তমানে লম্বা গলাযুক্ত আধুনিক জিরাফের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন 9. ল্যামার্কের মতবাদের সপক্ষে উদাহরণ দাও। *
উত্তর: 1. জলে সাঁতার কাটার জন্য জলজ পাখির (যেমন— হাঁস) পায়ের আঙুলগুলির অন্তবর্তী স্থানগুলি পাতলা চামড়া দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় লিপ্তপদ তৈরি হয়েছে।
2. সাপের পূর্বপুরুষদের অন্যান্য সরীসৃপদের মতো চারটি পা ছিল। কিন্তু ভূ-গর্ভস্থ অভিযোজনের কারণে পায়ের ব্যবহার কমে যায় ও বর্তমানে সাপের পা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়েছে।
3. ল্যামার্কের মতে, জিরাফের সুদীর্ঘ গ্রীবা, খুব উঁচু গাছ থেকে পাতা আহরণের জন্য অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণের ফলেই ঘটেছে।
4. এছাড়াও, উটপাখির পূর্বপুরুষের ক্ষেত্রে ডানা সক্রিয় ছিল, কিন্তু ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে তা নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন 10. ন্যামার্কের মতবাদের ত্রুটিগুলি লেখো।
উত্তর: ল্যামার্কের মতবাদের ত্রুটিগুলি হল : 1. ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে কোনো অঙ্কের ব্যবহারের ফলে অঙ্ক্যটির বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু বহু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অভিব্যক্তির ধারায় অঙ্গের ক্ষুদ্র হওয়ার প্রবণতা আছে বড়ো হওয়ার নয়।
2• জীবের অভিব্যক্তিতে পরিবেশের বিশেষ প্রভাব বর্তমান। কিন্তু পরিবেশের প্রভাব থাকলেও জীব নিজের চাহিদার দ্বারা কোনো নতুন অঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে না। যেমন— জালে বসবাসকারী জীবেদের মতো স্থলে বসবাসকারী জীবেদের দেহে সাঁতার কাটার আদর্শ অ সৃষ্টি হয় না।
3• ল্যামার্কবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ' সার্বিকভাবে সত্য নয়। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যানের পরীক্ষাটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান (1892) তাঁর পরীক্ষায় 22 জনু পর্যন্ত ইঁদুর জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে এদের লেজ কেটে দিয়েও দেখলেন লেজবিহীন ইঁদুর জন্মগ্রহণ করছে না। অর্থাৎ, যে লেজের ব্যবহার ইঁদুর শিখল না সেই অলাও লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হল না। এটি ওয়াইসম্যান জার্মপ্লাজম তত্ত্বে' ব্যাখ্যা করেন।
অনুৰূপ প্ৰশ্ন : 'অর্জিত বৈশিষ্ট্যর বংশ পরম্পরায় সারণ' – এই সূত্রের ব্যর্থতার কারণ কী?
প্রশ্ন 11. নয়া ল্যামার্কবাদ বলতে কী বোঝো? আধুনিক ল্যামার্কবাদের যৌক্তিকতা কতখানি?
উত্তর: নয়া ল্যামার্কবাদ বা নিও ল্যাमার্কিজম : ল্যামার্কবাদ বহুভাবে সমালোচিত হলেও এই মতবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে স্পেনসার, হেকেল, কোপ, প্যাকার্ড, গ্যাডো, স্মিথ প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ ল্যামার্কবাদের অসংগতিগুলি দূর করে বিবর্তন সম্পর্কিত যে নতুন মতবাদ উপস্থাপন করেন, তাকে নয়া ল্যামার্কবাদ বা নিও ল্যামার্কিজম বলে।
স্পেনসার, কোপ, রিচার্ড সহ কয়েকজন বিজ্ঞানী ল্যামার্কের তত্ত্বের পরিমার্জন করে আধুনিক ল্যামার্কবাদের সৃষ্টি করেন। এদের মতানুসারে, সব অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ না ঘটলেও কিছু অর্জিত বৈশিষ্ট্যের কিছুটা বংশানুসরণ ঘটে। বিজ্ঞানী মুলার পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, X-ray প্রয়োগের দ্বারা ড্রসোফিলার (Drosophila) দেহজ কোশ এবং জনন কোশে মিউটেশন ঘটে যা বংশানুক্রমে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ, আধুনিক ল্যামার্কবাদের যৌক্তিকতা আছে, কারণ দেহজ বৈশিষ্ট্য কোনো স্বাধীন স্বত্ত্বা নয় বরং পরিবেশ এবং জিনের মিথোস্ক্রিয়ার ফলাফল এবং এর প্রভাবে জীবের জীবদশায় অর্জিত কিছু বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ ঘটে।
প্রশ্ন 12. ডারউইনবাদ বা ডারউইনিজম বলতে কী বোঝো? ডারউইনবাদের মূল বক্তব্যগুলি সারণি আকারে লেখো।
উত্তর: ডারউইনবাদ বা ডারউইনিজম (Darwinism) : ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ চার্লস রবার্ট ডারউইন 'On the Origin of Species by Means of Natural Selection' নামক গ্রন্থে জীবনসংগ্রাম, যোগ্যতমের উদ্বর্তন, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রভৃতি বিবর্তন সম্পর্কিত যে-সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেন, সেগুলিকে একত্রে ডারউইনবাদ বা ডারউইনিজম বলে।
ডারউইন ডারউইনবাদের মূল বজ্রব্য :
প্রাকৃতিক ঘটনা সিদ্ধান্ত
1 অত্যধিক জন্মহার
2 সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান
3 জীবনসংগ্রাম
4 প্রকরণ
6 যোগ্যতমের উদ্বর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন পুঞ্জীভূত অনুকূল প্রকরণের বংশানুক্রমে সঞ্চারণ জীবনসংগ্রাম যোগ্যতমের উদ্বর্তন নতুন প্রজাতি সৃষ্টি।
প্রশ্ন 13. চতুর্থ অধ্যায় প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ কাকে বলে? প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের ত্রুটিগুলি লেখো।
উত্তর: প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ (Theory of Natural Selection) : অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা পরিবর্তিত পরিবেশে সফলভাবে অভিযোজিত হয় এবং অন্যান্য জীবেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগসুবিধা লাভ করে ও জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়। এই সমস্ত জীবেরা অধিক সংখ্যায় পৃথিবীতে বেঁচে থাকে এবং অনুকূল প্রকরণগুলি বংশানুক্রমে পুঞ্জীভূত হয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। সুতরাং, প্রকৃতি নির্বাচনের মাধ্যমে অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবের অর্থাৎ যোগ্যতমের উদ্বর্তন ঘটায় ও নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে। প্রকৃতিই এই নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বিবর্তনের সপক্ষে ডারউইনের এই মতবাদকে প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের ত্রুটি :
1. প্রকরণকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও প্রকরণ কীভাবে ঘটে তার কোনো ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ দেয় না।
2. লুপ্তপ্রায় অঙ্গের কোনো ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ দেয়নি।
3. প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদে মিউটেশনের কোনো উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন 14. অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম কাকে বলে ? এর প্রকারভেদগুলি আলোচনা করো। *** [ME '15,14,07,03]
উত্তর : অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাम (Struggle for existence) : ডারউইনের মতে অত্যধিক জন্মহার এবং সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য জীবেরা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য ও বাসস্থান অধিকারের উদ্দেশ্যে প্রবল প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে জীবের এই সংগ্রাম করার ঘটনাকে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম বলে। জীবনসংগ্রাম তিন প্রকার। যথা—
1. অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম : খাদ্য ও বাসস্থান অধিকারের জন্য একই প্রজাতিভুক্ত দুই বা ততোধিক জীবের মধ্যে সংঘটিত সংগ্রাম। যেমন— এক টুকরো রুটির জন্য দুটি কুকুরের লড়াই।
2. আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম : খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য দুই বা ততোধিক ভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে লড়াই। যেমন—একটি রুটির জন্য ককর ও বিড়ালের লড়াই।
3. পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম : বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি জীবকেই প্রতিনিয়ত প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়।
প্রশ্ন 15. আধুনিক জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার সমর্থনে ডারউইনবাদ কীভাবে ব্যাখ্যা দেয়?
