ভারতের কৃষি: দশম শ্রেণীর ভূগোল অধ্যায় ৫.৭ প্রশ্ন ও উত্তর| class 10 geography chapter 5.7 questions answer| WB board geography suggetion 2024|
দশম শ্রেণীর ভূগোল প্রথম অধ্যায় পড়তে click korun
দু এক কথায় উত্তর দাও :
প্রশ্ন ১.ভারতের প্রধান দুটি অর্থকরী পানীয় ফসলের নাম লেখো।
উত্তর: চা, কফি।
প্রশ্ন ২.খরিফ শস্যের অর্থ কী ?
উত্তর : বর্ষাকালীন ফসল।
প্রশ্ন ৩. রবি শস্যের অর্থ কী ?
উত্তর :শীতকালীন ফসল।
প্রশ্ন ৪. দুটি খরিফ শস্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: ধান/পাট/তুলো/জোয়ার/বাজরা।
প্রশ্ন ৫ দুটি রবি শস্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: গম/যব/আলু ।
প্রশ্ন ৬. দুটি জায়িদ শস্যের নাম লেখো।
উত্তর : আউশ ধান/পাট/ বাদাম/শাক।
প্রশ্ন ৭ .ভারতে সাধারণত কোন্ দুই পদ্ধতিতে ধান চাষ হয়?
উত্তর: রোপণ পদ্ধতি ও বপন পদ্ধতি।
প্রশ্ন ৮. ICAR-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: Indian Council of Agricultural Research।
প্রশ্ন ৯. ভারতের কোন প্রকার চাল বিদেশে রপ্তানি করা হয়?
উত্তর:সুগন্ধি বাসমতী ও গোবিন্দভোগ চাল।
প্রশ্ন ১০ .ধানের পর ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য কী ?
উত্তর :গম।
প্রশ্ন .১১ ভারতে প্রধানত কোন প্রকার গম চাষ হয়?
উত্তর: শীতকালীন গম চাষ।
প্রশ্ন ১২.ভারতের শস্যভাণ্ডার কাকে বলা হয়?
উত্তর :করমণ্ডল উপকূল (তামিলনাড়ু)।
প্রশ্ন .১৩. ভারতের যে-কোনো ২টি রাজ্যের নাম লেখো যেখানে জোয়ার চাষ করা হয়।
উত্তর :মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ/কর্ণাটক/অন্ধ্রপ্রদেশ।
প্রশ্ন :১৪ ভারতের যে-কোনো দুটি বাজরা উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর :গুজরাট / রাজস্থান/মহারাষ্ট্র/উত্তরপ্রদেশ।
প্রশ্ন . ১৫. ভারতের যে-কোনো দুটি রাগি উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর :কর্ণাটক/অন্ধ্রপ্রদেশ/তামিলনাড়ু/বিহার।
প্রশ্ন . ১৬. মৃত্তিকায় কোন্ প্রকার খনিজের উপস্থিতিতে চা পাতার সুগন্ধ বৃদ্ধি পায়?
উত্তর :ফসফরাস ও পটাশ।
প্রশ্ন .১৭. পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলার চা স্বাদে-গন্ধে পৃথিবীবিখ্যাত?
উত্তর | দার্জিলিং।
প্রশ্ন .১৮. ভারতের চা গবেষণাগারটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: অসমের জোড়হাটে।
প্রশ্ন .১৯. ভারতের কোন্ রাজ্য কফি উৎপাদনে প্রথম?
উত্তর :কর্ণাটক।
প্রশ্ন .২০. ভারতের কোন্ অঞ্চলে অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয়?
উত্তর: দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চল।
প্রশ্ন . ২১. কোন্ প্রকার জলবায়ুতে আখ চাষ ভালো হয়?
উত্তর: আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু।
প্রশ্ন ২২. ভারতের কোন্ অঞ্চল হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদনে ভারতে প্রথম ?
উত্তর :সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ তথা পাঞ্জাব ও হরিয়ানা।
প্রশ্ন .২৩. পেশাগত দিক থেকে ভারত কী ধরনের দেশ?
উত্তর:কৃষিভিত্তিক দেশ।
প্রশ্ন ২৪. ভারতের কৃষিতে জলসেচের মূল কারণ কী?
উত্তর : অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত।
প্রশ্ন ২৫. পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে যে-চাষ করা হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: ধাপ চাষ।
প্রশ্ন ২৬. ভারতের কোন্ অঞ্চলে ঝুম চাষ দেখা যায়?
উত্তর :উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।
প্রশ্ন .২৭. ভারতে সবুজ বিপ্লবের সময়কাল কী?
উত্তর :১৯৬১–১৯৬৬ (ষাটের দশকের শেষে)।
প্রশ্ন .২৮. ভারতে সবুজ বিপ্লবের ফলে কোন্ ফসলের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল?
উত্তর. গম।
প্রশ্ন .২৯. কোনো নির্দিষ্ট জমিতে ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমিক চাষকে কী বলে?
উত্তর : শস্যাবর্তন। বিভিন্ন শস্যের
প্রশ্ন .৩০. কৃষি থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় আয় কত হয়?
উত্তর :১৬.৬%।
প্রশ্ন ৩১.যেসকল ফসল থেকে চিনি, গুড়, মিছরি বা সুরাসার উৎপন্ন হয়, তাকে কী ধরনের ফসল বলে?
উত্তর :শর্করা জাতীয় ফসল।
প্রশ্ন ৩২. কোন্ ধানের অপর নাম ভাদুই?
উত্তর :আউশ ধান।
প্রশ্ন ৩৩. পৃথিবীতে কোন্ প্রকার গমের চাষ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: শীতকালীন গম।
প্রশ্ন ৩৪.কোন্ ধানের অপর নাম যেটে ধান ?
উত্তর :বোরো ধান।
প্রশ্ন ৩৫ .হেক্টরপ্রতি চা উৎপাদনে কোন্ রাজ্য প্রথম ?
উত্তর : তামিলনাড়ু রাজ্য।
প্রশ্ন . ৩৬ ভারত কোন্ কোন্ দেশে তুলা রপ্তানি করে?
উত্তর :শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, জাপান, জার্মানি ইত্যাদি।
প্রশ্ন .৩৭. পশ্চিমবঙ্গের কোথায় ধানের গবেষণা কেন্দ্র আছে?
উত্তর :চুঁচুড়াতে।
প্রশ্ন ৩৮ .ভারতীয় টি বোর্ড কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর :কলকাতা।
প্রশ্ন ৩৯ .'সোনালি তত্ত্ব' কাকে বলা হয়?
উত্তর :পাট।
প্রশ্ন ৪০ .ভারতে উৎপন্ন দুটি তন্তু ফসলের নাম লেখো।
উত্তর: কার্পাস বা তুলো এবং পাট।
প্রশ্ন ৪১ .ভারত কোন্ কোন্ দেশে কফি রপ্তানি করে?
উত্তর: পোল্যান্ড, রুমানিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশে।
প্রশ্ন ৪২ .ভারত কোন্ কোন্ দেশে চা রপ্তানি করে?
উত্তর রাশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, জাপান, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৪৩ .কোন্ রাজ্যকে ‘দক্ষিণের ধানের ভাণ্ডার' বলে?
উত্তর :তামিলনাড়ু।
প্রশ্ন ৪৪ .ভারতের কোন্ বন্দরের মাধ্যমে সর্বাধিক চা রপ্তানি করা হয়?
উত্তর :কলকাতা।
প্রশ্ন ৪৫ .ভারতের কোন অঞ্চলে সর্বাধিক গম উৎপন্ন হয়? উ
উত্তর: পশ্চিমে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন । ১ কৃষিকাজ (Agriculture) কাকে বলে? [ পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন '১৭]
উত্তর : যখন স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষ নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদন করে, তাকে কৃষিকাজ বলে।
প্রশ্ন ২. ফসল রোপণের সময় অনুসারে ভারতে উৎপন্ন | ফসলগুলির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : ফসল রোপণের সময় অনুসারে বিভিন্ন ঋতু হিসেবে ভারতের উৎপন্ন ফসলগুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন (১) রবি ফসল এবং (২) খরিফ ফসল।
প্রশ্ন ৩. রবি শস্য ও খরিফ শস্য বলতে কী বোঝায়? উত্তর রবি শস্য : এককথায় রবিশস্যের অর্থ হল ‘শীতকালীন ফসল'। প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় সেইসব ফসলকে রবি ফসল বলে। গম, যব, আলু, বিভিন্ন রকমের তৈলবীজ ও ডাল রবি ফসলের উদাহরণ।
খরিফ শস্য : এককথায় খরিফ ফসলের অর্থ হল ‘বর্ষাকালীন ফসল’। বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে যেসব ফসলের চাষ করা হয়, সেইসব ফসলকে খরিফ শস্য বলে। ধান, পাট, ভুট্টা, আখ, জোয়ার, বাজরা, কার্পাস প্রভৃতি খারিফ ফসলের উদাহরণ।
প্রশ্ন ৪ .খাদ্যফসল বলতে কী বোঝ?
উত্তর : খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য যেসকল ফসলের চাষ করা হয়, সেই ধরনের ফসলকে খাদ্যফসল বলে। যেমন— ধান, গম, মিলেট।
প্রশ্ন ৫ .তন্তুজাতীয় ফসল (Fibre Crop) কাকে বলে?
উত্তর : যে ফসল থেকে তন্তু বা সুতো তৈরি হয় তাকে তত্ত্বজাতীয় (Fibre Crop) বলে। এইপ্রকার গাছ থেকে একবারই মাত্র ফসল পাওয়া যায়। উদাহরণ – তুলো, পাট, শন (Hemp) ও মেস্তা (Mesta) |
প্রশ্ন ৬ .উদাহরণসহ অর্থকরী ফসলের (Cash Crops) সংজ্ঞা দাও। অথবা, ‘অর্থকরী ফসল' বলতে কী বোঝ?
