ভারতের জলসম্পদ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চোম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 5th chapter geography questions answers| 2024 WB board geography suggetion| ভূগোল সহায়িকা|| - SM Textbook

Fresh Topics

Friday, October 6, 2023

ভারতের জলসম্পদ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চোম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 5th chapter geography questions answers| 2024 WB board geography suggetion| ভূগোল সহায়িকা||

 ভারতের জলসম্পদ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চোম অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 5th chapter geography questions answers| 2024 WB board geography suggetion| ভূগোল সহায়িকা||



ভারতের জলসম্পদ 

. দু-এক কথায় উত্তর দাও 

১. উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের জলবিভাজিকা কোনটি? 

উত্তর:- বিন্ধ্য পর্বত। 

২. সিন্ধু নদের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়? 

উত্তর:- তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত জলধারা সিন-কাবাব থেকে।

 ৩. সিন্ধু নদের যে-কোনো ২টি উপনদীর নাম লেখো। 

উত্তর:- শতদ্রু/বিপাশা/ইরাবতী/চন্দ্রভাগা/বিতস্তা। 

8. বিতস্তা (ঝিলাম) নদীর তীরে জম্মু ও কাশ্মীরের কোন্ শহর অবস্থিত?

 উত্তর:- শ্রীনগর।

 ৫. ভারতের দীর্ঘতম নদী কোনটি? 

উত্তর:- গঙ্গানদী। 

৬. যমুনা নদীর উৎপত্তি কোন্ হিমবাহ থেকে হয়েছে? 

উত্তর:- যমুনোত্রী হিমবাহ। গঙ্গার ডান তীরের উপনদীর নাম লেখো। 

৭. শোন নদী/যমুনা নাম কী ? 

উত্তর:- পদ্মা নদী। 

৮. টি উপনদীর নাম লেখো। 

উত্তর:- রামগঙ্গা/গোমতী/ঘর্ঘরা/গণ্ডক/কোশী/বুড়িগঙ /মহানন্দা ইত্যাদি। 

৯. উৎপত্তিস্থলে গঙ্গানদীর নাম কী? 

উত্তর:- ভাগীরথী। 

১০. কোন্ দুই নদীর মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত?

 উত্তর:- ভাগীরথী ও অলকানন্দা। 

১১. ভারতে গঙ্গার প্রধান শাখানদী কোনটি? 

উত্তর:- ভাগীরথী—হুগলি।

 ১২. গঙ্গানদীর যে-শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার নাম কী ?

 উত্তর:- পদ্মা নদী। 

 ১৩. কোথায় গঙ্গানদী দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে? 

উত্তর:- মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে। 

১৪. শত্ৰু নদী কোথা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে? 

উত্তর:- শিপকিলা গিরিপথের কাছে।

 ১৫. ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ কোন নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। 

উত্তর:-  শতদ্রু নদী। 

১৬. গঙ্গানদীর ওপর নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের একটি বাঁধের নাম লেখো।

 উত্তর:- ফরাক্কা বাঁধ।

 ১৭. ব্ৰহ্মপুত্র নদ কোন্ নামে ভারতে প্রবেশ করেছে।

 উত্তর:- ডিহং নামে। | 

১৮| ব্রহ্মপুত্র নদ কোন্ ৩টি নদের মিলিত প্রবাহ ? 

 উত্তর :- ডিহং, ডিবং ও লোহিত 

 ১৯. রাজস্থানের একটি নদীর নাম লেখো। 

উত্তর :- লুনি। 

 ২০. একটি অন্তর্বাহিনী নদীর নাম লেখো।

 উত্তর:-  রূপনগর/মেধা / লোকটাক । | 

২১. সিন্ধু কোন্ কোন্ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ?

 উত্তর:- চিনের তিব্বত, পাকিস্তান ও ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর। 

২২. ভারতে জম্মু ও কাশ্মীর অংশে সিন্ধুর সাথে কোন্ কোন্ নদী মিলিত হয়েছে। 

উত্তর :- জাস্কর, সায়ক, গিলগিট, দ্রাস ইত্যাদি। | 

২৩. ব্রক্ষ্মপুত্র নদ কোন্ কোন্ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত? 

উত্তর:- চিনের তিব্বত, ভারতের অসম ও বাংলাদেশ। 

২৪. ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপের নাম লেখো। 

উত্তর:- মাজুলী দ্বীপ 

২৫.  নর্মদা নদীতে অবস্থিত একটি জলপ্রপাতের নাম লেখো। উত্তর :- ধুয়াধর জলপ্রপাত। 

২৬. ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি? 

উত্তর:- গেরসোপ্পা জলপ্রপাত। 

২৭. মহানদীর ওপর কোন্ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ? 

উত্তর:- হীরাকুঁদ বাঁধ। 

২৮.দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী কোনটি?

উত্তর  :- গোদাবরী। 

২৯. দক্ষিণ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী কোনটি? 

উত্তর :-কৃষ্ণা নদী ।

৩০. নদীতে নির্মিত জলাধারের নাম লেখো। 

উত্তর:- নাগার্জুন সাগর জলাধার।

৩১. কাবেরী হয়েছে? নদী কোন্ কোন্ ভারতে মধ্য দিয়ে কান প্রবাহিত

 উত্তর:- কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু। 

৩২. তিরুচিরাপল্লী কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত? 

উত্তর:- কাবেরী নদী। 

৩৩. কাবেরী  নদীর একটি জলপ্রপাতের নাম লেখো। 

উত্তর:- শিবসমুদ্রম

৩৪. ভারতের দুই পশ্চিমবাহিনী নদীর নাম লেখো। 

উত্তর:-  নর্মদা ও তাপ্তি। 

৩৫ .গঙ্গার মূল শাখা বাংলাদেশের কোন্ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে? 

উত্তর:- পদ্মার সঙ্গে।

 ৩৬ .কুমায়ুন হিমালয়ের ২টি হ্রদ বা তালের নাম লেখো।

 উত্তর:- নৈনিতাল/ভীমতাল/সাততাল/পুনাতাল। 

৩৭. জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের দুটি হ্রদের নাম লেখো। 

উত্তরা:- ডাল, উলার। 

 ৩৮. উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি বিখ্যাত হ্রদের নাম লেখো।  

উত্তর:- লোকটাক হ্রদ। 

৩৯. ভারতের মরু অঞ্চলের দুটি হ্রদের নাম লেখো।

 উত্তর :- সম্বর, পুষ্কর।

 ৪০. রাজস্থান অঞ্চলের লবণাক্ত জলের হ্রদকে কী বলে? 

উত্তর :- পায়া। 

৪১. মালাবার উপকূলের উপহ্রদগুলিকে কী বলে?

 উত্তর: কয়াল।

 ৪২. ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ কোনটি? 

উত্তর : ভেম্বানাদ কয়াল।

 ৪৩. বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র কী নামে পরিচিত?

 উত্তর :- যমুনা।

 ৪৪. এলাহাবাদ কোন্ কোন্ নদীর সঙ্গমস্থল ? 

উত্তর :- গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী। 


৪৫ . শ্রীনগর কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত ? 

উত্তর:-  ঝিলাম। 


৪৭. বৃক্ষরূপী জলনির্গমন প্রণালীর একটি উদাহরণ দাও।

 উত্তর :-গোদাবরী নদীর অববাহিকা। 

৪৮. কোন নদীর অববাহিকার আয়তন ভারতে সবচেয়ে বেশি? 

উত্তর:- গঙ্গানদী। 

৪৯. কোন্ নদী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত তৈরি করেছে?

 উত্তরা:- বিতস্তা (কিলাম)। 

৫০. বাংলাদেশে কোন্ কোন্ নদীর মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে পরিচিত?. 

উত্তর:- পদ্মা ও যমুনা। 

৫১. ভারতের কোন্ নদী কর্কটক্রান্তি রেখাকে দু-বার অতিক্রম করেছে? 

উত্তর:- মাহি ও সুবর্ণরেখা। 

৫২. নর্মদা নদী কোন্ কোন্ পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে?

 উত্তর:- বিন্ধ্য ও সাতপুরা। 

৫৩. ভারতের বৃহত্তম লবণাক্ত হ্রদের নাম লেখো। 

উত্তর:- সম্বর হ্রদ। 

৫৪. ভারতে সেচ প্লাবিত জমিতে কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে? 

উত্তর:- পাঞ্জাব। 

৫৫. জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ কোথায় বেশি প্রচলিত? 

উত্তর:- দক্ষিণ ভারতে।

 ৫৫ . জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ কোথায় বেশি প্রচলিত?

উত্তর :- দক্ষিণ ভারতে।

৫৬.  খাম্বাত উপসাগরে এসে মিশেছে এমন দুটি নদীর নাম লেখো। 

উত্তর:-  নর্মদা ও তাপি বা তাপ্তি নদী। 

৫৭. কলকাতায় অবস্থিত একটি লেকের নাম লেখো।

 উত্তর:- রবীন্দ্র সরোবর লেক। 

৫৮. ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কোনটি?

 উত্তর:-  ভাকুরা-নাগাল ।

৫৯. ভারতের উচ্চতম বাঁধটির নাম কি ?

উত্তর:-  ভাকুরা-নাঙ্গাল।

 ৬০. শতদ্রু কোন্ গিরিপথের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। 

উত্তর:- শিপকিলা।

প্রশ্ন ১ | গঙ্গানদীর উৎস ও মোহানার নাম লেখো। 

উত্তর : "গোমুখ' নামক তুষার গুহা। গঙ্গানদীর উৎসস্থল হল—গঙ্গোত্রী হিমবাহের • গঙ্গানদীর মোহানা হল — সাগর দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে। গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা। 

প্রশ্ন | ২ | কোন্ দুটি নদী এবং কোথায় মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম হয়েছে ?★ 

উত্তর : ভাগীরথী ও অলকানন্দা দেবপ্রয়াগে মিলিত হয়ে গঙ্গানদীর সৃষ্টি করেছে। 

প্রশ্ন ৩. গঙ্গানদীর বাম তীরের দুটি উপনদীর নাম লেখো। 

উত্তর : গঙ্গানদীর বামতীরের দুটি উপনদীর নাম হল- গোমতী/ধর্মরা/গণ্ডক/কোণী/বুড়িগগুক। 

প্রশ্ন । ৪ | গঙ্গার ডান তীরের দুটি উপনদীর নাম লেখো। 

উত্তর : গঙ্গার ডান তীরের দুটি উপনদী হল- যমুনা / শোন। 

প্রশ্ন ৫. ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু নদের উপনদীগুলির নাম লেখো। 

উত্তর : শতদ্রু (শতলজ), বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রাভি), চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা (ঝিলাম)। 

প্রশ্ন ৬. গঙ্গার দুটি শাখানদীর নাম লেখো।

 উত্তর : গঙ্গার দুটি শাখানদী হল—ভাগীরথী-হুগলি এবং পদ্মা। 

প্রশ্ন | ৭ | ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থলের নাম লেখো। 

উত্তর : বহুপুর নদের উৎপত্তিস্থল-তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ। ব্রহ্মপুত্র নদের পতনস্থল - বঙ্গোপসাগর। মানস 

প্রশ্ন | ৮ | ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদীর নাম লেখো। কোন্ কোন্ নদীর মিলিত প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র? *

 উত্তর : ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদী হল-সুবর্ণসিড়ি/ভিস্তা/ তোর্সা/মানস/ধানসিড়ি সঙ্কোশ। • নিহং, দিবং ও লোহিত নদীর মিলিত প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র।

প্রশ্ন ১ ৬| ভারতের প্রধান জলবিভাজিকাগুলির নাম লেখো।, 

উত্তর : ভারতের দুটি প্রধান জলবিভাজিকা হল বিন্ধ্য ও পশ্চিমঘাট পর্বত এবং উত্তরের হিমালয় পর্বত।

 প্রশ্ন ১০. রাজস্থানের প্রধান নদী কী? এর উৎপত্তি পর্ব পতনস্থল কোথায়? 

উত্তর : রাজস্থানের প্রধান নদী হল লুনি নদী। উৎপত্তি আজমেড়ের আন্নাসাগর হ্রদ। পতনস্থল— কচ্ছের রণ। লুনি নদী 

প্রশ্ন ১১| অন্তর্বাহিনী নদী কাকে বলে ?★ 

উত্তর : যে-সমস্ত নদীর প্রবাহপথ কোনো দেশ বা মহাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ—অর্থাৎ যেসব নদী স্থলভাগের বাইরে কোনে সাগর বা জলভাগে না পড়ে স্থলভাগের মধ্যেই কোনো হ্রদ বা | জলাশয়ে পতিত হয় কিংবা স্থলভাগেই বিলীন হয়ে যায়, সেইসা নদীকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। উদাহরণ—ইম্ফল, ঘাঘর ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ১২ | উত্তর ভারতের এবং দক্ষিণ ভারতের তিনটি করে। নদীর নাম করো।

 উত্তর : উত্তর ভারতের তিনটি উল্লেখযোগ্য নদী হল- শ সিন্ধু এবং ব্রহ্মপুত্র। দক্ষিণ ভারতের তিনটি উল্লেখযোগ্য হল— গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী। 

প্রশ্ন | ১৩ | ভারতের ২টি পশ্চিমবাহিনী ও ২টি পূর্ববাহিনী নদী নাম লেখো। ★

 উত্তর : ভারতের ২টি পশ্চিমবাহিনী নদী হল—নর্মদা / তাত্ত্বি সবরমতী / মাহী এবং ২টি পূর্ববাহিনী নদী হল মহানদী / গোদাবরী কুরা / কাবেরী। 

প্রশ্ন ১৪ | গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল ও মোহানা কোথায়। 

উত্তর :- গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল-পশ্চিম : | পর্বতমালার বিম্বক পাহাড়। • পতনস্থল – ওড়িশার কটকো কাছে বঙ্গোপসাগরে।

 প্রশ্ন । ১৫ | নর্মদা নদীর উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থলের লেখো। 

উত্তর : নর্মদা নদীর উৎপত্তিস্থল – মহাকাল পর্বতের অমরকন্ট পতনস্থল-ব্রোচের কাছে কাম্বে বা খাম্বাত উপসাগরে।

১৬/ উত্তর ভারতের নদনদীগুলির নদীখাতের ঢাল সাপুর্ণ নয় কেন?

