কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ (Some common genetic diseases): দশম শ্রেণীর জীবন বিজ্ঞান অধ্যায় ৩.২| class 10 life science chapter 3.2 question answer|
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. জিনগত রোগ বলতে কী বোঝো? এর প্রকারভেদগুলি ছকের মাধ্যমে দেখাও।
উত্তর: জিনগত রোগ (Genetic disease) : জিনের মিউটেশন বা পরিব্যক্তির ফলে জীবদেহে যে-সমস্ত অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয় এবং যাদের বংশগতির ধারা নির্দিষ্ট পেডিগ্রি বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়, তাদের জিনগত রোগ বলে। উদাহরণ— হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা, অ্যালবিনিজম, ফিনাইল কিটোনিউরিয়া, থ্যালাসেমিয়া প্রভৃতি।
জিনগত রোগের প্রকারভেদ :
প্রশ্ন 2. থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) কাকে বলে? এর কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) : অটোজোমে অবস্থিত প্রচ্ছন্ন পরিব্যক্ত একক জিন-এর কারণে সৃষ্ট যে রোগে মানুষের দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ত্রুটিযুক্ত হয় ও লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়ায় হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া বলে। এটি এক প্রকার বংশগত রোগ।
থ্যালাসেমিয়ার কারণ : 1. রক্তে উপস্থিত হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন জিনের মিউটেশনের ফলে সৃষ্টি হয়। 2. স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন প্রোটিনটি চারটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত হয় – দুটি আলফা (a) শৃঙ্খল ও দুটি বিটা (B) শৃঙ্খল। 3. মানুষের ক্ষেত্রে 16th ক্রোমোজোমে -গ্লোবিন জিন এবং 11th ক্রোমোজোমে B-গ্লোবিন জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে স্বাভাবিক a. বা B-গ্লোবিন প্রোটিন প্রয়োজনীয় অনুপাতে তৈরি হয় না এবং ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হয়। ফলে, থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়।
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ : 1. রক্তে স্বাভাবিক লোহিত রক্তকণিকা এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদন কম হওয়ার জন্য দেহে অক্সিজেন ঘাটতি তৈরি হয় ও তীব্র রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া ঘটে। 2. দেহের বৃদ্ধির হার কম হয়। যৌবনপ্রাপ্তির লক্ষণগুলির প্রকাশ দেরিতে ঘটে। থ্যালাসেমিয়ার কারণে মুখের অস্থির পরিবর্তন 3. যকৃৎ ও প্লীহা বড়ো হয় ও জন্ডিস দেখা দেয়। 4. কঙ্কাল বা অস্থির ভঙ্গুরতা ও গঠনে বিকৃতি দেখা দেয়। 5.থ্যালাসেমিয়া রোগে ঘন ঘন রক্ত বদলানোর জন্য দেহে লোহা সঞ্চিত হতে থাকে। অতিরিক্ত লোহা সঞ্চয়ের ফলে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও অন্তঃক্ষরা তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 6. কালচে বর্ণের মূত্র উৎপন্ন হয়।
জেনে রাখো : ‘থ্যালাসেমিয়া' শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে দুটি গ্রিক শব্দ থেকে, ‘থ্যালাসা' (Thalassa) যার অর্থ 'সমুদ্র' বা Sea এবং ‘এমিয়া' (Emia) যার অর্থ 'রক্ত' বা Blood। ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলিতে প্রথম এই রোগটি ধরা পড়ে এবং এই দেশগুলিতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা দেওয়ায় এর নাম দেওয়া হয় থ্যালাসেমিয়া ।
প্রশ্ন 3. থ্যালাসেমিয়া রোগের উত্তরাধিকার কীভাবে ঘটে?
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া রোগের উত্তরাধিকার : 1• থ্যালাসেমিয়া নামক রোগটি অটোজোমবাহিত মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনের প্রভাবে ঘটে। তাই, এই জিন লিঙ্গ নির্বিশেষে সন্তানদের মধ্যে দেখা যায়।
2. যেসব মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় (হোমোজাইগাস), তারা সাধারণত অল্প বয়সে মারা যায়। ফলে, থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত পিতা বা মাতা পাওয়া যায় না।
3. একজন হেটারোজাইগাস থ্যালাসেমিক ব্যক্তির দেহে বাহ্যিকভাবে থ্যালাসেমিয়ার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না ।
4. একজন হেটারোজাইগাস থ্যালাসেমিক ও স্বাভাবিক ব্যক্তির মধ্যে বিবাহ হলে স্বাভাবিক সন্তান জন্মাবে।
5. কিন্তু, দুজন হেটারোজাইগাস পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ হলে মেন্ডেলের প্রথম সূত্রানুযায়ী, যারা জন্মাবে তাদের 25% থ্যালাসেমিক হবে। এক্ষেত্রে, থ্যালাসেমিয়ায় প্রচ্ছন্ন জিনকে “’ এবং স্বাভাবিক প্রকট জিনকে ‘T’ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। পিতা ও মাতা দুজনেই হেটারোজাইগাস বা বাহক হলে তাদের জিনোটাইপ হবে Tt। এরা প্রত্যেকে দুই প্রকার জননকোশ বা গ্যামেট তৈরি করবে। পরবর্তী জনুতে যে অপত্য জন্মাবে তার জিনোটাইপ হবে—TT: 2Tt:tt/ অর্থাৎ, এদের মধ্যে স্বাভাবিক : থ্যালাসেমিক হবে 3 : 1 এবং স্বাভাবিক : স্বাভাবিক কিন্তু বাহক : থ্যালাসেমিক হবে 1 : 2 : 1 ।
চেকার বোর্ডের সাহায্যে থ্যালাসেমিয়ার বংশগতি দেখানো হল : [T= স্বাভাবিক প্রকট জিন, t = প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিন] Pজনু স্বাভাবিক (বাহক) (x) স্বাভাবিক (বাহক) মহিলা পুরুষ জননকোশ বা গ্যামেট T (t. F, জনু— পুংজননকোশ T Tt স্ত্রীজননকোশ TT স্বাভাবিক পুত্র/কন্যা স্বাভাবিক কিন্তু বাহক পুত্র/কন্যা Tt স্বাভাবিক কিন্তু বাহক পুত্র/কন্যা tt থ্যালাসেমিক পুত্র/কন্যা স্বাভাবিক (বাহক) পুরুষ স্বাভাবিক (বাহক) মহিলা স্বাভাবিক পুত্র / কন্যা স্বাভাবিক কিন্তু বাহক পুত্র / কন্যা t থ্যালাসেমিক পুত্র / কন্যা এক্ষেত্রে 25% পুত্র বা কন্যা স্বাভাবিক, 50% পুত্র বা কন্যা স্বাভাবিক কিন্তু বাহক এবং 25% পুত্র বা কন্যা থ্যালাসেমিক হবে।
প্রশ্ন 4. হিমোফিলিয়া কী? এটি কয় প্রকার ও কী কী ?