উত্তর : প্রধানত অর্থ উপার্জনের জন্য বা বাজারে বিক্রির জন্য যেসব ফসল চাষ বা উৎপাদন করা হয় সেইসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে। উদাহরণ : ভারতে আখ, পাট, কার্পাস তুলা, ডাল, তামাক প্রভৃতি। অবশ্য খাদ্যশস্য বা বাগিচা ফসল বিক্রি করেও অর্থাগম হয়।
প্রশ্ন ৭ .বাগিচা ফসল (Plantation Crop) কাকে বলে?
উত্তর : অনুকূল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তনখামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিদেশি মূলধনের সহায়তায় যেসব ফসলের চাষ শুরু হয়, তাদের বাগিচা ফসল বলে। যেমন— : চা, কফি।
প্রশ্ন ৮. ভারতে প্রধান বাগিচা ফসল কী কী?
উত্তর : ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল- (i) চা, (ii) কফি, (iii) তামাক, (iv) রবার, (v) বিভিন্ন মশলা, (vi) সিঙ্কোনা। প্রশ্ন। ১ বাণিজ্যিক ফসল (Commercial Crops) কাকে বলে ? উত্তর : প্রধানত কৃষিভিত্তিক বাণিজ্য বা রপ্তানির জন্য যেসব ফসল উৎপাদন করা হয়, সেইসব ফসলকে বাণিজ্য ফসল বলে। অবশ্য দেশের মধ্যেও এইসব ফসল ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণ : ভারতে চা, কফি, কাজুবাদাম প্রভৃতি হল বাণিজ্যিক ফসল।
প্রশ্ন | ১০ তৈলবীজ (Oil Seed) কী?
উত্তর : তৈলবীজ হল এক বিশেষ ধরনের শস্যের বীজ যা থেকে তেল পাওয়া যায়। যেমন – সরিষা, সয়াবিন, নারকেল, তিসি ইত্যাদি।
প্রশ্ন । ১১ .তৈলবীজ কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তর : তৈলবীজ প্রধানত দুই প্রকারের হয়। যথা— (১) সরিষা, সূর্যমুখী, সয়াবিন, নারকেল, তিল, মহুয়া ইত্যাদি থেকে যে তেল পাওয়া যায়, তা হল খাওয়ার যোগ্য তৈলবীজ (Edible Oilseeds)। তাই তাকে বলে খাওয়ার ভোজ্য তৈলবীজ। এবং (২) অন্যদিকে রেড়ি, তিসি, নিম, করঞ্জা ইত্যাদি থেকে যে-তেল পাওয়া যায়, তা সাধারণত খাওয়ার অযোগ্য, তাই তাকে বলে খাওয়ার অভোজ্য তৈলবীজ (Non Edible Oilseeds)।
প্রশ্ন। ১২. ভারতে প্রধানত কোন্ কোন্ ধান উৎপন্ন হয়?
উত্তর : ভারতে সাধারণত তিন শ্রেণির ধান উৎপন্ন হয়। (i) আমন ধান—প্রচুর জলের প্রযোজন হয় বলে বর্ষাকালে বপন করে শীতকালে ফসল কাটা হয়। (ii) আউশ ধান— প্রাক্- মৌসুমি বৃষ্টিতে বপন করে মে-জুন মাসে কাটা হয়। (iii) বোরো ধান—বসন্তকালের শেষে লাগিয়ে গ্রীষ্মকালে কাটা হয়।
প্রশ্ন । ১৩. ভারতের ধান উৎপাদক প্রথম ৩টি রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর : ভারতের ধান উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ ও তৃতীয় রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ।
প্রশ্ন ১৪ .ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয় কেন?
উত্তর : শীতকালে গম চাষ করার কারণ হল : (i) গম চাষের প্রথমাবস্থায় গম বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও গমের চারা বৃদ্ধির সময় ১৫°- ১৬° সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় গম পাকার সময় ১৮০-২০° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন। ভারতে এই উত্তাপ কেবলমাত্র শীতকালেই সম্ভবপর হয় বলে ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয়। (ii) এ ছাড়া গম চাষের পক্ষে তুষারপাত ক্ষতিকারক। শীতকালে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিমশীতল আবহাওয়া দেখা গেলেও তুষারপাত হয় না। এইসব অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ভারতে শীতকালে গম চাষ করা হয়।
প্রশ্ন ১৫. গমের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : গমের শ্রেণিবিভাগ — (i) শীতকালীন গম : এই গম শীতকালে চাষ করা হয়। শীতকালে এই গমের চাষ বেশি। (ii) বসন্তকালীন গম : যেসব অঞ্চল শীতকালে প্রবল তুষারপাত হয় এবং মাটি বরফাকৃত থাকে, সেইসব অঞ্চলে শীতের শেষে বসন্তকালে এইপ্রকার গমচাষ করা হয়।
প্রশ্ন | ১৬. ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।
[উত্তর : ভারতের প্রধান দুটি গম উৎপাদক রাজ্যের নাম হল: (১) উত্তরপ্রদেশ এবং (২) পাঞ্জাব।
প্রশ্ন। ১৭ .ভারতের প্রধান তিনটি চা উৎপাদনকারী রাজ্যের নাম লেখো ।
উত্তর : ভারতের তিনটি প্রধান চা উৎপাদনকারী রাজ্য হল (i) অসম (ii) পশ্চিমবঙ্গ এবং (iii) তামিলনাড়ু।
প্রশ্ন। ১৮ .ভারতের চা ও কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্য দুটির নাম লেখো।
উত্তর রাজ্য : • ভারতে চা উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ ভারতে কফি উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী অসম। কাটিক।
প্রশ্ন ১৯ .ভারতের চা কোন্ কোন্ দেশে রপ্তানি করা হয়।
উত্তর : ভারত যেসব দেশে চা রপ্তানি করে সেগুলি হল—ব্রিটেন, রাশিয়া, সুদান, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি। ভারত চা রপ্তানিতে পৃথিবীতে চতুর্থ।
প্রশ্ন । ২০. পাহাড়ের ঢালু জমিতে চা চাষ ভালো হয় কেন?
উত্তর : চা গাছের জন্য বেশি বৃষ্টিপাত-এর প্রয়োজন হলেও চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ানো চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই অধিক ঢালযুক্ত পাহাড় ও পর্বতের ঢালু জমিতে যেখানে গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ায় না, সেখানেই চা চাষ করা হয়।
প্রশ্ন ২১ .কার্পাস বা তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে কার্পাসকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—(১) দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস (৩ সেমি বা তার চেয়ে বেশি দীর্ঘ) (২) মাঝারি আঁশযুক্ত কার্পাস (২.৫ সেমি – ২১ সেমি) এবং (৩) ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত কার্পাস (২.৫ সেমি এর কম)। ভারতে প্রধানত ছোটো ও মাঝারি আঁশযুক্ত তুলো উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন ২২ .সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম ছাড়া আর কোন্ কোন্ ফসলে দেখা গেছে?
উত্তর : সবুজ বিপ্লবের প্রভাব গম (উত্তর-পশ্চিম ভারত) ছাড়াও, পূর্ব ভারতের ধান উৎপাদনে, দক্ষিণ ভারতের ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনে এবং মধ্য ভারতে জোয়ার, বাজরা ও ভুট্টা উৎপাদনে দেখা গেছে।
প্রশ্ন । ২৩ .উচ্চফলনশীল বীজ চাষের বিশেষত্ব কী ?
উত্তর : উচ্চফলনশীল বীজ হল এমন একপ্রকার বীজ যা থেকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদিত হয়। এইপ্রকার বীজ চাষের জন্য বেশি পরিমাণে জল, বিভিন্ন প্রকার সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ২৪. ধাপ চাষ (Step Cultivation) কী ?
উত্তর : পাহাড়ি অঞ্চলে মাটির ক্ষয় রোধে ঢালু জমিতে ধাপ কেটে, বৃষ্টির জলকে জমিতে ব্যবহার করে যে কৃষিকাজ করা হয়, তাকে ধাপ চাষ বলে। যেমন— ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে ধাপকেটে ধানচাষ করা হয়।
প্রশ্ন ২৫ .ঝুম চাষ (Shifting Cultivation) কাকে বলে?
উত্তর : ভারতের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ বন কেটে ও পুড়িয়ে জমি তৈরি করে চাষ করে। কিছু বছর বাদে মাটির উর্বরতা কমে গেলে ওই জমি পরিত্যাগ করে অন্য একটি জমি তৈরি করে চাষ করে। একেঝুম চাষ বলে। এটি একপ্রকার স্থানান্তর কৃষির উদাহরণ। যাপ চাষ ঝুম চাষ জেনে রাখো ঝুম চাষ ব্যবস্থায় গাছ কেটে ফেলে সেগুলিকে পুড়িয়ে চাষের জমি তৈরি করা হয় বলে এই কৃষিকাজকে ছেদন ও দহন (Slash and Burn) কৃষিকাজও বলে।
প্রশ্ন ২৬ .চা, বাগিচা কৃষির অন্তর্ভুক্ত কেন?
উত্তর : ভারতে চা চাষ ইংরেজদের মাধ্যমে শুরু হয়। এই চা বিদেশে রপ্তানি করে বাণিজ্যিকভাবে বাগিচা নির্মাণ করে উন্নতমানের ও বেশি পরিমাণে চা চাষ শুরু হয়। তাই চাকে বাগিচা ফসল বলে।
প্রশ্ন ২৭ জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি (Subsistence farming) কাকে বলে?