উত্তর: আধুনিক জিরাফের গলা লম্বা হওয়ার সমর্থান ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা :
1. ডারউইনের মতে, জিরাফের পূর্বপুরুষ বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের গলাযুক্ত ছিল।
2. গাছের পাতা সংগ্রহের জন্য এদের মধ্যে জীবন সংগ্রাম ঘটে।
3• কেবলমাত্র লম্বা গলাযুক্ত জিরাফরা উঁচু গাছের পাতা সংগ্রহে সফল হয়। ফলে তারা যোগ্যতমরূপে বিবেচিত হয়।
4. জীবনসংগ্রামে পরাজিত জিরাফরা পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়। এবং দীর্ঘ গলাযুক্ত জিরাফরা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয় ও আধুনিক লম্বা গলাযুক্ত জিরাফের উৎপত্তি ঘটে।
প্রশ্ন 16. ডারউইনের তত্ত্বের সপক্ষে তিনটি প্রমাণ উল্লেখ করো।
উত্তর: 1. মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে ও নিয়ন্ত্রিত জননের দ্বারা অধিক উৎপাদনক্ষম ও উন্নতমানের অনেক জীবের নতুন প্রজাতি (যেমন- কুকুর, ভেড়া, পোলট্রি ইত্যাদি) বা ব্রিড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ যদি তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে জীবের কৃত্রিম নির্বাচনের ফলে তার মধ্যে এইরূপ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়, তবে প্রকৃতির পক্ষেও অনন্তকাল ধরে জীবকে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করা সম্ভব।
2. পরিবেশের সঙ্গে সঠিকভাবে অভিযোজিত হওয়ার প্রয়োজনে খাদ্যজীব ও খাদকজীব উভয়েরই মধ্যে অনুকৃতি বা প্রতিরক্ষামূলক বর্ণ (mimicry) সৃষ্টির ঘটনা ঘটে। এর ফলে উক্ত জীবেদের পরিবেশে বাঁচার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
3• ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগসংগ্রহ ও পরাগসংযোগের জন্য পতঙ্গদের প্রোবোসিস (মকরন্দ সংগ্রহের অঙ্গ) বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রশ্ন 17. ডারউইনের মতবাদের ত্রুটিগুলি লেখো।
উত্তর: ডারউইনের মতবাদের ত্রুটি :
1. ডারউইন মিউটেশনের ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কারণ জিন, ক্রোমোজোম ইত্যাদি তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। কীভাবে জলজ প্রাণী থেকে স্থলজ প্রাণীর উত্তরণ ঘটেছে তার ব্যাখ্যা ডারউইনবাদ থেকে পাওয়া যায় না।
2. এলক্ হরিণের শিং, স্যাবার বাঘের দাঁতের অতি বিশেষণ বা অ্যালোমেট্রিক বৃদ্ধির কারণ ডারউইনবাদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
3. নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উপস্থিতির কারণ ডারউইনবাদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
4. ডারউইনবাদ যোগ্যতমের উদ্বর্তনের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
5. ডারউইন জীবের ছোটো ছোটো ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বিবর্তনে এদের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। বরং, পরিব্যক্তি বা মিউটেশনকে তিনি ‘প্রকৃতির খেলা’ হিসেবে অগ্রাহ্য করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলিই নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
6. ডারউইনের 'মিশ্র বংশগতি' (Blending Inheritance) তত্ত্ব পরবর্তীকালে মেন্ডেলের পরীক্ষা দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
7. দেহকোশ ও জননকোশের প্রকরণের পার্থক্য বিষয়ে ডারউইনের কোনো ধারণা ছিল না।
প্রশ্ন 18. নয়া ডারউইনবাদ কী? এর প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি লেখো।
উত্তর: নয়া ডারউইনবাদ না নিও ডারউইনিজম : ডারউইনবাদ বা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ সর্বজন সমাদৃত হলেও পরবর্তীকালে জেনেটিক্সের বিভিন্ন আবিষ্কারের পর ডবঝানস্কি, মেয়ার, ফিসার, হুগো দ্য ভ্রিস, মরগ্যান, হাক্সলে, হ্যালডেন প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ ডারউইনবাদকে সংশোধন করে বিবর্তনের যে নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, তাকে নয়া ডারউইনবাদ ( Neo-Darwinism) বলে। লয়া
ডারউইনবাদের প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ :
1.প্রকরণের জন্য জিনের মিউটেশনকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণরূপে জিনগত প্রকরণকে নির্দেশ করা হয়।
2. জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রক হল জিন এবং পরিবেশ।
3. বিচ্ছিন্নতার কারণে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন 19. প্রাকৃতিক নির্বাচন কীভাবে আমাদের জীবনে প্রযোজ্য?
উত্তর: ডারউইন-এর বিবর্তনবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল প্রাকৃতিক নির্বাচন। তার মতে, প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে 'যোগ্যতমের উদ্বর্তন' প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে, অপরদিকে নয়া ডারউইনবাদ অনুসারে প্রাকৃতিক নির্বাচন জীবের তুলনামূলক জননগত সাফল্যের উপর নির্ভরশীল। তাই, প্রাকৃতিক নির্বাচন অন্যান্য জীবের মতো আমাদের জীবনেও একইরকমভাবে প্রযোজ্য। যেমন-
1• খাদ্য, বাসস্থান, উন্নত জীবনযাত্রার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে লড়াই করে (অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম)। যে যুদ্ধে জয়লাভ করে সেই খাদ্য, বাসস্থান প্রভৃতি অধিকার করে জয়ীরূপে বিবেচিত হয়।
2. নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত অন্যান্য জীবগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনযাপনে ব্যবহার করি। যেমন— মাছ, মাংস, শাকসবজি প্রভৃতি খাদ্যরূপে গ্রহণ করি (আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম)।
3. সর্বোপরি পরিবেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করে আমরা নিজেদের সফলভাবে বাঁচিয়ে রাখি এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন আমাদের জীবনে কার্যকর হয়।
প্রশ্ন 20. প্রকরণ বা ভেদ কাকে বলে? উদাহরণসহ অনুকূল প্রকরণ ও প্রতিকূল প্রকরণ আলোচনা করো।
উত্তর: প্রকরণ বা ভেদ (Variation) : একই প্রজাতিভুক্ত দুটি জীবের মধ্যে কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য থাকে। দুটি জীবের মধ্যে এই পার্থক্যকে প্রকরণ বা ভেদ বলে।
অনুকূল প্রকরণ : জীবের যে-সমস্ত প্রকরণগুলি পরিবর্তিত পরিবেশে সফলভাবে অভিযোজিত হয়ে জীবনসংগ্রামে জয়ী হতে সাহায্য করে, তাদের অনুকূল প্রকরণ বলে। যেমন- জিরাফের লম্বা গলা, মাছের মাকু আকৃতির দেহগঠন।
প্রতিকূল প্রকরণ : যে-সমস্ত প্রকরণ জীবকে অভিযোজনে সাহায্য করে না এবং এর ফলে জীব প্রাকৃতিক নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না, তাদের প্রতিকূল প্রকরণ বলে। যেমন- ডাইনোসরের অতিকায় দেহ।
প্রশ্ন 21. বংশগত প্রকরণগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা কীভাবে নির্বাচিত হয় ? ** [ME 15, 13]
উত্তর: ডারউইনের মতানুসারে, সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের কারণে প্রাণীদের মধ্যে অন্তঃপ্রজাতি, আন্তঃপ্রজাতি এবং পরিবেশের সঙ্গে ক্রমাগত সংগ্রাম চলতে থাকে এবং এই সংগ্রামে জয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে জীবের মধ্যে প্রকরণ বা ভেদের সৃষ্টি হয়। প্রজননের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে এই ভেদ বা প্রকরণের সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। প্রকরণগুলি দুই প্রকার - অনুকূল এবং প্রতিকূল। অনুকূল প্রকরণগুলি জীবকে সংগ্রামে জয়ী হয়ে পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে, এরূপ প্রকরণ সম্পন্ন। জীবের সংখ্যাধিক্য দেখা যায়। অন্যদিকে, প্রতিকূল প্রকরণ জীবকে জীবনসংগ্রামে অসফল করে এবং জীবের অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, এরূপ প্রকরণ পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় না এবং এরূপ প্রকরণ সম্পন্ন জীব সংখ্যায় ক্রমশ কমতে থাকে ও একটা সময় অবলুপ্ত হয়। এইভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচন উপযুক্ত বংশগত প্রকরণগুলি পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারণের জন্য নির্বাচন করে।
প্রশ্ন 22. সমসংস্থ অঙ্গ কাকে বলে? কয়েকটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদাহরণ দাও।
উত্তর: সমসংস্থ অঙ্গ (Homologous organs) : যে-সমস্ত অঙ্গ উৎপত্তিগত ও গঠনগতভাবে এক, কিন্তু বহিরাকৃতি ও কার্যগতভাবে আলাদা, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে।
উদ্ভিদ উদাহরণ : উদাহরণ উৎপত্তি ও গঠন কাজ • বেলের শাখাকণ্টক ও হাড়জোড়ার শাখাআকর্ষ আত্মরক্ষা ও চুপড়ি আলুর বুলবিল আরোহণ • আলু ও আদার গ্রন্থিকাণ্ড © ফণীমনসার পর্ণকাণ্ড 6 কাণ্ড অঙ্গজ জনন পরিবর্তিত অঙ্গজ জনন ও খাদ্য সঞ্চয় সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন সালোকসংশ্লেষের শতমূলীর একক পর্ণকাণ্ড পত্রকণ্টক মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন উদাহরণ উৎপত্তি ও গঠন কাজ কুমারিকার আকর্ষ পরিবর্তিত উপপত্র আরোহণ ও কুল ও বাবলার কাঁটা আত্মরক্ষা 0 মটরের আকর্ষ আরোহণ ফণীমনসার পত্রকণ্টক পরিবর্তিত পাতা বাষ্পমোচন রোধ ও আত্মরক্ষা
