ভারতের জনসংখ্যা: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৯|class 10 geography chapter 5.9 questions answer| geography suggestion|
দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun
এককথায় উত্তর দাও :
প্রশ্ন ১. Census শব্দের উৎপত্তি হয় কোন্ শব্দ থেকে ?
উত্তর: লাতিন শব্দ ‘Censre' |
প্রশ্ন ২. ভারতের বর্তমানে মোট জনসংখ্যা কত?
উত্তর: ১২১.০২ কোটি।
প্রশ্ন ৩.ভারতের জনঘনত্ব কত?
উত্তর: 8 প্রতি বর্গকিমিতে ৩৮২ জন।
প্রশ্ন ৪.ভারতের কোন্ রাজ্যের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: বিহার (১১০২ জন/বর্গকিমি)
প্রশ্ন ৫. ভারতের কোন্ রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ( ২০০১ - ২০১১) ?
উত্তর: ৬ নাগাল্যান্ড।
প্রশ্ন ৬. ভারতের কোন্ দুটি রাজ্যে কন্যা শিশু মৃত্যুর হার খুব বেশি?
উত্তর: হরিয়ানা ও রাজস্থান রাজ্যে।
প্রশ্ন ৭. ভারতের কোন্ রাজ্যে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ?
উত্তর: উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে (১৯.৯৬ কোটি)।
প্রশ্ন ৮. সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে জন্মহার ও মৃত্যুহারে তারতম্যের জন্য জনসংখ্যার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াকে কী বলে?
উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
জেনে রাখো: ভারতের মানুষ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৭.৫% মানুষ | ভারতে বাস করে। (চিনের জনসংখ্যা হল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৯.৪%)।
প্রশ্ন ৯.ভারতের মানুষ-জমির অনুপাত কত?
উত্তর: প্রতি বর্গকিমিতে প্রায় ৪৩২ জন।
প্রশ্ন ১০. এককথায় জনঘনত্ব বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: দেশের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে মোট জমির অনুপাত।
প্রশ্ন ১১. এককথায় মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কী বোঝ?
উত্তর: দেশের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে মোট কার্যকরী জমির অনুপাত।
প্রশ্ন ১২. কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যকে কী বলে?
উত্তর: জনাকীর্ণতা বা জনাধিক্যতা।
প্রশ্ন ১৩. কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম হলে তাকে কী বলে?
উত্তর: জনস্বল্পতা বা জনবিরলতা।
প্রশ্ন ১৪. ভারতের কোন্ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শহরবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: দিল্লির জনসংখ্যার ৯৩.১৮% শহরবাসী (২০১১)।
প্রশ্ন ১৫. ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের মোট শহরের সংখ্যা ক-টি?
উত্তর: ৭৯৩৬টি।
প্রশ্ন ১৬. ভারতের দুটি প্রশাসনিক শহরের নাম লেখো।
উত্তর: দিল্লি ও চণ্ডীগড়।
প্রশ্ন ১৭. ভারতের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ লোক শহরে বাস করে?
উত্তর: ৩১.২% লোক ।
প্রশ্ন ১৮. এক কোটির বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরকে কী বলে?
উত্তর : মেগাসিটি।
প্রশ্ন ১৯. ভারতের বৃহত্তম শহর কোনটি?
উত্তর: মুম্বাই।
জেনে রাখো: দ্বৈত নগর (Twin City) : দুটি মূল নগর এক সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে দ্বৈত নগর বলে। (যেমন—কলকাতা-হাওড়া, সেকেন্দ্রাবাদ-হায়দরাবাদ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২০. ২০১১ খ্রিস্টাব্দের সেনসাস অনুযায়ী ভারতে ক-টি মহানগর আছে?
উত্তর: ৫৩টি।
প্রশ্ন ২১. ভারতের দুটি মহানগরের উদাহরণ দাও।
উত্তর: দিল্লি, কলকাতা।
প্রশ্ন ২২. ভারতে মোট ক-টি মেগাসিটি রয়েছে?
উত্তর: ৩টি।
প্রশ্ন ২৩. ভারতের মেগাসিটিগুলি কী কী?
উত্তর: বৃহত্তর মুম্বাই, বৃহত্তর কলকাতা ও বৃহত্তর দিল্লি।
প্রশ্ন ২৪. ভারতের একটি সাংস্কৃতিক শহরের নাম লেখো।
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন।
প্রশ্ন ২৫. ভারতের একটি বন্দর নগরের নাম লেখো।
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া।
প্রশ্ন ২৬. ভারতের কোন্ রাজ্যের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ও সাক্ষরতার হার সবথেকে কম?
উত্তর: বিহার।
প্রশ্ন ২৭. ভারতের ১টি প্রশাসনিক শহর ও একটি শিল্পশহরের নাম লেখো।
উত্তর: ভারতের প্রশাসনিক শহর–দিল্লি, এবং ভারতের শিল্পশহর—জামসেদপুর।
প্রশ্ন ২৮. ভারতের ২টি সামরিক শহরের উদাহরণ দাও।
উত্তর: ভারতের ২টি দুর্গ বা সামরিক শহর হল— পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর ও মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র।
প্রশ্ন ২৯. ভারতের ২টি বন্দর শহরের নাম লেখো।
উত্তর: ভারতের ২টি বন্দর শহর হল পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া ও ওড়িশার পারাদ্বীপ।
প্রশ্ন ৩০. ভারতের একটি অত্যধিক জনঘনত্বযুক্ত রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর: ভারতের অত্যাধিক জনঘনত্বযুক্ত রাজ্য হল বিহার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল দিল্লি।
প্রশ্ন ৩১. ভারতের একটি করে অতিবিরল জনঘনত্বযুক্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর: ভারতের একটি অতিবিরল জনঘনত্বযুক্ত রাজ্য হল- অরুণাচল প্রদেশ এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. আদমশুমারি (Census) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : কোনো দেশ বা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি হল সেনসাস বা আদমশুমার।
প্রশ্ন ২. জনসংখ্যা (Population) কাকে বলে?
