রূপনারায়ণ কূলে কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সাজেশন| Class 12 Bengali suggetion 2023|
দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নির্বাচিত পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রথম যে কবিতাটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রূপনারানের কূলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই কবিতাটি 15 টি লাইনে রচিত হলেও এর ভাবগভীরতা অন্য সকল বড় কবিতা থেকে কিছু কম নয়।
রূপনারানের কূলে থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য প্রায় প্রতিবছর বড় প্রশ্ন থাকে। এবং কিছু নির্বাচিত প্রশ্ন পড়লে এই রূপনারানের কূলে থেকে যে প্রশ্ন আসে তার উত্তর খুব সহজেই পরীক্ষাতে লেখা সম্ভব। ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে রূপনারানের কূলে থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসবে আশা রাখি।
রূপনারানের কূলে কবিতার প্রেক্ষাপট :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত রূপনারানের কূলে কবিতাটি তার শেষ জীবনের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। স্বাভাবিকভাবে যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের লেখা সে কারণে তার সমস্ত জীবনের দর্শন এই কবিতার মধ্যে ধরা পড়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সমস্ত জীবনকে যেভাবে দেখেছেন সেখান থেকে যে গভীর জীবন উপলব্ধি তিনি অর্জন করেছেন তাকে কেন্দ্র করে এই রূপনারানের কূলে কবিতাটি রচিত।
সুতরাং রূপনারানের কূলে কবিতাটির প্রেক্ষাপট রবীন্দ্র জীবনের বাস্তব দর্শন। রবীন্দ্রনাথ জীবনকে যেভাবে দেখেছেন বা যেভাবে চিনেছেন সেই প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে তিনি এই উল্লেখযোগ্য রূপনারানের কূলে কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
রূপনারানের কূলে কবিতার বিষয় :
যেকোনো ব্যক্তি মানুষের সমগ্র জীবনের প্রতিফলন ঘটে তার জীবনের শেষ অধ্যায় বা পরিসমাপ্তিতে এসে। একই রকমভাবে রবীন্দ্রজীবনের পরিসমাপ্তিতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজে উপলব্ধি করেছেন যে এই জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কাটানোর জীবন নয়।
জীবন হলো আসল সত্য যে কঠিন এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কল্পলোকের মায়াজাল কে সরিয়ে, আঘাতে আঘাতে যাকে চিনে নিতে হয়। তিনি অনুভব করেছেন যে জীবনটা এক নদীর সমতুল্য। একটি নদীর সৃষ্টি থেকে বিনাশ অর্থাৎ মোহনা পর্যন্ত অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে তাকে চলতে হয়। জীবন টি ঠিক একই রকম নদীর মতো তাতে আগাত বেদনা সুখ-দুঃখ সব কিছু জড়িত থাকে।
আর নদী স্বরূপ এই জীবনের মূল্য হলো কঠিন, অর্থাৎ রূপময় জগত প্রকৃত জীবন হতে পারে না যেখানে সত্য নেই, জীবনের কঠিন উপলব্ধি নেই তা জীবন নয়। এই কথাগুলি তিনি রূপনারানের কূলে কবিতার মূল বিষয় এ রেখাপাত করেছেন।
রূপনারানের কূলে কবিতা অবলম্বনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গভীর উপলব্ধি আলোচনা করো।
সমগ্র রবীন্দ্রজীবনের জীবন-দর্শনের অসামান্য প্রতিফলন ঘটেছে তার শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের 11 সংখ্যক কবিতা রূপনারানের কূলে কবিতাটি টি তে।কবিতায় তিনি বাস্তবের টানে রূপের জগত ছেড়ে বাস্তবের মাটিতে ফিরেছেন।
মানব জীবনের প্রকৃত স্বরূপ তিনি অনুভব করেছেন, যাকে তিনি বলেছেন জীবন তা হল, আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় অনুভব করা জীবন। জীবনের কঠিন সত্য হলো সুখ ও দুঃখের সমান নয় শুধুমাত্র কল্পনা বিলাসী জীবন-যাপন করা নয়।
জীবনের লক্ষ্য চলা আর মৃত্যুতে সেই চলার পরিসমাপ্তি ঘটে কিন্তু এই বৃহৎ সময়ের চলা কখনো একই নিয়মে একই ভাবে চলতে পারে না। ঠিক যেমন একটি নদী তার চলমান পথে বারবার আঘাত বাধা সহ্য করে শেষে মোহনায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় ঠিক একই রকম ভাবে আমাদের জীবনে আঘাত আর বেদনা দুঃখ কষ্ট সব নিয়েই প্রকৃত জীবন গড়ে ওঠে।
কল্পনাবিলাস সমগ্র জীবনের হতে পারেনা কল্পনা করে মানুষ সমস্ত জীবন যেমন কাটাতে পারে না তেমনি কল্পনায় যে জীবন বা সুখী যে শুধুমাত্র জীবন সেটিও এক মৃত মিথ্যা। জীবন এর অর্থ হল দ্বন্দ্ব-সংঘাত দুঃখ-কষ্ট সবই সমান মাপে তাকে বরণ করে নেওয়া। কবি রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে এসে একি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে রূপময় জগত আর বাস্তব জগত আকাশ আর পাতাল ফারাক।
রূপময় জগতের কল্পনাবিলাস বাস্তব জগতের সঙ্গে কখনই এক হতে পারে না কারণ বাস্তব জগত সদাসর্বদা সত্য ও কঠিন হয়ে বিরাজ করে। তাই খুবই কঠিন কে বা সত্যকে ভালোবেসেছেন রূপকে নয়।
"রূপনারানের কূলে / জেগে উঠিলাম" - কে জেগে উঠলেন ? জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
প্রশ্নে উদ্ধৃত আলোচ্য লাইনটি বিশ্বকবি রবন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের রূপনারানের কূলে কবিতার একটি অংশ। এই লাইনটি তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে রূপনারানের তীরে জেগে উঠেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের শেষ সমাপ্তিতে দাঁড়িয়ে যে গভীর জীবন উপলব্ধি অর্জন করেছিলেন তা হল জীবন কোন স্বপ্ন নয় তা অত্যন্ত বাস্তব ও কঠিন। আর প্রতিটি জীবনের সত্য কঠিন গুলি অনিবার্যভাবে জীবনে নেমে আসে আর তাকে আমাদের উদাহর ভাবে আমন্ত্রণ জানানো উচিত বলে তিনি মনে করেছেন।
কবিতা টি তে তিনি যে রূপনারায়ণ নদী বলেছেন তা বিশেষ অর্থে কোন নদী নয় তা রূপময়ী জগতকে বুঝিয়েছেন। তিনি জীবনের প্রকৃত সত্য হিসাবে উপলব্ধি করেছেন যে স্বপ্ন নয় বরং আঘাত আর বেদনার মধ্য দিয়েই জীবনকে প্রকৃতরূপে চেনা যায়। যেমন কবি নিজে বিভিন্ন সংঘাত আর কঠিনকে অবলম্বন করে নিজের জীবনকে চিনেছেন।
No comments:
Post a Comment