ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৬ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography 5.6 chapter questions answers| WB bord 2024 geography suggetion| - SM Textbook

Fresh Topics

Sunday, October 8, 2023

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৬ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography 5.6 chapter questions answers| WB bord 2024 geography suggetion|

 ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৬ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography 5.6 chapter questions answers| WB bord 2024 geography suggetion| 


দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun 

দু-এককথায় উত্তর দাও-

 ১.স্বাভাবিক উদ্ভিদের নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী?

 উত্তর : ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু ও মৃত্তিকা। 

২ .ভারতের প্রায় কত শতাংশ অঞ্চলজুড়ে চিরহরিৎ অরণ্য অবস্থান করছে। 

উত্তর  :১২%। 

১.শীতকালে কোন্ জাতীয় অরণ্যের বৃক্ষের পাতা নির্দিষ্ট সময়ে ঝরে যায়? 

 উত্তর :পর্ণমোচী। 

৪. ঘাস, গুল্ম, লতা এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা উদ্ভিদকে কোন শ্রেণির উদ্ভিদ বলে ? 

 উত্তর : শুষ্ক পর্ণমোচী।

 ৫ .পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু অংশে কোন্ প্রকার অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়?  

উত্তর: আল্পীয় অরণ্য। 

৬. ভারতের কোন্ অঞ্চলের উদ্ভিদ শঙ্কু আকৃতির হয়?

 উত্তর :সরলবর্গীয় এবং আল্পীয় অরণ্য।

 ৭. পডসল মৃত্তিকায় কোন্ প্রকার উদ্ভিদ জন্মায় ? 

উত্তর :সরলবর্গীয়।

 ৮ লোহিত ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় কোন্ প্রকার উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়? 

উত্তর : ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ। 

৯.দুটি মিশ্র অরণ্যের উদ্ভিদের নাম লেখো।

 উত্তর দেবদারু /ওক/বার্চ/ম্যাপল।

 ১০ .কোন অরণ্য অঞ্চলকে ভারতের সাভানা অঞ্চল' বলা হয়?

 উত্তর:  শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য।

১১ .ভারতের মধ্যে কোন্ রাজ্যে সর্বাধিক সংখ্যক গাছ রয়েছে? 

উত্তর :অন্ধ্রপ্রদেশে।

 ১২. ভারত সরকারের অরণ্য গবেষণার প্রধান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত?

 উত্তর :উত্তরাখন্ড রাজ্যের দেরাদুনে। 

১৩ .ভারতের সামাজিক বনসৃজন গবেষণাকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত? 

উত্তর: উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে। 

১৪. দেরাদুনে অবস্থিত অরণ্য গবেষণাগার-এর নাম কী? 

উত্তর :Forest Research Institute |  

১৫ .ভারতের কোন্ অঞ্চলে মোট বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক?

 উত্তর: উপদ্বীপীয় মালভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলে।

 ১৬. ভারতে সর্বপ্রথম বনমহোৎসব উদযাপন করেন কে? 

উত্তর: ড. কানাইয়ালাল মাণিকলাল মুনশি।

 ১৭ .নদীতীরবর্তী অঞ্চলের উদ্ভিদরাজিকে কী বলে? 

উত্তর: Tiparian Tree |

 ১৮ .ভারতীয় অরণ্যের প্রথম শ্রেণিবিভাগ কে করেন?

 উত্তর : আবহবিজ্ঞানী চ্যাম্পিয়ন। 

 ১৯ .যে কাল্পনিক রেখার ওপরে কোনো গাছ জন্মায় না, তাকে কী বলে? 

উত্তর: উদ্ভিদ রেখা।

 ২০. পৃথিবীর মোট বনভূমির কত শতাংশ ভারতে আছে? 

উত্তর : প্রায় এক শতাংশ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১ .স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegatation) কাকে বলে? 

উত্তর : যে-সমস্ত গাছ বা উদ্ভিদ কোনো স্থানের জলবায়ু ও মৃত্তিকাসহ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জন্মায় ও বড়ো হয়, তাদের ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলা হয়। 

জেনে রাখো স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা : স্বাভাবিক উদ্ভিদ (১) বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সমতা বজায় রাখে, (২) ভূমিক্ষয় নিবারণ করে, (৩) মরুভূমির প্রসার রোধ | করে, (৪) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়, (৫) মোম, মধু, কাঠ ও ভেষজ দ্রব্য পাওয়া যায়, (৬) জীবজগতের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং (৭) মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বজায় রাখে ।


প্রশ্ন ২ .কোন্ কোন্ উপাদানের ওপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে ওঠে? 

উত্তর : জলবায়ু, মৃত্তিকা ও ভূমির প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে ওঠে। জলবায়ুর উপাদান, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও উন্নতা উদ্ভিদকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। 

প্রশ্ন ৩ .ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করো। 

উত্তর : বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা প্রভৃতির তারতম্য অনুসারে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা : (১) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য (২) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য (৩) ক্রান্তীয় মরু অরণ্য (৪) পার্বত্য উদ্ভিদ অরণ্য ও (৫) ম্যানগ্রোভ অরণ্য। 

প্রশ্ন ৪. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ কাকে বলে?

 উত্তর : ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং গড় উন্নতা ২৫°-৩০° সেলসিয়াস-এর মধ্যে এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০% -এর বেশি সেইসকল স্থানে যে উদ্ভিদ জন্মায় তাকেই বলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ।

প্রশ্ন ৫. ভারতের কোথায় কোথায় ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ দেখা যায়? 

উত্তর : ভারতের প্রায় ১২% অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই অরণ্য। এই অরণ্য দেখা যায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, উচ্চ অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা। 

প্রশ্ন ৬.কোন্ পরিবেশে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য গড়ে ওঠে? 

উত্তর : ভারতের যেসকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ২০০ সেমির বেশি, গড় উচ্চতা ২৫-৩০° সেলসিয়াস, আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ শতাংশের বেশি এবং বছরে ৮-৯ মাস জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির সেখানে জাতীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ জন্মায়। অধিক বৃষ্টিপাত, উচ্চতা ও আর্দ্রতার প্রভাবে গাছগুলি সারাবছর সবুজ থাকে। 

প্রশ্ন ৭ ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদ চিরসবুজ কেন? |

 উত্তর : চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের গাছের পাতা শুকনো ঋতুতেও ঝরে পড়ে না। বেশি বৃষ্টির জন্য মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না। এই কারণে গাছ সবসময় সবুজ পাতাতে ভরে থাকায় গাছগুলি চিরহরিৎ বা চিরসবুজ। 

প্রশ্ন ৮ ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদগুলির নাম লেখো। 

উত্তর: রোজউড, আয়রনউড, এবনি, তুন, পুন, শিশু, বাঁশ, বেত প্রভৃতি হল ভারতের চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ। 

 প্রশ্ন ৯. কান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের ঘনত্ব খুব বেশি হয় কেন? 

উত্তর : চিরহরিৎ অরণ্যের গাছপালাগুলি বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয় এবং ভিজে মাটিতে সহজেই প্রচুর গাছপালা জন্মায়। এই বৃক্ষগুলি এত ঘনভাবে জন্মায় বলে বলা হয় যে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের ঘনত্ব খুব বেশি।

 প্রশ্ন ১০. কোন্ বনভূমিকে “চিরগোধূলি অঞ্চল” বলা হয় এবং কেন? 

উত্তর : চিরহরিৎ অরণ্যে অসংখ্য শাখাপ্রশাখা যুক্ত গাছগুলি ি এত ঘনভাবে জন্ম যে, সূর্যালোক মাটিতে পৌছোতে পারে না। ফলে বনভূমির তলদেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন, আর্দ্র ও স্যাতসেতে হয়। তাই একে চিরগোধূলি অঞ্চল বলে। 

প্রশ্ন ১১ .চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির উপরের অংশে চাদোয়ার সৃষ্টি হয় কেন? 

উত্তর : অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উয়তার অনুকূল্যে গাছগুলির অসংখ্য ডালপালা, সুপ্রশস্ত লম্বা পাতা বিস্তৃত হয়ে, গাছের মাথায় পরস্পর মিলে খোলা ছাতার মতো নিশ্ছিদ্র আস্তরণ তৈরি করে। একে অনেকটা চাঁদোয়ার মতো দেখতে লাগে বলে বলা হয় যে, চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির উপরের অংশে চাঁদোয়ার সৃষ্টি হয়। চিরহরিৎ অরণ্যের উপরিভাগে সৃষ্ট হয় ।

প্রশ্ন ১২ .ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ কাকে বলে?