 উত্তর : উত্তর ভারতের নদনদীগুলি অনেক ক্ষেত্রেই পর্বতকে পড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে নিম্নভূমিতে অবতরণ করেছে, তাই। দের উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদীখাতের ঢাল সামসোপূর্ণ না। তা ছাড়া উত্তর ভারতের নদীগুলি বয়সে নবীন, তাই এইসব স্বীগুলোর নদীখাতের ঢাল সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

 প্রশ্ন ১৭. যমুনা নদী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তর : যমুনা নদী হল গঙ্গার প্রধান উপনদী। যমুনা কুমায়ুন হিমালয়ের যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার প্রায় সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সঙ্গে ডান তীরস্থ উপনদী হিসেবে মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০০ কিমি। চম্বল, সিন্ধু, কেন হল এর ডান তীরস্থ উপনদীসমূহ। যমুনা নদী নেপাল সোন বেলেগাপসাগর

 প্রশ্ন ১৮ | গঙ্গার প্রবাহপথে সৃষ্টি হওয়া কতকগুলি শহরের। নাম লেখো। 

উত্তর : গঙ্গার প্রবাহপথে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন শহর : উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতিতে গঙ্গার উভয় তীরে প্রাচীনকাল থেকেই বহু জনপদ গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, মুক্তোর, ভাগলপুর, নবদ্বীপ ও কলকাতা উল্লেখযোগ্য। যমুনার তীরের প্রধান শহরগুলি হল—দিল্লি, মথুরা । 

প্রশ্ন ১৯ | উত্তর ভারতের নদনদীগুলি দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মতো জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী নয় কেন? 

উত্তর : উত্তর ভারতের নদনদীগুলি উচ্চপ্রবাহ ছাড়া মন্দস্রোতা হওয়ায় সমভূমি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুপযুক্ত। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে সুবিধাজনক। উত্তর ভারতের নদনদীগুলির উৎস অঞ্চল অপেক্ষাকৃত দুর্গম এবং লোকালয় থেকে বহু দূরে অবস্থিত হওয়ার জন্যও উত্তর ভারতের নদনদীগুলিকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগানো যায়না। 

প্রশ্ন ২০ | ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী ? এটি কোন্ নদীর গতিপথে অবস্থিত?★ |

 উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম হল গেরসোপ্পা জলপ্রপাত বা মহাত্মা গান্ধি জলপ্রপাত বা যোগ জলপ্রপাত (JogFalls, উচ্চতা ২৭৫ মিটার)। এই জলপ্রপাতটি পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল থেকে উৎপন্ন হওয়া সরাবতী নদীর গতিপথে অবস্থিত। যোগ জলপ্রপাত 

প্রশ্ন ২১ | ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে কেন? 

উত্তর : ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে, কারণ : (১) পূর্ববাহিনী নদীগুলোর মোহানায় স্রোতের বেগ কম, তাই পলিসওয়ের পরিমাণ বেশি হয়। (২) পূর্ববাহিনী নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই সমস্ত নদীর জলে অবক্ষেপণযোগ্য পলির পরিমাণ বেশি। (৩) পূর্ববাহিনী নদীগুলির মোহানার গভীরতা কম হওয়ায় তুলনামূলকভাবে অগভীর বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন নদীর প্রচুর পলিসওয়ের ফলে, বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়া ভারতের পূর্ববাহিনী নদীগুলি (যেমন: গঙ্গা, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, মহানদী প্রভৃতি) নিজেদের মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। 

প্রশ্ন ২২ | দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন ?*

 উত্তর : দক্ষিণ ভারতের ভূমির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী। 

প্রশ্ন ২৩ | ভারতের বৃহত্তম নদী-দ্বীপের নাম ও অবস্থান উল্লেখ করো।★ 

উত্তর : ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপের নাম হল-ব্রহ্মপুত্র নদীর মাজুলি দ্বীপ। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের জোরহাট জেলায় অবস্থিত।। 

প্রশ্ন ২৪ অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী কাকে বলে?

 উত্তর : নদী সাধারণত ভূপৃষ্ঠ বরাবর প্রবাহিত হয়। কিন্তু চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে যেহেতু সচ্ছিদ্রতা বা প্রবেশ্যতা বেশি সেই কারণে নদী ভূপৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হতে হতে হঠাৎই ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই ধরনের নদীকে বলা হয় অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী। চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল পেরিয়ে এই ধরনের নদী পুনরায় ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করে। যেমন- অন্ধ্রপ্রদেশের গোস্থানী নদী।

 প্রশ্ন ২৫ | ভারতের এমন যে-কোনো দুটি নদীর নাম লেখো যার গতিপথে জলপ্রপাত আছে।

 উত্তর: নর্মদা নদী (ধুঁয়াধর জলপ্রপাত), কাবেরী নদী (শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত।

 প্রশ্ন ২৬। খাম্বাত উপসাগরে এবং বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে—এমন দুটি করে নদীর নাম লেখো। 

উত্তর : খাম্বাত উপসাগরে মিশেছে-নর্মদা ও তাপ্তি নদী। বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে কৃয়া / কাবেরী/ গোদাবরী নদী।

প্রশ্ন | ২৭ | অলকানন্দা কোন্ কোন্ নদীর মিলিত প্রবাহ ?

 উত্তর : পিন্ডার, মন্দাকিনী, ধৌলিগঙ্গা ও বিষেণ গঙ্গার মিলিত প্রবাহ হল অলকানন্দা। 

প্রশ্ন ২৮ | হিমালয় থেকে সৃষ্ট নদীগুলি চিরপ্রবাহী হয় কেন? *

 উত্তর : হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি প্রধানত তুষার গলা জলে পুষ্ট বলে সারাবছর তো জল থাকেই এমনকি নদীগুলি বর্ষাকালে বর্ষার জলে পুষ্ট বলেও সারা বছরব্যাপী নদীগুলিতে জলের প্রবাহ বজায় থাকে। 

প্রশ্ন । ২৯ | দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা কেন? * 

উত্তর : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলাস্তর দ্বারা গঠিত প্রাচীন ও বন্ধুর মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত। উঁচুনীচু বন্ধুর ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ও নদীর ঢাল অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এই দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা। 

প্রশ্ন । ৩০ | দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয় কেন? ★

 উত্তর: দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি কেবলমাত্র বর্ষার জলে পুষ্ট। হিমবাহ বা বরফগলা জল এরা পায় না বলে নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না। তাই এই নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয়। 

প্রশ্ন ৩১ | উত্তর ভারতের নদীগুলিকে পূর্ববর্তী নদী বলা হয় কেন? 

উত্তর : উত্তর ভারতের হিমালয়ের উত্থানের আগে থেকেই এখানের নদীগুলির অস্তিত্ব ছিল। হিমালয় উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলি গতি পরিবর্তন করে। তাই উত্তর ভারতের নদীগুলিকে পূর্ববর্তী নদী বলা হয়। 

প্রশ্ন । ৩২ | দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিকে অনুগামী নদী বলা হয়। কেন ?

 উত্তর : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি ভূমির প্রাথমিক ঢাল অনুযায়ী প্রবাহিত হয় বলে, এই নদীগুলিকে অনুগামী নদী বলে। 

প্রশ্ন ৩৩| শুনি নদী সম্পর্কে যা জান লেখো। 

উত্তর : রাজস্থানে অবস্থিত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৩০ কিমি। আনাসাগর হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কচ্ছের রণ অঞ্চলে পড়েছে। 

প্রশ্ন ৩৪ | ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের দুটি করে উপহ্রদের নাম লেখো।

উত্তর : ভারতের পূর্ব উপকূলের দুটি হ্রদ হল – চিন্তা ও পুলিকট এবং পশ্চিম উপকূলের দুটি উপহ্রদ হল ভেম্বানাদ ও অষ্টমুদি। 

প্রশ্ন ৩৫ | ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুটি মিষ্টি জলের হ্রদের নাম লেখো। * 

উত্তর : ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুটি মিষ্টি জলের হ্রদ হলো ডাল ও উলার। 

প্রশ্ন ৩৬ | ভারতের কয়েকটি লবণাক্ত হ্রদের নাম লেখো। | 

উত্তর : ভারতের কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ হল -- রাজস্থানের সম্বর, পাচভদ্র, দিদওয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক অঞ্চলের প্যাংগং ও সোমোরারি। 

প্রশ্ন ৩৭।  ভারতের বৃহত্তম এবং ভারতের উচ্চতম হ্রদের নাম লেখ ?

উত্তর : ভারতের বৃহত্তম হ্রদ-উলার হ্রদ। ভারতের উচ্চ হ্রদ—জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক অঞ্চলের প্যাংগং হ্রদ। 

প্রশ্ন ৩৮ | কয়াল ও তাল কী? 

উত্তর : দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলের হ্রদগুলোকে বল হয় কয়াল। যেমন—ভেম্বানাদ, অষ্টমুদি কয়াল। • কুমায়ুন হিমালয়ের হ্রদগুলিকে বলা হয় তাল। যেমন- সাততা ভীমতাল, পুনাতাল ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ৩৯ | গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত একটি করে শহরের নাম লেখো। 

উত্তর : গঙ্গানদী-হরিয়ার, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর। • ব্রহ্মপুত্র নদ ডিব্ৰুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি, ধুবড়ি। • সিন্ধু নদ-লে।

 প্রশ্ন ৪০ | মহানদী সম্পর্কে যা জান লেখো। 

উত্তর : মহানদী (দৈর্ঘ্য ৮৫৭ কিমি) : মহানদী ছত্তিশগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। হাঁসদা, মান্দ, ইব প্রভৃতি হল | মহানদীর উল্লেখযোগ্য উপনদী। মহানদীর বদ্বীপে অবস্থিত কটক একটি উল্লেখযোগ্য শহর ও শিল্পকেন্দ্র। 

প্রশ্ন ৪১ | তাপ্তি নদীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 

উত্তর : তাপ্তি নদী (দৈর্ঘ্য ৭২৫ কিমি) : তাপ্তি নদীটি মহাদের পর্বতের মূলতাই-এর কাছে প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকা পার হয়ে সুরাটের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে। তাপ্তির প্রধান উপনদী পূর্ণা। নদী পরিকল্পনা কাকে বলে?* 

প্রশ্ন ৪২ | বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে ?

উত্তর : যে পরিকল্পনার সাহায্যে কোনো নদী উপত্যকার অধিবাসীদের সর্বাঙ্গীণ আর্থসামাজিক বিকাশের জন্য নদীর ওপা বাঁধ দিয়ে ও সংলগ্ন অঞ্চলে জলাশয় নির্মাণ করে নদী উপত্যকায় সেতুবন্ধন, বন্যা নিয়ণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ, মৎস্য চাষ প্রকল্প প্রভৃতি বহুমুখী উদ্দেশ্যসাধন করা হয়, তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা' বলে। উদাহরণ – দামোদর নদী পরিকল্পনা, ভারা-নাঙ্গাল নদী পরিকল্পনা।

৪৩. বহুমুখী নদী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ?

উত্তর : বহুমুখী নদী পরিকল্পনায় নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে জলাশয় বা কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদ্দেশ্যসাধন করা হয়। যেমন- (১) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, (২) জলসেচ করা, (৩) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, (৪) মাছ চাষ, (৫) পানীয় জল সরবরাহ, (৬) ভূমিক্ষয় নিবারণ ও ভূমি সংরক্ষণ, (৭) নদীর ওপর সেতুবন্ধন, (৮) পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪৪ | কোন্ কোন্ রাজ্যে খালের মাধ্যমে জলসেচ বেশি হয়? 

উত্তর : ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নিত্যবহ খালের সাহায্যে এবং মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে প্লাবন খালের সাহায্যে। জলসেচ করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল–দু-ধরনের খালের সাহায্যেই জলসেচ করা হয়ে থাকে।

 প্রশ্ন| ৪৫ | কোন্ কোন্ রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়? 

উত্তর : উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচের প্রচলন বেশি দেখা যায়। 

প্রশ্ন | ৪৬ | ভারতে কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়? 

উত্তর :- যেসব পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়, যথা— (১) কূপ ও নলকূপ, (২) সেচখাল : অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে প্রধানত তিনটি এবং (৩) পুকুর ও জলাশয়। তবে কোনো স্থানের ভূপ্রকৃতি, শিলার গঠন, ভৌমজলের অবস্থান, বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি প্রভৃতি কারণের ওপর সেই স্থানের জলসেচ ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ভর করে।। 

প্রশ্ন | ৪৭ | উত্তর ভারতের নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে গ্রীষ্মকালে জল তেমন থাকে না কেন ? ★

 উত্তর : উত্তর ভারতের নদনদীগুলি প্রধানত হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহগলা জলে পুষ্ট হয় বলে এই সমস্ত নদনদীতে সারাবছরই জল থাকে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলি কোনো হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়নি এবং এরা বৃষ্টির জলে পুষ্ট, তাই বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এইসব নদীতে জল প্রায় থাকে না বললেই চলে। 

প্রশ্ন ৪৮ | দক্ষিণ ভারত অপেক্ষা উত্তর ভারতের নদীগুলি অধিক গতিপরিবর্তন করে কেন? 

