ভারতের জলবায়ু: দশম শ্রেণীর ভূগোল 5.4 অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography 5.4 chapter questions answers| 2024 WB bord geography suggetion|
দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun
E. দু এক কথায় উত্তর দাও
১.কোনো স্থানের অনেক দিনের আবহাওয়ার গড়কে কী বলা হয় ?
উত্তর:- জলবায়ু।
২. উত্তর-পশ্চিম ভারতের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম?
উত্তর :- চরমভাবাপন্ন ।
৩. দক্ষিণ ভারতের উপকূলের জলবায়ুর প্রকৃতি কী রকম?
উত্তর:- সমভাবাপন্ন ।
৪.উত্তর ভারতের তাপমাত্রা কোন্ সময়ে সর্বোচ্চ হয় ?
উত্তর:- গ্রীষ্মকালের মে মাসে।
৫.কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর:- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
৬.কোন্ বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকাল শুষ্ক হয়?
উত্তর :-উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু।
৭. কী কারণে শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর:- নাতিশীতোয়, ভূমধ্যসাগরীয় ঘূর্ণবাত।
৮. প্রধানত কী কারণে ভারতে খরা বা বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়?
উত্তর:- অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য।
৯. কোন্ পর্বতশ্রেণি ভারতের জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে?
উত্তর:- হিমালয় পর্বতশ্রেণি।
১০. গ্রীষ্মকালে ভারতের গড় তাপমাত্রা কত হয়?
উত্তর:- ৩০° - ৩৫° Cl
১১. ভারতে গ্রীষ্মকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর:- অধিক উন্নতা এবং স্বপ্ন আর্দ্রতা।
১২. আঁধি প্রধানত কোন্ রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর:- রাজস্থান।
১৬. বর্ষাকালে ভারতের কোথায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর :- ভারতের পশ্চিম উপকূলে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে।
১৭. ভারতে বর্ষাকালের অপর নাম কী?
উত্তর:- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল।
১৮. ভারতে শরৎকালের অপর নাম কী?
উত্তর:- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল।
১৯. শরৎকালে পশ্চিমবঙ্গে যে ঝড় হয় তার নাম কী?
উত্তর:- আশ্বিনের ঝড়।
২০. ভারতে কোন্ কোন্ মাস শীতকাল?
উত্তর:- ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি। |
২১. শীতকালে ভারতে কোন্ উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর:- তামিলনাড়ু বা করমণ্ডল উপকূলে।
২২. ভারতের কোন্ রাজ্যে সর্বপ্রথম মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হয়?
উত্তর:- কেরল রাজ্যে।
২৩. আঁধি কী?
উত্তর: রাজস্থানে গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত একপ্রকার ধুলোঝড়।
২৪. শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর:- জম্মু ও কাশ্মীর / হিমাচল প্রদেশ / উত্তরাখণ্ড / সিকিম / পশ্চিমবঙ্গ (দার্জিলিং)।
২৫. মৌসুমি বিস্ফোরণ প্রধানত কোন্ সময়ে দেখা যায়?
উত্তর:- গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত জুন মাসে।
২৬. ভারতে প্রবাহিত একটি সাময়িক বায়ুর নাম লেখো।
উত্তর:- মৌসুমি বায়ু।
২৭. ভারতে প্রবাহিত একটি স্থানীয় বায়ুর নাম লেখো।
উত্তর:- লু/আঁধি।
২৮ .কোন্ বায়ুপ্রবাহকে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলা হয়?
উত্তর:- মৌসুমি বায়ুকে।
২৯. শরৎকালে উপকূলীয় অঞ্চলে যে ঘূর্ণবাতজনিত ঝড় হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর :- ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন।
৩০. যে-সমস্ত অঞ্চলে ২০ সেমি-এর কম বৃষ্টিপাত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর :- শুষ্ক অঞ্চল।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. আবহাওয়া (Weather) কাকে বলে?
উত্তর : কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের উম্বুতা, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘের অবস্থা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির অবস্থাকে বোঝায়। আবহাওয়া সর্বদা পরিবর্তিত হয়।
২ | জলবায়ু (Climate) কাকে বলে? প্রশ্ন|
উত্তর : কোনো স্থানের বা কোনো একটি বড় অঞ্চলের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছরের আবহাওয়ার গড়ো অবস্থাকে জলবায়ু বলে। কোনো অঞ্চলের জলবায়ু বছরের পর বছর প্রায় একইরকম থাকে।
প্রশ্ন ৩ | আম্রবৃষ্টি বা Cherry Blossom কাকে বলে? * [
উত্তর : গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক রাজ্যে ঘূর্ণিবায়ুর প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে-বৃষ্টিপাত হয়, তাকে ‘আম্রবৃষ্টি’ বলে। এই বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এই অঞ্চলে আমের ফলন ভালো হয়। এ ছাড়া এই বৃষ্টিপাতের ফলে কর্ণাটক রাজ্যে কফি চাষের সুবিধা হওয়ায়, একে চেরি ব্লসম (Cherry Blosom) বলে।
প্রশ্ন ৪. লু (Loo) কী? ★
উত্তর : গরমকালে (জ্যৈষ্ঠ মাসে) উত্তর ভারতের রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি অংশে দিনের বেলায় অত্যধিক শুষ্ক ও উয়বায়ু শোঁ শোঁ করে প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হয়, তাকে লু (Loo) বলে। এর ফলে উষ্ণতা ৫০° সে. ছাড়িয়ে যায়। এই বায়ুর প্রচণ্ড উত্তাপের ফলে প্রতিবছর বহু মানুষ ও গবাদিপশু মারা যায়।
প্রশ্ন। ৫. আঁধি (Andhi) কাকে বলে ? ★
উত্তর : রাজস্থান মরুভূমি অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় হয়, স্থানীয় ভাষায় তাকে আঁধি বলে। এই ঝড়ে বৃষ্টি হয় না বলে প্রচুর ধুলো-বালি ওড়ে। তবে এই ঝড়ে উষ্ণতা কিছুটা কমে।
প্রশ্ন ৬. চরমভাবাপন্ন জলবায়ু (Extreme Climate) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে-ধরনের জলবায়ুতে শীতে বেশি শীত আর গরমে প্রচণ্ড গরম পড়ে, সেই জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। সাধারণত দেশের অভ্যন্তরভাগে অর্থাৎ সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।প্রোম্ভিক ভারতের দিল্লি, লখনউ, আম্বালা, রায়পুর - প্রভৃতি শহরের মতো মধ্য ও উত্তর ভারতের স্থানগুলিতে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়।
৭. সমভাবাপন্ন জলবায়ু (Moderate Climate) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে ধরনের জলবায়ুতে শীত ও গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয়, সেই ধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। এটি প্রধানত সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে খুব বেশি ঠান্ডা পড়ে না বা গরমও পড়ে না। ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চল যেমন- মুম্বাই, চেন্নাই, পুরী, বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি অঞ্চলে এইরূপ জলবায়ু দেখা যায়।
প্রশ্ন ৮| মৌসুমি বায়ু কাকে বলে ?*
উত্তর : মৌসুমি বায়ু হল এক ধরনের সাময়িক বায়ু যা ঋতুপরিবর্তনের সাথে সাথে পরস্পর বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে এই বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই বায়ু প্রবাহিত হলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র।
প্রশ্ন ৯ | পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল কোথায় অবস্থিত? *
উত্তর : পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলটি হল চেরাপুঞ্জির নিকটবর্তী মৌসিনরাম, যা মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণভাগে অবস্থিত। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (১২৫০ – 1800 সেমি)। একে পৃথিবীর আর্দ্রতম স্থানও (Wettest Place of the Planet) বলা হয়।
প্রশ্ন ১০ | দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি (South West Monsoon) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে অধিক উচ্চতায় ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে যে-গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে দক্ষিণের সমুদ্রের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করে। ফেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু ডান দিকে বেঁকে ভারতে প্রবেশ করে বলে একে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে। সারা ভারতের ৮৫—১০ ভাগ বৃষ্টি এই বায়ুর প্রভাবেই ঘটে।
প্রশ্ন ১১ | উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু (North-East Monsoon) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সেপ্টেম্বর মাসের শেষ বা অক্টোবর মাসের শুরুতে ভারতের স্থলভাগের তুলনায় ভারত মহাসাগরের ওপর তাপমাত্রা বেশি থাকে। ফলে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ এবং জলভাগের ওপর নিম্নচাপ অবস্থান করে। এই সময় এই বায়ু স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে =না তাই শুষ্ক। এই বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে। এই বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন | ১২ | মৌসুমি বিস্ফোরণ (Burst of Monsoon) কী? * [মা.প. '১৭]