উত্তর : কেবলমাত্র জীবনধারণের জন্য কৃষিজ ফসল উৎপাদন করাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। যেমন—ভারতে ধান চাষ হলে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর:
A. সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো
প্রশ্ন ১ .বাগিচা ফসল (Garden Crops) কী ?
উত্তর : অনুকূল ভৌগোলিক সুবিধাযুক্ত কোনো বৃহদায়তন খামারে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যেসব ফসলের চাষ বা উৎপাদন করা হয়, তাদের বাগিচা ফসল বলে। বাগিচা ফসল (১) প্রাথমিক পর্যায়ে ঔপনিবেশিকদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ, (২) দেশীয় শ্রমিকের ব্যবহার, (৩) বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানির জন্য ফসল উৎপাদন, (৪) বৃহদায়তন খামার, (৫) বিপণনের সুব্যবস্থা (৬) আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার।
• উদাহরণ : ভারতের উল্লেখযোগ্য বাগিচা ফসলগুলি হল ১) চা, (২) কফি, (৩) রবার, বিভিন্ন ধরনের মশলা প্রভৃতি।
প্রশ্ন| ২.শস্যাবর্তন কৃষি (Crop Rotation) কী ?
উত্তর : যে বহুফসলি কৃষিব্যবস্থায় বিশেষ কোনো অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, জমির উর্বরতা, জলসেচ, সার দেওয়া, ফসলের চাহিদা প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সামস্য রেখে একই জমিতে বছরের এক-এক সময়ে এক-এক রকম ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে শস্যাবর্তন কৃষি বলে। শস্যাবর্তন কৃষি উৎপাদন পদ্ধতিতে জমি চাষ করা হলে, বাজারের চাহিদা অনুসারে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে ন্যায্য দাম পেয়ে একদিকে কৃষকরা উপকৃত হয়, অন্যদিকে জমির উর্বরতাও বজায় থাকে।
• ভারতীয় কৃষিকাজে শস্যাবর্তন করার উদ্দেশ্য : (i) সঠিকভাবে জমির উর্বরতার মান বজায় রাখা। (ii) শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা। (iii) জমিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যের চাষ পর্যায়ক্রমিকভাবে হয় বলে রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম। (iv) শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে বছরে একের বেশি শস্যের চাষ হয় বলে চাষিদের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন ৩. ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে লেখো। [ পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন '১৭]
উত্তর : • ভারতীয় কৃষির সমস্যা : যদিও ভারত কয়েকটি ফসল উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষস্থানের অধিকারী এবং খাদ্য উৎপাদনে মোটামুটি স্বয়ম্ভর তবু এদেশে কৃষি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। (i) মাথাপিছু জমি কম এবং জোতের আয়তন ক্ষুদ্র : চাষিদের মাথা পিছু জমি উন্নত দেশগুলির তুলনায় খুবই কম। আবার জমিগুলি আয়তনে এতো ছোটো এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যে তাতে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার সম্ভব নয়। (ii) ভূমিসংস্কার : কয়েকটি রাজ্য বাদ দিলে এখনও পুরোপুরি জমিদারি প্রথা বিলোপ হয়নি। (iii) কৃষি মৌসুমি নির্ভর : এখানে ২/৩ ভাগ কৃষিজমি খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ু নির্ভর। ওই জমিগুলিতে বছরে একবার ফসল ফলে এবং তাও অনিশ্চিত। (iv) জলসেচ সমস্যা : মাত্র ১/৩ ভাগ জমি সেচের আওতাভুক্ত বলে বহুফসলি জমি কম। (v) আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার : উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষিজ যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত। সব ফসলে উন্নত বীজ ব্যবহার হয় না। সবুজ বিপ্লবের প্রভাব ভারতের সকল স্থানে পড়েনি, ফলে উৎপাদনশীলতা কম। (vi) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশিরভাগ কৃষিজমি খাদ্যফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। অধিক লাভজনক হর্টিকালচার (ফল, ফুল, শাকসবজি) চাষ এখানে কম।
• সমাধান : স্বাধীনতার পর থেকে কৃষির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। (i) উৎপাদনশীল বীজ : স্বাধীনতার পর থেকে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। (ii) জলসেচ : দ্রুতহারে জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে জমিকে বহুফসলি জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে। (iii) সার, কীটনাশক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি : সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলির ব্যবহার বাড়ালে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন বাড়বে তেমনি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে কম। (iv) কৃষকদের ঋণদান কৃষির উন্নতির জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণদান প্রয়োজন। এই কারণে ভারত সরকার কৃষিতে ঋণদানের জন্য অসংখ্য গ্রামীণ ব্যাংক ও কৃষিব্যাংক স্থাপন করেছে। প্রায় ১০ কোটির ওপর মানুষকে দেওয়া হয়েছে কিষান ক্রেডিট কার্ড। (v) সবুজ বিপ্লবের প্রসার : উত্তর-পশ্চিম ভারতে শুধু গম উৎপাদনে নয় সারাভারত জুড়ে সব ফসলেই সবুজ বিপ্লবের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। (vi) ১০০ দিনের প্রকল্প : এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে পরোক্ষভাবে কৃষির উন্নতি ঘটানো হচ্ছে ।
প্রশ্ন ৪ . মিলেট জাতীয় সস্য বলতে কি বোঝ ?
উত্তর : মিলেট : ভূমিকা— শুষ্ক ও অনুর্বর অঞ্চলের ফসল হল মিলেট। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হলেও স্বাদে নিম্নমানের বলে এর জনপ্রিয়তা কম। তবে আদিবাসী অঞ্চলের প্রধান খাদ্য হল মিলেট। মিলেট কী : জোয়ার, বাজরা, রাগি কোরা কোডন, কোটকি, হারাকা, রাজগিরা প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির ফসলকে একসাথে মিলেট বলে। এদের মধ্যে জোয়ার, বাজরা ও রাগি হল প্রধান। মিলেট উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ভারতে শুষ্ক পরিবেশে খরিফ ও রবিফসল—উভয় হিসেবেই মিলেট চাষ হয়। (ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ : (1) জলবায়ু : (i) উষ্ণতা : মোটা মুটি ২০-৩০° সে. উদ্বৃতায় মিলেট চাষ হয়। উয়তা ১৫° 1-এর নীচে নামলে উৎপাদন ভালো হয় না। (ii) বৃষ্টিপা বিভিন্ন মিলেট উৎপাদনে ২০-৭৫ সেমি বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। খুব বেশি বৃষ্টি এবং দীর্ঘ দিন অনাবৃষ্টি উভয়ই মিলেট চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। (2) মাটি : ভারী ও হালকা পলিমাটি, লোহিত মাটি, রেগুর, বেলেমাটি — প্রায় সব মাটিতেই মিলেট চাষ হয়ে থাকে। (3) ভূমি : সমভূমি, মালভূমি, পাহড়ের মৃদুঢালু জমিতে মিলেট চাষ করা হয়। (খ) অর্থনৈতিক পরিকাঠামো : ভালো সেচ ব্যবস্থা মিলেট-এর ফলন বাড়ায়। উন্নত বীজ, সার, ব্যবহারের কারণে মিলিটের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। কীটনাশকের রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন মিলেট উৎপাদন ২০১৩-২০১৪ রাজ্য উৎপাদন প্রধান জেলা জলগাঁও, আকোলা ১. মহারাষ্ট্র কর্ণাটক জোয়ার (ল.মে.টন) ১৩.০ বেলগাঁও, বেল্লারি | যোধপুর, বারমের মোট (ভারত) &8.0 ১. রাজস্থান ৩৮ বাজরা (ল.মে. রাগি (ল.মে. ২. উত্তরপ্রদেশ ১৬ আগ্রা, মথুরা মোট (ভারত) ১১.৮ ১. কর্ণাটক ১২.৯ টন) ২. তামিলনাড়ু ২.১ মোট (ভারত) ১৯.৩ কোলার, হাসান সালেম, কোয়েম্বাটোর Source: Ministry of Agriculture.
প্রশ্ন ৫ .ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয় কেন?
উত্তর : ভারতকে কৃষিভিত্তিক দেশ বলা হয়। কারণ— (১) দেশের প্রায় ৬৫% মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। (২) জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬.৬% কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত সহযোগী ক্রিয়াকলাপ থেকে আসে। (৩) কৃষিকাজ ভারতের অর্থনীতিকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। (৪) কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়।
প্রশ্ন ৬ .ভারতের কৃষিকাজে জলসেচ কেন করা হয়?
উত্তর : ভারতের কৃষিকাজের অনেকাংশেই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। তবুও কৃষিকাজে জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয়। কারণ- (১) অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের জন্য জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয়। (২) শীতকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম থাকায়, কৃষিকাজে জলসেচের প্রয়োগ শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয়। (৩) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতে প্রায় ৮০% বৃষ্টিপাত হলেও ভারতের সব জায়গায় সমান বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে যেখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম সেখানে জলসেচের প্রয়োজন হয়। (৪) উচ্চফলনশীল শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়, এই জলসেচের সাহায্য নেওয়া হয়।
প্রশ্ন | ৭ | ঝুম চাষের ফলে পরিবেশের কী ক্ষতি হয় ?
উত্তর : (i) ঝুম চাষের ফলে বনভূমি ধ্বংস হয়।
ii) বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
(iii) ভূমিক্ষয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।
(iv) ক্রমাগত বনভূমি পুড়িয়ে কৃষিকাজ করার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে পতিত জমিতে পরিণত হয়।
(v) বনভূমি ধ্বংসের সাথে সাথে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও হ্রাস পেতে থাকে।
প্রশ্ন ৯ .উত্তর দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয় কেন?