 উত্তর : যেসকল অঞ্চলের উদ্ভিদের অধিকাংশই নির্দিষ্ট ঋতুতে সমস্ত পাতা ঝরে যায়, তাকে পর্ণমোচী শ্রেণির উদ্ভিদ বলে।

 প্রশ্ন ১৩ .কোন্ পরিবেশে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য গড়ে ওঠে? 

উত্তর : যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টি ৫০-২০০ সেমি এবং বৃষ্টির বেশিরভাগ ঘটে বর্ষাকালে সেখানে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায়। গ্রীষ্মের আগে বসন্তে অধিকাংশ গাছ সব পাত ঝরিয়ে ফেলে।

 প্রশ্ন ১৪ .ভারতের কোথায় কোথায় পর্ণমোচী জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় ?

 উত্তর : অসম অববাহিকা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দাক্ষিণাত → মালভূমির মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক প্রভৃতি অংশে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ দেখা যায়। 

প্রশ্ন ১৫ .ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদগুলি বছরের নির্দিষ্ট সময় পাতা ঝরায় কেন ?

উত্তর : ক্রান্তীয় অঞ্চলে বর্ষার আগে গ্রীষ্মকালে গাছের জলের অভাব ঘটে। এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য অধিকাংশ গাছ গ্রীষ্মের আগে বসন্তে সব পাতা ঝরিয়ে ফেলে। 

প্রশ্ন ১৬.  ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের প্রধান উদ্ভিদগুলির নাম লেখো। 

উত্তর : শাল, সেগুন, শিমুল, মহুয়া, জারুল, শিরীষ, আম, জাম বিভিন্ন ধরনের ঘাস, কুল, পলাশ প্রভৃতি হল ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের প্রধান উদ্ভিদ। 

প্রশ্ন ১৭ .জেরোফাইট বা জাঙ্গল উদ্ভিদ কাকে বলে?

 উত্তর : ভারতের মরু অঞ্চলে অধিক উষ্ণতা ও শুষ্কতার জন্য ক্যাকটাস বা ফণীমনসা, কাঁটাগাছ বা বাবলা জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। এই ধরনের উদ্ভিদকে জেরোফাইট বলা হয়।

প্রশ্ন | ১৮ ভারতের মরুভূমি অঞ্চল উদ্ভিদ বিরল কেন?

 উত্তর : ভারতের মরুভূমি অঞ্চলের গড় বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ২৫ সেমির কম, উয়তা খুব বেশি (৩০° – ৩৫° সেলসিয়াস) এবং আর্দ্রতা খুব কম। এই কারণে এই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু-একটা উদ্ভিদ ছাড়া অধিকাংশ অঞ্চলই উদ্ভিদ বিরল।

 প্রশ্ন ১৯ .মরু অঞ্চলে কোন্ কোন্ উদ্ভিদ জন্মায়?

 উত্তর : মরু অঞ্চলে যেসকল উদ্ভিদগুলি জন্মায় সেগুলি হল— ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা, খেজুর ইত্যাদি। 

প্রশ্ন । ২০. আল্পীয় অরণ্য কী?

 উত্তর : পূর্ব হিমালয়ের ৪০০০ মি. উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ৩৫০০ মি. উচ্চতায় অর্থাৎ সরলবর্গীয় অরণ্যের ঊর্ধ্বে (৩৫০০ – ৪৫০০ মি.) যেখানে বছরে ৩/৪ মাস বরফাবৃত এবং বাকি সময় অত্যধিক শীতল অথচ বরফমুক্ত থাকে, সেখানে জুনিপার, আল্পীয় অরণ্য রডোডেনড্রন, নাক্‌স ভমিক্যা, লার্চ, ভুর্জ ও নানান রকম তৃণ ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়, তাকেই আল্পীয় অরণ্য বলে।

প্রশ্ন ২১ .তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের উদ্ভিদ চিরহরিৎ কেন ? 

উত্তর : হিমালয় পর্বতের পাদদেশে প্রধানত তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত ও জল চুঁইয়ে মাটিতে প্রবেশের কারণে ভূমি সর্বদা আর্দ্র বা স্যাঁতসেঁতে থাকে। মৃত্তিকায় অধিক আর্দ্রতার উপস্থিতির কারণেই এখানে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য গড়ে উঠেছে।

 প্রশ্ন ২২ .ম্যানগ্রোভ অরণ্য কাকে বলে?  

উত্তর : উপকূল ও বদ্বীপ অঞ্চলে যেখানে জলবায়ু উয়-আর্দ্র, ভূমি সূক্ষ্ম পলিমাটি দিয়ে গঠিত, জোয়ারভাটার প্রকোপে দিনে দু-বার লবণাক্ত জল প্রবেশ করে এবং মাটি লবণাক্ত সেখানে যে ঘন উদ্ভিদমণ্ডলী গড়ে উঠেছে তাকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলে। 

প্রশ্ন ২৩. ম্যানগ্রোভ অরণ্য চিরসবুজ কেন?

 উত্তর : ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে প্রতিদিন দু-বার জোয়ারের প্রকোপে মাটি সর্বদা আর্দ্র বা স্যাতসেতে থাকে। আর্দ্র মৃত্তিকার প্রভাবেই এখানকার উদ্ভিদগুলি চিরসবুজ। 

প্রশ্ন ২৪ শ্বাসমূল কী? তথা ম্যানগ্রোভ অরণ্যে শ্বাসমূল দেখা যায় কেন ?

উত্তর  : সূক্ষ্ম পলিসমৃদ্ধ কাদামাটিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়বলে রঞ্জবিহীন মৃত্তিকায় অক্সিজেন সরবরাহ কম হয়। তা ছাড়া বছরের অধিকাংশ সময় এই অ প্লাবিত থাকে। তাই বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করার জন্য উদ্ভিদের কিছু কিছু শাখামুল মাটি ভেদ করে, উপরে উঠে আসে। একেই শ্বাসমূল (নিউম্যাটোফোর) বলে। শ্বাসমূল 

প্রশ্ন ২৫ .ঠেসমূল কাকে বলে? অথবা, ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে ঠেসমূল দেখা যায় কেন?

 উত্তর : ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ নরম কাদামাটিতে জন্মায়। অঞ্চলে প্রবাহিত প্রবল হাওয়ার বেগে গাছগুলি যাতে পড়ে না যায়, তার জন্য কাণ্ডের গোড়ার দিক থেকে এক রকমের অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ করে গাছগুলিকে ধরে রাখে। একেই ঠেসমূল বলা হয়। ঠেসমূল 

প্রশ্ন ২৬ .জরায়ুজ অঙ্কুরোদ্গাম কাকে বলে?

 উত্তর : জলময় পরিবেশে জন্মানো গাছের ফল বা বীজগুলি জলে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় বা ভেসে না যায়, তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঝুলন্ত অবস্থায় বীজ থেকেই অঙ্কুরোদগম-এর মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। একে বলে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ।

প্রশ্ন ২৭. ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদগুলির নাম লেখো।

 উত্তর : ম্যানগ্রোভ অবশ্যের উদ্ভিদগুলি হল সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, কেয়া, গোলপাতা, হোগলা প্রভৃতি। 

প্রশ্ন ২৮ .সুন্দরবন নামকরণের কারণ কী?

 উত্তর : সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী গাছের প্রাধান্য বেশি। তাই এই বনভূমির নামকরণ হয় সুন্দরবন। 

প্রশ্ন ২৯. অরণ্য সংরক্ষণের (Forest Conservation) অর্থ 

উত্তর : অরণ্য সংরক্ষণের অর্থ হল, বিচারবিবেচনা করে গাছ কাটা এবং সেইসঙ্গে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গাছের অভাব পুরণ করা। অর্থাৎ অরণ্য ও অরণ্যজাত সম্পদের অপচয় বন্ধ করে প্রয়োজনমতো এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যবহার করা, সুরক্ষিত রাখা ও বনভূমির পুনর্নবীকরণ করাকে অরণ্য সংরক্ষণ বলে।

প্রশ্ন ৩০. সামাজিক বন্সৃজন কি  ?

 উত্তর : সামাজিক বনসৃজন হল জনগণের সহায়তায় আমালের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের উন্নতির উদ্দেশ্যে বনভূমির সংরক্ষণ ও নতুন বনভূমি স্থাপন। 

প্রশ্ন ৩১. কৃষি বনসৃজন কাকে বলে?

