ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চম অধ্যায় দ্বিতীয় অংশ প্রশ্ন ও উত্তর | class 10 5th chapter geography questions answers WB board geography suggetion 2024| - SM Textbook

Fresh Topics

Friday, October 6, 2023

ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চম অধ্যায় দ্বিতীয় অংশ প্রশ্ন ও উত্তর | class 10 5th chapter geography questions answers WB board geography suggetion 2024|

ভারতের ভূপ্রকৃতি বিভাগ দশম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চম অধ্যায় দ্বিতীয় অংশ প্রশ্ন ও উত্তর | class 10 5th chapter geography questions answers WB board geography suggetion 2024|




দু-এককথায় উত্তর দাও : 

১. হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি কোন্ গ্রন্থি থেকে?

উত্তর - ভারতের উঃ পঃ-এর পামির গ্রন্থি থেকে। 

২. ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি কোনটি? 

উত্তর | লাডাক মালভূমি।

৩. লাডাক পর্বতশ্রেণির উত্তরে কোন্ পর্বতশ্রেণি অবস্থিত

উত্তর । কারাকোরাম পর্বত 

৪. ভারতের উচ্চতম শৃঙ্গের নাম কী? 

উত্তর : গডউইন অস্টিন (K2) উচ্চতা – ৮৬১১ মি.।

৫.কারাকোরাম পর্বতের দুটি পর্বতশৃঙ্গের নাম লেখো। 

উত্তর | K2 ও হিডেনপিক

৬. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ কোনটি? 

উত্তর | সিয়াচেন (৭৬ কিমি)।

৭. কারাকোরাম পর্বতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হিমবাহের লেখো। 

উত্তর | সিয়াচেন, বল্টারো।

৮. হিমাদ্রি হিমালয়ের দুটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গের নাম লেখে ।

উত্তর:-  কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু। 

৯. পির পাঞ্জাল ও উচ্চ হিমালয়ের মধ্যে কোন্ অবস্থিত? 

উত্তর। কাশ্মীর উপত্যকা ।

১০. কোন্ মৃত্তিকা জাফরান চাষের জন্য উপযুক্ত ?

উত্তর | কারেওয়া মৃত্তিকা।

 ১১. কাশ্মীর উপত্যকার দুটি উল্লেখযোগ্য হ্রদের নাম লেখো।  

উত্তর। উলার ও ডাল হ্রদ। 

১২. কাশ্মীর হিমালয়ে অবস্থিত দুটি গিরিপথের নাম লেখো। 

উত্তর | বানিহাল বা জওহর, জোজিলা।

 ১৩. কুমায়ুন হিমালয়ে অবস্থিত হিমবাহসৃষ্ট হ্রদগুলিকে কী বলে ।

উত্তর| তাল।

১8. কুমায়ুন হিমালয়ের দুটি উল্লেখযোগ্য হ্রদ বা তাল-এর না লেখো।  

উত্তর/  সাততাল, নৈনিতাল। 

১৫. দার্জিলিং হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি? 

উত্তর] সান্দাকফু। 

১৬. সিকিম ও ভুটান সীমান্তে কোন্ উপত্যকা দেখা যায়? 

উত্তর | চুম্বি উপত্যকা। 

১৭. অরুণাচল হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি?

 উত্তর | কাংটো। 

১৮. পূর্ব হিমালয়ের দুটি গিরিপথের নাম লেখো।

  উত্তর । নাথুলা, জেলেপলা। 

১৯. পূর্ব হিমালয়ের প্রধান দুটি গিরিশৃঙ্গ কী কী? 

উত্তর কাঞ্চনজঙ্ঘা ও কাংটো। 

২০. সিন্ধু নদের যে-কোনো দুই উপনদীর নাম লেখো।

উত্তর:  বিপাশা, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী।

 ২১. সিন্ধু সমভূমির উত্তরাংশের ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলকে কী বলে? 

উত্তর | খোশ। 

২২. ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ কোনটি?

 উত্তর| মাজুলী নদীদ্বীপ। 

২৩. ভারতের মরুভূমির বেশিরভাগ অংশ কোন্ রাজ্যে অবস্থিত ?

উত্তর: রাজস্থান।  

২৪. দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চলটি কোন্ কোন্ শিলায় গঠিত? 

উত্তর: গ্রানাইট ও নিস্।

 ২৫. ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত কোনটি?

 উত্তর: আরাবল্লি পর্বত। 

২৮. ভারতে অবস্থিত একটি হোস্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের না লেখো। 

উত্তর: সাতপুরা পর্বত। 

 ২৭. পশ্চিমঘাট পর্বতে অবস্থিত দুটি গিরিপথের নাম লেখো উত্তর: থলঘাট ও ভোরঘাট।

২৮. দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি? 

উত্তর | আনাইমুদি (২৬৯৫ মি.)। 

২৯. দক্ষিণের লাভা মালভূমি প্রধানত কী নামে পরিচিত? 

উত্তর | ডেকানট্যাপ। 

৩০. ডেকানট্র্যাপ-এ কোন্ ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায় ?

উত্তর | রেগুর বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা (Black Soil)। 

৩১. পূর্বঘাট পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি? 

উত্তর। হিন্দাগাড়া। 

৩২. নীলগিরি পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি? 

উত্তর। দোদাবেতা। 

৩৩. পশ্চিমঘাট পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোনটি ?

 উত্তর | ভাভুলমালা। 

৩৪. ‘মালনাদ' কথাটির অর্থ কী? 

উৱে | উঁচুনীচু ভূভাগ।

 ৩৫. ভারতের মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড়ো হ্রদ কোনটি ? 

উত্তর | সম্বর হ্রদ।

৩৬. ভারতের মরুভূমি অঞ্চলের একমাত্র বড়ো নদী কোনটি

উত্তর | লুনি নদী। 

 ৩৭. ভারতীয় মরুভূমির চলমান বালিয়াড়িকে কী বলে?

 উত্তর | প্রিয়ান। 

৩৮. মরু অঞ্চলের শুষ্ক হ্রদগুলি রাজস্থানে কী নামে পরিচিত? 

উত্তর | ধান্দ।

৩৯.  মরু অঞ্চলের নীচু স্থানে জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয় তকে কী বলে?

 উত্তর। রণ বা রান।

 ৪০. কচ্ছ শব্দের অর্থ কী? ।

উত্তর  জলাময় দেশ।

 ৪১. ওড়িশার উপকূলে অবস্থিত একটি উপহ্রদের নাম লেখো। 

উত্তর। চিল্কা হ্রদ। 

৪২. পুলিকট হ্রদ ভারতের কোন উপকূলে দেখা যায়?

 উত্তর | অন্ধ্র উপকূলে।

৪৩. ভারতের বৃহত্তম লেগুন কোনটি? 

উত্তর চিল্কা হ্রদ।

 ৪৪. ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত কোনটি? 

উত্তর গেরসোপ্পা জলপ্রপাত (২৭১ মি.)। 

৪৫। ভারতের সর্বাধিক ভগ্ন উপকূল কোনটি? 

উত্তর: কোঙ্কন উপকূল।

 ৪৬. মালাবার উপকূলের দীর্ঘতম কয়াল কোনটি ?

 উত্তর: ভেম্বানাদ কয়াল। | 

৪৭. ভারতের কোন্ উপকূলে বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত হয়?

 উত্তর: করমণ্ডল উপকূলে।

 ৪৮. ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কোনটি?

 উত্তর: মেরিনা বীচ (তামিলনাড়ুর চেন্নাই)। 

৪৯. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্বতশৃ কোনটি ?

 উত্তর: স্যাডেল পিক্ (৭৭৫ মি.)। 

৫০. বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুটি আগ্নেয়গিরির নাম লেখো। 

উত্তর: ব্যারেন ও নারকোন্ডাম। 

৫১. ভারতের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কোনটি? 

উত্তর| লাক্ষা ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ।

৫২. ভারতে অবস্থিত আরবসাগরের দ্বীপগুলির মধ্যে সর্ববৃ দ্বীপ কোনটি? 

উত্তর: মিনিকয় দ্বীপ। 

৫৩. গোদাবরী ও কৃয়ার বদ্বীপের মধ্যে কোন্ হ্রদ অবস্থিত? 

উত্তর: কোলেরু হ্রদ। 

৫৪. কাথিয়াবাড় উপদ্বীপটি কী নামে পরিচিত?

 উত্তর: সৌরাষ্ট্র।

 ৫৫. ছোটোনাগপুর মালভূমির দুটি জলপ্রপাতের নাম লেখো। 

উত্তর: হুডু, দশম। 

৫৬. কোন্ অঞ্চল ভারতের খনিজভাণ্ডার নামে পরিচিত? 

উত্তর: ছোটোনাগপুর।

 ৫৭. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের নাম লেখো। 

উত্তর: শিলং মালভূমি। 

৫৮. ভারতের একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির নাম লেখো। 

উত্তর ছোটোনাগপুর / মালনাদ । 

৫৯. ভারতের একটি প্রবালগঠিত দ্বীপপুঞ্জের নাম লেখো। 

উত্তর: লাক্ষা, মিনিকয় ও আমিনদিভি। 

৬০. ভারতের বৃহত্তম দুন উপত্যকার নাম লেখো। 

উত্তর: দেরাদুন।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:

প্রশ্ন ১. বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুটি আগ্নেয়গিরির নাম লেখো। 

উত্তর :ব্যারেন ও নারকোন্ডাম দুটি বঙ্গোপসাগরের আগ্নেয় দ্বীপ। 

প্রশ্ন। ২ | হিমাচল হিমালয়ে অবস্থিত উপত্যকাগুলি কী কী? 

উত্তর : হিমাচল হিমালয়ে অবস্থিত উপত্যকাগুলি হল—

 (i) পিরপাঞ্জাল ও জাস্কর পর্বতের মাঝে কাশ্মীর উপত্যকা (ii) হিমাচল প্রদেশের কুলু উপত্যকা (পিরপানজাল ও ধওলাধরেরমধ্যে অবস্থিত)। 

(iii) শিবালিক ও ধওলাধরের মধ্যে কাংড়া উপত্যকা (হিমাচল প্রদেশ)। 

(iv) নাগটিব্বা ও ধওলাধরের মধ্যে শতদ্রু উপত্যকা। 

(v) উচ্চ হিমালয় ও জাস্করের মধ্যে স্পিটি উপত্যকা। এবং (vi) পিরপাঞ্জাল ও উচ্চ হিমালয়ের মধ্যে লাহুল উপত্যকা। 

প্রশ্ন। ৩. কাশ্মীর উপত্যকা কাকে বলে ? ★ 

উত্তর : জম্মু কাশ্মীরে পিরপাঞ্জাল ও উচ্চ হিমালয়ের মাঝে হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্ট উপত্যকা হল কাশ্মীর উপত্যকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এটি ‘ভূস্বর্গ' নামে পরিচিত।

প্রশ্ন ৪. দুন উপত্যকা কাকে বলে ? ★★ [

উত্তর : উত্তরাখণ্ডে শিবালিক ও হিমাচল হিমালয়ের মাঝে যে গঠনগত উপত্যকা রয়েছে তা হল দুন উপত্যকা। যেমন- দেরাদুন (বৃহত্তম), চৌখাম্বা । দুন উপত্যকা জানো কি? আকসাই চিন : জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পূর্ব ভাগের নাম আকসাই চিন, যা প্রকৃতপক্ষে একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি। এখানকার গড় উচ্চতা ৪৫০০ মিটার। এখানে কতকগুলি হ্রদ রয়েছে, যার মধ্যে লিংজি টাং একটি লবণাক্ত হ্রদ।

 প্রশ্ন ৫. তাল কী? উদাহরণ দাও।* [মা.প. '১৬/ 

উত্তর : কুমায়ুন হিমালয়ে হিমবাহ ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট অবনমিত অংশগুলিতে জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয়। সেই হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলে। যেমন- সাততাল, ভীমতাল, নৈনিতাল। 

প্রশ্ন ৬ | কাশ্মীর হিমালয়ের দুটি লবণাক্ত হ্রদের নাম লেখো। উত্তর : কাশ্মীর হিমালয়ের দুটি লবণাক্ত হ্রদ হল— সল্টলেক ও প্যাংগং। 

প্রশ্ন ৭. পূর্ব হিমালয়ের দুটি উল্লেখযোগ্য গিরিশৃঙ্গের ও দুটি গিরিপথের নাম লেখো ।

উত্তর : পূর্ব হিমালয়ের দুটি উল্লেখযোগ্য গিরিশৃঙ্গ হল— কাঞ্চনজঙ্ঘা ও কাংটো। পূর্ব হিমালয়ের দুটি গিরিপথ হল—নাথুলা ও জেলেপ-লা। 

প্রশ্ন | ৮ | পূর্বাচল বলতে কী বোঝ? বা ভারতের কোন অঞ্চল পূর্বাচল নামে পরিচিত? 

উত্তর : উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অংশে মেঘালয় মালভূমিকে বাদ দিয়ে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশ ও অসমের কিছু অংশে যে পার্বত্য অঞ্চল আছে তাকে বলে পূর্বাচল বা পূর্বাঞ্চল।

 প্রশ্ন ৯. পশ্চিম হিমালয়ের একটি ও পূর্ব হিমালয়ের একটি করে গিরিপথের নাম লেখো। 

উত্তর : পশ্চিম হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম জোজিলা পাস (এটি শ্রীনগর ও লে-এর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেছে) পূর্ব হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম হল নাথুলা পাস (এটি তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সঙ্গে সিকিমের সংযোগ রক্ষা করেছে।)

প্রশ্ন | ১০ | ব্রিয়ান কাকে বলে?

 উত্তর : এককথায় ভারতীয় (থর) মরুভূমির অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়িকে থ্রিয়ান বলে। 

প্রশ্ন ১১. রণ বা রাণ কাকে বলে ?* মা.. ১৩/ 

উত্তর : গুজরাট রাজ্যের উত্তরে এবং কচ্ছ উপদ্বীপের উত্তর ও পূর্বাংশের অগভীর জলাভূমি রণ বা রাণ নামে পরিচিত। এর উত্তরের অংশ ‘বৃহৎ রণ' ও পূর্বের অংশ ‘ক্ষুদ্র রণ’ নামে পরিচিত। কচ্ছের রণ অঞ্চল

 প্রশ্ন ১২. ধান্দ কাকে বলে? 

উত্তর : থর মরুভূমির লবণাক্ত জলের অস্থায়ী হ্রদ বছরের বেশিরভাগ সময় এগুলি শুষ্ক থাকে। হল ধান্দ।

 প্রশ্ন ১৩. ‘মরুস্থলী' কথার অর্থ কী? এইপ্রকার নামকরণের কারণ কী? ** [মা.প. '১৪] 

উত্তর : 'মরু' শব্দের অর্থ ‘মৃত’ এবং ‘স্থলী' শব্দের অর্থ হল ‘দেশ' অর্থাৎ ‘মৃতের দেশ'। রাজস্থান মরুভূমির পশ্চিমে শুষ্ক, সূক্ষ্ম, উদ্ভিদহীন ধু-ধু মরুপ্রান্তর হল মরুস্থলী। মরুস্থলী হল প্রকৃত মরুভূমি। 

প্রশ্ন ১৪ | পাঞ্জাব সমভূমি বা সিন্ধু সমভূমি কীভাবে গঠিত হয়েছে এবং এর আয়তন কত ? 

উত্তর : পশ্চিমে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের সামান্য অংশ নিয়ে এটি গঠিত। সিন্ধুনদের উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী ও ঝিলাম নদীর মিলিত সঞ্জয়কার্যের ফলে এই সমভূমি গঠিত হয়েছে। এই জন্য একে 'পঞ্চনদের দেশ' বলে।

প্রশ্ন | ১৫| দোয়াব কাকে বলে ?