উত্তর : কফি উয়-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের বাগিচা ফসল। দক্ষিণ ভারতে কফি বাগিচাগুলি গড়ে ওঠার কারণগুলি * হল—(১) এই অঞ্চলে সারাবছরই উয় ও আর্দ্র জলবায়ু দেখা যায়, (২) এই অঞ্চলে উয়তা (গড়ে ২০০–৩০° সে.) ও বৃষ্টিপাত (গড়ে ১৫০-২৫০ সেমি) কফি চাষের পক্ষে অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। (৩) এই অঞ্চলের লৌহমিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি এবং (৪) অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালু জমিতে সহজেই কফি বাগিচা তৈরি করা যায়। এইসকল কারণেই দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণ কফি উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন ১০ .চা কত প্রকারের ও কী কী?
উত্তর : চা-এর প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি অনুসারে চা-কে প্রধানত ার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) কালো চা কালো চাপ্রস্তুত করার সময়, চা-এর পাতাগুলি গাছ থেকে তুলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পরে আবার যন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে কালো করা হয়।
(২) সবুজ চা চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি রোদে শুকিয়ে এইপ্রকার সবুজ চা তৈরি করা হয়। ভারতে সবুজ চায়ের প্রচলন কম।
(৩) ওলং চা : এক্ষেত্রে চা গাছের পাতা রোদে শুকিয়ে ও মিশিয়ে বাঁকিয়ে এই চা প্রস্তুত করা হয়।
(৪) ইস্টক চা : চা গাছের নিকৃষ্ট পাতা, চা পাতার ডাঁটি, গুঁড়ো চা, ভাতের মাড়, মশলা, মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে চাপ দিয়ে ছোটো ছোটো আয়তাকার খণ্ডে পরিণত করে এইপ্রকার চা প্রস্তুত করা হয়।
প্রশ্ন | ১১. কফির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর : কফি প্রধানত ৪ প্রকারের হয়। যথা— (১) আরবীয় কফি : এটি সর্বোৎকৃষ্ট কফি, এর আদি বাসভূমি হল আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন। একে ‘মোকা' কফিও বলে।
(২) রোবাস্টা কফি : নিকৃষ্ট মানের এই কফির আদি বাসভূমি হল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা। ভারতে এই কফির উৎপাদন বেশি হয়।
(৩) লাইবেরীয় কফি : এটি ইনস্ট্যান্ট কফি যা লাইবেরিয়ায় চাষ করা হয়। ভারতে এই কফি চাষ করা হয় না। এবং
(৪) ব্লু মাউন্টেন কফি : এই ধরনের কফি প্রধানত জামাইকার চাষ হয়। ভারতে এই কফি চাষ হয় না।
প্রশ্ন | ১২| ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
উত্তর : ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। বিভিন্ন প্রাকৃতি পরিবেশে এখানে নানারকম ফসল উৎপন্ন হয়। ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগগুলি হল—
(১) খাদ্যশস্য : ধান,গম, যব, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃ খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(২) অন্যান্য খাদ্য ফসল : বিভিন্ন রকমের ডাল, মশলা, আখ, য প্রভৃতিও খাদ্যফসলের মধ্যে পড়ে।
(৩) পানীয় ও ভেষজ শস্য : চা, কফি, তামাক, সিঙ্কোনা প্রভৃতি এই শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত।
(৪) তৈলবীজ : সরষে, তিসি, তিল, রেড়ি, সূর্যমুখী, চিনেবাদাম প্রভৃতি তৈলবীজ থেকে তেল উৎপন্ন হয়।
(৫) তন্তুজ শস্য : পাট, মেস্তা, শণ, কার্পাস থেকে আঁশ বা তন্তু পাওয়া যায় বলে এদের তত্ত্বজাতীয় শস্য বলে। মনে রাখতে হবে যে, বিভিন্ন ফসলের মধ্যে পাট, কার্পাস ও আখকে অর্থকরী ফসল চা, কফি, রবার, তামাক প্রভৃতি বাগিচা ভিত্তিক ফসলকে বাগিচা ফসল এবং সমস্ত অর্থকরী ও বাগিচা ফসলকে বাণিজ্যিক ফসল বলা হয়।
প্রশ্ন ১৩ | ঋতু অনুসারে ভারতে উৎপাদিত ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো ।
উত্তর : ঋতু অনুসারে ফসলের শ্রেণিবিভাগ :
(ক) খরিফ শস্য (Kharif Crops) : এককথায় খরিফ শস্যের অর্থ হল ‘বর্ষাকালীন ফসল'। বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপরনির্ভর করে যেসব ফসলের চাষ হয়, তাদেরকে খরিফ শস্য বলে। যেমন—আমন ধান, পাট, তুলো, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা ইত্যাদি।
(খ) রবি শস্য (Rabi Crops) : এককথায় রবিশস্য হল শীতকালীন ফসল'। প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ হয়, সেইসব ফসলকে রাব শস্য বলে। যেমন—গম, যব, আলু, বিভিন্ন প্রকার তৈলবীজ ও ডাল ইত্যাদি। (গ) জায়িদ শস্য (Zayid Crops ) : শীতের শেষে গ্রীষ্মকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয়, এবং বর্ষার আগে যেসব ফসল তোলা হয়, তাদের জায়িদ শস্য বলে। যেমন—আউশ ধান, বাদাম, পাট, শাকসবজি ইত্যাদি।
প্রশ্ন১৪ | দার্জিলিং চা চাষে উন্নত কেন ?
উত্তর : দার্জিলিং চা উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল ও তার সংলগ্ন তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ হয়। দার্জিলিং-এর চা স্বাদে-গন্ধে ও গুণমানে পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ। এখানে চা উৎপাদনের কারণগুলি হল-
(১) পার্বত্যময় ভূপ্রকৃতি : দার্জিলিং এর ভূপ্রকৃতি পার্বত্যময়। অসমতল ভূপ্রকৃতি, খাড়া ঢাল চা চাষের বিশেষ উপযোগী। দার্জিলিং এ অধিকাংশ চা বাগিচাগুলি ১০০০-২০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
(২) জলবায়ু : এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা ১০°-২০° সেঃ। বার্ষিক গড় বৃষ্টি ১৫০-২০০ সেমি। এই অঞ্চলে একটা ঘটে না। মাঝারি থেকে অধিক আর্দ্রতা, মৃদু কুয়াশা ও স্বপ্ন উন্নতা এখানে উন্নতমানের চা চাষে সহায়তা করেছে।
(৩) মৃত্তিকা : দার্জিলিং-এ মৃত্তিকা অম্লধর্মী পড়সল শ্রেণির। উপযোগী। এইমাটি লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ যা চাষের অত্যন্ত উপযোগী।
(৪) প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজদের মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ: ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এখানে চা চাষের উন্নতির জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজ বণিক সম্প্রদায় প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে। এ ছাড়া, (৫) উন্নত পরিকাঠামো, (৬) নিকটে কলকাতা বন্দর দিয়ে চা রপ্তানির সুবিধা—এই অঞ্চলে চা চাষের উন্নতিতে সহায়তা করেছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর.
