অষ্টম শ্রেনীর ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ বিবর্তন অধ্যায় থেকে প্রশ্ন উত্তর | class 8 7th chapter questions answer| অষ্টম শ্রেণীর সপ্তম অধ্যায় থেকে বড় প্রশ্ন উত্তর |
অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪০টি শব্দ) ।
1. দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল ?
উত্তর:- দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালে গান্ধীজি ভারতীয়দের নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলনের হাতিয়ার ছিল অহিংস সত্যাগ্রহ। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যমূলক আন্দোলনের বিরুদ্ধে গান্ধিজি সফল হন। ফলে প্রবাসী ভারতীয়রা কিছু আর্থসামাজিক অধিকার লাভ করে।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গান্ধিজি দেশে ফিরে আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অহিংস আন্দোলনের সাফল্য এখানেও তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। ফলে ভারতে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় সত্যাগ্রহের আদর্শকে মূলধন করে। এদেশে তাঁর প্রথম সত্যাগ্রহ ছিল যথাক্রমে—চম্পারন ও খেড়া জেলায় কৃষক আন্দোলন এবং আমেদাবাদে শ্রমিক আন্দোলন। তাঁর পরবর্তী জাতীয় আন্দোলনগুলিও (যথা—অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন) এর ব্যতিক্রম ছিল না।
2. গান্ধির সত্যাগ্রহ আদর্শের মূলভাবনা কী ছিল ?
উত্তর:- সত্য ও আগ্রহ এ দুটি শব্দের মেলবন্ধনে সত্যাগ্রহ কথাটি এসেছে। সত্যাগ্রহ হল একটি নৈতিক শুভ শক্তি । গান্ধিজি মনে করতেন সত্যের প্রতি অবিচল থাকাই প্রত্যেক মানুষের নৈতিক কর্তব্য । হিংসা হল মানুষের এক পাশবিক প্রবৃত্তি। তাঁর মতে, প্রেম ও ভালোবাসা দ্বারা শত্রুকে পরাজিত করা যায়, হিংসার পথে নয়। এ জন্য তিনি ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন-গুলিতে সত্যাগ্রহ আদর্শই অনুসরণ করেছিলেন। তিনি সত্য আদর্শ থেকে সরে আসেননি।
3. স্বরাজ্যপথীদের আন্দোলনের মূল দাবিগুলি কী ছিল ?
স্বরাজ্যপথী বা স্বরাজ্য দলের মূল দাবিগুলি ছিল (1) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে যোগদান করা, আইনসভায় প্রবেশ করে সরকারি কাজকর্মের বিরোধিতা করা, সরকারি বাজেট প্রত্যাখান করা এবং নানা বিল ও প্রস্তাব উপস্থাপন করা (2) নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করে বৈদেশিক শোষনা করা করা। (3) মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন করা অস্বীকার করা এবং স্বায়তশাসনের অধিকার অর্জন করা।
স্বরাজ্য দলের কর্মসূচির মধ্যে অন্যান্য কিছু দাবিদাওয়া ছিল, যেমন- 1) রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া, 2) সরকারের বিভিন্ন দমনমূলক আইন রদ করা, 3) প্রাদেশিক স্বায়তশাসনের দাবি উত্থাপন করা 4) লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করা ইত্যাদি।
4) কাকে, কেন সীমান্ত গান্ধী বলা হত ?
উত্তর:- গান্ধি অনুগামী খান আবদুল গফ্ফার খানকে সীমান্ত গান্ধী বলা হয়৷ কারণ, তিনি আজীবন গান্ধিজির আদর্শ অনুসরণ করে চলেছিলেন। তিনি গান্ধীজির মতোই অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন, চরকা কাটতেন, খাদির পোশাক পরতেন। ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে খান আব্দুল গফফার খান গান্ধিজির অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই কারণে এই গান্ধিবাদী নেতাকে সীমান্ত গান্ধি বলা হয়।
5. ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা কী ছিল ?