উত্তর : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি কঠিন শিলাস্তর (গ্রানাইট ও নিস) দ্বারা গঠিত প্রাচীন ভূভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে নদীতে ক্ষয় কাজ কম হয়। ফলে নদীগুলি গতি পরিবর্তন করে না । কিন্তু উত্তর ভারতের নদীগুলি পাললিক শিলাস্তর ও পলিমাটি গঠিত সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে প্রায়শই গতি পরিবর্তন করে। অসংখ্য মিয়েন্ডার ও অশ্বক্ষুরাকৃতি এদের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, উত্তর ভারতের নদীগুলি তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে। 

প্রশ্ন ৪৯ | ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী নদী পরিকল্পনার নাম লেখো। ★

 উত্তর : ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল—(১) দামোদর এবং এর কয়েকটি উপনদীর ওপর রূপায়িত দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনা (২) শতদ্রু নদীর ওপর ভাক্রা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা এবং (৩) মহানদীর ওপর হিরাকুঁদ পরিকল্পনা। 

প্রশ্ন ৫০ | বৃষ্টির জল সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য কী কী ? মো.প. [১৮] 

উত্তর : বৃষ্টির জল সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য হল—(১) বর্ষায় নদী, নালা, পুকুর, জলাশয়ের পুষ্ট জলের পরিমাণ বাড়িয়ে অন্য = { ঋতুর জন্য জল সংরক্ষণ এবং (২) ভৌমজলের ভাণ্ডার বৃদ্ধি।

A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো 

প্রশ্ন ১ ব্রহ্মপুত্র নদ (Brahmaputra River) সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর :  উৎস ও প্রবাহপথ : (১) তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে। (২) তিব্বতে সাংপো নামে পরিচিত এই নদীটি হিমালয়ের সমান্তরালে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রবাহিত হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের পূর্বে হিমালয়ের গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে দিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে। (৩) সাদিয়ার কাছে দিহং নদীটি, ডিবং ও লোহিত-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র | নামে আসাম উপত্যকার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবাহিনী হয়েছে। সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত এই ৭৫০ কিলোমিটার গতিপথে ব্রহ্মপুত্র মোটামুটি সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। (৪) ধুবড়ির কিছুদূরে দক্ষিণবাহিনী হয়ে ব্রষ্মপুত্র নদ যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং (৫) পরিশেষে গঙ্গার মূলশাখা পদ্মার সঙ্গে মিলে বঙ্গোপসাগরে ব্রহ্মপুত্র নদ পড়েছে। 

• উপনদী : প্রধান উপনদীগুলি হল—সুবর্ণসিড়ি, তিস্তা, তোর্সা, বরাক, কামেং, মানস, বুড়ি-দিহাং, দিসাং, কপিলি ও ধানসিড়ি।

 • তীরবর্তী শহর : ডিব্ৰুগড়, তেজপুর, গুয়াহাটি হল ব্রষ্মপুত্রের তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর।

•বৈশিষ্ট্য: এই নদী উপত্যকার ঢাল অত্যন্ত বাহিত বালি ও পলি জমে ব্রহ্মপুত্রের নদীগর্ভে ভরাট হরো বহু চরের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের একটি চর হল মাজুলী দ্বীপ, যাকে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী চর বলা হয়।

 প্রশ্ন । ২ । সিন্ধু নদ (Indus River) সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী সিন-কা-বা নামে জলাধার থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, পরে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে। এরপর সিন্ধু নদ নাঙ্গা পর্বতের উত্তর প্রান্ত ঘুরে কাশ্মীরের সীমানা ত্যাগ করে দক্ষিণ-পশ্চিম বাহিনী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হারে আরব সাগরে পড়েছে। সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৮০ কিমি ও এর মধ্যে ৭০১ কিমি ভারতের অন্তর্গত। সম্পূর্ণ নদীর ৯৩% পাকিস্তানে, ৫% ভারতে ও ২% চিনে অবস্থিত। সিন্ধু নদ আফগানিস্তান পাকিস্তান সিন্ধু ন ") কুনহার সিন্ধু না হও বিপাশা বিতস্তা: চিন আরব সাগর 

উপনদী : শতুদ্র, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা সিদুর প্রধান পাঁচটি উপনদী। এই পাঁচটি নদী অধ্যুষিত ভূমিকে পাঞ্জাব বলে। এই উপনদীগুলি পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। • ভারতে সিন্ধুর কয়েকটি উপনদী হল-গিলগিট, শায়ক, জাস্কার, দ্রাস ইত্যাদি। শতদ্রুর ভাক্রা-নাঙ্গাল জলসেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হিমাচল প্রদেশে শস্য উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন এনেছে।

 • তীরবর্তী শহর বিপাশা নদীর তীরে মানালি, বিতস্তা নদীর তীরে শ্রীনগর, শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত ভাক্ররা হল এখানকার তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর। 

প্রশ্ন ৩ | গঙ্গানদী (Ganges River) সম্পর্কে লেখো।★★ [মা.প. '১৩) 

উত্তর :  উৎস ও প্রবাহপথ : (ভারতের দীর্ঘতম নদী। মোট দৈর্ঘ্য ২,৫২৫ কিমি-এর মধ্যে ২,০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত) ভারতের ‘জাতীয় নদী' পুণ্যতোয়া গঙ্গা হল এই দেশের শ্রেষ্ঠ নদী। গঙ্গা কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার | এবং এই দুই মিলিত স্রোত গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে। গঙ্গা শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অ করেছে। পরে বিহারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পান কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে মুরশিদা জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভ হয়েছে। গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলি নামে দক্ষিণ | পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। হয়েছে 195 ভাগীরথী অলকানন্দা

 • উপনদী গঙ্গার প্রধান উপনদী যমুনা যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে এলাহাবাদ বা প্রয়াগে এসে ডান দিক থেকে গঙ্গায় পতিত হয়েছে, তাই এটি গঙ্গার ডানতীরের উপনদী। চম্বল, বেতোয়া, কেন প্রভৃতি যমুনার উল্লেখযোগ্য উপনদী, এরা দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। গঙ্গার ডান তীরের উপনদীগুলির মধ্যে শোন নদীটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, এটিও দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ব্রাহ্মণী, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই প্রভৃতি উপনদীগুলি ভাগীরথী-হুগলি নদীর (গঙ্গার একমাত্র শাখানদী) দক্ষিণ তীরে মিলিত হয়েছে। গঙ্গার বাম তীরের উপনদীগুলির মধ্যে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্থরা, গণ্ডক, মহানন্দা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার বদ্বীপটি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম। 

• তীরবর্তী শহর গঙ্গার তীরে কলকাতা, পাটনা, বারাণসী, এলাহাবাদ, কানপুর, হরিদ্বার প্রভৃতি বিখ্যাত শহর ও তীর্থকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে। • বৈশিষ্ট্য : গঙ্গানদীর গতিপথে উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি স্পষ্ট বোঝা যায় বলে গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে। 

প্রশ্ন ৪) গোদাবরী নদী (Godavari River) সম্পর্কে লেখো। *

 উত্তর : উৎস ও প্রবাহপথ : গোদাবরী নদী দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৬৫ কিলোমিটার। গোদাবরী নদীটি মহারাষ্ট্রের নাসিকের নিকট পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অন্তর্গত ত্রিম্বক পাহাড়ের ১৬০০ মি উচ্চতাযুক্ত ব্রহ্মগিরি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর | পর নদীটি পূর্বমুখী হয়ে মহারাষ্ট্র, তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা | ও পরিশেষে অন্ধ্রপ্রদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে 

• উপনদী : বামতীরের উপনদীগুলি হল ওয়েঙ্গা, পেনগঙ্গা, পড়েছে। ওয়ার্ধা, পূর্ণা, প্রংহিতা, ইন্দ্রাবতী এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল মন্ত্রীরা, সিন্ধু, কণা ইত্যাদি। প্রংহিতা নদীটি পেনগঙ্গা, ওয়ার্থাভারতে ও ওয়েনগঙ্গার মিলিত প্রবাহ। অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী নদীটি | তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। শাখানদী তিনটি | হল-গৌতমী, বশিষ্ট, বৈনতেয়। গোদাবরী নদী নিজামাবাদে করিমনগর গোদাবরী নদী, বঙ্গোপসাগর 

• তীরবর্তী শহর গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক, নিজামাবাদ, আব্দা ইত্যাদি শহর গড়ে উঠেছে।

 • বৈশিষ্ট্য : এটি দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী বলে একে দক্ষিণ ভারতের গ্যা' অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং গোদাবরী নদী তার মোহনায় পলি সঞ্জয় করে বিস্তীর্ণ বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। 

প্রশ্ন ৫ | কাবেরী নদী (Cauveri River) সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : উৎস ও প্রবাহপথ : পশ্চিমঘাট পর্বতের (কর্ণাটক রাজ্য) ব্রয়গিরি পর্বতের ১৩৪১ মিটার উঁচু তালাকাবেরী থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাবেরী পত্তনমের নিকট বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদীর মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। অল্প প্রদেশ কাবেরী নদী কেরালা মেকুর জলাধার তামিল নাড়ু কাবেরী নদী 

• উপনদী ও শাখানদী : কাবেরী নদীর ডানতীরের উপনদীগুলি নী, সুবর্তী ও করিনা এবং বামতীরের উপনদীগুলি হল অর্কবতী, হেমবতী ও সিমসা। এর শাখানদী হল কালিদাস। 

• তীরবর্তী শহর : কাবেরী নদীর তীরে শ্রীরঙ্গপত্তনম মীর কিচিরাপল্লী, ভাঞ্চার ইত্যাদি শহর গড়ে উঠেছে। কাছে গঙ্গার মতো পবিত্র। এই কারণে অনেকে কাবেরী 

• বৈশিষ্ট্য : (i) কাবেরী নদী দক্ষিণ ভারতের অধিবাসীদের ননীকে দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' বলে। এর দৈর্ঘ্য ৮০৫ কিমি। (ii) কাবেরী নদীর গতিপথে বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায় (যেমন- মুনছানা কাটে, হোগেনাকাল ইত্যাদি) যাদের হল বিখ্যাত।

 প্রশ্ন ৬ | কৃষ্ণা নদী ( Krishna River) সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : উৎস ও প্রবাহপথ : কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য হল প্রায় ১২৯০ কিমি। কৃয়া নদীটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মি. উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এরপর নদীটি পূর্বমুখী হয়ে কাটিক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। কৃয়া নদী তার মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। কুয়া নদী বঙ্গোপসাগর 

উপনদী ও শাখানদী : কৃষ্ণা নদীর প্রবাহপথে এর বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল ভীমা, মুসি এবং ডানতীরস্থ উপনদী হল ঘাটপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা ইত্যাদি। মুনের হল কৃষ্ণা নদীর শাখানদী। 

• তীরবর্তী শহর : কৃয়ানদীর তীরে বিজয়ওয়ারা এবং এর উপনদী মুসির তীরে হায়দরাবাদ অবস্থিত।

 • বৈশিষ্ট্য : কৃষ্ণা নদীতে বাঁধ দিয়ে শ্রীসালেম ও বিখ্যাত নাগার্জুন সাগর ড্যাম তৈরী করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ৭ | নর্মদা নদী। (Narmada River) সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : উৎস ও প্রবাহপথ : ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা হল দীর্ঘতম নদী (দৈর্ঘ্য – ১৩১০ কিমি)। নর্মদা মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে ব্রোচের কাছে খাম্বাত (কাম্বে) উপসাগরে পড়েছে। নর্মদা নদীর মোহানায় ঢাল বেশি থাকার জন্য এখানে কোনো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি।। 

• উপনদী : গ্রস্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদীর উপনদীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। নর্মদা নদীর ডান তীরের প্রধান উপনদী হল হিরণ ও বর্ণা এবং বামতীরের উপনদী হল বাঞ্জার, শাক্কর প্রভৃতি।

 • তীরবর্তী শহর : নর্মদা নদীর তীরে জব্বলপুর, ভারুচ ইত্যাদি শহর অবস্থিত। 

• বৈশিষ্ট্য : গ্রস্ত উপত্যকার কঠিন শিলাস্তর অতিক্রম করার সময় নর্মদা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের নিকট অবস্থিত ধুঁয়াধর জলপ্রপাত হল বিখ্যাত। এই অংশেই বিখ্যাত ‘মার্বেল রক' দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানকার অন্যান্য জলপ্রপাতগুলি হলো—সহস্রধারা, কপিলধারা ইত্যাদি। 

প্রশ্ন | ৮ | বহুমুখী নদী পরিকল্পনা (Multipurpose River Project) বলতে কী বোঝ? এর গুরুত্ব কী?