 উত্তর : সঞ্জয়কার্যের ফলে সৃষ্ট দুটি নদীর মধ্যবর্তী সমভূমি অঞ্চল দোয়াব নামে পরিচিত (দো দুই এবং আব = জল)। যেমন—উচ্চগঙ্গা সমভূমির গঙ্গা ও যমুনার মধ্যবর্তী সমভূমি ভারতের বৃহত্তম দোয়াব। 

প্রশ্ন ১৬. ‘ধায়া' ও 'খোশ' কাকে বলে ? 

উত্তর : পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত নদীর প্লাবনভূমিকে এই অঞ্চলে 'ধায়া’ বলে। এবং পাঞ্জাবের সমভূমি অঞ্চলের উত্তরে ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলকে ‘খোশ' বলা হয়।  

প্রশ্ন ১৭. ‘খাদার' কাকে বলে ?★ 

উত্তর : উচ্চগঙ্গা সমভূমির নদী তীরবর্তী যে-সমস্ত অঞ্চল নবীন পলিমাটি দিয়ে গঠিত, সেই সমস্ত অঞ্চলকে খাদার বলে এটি উর্বর সমভূমি।

প্রশ্ন ১৮. তাশার কাকে বলে ।

★ উত্তর : উচ্চাশা সমভূমির নদীর অববাহিকা থেকে দূরবর্তী প্রাচীন পলিমাটি গঠিত অঞ্চলকে ভাঙ্গার বলে। এই অঞ্চলটি প্রাচীন পলিমাটি দিয়ে গঠিত বলে সামান্য উঁচু সমতলভূমি। এই অংশে বন্যার প্রকোণ কম তাই এই অঞ্চল কৃষির পক্ষে অনুপযোগী। পাঞ্চাবে এই অঞ্চল 'ধায়া' নামে পরিচিত। 

প্রশ্ন ১৯ 'ভাবর কাকে বলে? 

উত্তর : পশ্চিমে সিন্ধু থেকে পূর্বে তিস্তা পর্যন্ত শিবালিকের পাদদেশ বরাবর নুড়ি, পেবেল দ্বারা গঠিত অনুর্বর ভূমি ভাবর নামে পরিচিত। এর গড় বিস্তার ৮-১৬ কিমি। বালি ও পাথরের নুড়ি দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলের মৃত্তিকা হল ছিদ্রযুক্ত। এই কারণে হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন ছোটো ছোটো নদীগুলি এই অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে আসার পর ভূগর্ভস্থ হয়ে ফল্গুধারার সৃষ্টি হয়েছে। ভাবর অঞ্চল কৃষিকাজের পক্ষে এই অঞ্চল অনুপযুক্ত। 

প্রশ্ন ২০ | তরাই বলতে কী বোঝ? 

উত্তর : ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ভূগর্ভস্থ নদীগুলি যেখানে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানকার ১৫ থেকে ৩০ কিমি প্রশস্ত স্যাঁতসেঁতে জলাভূমিকে সাধারণভাবে তরাই বলা হয়। প্রধানত বালি ও পলি দ্বারা গঠিত তাই এই অঞ্চল কৃষিকাজের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত তরাই অঞ্চল |

প্রশ্ন ২১ | ডুব বলতে কী বোঝ? 

উত্তর : সমভূমি অঞ্চলের পশ্চিমে মাঝে মাঝে যে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি দেখতে পাওয়া যায়, তাকে 'ডুব' বলে।

 প্রশ্ন ২২. তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল বলতে কী বোঝ?

 উত্তর : পূর্ব হিমালয়ের পার্বত্যভূমি থেকে নির্গত মহানন্দা, তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাক প্রভৃতি নদীগুলির পলি, বালি ও নুড়ি সময়ের ফলে হিমালয়ের পাদদেশের সংকীর্ণ নিম্নভূমিতে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় এবং জলপাইগুড়ি জেলায় এই সমভূমি অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা ১০০ মিটার। তিস্তা নদীর ডানতীরস্থ সমভূমিকে তরাই অঞ্চল বলে এবং তিস্তা নদীর বামতীরস্থ সমভূমিকে ডুয়ার্স অঞ্চল বলে।তরাই একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ 'স্যাঁতসেঁতে’। 

প্রশ্ন ২৩ | ছোটোনাগপুর অঞ্চল বলতে কী বোঝ? ছোটোনাগপুর 

উত্তর : সমগ্র ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি হল ছোটনাগপুর মালভূমি। এটি ভারতের খনিজভাণ্ডার।

 প্রশ্ন ২৪ | ময়দান ও মালনাদ কী? অথবা, কর্ণাটক মালভূমির দুটি ভূপ্রাকৃতিক অংশের নাম লেখো। [মা.প. ১৮ 

উত্তর:-  কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমে উঁচুনীচু ঢেউখেলানো ভূমি হল মালনাদ এবং পূর্বের প্রায় সমতল ভূমি হল ময়দান। মালনাদ অঞ্চল

 প্রশ্ন| ২৫ | পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম লেখো।

 উত্তর : পূর্বঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল – হিন্দাগড়া এব পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল—ভাভুলমালা। 

প্রশ্ন ২৬ | পূর্ব অপেক্ষা পশ্চিম উপকূল ভগ্ন কেন?*

 উত্তর : ভারতের পশ্চিম উপকূল গঠিত হয়েছে আন্দোলনের প্রভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম অ নিমজ্জিত হয়ে, তাই এই উপকূল অত্যন্ত ভগ্ন। কিন্তু উপকূল গঠিত হয়েছে সঞ্জয়কার্যের মাধ্যমে। এই কারণেই উপকূল, পশ্চিম উপকূলের মতো অতটা ভগ্ন নয়। 

প্রশ্ন | ২৭ | পশ্চিম উপকূল বরাবর অসংখ্য স্বাভাবি পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর গড়ে উঠেছে কেন? : 

উত্তর :ভূ-আন্দোলনের প্রভাবে গঠিত হওয়ায় | উত্শ উপকূল ভগ্ন ও গভীর। গভীর ও ভগ্ন উপকূল থাকার জনে এখানে অসংখ্য স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর গড়ে উঠেছে।

প্রশ্ন ২৮ | ভারতের পূর্ব উপকূলের সমভূমি অঞ্চলের বৈশিষ্ট লেখো। 

উত্তর : পূর্ব উপকূলের সমভূমির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল। (i) ভারতের পূর্বপ্রান্ত বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত (ii) এই সমভূমি অঞ্চলটি পশ্চিম উপকূলের সমভূমির তুলনায় বেশি চওড়া ও সমতল। (iii) পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে অনেকগুলো হ্রদ আছে, এর মধ্যে ওড়িশা উপকূলের চিল্কা ও কোলেরু এবং অন্ধ্র উপকূলের পুলিকট হ্রদ উল্লেখযোগ্য।

 প্রশ্ন | ২৯ | আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানীর নাম কী? 

উত্তর : আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী – পোর্ট ব্লেয়ার। লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী – কাভারাত্তি। 

প্রশ্ন | ৩০ | লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? 

উত্তর : প্রবাল কীট বা প্রবাল দ্বারা গঠিত অনেকগুলি ছোটো ছোটো দ্বীপ নিয়ে এই লাক্ষা দ্বীপ গঠিত হয়েছে। আরব সাগরে২৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ মিলিত হয়ে এই লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ নাম দেওয়া হয়েছে। দ্বীপগুলির উচ্চতা কোথাও ৫মি. এর বেশি নয়। 

প্রশ্ন ৩১ | ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপটি কোথায় অবস্থিত? 

উত্তর : ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ হল মাজুলী দ্বীপ। অসমের জোরহাটে ব্রষ্মপুত্র ও লোহিত নদীর সংযোগস্থলে এই দ্বীপটিঅবস্থিত। বর্তমানে ভূমিক্ষয়ের ফলে কমতে কমতে মাজুলী দ্বীপের আয়তন মাত্র ৪২২ বর্গকিমি।

সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো :


 প্রশ্ন ২ মেঘালয় মালভূমি বলতে কী বোঝ? [মা.প. ’১৫, ১৬/ 

উত্তর : মেঘালয় প্রদেশে অবস্থিত গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া, মিকির পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে এই মেঘালয় মালভূমিটি গঠিত 6 হয়েছে। এটি আসলে দাক্ষিণাত্য মালভূমির বিচ্ছিন্ন অংশ। ক্রমাগত ভূ-আন্দোলন ও চ্যুতির ফলে ছোটোনাগপুর ও মেঘালয় মালভূমি দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে সরে যায়। এই মালভূমির গড় উচ্চতা ৬০০-১৬০০ মি.। গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া এই অঞ্চলের তিনটি ক্ষয়জাত পাহাড়। 92° অ স ম গারো পাহাড় তুরা খাসি পাহাড় শিলং 26 জয়ন্তিয়া পাহাড় মেঘালয় মালভূমি -- চেরাপুঞ্জি মেঘালয় মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল নকরেক (১৪১২ মি.) মেঘালয় মালভূমির উত্তরে বিস্তৃত রয়েছে শিলং পাহাড়। শিলং শৃঙ্গ (১৯৬১ মি.) হল শিলং পাহাড় মেঘালয় মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

প্রশ্ন ৩. কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি কাকে বলে? 

উত্তর : কাশ্মীরের লাডাক পর্বতশ্রেণির উত্তর দিকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি অবস্থান করছে। এই পর্বতশ্রেণির দৈর্ঘ্য মাত্র ৪০০ কিলোমিটার হলেও এই পর্বতশ্রেণিতে অনেকগুলো সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি ও বিশাল হিমবাহ আছে। কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির পশ্চিম অংশে অবস্থিত গডউইন অস্টিন বা K2 (৮৬১১ মি.), শৃঙ্গটি হল কারাকোরাম তথা শার্ট ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কারাকোরাম পর্বতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ ল—হিডন পিক্‌ (৮০৬৮ মি.), ব্রড পিক্‌ (৮০৪৭ মি.) ও গ্যাসের ব্লুম II (৮০৩৫ মি.)। এইসব শৃঙ্গগুলি সারাবছর ধরেই তুষারে আবৃত থাকে বলে কারাকোরাম পর্বতকে বসুধা বা ধবলশীর্ষ বলে।কারাকোরাম পর্বতের উল্লেখযোগ্য হিমবাহ হল—সিয়াচেন হিমবাহ (দৈর্ঘ্য ৭৬ কিমি.)। এটি ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ, এ ছাড়া রয়েছে—বালটোরা, রিমো ইত্যাদি।  

প্রশ্ন ৪. লাডাক পর্বতশ্রেণি সম্পর্কে লেখো।

 উত্তর : কারাকোরাম ও কাশ্মীর হিমালয় পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী স্থানে ৩৫০ কিমি. দীর্ঘ লাডাক পর্বতশ্রেণি অবস্থান করছে। হিমালয় পর্বতশ্রেণির সৃষ্টির সময় টেথিস সাগরের সঞ্চিত পলিরাশি থেকেই লাডাক পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে। লাডাক পর্বতশ্রেণির ৯টি শৃঙ্গের উচ্চতা ৬০০০ মিটারেরও বেশি। এই অঞ্চলের লাডাক মালভূমিটি হল ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি। এই অঞ্চলটি অত্যন্ত শুষ্ক ও দুর্গম। লাডাক পর্বতশ্রেণি [

প্রশ্ন | ৫ | ছোটোনাগপুর মালভূমি কী?* 

উত্তর : রাঁচী মালভূমি, হাজারিবাগ মালভূমি, কোডারমা মালভূমি, বাঘেলখণ্ড মালভূমি এবং রাজমহল পাহাড় নিয়ে গঠিত মালভূমিকে ছোটোনাগপুরের মালভূমি বলা হয়। এই মালভূমির গড় উচ্চতা ৪০০-১০০০ মিটার। পশ্চিমদিকে এই মালভূমির উচ্চতা অপেক্ষাকৃত বেশি। ছোটোনাগপুরের মালভূমি পূর্বদিকে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমপ্রায়ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পূর্বের এই সমপ্রায়ভূমিতে অনেক ছোটো ছোটো ছোটোনাগপুর মালভূমি টিলা দেখা যায়। ছোটোনাগপুর মালভূমির পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃতদামোদর গ্রস্ত উপত্যকার দক্ষিণে মানভূম, রাঁচী, পালামৌ, নেতারহাট অঞ্চল এবং উত্তরে সাঁওতাল পরগনা ও হাজারিবাগ মালভূমি অবস্থিত। মালভূমিগুলির প্রান্তদেশ হঠাৎ খাড়াভাবে নেমে যাওয়ায় অনেকগুলি জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে হুডু, জোনা, দশম ও রাজরাপ্পা জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য। 

প্রশ্ন ৬ | ডেকানট্র্যাপ সম্পর্কে লেখো। *

 উত্তর : ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১৩-১৪ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভাস্রোতে কোনো রকম বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূগর্ভের অসংখ্য ফাটল পথে বাইরে বেরিয়ে এসে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলেছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে 72 767 80 ডেকান ট্যাপ বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল 0 500 কিমি মধ্যপ্রদেশ 20 মহারাষ্ট্র আরব সাগর 16 72 76 80 দাক্ষিণাত্য মালভূমি গঠন করেছে। এটি পৃথিবীর সুপ্রাচীন ভূখণ্ড গণ্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্তর্গত। ভারতের দাক্ষিণাত্যের এই লাভা মালভূমি অঞ্চলটি ডেকানট্র্যাপ নামে পরিচিত। এই বিস্তীর্ণ মালভূমির উপরের অংশ টেবিলের মতো সমতল এবং পরবর্তীকালে বৃষ্টি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়িত লাভা স্তরের পার্শ্বদেশ সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে। এই বিশেষ আকৃতির জন্যই দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর পশ্চিম অংশকে ডেকানট্র্যাপ বলে [ ডেকান- অর্থাৎ দাক্ষিণাত্য ও ট্র্যাপ = সিঁড়ি।। তরল লাভা জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে বলে এই অঞ্চলটি সাধারণভাবে সমতল এবং পর্বতের চূড়া বা মাথাগুলি চ্যাপটা। সমগ্র মালভূমিটি পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে। দীর্ঘকাল ধরে এখানকার কালো ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কালো মাটি বা কৃয় মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে। 

প্রশ্ন ৭ | বিন্ধ্য পর্বত কী? 

উত্তর : মধ্যভারতের উচ্চভূমি অঞ্চলের একেবারে দক্ষিণ সীমায় অবস্থিত সুপ্রাচীন বিন্ধ্য পর্বতটি ভূপ্রকৃতিগত ভাবে পাললিক শিলায় (বেলেপাথর) গঠিত। এটি হল একটি স্তূপ পর্বত। পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রসারিত এই পর্বতটি প্রায় ১০৫০ কিমি দীর্ঘ ও গড়ে প্রায় ৩০০মি.উঁচু। এই পর্বতের বেলেপাথর ও চুনাপাথর দ্বারা গঠিত পূর্বাংশ কাইমুর নামে পরিচিত। বিন্ধ্য পর্বতের উত্তর-পূর্বাংশে শোন-এর গ্রস্থ উপত্যকা থেকে কাইমুর পাহাড় খাড়াভাবে উঠে গেছে। বিন্ধ্য পর্বতের ওপরটা সমতল এবং ধারগুলো ক্ষয় পেয়ে সিঁড়ির মতো হয়ে গেছে। উত্তর : ভারতের পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে 

প্রশ্ন ৮ ভারতের মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কী? 