প্রশ্ন ১ .ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে : লেখো।
উত্তর :- ভারতের কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য :
• (১)জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি (Subsistence Agriculture ) : ভারতের কৃষির অধিকাংশই কৃষক তার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহার করে। তাই এই কৃষিকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলা হয়।
(২) জনসংখ্যার চাপ (Pressure of Population) : ভারতের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। ফলে মানুষের খাদ্যের চাহিদাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এই চাহিদার অনুপাতে সঠিক জোগান দেওয়ার জন্য ভারতে কৃষিকাজের পরিমাণও বেড়ে চলেছে।
(৩) কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য (Predominance of animal force) : ভারতের অধিকাংশ দরিদ্র কৃষকই চাষের জন্য দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না-করে আদিম পদ্ধতিতে পশুশক্তির দ্বারাই চাষবাস করে থাকে। তাই চাষাবাদের সাথে ক্ষুদ্রাকারে পশুপালনও করা হয়ে থাকে।
(৪) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরতা (Dependence on Monsoon Rainfall) : ভারত মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। তাই ভারতের অধিকাংশ কৃষিকাজই প্রধানত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে থাকে। বেশি বৃষ্টি বা কম বৃষ্টি হলে বন্যা বা খরার জন্য চাষবাস ভালো হয় না। তাই পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টিপাত একান্তই প্রয়োজন।
(৫) ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোত (Small size of land Holding) : ভারতের কৃষিজমিগুলি পরিসরে ছোটো ছোটো হয়ে থাকে। এখানে 'ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন বা ভাগচাষির প্রাধান্য বেশি।
(৬) কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার (Un- controlled uses of pesticides and Chemical fertilizers): ভারতে কৃষিজ দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা এতই বেশি যে, সেই পরিমাণ খাদ্যের জোগান দেওয়ার জন্য চাষিরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানান কীটনাশক ও রাসায়নিক সার অনিয়ন্ত্রিতভাবে জমিতে প্রয়োগ করে।
(৭) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য (Predominance of Food Crops) : ভারতের কৃষিতে অন্যান্য শস্যের তুলনায় খাদ্যশস্যের প্রাধান্য বেশি। যেমন— ধান, গম, মিলটে, ইত্যাদি।
(৮) পশুখাদ্যের অভাব (Insignificant place to given fodder crops) : ভারতের কৃষির ক্ষেত্রে পশুখাদ্যের অভাব এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
(৯) বহু শস্যের উৎপাদন (Variety of food Crops) : ভারতের কৃষি ব্যবস্থায় বহু শস্যের উৎপাদন লক্ষ করা যায়।
প্রশ্ন ২ .ধান উৎপাদনের (Paddy Cultivation) অনুকূল পরিবেশ কী কী? অথবা, ধান চাষের উপযোগী জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকা সম্বন্ধে আলোচনা করো। অথবা, গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে ধানচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক অবস্থাগুলি আলোচনা করো। ★★
উত্তর : ধান উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশগুলি হল :
[ক প্রাকৃতিক পরিবেশ :
(১) জলবায়ু : ভারতের ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু ধান চাষের পক্ষে উপযুক্ত। (i) প্রচুর বৃষ্টিপাত : ধান চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ধান চাষের পক্ষে আদর্শ। ধান গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। কিন্তু ধান কাটার সময় বৃষ্টি হলে ধানের অত্যন্ত ক্ষতি হয়। এই সময় শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন। (ii) উষ্ণতা : ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত সুর্যের উত্তাপ (১৬০–৩০° সেলসিয়াস) প্রয়োজন। (iii) আর্দ্রতা : অধিক আর্দ্রতা (১৮%) ধান চাষের পক্ষে সহায়ক। ধান চাষ করা হয়।
(২) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জমে থাকা জল ধান গাছের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে বলে নদী অববাহিকা বা বদ্বীপ অঞ্চলের নীচু সমতলজমি (যাতে জল দাঁড়িয়ে থাকতে পারে) ধান চাষের পক্ষে একেবারে আদর্শ। এ ছাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে সমতল ভূমি তৈরি করেও ধান চাষ করা হয়।
(৩) মৃত্তিকা : নদী উপত্যকা, বদ্বীপ এবং উপকূল অঞ্চলের নিম্ন সমভূমির পলিময় উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি ধান চাষের পক্ষে আদর্শ। মাটিতে কাদার পরিমাণ কিছু বেশি থাকলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে, যা ধান গাছের গোড়ায় জল জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
[খ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ : জলসেচ দিতে হয়। (১) জলসেচ : প্রয়োজনীয় জলের অভাব ঘটলে ধানের জমিতে জলসেচ দিতে হয়।
(২) সার প্রয়োগ : উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে গোবর, কম্পোস্ট, ইউরিয়া, সুপার ফসফেট, পটাশ প্রভৃতি সারের প্রয়োজন হয়।
(৩) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ধানকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
(৪) আগাছা দমন : ধানের জমিতে আগাছা জন্মালে তা তুলে ফেলতে হয়।
(৫) সুলভ শ্রমিক : ধানখেতে লাঙল দেওয়া, বীজ ছড়ানো, রোপণ এবং ফসল কাটার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর পরিশ্রমী ও দক্ষ সুলভ শ্রমিক লাগে।
(৬) মূলধন ও আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে ধান উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষিযন্ত্রপাতি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ৩. ভারতে ধান উৎপাদনে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা চিত্রসহ আলোচনা করো। ★
উত্তর : ভারতে উত্তরের সমভূমি ও উপকূল সমভূমিতেই সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়। ভারতের ধান উৎপাদক রাজ্যসমূহ :
(১) পশ্চিমবঙ্গ : ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে (মোট উৎপাদনের ১৭%)। বর্ধমান জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয় বলে একে ‘পশ্চিমবঙ্গের ধানের ভাণ্ডার বলে। এ ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মুরশিদাবাদ, মালদা, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহার জেলার অধিকাংশ জায়গায় ধান উৎপন্ন হয়। (১৪.৯৬ মিলিয়ন টন, ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে)।
(২) উত্তরপ্রদেশ : ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এই রাজ্যের বারাণসী, গোরক্ষপুর, ফৈজাবাদ, কানপুর, এলাহাবাদ, সিতাপুর, খেরি প্রভৃতি জেলাতে ধান উৎপন্ন হয় (১৪.৪১ মিলিয়ন টন, ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে)।
(৩) পাঞ্জাব : ধান উৎপাদনে পাঞ্জাবের স্থান ভারতে তৃতীয়। এই রাজ্যের ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল—জলন্ধর, অমৃতসর, গুরুদাসপুর, পাতিয়ালা, ভাতিন্ডা, লুধিয়ানা, ফিরোজপুর ইত্যাদি। (১১.৩৭ মিলিয়ন টন, ২০১২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দে)।
ভারতের অন্যান্য ধান উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল :
(৪) অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী-কৃষ্ণা বদ্বীপ অঞ্চল, (৫) উত্তর প্রদেশের দক্ষিণাংশ, (৬) উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন অঞ্চল (৭) বিহারের উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল, এ ছাড় (৮) ঝাড়খণ্ড, (৯) সমগ্র অসম রাজ্য, (১০) তামিলনাড় (১১) কর্ণাটক, (১২) হরিয়ানা, (১৩) পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে কম বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে।
ধান উৎপাদন : বর্তমানে ধান উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে (চিনের পরে)। ২০১৩-২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০৪.৯২ মিলিয়ন টন তবে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন ভারতে বেশ কম, (২৩৭২ কিগ্রা/ হেক্টর)। হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে ভারতে পাঞ্জাব প্রথম।
জেনে রাখো (২) ভারতে হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন কম। ভারতে ধান চাষের সমস্যা : (১) ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে ধান চাষ বৃষ্টি নির্ভর বলে বার্ষিক উৎপাদনের কোনো স্থিরতা নেই। (৩) ধানের স্বল্পমূল্য কৃষকদের ধান চাষে নিরুৎসাহিত করছে। (৪) গমের মতো ধান চাষে সর্বত্র সবুজ বিপ্লবের প্রভাব তেমন পড়েনি। (৫) জলসেচ ব্যবস্থার অভাব, (৬) জমির বণ্টন সঠিক নয়। (৭) দুর্বল কৃষি পরিকাঠামো ও (৮) ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থার অভাব ভারতে ধান চাষে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। | • সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা : (১) মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনা আটকাতে জলসেচের প্রসার ঘটিয়ে স্থায়ীভাবে চাষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। (২) ICAR (Indian Council of Agriculture Research) এর উদ্যোগে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার। | উচ্চফলনশীল বীজ আবিষ্কার, কীটনাশক ও সারের ব্যবহারের মাধ্যমে ফলন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। (৩) মহাজন বা বণিকের মাধ্যমে কেনাবেচা না-করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া (৪) যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার প্রণয়ন করে এবং (৫) কৃষি পরিকাঠামোর উন্নতির ব্যবস্থা করে ধান চাষের সমস্যার সমাধান করবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪. গম চাষের (Wheat Cultivation) অনুকূল পরিবেশগুলি আলোচনা করো। ★★★
উত্তর : গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল : কি প্রাকৃতিক পরিবেশ :
(১) জলবায়ু : (ক) আদ্রর্তা : (i) পরিমাণ মতো আর্দ্রতার ওপর গম বীজের অঙ্কুরোদ্গমের সংখ্যা নির্ভর করে এই জন্য গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয়। কারণ যত বেশিসংখ্যক বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে, হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনও ততই বেশি হবে। (ii) গম চাষের দ্বিতীয় অবস্থায় (যখন গাছ থেকে শিষ বের হয়) উয় ও শুকনো জলবায়ুর প্রয়োজন, কারণ এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শীর্ষ পচে যেতে পারে বা শিষে পোকা লাগতে পারে। (iii) গম কেটে নেওয়ারকিছু দিন আগে অর্থাৎ গম চাষের তৃতীয় অবস্থায়, হালকা বৃষ্টিপাত হলে ভালো হয়, কারণ এই বৃষ্টিপাতের ফলে গমের শিষ পুষ্টিলাভ করে। (iv) গম উৎপাদনের চতুর্থ পর্যায়ে গম পাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সূর্য তাপের প্রয়োজন হয়।