 উত্তর : যে পরিকল্পনার সাহায্যে কোনো নদী উপত্যকার অধিবাসীদের সর্বাঙ্গীণ আর্থসামাজিক বিকাশের জন্য নদীর ওপর বাঁধ ও জলাশয় নির্মাণ করে নদী উপত্যকায় সেতুবন্ধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জল পরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ, মৎস্যচাষ প্রকল্প প্রভৃতি বহুমুখী উদ্দেশ্যসাধন করা হয়, তাকে ‘বহুমুখী নদী পরিকল্পনা' বলে। 

উদাহরণ : দামোদর নদী পরিকল্পনা।

 বহুমুখী নদী পরিকল্পনার গুরুত্ব : বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদ্দেশ্যসাধন ল করা হয়, যেমন (১) বর্ষাকালে নদীর অতিরিক্ত জলকে নদীসংলগ্ন বিশাল জলাধারে সঞ্চিত করে রেখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দ} (২) জলাধারে সঞ্চিত জলকে ব্যবহার করে খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়। (৩) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা ✉ হয়। (৪) মাছচাষ করা হয়। (৫) পানীয় জলসরবরাহ করা হয়। ✉ (৬) বাঁধ ও জলাশয় সংলগ্ন অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ, রাস্তা নির্মাণ । প্রভৃতির জন্য ভূমিক্ষয় নিবারিত হয় এবং ভূমিসংরক্ষণ হয়। (৭) বহুমুখী নদী পরিকল্পনার অন্তর্গত বাঁধগুলি নদীর ওপর সেতুর কাজ করে। এ ছাড়া (৮) জলাধারসংলগ্ন অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে ওঠে। ভারতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল—(১) ভাক্রা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা, (২) দামোদর উপত্যকা = { পরিকল্পনা, (৩) হীরাকুঁদ পরিকল্পনা, (৪) ময়ুরাক্ষী পরিকল্পনা, = { (৫) কংসাবতী পরিকল্পনা, (৬) নাগার্জুন সাগর পরিকল্পনা, ■ { (৭) ফারাক্কা পরিকল্পনা, (৮) তিস্তা পরিকল্পনা (৯) কোশি পরিকল্পনা,

 প্রশ্ন ৯ প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল বলতে কী বোঝ? = { (১০) তুঙ্গভদ্রা পরিকল্পনা ইত্যাদি।

 উত্তর : [ ২২০ নং পাতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ১১নং প্রশ্নের (১) ও (২) নং অংশের উত্তরটি দ্রষ্টব্য

প্রশ্ন | ১০ | ভারতে সেচখালের বণ্টন সম্পর্কে আলোচনা করো। 

উত্তর : পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের সেচখালগুলির নাম হল— রাজ্য খাল | ১. পশ্চিমবঙ্গ দামোদর খাল, ময়ূরাক্ষী খাল, মেদিনীপুর খাল, ইডেন খাল, হিজলী খাল, পূর্ব দামোদর খাল। পাকিস্তান ২. ওড়িশা ৩. বিহার তালদান্দা খাল, মহানদী খাল । কোশি খাল, গণ্ডক খাল, শোন খাল। ৪. গুজরাট ৫. মহারাষ্ট্র তাপ্তি প্রকল্প, উকাই প্রকল্প। প্রভারা প্রকল্প, মুথা প্রকল্প । ৬. পাঞ্জাব ভারা খাল, উচ্চবারি দোয়াব খাল, শিরহিন্দ খাল, বিস্ত দোয়াব খাল। ৭. উত্তরপ্রদেশ যমুনা বা আগ্রা খাল, সারদা খাল, উচ্চগঙ্গা খাল, নিম্নগঙ্গা খাল। পশ্চিম যমুনা খাল, ভারা খাল, জুই খাল। ইন্দিরাগান্ধি ক্যানেল, বিকানীর খাল, ৮. হরিয়ানা ৯. রাজস্থান ১০. কর্ণাটক ১১. অন্ধ্রপ্রদেশ কয়া বদ্বীপ প্রকল্প, গোদাবরী বদ্বীপ প্রকল্প। ১২. তামিলনাড়ু কাবেরী বদ্বীপ প্রকল্প, মেত্তুর প্রকল্প।

B. কারণ ব্যাখ্যা করো:

 ১ ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কেন?

 উত্তর : ভারতের বিভিন্ন অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গঙ্গা, ি ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, নর্মদা, তাপ্তি, মহানদী, সুবর্ণরেখা, লুনি ইত্যাদি বড়ো এবং অসংখ্য মাঝারি ছোটো ছোটো ি নদী। এই নদীগুলির উৎপত্তি, প্রবাহপথ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যে ভরপুর। সুদূর অতীত কাল থেকেই এই নদনদীগুলি ভারতের জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই নদীগুলির তীরেই গড়ে উঠেছে। অসংখ্য ছোটো-বড়ো শহর, নগর এমনকি সভ্যতা। উর্বর এই নদী অববাহিকাগুলি কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নদীগুলির পরিবহণযোগ্যতা, জলের জোগান, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাতে বহু শিল্পকলকারখানাও গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও দেশের জলসেচ ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পানীয় জলের জোগান ইত্যাদি নানান ক্ষেত্রেও নদনদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এইসকল কারণেই ভারতকে নদীমাতৃক দেশ। বলা হয়।

 প্রশ্ন ২ ব্রহ্মপুত্র নদ তার প্রবাহ পথের বিভিন্ন অংশে কী কী নামে পরিচিত?

 উত্তর : ব্রহ্মপুত্র নদ তার উৎপত্তিস্থল থেকে মোহানা পর্যন্ত গতিপথের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন— (১) তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর পূর্বদিকে নামচাবারওয়া পর্যন্ত, তিব্বতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্রহ্মপুত্রের নাম সাংপো। (২) তিব্বত অতিক্রম করে এই নদী ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিং ও দিহং নামে প্রবাহিত। (৩) এইখানেই ডিবং লোহিত নদী, দিহং-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এরপর অরুণাচল প্রদেশ অতিক্রম করে, সাদিয়া থেকে আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত এই তিনটি নদীর মিলিত পশ্চিমমুখী প্রবাহের নাম হল ব্রহ্মপুত্র। (৪) আসাম অতিক্রম করে বাংলাদেশে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নামে প্রবাহিত হয়েছে। (৫) বাংলাদেশে যমুনা পদ্মনদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে, পদ্মা নামে কিছুটা প্রবাহিত হয়েছে। (৬) পরিশেষে পদ্মা, মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে, মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। 

প্রশ্ন | ৩ | ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতি বছর বন্যা হয় কেন? বা, ব্রষ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন ? 

* উত্তর : ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ হওয়ার কারণ—(১) ব্রহ্মপুত্র ন তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে হিমালয়ের সমাস্তরালে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রবাহিত হয়ে দিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে (২) সাদিয়ার কাছে দিহং দিবং ও লোহিত-এর সঙ্গে মিলিত হে ব্রক্ষ্মপুত্র নামে আসাম উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। (৩) আসাম উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্রের খাতের ঢাল অত্যন্ত কম হওয়া ফলে যুগ যুগ ধরে বহু উপনদীর সজ্জিত বিপুল পরিমাণ পলি বহন করতে করতে ব্রহ্মপুত্র নদীগর্ভ ক্রমশ ভরাট হয়ে অগভীর হয়ে গিয়েছে। (৪) বর্ষাকালে সাংপো | নদীটি যখন তিব্বত থেকে বিপুল পরিমাণে হিমবাহের বরফ গলা জল বহন করে নিয়ে আসে, ওই সময়ে আসাম হয়। ব্রষ্মপুত্রের অগভীর নদীখাত সেই বিপুল পরিমাণ জলরাশিকে ধরে রাখতে পারে না বলে দু-কূল প্লাবিত করে। ফলে প্রতিবছরই ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। উপত্যকাতেও প্রবল বৃষ্টিপাত ব্রহ্মপুত্র নদে বন্যা।

 প্রশ্ন ৪ ভারতের পূর্ববাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়েছে কেন? ★ (মা.প. '১৪/

 উত্তর : ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী তাদের মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, যেমন- গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, মহানদী প্রভৃতি। ভারতের পূর্ববাহিনী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে উঠেছে কারণ – (১) বেশিরভাগ পূর্ববাহিনী নদীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এদের জলে পলির পরিমাণ বেশি। (২) পূর্ববাহিনী নদীগুলির স্রোতের বেগ কম থাকায় এইসব নদীর মোহানায় পলি সময়ের পরিমাণ বেশি হয়। (৩) পূর্ববাহিনী নদীগুলির নদীখাত নরম পলি দ্বারা গঠিত বলে নদীখাতে পলিসওয়ের পরিমাণ পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির তুলনায় অনেক বেশি। (৪) নিম্ন প্রবাহে পূর্ববাহিনী নদীগুলির নদীখাতের ঢাল খুব কম বলে এরা খরস্রোতা নয়, ফলে এদের মোহানায় সহজেই পলি সঞ্চিত হতে পারে। (৫) বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগে তুলনামূলক ভাবে অগভীর এবং মহিসোপান মৃদু ঢাল বিশিষ্ট হওয়ায় এই সাগরে পতিত হওয়া নদীগুলির মোহানায় সহজেই পলিসঞয় ঘটে। 

প্রশ্ন ৫ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন? অথবা, নর্মদা ও তাপ্তি নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন?* [ পর্যদ নমুনা [১৭] [মা.প. [১১] 

উত্তর : ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি, কারণ—(১) বেশিরভাগ পশ্চিমবাহিনী নদীর দৈর্ঘ্য প্রস্থ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এদের জলে পলি কম থাকে। তাপ্তি ও নর্মদা তুলনামূলকভাবে বড়ো নদী হলেও মোহানার কাছে এদের স্রোতের বেগ বেশি হওয়ায় এদের মোহানায় খুব বেশি পরিমাণ পলি সজ্জিত হতে পারে না। (২) পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম হওয়ায় মোট জলের পরিমাণ এবং সঞ্চয়যোগ্য পলির পরিমাণ কম হয়। (৩) পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানা অঞ্চলের গভীরতা বেশি হওয়ায় মোহানায় পলিসঞ্জয় তেমন হয় না। (৪) দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি কঠিন শিলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে, এইসব নদীর জলে পলি, বালি প্রভৃতির পরিমাণ কম, তাই মোহানায় সঞ্চয়ের পরিমাণও কম। এই সমস্ত কারণে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি। 

প্রশ্ন ৬ | আদর্শ নদী (Ideal River) কাকে বলে? গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলা হয় কেন ?* 

উত্তর : উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই (যেমন—উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতি) সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তাকে আদর্শ নদী বলে। গঙ্গাকে একটি আদর্শ নদী বলার কারণ হল—এই নদীর মধ্যে একটি আদর্শ নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই পরিলক্ষিত হয়, যেমন— (১) গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার উচ্চগতি (২) হরিদ্বার থেকে ধূলিয়ান পর্যন্ত অংশে গঙ্গার মধ্যগতি এবং (৩) মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ানের পর থেকে গঙ্গাসাগরের মোহানা পর্যন্ত অংশে গঙ্গার নিম্নগতি দেখা যায়। 

প্রশ্ন ৭ ভারতের একটি গ্রস্ত উপত্যকা মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর নাম লেখো এবং তার গতিপথ বর্ণনা করো।

 উত্তর : ভারতের একটি গ্রস্ত উপত্যকার মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর নাম হল নর্মদা। → নর্মদা নদীর গতিপথ : ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা হল দীর্ঘতম নদী (দৈর্ঘ্য – ১৩১০ কিমি)। নর্মদা মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে ব্রোচের কাছে খাম্বাত (কাম্বে) উপসাগরে পড়েছে। নর্মদা নদীর মোহানায় ঢাল বেশি থাকার জন্য এখানে কোনো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি। গ্রস্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদীর উপনদীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। নর্মদা নদীর ডান তীরের প্রধান উপনদী হল হিরণ ও বর্ণা এবং বামতীরের উপনদী হল বাজার, শাকর প্রভৃতি। মার্বেল রক গ্রস্ত উপত্যকার কঠিন শিলাস্তর অতিক্রম করার সময় নর্মদা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের নিকট অবস্থিত ধুঁয়াধার জলপ্রপাত হল বিখ্যাত। এই অংশেই বিখ্যাত 'মার্বেল রক' দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এখানকার অন্যান্য জলপ্রপাতগুলি হল- সহস্রধারা, কপিলধারা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৮ উত্তর ভারতের নদীগুলিতে প্রায় প্রতিবছরই হয় কেন ?

* উত্তর : উত্তর ভারতের নদীগুলিতে বন্যা হওয়ার কারণগুলি | হল- (১) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বর্ষার প্রাবল্যের জন্য উ ভারতের নদীগুলি বরফগলা জল ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ বৃদ্ধি জল পায়, তাই বর্ষাকালে উত্তর ভারতের অনেক নদীতে দেখা যায়। (২) শীতকালে উত্তর ভারতে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই বা চলে। তাই এইসময় উত্তর ভারতের নদীগুলিতে জলের পরিমাণ র কমে যাওয়ার ফলে নদীর বেগ কমে যায় এবং সময় কাজের দ্ব নদীখাত অগভীর হয়ে পড়ে। ফলে বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলেই উত্তর ভারতের নদীগুলিতে বন্যার সৃষ্টি হয়। 

প্রশ্ন । ৯| দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য নদীগুলি পূর্ববাহিনী হলেও নর্মদা ও তাপ্তি নদী পশ্চিমবাহিনী কেন? 

উত্তর : দাক্ষিণাত্য মালভূমির স্বাভাবিক ঢাল পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে হলেও তাপ্তি এবং নর্মদা নদী দুটি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত | সাতপুরা পর্বতের দু-পাশ (উত্তর ও দক্ষিণ দিক) থেকে উৎপন্ন দুটি গ্রস্ত উপত্যকার অবনত অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে দাক্ষিণাত্য মালভূমির স্বাভাবিক ঢালের (পশ্চিম থেকে পূর্বে চালু ) | বিপরীত দিকে (পূর্ব থেকে পশ্চিমে) প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবাহিনী হয়েছে। পাকিস্তান) শিবপুর ভারতে বারওয়ানি তাপি • গোতিয়া নাসিক আকোনা 

 * ১০ দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে বন্যার প্রকোপ কম কেনো ?