উত্তর: েিমাফিলিয়া (Haemophilia) : মানুষের যে লিঙ্গ- সংযোজিত বংশগত রোগে ক্ষতস্থানে রক্ত স্বাভাবিকভাবে তঞ্চিত হয় না বা রক্ততঞ্চন বিলম্বিত হয়, ফলে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতে থাকে, তাকে হিমোফিলিয়া বলে।
शিমাফিলিয়ার প্রকারভেদ : প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা – 0 হিমোফিলিয়া-A, ও হিমোফিলিয়া-B।
1. হিমোফিলিয়া - A বা ক্ল্যাসিক্যাল হিমোফিলিয়া (Haemo philia - A or Classical haemophilia) : রক্ততঞ্চনে সাহায্যকারী। ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর-এর অভাবে এইপ্রকার হিমোফিলিয়া হয়। এটি 'রাজকীয় হিমোফিলিয়া' বা রিয়েল হিমোফিলিয়া' (Royal haemophilia) নামেও পরিচিত। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হিমোফিলিয়া A দ্বারাই আক্রান্ত হয় ।
2. হিমোফিলিয়া-B (Haemophilia B or Christmas dis- ease) : Stephen Christmas নামে প্রথম একজন রোগীর দেহে এই রোগ দেখা যায় । তাই এই হিমোফিলিয়া খ্রিস্টমাস রোগ (Christ- mas disease) নামে পরিচিত। রক্ততঞ্চনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টর।X বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাসটিন কমপোনেন্ট (PTC) বা খ্রিস্টমাস ফ্যাক্টর অনুপস্থিত থাকলে এই প্রকার হিমোফিলিয়া হয়।
জেনে রাখো : আরো এক প্রকার হিমোফিলিয়া হল – হিমোফিলিয়া-C (Haemophilia-C) : এটি হল অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত হিমোফিলিয়া। রক্ততনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টর XI বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন অ্যান্টিসিডেন্ট (Plasma thromboplastin an ticedent) উৎপন্ন না হলে এই প্রকার হিমোফিলিয়া হয়।
প্রশ্ন 5. হিমোফিলিয়া রোগের কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর: হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী লিঙ্গসংযোজিত প্ৰচ্ছন্ন জিন। এই মিউট্যান্ট জিন রক্ততঞ্চনে সাহায্যকারী ফ্যাক্টর VIII বা IX তৈরিতে অক্ষম হয়। হিমোফিলিয়ার কারণগুলি হল—
1. হিমোফিলিয়া-A-এর কারণ : আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের প্লাজমাতে রক্ততঞ্জনকারী ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টরের (AHF) অভাব বা অনুপস্থিতিতে হিমোফিলিয়া A হয়। X-ক্রোমোজোমস্থিত এই ফ্যাক্টর VIII সৃষ্টিকারী জিনের মিউটেশনের ফলে এই ফ্যাক্টরটি তৈরি হতে পারে না।
2. হিমোফিলিয়া-B-এর কারণ : আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের প্লাজমাতে ফ্যাক্টর IX বা প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কমপোনেন্ট (PTC) বা খ্রিস্টমাস ফ্যাক্টরের অভাবে বা অনুপস্থিতিতে হিমোফিলিয়া- B হয়। X-ক্রোমোজোমে উপস্থিত ফ্যাক্টর IX সৃষ্টিকারী জিনের মিউটেশন ঘটলে এই ফ্যাক্টরটি তৈরি হতে পারে না, ফলস্বরূপ এই প্রকার হিমোফিলিয়া হয় ।
হিমোফিলিয়া লক্ষণ : 1. সাধারণত ক্ষতস্থানে 3-7 মিনিটের মধ্যে রক্ত তঞ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু ফ্যাক্টর VIII বা IX-এর অভাব ঘটলে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হয়। ফলে, ক্ষতস্থান থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঘটে।
2. অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার ফলে দেহে রক্তচাপ কমে যায় এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ভৌত প্রক্রিয়া (যেমন— ব্যাপন, অভিস্রবণ, পরিস্রাবণ প্রভৃতি) ব্যাহত হয়। হিমোফিলিয়ার ফলে রক্তক্ষরণ ঘটেছে এবং রক্ত জমাট বাঁধছে না |
জেনে রাখো : হিমোফিলিয়া রোগে রক্ততজ্ঞনের জন্য দায়ী ফ্যাক্টর VIII এবং ফ্যাক্টর IX উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে রক্ততঞ্জন প্রবলভাবে ব্যাহত হয়, ফলে ক্ষতস্থানে রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হয় না। তাই, এই রোগকে ব্লিডার্স ডিজিজ (Bleeder's disease) বলে।
প্রশ্ন 6. বর্ণান্ধতা কাকে বলে? এর কারণ ও লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর: বর্ণান্ধতা (Colour blindness) : লিঙ্গ সংযোজিত যে বংশগত রোগে মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনের প্রভাবে মানুষ বিভিন্ন রঙের বিশেষত লাল ও সবুজ রঙের পার্থক্য বুঝতে পারে না, তাকে বর্ণান্ধতা বলে।
বর্ণান্ধতার কারণ : 1. X ক্রোমোজোমে অবস্থিত একটি জিনের মিউটেশনের জন্য বর্ণান্ধতা ঘটে থাকে। ও তিন প্রকার দর্শন রঞ্জক, যথা— ক্লোরোলেব (সবুজ রং চিনতে সাহায্য করে), এরিথ্রোলের (লাল রং চিনতে সাহায্য করে) এবং সায়ানোলের (নীল রং চিনতে সাহায্য করে)-এর অনুপস্থিতি বা ঘাটতি হলে মানুষের রঙের প্রভেদ বুঝতে অসুবিধা হয়। রেটিনার কোন কোশে লাল, সবুজ ও নীল বর্ণ সংবেদী ফোটোপসিন রঞ্জক তৈরি না হলে বর্ণান্ধতা ঘটে। এদের মধ্যে লাল ও সবুজ বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিনটি X-ক্রোমোজোমে এবং নীল বর্ণান্ধতার জন্য দায়ী জিনটি 7 নং অটোজোমে উপস্থিত থাকে।
বর্ণান্ধতার লক্ষণ : বর্ণান্ধ ব্যক্তি মোনোক্রোমাটিক দৃষ্টিসম্পন্ন হলে শুধুমাত্র ধূসর বর্ণ দ্যাখে এবং ডাইক্রোমাটিক হলে তিনটি বর্ণের মধ্যে যে-কোনো দুটি বর্ণ দেখতে পায়। ও লাল রঙের বর্ণান্ধতাকে প্রোটানোপিয়া, সবুজ রঙের বর্ণান্ধতাকে ডিউটেরানোপিয়া এবং নীল বর্ণান্ধতাকে সায়ানোপিয়া বলে। ও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি বর্ণান্ধতা হয়। কারণ—মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনটি X-ক্রোমোজোমে উপস্থিত থাকে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে। একটিমাত্র X ক্রোমোজোম বর্তমান অর্থাৎ, হেমিজাইগাস অবস্থায় একটিমাত্র X-ক্রোমোজোমে থাকা জিনই বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ।
জেনে রাখো : ইশিহারা কালার টেস্ট, কালার অ্যাসেসমেন্ট এবং ডায়াগনোসিস (CAD) এবং অ্যানোম্যালোস্কোপ-এর পদ্ধতি দ্বারা বর্ণান্ধতা নির্ণয় করা হয়।
প্রশ্ন 7. জেনেটিক কাউন্সেলিং কাকে বলে? বংশগত রোগ নির্ণয়ে এর গুরুত্বগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: জেনেটিক কাউন্সেলিং: যে নির্দিষ্ট বিশ্লেষণধর্মী পদ্ধতি দ্বারা মানুষের মধ্যে বংশগত রোগের জন্য দায়ী জিনের ক্রোমোজোমগত অবস্থান, পরবর্তী প্রজন্মে বংশগত রোগ প্রকাশের সম্ভাবনা নির্ধারণ ও জিনগত রোগবিহীন সুস্থ সন্তান লাভে দম্পতিকে সাহায্য করা হয়, তাকে জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে।
বংশগত রোগ নির্ণায় জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর গুরুত্ব : •
1.রোগ নির্ণয় : আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে, তার সঙ্গে আলোচনা করে, তার DNA পরীক্ষা ও পেডিগ্রি বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগসৃষ্টিকারী জিনের প্রকৃতি (প্রকট না প্রচ্ছন্ন এবং অটোজোমাল বা সেক্স ক্রোমোজোমাল), জিনের অবস্থান প্রভৃতি নির্ণয় করা হয়।
