দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও উপনিবেশ সমুহ (ষষ্ঠ অধ্যায়) – দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন 2023 || HS Class 12 History ||
১. তাম্রলিপ্ত সরকার কোথায় , কার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয় ? / সর্বাধিনায়ক কে ?
উত্তরঃ মেদিনীপুরের তমলুকে সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে ।
২. ক্যাবিনেট মিশন / মন্ত্রী মিশনের সদস্যদের নাম কী ?
উত্তরঃ স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস , পেথিক লরেন্স , এ . ভি . আলেকজান্ডার ।
৩. জাতিসংঘের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ।
৪. ওয়াভেল পরিকল্পনা বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ১৪ জুন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের কাছে তৎকালীন বড়োলাট ওয়াভেল একটি প্রস্তাব পেশ করেন । এটিই ওয়াভেল পরিকল্পনা ।
৫. হরিপুরা কংগ্রেসে কে কংগ্রেসের সভাপতি হন ?
উত্তরঃ ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষচন্দ্র বসু ।
৬. ক্রিপস প্রস্তাব বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বাধীন একটি কমিশন এদেশে আসে । স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব সংবলিত যে একগুচ্ছ প্রস্তাব কমিশন পেশ করে সেটাই ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত।
৭. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ মাউন্টব্যাটেনের উপদেষ্টা লর্ড ইসমে কর্তৃক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরিত ভারত ভাগ পরিকল্পনার ভিত্তিতে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হয় । এটাকেই বলে মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ।
৮. কাদের মধ্যে হয়েছিল রোম – বার্লিন – টোকিও চুক্তি ?
উত্তরঃ জাপান – ইতালি – জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সালে রোম – বার্লিন – টোকিও চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।
৯. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের বড়োেলাট কে ছিলেন ?
উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ভারতের বড়োেলাট ছিলেন লর্ড লিনলিথগো ।
১০. ভিয়েতমিন বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ ১৯৪১ সালে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে হো – চি – মিন গড়ে তোলেন ভিয়েতমিন ।
১১. আভাস্তি কী ?
উত্তরঃ একটি সমাজতান্ত্রিক পত্রিকার নাম ।
১২. ফুয়েরার এবং ইল – দু – চে কাকে বলা হয় ?
উত্তরঃ যথাক্রমে হিটলার ও মুসোলিনি ।
১৩. ভারত ছাড়ো প্রস্তাব কবে অনুমোদিত হয় ?
উত্তরঃ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট ।
১৪. ডাচ – ইন্দোনেশীয় চুক্তিতে ‘ লিঙ্গজ্যোতি ’ কারা মধ্যস্থতা করে ?
উত্তরঃ ১৯৪৬ সালে ডাচ – ইন্দোনেশীয় চুক্তিতে ব্রিটিশরা মধ্যস্থতা করে ।
১৫. ভারতে কোথায় আজাদ হিন্দ বাহিনী পতাকা উত্তোলন করে ?
উত্তরঃ পূর্ব ভারতে কোহিমায় ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আজাদ হিন্দ বাহিনী ( ১৯৪৫ ) ।
১৬. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তাৎপর্য এককথায় লেখো ।
উত্তরঃ স্বতঃস্ফূর্ত এই গণ – আন্দোলনে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ভিত প্রতিষ্ঠিত হয় ও কংগ্রেস হৃত মর্যাদা ফিরে পায় ।
১. ‘ রশিদ আলি দিবস ‘ পালিত হয়– (ক) ২ জানুয়ারি (খ) ১২ ফ্রেব্রুয়ারি (গ) ১৬ মার্চ (ঘ) ২২ মে ।
উত্তরঃ (খ) ১২ ফ্রেব্রুয়ারি
২. ক্লিপস মিশন ভারতে আসে— (ক) ১৯৪২ (খ) ১৯৪৫ (গ) ১৯৪৬ (ঘ) ১৯৪৭ খ্রিঃ ।
উত্তরঃ (ক) ১৯৪২
৩. রোম – বার্লিন – টোকিও অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়— (ক) ১৯৩৫ (খ) ১৯৩৬ (গ) ১৯৩৯ (ঘ) ১৯৩৭ খ্রিঃ ।
উত্তরঃ (ঘ) ১৯৩৭ খ্রিঃ ।
৪. আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন – (ক) রাসবিহারী বসু (খ) সুভাষচন্দ্র বসু (গ) জওহরলাল নেহরু (ঘ) কেউই নন ।
উত্তরঃ (ক) রাসবিহারী বসু
৫. ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের পার্ল হারবারের ঘটনার ফলে— ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল । (ক) ইংল্যান্ড (খ) ফ্রান্স (গ) রাশিয়া (ঘ) জাপান ।
