দশম শ্রেণীর ভূগোল চতুর্থ অধ্যায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রশ্ন ও উত্তর |class 10 4th chapter questions answers 2024| WB board geography suggetion |
দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun
দশম শ্রেণীর ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় পড়তে click korun
A. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো
প্রশ্ন । ১ | বর্জ্য (Waste) কাকে বলে?
উত্তর : ব্যবহারের অযোগ্য, পরিত্যক্ত, কঠিন-তরল-গ্যাসীয় অবস্থায় প্রকৃতিতে পড়ে থাকা বস্তু যা পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ তাকে বলে বর্জ্য। যেমন- ভাঙা প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, নোংরা জল ইত্যাদি।
প্রশ্ন| ২ | পদার্থের বস্তুগত অবস্থা অনুসারে বর্জ্য ক-প্রকার ও কী কী?
উত্তর : পদার্থের বস্তুগত অবস্থার ভিত্তিতে বর্জ্য তিন প্রকার যথা—কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্য।
প্রশ্ন। ৩ কঠিন বর্জ্য (Solid waste) কাকে বলে ?
উত্তর : যে কঠিন বস্তু অব্যবহৃত অবস্থায় পরিবেশের অবনমন বা দূষণ ঘটাতে সাহায্য করে, তাকে বলে কঠিন বর্জ্য। যেমন- খাবারের অবশিষ্ট অংশ, গৃহস্থালির জঞ্জাল, প্লাস্টিক, পেপার, ভাঙা কাচের বোতল, চট, সিরিঞ্জ, ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৪। কঠিন বর্জ্য পোড়ানো উচিত নয় কেন?
উত্তর : কঠিন বর্জ্য পোড়ালে তা থেকে যে গ্যাসটি (যেমন—সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড, কার্ব মনোক্সাইড) নির্গত হয়, তা পরিবেশদূষণ ঘটায়। তাই কঠিন বর্জ্যারে অবৈজ্ঞানিকভাবে পোড়ানো উচিত নয়। জেনে রাখো ভস্মীভূতকরণ (Incineration) : কঠিন বর্জ্য পদার্থকে আবর্জনা পোড়ানোর চুল্লিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অতি উচ্চচাপে পোড়াবার পদ্ধতিকে ভস্মীভূতকরণ বলা হয়। পুড়ে যাবার পরে যে ছাই, কাচ ও অন্যান্য ধাতু অদাহ্যবস্তুরূপে পড়ে থাকে তা সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন ৫। তরল বর্জ্য (Liquid Waste) কাকে বলে? [ পর্ষদ নমুনা ১৭
উত্তর : প্রকৃতিতে দূষণ সৃষ্টিকারী তরল অব্যবহৃত যৌগ যখ অপরিশোধিত অবস্থায় পরিবেশের ক্ষতি করে, তখন তাকে তরু বর্জ্য বলে। যেমন— গৃহস্থালি, কলকারখানার ব্যবহৃত দূষিত জল = কাপড় কাচা, বাসন মাজার দূষিত জল ইত্যাদি।
প্রশ্ন | ৬ | গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আনাজের খোসা, ভাঙা খেলনা, প্লাস্টিক মগ, ধাতুর ভাঙা অংশ ছেঁড়া কাপড়, পুরোনো কাগজ, প্লাস্টিক প্যাকেট ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৭। গৃহস্থালির তরল বর্জ্যোর উদাহরণ দাও।
উত্তর বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু, ব্রিডিং ww.ive মিউরিটিক পাউডার, অ্যাসিড, ফিনাইল মিশ্রিত জল রান্নাঘরের মশলা, তেল মিশ্রিত তরল, রাজার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি।
৮| জলকে কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়?
উত্তর : বিভিন্ন প্রকার জীবাণুনাশক পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য। জলকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। যেমন—অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার, জলে ক্লোরিনের ব্যবহার, জল ফুটিয়ে খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে জল শুদ্ধ করা হয়।
প্রশ্ন ৯ : গ্যাসীয় বর্জ্য (Gaseous Waste) কাকে বলে?
উত্তর :বাতাসে ভাসমান লৰণকণা, বায়ুকণা, ধুলোকণা, যখন পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে, তাকে বলে গ্যাসীয় বর্জ্য। যেমন—কলকারখানা এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, গৃহস্থালি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১০ | বিষাক্ত বর্জ্য (Toxic Waste) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয়, সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ। যেমন- শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ, যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
প্রশ্ন ১১ | বিষহীন বর্জ্য (Non-toxic Waste) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়াতা নেই, যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না, তাদের বিষহীন বর্জ্য পদার্থ বলে। এই বিষহীন বর্জ্য পদার্থগুলি সাধারণত Biodegradable বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয়। যেমন—বাজারের বর্জ্য পদার্থ, কলকারখানার বর্জ্য প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১২| "E-বর্জ্য' বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য (Electronic waste) কাকে বলে?
উত্তর : বর্তমানে বিশ্বে নানান ইলেকট্রনিকস দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। এই দ্রব্যগুলির অবহৃত বাতিল অংশের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ থাকে। বর্জাকে EE waste বলে। যেমন- সার্কিট বোর্ড, টিভি বা কম্পিউটার মনিটর, কম্পিউটারের ব্যাটারি ইত্যাদি।
১৩/ জীব বিশেষ (Biodegradable Wante ) কাকে বলে?
উত্তর : যে বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না, ব্যবহারের পরবর্তী বাতিল অংশ, পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পুনরায় পরিবেশে মিশে যায়, তাকে জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য বা Biodegradable waste বলে। যেমন- সবজি, তার বিশ্লেষ্য বলা পাতা, ফল, ফুল ইত্যাদি জৈব বর্জ্য হল এর উদাহরণ।
প্রশ্ন ১৪ | জীব অজ্ঞ বর্জ্য (Non-biodegradable Waste) কী?
উত্তর : যেসব বার্তা পরিবেশে পুনরায় মিশে যেতে পারে পরিবেশের ওপর একই অবস্থায় পড়ে থেকে দূষণ সৃষ্টি করে, তাকে Non-biodegradable বা জীব-অবিশ্লেষ্য । যেমন- প্লাস্টিক, পলিথিন, তীর অবিশ্লেষ্য বঙ্গা | বিভিন্ন শিল্পজাত বর্জ্য। ইত্যাদি। E|
১৫| জৈব বর্জ্য (Biological Waste) কাকে বলে?