2. রোগের কারণ বিশ্লেষণ : আক্রান্ত রোগীকে রোগের কারণ সম্পর্কে অবহিত করা এবং এর গুরুত্ব বোঝানো হয়।
3.রোগের বংশগত সঞ্চারণের সম্ভাবনা নির্ধারণ : পরবর্তী প্রজন্মে রোগটির প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি সে সম্পর্কে রোগীকে ধারণা দেওয়া যায়। বিশেষ করে বিবাহের আগে ছেলে মেয়ের পেডিগ্রি বিশ্লেষণ করে তাদের সন্তান-সন্ততির দেহে কোনো জিনগত রোগের সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
4. দম্পতিকে জিনগত রোগমুক্ত সন্তান লাভে সাহায্য : থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগগ্রস্ত সন্তান যাতে না জন্মায় তার জন্য জেনেটিক কাউন্সিলার দম্পতিকে পরামর্শ দান করেন এবং প্রয়োজনে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণ ও দত্তক নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
জেনে রাখো : পেডিগ্রি (Pedigree) : জিনগত মেন্ডেলীয় অস্বাভাবিকতার বংশানুক্রম বোঝার জন্য একটি পরিবারের বিভিন্ন প্রজন্মের ওই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি সংক্রান্ত যে সামগ্রিক ইতিহাস তৈরি করা হয়, তাকে পেডিগ্রি (Pedigree) বলে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. সেক্স লিংকড জিন কী? লিঙ্গ সংযোজিত উত্তরাধিকার (Sex linked Inheritance) বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উত্তর: সেক্স-লিংকড জিন (Sex-linked gene) : X- ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলিকে সেক্স-লিংকড জিন বলে।
সেক্স লিংকড উত্তরাধিকার (Sex-linked Inheritance) : সেক্স ক্রোমোজোমে (X-ক্রোমোজোম) অবস্থিত জিনসমূহের বংশপরম্পরায় নির্দিষ্ট নিয়মে একটি জনু থেকে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হওয়াকে সেক্স-লিংকড উত্তরাধিকার বলে।
সেক্স ক্রোমোজোমে উপস্থিত জিনের পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট বংশগত রোগগুলি হল সেক্স-লিংকড উত্তরাধিকারের প্রমাণ । যেমন— হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা।
প্রশ্ন 2. জিনগত রোগের কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: জিনগত রোগের কারণসমূহ :1. জিনগত রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হল – ক্রসিংওভার ও পুনঃসংযুক্তি।
2. মিয়োসিস বিভাজনের প্রোফেজ-1-এর প্যাকাইটিন উপদশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমদ্বয়ের দুটি ননসিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে DNA খণ্ডের বিনিময় ঘটে। এর ফলে জিনের সজ্জারীতির পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। কিন্তু জিনের নতুন সজ্জাবিন্যাসে আকস্মিক কোনো পরিবর্তন ঘটলে, তাকে মিউটেশন বলে। জিনগত রোগ সৃষ্টির মূলে থাকে এই মিউটেশন বা পরিব্যক্তি।
3. মানুষের কোশে অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম উভয়েরই খণ্ডের বিনিময়, পুনঃসংযুক্তির ফলে এবং ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক মাধ্যমে জিনগত রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন- (i) 12th অটোজোমে মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন অ্যালিলের প্রভাবে ফিনাইল কিটোনিউরিয়া রোগ হয়। (ii) 21th ক্রোমোজোমের নন-ডিসজাংকশনের (Non-disjunction) ফলে ডাউন সিন্ড্রোম দেখা দেয়।
Advanced Studies: মানুষের কয়েকটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্নধর্মী জিনগত রোগের নাম ও লক্ষণ দেওয়া হল- রোগের নাম • সিকল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle cell anae mia) ও হান্টিংটনস্ রোগ | (Huntington's disease) ® অ্যালজাইমারস্ রোগ (Alzheimer's ( disease) রোগের লক্ষণ অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন গঠনের ফলে RBC-এর গঠন কাস্তে আকৃতির হয়, ফলে দেহে অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। মস্তিষ্ক কোশে বিপাক বিরোধী পদার্থ | তৈরি হয় এবং মস্তিষ্ক কোশ ক্রমশ নষ্ট হয়ে যায়। স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। মানুষের কয়েকটি অটোজোমাল প্রকটধর্মী জিনগত রোগের নাম ও লক্ষণ দেওয়া হল- রোগের নাম • নেলপ্যাটেলা সিন্ড্রোম রোগের লক্ষণ হাঁটুর প্যাটেলা অস্থি, নখ প্রভৃতির অস্বাভাবিকতা। ও হাইপার ক্যালশেমিয়া 3 রক্তে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন 3. রক্তে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মানুষের তিনটি X-ক্রোমোজোম সংযোজিত (লিঙ্গ সংযোজিত) বংশগত রোগের নাম ও রোগ লক্ষণ সারণি আকারে লেখো।
উত্তর: রোগের নাম 0 হিমোফিলিয়া ও বর্ণান্ধতা 3 মাসকুলার ডিস্ট্রফি রোগের লক্ষণ ক্ষতস্থানে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হয় অর্থাৎ অবিরাম রক্তক্ষরণ ঘটে। লাল-সবুজ বর্ণ চেনার অক্ষমতা। পেশির অবক্ষয় ।
প্রশ্ন 4. থ্যালাসেমিয়ার প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া একটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ। হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন পেপটাইড শৃঙ্খলের অস্বাভাবিক ত্রুটির ফলে এই রোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণত দুপ্রকার থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়—
1. আলফা থ্যালাসেমিয়া (d. Thalassemia) : 16 নং অটোজোম-এর দুটি a-গ্লোবিন জিন (HBA1, HBA2)-এর ত্রুটি বা অনুপস্থিতির কারণে a-গ্লোবিন প্রোটিনের সংশ্লেষ ব্যাহত হয় এবং ত্রুটিপূর্ণ পলিপেপটাইড শৃঙ্খল উৎপন্ন হয়। ফলে a- থ্যালাসেমিয়া ঘটে।
2. বিটা থ্যালাসেমিয়া (B-Thalassemia) : 11 नহ অটোজোমে উপস্থিত B-গ্লোবিন জিন (HBB)-এর একজোড়া অ্যালিলের মিউটেশনের ফলে গ্লোবিন প্রোটিনের B-পলিপেপটাইড শৃঙ্খল ত্রুটিপূর্ণ হয় B-থ্যালাসেমিয়া রোগ সৃষ্টি হয়।
জেনে রাখো : ডেল্টা থ্যালাসেমিয়া (ঠ thalassemia) : মানুষের দেহে 11 নং ক্রোমোজোমে উপস্থিত হিমোগ্লোবিনের ডেল্টা চেনের | (HBD জিন) ত্রুটির ফলে ডেল্টা বা ৪ থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়। পরিণত হিমোগ্লোবিনের অধিকাংশ অংশ a ও B পলিপেপটাইড শৃঙ্খল দ্বারা গঠিত হলেও, 3% অংশে ৫ ও ৪ শৃঙ্খল দেখা যায়।
প্রশ্ন 5. a ও B থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর: -থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ : 1.ক্লান্তি, দুর্বলতা, বিরক্তিভাব। 2. a-থ্যালাসেমিয়া মাইনরের ক্ষেত্রে মৃদু অ্যানিমিয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। 3.জন্ডিস-এর কারণে ত্বক পীত বর্ণ ধারণ করে। 4. যকৃৎ ও প্লীহার বৃদ্ধি ঘটে। কালচে বর্ণের মূত্র নির্গত হয়। © a-থ্যালাসেমিয়া মেজরের ক্ষেত্রে হাইড্রপস ফিটালিস দেখা যায়।
B-থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ: 1• তীব্র অ্যানিমিয়া। হেপাটোমেগালি 2.স্প্লীনোমেগালি (যকৃত ও প্লীহার অতিবৃদ্ধি)। 3. ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ পীতবর্ণ ধারণ করে। 4. মাথার ও মুখের অস্থিবিকৃতি ঘটে।
প্রশ্ন 6. থ্যালাসেমিয়া মেজর ও মাইনর কাকে বলে ?