প্রাণী উদাহরণ : উৎপত্তি ও গঠন কাজ উড্ডয়ন উদাহরণ o পাখি ও বাদুড়ের ডানা ও ঘোড়ার অগ্রপদ সমস্ত অঙ্গগুলিই একইভাবে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং একইরকম অস্থি হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল ও ফ্যালেনজেস দ্বারা গঠিত। দৌড়োনো সাঁতার কাটা ও তিমির ফ্লিপার ও মানুষের হাত
সিদ্ধান্ত : সুতরাং, সমসংস্থ অঙ্গের অর্ন্তকাঠামো বিশ্লেষণ বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা করে জানা যায়, ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য প্রতিটি অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকে। অঙ্গগুলির উৎপত্তি ও গঠন একই হওয়া সত্ত্বেও বলা যায় উদ্বংশীয় একই সরলতম জীব থেকে জটিলতম জীবের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুরূপ প্রশ্ন : (1) বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর অগ্রপদের অন্তর্গঠনের বৈশিষ্ট্য কীভাবে বিবর্তনের ধারণাকে সমর্থন করে? [ME '14] (2) যে দু'টি অন্তর্গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তিমির ফ্লিপার” আর 'পাখির ডানা'-কে সমসংস্থ অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয় তা উল্লেখ করো ।
প্রশ্ন 23. সমবৃত্তীয় অঙ্গ কাকে বলে? কয়েকটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদাহরণ দাও।
উত্তর: সমবৃত্তীয় অঙ্গ (Analogous organs) : যে-সমস্ত অঙ্গ কার্যগতভাবে এক, কিন্তু উৎপত্তিগতভাবে এবং গঠনগতভাবে আলাদা, তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে। এ
উদ্ভিদ উদাহরণ : উদাহরণ কাজ উৎপত্তি ও গঠন বেল গাছের কাঁটা 1 আত্মরক্ষা পরিবর্তিত শাখা ও ফণীমনসার কাঁটা পরিবর্তিত পাতা
ঝুমকোলতার আকর্ষ আরোহণ পরিবর্তিত শাখা ও মটর গাছের আকর্ষ পরিবর্তিত পত্রক
প্রাণী উদাহরণ :- উদাহরণ কাজ o পাখি ও বাদুড়ের ডানা উড্ডয়ন উৎপত্তি ও গঠন অগ্রপদের রূপান্তর ও ফড়িং ও আরশোলার ডানা বহিঃকঙ্কালের উপবৃদ্ধি।
সিদ্ধান্ত: সমবৃত্তীয় অঙ্গের অন্তর্গঠন বিশ্লেষণ করলে জানা যায় যে, এদের উৎপত্তি ও গঠন সম্পূর্ণ ভিন্ন কিন্তু একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার জন্য অঙ্গগুলি একই কাজে লিপ্ত থাকে। আবার, গঠনের ভিন্নতা দেখে বলা যায় জীবগুলি আলাদা আলাদা পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
প্রশ্ন 24. অভিসারী অভিব্যক্তি (Convergent evolution) কাকে বলে? উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করো।
উত্তর: একই প্রকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করার জন্য আলাদা গোষ্ঠীভুক্ত জীবের অনেক সময় একই ধরনের অভিযোজন ঘটে। এই ধরনের অভিযোজনকে অভিসারী বা কনভারজেন্ট (Convergent) অভিযোজন বলে। এই প্রকার অভিযোজনের মাধ্যমে জীবদেহে যে অভিব্যক্তি ঘটে, সেই অভিব্যক্তিকে অভিসারী অভিব্যক্তি বলে।
উদাহরণ- তিমি (স্তন্যপায়ী প্রাণী), রুইমাছ (মৎস্য শ্রেণি), পেঙ্গুইন (অ্যাভিস শ্রেণি) ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিভুক্ত হলেও জলজ পরিবেশে বসবাসের জন্য এদের সাঁতার কাটার জন্য অঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। তিমি ফ্লিপারের সাহায্যে, রুইমাছ পাখনার সাহায্যে, পেঙ্গুইন অগ্রপদের সাহায্যে সাঁতার কাটে। এই প্রকার অঙ্গকে সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলে। সুতরাং, অভিসারী অভিব্যক্তির ফলে সমবৃত্তীয় অঙ্গের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 25. অপসারী অভিব্যক্তি (Divergent evolution) কাকে বলে? উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করার কারণে একই শ্রেণি বা প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে যে বিভিন্ন প্রকার অভিযোজন ঘটে, তাকে অপসারী অভিযোজন বা ডাইভারজেন্ট (Divergent) অভিযোজন বলে। এই প্রকার অভিযোজনের ফলে জীবদেহে যে প্রকার অভিব্যক্তি ঘটে, তাকে অপসারী অভিব্যক্তি বলে। -
উদাহরণ— তিমি, বাদুড় এবং বাঘ – এরা প্রত্যেকেই স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা জল, বাতাস ও স্থলভূমিতে বসবাসের জন্য সেই অঞ্চলের মতো করে অভিযোজিত হয়েছে। তিমির ফ্লিপার, বাদুড়ের ডানা, বাঘের অগ্রপদ সবই স্তন্যপায়ীর অগ্রপদগুলির অভিযোজিত বিশেষ অঙ্গ। তিমির ফ্লিপার সাঁতার কাটতে, বাদুড়ের ডানা উড়তে, বাঘের পা চলাফেরা করতে সাহায্য করে। এই প্রকার অঙ্গকে সমসংস্থ অঙ্গ বলে। সুতরাং, অপসারী অভিব্যক্তির ফলে সমসংস্থ অঙ্গ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 26. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে? উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গের উদাহরণ দাও। *** [ME '04] পর্যদ
উত্তর: নিষ্ক্রিয় অঙ্গ (Vestigial organs) : জীবদেহের যে-সমস্ত অঙ্গের কার্যকারিতা না থাকায় বর্তমানে আকারে ক্ষুদ্র বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়েছে, কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষের দেহে বা সমকালীন অন্যান্য জীবে ওই সমস্ত অঙ্গ কার্যকরী ছিল বা আছে, তাদের নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বলে ।
উদ্ভিদ উদাহরণ : 1• পরিবর্তিত মৃদ্গত কাণ্ডের শঙ্কপত্র : আদা, হলুদ প্রভৃতি উদ্ভিদের কাণ্ডের নিষ্ক্রিয় শল্কপত্র বর্তমান।
2. বন্ধ্যা পুংকেশর বা স্ট্যামিনোড : কাজুবাদাম, কালকাসুন্দা ফুলে বর্তমান।
3. বন্ধ্যা গর্ভকেশর বা পিস্টিলোড : শতমূলী, নারকেল প্রভৃতি ফুলে বর্তমান।
প্রাণী উদাহরণ :
1• অ্যাপেনডিক্স : মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে ছোটো প্রবর্ধক বা ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ, যা গিনিপিগে সক্রিয় সিকামরূপে অবস্থান করে।
2. কক্সিস : বানরের লেজের সক্রিয় হাড় মানুষের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের শেষপ্রান্তে কক্সিস নামক হাড়ের সমষ্টি তৈরি করেছে, যা একটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গ।
3. নিকটিটেটিং পর্দা : ব্যাঙের চোখের সক্রিয় উপপল্লব বা নিকটিটেটিং পর্দা মানুষের ক্ষেত্রে চোখের ধারে লালবর্ণের ছোটো নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
4. কর্ণহত্র এবং পুরুষের স্তনগ্রন্থি : মানুষের কর্ণছত্রের পেশি, পুরুষ স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তনগ্রন্থি প্রভৃতি লুপ্তপ্রায় অঙ্গের উদাহরণ ।
5. নিষ্ক্রিয় ডানা : উটপাখি, এমু, কিউই।
6. নিষ্ক্রিয় পশ্চাৎপদ : পাইথন, তিমি।
প্রশ্ন 27. লুপ্তপ্রায় অঙ্গ কীভাবে উৎপন্ন হয় ? উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর: দীর্ঘকাল অপ্রয়োজনীয়তার ও অব্যবহারের কারণে ক্রমবিবর্তনের ফলে কোনো জীবের সক্রিয় অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারিয়ে লুপ্তপ্রায় অঙ্গে পরিণত হয়। যেমন— মানুষের পূর্বসূরির দেহে পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে সিকাম অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। কারণ, আদিমযুগে মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল সেলুলোজ সমৃদ্ধ উদ্ভিদাংশ, যার পরিপাকে সিকাম মুখ্য ভূমিকা পালন করত। কিন্তু বিবর্তনের ফলে মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তন হয় ও কাঁচা উদ্ভিদাংশ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলস্বরূপ সিকামের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। দীর্ঘ অব্যবহারের ফলে বর্তমান সিকাম ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স নামক নিষ্ক্রিয় বা লুপ্তপ্রায় অঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. জৈব অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তন কাকে বলে ? * [ME 11]
উত্তর: যে মন্থর ও গতিশীল প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরলতম উদ্ংশীয় জীব থেকে পরিবর্তন ও রূপান্তরের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত জটিল ও উন্নত জীবের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ ঘটে, তাকে জৈব অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তন বলে। এ
প্রশ্ন 2. অভিব্যক্তির দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: অভিব্যক্তির গুরুত্ব : 1. বিবর্তন বা অভিব্যক্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে সরল জীব থেকে জটিল জীবের উৎপত্তি ঘটে। 2. পৃথিবীতে অভিব্যক্তির ফলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন 3. বিগ ব্যাং তত্ত্ব (Big Bang Theory) কী ?