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের অংশবিশেষ বা দেহাবশেষকে মূলত জৈব বর্জ্য বলা হয়। যেমন- মৃত পশু-পাখির দেহ, ফুল-ফল-শাকসবজি ইত্যাদি হল জৈব বর্জ্য। এইগুলি পচনশীল বলে সহজেই পরিবেশে মিশে যায়।
প্রশ্ন ১৬ | Hazardous Waste কাকে বলে?
উত্তর : বিষাক্ত ধাতুজ বর্জ্য, যেমন- সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টস, ডায়ক্সিন জাতীয় দ্রব্য পরিবেশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে, একে বলে Hazardous Waste E
১৭ ব্যবস্থাপনা (Waste Management) কাকে | পর্ষদ নমুনা এম ১. বলে ?
উত্তর : বর্জ্য পদার্থগুলিকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহারের যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থাকেই বিজ্ঞানের ভাষায় गा স্থাপনা।
প্রশ্ন ১৮ : BOD কি।
উত্তর : BOD-র পুরো কথা হল Biological Oxygen Demand मী বা জলাশয়ের জলে নির্দিষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন উপস্থিত থাকে যা জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য আবশ্যক। প্রতি একক আয়তনের জৈব জারণের ফলে অণুজীবদের যে পরিমাণ অক্সিজেন দরকার হয়, তাকে বলে BOD।
প্রশ্ন ১৯। ইউটিফিকেশন কী?
উত্তর : জলাশয়ের পুষ্টি মৌল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বলে ইউটিফিকেশন। জলাশয়ে জলদূষণের (কাপড় কাচা, ডিটারজেন্ট, রাসায়নিক সার) ফলে জলের নাইট্রেট ও ফসফেটের পরিমাণ বাড়ে। পুষ্টি মৌলের প্রাচুর্যে জলে ভাসমান কচুরিপানা, শৈবাল, অ্যালগি জাতীয় প্রাণীর পরিমাণ বাড়ে। ফলে জলের নীচে প্রাণীদের বৃদ্ধি। ও বিকাশ ব্যাহত হয়, একে বলে ইউটিফিকেশন।
প্রশ্ন ২০ | Take back policy কাকে বলে?
উত্তর : যেসব ব্যবহার্য দ্রব্যের পুনর্বিয়োজন সম্ভব নয় অর্থাৎ যেগুলি প্রকৃতিতে মিশে যায় না, সেগুলি যথাসম্ভব ব্যবহার না করা উচিত অথবা ব্যবহার কমানোর প্রবণতা তৈরি করা আবশ্যক। তা সত্ত্বেও যেগুলি একান্তই ব্যবহার করতে হচ্ছে যেমন ইলেকট্রনিকস দ্রব্য, কম্পিউটার, সেলফোন প্রভৃতি; সেগুলি ব্যবহারের পর অকেজো হলে পুনরায় প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে তা ফিরিয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতির নাম Take Back Policy |
প্রশ্ন ২১। নিষ্কাশন (Drainage) কাকে বলে?
উত্তর : পয়ঃপ্রণালী, নর্দমা, শহরের আবর্জনা পাইপলাইন পথে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর তার থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক মুক্ত করে বিশুদ্ধ করার পদ্ধতিকে বলে নিষ্কাশন। এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন ২২ | উন্মুক্ত বর্জ্য (Open Dumping) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : সাধারণত শহরে নীচু খোলা জমিতে বর্জ্য উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখা থাকলে, তাকে উন্মুক্ত বর্জ্যা বলে।
প্রশ্ন ২৩ | লিচেট (Leachate) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : বৃষ্টির যে জল ল্যান্ডফিলের বর্জ্য পদার্থ ধুয়ে নিয়ে জলাশয়ে বা ভৌমজলে মেশে, সেই বর্জ্য পদার্থ ধোয়া জলকে লিচেট বলে।
প্রশ্ন। ২৪। আখের ছিবড়ে বা ব্যাগাসে (Bagasse) কী ?
উত্তর : চিনি শিল্পে ব্যবহৃত অবশিষ্ট আখের ছিবড়ে ও অন্যান্য বর্জাকে ব্যাগাসে বলে।
প্রশ্ন ২৫ | Waste Exchange বলতে কী বোঝ?
উত্তর : অনেক সময় পদার্থ বা বস্তু ব্যবহার করে পুনরায় অবিকল অবিকৃত অবস্থায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। পদার্থ বা বস্তুর পুনর্ব্যবহারের এই পদ্ধতিকে বলে Waste Exchange | যেমন- পুরোনো কাগজ থেকে নতুন কাগজ প্রস্তুত করা। জেনে রাখো ● আবর্জনা (Garbage) : আমাদের প্রত্যেক দিন বাতিল। করে দেওয়া গৃহস্থালির ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত শাকসবজি ফল ইত্যাদির খোসা, উচ্ছিষ্ট অংশকেই আবর্জনা বলে। O জাল (Rubbish): সকল প্রকার দাহা কঠিন পদার্থ, যেমন— কাঠ কাগজ, কাচ, চামড়া, প্লাস্টিক ও বিভিন্ন প্রকার ধাতুকে জঞ্জাল বলে
প্রশ্ন ২৬ | NPK কী?
উত্তর : NPK-র পুরো নাম নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাশিয়াম। এগুলি উদ্ভিদের পুষ্টিমৌল, উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক উপাদান। এই উপাদানগুলি না-থাকলে উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোসিস রোগ হয় অর্থাৎ গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
প্রশ্ন ২৭ | তেজস্ক্রিয় বর্জ্য (Nuclear waste) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পারমাণবিক চুল্লি, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, পারমাণবিক গবেষণাগার থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে। যেমন—ইউরেনিয়াম-235, 238, থোরিয়াম-230, কার্বন-14 ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২৮ | ভার্মি কম্পোস্টিং (Vermicomposting) বলতে কী বোঝ?