 উত্তর : কৃষকের নিজের জমিতে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, সবুজ সার, পশুখাদ্য, ওষুধ, ফলমূল ইত্যাদি পাওয়ার জন্য গাছপালা লাগিয়ে যে বনভূমি গড়ে তোলা হয় তা হল কুষি বনসৃজন।

 প্রশ্ন। ৩২ .চিরহরিৎ অরণ্যের ব্যবহার লেখো। 

উত্তর : দুর্গমতার কারণে কাঠ সংগ্রহ কষ্টকর হলেও (১) মেহগনি, রোজউড, আয়রন উত্তের কদর খুব বেশি। আসবাব নির্মাণে এগুলি ব্যবহৃত হয়, (২) বন থেকে পাওয়া যায় বাঁশ ও বেত যা স্থানীয় কুটির শিল্পে ব্যবহৃত হয়। 

প্রশ্ন । ৩৩ .ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশগুলি কী কী? 

উত্তর : ভারতের উপকূল ও বদ্বীপ অঞ্চলসমূহে যেখানে সুক্ষ্ম পলিমাটির সঞ্চয় ও লবণাক্ত জলের প্রভাব রয়েছে এবং প্রতিদিন দুবার জোয়ার ও ভাটা হয় সেখানেই এই অরণ্য দেখা যায়।

 প্রশ্ন । ৩৪ .ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদে বর্ষবলয় দেখতে পাওয়া যায় না কেন ?

 উত্তর : সারাবছর ব্যাপী উন্ন ও আর্দ্র গ্রীষ্ম ঋতুর জন্য গাছের বৃদ্ধিকালের কোনো নির্দিষ্ট সমীমিত সময় হয় না। তাই গাছগুলির গুঁড়িতে কোনো বর্ষবলয় থাকে না।

 বর্ষবলয় (Annual ring) : গাছের বৃদ্ধির সময়কালের ওপর নির্ভর করে গাছের গুঁড়িয়ে গোল গোল বলয় এর সৃষ্টি হয়। একেই বর্ষবলয় বলা হয়। এই বর্ষবলয় গণনা করেই বোঝা যায় যে গাছের বয়স কত। সাধারণত পর্ণমোচী অরণ্যের উদ্ভিদে বর্ষবলয় স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। 

প্রশ্ন । ৩৫ .ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত ২টি আন্দোলনের নাম লেখো। 

উত্তর : ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত ২টি আন্দোলন হল—(১) চিপকো আন্দোলন এবং (২) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। জেনে রাখো ০ চিপকো আন্দোলন : ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উত্তরাখণ্ডের গাছ কাটার বিরুদ্ধে একটি স্বতঃস্ফূর্ত, অহিংস আন্দোলন গড়ে ওঠে। এটি চিপকো আন্দোলন নামে পরিচিত। 'চিপকো' কথার অর্থ হল 'জড়িয়ে ধরা' বা ‘চেপে ধরা'। ঠিকাদাররা গাছ কাটতে এলে গ্রামবাসী মহিলারা গাছ জড়িয়ে ধরতো। ফলে ঠিকাদাররা গাছ কাটতে পারতো না।

ঘ ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন । ১ . ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর : (i) চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের গাছের পতা শুকনো ঋতুতেও ঝরে পড়ে না। বেশি বৃষ্টির জন্য মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না। এই কারণে গাছ সবসময় সবুজ পাতাতে ভরে থাকায় গাছগুলি চিরহরিৎ বা চিরসবুজ। (ii) চিরহরিৎ বনভূমির গাছগুলির কাঠ শক্ত ও ভারী। (iii) চিরহরিৎ গাছের পাতা যথেষ্ট চওড়া এবং ঘনসবুজ। (iv) সূর্যকিরণ পাওয়ার আশায় চিরহরিৎ অরণ্যের বৃক্ষগুলির উচ্চতা খুব বেশি হয় (গড় ৩৫-৪৫ মিটার)। (v) চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদের ঘনত্ব খুব বেশি হয়। (vi) চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে অবস্থান করার ফলে সূর্যকিরণ মাটিতে প্রবেশ করতে পারে না। (vii) এই অরণ্যের ভূমিসংলগ্ন তলদেশ গুল্ম, লতাপাতা, আগাছা ও অর্কিড জাতীয় পরগাছা উদ্ভিদে পূর্ণ থাকে।

প্রশ্ন. উত্তর-পূর্ব ভারত, আন্দামাননিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে চিরহরিৎ অরণ্য গড়ে উঠেছে কেন ? 

উত্তর : উত্তর-পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে বাৎসরিক গড় বৃষ্টি ২৫০ সেমি বা তারও বেশি। এখানকার গড় উয়তা ২৫°-২৭° সেলসিয়াস এবং বছরের ৮–৯ মাস জলবায়ু উয়-আর্দ্র বা স্যাঁতসেঁতে প্রকৃতির। উয়-আর্দ্র জলবায়ুর কারণেই এখানে অতিঘন চিরসবুজ বা চিরহরিৎ জাতীয় অরণ্য গড়ে উঠেছে। 

প্রশ্ন | ৩. আর্দ্র পর্ণমোচী ও শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ বলতে কী বোঝ ? 

উত্তর : • আর্দ্র পর্ণমোচী : ভারতের যেখানে গ্রীষ্মকালীন উয়তা ২৭°–৩০° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন উয়তা ১৫°–২০° সেলসিয়াস সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০–২০০সেমি এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০%-৭৫%, সেখানে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়। প্রয়োজনীয় উয়তা ও আর্দ্রতার অভাবে এই অরণ্যের বৃক্ষগুলির পাতা শীতকালে ঝরে যায় বলে একে পর্ণমোচী বা ‘পাতাঝরা’ উদ্ভিদ বলে। আর্দ্র পর্ণমোচী উদ্ভিদ শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ ০ শুষ্ক পর্ণমোচী : সাধারণত ঘাস, গুল্ম এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা গাছ— এইসবকে একসঙ্গে বলে শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ। ভারতের যেসব অঞ্চল শুষ্ক অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি এবং গড় উষ্ণতা হল ২৫° – ৩০° সেলসিয়াস সেখানে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। 

প্রশ্ন ৪ . পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে উদ্ভিদ চিরহরিৎ প্রকৃতির কিন্তু পূর্ব ঢালে কাঁটা ঝোপ ও গুল্ম জন্মায়’–কারণ লেখো।

 উত্তর : পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে জলবায়ু আর্দ্র নিরক্ষীয় প্রকৃতির। এখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমির বেশি এবং বৃষ্টিপাতের সময়কালও দীর্ঘ। এ ছাড়া একদিকে মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যেমন বৃষ্টিপাত ঘটায়, অন্যদিকে সমুদ্র থেকে উত্থিত নিম্নচাপের কারণেও এখানে বৃষ্টিপাত হয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মৃত্তিকার আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায়, এখানে চিরহরিৎ জাতীয় বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটালের (অনুবাত ঢাল) বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম (মাত্র ২০-৫০ সেমি)। এই শুষ্কতা ও রুক্ষতার কারণে এখানে কাঁটা ঝোপ ও গুল্ম জাতীয় অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন | ৫. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 

উত্তর : ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল – (১) শুষ্ক বহুতে জলের খরচ বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ গাছ গ্রীষ্মের আগে পাতা ঝরিয়ে ফেলে। (২) চিরহরিৎ অরণ্যের মতো উদ্ভিদের ঘনত্ব অত বেশি নয়। (৩) গাছের উচ্চতা মাঝারি এবং আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয়। (৪) একই প্রজাতির উদ্ভিদের সমাবেশ একইসঙ্গে লক্ষ করা যায়। 

প্রশ্ন ৬ . ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের ব্যবহার উল্লেখ করো। 

উত্তর : কান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের ব্যবহারগুলি হল- (১) আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, বাস, লরির কাঠামো তৈরিতে শাল, সেগুন, শিশু, গামার কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। (২) বাঁশ ও সাবাই ঘাস কাগজ শিল্পে কাষ্ঠমণ্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। (৩) বনভূমি থেকে পাওয়া যায় গম ও শিরীষ আঠা, কেন্দুপাতা (বিড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়), শালপাতা যা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। (৪) নিকৃষ্ট শ্রেণির কাঠ স্থানীয় জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়। জেনে রাখো ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে The Indian Council of Forestry and Research Education (ICFRE) উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুনে তাদের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।

 প্রশ্ন ৭."আন্দামান অপেক্ষা মেঘালয়ে বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি, অথচ মেঘালয় অপেক্ষা আন্দামানে উদ্ভিদের ঘনত্ব বেশি -কারণ লেখো। 