উত্তর: দেহের 11 নং ক্রোমোজোমে হিমোগ্লোবিনের পলিপেপটাইড সংশ্লেষকারী দুটি অ্যালিল এবং 16 নং ক্রোমোজোমে হিমোগ্লোবিনের a. পলিপেপটাইড সংশ্লেষকারী চারটি অ্যালিল অর্থাৎ দুটি জিন উপস্থিত থাকে।
থ্যালাসেমিয়া মেজর : থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে 11 নং ক্রোমোজোমের B পলিপেপটাইডের দুটি অ্যালিল অথবা 16 নং ক্রোমোজোমের a পলিপেপটাইডের চারটি অ্যালিলেই মিউটেশন ঘটে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বলে। থ্যালাসেমিয়া মেজর সাধারণত 6 মাস থেকে 2 বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের দেহে প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন জিনগুলি হামোজাইগাস অবস্থায় থাকে এবং তীব্র রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
থ্যালাসেমিয়া মাইনর : থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে 11 নং ক্রোমোজোমের B পলিপেপটাইডের একটি অ্যালিলে অথবা 16 নং ক্রোমোজোমের পলিপেপটাইডের দুটি অ্যালিলে মিউটেশন বটলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর বলে। এক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টিকারী জিনগুলি হেটারোজাইগাস অবস্থায় থাকে এবং রোগের প্রকাশ খুব অল্প দেখা যায়।
প্রশ্ন 7. থ্যালাসেমিয়া মেজর ও মাইনর-এর লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া মেজরের লক্ষণ : 1. জন্মের 4-6 মাসের মধ্যেই রক্তাল্পতা শুরু হয়। 2. বেশিমাত্রায় RBC ধ্বংস হওয়ায় দেহে লোহা সঞ্চিত হয়, ফলে তীব্র অ্যানিমিয়া দেখা যায়। এ ছাড়াও যকৃৎ এবং প্লীহার অতি বৃদ্ধি ঘটে (Hepatomegaly & Splenomegaly)।
3. যৌনারম্ভ বিলম্বিত হয়, মধুমেহ রোগ দেখা যায়। হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
4. মুখমণ্ডলের আকৃতির বিশেষ পরিবর্তন ঘটে এবং চোয়ালের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হয়।
থ্যালাসেমিয়া মাইনরের লক্ষণ : এই দশা প্রধানত লক্ষণবিহীন, কিছুক্ষেত্রে মৃদু রক্তাল্পতা দেখা যায়। দেহের প্রান্তভাগের রক্তে RBC-র অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। ও মৃদু জন্ডিস পরিলক্ষিত হয়। ও এই রোগে আক্রান্তদের ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকে।
প্রশ্ন 8.থ্যালাসেমিয়া রোগের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া রোগের বিভিন্ন সমস্যাগুলিনীচে চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল। এক্ষেত্রে, T হল স্বাভাবিক প্রকট জিন এবং t হল প্রচ্ছন্ন মিডট্যান্ট জিন।
সমস্যা-1 বাবা অথবা মা-এর একজন থ্যালাসেমিক ও অন্যজন বাহক। P মা থ্যালাসেমিক বাবা বাহক F, জ (tt) (Tt) বাহক পুত্র/কন্যা (Tt) থ্যালাসেমিক পুত্র/কন্যা (tt) বাহক পুত্র/কন্যা (Tt) থ্যালাসেমিক পুত্র/কন্যা (tt)
ফলাফল : এক্ষেত্রে 50% পুত্র বা কন্যা বাহক এবং 50% পুত্র বা কন্যা থ্যালাসেমিক হবে।
সমস্যা-2 > বাবা ও মা উভয়েই থ্যালাসেমিক। [P : মা থ্যালাসেমিক (tt) বাবা থ্যালাসেমিক (tt) F, জ আক্রান্ত পুত্র/কন্যা (tt) আক্রান্ত পুত্র/কন্যা (tt) আক্রান্ত পুত্র/কন্যা (tt) আক্রান্ত পুত্র/কন্যা (tt) *
ফলাফল : এক্ষেত্রে সমস্ত (100%) পুত্র বা কন্যাই থ্যালাসেমিক জিন (tt) বহনকারী অর্থাৎ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে।
সমস্যা-3 > বাবা অথবা মা-এর একজন বাহক ও অন্যজন স্বাভাবিক।
স্বাভাবিক মা F, জ (TT) বাহক বাবা (Tt) স্বাভাবিক পুত্র/কন্যা স্বাভাবিক পুত্র/কন্যা বাহক পুত্র/কন্যা বাহক পুত্র/কন্যা (TT) (TT) (Tt) (Tt) M
ফলাফল : এক্ষেত্রে 50% পুত্র বা কন্যা স্বাভাবিক এবং 50% পুত্র বা কন্যা বাহক হবে। বি:দ্র: যেহেতু থ্যালাসেমিয়া অটোজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ, তাই | এই সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে বাবা অথবা মা-এর রোগের অবস্থাগুলি দেখানো | হয়েছে তা বিপরীত হলেও একই ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ সমস্যা-1-এর ক্ষেত্রে | বাবা থ্যালাসেমিক এবং মা বাহক হলেও একই ফলাফল দেখা যাবে। পরবর্তী সমস্যাগুলিতেও তাই ঘটবে।
প্রশ্ন 9. হিমোফিলিয়া রোগের উত্তরাধিকার কীভাবে ঘটে ?
উত্তর: হিমোফিলিয়া রোগের উত্তরাধিকার : 1. হিমোফিলিয়া নামক বংশগত রোগটি X-ক্রোমোজোমে অবস্থিত মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন
জিনের প্রভাবে ঘটে। 2. মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। 3.পুরুষদের কোশে একটি X ক্রোমোজোম থাকে। ফলে, একটিমাত্র X ক্রোমোজোমে উপস্থিত প্রচ্ছন্ন জিনই হেমিজাইগাস অবস্থায় বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ও পুরুষরা হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। 4. অন্যদিকে, মহিলাদের দেহকোশে দুটি X ক্রোমোজোম থাকে। দুটি X ক্রোমোজোমে প্রচ্ছন্ন জিন যুগ্ম অবস্থায় বা হোমোজাইগাস অবস্থাতে থাকলে তবেই বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ, মহিলাদের ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। যেমন— একজন হিমোফিলিয়া বাহুক মহিলার সঙ্গে স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহ হলে তাদের সকল কন্যাদের মধ্যে 50% কন্যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও 50% কন্যা স্বাভাবিক কিন্তু বাহক এবং সকল পুত্রদের মধ্যে 50% পুত্র সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও 50% পুত্র হিমোফিলিক হয়।