উত্তর কেঁচোর জীবনযাত্রার স্বাভাবিক মাধ্যমে জৈব বর্জ্যের বিয়োজন ঘটে হিউমাসে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিকে ভার্মি কম্পোস্টিং বলে। ভার্মি কম্পোস্টিং
প্রশ্ন ২১ | বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ফাঁকা জমি বা জমিতে গর্ত খুঁড়ে বর্জ্য পদার্থ ভরাধ করাকে বর্জ্য ভরাটকরণ বলে। এতে বর্জ্য পদার্থ ধীরে ধীরে বিশ্লেষিত ■ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
প্রশ্ন ৩০ | বর্জ্যের পুনর্ব্যাবহার কাকে বলে?
উত্তর : কিছু কিছু বর্জ্য পদার্থ আছে যেগুলি পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে। যেমন- খবরের কাগজ, পুরোনে * শিশি, বোতল ইত্যাদি। এতে অর্থের সাশ্রয় হয় এবং সম্পদ বাঁচে।
A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো
প্রশ্ন ১। বর্জ্য পদার্থের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : বর্জ্যের প্রকারভেদ (Classification of waste) পরিবেশের বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিভিন্ন ভিত্তির ওপর সাধারণত বিশেষ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।
পার্থিব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রকারে
(i) কঠিন (Solid) | পদার্থের বিভিন্ন প্রকার ভৌত অবস্থাগুলির মধ্যে কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতি পরিবেশে সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা হয়। যেমন গৃহস্থালির জঞ্চাল, প্লাস্টিক, পেপার, পুরোনো অব্যবহার্য আসবাবপত্র ভাঙা বোতল ও কাচের টুকরো, চট, খবরের কাগজ, এ ছাড়া বাজারের আনাজপাতি | ও হাসপাতালের নানা অব্যবহার্য ব্যাি | যেমন সিরিও, গজ কাপড়, তুলো, রোগীর জামাকাপড় ইত্যাদি। এ কঠিন বর্জ্য ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ, যা সাধারণত কলকারখ নাগুলি থেকে উৎপন্ন হয়।
(ii) (Liquid) তরল বর্জ্য পদার্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নর্দমা ও নালাবাহিত গৃহস্থালির পয়ঃপ্রণালীজাত নানান তরল পদার্থ, কৃষিজমিতে কীটনাশক প্রয়োগের পরে জলসেচ দ্বারা বাহিত জল যা। পার্শ্ববর্তী নদী ও জলাশয়ে মেশে। এ ছাড়াও রয়েছে নানান শিল্পজাত তরল বর্জ্য, নানান রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি। তরল বর্জ্য
(ii) গ্যাসীয় (Gaseous) কলকারখানা থেকে নির্গত নানান SPM (সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার) বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলোকণা, বিষাক্ত কণা, কার্বন মনোক্সাইড, বাতানুকূল যন্ত্র থেকে নির্গত CFC প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস সমূহ এই প্রকার গ্যাসীয় গ্যাসীয় বর্জ বর্ষা পদার্থের উদাহরণ। (b) বিষক্ষিতা অনুযায়ী প্রকারভেদ: বিষক্রিয়তার তারতম্য অনুযায়ী বর্জ্য পদার্থকে দু-ভাগে বিভক্ত করা যায়- বিষাক্ত বর্জ্য বিষহীন বর্ষা
(i) বিষাক্ত (Toxic) নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়তার উদ্ভব হয় এবং যেগুলি একেবারেই পরিবেশবান্ধব নয়, সেগুলিকে বলা হয় বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ। যেমন- শিল্পজাত নানান প্রকার তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ইউরেনিয়াম, ঘোরিয়াম প্রভৃতি) এবং কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ, যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
(i) বিষহীন (Non-toxic) : যেসব বর্জ্য পদার্থগুলির বিষক্রিয়তা নিই, যেগুলি পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করে না তাদের বিষহীন পক্ষী পার্থ বলে। এই বিহীন বর্জ্য পরি Biodegradable বা জৈবিকভাবে বিয়োজিত হয়। যেমন- বাজারের
2.বজ্র পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর : বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- কঠিন গ্যাসীয় তিন প্রকারেরই হতে পারে।
ii) বর্জ্য পদার্থের কিছু অংশ জীবাণু দ্বারা নিয়োজিত হয়, কিছু অংশ অবিয়োজিত থাকে।
(ii) সুদ বর্জ্য উপাদানে পরিবেশের দূষণ সৃষ্টি হয়। ভারসাম্য নষ্ট হয়।
iv) পরিমাণ গ্রামের তুলনায় শহরে বর্জ্যের পরিমাণ বেশি থাকে। গৃহস্থালি শিল্পাঞ্চল কৃষিক্ষেত্র, চিকিৎসাকেন্দ্র, খনিজ আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদক স্থান, ব্যাবসাকেন্দ্র, উৎপাদক স্থান ইত্যাদি হল। বঙ্গোর উৎসস্থল।
প্রশ্ন ৩ | কৃষি বর্জ্য কীভাবে সৃষ্টি হয়।
উত্তর : চাষবাসের সময় যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে বা শস্যখেতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেগুলির অবশিষ্টাংশ সাধারণত মাটিতে মিশে বৃষ্টির ঝালের সঙ্গে বা জলসেচের সঙ্গে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো জলাশয়, পুকুর বা নদীতে গিয়ে মেশে। এগুলিই কৃষিজ তরল বর্জ্য। এ ছাড়াও যখন শসাথেতে পোকা লেগে যায় বা খেতে ফসল নষ্ট হয়ে যায় তখন তা বিক্রির বা আহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং কৃষিজ বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। কৃষির ফলন বাড়াতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এগুলিতে নাইট্রেট, ফসফেট, পটাশ, অ্যামোনিয়া, ক্লোরাইড প্রভৃতি রাসায়নিক মৌল থাকে। এ ছাড়াও | জৈব সার হিসেবে গবাদি পশুর বিষ্ঠা, গাছের পাতা, ডাল, কেঁচোর কম্পোস্ট প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। যদিও এগুলি জৈব ভঙ্গুর অর্থাৎ নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পুনরায় মাটিতে মিশে যায় তবুও সাময়িক সময়ের জন্য এগুলি পরিবেশের আবর্জনা। এ ছাড়া কৃষিফসল কেটে নেওয়ার পর পড়ে থাকা গাছের গোড়ার অংশে আগাছা বা ধান, গম-এর তুষ বা খোলস, পাট, তুলোর আঁশের বাতিল অংশ পরিবেশে বর্জ্য। সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৪।কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি চিহ্নিত করো।
উত্তর : কঠিন বর্জ্যের সৃষ্টির উৎসগুলি হল-
(i) গৃহে ব্যবহৃত উপকরণ যেমন-পুরোনো কাগজ, বাতিল কাপড়, ভাঙা প্লাস্টিক ও কাচের অংশ।
(ii) শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ, টায়ার, টিউবের বাতিল অংশ, সিমেন্ট, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবর্জনার অংশবিশেষ।