উত্তর : উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় মালভূমি অঞ্চলে বাৎসরিক বৃষ্টি প্রায় ৩০০-৪০০ সেমি। (ব্যতিক্রম চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরাম, বৃষ্টি ১১০০ ও ১২০০ সেমি) এবং গড় উন্নতা। ২৫-৩০° সেলসিয়াস। এখানে বৃষ্টিপাত অধিক হলেও বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই ঘটে জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে এবং বাকি সময় জলবায়ু শুষ্ক প্রকৃতির। পক্ষান্তরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রায় নিরক্ষরেখার নিকটে অবস্থিত হওয়ার কারণে সারাবছর ধরেই এখানে উন্নআর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে। মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ (২০০-২৫০ সেমি) কম হলেও বর্ষাকাল বেশ দীর্ঘ। অর্থাৎ, বৃষ্টিমুখর দিনের সংখ্যা এখানে মেঘালয় অপেক্ষা অধিক। মেঘালয় অপেক্ষা আন্দামানের জলবায়ু অধিক উন্ন-আর্দ্র হওয়ায় উদ্ভিদের ঘনত্বও আন্দামানে অধিক। 

প্রশ্ন ৮| মরু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

 উত্তর : মধু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল – (১) এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অতি ক্ষুদ্র আকৃতির এবং এদের বৃদ্ধিও সীমিত। (২) শুষ্ক অঞ্চলে জলের অভাবের জন্য গাছের শিকড়গুলি খুব দীর্ঘ হয় ফলে মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে জল সংগ্রহ করে। (৩) এইপ্রকার উদ্ভিদের কাণ্ড হয় খর্বকায় বা বেঁটে, শক্ত ও কাষ্ঠল। (৪) গাছে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড হয় রসালো, চ্যাপটা ও ক্লোরোফিলযুক্ত এবং এদের রং হয়। সবুজ। এইপ্রকার কাণ্ডকে বলে পর্ণকাণ্ড। যেমন— ফণীমনসা। (৫) গাছের জল যাতে পাতার মাধ্যমে বাষ্পমোচন হয়ে বেরিয়ে 1 যেতে না পারে, তার জন্য গাছের কান্ড মোম জাতীয় পুরু ত্বকেঢাকা থাকে ও গাছের গাছে প্রচুর লোম কাক দে পরকণীক বলে। (৬) উদ্ভিদগুলি বেশ দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটি অবস্থান করে। (৭) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মি. এর বেশি হয়। না। এবং (৮) পরাগ মিলনের সুবিধার জন্য মধু উদ্ভিদের তীব্র গখ উজ্জ্বল রঙের হয়।

 প্রশ্ন ৯. ভারতের কোথায় কোথায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে? 

উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন; এ ছাড়া গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃয়া প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ অল আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিম্ন উপকূলভাগ, গুজরাটের কচ্ছ ও কাছে উপসাগরের উপকূলের নিম্ন জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ অরণা দেখা যায়। সুন্দরবন ভারতের তথা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ভারতের মোট অরণ্যের ৬০% সুন্দরবন অঞ্চলে অবস্থিত।

 প্রশ্ন ১০ | ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 

উত্তর : ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (১) জোয়ার- ভাটার প্রকোপে মাটি সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকে বলে উদ্ভিদগুলি চিরসবুজ; (২) উদ্ভিদগুলি খর্বকার, শাখাপ্রশাখাযুক্ত এবং আকৃতি ছাতার মতো, (৩) নরম মাটিতে যাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তার জন্য গোড়ায় (৪) মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকে বলে শ্বাসমূল দেখা যায়; (৫) উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম দেখা যায়।

 প্রশ্ন ১১ .ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যবহার লেখো।  

উত্তর : (১) কাঠ বাড়িঘর ও নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয়, (২) গোলপাতা ও হোগলা ঘর ছাউনিতে কাজে লাগে, (৩) বন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ হয়, (৪) স্থানীয় জ্বালানির জোগান আসে এই বনভূমি থেকে। প্রশ্ন ১২| অরণ্যসংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী? উত্তর : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোনো দেশে ৩৩.৩৩% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ, বর্তমানে ভারতের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৯.৪৫%। তাই বনভূমির সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল-

 (১) মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ উদ্ভিদের শিকড় মাটিকে ধরে রাখে।বনভূমি ধ্বংস হলে মৃত্তিকা বা ভূমিক্ষয় বাড়বে, যার প্রভাবে কৃষিকার্যের ক্ষতি হবে এবং সমভূমিতে বন্যা বাড়বে। 

(২) মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধ : বনভূমি ধ্বংসের প্রভাবে মরুভূমির সংলগ্ন অঞ্চলও মরুভূমিতে পরিণত হয়। উদ্ভিদ দ্বারা বাধার অভাবে বালি ক্রমাগত উড়ে গিয়ে অন্যস্থানে সজ্জিত এবং অঞ্চলটি মরুভূমিতে পরিণত হয়। 

(৩) পরিবেশের ভারসাম্য : উদ্ভিদ দিনের বেলা CO2 গ্রহণ করে ও O2 ছাড়ে। উদ্ভিদের সংখ্যা কমলে CO2 এর পরিমাণ বাড়বে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।

 (৪) জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা : ক্রমাগত বনভূমির উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা প্রাণীকুল ধ্বংস হবে। ফলে পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হবে। ফলে বাস্তুতন্ত্রের বিঘ্ন হবে। 

(৫) ভৌমজলের ভাণ্ডার পূরণ ও বন্যা রোধ : উদ্ভিদ মাটিকে ধরে রাখে। উদ্ভিদের শিকড় ও মাটির মধ্যে দিয়ে জল চুঁইয়ে চুইয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফলে ভৌমজলের ভাণ্ডার বাড়ে ও পৃষ্ঠপ্রবাহ কমে। ফলে বন্যার সম্ভাবনা কমে। এ ছাড়া বনভূমি সংরক্ষণের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়, বনজসম্পদ ও জ্বালানি কাঠের জোগান বাড়ে এবং কিছুটা আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ হয়। 

প্রশ্ন | ১৩.  কোন্ কোন্ উদ্দেশ্যে সামাজিক বনসৃজন করা হয়? অথবা, সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো। [মা.প. ১৭] 

উত্তর : সামাজিক বনসৃজনের উদ্দেশ্য হল—(১) চাহিদা অনুযায়ী নতুন বনভূমি রোপণ ও আদি বনভূমির সংরক্ষণ (২) পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে জমি ব্যবহারের উন্নতি, (৩) রোপণ করা গাছ থেকে ফল, কাঠ, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ (৪) কাগজ, প্লাইউড শিল্পে কাঠের জোগান সুনিশ্চিত করা, (৫) পশুখাদ্যের জোগান বৃদ্ধি, (৬) গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, (৭) মাটি ও জলের সংরক্ষণ।

 প্রশ্ন ১৪ .কোন্ কোন্ স্থানে সামাজিক বনসৃজন রূপায়ণ হয়। 

উত্তর : সামাজিক বনসৃজন-এর অঞ্চলগুলি হল – (১) পতিত মি, (২) রাস্তা ও রেললাইনের পার্শ্ববর্তী খালি জমি, (৩) নদী খালপাড়ের জায়গা, (৪) পঞ্চায়েতের অব্যবহৃত ) শহর ও শিল্পাঞ্চলের ফাঁকা স্থান, (৬) বাড়ি, বিদ্যালয়, ফিস, ধর্মস্থানের আশেপাশের জায়গা, (৭) খনির পার্শ্ববর্তী ও অব্যবহৃত খনি অঞ্চল প্রভৃতি। 

প্রশ্ন ১৫ | কৃষি বনসৃজনের উদ্দেশ্য কী?

