Class 7th Geography Chapter -11 Parte-1 Questions And Answers | ইউরোপ মহাদেশে প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী | ক্লাস সেভেন ভূগোল একাদশ অধ্যায় ইউরোপ মহাদেশ প্রশ্ন উত্তর ||
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. ইউরোপ মহাদেশের আয়তন কত?
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের আয়তন 1 কোটি 9 লক্ষ বর্গ কিমি।
2. ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কী ?
উঃ। ককেশাস পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এলবুর্জ ইউরোপেরও সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
3. ভলডাই পাহাড়ি অঞ্চলে কোন্ কোন্ নদী উৎপন্ন হয়েছে?
উঃ। ভলগা, ডন, নিপার।
4. পোল্ডারভূমি কী ?
উঃ। নেদারল্যান্ডের সমুদ্রের অগভীর এলাকা ভরাট করে যে ভূমি তৈরি করা হয়েছে তাকে পোল্ডারভূমি বলে।
5. স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরি কোথায় অবস্থিত?
উঃ। ইউরোপের লিপারি দ্বীপে স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরি অবস্থিত।
6. পোল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী কোনটি?
উঃ । পোল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী ভিসচুলা।
7. ইউরোপের শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক নদী কী?
উঃ। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক নদী হল দানিয়ুব।
৪. কোন্ জলবায়ুতে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়?
উঃ। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।
9. 'মৎস্যজীবীর দেশ' কাকে বলে?
উঃ। নরওয়েকে 'মৎস্যজীবীর দেশ' বলে।
10. ইউরোপের দীর্ঘতম নদী কোনটি? এই নদী কোথায় মিশেছে?
উঃ। ইউরোপের দীর্ঘতম নদী ভল্গা। এই নদী কাস্পিয়ান সাগরে মিশেছে।
11. ইউরোপ মহাদেশের কয়েকটি বিখ্যাত শহরের নাম লেখো।
উঃ। লন্ডন, প্যারিস, আমস্টারডাম, মাদ্রিদ, রোম, বার্লিন।
12. ইউরোপের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন মালভূমির নাম লেখো।
উঃ। স্পেনের মেসেতা, ফ্রান্সের সেন্ট্রাল ম্যাসিফ ও রাশিয়ার ডন ম্যাসিফ।
13. ইউরোপের বৃহত্তম হ্রদ কোনটি ?
উঃ । ইউরোপের বৃহত্তম হ্রদ ল্যাডোগা। (17,700 বর্গ কিমি।
14. ইউরোপ মহাদেশের দুটি বিখ্যাত স্থাপত্যের নাম লেখো।
উঃ। আইফেল টাওয়ার ও পিসার হেলানো মিনার।
15. ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী কোনটি?
উঃ । সিন ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী।
16. ম-রা কী? এটি কোথায় অবস্থিত ?
উঃ। ম-ব্লা আল্পসের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এটি ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত।
17. কোন্ নদীর উপর ইউরোপের ব্যস্ততম জলপথ গড়ে উঠেছে?
উঃ । রাইন নদীর উপর।
18. মহাদেশীয় জলবায়ু ইউরোপের কোথায় কোথায় দেখা যায় ?
উঃ। ইউরোপের মধ্য ও পূর্বাংশে রাশিয়া এবং ইউক্রেনে এই জলবায়ু দেখা যায়।
19. নাতিশীতৌয় অঞ্চলের তৃণভূমি কী নামে পরিচিত ?
উঃ। নাতিশীতৌয় অঞ্চলের তৃণভূমি স্টেপ নামে পরিচিত।
20. ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ুকে কটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে?
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ুকে পাঁচটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।
21. উপমেরু জলবায়ুর সরলবর্গীয় বনভূমি কোথায় এসে মিশেছে?
উঃ। সরলবর্গীয় বনভূমি পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম তৈগা বনভূমিতে মিশেছে।
22. সাধারণভাবে ইউরোপের জলবায়ু কোন্ প্রকৃতির?
উঃ। সাধারণভাবে ইউরোপের জলবায়ু নাতিশীতোয় প্রকৃতির।
23. ভূমধ্যসাগরের 'আলোকস্তম্ভ' কাকে বলে?