 উত্তর : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে বন্যার প্রকোপ কম কারণ- (১) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি হিমবাহ দ্বারা পুষ্ট না- হওয়ায় এইসব নদীতে সারাবছর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকে না। (২) অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদীতে বর্ষার সময়ে জলের জোগান উত্তর ভারতের নদীগুলির তুলনায় কম থাকে। (৩) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির গতিপথের ঢাল বেশি হওয়ায় সহজেই এইসব নদীগুলি দিয়ে জল প্রবাহিত হয়ে সাগরে চলে যেতে পারে। 

প্রশ্ন ১১ | দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনুকূল কেন? *

 উত্তর : নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি পর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল : (১) খরস্রোতা নদীপ্রবাহ : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি উঁচুনীচু আরে ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এরা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে সুবিধাজনক। 

(২) জলাধার গড়ে তোলার সুবিধা : দাক্ষিণাত্য মালভূমির বেশিরভাগ অংশ অপ্রবেশ্য কঠিন শিলাস্তর দ্বারা গঠিত হওয়ায় নদী উপত্যকার পার্শ্ববর্তী নিম্নভূমিতে জলাধার গড়ে তোলা সহজসাধ্য। হয়েছে। 

(৩) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হার কম : নাতিউচ্চ দাক্ষিণাত্য মালভূমির নদী অববাহিকায় তুষারপাত হয় না এবং এই অঞ্চলে ধস প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হার বেশ কম।

 প্রশ্ন ১২ উত্তর ভারতের নদীগুলি নৌপরিবহণের ও জলসেচের উপযুক্ত কেন এবং দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি নৌপরিবহণের অনুপযুক্ত কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : উত্তর ভারতের নদনদীগুলির বেশিরভাগ অংশ সমতলভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উত্তর ভারতের নদীগুলির নদীখাত চওড়া অথচ উঁচুনীচু নয়, ফলে এইসব নদীগুলি মৃদুস্রোতা। তা ছাড়া উত্তর ভারতের নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট, তাই এই সমস্ত নদীতে সারাবছর যথেষ্ট জল থাকে, এই কারণে উত্তর ভারতের নদনদীগুলি নৌপরিবহণ ও সেচের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলি প্রায়ই উঁচু নীচু মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এরা খরস্রোতা এবং নদীখাত অনাব্য বলে নৌপরিবহণের অনুপযুক্ত। 

প্রশ্ন| ১৩ | মালভূমি অঞ্চলের নদনদীগুলির বৈশিষ্ট্য কী? 

উত্তর : ভারতের মালভূমি অঞ্চলের প্রধান নদনদীগুলি হল-মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া, কাবেরী, নর্মদা, তাপ্তি ইত্যাদি। এই নদীগুলির বৈশিষ্ট্য হল – (১) নদীগুলির কেবলমাত্র বৃষ্টির জলে পুষ্ট ফলে নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয়। (২) নদীগুলির দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে কম। (৩) প্রাচীন শিলাগঠিত মালভূমির ওপর দিয়ে নদীগুলি প্রবাহিত হয় বলে, নদীগুলি খুব একটা দিক পরিবর্তন করে না। (৪) প্রাচীন ভূভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে নদীগুলির স্রোত খুব বেশি তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী। (৫) এই নদীগুলি খরস্রোতা বলে নৌপরিবহণের উপযোগী নয়। (৬) কেবলমাত্র পূর্ববাহিনী নদীতে কোনো বদ্বীপ নেই। বদ্বীপের আয়তন ছোটো। (৭) নদীগুলির গতিপথে অসংখ্য জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায়। (৮) এই নদীগুলিতে নদীর গতিপথ স্পষ্ট নয় বলে, এগুলিকে আদর্শ নদী বলা যায় না। (৯) নদীগুলিতে ক্ষয়ের পরিমাণ কম বলে অববাহিকার ক্ষেত্রমানও কম। (১০) নদীগুলির বেশিরভাগই অনুগামী নদী।

 প্রশ্ন ১৪ কোন্ কোন্ রাজ্যে খালের মাধ্যমে এবং কোন্ কোন্ রাজ্যে কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে জলসেচ বেশি হয়? 

উত্তর : খালের সাহায্যে জলসেচ : ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে নিত্যবহ খালের সাহায্যেএবং মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবে মাবন খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল- দু-ধরনের খালের সাহায্যেই জলসেচ করা হয়ে থাকে। কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অসম প্রভৃতি রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচের প্রচলন বেশি দেখা যায়।

প্রশ্ন ১৫ দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন? ★ ★

 উত্তর : দক্ষিণ ভারতের জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ বেশি প্রচলিত হওয়ার কারণগুলি হল- (১) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পাথুরে ভূমি ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে বৃষ্টির জল মাটির গভীর চলে যেতে পারে না বলে দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পুকুর বা জলাশয় তৈরি করে সহজেই তা থেকে জলসেচ করা হয়। (২) দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে বৃষ্টির জল অপ্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে ভূগর্ভে সঞ্চিত হতে পারে না বললেই চলে, ফলে এখানকার অধিকাংশ অঞ্চলে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা যায় না। (৩) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট বলে বছরের সব সময়ে এগুলিতে জল থাকে না। তা ছাড়া দক্ষিণ ভারতের সর্বত্র নদী প্রবাহিত হয়নি তাই এই অঞ্চলে খালের সাহায্যেও জলসেচ করা যায় না। এইসব কারণে দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত।

 প্রশ্ন ১৬ বহুমুখী নদী পরিকল্পনা থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়? অথবা বহুমুখী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী? ★★ 

উত্তর : বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদ্দেশ্যসাধন করা হয়। যেমন- (১) বর্ষাকালে নদীর অতিরিক্ত জলকে নদীসংলগ্ন বিশাল জলাধারে সন্নিত করে রাখা হয়। এতে একদিকে যেমন প্রবল বর্ষায় বন্যার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অন্যদিকে তেমনি – (2) জলাধারে সঞ্চিত জলকে ব্যবহার করে সংলগ্ন অঞ্চলে সারাবছর ব্যাপী খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয়। (৩) জলাশয়গুলি থেকে সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ছাড়া জলের প্রচন্ড গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। (৪) জলাধারে মাছচাষ করা হয়। (৫) জলাধারের জলকে পরিভূত করে নিকটবর্তী অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। (৬) বাঁধ ও জলাশয় সংলগ্ন অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ, রাস্তা নির্মাণ প্রকৃতির জন্য ভূমিক্ষয় নির্ধারণ হয় এবং ভূমিসংরক্ষণ করা হয়।(৭) বাঁধগুলি নদীর ওপর সেতুর কাজ করে। এ ছাড়া (৮) বিশাল জলাধারসংলগ্ন অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে ওঠে।

 প্রশ্ন ১৭ / ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজন হয় কেন? অথবা ভারতে জলসেচের গুরুত্ব কী কী ?*

 উত্তর : পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল মৌসিনরাম (চেরাপুঞ্জি) ভারতে অবস্থিত হলেও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে কৃষিকাজের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয়, যেমন—– (১) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময়ের অনিশ্চয়তা। (২) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণের অনিশ্চয়তা। (৩) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব। (৪) বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন ও আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের তারতম্য প্রভৃতি, এ ছাড়া (৫) গ্রীষ্মকালে ভারতের নদীগুলিতে জলের অভাব, (৬) ভারতে সেচনির্ভর উচ্চ ফলনশীল শস্য ও রবি শস্যের চাষ (৭) ভারতের বিভিন্ন স্থানে মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতার বিভিন্নতা (৮) বিভিন্ন ফসলের জলের চাহিদার বিভিন্নতা, (১) সীমাবদ্ধ জমির ওপর কৃষির চাপ এবং (১০) একই জমিতে বছরে বহুবার ফলনের ক্ষেত্রে ভারতে জজলসেচের প্রয়োজন হয়। 

প্রশ্ন ১৮| ভারতে ব্যবহৃত জলসেচ পদ্ধতিগুলির বিবরণ দাও।

 উত্তর : ভৌগোলিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশের সেচ সেবিত জমিতে সেচের প্রধান তিনটি মাধ্যম বা পদ্ধতি হল—(১) সেচখাল, (২) কূপ ও নলকূপ, এবং (৩) জলাশয়। নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে জলসেচ পদ্ধতিগুলো দেখানো হল : জলসেচ সেচখাল জলাশয় বা পুকুর প্লাবন খাল নিত্যবহ খাল স্থায়ী জলাশয় অস্থায়ী জলাশয় নলকূপ সাধারণ কুপ বা ইদারা সাধারণ নলকূপ বৈদ্যুতিক নলকূপ

 প্রশ্ন ১৯ | কূপ ও নলকূপের সাহায্যে (Irrigation by wells and tubewells) জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। 

উত্তর : কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি হল- » সুবিধা : (১) এই পদ্ধতি অত্যন্ত সরল ও সুলভ। (২) স্বাধীনভাবে ও প্রয়োজনমতো সেচ করা যায়। (৩) যেখানে নদী/খাল নেই, সেখানে এই পদ্ধতিতে সহজেই জলসেচ করা যায়। (৪) কুপের জলের সঙ্গে যে নাইট্রেট, ক্লোরাইড ও সালাফেট পাওয়া যায় তা চাষের পক্ষে ভালো। (৫) প্রয়োজনমতো জমির নিকটে কৃপ ও নলকূপ খনন করা যায়। (৬) কূপ ও নলকূপ খননের বায় কম, তাই গরিব চাষি কম খরচে এই পদ্ধতিতে জলসেচ করতে পারে। » অসুবিধা: (১) কূপ বা নলকূপের সাহায্যে একসঙ্গে অনেক জমিতে চাষ করা যায় না। (২) গ্রীষ্মকালে প্রায়ই ভুজলস্তর গভীরে নেমে যাওয়ার কারণে জালের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। (৩) দীর্ঘদিনধরে কাজ করার ফলে স্কুপ বা নলকূপগুলি অকেজো হয়ে (৪) অধিক পরিমানে জল তোলার ফলে পার্শ্ববর্তী অ পানীয় জলের সংকট দেখা দেয়। 

প্রশ্ন ২০ জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচের (Tank Irrigation) সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। এ জন্যাশয়ের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা ও *অসুবিধাগুলো লেখো ।

উত্তর :সুবিধা (১) জলাশয় প্রাকৃতিক, তাই নির্মাণের বিপুল নেই। (২) কঠিন শিলার ওপর অবস্থিত খাল এর স্থায়িত্বকাল হয়। (৩) অনেক জলাশয়ে মাছ চাষও হয়। ফলে জলসেচের মা সত্যে খাদ্য ও আর্থিক সংস্থানের সুযোগ বেশি হয়। » 

অসুবিধা : (১) গ্রীষ্মকালে অধিকাংশ জলাশয় শুকিয়ে জলসেচের সমস্যা দেখা দেয়। (২) জলাশয়ে বেশি পলি বারবার সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) জলাশয় থেকে মুহা স্থানে জলসেচে সমস্যা দেখা যায়। 

প্রশ্ন ২১ খালের মাধ্যমে জলসেচের (Canal Irrigation সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো। 

উত্তর : খালের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি হ » সুবিধা : (১) ভারতের অধিকাংশ খালই নিতাবহ শ্রেণির। এ খালে সারাবছর ধরেই জল থাকে বলে, সারাবছর ধরেই এই ঘরে মাধ্যমে জলসেচ করা যায়। (২) নদীবাহিত পলি খালের মাধ্য কৃষিজমিতে যায় বলে, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। (৩) বেশকি খালে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গৃহীত হয় বলে জল সরবরাহ সুলত (৪) খাল নির্মাণের প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও পরবর্তীকালে বা তুলনামূলক ভাবে কম।

 * অসুবিধা (১) খালের অতিরিক্ত জলের প্রবাহ মাঝে হয়ে | বন্যার সৃষ্টি করে। (২) এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জলসেচের ফতে | মাটির অভ্যন্তরীণ লবণ কৈশিক প্রক্রিয়ায় উপরে উঠে আসে। এতে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়। (৩) কেবলমাত্র বৃষ্টিবহুল এব সমভূমি এলাকাতেই এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়।

 প্রশ্ন ২২| ভৌমজল ( Groud Water) বলতে কী বোঝা তাৎপর্য কী? * 

উত্তর : সাধারণভাবে সকল প্রকার জল যা ভূঅভ্যন্তরে পাওয়া যায় তাকেই ভৌমজল বলে। ভৌমজল প্রধানত দূষণমুক্ত সেচের কাজে এটির উপযোগিতা অনস্বীকার্য। খনিজসম্পদে সমৃ ভৌমজল চাষবাস, শিল্প কারখানায়, শক্তি উৎপাদন ও পানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভৌমজল গুৰুত্বপূর্ণ মিষ্টিজলের উৎস। এই ভৌমজ এবং সেচের কাজে এই জলের উপযোগীতা অনস্বীকার্য। ল সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে এই ভৌমজল আহরণ করা যায়। শুষ্ক অনলে এই ভৌমজলের মাধ্যমে সেচকার্য করা হয়ে থাকে। অন্যান প্রাকৃতিক সম্পদের মতো এটি সীমাহীন নয়। তাই কুমার হারে এই ভৌমজল ব্যবহারের ফলে এর ভাণ্ডারটি ধীরে ধীরে। কমে যাচ্ছে। ভারতে ৭০% অঞ্চলেই ভৌমজল এখন সংকট এবং ৩০% অঞ্চলে এটি চরমসংকটে পৌঁছেছে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে ভৌমজলকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার মাধ্যমে ভৌমজলের প্রকৃত সংরক্ষণ সম্ভব। জলীয় বাষ্প বৃষ্টি ও তুষারপাত বাষ্পীভবন পরিশোধন বাষ্পীকরন হ্রদ ও নদী জলতল ভোম জল ভৌমজল । ভৌমজলের তাৎপর্য : খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ ভৌমজল চাষাবা শিল্প কলকারখানা, শক্তি উৎপাদন ও পানীয় হিসেবে ব্যবহৃ হয়।

প্রশ্ন ২৩ | নলকূপের সাহায্যে জলসেচ উত্তর ভারতে অধিক প্রচলিত কেন? ★ 

উত্তর : নলকূপের সাহায্যে জলসেচ উত্তর ভারতে অধিক। প্রচলিত, কারণ— (১) উত্তর ভারতের সিন্ধু ও গঙ্গা অববাহিকায় (পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ) কোমল ও প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তর রয়েছে। (২) এই কোমল ও প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তরে সহজেই গভীর ও অগভীর নলকূপ খনন করা যায়। (৩) এই অঞ্চলে ভৌমজলের অবস্থান ভূপৃষ্টের কাছাকাছি হওয়ায়, গভীর নলকূপ খনন করা সুবিধাজনক। (৪) দক্ষিণ ভারতে কঠিন শিলাস্তর থাকায় নলকূপ খনন অত্যন্ত ব্যায়সাধ্য। 