(iii) কৃবিখেতে জমিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের অকেজো অংশ, ফসল তোলার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ বা ধানের তুষ, আখের ছিবড়া, পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অংশবিশেষ।
(iv) খনি নির্মাণকার্যে খনিজ আহরণের পর খনিজের অবশিষ্টাংশ: গৃহ বা অন্যান্য নির্মাণের পর পড়ে থাকা চুনসুরকি, লোহার ছাঁট, ইটের কুচি, বালির আবর্জনা, পাথরের টুকরো, কয়লা পোড়ানোর পর পড়ে থাকা ছাই ইত্যাদি।
প্রশ্ন। ৫ | শিল্প বর্জ্যের নানা উৎস সমূহের উল্লেখ করো।
উত্তর :নগরাঞ্চলগুলিতে অবস্থিত কলকারখানাগুলি থেকে যে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, বিভিন্ন বিষাক্ত ধাতুকণা ও তরল পদার্থ নির্গত হয়, তাকেই শিল্প বর্জ্য বলে। * খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প : এই শিল্পে ফল, ফুল থেকে নির্যাস বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ। * শর্করা শিল্প আখ থেকে চিনির রস নিঃসরণের পর পড়ে থাকা আগের ছিড়া। + পাটশিল্প পাটের আঁশ বের করার পর পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ। * কাগজ শিল্প : কাষ্ঠমণ্ড, সেলুলোজ, কাগজের অবশিষ্টাংশ, শিল্পে শিল্প বর্জ্যা ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের অব্যবহৃত অংশ প্রভৃতি। * বয়ন শিল্প ব্লিচিং পাউডার, রঙের অবশিষ্টাংশ, তুলো, সুতো, কাপড়ের ছটি অংশ। * ধাতব শিল্প অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত শিল্পের ছাঁট, খনিজ, রাসায়নিক শিল্পের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য, অ্যাসিড, রং, তেল ইত্যাদি। + ইলেকট্রনিক শিল্প যন্ত্রাংশের অংশ, তামার তার, সিসা, অ্যালুমিনিয়ামের অংশবিশেষ। + সিমেন্ট শিল্প চুনাপাথরের অবশিষ্টাংশ, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা, খনিজ তেল, পারমাণবিক উপাদানের অংশ।
প্রশ্ন ৬। তরল বর্জ্যা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : যেসব বর্জ্য তরল আকারে থাকে, তাকে তরল বর্জ্য বলে।
তরল বর্জ্য সৃষ্টির বিভিন্ন প্রক্রিয়া হল-
(i) গৃহস্থালির তরল বর্জ্য। বাথরুমে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু, ব্লিচিং পাউডার, অক্সালিক অ্যাসিড, মিউরিটিক অ্যাসিড, ফিনাইল মিশ্রিত জল, রান্নাঘরে মশলা, তেল মিশ্রিত তরল, রান্নার উচ্ছিষ্টাংশ ইত্যাদি।
(ii) কলকারখানার তরল বর্জ্য কলকারখানা থেকে নির্গত গরম জল, তৈলাক্ত জল, কারখানা ধোয়ার জল ইত্যাদি।
(iii) কৃষিক্ষেত্রের তরল বর্জ্য কৃষিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক ওষুধ জলের সাথে ধুয়ে এসে নদীতে মেশে। এগুলি কৃষিজ তরল বর্জ্যের উদাহরণ।
প্রশ্ন ৭। চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্ষা কীভাবে সৃষ্টি হয়।
উত্তর : হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা বিভিন্ন প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে যে বর্জা নির্গত হয়, তাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বজ্রো বলে । চিকিৎসাক্ষেরে ব্যবহৃত চ, সিরিঞ্জ, ছুরি, কাঁচি, ব্রেড, স্যাল বোতল, তুলো, ব্যান্ডেজ, মানব অশো ব্যবচ্ছিন্ন অংশ, চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ, ওষুধের প্যাকেট, প্যাথোলজি মল, মূত্র ইত্যাদি হল চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের উদাহরণ।
প্রশ্ন ৮। গাসীয় বর্জ্যের উৎসগুলি কী কী? |
উত্তর বাতাসে ভাসমান অবगকণা, বায়ুকণা, ধুলোর যখন পরিবেশে ক্ষতিসাধন করে, তাকে বলে গ্যাসায় ব | কলকারখানা, যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইড, কা মনোক্সাইড ইত্যাদি হল গ্যাসীয় বর্জ্যের উদাহরণ।
প্রশ্ন ৯। পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করে
উত্তর। (ক) বায়ু দূষণ (Air pollution) :বর্জ্য পদার্থগুলি পরিবেশের বিভিন্ন স্থানে জমিয়ে রাখার ফলে তা থেকে যে | দুর্গন্ধ নির্গত হয় তা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তথা সমগ্র বায়ুমণ্ড বায়ুদূষণ ঘটায় এবং এটি মানুষ তথা যে-কোনো প্রাণীর ক্ষে ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গো পৌঁছে শ্বাসরোধ, বমি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে।
(খ) ও মৃত্তিকা (Water & soil pollution কৃষিজ জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক পয়ঃপ্রণালী নির্গত তরল বর্জ্যগুলি বৃষ্টি বা জলসেচের জল দ্বারা গিয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো নদীতে মিশে সেখানকার স্বাভাবিক জ বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে। এ ছাড়া মাটির উর্বরাশক্তির পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটি আম্লিক করে দেয়।
(গ) রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical reaction) : বিভিন্ন তেজ পদার্থ, যেগুলি কোনোভাবেই মাটির সাথে মেশে না, সেইসব আ পদার্থগুলি ক্রমাগত যেখানে সেখানে সজ্জিত হয়ে জল নিন | ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে। এগুলি মাটির সঙ্গে রাসায়নিক বি ঘটিয়ে এমন কিছু ক্ষতিকর যৌগের সৃষ্টি করে, যা মানবসভা সমূহ ক্ষতি করতে পারে। (খ) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা (Imbalanced ecosyste এই বর্জ্য পদার্থের সময় এবং তার পরিমাণ পরিবেশে বেড়েই চলে ফলে পুকুর, বনভূমি, তৃণভূমি প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের বাস্তুতঃ দিনের পর দিন তাদের ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং বিঘ্নিত হচ্ছে
(ঙ) জীববৈচিত্র্য হ্রাস (Decrease in biodiversity) : পা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রগুলি উক্ত নানান পরিবেশদূষণের কবলে পড়ে তা ভারসাম্য হারাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবগুলি লু যাচ্ছে এবং পরিবেশের জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে।
(চ) দৃশ্যদূষণ যেখানে সেখানে জমা ময়লা আবর্জনায় প্র সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।
(ছ) জমি ও জলাভূমি ধ্বংস : বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য কখনও জমিতে এবং কখনও জলাভূমিতে ফেলা হয়। ফলে জমি ও জলাভূমির ক্ষতি হয়। (জ) গন্ধদূষণ : বর্জ্যের পচন শুরু হলে চারপাশ দুর্গন্ধে ভরে যায় ও পরিবেশের ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন| ১০ | তেজস্ক্রিয় বর্জ্য (Radioactive waste) বলতে কী বোঝ ?