উত্তর: বিগ ব্যাং তত্ত্ব : পৃথিবী সৃষ্টি সংক্রান্ত মতবাদগুলির মধ্যে অন্যতম গ্রহণযোগ্য মতবাদ হল বিগ ব্যাং তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় 13.8 বিলিয়ন বছর পূর্বে ব্যাপক শক্তি সমৃদ্ধ একখণ্ড অতিঘন মহাজাগতিক বস্তু থেকে সৃষ্ট প্রচণ্ড বিস্ফোরণকেই Big Bang বলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণ ও শীতলীকরণ ঘটতে থাকে এবং অসংখ্য গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুঞ্জ গঠিত হয়। পৃথিবী যে গ্যালাক্সির অন্তর্গত তা হল 'আকাশগঙ্গা' বা 'মিল্কিওয়ে' (Milky Way)।
Big Bang তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন— Georges Lemaitre (1927)। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং তত্ত্বটিকে সমর্থন করেন।
প্রশ্ন 4. আদি পৃথিবীর পরিবেশ বিজারকধর্মী ছিল কেন?
উত্তর: পৃথিবীর জন্মকালের কিছু সময় পরে বায়ুমণ্ডলে কোনো মুক্ত অক্সিজেন ছিল না, কিন্তু মুক্ত হাইড্রোজেন উপস্থিত ছিল। এজন্য আদি পৃথিবীর পরিবেশ বিজারকধর্মী ছিল।
প্রশ্ন 5. পরিবেশে কীভাবে প্রথম মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটে ?
উত্তর: রাসায়নিক বিবর্তনের প্রাথমিক দিকে মুক্ত O, ছিল না। এই সময় উৎপন্ন কোশগুলি ছিল কেমোহেটারোট্রফ প্রকৃতির। পরবর্তীকালে কেমোঅটোট্রফ ও তারপর ফোটোঅটোট্রফের আবির্ভাব ঘটে। এরা ছিল ক্লোরোফিল যুক্ত ও সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে জল বিয়োজন। করে মুক্ত O2 সৃষ্টি করতে সক্ষম। এভাবে মুক্ত O, থেকে বায়ুমণ্ডল ও ওজোনস্তর তৈরি হয়েছিল।
প্রশ্ন 6. হট ডাইলুট সুপ (Hot dilute doup) কী ?
উত্তর: হট ডাইলুট সুপ : আদিম পৃথিবীতে উত্তপ্ত সমুদ্রের জলে রাসায়নিক বিবর্তন বা কেমোজেনির ফলে শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য সরল ও জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তি ঘটে। বিজ্ঞানী হ্যালডেন সমুদ্রের উত্তপ্ত জল ও বিভিন্ন জটিল জৈব অণুর মিশ্রণকে হট ডাইলুট সুপ নামে অভিহিত করেন। আদিম পৃথিবীতে এই মিশ্রণটিই প্রাণ সৃষ্টির অনুকূল মাধ্যম তৈরি করেছিল।
প্রশ্ন 7. কোয়াসারভেট (Coacervet) কী?
উত্তর: কোয়াসারাডট : বিজ্ঞানী ওপারিনের মতে, আদিম পৃথিবীতে উত্তপ্ত সামুদ্রিক পরিবেশে আন্তঃআণবিক আকর্ষণের প্রভাবে বৃহৎ জৈব অণুগুলি (লিপিড, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট অণু) পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বৃহদাকার কোলয়েডীয় দানা গঠন করে, যার বাইরে লেসিথিন, সেফালিন নির্মিত কোশপর্দার মতো দ্বিস্তরীয় আবরণ থাকে, তাকে কোয়াসারভেট বলে।
প্রশ্ন 8. কোয়াসারভেটকে কোশের অগ্রদূত বলা হয়'—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিজ্ঞানী Oparin-এর মতে রাসায়নিক বিবর্তনের সময় উপস্থিত হট ডাইলুট সুপে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্নেহপদার্থসহ বিভিন্ন জৈব যৌগের কণাগুলির আন্তঃআণবিক আকর্ষণের ফলে তারা পরস্পর যুক্ত হয়ে এক বৃহৎ (10–500um) ও গোলাকার অস্থায়ী কোলয়েড দানা সৃষ্টি করে, একেই কোয়াসারভেট বলে। পরবর্তী পর্যায়ে কোয়াসারভেটের বাইরে লেসিথিন ও সেফালিন দ্বারা নির্মিত সীমাস্থ পর্দা তৈরি হয় যা কোশপর্দার মতো প্রভেদকভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করতে থাকে।
পর্দা দ্বারা আবৃত কোশের সজীব অংশ বা প্রোটোপ্লাজমের কোলয়েডীয় গঠনের সঙ্গে পর্দাবৃত কোয়াসারভেটের গঠনের মিল থাকায় কোয়াসারভেটকে ‘কোশের অগ্রদূত' বা আদিকোশ (proto cell) বা সজীব বস্তুর পূর্বসূরী (Precursors of first organism) বলা হয়।
প্রশ্ন 9. কোয়াসারভেটের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: কোয়াসারভেটের গুরুত্ব : প্রোটোপ্লাজমের কোলয়েড গঠনের সঙ্গে কোয়াসারভেটের কোলয়েড গঠনের মিল থাকায় কোয়াসারভেটকে আদি জীবের পূর্ব গঠন রূপে গণ্য করা হয়। ওপারিনের মতে বিভিন্ন আকারযুক্ত জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত কোয়াসারভেটগুলির ওপর প্রাকৃতিক নির্বাচন ক্রিয়াশীল হওয়ার ফলেই এটি প্রাথমিক কোশের সৃষ্টি করেছিল।
প্রশ্ন 10. মাইক্রোস্ফিয়ার (Microsphere) কী?