উত্তরঃ (ঘ) জাপান ।
৬. স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন— (ক) ম্যান্ডেলা (খ) ড . সুকর্ণ (গ) সুহার্তো (ঘ) হাব্বিবি ।
উত্তরঃ (খ) ড . সুকর্ণ
৭. ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে পার্ল হারবারের ঘটনার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল— (ক) রাশিয়া (খ) চিন (গ) ফ্রান্স (ঘ) জাপানের ।
উত্তরঃ (ঘ) জাপানের ।
৮. তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সর্বাধিনায়ক ছিলেন— (ক) অজয় মুখোপাধ্যায় (খ) মাতঙ্গিনি হাজরা (গ) চৈতু পাণ্ডে (ঘ) সতীশচন্দ্ৰ সামন্ত ।
উত্তরঃ (ঘ) সতীশচন্দ্ৰ সামন্ত ।
৯. ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় ছিলেন— (ক) মাউন্টব্যাটেন (খ) এটলি (গ) ক্যানিং (ঘ) হেস্টিংস ।
উত্তরঃ (ক) মাউন্টব্যাটেন
১০. আজাদ হিন্দ বাহিনী সর্বপ্রথম ভারতের যে শহরটি দখল করে সেটি হলো (ক) কোহিমা (খ) নাগপুর (গ) গৌহাটি (ঘ) দিশপুর ।
উত্তরঃ (ক) কোহিমা
১১. গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে— (ক) কলকাতায় (খ) দিল্লিতে (গ) বোম্বাইয়ে (ঘ) মাদ্রাজে ৷
উত্তরঃ (খ) দিল্লিতে
১২. ভারতের ‘ লৌহমানব ‘ হিসেবে পরিচিত— (ক) মহাত্মা গান্ধি (খ) আবুল কালাম আজাদ (গ) বি . ভি . প্যাটেল (ঘ) সুভাষচন্দ্র বসু ।
উত্তরঃ (গ) বি . ভি . প্যাটেল
১৩. জাপান কত খ্রিস্টাব্দে পার্ল হারবার আক্রমণ করে ? (ক) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে (গ) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ।
উত্তরঃ (ক) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে
১৪. সুভাষচন্দ্র বসু ফ্রি – ইন্ডিয়া সেন্টার গঠন করেন— (ক) জার্মানিতে (খ) জাপানে (গ) ভারতে (ঘ) আন্দামানে ।
উত্তরঃ (ক) জার্মানিতে
১৫. মন্ত্রী মিশন ভারতে আসে – (ক) ১৯৪২ . (খ) ১৯৪৪ খ্রি .(গ) ১৯৪৫ (ঘ) ১৯৪৬ খ্রি .।
উত্তরঃ (ঘ) ১৯৪৬ খ্রি .।
১৬. গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে— (ক) কলকাতায় (খ) দিল্লিতে (গ) বোম্বাইয়ে (ঘ) ইন্দোরে ।
উত্তরঃ (খ) দিল্লিতে
১. ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি আলোচনা করো । ক্রিপস এই মিশনের ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ পটভূমি : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ব – রাজনীতিতে জটিলতা বাড়ে । জাপান অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দিলে যুদ্ধ পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে । এমতাবস্থায় ভারতে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয় । পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার দাবি নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য , আইনজ্ঞ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে একটি কমিশন ভারতে আসে , এটাই ‘ ক্রিপস মিশন ‘ নামে পরিচিত ।
সূচনা : ১৯৪২ – এর ২৯ মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে ক্রিপস ভারতে আসেন । ভারতের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আলোচনার পর ক্রিপস ভারতীয়দের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন দীর্ঘমেয়াদি সুযোগসুবিধা সমন্বিত একটি খসড়া পেশ করেন । এটাই ‘ ক্রিপস প্রস্তাব ‘ নামে পরিচিত ।
ক্লিপস মিশনের প্রস্তাবসমূহ : প্রস্তাবগুলি ছিল—
- 1. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিকে ভারতীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়োগের কথা বলা হয় ।
- 2. প্রাদেশিক আইনসভার নিম্নকক্ষ এবং দেশীয় রাজ্যের সদস্যরা দেশীয় রাজা কর্তৃক নির্বাচিত হবেন ।
- 3. বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য ভারতীয়দের নিয়ে একটি সংবিধানসভা গঠিত হবে ।
- 4. ভারতকে কানাডার মতো ডোমিনিয়ন স্টেট্স – এর মর্যাদা দেওয়া হবে ।
- 5. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য পৃথক সংবিধান প্রবর্তন করা হবে ।
- 6. সংবিধান অপছন্দ হলে সেই প্রদেশ ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব সংবিধান তৈরি করতে পারবে ।