উত্তর : তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হল উচ্চ তেজস্ক্রিয় ক্ষমতাসম্পন্ন পদার্থগুলির অবশিষ্টাংশ বিশেষ। উত্তর তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, রেডিয়াম প্রভৃতি উপাদান শিলাস্তরে থাকে ; খনিগর্ভ থেকে ওই পদার্থ আহরণের সময় এই বর্জ্য সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মহাজাগতিক বিকিরণ থেকেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপন্ন হয়, এগুলিও এই বর্জ্যের অন্যতম উৎস। এ ছাড়া পারমাণবিক বোমা তৈরি; ও নিক্ষেপের সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন শিল্পে যেমন বিদ্যুৎ শিল্পে পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহৃত হয়; এটিও বর্জ্যের অন্যতম উৎস। ঘড়ি বা যন্ত্র শিল্পের নানা কাজে রেডিয়াম ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্যানসার প্রতিরোধে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ১১ | বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে 3R-এর ভূমিকা উল্লেখ করো।
উত্তর : বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি হল 3R অর্থাৎ Reduce. Reuse & Recycle-কে একত্রে বলে 3R।
(a) Reduce বা বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস :আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অদরকারি পদার্থ যত কমানো সম্ভব হবে, বর্জ্যের পরিমাণও তত কমবে। অর্থাৎ দ্রব্য ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে; অপ্রয়োজনীয় জিনিসই পরিবেশে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায়।
(b) Reuse বা পুনর্ব্যবহার : পরিবেশের কিছু কিছু উপাদান পুনর্ব্যবহারযোগ্য। যেমন- ধাতব বস্তু, কাগজ, যন্ত্রাংশ প্রভৃতি। এগুলি একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা যায়। দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার সম্পদের সঞ্জয় বাড়ায়, তাই অপুনর্ভব সম্পদগুলিকে সাশ্রয় করা ও পুনর্ব্যবহার খুব জরুরি।
(c) Recycle বা পুনর্নবীকরণ :পুনর্নবীকরণ 3R বলতে বোঝায় বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোনো ব্যবহৃত দ্রব্যকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সম্পদে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া। যেমন—কাচ, ধাতু, প্লাস্টিক, কাগজ, ছেঁড়া কাপড় থেকে পুনরায় অনুরূপ দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব।
প্রশ্ন | ১২ | বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management) কী? পর্ষদ নমুনা [১৭] [মা.প. '১৮] অথবা, বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বর্জ্য পদার্থগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করা অথবা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উপাদানে পরিণত করার ব্যবস্থা বা পদ্ধতিকে বলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
• গুরুত্ব : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য সুরক্ষিত রাখে।
• কর্মসূচী : বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তিনটি কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হয়। যেমন—(১) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস (২) পুনর্ব্যবহার (৩) পুনর্নবীকরণ ; এই ত্রিমূখী কর্মসূচিকে সংক্ষেপে বলে 3R — Reduce: Reuse, Recycling |
• পদ্ধতি : কঠিন, তরল, গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয়। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ধাপগুলি হল— তরল (ক) বর্জ্য পৃথক্করণ (খ) বর্জ্য ভরাটকরণ (গ) কম্পোস্টিং।
বর্জ্য সাধারণত নিষ্কাশন পদ্ধতিতে ও গ্যাসীয় বর্জ্য স্ক্রাবার পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হয়।
প্রশ্ন। ১৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো। [
উত্তর : বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে; বৃহত্তর অর্থে দেশের, সমাজের, জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন। যে যে কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দরকার সেগুলি হল-
(a) পরিবেশকে রক্ষা করা : পরিবেশের অজৈব উপাদান জল, মাটি, বায়ু বর্জ্যের কারণে দূষিত হয়; তাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক।
(b) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশের জীবজ উপাদানগুলি বর্জ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য দেহে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়, ক্ষতিকারক প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক।
(c) জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা : পৃথিবীতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল নিয়ে যে জৈব বৈচিত্রা গড়ে ওঠে তা বর্জ্যের কারণে বিনষ্ট হয়। জৈব বৈচিত্র্য বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