 উত্তর : কৃষি বনসৃজনের উদ্দেশ্যগুলি হল – (১) অব্যবহৃতও পতিত জমি যেখানে চাষ সম্ভব নয় সেই জমিকে উৎপাদনশীল ভারতের করা, (২) কৃষকের পরিবারের অতিরিক্ত কর্মসংস্থান, (৩) কাঠ, - ফল, ফুল বিক্রি করে কৃষকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, (৪) ভূমিক্ষয় রোধ, (৫) প্রয়োজনীয় কৃষি বনসৃজন জ্বালানির চাহিদা মেটানো। (৬) ভেষজ উদ্ভিদ লাগিয়ে ওষুধ শিল্পে কাঁচামালের জোগান বৃদ্ধি, (৭) পশুখাদ্যের জোগান, (৮) জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি।

 প্রশ্ন ১৬ | ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্যের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর : ■ অবস্থান : পূর্ব হিমালয়ের ৩০০০-৪০০০ মি. উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ২০০০-৪০০০ মি. উচ্চতায় এই বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়। ■ বৈশিষ্ট্য : (১) তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী শীতকালের জন্য এখানে প্রবল তুষারপাত হয়। ফলে গাছগুলির আকৃতি অনেকটা মোচার মতো অর্থাৎ শঙ্কু আকৃতির হয়। ফলে তুষারপাতের পর অনায়াসে তুষার ঝড়ে পড়ে যায়। (২) গাছগুলি অনেক দীর্ঘ বা লম্বা আকৃতির হয়। (৩) এই বৃক্ষে সারাবছর পাতা দেখা যায়। (৪) এই অরণ্য বিশেষ ঘন হয় না। (৬) বছরের বেশিরভাগ সময় মাটি তুষারাবৃত থাকে বলে এই । (2) এই গাছের কাঠগুলি নরম ও হালকা প্রকৃতির হয়। জাতীয় সেইজনো এই বনভূমিতে ঝোপঝাড় বা লতাগুল্ম জন্মাতে পারে না।সেইজন্যে এই বনভূমির তলদেশ খুব পরিষ্কার থাকে। 

প্রশ্ন | ১৭ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের মিশ্র অরণ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তর : ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের মিশ্র অরণ্য : ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে পূর্ব হিমালয়ের ১০০০ – ৩০০০ মি. উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ১৫০০-২৫০০ মি. উচ্চতায় ইউক্যালিপটাস, আয়রন উড, পপলার, ওয়ালনাট, ওক, চেস্টনাট, স্পুস, পাইন ইত্যাদি পর্ণমোচী চিরহরিৎ মিশ্র অরণ্য দেখা যায়। মিশ্র অরণ্য ব অরণ্যের বৈশিষ্ট্য : মিশ্র বনভূমিতে সামগ্রিক ভাবে । অধিকাংশ বৃক্ষ পর্ণমোচী যারা শীতকাল ছাড়া সারাবছর সবুজ থাকে। 

প্রশ্ন ১৮। ভারতের প্রধান অরণ্য অঞ্চল কোনটি? কেন ভারতে এই অরণ্যের প্রাধান্য বেশি? 

উত্তর : ভারতের প্রধান অরণ্য অঞ্চল হল-ক্রান্তীয় আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য। যেখানে গ্রীষ্মকালীন উচ্চতা ২৭° –৩০° সেন্টিগ্রেড এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেমি এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০%-৭৫%, সেখানে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়। অপরদিকে শীতে এই অরণ্যের বৃক্ষের পাতা ঝরে যায়। ভারতের উপকূল অঞ্চল ব্যতিরেকে সমগ্র উপদ্বীপীয় মালভূমি, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বচালে, পশ্চিমবঙ্গ সমভূমি, অসম সমভূমি ও ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরল রাজ্য ও হিমালয় পর্বতের কোনো কোনো স্থানে এইপ্রকার জলবায়ুর কারণে এই আর্দ্র-পর্ণমোচী অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের উদ্ভিদই (শাল, শিমুল, সেগুন, গর্জন ইত্যাদি) আর্দ্র পর্ণমোচী জাতীয়। ভারতের দ্বিতীয় প্রধান অরণ্য অঞ্চল হল শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য। যেখানে বৃষ্টিপাত গড়ে ৫০-১০০ সেমি এবং উন্নতা ২৫-৩০% সেলসিয়াস। সেখানে এই অরণ্য দেখা যায়। ভারতের রাজস্থানের পূর্বাংশ, উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, বিহারের পশ্চিমাংশের ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু রাজ্যে। এই অরণ্য দেখা যায়। 

প্রশ্ন ১৯ | ভারতীয় বন বিভাগকে কোন্ কোন্ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়? 

উত্তর : ভারতের মাত্র ২০% অংশ বনভূমি দ্বারা আবৃত। ভারতের এই বনভূমির স্বল্পতার জন্য বহু সমস্যার সৃষ্টি হয়। ভারতের বন বিভাগকে যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেগুলি হল—

 (১) বেআইনি ও অবৈধভাবে গাছ কাটা বনভূমিগুলিতে চোরা কাঠব্যবসায়ী চোরাশিকারিদের অনুপ্রবেশের ফলে কাঠ, বনজসম্পদ, জীবজন্তুও ধ্বংস হচ্ছে ও পরিমাণ কমছে। 

(২) অসংরক্ষিত বনাঞ্চলে কৃষিজমির সম্প্রসারণ : জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যশস্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই চাহিদার পরিপূর্ণ জোগানের জন্য অসংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে কৃষিজমির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে বনভূমির ভূমি ধ্বংস হচ্ছে।

 (৩) বেআইনিভাবে বন্যজন্তু শিকার ও বনজসম্পদ আহরণ : বনভূমিগুলিতে চোরাশিকারি, চোরা কাঠব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশের ফলে অবৈধভাবে জীবজন্তু শিকার ও অমূল্য বনজসম্পদ আহরণ বেড়েই চলেছে। 

(৪) নজরদারির অভাব : ভারতে প্রকৃতভাবে বনভূমিতে নজরদারির অভাব রয়েছে। ফলে চোরাকারবারিদের সুবিধা হয়েছে। 

(৫) দাবানল ভারতে প্রায় প্রতি বছরই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঝুম চাষ ও অন্যান্য নানা কারণে দাবানলের ফলে প্রচুরবনভূমি ধ্বংস হয়। উন্নত দেশের মতো এই দেশে আগুন নেভানোর আধুনিক ব্যবস্থা না-থাকায় এই সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। 

(৬) অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : বনভূমির ভিতর গভীর অরণ্য অংশে যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সেখানে দেখাশোনা করার সমস্যা হচ্ছে। 

(৭) বনভূমির কম উৎপাদন ক্ষমতা : এত বেশি হারে বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়েছে যে বনভূমির উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বনভূমির আয়তন কমে যাচ্ছে। 

(৮) সামাজিক বনসৃজনে উৎসাহের ঘাটতি : সাধারণ মানুষের মধ্যে সামাজিক বনসৃজনের সম্পর্কে উৎসাহের ঘাটতির জন্য, গাছ বসানো হলেও পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ গাছের অস্তিত্বই থাকে না। 

জেনে রাখো :

রাজ্য ম্যানগ্রোভ অরণ্য ১. পশ্চিমবঙ্গ সুন্দরবন ২. ওড়িশা মহানদীর বদ্বীপ (ভিতরকনিকা) ৩. অন্ধ্রপ্রদেশ ৪. তামিলনাড়ু গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ পিচাভরম, মুথুপেট, ক্যালিমিয়র বিন্দু, ৫. গুজরাট ৬. গোয়া কচ্ছ উপসাগর, খাম্বাত উপসাগর ৭. কর্ণাটক গোয়া কুনণ্ডাপুর ৮. মহারাষ্ট্র আচারা/রত্নগিরি৯. কেরল ভেম্বানাদ ১০. আন্দামান-নিকোবর আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপপুঞ্জ সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল। এদের মধ্যে গঙ্গার বদ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবন হল পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ভারতের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ম্যানগ্রোভ অরণ্য হল ভিতরকনিকা।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১ .‘হিমালয় পর্বতের উচ্চতা বৃদ্ধিতে উদ্ভিদমণ্ডলীর পরিবর্তন ঘটে— উদাহরণসহ কারণ ব্যাখ্যা করো। অথবা, হিমালয় পর্বতে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদমণ্ডলী গড়ে উঠেছে কেন? অথবা, ‘স্বল্প দূরত্বে হিমালয় অঞ্চলে উদ্ভিদমণ্ডলীর পার্থক্য দেখা যায়'— উদাহরণসহ কারণ লেখো। 