চেকার বোর্ডের সাহায্যে দেখানো হল : XM → স্বাভাবিক প্রকট জিনবহনকারী X-ক্রোমোজোম, X- X”→ প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিন বহনকারী X-ক্রোমোজোম, Y→ Y ক্রোমোজোম স্বাভাবিক পুরুষ X Y Pজনু H + হিমোফিলিয়া জিন বহনকারী মহিলা (x) x xh পুং জননকোশ HH X X স্বাভাবিক কন্যা H. XX" হিমোফিলিয়া জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা H X Y স্বাভাবিক পুত্র XY হিমোফিলিয়া রোগাক্রান্ত পুত্র হিমোফিলিয়া জিন বহনকারী মহিলা স্বাভাবিক পুরুষ Y স্বাভাবিক পুত্র হিমোফিলিয়া জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা
এক্ষেত্রে (i) কন্যাদের 50% সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও 50% হিমোফিলিয়া বাহক। (ii) পুত্রদের 50% সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও 50% হিমোফিলিক হবে।
প্রশ্ন 10. হিমোফিলিয়া রোগের বংশগত সঞ্চারন সংক্রান্ত আরও কয়েকটি সমস্যা এবং তার ক্রসসহ ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর: হিমোফিলিয়া রোগের বংশগত সজ্ঞারন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি আলোচনা করা হল ৷ এক্ষেত্রে, XH হল স্বাভাবিক প্রকট জিন বহনকারী X-ক্রোমোজোম, Xh হল প্রচ্ছন্ন মিউট্যান্ট জিন বহনকারী x - ক্রোমোজোম এবং স্বাভাবিক Y ক্রোমোজোম।
সমস্যা-1 > স্বাভাবিক মহিলা ও রোগাক্রান্ত পুরুষ স্বাভাবিক মহিলা (XHXH) রোগাক্রান্ত পুরুষ (XY) Xh Y গ্যামেট : XH চেকার বোর্ড পুং জননকোশ Y F XY স্বাভাবিক পুত্র বাহক কন্যা জননকোশ Hh X X" XY বাহক কন্যা স্বাভাবিক পুত্র ফলাফল : মোট দু-প্রকার জিনোটাইপ পাওয়া যায়, যার মধ্যে © সমস্ত কন্যা (100%) স্বাভাবিক (বাহক)। @ সমস্ত পুত্ৰ (100%) স্বাভাবিক।
সমস্যা-2 > স্বাভাবিক বাহক মহিলা ও রোগাক্রান্ত পুরুষ স্বাভাবিক বাহক মহিলা x রোগাক্রান্ত পুরুষ (XY) לא"א) গ্যামেট : X Xh চেকার বোর্ড পুং জননকোশ F, জনু Hh XX ননকোশ বাহক কন্যা H X Y স্বাভাবিক পুত্র XY x" x " আক্রান্ত কন্যা আক্রান্ত পুত্র 4 ফলাফল মোট চার প্রকার জিনোটাইপ পাওয়া যায় যেখানে, কন্যাদের মধ্যে 50% স্বাভাবিক কিন্তু বাহক এবং 50% রোগগ্রস্ত অর্থাৎ হিমোফিলিক। আবার, পুত্রদের মধ্যে 50% পুত্র স্বাভাবিক এবং 50% পুত্র হিমোফিলিক।
অনুরূপ প্রশ্ন (1) একজন স্বাভাবিক বাহক মহিলার সঙ্গে একজন হিমোফিলিক পুরুষের বিবাহ হলে সন্তানদের ক্ষেত্রে যে ফল প্রকাশ পাবে তা চেকার বোর্ড বা ছকের সাহায্যে দেখাও। (2) হিমোফিলিয়া আক্রান্ত একজন ছেলের বোন স্বাভাবিক। ছেলেটির বাবা হিমোফিলিক। এক্ষেত্রে ওই পরিবারের চারজনের জিনোটাইপগুলি চেকার বোর্ডের সাহায্যে নিরূপণ করো।
সমস্যা-3> হিমোফিলিক মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষ হিমোফিলিক মহিলা (Xhxh) (x) স্বাভাবিক পুরুষ (XHY) গ্যামেট Xh XH Y
চেকার বোর্ড F স্ত্রী জননকোশ A H XX বাহক কন্যা H h XX বাহক কন্যা Y আক্রান্ত পুত্র xhy আক্রান্ত পুত্র M ফলাফল : মোট দু-প্রকার জিনোটাইপ পাওয়া যায় যার মধ্যে O সমস্ত কন্যা (100%) স্বাভাবিক কিন্তু বাহক। ও সমস্ত পুত্র (100%) হিমোফিলিক।
প্রশ্ন 11. একজন বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা ও একজন স্বাভাবিক পুরুষের সন্তানসন্ততি কীরূপ হবে?
উত্তর: P জনুতে, একজন বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলার ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক X-ক্রোমোজোম এবং আর একটি বর্ণান্ধতার মিউট্যান্ট জিন সমন্বিত X-ক্রোমোজোম থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক জিন সমন্বিত X-ক্রোমোজোম আছে। প্রচ্ছন্ন বর্ণান্ধ জিন X এবং স্বাভাবিক জিন X + দ্বারা চিহ্নিত করা হলে বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলার জননকোশ (ডিম্বাণু) দুপ্রকারের – XC+ও X এবং স্বাভাবিক পুরুষের জননকোশ (শুক্রাণু) দুপ্রকারের হয়— X+ ও Y। P জনু ——বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা (x) স্বাভাবিক পুরুষ পুং জননকোশ C+ X X স্ত্রী জননকোশ স্বাভাবিক কন্যা C+ Xc+ C বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা C+ X Y স্বাভাবিক পুত্র XY বর্ণান্ধ পুত্র স্বাভাবিক পুরুষ .C X Y বর্ণান্ধ পুত্র বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা স্বাভাবিক কন্যা বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা স্বাভাবিক পুত্র বর্ণান্ধ পুত্র সিদ্ধান্ত: মোট চার প্রকার অপত্য উৎপন্ন হবে। ও কন্যাদের মধ্যে 50% হবে স্বাভাবিক এবং 50% হবে বাহক। 2 পুত্রদের মধ্যে 50% হবে স্বাভাবিক এবং 50% পুত্র বর্ণান্ধ হবে।
অনুরূপ প্রশ্ন : (1) বর্ণান্ধতার কীভাবে বংশগত সঞ্চারণ ঘটে তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও। [ME '17] (2) অনেক সময় দেখা যায়। যে, বাবা ও মা উভয়েই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের এক ছেলে বর্ণান্ধ হয়েছে। এটি কীভাবে সম্ভব হয় তা একটি চেকার বোর্ডের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করো।
প্রশ্ন 12. তৃতীয় অধ্যায় : কয়েব যদি একজন বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা একজন বর্ণান্ধ পুরুষকে বিবাহ করে তাহলে তাদের পুত্রকন্যাদের দৃষ্টিশক্তি কীরূপ হবে?