উত্তর : বিজ্ঞানের পরিভাষায় কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সমস্ত জীবকে একত্রিতভাবে জনসংখ্যা বলে। তবে ভূগোলে জনসংখ্যা বলতে কোনো স্থানে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাকেই বোঝায়।
জেনে রাখো: সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা, মার্কিন যুক্তরষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মিলিত জনসংখ্যার থেকে বেশি।
প্রশ্ন ৩. ভারতের প্রথম চারটি জনবহুল রাজ্যের নাম লেখো ৷
উত্তর : ভারতের জনবহুল রাজ্য—i. উত্তরপ্রদেশ (১৯.৯৬ কোটি) ii. মহারাষ্ট্র (১১.২৪ কোটি), iii. বিহার (১০.৩৮%) এবং iv. পশ্চিমবঙ্গ (৯.১ কোটি)।
জেনে রাখো: মহারাষ্ট্রের থানে হল ভারতের বৃহত্তম জনসংখ্যা বিশিষ্ট জেলা।
প্রশ্ন ৪. প্রান্তিক মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ স জনসংখ্যা বৃদ্ধি (Population Growth) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে জন্মহার ও মৃত্যুহারের তারতম্য ও পরিযানের (migration) জন্য জনসংখ্যার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলে।
প্রশ্ন ৫. জনসংখ্যার অভিক্ষেপ (Population projection) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার সম্পর্কে আগে থেকে পূর্বাভাস দেওয়াকে জনসংখ্যার অভিক্ষেপ বলা হয়। তবে এর মাধ্যমে জনসংখ্যা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায় না কিন্তু এর মাধ্যমে জন্মহার, মৃত্যুহার ও পরিব্রাজন এর হার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
জোন রাখো: পরিব্রাজন (Migration) : কোনো স্থানে বহুদিন বা স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে মানুষ যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিচরণ করে, তখন এই প্রক্রিয়াকে পরিব্রাজন বলা হয়। পরিব্রাজন প্রধানত দু-রকমের হয়। (i) অন্য কোনো দেশ থেকে একদেশে এসে বসবাস করাকে বলে অভিবাস বা Immigration এবং (ii) একদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে গমন করাকে বলে প্রবাসন বা Emigration 1
জন্মহার (Birth rate) : প্রতি বছর কোনো দেশ বা অঞ্চলে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় যত সংখ্যক জীবিত শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাকে স্থূল জন্মহার বলে। একবছরে জন্মগ্রহণকারী জীবিত শিশুর সংখ্যা বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা জন্মহার =
মৃত্যুহার (Death rate) : কোনো দেশে বা অঞ্চলে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় যতজন মানুষ মারা যায়, তাকে মৃত্যুহার বলে। একবছরে কোনো দেশের স্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা মৃত্যুহার = বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা।
প্রশ্ন ৬. জনঘনত্ব (Population Density) কাকে বলে ?
উত্তর : কোনো অঞ্চলে মানুষের বণ্টনগত তারতম্যের সূচক হল জনসংখ্যার ঘনত্ব বা জনঘনত্ব। অর্থাৎ কোনো স্থানের বা দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলে যত জন লোক বাস করে। তাকেই জনঘনত্ব (Population Density) বলে।
প্রশ্ন ৭. জনঘনত্ব কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
উত্তর : কোনো অঞ্চলের জনঘনত্ব নির্ণয় করতে হলে সেই অঞ্চলের মোট আয়তন (ক্ষেত্রফল) দিয়ে সেই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ভাগ করতে হয়। ... জনঘনত্ব উদাহরণ : মোট জনসংখ্যা মোট জমির ক্ষেত্রফল = ভারতের ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনঘনত্ব = = ৩৮২.২০ বা ৩৮২ জন/বর্গকিমি ১২১.০২ কোটি ৩১.৬৬ লক্ষ বর্গকিমি .. ভারতের জনঘনত্ব হল ৩৮২ জন/বর্গকিমি।
প্রশ্ন ৮. জনাকীর্ণতা বা জনাধিক্য (Over population) কাকে বলে ?
উত্তর : দেশের জনসংখ্যা যদি বাড়ে এবং তার তুলনায় বা সম্পদের পরিমাণ যদি কমে যায়, তাহলে সেই দেশে বাড়তি জনসংখ্যা দেখা দেবে। জনসংখ্যার এই অবস্থাকে জনাকীর্ণতা } জনাধিক্য বলে। যেমন—ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার ইত্যাদি উন্নয়নশীল দেশে এই অবস্থা লক্ষ করা যায়। জনাকীর্ণতার ফলে দেশে খাদ্যসংকট, হিংসা, রোগব্যাধি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।
প্রশ্ন ৯. জনস্বল্পতা বা জনবিরলতা (Under population) কাকে বলে ?
উত্তর : কোনো দেশে সম্পদের তুলনায় লোকসংখ্যা কম হলে বা লোকসংখ্যার অভাবে সম্পদ সৃষ্টি না হলে, সেই জনসংখ্যাকে জনস্বল্পতা বা জনবিরলতা বলা হয়। যেমন—অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে সম্পদের তুলনায় লোকসংখ্যা খুবই কম।
প্রশ্ন ১০. জনবিস্ফোরণ (Population Explotion) কাকে বলে ?
উত্তর : যখন কোনো দেশে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে জনবিস্ফোরণ বলে। এই অবস্থা তখনই সৃষ্টি হয়, যখন বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার কমে যায়।
প্রশ্ন ১১. শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা স্থির/সুস্থিত জনসংখ্যা (Stable population) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায় স্থিতাবস্থা লাভ করলে, তাকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা স্থির জনসংখ্যা বা সুস্থিত জনসংখ্যা বলে।
প্রশ্ন ১২. জনসংখ্যার ঋণাত্মক বৃদ্ধি (Negative Population Growth) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : যে সমস্ত দেশে মৃত্যুহারের থেকে জন্মহার কম সেইসব দেশে জনসংখ্যা না বেড়ে বরং হ্রাস পায়। একেই জনসংখ্যার ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলা হয়।
প্রশ্ন ১৩. নির্ভরশীল জনসংখ্যা (Depending Population) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : কর্মঠ কম বা মধ্যবয়স্ক জনসংখ্যার (যুবক বা যুবতী) ওপর শিশু, নারী ও বয়স্কদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাকেই নির্ভরশীল জনসংখ্যা বলে। নির্ভরশীল জনসংখ্যাকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—(i) শিশু নির্ভরশীলতার অনুপাত বা অপ্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যা এবং (ii) বয়স্ক নির্ভরশীলতার অনুপাত।
প্রশ্ন ১৪. অপ্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত (Youth Dependency Ratio or YDR) বলতে কী বোঝানো হয় ?