উত্তর : হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে অক্ষাংশ, উচ্চতা, বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়, যেমন—(ক) চিরহরিৎ অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ১,০০০ মি. উচ্চতা পর্যন্ত অংশে এবং পশ্চিম হিমালয়ের ৫০০০ মি. উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলে অধিক উয়তা ও বৃষ্টিপাতের কারণে শাল, শিশু, চাপলাস, মেহগনি, গর্জন, রোজউড প্রভৃতি শক্ত কাঠের বনভূমি দেখা যায়। (খ) পাইন অরণ্য : পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের ১,০০০-২,০০০ মিটার উচ্চতায় বিক্ষিপ্তভাবে পাইন জাতীয় উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায়। (গ) পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ১,০০০-২,৫০০ মি. উচ্চতায় ও পশ্চিম হিমালয়ের ৫০০-২,০০০ মি. উচ্চতায় দেবদারু, পপলার, ওক, ম্যাপল, ওয়ালনাট, বার্চ ইত্যাদি বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। (ঘ) মিশ্র অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ১,০০০–৩০০০ মি. উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ১,৫০০– ২,৫০০ মি. উচ্চতায় ইউক্যালিপটাস, ওক, আয়রন উড, পাইন, স্থুস সমেত নাতিশীতোয় পর্ণমোচী এবং নাতিশীতোয় চিরহরিৎ মিশ্র অরণ্য দেখা যায়। (ঙ) সরলবর্গীয় অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ৩,০০০-৪,০০০ মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ২,০০০-৪,০০০ মিটার উচ্চতায় পাইন, দেবদারু, ফার, স্থুস, উইলো, এলম ২,০০০-৪,০০০ মি. ইত্যাদি উদ্ভিদ দেখা যায়।(চ) আত্মীয় অরণ্য ১,০০০-৩,০০০ মি, ২,০০০ মি. সরলবর্গীয় অরণ্যের ১,০০০ মি. ঊর্ধ্বে (৩,৫০০-৪,৫০০ মি.) যেখানে বছরে ৩/৪ মাস বরফাবৃত ও বাকি সময় বরফমুক্ত থাকে সেখানে জুনিপার, রডোডেনড্রন, নাকস ভমিকা, লার্চ, ভুর্জ ও নানান রকম তৃণ ও গুল্ম জাতীয় আল্পীয় উদ্ভিদ জন্মায়। মিশ্র অরণ্য পাইন অরণ্য চিরহরিৎ অরণ্য পার্বত্য বনভূমি হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর তারতম্যই হল এই পর্বতের বিভিন্ন অংশে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকৃতির হওয়ার অন্যতম কারণ, যেমন- (ক) উচ্চতার তারতম্য : উচ্চতার | তারতম্যের ফলে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অংশের উয়তা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতিরও পরিবর্তন হয়। (খ) আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য : পূর্ব হিমালয়ে বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় অনেকবেশি হওয়ায় পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের একই উচ্চতায় স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যে অনেক তারতম্য দেখা যায়। (গ) অক্ষাংশগত অবস্থানের তারতম্য : পশ্চিম হিমালয় পূর্ব হিমালয়ের তুলনায় উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিম হিমালয়ের উচ্চতা পূর্ব হিমালয়ের উয়তার তুলনায় অনেক কম। উন্নতার তারতম্যের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের স্বাভাবিক উদ্ভিদের তারতম্য হয়। 

প্রশ্ন ২ | জান্তীয় চিরহরিৎ ও ক্রান্তীয় মধু উদ্ভিদের অবস্থান গড়ে ওঠার পরিবেশ, বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বৃক্ষগুলির নাম লেখো।

উত্তর: ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য (Tropical Evergreen Forest) : • অবস্থান : ভারতের ১২% অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই অরণ্য। এটি দেখা যায়, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে, পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশভূমি, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশার বৃষ্টিবহুল অংশ ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই উদ্ভিদ দেখা যায়। • গড়ে ওঠার কারণ : ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং গড় উয়তা ২৫° –৩০° সেলসিয়াস-এর মধ্যে এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৮% এর বেশি সেখানে এই বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের জন্য মাটি সর্বদাই ভিজে থাকে, ফলে গাছে জলের অভাব হয় না। এই কারণে গাছগুলি সর্বদাই চিরহরিৎ থাকে। 

 বৈশিষ্ট্য : (i) অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে গাছে জলের অভাব হয় না বলে এই গাছগুলি সারাবছর সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে। এইজন্য একে চিরসবুজ অরণ্য বলে। (ii) ঘন অরণ্যে বৃক্ষগুলি এমন সংঘবন্ধভাবে অবস্থান করে যে, সূর্যালোক অরণ্যের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে অরণ্যের মধ্যে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন | স্যাতসেঁতে পরিবেশ বিরাজ করে। এই জন্য এই বনভূমিকে চির গোধূলি অঞ্চল (Land of Eternal Twilight) বলে। (iii) এই অরণ্যে বৃক্ষের বড়ো বড়ো পাতাগুলি একসঙ্গে মিশে বৃক্ষের উপর দিকে চাদোয়া (Canopy) সৃষ্টি করে। (iv) গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত গঠিত হয়। (v) অরণ্যের তলদেশ আগাছা ও লতাগুল্মে ভরা থাকে। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে এই অরণ্যের গাছগুলি সূর্যালোক পাবার আশায় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। ফলে গাছগুলি সুদীর্ঘ হয়। (vi) এখানকার গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী হয়। (vii) এই গাছ বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়।

 • প্রধান বৃক্ষ শিশু, গর্জন, রোজউড, মেহগনি, চাপলাস, নাহার, লোহাকাঠ, পুন, তুন ইত্যাদি হল প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়া রবার, বাঁশ ও আবলুসও চোখে পড়ে। git Bfe: (Tropical Desert Forest): • অবস্থান রাজস্থানের মরুপ্রান্তে এবং তার সংলগ্ন গুজরাটের কাছ কাথিয়াবাড়, পাঞ্চাবের মরু অংশ এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়।• গড়ে ওঠার পরিবেশ যেখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টি ২৫-৫০ সেমি এবং উন্নতা খুব বেশি ( ২৫° –৩০° সেলসিয়াস) এবং আর্দ্রতা খুবই কম। সেখানে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়। • বৈশিষ্ট্য : (১) এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অতিক্ষুদ্র আকৃতির এবং এদের বৃদ্ধিও সীমিত। (২) শুষ্ক অঞ্চলে জলের অভাবের জন্য গাছের শিকড়গুলি খুব দীর্ঘ হয় ফলে মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে জল সংগ্রহ করে। (৩) এইপ্রকার উদ্ভিদের কাণ্ড হয় খর্বকায় বা বেঁটে, শক্ত ও কাষ্ঠল। (৪) গাছে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড হয় রসাল, চ্যাপটা ও ক্লোরোফিলযুক্ত এবং এদের রং হয় সবুজ। এই প্রকার কাণ্ডকে বলে পর্ণকাণ্ড। যেমন— ফণীমনসা। (৫) গাছের জল যাতে পাতার মাধ্যমে বাষ্পমোচন হয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য গাছের কাণ্ড মোম জাতীয় পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে ও গাছের গায়ে প্রচুর লোম ও কাঁটা থাকে। এদের পত্রকণ্টক বলে। (৬) উদ্ভিদগুলি বেশ দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান। করে। (৭) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মি. এর বেশি হয় না এবং (৮) পরাগ মিলনের সুবিধার জন্য মরু উদ্ভিদের ফুলগুলি তীব্র গন্ধযুক্ত ও উজ্জ্বল রঙের হয়। • প্রধান বৃক্ষ খয়ের, বাবলা, খেজুর, ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বিভিন্ন ঘাস ও কাঁটাঝোপ এখানকার প্রধান উদ্ভিদ। 

প্রশ্ন। ৩। ক্রান্তীয় পর্ণমোচী ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবস্থান, গড়ে ওঠার কারণ, বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বৃক্ষগুলির নাম লেখো। 

উত্তর : ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য (Tropical Deciduous Forest) : ঋতু নিয়ন্ত্রিত, বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারতে শুষ্ক ঋতুতে যেসকল গাছ-এর পাতা একসঙ্গে ঝরে পড়ে যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছপালা যুক্ত অরণ্যকে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য বা পাতাঝরা গাছের বনভূমি বলে। * 

শ্রেণিবিভাগ : ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যকে ভারতে দু-ভাগে ভাগ করা যায় যথা- (১) আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য (Moist Deciduous Forest) এবং (২) শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য (Dry Deciduous Forest) (ক) আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য (Moist deciduous Forest): 

• (ক) আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য (Moist deciduous Forest)

 আঞ্চলিক কণ্টন : ভারতের মোট বনভূমির প্রায় ২৭% অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই পর্ণমোচী বনভূমি। হিমালয় পর্বতের পাদদেশের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটাল, ছোটোনাগপুর মালভূমি, পশ্চিমবঙ্গ সমভূমি, অসম সমভূমি ও ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরল রাজ্যে এই অরণ্য দেখা যায়।