(d) ও র ভারসাম্য পরিবেশের বিভিন্ন জীবন ও অজীব উপাদনের পারস্পরিক মিথোস্ক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট খাদ্যজালক ও খাদ্যশৃঙ্খল গড়ে ওঠে। পরিবেশ ও জীবনের সুস্থতা বজায় রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি পদক্ষেপ।
প্রশ্ন ১৪ | কম্পোস্টিং (Composting) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য পদার্থগুলি জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাসে পরিণত হলে, তাকে বলে কম্পোস্টিং।
• পদ্ধতি : বর্জ্য জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে এই প্রক্রিয়ায় হিউমাসে পরিণত হয়। কম্পোস্টিং মূলত দু-প্রকার—(ক) সবাত কম্পোস্টিং : বায়ুর উপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতিকে বলে সবাত কম্পোস্টিং। (খ) অবাত কম্পোস্টিং। বায়ুর অনুপস্থিতিতে জীবাণুর জৈব বিশ্লেষণ ঘটানোর পদ্ধতির নাম অবাত কম্পোস্টিং। এর অপর নাম ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি। সাধারণত বাড়ি, শহর, দোকান ঘরের অব্যবহার্য আনাজ, ডিমের খোসা, অবশিষ্ট খাবারের অংশ প্রভৃতি এই পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে জৈব সারে পরিণত করা হয়। এই পদ্ধতি ল্যান্ডফিলিং পদ্ধতিরই একটি বিশেষ রূপ। অল্প স্থানে গভীর গর্ত খুঁড়ে প্রথমে শাকসবজির অংশবিশেষ বা রেচনজাত বর্জ্য ফেলা হয়। পরে তা ভরাট হয়ে গেলে মাটি চাপা দেওয়া হয়; তা পচে জৈব পদার্থ মাটিতে মিশে কম্পোস্টিং মাটির পুষ্টিমৌল বৃদ্ধি করে। আবার অন্যত্র একই পদ্ধতিতে মাটি খুঁড়ে বর্জ্য ভরাট করে মাটির মুখ বন্ধ করে বিয়োজিত করা হয়। •
সুবিধা : (ক) মৃত্তিকায় জৈব উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। (খ) কৃষিক্ষেত্রে এই দ্রব্য সহজেই ব্যবহৃত হয়। (গ) কঠিন বর্জ্য খুব বেশি পরিমাণে হ্রাস পায়। • অসুবিধা : জনবসতি অঞ্চলের নিকটবর্তী স্থানে এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় গল্পদূষণের ও রোগজীবাণু আক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যিক।
প্রশ্ন ১৫ | স্ক্রাবার (Scrubber) সম্পর্কে লেখো। অথবা, গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী? (পর্ষদ নমুনা '১৭ || মাপে. [১৮]
উত্তর : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ বিজ্ঞাননির্ভর প্রক্রিয়ার নাম স্ক্রাবার। এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত দূষিত বায়বীয় পদার্থ ও গ্যাসীয় উপাদানের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করা হয়। পদ্ধতি : স্ক্রাবিং পদ্ধতি দু-প্রকার। (ক) শুষ্ক স্ক্রাবার (Dry scrubbers) : এই পদ্ধতির মাধ্যমে দূষিত নির্গত ধোঁয়াকে অগ্নমুক্ত করা হয়।
(খ) আর্দ্র স্ক্রাবার [ Wet Scrubber] এই পদ্ধতি প্রয়োগে দূষণকারী গ্যাস, দূষণকণা অপসারণ করা হয়। সাধারণত কোনে | প্রাণের মাধ্যমে গ্যাসীয় দূষিত পদার্থকে স্ক্রাবার দ্বারা অপসারণ কর হয়। প্রবন্ধে গ্যাসের দ্রাব্যতার ওপর এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিঃ করে।
উদাহরণ :(i) কয়লার দহনের সময় সালফার জারিত হয়ে সালফার ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয়। যা পরে যৌতাগারে স্ক্রাবার পদ্ধতিতে অপসৃত হয়।
(ii) অ্যামোনিয়া স্ক্রাবার বা হাইড্রোজেন সালফাইড মিশ্রিত জলীয় প্রবণ থেকে দূরে স্ক্র্যাবার পদ্ধতিতে দূষণমুক্ত করা হয়।
(iii) চুনাপাথরের গুঁড়ো। জলের সঙ্গে মিশে থাকা গ্যাসও এই পদ্ধতিতে পরিষ্কৃত কর হয়।
(প্রশ্ন) ১৬/ বর্জ্য ভরাটকরণ (Land filling) পদ্ধতি কী?
উত্তর : কোনো নীচু স্থানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এর বিশেষ পদ্ধতি হল বর্ষা ভরাটকরণ।
• পদ্ধতি : জনবসতি, শিল্পাঞ্চল বা বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে দূরে কোনে উন্মুক্ত খোলা জায়গাকে, খুব গভীরভাবে খনন করে মাটির নী বর্জ্য চাপা দেওয়া হয়। সাধারণত বর্জ্য ২ মিটার উঁচু স্তরে বিছিয়ে দেওয়া হয় ও তার ওপর ২০-২৫ সেমি মাটির স্তর চাপা দেওয়া হয়। মাটির মধ্যে থাকা জীবাণু বর্জ্যের ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। দীর্ঘদিন চাপা পড়া অবস্থায় থেকে ওই জৈব ভঙ্গুর বর্ষ মাটিতে মিশে যায়। •
সতর্কীকরণ : তবে এক্ষেত্রে কতকগুলি সতর্কীকরণ নেওয় আবশ্যিক। যথা- WE Recycle! RECYCLE পুনর্নবীকরণ যোগ্য বর্জ্য (i) ল্যান্ডফিলিং-এর নির্বাচিত স্থান শহরাঞ্চল থেকে দূরে হয়ে হবে। (ii) জায়গাটির আয়তন বেশি হতে হবে। (iii) স্থানটিতে জনবসতি থাকবে না; কারণ বর্জ্যের দূষণ মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। (iv) ময়লা বা বর্জ্যের ইয়োজিত অংশ যাতে কোনোভাবেই ভৌম জলন্তরকে দূষিত ন ঘরে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। (v) ময়লার গাড়ি যাবে নির্দিষ্ট খোলা স্থানে সহজে পৌঁছোতে পারে অর্থাৎ অঞ্চল (রিবহণযোগ্য হয় তা দেখা। (VI) অনেক দেশে সমুদ্রতীরে বর্ত যক্ষেপ করা হয়। এক্ষেত্রে দেখতে হবে স্থানটি যেন সামুদ্রিক ববৈচিত্র্যকে বিনষ্ট না-করে। (vii) ময়লা জমা করার স্থানগুলিকে যুদ্ধ না রেখে কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে বাঁধিয়ে দিতে হবে। ফরাকরণের সুবিধা : (3) ाষণ তথা পরিবে যাগের পরিমাণ কমে যায়। (ii) ল্যান্ডফিলিং-এর ফলে যে নির্গত হয়, তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। (iii) বর্জ্য পদার্থ বাঁধবে পারে না। আমি জয়াউলদের দোর্থ থেকে ভূঁইয়ে ভৌম জলস্তরে মিশে যায়।