উত্তর : ১৫ বছরের নীচের জনসংখ্যাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক । { জনসংখ্যা বলা হয়। ১৫ বছর বয়সের উপরের জনসংখ্যার { ওপর এই অপ্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীলতার
গাণিতিক অনুপাতকে অপ্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বলে। .: অপ্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বা ১৫ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যা ১৫ বছর বয়সের বেশি জনসংখ্যা YDR =
প্রশ্ন ১৫. বয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের জনসংখ্যাকে বয়স্ক জনসংখ্যা বলে। ৬৫ বছরের কম বয়সের জনসংখ্যার ওপর এই বয়স্ক জনসংখ্যার অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীলতার গাণিতিক অনুপাতকে বয়স্ক নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত বলে। বয়স্ক নির্ভরশীলতার অনুপাত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের জনসংখ্যা ৬৫ বছর বয়সের কম জনসংখ্যা ।
প্রশ্ন ১৬. নারী-পুরুষ অনুপাত (Sex ratio) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : প্রতি হাজার জন পুরুষে নারীর সংখ্যাকে নারী-পুরুষ অনুপাত বলে। উদাহরণস্বরূপ : ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে নারী-পুরুষের অনুপাত, প্রতি ১০০০ জন পুরুষ জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা হল ৯৪৩ জন।
প্রশ্ন ১৭. ধারণযোগ্য উন্নয়ন (Substainable Development) কাকে বলে ?
উত্তর : যে উন্নয়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সম্পদের ভাণ্ডারকে অটুট রেখে, বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটায়, তাকেই ধারণযোগ্য উন্নয়ন বলা হয়।
প্রশ্ন ১৮. শহর (Town) কাকে বলে ?
উত্তর: ৭৫%-এর অধিক কৃষি ছাড়া অন্যান্য জীবিকার ওপর নির্ভর করে, : আদমশুমারি অনুযায়ী যে স্থানের পুরুষ অধিবাসীদের বসবাস করে এবং এলাকাটি পৌর এলাকা হলে তাকে শহর বা জনঘনত্ব কমপক্ষে ৪০০ জন/বর্গকিমি, ৫০০০ জনের অধিক লোক পৌরবসতি (Town) বলে।
প্রশ্ন ১৯. নগরায়ণ (Urbanisation) কাকে বলে ?
উত্তর : নগরায়ণ হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল ধীরে ধীরে শহরে পরিণত হয় এবং যেখানে আধুনিক জীবনযাত্রা জটিল ও সরল উভয়ভাবেই জীবনে চলার পথ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ২০. নগর (City) কাকে বলে ?
উত্তর : যেসব শহরের জনসংখ্যা ১ লক্ষ বা তার বেশি হয়, তাকে নগর বলে। নগরের উদাহরণ—দুর্গাপুর, কল্যাণী, বিধাননগর ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২১. মহানগর (Metropolis) কাকে বলে?
উত্তর : যেসব নগরের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ বা তার বেশি, সেই নগরগুলিকে মহানগর বলে। গ্রিক শব্দ 'Metropolis' কথার অর্থ মূলনগরী' বা ‘Mother city'। উদাহরণ—দিল্লি, মুম্বাই ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২২. মেগাসিটি (Megacity) কাকে বলে?
উত্তর : যে সমস্ত শহরের জনসংখ্যা ৫০ লক্ষের বেশি, তাদের মেগাসিটি (Megacity) বলে। যেমন—মুম্বাই, কলকাতা দিল্লি।
প্রশ্ন ২৩. স্ট্যাটুটরি শহর (Statutory Town) কাকে বলে?
উত্তর : যখন কোনো অঞ্চল, মিউনিসিপ্যালিটি, কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বা নোটিফায়েড টাউন এরিয়া কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে স্ট্যাটুটরি শহর বলে।
প্রশ্ন ২৪. সেনসাস শহর (Census Town) কাকে বলে ? ★
উত্তর : কোনো অঞ্চলের নৃন্যতম জনসংখ্যা যদি ৫০০০ জন হয় এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব যদি ৪০০ জন/বর্গকিমি হয় এবং অঞ্চলটির মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৭৫% যদি কৃষিছাড়া অন্যান্য কাজের সঙ্গে নিযুক্ত থাকে, তখন তাকে সেনসাস শহর বলে।
প্রশ্ন ২৫. ভারতের প্রথম পাঁচ সর্বোচ্চ সাক্ষরতাযুক্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর : (i) কেরল (৯৪.০০%) (ii) লাক্ষাদ্বীপ (৯২.২৮%) (iii) মিজোরাম (১১.৩৩%) (iv) গোয়া (৮৮.৭০%) (v) ত্রিপুরা (৮৭.২২%)
জেনে রাখো: মিজোরাম রাজ্যের দুই জেলা সেরচিপ (৯৮.৭৬%) এবং আইজল (৯৮.৫০%)-এর সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি। আবার, মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলা (৩৭.২২) এবং ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলা (৪১.৫৮)-এর সাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. কাম্য জনসংখ্যা (Optimum Population) বলতে কি বোঝ?
উত্তর : যখন দেশের জনসংখ্যা ও সম্পদের পরিমাণ সমান অর্থাৎ Optimum হয়, তখন তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, আদর্শ বা কাম্য জনসংখ্যা হল সেই জনসংখ্যা, যার বৃদ্ধির ফলে দেশে জনাধিক্য বা Over population দেখা দেয় আবার যার হ্রাসের ফলে দেশে জনস্বল্পতা বা Under Population সৃষ্টি হয়। জনাকীর্ণতা — কাম্য জনসংখ্যা জনস্বল্পতা জনস্বল্পতা কোনো দেশে কাম্য জনসংখ্যা থাকলে মানব সম্পদের পূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং দেশে মোট উৎপাদন ও মাথাপিছু উৎপাদন সর্বাধিক হয়। জনসংখ্যা কাম্য জনসংখ্যা তবে যেহেতু কাম্য জনসংখ্যা একটি আদর্শ জনসংখ্যা, তাই এটি নির্ণয় করা সহজসাধ্য নয়। কাম্য জনসংখ্যা প্রধানত দেশের প্রাকৃতিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ২. ধারণযোগ্য উন্নয়ন (Sustainable Development) কাকে বলে ?
