অব – উপনিবেশীকরণ (অষ্টম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023|| HS Class 12 History || - SM Textbook

Fresh Topics

Tuesday, July 25, 2023

অব – উপনিবেশীকরণ (অষ্টম অধ্যায়) দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023|| HS Class 12 History ||

  অব – উপনিবেশীকরণ (অষ্টম অধ্যায়)  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023|| HS Class 12 History ||





১. নেহরু মহলানবিশ মডেল কাকে বলে ? 

উত্তরঃ প্রখ্যাত ভারতীয় পরিসংখ্যানবিদ পি . সি . মহলানবিশ ১৯৫৫ সালে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়া বা মডেল তৈরি করেন । প্রধানমন্ত্রী নেহরু সামান্য সংশোধনের পর এটি প্রয়োগ করেন । এটাকেই বলা হয় নেহরু – মহলানবিশ মডেল । 

২. তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও সময় লেখো । 

উত্তরঃ এই পরিকল্পনার সময়কাল ১৯৬১–৬৬ খ্রিঃ । লক্ষ্য ছিল রাজস্ব বৃদ্ধি করা । খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন । 

৩. তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ২ টি গুরুত্ব লেখো । 

উত্তরঃ প্রথমত , অর্থনীতিতে গতি আসে । দ্বিতীয়ত , জাতীয় আয় ৬.২১ শতাংশ হারে । বৃদ্ধি পায় । 

৪. হোমি জাহাঙ্গির ভাবা’র পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ নেহরুর সময়কালে ভারতের পারমাণবিক গবেষণার মুখ্য উপদেষ্টা ছিলেন ভাবা । ১৯৪৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় শক্তি কমিশন গড়ে ওঠে । 

৫. SAARC- এর সম্পূর্ণ নাম কী ? 

উত্তরঃ South Asian Associasion for Regional Co – Operation . 

৬. অব – উপনিবেশীকরণ কাকে বলে ? এর প্রথম প্রয়োগ কে করেন ? 

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশ ঔপনিবেশিক বন্ধন ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করে । এই ঘটনাকেই বলা হয় অব – উপনিবেশীকরণ । সর্বপ্রথম জার্মান বিশেষজ্ঞ মরিৎস জুলিয়াস বন ১৯৩২ সালে এই শব্দটি প্রয়োগ করেন ।

৭. কী কারণে উপনিবেশবাদের অবসান হলো ? 

উত্তরঃ প্রথমত , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স , ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের আর্থিক প্রতিপত্তি কমে যাওয়ায় উপনিবেশগুলি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না । দ্বিতীয়ত , উপনিবেশগুলিকে স্বাধীন করে দেওয়ার বিষয়ে রাশিয়া ও আমেরিকা চাপ দিচ্ছিল । 

৮. আলজেরিয়া কবে স্বাধীনতা পায় ? প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম কী ? 

উত্তরঃ ফ্রান্সের কবল থেকে ১৯৬২ সালে মুক্ত হয় আলজেরিয়া । প্রথম রাষ্ট্রপতি হন আহম্মদ বেন বেল্লা । 

৯. বাংলা ভাষার জন্য কবে পূর্ববঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলন হয় ? এতে কারা শহিদ হন ? 

উত্তরঃ বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গে জোরদার আন্দোলন হয় । আন্দোলনে পাক পুলিশের গুলিচালনায় প্রাণ দেন মহম্মদ সালাউদ্দিন , আব্দুল জববার , আবুল বরকত ও রফিকউদ্দিন । 

১০. কবে হয়েছিল সিক্কাক – এর যুদ্ধ ? যুদ্ধে কে হেরে যায় ? 

উত্তরঃ ১৮৩৬ সালে আলজেরিয়ার লড়াকু নেতা আল – কাদিরের গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে ফরাসি বাহিনীর যুদ্ধ হয় । সিক্কাক – এর যুদ্ধে আল – কাদির হেরে যান ।

১১. পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ক’টি কক্ষ ? কী কী ? 

উত্তরঃ পাক আইনসভার ২ টি কক্ষ । উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ নাম 

১২. কার নেতৃত্বে , কবে ভারতে পরিকল্পনা কমিশন গড়ে ওঠে ? 