উত্তর : গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে আরব সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবে পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ এই বায়ুপ্রবাহ পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের মালাবার উপকূলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে ভারতে বর্ষাকালের সূচনা করে, তাই একে মৌসুমি বিস্ফোরণ (Burst of Monsoon) বলা হয়।
প্রশ্ন | ১৩ | শীতকালে ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর : শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত তেমন না-হলেও এই সময়ে : (১) প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে এবং (২) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন ১৪ | ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয়, এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো।
উত্তর : ভারতে ভিন্ন ঋতুতে হয়, এমন দুটি ঝড় হল (১) শরৎকালে আশ্বিনের ঝড় এবং (২) গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখীর ঝড়।
প্রশ্ন । ১৫ | বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rainshadow Area) কাকে বলে ?★
উত্তর : ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত পাহাড়ে বাধা পেয়ে হয়। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যখন পাহাড়ে বাধা পায়, তা কিছুটা উপরে উঠে শীতল হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু এই বায়ু যখন পাহাড়ের উলটোদিকের ঢালে পাহাড়ের এই ঢাল বা অনুবাত ঢাল অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলা হয়। যেমন—ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল এবং মেঘালয়ের গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের উত্তর ঢাল হল । বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। মেঘ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বৃষ্টিপাত অনুবাত ঢাল বৃষ্টিপাত খুবই কম প্রতিবাত ঢাল বেশী বৃষ্টি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল পৌঁছোয় তখন সেখানে বৃষ্টিপাত কম হয়।
প্রশ্ন ১৬ | পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (Western Disturbance) বলতে কী বোঝ?* [মা.প. '১৬]
উত্তর : শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বহন করে নিয়ে আসা দুর্বল নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্যের শীতকালীন রোদ ঝলমলে আবহাওয়া বিঘ্নিত হয় এবং মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়। ২৫০–৩৫° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ধেয়ে আসা এই ঘূর্ণবাতকেই পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলা হয়। এই ঘূর্ণবাতের প্রভাব কখনো-কখনো গাঙ্গেয় উপত্যকা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত আসে। শীতকালীন রবিশস্য চাষের পক্ষে এই বৃষ্টি খুব উপযোগী।
প্রশ্ন| ১৭ | ভারতের তিনদিক সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় জলবায়ুগত গুরুত্ব কী?
| উত্তর : ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত থাকায় দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চল সমূহে জলবায়ু হয়েছে সমভাবাপন্ন প্রকৃতির। এ ছাড়া সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। আবার সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতও উপকূল অঞ্চলে প্রবল ঝড়বৃষ্টি ঘটায়।
প্রশ্ন | ১৮ | পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে কেন? ★
উত্তর : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন তা প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। এই বায়ু উত্তরে যাওয়ার পথে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে (প্রতিবাত ঢাল) বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই কারণেই পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন ১৯ | 'বৃষ্টিপাতের ছেদ' বা ‘Break of Monsoon' বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বর্ষাকালে (জুলাই-আগস্ট মাসের) হিমালয় পর্বতের পাদদেশে মৌসুমি অক্ষ (Monsoon trough) অবস্থান করায় হিমালয়ের পাদদেশ বরাবর প্রবল বৃষ্টি হলেও বাকি ভারতের বিভিন্ন অংশ মেঘ-বৃষ্টিহীন থাকে। একেই 'বৃষ্টিপাতের ছেদ' বা * Break of Monsoon' বলে। কখনো কখনো ১০-১৫ দিন এমন অবস্থা চলতে দেখা যায়।
প্রশ্ন ২০ | ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক কেন ?*
উত্তর : গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই বলা যায় যে, ভারতে গ্রীষ্মকাল হল আর্দ্র প্রকৃতির। অপরদিকে শীতকালে ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থাৎ স্থলভাগ থেকে মৌসুমি বায়ু দক্ষিণে সমুদ্রের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে থাকে। স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত এই বাহুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে বলে, ভারতে শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
প্রশ্ন ২১ | রাজস্থানে লু প্রবাহিত হয় কেন? ★
উত্তর : গাছপালাহীন বালিসমৃদ্ধ রাজস্থান মরুভূমি গ্রীষ্মকালে দ্রুত হারে উত্তপ্ত হয়। ফলে বিকিরণ পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন অঞ্চলের বায়ুও উত্তপ্ত হয়। এই সময় বায়ুচাপের ঢাল বেশি থাকায় উত্তপ্ত ও শুষ্ক বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে গড়ে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়। একেই লু বলা হয়।
প্রশ্ন ২২ | জেট স্টিম (Jet Stream) বা জেট বায়ু বলতে কী বোঝ? ★★
উত্তর : জেট স্ট্রিম হল একটি দ্রুতগামী সংকীর্ণ বায়ুস্রোত, যা আকাবাকা ও দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৫০—৩০০ কিমি। জেট বায়ু প্রধানত উত্তর গোলার্ধে ৩০০ – ৪০° অক্ষাংশে অবস্থান করে। তবে ঋতুভেদে ও সাময়িক বায়ুপ্রবাহের জন্য এর অবস্থানগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। জেট বায়ু উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতক্রমে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়। 80 তিব্বত হিমালয় -জেটবায়ুর প্রধান শাখা (শীতকাল) -জোটবায়ু (গ্রীষ্মকাল) ভারতের জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাহিত হয়।
প্রশ্ন । ২৩। এল নিনো (El Nino) কী ?*
উত্তর : স্পেনীয় শব্দ 'এল নিনো'-এর অর্থ দুষ্টু ছেলে। সাধারণত খ্রিস্টমাসের সময় এই উষ্ণ স্রোত আবির্ভাব হত বলেস্পেনীয় অধিবাসীগণ একে ‘শিশু খ্রিস্ট' নামে অভিহিত করে। এল নিনো হল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে চিলির উপকূলে মাঝে পেরু ......ভারত ডারউইন মহাসাগর তাহিতি এল নিনো স্রোত স্বাভাবিক অবস্থা → অস্বাভাবিক অবস্থা এল নিনো মাঝে দেখা দেওয়া অস্থির ও অনির্দিষ্ট প্রকৃতির দক্ষিণমুখী উয় স্রোত (নিরক্ষীয় স্রোতে)। প্রত্যেক চার থেকে সাত বছর অন্তর এল নিনোর আগমন ঘটে। এল নিনোর বছরগুলিতে ভূপৃষ্ঠের কোথাও প্রচণ্ড খরা আবার কোথাও বা ব্যাপক ঝড় তুফান সহ মুশলধারে বৃষ্টিপাত ঘটে।
প্রশ্ন ২৪ | লা নিনা (La-Nino) কী?
উত্তর : 'লা নিনা' শব্দটি ‘এল নিনো’-এর স্ত্রী-প্রতিরূপকে বোঝায়। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য এবং পূর্ব ক্রান্তীয় অঞ্চলে লা নিনো দেখা যায়। এটি একটি শক্তিশালী বাণিজ্য বায়ু এবং এর উয়তা কম। - প্রত্যেক ৩-৭ বছর অন্তর লা নিনার আবির্ভাব ঘটে। প্রশ্ন ২৫ | শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয় কেন? উত্তর : শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট নাতিশীতোয় বা মধ্যঅক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাব পড়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে। শীতকালে উক্ত ঘূর্ণবাতের প্রভাবে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ অংশে একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি এবং জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে তুষারপাত ঘটে—যা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা নামে পরিচিত। এই পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবেই উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে বৃষ্টি হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:
A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো
প্রশ্ন ১ | কালবৈশাখী (Nor Wester) কী ?
