ভারতের মৃত্তিকা দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় 5.5 প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography chapter 5.5 questions answers| WB board geography suggetion 2024 - SM Textbook

Fresh Topics

Sunday, October 8, 2023

ভারতের মৃত্তিকা দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় 5.5 প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography chapter 5.5 questions answers| WB board geography suggetion 2024

 ভারতের মৃত্তিকা দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় 5.5 প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography chapter 5.5 questions answers| WB board geography suggetion 2024|



দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun 

B. দু-এক কথায় উত্তর দাও যে মৃত্তিকায় লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে এবং যার রং বাদামি, লাল বা হলুদ হয়, তাকে কী বলে?

 উত্তর :- পেডালফার মৃত্তিকা। 

২. যে মৃত্তিকায় চুনের ভাগ বেশি ও রং কালো তাকে কী বলা হয়? 

উত্তর:-  পেডোক্যাল মৃত্তিকা। 

৩. গঠন হিসেবে খাদার বা নবীন পলিমাটিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?

 উত্তরা:- দোআঁশ মাটি, এঁটেল মাটি ও বেলে মাটি। 

৪. যে মাটিতে বালি ও কাদার ভাগ প্রায় সমান হয় তাকে কী বলে? 

উত্তর: দোঁয়াশ মাটি। 

৫. বেলেমাটিতে কোন্ কোন্ ফসলের চাষ হয়?

 উত্তর:- তরমুজ, শশা, আলু ইত্যাদি। 

৬. কৃষ্ণ মৃত্তিকার অপর নাম কী? 

উত্তর- রেগুর মৃত্তিকা বা কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা।

 ৭. কোন্ মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খোয়াই ভূমিরূপের সৃষ্টি করে?

 উত্তর:- ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা। 

৯ পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞ্চলে কী মৃত্তিকা দেখা যায়?

 উত্তর:-  ভাবর

 উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির জলাভূমির মৃত্তিকাকে কী বলে? 

উত্তর:- ধাঙ্কার। 

১০ কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কীসের পরিমাণ বেশি থাকে ?

 উত্তর:- চুন ও কাদা। 

১১। পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কী? 

উত্তর -কালো ধূসর বাদামি। 

১২. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা প্রকৃতপক্ষে কোন্ শ্রেণির মৃত্তিকা? 

উত্তর :-লোহিত মৃত্তিকা। 

১৩. কোন্ মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা সর্বাধিক? 

উত্তর:- কৃয় মৃত্তিকা।

১৪। নদীর মোহানা অঞ্চলের মৃত্তিকা কী প্রকৃতির হয়?

 উত্তর :- লবণাক্ত। 

১৫. মৃত্তিকা ক্ষয়ের সর্বপ্রধান কারণ কী ? 

উত্তর:- বৃক্ষচ্ছেদন। 

১৬. আর্দ্র অঞ্চলে কীসের দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়?

 উত্তর:- জলের দ্বারা। 

১৭. ভারতের প্রায় কত জমি প্রতি বছর জলের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়?

 উত্তর:- প্রায় ৫৩.৩৪ মিলিয়ন হেক্টর জমি। 

১৮. পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় ধাপ কেটে যে চাষ করা হয়, তাকে কী বলে?

 উত্তর:- ধাপ চাষ।

 ১৯. পাহাড়ে জঙ্গল পুড়িয়ে যে চাষ হয়, তাকে কী বলে? 

উত্তর - ঝুম চাষ।

২০ রেগুর শব্দের উৎপত্তি হয় কোন্ শব্দ থেকে?

 উত্তর:- তেলুগু শব্দ রেগাড়া থেকে (Regada)। 

২১. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কী ?

 উত্তর:- বাদামি হলুদ ও হালকা হলুদ। 

২২. শিথিল মৃত্তিকার স্তরের মধ্যে দিয়ে সরু সরু নালার আকারে যে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়, তাকে কী বলে?

 উত্তর:- রিল ক্ষয় বা নালা ক্ষয়।

 ২৩. অন্তর্ভূমি (Sub Soil) কাকে বলে? 

উত্তর:- অবশিষ্ট মৃত্তিকার নীচে অবস্থিত শিলাকে অন্তর্ভূমি বলো 

২৪| মৃত্তিকা ক্ষয় প্রধানত কোন্ দুটি শক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়।

 উত্তর:-  জলপ্রবাহ ও বায়ুপ্রবাহ। 

২৫. ঝুম চাষ ভারতের কোন্ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়?

উত্তর:- উত্তর-পূর্ব ভারতে। 

২৬. মৃত্তিকা ক্ষয়ের যে-কোনো দুটি প্রাকৃতিক কারণ লেখো।

উত্তর:- বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব ও প্রকৃতি এবং বায়ুপ্রবাহ

২৭. মৃত্তিকা ক্ষয়ের যেকোনো দুটি মনুষ্য সৃষ্ট কারণ লেখো ।

উত্তর:- বৃক্ষচ্ছেদন ও প্রথাগত কৃষিপদ্ধতি। 

২৮. মৃত্তিকা সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উপায় লেখো। 

উত্তর:- বৃক্ষরোপণ ও ঝুম চাষ রোধ। | 

২৯. বায়ু দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় ভারতের কোথায় বেশি দেখা যায়।

 উত্তর:-  ভারতের শুষ্ক ও মরুপ্রায় অঞ্চল। 

৩০. জল দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় ভারতের কোন্ রাজ্যে বেশি হয়। 

উত্তর :-উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, গুজরা

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১. মৃত্তিকা (Soil) কাকে বলে? 

উত্তর : ভূত্বকের উপরে শিলাচূর্ণ (খনিজ পদার্থ), বিয়োজি জৈব যৌগ, জীবাণু, জলীয় দ্রবণ, বায়ু প্রভৃতি দ্বারা গঠিত সূ পদার্থের হালকা ও শিথিল অংশকে মৃত্তিকা বলে। 

প্রশ্ন । ২. মৃত্তিকার উপাদানগুলি কী কী?

 উত্তর : মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপাদানগুলি হল- সূর্যতাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তি এ শিলার সূক্ষ্ম দানা, জীবিত ও মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীদেহ ইত্যাদি জেনে রাখো মৃত্তিকা সৃষ্টিকারী উপাদান-এর সমীকরণ : রাশিয়ার মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ডকুচেভ কৃত মৃত্তিকা সৃষ্টির সমীকর হল - S = f (CI, O, R, P, T ) যেখানে S = Soil, F Function বা কার্যকারিত = |Cl = Climate বা জলবায়ু, O Organic Activity = Relief বা ভূপ্রকৃতি, P = Parent Materia জীবমণ্ডল, R বা জনকশিলা, T Time বা সময় 

 প্রশ্ন । ৩ মৃত্তিকা গ্রথন কাকে বলে? 

 উত্তর : মৃত্তিকার অন্তর্গত খনিজকণার বিন্যাসকে বলা গ্রথন বা Texture | 

প্রশ্ন ৪ ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগগুলির নাম লেখে।

 উত্তর : ভারতের মৃত্তিকাকে প্রধানত ৬ ভাগে ভাগ করা যা যথা—১. পাললিক মৃত্তিকা, ২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা, ৩. লোহিত মৃত্তি ৪. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, ৫. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা এবং ৬. পাব অঞ্চলের মৃত্তিকা। 

প্রশ্ন ৫ . পলিমাটি ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায়?