উত্তর: P জনুতে, একজন বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলার একটি স্বাভাবিক X-ক্রোমোজোম এবং আর একটি বর্ণান্ধতার মিউট্যান্ট জিন সমন্বিত X-ক্রোমোজোম থাকে। পুরুষদেহে একটিমাত্র X-ক্রোমোজোম থাকায়, জিনটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলেও মিউটেশনের ফলে মিউটেটেড জিনটির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় এবং পুরুষটি বর্ণান্ধ হয়। প্রচ্ছন্ন বর্ণান্ধ জিন XC এবং স্বাভাবিক জিন XC+ দ্বারা চিহ্নিত করা হলে বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলার জননকোশ (ডিম্বাণু) দুপ্রকারের হয়— X ও XC+ এবং বর্ণান্ধ পুরুষের জননকোশ (শুক্রাণু) দুপ্রকারের হয়— X ও Y Pজনু —— বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা (x) বর্ণান্ধ পুরুষ পুংজননকোশ C xc Y C+ C X বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা C C X X Y X Y স্বাভাবিক পুত্র বর্ণান্ধ কন্যা বর্ণান্ধ পুত্র বর্ণান্ধ পুরুষ বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক মহিলা বর্ণান্ধ জিন বহনকারী স্বাভাবিক কন্যা... স্বাভাবিক পুত্র বর্ণান্ধ কন্যা বর্ণান্ধ পুত্র সিদ্ধান্ত : মোট চার প্রকার অপত্য উৎপন্ন হবে 0 কন্যাদের 50% হবে স্বাভাবিক কিন্তু বাহক এবং বাকি 50% হবে বর্ণান্ধ। ও পুত্রদের 50% স্বাভাবিক হবে এবং বাকি 50% হবে বর্ণান্ধ। |
জেনে রাখো : ইশিহারা কার্ড (Ishihara card) : প্রাথমিক বর্ণবিন্দু দ্বারা গঠিত যে কার্ড ব্যক্তির থেকে 40 ইঞ্চি দূরত্বে স্থাপন করে 15 | সেকেন্ড সময়ের মধ্যে বর্ণান্ধতা নির্ণায়ক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়, তাকে ইশিহারা কার্ড বলে ৷
বর্ণান্ধতা সম্পর্কিত আরও কিছু সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল- প্রতিক্ষেত্রেই স্বাভাবিক জিন : XC+ বর্ণান্ধতার জিন : XC সমস্যা-1> বর্ণান্ধ মহিলা ও স্বাভাবিক পুরুষ P : বর্ণান্ধ মহিলা (XCXC) XC স্বাভাবিক পুরুষ (X+Y) XC+ Y গ্যামেট :
চেকার বোর্ড পুং গ্যামেট Y F,জনু — to Y C+ স্ত্রী গ্যামেট C+ C X X বাহক কন্যা C+ C X Y বর্ণান্ধ পুত্র X X বাহক কন্যা XY
ফলাফল : মোট দু-প্রকার অপত্য উৎপন্ন হবে, যার মধ্যে— @ সকল কন্যা (100%) বাহক। ও সকল পুত্ৰ (100%) বর্ণান্ধ। বর্ণান্ধ পুত্র
সমস্যা-2> স্বাভাবিক মহিলা ও বর্ণান্ধ পুরুষ Pজনু : স্বাভাবিক মহিলা বর্ণান্ধ পুরুষ (XCY) গ্যামেট : XC+ XC Y চেকার বোর্ড Fজনু পুং গ্যামেট C+ .C X X বাহক কন্যা স্বাভাবিক পুত্র C+ C X X C + X Y বাহক কন্যা Y স্বাভাবিক পুত্র
ফলাফল : মোট দু-প্রকার অপত্য উৎপন্ন হবে, যার মধ্যে— © সকল কন্যা (100%) বাহক। ও সকল পুত্র (100%) স্বাভাবিক।
প্রশ্ন 13. জেনেটিক কাউন্সেলিং (Genetic Counseling)-এর পদ্ধতি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: জোনটিক কাউন্সেলিং-এর পদ্ধতি : যে সকল পদ্ধতির মাধ্যমে জিনগত পরামর্শ প্রদান করা হয়, সেগুলি হল—
1. সবার আগে পরামর্শ গ্রহণকারী ব্যক্তির থেকে তার পারিবারিক কোনো জিনগত রোগের ইতিহাস আছে কিনা তা জানা হয়।
2. পরবর্তী পর্যায়ে সেই ব্যক্তির কলাকোশ বা রক্তের নমুনা সংগ্ৰহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তিটি কোনো জিনগত রোগের বাহক কিনা তা জানা হয়।
3. ব্যক্তিটি কোনো জিনগত রোগের বাহক হলে তার জীবনসঙ্গীরও (স্ত্রী / স্বামী) জিনগত অবস্থা নির্ণয় করা হয়।
4• উভয় ব্যক্তির জিনগত অবস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানদের মধ্যে জিনগত রোগের সম্ভাবনা নির্ণয় করা হয়।
5. যদি ভবিষ্যতের সন্তানদের মধ্যে জিনগত রোগের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তা কী প্রকৃতির ও সন্তানগ্রহণের ঝুঁকি সম্পর্কে রোগীর কাছে ব্যাখ্যা করা হয় এবং তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়।
প্রশ্ন 14. থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর ভূমিকা লেখো।
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া রোগে জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর ভূমিকা :
1. থ্যালাসেমিয়া রোগটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনের জন্য ঘটে। বর্তমানে HPLC (High Performance Liquid Chromatog- raphy) পরীক্ষা দ্বারা রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বা বাহক কিনা তা নির্ধারণ করা যায়।
2. সুতরাং, বিবাহের পূর্বেই রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।
3. বংশে কারোর থ্যালাসেমিয়া থাকলে জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর সাহায্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কারণ, বাবা ও মা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে 25% সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর দ্বারা থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন 15. মানুষের ডায়াবেটিস মেলিটাস (মধুমেহ রোগটি প্রচ্ছন্নধর্মী। একটি জনিতৃ জনুতে পিতা রোগক্রান্ত কিন্তু মাতা স্বাভাবিক। এদের সন্তানদের রোগগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কীরূপ হবে?
উত্তর: ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ রোগটি প্রচ্ছন্নধর্মী অর্থাৎ কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে মাতা স্বাভাবিক অর্থাৎ মাতার জিনোটাইপ হোমোজাইগাস বা হেটারোজাইগাস উভয়প্রকার হতে পারে। কিন্তু পিতা রোগাক্রান্ত হওয়ায় পিতা অবশ্যই হোমোজাইগাস অবস্থায় আছে।
Pজনু : মাতা স্বাভাবিক d+d পিতা রোগাক্রান্ত dd d ডায়াবেটিস মেলিটাস | গ্যামেট : d+ (প্রচ্ছন্নধর্মী) = d স্বাভাবিক (প্রকটধর্মী) = d+ F, জনু : d'd (সংকর) স্বাভাবিক এক্ষেত্রে 100% সন্তানই স্বাভাবিক কিন্তু রোগটির বাহক হবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন 1. জিনগত রোগ (Genetic diseases) কাকে বলে ? *
উত্তর: জিনগত রোগ (Genetic diseases) : ক্রোমোজোমের সংখ্যাগত বা গঠনগত পরিবর্তনের ফলে যে-সমস্ত অস্বাভাবিক লক্ষণযুক্ত বংশগত রোগ সৃষ্টি হয়, তাদের জিনগত রোগ বলে। যেমন— থ্যালাসেমিয়া, টার্নার সিন্ড্রোম, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন 2. সিনড্রোম (Syndrome) কী ? মানুষের সেক্স ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার ফলে সৃষ্ট দুটি সিনড্রোমের নাম লেখো।
উত্তর: সিনড্রোম (Syndrome) : কোনো রোগের ক্ষেত্রে একাধিক লক্ষণকে মিলিতভাবে একটি বৈশিষ্ট্যরূপে চিহ্নিত করা হলে, তাকে সিনড্রোম বলে।
মানুষের সেক্স-ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার ফলে সৃষ্ট দুটি সিনড্রোম হল — 1.টার্নার সিনড্রোম (কোশ 45 সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত, যেখানে একটি X ক্রোমোজোম অনুপস্থিত ) 2. ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম (কোশ 47 সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত, যেখানে একটি অতিরিক্ত X ক্রোমোজোম উপস্থিত)।
প্রশ্ন 3. মেন্ডেলীয় অস্বাভাবিকতা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: মানুষের যে-সমস্ত অস্বাভাবিকতা কোনো একটি বিশেষ জিনের মিউটেশন বা পরিবর্তনের ফলে ঘটে এবং যার বংশগতির ধারা নির্দিষ্ট অপত্য বা পেডিগ্রি বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনুসরণ করা সম্ভব হয়। সেই সমস্ত মনোজেনিক অস্বাভাবিকতাকে মেন্ডেলীয় অস্বাভাবিকতা বলা হয়। যেমন— হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা, সিকল সেল অ্যানিমিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন 4. মনোজেনিক রোগ কাকে বলে? উদাহরণ দাও। *
উত্তর: মানাজেনিক রোগ (Monogenic disease) : মানুষের দেহে যে-সমস্ত বংশগত রোগের জন্য একটি বিশেষ জিনের মিউটেশন দায়ী থাকে এবং যে অস্বাভাবিকতাগুলি মেন্ডেলীয় নাতি দ্বারা সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, তাদের মনোজেনিক রোগ বলে।
উদাহরণ- থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন 5. অটোজোমাল বংশগত রোগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: আটাজোমাল বংশগত রোগের বৈশিষ্ট্য : 1.মহিলা ও পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই এই রোগের বহিঃপ্রকাশ সমানভাবে ঘটে। 2. অটোজোমাল বংশগত রোগের সম্ভাবনা সব প্রজন্মে নাও থাকতে পারে। অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিন নিয়ন্ত্রিত বংশগত রোগে skip of generation ঘটে। অর্থাৎ, P জনুতে কোনো রোগলক্ষণ প্রকাশিত হলে, তা F, জনুতে প্রকাশ না পেয়ে F2 জনুতে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন 6. সেক্স-ক্রোমোজোমাল বংশগত রোগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: সেক্স-ক্রোমোজোমাল বংশগত রোগের বৈশিষ্ট্য :
1• বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়। 2. সাধারণত মাতার দেহ থেকে পুত্রে বা পিতার দেহ থেকে কন্যার দেহে বংশানুসরণ ঘটে। অর্থাৎ, ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার দেখা যায়। 3. নন-ডিসজাংকশনের ফলে সৃষ্ট রোগগুলি মহিলা ও পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে ঘটতে পারে।
প্রশ্ন 7. কুলিজ রক্তাল্পতা (Cooley's Anemia) কাকে বলে?