- 7. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতকে নিরাপত্তা দেবে ইংরেজ সরকার ।
- 8. সংবিধান রচনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার বহন করবে ।
প্রতিক্রিয়া : ক্রিপস প্রস্তাব ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মনঃপুত হয়নি । দেশভাগের সম্ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়ায় কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে । কারণ :
- 1. এতে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়নি ।
- 2. প্রদেশগুলির বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার অর্থ পরোক্ষে জিন্নার দাবি মেনে নেওয়া ।
- 3. মনোনীত সদস্যরা সংবিধান সভায় আসবেন — এই প্রস্তাব কংগ্রেসের পছন্দ হয়নি ।
- 4. ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়দের কোনো অধিকার ছিল না ।
- 5. প্রস্তাবে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের কোনো কথা বলা হয়নি ।
ব্যর্থতার কারণ :
বিভিন্ন কারণে কংগ্রেস , মুসলিম লিগ , হিন্দু মহাসভা প্রভৃতি দল ক্রিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ।
- 1. অখণ্ড ভারতকে খণ্ডিত করার প্রস্তাব থাকায় হিন্দু মহাসভা আপত্তি জানায় ।
- 2. প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দানের কথা বলা হয়নি ।
- 3. মুসলিম লিগের পৃথক রাষ্ট্রের দাবির বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল না ।
- 4. ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হয়নি ।
- 5. বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির দাবিকে উসকে দেওয়া হয়েছিল ।
- 6. দেশীয় রাজ্যগুলিতে জনমত উপেক্ষা করে রাজন্যবর্গের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
২. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী ? এই পরিকল্পনার ফল কী হয়েছিল ? এই পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কী মনোভাব ছিল ?
উত্তরঃ পটভূমি : হিন্দু – মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং কংগ্রেস ও লিগের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ভারতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি লর্ড ওয়াভেলের স্থলে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি ঘোষণা করেন , ১৯৪৮ – এর জুন মাসের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ভারত ত্যাগ করবে ।
মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব / পরিকল্পনা : ১৯৪৭ সালের ৩ জুন লর্ড মাউন্টব্যাটেন এদেশে আসেন । সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে কংগ্রেসকে তিনি দেশভাগের নীতিতে সায় দিতে বলেন । এর আগে ১৯৪৭ – এর ২২ মার্চ দাঙ্গাবিধ্বস্ত ভারতে এসে মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ১৩৩ টি বৈঠক করেন । তিনি বুঝতে পারেন যে ভারত বিভাগ ছাড়া সমস্যার সমাধান অসম্ভব । ৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ভি পি মেনন – এর সহযোগিতায় ভারত বিভাগের খসড়া তৈরি করেন তিনি । ওইদিনই এক সাংবাদিক সম্মেলনে মাউন্টব্যাটেন জানান , ভারত ও পাকিস্তান দু’টি পৃথক রাষ্ট্র হবে । ১৯৪৭ – এর ১৫ আগস্টের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন । এই ঘোষণাপত্রটি ‘ মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব ’ নামে বিখ্যাত ।
মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব : প্রস্তাবে বলা হয়—
- 1. বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ করার সময় কোন কোন অঞ্চল ডোমিনিয়নভুক্ত হবে তা ঠিক করবে সিরিল র্যাডক্লিফের নেতৃত্বাধীন ‘ বর্ডার কমিশন ‘ ।
- 2. দেশীয় রাজ্যগুলি সার্বভৌমত্ব পাবে , প্রয়োজনে যেকোনো সময় ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে ।
- 3.কোন ডোমিনিয়নে আসাম , শ্রীহট্ট এবং উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হবে তা গণভোটে স্থির করা হবে ।