প্রশ্ন | ২৪ | জল সংরক্ষণ (Water Conservation) কী? জল সংরক্ষণের গুরুত্বগুলি লেখো। ★ 

উত্তর : জল সংরক্ষণ : জল মানুষের জীবন। বর্তমানে মানুষ নানাভাবে জলের অপচয় করছে। এই অপচয় রোধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই নানাভাবে জল সংরক্ষণ করা অত্যন্ত দরকার হয়ে পড়েছে। 

• জল সংরক্ষণের গুরুত্ব : (১) মিষ্টি জল ছাড়া অন্য কোনো জল মানুষের তেমন কোনো কাজে লাগে না। তাই মিষ্টি জল-এর সংরক্ষণ অত্যন্তই গুরুত্বপূর্ণ। (২) প্রাকৃতিক উপায়ে জল সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (৩) প্রাকৃতিক উপায়ে জল সংরক্ষণ করলে খরচ কম হয়। (৪) জল হল সম্পদ। তাই সম্পদ সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (৫) জল সংরক্ষণ করলে একদিকে যেমন চাষের জন্য | সুবিধা হবে, অপর দিকে শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় জল সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে। (৬) বর্তমানে জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে,বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য জলের চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। তাই জলের চাহিদার সমপরিমাণ জোগান দিতে হলে জল সংরক্ষণ করা আবশ্যক। (৭) বাঁধ দিয়ে জল সংরক্ষণ করলে একদিকে যেমন চাষের কাজে লাগে, অপরদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হয়। উপরিউক্ত এইসব কারণেই জল সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।


প্রশ্ন ২৫ | ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাবগুলি সম্বন্ধে ভারতের নদনদীর অববাহিকার আয়তন অনুযায়ী ক্রমবিন্যাস — ১. গঙ্গানদী (২৬.২%), ২. সিন্ধু (১.৮%), ৩. গোদাবরী (৯.৫%), ৪. কৃয়া নদী (৭.৯%), ৫. ব্রহ্মপুত্র (৭.৮%)। লেখো।

 উত্তর : বর্তমানে নানা কাজের জন্য ভৌমজল এত বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন যে, অদুর ভবিষ্যতে পৃথিবীর ভৌমজলের ভাণ্ডার শূন্য হয়ে যাবে। ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাবগুলি হল – (১) জলস্তর নেমে যাবে। যার ফলে কূপ বা নলকূল স্থানে স্থানে শুকিয়ে যাবে। (২) পরিমাণ মতো জল আহরণ করার জন্য কূপ ও নলকূপ আরো গভীরে প্রোথিত করতে হবে, যাতে খরচ বেড়ে যাবে। (৩) ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে যাওয়ায় পৃষ্ট জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢুকবে ফলে পৃষ্ঠীয় জলের পরিমাণ কমবে। (৪) বেশ কয়েকটি স্থানে ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে যাওয়ায় ভূমি বসে যাচ্ছে বা ভূমিধস এর সম্ভাবনা বাড়ছে। (৫) কৃষিতে অতিরিক্ত ভৌমজলের ব্যবহারে জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। (৬) শহরাঞ্চল গুলিতে ভৌমজল চরম সংকটে পৌঁছেছে। কলকাতাতেও ভৌমজলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এইসকল সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য নানান বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে ভৌমজলের ভাণ্ডার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১ | সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস ও গতিপথের বর্ণনা দাও। 

উত্তর : ২০৩, ২০৪ নং পাতার ব্যাখ্যাধর্মী ২ নং এবং ১ নং প্রশ্নের, উৎস ও প্রবাহপথ অংশের উত্তরটি দ্যাখো।

 প্রশ্ন ২ | গঙ্গানদীর উৎস ও গতিপথের বর্ণনা দাও।

 উত্তর : গঙ্গা ভারতের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫২৫ কিমি, এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীতে প্রধানত ৩টি গতি লক্ষ করা যায়, যথা—উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি। এই কারণেই গঙ্গাকে 'আদর্শ নদী' বলা হয়। > গতিপথ-এর বর্ণনা : (ক) গঙ্গার উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ : গঙ্গা কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার (পিন্ডার, মন্দাকিনী, ধৌলিগঙ্গা, ঋষিগঙ্গা ও বিষেণগঙ্গার মিলিত প্রবাহ) সঙ্গে মিলিত হয়েছে। দেবপ্রয়াগের পর থেকে ভাগীরথী ও অলকানন্দার দুই মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে। এরপর শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে গঙ্গা হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অবতরণ করেছে। উৎসস্থল থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গতিপথ গঙ্গার পার্বত্য অবস্থা বা উচ্চগতি সুচিত করে। 

(খ) গল্পার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ হরিদ্বার শহর থেকে বের হয়ে গঙ্গা প্রথমে দক্ষিণমুখী এবং পরবর্তীকালে পূর্বমুখী হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের পূর্বদিক দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং কিছু দূর প্রবাহিত হওয়ার পর মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষপর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার গতিপথ মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ সূচিত করে। গঙ্গার ক্ষীণস্রোতা দ্বিতীয় শাখাটি ভাগীরথী-হুগলিনদী নামে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

 • উপনদী : এই মধ্যগতিতে অবস্থিত গঙ্গার বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল—রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়ীগণ্ডক, কোশি ইত্যাদি এবং ডানতীরস্থ উপনদীগুলি হল-যমুনা ও শোন। 

(গ) নিম্নগতি : পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর গঙ্গানদী মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে এসে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে বিভক্ত হয়েছে। প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। অপর শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার গতিকে বলে নিম্নগতি বা বদ্বীপ অবস্থা। উপনদী : এই অংশে ভাগীরথীর ডানতীরের উপনদীগুলি হল ব্রাক্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী ইত্যাদি। ভাগীরথীর বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল জলঙ্গী, চূর্ণী, মাথাভাঙ্গা ইত্যাদি। ভাগীরথী-হুগলি ও পদ্মা নদীর মধ্যবর্তী বদ্বীপ হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। এর অধিকাংশই বাংলাদেশে অবস্থিত।

 প্রশ্ন । ৩ | দক্ষিণ ভারতের উল্লেখযোগ্য নদনদীর বর্ণনা দাও। 

উত্তর : দক্ষিণ ভারতের নদীগুলোকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—(ক) পূর্ববাহিনী নদী। এবং (খ) পশ্চিমবাহিনী নদী। (ক) পূর্ববাহিনী নদী : গোদাবরী নদী : | ২০৪ নং পাতার ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৪ নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো। কৃষ্ণা নদী : | ২০৫ নং পাতার ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৬ নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো। * কাবেরী নদী : ২০৫ নং পাতার ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৫নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো। 

মহানদী : মহানদী নামে নদীটি মধ্যপ্রদেশের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়ার প্রায় ৪৪২ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে ছত্তিশগড় ও ওড়িশার মধ্য দিয়ে প্রায় ৮৯০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। মহানদীর গতিপথে কতকগুলি ছোটো ছোটো জলপ্রপাত আছে। ব্রাক্ষ্মণী, বৈতরণী, শিবনাথ, মান্ডি, ইব প্রভৃতি হল মহানদীর উপনদী। পলি সঞ্চয় করে মহানদী মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে। মহানদীর শাখানদী হল কাটাজুড়ি, কুশভদ্রা প্রভৃতি। মহানদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্রায়ই বন্যা হয়। (খ) পশ্চিমবাহিনী নদী : 

• নর্মদা নদী : ২০৫নং পাতার ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৭নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো। ← তাপ্তি নদী : তাপ্তি নদীটি মহাদেব পর্বতের মূলতাই নামক স্থানের কাছে উৎপন্ন হয়ে মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে সাতপুরা ও অজন্তা পাহাড়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গিরিখাত ও গ্রস্ত উপত্যকা পার হয়ে সুরাটের কাছে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে। তাপ্তির প্রধান উপনদী পূর্ণা। 

প্রশ্ন ৪ উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য আলোচনা করো। 

: উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক আলোচনা : দক্ষিণ ভারতের নদনদী | এই নদনদীগুলি অপেক্ষাকৃত প্রাচীন। উত্তর ভারতের নদনদী এই নদনদীগুলি অপেক্ষাকৃত নবীন । এই নদনদীগুলি প্রধানত হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ এই নদনদীগুলি কোনো বৃষ্টির জল বা ঝরনার জলে পুষ্ট থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এরা বৃষ্টির জলের সঙ্গে হওয়ায় এরা চিরপ্রবাহী নয়। সঙ্গে বরফগলা জলেও পুষ্ট, তাই এরা চিরপ্রবাহী। হিমালয় অঞ্চলে বর্ষার প্রাবল্যের জন্যে এইসমস্ত দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলির ক্ষেত্রে বন্যার প্রকোপ সীমিত। উত্তর বৈশিষ্ট্য বয়স উৎপত্তি ও জলপ্রবাহ বন্যার তীব্রতা | নদনদী বরফগলা জল ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টির জল পায়, তাই বর্ষাকালে অনেক সময় নদীগুলিতে বন্যা দেখা যায়।নীরব পরিবর্তন নদনদীগুলিকে প্রায়ই এঁকেবেঁকে নদীমাত পরিবর্তন করতে দেখা যায়, তাই এদের উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত উত্তর ভারতের দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির নদীখাতের ঢাল সামগুস্যপূর্ণ। নদীগুলির নদীখাতের ঢাল সামজস্য পূর্ণ নয়। নদনদীগুলির দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। এই নদনদীগুলির বেশিরভাগ অংশ সমতলভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীখাত চওড়া ও গভীর অথচ উঁচুনীচু নয়, ফলে এদের গতিপথে নাব্য নদনদীগুলি নৌ-চলাচলের উপযুক্ত। মাহতা • অপরের বর্ষীদের অবসান ও উৎপাদনের অনুর পরিবেশ দক্ষিণ ভারতের নদনদীর তুলনায় উত্তর ভারতের উত্তর ভারতের নদনদীর লক্ষণ ভাবে নদনদীগুলির দৈর্ঘ্য বেশ ক এই নদনদীগুলি প্রায়ই উঁচুনীচু মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অনেক সময়েই এদের গতিধার জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে, তাই এরা নৌ-চলাচলের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে উত্তর ভারতের অনুপযুক্ত। উত্তর ভারতের প্রায় প্রতিটি সুবিশাল বর্ষীপের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর মোহানায় দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ নদীর মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি হলেও এখানকার বর্ষীপগুলি আয়তনে ছোটো। এ নর্মদা ও কান্তি নদীর মোহানার বর্ষীপ গড়ে ওঠে। এই নদনদীগুলির উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতি স্পষ্ট দেখা। এই নদনদীগুলির এই তিন পর্যায় স্পষ্ট দেখা যায় না, তা যায়। তাই এরা আদর্শ নদীর উদাহরণ। এই নদনদীগুলি তাদের উচ্চপ্রবাহ ছাড়া অন্যত্র। দাতা হওয়ায় সমভূমি অংশে এরা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুপযুক্ত। এই নদনদীগুলি খরস্রোতা হওয়ায় জ পক্ষে সুবিধাজনক।

প্রশ্ন ৫.উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য হ্রদ ও উপদের বিবরণ দাও। 

উত্তর : উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য হ্রদ ও উপহ্রদের বিবরণ : হ্রদের নাম (বৈশিষ্ট্য) অবস্থান (ক) স্বাদু জলের হ্রদ ১. উলার হ্রদ, ডাল হ্রদ জম্মু ও কাশ্মীর ২. কোলের হ্রদ (ভারতের স্বাদু জলের অন্ধ্রপ্রদেশ বৃহত্তম হ্রদ) ৩. লোকটাক হ্রদ (উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর বৃহত্তম হ্রদ) ৪. ভীমতাল, সাততাল, রূপকুণ্ড উত্তরাখণ্ড ৫. চন্দ্রতাল, সুরাজতাল, নাকো, রেণুকা হিমাচল প্রদেশ ৬. সাংমো হ্রদ সিকিম ৭. ভীমতাম হ্রদ তামিলনাড়ু (খ) লবণাক্ত জলের হ্রদ ১. চিলকা (ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ) ওড়িশা ২. ভেম্বানাদ (কেরালার বৃহত্তম হ্রদ) কেরল

হ্রদের নাম (বৈশিষ্ট্য) অবস্থান ৩. পুলিকট অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর সীমান্তে রাজস্থান ৪. সম্বর, পুস্কর, য়োনা, পাচপত্র (ভারতের | বৃহত্তম লবণাক্ত জলের হ্রদ) ৫. প্যাংগং (বিশ্বের উচ্চতম লবণাক্ত জম্মু জলের সোমোরারি, সল্টলেক হ্রদ) লাডাক অঞ্চল কাশ্মীরের ৬. কালিভেলি (উপদ্বীপীয় ভারতের বৃহত্তম জলাভূমি) তামিলনাড়ু (গ) কৃত্রিম হ্রদ ১. পুস্কর হ্রদ ২. ওসমান সাগর, হিমায়ুত সাগর রাজস্থান হায়দরাবাদ ৩. সুখনা হ্রদ পাঞ্জাব।

প্রশ্ন ৬ কী কী কারণে ভারতে কৃষিজমিতে জলসেচের প্রয়োজন হয় ব্যাখ্যা করো। অথবা, ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তার তিনটি কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। অথবা, ভারতে জলসেচের যে-কোনো তিনটি প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। ★★