*উত্তর : ভারতের পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে থর মরুভূমি। এই অঞ্চল সমভূমি হলেও জলবায়ুগত কারণে এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। কারণগুলি হল : (i) মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা গঙ্গাসমভূমি অতিক্রম করে যখন রাজস্থানের পশ্চিমপ্রান্তে পৌঁছায় তখন এই বায়ুর মধ্যে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কমে যায়, তাই বৃষ্টি কম হয়। (ii) মৌসুমি বায়ুর আরবসাগরীয় শাখা যখন গুজরাট অতিক্রম করে এখানে পৌঁছায় তখনও বায়ুর মধ্যে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম বলে বৃষ্টির পরিমাণ কম। (iii) এখানে উয়তা বেশি বলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনাও কম এবং অধিক উয়তায় বায়ুর ঊর্ধ্বগমন ঘটে। (iv) এই অঞ্চলে বায়ুকে বাধা দেওয়ার মতো কোনো উচ্চভূমি বা পর্বতের অবস্থান নেই। (v) সম্মিলিত এই কারণগুলির জন্যই রাজস্থানে বার্ষিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম (২৫ সেমি. এর কম), তাই এই অঞ্চল ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।  

প্রশ্ন। ৯. কয়াল বলতে কী বোঝ ? * 

উত্তর : কেরালার মালাবার উপকূল বারংবার উত্থান ও নিমজ্জনের ফলে গঠিত হয়েছে। বারবার উত্থান ও নিমজ্জনের কারণে উপকূল বরাবর সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য জলাভূমি বা উপহা এই উপহ্রদগুলিকেই স্থানীয় ভাষায় কয়াল বলা হয়। ভেম্বানা অষ্টমুদি, ভেলায়নি প্রভৃতি বিখ্যাত কয়াল। ভেম্বনাদ বৃহত্তম। এই কয়ালগুলি যোগাযোগ ব্যবস্থার হিসেবে কাজ করে।

প্রশ্ন | ১০| আরাবল্লী পর্বত কী? 

 উত্তর : আরাবল্লী ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত। মধ্য ভারতের উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত আরাবল্লী দিল্লি থেকে গুজরাটের পালানপুর আমেদাবাদের কাছে) উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ৮০০ কিমিজুড়ে বিস্তৃত। নগ্নীভবন ক্রিয়ার কারণে আরাবল্লি বর্তমানে ক্ষয়জাত পর্বত বা পাহাড়রূপে অবস্থান করছে। আরাবল্লি পর্বতের গড় উচ্চতা ৬০০-৯০০ মি.। আরাবল্লীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আবু পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত গুরুশিখর (১৭৭২ মি.)। 

প্রশ্ন | ১১ | মালাবার উপকূল সমভূমি সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তবর্তী ম্যাঙ্গালোর থেকে কেরল উপকূল হয়ে তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত প্রসারিত উপকূলবর্তী সমভূমি মালাবার উপকূল সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমির দৈর্ঘ্য ৫০০ কিমি। অন্যান্য উপকূলের তুলনায় অনেক বেশি চওড়া হওয়ায় মালাবার উপকূলে অসংখ্য বালিয়াড়ি, জলাভূমি, হ্রদ, উপহ্রদ বা লেগুন প্রভৃতি দেখতে পাওয়া যায়। এই উপহ্রদগুলি কেরলে ‘কয়াল' নামে পরিচিত। ভেম্বানাদ কয়াল হল এখানকার বৃহত্তম কয়াল (প্রায় ৪০ কিমি)। ক্রমাগত ভূ-আলোড়নের ফলে এই উপকূল বারবার উত্থান ও নিমজ্জন ঘটেছে। এইসব ঘটনার চিহ্ন হিসেবে এখানে অসংখ্য উপহ্রদ বা জলাভূমি বা ‘ব্যাকওয়াটার্স’ দেখা যায়, যারা ‘কেরালা ব্যাকওয়ার্টাস' নামে পরিচিত। কেরল রাজ্যের জল পরিবহণ ব্যবস্থায় কয়ালগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

 প্রশ্ন| ১২ | আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বা বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ বলতে কী বোঝ ?

 উত্তর : ছোটো-বড়ো দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এই : ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে বঙ্গোপসাগরে ২৬৫টি দ্বীপপুঞ্জ হল একপ্রকার দ্বীপীয় বৃত্তচাপ (Island arc) অর্থাৎ ধনুক আকারে সমুদ্রে নিমজ্জিত পর্বত যা মায়ানমারের আরাকান-ইয়োমা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ।এই দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ উচ্চভূমির অন্তর্গত। উত্তর আন্দামানের স্যাডেল পিক (৭৩৭ মি.) সমগ্র আন্দামানের সর্বেচ্চ অংশ। দক্ষিণ আন্দামানের মাউন্ট হ্যারিয়েট উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ। বারেন ও নারকোন্ডাম এখানকার দুটি বিখ্যাত আগ্নেয়গিরি।

 প্রশ্ন | ১৩ | আরবসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে লেখো।

 উত্তর : ৪° উত্তর অক্ষাংশ থেকে ১২° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে ক্রেল উপকূল থেকে প্রায় ৩২৪ কিমি দূরে ২৫টি ছোটো ছোটো দ্বীপ গায়ে লাক্ষা, আমিনদিভি ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। এই দ্বীপপুঞ্জের সরকারি নাম রাখা হয়েছে লাক্ষাদ্বীপ। লাক্ষা আমিনদিভি ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জের মোট আয়তন ৩২ বর্গকিমি মাত্র। মিনিকয় দ্বীপটি হল এই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ, এর আয়তন ৪.৫০ বর্গকিমি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, যুগ যুগ ধরে, আরবসাগরের প্রবাল কীটদের মৃত দেহাবশেষ স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে এই দ্বীপপুঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে। এই দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপগুলিতে পাহাড়-পর্বত ও নদনদী নেই। দ্বীপগুলির তটভূমির কাছে প্রবাল প্রাচীর দেখা যায়। উর্বর বলে কৃষিকাজে উন্নত হওয়ায় এখানকার জনঘনত্ব বেশ বেশি। এর সর্বদক্ষিণের দ্বীপ হল মিনিকয় দ্বীপ।


প্রশ্ন। ১৪ | ভারতের বৃহৎ সমভূমির উৎপত্তি হয় কীভাবে? 

উত্তর : উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলটি উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণের উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এই সমভূমির সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে ভূবিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে—বহু যুগ আগে, বর্তমানে যেখানে উত্তরের সমভূমি অঞ্চল অবস্থিত সেখানে একটি দ্রোণী (Trough) ছিল। টার্সিয়ারী যুগে হিমালয় পর্বতের উত্থানকালে ভূ-আলোড়নের ফলে প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের উত্তর অংশ নীচু হয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে বসে গিয়ে এই দ্রোণী বা পরিখার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন নদীগুলি দ্বারা যুগ যুগ ধরে ক্রমাগত পলি সঞ্চয়ের ফলে ওই নিম্নভূমি অঞ্চলটি ভরাট হয়ে উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমির উৎপত্তি হয়েছে। হিমালয় তিব্বত মালভূমি শিবালিক সিন্ধু গঙ্গা সমভূমি দাক্ষিণাত্য মালভূমি পলি সঞ্জয় ভারতের বৃহৎ সমভূমি সৃষ্টির চিত্র 

প্রশ্ন | ১৫ | পূর্ব উপকূলের তুলনায় পশ্চিম উপকূলের সমভূমি সংকীর্ণ কেন?

 উত্তর : ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় অংশের উৎপত্তি ঘটেছে ভূআন্দোলনের প্রভাবে পশ্চিমঘাটের পশ্চিম অংশ বসে গিয়ে। এই অংশে যাবতীয় পলি সঞ্চয় ঘটেছে সমুদ্রতরঙ্গের কার্যে। নদীর সঞ্চয়কার্য প্রায় হয়ই না। উচ্চ ও খাড়া ঢালের উপকূল হওয়ায় সঞ্চয়ের পরিমাণও কম। তাই পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি সংকীর্ণ, গড় বিস্তার ৬৫ কিমি। অপরদিকে, ভারতের পূর্ব উপকল মৃদুঢালে সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়েছে। পূর্বঘাট পর্বত উপকূল থেকে বেশ দূরে অবস্থান করায় ভূমির ঢাল কম। সমুদ্রতরঙ্গের কার্যের সঙ্গে সঙ্গে এখানে প্রচুর পরিমাণে নদীবাহিত পলির সঞ্জয় ঘটে। এই উপকূলে নদীগুলির মোহানায় গঠিত হয়েছে বদ্বীপ। অধিক পলিসঞ্চয়ের কারণেই পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত, গড় বিস্তার ৮০-১০০ কিমি। 

প্রশ্ন । ১৬ প্রবাল কী? প্রবাল দ্বীপ কীভাবে গঠিত হয়?

 উত্তর : প্রবাল হল একপ্রকার ছোটো সামুদ্রিক কীট। সাধারণত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রের ৬০ মিটার গভীরতায় প্রবাল জন্মায়। এদের দেহে ক্যালশিয়াম কার্বনেটের শক্ত আবরণ থাকে। কোটি কোটি প্রবাল কীটের দেহাবশেষ জমাট বেঁধে প্রবাল দ্বীপ গঠিতহয়। আরবসাগরের ২৫ টি ছোটো বড়ো দ্বীপ নিয়ে গঠিত লাক্ষাদ্বীপ প্রবাল দ্বীপের উদাহরণ। প্রবাল 

প্রশ্ন ১৭. কোঙ্কন উপকূল সম্পর্কে যা জান লেখো।

 উত্তর : কোক্ষন উপকূল সমভূমি : পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম দিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত এবং উত্তরে দমন থেকে দক্ষিণে গোয়া পর্যন্ত প্রসারিত প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমভূমিকে কোঙ্কন উপকূল সমভূমি বলা হয়। এই অংশ সংকীর্ণ ও ভগ্ন। এই অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলে কাদাভর্তি জলাভূমি এবং বালুকাময় তটভূমি ছাড়াও কোথাও কোথাও সামুদ্রিক চড়া এবং লাভা গঠিত পাহাড় দেখা যায়। বৈতরণী, অর্থা ও উলহাস নদী প্রবাহিত হয়ে কোঙ্কন উপকূলের সমুদ্রে খাঁড়ি সৃষ্টি করেছে। বন্দর এখানেই অবস্থিত। ভারতের প্রবেশদ্বার মুম্বাই ও হাইটেক বন্দর জওহরলাল নেহরু

 প্রশ্ন ১৮ | সমভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা ও স্থানীয় ভূমিরূপের নামগুলি সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তর : সমভূমি অঞ্চলে মৃত্তিকা ও স্থানীয় ভূমিরূপ: হিমালয়ের পাদদেশের সংকীর্ণ অঞ্চলে বালি ও পাথর মিশ্রিত ভাবর মৃত্তিকা, খাদার, বেট ও ভাঙ্গর মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায়। ভূমিরূপ ও মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (১) ভাবর: হিমালয়ের পাদদেশের মৃদু ঢালসম্পন্ন পলি সঞ্চিত যে ভূমিরূপ রয়েছে, তাকে ভাবর বলে। (২) তরাই : ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণে নদী সৃষ্ট জলাভূমিকে তরাই বলে। (৩) যাদার ও বেট : গাঙ্গেয় সমভূমির নবীন পলিমাটিযুক্ত অঞ্চলকে উত্তরপ্রদেশে খাদার ও পাঞ্জাবে বেট বলে। (৪) ভাঙার : নদী অববাহিকার দূরবর্তী প্রাচীন পলিযুক্ত অঞ্চলকে ভাঙ্গর বলে। (৫) ভুর: সমভূমির পশ্চিমদিকে যে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি দেখা যায় তাকে ভুর বলে। 

প্রশ্ন ১৯। কচ্ছের রণ-এর ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূমিরূপ সম্পর্কে লেখো। 

উত্তর : গুজরাটের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপকে ঘিরে প্রায় ২১৫০০ বর্গকিমি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট যে লবণাক্ত জলাভূমি রয়েছে তা কচ্ছের রণ নামে পরিচিত (‘কচ্ছ’শব্দের অর্থ 'জলময় দেশ)। কচ্ছের রণের দুটি অংশ (i) উত্তরে 'বৃহৎ কচ্ছের রণ এবং (ii) দক্ষিণ-পূর্বে "ক্ষুদ্র রণ'। কচ্ছের রণ সমুদ্রপৃষ্ঠের সামান্য উচ্চে অবস্থিত। তবে কোনো কোনো অংশ সমুদ্রতলের সামান্য নীচে অবস্থানের কারণে বর্ষায় প্রবল জোয়ারে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ে, তাই ভূমি লবণাক্ত। কচ্ছের রণ লুনি, বানস প্রভৃতি নদী দ্বারা বিধৌত এবং নদীগুলি বর্ষাকালে এখানে প্রচুর সূক্ষ্ম পলির সঞ্চয় ঘটায়, তাই ভূমি তিন থেকে চারমাস লবণাক্ত ও কর্দমময়। বছরের বাকি সময় ভূমি শুষ্ক, উদ্ভিদ বিহীন এবং মরুভূমির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে মাঝে মাঝে এখানে জলাভূমির মধ্যে ঘাস ও আগাছাপূর্ণ টিলা ও উচ্চভূমি চোখে পড়ে। এই অংশই হল পৃথিবীর একমাত্র বন্য গাধা সংরক্ষণাগার (Wild Ass Sanctuary)। কচ্ছের রণ-এর উপগ্রহ চিত্র 

প্রশ্ন| ২০ | ‘মেঘালয় মালভূমি, দাক্ষিণাত্য মালভূমির বিচ্ছি অংশ’—আলোচনা করো। 

 উত্তর : প্রাচীন কালে মেঘালয় মালভূমি ও ছোটোনাগপুর মালভূ একটিই ভূপ্রাকৃতিক অংশ ছিল। ভূতাত্ত্বিক যুগে ভূআন্দোলনে মধ্যবর্তী অংশ অবনমিত হয়। যার মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে গণ ও ব্রষ্মপুত্র প্রবাহিত হয়। এই নদী ও তাদের উপনদীসমূহ অবনমি অংশ পলি দ্বারা ভরাট করে সৃষ্টি করে সমভূমি এবং মেঘাল মালভূমি বিচ্ছিন্ন আকারে অবস্থান করে।

প্রশ্ন ২১ | ‘ডেকানট্র্যাপ' বলতে কী বোঝ ? * 

উত্তর : মহারাষ্ট্রের লাভা মালভূমি অঞ্চলটি ডেকানট্র্যাপ নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সুপ্রাচীন ভূখণ্ড গণ্ডোয়ানাল্যান্ডের অন্তর্গত একটি মালভূমি। আজ থেকে প্রায় ৬-৭ কোটি বছর আগে ভূত্বকের প্রশস্ত ফাটলপথে ভূগর্ভস্থ লাভা নিঃসৃত হয়ে এই অঞ্চলটিকে স্তরে স্তরে চাদরের মতো ঢেকে দেয়, এইভাবেই ডেকানট্র্যাপ অঞ্চলটির সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীকালে বৃষ্টি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে লাভাস্তরের পার্শ্বদেশে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে উপর থেকে নীচে নেমে গেছে। এইজন্য এই লাভায় ঢাকা মালভূমি অঞ্চলটিকে ডেকানট্র্যাপ বলে। ডেকানট্র্যাপ শব্দের সুইডিস অর্থ ‘সিড়ি’ বা ‘ধাপ’। 