 উত্তর : ভারতে প্রায় ৪৬% অঞ্চল নিয়ে গঠিত সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদনদী-বিধৌত পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এবং গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদী অববাহিকা অঞ্চলে পলিমাটি দেখতে পাওয়া যায়।

 প্রশ্ন ৬. খাদার ও ভাঙ্গার মৃত্তিকা কাকে বলে?

* উত্তর : নদীতীরবর্তী উর্বর নবীন পলিমাটিকে খাদার বলা হয় | এবং নদী থেকে দূরবর্তী প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গার বলা হয়।

প্রশ্ন ৭. ধাক্কার কাকে বলে ? *

 উত্তর : উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমিতে জলাভূমির মৃত্তিকাকে ধাঙ্কার (Dhankar) মৃত্তিকা বলে। ভাবর মৃত্তিকা কাকে বলে ? * উত্তর : পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, পলি ও বালি দ্বারা গঠিত ।

প্রশ্ন ৮. মৃত্তিকাকে ভাবর মৃত্তিকা বলে? 

উত্তর : পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, পলি ও বালি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা কে ভাবর মৃত্তিকা বলে ।

 প্রশ্ন ৯. ভাবর মৃত্তিকা অনুর্বর কেন? *

 উত্তর : ভাবর মৃত্তিকা নুড়ি, কাঁকর ও বালি দ্বারা গঠিত হওয়ায় এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা খুবই কম। তাই এই মৃত্তিকা অত্যন্ত অনুর্বর। 

প্রশ্ন । ১০. পলি মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল উৎপন্ন হয়? 

উত্তর : ভারতের পলিমাটিতে প্রায় সব ধরনের কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয়। প্রধান উৎপাদিত ফসল হল ধান, গম, আখ, তৈলবীজ, ডাল, পাট, আলু, শাকসবজি প্রভৃতি। 

প্রশ্ন। ১১. পলি মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর কেন? *

 উত্তর : এই পলি মৃত্তিকায় ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। অধিকাংশ স্থানে মাটির মধ্যে পলি, কাদা ও বালির ভাগ সমান সমান থাকায় মাটি দোআঁশ জাতীয় বলে জলধারণ ক্ষমতাও বেশ বেশি। তাই ইহা উর্বর। জেনে রাখো • হিউমাস মৃত্তিকায় অবস্থিত, পরিপূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট জীবদেহ বিশেষ Humus নামে পরিচিত। এটি মৃত্তিকার গঠন, সচ্ছিদ্রতা, উয়তা প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

প্রশ্ন। ১২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায়? 

উত্তর : মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম অংশ, গুজরাটের দক্ষিণ, উত্তর অংশের প্রায় ৫.৫০ লক্ষ বর্গকিমি (১৭%) স্থানজুড়ে কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর মৃত্তিকা দেখা যায়। অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম, কর্ণাটকের উত্তর ও তামিলনাড়ুর।

 প্রশ্ন। ১৩. রেগুর মৃত্তিকা কাকে বলে? 

★★ উত্তর : দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন যে অতি উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়, স্থানীয়ভাবে তাকে ‘রেগুর' বলে।

 প্রশ্ন ১৪. রেগুর মৃত্তিকার রং কালো হয় কেন ? 

* উত্তর : ব্যাসল্ট শিলায় আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট রেগুর মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। এই কারণে রেগুর মৃত্তিকার রং হয় কালো। 

প্রশ্ন । ১৫. ভুর কাকে বলে?

 উত্তর : উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে (বিশেষত উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পশ্চিমাংশের দোয়াব অঞ্চলে) বালি মিশ্রিত অতি সূক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়, যা ‘ভুর’ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন ১৬. কৃয় মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায় ?** 

উত্তর : কৃয় মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। তাই মাটি 'Black cotton Soil' নামে পরিচিত। কার্পাস ছাড়াও এই মাটিতে মিলেট, তৈলবীজ, তামাক, পিঁয়াজ প্রভৃতির চাষ হয়। 

১৭. কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে 'কল্পকাপাস মৃত্তিকা' বা 'Black Cotton Soil' বলে কেন ? ★ 

উত্তর : কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর কার্পাস বা তুলা চাষের জন্য উপযোগী বলে, কৃয় মৃত্তিকাকে 'কৃয় কার্পাস মৃত্তিকা' বা 'Black Cotton Soil বলে। 

প্রশ্ন ১৮. লোহিত মৃত্তিকা কোথায় কোথায় দেখা যায়?

 উত্তর : কর্ণাটক, মহারাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বভাগ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ অংশ, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া জেলায় এবং উত্তর-পূর্বের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায়। 

প্রশ্ন ১৯ : লোহিত মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায়? 

উত্তর : লোহিত মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও মিলেট, বাদাম, ভুট্টা, সোয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপাদনের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে ধান, তৈলবীজ, ডাল প্রভৃতির চাষ করা হয়। 

প্রশ্ন ২০. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার এইরূপ নামকরণের কারণ কী? 

উত্তর : লাতিন ভাষায় 'ল্যাটার' (Later) শব্দের অর্থ হল ইট। ইটের মতো শক্ত ও লাল রঙের হয় বলে, এই মৃত্তিকার নাম ল্যাটেরাইট। 

প্রশ্ন ২১. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার খনিজ উপাদান কী কী? 

উত্তর : ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার খনিজ উপাদানগুলি হল লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড প্রভৃতি।

 প্রশ্ন ২২. পার্বত্য মৃত্তিকা কোথায় কোথায় দেখা যায়? 

উত্তর : উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পর্বতের বনভূমি অঞ্চলে পার্বত্য মুক্তিকা দেখা যায়। হিমালয়ের উপত্যকা ও অবনমিত অঞ্চলেই এই মৃত্তিকা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

প্রশ্ন ২৩. পার্বত্য ও অরণ্য মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায় ? 

উত্তর : পার্বত্য মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও, চা, কফি, বিভিন্ন মশলা, ফল প্রভৃতি বাগিচা ফসল ভালো জন্মায়। 

প্রশ্ন ২৪ : মরু ও শুষ্ক মৃত্তিকা ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায়? 

উত্তর : রাজস্থানের মরুভূমি ও তৎসংলগ্ন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাটের প্রায় ১.৫০ লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চলজুড়ে রয়েছে মর ও শুষ্ক মৃত্তিকা। 

প্রশ্ন | ২৫. সিরোজেম মৃত্তিকা কাকে বলে ?