প্রশ্ন ১৭। নিষ্কাশন পদ্ধতির বিভিন্ন বাপগুলি উল্লেখ করো। উত্তর :মূলত পর মূল নিষ্কাশন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা হয়। শহরে শিল্পকারখানা বা স্থান থেকে যে বিষাক্ত ত নিশিত হয় তা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে জীবাণু বা মু
(১) প্রাথমিক ধাপ। প্রথমে পাইপলাইন পথে নোংরা জল একটি বড়ো জলাধারে ফেলা | হয়। সেখানে ভারী বর্ষাগুলি বিভিয়ে জলাধারের নীচে পড়ে থাকে।
(b) দ্বিতীয় ধাপ জলে ভাসমান কঠিন জৈব ও অজৈব পদার্থ এই পর্যায়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
2) তৃতীয় ধাপ। এই পর্যায়ে রাসায়নিক ও বিষায় অভঙ্গুর পদার্থগুলিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শোধন করা হয় ও অন্য নিম করা হয়। বিষম বিশেষ তথ্য বাইয়োসাইড : কৃষিক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ বিনাশ করতে Electronic Waste : সাহায্য করে এমন জৈব উপাদান। পেস্টিসাইড : কৃষিকাজে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টিকারী ছত্রাক, কহি, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এমন রাসায়নিক উপাদান। ইনসেক্টিসাইডস্ : কৃষিজ ফসলের ক্ষতি করে এমন কীটপতঙ্গকে বিনাশ করতে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। হার্বিসাইডস: আগাছা দমন করার জন্য কৃষিক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন। ১৮ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো। অথবা, বর্জ্য পৃথক্করণ কীভাবে করা হয়?
উত্তর : (ক) বর্জ্য পৃথক্করণ (Segregation of waste) কোনো স্থানে যখন বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, তখন সেখানে নানান ধরনের বর্জ্য পদার্থ (শুষ্ক বর্জ্য ও আর্দ্র বর্জ্য) একত্রিত হয়ে থাকে। সেগুলিকে আলাদা না-করলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না। এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় বর্জ্য পৃথক্করণ। এই পদ্ধতিটি পৃথিবীর উন্নত দেশ, যেমন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বর্জ্য পৃথককরণ জাপান প্রভৃতি স্থানে যন্ত্রের মাধ্যমে করা হলেও ভারতবর্ষে মূলত মানুষের দ্বারাই করা হয়ে থাকে। টাকা জমিকে খুব গভীর ভাবে খনন করা হয়। কঠিন জৈব বর্জ্য।
(খ) জমি ভরাতকরণ :(Land filling) এই পদ্ধতিতে বৃ বৃহদায়তন াকা জমিকে খুব গভীর ভাবে খনন করা হয়। কঠিন জৈব বর্জ দার্থগুলিকে এর মধ্যে ফেলে ভরাট করা হয় এবং সবশেষে পুনরায় মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলি মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকাকালীন চাপে ও তাপে খুব সহজেই মাটি হয়ে যায়।
(গ) কম্পোস্টিং (Composting) : গ্রামাঞ্চলে বাড়ির মধ্যেই খালি জায়গায় কিছুটা জমি খনন করে তাতে গৃহস্থালির দৈনিক উৎপন্ন বর্জ্য ফেলা হয়। কিছুদিন পর বর্জ্য দ্বারা ওই জায়গা ভরতি হয়ে গেলে মাটি চাপা দিয়ে অপর কোনো স্থান পুনরায় খনন করে বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয়। কম্পোস্টিং পদ্ধতিটি খানিকটা ভরাটকরণ পদ্ধতির মতো। এই পদ্ধতিতেও একটি গর্তকে কিছু পরিমাণ জৈব বর্জ্য, যেমন— পশুপাখির । মৃতদেহ, গৃহস্থালি ও বাজারের নানান আনাজের খোসা ও পচা। শাকসবজি, মলমূত্র প্রভৃতি দ্বারা ভরাট করা হয় ও মাটি দিয়ে। এই গর্তের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরে দেখা যায়। যে ওই জৈবাংশগুলি বিয়োজিত হয়ে জৈব সার গঠন করেছে, যার পুষ্টিমাত্রা খুব বেশি। কম্পোস্টিং
(ঘ) নিষ্কাশন / নিকাশি (Drainage) : মূলত তরল বর্জ্য নিকাশি -বা নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশিত করে একটি বিশেষ আধারে সঞ্চয় করলে পরে ওই জল বিশুদ্ধিকরণের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
(ঙ) স্ক্রাবার (Scrubber) : স্ক্রাবার হল এমন একটি যন্ত্র যা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি দূষিত পদার্থগুলিকে আলাদা করে দেয়। বিভিন্ন কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় শিল্প বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে পরিশোধিত করে সেখান থেকে দূষিত পদার্থকে আলাদা করা হয়। স্ক্রাবার দুই ধরনের হয়। যথা- (i) শুষ্ক স্ক্রাবার, (ii) আর্দ্র স্ক্রাবার।
প্রশ্ন ১৯ | ফ্লাই অ্যাশ কী?