উত্তর: B থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগে দুটি 11 নং সমসংস্থ অটোজোমে অবস্থিত হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য দায়ী দুটি জিন মিউট্যান্ট হলে B গ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং তীব্র রক্তাল্পতা দেখা দেয়। বিজ্ঞানী কুলি (Cooley) এটি প্রথম আবিষ্কার করেন বলে একে কুলিজ রক্তাল্পতা বলে।
প্রশ্ন 8.থ্যালাসেমিয়াকে হিমোলাইটিক রক্তাল্পতা বলে কেন ?
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে a ও B গ্লোবিন সৃষ্টিকারী জিনে মিউটেশন ঘটার ফলে হিমোগ্লোবিনের গঠন ত্রুটিযুক্ত হয় এবং RBC-র আয়ু 50-60 দিন হয়ে যায় (RBC-র স্বাভাবিক আয়ু 120 দিন)। এর ফলে RBC দ্রুত ভেঙে যায় এবং হিমোগ্লোবিন নির্গত হওয়ায় তীব্র রক্তাল্পতা দেখা দেয়। এজন্য একে হিমোলাইটিক রক্তাল্পতা বলে।
অনুরূপ প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া রোগের ফলে রক্তাল্পতা দেখা যায় কেন ?
প্রশ্ন 9. থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বারবার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় কেন ?
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিনের গঠন ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় RBC-র আয়ু কমে যায়, ফলে RBC তাড়াতাড়ি ভেঙে যায় এবং তীব্র রক্তাল্পতার সৃষ্টি হয়। RBC-র অভাবে দেহে অক্সিজেন পরিবহণ হ্রাস পায় ফলে রোগীর দেহে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বারবার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন 10. থ্যালাসেমিয়া রোগে ঘনঘন রক্ত বদলানোর জন্য মানুষের দেহে কী কী সমস্যা তৈরি হয় ?
উত্তর: 1. RBC বারবার ভেঙে যাওয়ার ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত লোহা সঞ্চিত হয়। 2.অতিরিক্ত লোহা জমে যাওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ ও অন্তঃক্ষরাতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 3.থাইরক্সিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যায়। 4. হার্ট ফেলিওর, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন প্রভৃতি দেখা যায়।
প্রশ্ন 11. থ্যালাসেমিয়া রোগীকে লোহা চিলেটর দেওয়া হয় কেন ?
উত্তর: থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগে রোগীর দেহে তীব্র রক্তাল্পতা দেখা দেয়। এর ফলে বেশির ভাগ সময় রোগীকে 2-4 সপ্তাহ অন্তর রক্ত দিতে হয়। গৃহীত রক্তের RBC বারংবার ভেঙে যাওয়ায় দেহে প্রচুর পরিমাণ লোহা সঞ্চিত হয়। এর ফলে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, প্লীহা প্রভৃতি অঙ্গের ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রোগীকে লোহা চিলেটর দেওয়া হয় যাতে দেহে অতিরিক্ত লোহা সঞ্চিত না হয়।
প্রশ্ন 12. থ্যালাসেমিয়াকে 'ভূমধ্যসাগরীয় রক্তাল্পতা' বলে কেন?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া রোগটি ভূমধ্যসাগরীয় মূলত ইতালি, গ্রিস অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে প্রথম দেখা গিয়েছিল এজন্য একে ভূমধ্যসাগরীয় রক্তাল্পতা বা মেডিটেরানেয়ান রক্তাল্পতা বলে। থ্যালাসেমিয়া মেজরকেই সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় রক্তাল্পতা বলা হয়।
প্রশ্ন 13. লিঙ্গ সংযোজিত বা X ক্রোমোজোমবাহিত রোগ পুরুষের দেহে বেশি দেখা যায় কেন?
উত্তর: পুরুষদের সেক্স ক্রোমোজোম হল X ও Y। হিমোফিলিয়া বা বর্ণান্ধতা প্রভৃতি লিঙ্গ সংযোজিত রোগের জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনটি X-ক্রোমোজোমে উপস্থিত থাকে। পুরুষদের X-ক্রোমোজোমে একটি হিমোফিলিয়া বা বর্ণান্ধতা জিন উপস্থিত থাকলেই লিঙ্গ সংযোজিত রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু, স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে এই রোগগুলির জন্য দুটি প্রচ্ছন্ন জিন প্রয়োজন। অর্থাৎ, এই রোগের জন্য দায়ী জিনটি দুটি ক্রোমোজোমেই হোমোজাইগাস অবস্থায় উপস্থিত থাকলে তবেই রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। এই কারণে হিমোফিলিয়া বা বর্ণান্ধতা প্রভৃতি X-ক্রোমোজোমবাহিত রোগ পুরুষদের দেহে বেশি হয়।
অনুরূপ প্রশ্ন : বর্ণান্ধতা ও হিমোফিলিয়া মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি দেখা যায় কেন? *
প্রশ্ন 14. রাজকীয় হিমোফিলিয়া বা ক্লাসিক্যাল হিমোফিলিয়া কী? উত্তর: হিমোফিলিয়া রোগে ফ্যাক্টর VIII-এর অভাবজনিত কারণে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হলে, তাকে হিমোফিলিয়া A বা রাজকীয় বা ক্লাসিক্যাল হিমোফিলিয়া বলে। ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া এই রোগের বাহক ছিলেন এবং পরবর্তী প্রজন্মে রাজপুত্রদের দেহে হিমোফিলিয়া রোগটি প্রকাশিত হয় বলে একে রাজকীয় বা ক্লাসিক্যাল হিমোফিলিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন 15. একজন মহিলা কখন হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হবে এবং কখন হিমোফিলিয়ার বাহক হবে?
উত্তর: একজন মহিলার দুটি X-ক্রোমোজোমেই হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিন উপস্থিত থাকলে অর্থাৎ হোমোজাইগাস অবস্থায় মহিলা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হবেন। যদি মহিলার একটিমাত্র X-ক্রোমোজোম প্রচ্ছন্ন জিনটি ধারণ করে অর্থাৎ হেটারোজাইগাস অবস্থায় মহিলা হিমোফিলিয়ার বাহক হবেন।
প্রশ্ন 16. মানুষের বর্ণান্ধতা কত প্রকারের হয় ও কী কী ?
উত্তর: মানুষের বর্ণান্ধতা তিন প্রকারের হয়। o প্রোটানোপিয়া—লাল বর্ণান্ধতা। ও ডিউটেরানোপিয়া— সবুজ বর্ণান্ধতা। ও সায়ানোপিয়া বা ট্রাইটানোপিয়া – নীল বর্ণান্ধতা ।
প্রশ্ন 17. প্রোটানোপিয়া (Protanopia) কী ?