উত্তরঃ ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫০ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে যোজনা কমিশন বা পরিকল্পনা কমিশন গড়ে তোলা হয় । 

১৩. প্রথম পণ্ডুবার্ষিকী পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ কেন ? 

উত্তরঃ প্রথমত , এর মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতির স্থবিরতা গতিশীল হয়ে ওঠে । দ্বিতীয়ত , দেশে পরিকল্পিত অর্থনীতি যাত্রা শুরু করে । 

১. ইন্দোনেশিয়া কাদের উপনিবেশ ছিল ? (ক) স্পেনীয়দের (খ) ব্রিটিশদের (গ) পোর্তুগিজদের (ঘ) ডাচদের । 

উত্তরঃ (ঘ) ডাচদের ।

২. স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন— (ক) ম্যান্ডেলা (খ) ড . সুকর্ণ (গ) সুহার্তো (ঘ) হাব্বিবি । 

উত্তরঃ (খ) ড . সুকর্ণ

৩. শ্রীলঙ্কার আগের নাম ছিল— (ক) লাক্ষাদ্বীপ (খ) সিংহল (গ) মালদ্বীপ (ঘ) লঙ্কাদ্বীপ । 

উত্তরঃ (খ) সিংহল

৪. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে – (ক) ১৩ আগস্ট (খ) ১৫ আগস্ট (গ) ১৪ আগস্ট (ঘ) ১৬ আগস্ট ।

উত্তরঃ (গ) ১৪ আগস্ট

৫. কায়েদ – ই আজম বলা হতো— (ক) আগা খাঁ – কে (খ) জিন্নাকে (গ) চিরাগ আলিকে (ঘ) সলিম উল্লাহকে।

উত্তরঃ (খ) জিন্নাকে

৬. পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন—  (ক) জিন্না (খ) আয়ুব খান (গ) ভুট্টো (ঘ) কেউই নন ।

উত্তরঃ (ক) জিন্না

৭. ভারতীয় অর্থনীতিকে বলা হয়- (ক) মিশ্র (খ) সমাজতান্ত্রিক (গ) পুঁজিবাদী (ঘ) সাম্যবাদী । 

উত্তরঃ (ক) মিশ্র

৮. সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়— (ক) ঢাকায় (খ) ব্যাঙ্গালোরে (গ) ইসলামাবাদে (ঘ) কাঠমান্ডুতে ।

উত্তরঃ (ক) ঢাকায়

৯. অব উপনিবেশীকরণ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন— (ক) ই . এইচ . কার (খ) জুলিয়াস বন (গ) জে . এল . নেহরু (ঘ) ড . সুকর্ণ । 

উত্তরঃ (খ) জুলিয়াস বন

১০. ঢাকায় সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল— (ক) ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে (গ) ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে । 

উত্তরঃ (খ) ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে

১১. ১৯৯০ – এর দশকে অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতি প্রবর্তিত হয় কোন প্রধানমন্ত্রীর সময়ে ? (ক) মনমোহন সিং (খ) পি.ভি. নরসিমা রাও (গ) রাজীব গান্ধি (ঘ) বাজপেয়ী । 

উত্তরঃ (খ) পি.ভি. নরসিমা রাও

১২. আটলান্টিক চার্টার স্বাক্ষরিত হয়— (ক) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে (গ) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ।

উত্তরঃ (খ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে

১৩. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধাননেতা ছিলেন— (ক) শেখ মুজিবুর (খ) মহম্মদ আলি জিন্না (গ) তাজউদ্দিন আহমেদ (ঘ) মহাত্মা গান্ধি ।

উত্তরঃ (ক) শেখ মুজিবুর

১৪. অব – উপনিবেশীকরণের ফলে উত্থান ঘটে— (ক) প্রথম বিশ্বের (খ) দ্বিতীয় বিশ্বের (গ) তৃতীয় বিশ্বের (ঘ) পঞ্চম বিশ্বের । 

উত্তরঃ (গ) তৃতীয় বিশ্বের

১৫. ইন্দোচিনে কাদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল ? (ক) ব্রিটেনের (খ) ফ্রান্সের (গ) ডেনমার্কের (ঘ) রাশিয়ার ।

উত্তরঃ (খ) ফ্রান্সের

১৬. আলজেরিয়া কাদের উপনিবেশ ছিল ? (ক) দিনেমারদের (খ) পোর্তুগালের (গ) ফরাসিদের (ঘ) আমেরিকার

উত্তরঃ (গ) ফরাসিদের

১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল ? 

উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলদেশ হলো ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র অনেক রক্ত ঝরিয়ে অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার উত্থান ঘটে । ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখন্ডিত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান । ভারতের অন্তর্ভুক্ত থাকে পশ্চিমবঙ্গ আর পূর্ববঙ্গ থাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত । পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি আর পাকিস্তানে মুসলমানদের সংখ্যাবেশি । পূর্ব পাকিস্তানের নাম হয় বাংলাদেশ । স্বাধীনতা লাভের কিছু কাল পরেই হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় । 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট : ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল । কিন্তু বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে চলছিল । অবশেষে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের শহিদের ফলে এই বিপ্লবের অবসান ঘটে । ↑ 

মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পিছনে আছে ঐতিহাসিক ঘটনা । ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ – উদ্ – দৌলা ইংরেজদের নিকট পরাজিত হন । এর ফলেই বাংলায় স্বাধীনতার অবসান হয় । সেই সময় ইংরেজদের আধিপত্য বেশি থাকায় ইংরেজদের শাসনে বাঙালি জাতিকে থাকতে হতো । ইংরেজরা দুশো বছর শাসন চালিয়ে বাঙালি জাতিকে শোষণ করে চলছিল । তার ফলে এই সকল মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ জাগায় সংগ্রাম গড়ে ওঠে । 


ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরেও বাঙালিদের স্বাধীনতা লাভ করার পরেও বাঙালিদের ওপর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা অর্থনৈতিক সামাজিক রাজনৈতিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোষণ চালাত । যার ফলে বাঙালিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তারা প্রতিরোধের জন্য নিজের মধ্যে ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধ করে । 

স্বাধীনতা সংগ্রাম : পাকিস্তানের প্রথম গভর্ণর জেনারেল মজম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করে । এরপর থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ উন্মোচিত হয় । ‘ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ‘ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হয় । আবার ছাত্র নেতারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । রাষ্ট্রভাষা উর্দু হওয়ার কারণে তারা তীব্র প্রতিবাদ জানায় তাদের ভাষা বাংলা করার জন্য । ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে । এর ফলে বাঙালিরা আরও ক্রুদ্ধ হয় স্বাধিকার আদায়ের জন্য । এরপর ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি জানায় । তারপর ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করানো হয় । এরপর সারা বাংলা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বাধীনসংগ্রাম গড়ে ওঠে । 

সরকার গঠন : তাজাউদ্দীন আহমদ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশে মুজিবনগর – এ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন হয় । বাংলাদেশের সরকারের রাষ্ট্রপতি হন মুজিবুর রহমান । উপরাষ্ট্রপতি হন সৈয়দ নজরুল আর প্রধানমন্ত্রী হন তাজাউদ্দীন আহমদ । প্রধান সেনাপতি হন কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী । মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয় সরকার গঠনের মাধ্যমে । 

মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিবাহিনী গঠন : প্রধান সেনাপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে । পুলিশ , ছাত্র – জনতা , সামরিক – বেসামরিক মানুষদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয় । মুক্তিবাহিনী গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে । ” 

সহযোগিতা : মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে । বিভিন্ন অস্ত্র , সেনাবাহিনী কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে । মুক্তিযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় । পাকিস্তানে বিমান হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বীকৃতি প্রদান করে বাংলাদেশকে । 

চূড়ান্ত পর্যায় : বাংলাদেশের পক্ষে জগজিৎ সিং আরোরা আর পাকিস্তানের পক্ষে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে মুক্তি যুদ্ধের অবসান ঘটায় । আর বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রূপ পায় । 