(খ) উত্তাপ : গম চাষের প্রথম অবস্থায় (গম বীজের অঙ্কুরোদ্গম এবং গম চারার বৃদ্ধির সময়) ১৫° –১৬° সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় (গম পাকার সময়) ১৮০ – ২০ সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়োজন। অধিক উষ্ণতায় গমচাষের ক্ষতি হয়।
(গ) বৃষ্টিপাত : গম চাষের জন্য মাঝারি বৃষ্টিপাত (৫০–১০০ সেন্টিমিটার) প্রয়োজন হয়, এর বেশি বৃষ্টিপাতে গম চারার ক্ষতি হয়। ৫০ সেমির কম বৃষ্টি হলে জলসেচের মাধ্যমে চাষ করা হয়।
(ঘ) তুষারপাত : তুষারপাত গমচাষের ক্ষতি করে ফলে তুহিনমুক্ত প্রায় ১১০ দিন প্রয়োজন হয়।
(২) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে তা গমচাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয় বলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত প্রায় সমতল বা অল্প ঢালু জমি গমচাষের পক্ষে আদর্শ।
(৩) মৃত্তিকা : নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশযুক্ত উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি বা হালকা কাদা মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ। পলিমাটি ও কৃষ্ণ মৃত্তিকাতেও গম চাষ ভালো হয়।
[খ] অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : (১) জলসেচ বৃষ্টিপাতের অভাব হলে গম খেতে জলসেচ দিতে হয়। (২) সারপ্রয়োগ : গম চাষের ফলে জমির উর্বরতা দ্রুত কমে যায় বলে গমচাষের জমিতে বিশেষত নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশ জাতীয় রাসায়নিক সার দেওয়া প্রয়োজন। (৩) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের উপদ্রব হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। (৪) সুলভ শ্রমিক : ধান চাষের মতো গম চাষেও প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। অবশ্য যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে অনেক কম শ্রমিক লাগে। (৫) যথেষ্ট মূলধন বিনিয়োগ ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণে গম উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ৫ . ভারতে কোথায় কোথায় গম উৎপাদিত হয়? অথবা, গম উৎপাদনে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা আলোচনা করো।
★ উত্তর : উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদনের প্রাধান্য বেশি। ভারতে গম উৎপাদক অঞ্চল :
(১) উত্তরপ্রদেশ ভারতে গম উৎপাদনে শীর্ষস্থান অধিকার করে উত্তরপ্রদেশ। ভারতে উৎপাদিত মোট গমের প্রায় ৩৭% এই রাজ্যে উৎপন্ন হয়।
উৎপাদক অঞ্চল : সাহারানপুর, মিরাট, মোরাদাবাদ, খেরী, মুজফ্রনগর, প্রভৃতি জেলায় গম উৎপন্ন হয়। (২) পাঞ্জাব এই রাজ্য ভারতে গম উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ভারতে মোট উৎপাদিত গমের ২১ শতাংশ এখানে উৎপন্ন হয়। হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনে পাঞ্জাব ভারতে শীর্ষস্থান অধিকার করে (২৭১৫ কিগ্রা /হেক্টর)।
উৎপাদক অঞ্চল : লুধিয়ানা, পাতিয়ালা, ফিরোজপুর, গুরুদাসপুর, জলন্ধর, ভাতিন্ডা, অমৃতসর প্রভৃতি জেলায় গম উৎপন্ন হয়।
(৩) হরিয়ানা : ভারতে মোট উৎপাদিত গমের ১৫ শতাংশ উৎপন্ন করে, ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। নির্দেশিকা দে 新 উৎপাদক অঞ্চল : হিসার, আম্বালা, কার্নাল, কুরুক্ষেত্র, পানিপথ প্রভৃতি জেলায় গম উৎপাদিত হয়।
(৪) মধ্যপ্রদেশ : গম উৎপাদনে মধ্যপ্রদেশ চতুর্থ। উৎপাদক অঞ্চল : এখানকার নর্মদা উপত্যকা, আগর, বিদিশা, রাইসেন প্রভৃতি অঞ্চলে গম উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া, (৫) রাজস্থানের গঙ্গানগর, ভরতপুর, কোটা, (৬) বিহারের পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, তোতাপুর, সারণ, চম্পারণ, (৭) গুজরাটের মহেষাণা, রাজকোট, (৮) পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম, মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, (১) মহারাষ্ট্রের জলগাঁও অমরাবতী এবং (১০) উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল, দেরাদুন অঞ্চলে গম চাষ হয়।
প্রশ্ন ৬ .ভারতে চা বাগিচা (Tea Garden) গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করো বা বর্ণনা দাও। অথবা, চা চাষের জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো। ★★
উত্তর : ভারতে চা উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশগুলি হল : [ক] প্রাকৃতিক পরিবেশ :
(১) জলবায়ু : চা উপক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলের উচ্চভূমির ফসল।
(i) উত্তাপ : চা চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ২১°– ২৯° সেলসিয়াস হলেও, ১৬° সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চা চাষ করা যেতে পারে;
(ii) বৃষ্টিপাত : বছরে ২০০-২৫০ সেন্টিমিটার গড় বৃষ্টিপাত চা চাষের পক্ষে আদর্শ। তবে প্রতি মাসে নিয়মিত বৃষ্টিপাত চা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(iii) তুষারপাত : চা গাছ একভাবে ১০/২০ দিন তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও বেশি তুষারপাত চা গাছের ক্ষতি করে।
(২) ভূপ্রকৃতি : পাহাড়ের জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত ঢালু অংশ চা চাষের পক্ষে আদর্শ। তবে জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঈষৎ ঢালু সমভূমিতেও আজকাল চা বাগান করা হচ্ছে।
(৩) মৃত্তিকা : লৌহ মিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি চা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। তবে মাটিতে ফসফরাস ও পটাশের উপস্থিতি চাষের সুগন্ধ বাড়ায় (যেমন—দার্জিলিং-এর চা)। চা বাগিচা
(৪) ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যতাপ থেকে চা গাছকে রক্ষা করার জন্য চা বাগানে মাঝে মাঝে ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগাতে হয়।
[খ] অপ্রাকৃতিক পরিবেশ :
(১) সার প্রয়োগ : চা চাষের জমির উর্বরতা নষ্ট হয় বলে চা বাগানে পরিমিত মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়।
(২) সুলভ শ্রমিক : চা গাছের পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার, নিড়ানো, নিয়মিত গাছ ছাঁটাই, গাছ থেকে পাতা তোলা, সঞ্চয়, শুষ্ককরণ প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা তোলার জন্য সাধারণত নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়।
(৩) প্রচুর মূলধন : চা বাগানের জমি কেনা, চা গাছ লাগানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ৭. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে চা উৎপাদিত হয়? অথবা, ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও। ★
উত্তর : ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল : উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে চা চাষের প্রাধান্য বেশি—
(১) আসাম : ভারতের মোট চা উৎপাদনের ৫২ শতাংশ চা উৎপন্ন করে আসাম ভারতে প্রথম স্থান অধিকার করে।উৎপাদক অঞ্চল : শিবসাগর, দরং, ডিব্ৰুগড়, কাছাড় জেলা, কামরূপ লখিমপুর, নাগাঁও, সুরমা উপত্যকা, গোয়ালপাড়া প্রভৃতি অঞ্চলে চা উৎপন্ন হয়।
(২) পশ্চিমবঙ্গ : পশ্চিমবঙ্গ চা উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। (ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫.৮ শতাংশ।) দার্জিলিং এর চা স্বাদে-গন্ধে, গুণমানে সারাপৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ।উৎপাদক অঞ্চল : দার্জিলিং এর পার্বত্য অঞ্চল, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে চা উৎপন্ন হয়।
(৩) তামিলনাড়ু : ভারতের মোট চা-এর ১৪.৪ শতাংশ এখানে উৎপন্ন হয় বলে তামিলনাড়ু তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। উৎপাদক অঞ্চল : নীলগিরি, কোয়েম্বাটোর, তিরুনেলভেলি, মাদুরাই প্রভৃতি অঞ্চলে চা চাষ হয়। এ ছাড়া, (৪) কেরলের ত্রিসুর, পালাক্কাড়, ইদুক্কি, কোট্টায়াম, কুইলন, পালঘাট, (৫) কর্ণাটকের চিকমাগালুর, কোদাগু, হাসান, কুর্গ, (৬) হিমাচল প্রদেশের কাংড়া ও মান্ডি উপত্যকা, (৭) উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন, গাড়োয়াল, আলমোড়া, (৮) ঝাড়খণ্ড, (৯) বিহার ও (১০) রাঁচিতেও চা চাষ হয়।
(জান রাখো ভারতে চা চাষের সমস্যাগুলি হল : (১) প্রাচীন চা বাগান, (২) ভারতীয় চাষের স্বল্প উৎপাদনশীলতা, (৩) নতুন চা বাগানের অভাব, (৪) অন্যান্য পানীয়ের জনপ্রিয়তা, (৫) ভারতীয় চাষের বহুমুখীতার অভাব, (৬) জমির উর্বরতা হ্রাস ও ভূমিক্ষয়, এবং (৭) বৈদেশিক প্রতিযোগিতা | ইত্যাদি কারণে ভারতে চা চাষে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে।। ৩ চা চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ : (১) চা বাগানগুলি নতুন করে নির্মাণ করার ব্যবস্থা | করা হয়েছে। (২) ভারতীয় চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।আন্তর্জাতিক বাজার চা রপ্তানির বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। (৩) সমবায় কৃষিপদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে। (৪) সর্বোপরি নানান উন্নত বীজের ব্যবহার, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও শ্রমিক-মালিক অসন্তোষ মিটিয়ে ভারতে চা উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
প্রশ্ন ৮. কফি উৎপাদনের (Coffee Cultivation) অনুকূল পরিবেশ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : কফি চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (ক)
প্রাকৃতিক পরিবেশ : (১) জলবায়ু : উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। (১) কফি চাষের জন্য সারাবছর ধরে উচ্চ উত্তাপ (২০°-৩০° সে.) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত (১৫০-২৫০ সেমি.) প্রয়োজন। (২) কুয়াশা ও সামুদ্রিক আর্দ্রতা: কফি গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তেমনি তুষারপাতও ঝড়ো কফি গাছের ক্ষতি করে। (৩) মৃত্তিকা : লোহা, পটাশ ও নাইট্রোজেনযুক্ত উর্বর লাল দোআঁশ মৃত্তিকা কফি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। (৪) জমির প্রকৃতি : জলনিকাশের সুবিধাযুক্ত পাহাড়ের ঢালু জমি কফি চাষের পক্ষে আদর্শ। (৫) ছায়াপ্রদানকারী গাছ : সরাসরি সূর্যকিরণ কফি গাছের ক্ষতি করে বলে কফি খেতে কলা, ভুট্টা প্রভৃতি ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগানো হয়।
(খ) অপ্রাকৃতিক পরিবেশ : (১) জলসেচ : প্রয়োজনে কফি গাছে জলসেচ দিতে হয়। (২) সার প্রয়োগ : জমিতে সারের অভাব হলে সার প্রয়োগ করতে হয়। (৩) কীটনাশক প্রয়োগ : পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। (৪) সুলভ শ্রমিক : কফি খেত তৈরি, চারা লাগানো, রক্ষণাবেক্ষণ, | কফি ফল সংগ্রহ এবং গুঁড়ো কফি প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। (৫) মূলধন : কফি বাগান কেনা, কফি খেত তৈরি, চারা লাগানো, কফি গাছের রক্ষণাবেক্ষণ ও তৈরি কফি বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ৯. ভারতের কফি উৎপাদক অঞ্চলগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর : ভারতের কফি উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল :
(১) কর্ণাটক : ভারতে কফি উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে কর্ণাটক। ভারতের মোট কফি উৎপাদনের ৭১.১০% কফি এখানে উৎপন্ন হয়। উৎপাদক অঞ্চল : চিকমাগালুর, হাসান, কাদুর, মহীশূর, শিমোগাতে কফি উৎপন্ন হয়।
(২) কেরল কেরল (২০.৬ শতাংশ) হল ভারতের দ্বিতীয় প্রধান কফি উৎপাদক অঞ্চল।
উৎপাদক অঞ্চল : পালঘাট, কোট্টায়াম, আলেগ্নি, কুইলন, এনাকুলাম প্রভৃতি অঞ্চলে কফি চাষ হয়। ভারত কফি উৎপাদক অ পাকিস্তান মায়ানমার নির্দেশিকা কফি উৎপাদক 800 মহাসাগর
(৩) তামিলনাড়ু : এই রাজ্য কফি উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে (৫.৪ শতাংশ)। উৎপাদক অঞ্চল : নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল, মাদুরাই, কোয়েম্বাটুর, তিরুনেলভেলি, সালেম প্রভৃতি স্থানে কফি উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া (৪) অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু ভ্যালি, (৫) ওড়িশার কোরাপুট, কালাহান্ডি, (৬) মেঘালয়ের গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ি অঞ্চলে, (৭) অসমের কাছাড় ও (৮) মণিপুর, (৯) মিজোরাম, (১০) ত্রিপুরা, (১১) নাগাল্যান্ডেও কফি চাষ করা হয়।
জেনে রাখো ভারতে কফি চাষের সমস্যা ও সমাধান : (১) কীট পতঙ্গের আক্রমণ, (২) বৈদেশিক প্রতিযোগিতা, (৩) স্বল্প অভ্যন্তরীণ চাহিদা, (৪) তুলনামূলকভাবে ভারতীয় কফির বেশি মূল্য, (৫) গবেষণার অভাব ইত্যাদি কারণে | কফি চাষে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নানান গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে কফি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা। হচ্ছে।
প্রশ্ন | ১০| কার্পাস উৎপাদনের (Cotton Cultivation) অনুকূল অবস্থা কী কী? ★★ [মা.প. '১৮]
উত্তর : কার্পাস উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ : ক প্রাকৃতিক অবস্থা : (১) জলবায়ু : (i) উত্তাপ : কার্পাস চাষের জন্য মাঝারি উত্তাপ (২০° - ২৬° সে.) প্রয়োজন। কার্পাস চাষের প্রাথমিক অবস্থায় গাছে ফুল না ফোটা পর্যন্ত ২১° সেলসিয়াস উঘ্নতা থাকা প্রয়োজন। (ii) বৃষ্টিপাত : ৬০–১০০ সেমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত কার্পাস চাষের উপযোগী, তবে জলসেচের ব্যবস্থা থাকলে ৫০ সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাতেও উৎকৃষ্ট তুলা উৎপন্ন হতে পারে (যেমন—মিশরের নীলনদের উপত্যকা)। কার্পাস | প্রাথমিক অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ু এবং গুটি ফাটার সময় শুকনো বৃষ্টিহীন রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন। (111) তুহিন অবস্থা: কার্পাস চাষে জলবায়ুর গুরুত্ব বেশি। কার্পাস চাষ করতে হলে বছরে অন্তত ২০০ দিন তুহিনমুক্ত থাকা প্রয়োজন, তা না হলে | গাছ ও কার্পাস তুলোর গুটি দুই-ই নষ্ট হয়ে যায়। (iv) আর্দ্রতা : | আর্দ্র সমুদ্র বায়ু কার্পাস চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
(২) জমির প্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমলে কার্পাস গাছের ক্ষতি হয় বলে জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত একটু ঢালু ও তরঙ্গায়িত জমি কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ।
(৩) মৃত্তিকা : কার্পাস উৎপাদনের জন্য চুন ও লবণ মেশানো হালকা দোআঁশ মাটি এবং জল ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষ্ণমৃত্তিকা (যা কৃ কার্পাস মৃত্তিকা নামে পরিচিত) অথবা চারনোজেম মৃত্তিকা বিশেষ উপযোগী। এইজন্য দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে ভারতের অধিকাংশ কার্পাস উৎপন্ন হয়।
[খ] অপ্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা :
(১) জলসেচ : বৃষ্টির অভাব হলে কার্পাস খেতে জলসেচ দিতে হয়।
(২) সার : কার্পাস গাছ জমির উর্বরতা তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দেয়, তাই কার্পাস চাষের জমিতে পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক { সার দিতে হয়। এ ছাড়া শস্যাবর্তন প্রথার দ্বারাও জমির উর্বরা শক্তি বাড়ানো হয়।
(৩) কীটনাশক ওষুধ : কার্পাস গাছে রোগপোকার (বিশেষতবল-উইভিল পোকার) আক্রমণ খুব বেশি, এইজন্য কীটনাশক ভা ওষুধ ব্যবহার করা দরকার।
(৪) আগাছা দমন : কাপাস খেতে আগাছা জন্মালে, তা তুলে ফেলতে হবে।
(৫) সুলভ শ্রমিক : কার্পাস গাছ থেকে গুটি তোলা এবং গুটি। থেকে তুলা ছাড়ানোর জন্য প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিক প্রয়োজন।
(৬) মূলধন : আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, জলসেচ ব্যবস্থা, সার ও কীটনাশকের প্রয়োগের জন্য এবং উন্নত প্রথায় তুলা চাষের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ১১. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে কার্পাস উৎপন্ন হয়?
উত্তর : ভারতে তুলো বা কার্পাস চাষের আদর্শ জলবায়ু ও মৃত্তিকা বিদ্যমান থাকায়, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশ—ভারতের এই সাতটি রাজ্যে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্পাস উৎপন্ন হয়। ভারত তুলো উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। • ভারতে ৪টি প্রধান তুলা উৎপাদক অঞ্চল আছে। ভারতের মোট কার্পাস জমির প্রায় ৮৫% এবং মোট কার্পাস উৎপাদনের প্রায় ৮০% এই চারটি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়, যেমন—
(১) দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা লাভা অঞ্চল : দাক্ষিণাত্যের বিশাল কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলটিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন- (ক) শোলাপুর, নাগপুর, ওয়ার্ধা, নাসিক প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে মহারাষ্ট্র মালভূমির পূর্বাংশ এবং (খ) উজ্জয়িনী, মালব প্রভৃতি অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ।। দাক্ষিণাত্যের কয় মৃত্তিকা অঞ্চল হল ভারতের অন্যতম প্রধান তুলো উৎপাদক অঞ্চল।
(২) গুজরাট সমভূমি অঞ্চল : সুরাট, ব্রোচ, ভদোদরা প্রভৃতি অঞ্চল o ধারওয়ার, বেলারি নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত।
(৩) উত্তর কর্ণাটক অঞ্চল : হুবলি, বেলগাঁও, ধারওয়ার, বেলারি প্রভৃতি স্থান নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত হয়েছে।
(৪) সিন্ধু সমভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ : (ক) পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, ফিরোজপুর, জলন্ধর প্রভৃতি অঞ্চল এবং (খ) হরিয়ানার রোটক, আম্বালা, হিসার প্রভৃতি অঞ্চল। পরিমিত জলসেচ এবং কার্পাস উৎপাদনের আদর্শ জলবায়ুর জন্য এই অঞ্চলে হেক্টরপ্রতি কার্পাস উৎপাদন সারাভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম)। ভাক্রা-নাঙ্গাল বাঁধের কল্যাণে বর্তমানে এই অঞ্চলে দীর্ঘ আঁশযুক্ত উৎকৃষ্ট শ্রেণির কার্পাস তুলা উৎপন্ন হচ্ছে। উপরোক্ত চারটি প্রধান অঞ্চল ছাড়াও
(৫) তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই, কোয়েম্বাটোর, তিরুনেলভেলি, তিরুচিরাপল্লী প্রভৃতি অঞ্চল,
(৬) অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর, গুন্টুর, কুর্নুল প্রভৃতি অঞ্চল এবং (৭) রাজস্থানের গঙ্গানগরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্পাস উৎপন্ন হয়।
জেনে রাখো ভারতে কার্পাস চাষের সমস্যাগুলি হল : (১) ভারতে উৎকৃষ্ট শ্রেণির তুলোর অভাব, (২) হেক্টরপ্রতি স্বল্প উৎপাদন, (৩) রোগপোকার উপদ্রব বৃদ্ধি, (৪) তুলো | চাষে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উন্নত কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োগের | প্রভাব, (৫) উপযুক্ত বিপণন ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি নানা কারণে কার্পাস চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
● কার্পাস চাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ : (১) বিদেশ থেকে উন্নত বীজ এনে এবং দেশের গবেষণাগারগুলিতে উন্নত বীজ তৈরি করে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর চাষ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। (২) উন্নতমানের তুলো উৎপাদন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। হয়েছে। (৩) উন্নত যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক ও জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। (৪) তুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করে মূল্য হ্রাস করে তুলোর বাজার বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশ্ন | ১২| ভারতে ইক্ষু উৎপাদনের (Sugarcane Cultivation) অনুকূল পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো। [মা.প. ১৭]
উত্তর : আখ চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ :
(ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ :
(১) জলবায়ু : আখ আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুর ফসল, যা প্রধানত বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে চাষ করা হয়। ২০°- १ সে. উত্তাপ এবং বার্ষিক ১০০-১৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আখ চাষের পক্ষে ভালো,
(২) কুয়াশা এবং তুষারপাত : কুয়াশা ও তুষারপাত আখ চাষের ক্ষতি করে, সেইজন্য আখ চাষের জলবায়ু তুহিনমুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
(৩) সমুদ্র বায়ু : আখ গাছকে সতেজ করতে সমুদ্র বায়ু সহায়তা করে বলে সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে আখ চাষ ভালো হয়।
(৪) জমির প্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ানো আখের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই জলনিকাশির সুবিধাযুক্ত নীচু সমভূমি আখ চাষের উপযোগী।
(৫) মৃত্তিকা : চুন ও লবণযুক্ত উর্বর দোআঁশ মাটি আখ চাষের বিশেষ উপযোগী।
(খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ : (১) সুলভ শ্রমিক : চারা বোনা থেকে শুরু করে মাড়াই-কলে আখ পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত আখ চাষের বিভিন্ন স্তরে প্রচুর সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন। (২) উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : আখের রস যাতে শুকিয়ে না যায় তাই খেত থেকে আখ চিনিকলে দ্রুত নিয়ে আসার জন্য উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়াও জমিতে পরিমিত মাত্রায় (৩) রাসায়নিক সার ও (৪) কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ এবং (৬) মূলধন ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে আখ চাষ ভালো হয়।
প্রশ্ন | ১৩ | ভারতের কোথায় কোথায় আখ উৎপাদিত হয়?