  প্রাকটিক পরিবেশ : ভারতের যেখানে গ্রীষ্মকালীন উয়তা ২৭° – ৩০° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন উয়তা ১৫° – ২০ সেলসিয়াস সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেমি. এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০°-৭৫°, সেখানে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায়। • বৈশিষ্ট্য : (১) শীতকালে অধিকাংশ বৃক্ষের পাতা ঝরে যায়। (২) বৃক্ষগুলির কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। (৩) অধিকাংশ গাছেরছাল পুরু ও অমসৃণ। (৪) গাছগুলির গড় উচ্চতা ২৫-৬০ মিটার পর্যন্ত। (৫) বহু ডালপালা বিশিষ্ট এই গাছগুলিতে বর্ষবলয় স্পষ্ট দেখা যায়। (৬) এই অরণ্য অপেক্ষাকৃত কম ঘন। (৭) গাছগুলি মাঝারি থেকে বৃহৎ পত্রযুক্ত এবং গাছের ছাল পুরু ও অমসৃণ এবং (৮) এই অরণ্য যথেষ্ট সুগম।

 • প্রধান বৃক্ষ : সাল, সেগুন, পলাশ, কুল, শিমূল, মহুয়া, কুসুম, আম, জাম, চন্দন, অর্জুন ইত্যাদি। 

(খ) শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ (Dry Deciduous Forest) : • আঞ্চলিক বণ্টন : রাজস্থানের পূর্বাংশ, উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে, বিহারের পশ্চিমাংশ, ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণাংশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা প্রভৃতি রাজ্যে এই বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়।

 ■ প্রাকৃতিক পরিবেশ : সাধারণত ঘাস, গুল্ম এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা গাছ—এইসবকে একসঙ্গে বলে শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ। ভারতের যেসব অঞ্চল শুষ্ক অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০–১০০ সেমি এবং গড় উষ্ণতা হল ২৫°–৩০° সেন্টিগ্রেড সেখানে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়।

 • বৈশিষ্ট্য : (১) এই অঞ্চলে প্রধানত লম্বা ঘাস, তৃণ, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বেশি জন্মায়। (২) গাছগুলি তাপ সহনশীল এবং গাছের কাণ্ডের আবরণ অত্যন্ত পুরু ও অমসৃণ। (৩) উদ্ভিদগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ে ওঠে। (৪) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মিটারের বেশি হয় না। (৫) মাঝারি থেকে অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলের বনভূমি ঘন হয় না। (৬) এখানে সাবাই ঘাস, হাতি ঘাস, শর, চাপড়া ইত্যাদি গাছ দেখা যায়। 

• প্রধান বৃক্ষ : সাবাই ঘাস, হাতি ঘাস, শর, চাপড়া ইত্যাদি। ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) : 

নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ও অন্যান্য নীচুস্থান, যেখানে সাগরের নোনা জল প্রবেশ করে, সেইসব অঞ্চলে যে বনভূমি সৃষ্টি হয়, ম্যানগ্রোভ বনভূমি বলা হয়। 

 আঞ্চলিক বণ্টন : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন; এ ছাড়া গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ অঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিম্ন উপকূলভাগ, গুজরাটের কচ্ছ ও কাম্বে উপসাগরের উপকূলের নিম্ন জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়। সুন্দরবন ভারতের তথা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ভারতের মোট অরণ্যের ৬০% সুন্দরবন অঞ্চলে অবস্থিত।

 • বৈশিষ্ট্য : (i) এইসব গাছের শিকড় নদীর জোয়ারের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জন্য মাটি ফুঁড়ে ওঠে, একে শ্বাসমূল বলা হয়। (ii) কাণ্ডকে ভেজা নরম মৃত্তিকায় সোজাভাবে ধরে রাখার জন্য এইসব গাছে ঠেসমূলও দেখা যায়। (iii) এখানকার উদ্ভিদ চিরহরিৎ প্রকৃতির। তাই একে চিরসবুজ উপকূলীয় বনভূমিও বলা হয়। (iv) এখানকার উদ্ভিদের অপর বৈশিষ্ট্য হল জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম। (v) লবণাম্বু উদ্ভিদগুলি মোমের মতো এক তৈলাক্ত পদার্থের প্রলেপ দ্বারা আবৃত থাকে এবং (vi) এই অরণ্যের বৃক্ষের কাণ্ড রসালো প্রকৃতির হয়।

প্রধান বৃক্ষ : সুন্দরী, গরান, গেওয়া, হেঁতাল, কেয়া, গোলপাতা প্রভৃতি উদ্ভিদ এখানে দেখা যায়। জেনে রাখো ভারতের অরণ্যের ভৌগোলিক বণ্টন : ভৌগোলিক অঞ্চল— (১) উপদ্বীপীয় মালভূমি ও পাহাড় (২) হিমালয় অঞ্চল (৩) পশ্চিমঘাট পর্বত ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি (৪) পূর্বঘাট পর্বত ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি (৫) বৃহৎ সমভূমি অঞ্চল প্রশ্ন ৪ ১৮.০০ 6.00 ১০০.০০% ।

প্রশ্ন ৪. ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো। অথবা, জলবায়ু ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা উদাহরণসহ লেখো।

 উত্তর : কোনো স্থানের জলবায়ু অর্থাৎ বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ঋতুগত তারতম্য ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রভাবিত করে। কোনো স্থানের জলবায়ুর ওপর সেখানকার উদ্ভিদের প্রকৃতি নির্ভরশীল যেমন—

(১) ভারতের যে-সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২০০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং তাপমাত্রা যথেষ্ট তীব্র সেইসব অঞ্চলে, নিরক্ষীয় অঞ্চলের মতো চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এইসব অঞ্চলের গাছপালাগুলি বছরের কোনো সময়েই পত্রহীন হয় না। এইসব অঞ্চলে শিশু, গর্জন, রোজউড, মেহগনি, চাপলাস, নাহার, লোহাকাঠ প্রভৃতি প্রধান বৃক্ষ ছাড়াও মধ্যে মধ্যে রবার, বাঁশ ও আবলুস বৃক্ষও চোখে পড়ে। ভারতের অসম, অরুণাচল, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা, উত্তরবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায়। 

(২) ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০–২০০ সেন্টিমিটারের মধ্যে, শীতকাল শুকনো এবং শীতের শুরতে বৃষ্টিপাত হয়, সেইসব অঞ্চলে পাতাঝরা বা পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এই অঞ্চলের প্রধান স্বাভাবিক উদ্ভিদ হল শাল, শিমুল, সেগুন, জারুল, মহুয়া, পলাশ, শিরীষ, বট, অশ্বত্থ, আম, কাঁঠাল প্রভৃতি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব ঢালসংলগ্ন মাঝারি বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায়।

 (৩) ভারতের যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০–২০০ সেন্টিমিটার, | সেখানে সাবাই, কাশ প্রভৃতি তৃণ বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়। আরাবল্লীর পূর্ব দিকে অবস্থিত রাজস্থানের মরুপ্রান্ত, গুজরাটের কচ্ছ ও কাথিয়াওয়ার অঞ্চল এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও পশ্চিম-ভারতের মহারাষ্ট্রের কোনো কোনো অঞ্চলে এই ধরনের | স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। 

 (৪) রাজস্থানের মতো অঞ্চলে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০সেন্টিমিটারের কম ও উত্তাপ খুব বেশি (গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ৪০° সেন্টিগ্রেডের বেশি), সেখানে জলের অভাবে কাঁটা জাতীয় গাছ জন্মায়। বাবলা, ফণীমনসা প্রভৃতি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য স্বাভাবিক উদ্ভিদ। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র অঞ্চলে বুনো খেজুর, তাল প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়। 

(৫) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা ক্রমশ কমে যায় বলে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন উচ্চতায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায়, যেমন—- (ক) পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের পাদদেশ থেকে ১,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলে শিশু, মেহগনি, গর্জন, রোজউড প্রভৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। পশ্চিম হিমালয়ে অবশ্য এই বনভূমি দেখা যায় না ; (খ) হিমালয় পর্বতের ১,০০০-২৫০০ মিটার উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলে পপলার, ওক, ম্যাপল, ওয়ালনাট, বার্চ প্রভৃতি পর্ণমোচী বা পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায়। (গ) হিমালয়ের ২,০০০ মিটার থেকে ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় পাইন, ফার, স্পুস প্রভৃতি সরলবর্গীয় বৃক্ষ জন্মায় : (ঘ) হিমালয় পর্বতের ৪,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অত্যধিক ঠান্ডা ও তুষারপাতের জন্য বৃক্ষ বিশেষ জন্মায় না। এখানে জুনিপার, রডোডেনড্রন, নাকস ভমিকা প্রভৃতি তৃণগুম্ম জন্মায়, যা আল্পীয় তৃণভূমি নামে পরিচিত। 

(৬) গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর মোহানার কাছে অবস্থিত বদ্বীপ অঞ্চলের নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বনভূমি নামে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়। এখানকার স্বাভাবিক উদ্ভিদদের মধ্যে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, ক্যাওড়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ম্যানগ্রোভ বনভূমি ঠিক জলবায়ু নির্ভর নয়, কারণ নদীর মোহানার বদ্বীপ অংশের নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলের যেখানে জোয়ারভাটা হয় এবং মাটি লবণাক্ত ও সবসময় ভিজে থাকে, সমুদ্রোপকূলবর্তী সেইসব অঞ্চলেই কেবলমাত্র বনভূমি দেখা যায়।

প্রশ্ন ৫. কি কি কারণে অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে ?