ভারতের ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায় , বহুলোক ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে । পাকিস্তানিদের আক্রমণ , হত্যালীলা ধ্বংসলীলা প্রভৃতি ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছিল । তাই সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধি নির্দ্বিধায় সব রকমের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । পূর্ববঙ্গকে তিনি সেনাবাহিনী , শরণার্থীদের আশ্রয় , অস্ত্রশস্ত্র , যুদ্ধ কৌশল , কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন । সকল রকম সাহায্য পেয়ে পাকবাহিনীকে পূর্ববঙ্গের যোদ্ধারা পরাস্ত করে । 

  পরিশেষে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সকল ছাত্র , কৃষক , শ্রমিক , বুদ্ধিজীবিরা মিলিত হয়ে সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সার্থকতা লাভ হয়েছে । 

২. ‘ উপনিবেশবাদ ’ ও ‘ অব – উপনিবেশবাদ ‘ কাকে বলে ? অব – উপনিবেশীকরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য আলোচনা করো । 

 অথবা , বি – উপনিবেশীকরণের কারণ ব্যাখ্যা করো । বি – উপনিবেশীকরণের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । 

উত্তরঃ উপনিবেশবাদ : ল্যাটিন শব্দ ‘ Colonia ’ থেকে ইংরেজি ‘ Colony ’ শব্দের উৎপত্তি । ‘ Colonialism’- এর অর্থ উপনিবেশবাদ । বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয় । সাধারণ অর্থে , ঔপনিবেশিক শক্তি এবং উপনিবেশের মধ্যে বৈষম্যমূলক সম্পর্ককে বলে উপনিবেশবাদ । ‘ এনসাইক্লোপিডিয়া অব সোশ্যাল সায়েন্সেস ’ নামক গ্রন্থে উপনিবেশবাদ বলতে ভৌগোলিক এলাকায় আধিপত্যের পাশাপাশি সেখানকার রাজনীতি এবং অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে বোঝায় । আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে , কোনো ভূখণ্ড এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর উপর রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে বলে উপনিবেশবাদ । 

অব – উপনিবেশবাদ : জার্মান বিশেষজ্ঞ মরিস জুলিয়ান বন সর্বপ্রথম Decolonialism বা অব – উপনিবেশবাদ শব্দটি ব্যবহার করেন । ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিকে বলে অব – উপনিবেশীকরণ । ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনতা থেকে উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা পাওয়ার ঘটনাকে বলে অব – উপনিবেশবাদ । 

অব – উপনিবেশীকরণের রাজনৈতিক তাৎপর্য : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির প্রাধান্য লুপ্ত হওয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল । যথা— 

  • 1. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রসার : বিভিন্ন উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি প্রসারিত হয় । ইউরোপের বাইরে ছোটো রাষ্ট্রগুলির নিজেদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক স্থাপিত হয় । আঞ্চলিক সম্পর্কও আন্তর্জাতিক মাত্রা পায় । 
  • 2. তৃতীয় বিশ্ব গঠন : অব – উপনিবেশবাদের প্রভাবে এশিয়া , আফ্রিকার বিভিন্ন উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে । এগুলিই তৃতীয় বিশ্ব নামে পরিচিত । 
  • 3. জাতিপুঞ্জের সদস্য বৃদ্ধি : সদ্য স্বাধীন দেশগুলি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ গ্রহণ করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নতুন ১৯৭ টি সদস্যের ১০০ টি – ই ছিল সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র । এর ফলে জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় । 
  • 4. জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রসমূহ : বিশ্বের পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে । ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের অধীনতা ছিন্ন করে জাতিভিত্তিক অসংখ্য রাষ্ট্র গড়ে ওঠে । 
  • 5. ঠান্ডা লড়াই – এর প্রসার : সদ্য স্বাধীন দেশগুলিতে বিশ্বযুদ্ধ – পরবর্তী ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব পড়ে । আদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে সৃষ্ট ঠান্ডা লড়াইকে কেন্দ্র করে এদের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বেড়ে যায় । এরা ক্রমে ঠান্ডা লড়াইয়ের বৃত্তে ঢুকে পড়ে । 
  • 6. ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র : বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা অঞ্চলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় । মধ্যপ্রাচ্য , লাতিন আমেরিকা , দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ক্ষমতার নতুন কেন্দ্র গড়ে ওঠে । ভিয়েতনাম যুদ্ধ , ভারত – চিন যুদ্ধ এর নিদর্শন । 

৩. আফ্রিকা , আলজেরিয়ায় কীভাবে স্বাধীন ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয়ে জাতীয় পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছিল ? 