উত্তর : সহনশীল উন্নয়নের ধারণাটি ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে উন্নয়নের অর্থনীতিতে আলোচিত হয়েছিল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বহনক্ষম উন্নয়নের ধারণাটির সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটান মেডোস এবং তাঁর তিন সহযোগী গবেষক। তাঁর রচিত “The Limits to growth' পুস্তকে। একদিকে যেমন সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ঘটেছে তেমনি অন্যদিকে পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে যার ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সম্পদের অবলুপ্তির ফলে অর্থনৈতিক দক্ষতা ও বিকাশ ব্যাহত হবে। অতএব আগামী প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে সম্পদের সঠিক ব্যবহারই এই উন্নয়নের মূল কথা। মেডোসের পরে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশবিদ ব্যারি কমেনার The closing circle গ্রন্থে কিভাবে আধুনিক কৃৎকৌশল পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে তার বর্ণনা করেন। বহনক্ষম উন্নয়নের ধারণাটি পরিবেশের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কটিকে তুলে ধরে। যেহেতু বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে সম্পদের বা পরিবেশের ক্ষয় অনিবার্য সেহেতু যথাসম্ভব পরিবেশ-এর কম বিনাশ বা ক্ষতি ঘটিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে যে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ সুরক্ষিত রাখা যায়, তাকেই ধারণযোগ্য বা বহনক্ষম উন্নয়ন বলে।
এই উন্নয়ন পদ্ধতির সাহায্যে, বৈদেশিক ঋণের বোঝা থেকে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মুক্ত করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দক্ষতা ও মানসিকগুণাবলি বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশের অবনতি ও সম্পদ হ্রাস রোধ করা হয়। ধারণযোগ্য উন্নয়নের ধারণাটি পরিবেশের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কটিকে তুলে ধরে। ধারণযোগ্য উন্নয়নের জন্য—(১) সঞ্চিত উপকরণের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে (জীবাশ্ম জ্বালানি, খনিজ দ্রব্য, জৈব বৈচিত্র্য) (২) পুনর্ভব উপকরণে পরিমিত ব্যবহার করতে হবে (ভূগর্ভস্থ জল, স্বাদু জল সম্পদ, মাটি), (৩) আবর্জনা সৃষ্টি হ্রাস করতে হবে এবং (৪) মানুষের চহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনধারণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রশ্ন ৩. জনঘনত্ব (Population Density) কী ?
উত্তর : কোনো অঞ্চলের মানুষের বণ্টনগত তারতম্যের সূচক হল জনসংখ্যার ঘনত্ব বা জনঘনত্ব। কোনো স্থানের প্রতি বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলে যতলোক বাস করে, তাকেই জনঘনত্ব বা Population Density বলে।
কোনো অঞ্চলের জনঘনত্ব নির্ণয় করতে হলে সেই অঞ্চলের মোট ক্ষেত্রফল দিয়ে সেই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ভাগ করতে হয়।
এতএব, জনঘনত্ব = মোট জনসংখ্য মোট জমির ক্ষেত্রফল উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১২১,০১,৯৩,৪২২ জন এবং ভারতের মোট ক্ষেত্রমান হল ৩১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪১৪ { বর্গকিমি, যার সাহায্যে ভারতের জনঘনত্ব নির্ণয় করা যাবে। সুতরাং, ভারতের ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনঘনত্ব = ১২১.০২ কোটি জন ৩১.৬৬ লক্ষ বর্গকিমি = ৩৮২.২০ জন বা ৩৮২ জন/বর্গকিমি।
জনঘত্বের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Population Density) : (১) জনঘনত্ব হল মানুষ জমির একটি পরিমাণগত সম্পর্ক।
(২) জনঘনত্ব থেকে কোনো দেশের জনসংখ্যা বণ্টনের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা গেছে মোট জনসংখ্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা লাভ করা যায় না।
(৩) জনঘনত্ব থেকে কোনো দেশের কাম্য জনসংখ্যা ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা লাভ করা যায় না।
(৪) জনঘনত্ব সর্বদা পূর্ণমানে প্রকাশ করা হয়।
জেনে রাখো: মানুষ-জমির অনুপাত (Man land Ratio) : যেসব জমি মানুষের কাজে লাগে এবং যেসব জমি থেকে মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, সেইসব জমিকে কার্যকর জমি বলে। মানুষ-জমি অনুপাত বলতে, কোনো দেশের বা স্থানের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে কার্যকর জমির অনুপাতকে বোঝায়। মানুষ-জমি অনুপাত = মোট জনসংখ্যা + তাদের কর্মক্ষমতা + সংস্কৃতি মোট কার্যকর জমির অনুপাত × জমির উৎপাদন ক্ষমতা।
প্রশ্ন 8. ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি কী কী?
উত্তর : ১৯০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ভারতে জনসংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ৫ গুন। জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণগুলি হল—
[i] উচ্চজন্মহার ও মৃত্যুহার হ্রাস : ১৯০১ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত জন্মহার ও মৃত্যুহার উভয়ই বেশি থাকায় জনসংখ্যা তেমনভাবে বাড়েনি। কিন্তু ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের পর জন্মহার খুব সামান্য কমলেও মৃত্যুহার অনেকটা কমে যায় বলে জনসংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ে।
[ii] দারিদ্র্য : এদেশে দারিদ্রের হার বেশি এবং পুত্র সন্তানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার আশায় জনসংখ্যা বাড়ছে।
[iii] শরণার্থী আগমন : স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশবিভাগের কারণে শরণার্থী আগমনে এদেশে জনসংখ্যা বাড়ে।
প্রশ্ন ৫. গঙ্গা সমভূমিতে জনসংখ্যা অধিক কেন?
উত্তর : গঙ্গা সমভূমিতে অবস্থিত বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য। এখানে জনসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণ—
[i] সমতল ভূভাগ ও উর্বর মৃত্তিকা : গঙ্গা সমভূমি বিস্তীর্ণ সমতল ভূভাগ এবং মৃত্তিকা উর্বর। ফলে অর্থনৈতিক উন্নতির পরিকাঠামো এখানে উন্নত।
[ii] উন্নত কৃষি : উর্বর মৃত্তিকা ও উন্নত জলসেচের কারণে কৃষি ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। জলসেচের মাধ্যমে কোনো কোনো জমিতে বছরে তিনবারের বেশিও ফসল উৎপাদন হয়। উত্তরপ্রদেশ হল ভারতের কৃষিভাণ্ডার।
[iii] উন্নত যোগাযোগ : ভূমিভাগ সমতল হওয়ায় সড়ক ও রেলপরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। গঙ্গানদী জলপথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
[iv] শিল্পের উন্নতি : উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষিদ্রব্য প্রাপ্তি প্রভৃতি কারণে অসংখ্য বিভিন্ন ধরনের শিল্প এখানে গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পাঞ্চল।
প্রশ্ন ৬. হিমালয় অঞ্চলে জনসংখ্যা কম কেন?