প্রশ্ন ২২ | অসম উপত্যকা অত্যন্ত বন্যাপ্রবণ কেন ?*

 উত্তর : অসম উপত্যকা ভারতের সর্বাধিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল। প্রায় প্রতিবছরই এখানে বন্যা হয়। মৌসুমিবায়ু আগমনের প্রভাবে বর্ষাকালে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত (২৫০ সেমি এর বেশি) ঘটে। এই অঞ্চলেরউত্তর ও দক্ষিণের পার্বত্য অংশ থেকে আগত অসংখ্য উপনদী প্রচুর জল ও পলি পরিবহণ করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। পলি সঞ্চয়ের ফলে এখানের নদীখাতগুলি ক্রমশ ভরাট হয়ে যায় ফলে নদীগুলি বর্ষাকালে সমস্ত জল তার খাতে ধরে রাখতে পারে না। ফলে বন্যা হয়। অসম উপত্যকায় বন্যা বিগত কয়েক দশক ধরে ব্যাপক বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস বেড়ে যাওয়ায় নদীগুলিতে পলির সঞ্জয় দ্রুত হারে বেড়েছে তাই ক্রমশ বেড়েছে।

প্রশ্ন ২৩ | আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

 উত্তর : বঙ্গোপসাগরে ৬°৪৫′ উঃ থেকে ১৩°৪৫′ উঃ অক্ষরেখার মধ্যে ২৬৫ টি ছোটো বড়ো দ্বীপ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। দ্বীপগুলির মোট ক্ষেত্রমান ৮২৪৯ বর্গকিমি। দ্বীপগুলি টার্সিয়ারি যুগের বেলেপাথর ও চুনাপাথর দ্বারা গঠিত নিমজ্জমান পর্বতের উত্থিত অংশ। ব্যারেন ও নারকোন্ডাম দুটি আগ্নেয় দ্বীপ। ভারতে একমাত্র এই দুটি দ্বীপেই আগ্নেয়গিরি আছে। উত্তর আন্দামানের সাডেল পিক্‌ (৭৩৭ মি.) সমগ্র আন্দামানের সর্বোচ্চ অংশ। দক্ষিণ আন্দামানের মাউন্ট হ্যারিয়েট অন্য একটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:

১. চিত্রসহ হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

উত্তর : ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বত হল প্রকৃতপক্ষে ক নবীন ভঙ্গিল পর্বত। এই পর্বতের উৎপত্তি বা সৃষ্টির মাকে প্রধানত ২ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন—(i) মহীখাত জিওসিফাইন তত্ত্ব এবং (ii) পাতগাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ব

(1) মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব (Geocyncline Theory) : ইহাত তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন বিজ্ঞানী কোবার। এই তত্ত্ব অনুসারে তমান যে অঞ্চলটিতে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থান করছে, স্থানে আজ থেকে প্রায় বারো কোটি বছর আগে টার্সিয়ারি গে টেথিস সাগর নামে এক বিস্তীর্ণ অগভীর জলাভূমি ছিল, তাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত। কালক্রমে এই মহীখাতটির (আঙ্গারাল্যান্ড) ও দক্ষিণ (গন্ডোয়ানাল্যান্ড) পার্শ্বস্থ প্রাচীন মালভূমি দুটি থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত পলিরাশি নদনদী বাহিত পরে মহীধাতটিকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল। যেহেতু, টেথিস হীখাতটি ছিল ভূত্বকের একটি দুর্বল স্থান, সেহেতু এই পলিরাশি একসময় ভূ-স্তরে নিম্নমুখী চাপের সৃষ্টি করে। এই চাপের দলে টেথিস মহীখাতের তলদেশ ক্রমশ বসে যেতে থাকে, কলে প্রবল ভূআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এই ভূআন্দোলনের চলে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের তলদেশের ভারতীয় পাত এবং মারাল্যান্ডের তলদেশের এশিয়া পাত গতিশীল হয়ে পড়ে। ব্রতীর পাতের গতিবেগ অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় তা রা পাজের দক্ষিণ দিকে প্রবল আঘাত করে, যার ফলে ভূমি দুটি পরস্পরের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়।সংঘটিত পার্শ্বচাপে টেথিস সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তীকালে, এইসব ভাঁজগুলি দৃঢ় সংঘবদ্ধ ও উঁচু হয়ে বর্তমান হিমালয়ের রূপ পরিগ্রহ করেছে। হিমালয়ের শিলাস্তরে যে-সমস্ত জলজ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে। টেথিস সমুদ্রপৃষ্ঠ আঙ্গারাল্যান্ড টেথিস অবতলে পলি সঞ্জয় গন্ডোয়ানাল্যান্ড পার্শ্বচাপ পলি পাললিক শিলায় পরিণত হয়েছে পার্শ্বচাপ আঙ্গারাল্যান্ড পলিস্তরে ভাঁজের সৃষ্টি গন্ডোয়ানাল্যান্ড হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি পার্শ্বচাপ পার্শ্বচাপ  আঙ্গারাল্যান্ড মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব গন্ডোয়ানাল্যান্ড,

 (ii) পাতগাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) : পর্বতের গঠন সম্পর্কিত সর্বাধুনিকতত্ত্ব হল এই পাতগাঠনিক তত্ত্ব। উইলসন, মর্গান, পিচো প্রভৃতি ব্যক্তিগণ হলেন এই ধারণার প্রবক্তা। এই তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় যে, ভূত্বক—সাতটি বড়ো, কুড়িটি মাঝারি ও অসংখ্য ছোটো ছোটো পাত দ্বারা গঠিত। এই পাতগুলি তরল অ্যাথেনেস্ফিয়ারের ওপর গতিশীল অবস্থায় ভাসছে। পর্বতমালা উপত্যকা মহাদেশীয় পাত মহাদেশীয় পাত লিখোস্ফিয়ার লিথোস্ফিয়ার ম্যান্টেল পাতগাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব প্রাচীন মহাসাগরীয় পাত এই তত্ত্বে বলা হয় যে, বর্তমানে যেখানে হিমালয় পর্বত অবস্থিত করছে সেই স্থানটি ভারতের উপদ্বীপীয় ও ইউরেশিয়া নামক দুটি মহাদেশীয় পাতের সংযোগস্থল। পরস্পরের দিকে অগ্রসরগামী এই পাত দুটির মধ্যে ভারতীয় পাত বেশি গতিশীল3 ভারী হওয়ায়, ধীরগামী ও হালকা ইউরোপীয় পাতের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ভারতীয় পাতটি ভূগর্ভে প্রবেশ করে। এর এলে এই দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত পলিসঞিত টেথিস সহীখাতের পলিরাশিতে প্রবল চাপ পড়ে। ফলে ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে ইমালয় পর্বতের উত্থান হয়। 

আজ থেকে প্রায় ১২ কোটি বছর আগে টার্সিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বতের উত্থান পর্ব শুরু হলেও পর পর তিনটি ভূআন্দোলনের মাধ্যমে ইমালয়ের উত্থান পর্ব সম্পূর্ণ হয় এবং বহুযুগ ধরে তা চলে। প্রথম আন্দোলনের (১২ থেকে ৭ কোটি বছর আগে) ফলে টেথিস B হিমাদ্রি হিমালয়, দ্বিতীয় ভূ-আন্দোলনের (২.৫ থেকে ৩ কোটি ছর আগে) ফলে হিমাচল বা মধ্য হিমালয় এবং তৃতীয় বা সর্বশেষ আন্দোলনের ফলে (যা আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে) হিঃহিমালয় বা শিবালিক পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। 

তবে বলা হয় যে, হিমালয়ের গঠন প্রক্রিয়া এখনও সমাপ্ত হয়নি। যেহেতু, ভারতীয় পাতটি এখনও প্রতিবছর প্রায় ৫.৪ সেমি করে উত্তরদিকে এগিয়ে চলছে, সেহেতু, হিমালয়ের পাতগাঠনিক প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকায় হিমালয়ের উত্থান এখনও ঘটে চলেছে। 

প্রশ্ন ২.  ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগগুলির শ্রেণিবিভাগ করো এবং চিত্রের মাধ্যমে দেখাও। যে-কোনো একটি ভাগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

 উত্তর: ভূপ্রকৃতিগত বৈচিত্রা অনুসারে ভারতকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা (1) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (1) ারতের সমভূমি অঞ্চল: all উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল, (iv) উপকূলের সমভূমি অঞ্চল এবং (v) দ্বীপ অ আফগানিস্তান পাকিস্তান চিন ভারত ।

প্রশ্ন :৩ প্রস্থ বরাবর হিমালয় পর্বতের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা দাও।

উত্তর : ভূপ্রকৃতিগত পার্থক্য অনুসারে প্রস্থ বরাবর হিমালয় এতকে উত্তর থেকে দক্ষিণে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা : ) টেথিস হিমালয়, (২) হিমাদ্রি হিমালয়, (৩) হিমাচল হিমালয় ং (৪) শিবালিক হিমালয়। 

(১) টেথিস হিমালয় : ১২ কোটি বছর আগে হিমালয়ে প্রমবার ভূআলোড়নের সময় টেথিস হিমালয়ের উত্থান শুরু হয় যা হয় ৭ কোটি বছর আগে পর্যন্ত চলতে থাকে। হিমালয়ের চারটি তশ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে উত্তরে টেথিস হিমালয়ের অবস্থান। থস হিমালয়ের অধিকাংশ স্থানই তিব্বতে অবস্থিত, তাই এই শের নাম রাখা হয়েছে টেথিস হিমালয় বা তিব্বত হিমালয়। ছাড়া, জম্মু কাশ্মীরের উত্তর অংশ ও হিমাচল প্রদেশের সামান্য শ টেথিস হিমালয়ের অন্তর্গত। টেথিস হিমালয়ের গড় উচ্চতা হল ৩০০০ মিটার, তবে াথাও কোথাও এর উচ্চতা ৪৫০০-৫০০০ মি.। ভারতে থিস হিমালয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০০ কিমি এবং প্রস্থ ৫০ কিমি কে ২২৫ কিমি। টেথিস অংশের উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণিগুলি -জাস্কর, লাডাক, কারাকোরাম, কৈলাস ইত্যাদি। কারাকোরাম পর্তশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K2 (৮৬১১ মি.) হল ভারতের চতম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এ ছাড়া অন্যান্য স্নখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গগুলি হল- গ্যাসেররুম I, গাসেররুম II, পিক। এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথগুলি হল— কারাকোরাম, দলপীর, জোজিলা ইত্যাদি।  

(২) হিমাদ্রি হিমালয় : আজ থেকে প্রায় ১২ কোটি বছর কে ৭ কোটি বছর আগে টেথিস হিমালয়ের উত্থানের সাথে থেই হিমাদ্রি হিমালয়ের সৃষ্টি হয়। হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে এবং টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে মালয় পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বতশ্রেণিটি অস্থিত। এই পর্বতশ্রেণি পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। হিমাদ্রি হিমালয়ের গড় উচ্চতা ৬২০০ মি.। হিমালয়ের উচ্চতম শৃঙ্গগুলি হিমাদ্রিতেই অবস্থিত, যথা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৫০ মি.), তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৯৮ মি.), মাকালু, ধবলগিরি, অন্নপূর্ণা, নন্দাদেবী, কেদারনাথ, কামেট, নাঙ্গা পর্বত, বদ্রীনাথ, ত্রিশূল ইত্যাদি। হিমাদ্রি হিমালয় সারাবছর তুষারাবৃত থাকে বলে এর অপর নাম হল হিমগিরি। হিমাদ্রি হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য গিরিপথগুলি হল— -বুর্জিলা, জোজিলা, বারা-লাচা-লা, সিপকিলা, নিতি পাস, লিপু লেক, নাথুলা, জেলেপলা ইত্যাদি। হিমাদ্রি হিমালয়ের প্রধান হিমবাহগুলি হল—গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, মিলাম ইত্যাদি। পর্বতশ্রেণিটি উত্তর-পূর্বে নামচাবারওয়ার কাছে ও উত্তর পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বতের কাছে চুলের কাঁটার ন্যায় বেঁকে গেছে। 

(৩) হিমাচল হিমালয় : প্রায় ২.৫ থেকে ৩ কোটি বছর আগে হিমালয় অঞ্চলে দ্বিতীয়বার প্রবল ভূআলোড়নের সময় হিমাচল হিমালয়ের সৃষ্টি হয়। শিবালিকের উত্তরে এবং হিমাদ্রির দক্ষিণে ৬০-৯০ কিমি চওড়া পর্বতশ্রেণিটি হিমাচল হিমালয় বা মধ্য হিমালয় নামে পরিচিত। হিমাচল হিমালয়ের গড় উচ্চতা ৩৫০০-৪৫০০ মিটার, এদের মধ্যে পিরপাঞ্জাল উচ্চতম। হিমাচল হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণিগুলি হল—পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিব্বা, মুসৌরি প্রভৃতি। এটি প্রাচীন রূপান্তরিত শিলায় গঠিত এবং এটি ক্রমশ উত্তরে ঢালু হয়ে হিমাদ্রিতে মিশেছে। পিরপানজাল পার্বত্য অংশে বেশ কয়েকটি উপত্যকা রয়েছে, যেমন—জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্তর্গত পিরপাঞ্চাল ও উচ্চ হিমালয়ের মধ্যবর্তী কাশ্মীর উপত্যকা (১৩৫ কিমি দীর্ঘ ও ৪০ কিমি. চওড়া) পিরপাঞ্জাল ও যওলাধরের মধ্যে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের কুলু উপত্যকা, শিবালিক ও ধওলাধরের মধ্যে কাংড়া উপত্যকা; এ ছাড়াও রয়েছে শতদ্রু উপত্যকা, লাহুল ও স্পিটি উপত্যকা ইত্যাদি। হিমাচল হিমালয়ের উল্লেখযোগ্য গিরিপথগুলি হল – বানিহাল, পিরপাঞ্জাল, বিদিল, সোলারগর ইত্যাদি। পিরপাতাল পর্বতশ্রেণির মধ্য দিয়ে কৃষাণগঙ্গা, ঝিলাম (বিতস্তা) ও চন্দ্রভাগা নদী প্রবাহিত হয়েছে। 

 (৪) শিবালিক হিমালয় : আজ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ থেকে ২ কোটি বছর আগে হিমালয়ে প্রবল ভূআলোড়নের সময়ে শিবালিক হিমালয়ের সৃষ্টি হয়। এটি হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণি যা হিমাচল হিমালয়ের সমাস্তরালভাবে প্রায় ২৫০০ কিমি. অঞ্চলে অবিচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত রয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ৬০০-১৫০০ মিটার এবং প্রস্থ ১০-১৫ কিমি। শিবালিক-এর উত্তর অংশ ক্রমশ ঢালু হয়ে বিভিন্ন উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শিবালিকের দক্ষিণ ঢাল ও উত্তর ঢাল গড়ানো। হিমাচল হিমালয় ও শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী নীচু উপত্যকা উত্তরাঞ্চল রাজ্য দুন নামে পরিচিত। যেমন— দেরাদুন, কোটা, চৌখাম্বা, পাটলি প্রভৃতি। দেরাদুন হল ভারতের বৃহত্তম দুন উপত্যকা। 

প্রশ্ন ৪. দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বতের ভূপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর : দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বতের ভূপ্রকৃতি : পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পূর্ব হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— (i) পশ্চিম হিমালয়, (ii) মধ্য হিমালয় (নেপালে অবস্থিত) এবং (iii) পূর্ব হিমালয়। (i) পশ্চিম হিমালয় : এই হিমালয় পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে, পূর্বে নেপালের পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাঞ্চল এই হিমালয়-এর অন্তর্গত। এই পশ্চিম হিমালয়কে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