★★ উত্তর : মরুভূমিসংলগ্ন অঞ্চলের ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ বর্ণের মৃত্তিকাকে সিরোজেম বলে। এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশ কম। ভারতে রাজস্থানের পূর্ব অংশে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। 

প্রশ্ন । ২৬. মরু মৃত্তিকার গুরুত্ব লেখো। 

উত্তর : জলসেচ ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এই মৃত্তিকার গম, যব, মিলেট, তুলা, ডাল ও তৈলবীজ প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হচ্ছে। জেনে রাখো 

প্রশ্ন ২৭. মৃত্তিকা ক্ষয় (Soil Erosion) কাকে বলে?* মৃত্তিকার pH : মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের | সূচক হল pH। এটি ফরাসি শব্দ ‘Pouroir Hydrogen' ব ‘Poudus’ থেকে এসেছে, এর অর্থ ওজোন। মৃত্তিকার এই সূচক | স্কেলটির মান 0 14 পর্যন্ত হয়। মৃত্তিকার pH-এর মান 7-এর | কম হলে মৃত্তিকা আম্লিক হয় ও এর মান 7-এর বেশি হলে মৃত্তিকা ক্ষারীয় হয়। 

উত্তর : হিমবাহ, জলস্রোত, সমুদ্রের ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানুষের নানান রকম অবাঞ্ছিত কার্যকলাপের ফলে মাটির উপরের হালকা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অপসারিত হলে তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।

 জেনে রাখো মৃত্তিকা ক্ষয়ের উপাদানগুলির সমীকরণ হল: E = f (Cl, V, T, S, H) অর্থাৎ E Erosion বা ক্ষয়, f = = Cl = Climate বা জলবায়ু, V function বা কার্যকারিতা Vegetation বা উদ্ভিদ, = T = Topography বা ভূমিরূপ, S = মৃত্তিকার উপাদান, H = Human Activity বা মানুষের Soil Properties কার্যাবলি 

প্রশ্ন ২৮. শিট ক্ষয় ও খোয়াই ক্ষয় কাকে বলে ?*

 [উত্তর : ঢালু জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার মাধ্যমে মাটির উপরিস্তরের অপসারণ হল শিট ক্ষয়। ছোটো নালা বড়ো নালায় পরিণত হলে তা হল খোয়াই ক্ষয়। 

প্রশ্ন| ২৯. র‍্যাভাইন ক্ষয় কী? 

উত্তর : জলনালিকা ও খোয়াই আরও গভীর খাড়া পাড়যুক্ত গভীর খাত তৈরি করে। একেই বলে র‍্যাভাইন ক্ষয়। 

প্রশ্ন ৩০. অপভূমি বা Badland কাকে বলে ? 

উত্তর : খোয়াই ও র‍্যাভাইন ক্ষয়ের মাধ্যমে বিশাল অঞ্চল এবড়োখেবড়ো ও শুষ্ক অনুর্বর ভূমিতে পরিণত হলে তা হল অপভূমি বা ব্যাডল্যান্ড। যেমন— গড়বেতায় অবস্থিত গণগনির ব্যাডল্যান্ড। 

প্রশ্ন ৩১. ফালি চাষ (Strip Cropping) কাকে বলে?*

 উত্তর : যেসকল ঢালু জমিতে মাটি ক্ষয় বেশি সেখানে ঢালের আড়াআড়ি দিকে চওড়া ফিতের মতো জমি তৈরি করে ক্ষয়রোধকারী শস্য (সিম, ডাল, সয়াবিন) চাষ করা হয়। এতে মাটির ক্ষয়রোধ হয় এবং মাটির জলধারণ ক্ষমতাও বাড়ে।

 প্রশ্ন ৩২. ধাপ চাষ (Terrace Farming) কাকে বলে? ★ অথবা, ধাপ চাষের গুরুত্ব কী? [মা.প. [১৮] 

উত্তর : ভারতে পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় সিঁড়ির মতো ধাপ ধাপ অর্ধচন্দ্রাকার সমতল জমি তৈরি করে সেখানে চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিকে ধাপ চাষ বলা হয়। এই চাষ পদ্ধতিতে মাটি ক্ষয় অনেকটা কমানো যায়। 

প্রশ্ন ৩৩. ঝুম চাষ (Jhoom Cultivation) কাকে বলে? ★ 

উত্তর : ঘন অরণ্য অঞ্চলের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের গাছপালা কেটে, পুড়িয়ে পরিষ্কার করে কৃষিকাজ করা হয়। জমির উর্বরতা হ্রাস পেলে সেই স্থান থেকে অন্যত্র গিয়ে একই পদ্ধতিতে গাছপালা পুড়িয়ে চাষ করা হয়। এইপ্রকার স্থানান্তর আদিম কৃষি পদ্ধতি উত্তর-পূর্ব ভারতে ঝুম চাষ বলে। 

প্রশ্ন ৩৪. ঝুমচাষের ক্ষতিকারক দিকগুলি কী কী?

 উত্তর : গাছপালা পুড়িয়ে এই ধরনের চাষ করা হয় বলে একদিকে যেমন বনভূমি ধ্বংস হয়, অপরদিকে মৃত্তিকার উর্বরতাও হ্রাস পায়। ঝুম চাষের প্রভাবে মৃত্তিকার ক্ষয় অতি দ্রুত হারে ঘটে।

 প্রশ্ন | ৩৫. কৃয় মৃত্তিকার উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে? 

উত্তর : স্বল্প বৃষ্টিপাতের প্রভাবে (৫০- ৬০ সেমি) লাভা দ্বারা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে এই কৃয় মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়েছে।

 জেনে রাখো • বিজ্ঞানের যে শাখায় মাটির উৎপত্তি, শ্রেণিবিভাগ, ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম, স্তরবিন্যাস প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে পেডোলজি (Pedology) বলা হয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:

A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো

 প্রশ্ন ১. পলিমৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? * 

* উত্তর: পলিমৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

 ১) এই মৃত্তিকার রং ও মৃত্তিকা স্তরের গভীরতা বিভিন্ন অংশে ভন্ন।

 (২) মৃত্তিকায় ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। 

(৩) সুষম গ্রথনযুক্ত বলে এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি, তাই এটি উর্বর। 

(৪) এই মৃত্তিকার মধ্যে কোথাও বালির ভাগ বেশি আবার কোথাও পলির ভাগ বেশি। 

প্রশ্ন ২. ডেকানট্র্যাপ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায় কেন ? 

 উত্তর : দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ বা লাভা মালভূমি অঞ্চলে কালো রঙের যে মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বলে। এই মৃত্তিকা রেগুর বা কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা নামেও পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৬/৭ কোটি বছর আগে ভূত্বকের ফাটল পথে ভূগর্ভস্থ লাভা নিঃসৃত হয়ে এই অঞ্চলটি চাদরের মতো ঢেকে যায়। লাভাগঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে এই মৃত্তিকার রং কালো। কয় মৃত্তিকায় চুন ও কাদার ভাগ বেশি। তাই এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতাও অত্যন্ত বেশি। গ্রীষ্মে এই মৃত্তিকা শুকিয়ে গেলে গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। কার্পাস এই অঞ্চলের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য বলে এই মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা বলে।

 প্রশ্ন ৩. কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? *

* উত্তর : কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (১) কালো রঙের ব্যাসল্ট শিলা বা লাভা পাথর ক্ষয় পেয়ে কৃষ্ণ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে বলে এই মাটির রং কালো। (২) কৃষ্ণ মৃত্তিকায় পলি, চুন ও কাদার ভাগ বেশি হওয়ায় (৫০%-৮০%) এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। (৩) এই মাটিতে জল থাকলে তা আঠালো ও চট্‌চটে হয় কিন্তু শুকিয়ে গেলে তা বেশ শক্ত হয়। শুকনো মাটিতে ফাটল ধরে। (৪) কৃষ্ণ মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও ক্যালশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট প্রভৃতি খনিজ পদার্থ থাকায় এই মাটি অত্যন্ত উর্বর। (৫) এই মৃত্তিকাকে রেগুর মৃত্তিকা বলা হয়। (৬) এই মাটির কণাগুলি খুব সূক্ষ্ম। 

প্রশ্ন 8. কৃয় মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর কেন? 