* উত্তর : পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশে গ্রীষ্মকালের বিকেলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ ও বৃষ্টিপাতের সঙ্গে এক ভীষণ ঝড়ের আগমন ঘটে—এই ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত। উত্তর- পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড়ের আগমন ঘটে বলে এর ইংরেজি নাম ‘নর ওয়েস্টার’। কালবৈশাখীর বায়ুপ্রবাহ খুবই ঠান্ডা, তাই এই বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালীন উয়তা একলাফে অনেকটা নেমে যায়। গ্রীষ্মকালের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তে ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে, ওই নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল ভরাট করার জন্য উত্তরের শীতল বায়ু এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ছুটে আসে। এই দুই বিপরীতধর্মী বায়ুপ্রবাহের সংঘর্ষের ফলে কালবৈশাখীর ঝড়-বৃষ্টি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রশ্ন| কালবৈশাখী ২ | আশ্বিনের ঝড় (Storm of Aswin) কী ? *
উত্তর : শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী শুষ্ক মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সমুদ্রের অপেক্ষাকৃত উয়-আর্দ্র বায়ুর সংঘর্ষে মাঝে মাঝে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে। এই ঘূর্ণবাত অত্যন্ত গভীর হলে য ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। একেই বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাইক্লোন বলা হয়। এই ঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি ঘটায় এই ঘূর্ণিঝড়ই পশ্চিমবঙ্গে সাইক্লোন নামে পরিচিত।
৩. ভারতে বর্ষাকাল বা মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণ সমুদ্র থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় ভারতে প্রবেশ করে— (১) আরব সাগরীয় ও (২) বঙ্গোপসাগরীয় এই দুই শাখায় বিভক্ত।
১. আরব সাগরীয় শাখা : এই শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে বাধা পেয়ে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় | ( ৩০০-৫০০ সেমি)। আবার অন্যদিকে, ওই পর্বতের পূর্ব ঢালে অর্থাৎ দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগ বৃষ্টিপাতের অভাবে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। *
২. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা : এই শাখা পূর্ব হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বাধা পেয়ে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মেঘালয়ের গারো, খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় (বার্ষিক ১২৫০ সেমি)। আবার, ওই পর্বতের উত্তর ঢালে শিলং অঞ্চল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
• বর্ষাকালীন উষ্মতা : অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য বর্ষাকালে উয়তা কমে যায়। এই সময় উত্তর ভারতের গড় তাপমাত্রা থাকে ২০°–২৫° সেন্টিগ্রেড এবং দক্ষিণ ভারতের গড় তাপমাত্রা থাকে ২০°–৩০° সেন্টিগ্রেড।
• বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত : ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮০% ই হয় | বর্ষাকালে। পশ্চিম উপকূল ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিবাত ঢালে প্রায় ২০০ সেমি এর বেশি বৃষ্টিপাত হয় আবার উত্তর-পশ্চিমের গুরু অঞ্চল ও বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ছাড়া বাকি সর্বত্র ৫০-২০০ সেমি এর মতো বৃষ্টিপাত হয়।। উন্নতা ও আর্দ্রতা এবং ক্রমাগত বৃষ্টি বর্ষাকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য। • জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হল ভারতে বর্ষাকাল। অধিক
প্রশ্ন ৪ | ভারতে শরৎকাল বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল বলতে কী বোঝ?
উত্তর . : | ২৪৪নং পাতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৩নং প্রশ্নের ৩নং পয়েন্টের উত্তরটি দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন ৫ ভারতে গ্রীষ্মকাল সম্পর্কে আলোচনা করো। |
উত্তর : ২৪২নং পাতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৩নং প্রশ্নের ১নং পয়েন্টের উত্তরটি দ্রষ্টব্য।
প্রশ্ন ৬ ভারতে শীতকাল সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : [ ২৪৪নং পাতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের ৩নং প্রশ্নের ৪নং পয়েন্টের উত্তরটি দ্রষ্টব্য। উত্তর : ভারতে মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখার মধ্যে একটি হল
প্রশ্ন ৭| মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ? •
উত্তর : আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বত ও আরব সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তী গোয়া (কোঙ্কন উপকূল) ও কেরলে মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় (গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি-এর বেশি)। ০ এরপর পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে এই বায়ুপ্রবাহ মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে। কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের অপর দিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় জলীয় বাষ্পে ঘাটতি পড়ে বলে এইসব অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সেন্টিমিটারেরও কম। ভারত [বায়ুপ্রবাহ] বাংলাদেশ পাকিস্তান নেপাল ान দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু •নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বাহুব বায়ুপ্রবাহের নিক ভারত মহাসাগর
এই বায়ুপ্রবাহ যতই আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ততই কমতে থাকে। •
আরব সাগরীয় মৌসুমি বায়ুর উত্তর শাখা উত্তরে রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হয়, এবং জলীয় বাষ্প অত্যন্ত কম থাকায় বৃষ্টি অত্যান্ত কম (২৫ সেমির কম)।
প্রশ্ন ৮| মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা কী?
উত্তর : ভারতে মৌসুমি বায়ুর যে শাখা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তা বঙ্গোপসাগরীয় শাখা। ১) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। • উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী চালে অবস্থিত চেরাপুঞ্চি-মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় (১,২৫০ ১,৪০০ সেমি), কিন্তু বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর ঢালে (অনুবাত ঢালে) অবস্থিত শিলং শহরে বৃষ্টিপাত হয় বছরে মাত্র ২৫০ সেমি। ও দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয়ে পৌঁছোনোর পর পশ্চিমমুখী হয়ে গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্য দিয়ে যতই পাঞ্জাব ও রাজস্থানের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, বৃষ্টিপাত ততই কমতে থাকে। • উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমির কলকাতায় বছরে ২০০ সেমি মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমির পাটনায় বছরে ১৫০ সেমি এবং উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির হরিদ্বারে বছরে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এই বায়ু যখন রাজস্থানে পৌঁছোয়, জলীয় বাষ্পের অভাবে সেখানে বৃষ্টি কম হয়।
প্রশ্ন ৯ | মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ ?*
উত্তর : ভারতের ১০% বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হয়, কিন্তু মৌসুমি বৃষ্টিপাত খুবই অনিশ্চিত, কারণ (১) প্রতি বছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে না। আবার ও মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না। এর ফলে কোনও বছর মৌসুমি বায়ুর যারা কম জলীয় বাষ্প আমদানি ও এই বায়ুপ্রবাহ দেরিতে আসার ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দেয়, আবার কোনো বছর অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় বাষ্প আমদানি এবং দেরিতে প্রত্যাগমনের ফলে ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়।
B. কারণ ব্যাখ্যা করো
প্রশ্ন ১. এর মরুভূমির ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সহায়তা করেছে কেন ?