উত্তর : আখ উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে (ব্রাজিলের পর)।
ভারতের আখ উৎপাদক অঞ্চল : (১) উত্তরপ্রদেশ আখ উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে ভারতে মোট আখ উৎপাদনের ৩৮.৬% আখ এখানে উৎপন্ন হয়। উৎপাদক অঞ্চল : সাহারানপুর, শাহজানপুর, মেরুট, মোরাদাবাদ, গাজিয়াবাদ, বেরিলী ইত্যাদি।
(২) মহারাষ্ট্র আখ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে (২২%)। উৎপাদক অঞ্চল : আহমেদনগর, শোলাপুর, সাতারা, পুণে প্রভৃতি অঞ্চলে আখ উৎপন্ন হয়।
(৩) কৰ্ণাটক আখ উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে (১০.৭%)। উৎপাদক অঞ্চল : বেলগাঁও, মহীশূর, বিজাপুর প্রভৃতি অঞ্চলে আখ উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও
(৪) বিহার-এর সারণ, চম্পারণ, মজফ্ফরপুর, দ্বারভাঙ্গা অঞ্চলে। (৫) পাঞ্জাবের জলন্ধর ও অমৃতসর। (৬) পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুরশিদাবাদ, বর্ধমান, বীরভূম। (৭) তামিলনাড়ুর মাদুরাই, কোয়েম্বাটুরে এবং (৮) অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী ও কৃষ্ণার বদ্বীপ অঞ্চলে আখ চাষ হয়।
.হেক্টর প্রতি আখ উৎপাদনে ভারতে তামিলনাড়ু প্রথম, মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় এবং উত্তরপ্রদেশ তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ভারতে আখ চাষে নিযুক্ত জমির প্রায় ৭২% উত্তর ভারতে এবং ২৮% দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত।
জেনে রাখো
ভারতে আখ চাষের সমস্যা ও সমাধান : সমস্যা (১) হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম, (২) আখে শর্করার পরিমাণ কম, (৩) অনেকক্ষেত্রে আখের রস সুরা উৎপাদনের | জন্য ব্যবহৃত হয়। | ব্যবস্থা : (১) ফলন বাড়ানোর জন্য সার ও জলসেচের প্রয়োগ | ঘটানো হচ্ছে, (২) ফলন বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রজাতির চারাগাছ (রেটুন) বসানো হচ্ছে।
প্রশ্ন ১৪. 'সবুজ বিপ্লব' Green Revolution) বলতে কী বোঝ?
উত্তর : 'সবুজ বিপ্লব' বা গ্রিন রেভোলিউশন (Green Revolution) বলতে উচ্চফলনশীল বীজ এবং অন্যান্য কৃষি পরিকাঠামোর সাহায্যে ফসল উৎপাদনে অভূতপূর্ব উন্নতিকে। বোঝায়। এই সবুজ বিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকের শেষে ড. নরম্যান আরনেস্ট বোরলগ (Dr. Norman Earrest Borlaug) -এর উদ্যোগে। Green Revolution শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন মার্কিন প্রশাসনের অন্যতম আধিকারিক উইলিয়াম এস গন্জ (William S. Gand)।
• সবুজ বিপ্লবের উপাদানসমূহ : প্রধানত ১২টি উপাদানের মাধ্যমে বা বলা যায় সরকারীভাবে গৃহীত এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে। এই উপাদানগুলি হল— (১) উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, (২) জলসেচ, (৩) রাসায়নিক সার প্রয়োগ, (৪) কীট ও পতঙ্গনাশক ওষুধ প্রয়োগ, (৫) প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন (৬) জোতের সংহতিসাধন, (৭) ভূমিসংস্কার, (৮) কৃষিঋণ, (৯) গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, (১০) গ্রামীণ সড়ক ও বাজারের উন্নতিসাধন, (১১) কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও (১২) কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।
এইসব পরিকল্পনার সুফল হিসেবে বিশেষ করে উত্তর পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের গম উৎপাদনে এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে চাল উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যেখানে মাত্র ২০৬ লক্ষ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টন গম উৎপন্ন হয়েছিল সেখানে ১৯৭০–৭১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের চাল ও গম উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়ে যথাক্রমে ৪২৩ লক্ষ টন ও ২৩৯ লক্ষ টনে পরিণত হয়। তবে বলা যায় যে, এই সবুজ বিপ্লবের সবচেয়ে বেশি সুফল ভোগ করেছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য। তবে, এই সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে।
জেনে রাখো
ভারতের কৃষির উল্লেখযোগ্য বিপ্লব ( Important Revolutions ) :
(১) সবুজ বিপ্লব (Green Revolution): ১৯৬১-৬৫ খ্রিস্টাব্দে | তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটি গৃহীত হয়। খাদ্যশস্যের (Green Revolution) উৎপাদন বৃদ্ধিই এর একমাত্র লক্ষ্য।
(২) চিরসবুজ বিপ্লব (Evergreen Revolution) : ড. এম. [ এস, স্বামীনাথন, ভারতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এই বিপ্লবের ডাক দেন।
(৩) শ্বেত বিপ্লব (White Revolution) : ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে | জাতীয় দুধ উন্নয়ন পর্ষদ' (National Dairy Development | Board) দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য Operation Flood' নামক এক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই বিপ্লবের স্থপতি ছিলেন ড. ভার্গিস কুরিয়েন, যিনি শ্বেত বিপ্লবের জনক নামে পরিচিত। ভারতে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রকল্প গৃহীত হয়।
(৪) হলুদ বা পীত বিপ্লব (Yellow Revolution) : ১৯৮০ | -এর দশকে তৈলবীজ উৎপাদন ও ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধি | করার জন্য, ষষ্ঠ পঙ্গুবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রকল্প গৃহীত হয়। এই বিপ্লবের স্থপতি ছিলেন শ্যাম পিত্রোদার।
(৫) নীল বিপ্লব (Blue Revolution) : নীলবিপ্লব বলতে | বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষকে বোঝায়, ড. অরুপ কৃষাণকে | ভারতে 'নীল বিপ্লবের জনক' বলে।
(৬) গোলাপি বিপ্লব (Pink Revolution) : এটি চিংড়ি | উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গৃহীত পরিকল্পনা।
(৭) লাল বিপ্লব (Red Revolution) : টমেটো ও মাংস | উৎপাদন বৃদ্ধি লাল বিপ্লব নামে পরিচিত।
(৮) গোল বিপ্লব (Round Revolution) : আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিকে গোল বিপ্লব বলা হয়।
জেনে রাখো
ভারতের বিভিন্ন প্রকার কৃষিপদ্ধতি জেনে রাখো (Different types of cultivation in India): 1. Floriculture : বাণিজ্য নির্ভর ফুলের চাষ। 2. Horticulture : আধুনিক পদ্ধতিতে ও বৃহদায়তনে ফুল, ফল ও সবজির চাষ। 3. Pomum Culture : সারাবছর ফোটে এমন ফুলের চাষ। 4. Olericulture : শাকসবজির চাষ। 5. Viticulture : আঙুরের চাষ। 6. Market Gardening : শ্রম ও মূলধন নির্ভর ফুল, ফল, শাকসবজির বৃহদায়তনে চাষ। 7. Mixed Farming : একইসঙ্গে শস্য উৎপাদন ও পশুপালন।8. Dairy Farming : দুধ ও দুধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদনের জন্য পশুপালন। 9. Seri culture : ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ । | 10. Plantation Farming : বাণিজ্য নির্ভর কোনো একটি বিশেষ শস্য আন্তর্জাতিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে চাষ। 11. Aquaculture : জলাশয়ের প্রাণী (স্বাদুজলের মাছ, মুক্তোর চাষ) উৎপাদন ব্যবস্থা। 12. Shifting Cultivation : অনুন্নত, অস্থায়ী, প্রাচীন ধরনের 'Slash and Burn' পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো এক স্থানে কিছু দিন চাষ করার পর সেইস্থান ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে চাষ করা হয়।
No comments:
Post a Comment