 অথবা , আলজেরিয়ার চূড়ান্ত মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা লাভ উল্লেখ করো ? স্বাধীনতালাভের পরবর্তীতে আলজেরিয়ার বিকাশ কর্মসুচি ও জাতি সংগঠনের পরিচয় দাও ? 

উত্তরঃ সূচনা : আধুনিককালে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি বিশ্বের যেসব অঞ্চলে নিজেদের উপনিবেশ ও শাসন প্রতিষ্ঠা করে তার অন্যতম ছিল আফ্রিকা মহাদেশ । আফ্রিকা মহাদেশে আধিপত্যকারী ঔপনিবেশিক শক্তির মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্রান্স । আফ্রিকায় ফ্রান্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ছিল আলজেরিয়া । 

আলজেরিয়ার স্বাধীনতা লাভ : দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে আলজেরিয়া ফরাসিদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য ছিন্ন করতে সক্ষম হয় । 

আন্দোলনের সূচনা : দীর্ঘ ফরাসি শাসন ও শোষণের পর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আলজেরিয়ায় মুক্তি সংগ্রাম তীব্র আকার ধারণ করে । আলজেরিয়ার জঙ্গি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘ National Lebaration Front ‘ গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সেদেশের ফরাসি শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তোলে । এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী নেতা বেনবেল্লা সারা দেশে আন্দোলনকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলে । — 

স্বাধীনতা লাভ : ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফরাসি বাহিনীর দমন নীতিও তীব্রতর হতে থাকে । ফরাসি প্রেসিডেন্ট দ্যাগোল আন্দোলন থামানোর উদ্দেশ্যে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়ায় পরিকল্পিত গণভোটের ব্যবস্থা করেন । কিন্তু তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি । শেষপর্যন্ত ফ্রান্স ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আলজেরিয়াকে তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয় । ‘ National Lebaration Front’- এর প্রধান নেতা আহমেদ বেনবেল্লা আলজেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন । 

আলজেরিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতি সংগঠন : আলজেরিয়া ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত আলজেরিয়ায় জাতি সংগঠন ও বিকাশ কর্মসূচিকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় । যথা— 

প্রথম পর্যায় : প্রথম পর্বে ১৯০০-১৯৫৪ পর্যন্ত আলজেরিয়ায় ব্যাপক ঔপনিবেশিক শোষণ চলে । যদিও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন আলজেরিয়াবাসী নিজেদের অধিকার ও শিক্ষা সম্পর্কে এইসময় সচেতন হতে থাকে যা আলজেরিয়াবাসীকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হতে সাহায্য করে । ঔপনিবেশিক শাসনের বন্ধন ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে তারা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করে । 

দ্বিতীয় পর্যায় : এই পর্বে ১৯৫৪ থেকে ৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয় । এইসময় ‘ National Lebaration Front- এর প্রধান নেতা বেনবেল্লা স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জীবন – মরণ সংগ্রামে লিপ্ত হয় । শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতান্ত্রিক আলজেরিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে , যার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বেনবেল্লা ।

তৃতীয় পর্যায় : তৃতীয় পর্যায় ১৯৬২ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় আট লক্ষ ফরাসি শেতাঙ্গ আলজেরিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে ফিরে যায় । অবশ্য প্রথম তিন বছরের মধ্যেই বেনবেল্লাকে পদচ্যুত করে তার হৌয়োরি বৌমভিয়েন দেশের ক্ষমতা দখল করে । তাঁর আমলে আলজেরিয়ায় কৃষি ও শিল্পায়নের উন্নতি ঘটলেও এইসময় দেশে ইসলামিক মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে । 

মূল্যায়ন : স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে আলজেরিয়ার অর্থনীতি ছিল খুবই অনুন্নত । কিন্তু স্বাধীন আলজেরিয়া সরকার আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতি ও কৃষি ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করে । 


No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();