উত্তর : থর মরুভূমির বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান এই অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে, কারণ : ১ আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরে সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের উপকূল অতিক্রম করে মরু অঞ্চলের উপর দিয়ে যখন প্রবাহিত হয়, তখন এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না, তাই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে নামমাত্র বৃষ্টিপাত হয়। বঙ্গোপসাগরীয় শাখা উত্তর ভারত অতিক্রম করে যখন এখানে পৌঁছোয় তখন জলীয় বাষ্প খুব কম থাকায় বৃষ্টি খুবই কম। এ ছাড়া, ও ধর | মরুভূমি অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেওয়ার জন্য কোনো ভারত [[ ] নির্দেশিকা পাকিস্তান নেপাল বাংলাদেশ উঁচু পর্বত না-থাকায় এবং এই অঞ্চলের একমাত্র পর্বত আরাবলি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় খুবই কম (বছরে ১৫ সেন্টিমিটারেরও কম)। কোনো কোনো বছর পর মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত একেবারেই হয় না। এত বছ বৃষ্টিপাতের ফলেই ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন ২. মেঘালয় রাজ্যের এইরূপ নামকরণের কারণ।
উত্তর : মেঘালয় কথার অর্থ ‘মেঘের আলয়’ বা ‘মেঘের দেশ'। মেঘালয় রাজ্যের বিশেষ ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত অবস্থানের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা পার হয়ে মেঘালয় রাজ্যের গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের খাড়া ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হঠাৎ অনেক উঁচুতে উঠে যায় এবং ঘনীভূত হয়ে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান এখানেই অবস্থিত। প্রবল বৃষ্টি ও আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে বলে এই রাজ্যের নামকরণ হয় মেঘালয়।
প্রশ্ন ৩. ভারত মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র (Play Field) অথবা, ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু, ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই দুই বায়ুপ্রবাহের দিকও পরিবর্তন হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রায় ১০% বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ভারতের স্বাভাবিক বনভূমি কৃষি ও কৃষিজাত (যেমন—পার্ট, চিনি, চা, কফি প্রভৃতি) শিল্পই শুধু নয়, এদেশের অধিবাসীদের খাদ্য, বাসস্থান এবং জীবিকার মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ ছাড়া শীতকালীন মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে স্থলভাগে { উপর দিয়ে বয়ে আসে বলে ওই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে। না, ফলে এই বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভারতে বৃষ্টি হয় না। মৌসুমি জলবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত ভারতকে 'মৌসুমি জল দেশ” বলা হয়। বা বলা যায় যে, ভারত হল মৌসুমি বায়ুর প্রধান বিচরণক্ষেত্র।
প্রশ্ন ৪. ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর, দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানের জলবায়ু শীতল।
উত্তর : আমরা জানি উচ্চতা বৃদ্ধিতে উয়তা হ্রাস পায়। কাশ্মীর, দার্জিলিং প্রভৃতি স্থানগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত বলেই সারাবছর উয়তা এখানে কম। তাই গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীর, দার্জিলিং-এর জলবায়ু শীতল।
প্রশ্ন ৫. করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। অথবা, তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয়। অথবা, তামিলনাড়ু বা করমণ্ডল উপকূলে বছরে ২ বার বৃষ্টিপাত হয়—এর কারণ ব্যাখ্যা করো। [মা.প. '১২, ১০]
উত্তর : ১ বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে বৃষ্টি পাত হয়। 3 শরৎ ও শীতকালে উত্তরপূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পাত জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকূলে প্রবেশ করে—পূর্বঘাটে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই করমণ্ডল উপকূলে দু-বার বর্ষাকাল দেখা যায়।
প্রশ্ন। ৬. ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে—কারণ ব্যাখ্যা করো। * নে
উত্তর : গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি আরব সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে নিয়ে এসে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় (বছরে ৩৫০-৫০০ সেমি)। • পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করার পর এই বায়ুপ্রবাহ (মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা) যখন দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে তখন এতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না বলে এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে খুবই কম বৃষ্টিপাত (বছরে ৩০–৬০ সেমি মাত্র) হয়। এই কারণে পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাংশে বিশেষত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরভাগে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৭.পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে—কেন?
উত্তর : আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং আরও উপরে উঠে যেতে থাকে। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এসে ওই জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমঘাট পর্বতের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত ভারতের কোঙ্কন উপকূল এবং মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় (এই অঞ্চলে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫০ সেমির বেশি)।
প্রশ্ন ৮| মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উয়তার পার্থক্য বেশি—কেন?
উত্তর : ১) মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে। এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না, ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতল হয়, এর ফলে মরু অঞ্চলের উত্তাপের চরমভাব লক্ষ করা যায়। Q মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়। ৩) মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে, এই কারণে স্বাভাবিকভাবেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়, আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায়। এই-সমস্ত কারণে মরু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উত্নতার পার্থক্য বেশি।
প্রশ্ন। ৯ শীতকালে ও শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে অসংখ্য ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে—কেন?
উত্তর : শীতকালে ও শরৎকালে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু প্রত্যাগমন করে। এই প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ু শুষ্ক ও আর্দ্রতাহীন হয়। তবে যেহেতু এই সময় নিকটবর্তী সমুদ্র উষ্ণ থাকে, সেহেতু উষ্ণ আর্দ্র সামুদ্রিক বায়ুর সাথে শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে তাই এই দুই সাগরে এই সময় গড়ে ৩/৪টি ঘূর্ণবাত দেখা যায়। এই সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের ফলে সমুদ্র উপকূল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ১০ | থর মরুভূমির জলবায়ু চরম প্রকৃতির। অথবা, রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসার বেশি হয় কেন?
উত্তর : মরু অঞ্চলের ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামক খনিজ থাকে। এরা তাপ ধরে রাখতে পারে না। ফলে এগুলি সবই দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং দ্রুত শীতলও হয়ে যায়। মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়। এ ছাড়া মরু অঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে। তাই স্বাভাবিক কারণেই উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়, আবার যথেষ্ট হ্রাসও পায়। এই কারণে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে তাপমাত্রার প্রসর বেশি অথবা শীত ও গ্রীষ্মের উন্নতার পার্থক্য বেশি।
প্রশ্ন ১১ সমুদ্রের ধারে আবহাওয়া আরামদায়ক হয়। অথবা, সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ু চরমভাবে বৃদ্ধি পায় কেন?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের তিনদিক জুড়ে রয়েছে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় ভারতের উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন ও বেশ আরামদায়ক হয়। জল ও স্থলভাগে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য যথাক্রমে সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে জলবায়ুর চরমভাব থাকে না। কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরত্ব বাড়লে জলবায়ুর চরমভাব বাড়তে থাকে।
প্রশ্ন| ১২ | ভারতে শীতকাল হল শুষ্ক—কেন ?
উত্তর : শীতকালে ভারতের স্থলভাগ থেকে জলভাগের দিকে ধাবিত বাতাস উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় যাকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে। স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে না, ফলে শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত হয় না। এই কারণে ভারতে শীতকাল শুষ্ক হয়ে থাকে। কেবলমাত্র তামিলনাড়ু উপকূলে শীতকালে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়।
প্রশ্ন | ১৩ | মালভূমি এলাকায় দিনের বেলা বেশি গরম লাগে কেন ?