উত্তর : এই মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফেট ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকলেও ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশ, চুন প্রভৃতি খনিজে এই মৃত্তিকা সমৃদ্ধ। পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকায় এই মাটির জলধারণ ক্ষমতাও বেশি। তাই রেগুর মাটি অত্যন্ত উর্বর।  

প্রশ্ন ৫. লোহিত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো। 

* উত্তর : লোহিত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল- 

(১) মাটিতে লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় মাটির রং হয় লাল, তবে কখনো-কখনো এর রং হলুদ বর্ণেরও হয়।

 (২) পলি ও বালুকণার ভাগ এই মাটিতে বেশি। 

(৩) নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও চুনের ভাগ সামান্য এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম বলে অনুর্বর। 

(৪) এই মাটিকে লাল দোআঁশ ও লাল বেলে— এই দু-ভাগে ভাগ করা হয় ।

প্রশ্ন ৬. ল্যাটেরাইট মাটি ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায়?

 উত্তর : ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ল্যাটেরাইট মুর্তিকা। এই মুখিকা দেখা যায় পশ্চিমঘাট, পূর্বঘাট, বিশ্ব্য, সাতপুরা, রাজমহল প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চলে এবং কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে।

 প্রশ্ন ৭. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে?

 উত্তর : ভারতে প্রাচীন শিলায় (গ্রানাইট ও নিস) গঠিত মালভূমি ও প্রাচীন পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে উন্নতা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই বেশি এবং পর্যায়ক্রমে আর্দ্র ও শুরু ঋতু বিরাজ করে সেখানেই এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে। অধিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে আবহাবিকার গ্রস্ত উচ্চভূমির প্রাচীন শিলাস্তর থেকে এলুভিয়েশান প্রক্রিয়ায় সিলিকা ও অন্যান্য দ্রবণীয় পদার্থ অপসারিত হয় এবং পড়ে থাকে লোহা। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইড এবং সৃষ্টি হয় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা। 

প্রশ্ন ৮. ল্যাটেরাইট মাটির বৈশিষ্ট্য লেখো?

 উত্তর : ল্যাটেরাইট মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল 

(১) এই মুক্তিকা লাল, বাদামি ও হলদে বাদামি রঙের হয়। 

(২) এই মাটিতে জল থাকলে থথকে কিছু শুকিয়ে গেলে শক্ত ইটের মতো হয়ে যায়। (লাতিন শব্দ ল্যাটেরাইট এর অর্থ- 'ইট')।

 (৩) লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড এই মুক্তিকার প্রধান উপকরণ। 

(৪) বাড়া শত্রু দলার বা বিচ্ছিন্ন কাঁকরের মতো পদার্থ দিয়ে এটি সৃষ্ট। 

৫) অন্যান্য খনিজ ও জৈব পদার্থ থাকে না বলে এটি অনুর্বর তাই চাষআবাদ খুব বেশি হয় না। 

(৬) ক্ষয়ীভবনের মাধ্যমে উচ্চভূমি থেকে এই মৃত্তিকা সমতলভূমির  বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে সঞ্চিত হয় ।

৯. ল্যাটেরাইট মাটি অনুর্বর কেন ? 

উত্তর: প্রাচীনকালের আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলার ওপর গভীর আবহবিকারের প্রভাবে শিলাস্তরের উপরিভাগ থেকে সিলিকা ও অন্যান্য প্রবণীয় খনিজ অপসারিত হয় এবং পড়ে থাকে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইড। বাদামি বর্ণের কাকর জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি এই মুক্তিকায় জৈব পদার্থ। চুন, ম্যাগনেশিয়াম, নাইট্রোজেন প্রভৃতির পরিমাণ খুবই কম। এই মাটির জলধারণ ক্ষমতাও খুব কম। তাই এই মাটি কৃষির পক্ষে একেবারে অনুর্বর। 

১০. পার্বত্য মুক্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর  : পার্বত্য মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (১) পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কালো ও ধূসর বাদামি। (২) এই মাটিতে পটাশ ও ফসফরাস কম, কিন্তু জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি। (৩) প্রকৃতিগতভাবে এই মাটি অম্ল এবং অনুর্বর। (৪) ধাপ চাষের মাধ্যমে চা, ফল, বার্লি, আলু, ধান, গম ও জোয়ার চাষ করা যায়।

প্রশ্ন ১১. মরু ও শুষ্ক মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর : মরু ও শুল্ক মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (১) মাটির রং বাদামি হলুদ ও হালকা হলুদ, (২) মাটিতে লবণের ভাগ বেশি, (৩) মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ ■ কম থাকায় অনুর্বর প্রকৃতির, (৪) তবে ফসফেট ও নাইট্রেটের উপস্থিতির কারণে আর্দ্রতার প্রভাবে এই মাটি উর্বর হয়ে ওঠে। 

প্রশ্ন | ১২. মরু মৃত্তিকায় লবণের ভাগ বেশি কেন? 

উত্তর : মরু অঞ্চলে গভীর বাষ্পীভবনের কারণে মৃত্তিকার অভ্যন্তরের লবণ কৌশিক প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত হারে উপরে উঠে মৃত্তিকার উপরিস্তরে সঞ্চিত হচ্ছে। তাই এইসকল অঞ্চলে অর্থাৎ মরু অঞ্চলে মরু মৃত্তিকার লবণতা বাড়ছে— যা কৃষিকাজের পক্ষে ক্ষতিকর। 

প্রশ্ন ১৩ : প্রবহমান জলধারা কীভাবে মৃত্তিকাকে ক্ষয় করে? 

উত্তর : প্রবহমান জলধারার দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রক্রিয়াসমূহ—(ক) বৃষ্টির আঘাতে ক্ষয় : বৃষ্টির ফোঁটা সরাসরি মাটিকে আঘাত করলে মাটি আলগা হয় এবং জলের প্রবাহে তা সহজেই ধুয়ে যায়। (খ) শিট বা চাদর ক্ষয় : ঢালু জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার মাধ্যমে মাটির উপরিস্তরের অপসারণ হল শিট ক্ষয়। (গ) জলনালিকা ক্ষয় : জলপ্রবাহে ছোট্ট ছোট্ট নালি তৈরির ■ মাধ্যমে মাটির অপসারণ হল জলনালিকা ক্ষয়। (ঘ) খোয়াই ক্ষয় ছোটো নালা বড়ো নালায় পরিণত হলে তা হল খোয়াই। এর মাধ্যমে মাটির ক্ষয় খুব বেশি ঘটে। বীরভূম, বাঁকুড়ার লালমাটি অঞ্চলে খোয়াই ক্ষয় খুব বেশি ঘটে। (ঙ) র‍্যাভাইন ক্ষয় : খোয়াই আরও গভীর খাড়া পাড়যুক্ত গভীর খাত তৈরি করে। জলনালিকা ও = হল র‍্যাভাইন ক্ষয়। এ ছাড়া নদীর পাড়-ভাঙন, পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসজনিত ক্ষয় জলপ্রবাহ ক্ষয়ের মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন ১৪. ‘মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে বন্যার মাত্রা বাড়ে’– কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : মৃত্তিকা ক্ষয় পেলে সেই ক্ষয়জাত দ্রব্যগুলি নদীর খাতে জমলে খাতের উচ্চতা বাড়ে এবং জলবহনের ক্ষমতা কমে। বর্ষাকালে নদীর দুই তীর ছাপিয়ে বন্যা হয়। 

প্রশ্ন ১৫ : ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের মাত্রা খুব বেশি? 