উত্তর : ভারত তথা পৃথিবীর সর্বত্রই বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ  কমছে। বনভূমি ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি হল – (১) কাষ্ঠ আহরণ : জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির কারণে কাগজ, আসবাবপত্র ইত্যাদির চাহিদার জোগান দেওয়ার জন্য কাষ্ঠ আহরণের পরিমাণও বেড়েই চলেছে। (২) বনভূমিকে কৃষিক্ষেত্রে রূপান্তর : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য বনভূমি ও তৃণভূমি অঞ্চলকে কৃষিক্ষেত্রে রুপান্তরিত করায়, বনভূমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমেছে। (৩) ঝুমচাষ : উত্তর-পূর্ব ভারত সমেত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পার্বত্যভূমিগুলিতে ঝুম চাষের (স্থানান্তর কৃষি) প্রভাবে বনভূমির পরিমাণ কমেছে। (৪) চারণভূমির প্রসার : জনবিস্ফোরণের ফলে খাদ্যশস্যের সঙ্গে দুধ, মাংস, চামড়াজাত পশুজ-দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে পশুচারণ ক্ষেত্রের প্রসারের জন্য বনভূমি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। (৫) দাবানল : প্রাকৃতিক ভাবে বা মানুষের দ্বারা বনভূমিতে আগুন লাগলে প্রচুর বনভূমি ধ্বংস হয়। (৬) ভূমিকম্প ও ধস : ভূমিকম্পের ফলে বা ধ্বসেরফলে বনভূমি ধ্বংস হয়। (৭) বহুমুখী নদী পরিকল্পনা : বহুমুখী নদী পরিকল্পনার রূপায়ণের কারণে নদী অববাহিকায় বাঁধ, জলাধার, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতি নির্মাণের কারণে বনভূমি ধ্বংস হয়।

প্রশ্ন ৬. অরণ্য সংরক্ষণ কাকে বলে? বনভূমি সংরক্ষণ বা বনসৃজনের প্রয়োজনীয়তা কী? 

উত্তর :  অরণ্য সংরক্ষণ : বনভূমিকে বিজ্ঞানভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপচয় বন্ধ করে বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বাধিক ব্যবহারকে অরণ্য সংরক্ষণ বলে। বনসৃজনের বহুমুখী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কারণ বনভূমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের নানারকম উপকার করে, যেমন-

 (১) প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা : গাছ দুষিত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন (O2) পরিত্যাগ করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে সমতা বজায় থাকে। এই সমতা পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

 (২) আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে : বনভূমি ক্রমাগত ধ্বংস হলে, বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বাড়বে ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে। এতে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর বিস্তার প্রভাব পড়বে।

 (৩) মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করে : গাছেরা নিজেদের শিকড়ের সাহায্যে মাটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে বৃদ্ধি পায়। এতে ভূমিক্ষয় নিবারিত হয়।

 (১) মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধ : বনভূমি ধ্বংসের প্রভাবে মরুভূমির সংলগ্ন অঞ্চলও মরুভূমিতে পরিণত হয়। উদ্ভিদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত না-হওয়ায় বালি ক্রমাগত উড়ে গিয়ে অন্যস্থানে সজ্জিত হয় এবং অঞ্চলটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে।

(৫) মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে : বনভূমির গাছের পাতা, ফুল, মূল, কাণ্ড প্রভৃতি পচে মৃত্তিকার উর্বরতা বাড়ায়। 

(৬) বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে : গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার: বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বনভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 (৭) বনভূমি মানুষের অর্থকরী দিক থেকেও লাভজনক বনভূমি থেকে আহরণ করা ফলমূল, মধু, কাঠ এবং বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ মানুষকে জীবিকানির্বাহ করতে সাহায্য করে। 

(৮) জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে : বিভিন্ন জীবজন্তুর আশ্রয়স্থল ও বাসভূমি হওয়ায় বনভূমি জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে। এইসব কারণের জন্য বর্তমানে ভারতের সাধারণ মানুষকে বৃক্ষরোপণ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। 

প্রশ্ন ৭. কী কী ভাবে অরণ্য সংরক্ষণ করা যায়? [মা.প. [১৮] 

উত্তর : বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অরণ্য সম্পদের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখাকে অরণ্য সংরক্ষণ বলা হয়। 

অরণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিসমূহ : 

(১) অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ : বর্তমানে জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের জোগান, বিভিন্ন নির্মাণ শিল্প স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়। এইভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করতে হবে।

 (২) অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন হ্রাস : অপরিণত গাছ কাটার পরিবর্তে পরিণত গাছ কাটা উচিত। অপরিণত গাছ থেকে কম পরিমাণ কাঠ পাওয়া যায়, ফলে চাহিদা মেটানোর জন্য বেশিসংখ্যক গাছকাটার কারণে বনভূমি দ্রুত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(৩) কাঠের জ্বালানির পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি: অনুন্নত ও দরিদ্র দেশে কাঠকে জ্বালানিরূপে ব্যবহার না-করে কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। 

(৪) দাবানল প্রতিরোধ : মনুষ্যসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক নানা কারণে সৃষ্ট দাবানল থেকে বনভূমি রক্ষা করার জন্য শুকনো ডালপালা, পাতা ও আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করা, অরণ্যের স্থানে স্থানে সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

(৫) রাসায়নিক ও জৈবিক উপায়ে অরণ্যের বৃক্ষের রোগ প্রতিরোধ : বিষাক্ত পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের আক্রমণে রোগাক্রান্ত হয়ে গাছপালা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য বিভিন্নপ্রকার । রাসায়নিক ও জৈবিক উপায়ে কীটনাশক ও রোগ প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা প্রয়োজন।

 (৬) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ : বনভূমিতে পশুচারণ করলে ঘাস, তৃণগুল্ম জাতীয় গাছ বা নতুন চারাগাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

(৭) বনসৃজন ও পূনর্বসৃজন : বৃক্ষচ্ছেদনের পর সেই স্থান এবং অন্যান্য পতিত জমিতে বিশেষত যেসকল জমি কৃষিকাজের পক্ষে অনুপযুক্ত সেইসকল জমিতে নতুন বৃক্ষরোপণ করে বনভূমি গড়ে তোলা দরকার। 

(৮) অরণ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিণত ও নির্বাচিত বৃক্ষচ্ছেদন কর্মসূচি গ্রহণ : বিভিন্নপ্রকার আইন গ্রহণ করে, অরণ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কেবলমাত্র পরিণত ও নির্বাচিত বৃক্ষচ্ছেদনের কর্মসূচি গ্রহণ করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করতে হবে।

(৯) মানুষের অংশগ্রহণ অরণ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া মানে মানবসভ্যতার বিনাশ। এই ধারণার নিরবচ্ছিন্ন প্রচার সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি করলে জনসাধারণের চেতনা আস্তে আস্তে উন্নীত হবে। কোনোপ্রকার আইন, কোনো নিয়মই যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না মানুষ এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। তাই বনসংরক্ষণের জন্য চাই জনসাধারণের সামগ্রিক চেতনা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণ। 

জেনে রাখো :

ভারতের অরণ্য সংরক্ষণের আন্দোলন সমূহ : (১) চিপকো আন্দোলন, ১৯৭৩ গাড়োয়াল হিমালয়। (২) সাইলেন্ট ভ্যালি প্রজেক্ট, ১৯৭৮ → কুন্ধিপুজাপিদী। (৩) জঙ্গল বাঁচাও আন্দোলন, ১৯৮০ → বিহার, ঝাড়খণ্ড ওড়িশা। (৪) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, ১৯৮৫ নর্মদা নদী গুজরাট। (৫) আপ্পিকো আন্দোলন, ১৯৮৩ → দক্ষিণ ভারত।

No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();