উত্তর : মালভূমির বেশিরভাগ অংশ শুষ্ক, রুক্ষ ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সমৃদ্ধ। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দ্রুত তাপ বিকিরণ করে বলেই দিনের বেলা উয়তা দ্রুত বাড়ে। তাই মালভূমিতে দিনের বেলা বেশ গরম অনুভূত হয়। প্রশ্ন ১৪ | কোনো স্থানের অক্ষাংশগত অবস্থান সেই স্থানের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে—কারণ ব্যাখ্যা করো। উত্তর : অক্ষাংশগত অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য তাপাত্রার পরিবর্তন হয়। নিরক্ষরেখা থেকে যত উত্তরে বা দক্ষিণে যাওয়া যায়, তাপমাত্রা তত কমতে থাকে। কারণ নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে কিরণ দেয়। তাই তাপমাত্রাও কম হয়। এই কারণে ভারতের উত্তরাংশে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম।
C. সংক্ষেপে উত্তর দাও
প্রশ্ন ১. ভারতে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ★ [মা.প. [১৪]
উত্তর : ভারতের মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য : মৌসুমি বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত ভারতীয় জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় : ১ মৌসুমি বায়ু গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। 3 ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুকনো হয়। ৩ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষাকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে) সর্বাধিক পরিমাণ (৯০%) বৃষ্টি হয়। ৪ উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকাল শুষ্ক থাকে। শীতকালে শুধুমাত্র তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূল ছাড়া ভারতের অন্যত্র উল্লেখ করার মতো বৃষ্টিপাত হয় না।
৫ ‘পশ্চিমি ঝঞ্ঝা' এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়।
৬ শীতকালে মৌসুমি বায়ু যে-দিক থেকে প্রবাহিত গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়।
৭ ভারতের মৌসুমি বৃষ্টিপাত একটানা হয় না, মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতে বিরতি ঘটে।
৮ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সঠিক সময় এবং পরিমাণ এক-এক বছর এক-এক রকমের হয়।
প্রশ্ন ২. ভারতের জলবায়ুর ওপর ভারতের পর্বতগুলির প্রভাব লেখো।★
উত্তর : ভারতের জলবায়ুর ওপর হিমালয় পর্বতের প্রভাব : ১ হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শৈত্যের হাত থেকে রক্ষা করেছে। হিমালয় পর্বত না থাকলে শীতকালে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত; 3 ভারতের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপরও ভারতের বিভিন্ন পর্বতের অপরিসীম প্রভাব রয়েছে, যেমন- ক.আরব সাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে এই পর্বতের পশ্চিম ঢালে অবস্থিত কেরল, কর্ণাটক, গোয়া ও মহারাষ্ট্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাত (৩৮০–৫৫০ সেমি) ঘটায়।
(খ) আরব সাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ও মধ্যপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প খুবই কম থাকার ফলে এই বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়
খুবই কম (৬০-৬৫ সেমি মাত্র)। এইজন্য পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাংশে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
(গ) বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অনেক উঁচুতে উঠে যায় এবং প্রবল শৈত্যে ঘনীভূত হয়ে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালের চেরাপুঞ্জি ব –ও মৌসিনরাম অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় (বছরে গড়ে প্রায় ১,৪০০ সেন্টিমিটার)। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক।
(ঘ) চেরাপুঞ্জির নিকটবর্তী মেঘালয়ের রাজধানী শহর শিলং খাসি পাহাড়ের উত্তর ঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার জন্য শিলংসহ মেঘালয় রাজ্যের উত্তরাংশে বৃষ্টিপাত হয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম (বছরে মাত্র ১৫০-২৩০ সেন্টিমিটার)। এ ছাড়া ৫ আরাবল্লি পর্বতের রাজস্থানে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে অবস্থানের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কোনোভাবেই বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে আরাবল্লির সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। ফলে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত-এর পরিমাণ খুবই কম (বছরে ২৫ সেমি-এর কম) উষ্ণতা খুবই বেশি।
প্রশ্ন । ৩. মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা বাংলাদেশ অতিক্রম করে প্রথম মেঘালয়ে পৌঁছোয়। মেঘালয়ের গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের দক্ষিণে রয়েছে সুগভীর সংকীর্ণ উপত্যকা, যেখানে মৌসুমি বায়ু অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং এই বায়ু} হঠাৎ ঊর্ধ্বগামী হয়ে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি ঘটে।
প্রশ্ন ৪. মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং-এর তুলনায় মৌসিনরামের বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেশি কেন ?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ে বাধা পায়। এই বায়ু হঠাৎ অনেক উঁচুতে উঠে যায় এবং প্রবল শৈত্যে ঘনীভূত হয়ে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণভাগে চেরাপুঞ্জির কাছে মৌসিনরাম অঞ্চলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে (বছরে ১,২৫০–১,৪০০ সেমি)। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং, খাসি পাহাড়ের অনুবাত ঢালে অবস্থিত হওয়ায় বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে। তাই মৌসিনরামের নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও শিলং-এ বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম।
প্রশ্ন ৫. ভারতের জলবায়ুতে হিমালয় পর্বতের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর : ভারতের সমগ্র উত্তরভাগ জুড়ে বিস্তৃত থাকা হিমালয় পর্বতশ্রেণি ভারতের জলবায়ুর ওপর অসাধারণ প্রভাব রয়েছে। যেমন- ১ উত্তরের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থেকে রক্ষা করা : হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে। হিমালয় পর্বত না-থাকলে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত।
[২] বৃষ্টিপাতে সাহায্য করা : সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মৌসুমি বায়ু প্রবাহের দ্বারা সংঘটিত বৃষ্টিপাতে হিমালয় পর্বতের অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। | ভারতের জলবায়ুতে হিমালয় পর্বতের প্রভাব শীতল ও শঙ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায় হিমালয় পর্বতমালা আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু
[৩] উচ্চ অক্ষাংশে শীতল জলবায়ু সৃষ্টি : ভারত এমনিতে উয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হলেও উচ্চতার প্রভাবে হিমালয়ের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে অনেকটা তুন্দ্রা অঞ্চলের মতো অতি শীতল জলবায়ু দেখা যায়।
প্রশ্ন ৬. ভারতকে বৃষ্টিপাত অঞ্চলে ভাগ করো এবং বিভাগগুলির পরিচয় দাও ।
উত্তর : বিশাল ভারতের সর্বত্র বৃষ্টিপাত একইরকমের হয় না। ভারতের কোথাও বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয়, আবার কোথাও বৃষ্টিপাত হয় খুবই কম। বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুসারে ভারতকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়—
[2] অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল (very high rainfall area) : (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমির বেশি) : পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, আসাম, মিজোরাম, পূর্ব হিমালয় ও তরাই অঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল ভারতের অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত।
[2] অধিক বৃষ্টিপাত अ (High rainfall area) : (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেমির বেশি) উত্তর বিহার, পশ্চিমবঙ্গের বাকি অংশ, পশ্চিম উপকূলের বাকি অংশ, ওড়িশা, দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। [৩] মাঝারি বৃষ্টিপাত (Moderate or medium rainfall area) : (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি) পূর্ব রাজস্থান, পূর্ব পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমির মধ্যভাগ, পূর্ব হরিয়ানা—ভারতের মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত। [8] অল্প বৃষ্টিপাত अ (Low rainfall area) : (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০-৫০ সেমির বেশি) পশ্চিম ও মধ্য রাজস্থান, কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিমাংশ, হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, পাঞ্চাবের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল এবং কচ্ছের রণ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। @ শুষ্ক म (Dry area) : (বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০ সেমির কম) রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাডাক অঞ্চল এবং উত্তর কাশ্মীরের কারাকোরাম অঞ্চল ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের অন্তর্গত।
প্রশ্ন ৭. ভারতে বন্যার (Flood) কারণগুলি আলোচনা করো। *
উত্তর : মৌসুমি বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনাই হল ভারতে বন্যার প্রধান কারণ, যেমন-১ কোনো স্থানে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সেই স্থানে বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। ও মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হলে অতিবৃষ্টির ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয়। ও ক্রমাগত পলি জমে নদীগর্ভের গভীরতা কমে গিয়ে নদীর বহন ক্ষমতা ও ধারণ ক্ষমতা কমে এলে বা জলনিকাশি ব্যবস্থা (যেমন- খাল) বুজে এলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলেও ক্রমাগত পলি জমে নদীগর্ভের গভীরতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। ৪ বর্ষাকালে বাঁধ বা জলাধার থেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যার সৃষ্টি হয়। এটিও ভারতে বন্যা হওয়ার অন্যতম কারণ। ৫ কখনো- কখনো ভূমিক্ষয় ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। ভূমিক্ষয়ের ফে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি নদীগর্ভে জমা হয় এবং নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে নদীর জল বহন ক্ষমতা কমে গিয়ে নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, ৬ কোনো কারণে নদীতে হঠাৎ জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। ৭ নদীর গতিপথের পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে বন্যা হতে পারে। ৮ মরুভূমি অঞ্চলের ছোটো ছোটো নালা ও খালগুলি বালি জমে ভরাট হয়ে যায় বলে অল্প বৃষ্টিপাতেই মরুভূমিতে বন্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন ৮. ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের প্রধান প্রধান বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলি হল— ১ উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। (ভারতের সর্বাধিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল)। ২ উচ্চগঙ্গা সমভূমির যমুনা, ঘর নদী উপত্যকা। ৩ মধ্যগঙ্গা অববাহিকার গণ্ডক (উত্তরপ্রদেশ) ও কোশী (বিহার) নদী অববাহিকা। ৪ নিম্নগঙ্গা সমভূমির অজর দামোদর, মহানন্দা, ভাগীরথী নদী অববাহিকা অঞ্চল, তরাই ডুয়ার্স এবং পশ্চিমের মালভূমি বাদে প্রায় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ উত্তর-পশ্চিম ভারতের শতদ্রু, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, বিত বিপাশা ইত্যাদি নদী অববাহিকায় অবস্থিত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জন্ম ও কাশ্মীর, পূর্ব উপকূলের মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদী উপত্যকা ও বদ্বীপ অঞ্চল এবং ৭ পশ্চিমে গুজরাটের নর্মদ ও তাপ্তি নদীর নিম্ন অববাহিকা।
প্রশ্ন ৯. ভারতে খরার (Drought) কারণ কী?