উত্তর:- গান্ধিজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সাড়া দিয়ে মেদিনীপুরের তমলুকের ৭২ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি গ্রামের মহিলা মানুষদের সঙ্ঘবদ্ধ করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর নেতৃত্বে এক মহামিছিল তমলুক অভিযান করে। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য ছিল তমলুক থানা ও আদালত। কিন্তু এই মিছিলের ওপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালায়। তাতে বহু মানুষ হতাহত হয়। সেই তালিকায় ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। মৃত্যুর আগে তিনি যে দৃষ্টান্ত রচনা করেন তা অভূতপূর্ব। পরপর গুলির আঘাতে তিনি যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন, তখনও ভারতের জাতীয় পতাকাকে তিনি ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। 'বন্দেমাতরম' ধ্বনি দিয়ে জাতীয় পতাকাকে বুকে আঘলে রাখেন। মাতঙ্গিনী হাজরার এই নজিরবিহীন দেশপ্রেমের নমুনা আজও আমাদের শরীর ও মনে ছিল দেশবাসীর কাছে এখনও পর্যন্ত স্মরণীয়। গান্ধীবাদী আদর্শ পালনের জন্য তাঁকে গান্ধীবুড়ি বলা হয় ।
নিজের ভাষায় লোখা ।
6. গান্ধীজীর অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শটি ব্যাখ্যা করো। এই আদর্শের সঙ্গে কংগ্রোসের প্রথমদিকের নরমপন্দীদের আদর্শের একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর:- অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শ: গান্ধীজীর 'সত্যাগ্রহ 'অহিংসা'-র আদর্শ দুটিকে একসঙ্গে "অহিংসা সত্যাগ্রহ' বলা হয়। গান্ধিজি মনে করতেন, সত্যের খোঁজ করাই মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। ফলে সত্যের প্রতি আগ্রহ বা সত্যের প্রতি নিষ্ঠা রাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। তিনি বলতেন হিংস্র পথে রাজনৈতিক প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের পরিবর্তে অহিংস পথে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ হবে। এর জন্য জনগণকে অহিংসার পথে অবিচল থাকতে হবে।
অহিংস সত্যাগ্রহ ও নরমপন্থী আদর্শের :- গান্ধিজি অহিংস পথে গণ সত্যাগ্রহের কথা বলেছিলেন। গান্ধিজির এই নীতির সঙ্গে নরমপন্থীদের আবেদন-নিবেদন নীতির মিল রয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসকদের বিতাড়নের ক্ষেত্রে নরমপন্থীরা প্রাথমিক পর্বে আবেদন-নিবেদন নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। গান্ধীজি ও আন্দোলনের সূচনায় ব্রিটিশদের সঙ্গে আপস মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলেন।
গান্ধিজি জাতীয়তাবাদী নেতাদের সহজ-সরল জীবন-যাপনের কথা বলেছেন, যা নরমপন্থীদের বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না।
নরমপন্থীরা বলেছেন মানুষ স্বরাজের জন্য প্রস্তুত হলে। ব্রিটিশরা ভারতীয়দের হাতে স্বশাসন দিয়ে যাবে। কিন্তু গান্ধিজি মনে করতেন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বরাজের দাবি করতে হবে। গান্ধিজি সকল শ্রেণির মানুষকে তাঁর আন্দোলনে শামিল করেছিলেন। কিন্তু নরমপক্ষীদের সঙ্গে ছিলেন শুধুমাত্র উচ্চবর্গের মানুষজন।
7. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? ওই আন্দোলন রদ করা বিষয়ে গান্ধির সিদ্ধান্তের সঙ্গো কি তুমি একমত ? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর:- অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের: অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলি ধরা পড়ে, তা হল- 1) এই আন্দোলন ছিল একটি নির্ভেজাল অহিংস ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন।
2) চৌরিচৌরা হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে এই আন্দোলনে হিংসা প্রবেশ করায় গান্ধিজি ব্যথিত হয়ে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
3) এই আন্দোলন কেবল শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ
ছিল না। তাতে গ্রামীণ ভারতের সর্বস্তরের মানুষ যোগদান করেছিল।