(ক) কাশ্মীর হিমালয়; (খ) পাঞ্জাব ও হিমাচল হিমালয় এবং (গ) কুমায়ুন হিমালয়। (ক) কাশ্মীর হিমালয় : জম্মু কাশ্মীরের প্রায় ৩.৫ লক্ষ বর্গ কিমি স্থান জুড়ে অবস্থান করছে এই কাশ্মীর হিমালয়। এখানে দক্ষিণ থেকে উত্তরে পরপর পাঁচটি পর্বতশ্রেণি দেখা যায়। পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ থেকে উত্তরে রয়েছে- (i) শিবালিকের জম্মু ও পু পাহাড়, (ii) পিরপাঞ্জাল, (iii) জাস্কর পর্বত, (iv) লাডাক ও (v) কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। • উচ্চ হিমালয় ও পিরপাঞ্চালের মাঝে রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা। • এই অংশে অবস্থিত লাডাক মালভূমি, ভারতের উচ্চতম মালভূমি। • এখানকার হিমবাহ: কারাকোরাম পর্বতের সিয়াচেন (ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ, ৭৫ কিমি দৈর্ঘ্য), ফেডচেঙ্কো (৭৪ কিমি), হিসপার, বিয়াফো, বলটারো ইত্যাদি। 

• হ্রদ : ডাল ও উলার হ্রদ। 

• গিরিপথ: বানিহাল বা জওহর, পিরপাঞ্জাল।

 (খ) পাঞ্চাব ও হিমাচল হিমালয় : পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশে প্রায় ৬৪ হাজার বর্গকিমি স্থান জুড়ে এই হিমালয় অবস্থিত। এই হিমালয়ের গড় উচ্চতা ৩৫০০-৪৫০০ মিটার ও এটি ৬০-৮০ কিমি চওড়া। ধওলাধর, নাগটিব্বা, মুসৌরি এখানকার প্রধান শৈলশিরা। 

(গ) কুমায়ুন হিমালয়: উত্তরাঞ্চল-এর প্রায় ৪৬০০০ বর্গ কিমি স্থান জুড়ে অবস্থান করছে কুমায়ুন হিমালয়। কুমায়ুনের দক্ষিণ অংশের গড় উচ্চতা ৬০০ মি. কিন্তু উত্তর অংশের গড় উচ্চতা হল ৬০০০ মিটারের বেশি।

 • এখানকার প্রধান পর্বতশ্রেণি শিবালিক, হিমাচল, হিমাদ্রি। 

• শিবালিক ও হিমাচলের মধ্যে দুন উপত্যকা অবস্থিত।

 • এখানে যেসকল হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ দেখা যায় তা 'তাল' নামে পরিচিত। যেমন—নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল, পুনাতাল। • এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল—নন্দাদেবী, চৌখাম্বা, কামেট, ত্রিশূল। এখানকার হিমবাহ দুটি হল—গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী।

 • এখানকার কুলু ও কাংড়া উপত্যকা বিখ্যাত।

 (ii) পূর্ব হিমালয়: পশ্চিমে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্ব নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের এই অংশকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

(ক) সিকিম ও দার্জিলিং হিমালয় (খ) ভুটান হিমালয় এবং (গ) অরুণাচল হিমালয়। (ক) সিকিম ও দার্জিলিং হিমালয় : এই পর্বতমালা পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্যে অবস্থিত। • 

এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি হল—কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৯৮ মি. ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম), সান্দাকফু (৩৬৩০ মি. পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ), ফালুট, সবরগ্রাম ইত্যাদি।

 • এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ নাথুলা, বুমলা, জেলেপলা ইত্যাদি।

 • প্রধান হিমবাহ জেমু, তালুং, পৌহুনরী।

 (খ) ভুটান হিমালয় : এটি ভুটানে অবস্থিত।

 (গ) অরুণাচল হিমালয় : এটি অসম ও অরুণাচলে অবস্থিত। এখানের পর্বতশ্রেণি হল হিমাদ্রি, হিমাচল, শিবালিক এবং কাংটো হল এখানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বুমলা এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথ। 

প্রশ্ন | ৫ | কাশ্মীরে ভ পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।* [মা.প. [১৮] | 

উত্তর:-  পশ্চিম হিমালয় পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নেপাল সীমান্তে অবস্থিত কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পশ্চিম হিমালয়কে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : (১) কাশ্মীর হিমালয়, (২) হিমাচল হিমালয় ও (৩) কুমায়ুন হিমালয়।

(১) কাশ্মীর হিমালয় : জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্রায় ৩,৫০,০০০ বর্গকিমি স্থান জুড়ে কাশ্মীর হিমালয় অবস্থিত। পাঞ্জাবের সমভূমি থেকে ক্রমশ উঁচু হয়ে এখানকার শিবালিক পর্বতমালা উত্তরে হিমাচলের উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণি পিরপাঞ্জাল-এ মিশেছে। শিবালিকের গড় উচ্চতা প্রায় ৩,০০০ মিটার। এই অঞ্চলের দক্ষিণ থেকে উত্তরে পর পর পাঁচটি পর্বতশ্রেণি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে, এরা হল : (i) শিবালিক পর্বতের জম্মু ও পুঞ পাহাড়, (ii) পিরপাঞ্জাল, (iii) জাস্কার, (iv) লাডাক এবং সবশেষে (v) কারাকোরাম পর্বত। পিরপাঞ্জাল ও উচ্চ হিমালয়ের মধ্যে রয়েছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর উপত্যকা। শ্রীনগরের দক্ষিণে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি (৩,৫০০-৫০০ মি) কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেবলমাত্র বানিহাল বা জওহর (উচ্চতা ২,৮৩২ মি.), পিরপান্জাল (৩,৪৯৪ মি) ও বুলন্দপির (৪,২০০ মি.) প্রভৃতি গিরিপথগুলি দিয়ে নিসর্গ সৌন্দর্যের জন্য পৃথিবীবিখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়। কাশ্মীর উপত্যকা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০ কি.মি. এবং প্রস্থে প্রায় ৫০ কি.মি. বিস্তৃত। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাচীন কোনো হ্রদ ভরাট হয়ে এই উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। ডাল উলার প্রভৃতি হ্রদগুলি এই প্রাচীন স্মৃতি আজও বহন করছে। 

(২) হিমাচল হিমালয় : হিমাচল বা পাঞ্জাব হিমালয় পাঞ্চাব ও হিমাচল প্রদেশের প্রায় ৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে অবস্থিত। দক্ষিণ থেকে উত্তরে এই অঞ্চলটির উচ্চতা ৬০০ মিটার থেকে ৬,০০০ মিটার। সর্বদক্ষিণে অবস্থিত শিবালিকের গড় উচ্চতা ৬০০-৭০০ মিটার। শিবালিকের উত্তরে রয়েছে ধওলাধর ও নাগটিব্বা পর্বতশ্রেণি। এর উচ্চতা ৩,৫০০-৪, ৫০০ মি.। এদের উত্তরে রয়েছে পিরপাঞ্জাল ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি। এদের শৃঙ্গগুলি প্রায়ই তুষারাবৃত থাকে। শিবালিক ও ধওলাধরের মধ্যে কাংড়া, নাগটিব্বা ও ধাওলাধরের মধ্যে শতদ্র, পিরপাঞ্জাল ও ধওলাধরের মধ্যে কুলু, উচ্চ হিমালয় ও জাস্করের মধ্যে স্পিটি এবং পিরপাঞ্জাল ও উচ্চ-হিমালয়ের মধ্যে লাহুল উপত্যকা অবস্থিত। এ-সমস্ত উপতাকাগুলির প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম। পিরপাঞ্চাল-এর মধ্যবর্তী রোটাং গিরিপথ দিয়ে লাহুল উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়।

 (3) কুমায়ূন হিমালয়: প্রায় ৪৬,০০০ বর্গকিমি বিস্তৃত কুমায়ুন হিমালয় পুরোপুরিভাবে নবগঠিত উত্তরাখন্ড রাজ্যের অন্তর্গত। শিবালিক, হিমাচল ও হিমাদ্রি এই তিনটি পর্বতশ্রেণি এখানে দেখতে পাওয়া যায়। সর্বদক্ষিণে অবস্থিত শিবালিক পর্বতশ্রেণি প্রায় ১,০০০ মিটার উঁচু। শিবালিক পর্বতশ্রেণি উত্তর দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে দুন উপত্যকায় মিশেছে। পুন উপত্যকাগুলি শিবালিক ও হিমালয়ের মধ্যবর্তী অংশে সমান্তরালভাবে বিস্তৃত। ৩৫ কিমি দীর্ঘ ও ২৫ কিমি বিস্তৃত দেরাদুন উপত্যকাটি সর্ববৃহৎ। শুন উপতাকাগুলির উত্তরে রয়েছে হিমাচল পর্বতশ্রেণি, এর গড় উচ্চতা ১,৬০০ মিটার। এখানকার মুসৌরি পর্বতশ্রেণিতে মুসৌরি শৈলনগরী অবস্থিত। কুমায়ুন হিমালয়ের উচ্চ অংশে অনেকগুলি হ্রদ বা তাল আছে। এদের মধ্যে নৈনিতাল, ভীমতাল, সাতাতাল, পুনাতাল প্রভৃতি বিখ্যাত। এই অঞ্চলে 'তাল' বলতে হ্রদকে বোঝায়। হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে হিমাদ্রি হিমালয় অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা ৬,০০০ মিটারের বেশি। হিমাদ্রির উঁচু শুতাগুলির মধ্যে নন্দাদেবী (৭,৮১৭ মি.), কামেট (৭,৭৫৬ মি.), চৌখাম্বা (৭,১০৮ মি.), ত্রিশূল (৭,১২০ মি.), সুনগিরি (৭,০৬৬ মি.), কেদারনাথ (৬,৯৪০ মি.) নন্দাকোট (৬,৮৬১ মি.), গঙ্গোত্রী (৬.৬১৪ মি.), প্রভৃতি বিখ্যাত। এই শৃঙ্গগুলি প্রায়ই বরফাবৃত থাকে। এখানকার গঙ্গোত্রী ও যমুনেত্রী হিমবাহ থেকে যথাক্রমে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে। 

৬ | পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা দাও। [

 উত্তর :- পশ্চিমে নেপালের সীমানায় অবস্থিত সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের অংশকে পূর্ব হিমালয় বলা হয়। গড়ে ১৫০০ মিটার উচ্চতাযুক্ত এই হিমালয় সমগ্র সিকিম, ভুটান, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা ও প্রায় সমগ্র অরুণাচল প্রদেশজুড়ে বিস্তৃত। • আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই পূর্ব হিমালয়কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

(১) সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়, (২) ভুটান হিমালয় (ভুটানে অবস্থিত), (৩) অরুণাচল হিমালয়। (১) সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়: সিকিমের পশ্চিমদিকে অবস্থিত সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বদিকে ডানকিয়া পর্বতশ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত এই সিকিম দার্জিলিং হিমালয়। • এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ হল- কানজঙ্ঘা (৮৫১৮ মি. ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ), সান্দাকফু (৩৬৩০ মি.) পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ), ফালুট (৩৫৯৬ মি.), সবরগ্রাম (৩৫৪৩ মি.)। 

• এখানকার উল্লেখযোগ্য গিরিপথগুলি হল—নাথুলা, বুমলা, জেলেপলা ইত্যাদি। নাথুলা ও জেলেপলা গিরিপথের সাহায্যে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। •দার্জিলিং হিমালয়ের মিরিক" ও সিকিম হিমালয়ের “ছালু” হল এখানের দুটি বিখ্যাত হ্রদ। 

• এখানের প্রধান হিমবাহ—জেমু, তালুং, পৌহুনরী।


প্রশ্ন ৭.পূর্ব ভারতের পার্থতা ও মালভূমি অঞ্চলের বিবরণ দাও। 

উত্তর : উত্তর-পূর্ব ভারতে পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠ অংশ এবং পূর্ব হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন শাখা-পর্বতশ্রেণি ও পাহাড় নিয়ে গঠিত পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চল বা পূর্বাঞ্চল নামে পরিচিত। । ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত অনুণাচল প্রদেশের দক্ষিণাংশ, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা এক অসম রাজ্যের কাছাড় জেলা উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের এই পার্বত্য অঞ্চলটি পশ্চিম দিকে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অন্যলটি দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের মধ্য দিয়ে আরাকান-ইয়োমা পর্বতশ্রেণির অংশ হিসেবে মায়ানমারে প্রসারিত হয়েছে। 

• ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য আশে মেঘালয় মালভূমি বাদে ভারত ও মায়ানমার সীমান্ত বরাবর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত অনেকগুলি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির সমষ্টিকে এককথায় উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল উত্তর-পূর্বের পার্বত্য বলে। ও মালভূমি অঞ্চল Roeter উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হলো- পাটকই পাহাড়, মা, নাগা পাহা বরাইল পর্বতশ্রেণি, কোহিনা পাহাড়, উত্তর কাছাড় পাহাড়, মণিপুর পাহাড়, মিজো পাহাড়, ত্রিপুরা পাহাড় ইত্যাদি। মিশনি ও পাটকই পাহাড় দুটি অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত। উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়গুলির মধ্যে মিশমি পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। মিশমি পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ দাফাকুম (উচ্চতা ৪,৫৭১ মিটার) হল উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শুনা। পাটকই পাহাড় আরও দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে নাগাল্যান্ডের বরাইল পাহাড়ের সাঙ্গে মিশে গিয়েছে। করাইল পাহাড়ের একটি শাখা অসমের কাছাড় হয়ে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বরাইল পাহাড় আরও পূর্ব দিকে বিস্তৃত। হয়ে কোহিমা পাহাড় এবং নাগা পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মেঘালয় মালভূমি 

নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম সরামতী (উচ্চতা ৩,৯২৬ মিটার)। কোহিমা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম জাপারে (উচ্চতা ২,১১৫ মিটার)। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির উচ্চতা নাগাল্যান্ডের দক্ষিণ দিকে ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে।

পূর্বাঞ্চলের পাহাড়গুলির গড় উচ্চতা ১,৫০০-৪,০০০ মি.। এই অঞ্চলে পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত কোনো নদী উপত্যকা না-থাকায় যাতায়াত খুব কষ্টসাধ্য। 

• মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকাটি হল পর্বতবেষ্টিত একটি বিশাল উপত্যকা। এখানকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত লোক্‌টক হ্রদ নিসর্গ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। জাম্পুইটাং, সাখানটাং, লংতরাই, বড়মুনা, আঠারোমুড়া প্রভৃতি পাহাড়গুলি ত্রিপুরার পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় সমান্তরালে অবস্থান করছে। ত্রিপুরার পাহাড়গুলির মধ্যে জাম্পুইটাং পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। বেতালিং শিব (উচ্চতা ৯৭৫ মিটার) হল ত্রিপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। লুসাই বা মিজো পাহাড় মিজোরাম রাজ্যে অবস্থিত। নউজুয়ারনো হল লুসাই পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (উচ্চতা ২,১৪৮ মিটার)।

 মেঘালয় মালভূমি: মেঘালয় প্রদেশে অবস্থিত গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া ও মিকিরের পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত মেঘালয় মালভূমিটি প্রকৃতপক্ষে ছোটোনাগপুরের মালভূমিরই একটি বিচ্ছিন্ন অংশবিশেষ। ভূআন্দোলনে ছোটোনাগপুর ও মেঘালয় মালভূমির মধ্যবর্তী অংশ প্রাচীনকালে বসে যায় এবং ওই অবনমিত অংশ গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দ্বারা ভরাট হওয়ার কারণে মেঘালয় মালভূমি ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। 

• গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া এই অঞ্চলের তিনটি ক্ষয়জাত পাহাড়। এই মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নকরেক (১,৪১২ মিটার)। উত্তরে বিস্তৃত রয়েছে শিলং পাহাড়, যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল- শিলং উত্তর-পূর্ব দিকে বিস্তৃত রয়েছে খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়। শিলং মালভূমির দক্ষিণে চুনাপাথরে গঠিত চেরা শিলং (১,৯৬১ মিটার)। মালভূমি অবস্থিত।

প্রশ্ন :৮ ভারতের উত্তরের বৃহৎ সমভূমির ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উত্তর :  অবস্থান: উত্তরে বিশালাকার হিমালয় পর্বত এবং দক্ষিণে মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির মধ্যবর্তী আশে উত্তর ভারতেন 

উৎপত্তি: ভূবিজ্ঞানীদের মতে, উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি 200 1 হিমালয় ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমির মধ্যবর্তী গহ্বরে সিন্দু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র • তাদের অসংখ্য উপনদী সম্মিত পলি যারা বর্তমানে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

 সমৃভূমি অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ : উত্তর ভারতের বিশাল এই সমভূমিকে প্রধানত ৪টি ভাগে ভাগ করা যায়। (১) রাজস্থান সমভূমি (2) সি সমভূমি: (৩) গাঙ্গেয় সমভূমি এবং (a) পুত্র সমভূমি। (2) ान সা নানী আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থান রাজ্যে ভারতের মরুভূমি | নিম্ন সমভূমি অবস্থিত এই মরুভূমির নাম 'মরুস্থলী'। এর আয়তন প্রায় ১.৭৫ লক্ষ বর্গকিমি। গড় উচ্চতা হল ১৫০ মি.। এখানকার এক অন্তবাহিনী নদী হল লুনি নদী। এখানকার লবণাক্ত হ্রদ হল- পাচপত্র, দি সম্বর ইত্যাদি। এখানকার শুষ্ক অগভীর খাত বা হুনগুলিকে বলে • মরুভূমির চলমান বালিয়াড়িকে বলে থ্রিয়ান। • ভূপ্রকৃতি অনুসারে মধু অঞ্চলকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-(1) বা মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশকে বাগার বলে। (১) ে আরাবল্লির পশ্চিমের প্লাবনভূমি অঞ্চল হল রোহি। ক্ষুদ্র মধু রোহি অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্তের অংশ হল ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল। (iv) হামাদা-ক্ষুদ্র মধুর পশ্চিমের বালি ও শিলাখন্ড গঠিত অঞ্চল হল হামাদা, এবং (v) মরুস্থলী- সর্ব পশ্চিমে বালি, বালিয়াড়ি, পাথর দ্বারা গঠিত শুষ্ক, রুক্ষ ও উদ্ভিদহীন অঞ্চল হল মরুল।

 (২) সিন্ধু সমভূমি : সিন্ধুনদের উপনদী বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও শতদ্রুর পলি সময়ের ফলে গঠিত পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চলটি পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লি রাজ্যের প্রায় ১৫,৭১৪ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে— একে সিন্ধু সমভূমিও বলা হয়। নদীগুলির মধ্যবর্তী সমভূমিকে এই অঞ্চলে 'দোয়াব' বলা হয়। • পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ অংশ (রাজস্থান সমভূমি) খরাপ্রবণ মরুভূমি (ভারতীয় মরুভূমি অঞ্চল) হলেও উত্তর অংশ পলিগঠিত উর্বর সমভূমি (পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সমভূমি ) । নদীর প্লাবনভূমিকে এই অলে 'ধায়া (Dhaya) বলা হয়। উত্তরের ক্ষ অল 'খোশ' (Chos) নামে পরিচিত। 

(৩) গঙ্গেও সমভূমি :মধ্যভাগের সমভূমি অঞ্চলটি গঙ্গা, যমুনা এবং তাদের বিভিন্ন উপনদীর সময় কাজের ফলে গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পশ্চিম অংশের সমভূমিকে উচ্চগাঙ্গেয় সমভূমি বলা হয়। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা ১০০-৩০০ মিটার।

 • উচ্চগাঙ্গেয় সমভূমির পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চলকে 'ভাব' এবং ভাবরের দক্ষিণের অঞ্চলকে তরাই বলে। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশ এবং বিহারের উত্তরাংশে অবস্থিত সমভূমিটি মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের গড় • উচ্চগাঙ্গেয় সমভূমি ও মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমির প্রাচীন পলিগঠিত অঞ্চলকে ভাঙ্গার এবং নবীন পলি সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা ৫০ মিটারেরও কম। তাই এই অঞ্চলকে খাদার বলা হয়। • গায়ে লীপ অঞ্চল গঙ্গা-পদ্মা ও ভাগীরথী- র্তী ভূভাগটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের অংশবিশেষ।  

(৪) ব্রক্ষ্মপুত্র সমভূমি: (১) গাঙ্গেয় সমভূমির পূর্ব দিকে অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তার বিভিন্ন উপনদী যে সংকীর্ণ সমভূমি গঠন করেছে তাকে রগ্নপুত্র সমভূমি বা ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকা বলা হয়। এই উপত্যকার ভূমির ঢাল অত্যন্ত কম। (২) ব্রক্ষ্মপুর সমভূমির দৈর্ঘ্য ৭২০ কিমি. প্রস্থ ৬০-১০০ কিমি, ক্ষেত্রফল প্রায় ৫৬ হাজার ৫০০ বর্গকিমি এবং গড় উচ্চতা ৭০ মিটার। (৩) এই অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে বড়ো বড়ো 'বালুচর' বা দ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে মাজুলী দ্বীপটি হল বিশ্বের বৃহত্তম নদী - দ্বীপ।

প্রশ্ন ৯. সংক্ষেপে খাচ্ছোয় সমভূমির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো। *  

উত্তর : গাােয় সমভূমি: পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত গালোয় সমভূমি বিস্তার লাভ করেছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত এই সমভূমির মোট আয়তন প্রায় ৩,৭৫,০০০ বর্গকিমি। • ভূপ্রকৃতি অনুসারে এই বিশাল সমভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা- 

(১) উচ্চ গায়ে সমভূমি, (২) মধ্য-গাজো সমভূমি এবং (৩) নিম্ন-গায়ে সমভূমি। পাকিস্তান (১) উচ্চ-গাঙ্গেয় সমভূমি : উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পশ্চিম অংশের প্রায় ৫১% অল এই সমভূমির অন্তর্গত। এই সমভূমির গড় উচ্চতা ১০০-৩০০ মিটার। এই অঞ্চলটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণপূর্বে ঢালু। গাঙ্গেয় সমভূমির প্রাচীন পলি সমৃদ্ধ অঞ্চলকে "ভাষার এবং নবীন পলি গঠিত শত নেপাল রংপুর ন ] উচ্চ গ্যা সমভূমি ] মধ্য এশা সমভূমি গাঙ্গেয় সমভূমি 200 1 কিমি | নিম্নগা সমভূমি অঞ্চলকে 'খাদার' বলা হয়। নবীন পলিগঠিত খাদার সমভূমি পাঞ্জাবে 'বেট' নামে পরিচিত। উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চলকে ভাবর এবং ভাববের দক্ষিণাংশের অঞ্চলকে 'তরাই বলে। 

• উচ্চগলা সমভূমির শ্রেণিবিভাগ: আঞ্চলিক গঠনের তারতম্য অনুসারে এই সমভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—গঙ্গা-যমুনা দোয়াব, রোহিলাও সমভূমি, অযোধ্যা সমভূমি ও যমুনা পার সমভূমি।

(২) মধ্য-গাঙ্গেয় সমভূমি: উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশে এবং বিহার রাজ্যের উত্তরাংশে এই সমভূমি প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার বর্গকিমি স্থান জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এবং এর গড় উচ্চতা ২৫-১০০ মিটার। প্রাচীন ভাঙ্গর ও নবীর খাদার মৃত্তিকায় গঠিত এই অঞ্চলটির মৃত্তিকা উর্বর। 

• মধ্য-গঙ্গা সমভূমির বৈশিষ্ট্য : (i) এই অঞ্চলটিতে অসংখ্য প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদও দেখতে পাওয়া যায়। (ii) এই অঞ্চলের শিবালিক পর্বতের পাদদেশের প্রস্তরময়, নুড়ি ও বালিপূর্ণ ভূমিভাগ ভাবর নামে পরিচিত। (iii) ভাবরের দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত জলাকীর্ণ ও জঙ্গলময় অঞ্চল তরাই নামে পরিচিত। (iv) মধ্য গঙ্গা সমভূমিতে বহু জলাভূমি দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলি দক্ষিণ বিহারে জলা বা তাল এবং উত্তর বিহারে চাউর নামে পরিচিত। নদীর মধ্যবর্তী বালুচরগুলি দিয়ারা নামে পরিচিত।  

(৩) নিম্ন-গাঙ্গেয় সমভূমি : বিহার রাজ্যের কিষাণগঞ্জ এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের (দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল ও পুরুলিয়াজেলার মালভূমি অংশ বাদে) প্রায় ৮১,০০০ বর্গকিমি স্থানে এই সমভূমিটি বিস্তৃত। নিম্ন-গাঙ্গেয় সমভূমির গড় উচ্চতা ৩-১০০ মিটার। নদী-সঞ্চিত নবীন পলি মাটিতে এই অঞ্চলটি সমৃদ্ধ। নদনদী ও মৃত্তিকার পার্থক্য অনুসারে নিম্ন-গাঙ্গেয় সমভূমিটিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : (ক) তরাই ও ডুয়ার্স, (খ) উত্তরবঙ্গ সমভূমি, (গ) বদ্বীপ অঞ্চল এবং (ঘ) রাঢ় অঞ্চল। (ক) হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি, পলি, বালি গঠিত পাদদেশীয় সমভূমি হল তরাই ও ডুয়ার্স, * (খ) তরাই-ডুয়ার্স-এর দক্ষিণের সমভূমি হল উত্তরবঙ্গ সমভূমি। এর আবার তিনটি অংশ— (i) বরেন্দ্রভূমি, (ii) তাল ও (iii) দিয়ারা। (গ) পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে বদ্বীপ সমতল ও সর্বাধিক উর্বর। এর তিনটি অংশ। (i) সক্রিয় বদ্বীপ, (ii) পরিণত বদ্বীপ এবং (iii) মৃত বদ্বীপ। *

 (ঘ) পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে মৃদুতাল লালমাটি গঠিত অঞ্চল হল রাঢ়।

প্রশ্ন ১০. ভারতের সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমি সম্পর্কে যা জান লেখো। 

উতর : সিন্ধু সমভুমি : ভারতের উত্তরের * (ঘ) পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে মৃদুতাল লালমাটি গি সিন্ধু সমভূমি নেপাল (iv) চার্জ দোয়াব এবং (৩) সিন্ধু-সাগর দোয়াব। সমভূমি অঞ্চলের পশ্চিমাংশে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি ও রাজস্থানের সামান্য অংশ নিয়ে এই সিন্ধু সমভূমি গঠিত। সিন্ধু নদের উপনদী-ইরাবতী, 200 বিপাশা, শঙ্কু, বিতস্তা ইত্যাদি নদী বিধৌত পলি সজ্জিত হয়ে এই সমভূমি গঠিত হয়েছে। এর মোট ক্ষেত্রমান এক লক্ষ বর্গকিমি এবং গড় উচ্চতা ২৫০ মিটার। অঞ্চলটি যমুনা নদীর পশ্চিম দিক থেকে প্রসারিত হয়ে পাকিস্তানের কিছু অংশেও বিস্তার লাভ করেছে। এখানকার নদী তীরবর্তী নতুন পলিগঠিত স্থানসমূহকে বলা হয় 'বেট' এবং নদী দূরবর্তী প্রাচীন পলিগঠিত অংশকে বলে বাগার। এখানে প্লাবনভূমিকে স্থানীয় ভাষার 'ধায়া এবং ক্ষয় ভূমিকে 'খোশ' বলে। সিন্ধু সমভূমিতে পাঁচটি দোয়াব দেখা যায়। যথা (1) কিন্তু জলন্ধর দোয়াব, (i) বারি দোয়াব, (iii) রেচনা দোয়াব, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা 83 

• ব্রহ্মপুত্র সমভূমি: উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের একেবারে পূর্ব প্রান্তের সমভূমিকে ব্রহ্মপুত্র সমভূমি বলে। পূর্বে সাদিয়া থেকে পশ্চিমে ধুবড়ি পর্যন্ত প্রসারিত (প্রায় ৭২০ কিমি দীর্ঘ ও ৬০-১০০ কিমি বিস্তৃত) এই সমভূমি অসম সমভূমি নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলটির ক্ষেত্রমান হল প্রায় ৫৬ হাজার বর্গকিমি এবং গড় উচ্চতা হল ৩০-১১০ মিটার। ব্রহ্মপুত্র ও তার বিভিন্ন উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি গঠিত হয়েছে। স্বপ্নপুত্র ও তার অসংখ্য উপনদী সহিত পলিরাশি দিয়ে। গঠিত এই উপত্যকা মোটামুটি সমতল এবং ভূমির ডাল অত্যন্ত কম। পলিসমৃদ্ধ হওয়ায় এই অঞ্চলটি খুবই উর্বর। নদীর নিম্নগতিতে সমভূমির ওপর দিয়ে মণিপুর প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্রহ্মপুত্র নদ তার গতিপথে বহু স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ও বালুচর সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে 'মাজুলী' নামক বালুচরটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ। ব্রহ্মপুত্র সমভূমিতে প্রতিবছরই বন্যা হয়। 

প্রশ্ন ১১. রাজস্থান মরুভূমির অবস্থান ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো এবং শ্রেণিবিভাগ করো।

 উত্তর : রাজস্থান মৰুভূমি: অবস্থান: উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের পশ্চিমাংশে, পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণ দিক থেকে আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমদিক পর্যন্ত, রাজস্থানের সমগ্র পশ্চিমাংশ জুড়ে এই মরুভূমিটি অবস্থিত। ভারতের এই মরুভূমি “ধর মরুভূমি" নামে। পরিচিত। এর আয়তন প্রায় ১.৭৫ লক্ষ পাকিস্তান ভারতীয় মরু অল পাণ্ডাৰ সমভূমি বর্গকিমি। •

 ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: i) চরমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বালুকাভূমি হল এই অন্যলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। i) এই অঞ্চলটি উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঢালু। iii) এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম, তাই নদী এখানে বেশি নেই। জুনি হল এই অঞ্চলের একমাত্র অন্তর্বাহিনী নদী। এ ছাড়া বানস্ নামে অপর এক নদীও এখানে অবস্থিত। করো (চিত্রসহ)। আরাবল্লী পর্বত CATE গুৰু শিখর নির্দেশিকা হামাদা বা পাথুরে অঞ্চল म iv) এখানকার শুষ্ক অগভীর খাত বা হ্রদগুলি 'ধান্দ' বা 'প্লায়া' নামে পরিচিত। এখানকার উল্লেখযোগ্য হ্রদগুলি হল সম্বর হ্রদ (ভারতের বৃহত্তম লবণাক্ত জলের হ্রদ), দিওয়ানা, কুচামন, পাচপন্ন, বোলসন ইত্যাদি। (v) এই অঞ্চলের বহু সি ও বার্খান বালিয়াড়ি দেখা যায়। vi) এখানকার চলমান বালিয়াড়িগুলি 'প্রিয়ান' নামে পরিচিত। ii) রাজস্থানের একেবারে পশ্চিমে বালি, বালিয়াড়ি, পাথর ইত্যাদি দ্বারা মরুস্থলী গঠিত (‘মরু' শব্দের অর্থ 'মৃত' এবং 'স্থ শব্দের অর্থ 'দেশ', অর্থাৎ মৃতের দেশ) iii) রাজস্থান সমভুমিতে ছোটো ছোটো প্রস্রবণ দেখা যায়, যার পার্শ্ববর্তী উর্বর জমিতে খেজুর ও পানজাতীয় গাছ ও তৃণ জন্মায় একেই বলে মরুদ্যান। x) এর মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লি পর্বত পর্যন্ত প্রায় উচ্চ সমভূমি রাজস্থান বাগার' নামে পরিচিত। 