উত্তর : ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) মতে, যখন কোনো অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৭৫ শতাংশ এর কম হয়, তখন তাকে খরা বলে। খরা দু-প্রকার যেমন—স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাতের অভাব দেখা যায় তাকে বলে চরম খরা (Severe Drought) এবং যখন বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫-৫ { শতাংশের মধ্যে হয়, তখন তাকে আংশিক খরা বলে (Moderat { Drought)। ভারতে খরার প্রধান কারণগুলি হল-
১. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতের খরার প্রধান কারণ। ২ভারতের কোনও স্থানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষা দেরিতে আসা সেই স্থানের খরার অন্যতম কারণ। ৩ স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া হল খরা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। 8 কোনো স্থান বর্ষাকালের মধ্যেও বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৫ বনভূমির অভাবের জন্য সূর্যের প্রচণ্ড তাপে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে ভৌম জল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং মাটি ফেটে চৌচির হয়ে খরার সৃষ্টি করে। ৬ পরিবেশদূষণের জন্য বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মৌসুমি বায়ু ঘনীভূত না-হতে পারলেও খরার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন | ১০. ভারতের খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলির নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের প্রধান প্রধান খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলি হল— ১ মরুভূমি ও আংশিক মরুপ্রায় অঞ্চল, ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বা বলা যেতে পারে, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের মধ্যবর্তী কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র অঞ্চল। এ ছাড়া গুজরাটের কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর ও নেলাই কোটাবোমান, উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি ও মির্জাপুর, ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও ওড়িশার কালাহান্ডি অঞ্চল।
প্রশ্ন। ১১. বন্যা ও খরার নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হতে পারে?
উত্তর : ভারতে খরা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি হল— (১) ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত স্থানগুলিতে ছোটো ছোটো বাঁধ ও জলাশয় তৈরি করে এবং প্রধান নদী ও উপনদীগুলির ওপর বড়ো বড়ো বাঁধ ও জলাশয় তৈরি করে বন্যার জলকে ধরে রেখে তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির অধিবাসীদের রক্ষা করা যায়। (২) গ্রীষ্মকালে খরাজনিত পরিস্থিতির সময় বাঁধ ও জলাশয়ে ধরে রাখা জলকে খালের সাহায্যে জলসেচের কাজে লাগিয়ে খরাপ্রবণ অঞ্চলকে খরার প্রকোপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব। ৩ কখনো-কখনো ভূমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। ভূমিক্ষয়ের ফলে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি নদীগর্ভে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমিয়ে দেওয়ায় নদীগর্ভ আর বর্ষার জল বহন করতে পারে না, ফলে বর্ষাকালে নদীতে বন্যা দেখা দেয়। নদীগর্ভ বুজে গিয়ে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হলে, নদীগর্ভে নিয়মিতভাবে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়িয়ে বন্যার প্রকোপ অনেকটা কমানো যায়। ৪ বনভূমির অভাবের জন্য বৃষ্টিপাত কম হলে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের সাহায্যে প্রচুর গাছ লাগিয়ে আংশিকভাবে খরা নিবারণ করা যায়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর : [১] মৌসুমি বায়ুর অত্যধিক প্রভাব : ভারতের জলবায়ুতে ঋতুপরিবর্তন হয় প্রধানত দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে। যথা—একটি হল গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম আর্দ্র মৌসুমি বায়ু এবং অপরটি হলো উত্তর-পূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু। তাই ভারতকে ‘মৌসুমি জলবায়ুর দেশ' বলা হয়। [হ ঋতুপরিবর্তন : ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঋতুপরিবর্তন। এখানে প্রধানত শীতকাল, গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল এবং শরৎকাল—এই চারটি ঋতু দেখতে পাওয়া যায়। ৩ তাপমাত্রার বৈচিত্র্য : বছরে বিভিন্ন সময়ে ভারতে তাপমাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে এবং শীতকালে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আবার স্থান বিশেষেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। যেমন—উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের জলবায়ুর তুলনায় অনেক বেশি চরমভাবাপন্ন। অর্থাৎ উত্তর ভারতের শীত ও গ্রীষ্ম দুই-ই খুব তীব্র। বেশি উচ্চতা এবং উচ্চ অক্ষাংশের জন্যও পার্বত্য অঞ্চলে তাপমাত্রা কম থাকে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে, ১৩% শরৎকালে এবং ৩% শীতকালে সংঘটিত [৪] বৃষ্টিপাতের তারতম্য : ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮৪% হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকালে প্রায় শুকনো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত এবং সমভূমিতে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
[৫] বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বিভিন্ন। ভারতের পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অসম, মিজোরাম, উত্তরবঙ্গ ও পূর্ব হিমালয়ের তরাই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমি-এর বেশি, তাই এদের অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল বলে। আবার রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক ও উত্তর- পশ্চিমের কারাকোরাম অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০ সেমি-এর কম বলে একে শুষ্ক অঞ্চল বলে।
৬)অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিয়মিত। কারণ প্রতিবছর মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণ জলীয় বাষ্প আনে না। এর ফলে কোনো বছর কম জলীয় বাষ্পের জন্য ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা যায়, আবার কোনা বছর বেশি জলীয় বাষ্প আমদানির ফলে অতিবৃষ্টি বা বন্যা দেখা যায়।
৭) স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের সক্রিয়তা : গ্রীষ্মকালে দেশের বহু অঞ্চলে স্থানীয় বায়ুর প্রভাবে কিছু ঝড় বৃষ্টিপাত হয়।
৮) হিমালয় পর্বতের প্রভাব : ভারতের উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে। হিমালয় পর্বত না-থাকলে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত। আবার সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
২. ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেগুলি হল—
[১] অখাংশমাংশ স্থান : ভারত এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এবং উত্তরে ৩৭৬' উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে ৮৪' উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩°৩০′ উত্তর অক্ষাংশ) ভারতের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে গেছে, ফলে অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের উত্তরাংশ নাতিশীতোষ মণ্ডলে এবং ভারতের দক্ষিণাংশ উরমণ্ডলে অবস্থিত।
[2] উচ্চতা সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে কোনো স্থানের প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে। যায়। তাই গাঙ্গেয় সমভূমির তুলনায় সুউচ্চ হিমালয় অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সারাবছর অনেক কম থাকে। যেমন—উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে (লাহুল স্পিতি উপত্যকা, কেদার-বস্ত্রী, রোটাং পাস ইত্যাদি) তাপমাত্রা সারাবছরই ১০°C-এর নীচে থাকে।
[৩] পর্বতের ভূমিকা হিমালয় পর্বত ভারতের উয়তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে। মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। আরব সাগরের উপর দিয়ে আসা মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়, কিন্তু পূর্ব ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
8) সমুদ্রের অবস্থান ও সমুদ্র থেকে দূরত্ব : দক্ষিণ ভারতের তিন দিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উপকূলের জলবায়ু হল সমভাবাপন্ন। সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলে প্রবল। বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাব কম। এই জলবায়ু হল চরমভাবাপন্ন। এখানে শীত ও গ্রীষ্মের উদ্বৃতার প্রসর খুব বেশি।
[৫] মৌসুমি বায়ুর প্রভাব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতীয় জলবায়ু নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়। যথা—ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুকনো হয়। শীতকালে মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় গ্রীষ্মকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে। প্রবাহিত হয়। ভারতে বৃষ্টিপাত একটানা না-হয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত বিরতি ঘটে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের চরম অনিশ্চয়তার জন্য কোনো বছর অনাবৃষ্টি ও খরা এবং কোনো বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যা দেখা যায়।