উত্তর : ভারতের অত্যধিক মৃত্তিকা ক্ষয়প্রবণ অঞ্চল (Very heavy erosion) হল মধ্য ভারত তথা মধ্যপ্রদেশের উত্তরাংশ, উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণাংশ রাজস্থানের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, গুজরাটের দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অংশ। ভারতের অধিক মৃত্তিকা ক্ষয়প্রবণ অঞ্চল হল ছোটোনাগপুর মালভূমি অংশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বিস্তীর্ণ অংশ এবং মধ্যম প্রকৃতির মৃত্তিকা ক্ষয় অঞ্চল হল উত্তরপ্রদেশের উত্তর পশ্চিমাংশ, সমগ্র মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের সমগ্র মধ্য-পূর্বাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশের সময় পশ্চিমাংশ, কর্ণাটকের পূর্বাংশ ও তামিলনাড়ুর উত্তরাংশ।

প্রশ্ন ১৬. গঠন অনুসারে পলি মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করো। * 

উত্তর : গঠন অনুসারে খাদার বা নবীন পলিমাটিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—(ক) দোআঁশ মাটি, (খ) এঁটেল মাটি ও (গ) বেলেমাটি। (ক) দোআঁশ মাটি ( Loamy Soil) : দোআঁশ মাটিতে বালি ও কাদা প্রায় সমপরিমাণে থাকে। ভারতের পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের পলিমাটি অঞ্চলে দোআঁশ মৃত্তিকা পাওয়া যায়। ফসলের পক্ষে আদর্শ এই মৃত্তিকা। বেলে, দোআঁশ ও এঁটেল মাটি (খ) এঁটেল মাটি (Clayey Soil) : কাদার ভাগ বেশি থাকায় এঁটেল মাটি বেশিক্ষণ জল ধরে রাখতে পারে। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ও নিম্ন উপত্যকায় এঁটেল মাটি পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে এঁটেল মাটির আধিক্য দেখা যায়। (গ) বেলে মাটি (Sandy Soil) : বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়ায় জল ধরে রাখতে পারে না। গাঙ্গেয় উপত্যকার পশ্চিমাংশে বেলে মাটি দেখা যায়। 

প্রশ্ন | ১৭. ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয় অঞ্চলগুলি কী কী?

 উত্তর : মৃত্তিকা ক্ষয় ভারতের এক প্রকট সমস্যা। অনেক বিজ্ঞানীরা মনে করেন কৃষিকাজ ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কারণ। মৃত্তিকাবিজ্ঞানী এইচ গ্লোভার (H. Glover)-এর মতে ভারতে মোট অঞ্চলের প্রায় ৪০ মিলিয়ান হেক্টর অঞ্চল মৃত্তিকা ক্ষয়ের শিকার।

 • ভারতের মোট অঞ্চলের চার ভাগের এক ভাগ অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। বর্তমানে প্রায় ৪০,০০০ হেক্টর জমি পুরোপুরিভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। বায়ুর দ্বারা ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিম ভারতের শুষ্ক ও মরুপ্রায় অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়ে থাকে। রাজস্থান, গুজরাট ও তার পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে বায়ুর দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

 • জলের দ্বারা ক্ষয়কার্য বেশি হয় আর্দ্র অঞ্চলে। খাড়া ঢাল, জলের প্রবল গতিতে প্রবাহ, বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদি কারণে এই ক্ষয় হয়ে থাকে। Indian Council of Agriculture Research (ICAR) - এর রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারতে প্রায় ৫৩.৩৪ million হেক্টর জমি প্রতিবছর জলের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও গুজরাটে এইভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়ে থাকে।

হিমবাহের দ্বারাও মুক্তিকা কণাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। প্রধানত উত্তরের ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে এইপ্রকার ক্ষয়কাজ দেখা যায়। 

• সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলেও সমুদ্রের জল ও বায়ুর দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। ভারতের তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ উপকূলে এইপ্রকার মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা যায়। ● Shifting Cultivation তথা অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ও বৃক্ষচ্ছেদনের দ্বারা ভারতের প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর জমি ক্ষয় পাচ্ছে। অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছতিশগড় ইত্যাদি রাজ্যে এইপ্রকার মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। 

প্রশ্ন | ১৮. ডেকানট্র্যাপ অঞ্চলে কৃষ্ণ মৃত্তিকা গড়ে উঠেছে কেন?

 উত্তর : দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ বা লাভা মালভূমি অঞ্চলে কালো রঙের যে মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে কৃয় মৃত্তিকা বলে। এই মুক্তিকা রেণুর বা কৃয় কার্পাস মৃত্তিকা নামেও পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৬/৭ কোটি বছর আগে ভূত্বকের ফাটল পথে ভূগর্ভস্থ লাভা নিঃসৃত হয়ে এই অঞ্চলটি চাদরের মতো ঢেকে যায়। লাভাগঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে এই মৃত্তিকার রং কালো। কৃষ্ণ মৃত্তিকায় চুন ও কাদার ভাগ বেশি। তাই এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতাও অত্যন্ত বেশি। গ্রীষ্মে এই মৃত্তিকা শুকিয়ে গেলে গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয়। কার্পাস এই অঞ্চলের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য বলে এই মুক্তিকাকে কৃয় কার্পাস মৃত্তিকা বলে।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১ ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করে প্রধান একপ্রকার মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো।★★ [মা.প. '১৬] 

উত্তর : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের বিস্তার, শিলাস্তরের গঠন ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে মৃত্তিকাকে প্রধান ছ-টি ভাগে ভাগ করা যায়। মৃত্তিকার প্রধান ভাগগুলি হল—(১) পলি মৃত্তিকা, (২) কৃষ্ণ মৃত্তিকা, (৩) লোহিত মৃত্তিকা, (৪) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, (৫) পার্বত্য মৃত্তিকা এবং (৬) মর ও শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকা।

 • নিম্নে পলি মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল। 

• পলি বা পাললিক মৃত্তিকা (Alluvial Soil) : 

• অবস্থান : উত্তর ভারতে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু সমভূমি দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া ও কাবেরী অববাহিকা কয়েকটি অংশে এবং উপকূল বরাবর নদী দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চি হয়ে এই মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে। 