উঃ। লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বলিকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলে ।
24. ইতালির দীর্ঘতম নদী কী?
উঃ । পো হল ইতালির দীর্ঘতম নদী।
25. ইউরোপের দীর্ঘতম নদী কী?
উঃ। ইউরোপের দীর্ঘতম নদী ভলগা।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :তিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. ইউরোপ মহাদেশের সীমা সম্বন্ধে লেখো।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের তিনদিক জলভাগ এবং একদিক স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত। ইউরোপের পূর্বে এশিয়া ও কাস্পিয়ান সাগর, পূর্বে রয়েছে ইউরাল পর্বত, ইউরাল নদী। এর পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর, বিস্কে উপসাগর, উত্তর সাগর, উত্তরে রয়েছে সুমেরু মহাসাগর, শ্বেত সাগর ও বাল্টিক সাগর। দক্ষিণে জিব্রাল্টার প্রণালী, ভূমধ্যসাগর ও বুসাগর।"
2. ইউরোপ মহাদেশের আগ্নেয়গিরি সম্বন্ধে লেখো।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এগুলি হল ইতালির ভিসুভিয়াস, সিসিলি দ্বীপের এটনা এবং লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বলি উল্লেখযোগ্য। উম্বলি আগ্নেয়গিরিকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলা হয়। এছাড়া ইউরোপের আইসল্যান্ডের কয়েকটি আগ্নেয়গিরি হল ক্র্যাফলা, হেকলা প্রভৃতি।
3. আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের থেকে নির্গত নদীগুলির নাম লেখো। এদের মধ্যে কোন্ নদী ইংলিশ চ্যানেলে পড়েছে?
উঃ। আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে নির্গত নদীগুলি হল সিন, রাইন, এলব, ভিসচুলা, পো, রোন, দানিয়ুব ইত্যাদি। এর মধ্যে সিন নদী ইংলিশ চ্যানেলে পড়েছে।
4. হাজার হ্রদের দেশ' কাকে বলে ও কেন ?
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের ফিনল্যান্ডকে হাজার হ্রদের দেশ বলে। কারণ এখানে প্রায় 35 হাজারের বেশি হ্রদ রয়েছে।
5. ইউরোপের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বিবরণ দাও।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডে বেশ কিছু প্রাচীন পার্বত্য অঞ্চল দেখা যায়। এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বত হল নরওয়ের ডোভারফেল ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের গ্রাম্পিয়ন প্রভৃতি।
6. ইউরোপ মহাদেশের উত্তরের সমভূমির বিবরণ দাও ।
উঃ। পূর্বে ইউরাল পর্বত থেকে শুরু হয়ে ইউরোপের উত্তরের বিশাল সমভূমি রাশিয়া, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে শেষ হয়েছে। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 180 মিটার। সিন, রাইন, এলব প্রভৃতি নদী আল্পসের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে আল্পসের উত্তরের মালভূমি অঞ্চলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে উত্তরের বিশাল সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই সমভূমির অনেক জায়গায় আবার হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে বা ভূমি ধ্বসের ফলে বড়ো বড়ো হ্রদ তৈরি হয়েছে। এখানে রয়েছে ইউরোপের বৃহত্তম হ্রদ ল্যাডোগা। এই সমভূমির উত্তর অংশে নেদারল্যান্ডে সমুদ্রের অগভীর এলাকা ভরাট করে পোল্ডারভূমি তৈরি করা হয়েছে।
7.আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন নদীগুলির বিবরণ দাও ।
উঃ। আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে বহু নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে রোন, পো, দানিয়ুব দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। অপরদিকে সিন, রাইন, এলব প্রভৃতি নদী আল্পসের উত্তরের মালভূমি অঞ্চলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে উত্তরের বিশাল সমভূমি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে রোন নদী লিয় উপসাগরে এবং পো নদী অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে পড়েছে। রোনের উপনদী আইন এবং পো-এর উপনদী টিসিনো। ইউরোপ মহাদেশের শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক নদী। দানিয়ুব আল্পস পর্বতশ্রেণির ব্ল্যাক ফরেস্ট পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে কৃয়সাগরে মিশেছে। এর উপনদীগুলি হল দ্রাভা, সাভা ইত্যাদি। ফ্রান্সের দীর্ঘতম নদী সিন পড়েছে ইংলিশ চ্যানেলে। ওইস ও মারনে হল সিনের উপনদী। রাইন ও এলব নদী মিশেছে উত্তর সাগরে। রাইন-এর উপনদী রূঢ় ও নিপে এবং এলব-এর উপনদী হাভেন ও অরজু। পোল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী ভিসচুলা পড়েছে বাল্টিক সাগরে। রুডা, নিভা ও চেক-এর উপনদী।