[৬] জেট বায়ুর প্রভাব : ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যখন ভারতে প্রবেশ করে তার আগেই পশ্চিমা জেট বায়ু (Westerly Jet) উত্তর দিকে সরে যায়। তবে এই সময় ভারতের ওপর যে ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। পুবালি জেট বায়ু (Easterly Jet) থাকে তার অবস্থানের জন্য কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত-এর নিবিড়তা ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে ।
[এ] ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত : মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাজে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়-বৃষ্টি হয়। এটি সাইক্লোন নামে পরিচিত।
৮) পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (Western Disturbances) : শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর) মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়। ইহাই ‘পশ্চিমি ঝঞ্ঝা’ নামে পরিচিত। এই ঘূর্ণবাতের প্রভাবে মাঝে। মাঝে পশ্চিমবঙ্গেও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
৯ )এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব : প্রশান্ত মহাসগারের উভয়পাশে জলবায়ুগত অস্থির অবস্থা হল এল নিনো ও লা নিনা। এল নিনো বছরে আমাদের দেশে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা কম বলে কম বৃষ্টিতে খরা এবং লা নিনা বছরে মৌসুমি বায়ুরা অতি সক্রিয়তায় প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়।
১০) মৃত্তিকা : প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শুকনো বালি ও পাথুরে { সূর্যকিরণে সহজেই উত্তপ্ত হয় বলে উষ্ণতা বেশি। আবার রাতে দ্রুত { তাপ বিকিরণ করে সহজেই শীতল হয়ে যায়। এই কারণেই মৃত্তিকার প্রভাবে উয়তার পরিবর্তন হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৩. ভারতের ঋতুবৈচিত্র্যর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও। বা ভারতের বিভিন্ন ঋতুর বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করো।
উত্তর : ভারতের বিশাল আয়তন ও বিচিত্র ভূপ্রকৃতির জন্য জলবায়ুর আঞ্চলিক তারতম্য থাকলেও ভারত মূলত ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। ভারত সরকারের আবহাওয়া বিভাগ ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করেছেন যথা-- ১) গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে) ও বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) বা মৌসুমি বায়ুর আগমন কাল ৩ শরৎকাল। (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল ও ৪ শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)।
(১) গ্রীষ্মকাল (Summer) (মার্চ থেকে মে) : মার্চ মাসে সূর্য নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেয়। যেহেতু নিরক্ষরেখা ভারতের দক্ষিণ সীমা বরাবর বিস্তৃত, তাই মার্চ মাস থেকে ভারতের সর্বত্র অধিক তাপমাত্রা অনুভূত হয়। এবং এই সময়কে গ্রীষ্মকাল বলে।
[ক] উন্নতা : মার্চ মাসে দক্ষিণ ভারতে (৩৮° সেন্টিগ্রেড) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে। এপ্রিল মাসে এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। এই সময় সূর্য আরও উত্তরে সরে আসায় মধ্যপ্রদেশ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮°– ৪৩° সেন্টিগ্রেড পৌঁছোয়। মে মাসে উত্তর গুজরাটের পশ্চিম ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪৮° সেন্টিগ্রেডকেও কখনো-কখনো ছাড়িয়ে যায়। উচ্চতা ও সমুদ্রের সমভাবাপন্ন জলবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চলে এই সময় উত্তরের সমভূমির তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে (৩৫°– ৪০°C)।
[খ] বায়ুপ্রবাহ : অধিক উয়তার কারণে সারাভারত জুড়েই বায়ুর চাপ কম থাকে এবং রাজস্থান ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। তাই এই সময় ভারতের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব উপকূলসংলগ্ন এলাকায় বিকেলের দিকে প্রায়ই ঝড়-বৃষ্টি সহ ‘কালবৈশাখী'-এর উদ্ভব ঘটে উত্তর-পশ্চিম ভারতে তখন প্রবাহিত হয়—উম্বু ও শুষ্ক বায়ু, যা ‘লু নামে পরিচিত। রাজস্থানে ও তৎসলংগ্ন রাজ্যে এই সময় ধুলোর ঝড় সৃষ্টি হয়। একে আঁধি বলে।
[গ] বৃষ্টিপাত : গ্রীষ্মকাল শুষ্ক হলেও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ ও নিম্নচাপের ফলে কখনো-কখনো বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টি হয়।
কালবৈশানীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে এবং সরগেছিলার প্রভাবে অসম ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে গড়ে ২০-৪০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। কেরল ও কর্ণাটকের উপকূল অঞ্চলে 'আমবৃষ্টি-এর প্রভাবে ১০-২৫ সেমি বৃষ্টিপাত হয়। কর্ণটিকে আ িCherry Blossom নামে পরিচিত। •
(2) বর্ষাকাল (Monsoon) (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) : (দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল) চরম গ্রীষ্মে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, তখন দক্ষিণের সমুদ্র অঞ্চল থেকে উচ্চচাপের শীতল বায়ু ভারতের মূল ভূভাগের দিকে ধাবিত হয়। এই বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত। বিষুবরেখা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী এই বায়ুপ্রবাহ ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে ভারতের অভিমুখে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (ক) আরব সাগরীয় ও (খ) বঙ্গোপসাগরীয় এই দুই শাখায় বিভক্ত। *
ক.মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা :এই শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢালে বাধা পেয়ে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় (৩০০-৫০০ সেমি)। আবার অন্যদিকে, ওই পর্বতের পূর্ব ঢালে অর্থাৎ দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরভাগ বৃষ্টিপাতের র অভাবে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এই র মৌসুমি ব্যবসাপসাগরীয় শাখা শাখা পূর্ব হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বাধা পেয়ে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মেঘালয়ের গারো, খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে = অবস্থিত চেরাপুঞ্জি মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় (বার্ষিক ১২৫০ সেমি)। আবার, ওই পর্বতের উত্তর চালে শিল অঞ্চল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
বর্ষাকালীন উষ্ণতা : অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য বর্ষাকালে উয়তা কমে যায়। এই সময় উত্তর ভারতের গড় তাপমাত্রা থাকে ২০°- ২৫°সেন্টিগ্রেড এবং দক্ষিণে ভারতের গড় তাপমাত্রা 2000 সেন্টিগ্রেড। ● বর্ষী বৃষ্টিপাত ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮০% ই হয় বর্ষাকালে। পশ্চিম উপকূল ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিবাত চালে প্রায় ২০০ সেমি এর বেশি বৃষ্টিপাত হয় আবার উত্তর পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চল ও বৃষ্টিচ্ছায় অশ্বল ছাড়া বাকি সর্বত্র ৫০-২০০ সেমি অ এর মতো বৃষ্টিপাত হয়। ● জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হল ভারতে বর্ষাকাল। অধিক উন্নতা ও আর্দ্রতা এবং ক্রমাগত বৃষ্টি বর্ষাকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য।।
(৩) শরৎকাল (Autumn) (অক্টোবর থেকে নভেম্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল) : অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সূর্য মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থলভাগের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপের দিক ধাবিত হয়। স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন বলে। বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ু কিছু পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং পূর্বঘাট পর্বতমালায় বাধা পেয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু উপকূলে শরৎকালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে এই-সমস্ত অঞ্চলে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয়। বঙ্গোপসাগরের উয় ও আর্দ্র বায়ুর সঙ্গে মিলনের ফলে, সময় সময় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণবাতের ফলে র পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু উপকূলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমবঙ্গের এই ঘূর্ণবাত আশ্বিনের ঝড়' নামে খ্যাত। এই সময় ভারতের সর্বত্র তাপমাত্রা কমতে থাকে। আকাশ মেঘমুক্ত হলে হিম পড়ে।