উত্তর : জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি হিমালয়ের রাজ্যগুলির জনঘনত্ব অত্যন্ত কম। কারণ—
[i] বন্ধুর ভূপ্রকৃতি : বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, খাড়া ঢাল, গভীর উপত্যকা, মৃত্তিকার অনুপস্থিতির কারণে জনবসতি গড়ে ওঠার পরিবেশ প্রতিকূল।
[ii] প্রতিকূল জলবায়ু ও গভীর বনভূমি : হিমালয়ের বেশিরভাগ অংশের জলবায়ু অত্যন্ত শীতল এবং বেশ কিছু অংশ গভীর বনভূমিতে ঢাকা যা জনসংখ্যা বণ্টনের প্রতিকূল।
[iii] অনুন্নত পরিবহণ : বন্ধুর ভূপ্রকৃতির কারণেই সড়ক ও রেল যোগাযোগ অনুন্নত।
[iv] কৃষি ও শিল্প অনুন্নত : খাড়া ঢাল ও মৃত্তিকার অভাবের কারণে কৃষি অনুন্নত। অনুন্নত যোগাযোগের কারণে শিল্পও অনুন্নত ফলে জনসংখ্যা বেশ কম।
জেনে রাখো: মহানগরপুঞ্জ (Megalopolis) : মহানগরের বিস্ফোরিত | রূপ হল মহানগরপুঞ্জ। কোনো মহানগর বর্ধিত হয়ে পার্শ্ববর্তী | গ্রামাঞ্চল অতিক্রম করে ছোটো-বড়ো শহর ও শিল্পাঞ্চলগুলিকে গ্রাস করে আয়তনে বৃদ্ধি পায় ও কয়েক শত বর্গকিলোমিটার অঞ্চল ধরে | বিস্তৃত হলে, তাকে মহানগরপুঞ্জ বলে। ভারতে কোনো মহানগরপুঞ্জ নেই। জাপানের টোকিও, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক হল এর উদাহরণ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কী? * [ পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন, ২০০৭] [
উত্তর : বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক কারণের জন্য ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। ভারতের জনবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণগুলি হল—
১. বেশি জন্মহার (High birth rate / Fertility rate) : ভারতে জন্মহার খুব বেশি (প্রতি হাজারে ২৭.৫ জন)। তাই ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক ভাবেই বেশি।
২. মৃত্যুর হার কমে যাওয়া (Low rate of Mortality) : চিকিৎসাবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতির জন্য ভারতে মৃত্যুহার কম। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ভারতে মৃত্যুহার হল মাত্র ৯.৪ জন। জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার কমে যাওয়া ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
৩. অল্প বয়সে বিবাহ (Early Marriage) : কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলে ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়। অল্প বয়সে বিয়েও ভারতের জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪. স্বল্প শিক্ষার হার (Low Literacy Rate) : ভারতের গ্রামগুলিতে বিশেষ করে নারীশিক্ষার হার এখনও বেশ কম (৩৯.২৯ শতাংশ) হওয়ায় নানান বিষয়ে অজ্ঞতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. দারিদ্র্য (Poverty) : ভারতের বেশিরভাগ অধিবাসীই দরিদ্র। তাই অর্থনৈতিক নিরাপত্তার আশায় দরিদ্র পরিবারগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৬. কৃষি ব্যবস্থার গুরুত্ব ( Importance of Agriculture) : যে কোনো কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় পরিবারের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর দিকে সব সময়ই জোর দেওয়া হয়, কারণ কৃষিকাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। শিল্পোন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এখনও ভারত কৃষিপ্রধান দেশ, স্বাভাবিক ভাবেই ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।
৭. এ মেয়েদের স্বপ্ন সামাজিক মূল্য ও মর্যাদা (Lack of respect towards women) : ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের সামাজিক মর্যাদা পুরুষের তুলনায় কম। ফলে নারীশিক্ষার ব্যাপারে এবং অন্যান্য সামাজিক বিষয়ে মেয়েরা অবহেলার শিকার হয়, যা পরোক্ষভাবে ভারতের জনবৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।
৮. পুত্র সন্তানাকাঙ্ক্ষা (Desire for a boy child) : ভারতের বিশেষত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থায় পুত্র সন্তানের জন্য অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা ভারতের জনসংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
৯. যৌথ সামাজিক প্রথা (Joint Family Tradition) : কৃষিপ্রধান ভারতে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের যৌথ পরিবার প্রথা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।
১০. উদ্বাস্তু সমস্যা ও অনুপ্রবেশ (Illigal Immigration) : উদ্বাস্তু সমস্যা ও অনুপ্রবেশের ফলেও ভারতের অস্বাভাবিক জনবৃদ্ধি ঘটেছে, কারণ—
(১) স্বাধীনতার পর সাবেক পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে উদাস্তুরা নানান কারণে বাধ্য হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন;
(২) বিগত কয়েক বছর হল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে পার্শ্ববর্তী বিদেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে বেআইনি অনুপ্রবেশও ভারতের জনসংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রশ্ন ২. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব কী?
উত্তর : ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল ও প্রতিকূল প্রভাবগুলি আলোচনা করা হল। অনুকূল প্রভাব (Positive Effect of Population Growth) :
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অনেক ক্ষেত্রে সম্পদ উৎপাদনের হার বাড়ে। কৃষি শিল্প, বাণিজ্য ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে শ্রমের জোগান বৃদ্ধি পায়।
2. উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
3. কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান বাড়ে।
4. বিশ্বায়নের সাথে সাথে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ঘটে। উন্নত নগরসভ্যতা গড়ে ওঠে।
5. কি দেশে উৎপাদনে সক্ষম জনগোষ্ঠীর আয়তন বৃদ্ধি পেলে সম্পদ উৎপাদনের সাথে সাথে মূলধন বাড়তে থাকে যা বিনিয়োগ করে পুনরায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা যায়।
6. উন্নত নগরসভ্যতার সম্প্রসারণ ঘটে গ্রামাঞ্চলগুলিতেও, ফলে গ্রাম্য জীবনের অর্থনৈতিক তথা সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন আসতে থাকে।
7. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সাথে সাথে বৈদেশিক বাণিজ্যও বৃদ্ধি পায় ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্জয় ঘটতে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে থাকে।
8. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানব সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
9. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ও সর্বোপরি জীবনযাত্রার মানে উন্নতি ঘটে।
• প্রতিকূল প্রভাব (Negative Effect of Population Growth) :
১. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে অপুষ্টি ও দারিদ্র্য প্রকট হয়ে ওঠে।
২. সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হলে দেশে অনুৎপাদক মানুষের সংখ্যা বাড়ে, বেকারত্ব বাড়ে ফলে এক প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
৩. প্রয়োজনের তুলনায় কর্মসংস্থান কম হওয়ায় বেকারত্ব বাড়ে।
৪. মাথাপিছু আয় ও উৎপাদন কম হয় ফলে জীবনযাত্রার মান কমে।
৫. অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, কৃষিজাত ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে বনভূমি ধ্বংস হয় এবং দূষণ বাড়ে।
৬.আর্থসামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৭. ঘিঞ্জি-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়, রোগজীবাণুর প্রকোপ বাড়ে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনুন্নতি ঘটে, অপরাধ প্রবণতা বাড়ে।
৮. উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, উৎপাদন কমে, মূলধন সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কমে। ফলে জাতীয় আয় কমে ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন ৩. ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনবণ্টনের তারতম্যের কারণ কি?