• বৈশিষ্ট্য : (১) অবস্থানের তারতম্য অনুসারে এক-একটি অঞ্চলের পলিমাটির রং এক-এক রকমের হয়। কোনো অঞ্চলের পলিমাটিতে বালির ভাগ বেশি, কোথাও আবার কাদার ভাগ বেশি। (২) পলিমাটিতে জৈব পদার্থ, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, কিন্তু এই মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম হলেও কৃষির পক্ষে অতি উর্বর। (৩) অঞ্চলবিশেষে পলিমাটির পাললিক মৃত্তিকা বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের ফলে এই মাটির উর্বরতারও তারতম্য হয়। (৪) মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি বলে এটি উর্বর। 

• গুরুত্ব : এই মাটি কৃষিকার্যের পক্ষে অত্যন্ত উর্বর বলে প্রায় সব ধরনের ফসলের চাষ এই মাটিতে করা হয়। যেমন- ধান,গম, ইক্ষু, তৈলবীজ, পাট আলু প্রভৃতি। ভারতের অধিকাংশ কৃষিজ ফসল এই মাটিতেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। 

প্রশ্ন ২. ভারতের রেগুর মৃত্তিকা ও পলি মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো। 

উত্তর : বেগুন কি বা কি (Black Soil) •

 অবস্থান: মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম অংশ, গুজরাটের দক্ষিণ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম, কর্ণাটকের উত্তর এবং তামিলনাড়ুর উত্তর অংশের প্রায় ৫.৫০ লক্ষ বর্গকিমি (১৭%) স্থানজুড়ে আছে কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর। 

• বৈশিষ্ট্য : (১) ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্ট এই মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগের পরিমাণ বেশি থাকায় রং কালো। (২) বর্ষাকালে এই মাটি চটচটে কিন্তু শুষ্ক ঋতুতে বেশ শক্ত এবং ফাটলের সৃষ্টি হয়। (৩) পলি ও কাদার ভাগ (৫০%-৮০%) বেশি থাকায় প্রথন মাঝারি বলে জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। (৪) বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ হওয়ায় (অ্যালুমিনা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন অক্সাইড) মাটি খুব উর্বর। 

গুরুত্ত• এই মাটিতে কার্পাস, মিলেট, তৈলবীজ, তামাক ও পিঁয়াজের প্রচুর পরিমাণ চাষ হয়। এই মৃত্তিকা তুলো চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে একে 'Black Cotton Soil' বলে। পলি মৃত্তিকা (Alluvial Soil) : | ২৫৯ নং পৃষ্ঠার ১নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো | 

প্রশ্ন ৩. ভারতের লোহিত মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো। 

উত্তর : লোহিত মৃত্তিকা (Red Soil) : • 

অবস্থান : ভারতের প্রায় ১১% এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ধরনের মৃত্তিকা দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমিতে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ও মেঘালয় মালভূমিতে এই মাটি দেখা যায়। 

• বৈশিষ্ট্য : (১) লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় সাধারণত এই মাটির রং লাল, তবে কোথাও কোথাও হলুদ রং-এর লোহিত মাটিও দেখা যায়। (২) বালি ও কাকরপূর্ণ হওয়ায় লোহিত মাটির জলধারণ লোহিত মৃত্তিকা খুব কম। (৩) এই মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের ভাগ বেশি, নাইট্রোজেন, চুন ও ফসফরাসের ভাগ কম এবং জৈব পদার্থ খুব কম থাকায় সাধারণভাবে এটি অনুর্বর। (৪) এই মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি ও কাদার ভাগ কম বলে এখন সুক্ষ্ম প্রকৃতির। (৫) আর্দ্র শুরুতে এই মৃত্তিকা অত্যন্ত শক্ত। (৬) প্রধানত জলসেচের সাহায্যে লোহিত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে রাগি, তৈলবীজ, জোয়ার ও সামান্য ধান উৎপন্ন হয়। 

• গুরুত্ব : লোহিত মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও মিলেট, বাদাম, জ্ব সয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপাদনের পক্ষে বিশেষ উপযোগী জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে ধান, তেলবাজ, প্রভৃতির চাষ করা হয়। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (Laterite Soil) : 

• অবস্থান : কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের কয়েকটি অঞ্চলের প্রায় ২.৫ লক্ষ বর্গকিমি (প্রায় ৮%) স্থানজুড়ে এ মৃত্তিকা দেখা যায়। • 

বৈশিষ্ট্য : (১) সাধারণত এই মাটি ইটের মতো লাল রং-এর তবে বাদামি ও হলুদ-বাদামি রং-এর ল্যাটেরাইট মাটিও দেখা যায়। (২) ল্যাটেরাইট মাটি শুকনো অবস্থায় ইটের মতো শক্ত হয়, তবে ভিজে অবস্থায় থকথকে হয়ে যায়। (৩) লোহা, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এই মৃত্তিকার প্রধান উপাদান । (৪) বড়ো শক্ত দলার মতো ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা পদার্থে কিংবা বিভিন্ন কাকরজাতীয় পদার্থে এই মৃত্তিকা গঠিত। কাঁকরপূর্ণ বলে এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা বিশেষ নেই। (৫) কাকর ও বালিপূর্ণ হওয়ায় এ মৃত্তিকার প্রথন স্থূল প্রকৃতির। (৬) ল্যাটেরাইট মাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ বিশেষ থাকে না বলে এবং মাটির জলধারণ না-থাকায় সাধারণভাবে এই মাটি অনুর্বর। (৭) তবে জলসেচ সার প্রয়োগ করে কিছু কিছু অঞ্চলে ধান, চা, কফি ও রবার চা করা হয়। ক্ষমতা 

• গুরুত্ব : এই মৃত্তিকা অনুর্বর বলে কৃষিকাজের সহায়ক নয়। তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা, ' রবার ও বাদামের চাষ হয়। গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণ এই ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন । ৪ | মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি উল্লেখ করো।*

 [উত্তর : মৃত্তিকা ক্ষয় (Soil Erosion) : হিমবাহ, জলস্রোত, সমুদ্রের ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানুষের নানান রকম অবাঞ্ছিত কার্যকলাপের ফলে মাটির উপরের হালকা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অপসারিত হলে, তাকে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণসমূহ (Causes of Soil Erosion) মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—

ক. প্রাকৃতিক কারণ (Natural Causes) খ. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ (Man-Made Causes) |

 ক] মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণসমূহ প্রাকৃতিক কারণসমূহ হল : : মৃত্তিকা ক্ষয়ের [১] প্রবহমান জলধারা (Surface Runoff) : মৃত্তিকার অনুস্রাবণ্য (Infiltration) এর হার অপেক্ষা পৃষ্ঠপ্রবাহ (Surface runoff) এ পরিমাণ বেশি হলে জলের সাথে পলি, বালি, কাদা ইত্যাদি মিশে নিম্নচাল বরাবর প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই প্রবহমান জলের দ্বারা। প্রধানত তিন প্রকারের ক্ষয় হয়। যথা- 