উত্তর: মাইক্রোস্ফিয়ার অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে সৃষ্ট প্রোটিনয়েড অণুগুলি জলের সংস্পর্শে এসে প্রায় 1-4 um ব্যাসবিশিষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার কণা সৃষ্টি করে, যারা বিভাজনে সক্ষম এবং কোশপর্ণার মতো দ্বিস্তরীয় আবরণবিশিষ্ট। বিজ্ঞানী Sidney W. Fox এই গোলাকার কণাকে মাইকোস্ফিয়ার নামকরণ করেন। তাঁর মতে, মাইক্রোস্ফিয়ার থেকে আদি জীব সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রশ্ন 11. মাইক্রোস্ফিয়ারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: মাইক্রোস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য ও মাইক্রোস্ফিয়ার বিভাজন- ক্ষমতাযুক্ত। ও মাইক্রোস্ফিয়ারের মধ্যে উৎসেচক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। মাইক্রোস্ফিয়ার লিপিডপর্দাবৃত গঠন সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন 12. কোয়াসারভেট ও মাইক্রোস্ফিয়ার-এর মধ্যে সাদৃশ্য লেখো।
উত্তর: 1. কোয়াসারভেট এবং মাইক্রোস্ফিয়ার উভয়েরই প্রধান উপাদান ছিল প্রোটিন এবং 2. উভয়েই আবরণবেষ্টিত আদি কোশীয় সংগঠনরূপে পরিগণিত হয়।
প্রশ্ন 13. সায়ানোজেন মতবাদ (Cyanogen theory) কী ? Nirmal Hriday Adhrain CC High School '16
উত্তর: সায়ানোজেন মতবাদ : জার্মান বিজ্ঞানী Pluger-এর মতে উৎপত্তির পর থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রাও ক্রমশ কমতে থাকে। তখন কার্বন ও নাইট্রোজেন পরস্পর বিক্রিয়ার মাধ্যমে একপ্রকার জটিল যৌগ গঠন করে, একে সায়ানোজেন বলে। এই সায়ানোজেন থেকেই প্রোটোপ্লাজমের সৃষ্টি। হয়। এই মতবাদকে সায়ানোজেন মতবাদ বলে। বর্তমান বিজ্ঞানীদের মতে, এই মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন 14. প্রোটোবায়োন্ট (Protobiont) কাকে বলে ? Rahara RK Mission Boys' Home High School "16
উত্তর: প্রোটোন্যায়ান্ট : আদি পৃথিবীতে পরিবেশের জলীয় দ্রবণ থেকে আলাদা হয়ে যে আদি জীবসদৃশ গঠন তৈরি হয়, যার মধ্যে নিজস্ব প্রজননক্ষমতা না থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পরিবেশ উপস্থিত ছিল, তাকে প্রোটোবায়োন্ট বলে। যেমন— কোয়াসারভেট ও মাইক্রোস্ফিয়ার।
প্রশ্ন 15. প্রোটিনয়েড (Protienoid) কী ?
উত্তর: প্রোটিলায়ড: আদি পৃথিবীতে উচ্চ তাপমাত্রায় (150°C - 180°C) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে সমুদ্রের জলে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি পলিমারাইজেশন পদ্ধতিতে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রোটিনস্বরূপ যে বৃহৎ জৈব অণু গঠন করে, তাকে প্রোটিনয়েড বলে। বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তাপ প্রয়োগ করে প্রোটিনয়েড তৈরি করেন এবং তাঁর মতানুসারে আদিকোশ গঠনে প্রোটিনয়েডের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
প্রশ্ন 16. নিউক্লিক অ্যাসিড কীভাবে গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর: আদি পৃথিবীতে সৃষ্ট হট ডাইলুট সুপের মধ্যে সরল জৈব-রাসায়নিক বস্তুগুলি বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে অধিকতর জটিল জৈব-রাসানিক বস্তুর সৃষ্টি করে। যেমন- শর্করা, মেহজাতীয় পার্থ, প্রোটিন, পিউরিন, পিরিমিডিন, নিউক্লিওসাইড এবং নিউক্লিওটাইড। নিউক্লিওটাইডগুলি পরবর্তী পর্যায়ে পলিমারাইজেশন (Polymerisation) পদ্ধতিতে নিউক্লিক অ্যাসিড গঠন করে। এইভাবে রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA)-এর উদ্ভব ঘটে যা প্রথম জিনগত তথ্যের বাহক হিসেবে ক্রিয়া করে। এই নিউক্লিক অ্যাসিডগুলি নিজ প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম ছিল। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ প্রতিলিপি গঠনের কারণে কালক্রমে বিভিন্ন প্রকারের নিউক্লিক অ্যাসিডের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 17. নগ্ন জিন কি?
উত্তর: রাসায়নিক বিবর্তনের সময়ে সরল অজৈব যৌগ থেকে জটিল জৈব যৌগ গঠনকালে অসংখ্য মুক্ত মনোনিউক্লিওটাইড পরপর সজ্জিত ও পরস্পর যুক্ত হয়ে যে হিস্টোনবিহীন প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম পলিনিউক্লিওটাইড বা নিউক্লিক অ্যাসিড গঠন করে, তাকে নগ্ন জন (Naked gene) বলে। এককথায় আদি পৃথিবীতে সৃষ্টি কোয়াসারভেটে অবস্থিত প্রোটিনবিহীন RNA-ই হল নগ্ন জিন।
প্রশ্ন 18. RNA পৃথিবী প্রকল্প বা RNA ওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিস
উত্তর: RNA পৃথিবী প্রকল্প বা RNA ওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিস-এর প্রবক্তা বিজ্ঞানী Alexander Rich (1962)। এই হাইপোথেসিস বা প্রকল্প অনুসারে আদিকোশ বা প্রোটোসেল-এ প্রথম জেনেটিক বস্তুরূপে ছিল RNA এই RNA ছিল স্বপ্রজননশীল এবং এটির ক্যাটালাইটিক ধর্ম থাকায় বিভিন্ন বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু, ধীরে ধীরে RNA-এর ক্যাটালাইটিক ধর্ম দুর্বল হতে থাকে এবং আপেক্ষিক স্থিতিহীনতার কারণে RNA ক্রমশ তার কার্যকারিতা হারায়। এরপর সম্ভবত বিশেষ প্রকারের রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ উৎসেচকের সহায়তায় RNA-এর চেয়ে উন্নত ও স্থিতিশীল জিনগত উপাদান DNA সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে প্রোটিনের উৎপত্তি ঘটে। পৃথিবীতে প্রথম RNA সৃষ্টির এই ধারণাকে RNA পৃথিবী প্রকল্প বা RNA ওয়ার্ল্ড হাইপোথেসিস বলে।
প্রশ্ন 19. প্রাথমিক কোশের উৎপত্তি কখন ঘটেছিল? প্রাথমিক কোশের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: প্রায় 3.7 বিলিয়ন বছর পূর্বে প্রোটেরোজোয়িক যুগে সমুদ্রের জলে প্রাথমিক কোশের উৎপত্তি ঘটেছিল। প্রাথমিক কোশের বৈশিষ্ট্য : এরা পরভোজী ও অবায়ুজীবী ছিল। ও এরা RNA যুক্ত এবং অনির্দিষ্ট RNA প্রতিলিপিকরণে সক্ষম ছিল। 11
প্রশ্ন 20. কত বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম স্বভোজী জীবগোষ্ঠী উৎপত্তি লাভ করেছিল? এই জীবগোষ্ঠীর নাম কী ?
উত্তর: আনুমানিক 3,000 - 3,500 মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম স্বভোজী জীবগোষ্ঠী উৎপত্তি লাভ করে। এই জীবগোষ্ঠীটি হল সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ-সবুজ শৈবাল।
প্রশ্ন 21. জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত মিলার ও উরে-র পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলির এবং উৎপন্ন একটি জৈব যৌগের নাম লেখো। * [ME '17]
উত্তর: মিলার ও উরে-র পরীক্ষায় ব্যবহূত বিক্রিয়ক - মিথেন (CH4), অ্যামোনিয়া (NH3) ও হাইড্রোজেন (H2) 2 : 2 : 1 অনুপাতে স্পার্ক অ্যাপারেটাসে রাখা হয়। এ ছাড়া, জলীয়বাষ্পও ব্যবহৃত হয়। © পরীক্ষায় উৎপন্ন জৈব যৌগ : গ্লাইসিন, অ্যালানিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড প্রভৃতি।
প্রশ্ন 22. পৃথিবীতে অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি রেখাচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করো।
উত্তর: পৃথিবী সৃষ্টি - মুক্ত C, H, N - CH4, CO2, H2O, NH3 গঠন | গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড- নিউক্লিয় প্রোটিন, লিপিড, পলিস্যাকারাইড কোয়াসারভেট → প্রোটোবায়োন্ট এককোশী জীবের উৎপত্তি সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পরিবেশে অক্সিজেন (O2) ত্যাগের সূচনা - বহুকোশী জীবের উৎপত্তি মাছের মতো মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিবর্তন স্থলে উদ্ভিদের বিবর্তন, পৃথিবীতে নতুন বাসস্থানের উদ্ভব চার পাযুক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের স্থলে ওঠা |
প্রশ্ন 23. রাসায়নিক বিবর্তন ও জৈব বিবর্তনের মূল পার্থক্য কী ?