উত্তর : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জনবণ্টনের তারতম্যের কারণ (Factors Influencing the regional distribution of Population in India) : বিরাট আয়তনের দেশ ভারতের জনসংখ্যা বিশাল (২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটির বেশি) এবং জনঘনত্বও বেশি, কিন্তু এই সুবিশাল জনসংখ্যা, ভারতের সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। ভারতের অঞ্চল বিশেষে জনবণ্টনের এই তারতম্যের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণগুলি হল—
[১] ভূপ্রাকৃতিক অবস্থা (Physiographic Condition) : উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি ও মালভূমি অঞ্চল এবং দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ মালভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের উঁচু-নীচু বন্ধুর ভূমি কৃষিকাজের অনুপযুক্ত ও কিছু কিছু অঞ্চল দুর্গম বলে এখানে জনসংখ্যা বেশ কম। অন্যদিকে উত্তরের সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অঞ্চল, ও উপকূলের সমভূমি কৃষিকাজের ও বাসস্থান নির্মাণের, যোগাযোগ ব্যবস্থার পক্ষে ভালো বলে। এখানে জনসংখ্যা অনেক বেশি।
২. জলবায়ুর বৈচিত্র্য (Climatic Variation) : সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ুর উপস্থিতি, বৃষ্টিপাতের সমান বণ্টনের জন্য এখানে লোকবসতি ঘন। অপরদিকে, রাজস্থানের মরু অঞ্চল বা গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টনের জন্য জনসংখ্যা কম।
৩. নদনদী (Rivers ) : নদনদীর অবস্থানের জন্য ; (১) যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার সুবিধা ও (২) নদীতীরবর্তী অঞ্চলের পলিসমৃদ্ধ উর্বর মৃত্তিকায় কৃষিকাজে সুবিধা (৩) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, (৪) জলসেচ ও জলনিকাশি ব্যবস্থার সুবিধা আছে বলে, উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র ও দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদী উপত্যকায় লোকবসতি বেশি।
৪. মৃত্তিকা (Soil) : উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীতীরবর্তী উর্বর মৃত্তিকা ও দাক্ষিণাত্যের উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা কৃষিকাজের পক্ষে উপযুক্ত বলে এই সকল অঞ্চলে লোকবসতি ঘন।
৫. স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation) : বৃক্ষহীন মরুভূমি (যেমন—রাজস্থানের মরু অঞ্চল) অথবা গভীর অরণ্য ও সংকুল অঞ্চল (যেমন—সুন্দরবন, হিমালয় ও পশ্চিমঘাট পর্বতের ি পাদদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বনভূমি অঞ্চল) মানুষের জীবিকানির্বাহের পক্ষে অসুবিধাজনক বলে এইসব অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ নয়।
৬. খনিজসম্পদ (Mineral resources) : প্রতিকূল জলবায়ু ও অনুর্বর মৃত্তিকা থাকা সত্ত্বেও যেখানে খনিজসম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায়, সেখানে ভূপ্রকৃতি দুর্গম হলেও জীবিকানির্বাহের সুবিধা থাকায় জনসংখ্যা বেশি হয়। ভারতের বিভিন্ন কয়লাখনি অঞ্চলে (রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া) এইজন্য জনসংখ্যা বেশি। ছোটোনাগপুর ও ছত্তিশগড় মালভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন খনি ও শিল্পাঞ্চলে এই একই কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থা (Transport System) : উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথের সুবিধা উপকূলবর্তী বন্দর এলাকায় পরিবহণের সুবিধার জন্য জনবসতি বেশি।
৮. শিল্পাঞ্চল (Industry) : শিল্পকেন্দ্র কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বলে সেই সকল স্থানে লোকবসতি বেশি। যেমন— কলকাতা শিল্পাঞ্চল, হুগলি শিল্পাঞ্চল ইত্যাদি।
৯.অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র (Economic, Political & Administrative Centre) : ব্যাবসাবাণিজ্যে অর্থ বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হওয়ার জন্য দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি শহর ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলিতে জীবিকানির্বাহের সুবিধা থাকায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের আকৃষ্ট করে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
১০. অন্যান্য কারণ (Other Reasons) : উপরের কারণগুলি ছাড়াও প্রচুর জনসমাগমের জন্য (১) ঐতিহাসিক স্থান (আগ্রা, লখনউ, মুরশিদাবাদ), (২) তীর্থকেন্দ্র (পুরী, বারাণসী, গয়া, তিরুপতি, আজমীর), (৩) গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র (শান্তিনিকেতন, আলিগড়), (৪) পর্যটন কেন্দ্র (দার্জিলিং, সিমলা), (৫) স্বাস্থ্যকেন্দ্র (মধুপুর, চুনার), (৬) গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র (মিরাট, আম্বালা), (৭) সীমান্ত অঞ্চল (বনগাঁ, বিরাটনগর প্রভৃতি ) ইত্যাদি স্থানের জনবণ্টনের হার বেশি হয়।
প্রশ্ন ৪. জনঘনত্ব অনুসারে ভারতবর্ষের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতবর্ষকে ৫টি অঞ্চলে বিভক্ত করা যেতে পারে। যথা—
১. অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল (Area of very high density) : ভারতের এইসকল অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে ৮৫০ জনের অধিক মানুষ বসবাস করেন।
● অঞ্চলসমূহ : দিল্লি, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, চণ্ডীগড় উত্তরপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, পুদুচেরি।
• কারণসমূহ : পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের সমৃদ্ধি এবং নগরায়ণের জন্য অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। দিল্লি, চণ্ডীগড় রাজধানী শহর ফলে নানাবিধ প্রশাসনিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এই শহরদুটিকে জনবহুল করে তুলেছে।
২. ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল (Areas of high density) : ভারতের যেসব প্রতি বর্গকিমিতে ৪০১–৮৫০ জন মানুষ বসবাস করেন তাকে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল বলে।