© চাদর বা আস্তরণ ক্ষয় (Sheet Erosion) : প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কোনো বিশাল অঞ্চলের মাটির উপরের স্তর কমবেশি সমানভাবে ধুয়ে গিয়ে অপসারিত হলে, তাকে চাদর ক্ষয় বা আস্তরণ ক্ষয় বলে। ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অঞ্চলে এভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় হতে দেখা যায়।

 3) নালিক্ষয় (Rill Erosion) : যেখানে মাটির স্তর একটু কোমল ও শিথিল প্রকৃতির সেখানে প্রবল জলধারার আঘাতে অনেক সময় মাটির স্তর ক্ষয় পেতে পেতে নালি অথবা ছোটো খাতের আকারে ভূমিক্ষয় হয়। এই রকম ভূমিক্ষয়কে নালিক্ষয় বা Rill Erosion বা ক্ষুদ্র খাত ক্ষয় বলে।

 ভারতের পার্বত্য অঞ্চল সমূহে এইপ্রকার ক্ষয় দেখতে পাওয়া যায়। 

 খাত ক্ষয় (Gully Erosion) : বৃষ্টির জলের পরিমাণ বেড়ে গেলে, নালিগুলির মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে জল প্রবাহিত হয় ও মাটিকে আরও গভীর করে কাটতে থাকে। একেই বলে খাত ক্ষয় বা (Gully Erosion) | 

2 বায়ুপ্রবাহ (Winds) : বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সবচেয়ে বেশি মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা যায় শুষ্ক ও প্রায় শুষ্ক অঞ্চলে। রাজস্থান ও গুজরাটের শুষ্ক অঞ্চলে যে ঝড় হয় (আঁধি), তার প্রভাবে আলগা শুষ্ক বালি ও পলি একস্থান থেকে অপসারিত হয়ে অন্যত্র জমা হয়। এইভাবে বায়ুপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। 

৩  বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি (Nature of Rainfall) বৃষ্টির জল মৃত্তিকার ক্ষয়ের অপর এক প্রধান কারণ। প্রধানত ৩ প্রকারের ফ্রন্টিপাতের প্রভাবকে ব্যাখ্যা করা যায়। যথা- (ক) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (Amount of Rainfall): বৃষ্টপাতের তীব্রতা যদি প্রণ্টায় ২২ সেমি-এর বেশি হয় তাহলে মাটির অনুস্রাবণের হুলনায় পৃষ্ঠপ্রবাহ বেশি হয়। ফলে বৃষ্টির জল দ্রুত গতিতে প্রতিকার ক্ষয় করে। (খ) বৃষ্টিপাতের স্থা ি(Stability of Rainfall): দীর্ঘসময় ধরে ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত-এর তুলনায় স্বপ্ন সময়ে মুশলধারে বৃষ্টি হলে মৃত্তিকা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। (গ) বৃষ্টির ফোঁটার আকার (Size of rain drop) বৃষ্টির ফোটার আকার যদি বড়ো বড়ো হয়, তাহলে তার আঘাতে মৃত্তিকা ভেঙে যায়। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মৃত্তিকা সহজেই প্রবাহিত হয়ে যায় ফলে মৃত্তিকা দ্রুত ক্ষয় পায়।  

জলের ফোঁটার আঘাতে মুক্তিকা ক্ষয় প্রবহমান জলের দ্বারা মৃত্তিকা হ্রাস 1 inch I foot [8]

 ৪ ভূপ্রকৃতি (Topography) : ভূপ্রকৃতি ও ভূমির ঢাল-এর ওপর মৃত্তিকা ক্ষয় নির্ভর করে। ভূপ্রকৃতি যদি উঁচু-নীচু বন্ধুর হয় অর্থাৎ ঢালযুক্ত মৃত্তিকা হয় তাহলে ক্ষয় বেশি হয় ও দ্রুততর হয়। কিন্তু ভূপ্রকৃতি যদি সমভূমি হয় বা ঢাল কম হয় তাহলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়। » 

৫  ভূমিধস (Land slide) পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস-এর  ফলে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায় ও বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। বর্ষাকালে ভূমিধস বেশি হয়। এইসকল প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও শিলার প্রকৃতি, বন্যা (বন্যার জলের প্রবল তোড়ে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়), সমুদ্রতরঙ্গ (এর প্রভাবে উপকূলের মাটি ক্ষয় পায়), তুষার (বসন্তকালে তুষারগলা জলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়) ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়েও মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। 

 [খ] মৃত্তিকাক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহ : মানুষের বিভিন্ন ভূমিধস ধরনের কাজকর্মের মাধ্যমে মৃত্তিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। মৃত্তিকা ক্ষয়ের মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি হল- »

 (১) জনসংখ্যার চাপ (Pressure of excessive Population on land) বর্তমানে পৃথিবীতে জনসংখ্যা এত দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে যে, মানুষের বাসস্থান নির্মাণের জন্য নির্বিচারে জঙ্গল বা বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পাহাড়ের ঢালে বা অপেক্ষাকৃত ভগ্নর মৃত্তিকার ওপর রাস্তা বা ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য কৃষিজমিতে চাপ বেড়েই চলেছে, ফলে মৃত্তিকার গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে ও ক্ষয় হচ্ছে তাই বলা যায় যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই জনসংখ্যার চাপ মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

[2] অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুচারণ (Over grazing ) গোৰু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত পশু অনিয়ন্ত্রিতভাবে যেখানে সেখানে চারণ করানোর ফলে জমির মাটি অনাচ্ছাদিত হয়ে বৃষ্টির জলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ভূমি তৃণভূমি বনভূমি 200 ১০ বছর অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

» [৩] অবৈজ্ঞানিক খन (Unscientific Mining) মাটি খনন করে খনিজদ্রব্য আহরণ, ভূমি ধস, উদ্ভিদাবরণের ক্ষতি খনিসংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

 [8] বৃক্ষচ্ছেদন (Deforestration) জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বসতি নির্মাণ শহর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাঁধ, জলাধার ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যেখানে-সেখানে নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন করা হচ্ছে। গাছ তার শিকড়ের মাধ্যমে মাটি আঁকড়ে ধরে রাখে, কিন্তু এই গাছ কাটার ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় হচ্ছে। 

৫ প্রথাগত কৃষি (Conventional Method of Farming) ত্রিপুরা, অসম, উত্তরবঙ্গ, মেঘালয় প্রভৃতি উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ঝুম চাষ ও ধাপ চাষ করা হয়। এর ফলে প্রচুর মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

প্রশ্ন ৫ | মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে কী কী ঘটে? * 

উত্তর : মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল (Consequences of Soil Erosion) : মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফলগুলি হল- 

(১) উর্বর মৃত্তিকার উপরের স্তর অপসারণ (Loss of top Layere of fertile soil) : মৃত্তিকার ক্ষয়ের ফলে মাটির পৃষ্ঠস্তরের জৈব ও খনিজ সমৃদ্ধ মাটি অপসারিত হয়ে যায়। ফলে মাটির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়।