উত্তর: রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে জৈব বিবর্তন ঘটেছে কিন্তু, জৈব বিবর্তনের মাধ্যমে রাসায়নিক বিবর্তন ঘটেনি। ও রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জৈব যৌগের সৃষ্টি হয়েছে। অপরপক্ষে, জৈব বিবর্তনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন 24. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ল্যামার্কের মতে, কোনো জীব জীবনকালে নিজ চেষ্টায় যে-সমস্ত বৈশিষ্ট্য অর্জন করে তা পরবর্তী বংশে সঞ্চারিত হয়। একে ‘অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ' বলে। প্রতি প্রজন্মে সামান্য পরিমাণ অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হওয়ায় কালক্রমে তা পুঞ্জীভূত হয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে ।
প্রশ্ন 25। যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: চার্লস ডারউইনের মতে, অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরাই জীবনসংগ্রামে জয়ী হয় এবং যোগ্যতমরূপে বিবেচিত হয়। কালক্রমে অনুকূল প্রকরণগুলি অভিযোজনে সহায়তা করে এবং বংশপরম্পরায় সারিত হয় ও পুঞ্জীভূত হয়ে নতুন যোগ্যতম প্রজাতি সৃষ্টি করে। অপরদিকে, প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
প্রশ্ন 26. প্রাকৃতিক নির্বাচন কী? এটির প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া দ্বারা অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা অন্যান্য জীবের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগ সুবিধা লাভ করে ও জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural Selection) বলে। প্রাকৃতিক নির্বাচন তিন প্রকার। যথা— স্থিতিকারী নির্বাচন ও অভিমুখী নির্বাচন এবং ও বিচ্ছিন্নকারী নির্বাচন।
প্রশ্ন 27. আধুনিক সংশ্লেষবাদ (Modern Synthetic Theory) কী ?
উত্তর: বিজ্ঞানী ডবঝানস্কি, ফিসার, হাক্সলে, মুলার, রাইট, হ্যালডেন, মেয়ার প্রমুখ মেন্ডেলের বংশগতি সংক্রান্ত সূত্রাবলি, পরিব্যক্তিবাদ এবং জিনতত্ত্বের আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটে ডারউইনবাদ পর্যালোচনার মাধ্যমে জৈব অভিব্যক্তির সর্বাধুনিক মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন। এই মতবাদের মূল বক্তব্য হল পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের কিছু পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনসহ অভিযোজিত জীব প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হলেই জীবটির অভিব্যক্তি সম্পন্ন হয়। এই মতবাদকেই বলে আধুনিক সংশ্লেষবাদ। ‘Modern Synthesis' শব্দটির প্রবক্তা Junior Huxley (1942)। -
প্রশ্ন 28. জার্মপ্লাজমবাদ কী ?
উত্তর: 1885 খ্রিস্টাব্দে অগাস্ট ওয়াইসম্যান জার্মপ্লাজমবাদ করেন। তার তত্ত্ব অনুযায়ী, “জীব হতে জীব সৃষ্টি হয়, এবং সকল প্রকার জীবজ বৈশিষ্ট্য পূর্বপুরুষ হতে উত্তর পুরুষে কেবলমাত্র জার্মকোশ বা গ্যামেট দ্বারা সঞ্চারিত হয়, দেহকোশের ওই সকল বৈশিষ্ট্য সজ্ঞারণে কোনো ভূমিকা নেই।” প্রকৃতপক্ষে, ল্যামার্কের তত্ত্ব ও ডারউইনের প্যানজেনেসিস তত্ত্বের ত্রুটিগুলিকে ওয়াইসম্যান জার্মপ্লাজমবাদের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন।
প্রশ্ন 29. অভিব্যক্তির সপক্ষে প্রমাণগুলি কী কী ?
উত্তর: অভিব্যক্তির সপক্ষে প্রমাণগুলি হল— জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ, ও তুলনামূলক শারীরস্থানগত প্রমাণ, ও ভ্রূণতত্ত্বগত প্ৰমাণ, 0 আণবিক প্রমাণ, জিনতত্ত্বগত প্রমাণ, ও বিন্যাসবিধি সম্বন্ধীয় প্রমাণ।
প্রশ্ন 30. অভিব্যক্তিতে মেরুদন্ডী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডে কী ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর:অভিব্যক্তিতে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ড দুই প্রকোষ্ঠযুক্ত গঠন থেকে চার প্রকোষ্ঠযুক্ত গঠনে পরিণত হয়। যেমন—
1. মাছের দুই প্রকোষ্ঠযুক্ত হৃৎপিণ্ড কেবলমাত্র ভেনাস (দূষিত ) রক্ত বহন করে।
2. উভচরের দুটি সম্পূর্ণ বিভক্ত অলিন্দ এবং একটি অবিভক্ত নিলয়যুক্ত হৃৎপিণ্ডে ভেনাস (দূষিত) রক্ত ও ধমনি (বিশুদ্ধ) রক্তের মিশ্রণ ঘটে।
3• সরীসৃপদের ক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিভক্ত অলিন্দ এবং একটি অর্থবিভক্ত নিলয় দ্বারা হূৎপিণ্ড গঠিত। অর্থাৎ, এখানে দুষিত ও বিশুদ্ধ রক্তকে পৃথক রাখার চেষ্টা দেখা যায়। কিন্তু, এই প্রকার হৃদপিণ্ডেও ভেনাস (দূষিত) রক্ত ও ধমনি (বিশুদ্ধ) রক্তের মিশ্রন ঘটে।
4.পক্ষী এবং স্তন্যপায়ীর চারটি প্রকোষ্ঠযুক্ত হৎপিণ্ডে বিশুদ্ধ রক্ত ও দূষিত রক্তের পৃথক পৃথক পরিবহণ ঘটে।
5. বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী হূৎপিন্ডের গঠনের জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থাৎ, মাছ উভচর সরীসৃপ পক্ষী || স্তন্যপায়ী
প্রশ্ন 31. জৈব অভিব্যক্তিতে সমসংস্থ অঙ্গের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: জৈব অভিব্যষ্ট্রিতে সমসংস্থ আঙ্গর গুরুত্ব ও সমসংস্থ অঙ্গের প্রাথমিক গঠন একই রকম হওয়াতে বোঝা যায় যে, ওই সমস্ত অঙ্গযুক্ত জীবেরা একই পূর্বপুরুষ বা উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ও সমসংস্থ অঙ্গগুলির কাজ আলাদা হওয়ায় বোঝা যায় যে,ওই সমস্ত অঙ্গযুক্ত জীবগুলি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হয়েছে অর্থাৎ, অঙ্গাগুলির কার্যগত পার্থক্য অপসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে।
প্রশ্ন 32. জৈব অভিব্যক্তি বা বিবর্তনে সমবৃত্তীয় অঙ্গের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: জৈব অভিব্যক্তিতে সমবৃত্তীয় আজ্ঞার গুরুত্ব সমবৃত্তীয় অঙ্গের প্রাথমিক গঠন পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, ওই সমস্ত অঙ্গাযুক্ত জীবগুলি উৎপত্তিগতভাবে আলাদা অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সমবৃত্তীয় অঙ্গগুলির কাজ এক হওয়ায় বোঝা যায় ভিন্ন ভিন্ন জীবগুলি একই পরিবেশে অভিযোজিত হয়েছে। অর্থাৎ, সমপ্রকৃতির কাজ এদের অভিসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে।
প্রশ্ন 33. যে দুটি অন্তর্গঠনগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে তিমির ফ্লিপার আর পাখির ডানাকে' সমসংস্থ অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয় তা উল্লেখ করো। * [ME '17]
উত্তর: 1. উভয় অঙ্গের অন্তঃকঙ্কাল অস্থিনির্মিত। 2. উভয় অাের অর্ন্তকাঠামোতে হিউমেরাস, রেডিয়াস ও আলনা, কারপাল, মেটাকারপাল এবং ফ্যালানজেস অস্থি বর্তমান। 3.উভয় অঙ্গের কার্যকারিতা পেশি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রশ্ন 34. মাছের পাখনা ও তিমির ফ্লিপার বিবর্তনগতভাবে কী ধরনের অঙ্গ এবং কেন? Mitra Institution 16
উত্তর: মাছের পাখনা ও তিমির ফ্লিপার বিবর্তনগতভাবে সমবৃত্তীয় অঙ্গ (Analogous organ)। কারণ— মাছের পাখনা কিউটিন নির্মিত ও রশ্মিযুক্ত হয় এবং তিমির ফ্লিপার হল অস্থি ও পেশি নির্মিত রূপান্তরিত অগ্রপদ। মাছ ও তিমির অঙ্গ দুটিই জলে সাঁতার কাটতে ও ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, অঙ্গ দুটি গঠনগতভাবে ও উৎপত্তিগতভাবে সম্পূর্ণ আলানা হলেও কার্যগত দিক থেকে এক তাই এদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বলা হয়।
প্রশ্ন 35. প্যান্টি (Palaeontology) কাকে বলে?