• অঞ্চলসমূহ : পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গোয়া, তামিলনাড়ু, অসম, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, ওড়িশা; এ ছাড়া দাদরা ও নগর হাভেলিও এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
• কারণসমূহ : ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, কর্ণাটক খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ, গুজরাট, মহারাষ্ট্রে বস্ত্রশিল্প, রাসায়নিক শিল্প, পেট্রোরসায়ন শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিস্তৃতি, তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যগুলি কৃষিজসম্পদ উৎপাদনে অগ্রণী। এইসকল কারণে এখানে জনঘনত্ব বেশি।
[৩] মধ্যম বসতিযুক্ত অঞ্চল (Areas of moderate density) : ভারতের যেসব অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে ২০১–৪০০ জন মানুষ বসবাস করেন। সেইসব অঞ্চল মধ্যম বসতিযুক্ত অঞ্চল নামে পরিচিত।
• অঞ্চল সমূহ : মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাঞ্চল, মেঘালয়, মণিপুর, গোয়া এবং নাগাল্যান্ড।
• কারণসমূহ : রাজস্থানের শুষ্ক, চরমভাবাপন্ন জলবায়ু, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, উত্তরাঞ্চল এবং হিমাচল প্রদেশে বন্ধুর পার্বত্য ভূমির উপস্থিতি ও কৃষিকাজের অভাব, গোয়ার পর্যটন শিল্পের উন্নতি ও মাছ ধরার সুবিধা, মধ্যম ধরনের জনঘনত্ব সৃষ্টি করেছে।
[৪] বিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল (Area of Low Density) : এই অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে ১০১–২০০ জন মানুষ বসবাস করেন।
● অঞ্চলসমূহ : জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম।
• কারণসমূহ : জম্মু ও কাশ্মীরের, সিকিমের বন্ধুর পার্বত্যভূমি ও অনুর্বর মৃত্তিকা, মূল্যবান খনিজসম্পদের অভাব, ভারী বৃহদায়তন শিল্পের অভাব ইত্যাদি কারণ এর জন্য এখানে জনবসতি কম।
[৫] অতিবিরল বসতিযুক্ত অঞ্চল (Area of extremely low density) : এইরূপ অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে ২০০ জনের কম মানুষ বসবাস করেন।
● অঞ্চলসমূহ : অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। • কারণসমূহ : বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চল, কৃষি শিল্পে অনগ্রসরতা, প্রতিকূল জলবায়ু, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও খনিজসম্পদের অভাবের কারণে অতিবিরল বসতি দেখা যায়।
প্রশ্ন ৫. ভারতবর্ষে নগরায়ণ সম্পর্কে যা জান লেখো এবং এর কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : জোন্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী নগরায়ণ হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল ধীরে ধীরে শহরে পরিণত হয় এবং সেখানে আধুনিক জীবনযাত্রা বা জটিল ও সরল উভয়পথে জীবনের চলার পথ সৃষ্টি হয়।
• ভারতবর্ষে নগরায়ণ (Urbanisation In India) : জোন্সের সংজ্ঞা অনুযায়ী ভারতবর্ষে নগরায়ণের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। আমাদের দেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রায় ২৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার পত্তন ঘটে। ইরাক, ইরান, গ্রিস, মিশর-এর সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ভারতে নগরের বিস্তার ঘটে।
আমাদের দেশে ইংরেজরা বিশেষ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণ প্রক্রিয়া দ্রুত ঘটতে থাকে। নগরায়ণের কারণগুলি হল— (১) রেল, সড়ক ও জলপথে বাণিজ্যের প্রসার (২) শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রভৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শহরগুলি বিস্তার লাভ করে। (৩) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, সরকারি পরিকল্পনায় গৃহীত নীতি রূপায়ণের ফলে খুব দ্রুতহারে বর্তমানে নগরায়ণ ঘটেছে। (৪) ছোটো ছোটো শহরগুলিতে ক্রমে আর্থিক উন্নতি ঘটায় কর্মসংস্থান বাড়ে ফলে জীবিকার তাগিদে বহু মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী হয়। (৫) শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ভাগীদার হওয়ার জন্য বহু মানুষ শহরে চলে আসে এভাবে কোনো ছোটো শহর পরবর্তীকালে নগরে রূপান্তরিত হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী গোয়ায় শহরবাসীর - সংখ্যা সর্বাধিক ৪৯.৭৬%। এ ছাড়া কালক্রমে তামিলনাড়ু ৪৪.৪%, মহারাষ্ট্র ৪২,৪৩%, মিজোরাম এর ৪৯.৬৩% মানুষ শহরবাসী। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দিল্লির জনসংখ্যার ১৩.১৮% নগরবাসী, চণ্ডীগড়ের ৮৯.৭৭% মানুষ নগরবাসী।
প্রশ্ন ৬. ভারতের নগর বা শহরগুলি গড়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর : শহর গড়ে ওঠার অনেকগুলি কারণ বর্তমান। তবে নানান প্রকার কর্মের ভিত্তিতে ভারতে বহু শহর গড়ে উঠেছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হল।
(i) প্রশাসনিক শহর : প্রশাসনিক কার্য পরিচালনার জন্য কোনো স্থানে গড়ে ওঠে প্রশাসনিক ভবন, আবাসন এবং অঞ্চলটি শহরে পরিণত হয়। ভারতের দিল্লি, চণ্ডীগড় প্রভৃতি প্রশাসনিক শহর।
(ii) ব্যাবসাবাণিজ্যিক শহর : ব্যাবসাবাণিজ্যের কারণে বড়ো বড়ো অফিস, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা গড়ে ওঠার কারণে। শহর গড়ে ওঠে। যেমন, মুম্বাই, শিলিগুড়ি।
(iii) উৎপাদন শহর : শিল্প উৎপাদন ও খনিজ উত্তোলনকে ঘিরে চলে সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। ফলে সেখানে শহর গড়ে ওঠে। ভারতের জামসেদপুর, ভিলাই হল শিল্পশহর।
(iv) যোগাযোগ ব্যবস্থা ভিত্তিক শহর : বৃহদায়তন রেলজংশন, রাস্তার সংযোগস্থল, বন্দর প্রভৃতিকে ঘিরে শহর গড়ে ওঠে। যেমন : মুঘলসরাই (রেলজংশন-এর নিকট স্থাপিত শহর) পারাদ্বীপ (বন্দর শহর)।
(v) সাংস্কৃতিক শহর : শিক্ষা, বিনোদন প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে শহর গড়ে ওঠে। যেমন, শান্তিনিকেতন।
(vi) পর্যটনকেন্দ্র শহর : প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য, মনোরম জলবায়ু প্রভৃতি কারণে কোনো অঞ্চলে প্রচুর পর্যটক আসে, গড়ে ওঠে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এবং অঞ্চলটি শহরে পরিণত হয়। যেমন, মুসৌরি, নৈনিতাল। এ ছাড়া,
(vii) ধর্মস্থান (বারাণসী, মাদুরাই),
(viii) ঐতিহাসিক স্থান (আগ্রা) ইত্যাদি কারণের ওপর ভিত্তি করেও শহর গড়ে ওঠে।