8.ভলডাই অঞ্চলে উৎপন্ন নদীগুলির সম্বন্ধে যা জানো লেখো।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের ভলডাই পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়েছে ভল্গা, নিপার, ডন, নিমেন, পশ্চিম ডুইনা, ওনেগা, উত্তর ডুইনা প্রভৃতি। ইউরোপের দীর্ঘতম নদী ভগ্না মিশেছে কাস্পিয়ান সাগরে। নিপার ও ডন মিশেছে কৃয়সাগরে। ভল্গার উপনদী ওকা ও কামা এবং নিপার-এর উপনদী বস। ভলডাই পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপন্ন নিমেন ও পশ্চিম ড্রইনা নদী বাল্টিক সাগরে পড়েছে। অপর দিকে ওনেগা ও উত্তর ডুইনা নদী পড়েছে উত্তরসাগরে।
9.ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ুর বিবরণ দাও।
উঃ। সাধারণভাবে ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোয় প্রকৃতির। যদিও অঞ্চলভেদে এর বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই মহাদেশের কোনো-না-কোনো অংশে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। অক্ষাংশগত কারণে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উয়তা ক্রমশ কমতে থাকে। গ্রীষ্মকালে যখন দক্ষিণ পূর্বাংশে উন্নতা গড়ে 27° সে. থাকে তখন উত্তরের সীমানায় উন্নতা 14° সে.। এইসময় বায়ুচাপ বলয়গুলি উত্তরে সরে যাওয়ায় দক্ষিণ ইউরোপে শুষ্ক আয়ন বায়ু এবং মহাদেশের বাকি অঞ্চলে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকালে উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে পশ্চিমাংশের উয়তা 10° সে. থাকলেও মধ্য-পূর্বাংশে তা যথেষ্ট কম এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এই উয়তা আরও কমে গিয়ে হিমাঙ্কের অনেক নীচে – 14° সে.-এ নেমে যায়।
10. ইউরোপ মহাদেশের কোন্ কোন্ অঞ্চলে তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়? এখানে কী কী উদ্ভিদ দেখা যায় ?
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের উত্তরাংশে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় তুন্দ্ৰা জলবায়ু দেখা যায়। সারা বছর তীব্র শীতল আবহাওয়া ও তুষারপাতের কারণে এইসব অঞ্চলের ভূমি বছরের 9-10 মাস বরফে ঢাকা থাকে। তুদ্ৰা জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে যখন 2-3 মাস ভূমি বরফমুক্ত থাকে, সেই সময় এখানে মস, লিচেন প্রভৃতি নানা ধরনের ছোটো ফুলের গাছ জন্মায়।
11. উপমেরু জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উঃ। সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও রাশিয়ার কিছু অংশে উপমেরু জলবায়ু দেখা যায়। এখানেও বছরে 6-8 মাস ভূমি বরফে ঢাকা থাকে। এই অঞ্চলগুলিতে গ্রীষ্মকালে 4-5 মাস তাপমাত্রা থাকে 10° সে. এবং শীতকালে 7-8 মাস তাপমাত্রা –25° সে. থেকে – 30° সে. হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে অল্প বৃষ্টিপাত এবং শীতকালে তুষারপাত এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
12.কোন্ জলবায়ু অঞ্চলে সরলবর্গীয় অরণ্য দেখা যায়? এখানকার উদ্ভিদের বর্ণনা দাও।
উঃ। উপমেরু জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলিতে সরলবর্গীয় অরণ্য দেখা যায়। গ্রীষ্মে অল্প বৃষ্টি ও শীতকালে তুষারপাত, এই রকম প্রাকৃতিক পরিবেশে পাইন, লার্চ, ফার, অল্ডার প্রভৃতি নরম কাঠের সরলবর্গীয় বনভূমি এখানে গড়ে উঠেছে। এই বনভূমি পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম তৈগা বনভূমিতে মিশেছে।
13.পশ্চিম ইউরোপীয় জলবায়ুর বিবরণ দাও ।
উঃ। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, পশ্চিম ফ্রান্স, জার্মানির পশ্চিমাংশ, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম এবং নরওয়ের কিছু অংশে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা 15°-20° সে. এবং শীতকালে 5° সে. হয়ে থাকে। সারা বছর এখানে বৃষ্টি হলেও শীতকালে বৃষ্টিপাত বেশি পরিমাণ হয়। এই জলবায়ু অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100-150 সেমি. ।
14.নাতিশীতোয় পর্ণমোচী অরণ্যে কী কী উদ্ভিদ দেখা যায়?