শ্রেণিবিভাগ : ভূপ্রকৃতি অনুসারে ভারতীয় মরু অঞ্চলকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়, যেমন:- (১) বাগার অঞ্চল: আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে মরুভূমির একেবারে পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই অঞ্চলটি মরুভূমি ও সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত অল্প বালুকাময় স্থান। এখানকার অধিকাংশ অঞ্চল ঘাসে ঢাকা, এর মধ্যে কোথাও কোথাও কৃষিকাজ হয়। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলের কৃষিকাজের প্রসারে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।

(২) রোহি: আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিম ঢাল থেকে কয়েকটি বালিযুক্ত নরম শিলাস্তর দিয়ে গঠিত পাথুরে বা প্রস্তরময় অঞ্চল নদী বেরিয়ে এসে মরুভূমির মধ্য দিয়ে পশ্চিমদিকে কিছুদূর পর্যন্ত রয়েছে। এই অঞ্চলকে স্থানীয়ভাবে হামাদা বলে। প্রবাহিত হওয়ার পর  মাইলের পর মাইল 

(৩) ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল: রোহি অঞ্চলের পশ্চিমদিকে ক্ষুদ্র মরু জুড়ে ছড়িয়ে আছে শুধু বালি আর বালি। কোথাও সবুজের চিহ্ন অঞ্চল অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে এখান থেকেই আসল মরুভূমি অঞ্চল নেই। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বলে, এই অঞ্চলটি মরুস্থলী বা ‘মৃতের দেশ' নামকরণ শুরু হয়।

 (৪) পাথুরে অঞ্চল বা হামাদা: ক্ষুদ্র মরু অঞ্চলের পশ্চিমদিকে করা হয়েছে। মরুভূমির ভয়াল রূপটি এখানে পরিস্ফুট হয়েছে। তীরে পলি জমে প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয়েছে। বাগার অঞ্চলের মরুভূমি অঞ্চলের সর্ব পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং ভারতীয় সীমানা পশ্চিমদিকে অবস্থিত এই অঞ্চলটি বেশ উর্বর। ছাড়িয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। এই অঞ্চলের মাইলের পর মাইল  মরুভূমি অঞ্চল নেই। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বলে, এই অঞ্চলটি মরুস্থলী বা ‘মৃতের দেশ' নামকরণ শুরু হয়।

(৫) বালুকাময় অঞ্চল বা মরুস্থলী: মরুস্থলী অঞ্চলটি ভারতীয় মরুভূমি অঞ্চলের সর্ব পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং ভারতীয় সীমানা ছাড়িয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। এই অঞ্চলের মাইলের পর মাইল জুড়ে ছড়িয়ে আছে শুধু বালি আর বালি। কোথাও সবুজের চিহ্ন নেই। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বলে, এই অঞ্চলটি মরুস্থলী বা ‘মৃতের দেশ' নামকরণ করা হয়েছে। মরুভূমির ভয়াল রূপটি এখানে পরিস্ফুট হয়েছে।

প্রশ্ন ১২ | ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। অথবা, ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক শ্রেণিবিভাগ করো এবং যে-কোনো একটি বিভাগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। [

উত্তর : উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণে তিন দিক সমুদ্রে ঘেরা (উপদ্বীপ) এক বিশাল মালভূমি অঞ্চল অবস্থান করছে। এই অএলটিই ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি নামে পরিচিত। । মোগিবিভাগ: ভারতের উপরাপীয় মালভূমি (ক) মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি উচ্চভূমি (5) ক্ষণ মালভূমি মধ্য ভারতের উচ্চভূমি ও মালভূমি পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভূমি ১) আরবেরী পর্বতশ্রেণি ১। ছোটোনাগপুর মালভূমি ২। বাঘেলখও মালভূমি ৩। গড়জাত পাহাড় ও দন্ডকারণ্য মালভূমি ৫। বেওয়া মালভূমি দাক্ষিণাত্য মালভূমির পার্বত্য অংশ দক্ষিণের পর্বত পর্বত মহারাষ্ট্র মালভূমি মাল তুমি মালভূমি | বিস্তারিত উত্তরের জন্য (ক) মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভূমি — ১৮৬নং পাতার, রচনাধর্মী ১৪নং প্রশ্নের উত্তরটি স্রষ্টা।। ((খ) দাক্ষিণাত্য মালভূমি নীচের রচনাধর্মী ১৩নং প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো। 

প্রশ্ন ১৩. দাক্ষিণাত্য মালভূমির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।

 উত্তর:- দাক্ষিণাত্য মালভূমি : অবস্থান: নর্মদা নদীর দক্ষিণে সাতপুরা, মহাকাল পর্বত থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত এবং পূর্বে পূর্বঘাট পর্বত থেকে পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত পর্যন্ত যে ত্রিভুজাকার ভূ-খণ্ড দেখা যায়, তাকেই বলে দাক্ষিণাত্য মালভূমি। এর বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৭০০ কিমি.। ও

 শ্রেণিবিভাগ: ভূ-প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুসারে দাক্ষিণাত্য মালভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : (ক) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পার্বত্য অংশ এবং (খ) দাক্ষিণাত্য মালভূমির মূল অংশ। (দাক্ষিণাত্য মালভূমির পার্বত্য অংশ: i) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা: *

 অবস্থান: পশ্চিমে আরব সাগরের উপকূল বরাবর উত্তর-দক্ষিণে এই সহ্যাদ্রি পর্বতমালা অবিচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত। + দৈর্ঘ্য: উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ১৬০০ কিমি। *

 বৈশিষ্ট্য : পশ্চিমে এই পাহাড় খাড়াভাবে ওপরে উঠে গেছে ও পূর্বে এটি সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নেমে গেছে। *

 পর্বতশৃঙ্গ : কলসুবাই (১৬৪৬ মি.), সালাহের (১৫৭৬ মি.), মহাবালেশ্বর, হরিশচন্দ্র গড়। 

* সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভাভুলমালা (২০০৯ মি.) *

 গিরিপথ: নাসিকের নিকটবর্তী বালঘাট গ্যাপ ও পুণের নিকটবর্তী ভোরঘাট গ্যাপ উল্লেখযোগ্য।

ii) পূর্বঘাট পর্বতমালা

 * অবস্থান : পূর্বে বঙ্গোপসাগর উপকূল বরাবর উত্তর দক্ষিণে এই মলয়াদ্রি পর্বত বিস্তৃত। * 

বৈশিষ্ট্য : এটি কতকগুলি বিচ্ছিন্ন পর্বতের সমষ্টি। এটি একটি ক্ষয়জাত পর্বত। * 

পর্বত / পর্বতশৃঙ্গ মহেন্দ্রগিরি শুনা (১৫০২ মি.) আনাইমালাই পর্বত, সেভরয়, জাতাদি, ভেলিকোডা ইত্যাদি পর্বত * 

সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আর্মাকোণ্ডা (১৬৮০ মি.) * 

নদনদী : গোদাবরী, কৃষ্ণা, পেন্নার নদী এই পর্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ভারত দাক্ষিণাত্য মালভূমি। আরব সাগর বঙ্গোপসাগর নির্দেশিকা মহারাষ্ট্র মালভূমি ] তেলেঙ্গানা মালভূমি ] কৰ্ণাটক মালভূমি ভারত মহাসাগর

 iii) উত্তরের পর্বতমালা : + অবস্থান: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তরপ্রান্তে এই পর্বতমালা অবস্থিত। 

* পর্বত মালভূমির উত্তর সীমায় সাতপুরা (ধুপগড় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ১৩৫০ মি.), সাতপুরার উত্তরে মহাদেব (পাঁচমারি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ১০৫০ মি.) ও সাতপুরার উত্তর-পূর্বে মহাকাল পর্বতগুলি অবস্থিত। (অমরকণ্টক সর্বোচ্চ শুলা ১০৫৭ মি.) *

 বৈশিষ্ট্য: ৩টি পর্বতই বেশ প্রাচীন। তাই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে। সাতপুরা হল একটি স্তূপ পর্বত।

 iv) দক্ষিণের পর্বতমালা: *

 অবস্থান: পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট পর্বত দুটি দক্ষিণদিকে নীলগিরি পর্বতগ্রন্থিতে মিলিত হয়ে এই পর্বত উৎপন্ন হয়েছে। *

 পর্বত: আন্নামালাই পর্বত (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি ২০১৫ মি.) আনাইমুদি দাক্ষিণাত্য মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, পালনি পর্বত ও কার্ডামম পর্বত। *

 গিরিপথ: নীলগিরি পর্বতে অবস্থিত পালঘাট গ্যাপ।

(খ) দাক্ষিণাত্য মালভূমির মূল অংশ 

: দাক্ষিণাত্য মালভূমির অংশকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। (i) মহারাষ্ট্র মালভূমি, (ii) কর্ণাটক মালভূমি ও (iii) তেলেঙ্গানা মালভূমি। 

i) মহারাষ্ট্র মালভূমি : মহারাষ্ট্রে অবস্থিত লাভা দ্বারা গঠিত এই মালভূমিতে সিঁড়ির মতো ধাপ দেখা যায় বলে একে ডেকানট্র্যাপ বলে। ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত বলে মৃত্তিকা কৃষ্ণবর্ণের। ধাপগুলির মাথা চ্যাপটা ও সমতল ও পার্শ্বদেশ বেশ খাড়া। 

ii) কৰ্ণাটক মালভূমি: ডেকানট্র্যাপ -এর দক্ষিণে কর্ণাটক রাজ্যে এই মালভূমি অবস্থিত। এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির গড় উচ্চতা ৬০০-৯০০ মি., ও মৃত্তিকা হল লাল। *

 মালনাদ: এই মালভূমির পশ্চিম অংশের ৩২০ কিমি দীর্ঘ ও প্রায় ৩৫ কিমি প্রশস্ত উঁচুনীচু ঢেউ খেলানো অঞ্চল হল মালনাদ। 

* ময়দান : পূর্বদিকের কম ঢেউখেলানো ও সমপ্রায়ভূমিকে বলে ময়দান। এই দুই অঞ্চল গ্রানাইট ও নাইস শিলায় গঠিত। 

iii) তেলেঙ্গানা মালভূমি: অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্গত তেলেঙ্গানা মালভূমি অঞ্চলটি গ্রানাইট ও নাইস শিলায় গঠিত। এটি একটি সমপ্রায় ভূমি। গড় উচ্চতা ৫০০-৬০০ মি.। সাতমালা হল এখানকার উল্লেখযোগ্য পাহাড়। 

প্রশ্ন ১৪ | মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভূমি সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখো।

 উত্তর : অবস্থান : উত্তরে গঙ্গা সমভূমি, দক্ষিণে দাক্ষিণাত্য মালভূমি, উত্তর-পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত, পূর্বে রাজমহল পাহাড় ও পূর্বঘাট পর্বত ও পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বত-এর মধ্যবর্তী অংশে এই মালভূমি অঞ্চলটি অবস্থিত। 

 উৎপত্তি: এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখণ্ড গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ, যা অতি প্রাচীন আগ্নেয় (গ্রানাইট) ও রূপান্তরিত (নাইস) শিলা দ্বারা গঠিত। •

 শ্রেণিবিভাগ: মধ্য ও পূর্ব ভারতের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি এবং ২) পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি ও মালভূমি। (১) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি: আদিকাল থেকে বিন্ধ্যযুগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কঠিন ও নরম শিলায় এখানকার ভূত্বক গঠিত হয়েছে। নরম শিলাস্তর বেশি ক্ষয় পেয়ে মালভূমির আকার { নিয়েছে এবং কঠিন শিলা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পেয়ে ছোটো ছোটো পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। সমগ্র অঞ্চলটির গড় উচ্চতা ১০০-৬০০ মিটার এবং দক্ষিণ থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে গেছে। সমগ্র অঞ্চলটিকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথ 

(ক) আরাবার পর্বতশ্রেণি: এটি ভারতের প্রাচীনত পর্বত এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতসমূহের মে অন্যতম। এই পর্বতটি দিল্লি থেকে আমেদাবাদ পর্য জানার পশ্চিমে ৮০০ কিমি দৈর্ঘ্যে বিস্তৃত। ক্ষয় পেতে পেতে বর্তমা এটি একটি ক্ষয়জাত পর্বতে পরিণত হয়েছে। এর গড় উচ্চ ৪০০-৬০০ মি.। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল গুরুশিখর (১৭৭২ ি এবং অপর একটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ হল মাউন্ট আবু। (ধ) মারওয়ার উচ্চভূমি: এটি আরাবল্লি পর্বতের পূর্বনি অবস্থিত। একে পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমিও বলে। (গ) বুন্দেলখণ্ড মালভূমি এই মালভূমিটি যমুনা নদীর দক্ষি অবস্থিত। গ্রানাইট ও নাইস শিলায় গঠিত এই মালভূমি বর্তমা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

 (খ) কিথ্য পর্বত: নর্মদা নদীর উত্তরে অবস্থিত এই ভু পর্বতটি প্রায় ১০৫০ কিমি দীর্ঘ। চুনাপাথর ও বেলেপাথ জাতীয় পাললিক শিলায় এটি গঠিত। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হ (৮৮১ মি.)। (3) রেওয়া মালভূমি: বিন্ধ্য পর্বতের পূর্ব দিকে অবস্থি লাভা গঠিত রেওয়া মালভূমি অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি হল তরঙ্গায়িত (5) মানব মালভূমি: বিন্ধ্য ও আরাবল্লি পর্বতের মধ্যব স্থানে এটি অবস্থিত। প্রধানত লাভা দ্বারা গঠিত বলে এ ভূমির প্রকৃতি উঁচুনীচু ও তরদায়িত। গড় উচ্চতা ৫০০-৬০ (ছ) নর্মদা উপত্যকা: বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত এ উপতাকা ভূপ্রকৃতিগত ভাবে একটি গ্রস্ত উপত্যকা। 

(২) পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি ও মালভূমি : মধ্য ভারতে [ভূমি অঞ্চলটি পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে এই অঞ্চলটি গঠ করে। পূর্বে কাইমুর থেকে পশ্চিমে বাঘেলগণ্ড মালভূমি ও উত্তা | ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে দক্ষিণে দণ্ডকারণ্য পর্যন্ত প্রসারিত এই সমগ্র অঞ্চলটি প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত। যথা— মধ্য এবং পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি বাঘলমন্ড মালভূমির পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি আর্কিয়ান যুগে 

(ক) ছোটোনাগপুর মালভূমি: এই ছোটোনাগপুর মালভূমি নাইট ও নাইস শিলায় গঠিত, যার গড় উচ্চতা হল ৭০০ মি. এটি প্রধানত রাঁচী মালভূমি, হাজারিবাগ মালভূমি ও কোডারম শর্বাচ্চ অংশ। 'প্যাট অঞ্চল' এখানকার সর্বোচ্চ অংশ ।