- 4. সংখ্যালঘু প্রধান সিন্ধু , ব্রিটিশ বেলুচিস্তান , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত , পশ্চিম পাঞ্জাব এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তানের জন্ম হবে ।
- 5 পাকিস্তান ও ভারতবর্ষ নামে দু’টি স্বাধীন ডোমিনিয়ন গড়ে উঠবে ।
- 6. প্রত্যেক ডোমিনিয়নের গণপরিষদ নিজস্ব সংবিধান তৈরি করতে পারবে । মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল । এগুলি হলো—
আজাদের মত : মৌলানা আবুল কালাম আজাদ দেশভাগের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন , “ দেশভাগ হলো এক দৈব দুর্বিপাক । ” তাঁর মতে , ভারতভাগ হলো কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরাজয়ের নিদর্শন ।
প্যাটেল ও রাজেন্দ্র প্রসাদের অভিমত : বল্লভভাই প্যাটেল মনে করেন ভারত ভাগ কংগ্রেসের পরাজয় বা নতি স্বীকার নয় , তৎকালীন পরিস্থিতিতে দেশভাগই ছিল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ । ড : রাজেন্দ্র প্রসাদও মনে করেন , গৃহযুদ্ধের চেয়ে দেশভাগ ভালো । আধুনিক ঐতিহাসিকদের অনেকেই ভারত ভাগ প্রশ্নে কংগ্রেসের অবস্থানকে ‘ বাস্তবসম্মত ’ মনে করেন ।
৩. ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন ব্যর্থ হলো ? এই আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো ।
অথবা , আগস্ট আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো । এর গুরুত্ব কি ছিল ?
উত্তরঃ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ : বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল । যথা—
- 1. উপযুক্ত নেতৃত্বের অনুপস্থিতি : ভারত ছাড়ো আন্দোলন গান্ধিজির একক নেতৃত্বের উপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার পরই গান্ধিজি সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছিল । গান্ধিজির অবর্তমানে আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব সেসময় দেশে ছিল না ।
- 2. তীব্র দমন নীতি : এই আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার তীব্র দমননীতি অনুসরণ করেছিল । দৈহিক নির্যাতন , গ্রেফতার , ঘর পুড়িয়ে দেওয়া , গুলি চালানো— কোনো কিছুই বাদ দেওয়া হয়নি । :
- 3. অন্যান্য দলের বিরোধিতা : কমিউনিস্ট দল ভারত ছাড়ো আন্দোলন মেনে নেয়নি । আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা ব্রিটিশকে মদত দেয় । মুসলিম লিগ – সহ অন্য দলগুলিও কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি।
- 4. অসময়ে সূচনা : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন এই আন্দোলন শুরু করার পক্ষপাতী ছিলেন । আর গান্ধিজি আন্দোলনের ডাক দেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে । সেসময় ইংল্যান্ড যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব : যেসব কারণে আগস্ট আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ তা হলো :
- 1. স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্ব : ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় । ব্রিটিশ শাসনকে যে কোনোভাবে দেশ থেকে বিতাড়িত করার সংকল্প এই আন্দোলনে স্পষ্ট হয় ।
- 2. জাতীয় বিপ্লব : ৪২ – এর আন্দোলন প্রসঙ্গে নেহরু বলেছেন , “ নেতা নেই , সংগঠন নেই , উদ্যোগ নেই অথচ একটা অসহায় জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর কোনো উপায় না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠল— এ দৃশ্য বিস্ময়ের । ”
- 3. ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুঘণ্টা : ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই ছিল গণবিদ্রোহ । ঐতিহাসিকদের মতে , এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান খুব বেশি দূরে নেই । বলা হয় , এই আন্দোলন ব্রিটিশের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল ।
- 4. জাতীয় ঐক্যবোধ : এই আন্দোলনের ফলে অভূতপূর্ব গণজাগরণ ও জাতীয় ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে । এর পরিণতিতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত নড়ে গিয়েছিল । কার্যত আন্দোলনের চাপেই ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয় ।
No comments:
Post a Comment