উঃ। পশ্চিম ইউরোপীয় জলবায়ু অঞ্চলে নাতিশীতষ্ণ পর্ণমোচী উদ্ভিদের অরণ্য দেখা যায়। এখানকার অরণ্যে নরম কাঠের সরলবর্গীয় গাছের পাশাপাশি শক্ত কাঠের পর্ণমোচী গাছও জন্মায়। এখানে ওক, ম্যাপল, অন্ডার, উইলো প্রভৃতি গাছ দেখা যায়।
15.ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এবং এখানকার স্বাভাবিক উদ্ভিদের বর্ণনা
উঃ। ইউরোপের দক্ষিণাংশে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, গ্রিস প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মকালে উয়তা 21°-27° সে. থাকে এবং শীতকালে উয়তা থাকে 5°- 10° সে.। সারা বছরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 40-75 সেমি.। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে জলপাই ডুমুর, কর্ক ওক সিডার প্রভৃতি গাছ দেখা যায়। এখানে প্রচুর পরিমাণে আঙুর ও কমলালেবু জন্মায়।
16. মহাদেশীয় জলবায়ু কীরূপ?
উঃ। ইউরোপের মধ্য ও পূর্বাংশে রাশিয়া ও ইউক্রেনে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে গ্রীষ্মকালীন উন্নতা 20°-22° সে. এবং শীতকালীন তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নীচে। এখানে বৃষ্টিপাত কম, বছরে 25-50 সেমি.।
17. স্টেপ তৃণভূমি কোথায় দেখা যায়?
উঃ। মহাদেশীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে যে তৃণভূমি গড়ে উঠেছে তা স্টেপ তৃণভূমি নামে পরিচিত। তবে নদীর ধারে যেখানে জল বেশি পাওয়া যায় সেখানে উইলো, এলম, ম্যাপল প্রভৃতি গাছ জন্মাতে দেখা যায়। বর্তমানে স্টেপ অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থান পরিষ্কার করে কৃষিকাজ করা হচ্ছে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:তিটা প্রশ্নের মান -5/7
1. ইউরোপের নদনদী সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশে প্রধান দুটি জলবিভাজিকা আছে। এইগুলি হল আল্পস পর্বত ও ভলড়াই পর্বত।
(i) আল্পস পর্বত থেকে উৎপন্ন নদী : এই পর্বত থেকে উৎপন্ন নদীগুলি হল সিন, রাইন, এলব, ভিসচুলা, বোন, পো, দানিয়ুব ইত্যাদি। সিন নদী আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে ইংলিশ চ্যানেলে পড়েছে। এই নদীর উপনদী হল ওইস, মারনে। আল্পস পর্বত থেকে উৎপন্ন নদী এলব ও রাইন নদী উত্তর সাগরে পড়েছে। হাভেন, অরজু হল এলব নদীর উপনদী। রুঢ় ও নিপে হল রাইন নদীর উপনদী। আল্পস পর্বত থেকে উৎপন্ন ভিসচুলা নদী বাল্টিক সাগরে পড়েছে। রুডা, নিডা ও চেক হল এই নদীর উপনদী। আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত নদীগুলো হল রোন, পো, দানিয়ুব। আল্পস পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে রোন নদী লিয় উপসাগরে পড়েছে। রোন নদীর প্রধান উপনদী আইন। পো নদী অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে পতিত হয়েছে। এই নদীর উপনদী টিসিনো। দানিয়ুব নদী কৃষ্ণসাগরে পড়েছে। এর প্রধান উপনদী দ্রাভা, সাভা। এটি বিশ্বসেরা আন্তর্জাতিক নদী।
(ii) ভলডাই পর্বত থেকে উৎপন্ন নদী : এখানকার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য নদী ভল্গা। এটি ইউরোপের দীর্ঘতম নদী। এই অংশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নদী হল ডন, নিপার ও নিস্টার। এই তিনটি নদীই ভলডাই পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে কৃয়সাগরে পড়েছে। পশ্চিম ডুইনা, নিমেন নদী ভলডাই পর্বত থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে বাল্টিক সাগরে পড়েছে। উত্তর ডুইনা ও ওনেগা উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর সাগরে পড়েছে।