(৪) শীতকাল (Winter) (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) : ক ভারতের শীতকালীন তাপমাত্রা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সূর্য মকরক্রান্তির ওপর থাকে বলে ভারতের ওপর সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। তাই এখানে তাপমাত্রা কম অনুভূত হয় এবং এই সময়কে শীতকাল বলে; তবে উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারত মকরক্রান্তির কাছে অবস্থিত বলে দক্ষিণ ভারতের শীতকালীন তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। তামিলনাড়ুতে শীতকালের যখন তাপমাত্রা ২৫° – ২৬° সেন্টিগ্রেড তখন পাঞ্জাবের তাপমাত্রা ১৩°–১৮° সেন্টিগ্রেড। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনুভূত হয় উত্তর-পশ্চিম ভারতে (৫° সেন্টিগ্রেড), অথচ এ সময় উপদ্বীপ অংশের তাপমাত্রা ২৪ সেন্টিগ্রেডের নীচে নামে না। শ্রীনগর পাকিস্তান চন্ডীগড় চি দেরাদুন নেপাল জয়পুর ভারত শীতকালে উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তরপ্রদেশ (গোমুখ, কেদার-বদ্রী, জম্মু-কাশ্মীর) ও হিমাচল প্রদেশের (মানালি, লাহুল ও স্পিটি অঞ্চল) বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায় (−১° সেলসিয়াস থেকে ৪০° সেলসিয়াস পর্যন্ত)।
[খ] ভারতে শীতকালীন বায়ুপ্রবাহ : ভূমধ্যসাগরীয় পশ্চিমাবায়ু শীতকালে পশ্চিম দিক থেকে কাশ্মীরে ও পাঞ্জাবে প্রবেশ করে। ফলে এই অঞ্চলে কিছু বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়, একে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে। এই বৃষ্টিপাতে বিশেষত পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় গমচাষে সুবিধা হয়। শীতকালে মাঝে মাঝে শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়, এতে তাপমাত্রা খুব কমে যায়। ভোরের দিকে এই সময় কুয়াশা পড়ে।
[গ] ভারতের শীতকালীন বৃষ্টিপাত : শীতকালে দক্ষিণ ভারতে উপকূল অংশে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত, হতে থাকে। এই বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে আসে বটে, কিন্তু এই বায়ুতে জলীয় বাষ্প বিশেষ থাকে না। এই বায়ুপ্রবাহের ফলে অতি নগণ্য বৃষ্টিপাত হয়। তবে শীতকালের শুরুতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উত্তর ভারতে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নির্গত বায়ুর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষে যে-ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য করে। বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই ঘূর্ণিঝড় ও প্রত্যাবর্তনকারী বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এবং তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্বে করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
প্রশ্ন ৪ ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব।
উত্তর : ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাই ভারতকে ‘মৌসুমি জলবায়ুর দেশ' বলা হয়। ভারতের জলবায়ু ও জনজীবনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবগুলি হল— জলবায়ুর ওপর প্রভাব
(১) বৃষ্টিপাত : ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে। ভারতের বর্ষাকাল মৌসুমি বায়ুর আগমন, বিচরণ ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।
২) ঋতুবৈচিত্র্য : মৌসুমি বায়ুর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারতের ঋতুপরিবর্তন হয়ে থাকে, যথা—শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ।
৩) বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন : ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কণ্টন সর্বত্র সমান নয়।
(৪) বৃষ্টিপাতের ছেদ (Break of Monsoon) : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একটানা বৃষ্টিপাতের মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের ছেদ ঘটে।
৫ )আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল : জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল হল আর্দ্র ও জলীয় বাষ্পহীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকাল হল শুষ্ক।
৬) বায়ুপ্রবাহ : গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ দেখা যায় (সমুদ্রবায়ু) এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় (স্থলবায়ু)।
৭ উন্নতা : মৌসুমি বায়ুর আগমনে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। ■ ও বৃষ্টি হয় বলে ভারতের গড় উয়তা ৫° –১০°C কমে যায়। • আবার শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনে আকাশ মেঘমুক্ত হয়। বলে গড় উন্নতা কিছুটা বেড়ে যায়। চ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি : শরৎকালের প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে যেসকল ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝে মাঝে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
জনজীবনে প্রভাব:
(১) কৃষিকাজের ওপর প্রভাব ভারতের কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল (বিশেষত খারিফ শস্য)।
২ কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন : ভারতে কৃষিভিত্তিক শিল্প (বস্ত্র শিল্প, চিনি শিল্প, পাট শিল্প) স্থাপনেও মৌসুমি বায়ুর পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
৩ অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি : মৌসুমি বায়ুজনিত বৃষ্টিপাতের তারতম্য ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর অরণ্যসম্পদ সৃষ্টি করেছে।
৪ মৃত্তিকার ওপর প্রভাব মৃত্তিকা সৃষ্টি, মৃত্তিকার গঠন ইত্যাদি নানান বিষয় নির্ভর করে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর।
৫ অর্থনৈতিক বিকাশ ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশসাধনে মৌসুমি বায়ু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
৬) জীবনযাত্রা : ভারতের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবিকা, পোশাক, বাসস্থান মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৭ জীবন ও সম্পত্তিহানি : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝে মাঝে যে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তা অনেক সময় জীবন ও সম্পত্তির বিনাশ ঘটায়।
৮) খরা ও বন্যার প্রভাব মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে এখানে মাসে মাসে স্বল্পবৃষ্টিতে খরা ও প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়। খরা ও বন্যা উভয়ই জনজীবন ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে।
৫. ভারতের মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তর : গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর প্রভাবে ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে। ভারতের প্রায় ৯০% বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকলেও মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে অত্যন্ত অনিশ্চিত। মৌসুমি বায়ুর এই খামখেয়ালিপনার জন্যই ভারতে কোনো বছর খরা ও কোনো বছর বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতের মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষিকাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
১) মৃত্তিকার ওপর প্রভাব :মৃত্তিকার উৎপত্তি, আর্দ্রতা, শুষ্কতা, মৃত্তিকা ক্ষয়, ভূমিধস ইত্যাদির ওপর মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাব ফেলে। বৃষ্টির পরিমাণের তারতম্য ঘটে। যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ধৌত প্রক্রিয়াও বেশি হয় ও মাটি বেশি উর্বর হয়। আবার যেসব অঞ্চলে স্বল্প বৃষ্টিপাত হয় সেখানে জলসেচের মাধ্যমে কৃষিকাজ করা হয় ও মাটির লবণতা বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকার উৎপত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে প্রধান শিলাস্তর থেকে এলুভিয়েশান প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা আবার স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে লাভা শিলা থেকে রেগুর মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে অনাবৃত ভূমিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বাড়ে।
[২] সভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি বিশেষভাবে নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের ওপর। যে সব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমির বেশি, সেখানে চিরহরিৎ উদ্ভিদ দেখা যায়। যেমন—পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এই অরণ্য দেখা যায়। ভারতে শীতকাল শুষ্ক বলে এখানে পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যেখানে বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি সেখানে শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়। নদী মোহানাগুলিতে লবণাক্ত জলের সবুজ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন—সুন্দরবন। শুষ্ক জলবায়ুর সীমানার দিকে ৫০ সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে হালকা জঙ্গল, কাঁটা ঝোপঝাড় ও সাভানা তৃণভূমি জন্মায়। যেমন—গুজরাটের পশ্চিমাংশ, রাজস্থানের মরুভূমি ইত্যাদি।
৩) কৃষিকাজের ওপর প্রভাব ভারতের কৃষিকাজ সম্পূর্ণরূপে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বণ্টন এবং তার আগমন ও প্রত্যাগমনের ওপর ভিত্তি করে ভারতে শস্য ক্যালেন্ডার তৈরি হয়। খরিফ শস্যের চাষ হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত দ্বারা প্রভাবিত অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে। আবার কম বৃষ্টিপাতযুক্ত সময়ে জলসেচের মাধ্যমে রবি শস্যের চাষ হয়। এমনকি বাগিচা ফসল, তত্ত্বফসল চাষও বৃষ্টিপাত ও উয়তার ভূমিকা অপরিসীম।
No comments:
Post a Comment