উত্তর: যে বর্ণান্ধতায় কোনো ব্যক্তির রেটিনার কোন কোশে লাল বর্ণ সুবেদী ফোটোপসিন তৈরি না হওয়ার জন্য, ব্যক্তি লাল রং চিনতে পারে না, তাকে প্রোটানোপিয়া (Protanopia) এবং ওই ব্যক্তিকে প্রোটানোপ (Protanope) বলে।
প্রশ্ন 18. ডিউটেরানোপিয়া (Deuteranopia) কাকে বলে ?
উত্তর: যে বর্ণান্ধতায় কোনো ব্যক্তির রেটিনার কোন কোশে সবুজ বর্ণ সুবেদী ফোটোপসিন তৈরি না হওয়ার জন্য ব্যক্তি সবুজ রং চিনতে পারে না, তাকে ডিউটেরানোপিয়া (Deuteranopia) ও ওই ব্যক্তিকে ডিউটেরানোপ (Deuteranope) বলে।
প্রশ্ন 19. ট্রাইটানোপিয়া (Tritanopia) বা সায়ানোপিয়া (Cyanopia) কী ?
উত্তর : অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনের নিয়ন্ত্রণাধীন যে বর্ণান্ধতায় কোনো ব্যক্তির রেটিনার কোন কোশে নীল বর্ণ সুবেদী ফোটোপসিন সংশ্লেষিত হয় না ফলে ব্যক্তি নীল রং চিনতে পারে না, তাকে ট্রাইটানোপিয়া বা সায়ানোপিয়া এবং ওই ব্যক্তিকে ট্রাইটানোপ (Tritanope) বলে।
প্রশ্ন 20. মনোক্রোমাসি (Monochromacy) কাকে বলে ?
উত্তর: যে প্রকার বর্ণান্ধতায় ব্যক্তির রেটিনায় তিন রকমের (লাল, সবুজ, নীল) বর্ণ সুবেদী কোন কোশের মধ্যে দুপ্রকার নষ্ট হয়ে যায় এবং কেবলমাত্র একপ্রকার বর্ণ সংবেদন ক্রিয়া সম্ভব হয়, তাকে মনোক্রোমাসি বলে। মনোক্রোমাসিকেই সম্পূর্ণ বর্ণান্ধতা বলা হয়, যা একটি অতি বিরল রোগ। এই প্রকার রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সব বর্ণকেই ধূসর দেখেন, এদের মনোক্রোমাট্স (Monochromats) বলে। জেনে রাখো: 'Mono' শব্দের অর্থ এক এবং Chromo শব্দের অর্থ বর্ণ। মনোক্রোমাসি রোগটি বিভিন্ন প্রকারের হয়, যথা- রড মনোক্রোমাসি, নীল সবুজ মনোক্রোমাসি, কোন মনোক্রোমাসি ইত্যাদি।
প্রশ্ন 21. ডাইক্রোমাসি (Dichromacy) কী ?
উত্তর: যে প্রকার বর্ণান্ধতায় ব্যক্তির রেটিনায় তিন রকমের (লাল, সবুজ, নীল) বৰ্ণ সুবেদী কোন কোশের মধ্যে যে-কোনো এক প্রকার কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাকি দুপ্রকার কোশের কার্যকারিতা বজায় থাকে, তাকে ডাইক্রোমাসি বলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ডাইক্লোমাটস্ (Dichromats) বলে। সাধারণত বর্ণান্ধতা বলতে ডাইক্লোমাসিকেই বোঝানো হয়।
প্রশ্ন 22. 'মা বর্ণান্ধ হলে পুত্র বর্ণান্ধ হয়’– কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বর্ণান্ধতা একটি X-ক্রোমোজোমঘটিত প্রচ্ছন্ন রোগ। মা বর্ণান্ধ হওয়ার অর্থ হল মাতৃদেহের জননকোশে থাকা দুটি X- ক্রোমোজোমই বর্ণান্ধতা সৃষ্টিকারী জিন বহন করছে অর্থাৎ XX । অতএব, পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত Y ক্রোমোজোম মাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত যে-কোনো একটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে মিলিত হলেই পুত্রসন্তান বর্ণান্ধ হবে। স্বাভাবিক পিতার গ্যামেট Fজনু বর্ণান্ধ মাতার X গ্যামেট C C+ X C+ C X X বাহক কন্যা C C xt X Y বর্ণান্ধ জিন XC C বর্ণান্ধ পুত্র C XY স্বাভাবিক জিন XC+ বাহক কন্যা বর্ণান্ধ পুত্র এক্ষেত্রে সমস্ত পুত্রসন্তান (100%) বর্ণান্ধ হবে।
জেনে রাখো : সমস্ত বর্ণান্ধ মানুষদের মধ্যে 99% ভাগ মানুষই লাল সবুজ বর্ণান্ধতায় আক্রান্ত হন।
প্রশ্ন 23. ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার বলতে কী বোঝো?
উত্তর : X-ক্রোমোজোম সংযোজিত বংশগতিতে মাতার বৈশিষ্ট্য পুত্রের দেহে এবং পিতার বৈশিষ্ট্য কন্যার দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে ক্রিস-ক্রস বংশগতি বলে। অর্থাৎ, ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার হল— মাতা X পিতা কন্যা কন্যা পুত্র বৈশিষ্ট্যের সারণ নীতি পুত্র যেমন— হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতার বংশগতি।
প্রশ্ন 24. যৌন ক্রোমোজোমবাহিত রোগগুলি ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার দেখায় — ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যৌন ক্রোমোজোমবাহিত রোগগুলি সাধারণত প্রচ্ছন্ন অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ, আক্রান্ত মাতার দেহ থেকে অ্যালিল পুত্রের দেহে সঞ্চারিত হয় এবং পুত্র রোগাক্রান্ত হয় এবং কখনোই কন্যার দেহে সঞ্চারিত হয় না। আবার পুত্রের দেহ থেকে X-ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণুর মাধ্যমে অ্যালিলটি পরবর্তী প্রজন্মে কন্যার দেহে সঞ্চারিত হয়। নির্দিষ্ট জিনটি হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ থেকে হেটারোগ্যামেটিক লিঙ্গে সঞ্চারিত হয়ে আবার পুনরায় হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গে সঞ্চারিত হয় অর্থাৎ ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার দেখায়।
প্রশ্ন 25. বংশপঞ্জিকা থেকে অটোজোমবাহিত বংশগত ত্রুটি শনাক্ত করার উপায়গুলি লেখো।
উত্তর: বংশপঞ্জিকা বা পেডিগ্রি থেকে আটাজোমবাহিত বংশগত ত্রুটি শনাস্ত্রকরণের উপায় ও অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যটি প্রকট অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে প্রতিটি জনুতে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হবে। ও অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে প্রতিটি জনুতে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হয় না।
জেনে রাখো : অ্যালবিনিজম হল একপ্রকার অটোজোমবাহিত অস্বাভাবিকতা যেখানে ফিনাইল অ্যালানিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিপাকীয় ত্রুটির কারণে ত্বকে মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ত্বক বর্ণহীন বা লালচে সাদা বর্ণের হয়।
প্রশ্ন 26. বংশপঞ্জিকা থেকে কীভাবে X-ক্রোমোজোমবাহিত বংশগত ত্রুটি শনাক্ত করা যায়?
উত্তর: বংশপঞ্জিকা বা পেডিগ্রি থেকে X-ক্রোমোজোমবাহিত বংশগত ত্রুটি শনাক্তকরণের উপায়- অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যটি প্রতিটি জনুতে প্রকাশিত হয় না অর্থাৎ স্কিপ অফ জেনারেশন ঘটে। ও পিতা আক্রান্ত ও মাতা স্বাভাবিক হলে পুত্রসন্তান স্বাভাবিক ও কন্যাসন্তান বাহক হবে। ও মহিলাদের তুলনায় বংশতালিকায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা লক্ষ করা যাবে, এবং ও মাতা আক্রান্ত ও পিতা স্বাভাবিক হলে পুত্রসন্তান রোগগ্রস্ত বা অস্বাভাবিক হবে।
No comments:
Post a Comment