2. আল্পস পর্বতশ্রেণির পরিচয় দাও।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলের মাঝে রয়েছে আল্পস পর্বতশ্রেণি। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ম-রা (4807 মি.) ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত। আল্পস পর্বতশ্রেণি থেকে শিরার মতো বিভিন্ন দিকে নানা পর্বতশ্রেণি প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্স ও স্পেন সীমান্তে রয়েছে পিরেনিজ পর্বত। স্পেনে রয়েছে সিয়েরা নেভেদা, ক্যান্টাব্রিয়ান, ইতালির অ্যাপেনাইন, সার্বিয়া ও আলবানিয়ার ডিনারিক আল্পস, গ্রিসের পিন্ডাস, বুলগেরিয়া ও টার্কির রোডস এবং বলকান, ককেশাস ও বোহেমিয়া প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি। ককেশাস পর্বতের 5642 মিটার উচ্চ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এলবুর্জ ইউরোপেরও সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। রোন, পো, দানিয়ুব, সিন, রাইন, এলব প্রভৃতি বহু নদীর উৎপত্তি হয়েছে এই আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে।
3.ইউরোপ মহাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিবরণ দাও।
উঃ। আয়তনে ছোটো হলেও ইউরোপ মহাদেশে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে উত্তরে উত্তর সাগরের তীরভূমি এবং পূর্বে ইউরাল পর্বত থেকে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রান্তে তুষারঢাকা পর্বতশ্রেণি, বিস্তীর্ণ সমভূমি, সরলবর্গীয় অরণ্য প্রভৃতি ছড়িয়ে রয়েছে। ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চল সমভূমি হলেও উঁচু, মালভূমি, নীচু জমি এবং পর্বতময় অঞ্চলও রয়েছে। এই মহাদেশে রয়েছে বহু নদনদী, রয়েছে আন্তর্জাতিক নদী দানিয়ুব। এই মহাদেশে দেখা যায় বহু হ্রদ এবং পৃথিবীবিখ্যাত নানা আগ্নেয়গিরি।
4.ইউরোপ মহাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণগুলি লেখো।
উঃ। ইউরোপ মহাদেশ উত্তর গোলার্ধের স্থলভাগের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় সব মহাদেশের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যায়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। এই মহাদেশের তিনদিকে জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু সমভাবাপন্ন ও নাতিশীতোয়। ফলে এই মহাদেশের অধিবাসীরা কর্মঠ ও পরিশ্রমী। উয় উপসাগরীয় সমুদ্রস্রোত উত্তর-পশ্চিমের বন্দরগুলোকে বরফমুক্ত করে। ফলে জলপথে বাণিজ্যের সুবিধা হয়।
ইউরোপ মহাদেশের মতো সুদীর্ঘ উপকূল রেখা কোনো মহাদেশে নেই। ভগ্ন উপকূলভাগে অসংখ্য বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মিত হয়েছে। সরলবর্গীয় বনভূমির নরম কাঠ কাগজ ও কাষ্ঠ শিল্পের উন্নতিতে সহায়তা করেছে। খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য, জলবিদ্যুৎ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই মহাদেশ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে পৃথিবীর সর্বপেক্ষা শিল্পোন্নত মহাদেশ। বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য আহরণ, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা, মিশ্র কৃষি, খাদ্যশস্য উৎপাদন ও পশুপালন এই মহাদেশের প্রধান জীবিকা। গবাদিপশু পালন করে ইউরোপে দুগ্ধজাত বিভিন্ন শিল্প, পশম শিল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এইসব কারণের জন্য ইউরোপ এক সমৃদ্ধশালী মহাদেশ হয়ে উঠেছে।
5.প্রাচীন যুগ থেকে ইউরোপ মহাদেশ নানা বিষয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ কেন লেখো।