 [উত্তর : ভারতের কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল : (১) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালি চরিত্র : যদিও ভারতের ৮০% বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সম্পন্ন হয়, তবুও মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় অত্যন্ত অনিশ্চিত, কারণ কোনো বছর এই বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট সময়ের আগে আসে, আবার কোনো বছর নির্দিষ্ট সময়ের পরে আসে। অন্যদিকে মৌসুমি বায়ু কোনো বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রত্যাবর্তন করে, কোনো বছর আবার বেশ পরে। ফলে কোনো কোনো বছর বেশি দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়, কোনো বছর অল্প দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি চরিত্রের জন্য কৃষিজমিতে নিয়মিত এবং স্থায়ীভাবে জল সরবরাহের জন্য জলসেচের একান্ত প্রয়োজন। * মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিপাত যে হবেই, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোনো বছর বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারতে খরা দেখা দেয়, আবার কোনো বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের নানান স্থানে বন্যা হয়। এই জন্য খরার সময় নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে জল সরবরাহ এবং বন্যার জল নিয়ন্ত্রণের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয়। 

(২) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব : ভারতে শীতকাল শুষ্ক হওয়ায় তামিলনাডুর উপকূল এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ ছাড়া শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। । সেইজন্য শীতকালীন রবিশস্যচাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয়। 

(৩) বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন এবং আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের তারতম্য : মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের প্রায় ৮০% বৃষ্টিপাত ঘটলেও ভারতের সর্বত্র একই পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় না। বিশেষত ভারতের শুষ্ক ও অতিঅল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল' (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০ সেমির নীচে) ও 'অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল' (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০-৬০ সেমি)-এর অন্তর্গত রাজস্থান, উত্তর-পশ্চিম কাশ্মীর, পূর্ব ও পশ্চিম হরিয়ানা, কচ্ছের রণ অঞ্চল, পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যভাগে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ায় এইসব অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য জলসেচ অবশ্য প্রয়োজনীয়।

 (৪) উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ : আজকাল ভারতে নানারকম উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ করা হচ্ছে। উচ্চফলনশীল শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হওয়ায় বর্তমানে ভারতে ব্যাপক জলসেচের প্রয়োজন হয়।

(৫) রবিশস্য চাষ : প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় সেইসব ফসলকে রবি ফসল বলে। গম, যব, আলু, বিভিন্ন রকমের তৈলবীজ ও ডাল রবি ফসলের উদাহরণ। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় রবিশস্য চাষের জন্য জলসেচ একান্ত প্রয়োজন।

 (৬) অতিরিক্ত বাষ্পীভবন : ভারতের বেশিরভাগ অংশ ক্রান্তীয় মৌসুমী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার অত্যধিক। অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের ফলে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না। এইসব অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য সারাবছর জলসেচের প্রয়োজন হয়।

(৭) জমির ওপর কৃষির চাপ এবং একই জমিতে বহুবার ফলনের ক্ষেত্রে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা : আজকাল বৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে ৩/৪ বার ফসল ফলানো যায়। এই কাজের জন্য কৃষিজমিতে সারাবছর ধরে জলসেচের জল জোগান থাকা ान। 

(৮) বিভিন্ন শস্যের ভাগের চাহিদার বিভিন্ন মাটির জान বিভিন্নতার জন্য জলসেচের প্রয়োজনীয়তা ভারতে বিভিন্নরকম মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা একরকম নয়। এটেল মাটির অপধারণ ক্ষমতা বেশি, আবার দোআঁশ মাটির অপধারণ ক্ষমতা কম। যেসব অঞ্চলের মুক্তিকার জলধারণ wact কন, সেইসব অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয়। আবার, ধান, আপ, আলু, বাদাম, কার্পাস প্রভৃতি শসাচারে জলের চাহিদা বেশি হওয়ায় জলসেচের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ৭ ভারতের বিভিন্ন জলসেচ পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে লেখো। *

 উত্তর : জলসেচ : কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণে জমিতে অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম উপায়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সঠিক পরিমাণে জলের সরবরাহকে বলা হয় জলসেচ। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তার জন্য ভারতে জলসেচ খুবই প্রয়োজনীয়। ভারতে প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয়, যথা- (১) কূপ ও নলকূপ সেচ, (২) পুকুর ও জলাশয় সেচ, (৩) সেচ খাল। তবে কোনো স্থানের ভূপ্রকৃতি, শিলার গঠন, ভৌমজলের অবস্থান, বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি প্রভৃতি কারণের ওপর জলসেচ ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ভর করে।

(১) কূপ ও নলকূপ : ভারতের যেসব অঞ্চলে ভৌমজলের প্রাচুর্য বেশি, অর্থাৎ যেসব অঞ্চলে বৃষ্টির জল পাললিক শিলাস্তর ভেদ করে মাটির নীচে জমা হতে পারে, সাধারণত সেইসব অঞ্চলে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে। উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, আসাম, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। কূপকে সাধারণত দু-ভাগে ভাগ করা হয়—(ক) স্থায়ী কূপ (পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায়)। (খ) অস্থায়ী কূপ (পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়)। 

(২) পুকুর ও জলাশয় : বর্ষাকালে বৃষ্টির জল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার অথবা পুকুরে সঞ্জয় করে রেখে সেচের কাজে াগানো হয়। দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপৃষ্ঠ ঢেউ খেলানো ব রঙ্গায়িত ও কঠিন অপ্রবেশ্য শিলায় গঠিত হলে বৃষ্টির জন এটির নীচে সঞ্চিত হতে পারে না। এই জল নিম্নভূমিতে ধরে রাখ =য় এবং তারপর ডোঙা, পাম্পিং মেশিনের সাহায্যে তা সেচকা ্যবহার করা হয়। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে দামোদর, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী, ইংলা প্রভৃতি প্রকল্পের সাহায্যে খাল কেটে জলসেচ করা য়। উত্তর ভারতের শোন, কোশি, গণ্ডক ও রিহন্দ প্রভৃতি কল্পের সাহায্যে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জলসেচ করা হচ্ছে। পাক্ষিণাত্যের উল্লেখযোগ্য যে-সমস্ত জলাশয়, বা বাঁধ থেকে জলসেচ করা হচ্ছে, যথা- (ক) গোদাবরীর রামপদ সাগর বাঁধ জলাশয়, (খ) মঞ্জিরায়নিজাম সাগর জলাশয়, (গ) কৃয়া নদীর নাগার্জুন সাগর জলাশয়, (ঘ) কৃয়ার উপনদী কয়ন, ভীমা, ঘাটপ্রভা, তুঙ্গভদ্রার বাঁধ, (ঙ) কাবেরী নদীর মেটুর বাঁধ, চ) তাপ্তি নদীর প্রকল্প ও (ছ) ওড়িশার হীরাকুঁদ বাঁধ প্রকল্প থেকে ওই রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসেচ করা হচ্ছে। ভারতের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ কৃষিজমিতে জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। 

(৩) সেচখাল : ভারতের প্রায় ২৬% সেচপ্লাবিত কৃষিজমিতে খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। ভারতে প্রধানত সমৃদ্ধ অঞ্চলে খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে। খালগুলি প্রধানত দু-ধরনের। যথা- (ক) নিত্যবহ খাল এবং (খ) প্লাবন খাল।

(ক) নিত্যবহ খাল : সারাবছর ধরে জলে পুষ্ট থেকে খনন করা খালকে নিত্যবহ খাল বলা হয়. দাক্ষণ ভারতে তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বে ভারতে (১) উত্তর প্রদেশের গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে (২) রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলা, (৩) পশ্চিম পাঞ্জাব সম এবং (৪) পশ্চিমবঙ্গের দামোদর উপত্যকায় প্রধানত নিতান্ত সেচ খাল দেখা যায়।

 (খ) প্লাবন খাল : প্লাবন খালে সারাবছর জল থার না। এগুলি সাধারণত বর্ষার প্লাবনে জলপূর্ণ হয়। বন্যা নিয়ন্ত্র এই জাতীয় খাল বিশেষ উপযোগী। ভারতের প্লাবন খাল দ্বার সেচ প্লাবিত অঞ্চলগুলি হল—(১) ওড়িশার মহানদী বদ্বীপ, (২) তামিলনাডুর কাবেরী বদ্বীপ, (৩) অন্ধপ্রদেশের গোদার কৃষ্ণা বদ্বীপ ইত্যাদি। ভারতের উল্লেখযোগ্য খালসমূহ : (ক) পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিম যমুনা খাল, ভাক্রা-নালাল প্রকল্পের অন্তর্গত সেচ খালসমূহ। (খ) উত্তরপ্রদেশের আগ্রা =পূর্ব যমুনা খাল, গঙ্গা খাল। (গ) পশ্চিমবঙ্গের— মেদিনীপুরে খাল, দামোদর খাল, হিজলী খাল। (ঘ) রাজস্থানের খাল ইত্যাদি। খালের মাধ্যমে জলসেচ কার্য : (১) উত্তরপ্রদেশ—প্রথম, (২) পাঞ্জাব – দ্বিতীয়, (৩) হরিয়ানা তৃতীয়, (৪) অন্ধ্রপ্রদেশ—চতুর্থ, (৫) তামিলনাড়ু — পঞ্চম।

প্রশ্ন| ৮ | বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কাকে বলে? ভারতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বহুমুখী নদী পরিকল্পনার নাম লেখো। *

 উত্তর : বহুমুখী নদী পরিকল্পনা : যে পরিকল্পনার সাহায্যে কোনো নদী উপত্যকার অধিবাসীদের সর্বাঙ্গীন আর্থসামাজিক বিকাশের জন্য নদীর ওপর বাঁধ ও জলাশয় নির্মাণ করে নদী। উপত্যকায় সেতুবন্ধন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জল পরিবহণ, পানীয় জলসরবরাহ, মৎস্যচাষ প্রকল্প প্রভৃতি বহুমুখী উদ্দেশ্যসাধন করা হয়, তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা' বলে। উদাহরণ-দামোদর নদী পরিকল্পনা। • ভারতের উল্লেখযোগ্য নদী পরিকল্পনাগুলি হল :

 • (১) দামোদর নদী পরিকল্পনা : ‘দুঃখের নদ' নামে পরিচিত দামোদর নদের বন্যার প্রকোপ রুখতে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের একাংশের জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে =সর্বাঙ্গীণ উন্নতির উদ্দেশ্যে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের অধীনেএই প্রকল্প গৃহীত হয়। দামোদর নদের তিনটি শাখানদী, যথা— বরাকর নদীর ওপর তিলাইয়া ও মাইথন বাঁধ, কোনার নদীর ওপর কোনার বাঁধ, দুর্গাপুরে দামোদর নদের ওপর ৬৭২ মি দীর্ঘ ও ১১.৫৬ মি উঁচু পাঞ্চেৎ বাঁধ নির্মিত হয়েছে। এর অধীনে মোট ২৪৯৫ কিমি দীর্ঘ সেচখালও কাটা হয়েছে। বোকারো, চন্দ্রপুরা ও দুর্গাপুরে ৩টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও স্থাপিত হয়েছে। (১০৭৭ মেগাওয়াট) বর্তমানে পশ্চিবঙ্গের বর্ধমান, মাইথন বাঁধ বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি জেলার প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমিকে | এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা।

 (২) ভাক্রা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা : ভাক্রা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা হল ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা। উত্তর ভারতের সিন্ধুনদেরউপনদী শতদ্রু নদীর ওপর হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে এই প্রকল্প ভারতের প্রথম পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত হয় এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এই কাজ আরম্ভ হয়। জম্মু ও কাশ্মীর পাকিস্তান ভাকরা-নাঙ্গাল প্রকল্প নদ-নদী সেচ এলাকা • জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপাশা O ভাকরা বাঁধ হিমাচল প্রদেশ না কাল বাঁধ সিমলা ফরিদকোট ফজিলতা পাক্কা গঙ্গানগর হরিয়ানা। o দেরাদুন সাহারানপুর উত্তর প্রদেশ হিসার কিমি ০ মীরাট * ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনা অনুসারে শতদ্রু নদীর ওপর দুটি | বাঁধ দেওয়া হয়েছে, যথা- (১) ভারা গিরিখাতে শতদ্রু নদীর ওপর ভাক্ররা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ভাক্রা বাঁধ ৫১৮ মিটার দীর্ঘ, ৩০৫ মিটার প্রশস্ত এবং ২২৬ মিটার উঁচু। এটি পৃথিবীর সুউচ্চ বাঁধগুলির অন্যতম। ভাক্রা বাঁধের পিছনের দিকে ১৬৫ বর্গকিমি আয়তনের একটি বিশাল জলাধার তৈরি করা হয়েছে, এর নাম গোবিন্দ | সাগর। কৃষিজমিতে জলসেচ দেওয়ার জন্য এই জল ব্যবহার করা হয়। (২) ভাকরা বাঁধের ১৩ কিমি দক্ষিণে শতদ্রু নদীর ওপর নাঙ্গালে আর একটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে যার নাম | নাঙ্গাল বাঁধ। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩১৪ মিটার এবং প্রস্থ ১১২ | মিটার। নাঙ্গাল বাঁধের পিছনের দিক থেকে ৬.৪ কিমি দীর্ঘ নাঙ্গাল খালের জল দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়। 

(৩) মহানদী প্রকল্প : ওড়িশার মহানদীর ওপর নির্মিত হীরাকুঁদ বাঁধটি ভারতের দীর্ঘতম বাঁধ (দৈর্ঘ্য ৪,৮০১ মিটার)। অনেকের মতে হীরাকুঁদ পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁধ। হীরাকুঁদ বাঁধটি ছাড়াও মহানদীর ওপর টিকরাপাড়া ও নারাজ-এ বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহানদী প্রকল্পের ফলে ওড়িশা রাজ্যের ৫.৫ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমিতে জলসেচের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া হীরাকুঁদ বাঁধটির জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা হল প্রায় ২৭১ মেগাওয়াট। 