উত্তর: বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবাশ্ম নিয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণা করা হয় এবং জীবের অতীত ও অভিব্যক্তি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়. তাকে প্রত্নজীববিদ্যা বা প্যালিওন্টলজি বলে।
প্রশ্ন 36. জীবাশ্ম (Fossil) কাকে বলে ?
উত্তর: জীবাশ্ম বহু বছর ধরে মাটির নীচে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ো পাললিক শিলাস্তরে জীবদেহের সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা বা ছাপকে জীবাশ্ম বা ফসিল (Fossil) বলে। যেমন- আর্কিওপটেরিক্স এর জীবাশ্ম।
প্রশ্ন 37. মোল্ড বা ছাঁচ কী?
উত্তর: বহু বছর কোনো মৃত জীবদেহের ওপর অধঃক্ষেপ জমা হয়ে শক্ত পাথর গঠিত হলে জীবদেহটির পচনের পরই পাথরের মধ্যে জীবটির যে ছাপ পড়ে থাকে, তাকে মোল্ড বা ছাঁচ বলে। মোল্ড বা ছাঁচে প্রাণীদেহ বা উদ্ভিদদেহের কোনো অভ্যন্তরীণ অংশ বজায় না থাকলেও দেহের বহিরাকৃতি বজায় থাকে। এর সাহায্য লুপ্ত প্রাণী বা উদ্ভিদের বিভিন্ন অন্য বা অংশের বহিঃগঠন সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।
প্রশ্ন 38. দুটি উদ্ভিদ ও দুটি প্রাণী জীবাশ্মের উদাহরণ দাও।
উত্তর : উদ্ভিদ জীবাশ্ম টেরিডোস্পার্ম, ক্যালামাইটিস নামক উদ্ভিদের কাণ্ড। @ প্রাণী ও পাখির জীবাশ্ম আর্কিওপটেরিক্স ও ঘোড়ার জীবাশ্ম ইওহিঙ্গাস ও হাতির জীবাশ্ম : ম্যামথ
প্রশ্ন 39. জীবন্ত জীবাশ্ম (Living fossil) কাকে বলে ?
উত্তর: যে-সমস্ত জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করে আজও অপরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যসহ বেঁচে আছে, অথচ সমসাময়িক জীবদের অবলুপ্তি ঘটেছে, তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বা Living fossil বলে। যেমন— প্লাটিপাস বা হংসচঞ্জ।
প্রশ্ন 40. জৈব বিবর্তনে জীবন্ত জীবাশ্ম কীভাবে ভূমিকা পালন করে ?
উত্তর: জৈব বিবর্তন জীবন্ত জীবাশ্মের ভূমিকা : বহু অতীতে উৎপত্তি লাভ করায় এবং আজও অপরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যসহ বেঁচে থাকায় জীবন্ত জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে ওই সময়কার পরিবেশ, প্রকৃতি এবং সমকালীন জীবের (বর্তমানে অবলুপ্ত) গঠন ও আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ও বেশিরভাগ জীবন্ত জীবাশ্ম দুটি বৃহৎ জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী জীবরূপে গণ্য হয়। কারণ, এদের দেহে উভয় গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যই উপস্থিত থাকে।
যেমন— পেরিপেটাস – অ্যানিলিডা ও আর্থ্রোপোড়া গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগস্থাপন করে। অনুরূপ প্রশ্ন : জীবন্ত জীবাশ্মের তাৎপর্য লেখো।
প্রশ্ন 41. দুটি উদ্ভিদ ও দুটি প্রাণী জীবন্ত জীবাশ্মের নাম লেখো।
উত্তর: উদ্ভিদের জীবন্ত জীবাশ্ম : 1• ইকুইজিটাম, 2. গিঙ্কগো বাইলোবা, 3. সাইকাড, 4.নিটাম প্রভৃতি
প্রাণী জীবন্ত জীবাশ্ম : 1.স্ফেনোডন বা টুয়াটারা : সরীসৃপ 2. লিমুলাস বা রাজকাঁকড়া 3. প্লাটিপাস বা হংসচস্থ ও পেরিপেটাস।
প্রশ্ন 42. সংযোগরক্ষাকারী জীব বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে-সমস্ত জীবের দেহে দুটি ভিন্ন জীবগোষ্ঠীর (দুটি পর্ব বা শ্রেণি) বৈশিষ্ট্য বর্তমান এবং যাদের পর্যবেক্ষণ করে জীব বিবর্তনের ধারায় একটি জীবগোষ্ঠী থেকে অন্য জীবগোষ্ঠীর উৎপত্তির ধারণা পাওয়া যায়, তাদের সংযোগরক্ষাকারী জীব বা কানেকটিং লিংক (Connecting link) বলে।
উদাহরণ : উদ্ভিদ বৈ থে ব্য সংযোগরক্ষাকারী জীব ↑ নিটাম : (ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী) ও রাইনিয়া : (মস ও ফার্ন) @ প্রাণী রাইনিয়া ↑ লাংফিশ : (মাছ ও উভচর) ও প্লাটিপাস : (সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী) লাংফিশ
প্রশ্ন 43. বিবর্তনের সাপেক্ষে সংযোগরক্ষাকারী জীবের ভূমিকা কী ?
উত্তর: সংযোগরক্ষাকারী জীবের দেহে দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর জীবের বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকায় প্রমাণিত হয় যে, একটি গোষ্ঠীর জীব অপর গোষ্ঠীর জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। সুতরাং, সংযোগরক্ষাকারী যোগসূত্র দ্বারা জৈববিবর্তনের ধারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়। যেমন— উদ্ভিদ
সংযোগরক্ষাকারী যোগসূত্র : সমাঙ্গদেহী রিকসিয়া উন্নত ব্রায়োফাইটা বা মস সরল ব্রায়োফাইটা গুপ্তবীজী নিটাম ব্যক্তবীজী | ট্রিফার্ন টেরিডোফাইটা বা ফার্ন | রাইনিয়া প্রাণী সংযোগরক্ষাকারী যোগসূত্র : মাছ লাংফিশ অ্যাম্ফিবিয়া (উভচর | রেপটিলিয়া (সরীসৃপ) সেমুরিয়া আর্কিওপটেরিক্স প্লাটিপাস পক্ষী স্তন্যপায়ী
প্রশ্ন 44. ঘোড়ার বিবর্তনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনগুলি উল্লেখ করো। [ME '17]
উত্তর: ঘোড়ার বিবর্তনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন:
1. দেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি, 2.পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি 3. বেশি পেশিসমৃদ্ধ হওয়া, 4. পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস, পায়ের তিন নম্বর আঙুলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি এবং মজবুত ক্ষুরযুক্ত হওয়া, 5. পেষক দাঁতের কাউনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি এবং বেশি এনামেলযুক্ত হওয়া।
প্রশ্ন 45.হৃতযোজক বা মিসিং লিংক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: হৃতাযাজক(Missing Link) : দুটি ভিন্ন জীবগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বহনকারী যে-সমস্ত সংযোগরক্ষাকারী জীব বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাদের হৃতযোজক বা মিসিং লিংক বলে। পক্ষীশ্রেণির মিসিং লিংক) উদ্ভিদ : টেরিডোস্পার্ম (ফার্ন বাস্তবীজী উদ্ভিদের মিসিং লিকে)। St-
উদাহরণ- o প্রাণী : আর্কিওপটেরিক্স (সরীসৃপ ও
প্রশ্ন 46. আর্কিওপটেরিক্স কী?