উত্তর : ফ্লাই অ্যাশ : এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ভাসমান বা উড়ন্ত বস্তুকণা' বা 'ছাই'। ব্যাস ০.০২ মাইক্রোমিটার থেকে ১০ মাইক্রোমিটার। (১ um = ১ মিটারের ১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ) * উৎস : তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর ছাই, তামাকের গুঁড়ো, কারখানার দূষিত গ্যাস ও ধুলোকণা, সিমেন্টের ধুলো, চাষের জমির পেস্টিসাইডের অংশবিশেষ, বাড়ির বর্জ্য বা ঘরবাড়ির ডাস্টিং-এর সময় ওড়া ধুলোকণা, ইটভাটার ধুলো বা গুঁড়ো উপাদান, উড়ন্ত ছাই-এ যে-উপাদানগুলি ফ্লাই অ্যাশ বিদ্যমান থাকে সেগুলি হল কার্বন, ফসফরাস, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, নাইট্রোজেন, সালফার। *
মানব স্বাস্থ্যে প্রভাব : মানবশরীরে ফুসফুসজনিত রোগ হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, চোখজ্বালা, মাথাব্যথা প্রভৃতির উপসর্গ দেখা যায়।
অন্যান্য প্রভাব : পাতলা আস্তরণে বাতাস ঢেকে যাওয়ায় ধোঁয়াশা সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, ফলে বায়ু দূষিত হয়।
কোলডাস্ট : ভাসমান কয়লার গুঁড়োকে বলে কোলডাস্ট। *
পেট্রোকোক : তৈল শোধনাগারে ক্রুড অয়েল শোধনের সময় অসম্পূর্ণ দহনের মাধ্যমে যে কণা উৎপন্ন হয়, তাকে বলে পেট্রোকোক। পেট্রোকোকে ৯% কার্বনকণার উপস্থিতি থাকে।
প্রশ্ন ২০ | বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণে শিক্ষার্থীর ভূমিকা উল্লেখ করো। |
উত্তর : পরিবেশকে বর্জ্য মুক্ত করতে শিক্ষার্থীকেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুমনে পরিবেশ সচেতনতা যত বাড়বে, পৃথিবী ও পরিবেশ ততই বাসযোগ্য ভূমিতে পরিণত হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা যেসব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলি হল—
(a) জৈব ভঙ্গুর, জৈব অভঙ্গুর, বিষাক্ত, বিষহীন বর্জ্য সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে জৈব অভঙ্গুর ও বিষাক্ত বর্জাগুলির ব্যবহার হ্রাস করা। যেমন - Use & Throw পেনের পরিবর্তে কালির পেন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।
(b) পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় রোগমুক্তি ঘটে। এই বিষয়ে বিদ্যালয় সচেতনতার দৃষ্টি দেখালে, বাড়ির চারপাশে বর্জ্য নিক্ষেপে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ব্যবহার করার গুরুত্ব বাড়বে।
(c) অপ্রয়োজনীয় উদ্বৃত্ত জিনিসই বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায়। তাই পরিমিত ও প্রয়োজনীয় জিনিসই কেনার নিয়ম শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে হবে।
(d) শৌচাগার ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। এ ছাড়াও বিতর্ক বা সাংস্কৃতিক নাটক, অ্যাওয়ার্নিং ক্যাম্প করে পরিবার ও সমাজের মানুষকে এ বিষয়ে জানাতে পারে।
প্রশ্ন | ২১ | নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধাপ – কেন ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে তবেই পরিবেশকে জালমুক্ত করে বিশুদ্ধ রাখা যাবে। প্রকৃতি বর্জ্যমুক্ত হলে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে; বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে। গৃহস্থালি, শিল্পক্ষেত্র, কৃষিক্ষেত্র, চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন যেসব বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্যে কোন্গুলি কীভাবে মানবশরীরে কুপ্রভাব ফেলে সে বিষয়ে সরকারি, বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, মিডিয়াকে এ বিষয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। মানুষ নিজেও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন। সুনির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলার সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত ময়লা ফেলার গাড়ি পাড়ায় পাড়ায় ময়লা সংগ্রহ করে যাতে সুনির্দিষ্ট স্থানে নিক্ষেপ না করে তার নজরদারি মানুষকে রাখতে হবে। খোলা ভ্যাটগুলিতে নিয়মিত ব্লিচিং ছড়াতে হবে যাতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ কমে। চাপা দেওয়া যায় এমন স্থানে ময়লা ফেলা হলে গন্ধদূষণের পরিমাণ কমবে। প্রত্যেকে নিজেকে সচেতন রাখবে; তাহলেই সমাজ সচেতন হবে। প্রকৃতি বাঁচলে আমরাও বাঁচব এই অঙ্গীকারে সবাইকে দীক্ষিত হতে হবে।
প্রশ্ন ২২ | বর্জ্য ভরাটকরণ প্রক্রিয়া মানবজীবনে অনেকসময় বিপর্যয় ঘটায় কী করে?
উত্তর : জনবসতি থেকে দূরবর্তী স্থানে খোলা উন্মুক্ত প্রান্তরে প্রথমে কিছুটা মাটি গভীরভাবে খনন করে বর্জ্য ফেলা হয়, পরে আবার মাটি চাপা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময় মাটির তাপে, চাপে খুব সহজেই তা মাটিতে পরিণত হয়। এই পদ্ধতিতে কয়েকটি বিশেষ শতর্কতা অবলম্বন না-করলে তা মানবজীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-
(i) উন্মুক্ত স্থানটি আয়তনে বড়ো হওয়া প্রয়োজন; নির্বাচিত খোলা স্থানটি অবশ্যই লোকালয় থেকে দূরে হওয়া বাঞ্ছনীয়, তা না-হলে গন্ধ ছড়ায় ও স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটে। জৈব প্রক্রিয়াকরণের সময় রাগাক্রান্ত পোকা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানবশরীরে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতির সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
(ii) ময়লা ফেলার গাড়ি ঢাকা হওয়া প্রয়োজন যাতে যাওয়ার পথে আবর্জনা রাস্তায় পড়ে না যায়; ময়লার গাড়ি যাতে শব্দদূষণ না ঘটায় সেদিকে বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত।
(iii) ময়লা ফেলা গর্ত ততটাই খনন করা দরকার যা মাটির নিজস্ব পুষ্টি মৌল নষ্ট না-করে অথবা ওই বর্জ্য দূষণ ভৌম জলস্তর পর্যন্ত না পৌঁছোয়; সেক্ষেত্রে পানীয় জলে নানা রোগজীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
(iv) অনেকসময় সমুদ্রেও বর্জ্য ফেলা হয়। এক্ষেত্রে নজর দওয়া প্রয়োজন সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য যাতে বিনষ্ট না হয় তাহলে মানবজীবনে নানা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
No comments:
Post a Comment