 (২) ভৌমজলের উচ্চতা হ্রাস (Fall of ground water table) : ক্ষয়ের ফলে মাটির নরম উপরের স্তর অপসারিত হলে নীচের কঠিন স্তর বেরিয়ে পড়ে। এই কঠিন স্তর দিয়ে অনুস্রাবণ প্রক্রিয়ার জল চুঁইয়ে নীচে নামতে পারে না। তার ফলে ভৌমজলের জোগান কমে যায়।

 (৩) মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস (Reduction in Soil moisture) : মৃত্তিকার ক্ষয়ের ফলে মৃত্তিকার উপরিস্থিত নরম হালকা মাটি ক্ষয়ে অপসারিত হয়ে যাওয়ার ফলে নীচের কঠিন মৃত্তিকা বেরিয়ে আসে। এই মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে না কারণ কঠিন শিলার জলধারণের ক্ষমতা কম। 

(৪) মরু অঞ্চলের প্রসারণ বৃষ্টিপাত (জলের উৎস) পৃষ্ঠীয় মৃত্তিকা জলশোষণকারী বালির স্তর। ভৌম জলস্তর হ্রাস ভৌম জলস্তর হ্রাস (Expansion of desert region) : অপেক্ষাকৃত শুষ্ক | বাতাসের সাহায্যে মাটির উপরের আলগা স্তর থেকে বালি কণা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে মরুপ্রায় অঞ্চলে সঞ্চিত হয়। এর ফলে মরু অঞ্চলের প্রসারণ হয়।

(৫) বন্যা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধি (Frequent occurrence of flore and draught) : মৃত্তিকা ক্ষয় পেলে, সেই ক্ষয়জাত দ্রব্যগুলি নদীর খাতে জমলে খাতের উচ্চতা বাড়ে এবং জলবহনের ক্ষমতা কমে। বর্ষাকালে নদীর দুই তীর ছাপিয়ে বন্যা হয়। অপরদিকে পরোক্ষ ভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাবে খরাও হয়। 

(৬) খাল ও নদীতে পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি (Increasing siltation in cannals and rivers ) : নদী, হ্রদ বা জলাশয়ের পলি, বালি, কাদা ইত্যাদি ক্রমাগত জল দ্বারা পরিবাহিত হয়ে নদীগর্ভে জমা হয়ে চড়া গড়ে ওঠে। এই পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ বাধা পায়, গতিপথ পালটে যায়। নৌ-চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। 

(৭) ভূমিধস বৃদ্ধি (Increasing Land slide ) : মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত মৃত্তিকা ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে মৃত্তিক আলগা হয়ে যায়। ফলে সহজেই ভূমিধস হয়ে থাকে। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ষাকালে ভূমিধস বেশি হয়।

 (৮) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি ( Hindrance in economical prosperity & cultural development) : নদীগর্ভে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া, পাহাড়ে উপরিউক্ত প্রভাবগুলি ছাড়াও বায়ুর স্বচ্ছতা হ্রাস, দূষণ, জলের ভূমিধস, বন্যা ও খরার প্রকোপ, মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদি নানান প্রবেশ্যতা হ্রাস, জলের ঘনত্বে পরিবর্তন ইত্যাদি নানান ঘটনার জন্যও মৃত্তিকা ক্ষয় দায়ী। কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নতিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ৬/ মৃত্তিকা সংরক্ষণ কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে করা হয় ?

 ★ : মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ ও সংরক্ষণ (Prevention of উত্তর Soil Erosion & Conservation) : যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে মৃত্তিকাকে ক্ষয় ও অবনমনের হাত থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে রক্ষা করা যায়, তাকেই বলে মৃত্তিকা সংরক্ষণ। • মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ (Methods of Soil Conservation) : 

(১) বৃক্ষরোপণ (Tree Planting) : মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল বৃক্ষরোপণ। যেহেতু উদ্ভিদ তার শিকড়ের দ্বারা মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে, সেই কারণে যদি নতুন বৃক্ষরোপণ করা যায় তাহলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ কমবে। 

(২) ধাপ চাষ (Terrace farming) : ভারতে পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় সিঁড়ির মতো ধাপ কেটে অর্ধচন্দ্রাকার সমতল জমি তৈরি করে সেখানে চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিকে ধাপ চাষ বলা হয়। এর ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ পায়।

 (৩) সমোন্নতি রেখা চাষ (Contour Ploughing) : পার্বত্য উপত্যকার ঢালু জমিতে সমান উচ্চতা বরাবর ঢালের আড়াআড়িভাবে জমি কর্ষণ, বপন ও রোপণ করা হয়। এখানে আবার সমোন্নতি । রেখা বরাবর দীর্ঘাকার উঁচু বাঁধ তৈরি করে ঢালের দিকে ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ পায়। 

(8) ফালি চাষ (Strip Cropping) : এই পদ্ধতিতে উদ্ভিদহীন ঢালু য জমিতে বৃষ্টির গতি ও মাটি ক্ষয় বেশি হওয়ায় ঢালের আড়াআড়ি দিকে চওড়া ফিতের মতো জমি তৈরি করে ক্ষয়রোধী শস্য চাষ করে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা হয়। 

(৫) গালি চাষ (Gully ploughing) : গালি অঞ্চলে যেখানে জল প্রবাহিত হয় সেই প্রবাহপথে আড়াআড়িভাবে পাথর দিয়ে কৃত্রিমভাবে জল ধরে রেখে সেই জল দিয়ে চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা হয়। একে গালি চাষ বলে। সংরক্ষণের পদ্ধতি ধাপ চাষ সামান্নতি রেখা চা ফালি চাষ সেন্টার কেন 

(৬) ঝুম চাষ রোধ: ঝুম চাষের ফলে প্রধানত মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। যদি অবৈজ্ঞানিক প্রথায় এই ঝুম চাষ বন্ধ করা হয়, তাহলে মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ পাবে।

(৭) মালচিং (Mulching) : জমি থেকে ফসল কেটে নেওয়ার পর গাছে যে অংশ মাটিতে পড়ে থাকে, তাকে মাটির আবরণ হিসেবে ব্যবহার করে পরবর্তী চাষ করা হয়। এই আবরণ একদিকে যেমন মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে তেমনি মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ সৃষ্টিতেও সাহায্য করে। 

(৮) শেল্টার বেল্ট (Shelter Belt) : কোনো স্থানে আবহাওয়া গত ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যখন জমির চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়, তখন তাকে শেল্টার বেল্ট বলে। 

(৯) শস্যাবর্তন (Crop Rotation) : একই জমিতে সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসল শস্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় চাষ করলেমৃত্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে ও মাটি ক্ষয়ের হাত থেকেও রক্ষ পায়।

 (১০) নদীপাড়ে বাঁধ নির্মাণ (Dam Construction) : নদীর পারে বা সমুদ্র উপকূলে বাঁধ নির্মাণ করলে বা কংক্রিট দিয়ে নদীর পা বাঁধলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়। 

(১১) নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ (Control Overgrazing) : ভূমির ওপ তৃণের আচ্ছাদন থাকলে মৃত্তিকাক্ষয় কম হয়। তাই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় পশুচারণ করলে মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করা যায়। এ ছাড়াও মালচিং প্রক্রিয়ার চাষাবাদ করা, সঠিক নির্ধারণ করা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা ইত্যাদির মাধ্যমে মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ করা হয়।

No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();