(৪) ময়ূরাক্ষী প্রকল্প : ময়ূরাক্ষী নদীর ওপর বিহারের ম্যাসাজের কানাড়া বাঁধ এবং পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ীর কা তিলপাড়া বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ময়ূরাক্ষী প্রকল্পের মাধ্যমে। মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ এবং ২.৫১ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমিতে। জলব দেওয়া হয়। →

 (৫) কংসাবতী প্রকল্প : কংসাবতী (কাঁসাই) ও তার উপ কুমারী নদীর সংগমস্থলে পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়া জেলার অম্বিকানগর এবং কংসাবতী নদীর ওপর মুকুটমণিপুরে বাঁধ ও জলাধার নির্ম করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের ৩.৬৮ লক্ষ হেক্ট কৃষিজমিতে জলসেচ করা হয়। • 

(৬) তিস্তা প্রকল্প : পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা নদীর ওপর গৃহী এই প্রকল্পের সাহায্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি কোচবিহার, পশ্চিম দিনাজপুর এবং মালদহ জেলার প্রায় ৯.২৩ লা —হক্টর জমিতে জলসেচ দেওয়া সম্ভব হবে এবং ৬৩৩ মেগাওয়া জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। সম্প্রতি তিস্তা বাঁধ প্রকল্পটি জাই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

(৭) নাগার্জুন সাগর প্রকল্প : দাক্ষিণাত্যের অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষ্ণা নদীর ওপর নির্মিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮.৯৫ লক্ষ হেক্টর জমিকে সেচ প্লাবিত করা যাবে, এর মধ্যে ৭ লক্ষ হেক্টর জমিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। 

(৮) তুঙ্গভদ্রা প্রকল্প : দাক্ষিণাত্যের তুঙ্গভদ্রা নদীর ওপর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্ণাটক রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের অধীনে সম্ভাব্য সেচ প্লাবিত জমির পরিমাণ B.৯৪ লক্ষ হেক্টর, এর মধ্যে ৩.২২ লক্ষ হেক্টর জমিকে এই প্রকল্পের অধীনে আনা সম্ভব হয়েছে। 

(৯) কোশি প্রকল্প : বিহারের কোশি নদীর ওপর এই বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে বিহারের সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্যউদ্দেশ্যসাধিত হয়। এই প্রকল্পে ৪.৯৬ লক্ষ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে এ ছাড়া এখানে একটি ২০ মেগাওয়াট। উৎপাদন ক্ষমতাবিশিষ্ট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

* (১০) চম্বল প্রকল্প : মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত চম্বল নদীর ওপর নির্মিত এই প্রকল্পের ৪.৮৯ লক্ষ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে এবং এই প্রকল্প থেকে ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও ৯৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। 

প্রশ্ন ৯ ভারতের জল সংরক্ষণের কয়েকটি পদ্ধতি সম্বন্ধে লেখো। ★★

 উত্তর : পৃথিবীর জনসংখ্যা যে হারে উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে জলসম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই বর্তমানে নানান পদ্ধতিতে জলসংরক্ষণ করা হচ্ছে। যেমন- (১) বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (Rain Water Harvesting) : বর্তমানে বৃষ্টির জল ধরে রেখে জল সংরক্ষণ করার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রধানত বিভিন্ন স্থান দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃষ্টির বৃষ্টিপাত 4 বৃষ্টির জলপ্রবাহ জলাধার ভাত হ্যান্ড পাম্প বৃষ্টির জল সংরক্ষণ পদ্ধতি জলকে ধরে রেখে বৃষ্টির জলের সংরক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বৃষ্টির জল ধরে রেখে তা শুদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায় তেমনি ভূগর্ভের জলস্তরও বৃদ্ধি করা যায়। বৃষ্টির জল প্রধানত সু-ভাবে ধরে রাখা যায়। যেমন—বাড়ির ছাদে জল ধরে সংরক্ষণ Roof top Harvesting) এবং ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন আধারে জলের • সংরক্ষণ (Surface Harvesting)। এই দুই পদ্ধতিতেই প্রধানত Tank বা কৃত্রিম জলাশয় বা জলাধার নির্মাণ করে জলসংরক্ষণ করা হয়। সজ্জিত জল পরবর্তী সময়ে কুয়ো, নলকূপ বা কৃপ এবং আরো অন্যান্য নানান পদ্ধতিতে আহরণ করা হয়ে থাকে। শহরাঞ্চলের আবাসন প্রকল্পগুলিতে ছাদের বৃষ্টির জল আবাসনের মধ্যে নির্মিত বড়ো জলাশয়ে ধরে রেখে ভূগর্ভে প্রেরণ করা হয়। সেই জল পরবর্তীকালে শোধনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলে খোয়াই অঞ্চলে বাঁধ দিয়ে বা জলাধার নির্মাণ করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হয়। 

(২) জলবিভাজিকা উন্নয়ন (Watershed Development) : একটি নদী তার উপনদী ও শাখানদী মিলিয়ে যতটা স্থান অধিকার করে আছে তাকেই বলা হয় জলবিভাজিকা। জলবিভাজিকা উন্নয়ন হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের সকল জল কোনো জলাশয়ে সঞ্চিত রেখে তার মাধ্যমে নানা কাজকর্ম করা হয়। একটি জলবিভাজিকা উন্নয়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, তেমনি অন্যদিকে ওই জল জলবিভাজিকা উন্নয়ন পদ্ধতি নানান অর্থনৈতিক কাজেও ব্যবহার করা যায়। এই জলবিভাজিকা উন্নয়নে প্রধানত ৬টি প্রকল্প রয়েছে। যেমন- (১) বৃষ্টিনির্ভর এলাকার জন্য জাতীয় ওয়াটারশেড উন্নয়ন প্রকল্প (National Watershed Development Project for Rainfed Areas বা NWDPRA) (২) স্থানান্তর কৃষি এলাকায় জলবিভাজিকা উন্নয়ন প্রকল্প (Watershed Development in shifting Cultivation Area বা WDSCA) (৩) খরাপ্রবণ এলাকার পরিকল্পনা : (Drought Prone Area Programme বা DPAP) (৪) মরু অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প (Desert Development Programme DDP) (4) Integrated Wasteland Development Project IWDPR (~) Employment Assurance Scheme EASI ভারতে বেশিরভাগ রাজ্যেই এই জলবিভাজিকা উন্নয়ন গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে এদের মধ্যে তামিলনাড়ু রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Rainwater Harvesting Movement প্রথম চালু হয় তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে। তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রায় সকল বাড়ি বা অফিস কারখানায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে তাই বলা যায় যে, এই বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ু রাজ্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। 

প্রশ্ন | ১০ | মানবজীবনে নদনদী, হ্রদ ও জলাশয়ের গুরুত্ব লেখো। 

উত্তর : মানবজীবনে নদনদী, হ্রদ, জলাশয়-এর গুরুত্ব

 (১) আবাদি জমির উৎপত্তি : নদনদী প্রবাহিত হলে তার : তীরবর্তী অঞ্চলে যে পলিসঞ্জয় হয়, তার ফলে উর্বর মাটির সৃষ্টি হয়, যা চাষবাসের পক্ষে অতি অনুকূল। 

(২) অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা : যেসব নদীগুলির নাব্যতা বেশ ভালো (বিশেষত বরফ গলা জলে পুষ্ট নদনদী), সেগুলির মাধ্যমে নৌপরিবহণ ব্যবস্থা বেশ ভালোভাবে করা যায়। যেমন—গঙ্গা, যমুনা প্রভৃতি নদী। এ ছাড়া গভীর খালপথ গুলির সাহায্যেও যাতায়াত করা হয়।

 (৩) মৎস্যারোহণ : নদী, হ্রদ, পুকুর ও জলাশয়গুলিকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবীরা মৎস্যারোহন করেন, যা যথেষ্ট অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করে।

 (৪) পর্যটন কেন্দ্র : ভারতবর্ষের মিরিক, পুলিকট, উটি প্রভৃতি স্থানের হ্রদগুলিকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। 

(৫) জলসেচ : নদনদী এবং খালপথগুলির মাধ্যমে জলসেচ করা হয়, যা কৃষির অনুকূল। 

(৬) প্রাচীন সভ্যতাগুলির উৎপত্তিস্থল : পৃথিবীর সব প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নদীর তীরে। যেমন— সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধুসভ্যতা, নীলনদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, হোয়াংহো ও ইয়াং-সিকিয়াং নদীর তীরে চৈনিক সভ্যতা এবং টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমীয় সভ্যতা প্রভৃতি।

 (৭) শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে : কাঁচামালের জোগান, পরিবহণ ব্যবস্থার সুগম্যতা প্রভৃতি কারণে নদীর তীরে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে। যেমন—হুগলি নদীর তীরে পেট্রোরসায়ন শিল্প, পাটশিল্প প্রভৃতি। 

(৮) বন্দর গড়ে ওঠে : নদনদীগুলিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বন্দর গড়ে ওঠে। যা জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থায় অন্যতম সহায়ক। যেমন—কলকাতা বন্দর (হুগলি নদীর তীরে)। কতখানি ? যে খাল কাটা হয় তাকে সেচখাল বলে। সেচখাল দু-রকমের, যথা— প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল।

 প্রশ্ন | ১১ | ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা ।

উত্তর : নদনদী ও জলাধারের জল কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য 

(১) প্লাবন খাল : প্লাবন খালে সারাবছর জল থাকে না, কারণ, যে নদী থেকে খালে জল আসে সেই নদীর জলস্তর গ্রীষ্মকালে নীচে নেমে যায় অথবা শুকিয়ে যায়। বর্ষার প্লাবনে জলপূর্ণ হলে এইসব খালের সাহায্যে কৃষিজমিতে জলসেচ দেওয়া যায়। (ক) ওড়িশার মহানদী বদ্বীপ (খ) তামিলনাড়ুর কাবেরী বদ্বীপ, (গ) অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী ও কৃষ্ণা বদ্বীপে প্লাবন খালের আধিক্য দেখা যায়।

 (২) নিত্যবহ খাল : সারাবছর জল থাকে এমন নদী থেকে কাটা খালকে নিত্যবহ খাল বলে। নদীতে বাঁধ দিয়ে রাখার ফলে এসব খালে সারাবছরই জল থাকে এবং এই জল সেচের কাজে লাগানো হয়। দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে। নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি। পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তর- প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত নিত্যবহ খালের সাহায্যে জলসেচ } করা হয়। এই খালের মাধ্যমে সারাবছর জলসেচ দেওয়া যায়। 

খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা : ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে, কারণ—

 (ক) অসংখ্য নদনদী ও জলাধারের জলের সঠিক ব্যবহার : সারাভারতে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদনদী ও জলাধার থেকে সরাসরি খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচ দিয়ে নদনদী ও জলাধারের জলের সঠিক ব্যবহার করা যায়। 

(খ) সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে কৃষিজমিতে জলের জোগানে নিত্যবহ খালের উপযোগিতা : উত্তর ভারতের বেশিরভাগ নদী বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এইসব নদীতে সারাবছরই জল থাকে। তাই নিত্যবহ খালের সাহায্যে উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলের কৃষিজমিতে জলসেচ দেওয়া হয়। 

(গ) বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিক্ষেত্রে জলসেচে প্লাবন খালের উপযোগিতা : বর্ষাকালে দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয়। প্লাবন খালের সাহায্যে বন্যার জলকে কৃষিজমিতে জলসেচের কাজে লাগানো হয়।

 (ঘ) কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে খালের উপযোগিতা : খালের মাধ্যমে নদনদীর অতি উর্বর পলি কৃষিজমিতে বাহিত হয়ে জমির 

(ঙ) ভূগর্ভস্থ জলস্তরের হ্রাস নিয়ন্ত্রণে খালের উপযোগিতা : ভূগর্ভস্থ জলস্তরে হ্রাসপ্রাপ্তির নানান কুফলের পরিপ্রেক্ষিতে নদনদীর ভূপৃষ্ঠস্থ জলকে খালের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এইভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনমনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতিকূলতাকে জয় করে কে প্রাপ্ত তথ্য টর জল রক্ষণের।


প্রশ্ন ১২ | ভারতে খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় কেন? 

উত্তর : ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৯০% বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকলেও বছর বছর মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিশ্চিত। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ এবং একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ভারতে বন্যার প্রধান কারণ। অর্থাৎ মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্যই কোনো কোনো বছর ভারতে খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।  

ভারতে খরার প্রধান কারণ : ভারত বন্যা ও খরা প্রবণ অ চি न নেপাল ভুটান পাকিস্তান (১) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ। (২) ভারতের কোন্ স্থানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষা দেরিতে আসা সেই স্থানের খরার অন্যতম কারণ। (৩) স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়া হল খরা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। (৪) কোনো স্থান বর্ষাকালে। বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। (৫) বনভূমির অভাবের জন্য সূর্যের প্রচণ্ড তাপে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে ভৌমজল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং মাটি ফেটে চৌচির হয়ে খরার সৃষ্টি করে। (৬) পরিবেশদূষণের জন্য বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মৌসুমিবায়ু ঘনীভূত না-হতে পারাও খরা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। • 

ভারতে বন্যার প্রধান কারণ : (১) কোনো স্থানে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সেই স্থানে বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। (২) মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হলে অতিবৃষ্টির ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয়। (৩) নদীর বহনক্ষমতা কমে এলে বা জলনিকাশী ব্যবস্থা (যেমন—খাল) বুজে গেলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না-হলেও বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। (৪) বর্ষাকালেবাঁধ বা জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যার সৃষ্টি হয়। (৫) কখনো-কখনো ভূমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটি নদীগর্ভে জমা হয় এবং নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে নদীর জলবহন ক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। 

No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();