জেনে রাখো ভারতের প্রথম পাঁচ বৃহত্তম মেগাসিটি ও জনসংখ্যা : ১. মুম্বাই—১,৮৩,৯৪,৯১২ জন। ২. দিল্লি–১,৬৩,৪৯,৮৩১ জন। ৩. কলকাতা – ১,৪০,৩৫,৯৫৯ জন। ৪. চেন্নাই- ৮৬,৫৩,৫২১ জন। ৫. বেঙ্গালুরু-৮৫,২০,৪৩৫ জন।
প্রশ্ন ৭. ভারতে নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর : ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের চাহিদা, শিল্পবিপ্লব ইত্যাদি হল নগরায়ণের প্রধান কারণ। ভারতে নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
[১] ভারতের নগরায়ণের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে ভারতে নগর গড়ে উঠেছিল।
[২] ভারতে নগর ও শহরে জাতিধর্মনির্বিশেষে বহু মানুষ একত্রে বাস করে।
[৩] ভারতের নগরায়ণ বেশ কিছু ঘটনার সাথে যুক্ত। যেমন : মহামারি, দুর্ভিক্ষ, মন্দা ইত্যাদি।
[৪] ভারতের কোনো কোনো স্থানের নগরজীবন অত্যন্ত নিম্নমানের। গ্রাম থেকে শহরে এসে তারা অত্যন্ত নোংরা ঘিঞ্জি বস্তি নির্মাণ করে বসবাস করে।
[৫] ভারতের বিভিন্ন শহরে পৌর বিক্ষেপণ (Urban sprawal) হতে হতে আয়তন বেড়েই চলেছে।
[৬] ভারতের পৌরায়ণের ফলে ধীরে ধীরে নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমন : দূষণের সমস্যা, বসতি সমস্যা, পরিবহণ সমস্যা, নিকাশি সমস্যা ইত্যাদি।
[৭] নানান সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ফলে ভারতে নগরগুলির নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়ছে।
[৮] ভারতের অধিকাংশ নগরগুলিতে জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি ও জমির পরিমাণ অত্যন্ত কম। এই কারণে বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ি ও বস্তির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। [৯] ভারতে গ্রাম থেকে অনেক মানুষ কর্মসসংস্থানের জন্য ভারতে আসছে। ফলে এরা অনেকেই অশিক্ষিত, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রি, রিক্সা ও ট্যাক্সি চালক। ফলে শহরে সাক্ষরতার হার বেশ কমছে।
[১০] সর্বোপরি দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নগরায়ণের মাত্র বেশি। জেনে রাখো
জেনে রাখো পৌর বিক্ষেপণ (Urban sprawal) : Urban - isation-এর অপর এক শব্দ হল Urban sprawal। কোনো গ্রাম বা ছোটো শহর থেকে বৃহৎ শহরে বসবাসের উদ্দেশ্যে যাওয়াকে Urban sprawal বা পৌর বিক্ষেপণ বলে।
প্রশ্ন ৮. ভারতে নগরায়ণের সমস্যাগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : নগরায়ণের সমস্যা (Problems of Urbanisation) :
১. অপরিকল্পিত নগরায়ণ (Unplanned Urbanisation) : আমাদের দেশে অধিকাংশ শহর, নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এর ফলে রাস্তাঘাটে যানজট, আবর্জনার সঠিক জায়গা না-থাকায় রাস্তা ঘাট নোংরা হওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থা প্রায় থাকে না বললেই চলে, স্বল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে জল দাঁড়িয়ে যায়, এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রচনা করে ও জনঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, হায়দরাবাদে স্থানাভাব গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
২. মানুষজনের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা (People's হ tendency to settle in cities) : মূলত উন্নত কৰ্মক্ষেত্র, শিক্ষা স্বাস্থ্য-স্বাচ্ছন্দ্যের তাগিদে বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহর অভিমুখী হয় ফলে অভ্যন্তরীণ পরিব্রাজন ঘটে। এ ছাড়া বাইরে থেকেও (বিদেশ) বহু মানুষ এই সমস্ত শহরে ভিড় করায় জনগণের চাপ শহরগুলিতে বাড়ে ফলে দূষণ সমস্যা, অতিজনাকীর্ণতা লক্ষ করা যায়।
৩. পরিকাঠামোর অভাব (Lack of Infrastructure) : বিভিন্ন পরিকাঠামোগত অভাবগুলি হল :
• বসতি (Settlement) : নগরায়ণের ফলে যে পরিব্রাজনের সৃষ্টি হয় তার ফলে বসতবাড়ির সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্বল্প উপার্জন ও জমির অভাব, গৃহনির্মাণের সামর্থ্য না-থাকা প্রভৃতির কারণ জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারের সাথে বাড়ির প্রসার হয় না। এ ছাড়াও বস্তি ও দখলদারির সমস্যা বৃদ্ধি পায়। অন্ধ্রপ্রদেশ, মুম্বাই প্রভৃতি শহরে বস্তি জনসংখ্যা সর্বাধিক।
• পরিবহণ সমস্যা (Problem of Transport) : মহানগরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে পরিবহণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যানজট সমস্যার সাথে সাথে বায়ুদূষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়, মহানগরে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি।
• স্বাস্থ্য সমস্যা (Health Issues ) : নগরায়ণের ফলে বস্তিএলাকার প্রসার-পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, বায়ুদূষণ-এর ফলে জনগণের স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব পড়ে, অনিদ্রা, হাপানি, উদরাময়, ক্লান্তি প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়।
• শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা (Education Problem) : নগরায়ণের ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় বিরুপ প্রভাব পড়ে, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে সবাই শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায় না। যার ফলে পরিব্রাজন ঘটে এ ছাড়াও বেকারত্ব বৃদ্ধি পায় ও পৌর অপরাধ মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
• বিদ্যুৎ সমস্যা (Electricity Problem) : বসতির পরিমাণের সাথে সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ যেভাবে অনেক স্থানে বাড়ে না, ফলে লোডশেডিং-এর মাত্রা বাড়তে থাকে।
জলনিকাশির সমস্যা (Problems Related to Sewage System) : অতিরিক্ত নগরায়ণের প্রভাবে সবস্থানে জলনিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে না। ভারতে ৩৫-৪০% পৌর জনসংখ্যার নোংরা জলনিকাশি ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও যথাযথভাবে ভূগর্ভস্থ নদমা নির্মাণ না-হওয়ায় গৃহলির জল উপচে পড়ে এ ছাড়াও বৃষ্টির সময় বেশিরভাগ শহরেই জল জমে বানভাসি অবস্থার সৃষ্টি হয়।
No comments:
Post a Comment