4) এই আন্দোলনে ছাত্র ও নারীসমাজ যোগদান করার
তা একটি আলাদা মাত্রা পায়।
5) এই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গান্ধিজি কেবল ভারতীয়দের 'স্বরাজ' চাননি; তিনি চেয়েছিলেন ভারতের দারিদ্র্য, অশিক্ষা জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার অবসান ঘটাতে।
আন্দোলন রদ-এর মূল্যায়ন :-
পক্ষে মত :- গান্ধিজির আন্দোলন ছিল অহিংস সত্যাগ্রহ । সেখানে হিংসার কোনো স্থান ছিল না। সেই অর্থে গান্ধীজীর আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক।
বিপক্ষে মত :- অসহযোগ আন্দোলন হিংসার পথে পরিচালিত হওয়ায় গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন । এক্ষেত্রে দেশজুড়ে গান্ধিজির প্রবল সমালোচনা হয়েছিল।। আমার মনে হয় দেশজুড়ে আন্দোলন যখন চরম আকার করেছিল ঠিক তখনই গান্ধিজি সমগ্র আন্দোলন প্রত্যাহার ন করে কোনো অংশের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে পারতেন। কারণ আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ শুধুমাত্র চৌরিচৌরাতে হয়েছিল। সেই অঞ্চলের আন্দোলন প্রত্যাহার করলে বা সেই অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করলে হয়তো বা সমস্যার সমাধান হত।
8. আইন অমান্য আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের চরিত্র কেমন ছিল? সূর্য সেন ও ভগৎ সিং-এর সংগ্রাম কি গান্ধির মতামতের সহগামী ছিল?
উত্তর:- আইন অমান্য আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ:
সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এবং ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৬ এপ্রিল গুজরাটের ডান্ডিতে সমুদ্রের তটভূমি থেকে জল তুলে লবণ প্রস্তুত করে লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে গান্ধিজি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। তারপর আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ হরতাল ও বিক্ষোভে যোগ দেন। সরকারকে কর দেওয়া বন্ধ করেন। স্বদেশি জিনিস গ্রহণ ও বিদেশি জিনিস বয়কট করা শুরু হয়। ছাত্র, যুব, মহিল কৃষক ও শ্রমিকরা দলে দলে আন্দোলনে শামিল হন। পিকেটিং এবং বিদেশি জিনিসে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলতে থাকে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে খান আবদুল গফফর খানের নেতৃত্বে মুসলমানরা আন্দোলনে শামিল হন।
সূর্য সেন ও ভগৎ সিং-এর আন্দোলনের সঙ্গে গান্ধির আন্দোলনের তুলনা:
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের পুরোধা মাস্টারদা সূর্য সেন এবং পাঞ্জাবের বৈপ্লবিক কার্যকলাপের পুরোধা ভগৎ সিং-এর আন্দোলন ছিল প্রকৃতিগতভাবে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লব। তাদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শক্তি তথা ব্রিটিশদের দমন করে দেশে স্বাধীনতা আনা। সংগঠনের প্রয়োজনে ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ এবং অস্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা আনতে হবে বলে বিপ্লবীরা মনে করতেন। অপরদিকে বিভিন্ন আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ অহিংস সত্যাগ্রহের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জন। সত্যের প্রতি অবিচল আস্থাই ছিল গান্ধীজীর আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
9. জাতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর উত্থানের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করো। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তার ওপর কোন্ কোন্ বিষয় ছাপ ফেলেছিল বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তর:- জাতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর যোগদানের আগে সারা ভারতব্যাপী গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। সাধারণ মানুষ দলে দলে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। গান্ধিজির আন্দোলনের পথকে সুভাষচন্দ্র বসু পুরোপুরি মেনে নেননি। কিন্তু গান্ধিজির নেতৃত্বকে সুভাষচন্দ্র বসু স্বীকার করে নেন। এই সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর যোগাযোগ স্থাপিত হয় । চিত্তরঞ্জন দাশের আদর্শ ও ভাবনা সুভাষচন্দ্র বসুর চিন্তার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে স্বরাজ্য দল জয়লাভ করে এবং সুভাষচন্দ্র বসু মেয়র হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর সুভাষচন্দ্র বসু পূর্ব স্বরাজের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে নাকচ করেন। ফলে গান্ধিজির সঙ্গে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুর মতবিরোধ শুরু হয়। গান্ধিজির অসহযোগ, আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সুভাষচন্দ্র বসু সমর্থন করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসু অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেন।
সুভাষচন্দ্র বসুর চিন্তায় কয়েকটি বিষয়ের প্রভাব:
সুভাষচন্দ্র বসু মনে করতেন জাতীয়তাবাদের বিকাশ ছাড়া ভারতীয় সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। তিনি বিশ শতকের জার্মান জাতীয়তাবাদী ভাবধারার শরিক হতে চেয়েছিলেন। সোভিয়েত রাশিয়ার অর্থনৈতিক সাম্যের আদর্শকে তিনি কিছুটা গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া স্বামী বিবেকানন্দের সাংগঠনিক ভাবনাচিন্তার দ্বারা সুভাষচন্দ্র বসু প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়।
10. ভারত ছাড়ো আন্দোলন কি গান্ধিজির অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শ মেনে চলেছিল ? নৌবিদ্রোহকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে কীভাবে তুমি ব্যাখ্যা করবে ?
উত্তর:- ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও গান্ধিজির সত্যাগ্রহের আদর্শ:
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন সবক্ষেত্রে গান্ধিজির সত্যাগ্রহের আদর্শ মেনে হয়নি। করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' এই আওয়াজ তুলে গান্ধিজি আন্দোলনের চরিত্র পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি এই আন্দোলনকে দেশবাসীর চূড়ান্ত সংগ্রাম বলে চিহ্নিত করেন। তাই ব্রিটিশ সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তারা দেশ ছেড়ে চলে না গেলে সারা হিন্দুস্থানে আগুন জ্বলবে । প্রথম দিকে আন্দোলন অহিংস থাকলেও ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির ফলে জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ বাঁধে। উত্তেজিত জনতা রেললাইন, টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ধ্বংস এবং পোস্টঅফিস আক্রমণ করে।
সুতরাং, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই আন্দোলন যে হিংসাশ্রয়ী হয়ে পড়েছিল তা বলাই বাহুল্য। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।
স্বাধীনতার অংশ হিসেবে নৌবিদ্রোহ :-
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি নৌবিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের ওপর চরম আঘাত হেনেছিল। খাবারের খারাপ মান, বেতন বৈষম্য, বর্ণবৈষম্যের অপমানের বিরুদ্ধে 'তলোয়ার' নামক জাহাজের নাবিকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এর সঙ্গে বিদ্রোহীরা আজাদ হিন্দ বাহিনী ও অন্যান্য রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি তুলেছিলেন। ছাত্র ও যুবকরা নৌবিদ্রোহীদের সমর্থনে আন্দোলন শুরু করেন। জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লিগ, গান্ধিজি এই বিদ্রোহকে ঔপনিবেশিকতা বিরোধী আন্দোলন বলতে নারাজ।
এই আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ ছিল বলে আমার
মনে হয়। কারণ ৬ দিনের এই বিদ্রোহে ব্রিটিশরা বুঝে যায়,
এদেশে তাদের পরমায়ু ঘনিয়ে এসেছে। এই বোধোদয় থেকেই
তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের
কথা ঘোষণা করেন ।
No comments:
Post a Comment