উত্তর: আর্কিওপটেরিক্স হল একটি মৃতযোজক বা মিসিং লিংক। Archaeopteryx lithographica জুরাসিক পিরিয়ডে প্রায় 170 মিলিয়ন বছর আগে উৎপত্তি লাভ করে। জার্মানির বোভারিয়ার সোলেনহোফেন অঞ্চল থেকে 1861 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী Andreas Wagner এই জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন। আর্কিও পাটরিক্স ক্রিটেশিয়াস পিরিয়ডে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়। আর্কিওপটেরিক্সাকে লিজার্ড বার্ড বা টুথড় বার্ডও বলা হয়, আর্কিওপটেরিঙ্গ কারণ এর দেহে একই সঙ্গে সরীসৃপ ও পক্ষী শ্রেণির বৈশিষ্ট্য বর্তমান।
প্রশ্ন 47. আর্কিওপটেরিক্সের সরীসৃপ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: আর্কিও পাটরিক্সের সরীসৃপ বৈশিষ্ট্য : করোটি সরীসৃপের উত্তর মতো এবং গুরুমস্তিষ্ক দীর্ঘায়িত ও লঘুমস্তিষ্ক ক্ষুদ্র, ও চোয়াল দাঁতযুক্ত, © ডানায় আঙুল নখরযুক্ত. 0 19-20টি মুক্ত কড়াল কশেরুকাযুক্ত দীর্ঘ পুচ্ছ, স্টার নাম কীলবিহীন।
প্রশ্ন 48. আর্কিওপটেরিক্সের পক্ষী বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। *
উত্তর: আর্কিও পাটরিকোর পক্ষী বৈশিষ্ট্য ও দেহ পালক দ্বারা আবৃত এবং পক্ষীসদৃশ, ও অগ্রপদ ডানায় রূপান্তরিত এবং পালকযুক্ত, ও চোয়াল চচতে রূপান্তরিত হয়েছে, ও করোটি একটিমাত্র অক্সিপিটাল কনডাইলযুক্ত, ও অস্থি বায়ুপূর্ণ ও হালকা, ও লেজ পালকযুক্ত।
প্রশ্ন 49. জৈব বিবর্তনে আর্কিওপটেরিক্সের গুরুত্ব কী?
উত্তর: জৈব বিবর্তাল আর্কিও পাটরিাজের গুরুত্ব আর্কিওপটেরিক্সের দেহে একই সঙ্গে সরীসৃপ ও পক্ষী শ্রেণির o বৈশিষ্ট্য বর্তমান। অর্থাৎ, আর্কিওপটেরিক্স এই দুটি ভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। • আর্কিওপটেরিক্সের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, জৈব বিবর্তনের ধারায় সরীসৃপ থেকে পক্ষী শ্রেণির উৎপত্তি ঘটেছে।
প্রশ্ন 50. মানুষের কক্সিসকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলা হয় কেন ?
উত্তর: কক্সিস হল মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তের বা লেজের চারটি কশেরুকা দ্বারা নির্মিত এক ছোটো ত্রিকোণাকার অস্থি। এটি মানুষের পূর্বপুরুষের দেহে লেজ গঠনে সাহায্য করত ও অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।
কিন্তু, মানুষ হাঁটতে শেখার পর ক্রমশ লেজের অর্থাৎ কক্সিসের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে ক্ষয়প্রাপ্ত কক্সিসের কোনো কার্যকারিতা না থাকায় এটিকে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে।
প্রশ্ন 51. বিবর্তনে নিষ্ক্রিয় অঙ্গের গুরুত্ব লেখো।★★ [ME '09,07]
উত্তর: বিবর্তান নিষ্ক্রিয় আঙ্গর গুরুত্ব : O নিষ্ক্রিয় অঙ্গটির সক্রিয় অবস্থাযুক্ত জীবদের পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে, বিবর্তনের ধারায় উৎপন্ন জীবের দেহে ওই অঙ্গটির প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে, ও কোনো নিষ্ক্রিয় অঙ্গের সৃষ্টি প্রকরণ দ্বারা ঘটে যার ফলে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন 52. মিউটেশন কাকে বলে? মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
উত্তর: ক্রোমোজোমের সংখ্যাগত বা গঠনগত বা জিনের রাসায়নিক গঠনে যে আকস্মিক, স্থায়ী এবং বংশপরম্পরায় সঞ্চারণ যোগ্য পরিবর্তন ঘটে, তাকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে। মিউটেশন তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন হুগো দ্য ভ্রিস।
প্রশ্ন 53. বিবর্তনে যৌন জননের গুরুত্ব লেখো। Vidyasagar Vidyapith '16
উত্তর: 1. যৌন জননে জীবের ক্রোমোজোম বা জিন মিউটেশনের সম্ভাবনা থাকে। উপকারী মিউটেশন বা পরিব্যক্তি জীবের বিবর্তনের সহায়ক। 2. যৌন জননে গ্যামেট গঠনকালে ক্রসিংওভার ও রিকম্বিনেশন ঘটে, ফলে অপত্য জীবদেহে প্রকরণের সৃষ্টি হয় যা বিবর্তনে সাহায্য করে। 3. যৌন জননে সৃষ্ট অপত্য জীবগুলি উচ্চ জীবনীশক্তি সম্পন্ন হয়। অনুকূল বৈশিষ্ট্যগুলির সাহায্যে এরা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারে অর্থাৎ অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হয়। অভিযোজন অভিব্যক্তিতে বা বিবর্তনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, বিবর্তনে যৌন জননের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন 54. বিবর্তনে প্রজাতির উৎপত্তিতে প্রকরণ কীভাবে সহায়তা করে ?
উত্তর: ডারউইনের মতে, এই পৃথিবীতে যে-কোনো দুটি জীব কখনই সম্পূর্ণ একই রকম হয় না। একই প্রজাতির বিভিন্ন জীবদের মধ্যে কিছু মৌলিক সাদৃশ্য থাকলেও তাদের আকার, আকৃতি, গঠনে কিছু কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই পার্থক্যগুলোকেই ডারউইন প্রকরণ (Variation) বলে আখ্যা দেন। ডারউইনের মতে, অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের ফলে জীবদেহে প্রকরণের উৎপত্তি হয় যা প্রজননের সময় অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়। ক্রমান্বয়ে জীবদেহে ছোটো ছোটো প্রকরণ সঞ্চারিত ও পুঞ্জীভূত হতে হতে বৃহৎ পার্থক্যের সৃষ্টি হয় ও নতুন প্রজাতি তৈরি হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে ডারউইন দু-প্রকার প্রকরণের ধারণা দেন—অনুকূল প্রকরণ এবং প্রতিকূল প্রকরণ। অনুকূল প্রকরণ জীবকে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামে সাহায্য করে ও প্রতিকূল প্রকরণ জীবের অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামে বাধা প্রদান করে।
প্রশ্ন 55. জৈব-বিবর্তনের বায়োজেনেটিক সূত্র বলতে কী বোঝো? মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রূণের উদাহরণ দ্বারা ঘটনাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বায়োজেনেটিক সূত্র (Biogenetic law) বা পুনরাবৃত্তি তত্ত্ব (Recapitulation theory)-এর উপস্থাপক হলেন বিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল। এই তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যক্তিজনি জাতিজনিকে পুনরাবর্তন করে (Ontogeny repeats phylogeny)। ব্যক্তিজনি (Ontogeny) হল জীবের জীবন ইতিহাস এবং জাতিজনি (Phylogeny) হল জীবের জাতির বিবর্তনগত ইতিহাস। জৈব বিবর্তনের ধারায় মাছ, ব্যাং, সরীসৃপ, পক্ষী শ্রেণির পূর্বপুরুষ থেকে স্তন্যপায়ী অর্থাৎ মানুষের উৎপত্তি ঘটেছে, এজন্য মানুষের ভ্রূণদশায় মাছ, ব্যাং, সরীসৃপ, পাখি প্রভৃতি প্রাণীর ভ্রূণের সঙ্গে সাদৃশ্য বর্তমান। সুতরাং, মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ভ্রুণ দশায় বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য পুনরাবৃত্তি তত্ত্ব বা বায়োজেনেটিক সূত্রকে সমর্থন করে।
No comments:
Post a Comment