(খ) বাঘেলখণ্ড মালভূমি। এই মালভূমিটি শোন নদীর দক্ষিণে অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা ৪০০-৬০০ মিটার। এটি গ্রানাইট ও প্রাচীন পাললিক শিলায় গঠিত।

 (গ) মহানদী অববাহিকা: এটি মহানদীর তীরবর্তী অববাহিকা, যার গড় উচ্চতা হল ২০০ মি.। এই অঞ্চল স্লেট ও চুনাপাথর

 (ঘ) গড়জাত পাহাড় ও দণ্ডকারণ্য: মহানদীর পূর্বাংশে ওড়িশার উচ্চভূমিকে গড়জাত পাহাড় বলে। ছত্তিশগড় সমভূমির দক্ষিণে দণ্ডকারণ্য অঞ্চল অবস্থিত। এই অঞ্চলের বোনাই, কেওনঝড় ও সিমলিপাল পাহাড়গুলি উল্লেখযোগ্য। 


প্রশ্ন ১৫। ভারতের উপকূলীয় সমভূমির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, ভারতের পূর্ব উপকূলের সমভূমির পরিচয় দাও। অথবা, ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমভূমির পরিচয় দাও। ★

উত্তর : ত্রিভুজাকৃতি দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগরের উপকূল বরাবর সংকীর্ণ সমভূমিকে ভারতের উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বলা হয়, যা (1) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি এবং (2) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি- এই দুই অংশে বিভক্ত।

 (ক) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আরব সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত প্রায় ১,৬০০ কিমি দীর্ঘ এই অঞ্চলটি উত্তরে কচ্ছের রণ অঞ্চল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব উপকূলের সমভূমির তুলনায় এই সমভূমি অঞ্চলটি বেশ সংকীর্ণ ও বন্ধুর।

 ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ : ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুসারে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমিকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: (১) কচ্ছের রণ, (২) কচ্ছ উপদ্বীপ, (৩) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ, (৪) গুজরাট সমভূমি, (৫) কোঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি, (৬) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি এবং (৭) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি। 

(১) কচ্ছের রণ: গুজরাট রাজ্যের উত্তরে এবং কচ্ছ উপদ্বীপের উত্তর ও পূর্বাংশে ৭৩,৬০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত অগভীর জলাভূমি রণ নামে পরিচিত। উত্তরের অংশ বৃহৎ রণ ও দক্ষিণের অংশ ক্ষুদ্র রণ নামে পরিচিত। বর্ষাকালে এই অঞ্চল সমুদ্র এবং লুনি, বানস প্রভৃতি নদনদীর দ্বারা প্লাবিত হয়। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চল সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে আচ্ছাদিত বালুকাময় প্রান্তরে (সমভূমি অঞ্চলে) রূপান্তরিত হয়। 

(২) কচ্ছ উপদ্বীপ রণের দক্ষিণে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত। 'কচ্ছ' শব্দের অর্থ 'জলময় দেশ'। তিন দিকে জলবেষ্টিত কচ্ছ উপদ্বীপের উত্তর ও দক্ষিণে সমুদ্র সংলগ্ন অংশে পলিগঠিত সমভূমি এবং মধ্যভাগে ৩১৫-৩৮৫ মিটার উঁচু বেলেপাথরের পাহাড় দেখা যায়।

 (৩) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ: কাছে উপদ্বীপের কিছুটা দক্ষিণে অবস্থিত এবং তিনদিকে জলবেষ্টিত (আরব সাগর, কচ্ছ উপসাগরও কাছে উপসাগর) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ অঞ্চলটি সৌরাষ্ট্র নামেও পরিচিত। গিরণার হল এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পাহাড়। গিরণার পাহাড়ের গোরখনাথ শৃঙ্গটি হল সৌরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অংশ (উচ্চতা ১,১১৭ মিটার)। 

(৪) গুজরাট সমভূমি: গুজরাট সমভূমি অঞ্চলটি উত্তরে কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম উপকূলের সংকীর্ণ সমভূমিটি এই অঞ্চলে কিছুটা চওড়া হয়ে গিয়েছে। কচ্ছ উপসাগর ও কাম্বে উপসাগর নামে আরব সাগরের দুটি প্রসারিত অংশ এই অঞ্চলের দু'পাশ দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের কিছুটা ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। 

(৫) কোঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি : প্রায় ৫০০ কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি অঞ্চলটি গুজরাট সমভূমির দক্ষিণ প্রান্ত থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। উপদ্বীপ: কাধিয়াবাজ) ভারতের উপকূলবর্তী সমভূমি ভারত পর্বঘাট পর্বত অম্ল উপকূল বড়িশা উপকূল কোলের হ্রদ -পুলিকট হ্রদ -চিহ্না হ্রদ- ভোরঘাট অষ্টমুদি করমন্ডল উপকূল জেখানার উপহুদ পালমাট 200 

(৬) কৰ্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি প্রায় ২২৫ কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি অঞ্চলটি গোয়া থেকে ম্যাঙ্গালোর প্রান্ত থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। 

(৭) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি প্রায় ৫০০ কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি ম্যাঙ্গালোর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। অসংখ্য ছোটো-বড়ো হ্রদ এবং উপহ্রদ (লেগুন) বা করালের উপস্থিতি হল মালাবার উপকূলের ভূপ্রকৃতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

 (খ) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি: বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগে ভারতের ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্যের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত পূর্ব উপকূলের সমভূমি অঞ্চলটি উত্তরে ওড়িশা থেকে দক্ষিণে তামিলনাড়ু রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে। এই সমভূমির গড় বিস্তার বেশি ১০০ কিমি। বিশেষত মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা বিস্তৃত হয়েছে। ও কাবেরী বদ্বীপ অঞ্চলে এই উপকূলভূমি পূর্ব-পশ্চিমে বহুদূর • পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলটি প্রধানত দু'ভাগে বিভক্ত, যথা : (১) উত্তর সরকার উপকূল এবং (২) করমণ্ডল উপকূল।

 (১) উত্তর সরকার উপকূল: ওড়িশা সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত (উপকূলভাগকে উত্তর সরকার উপকূল বলা হয়। উপকূলটি (1) ওড়িশা উপকূল (ii) অন্ধ্র উপকূল এই দু'টি | বিভক্ত। 

(i) ওড়িশা(উৎকল) উপকূল : উত্তর সরকার উপকূলের উত্তরখা অবস্থিত উপকূল বা ওড়িশা উপকূলীয় অংশটি প্রধানত বৈতরণী এবং ব্রাহ্মণী নদী তিনটির বদ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে। উপকূলকে মহানদী বদ্বীপ অঞ্চলও বলা হয়। প্রধানত পলিমাটি নিম্নভূমি, জলাভূমি এবং ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি নিয়ে ওি উপকূল অঞ্চলটি গঠিত। ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ চিন্তা এই অন্যত অবস্থিত। সমুদ্রের সঙ্গে (বঙ্গোপসাগর) যুক্ত থাকায় চিন্তার জ লবণাক্ত। জানো কি? চিন্তা এশিয়ার বৃহত্তম লবণাক্ত হ্রদ। ১১০০ বর্গকি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট চিন্তা ওড়িশার ৩টি জেলা জুড়ে অবস্থান করছে। যথা—পুরী, খুরদা, গঞ্জাম জেলা। জৈববৈচিত্র্যে ভরপুর ও আর্থসামাজির গুরুত্বের জন্য চিন্তা লেগুন 'রামসার সাইটের' মর্যাদা পেয়েছে। 

(ii) অস্ত্র উপকূল : উৎকল উপকূলের পশ্চিমে অবস্থিত উপকূল অঞ্চলটি চিন্তা উপহ্রদ থেকে কৃষ্ণা নদীর মোহানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলটি প্রাচীন শিলা গঠিত উচ্চভূমি এবং কুরমুক্তির গঠিত সমভূমি অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে। অন্ধ্র উপকূলের কা ও গোদাবরী নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে মোহানা থেকে পশ্চিম দিয়ে স্থলভাগের মধ্য দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত (২৮০ কিলোমিটার) প্রসারিত হয়েছে। গোদাবরী ও কৃষ্ণা বদ্বীপের মধ্যে কোলের হ্রদ অবস্থিত।

 (২) করমণ্ডল উপকূল : কৃয়া বদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলভাগকে করমণ্ডল উপকূল বলে। এ ছাড়া, পুলিকট উপহ্রদ থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলব তামিলনাড়ু উপকূলও বলা হয়। এই অংশের কাবেরী বদ্বীপ দক্ষি ভারতের শস্যভাণ্ডার। করমণ্ডল উপকূলের দক্ষিণাংশের মাহর উপসাগর ও পকপ্রণালী অবস্থিত। 

প্রশ্ন ১৬ ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগসমূহের গুরুত্ব লেখো। |

 উত্তর : ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগসমূহের গুরুত্ব (১) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব: (i) জলবায়ুর ওপর প্রভাব: উত্তরে হিমালয় পর্বতে | অবস্থানের জন্য উত্তরের শীতল সাইবেরীয় বাতাস ভারতে করতে পারে না বলে তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

 (ii) মৌসুমি বৃষ্টিপাত : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধা পেয়ে উত্তর-পূর্ব ও উত্তর ভারতে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপ ঘটায়। হিমালা _

(iii) প্রতিরক্ষা : হিমালয় পর্বত ভারতের উত্তর সীমান্তে দুর্ভো প্রাচীরের মতো দণ্ডায়মান থেকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে। রক্ষা করছে। (iv) নদীর উৎসथল: হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহগুলি - উত্তর ভারতের প্রধান নদীগুলোর উৎস (যেমন—গঙ্গা, ব্রষ্মপুত্র ইত্যাদি)। 

(v) সমভূমির সৃষ্টি : ভারতের সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র নদীগুলি হিমালয় পর্বত থেকে প্রচুর পরিমাণে পলি বয়ে এনে ও ও পূর্ব ভারতের বিশাল সমভূমি অঞ্চলের সৃষ্টি করেছে। 


(vi) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন : হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট খরস্রোতা পার্বত্য নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে। 

(vii) বনজসম্পদ : হিমালয় পর্বতের চিরহরিৎ ও সরলবর্গীয় গাছের কাঠ আসবাবপত্র ও কাগজ উৎপাদনে কাজে লাগে। 

(viii) কৃষিকাজ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ঢালে সিঙ্কোনা, আপেল, চা, কমলালেবু, এলাচ প্রভৃতি চাষ করা হয়।

 (ix) ওষুধ প্রস্তুত : হিমালয়ে নানা প্রকার ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়।

 (x) পর্যটন ও তীর্থকেন্দ্র : অপূর্ব নিসর্গ দৃশ্যসমূহের অধিকারী হিমালয় সারা পৃথিবীর ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠায় এই অঞ্চলে প্রচুর পর্যটন কেন্দ্র এবং তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে। 

(xi) পশুপালন : হিমালয়ের পার্বত্য ঢালে প্রচুর ভেড়া, ছাগল, গরু, প্রতিপালন করা হয়। 

(xii) বৈদেশিক মুদ্রা : এই পার্বত্য অঞ্চলের কাঠ, চা, এলাচ ও পর্যটন থেকে ভারত প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। 

(xiii) হিমালয় পর্বতের অধিবাসীরা অত্যন্ত সৎ, পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু। 

(xiv) সাংস্কৃতিক গুরুত্ব : হিমাদ্রি হিমালয় যে দুর্জয় ব্যবধানের প্রাচীর গড়ে তুলেছে, তার ফলে ভারতবর্ষ বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতবর্ষ নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে।

 (২) উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :

 (i) এটি ভারতের সবচেয়ে উর্বর স্থান। 

(ii) এখানে বিভিন্ন নদী বাহিত পলি জমে যে উর্বর জমি গঠন করেছে তাতে প্রচুর চাষবাস করা যায়। এখানে ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, তৈলবীজ ও প্রচুর ফলেরও চাষ হয়। তাই এই অঞ্চলকে 'ভারতের শস্যভাণ্ডার বলে। 

(ii) এই অঞ্চলটি রেলপথ, সড়কপথ ও নদীবাহিত জলপথ দ্বারা পরিবহণযোগ্য হওয়ায় ব্যাবসাবাণিজ্যে সুবিধা হয়। 

(iv) এখানে বহু পর্যটন কেন্দ্র ও তীর্থক্ষেত্র রয়েছে। 

(v) এই সমভূমি অঞ্চলের জনসংখ্যা, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। 

(vi) এখানে বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন ধর্মের, সভ্যতা সংস্কৃতির মানুষ দেখা যায়। 

(vii) যোগাযোগের সুবিধা কৃষিজ কাঁচামালের সহজলভ্যতা', সুলভ শ্রমিক ইত্যাদি নানা কারণে এখানে প্রচুর শিল্পও গড়ে। উঠেছে। যেমন-পাট শিল্প, চিনি শিল্প ইত্যাদি।

(৩) উপদ্বীপীয় মালভূমির অঞ্চলের গুরুত্ব :

 (i) এটি ভারতের সবথেকে প্রাচীন ও স্থায়ী অংশ।

 (ii) এই অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ যথা- লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, বক্সাইট, মাইকা, ক্রোমিয়াম, চুনাপাথর ইত্যাদি। ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ভারতের খনিজ ভাণ্ডার বলে। 

(iii) ভারতের মোট ৯৫% গণ্ডোয়ানা যুগের কয়লা এখান থেকেই উত্তোলিত হয়।

 (iv) এই মালভূমির উত্তর-পশ্চিম দিক লাভা গঠিত উর্বর কৃয়মৃত্তিকা, কার্পাস তুলা উৎপাদনে সাহায্য করে।

 (v) কোনো কোনো নিম্ন সমভূমি অঞ্চলে ধান ও অন্যান্য ফলের চাষ হয়। 

(vi) উচ্চ অঞ্চলে মূল্যবান কাঠের বনভূমি দেখা যায়। 

(vii) পশ্চিমঘাট পর্বত থেকে আগত নদীতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

 (viii) এখানে অনেক শৈলশহর রয়েছে। যেমন—উটি, কোদাইকানাল, পাঁচমারি, মহাবালেশ্বর, কান্ডালা ইত্যাদি। 

(ix) ভারহ্রাসমান কাঁচামাল হওয়ায় প্রাপ্ত খনিজদ্রব্যের ওপর ভিত্তি করে এখানে বিভিন্ন শিল্প (লৌহ-ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা নিষ্কাশন) গড়ে উঠেছে। 

(x) বনভূমি থেকে বনজ সম্পদ যেমন পাওয়া যায় তেমনি কাগজ শিল্পের কাঁচামালের জোগান আসে বনভূমি থেকে।

 (৪) উপকূলের সমভূমির গুরুত্ব 

(i) সমগ্র উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলটি এই উপকূলের সমভূমি দ্বারা আবৃত।

 (ii) উপকূলের সমভূমি অঞ্চলে চাষবাস ভালো করা হয়। 

(iii) এখানে অনেক সমুদ্রসৈকত রয়েছে যথা- পুরী, বকখালি, কোলতা, দীঘা, জুহু, ঋষিকোণ্ডা, শংকরপুর ইত্যাদি। 

(iv) এখানের উপহ্রদগুলি খুবই সুন্দর। যথা—চিল্কা ‘কোলের’, পুলিকট ইত্যাদি। 

(v) সামুদ্রিক অবস্থানের কারণে এখানে অনেক বন্দর গড়ে উঠেছে। 

(vi) বন্দরের অবস্থানের জন্য উপকূল অংশে বিভিন্ন শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। 

No comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();