উঃ। ইউরোপ পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম মহাদেশ। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, কৃষিশিল্প ও প্রযুক্তি, গবেষণায় এই মহাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ। ষোড়শ শতাব্দীতে এই মহাদেশের উৎসাহী নাবিকদের ভৌগোলিক অভিযানের ফলেই পৃথিবীর অচেনা ও অজানা মহাদেশগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। এই মহাদেশেই প্রথম শিল্পবিপ্লব ও আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এই মহাদেশেরই স্পেন, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পর্তুগাল প্রভৃতি বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এক সময় সারা পৃথিবীতে বাণিজ্যিক অভিযান চালিয়েছিল। এর ফলে এক সময়ে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ ওই অভিযানকারী দেশগুলির উপনিবেশ ছিল। এই সমস্ত নানা কারণে ইউরোপ মহাদেশ প্রাচীন যুগ থেকে আজও নানা বিষয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ।
6. ইউরোপের জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে কী কী স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে উঠেছে?
উঃ। ইউরোপের জলবায়ু নাতিশীতোয় প্রকৃতির। অঞ্চলভেদে এই জলবায়ুর তারতম্য দেখা যায়। উয়তা ও বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক তারতম্যের ভিত্তিতে ইউরোপকে বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা যায়।
(i) তুন্দ্ৰা জলবায়ু—তুন্দ্রা উদ্ভিদ : ইউরোপের উত্তরাংশে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার উত্তরাংশে বিস্তীর্ণ এলাকায় সারাবছর তীব্র শীত থাকে। তুষারপাতের জন্য ভূমি 9-10 মাস বরফে ঢাকা থাকে। গ্রীষ্মকালে 2-3 মাস ভূমি যখন বরফমুক্ত থাকে তখন ছোটো ছোটো ফুলের গাছ দেখা যায়।
(ii) উপমেরু জলবায়ু সরলবর্গীয় বনভূমি : সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও রাশিয়ার কিছু স্থানে এই জলবায়ু দেখা যায়। 6-8 মাস বরফাবৃত থাকার জন্য তেমন উদ্ভিদ হয় না। এখানে পাইন, লার্চ, ফার, বার্চ, অল্ডার প্রভৃতি নরম কাঠের সরলবর্গীয় বনভূমি আছে। গ্রীষ্মকালে এখানে উয়তা 10° সে. ও শীতকালে উয়তা - 25° সে. থেকে 35° সে. হয়।
(iii) পশ্চিম ইউরোপীয় জলবায়ু – পাতাঝরা গাছের বনভূমি: উত্তর-পশ্চিমে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, পশ্চিম ফ্রান্স, জার্মানির পশ্চিমাংশ, হল্যান্ড, ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের কিছু অংশে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে নরম কাঠের গাছের সাথে পর্ণমোচী গাছও জন্মায়। ওক, অল্ডার, ম্যাপল প্রভৃতি গাছ দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা 15°-20° সে. ও শীতকালীন তাপমাত্রা 5° সে. হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100-150 সেমি।
(iv) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু — ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদ : ইউরোপের দক্ষিণে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, গ্রিস প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়। এখানে জলপাই, ডুমুর, কর্ক, ওক, সিডার প্রভৃতি গাছ দেখা যায়। এখানে কমলালেবু ও আঙুর প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
(v) মহাদেশীয় জলবায়ু—স্টেপ তৃণভূমি ঃ রাশিয়া ও ইউক্রেনে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম বলে এখানে তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে। উইলো, ম্যাপল, এলম প্রভৃতি গাছ এখানে দেখা যায়। গ্রীষ্মকালীন উয়তা 20°- 22° সে. ও শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়।
No comments:
Post a Comment